Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প340 Mins Read0

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৫

    অধ্যায় ১৫

    চায়ের দোকান কাম ক্যাফেটার নাম ‘কুযে’। পূর্ব টোকিওর নিহোনবাশি ডিস্ট্রিক্টে একটা অফিস বিল্ডিংয়ের নিচতলায় অবস্থিত দোকানটা। সুতিনেগু অ্যাভিনিউ থেকে খুব একটা দূরে নয়। বিক্রি বাট্টার জন্যে একদম আদর্শ অবস্থান বেছে নিয়েছে দোকানটার মালিক। অফিস শুরুর আগে কিংবা লাঞ্চের সময় রীতিমত ভিড় লেগে যায়।

    কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সেলস কাউন্টারে চলে গেল কুসানাগি। একজনের কাছে শুনেছে, দোকানটায় না কি প্রায় পঞ্চাশ ধরণের চা বিক্রি করা হয়। কথাটা যে ভুল শোনেনি তার প্রমাণ সামনে দেখতে পাচ্ছে। কাউন্টারের পেছনে একটা শেলফে নানা রকম চায়ের ডিসপ্লে। ভেতরের দিকে ছোট্ট একটা ‘টি-রুম’। বিকালের এই পড়ন্ত প্রহরেও জায়গাটা গমগম করছে খদ্দেরদের উপস্থিতিতে। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ সামনে রেখে উপন্যাস কিংবা মাঙ্গা পড়ায় ব্যস্ত অনেকে। কয়েকজন আবার চায়ের কাপে ঝড় তুলে মেতে আছে আড্ডায়। তবে অবাক করার বিষয় হলো বেশিরভাগ খদ্দেরই নারী।

    সাদা অ্যাপ্রোন পরিহিত একজন ওয়েট্রেস হাসিমুখে এগিয়ে এলো ওর দিকে। “আপনি কি একাই এসেছেন?” জিজ্ঞেস করল সে।

    কুসানাগি জানে যে তার মত বেশভূষার খুব বেশি খদ্দের এখানে আসে না। “হ্যাঁ।”

    মাথা নেড়ে দেয়ালের পাশে পাতা একটা টেবিল দেখিয়ে দিল ওয়েট্রেস। মুখের মেকি হাসিটা এখনও অটুট।

    বিশাল মেন্যুতে নানারকম চায়ের নাম লেখা। গতকালকের আগে এগুলোর বেশিরভাগেরই নাম আগে কখনো শোনেনি কুসানাগি। কিন্তু এবারে কিছু কিছু চা চিনতে পারছে কারণ ইতোমধ্যেই চারটা চায়ের দোকান ঘোরা হয়ে গেছে তার। এমনকি কয়েক ধরণের চা চেখেও দেখেছে। ওয়েট্রেসকে ডেকে ইন্ডিয়ান ‘মশলা চা’ অর্ডার করল। আগের ক্যাফেগুলোতে শুনেছে, আসামের চা-পাতার সাথে দুধ এবং বিশেষ কিছু মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই চা। খেতেও বেশ সুস্বাদু। “আমি ভাবছিলাম,” বলে মানিব্যাগ থেকে নিজের একটা কার্ড বের করে ওয়েট্রেসের হাতে দিল কুসানাগি। “আপনাদের ম্যানেজারের সাথে কিছুক্ষণের জন্যে কথা বলা যাবে কি না।“

    কার্ডের দিকে একবার তাকাতেই হাসি মুছে গেল ওয়েট্রেসের চেহারা থেকে। দ্রুত আশ্বাসের ভঙ্গিতে হাত উঁচু করল কুসানাগি। “দুশ্চিন্তার কিছু নেই, খুব গুরুতর কিছু না,” বলল সে। “আপনাদের একজন কাস্টমার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করবো।”

    “অপেক্ষা করুন। দেখছি।”

    “ধন্যবাদ,” বলে পকেট থেকে সিগারেট বের করতে যাবে এমন সময় দেয়ালে ঝোলানো ‘ধূমপান নিষেধ’ সাইনটা চোখে পড়লো ডিটেক্টিভের।

    আরেকবার পুরো দোকানটায় নজর বোলালো সে। বাইরে হৈ হট্টগোলের তুলনায় ভেতরের পরিবেশটা একদমই আলাদা। দু’জন বসার জন্যে যে টেবিলগুলো আছে, সেগুলো এমন জায়গায় রাখা হয়েছে যাতে ডেট করতে আসা যুগলরা নির্বিঘ্নে আলাপ করতে পারে। ইয়োশিতাকা মাশিবার এরকম জায়গাতেই আসার কথা। তবে আশার পারদ আগেই উঁচু করল না কুসানাগি। অন্য যে চায়ের দোকানগুলোতে গিয়েছিল সে, ওগুলোর সাজসজ্জাও এরকমই ছিল।

    কিছুক্ষণ পর কালো রঙের ভেস্ট আর সাদা শার্ট পরিহিত একজন মহিলা এসে দাঁড়ালো কুসানাগির টেবিলের পাশে। চাপা উদ্বেগ খেলা করছে তার চেহারায়। খুব বেশি মেক-আপ দেয়নি সে, চুলগুলো পেছনে পনি- টেইল করে বাঁধা। ত্রিশের আশপাশে হবে বয়স।

    “কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”

    “হ্যালো,” মৃদু হেসে বলল কুসানাগি। “ডিটেক্টিভ কুসানাগি, মেট্রোপলিটন পুলিশ। আপনি?”

