স্বভূমি – ৭
সন্তোষ
—হেম! হেম! এই দ্যাখো তোমার নাতনি চিঠি লিখেছে। মাঝে মাঝে আবার বাংলা হরপ! টাইপ করা চিঠির মধ্যিখানে এত বড় বড় বাংলা হরপ হাতে করে লিখেছে! হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার লালীদিদি গো! হ্যাঁ গো হ্যাঁ, ”ইতি লালী”! এই যে শিগগিরি এসো।
—ওঃ! কাঁদতে হবে না, কাঁদতে হবে না, এতে কাঁদার কী হল? সুসংবাদ তো গো—এই শোনো না, লালী কী বলছে—উঃ লালীদিদির কতরকম যে সব খবর!—জয়ের খবর—মউ—পিউ’র খবর—ল্যারির খবর—মায়ার খবর—স্নোয়ির খবর, পাড়ার লোকের খবর পর্যন্ত—দত্ত, ভট্টাচার্য—বউ আর বাকি নেই! নাও, হল তো? তুমি ভয় পাচ্ছিলে শুধু শুধুই—”ডিয়ারেস্ট ‘দিদা’ অ্যান্ড ‘দাদু’,
হোপ ইউ আর লুকিং আফটার ইয়োরসেলভস প্রপারলি। দ্য মেমোরিয়্যাল সার্ভিস ইজ ওভার।” শ্রাদ্ধ হয়ে যাবার পরে চিঠিটা লিখেছে। একবার ওর বাংলাগুলো দ্যাখো—তিন—চারটে কথা খুব স্পষ্ট লিখেছে ‘ইতি লালী’—’দাদু—দিদা’ বাংলাতেই লিখেছে—এই নাও—আমি পড়ে তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি—নাও শোনো। কালোরা ফিরে গেছে, কিন্তু বেয়ান এখনও আছেন ছেলের কাছে। তবু ভাল।
”মামা অ্যান্ড মায়া আন্টি হ্যাভ গন ব্যাক উইথ মউপিউ। গ্র্যাম্মা ইজ স্টিল হিয়ার উইথ আস। ওনলি জয় কুডন্ট কাম ফ্রম স্ট্যানফর্ড। বাবা ইজ সামহোয়াট বেটার নাউ ইফ নট ওকে। উই আর থিংকিং অব গোয়িং টু ইন্ডিয়া অ্যাজ মা হ্যাড প্ল্যান্ড আর্লিয়ার—সো বাবা অ্যান্ড আই’ল বি সিয়িং ইউ নেক্সট মানথ। ল্যারি ইজ কামিং টু। রিমেমবার, ল্যারি? দ্যাট হ্যামবার্গার—কিড?”
সেই ছেলেটা গো, সেই যে হ্যামবার্গারের দোকানে কাজ করত। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ল্যারি—এই ছেলেই বোধহয় আমাদের নাতজামাই হয়ে আসছে—উহুঁ—মুখ ব্যাঁকালে চলবে না হেম—মায়ার কথাটা স্মরণ রেখো—মায়া আমার ছেলের পরম যুগ্যি বউ হয়েছে? ল্যারি ছেলেটা এখনও ছোট—ফ্রেড হয়তো গড়েপিটে নিতে পারবে—ল্যারিও আসছে ওদের সঙ্গে, কিন্তু বেশিদিন থাকবে না—”বাট হি উইল বি কামিং ব্যাক টু কানাডা আফটার থ্রি উইকস ইন ইন্ডিয়া। আই’ল স্টে অন উইথ ইউ। বাবা উইল অলসো স্টে ফর আ হোয়াইল। উই আর কামিং ব্যাক টু টোরান্টো বিফোর দ্য পুজাস, অ্যান্ড উই আর ব্রিঙিং ইউ উইথ আস। মামা, অ্যান্ড বাবা হ্যাভ প্ল্যান্ড ইট টুগেদার।” দাদাভাইয়ের খুব মন খারাপ। হবেই তো। পিসি অন্ত প্রাণ। আলোর তো ছেলেই ছিল জয়।
