Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্যার, আমি খুন করেছি – প্রচেত গুপ্ত

    প্রচেত গুপ্ত এক পাতা গল্প201 Mins Read0

    স্বপ্নের মতো

    প্রথমেই বলে রাখি, এই গল্প আমি আজ প্রথম বলছি না। আগেও বলেছি। অন্য নামে বলেছি। কিন্তু পুরোটা বলা হয়নি। মনে হল, আর একটু বলার ছিল। অনেক সত্যি রয়েছে যা স্বপ্নের মতো, রূপকথার মতো। বেঁচে থাকবার ভরসা। এই কারণেই পৃথিবীটা এতো সুন্দর। তাই গল্পটা আবার বলছি। নতুন করে না বলে পারছি না।

    সেটা ছিল রবিবারের একটা সকাল। খাটে কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়লেন গীতানাথবাবু।

    বাইরের আলো এখনও নরম হয়ে রয়েছে। আশ্বিন মাসের ভোরের আলো নরমই হয়, বেলা বাড়লে রোদের তেজ বাড়ে। তখন গরমও বাড়ে। শরতকালের এইটাই মজা। আবহ কখনও মনোরম, কখনও গরমে ভ্যাপসা। কোনও কোনও দিন শেষরাতের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়। তখন চারপাশ ঠান্ডা। সেই ঠান্ডায় ভোরের ঘুম দীর্ঘ হয়।

    গীতানাথবাবুর ঘুম ভাঙে ছ’টা পার করে। ঘুম ভাঙলে আরও খানিকটা গড়িয়ে নেন। তারপর বাথরুম ঘুরে বেরোন মর্নিংওয়াকে। সঙ্গে থাকে বাজার করবার থলি। গলি থেকে বেরলে পার্ক। গুনে গুনে সাতবার পাক দেন। দিয়ে একেবারে বাজার ঘুরে ফেরেন। বাজার অবশ্য খুবই সামান্য। বাড়িতে বুড়ো-বুড়ি দুটো তো মোটে মানুষ। কী বা লাগে? অল্প আনাজপাতি, একটু মাছেই হয়ে যায়। মালতীদেবী আজকাল রান্নাবান্না করতে চান না। অথচ একটা সময়ে দিনের বেশি সময়টাই রান্না নিয়ে কাটাতেন। সকাল থেকে প্ল্যান। কে কী খাবে, কী বাজার হবে, কী রান্না হবে। এখন যেটুকু না করলে নয়। অনেকদিন কিছু কেনাকাটার দরকারও হয় না। গীতানাথবাবু শূন্য থলি নিয়ে বাজার থেকে ফিরে আসেন।

    মালতীদেবী বলেন, ‘শুধু শুধু বাজারে যাওয়ার দরকারই কী? বাড়িতে যা আছে তাতেই তো হয়ে যায়।’

    গীতানাথবাবু বলেন, ‘অভ্যেস হয়ে গেছে। সেই ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। মস্ত পরিবার ছিল। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল বিরাট। বাজারে মিনিমাম দু’ঘণ্টাখানেক ধরে যুদ্ধ চলত। মাছ কিনতেই তো বিস্তর সময় যেত। বাছাবাছি, দরাদরি হত বিস্তর। মুটের মাথায় করে জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। হাতে গোটা মাছ নিয়ে আগে মুটে চলেছে, পিছনে আমরা। বাজারে গিয়ে বাবা শেখাতেন কেমন করে শাকসবজি, ঢেঁড়শ, বেগুন চিনতে হয়। কোনওটার ঘাড় মটকে, কোনোটার গায়ে হাত বুলিয়ে, কোনোটা গন্ধ শুঁকে, কোনোটা আবার কাঁচা চিবিয়ে। মাছ কেনবারও কত কায়দা! কারও কানকো হতে হবে লাল, কারও চোখ হতে হবে ছলছল। কারও আবার পেট চ্যাপ্টা হলে ঝালে স্বাদ বেশি, কারও লেজ সরু হলে ঝোলে মন ভরবে।’

    মালতীদেবী অধৈর্য ভাবে বলেন, ‘থাক, আর ফিরিস্তি দিতে হবে না। তোমার বাজারের ইতিহাস শুনে কী করব? এখন তো আর মাথায় করে বাজার আনতে হয় না। হাতে করেও আনতে হয় না। তাহলে সময় নষ্ট করতে যাও কেন?’