    “হামাদা।”

    “আমাকে সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। খুব বেশিক্ষণ লাগবে না। বসুন, প্লিজ,” উল্টোপাশের চেয়ারটার দিকে নির্দেশ করল কুসানাগি। পকেট থেকে ইয়োশিতাকা মাশিবার একটা ছবি বের করে রাখলো টেবিলের ওপর। “এনাকে কি এখানে আগে কখনো দেখেছেন আপনি? এই ধরুন বছর দুই আগে?”

    ছবিটা সামনে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো হামাদা। “পরিচিত ঠেকছে, কিন্তু ঠিক নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। আমাদের কাস্টমার সংখ্যা খুব একটা কম নয়, তাছাড়া তাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকাটাও অশোভন।“

    ঠিক এই উত্তরটাই আগের দোকানগুলোতেও পেয়েছে কুসানাগি। “তিনি খুব সম্ভবত একজন মহিলার সাথে আসতেন এখানে…” বলল সে।

    হেসে কাঁধ ঝাকালো হামাদা। “অনেকেই স্বামী কিংবা বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসেন এখানে,” বলে ছবিটা টেবিলে নামিয়ে রাখলো সে।

    মাথা নাড়লো কুসানাগি, ঠোঁটের হাসিটা আগে থেকে পাতলা হলেও এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি তার। আসলে সে ধরেই নিয়েছিল, হতাশ হতে হবে। তবে পরপর চারটা দোকানে একই কথা শোনাটা একটু ক্লান্তিকর।

    “আর কিছু জানতে চান কি?”

    “না, ধন্যবাদ।”

    ম্যানেজার উঠে চলে গেলে কুসানাগির অর্ডার করা চায়ের কাপ নিয়ে হাজির হলো ওয়েট্রেস। ওটা টেবিলে নামিয়ে রাখার আগে ছবিটার দিকে চোখ পড়লো তার।

    “দুঃখিত,” বলে ছবিটা টেবিল থেকে উঠিয়ে নিল কুসানাগি।

    কিছু না বলে কৌতূহলী চোখে ডিটেক্টিভের দিকে তাকিয়ে রইলো ওয়েট্রেস। কাপ-পিরিচ এখনও হাতে তার।

    “কিছু বলবেন?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

    “আপনি কি এনার ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই এসেছেন?” দ্বিধান্বিত স্বরে বলল ওয়েট্রেস।

    অবাক হলেও চেহারায় সেটার ছাপ পড়তে দিল না কুসানাগি। “আপনি চেনেন তাকে?”

    “হ্যাঁ…মানে, কাস্টমার হিসেবেই চিনি।”

    এসময় আবারো ফিরে এলো ম্যানেজার। এতক্ষণ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ওদের কথোপকথন শুনছিল। “আসলেই?” ওয়েট্রেসকে জিজ্ঞেস করল সে। “চেনো তাকে তুমি?”

    “হ্যাঁ,” বলল ওয়েট্রেস। “বেশ কয়েকবার এসেছিলেন আমাদের দোকানে,” নিচু স্বরে কথাগুলো বললেও নিজের স্মৃতির ওপর ভরসা আছে বলেই মনে হলো তার।

    “আমি ওনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে চাই। সমস্যা হবে?” ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

    “না, কিসের সমস্যা,” দ্রুত বলে অন্য একজন খদ্দেরকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে গেল মহিলা।

    ওয়েট্রেসকে সামনের চেয়ারের বসার আহ্বান করল কুসানাগি। “তাকে প্রথম কবে দেখেছিলেন আপনি?”

    “প্রায় তিন বছর আগে হবে…” ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে ওয়েট্রেস। “তখন কেবলই এখানে চাকরি শুরু করেছি। আমার সার্ভিস নিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাই মনে আছে।”

    “তিনি কি একাই ছিলেন?”

    “না, সবসময় তার স্ত্রীর সাথে আসতেন।“

    “স্ত্রী? তার চেহারা মনে আছে আপনার?”

    “সুন্দরি ছিলেন মহিলা। লম্বা চুল, ফর্সা। পুরোপুরি জাপানিজ না, ইউরেশিয়ান।”

    আয়ানে মাশিবা নয় তাহলে, কুসানাগি ভাবলো মনে মনে। তাছাড়া তিন বছর আগে মি. মাশিবার সাথে তার দেখা হওয়ারও কথা না।

    “বয়স?”

    “ত্রিশের মতন। খানিকটা বেশিও হতে পারে।”

    “তারা যে বিবাহিত এটা কিভাবে বুঝলেন?”

    “আসলে…” ভ্রুকুটি করল ওয়েট্রেস, “আমি ধরে নিয়েছিলাম। তাদের দেখে বিবাহিত দম্পতিদের মতনই মনে হতো। শপিং শেষে প্রায়ই আসতেন।”

    “ভদ্রলোকের সঙ্গীর ব্যাপারে আর কিছু মনে আছে আপনার? কিছু জানাতে পারলে আমাদের খুব লাভ হতো।”

    দুশ্চিন্তার ছাপ পড়লো তরুণীর চেহারায়। “আমার ধারণা তিনি একজন চিত্রশিল্পী,” বলল সে। “এটাও আমি আন্দাজ করে নিয়েছিলাম।”

    “চিত্রশিল্পী…মানে আর্টিস্ট?”

    মাথা নেড়ে কুসানাগির দিকে তাকালো ওয়েট্রেস। “একবার সাথে করে একটা স্কেচবুক নিয়ে এসেছিলেন…সাইজ দেখে অমনটাই লাগছিল,” দুই হাত প্রসারিত করে দেখালো সে।

    “কিন্তু ভেতরে কী আছে সেটা দেখেননি আপনি?”