”জয় ওয়াজ ভেরি আপসেট। হি রিংস আপ এভ্রি নাউ অ্যানড দেন। ইট সিমস জয় ইজ হ্যাভিং সেকেন্ড থটস অ্যাবাউট হিজ ব্রাজিল ট্রিপ দিস সামার। হি মাইট বি অ্যাকমপ্যানিং আস টু ক্যালকাটা ইনস্টেড। ইয়োর নাতি ওয়ান্টস টু স্পেনড সামটাইম উইথ ইউ, অ্যান্ড টু গেট টু নো ইন্ডিয়া বেটার। হি মাইট বি ট্র্যাভেলিং অ্যারাউন্ড উইথ ল্যারি ফর টু উইকস সিয়িং ইন্ডিয়া। পিউ হ্যাজ গট ইন্টু র্যাডক্লিফ কলেজ—গ্রেট! ইজন্ট ইট? বাট টু ব্যাড মউ হ্যাজ নট মেড ইট। নাউ শি হ্যাজ টু ফাইন্ড আ প্লেস এলসহোয়্যার। শি মাইট বি কামিং হিয়ার, সিন্স বাবা ক্যান পুল সাম স্ট্রিংস অ্যাট দিস এন্ড। ইটলবি ফান ইফ শি কামস টু টোরেন্টো ইউনিভ। মায়া আন্টি হ্যাজ কাট হার হেয়ার শর্ট অ্যান্ড লুকস রিঅ্যাল কিউট। দে আর নট গোয়িং টু ইন্ডিয়া বিকজ উই আর ব্রিংঙ্গিং ইউ ওভার। সো গেট ইয়োর ব্যঙ্গস রেডি।”
আমাদের ধরে নিয়ে যাবে বলেছে।
—দিদি ঠিক তার মায়ের মতনই লম্বা চিঠি লিখেছে—দ্যাখো, রাজ্যের লোকের খবর দিয়েছে—কী আশ্চর্য—ঠিক যেন আলোর চিঠিই এল! একেবারে আলোর চিঠি—কেবল ইংরিজিতে।
”দ্যা মেমোরিয়াল সার্ভিস ওয়েন্ট ভেরি ওয়েল। মিস্টার ভটচায্যি রেড সাম স্যাংসক্রিট মন্তরজ, অ্যান্ড দেয়ারওয়্যার লটস অব রবীন্দ্রসংগীত। বাই দা ওয়ে, আমি গান—আই হ্যাভ জাস্ট স্টারটেড টেকিং মিউজিক লেসনস উইথ বনানী আন্টি (দো শি ডাজ নট লিভ হিয়ার এনি মোর) আই মে ইভন সিং ফর ইউ হোয়েন ইন ক্যালকাটা—বি প্রিপেয়ার্ড ফর দি ওয়ার্স্ট—স্নোয়িং গোজ ওয়াইলড এভ্রি টাইম আই সিং!”
ও হেম! শুনছ ? দিদু যে গান শিখছে! এই যে তোমার সব ক’জন বাঙালি বন্ধুদের কথা এইখানে আছে—
”দিদা, অল ইয়োর বেঙ্গলি ফ্রেন্ডস হ্যাভ বিন ভেরি কাইন্ড। এসপেশালি মিসেস দত্ত মিসেস কাপুর অ্যান্ড মিসেস দাশগুপ্ত হ্যাভ বিন একসট্রা সুইট। দে ইউজড টু কুক ফর আস দা হোল উইক আফটার দি অ্যাকসিডেন্ট আনটিল গ্র্যাম্মা টুক ওভার। ইভন নাউ দে আর টেকিং গুড কেয়ার অব আস। মিস্টার দত্ত অ্যান্ড ডক্টর কাপুর কাম টু প্লে কার্ডস উইথ বাবা এভ্রি ইভনিং। আংকল জো অলসো জয়েনস দেম। বাবাজ কোলিগস হ্যাভ অল বিন ভেরি কাইন্ড। দা হোল অফ টোরোন্টো ইজ ইন মোর্নিং অ্যাজ ইট ওয়্যার। সো মেনি ইন্ডিয়ান ফ্যামিলিজ হ্যাভ লস্ট সামওয়ান ডিয়ার টু দেম। নোবডি নোজ হোয়াট এগজ্যাক্টলি হ্যাপেন টু দ্যাট কার্সড প্লেন। হোয়াট এভার দ্য রিজন, পিপল হিয়ার হ্যাভ লস্ট সিমপ্যাথি ফর দা শিখ কজ। দো দ্য শিখস আর ডিনাইয়িং রেসপনসিবিলিটি ফর দি অ্যাকসিডেন্ট। আই রিয়্যালি ডোন্ট নো হুজ টেলিং দ্য ট্রুথ, বাট আই উড প্রিফার টু থিংক ইট ওয়াজ নট আ কেস অব সাবোটোজ, বাট ওনলি আ মেকানিকাল ফলট। লাইফ ইজ সো প্রেশাস—আই ক্যান অ্যাকসেপ্ট আ সিলি মেকানিক্যাল—ফল্ট—বাট নট আ হিউম্যান কনস্পিরেসি—নট আ ফিউ ক্রেজি ফেলাজ ডেলিবারেটলি ডেস্ট্রয়িং থ্রি হানড্রেড অ্যান্ড টোয়েন্টি নাইন ইনোসেন্ট লাইভস—নো! বাট দেয়ার্স সো মাচ হেটরেড ইন দা ওয়ার্ল্ড। দোজ ইজরেলিজ অ্যান্ড দোজ লেবানিজ! এল সালভাদর নিকারাগুয়া। আই ফিল সো হেলপলেস! দাদু, হোয়াট ইজ দিস লাইফ ফর, আই ওয়ান্ডার সামটাইমস? হোয়াটস সো গ্রেট আবাউট বিইং