    গীতানাথবাবু স্ত্রীর বিরক্তির কারণ বোঝেন। বিরক্তি বাজারের ওপর নয়, বিরক্ত নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের ওপর। তিনি নিজেকে সামলে নেন। অস্ফুটে বলেন, ‘সময় নষ্টের কী আছে মালতী? রিটায়ার করা মানুষ, এমনিতেই তো সময় কাটতে চায় না। বরং বাজারে ঘুরলে এর ওর সঙ্গে দেখা হয়। খানিকটা সময় সময় যায়। দুটো কথা হয়।’

    মালতীদেবী নিচু গলায় বলেন, ‘আমিও বাজারে গিয়ে ঘুরে বেড়াব। সময় তো আমাকেও কাটাতে হবে।’

    গীতানাথবাবু একটু চুপ করে থেকে বলেন, ‘তোমাকে কতবার বলেছি, মহিলা সমিতিতে গিয়ে বসতে পারও তো। মেয়েদের জন্য ওরা নানারকম কাজ করে। গানবাজনা হয়। সেলাই, বোনার এগজিবিশন করে। পাড়ার কয়েকজনকে মাঝে মাঝে বাড়িতে ডাকবে। গল্প করবে।’

    মালতীদেবী বড় করে শ্বাস ফেলে বলেন, ‘লাভ কী? ঘুরে ফিরে তো সেই এক কথা। ছেলেমেয়েরা বিদেশ থেকে আসে না, নাতি নাতনিকে কত বছর দেখিনি। খালি দীর্ঘশ্বাস। ওসব গল্প শুনে আমার আর কী হবে? ও তো আমার নিজেরই গল্প। থাক, নতুন করে আর বন্ধু পাকিয়ে দরকার নেই। যা আছি তাই থাকি।

    সত্যি মালতীদেবীর সময় কাটতে চায় না। কত আর টিভি দেখা যায়? এই বয়স হল নাতি নাতনিকে নিয়ে সময় কাটানোর বয়স। সাত বছর আগে পর্যন্ত তাই ছিল। নাতনিকে নিয়ে দম ফেলবার ফুসরত ছিল না। মেয়ের মা তো সকালেই স্কুলে পড়াতে যেত। পাঁচবছরের মেয়ে থাকত ঠাকুমার জিম্মায়। স্নান, খাওয়া, গল্প বলা, ঘুম পাড়ানো সবকিছুতে তার ঠাকুমাকে লাগত। সারাটা দিন যে কীভাবে কেটে যেত! ছুটোছুটি করেও কূল পাওয়া যেত না। মনে হত, ইস দিনটা যদি চব্বিশ ঘণ্টার না হয়ে আর একটু বেশি হত তাহলে হয়তো ম্যানেজ হত।

    আর এখন? বেলা শেষ হতেই চায় না।

    তখন রান্নার ব্যাপারটাও ছিল অনেকখানি। প্রবাল ওর বউ সুদেষ্ণা আর ওদের মেয়ে বৃষ্টির খাবার অভ্যেস ছিল একেবারে আলাদা। একেকজনের একেকরকম। গীতানাথবাবু, মালতীদেবীরও ঝামেলা আছে। একজনের সুগারের লক্ষণ, অন্যজনের প্রেসার হাই। এত কিছু বুঝে বাজার করতে হত। প্রবাল ছেলেবেলা থেকেই মাছের ভক্ত। অফিসে ছুটতে হবে বলে ছুটির দিন ছাড়া তার ছোটোমাছ চলত না। কাঁটা বাছাবাছির সময় কই? তার জন্য বড় মাছ লাগত। নাসরীম বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেই বলে দিয়েছিল, মাছ তার মোটে সহ্য হয় না। আঁশটে গন্ধ লাগে। চিংড়ি তাও চলতে পারে। ফলে পুত্রবধূর জন্য আলাদা ব্যবস্থা। বৃষ্টির আবার স্টু চাই। দিনে একটা করে ডিম সিদ্ধ দিতে বলেছিল ডাক্তার। এত সব বুঝে শুনে বাজার করতে হত গীতানাথবাবুকে। রান্নার লোক ছিল, কিন্তু তারওপর তদারকি চাই। নইলে যে সব গুলিয়ে ফেলবে। মালতীদেবী শুধু তদারকি নয়, নিজেও হাতা খুন্তি চালাতেন। না চালিয়ে উপায় নেই। স্বামীর চিনি কম, তার নুন চলবে না। ছেলে ঝালমশলা খায় না। বৌমার আবার ঝাল পছন্দ। খুদে বৃষ্টির সবই প্রায় সিদ্ধ। এত কিছু কি রান্নার লোক দিয়ে হয়?