    “না,” বলে আবারও মাথা নামিয়ে নিল তরুণী।

    কুসানাগির এ সময় মনে হলো যে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা বলেছিল ইয়োশিতাকার প্রাক্তন এক প্রেমিকা খুব সম্ভবত প্রকাশনা জগতের সাথে সম্পৃক্ত। হয়তো আর্টবই ছাপাতো সে। কিন্তু ইয়োশিতাকা তো বলেছিল, প্রেমিকার বই সম্পর্কে মতামত দিতে ভালো লাগতো না তার। ছবির বইয়ের ব্যাপারে মতামত দিতে আবার বিরক্তি কিসের?

    “আর কিছু খেয়াল করেছিলেন?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

    মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিল ওয়েট্রেস, তার চোখে কৌতূহল ফিরে এসেছে আবার। “তারা কি বিবাহিত ছিলেন না?”

    “মনে হয় না। কেন?”

    “মানে…আমার সবকিছু পরিস্কার মনে নেই…” বলে কপালে হাত রাখলো মেয়েটা। “কিন্তু কয়েকবার তাদের বাচ্চাদের ব্যাপারে কথা বলতে শুনেছিলাম। মানে, বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে। আমার ভুলও হতে পারে…হয়তো অন্য কোন দম্পতির সাথে গুলিয়ে ফেলছি তাদের।”

    পেয়ে গেছি, ভেতরে ভেতরে উচ্ছসিত হয়ে উঠল কুসানাগি। তাহলে ইয়োশিতাকা আর তার প্রাক্তন প্রেমিকা এখানেই আসতো।

    ওয়েট্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়ে চায়ের কাপটা তুলে নিল সে। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, কিন্তু মশলা, চা আর দুধের মিশ্রণটা তবুও খেতে ভালো লাগছে।

    চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে লাগলো, কিভাবে এই চিত্রশিল্পীকে খুঁজে বের করবো। এ সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠলে পকেট থেকে সেটা বের করে ডিসপ্লের দিকে তাকাতেই উচ্ছসিত ভাবটা উবে গেল। মানাবু ইউকাওয়া। স্বয়ং ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও ফোন দিয়েছে তাকে। “কুসানাগি বলছি,” নিচু গলায় বলল সে, যাতে অন্য খদ্দেরদের সমস্যা না হয়।

    “আমি, ইউকাওয়া। কথা বলতে পারবে?”

    “হ্যাঁ, কিন্তু একটু আস্তে কথা বলতে হবে। হঠাৎ করে আমাকে ফোন দিলে যে?”

    “তোমার সাথে একটা ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আজকে সময় হবে?”

    “চেষ্টা করলে সময় বের করতে পারবো, যদি জরুরি হয় ব্যাপারটা। কোন ব্যাপারে কথা বলবে?”

    “ সামনাসামনি বিস্তারিত বলবো, শুধু এটুকু জেনে রাখো, তোমার বর্তমান কেসটার ব্যাপারে।“

    লম্বা শ্বাস ছাড়লো কুসানাগি। “তুমি আর উতসুমি মিলে নতুন কোন গোপন ফন্দি আটছো না ত?”

    “গোপন ফন্দি হলে কি তোমাকে ফোন করে বলতাম? দেখা করবে কি না?”

    গোঁয়ার কোথাকার, শুকনো হাসি ফুটলো কুসানাগির ঠোঁটে। “ঠিক আছে, কোথায় দেখা করতে চাও?”

    “তোমার যেখানে ইচ্ছা, শুধু জায়গাটা ধূমপান মুক্ত হলেই হবে। আশা করি কিছু মনে করবে না,” তার কন্ঠস্বরে অবশ্য এটা স্পষ্ট যে কুসানাগির কিছু মনে করাতে তার যায় আসে না।

    কি নাগাওয়া স্টেশনের কাছে একটা কফি শপে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল ওরা। আয়ানের হোটেলটা কাছেই। কুসানাগি ঠিক করেছে ইউকাওয়ার সাথে আলাপ সেরে আয়ানের সাথে দেখা করবে। আর্টিস্ট মহিলার ব্যাপারে কিছু জানা যায় কি না দেখবে।

    কফি শপে পৌঁছে দেখলো ইতোমধ্যেই সেখানে চলে এসেছে ইউকাওয়া। পেছনের দিকে একটা টেবিলে বসে পত্রিকা পড়ছে। শীত শীত আবহাওয়া সত্ত্বেও একটা হাফ হাতা টি-শার্ট পরনে তার। চেয়ারে কালো রঙের জ্যাকেট ভাঁজ করে রাখা।

    কুসানাগি টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। একবার ফিরেও তাকালো না ইউকাওয়া। “এত মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছো?” একটা চেয়ার টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করল ডিটেক্টিভ।

    “ডায়নোসরদের ব্যাপারে একটা আর্টিকেল,” পত্রিকায় টোকা দিয়ে বলল ইউকাওয়া। “ফসিলগুলো ক্যাট স্ক্যান করার কথা ভাবছে এরা।”

    “বিজ্ঞান পত্রিকা তাহলে,” কিছুটা হতাশ কণ্ঠে বলল কুসানাগি। সে ভেবেছিল চমকে দিতে পারবে পদার্থবিদকে। “কতগুলো পুরনো হাড্ডি ক্যাট স্ক্যান করে কি লাভ?”