বর্ন অ্যান্ড বিইং অ্যালাইভ? ইফ ইউ আর ফাইটিং অল দা টাইম? দেয়ার্স সো মাচ সাফারিং অল অ্যারাউন্ড! বাই দ্য ওয়ে, দাদু, ইউ নিউ আংকল বলবীর সিং? বাবাজ ফ্রেন্ড অ্যাট ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি—দি ইকনমিস্ট ফ্রম দেল্লি? হি ওয়াজ অলসো অন দ্যাট প্লেন, উইথ হিজ হোল ফ্যামিলি। আই রিয়্যালি ক্যান নট আনডারস্ট্যানড ইট। পিপল আর ব্লোমিং দ্য শিখ টেররিস্টস—ইট সিমস দে ওয়ান্ট আ ল্যান্ড অব দেয়ার ঔন খালিস্তান—হোয়াই আরন্ট দে হ্যাপি উইথ ইন্ডিয়া? ইট ইজ দেয়ার ঔন ল্যান্ড অল রেডি! আংকল বলবীর ওয়াজ গোয়িং হোম! আই ডু হোপ ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যানাদার অ্যাকসিডেন্ট। অনেস্টলি, আই ডু!” আলোর সঙ্গে—সঙ্গে বলবীররা সবাই চলে গেছে হেম! হেম? মনে আছে তোমার ওদের? সেই তিনটে বাচ্চা? কী মিষ্টি? ওর বুড়ো মা—বাপকেও তো পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে নিয়ে গিয়ে কাছে রেখেছে। ওঃ। তাঁরা রয়েই গেছেন! ভালো করে ইংরিজিও বলতে পারেন না যে স্বামী—স্ত্রী কেউই!—ছেলে—বউ দু’জনেই চাকরি করে, ঘরে বাচ্চাদের রাখতে সুবিধে—সেই জন্যেই নিয়ে গেছে, আর ছেলেবউ নাতিনাতনি, সবাই ভোজবাজিতে উবে গেল! ওঃ—ভেবে দ্যাখো হেম, ভেবে দ্যাখো সেই বুড়ো—বুড়ির কথা! তুমি আমি তো তবু নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছি। বলবীরের বুড়ো বাবা—মা বিদেশে বিভুঁয়ে এতবড় শোকটা পেলেন—যাদের জন্যে যাওয়া, তারাই—এই দ্যাখো না লালী কি লিখেছে—উঃ—ভগবানের যে কী বিচার!
—”আংকল বলবীর’স পেরেন্টস আর গোয়িং ক্রেজি—দে হ্যাভ থ্রি ডটারস ইন ইন্ডিয়া বাট নোওয়ান হিয়ার—আংকল ওয়াজ গোয়িং ফর আ লেকচারট্রিশ অ্যান্ড টেকিং দা চিলড্রেন হোম ফর দা ফার্স্ট টাইম—বাট দে নেভার রিচড দেয়ার হোমল্যান্ড—দেয়ার্স সাচ আ লট অব স্টুপিডিটি ইন দিস ওয়ার্ল্ড—সাচ সেন্সলেস ক্রুয়েলটিজ! বাবা ইজ অ্যারেনজিং টু টেক আংকল বলবীরস পেরেন্টস ব্যাক উইথ আস হুইচ মিনস আ লট অব ওয়ার্ক বিফোর দ্যাট—” যাক! নাঃ, ফ্রেড আমাদের সত্যিই রত্ন ছেলে। নিজের এই শোকের মধ্যেও সে যে বন্ধুকৃত্য করতে পারছে—তার মানে অনেকটাই সামলে উঠেছে এখন বুঝলে হেম? জগতে পুত্রশোকও সহ্য হয়ে যায় আর এ তো—যাক, শোনো:
”দিদা, দাদু উই লাভ ইউ ভেরি মাচ। উই থিংক অফ ইউ অল দা টাইম। প্লিজ রিমেমবার দ্যাট অলওয়েজ, অ্যান্ড ট্রাই টু কিপ ওয়েল। উই আর ওকে। অ্যান্ড উড ইউ বিলিভ ইট, দিদা, বাবা পুটস ফ্লাওয়ার্স ইন দা ঠাকুরঘর এভ্রিডে?” শুনছ হেম? শোনো, শোনো!
লটস অফ আদোর। হাগস অ্যান্ড কিসেস। ইতি লালী।
পি. এস. বাবা সেন্ডস হিজ রিগার্ডস। অ্যান্ড গ্র্যাম্মা। বাবা ইজ কুকিং টুনাইট। গেস হোয়াট? এগকারি অ্যান্ড ইয়েলোরাইস, লাইক মা ইউজড টু অন থার্সডেজ।”