    শুধু বাজার আর রান্নাই তো নয়, অত বড় একটা সংসারের সবদিকে নজর দিতে হত। ছেলের বিয়ের আগেই ছাদে ঘর তুলেছিলেন গীতানাথবাবু। প্রবাল খুব ভালো ছেলে। সে খরচ দিতে চেয়েছিল। গীতানাথবাবু রাজি হননি।

    ‘বাবা, রাজি হচ্ছ না কেন? আমার মাইনে তো খুব খারাপ নয়। তাছাড়া… তাছাড়া থাকব তো আমি।’

    গীতানাথবাবু বলেছিলেন, ‘এতদিন তোর মাথা গোঁজার ঠাঁই যখন করতে পেরেছি, তোর বউয়েরও পারব। এখন হুটপাট টাকা খরচ করিস না। কদিন পর সংসার করবি, অনেক খরচ।’

    প্রবাল মালতীদেবীকে গিয়ে ধরেছিল।

    ‘মা, তুমি, বাবাকে বোঝাও। এই বয়েসে এত চাপ নিতে বারণ করো। বাবার চাকরির তো মোটে কটা দিন বাকি। এখন এতগুলো টাকা-পয়সা ব্যবস্থা করবার দরকার কী? বরং আমি অফিস থেকে লোন নিচ্ছি। অল্প অল্প করে কাটবে।’

    মালতীদেবী ছেলের পিঠে হাত দিয়ে হেসে বলেছিলেন, ‘এত ছটফট করছিস কেন? আমাদের তো সারাজীবনই দেখতে হবে। একটা মাত্র ছেলে বলে কথা।’

    প্রবাল রাগ দেখিয়ে বলেছিল, ‘তখন দেখব বলে এখন কি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে হবে?’

    শুধু ছেলে ভালো নয়, ছেলের বউও ভালো। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর শাশুড়ির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়েছিল। দরকারে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে সেবা শুশ্রূষা সব নিজের হাতে করত। একবার সিঁড়িতে পিছলে পড়ে পায়ে চোট পেলেন মালতীদেবী। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে টানা তিন দিন পুত্রবধূ তার পায়ে বরফ ঘষল।

    সেসব সময় বাড়ি একেবারে হইহই করত।

    গীতানাথবাবু মুখ-টুখ ধুয়ে এসে দেখলেন স্ত্রী উঠে পড়েছে। বললেন, ‘তুমিও উঠে পড়েছ?’

    মালতীদেবী বললেন, না, উঠলে হবে? কাজ কি কম? প্রবালের ঘর ঝাড়পোঁচ করতে হবে। কাজের মাসিকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি।’

    গীতানাথবাবু হালকা গলায় করে বললেন, ‘প্রবালের ঘর তো তুমি গত সাত বছর ধরেই ঝাঁড়পোচ করছ। এখনও শেষ হল না?’

    স্বামীর রসিকতা পছন্দ হল না মালতীদেবীর। মশারি গোটাতে গোটাতে বললেন, ‘সাত বছর ধরে গোছানো আর যেদিন ছেলে আসবে সেদিন গোছানো এক হল? খাটের চাদর, জানলার পর্দা পালটাব। বালিশের ওয়াড়গুলোও বদলাতে হবে।’

    গীতানাথবাবু বললেন, ‘সেকী! গত তিনদিন ধরে তো ওই সব করলে!’

    মালতীদেবী ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন, ‘তিনদিন ধরে করছিলাম তো কী হয়েছে, কাল প্রবালের ঘরে ঢুকে মনে হল, পর্দার রংটা বড্ড চড়া হয়ে গেছে। তোমার ছেলের হালকা রং পছন্দ। পর্দা বদলালে তো বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড় সব বদলাতে হবে। হবে না?’

    গীতানাথবাবু হাসি লুকিয়ে বললেন, ‘তা তো বটেই।’

    মালতীদেবী বললেন, ‘বাজারের লিস্ট নিয়েছ তো?’

    গীতানাথবাবু সিরিয়াস গলায় বললেন, ‘অবশ্যই নিয়েছি। এখন সোজা বাজারে যাব। তাড়াতাড়ি উঠেছি ওই কারণে। দেরি করলে ভালো মাছ ফুরিয়ে যাবে।’

    মালতীদেবী বললেন, ‘তাহলে বেরিয়ে পড়। মাসিকে দিয়ে মাছগুলো কাটিয়ে নেব। এখন আর ছোট মাছ ঠিক মতো কাটতে পারি না। বুড়ো হয়েছি, চোখ গেছে। অভ্যেসও নষ্ট হয়ে গেছে।’

    অভ্যেস নষ্ট হওয়ারই কথা। সাত বছর হয়ে গেল প্রবালরা চলে গেছে। প্রথমে গেল ফ্ল্যাট কিনে বালিগঞ্জের কাছে। বৃষ্টির স্কুলের পাশে। মালতীদেবী গাঁইগুই করেছিলেন।

    ‘এখানে কোনো স্কুলে ভর্তি করা যেত না?’