    “হাড্ডি না, ফসিল, “ অবশেষে মুখ তুলে তাকালো ইউকাওয়া। এক হাতে নাকের ওপর নেমে আসা চশমা ঠিক করে নিল।

    “দুটোর মধ্যে তফাত কি? সব ডায়নোসর ফসিলই তো হাড্ডি।”

    “তোমার এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে,” আমুদে ভঙ্গিতে বলল ইউকাওয়া। “সব সময় যেটা ভাবি সেটাই বলো। কখনো ব্যতিক্রম হয় না।”

    “ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমাকে গর্দভ বলছো তো?”

    এসময় একজন ওয়েটার অর্ডার নেয়ার জন্যে আসলে টমেটো জ্যুসের কথা বলল ডিটেক্টিভ।

    “হঠাৎ টমেটো জ্যুস?” ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল ইউকাওয়া। “স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখছো না কি ইদানীং?”

    “এখন কফি বা চা খেতে ইচ্ছা করছে না। কোন সমস্যা? এসব কথা ছাড়ো। কেন ডেকেছো বলো।”

    “ফসিল নিয়ে তোমাকে আরেকটু জ্ঞান দিতে পারলে ভালো হতো, থাক বাদ দাও,” কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল ইউকাওয়া। “ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কফিতে বিষ মেশানো সম্পর্কে আমার আইডিয়ার ব্যাপারে কি বলেছে শুনেছো?”

    “হ্যাঁ। জেলাটিন ব্যবহার করলে সেটার অস্তিত্ব সামান্য পরিমাণে হলেও পাওয়া যেতো। অর্থাৎ এভাবে বিষ মেশানো হয়নি। গ্যালিলিও সাহেবেরও মাঝে মাঝে ভুল হয়।”

    “আমি কিন্তু শুধুমাত্র একটা থিওরির কথা বলেছিলাম। তোমার যদি ধারণা থাকে যে থিওরি দেয়ামাত্রই তা ঠিক প্রমাণিত হবে, তাহলে আর তর্ক করে লাভ নেই। তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র না, মাফ করে দিলাম যাও।”

    “এবার তোমার ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, এটা মেনে নিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। এত ভণিতার কোন দরকার দেখছি না।“

    “থিওরি ভুল প্রমাণিত হওয়াও কিন্তু সঠিক পথের দিকে একটু হলেও এগিয়ে যাওয়া। এতে আমরা কফিতে বিষ মেশানোর সম্ভাব্য একটা পথ বাদ দিতে পারলাম।”

    কুসানাগির টমেটো জ্যুস এসে পড়লো এ সময়। ট্রে-তে রাখা টা উপেক্ষা করে এক চুমুকেই পুরোটা সাবাড় করে ফেলল সে। পরপর কয়েক কাপ চা খাবার পর স্বাদের এই ভিন্নতাটুকু ভালোই লাগলো।

    “কফিতে বিষ মেশার কেবল একটা উপায়ই আছে,” কুসানাগি বলল। “কেউ একজন সরাসরি কেতলিতে মিশিয়েছে আর্সেনাস এসিড। আর সেই ‘কেউ একজন কে তা জানা যায়নি। খুব সম্ভবত মি. মাশিবাই নিমন্ত্রণ করেছিলেন তাকে বাসায়।“

    “তাহলে তোমার মতে পানিতে বিষ মেশানো হয়নি?”

    “আমার মতে না, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের মতে। ওদের কাজের ওপর ভরসা আছে আমার। কোন বোতলেই বিষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ পানিতে বিষ ছিল না।”

    “উতসুমির ধারণা বোতলগুলো ধোয়া হয়েছিল ব্যবহারের পর।”

    “হ্যাঁ, শুনেছি। ওর মতে ভিক্টিম নিজেই বোতলটা ধুয়েছে। কিন্তু আজ অবধি কাউকে পানির বোতল ধুতে দেখিনি। এটা যদি কোক বা সেভেন আপের বোতল হতো, তাহলে মানতাম। কিন্তু মিনারেল ওয়াটারের বোতল কেন ধুবে কেউ?”

    “কিন্তু এটা একটা সম্ভাবনা হতে পারে, তা তো স্বীকার করছো?”

    নাক দিয়ে শব্দ করল কুসানাগি। “এই যুক্তির পক্ষে বাজি লাগাবো না আমি। তুমি আমাকে কতদিন ধরে চেনো, ইউকাওয়া? এতদিনে তো এটা বুঝে যাবার কথা যে চোখের সামনে যে প্রমাণটা জ্বলজ্বল করছে, সেটাই বেছে নেয়া আমার স্বভাব। অতিরিক্ত প্যাঁচ কখনোই ভালো লাগেনি।”

    “আমি স্বীকার করছি, তুমি যে পথে এগোচ্ছো এখন, সেটায় কোন ভুল নেই। বরং এই পথেই আগে থেকে তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু একটা কথা ভুলে যেও না, সবকিছুরই ব্যতিক্রম থাকে। বিজ্ঞানে তাই সব সম্ভাবনাই সমান গুরুত্বপূর্ণ,” বলে গম্ভীর দৃষ্টিতে ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো ইউকাওয়া, “একটা অনুরোধ আছে আমার।

    “বলো।”

    “মার্শিবাদের বাসায় আরেকবার যেতে চাই আমি। তোমার কাছে একটা চাবি আছে নিশ্চয়ই। নিয়ে যাবে?”

    ভূকুটি করে পদার্থবিদের দিকে তাকালো কুসানাগি। “কি দেখবে আবার? উতসুমি সেদিন তোমাকে সবকিছু দেখায়নি?”

    “হ্যাঁ, কিন্তু সেদিনের পর…একটু অন্যভাবে ভাবার চেষ্টা করছি।”

    “কিরকম?”

    “বলতে পারো ভিন্ন একজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি এখন পুরো ব্যাপারটা। হয়তো আসলেও ভুল করেছিলাম আগেরবার। এবারে নিশ্চিত হতে চাই।”

    “একটু খুলে বলবে?” টেবিলে আঙুল দিয়ে শব্দ করতে করতে বলল কুসানাগি।

    ওখানে গিয়ে বলবো, যদি আসলেও বুঝতে পারি যে সেদিন ভুল করেছিলাম। আমাদের দু’জনের জন্যেই সেটা ভাল হবে, বিশ্বাস করো।“

    চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে একবার লম্বা শ্বাস ছাড়লো কুসানাগি। “কি চলছে তোমার মনে, ইউকাওয়া? উতসুমির সাথে তুমি কোন ফন্দি এঁটেছো, তাই না?”

    হেসে উঠল ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও। “আন্দাজে কিছু বোলো না এখনই। তুমি তো জানোই, এই কেসটার ব্যাপারে আমার আগ্রহের একমাত্র কারণ এর সুষ্ঠু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়া। আর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় যে কোন বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই বেশি, সেটা কি আবারো তোমাকে বলতে হবে? তাছাড়া এবার যদি মাশিবাদের বাসায় যাওয়ার পরে আমার আগ্রহটা কমে যায়, তাহলে আর তোমাকে জ্বালাতন করবো না।”

    বন্ধুর চোখের দিকে তাকালো ডিটেক্টিভ। বরাবরের মতনই শীতল দৃষ্টি খেলা করছে সেখানে। তার মাথায় কি ঘুরছে তা ধারণাই করতে পারছে না কুসানাগি। অবশ্য এটা নতুন কিছু না। সে জানে, একটা পর্যায়ে গিয়ে ইউকাওয়া চাইলে নিজে থেকেই সবকিছু জানাবে। আগেও এমনটা হয়েছে বহু বার।

    “মিসেস মাশিবার সাথে কথা বলে নেই, দাঁড়াও,” বলে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করল কুসানাগি। ক্যাফের এক কোণায় গিয়ে আয়ানের নম্বর ডায়াল করল। “হ্যালো, ডিটেক্টিভ কুসানাগি বলছি। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কিন্তু আরেকবার আপনার বাসায় যেতে হবে আমাকে, একটা জরুরি কাজে।”

    দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে এলো ওপাশ থেকে। “প্রতিবার ওখানে যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার কোন দরকার নেই,” আয়ানে বলল। “আপনারা তো ঘটনাটার তদন্ত করছেন। সেটার জন্যে যখন ইচ্ছে যাবেন, আমার কোন সমস্যা নেই। আশা করি এবারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চোখে পড়বে আপনার।”

    “ধন্যবাদ, ওখানে গিয়ে গাছগুলোতে পানিও দেব।”

    “খুব ভালো হবে তাহলে, ধন্যবাদ আপনাকে।”

    টেবিলে ফিরে এলো কুসানাগি। উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ইউকাওয়া।

    “কিছু বলবে?”

    “না, আমি ভাবছিলাম ফোনে কথা বলার জন্যে উঠে গেলে কেন তুমি?” ইউকাওয়া প্রশ্ন করল। “গোপন কোন কথা ছিল না কি?”

    “নাহ! গোপন আবার কি কথা? শুধু তার কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছিলাম।”

    “ওহ।”

    “সমস্যা কি?” কুসানাগির কণ্ঠে বিরক্তি।

    “নাহ, ওরকম কিছু না। তুমি যখন ফোনে কথা বলছিলে তখন তোমাকে ডিটেক্টিভ কম সেলসম্যান বেশি মনে হচ্ছিলো। মি. মাশিবার সাথে এত সাবধানে কথা বলার কারণ কী?”

    “তার অবর্তমানে তার বাসায় যাবো কি না, এটা জিজ্ঞেস করছিলাম। সাবধানী হবো না?” বলে টেবিল থেকে বিলটা উঠিয়ে নিল কুসানাগি। “চলো যাই এখন। দেরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।“

    স্টেশনের পাশ থেকে একটা ক্যাব ডেকে নিল ওরা। পেছনের সিটে বসামাত্র পকেট থেকে আবারো ম্যাগাজিনটা বের করে পড়া শুরু করে দিল ইউকাওয়া।

    “তুমি একটু আগে বলছিলে যে সব ডায়নোসর ফসিলই হাড্ডি, কিন্তু এই ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। বরং এই ধারণার কারণে অনেক বড় বড় প্যালেয়োন্টোলজিস্টও ভুল করে মূল্যবান ফসিল নষ্ট করেছেন।”

    আবার শুরু হলো লেকচার। “আমি জাদুঘরে যত ডায়নোসর ফসিল দেখেছি, সবই হাড্ডি।”

    “সেটা ঠিক। কারণ অন্য সবকিছু ওরা ফেলে দিয়েছে।”

    “অন্য সবকিছু? যেমন?”