    সুদেষ্ণা অবাক হয়ে বলেছিল, ‘কী বলছেন মা! এখানে ভালো স্কুল!’

    মালতীদেবী বলেছিলেন, ‘কেন? এখানে ভালো স্কুল নেই? প্রবাল তো এখানকার বয়েজ স্কুলে পরেই ইঞ্জিনিয়র হয়েছে।

    সুদেষ্ণা এবার অবাকের সঙ্গে বিরক্তও হল। বলল, ‘মা, আপনার ছেলের সময় আর এখনকার সময় এক নয়। এখন শুধু রেজাল্ট নয়, ব্র্যান্ড ইজ ইকুয়ালি ইমপর্টেন্ট। চাকরির ইন্টারভিউতে স্কুল, কলেজের নাম জানতে চায়। আমি মেয়েকে ভালো স্কুলে না পড়িয়ে লোকাল স্কুলে পড়াব এমন কথা ভাবলেন কী করে!

    মালতীদেবী বলেছিলেন, ‘এখান থেকে যাতায়াত করা যায় না? ওসব স্কুলে তো বাস আছে।’

    পুত্রবধূ ঠান্ডা গলায় বলেছিল, ‘যাতায়াত করা যাবে না কেন মা? অবশ্যই করা যাবে। কিন্তু তাতে আপনার নাতনির খাটনি বেশি হবে। মা, আমি চাই বৃষ্টি লেখাপড়ার জন্য খাটাখাটনি করুক, যাতায়াতের জন্য নয়। আপনি কি চান? সে টায়ার্ড হয়ে স্কুল থেকে ফিরুক এবং হোম ওয়ার্ক না করে ঘুমিয়ে পড়ুক?’

    মালতীদেবী চুপ করে যান।

    ছেলে তার বাবাকে বলেছিল, ‘বালিগঞ্জে গিয়ে থাকলে, বৃষ্টির একার নয়, তোমার বৌমারও অফিস যাতায়াতে সুবিধে হবে। আর এইটুকু তো মোটে পথ। শনিবার রবিবার তো এখানে এসে থাকব। তোমরাও যাবে। একদিক থেকে ভালোই হল। একটা ফ্ল্যাট কেনা রইল। পরে বিক্রি করলে ভালো দাম পাব। ইনকাম ট্যাক্সও বাঁচবে।’

    গীতানাথবাবু বুঝেছিলেন, ছেলে, ছেলের বউ, নাতনিকে ছেড়ে থাকার থেকে ইনকাম ট্যাক্স বাঁচানোটা কম জরুরি নয়।

    দু-চারটে শনি-রবি যাতায়াত হয়েছে। তারপরই নাতনির লেখাপড়ার চাপ শুরু হয়ে গেল। যাতায়াতের বদলে তখন শুধু ফোন। প্রথমে দিনে একবার, পরে সেটা গিয়ে দাঁড়াল সপ্তাহে একবার। তাও কমে গেল। তবে প্রথম ছ’টা মাস প্রবাল নিয়মিত এসেছে। এসেছে মৌ-ও। একবার তো গীতানাথবাবুর ঠান্ডা লেগে এমন কাশি হল যে থামতেই চায় না। সুদেষ্ণা এসে জোর করে এক্স রে করিয়ে আনল। তবে আসা যাওয়া একেবারে কমে গেল। বৃষ্টির স্কুলের সঙ্গে যোগ হল, সিন্থেসাইজার, মার্শাল আর্ট, আবৃত্তি, সুইমিং ক্লাস। সুদেষ্ণা মেয়ের সঙ্গে সাঁতারে যেতে শুরু করল। তার শরীর ভারি হয়ে যাচ্ছে। প্রবালের হল প্রোমোশন। মাসে দু’বার করে বাইরে ট্রেনিং দিতে যেত। এর এক বছরের মধ্যে পুনেতে বদলি হল। বৃষ্টি সেখানে স্কুলে ভর্তি হল। তবে সেখানেও বেশিদিন থাকা হল না। অফিস তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে দুবাই। মস্ত অ্যাপার্টমেন্ট। দুটো গাড়ি। একটা প্রবাল নিজে ব্যবহার করে, অন্যটা ফ্যামিলির। দুবাই যাওয়ার আগে সবাই মিলে বাড়িতে এলো। দুদিন থেকে গেল। দোকান-বাজার করল। মালতীদেবী নাতনিকে কটা জামা কিনে দিলেন। সুদেষ্ণা একটা নিয়ে গেল।

    ‘মা, বাকিগুলো এখানে থাক। দেশে এলে তো পরতে হবে। তাছাড়া এতটা লাগেজ নিয়ে যেতে হবে, না!’

    গত পাঁচ বছরে প্রবাল মাত্র দু’বার আসতে পেরেছে। সে তিনবার কোম্পানি বদলেছে। প্রতিবার প্রায় দ্বিগুণ করে বেতন বাড়িয়েছে। দুবাইয়ের চাকরি যেমন টাকা-পয়সা দেয় তেমন খাটিয়ে মারে। মারবেই তো। দু’বার যে দেশ আসতে পেরেছে এই যথেষ্ট। দেশ আগে না কোম্পানি আগে? সুদেষ্ণা মেয়েকে নিয়ে এসেছিল একবার। বালিগঞ্জের ফ্ল্যাট বিক্রির সময়। যাওয়ার সময় চোখে জল নিয়ে শাশুড়িকে প্রণাম করল।

    ‘দেশে আর ফেরা হবে বলে মনে হয়। বাইরের পরিবেশের সঙ্গে আপনার নাতনি নিজেকে মানিয়ে ফেলেছে। এইবারই তো আসতে চাইছিল না। ওখানে তার নানা ধরনের অ্যাটাচমেন্ট। বন্ধুও হয়েছে অনেক। উইক এন্ডে পার্টি, বেড়াতে যাওয়া। এই সামারে ইউরোপ যাচ্ছি। মেয়ে আসতে না চাইলে আমিই বা কী করে আসি? মেয়েকে তো একা ফেলে আসতে পারব না।’

    মালতীদেবী আঁতকে উঠে বলেছিলেন, ‘উরি বাবা, একেবারে নয়। বিদেশ বিভুইতে মেয়েকে ফেলে কোথাও যাবে না।’

    বাইরে থেকে সুদেষ্ণা একটু মোটা আর চকচকে হয়েছে। সে চোখের জল মুছে হাসি মুখে বলল, ‘মা, আমি জানতাম আপনি আমাদের বুঝবেন। আপনার ছেলেকেও বলেছি। তোমার মা আর পাঁচজন মাদার ইন ল’র মতো নয়। শি ইজ ভেরি রিজনেবল্। আই আম আ লাকি পুত্রবধূ। সাবধানে থাকবেন মা। বাবা যেন একেবারে ঠান্ডা না লাগায়। চিন্তা করবেন না, আমরা না আসতে পারলেও আপনাদের ছেলে সুযোগ পেলেই চলে আসবে। ফেসবুকে যোগাযোগ থাকবে। আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে যাব। স্কাইপ তো রইল। নাতনিকে রোজ রাতে স্কাইপে আপনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব। চিন্তা করবেন না, প্রবাল সময় পেলেই আসবে।’

    মালতীদেবী শান্ত ভাবে বলেন, ‘আমি চিন্তা করছি না।’

    প্রবাল সাড়ে তিন বছর সময় পায়নি। বারবার চেষ্টা করেও পারছে না। গেল বছর তো প্লেনে ওঠবার আগে বাতিল হল। অফিস থেকে মেইল এলো

    ‘দেশের ট্যুর ক্যানসেল করও। তোমাকে টোকিও যেতে হবে।’

    সেই প্রবালের জন্য আজ গীতানাথবাবু সকাল সকাল বাজার থেকে তিনরকম মাছ এনেছেন। মনের মতো মাছ পেয়েছেন। সবথেকে খুশি হয়েছেন পমফ্রেট পেয়ে। কুচো চিংড়িও এনেছেন। প্রবাল একসময় লাউ চিংড়ি খেতে ভালোবাসত। এখন নিশ্চয় ভুলে গেছে। দুবাইতে তো লাউ চিংড়ি পাওয়া যাবে না। মালতীদেবী কাজের মাসিকে দিয়ে মাছ-টাছ কাটিয়ে রান্না চাপিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এতদিন পরে আসছে, তিনি নিজে হাতে সব করবেন। ছেলেও ফোন করে এই কথা বলেছে।

    ‘মা, মাছ ক’রকম হবে?’

    মালতীদেবী হেসে বললেন, ‘আমি কী জানি? তোর বাবা পুরো বাজারটা তুলে আনে কিনা সেটা দেখ। এতদিন পরে ছেলে আসছে।’

    প্রবাল মুখে ‘সুড়ুৎ’ করে আওয়াজ করে বলল, ‘আহা কতদিন পরে যে জমিয়ে লাঞ্চ করব, মা, রান্না কে করবে?’