    “ধরো তুমি গর্ত খুঁড়তে গিয়ে কিছু ডায়নোসরের হাড্ডি পেলে। স্বভাবতই তুমি আগ্রহী হয়ে উঠে সবকিছুই খুড়ে বের করার চেষ্টা করবে, যাতে ধূলো ময়লা ঝেড়ে একটা পূর্ণাংগ ডায়নোসর কঙ্কাল দাঁড় করাতে পারো। এরপর মন্তব্য করা শুরু করবে। ‘টায়রানোসোরাসের চোয়াল তাহলে এরকম দেখতে ছিল!’ বা ‘কত ছোট ছোট পা’। কিন্তু আদতে তুমি বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছো। ২০০০ সালে একটা প্রত্নতাত্ত্বিক দল মাটি খুঁড়ে কিছু ফসিল বের করে। এরপর কোনরকম পরিস্কার করা ছাড়াই সেগুলোর ক্যাট স্ক্যানের সিদ্ধান্ত নেয়। কি পেয়ছিল জানো? পুরো হৃৎপিণ্ড। কঙ্কালের ফাঁকে জমা হওয়া ময়লাগুলোর কারণে জন্তুটার সব অঙ্গের আকৃতি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। তাই বর্তমানে সব ফসিলেরই ক্যাট স্ক্যান করা হয়।”

    “তাহলে তো ব্যাপারটার গুরুত্ব আছে,” অনিচ্ছাসত্ত্বেও বলল কুসানাগি। “কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যে কেসের সাথে এটার কোন সম্পর্ক আছে কি না। না কি তুমি সময় কাটানোর জন্যে কথাগুলো বলছো?”

    “যখন আমি প্রথম এই ঘটনাটার কথা পড়ি, আমার কি মনে হয়েছিল জানো? প্রকৃতি কয়েক কোটি বছর ধরে আমাদের চোখের সামনেই গোটা ব্যাপারটা গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এখানে প্যালেয়োন্টোলজিস্টদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা অপ্রয়োজনীয় মনে করেই ময়লাগুলো ঝেরে ফেলেছিল। কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে যে এই ‘অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর গুরুত্ব কোন অংশেই কম না,” বলে ম্যাগাজিনটা বন্ধ করল ইউকাওয়া। “আমি তোমাকে আগেও একটা একটা করে সম্ভাব্য উপায় বাদ দেয়ার পদ্ধতিটার কথা বলেছি। এতে করে একসময় কেবল সত্যটাই আমাদের সামনে থাকবে। কিন্তু আমরা যদি শুরুতেই বড় একটা ভুল করে ফেলি, তাহলে হিতে বিপরীত হবে। মানে প্রায় সময়েই হাড্ডিগুলোর প্রতি আমাদের এতই আগ্রহ থাকে যে, গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই চোখ এড়িয়ে যায়!”

    তাহলে এই লেকচারের সাথে কেসের কোন না কোন সম্পর্ক আছে। হেঁয়ালি না করে আসল কথা বললেই পারে, ভাবলো কুসানাগি। “তোমার ধারণা আমরা কফিতে বিষ কিভাবে মিশলো সেটার ব্যাপারে ভুল ধারণা করেছি?”

    “সেটাই পরীক্ষা করে দেখতে যাচ্ছি এখন। এটা খুবই সম্ভব যে আমাদের খুনির মাথা একদমই ঠাণ্ডা এবং তার চিন্তা করার ধরণও বেশ বিজ্ঞান সম্মত,” যেন নিজেকেই কথাগুলো বলল ইউকাওয়া।

    মাশিবাদের বাসাটা একদম অন্ধকার আর চুপচাপ। চারপাশে কোন কোলাহল নেই। পকেট থেকে চাবিটা বের করল কুসানাগি। সে অবশ্য দু’টা চাবিই আয়ানেকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বলে যে তদন্তের কাজে একটা চাবি লাগতে পারে, তাই ওটা যেন কুসানাগি নিজের কাছে রেখে দেয়। তাছাড়া খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার ইচ্ছেও নেই তার।

    “শেষকৃত্যের আয়োজন তো শেষ? বাসায় আর কিছু হবে?” জুতা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল ইউকাওয়া।

    “এ ব্যাপারে কিছু বলেননি মিসেস মাশিবা। তার স্বামী অবশ্য খুব একটা ধার্মিক গোছের ছিলেন না। একটা ফিউনারেল হোমে পুষ্পার্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। দেহ ভস্ম করে ফেলা হয়েছে। মনে হয় না আর কোন আয়োজন আছে।”

    “এরকমটাই করা উচিত সবার ক্ষেত্রে। মারা যাবার আগে ভাবছি আমিও এরকম কিছুর নির্দেশ দিয়ে যাব।”

    “যেয়ো,” কুসানাগি বলল। “আমি সব আয়োজন করবো দরকার হলে।”

    ভেতরে ঢুকে দ্রুত হলওয়ে পার হয়ে গেল ইউকাওয়া। তার পেছন পেছন না গিয়ে ওপর তলায় মাস্টার বেডরুমে চলে আসলো কুসানাগি। ব্যালকনিতে যাবার স্লাইডিং ডোরটা খুলে অন্যপাশে রাখা ওয়াটারিং ক্যানটা তুলে নিল। গতদিন হোম রিপেয়ার সেন্টার থেকে এটাই কিনেছে সে ফুলগাছগুলোতে পানি দেয়ার জন্যে।

    ক্যানটা হাতে নিচে নেমে আসলো সে। ইউকাওয়া আবারো সিঙ্কের নিচে কি যেন পরীক্ষা করে দেখছে।

    “ওখানে তো গতবারও দেখেছিলে,” বলল সে।

    “তোমাদের ফোর্সের লোকজন তো প্রায়ই চিরুনী অভিযানের কথা বলে। ধরে নাও ব্যাপারটা অমনই,” ইউকাওয়া পাল্টা জবাব দিল। সিঙ্কের নিচে অন্ধকার জায়গাটা একটা পেনলাইট দিয়ে দেখছে সে। “নাহ, এখানে কেউ কিছু ছোঁয়নি।”

    “গতবার খেয়াল করোনি?”