    মালতীদেবী বললেন, ‘রান্নার লোককে আসতে বলেছি। ওর রান্নার হাতটা ভালো। একসময় তো এ বাড়িতে ছিলই। সুদেষ্ণাকে জিজ্ঞেস করিস। তোরা চলে যেতে আর লাগে না। দুটো মানুষের তো রান্না। ও আমিই করে নিই। কেউ খেলে টেলে বা আমার জ্বরজাড়ি হলে ওকে খবর দিই।’

    ফোনেই তেড়েফুঁড়ে উঠল প্রবাল।

    ‘পাগল হয়েছ? সাড়ে তিন বছর পর বাড়িতে খাব, তোমার হাতের রান্না ছাড়া আমি খাবই না। অন্তত প্রথম কটাদিন তো নয়ই। তুমি রান্না না করলে আমি অনশন করব মা। বাড়ির সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে যাব।’

    মালতীদেবী হাসতে হাসতে বললেন, আমি তো বুড়ো হয়ে গিয়েছি। অত পারি?’

    প্রবাল বলল, ‘ঠিক পারবে। মৌ তো বলে তোমার মা হলেন একজন গ্রেট মহিলা। আমরা তাকে মিস করছি।’

    মালতীদেবী হাসতে হাসতে বললেন, ‘তোর বউ সবসময় বাড়াবাড়ি করে। ইস্ ওরা যদি আসত…।’

    প্রবাল বলল, ‘এই সময়টায় যে তোমার নাতনির একজাম মা। তাছাড়া, তোমার বউমা নতুন যে অফিসে জয়েন করেছে, সেখানে অনেক দায়িত্ব। হুট বলতে ছেড়ে আসা যায় না। মা, বিদেশের সিস্টেম আমাদের মতো নয়। ওখানে ডিউটি, রেসপনসিবিলিটি শব্দটার দাম আছে। ওরা তোমাদের কাছে এতদিন আসতে পারেনি বলে হাঁপিয়ে উঠেছে। ওর তো বাবা-মা কেউ নেই, সো ইউ আর হার গার্জেন। তোমাদের খুব মিস করে।

    মালতীদেবী একটু থেমে থেকে বললেন, ‘হ্যাঁরে প্রবাল, এবার তুই কটা দিন থাকবি তো?’

    প্রবাল উচ্ছাস ভরা গলায় বলল, ‘এবার সময় নিয়ে আসছি। দশদিন, মাঝে অফিসের কাজে কদিন এদিক ওদিক যেতে হবে। ব্যাস, বাকি এরি ডে উইথ বাবা এন্ড মা।’

    রান্না করতে করতে সেসব কথা মনে করে মালতীদেবী মনে মনে হাসছেন।

    গীতানাথবাবু হাত গুটিয়ে বসে নেই। তিনি লোক লাগিয়ে বাড়ির চারপাশ এক প্রস্থ ধুয়ে ফেলেছেন। এবার গেটের কাছের আগাছা পরিষ্কার করাচ্ছেন। দু’দিন আগে করলে ভালো হত। কিন্তু এবার স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ঠিক করেছিলেন, আগে থেকে কিছু করা হবে না। ছেলের আসা বার বার ভেস্তে যায়। সব আয়োজন ব্যর্থ। তাই এবার একবারে প্রবাল আসবার দিন সকালে বাড়িঘর ধোয়াধুয়ি হবে। এসব যে কতদিন করা হয় না। বয়স হয়ে গেছে। একা এত বড় বাড়ি মেইনটেন করাও কঠিন। রোজই কিছু না কিছু লেগে থাকে। আজ এটা ভাঙছে তো কাল সেটায় মরচে ধরছে। বাড়িটাকে নিয়ে চিন্তা। ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রোমোটরদের দু-একজন যোগাযোগ করেছে।

    বাড়িটা বেচে দিন। দুটো মোটে মানুষ। এত বড় বাড়ি রেখে লাভ কী?’ গীতানাথবাবু বলেছিলেন, ‘বাঃ, আমার ছেলে আছে না?’

    প্রোমোটার কান পর্যন্ত হেসে বলল, ‘কাকু ছেলে এদিকে আর আসবে না। অমন ব্রিলিয়ান্ট ছেলে আপনার। মরতে কেন দুবাই ছেড়ে ফিরবে? তার থেকে আপনি বাড়িটার একটা সেটেলমেন্ট করে দিয়ে যান।’

    গীতানাথবাবু বললেন, ‘সেটলমেন্ট মানে!’