    “করেছিলাম। কিন্তু আরেকবার নিশ্চিত হতে তো ক্ষতি নেই। আমাদের সামনে ধরে নাও একটা ডায়নোসর ফসিল আছে। ভুল করে জরুরি জিনিস ফেলে দিলে চলবে না,” বলে উঠে দাঁড়ালো ইউকাওয়া। কুসানাগির দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল তার। “ওটা কি?”

    “গাছে পানি দেয়ার ক্যান দেখোনি আগে কখনো?”

    “ওহ, গতবার তো কিশিতানিকে বলেছিলে গাছে পানি দেয়ার কথা। এটাও কি এখন তোমাদের কাজের অন্তর্গত না কি? ভিক্টিমের বাসার গাছে পানি দেয়া? পাবলিক সারভেন্ট থেকে শুধু সারভেন্ট হয়ে যাচ্ছো দেখি।“

    “যত ইচ্ছে হাসো,” বলে সিঙ্কের থেকে পানি নেয়ার জন্যে এগিয়ে এলো কুসানাগি। ট্যাপের নিচে ক্যানটা রেখে কলের চাবি ঘুরিয়ে দিল পুরোপুরি।

    “ক্যানটা কিন্তু অনেক বড়,” ইউকাওয়া মন্তব্য করল। “কোন হোস পাইপ নেই বাগানে?”

    “এটা ওপরতলার ফুলগাছগুলোতে পানি দেয়ার জন্যে। ব্যালকনিতে অনেকগুলো গাছ লাগিয়েছেন মিসেস মাশিবা।“

    “পুলিশের লোকের কাজের কোন শেষ নেই,” হেসে বলল ইউকাওয়া। ওপরতলায় এসে গাছগুলোতে পানি দেয়া শুরু করল কুসানাগি। একটা গাছেরও অবশ্য নাম জানে না সে, কিন্তু দেখে এটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। আশা করি মারা যাবে না। পানি দেয়া শেষ হলে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দ্রুত নিচে নেমে এলো সে। অন্য কারো বেডরুমে খুব বেশি সময় কাটাতে কখনোই ভালো লাগে না তার। বিশেষ করে মালিকের অনুপস্থিতিতে।

    ইউকাওয়া এখনও রান্নাঘরেই আছে। বুকের ওপর হাত ভাঁজ করে রেখে কি যেন ভাবছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি সিঙ্কের দিকে

    “এবার তো বলো তোমার মাথায় কি ঘুরছে। আর যদি না বলো তাহলে এখানে আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। তুমিও আর কখনো হুটহাট ক্রাইম সিনে আসতে পারবে না।”

    “হুটহাট আসা মানে?” ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করল ইউকাওয়া। ‘তোমার অফিসাররা যে হুটহাট সাহায্যের আশায় আমার ল্যাবে এসে উপস্থিত হয়, সেটাকে কি বলবে?”

    “উতসুমি তোমাকে কি বলেছে জানি না,” কুসানাগি কোমরে হাত দিয়ে বলল। “কিন্তু ওকে আমি পাঠাইনি তোমার কাছে। আচ্ছা, তোমার যদি এখানে আসতেই হতো, তাহলে ওকে বললে না কেন?”

    “কারণ ভিন্ন মতের মানুষের মধ্যেই তর্কটা ভালো জমে।”

    “অর্থাৎ আমি যেভাবে তদন্ত পরিচালনা করছি সেটায় সমর্থন নেই তোমার? একটু আগেই না বললে যে ঠিক পথে এগোচ্ছি। আজব।“

    “তোমার তদন্ত পরিচালনা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। বরং বলতে পারো যে লোকে যখন শুধু এটার ভিত্তিতে একটা সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করে দেয়, যে ‘ওরকমটা’ ঘটার সম্ভাবনা কম, তখন বিরক্ত লাগে। এমনকি একদম ক্ষুদ্র সম্ভাবনাটাও অনেক সময় সত্য হতে পারে। তাই সেগুলো এড়িয়ে গেলে চলবে না। ফসিলের গা থেকে কোন জিনিসই ময়লা হিসেবে ঝেড়ে ফেলা উচিত নয়।”

    নাটক করার স্বভাবটা গেল না, ভেবে মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। “এই কেসের ক্ষেত্রে ‘ময়লা’ বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছো?”

    “পানি,” ইউকাওয়া জবাব দিল। “বিষ পানিতে মেশানো হয়েছিল। অন্তত আমার সেটাই মনে হয়।”

    “ভিক্টিম বোতল ধুয়েছিল কি না-এই তর্কে ফিরে এলাম তাহলে।”

    “বোতলের ব্যাপারে কিছু ভাবছি না আমি। পানির কিন্তু অন্য উৎসও আছে,” বলে সিঙ্কের দিকে নির্দেশ করল ইউকাওয়া। “যেমন এই ট্যাপটা। এখান থেকে যত ইচ্ছে পানি নিতে পারবে।”

    ইউকাওয়ার শীতল চাহনির দিকে খুব বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না কুসানাগি। “তুমি কি ঠাট্টা করছো?”

    “মোটেই না,” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল ইউকাওয়া।

    “কিন্তু ফরেনসিকের লোকেরা তো পানির লাইনে উলটাপালটা কিছুই খুঁজে পায়নি।”

    “ফরেনসিকের ওরা ট্যাপের পানি পরীক্ষা করেছে এটা মিলিয়ে দেখতে যে কেতলির পানি ওখান থেকে নেয়া হয়েছিল কি না। আমার ধারণা তারা বোতলের পানির সাথে কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি। কারণ আগে থেকেই ট্যাপের পানির রেসিডিউ জমা হয়ে ছিল কেতলির ভেতরের অংশে।”

    “কিন্তু ট্যাপের পানিতে যদি বিষ মেশানো হয় তাহলে তো সেটা আরো আগেই জানতে পারার কথা, তাই না?”