    ‘মানে আর কী? বাড়িটা বেচে দিন। আমি ভেঙে ফ্ল্যাটবাড়ি তুলি। আপনি আর কাকিমা একটা ফ্ল্যাটে ঢুকে যান। বাকি টাকা নাতনির নামে ফিক্সড।’

    প্রস্তাব মনে ধরেছে গীতানাথবাবু। এবার প্রবাল এলে কথা বলতে হবে। গীতানাথবাবু হাত উলটে ঘড়ি দেখে চমকে উঠলেন। আরে! সময় হয়ে গেল যে! আর ঘণ্টাখানেক পরেই ফ্লাইট নামবার কথা। মালপত্র ছাড়িয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে পৌছোতে কতক্ষণ? সাড়ে বারোটা-একটার মধ্যে ঢুকবেই। মালতীদেবী রান্না কতদূর? বাথরুমে গিজার চালানো হল?

    গীতানাথবাবু হড়বড় করে বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন। আর তখনই ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠল ঝনঝন করে। থমকে দাঁড়ালেন গীতানাথবাবু। প্রবালের ফোন? দুবাই থেকে? এবারও কি সে আসতে পারল না? ফোন তুললে বিষণ্ণ গলায় কথা বলবে, ‘সরি বাবা। পারলাম না।’

    না, প্রবালের ফোন নয়, রং নম্বর।

    প্রবাল এলো বেলা দুটোয়। প্লেন ঠিক সময় এসেছে, কিন্তু ব্যাগেজ পেতে দেরি হয়েছে। বাড়ি একেবারে হইহই করে উঠেছে। প্রবাল মাতিয়ে দিয়েছে। গাদাখানেক জিনিস নিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে এনেছে একটা টকিং ডল। অনবরত বকর বকর করে। জাপানি জিনিস। একা মানুষের সঙ্গী।

    মালতীদেবী চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘ওমা! আমি বুড়ো মানুষ পুতুল নিয়ে কী করব!

    প্রবাল বলল, ‘গল্প করবে। যখন একা লাগবে পুতুল অন করে কথা শুনবে।’

    ‘দূর, পাগল।’

    সবরকমের মাছ খেল প্রবাল। তবে সময় নিল অনেক। পারশে, ট্যাংরার কাঁটা বাছতে ভুলে গেছে। তাছাড়া খেতে বসে বাবার সঙ্গে গল্প তো শেষই হতে চায় না। খাওয়া বারবার থমকে যায়। রাতেও এক কাণ্ড। খাওয়া- দাওয়ার পর আর এক প্রস্থ আড্ডা। গীতানাথবাবু বাড়ি বিক্রির কথা তুললেন।

    প্রবাল বলল, ‘খেপেছ? বাড়ি কেন বেচবে? হাত-পা ছড়িয়ে থাকবে। মেইনটেইনেন্স দেখবার জন্য আমি লোক ঠিক করে যাচ্ছি। জলের কল, ইলেকট্রিকের লাইন গোলমাল করলে একটা ফোন করে দিলেই হবে। পেমেন্ট আমি দেব।’

    মালতীদেবী ধমকের গলায় বললেল, ‘অনেক হয়েছে। কাল আবার কথা বলবি। এবার শুতে যা দেখি। অতটা পথ জার্নি করে এসেছিস। যা শুয়ে পড়। তোর বাবার কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই।’

    প্রবাল মাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এতটা পথ জার্নি করেই এবার তোমাদের যেতে হবে। সব ব্যবস্থা আমার। পাক্কা তিনমাস থেকে তবে ফেরা। সুদেষ্ণা বৃষ্টিকে আগে কিছু বলব না। তোমরা গিয়ে চমকে দেবে। এবারই তোমাদের পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব। বাবা, কালই আমার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসে যাবে। কদিনের জন্য আমি গাড়ি নিয়ে রেখেছি।’

    মালতীদেবী ছেলের পিঠে হালকা চড় মেরে বললেন, ‘তুই এখন ঘুমোতে যা দেখি।’

    রাতে শুয়ে খানিকটা কাঁদলেন মালতীদেবী। গীতানাথবাবু রাগ করে বললেন, ‘উফ ফ্যাচাফ্যাচানি থামাও তো। ঘুমোতে দাও। কাল কত কাজ। বাজারে যাব, প্রবালকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যেতে হবে, তারপর যদি ছেলে জোর করে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যায় তাহলে আর এক কীর্তি। আর শোনো, কাল ব্রেকফাস্টে কিন্তু লুচি। তোমার ছেলের পছন্দ।’

    মালতীদেবী কান্নামাখা গলায় বললেন, ‘ছেলের কোনটা পছন্দ তা আর মাকে শেখাতে হবে না। ঘুমোতে দাও।’

    পাঠক, হিসেব মতো গল্প এখানেই শেষ হওয়ার কথা। যাকে বলে হ্যাপি এন্ডিং। মন ভালো করা সমাপ্তি। কিন্তু জীবন গোলমেলে। তার গল্প হিসেব মানে না। যেখানে থেমে গেলে ভালো হত, সেখানে থামে না। গীতানাথবাবু আর মালতীদেবীর গল্পও তাই। পাঠক, আসুন দেখি বেহিসেবি জীবন গল্পের কী করল।

    রাতে ঘুমের মাঝে স্ত্রীর গায়ে হাত রাখলেন গীতানাথবাবু। মনে মনে বললেন, ‘কেঁদো না মালতী। দেখো প্রবাল একদিন ঠিক আসবে।’

    মালতীদেবী মনে মনে বললেন, ‘তাই? সত্যি আসবে?’