    “এটাও হতে পারে যে তারা পরীক্ষা করে দেখার আগেই বিষ সম্পূর্ণ ধুয়ে ফেলা হয়েছিল।”

    “কিন্তু ভিক্টিম তো কফি বানানোর জন্যে কেবল বোতলজাত পানি ব্যবহার করে।”

    “সেটা শুনেছি,” ইউকাওয়া বলল। “কিন্তু কে দিয়েছে তথ্যটা?”

    “মিসেস মাশিবা,” বলেই বিস্মিত চোখে ইউকাওয়ার দিকে তাকালো কুসানাগি। “আর তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো তিনি মিথ্যা বলেছেন। তোমার সাথে তো ওনার দেখাও হয়নি। উতসুমি কি পড়িয়েছে তোমাকে?”

    “সে তার নিজের মতামত ব্যক্ত করেছে, যেটার অধিকার তার আছে। আমি শুধু চোখের সামনে যে প্রমাণগুলো আছে, সেগুলো থেকে একটা হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে চাচ্ছি।”

    “আর তোমার হাইপোথিসিস অনুযায়ী মিসেস মাশিবাই খুনি?”

    প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল ইউকাওয়া। “তিনি কেন তোমাকে বোতলজাত পানি ব্যবহারের কথা বলেছেন সেটা নিয়ে ভেবেছি আমি। দুটো সম্ভাবনা আছে। প্রথমটা হচ্ছে ‘মি. মাশিবা সবসময় বোতলজাত পানি ব্যবহার করেন’-এটা মিথ্যা। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে কথাটা সত্য। যদি সত্য হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। ভিক্টিমের স্ত্রী তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। উসুমি থাকলে এখনও তাকেই দোষী মনে করতো অবশ্য, কিন্তু আমি প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুকে শতভাগ সত্য মেনে নিতে নারাজ,” বলে কিছুক্ষণের জন্যে থামলো পদার্থবিদ। “ এখন ধরো মিসেস মাশিবা মিথ্যা কথা বলছেন, তাহলে কিন্তু আমরা বিপদে পড়ে যাবো। একেতো মিথ্যে কথা বলাটা এটা ইঙ্গিত করবে যে, অপরাধের সাথে তার সম্পর্ক আছে। সেই সাথে মিথ্যেটা বলার বিশেষ একটা কারণও আছে। তাই তার এই কথাটা পুলিশি তদন্তের ওপর কি প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়েছে আমাকে। ফরেনসিকের লোকেরা খালি বোতলগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে সেখানে বিষের কোন অস্তিত্ব আছে কি না। প্রায় একই সময়ে কেতলিতে বিষের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এর থেকে যেকেউ ধারণা করবে যে কেতলিতেও বিষ মেশানো হয়েছে। ফলে সন্দেহের তালিকা থেকে মিসেস মাশিবার নাম বাদ পড়বে। তার শক্তপোক্ত অ্যালিবাইও আছে।“

    ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। “এখানটাতেই তোমার সাথে আমার মতের পার্থক্য। তিনি যদি আমাদের বোতলের কথা না-ও বলতেন, ফরেনসিকের লোকেরা তবুও বিষের অস্তিত্ব পরীক্ষা করে দেখতো। বরং বোতলের পানি ব্যবহারের কথা বলে তিনি নিজের অ্যালিবাই থাকার গুরুত্বটা কমিয়ে দিয়েছেন। কারণ বোতলের পানিতে বিষ চাইলে আগেও মেশানো যেতে পারে। যেমন, উসুমি এখনও ভাবছে যে বিষ বোতলের পানিতে মেশানো হয়েছিল।”

    “সেটাই,” ইউকাওয়া বলল, “অনেকেই ডিটেক্টিভ উতসুমির মত করে ভাববে। আমি ভাবছিলাম এই তথ্যটা দেয়া হয়েছে যারা এভাবে ভাববে তাদের ফাঁদে ফেলার জন্যে।”

    “বুঝলাম না।”

    “যারা যারা মিসেস মাশিবাকে সন্দেহ করবে, তারা কিন্তু বোতলের পানিতে বিষ মেশানোর সম্ভাবনাকে কখনোই পুরোপুরি উড়িয়ে দেবে না। কারণ একমাত্র এভাবে ছাড়া অন্য কোন দৃশ্যমান উপায়ে কফিতে বিষ মেশানোর উপায় নেই তার। কিন্তু তিনি যদি অন্য কোন উপায়ে কাজটা করে থাকেন, তাহলে যারা তাকে সন্দেহ করে তারা অন্ধগলিতেই বারবার হোঁচট খেতে থাকবে। কোন যুতসই উত্তর খুঁজে পাবে না। সত্যটাও অগোচরে থেকে যাবে। এটাকে ফাঁদ বলবো না তো কি-” হঠাৎই থেমে গেল ইউকাওয়া। একদম জমে গেছে যেন। দৃষ্টি কুসানাগির পেছনে।

    ঘুরে দাঁড়ানোর পর কুসানাগির অবস্থাও ইউকাওয়ার মতনই দাঁড়ালো। লিভিং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং আয়ানে মাশিবা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article রিং – কোজি সুজুকি

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.