    গীতানাথবাবু মনে মনে বললেন, ‘হ্যাঁ, সত্যি আসবে। ও তোমাকে ফোন করে বলবে আমি যাচ্ছি মা, আমি তোমাদের কাছে যাচ্ছি। আমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠব, বাজার থেকে ছোট মাছ আনব। তুমি ছেলের ঘর সাজাবে, আমি বাড়ি ধোওয়াব। তুমি রান্না করবে, আমি আগাছা পরিস্কার করব।’

    মালতীদেবী মনে মনে বললেন, ‘ছেলে আমাদের সঙ্গে রাত জেগে গল্প করবে?’

    গীতানাথবাবু মনে মনে বলবেন, ‘অবশ্যই করবে। বাড়ি বিক্রি করতে বারণ করবে। আমাদের ওর কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে। বৃষ্টি তোমাকে কত মনে করছে সে কথা বলবে। কখনও তুমি কাঁদবে, কখনও হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে। আমারও আনন্দ হবে, আমিও দুর্বল হয়ে পড়ব। কিন্তু পুরুষমানুষের জন্য হাসি, কান্না সহজ নয়, তাই গম্ভীর থাকব।

    মালতীদেবী মনে মনে নিশ্চিন্তের হাসলেন। মনে মনেই বললেন, ‘তাহলে আমাদের আর রোজ সকালে ঘুম ভেঙে প্রবালের আসবার মিথ্যে গল্প বানাতে হবে না তো? মিথ্যে মিথ্যে তুমি বাজারে যাবে না? আমি মিথ্যে ঘর সাজাব না?’

    গীতানাথবাবু মনে মনে বললেন, ‘আর কটাদিন মালতী, আর কটাদিন মিথ্যে গল্প নাও। তারপর সব সত্যি হয়ে যাবে।’

    ভোরে যদি কেউ এই বাড়িতে আসে, দেখবে বুড়ো-বুড়ি একে অপরের গায়ে হাত রেখে ঘুমোচ্ছে। ঘুমোচ্ছে বড় নিশ্চিন্তে। একটা সত্যি গল্পের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

    না, এখানেও গল্প শেষ নয়। গল্পের পরেও গল্প থাকে। আর সেটাই হয় নতুন গল্প। রূপকথার মতো সত্যি গল্প। স্বপ্নের মতো সত্যি গল্প।

    সেটা ছিল রবিবার একটা সকাল। খাটে কিছুটা এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লেন গীতানাথবাবু। খাট থেকে ডোরবেল বেজে উঠল। এতো ভোরে কে এসেছে! এই বাড়িতে সারাদিনেও কেউ আসে না। ভোরে তো দূরের কথা। গীতানাথবাবু বিরক্ত হয়ে বারান্দার দরজা খুলে বাইরে গেলেন। ঘুম ভাঙা চোখে বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়ে দেখতে গেলেন, কে এসেছে।

    প্রবাল, সুদেষ্ণা আর বৃষ্টি দঁড়িয়ে আছে সদর দরজায়। গীতানাথবাবুকে দেখতে পেয়ে বৃষ্টি চিৎকার করে উঠল।

    ‘দাদু, সারপ্রাইজ…সারপ্রাইজ।’

    গীতানাথবাবুকে বিশ্বাস হচ্ছে না। তাঁর হাত পা কাঁপছে। ছেলে বৌমা কিছু না জানিয়ে চলে এসেছে! তিনি চিৎকার করে উঠলেন।

    ‘মালতী, ওঠো দেখ, কারা এসেছে।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআনন্দমেলা রহস্য গল্পসংকলন – সম্পাদনা : পৌলোমী সেনগুপ্ত
    Next Article নীল আলোর ফুল – প্রচেত গুপ্ত

    Related Articles

    প্রচেত গুপ্ত

    দেরি হয়ে গেছে – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    পঞ্চাশটি গল্প – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    ধুলোবালির জীবন – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    রুপোর খাঁচা – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    মাটির দেওয়াল – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    প্রচেত গুপ্ত

    নুড়ি পাথরের দিনগুলি – প্রচেত গুপ্ত

    September 18, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }