Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প340 Mins Read0

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২০

    অধ্যায় ২০

    দেয়ালে ঝোলানো ট্যাপেস্ট্রিটার দিকে তাকিয়ে আছে হিরোমি। ধূসর এবং হালকা নীলের বুননে ফুটে উঠেছে নিপুণ একটা নকশা। মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো পেঁচানো নকশাটার গাঁথুনি যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানে এসেই আবার শেষ হয়েছে। ভীষণ জটিল একটা কাজ, ধৈর্য্যও দরকার প্রচুর। দূর থেকে দেখলে ডিএনএ’র মত মনে হবে। গিনজাতে যে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল আয়ানে, সেখানে প্রবেশ পথের পাশেই ঝোলানো ছিল ট্যাপেস্ট্রিটা। নকশার ডিজাইনটা আয়ানের হলেও কাজ করেছে হিরোমি।

    জাপানের সেলাইশিল্পে এরকমটা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। বড় কোন প্রদর্শনীতে মূল শিল্পীর পাশাপাশি তার পছন্দের শিক্ষানবিশদের কাজও প্রদর্শিত হয়। তাছাড়া একেকটা ট্যাপেস্ট্রি বুনতে সাত থেকে আট মাস, কখনো কখনো এক বছরও লেগে যায়। তাই একজন শিল্পীর পক্ষে পুরো একটা প্রদর্শনী চালানোর মত ট্যাপেস্ট্রি বোনা রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার।

    তবে গিনজার প্রদর্শনীটার নব্বইভাগ কাজ আয়ানের নিজেরই ছিল। তবুও নিজের শিক্ষানবিশের বোনা ট্যাপেস্ট্রিটাই একদম সামনে ঝুলিয়েছিল সে। প্রথমবার সেটা দেয়ালে ঝোলানো অবস্থায় দেখার পর হিরোমির যে অনুভূতিটা হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তার শিক্ষক এতটাই সন্তুষ্ট তার কাজে যে সবার সামনে সেটা প্রদর্শিত করছেন। এর চেয়ে গর্বের আর কিইবা হতে পারে।

    সেসময় তার ধারণা ছিল যে আয়ানে মাশিবার জন্যে সারাজীবনই কাজ করে যাবে…

    শব্দ করে টেবিলে চায়ের মগ রাখার শব্দে চিন্তার বাঁধন ছিন্ন হয়ে গেল হিরোমির। ওয়ার্কটেবিলের অন্য পাশে বসে আছে আয়ানে। সাধারণত এই সময়ে সেলাইস্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থী সুঁই সুতো নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু আয়ানে এখনও ক্লাস নেয়া শুরু করেনি ঘটনাটার পর। আজকে এখানে কেবল ওরা দু’জনই আছে।

    কিছুক্ষণ আগেই সাহস করে কথাটা আয়ানেকে বলেছে হিরোমি।

    “ওহ?” আয়ানে বলল। “বেশ। এটাই যদি তোমার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে…”

    “আপনাকে এই অবস্থায় কথাটা জানানোর জন্যে দুঃখিত,” মাথা নিচু করে বলল হিরোমি।

    “দুঃখপ্রকাশ করার কোন দরকার দেখছি না। সবকিছু কিভাবে চলবে তা নিয়ে আমিও ভাবছিলাম আসলে। হয়তো এতে আমাদের দু’জনের জন্যেই ভালো হবে।”

    “সব দোষ আমার,” কাতর কণ্ঠে বলল হিরোমি। “আমি…আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে কি বলবো।”

    “তাহলে কিছু বলারই দরকার নেই। এখানে বসে বারবার তোমার ক্ষমাপ্রার্থনা শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার।”

    “ঠি-ঠিক আছে-” হিরোমির দুই চোখে অশ্রু টলটল করছে। তবে নিজেকে সামলালো। আয়ানেকে আর কোন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলতে চায় না সে।

    হিরোমি নিজেই ফোন করে আজকে দেখা করার কথা বলেছিল। আয়ানে জিজ্ঞেসও করেনি যে কি বলবে, শুধু বলেছে সেলাই স্কুলে চলে আসতে।

    আমি যে আর কাজ করবো না, সেটা বোধহয় তিনি ভাবতেই পারছেন না-আসার আগে ভেবেছিল হিরোমি।

    আয়ানে চা বানানোর সময় কথাটা বলে ও। মনে করেছিল রেগে যাবেন তিনি। কিন্তু সেরকম কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ওর শিক্ষক।

    “হিরোমি, তুমি চলতে পারবে তো?” জিজ্ঞেস করল আয়ানে।

    কান্না চেপে মাথা তুলে তাকালো হিরোমি।

    “মানে, টাকাপয়সার কথা বলছি,” বলল আয়ানে। “এরকম সময়ে খুব সহজে অন্য কোন চাকরি খুঁজে পাবে বলে তো মনে হয় না। তোমার পরিবারের লোকজন সাহায্য করবে?”

    “আসলে আমি নিজেও এসব নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু ভাবিনি। আমি চাচ্ছি না বাবা-মা’কে এসবে জড়াতে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্য কোন পথ খোলা না থাকলে…” কথাটা শেষ করল না হিরোমি। “কিছু জমানো টাকা আছে আমার, সেটা দিয়ে কিছুদিন চলে যাবে।”

    “অবস্থা তো সুবিধের ঠেকছে না,” বলল আয়ানে। কিছুক্ষণ পরপর কপালের ওপর চলে আসা চুল ঠিক করছে সে। সাধারণত কোন কারণে বিরক্ত হলে এমনটা করা তার মুদ্রাদোষ। “কিন্তু আমার বোধহয় সেসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।”

    “আপনার দয়ারও যোগ্য নই আমি।”

    “এসব আবেগী কথাবার্তা ছাড়ো তো,” কিছুটা রুক্ষভাবেই কথাটা বলল আয়ানে। আবারো মাথা নিচু করে নিল হিরোমি।

    “সরি,” পরক্ষণে বলল আয়ানে। এভাবে বলাটা উচিত হয়নি আমার। কিন্তু আমি আসলেও চাই না যে তুমি এসব কথা বারবার বলো। এটা ঠিক যে আমাদের বোধহয় আর একসাথে কাজ করা সম্ভব হবে না, কিন্তু তোমার খারাপ কক্ষণো চাই না আমি। বরং সারাজীবন যেন সুখে থাকো, সেই কামনাই করি।”

    কিছুক্ষণ পর মাথা তুললো হিরোমি। হাসছে আয়ানে-কিন্তু সেই হাসিটায় বড্ড বেশি বিষাদ। তবুও সে জানে, মন থেকেই হাসছে তার শিক্ষক।

    “তাছাড়া যার কারণে আমাদের সম্পর্কটা এরকম হয়ে গেল, সে-ও তো নেই,” নরম স্বরে বলল আয়ানে। “এখন আর অতীতের কথা ভেবে সময় নষ্ট করলে চলবে না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিল হিরোমি, যদিও তার পক্ষে অতীত ভুলে থাকা এ মুহূর্তে অসম্ভব। ইয়োশিতাকাকে আসলেও ভালবাসতো সে। এভাবে মনের মানুষটা হারিয়ে যাবে, সেটা মাথাতেই আসেনি কখনো। তাছাড়া নিজের সবচেয়ে কাছের একজন মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে, এই ব্যাপারটাও প্রতি মুহূর্তে পোড়াচ্ছে তাকে।

    “তুমি আমার সাথে কতদিন ধরে কাজ করছো?” হঠাৎই জিজ্ঞেস করল আয়ানে।

    “এই…তিন বছরের একটু বেশি।”

    “তিন বছর হয়ে গেছে! তুমি যদি হাইস্কুলে পড়তে তাহলে এ কয়দিনে পাশ করে ফেলতে। আমাদের এখন সেটা নিয়েই ভাবা উচিত, তোমার গ্র্যাজুয়েশন!” উচ্ছসিত কণ্ঠে বলল সদ্য বিধবা।

    আরেকটু হলে মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যাপারটাকে উড়িয়েই দিচ্ছিল হিরোমি। আমি এতটাও বোকা না যে এই কথায় উৎফুল্ল বোধ করবো।

    “তোমার কাছে তো ক্লাসরুমের একটা চাবি আছে, তাই না?”

    “ওহ, হ্যাঁ। সেটা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি,” বলে ব্যাগের দিকে হাত বাড়ালো হিরোমি।

    “না, রেখে দাও সেটা।”

    “কিন্তু-”

    “আমি জানি যে এখানে তোমার অনেক কিছু আছে। সবকিছু সরাতে সময়ও লাগবে। আর তোমার যদি মনে হয় যে এখানকার কিছু তোমার পরে দরকার হতে পারে তাহলে সেগুলোও নিয়ে যেতে পারো। এই ট্যাপেস্ট্রিটা নেবে? আমি জানি এটা তোমার অনেক পছন্দের,” হিরোমি যে ট্যাপেস্ট্রিটার দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ আগে, সেটার দিকে ইঙ্গিত করল আয়ানে।

    “ওটা! আসলেই?”

    “তুমিই তো বুনেছো ওটা। সবাই খুব পছন্দ করেছিল। আমি ট্যাপেস্ট্রিটা বিক্রি করিনি কারণ কোন না কোন সময় ওটা তোমাকেই দেয়ার ইচ্ছে ছিল।”

    আবারও অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো হিরোমির মন। গিনজার প্রদর্শনীতে এই ট্যাপেস্ট্রির নিচে লেখা ছিল ‘বিক্রির জন্য নয়।

    “তোমার সবকিছু এখান থেকে নিয়ে যেতে কতদিন লাগতে পারে?” জিজ্ঞেস করল আয়ানে।

    “আজ কালের মধ্যেই হয়ে যাবে।”

    “ঠিক আছে, তোমার কাজ শেষ হলে আমাকে একটা কল দিও। আর চাবিটা… মেইল বক্সে রেখে যেতে পারো। কিছু ভুলে যেও না আবার। তোমার জিনিসপত্র নেয়া হয়ে গেলে আমি লোক ডেকে কিছু অদলবদল করবো এখানে।”

    হিরোমির বোধগম্য হলো না আয়ানের কথা।

    “আমার পক্ষে তো আর হোটেলে বেশিদিন থাকা সম্ভব নয়। খরচের দিকটাও চিন্তা করতে হবে। তাই ভাবছিলাম সব ঝামেলা না মিটে যাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবো।”

    “আপনি বাড়ী ফিরবেন না?”

    লম্বা শ্বাস ছাড়লো আয়ানে। “ব্যাপারটা নিয়ে এই কয়দিন ভেবেছি আমি। বাসাটার সাথে এত বেশি সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে… কিন্তু সেখানে আর ফেরা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে। সুখস্মৃতিগুলো এখন রীতিমত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া অত বড় বাড়িতে আমার একা থাকা সম্ভবও না। আমাদের দেখা হবার আগে ও যে কিভাবে একা একা থাকতো ওখানে, কে জানে।“

    “আপনি কি বাড়িটা বিক্রি করে দিবেন?”

    “চেষ্টা করবো, কিন্তু কাজটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। এরকম অপয়া বাড়ি কিনতে চায় না মানুষজন। তবে আগে মি. ইকাইয়ের সাথে কথা বলবো এ ব্যাপারে। তিনি নিশ্চয়ই সাহায্য করতে পারবেন।”

    চুপচাপ টেবিলে রাখা মগটার দিকে তাকিয়ে থাকলো হিরোমি। বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। আয়ানে ওর জন্যে যে চা’টুকু বানিয়েছিল তা এতক্ষণে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

    “ঠিক আছে, আমি উঠি তাহলে এখন,” আয়ানে বলল তার খালি মগটা তুলে নিয়ে।

    “ওটা রেখে যান, আমিই ধুয়ে রাখবো,” হিরোমি বলল।

    “আচ্ছা, ধন্যবাদ,” বলে মগটা আবার নামিয়ে রাখলো আয়ানে। “মগগুলো তো তুমিই এনেছিলে, তাই না?”

    “হ্যাঁ। এই জোড়াটা আমার এক বান্ধবী বিয়েতে উপহার পেয়েছিল।” মগদুটো এখন টেবিলে পাশাপাশি রাখা। ওরা দু’জন প্রায়ই একসাথে চা বানিয়ে খেতো শিক্ষার্থীরা চলে যাবার পর।

    “এ দুটোও মনে করে নিও কিন্তু,” বলে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিল আয়ানে।

    “জি,” নিচুস্বরে বলল হিরোমি। সেলাই শিক্ষকের পেছন পেছন হাঁটছে সে। আসলে মগগুলো ফিরিয়ে নেয়ার কোন ইছে ছিল না তার; কিন্তু এগুলো সামনে থাকলে আয়ানের পক্ষে হয়তো অতীত মুছে ফেলা সহজ হবে না। মাঝে মাঝে খুব সাধারণ জিনিসও অনেক বড় প্রভাব ফেলে মনে।

    জুতো পরা শেষে শিক্ষানবিশের দিকে তাকালো আয়ানে। “অদ্ভুত না ব্যাপারটা? কিভাবে হুট করে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে তোমাকে চলে যেতে হচ্ছে।”

    “আজকের মধ্যেই সবকিছু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো আমি।”

    “না, তাড়াহুড়োর কোন দরকার নেই। আমি ওরকম কিছু ভেবে কথাটা বলিনি,” সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল আয়ানে। “ভালো থেকো, হিরোমি।”

    “আপনিও নিজের যত্ন নিবেন।”

    “আর যত্ন,” বলে মৃদু হেসে বাইরে বেরিয়ে গেল আয়ানে। দরজা বন্ধ করে মেঝেতেই বসে পড়লো হিরোমি। কাজটা ছেড়ে দিতে হবে ভাবতেই খারাপ লাগছে। তাছাড়া এখন টাকা রোজগার করবে কিভাবে সেটাও ভাবাচ্ছে। কিন্তু এটা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই। মুখে আয়ানে যা-ই বলুক না কেন, তার পক্ষে ওকে ক্ষমা করা কখনোই সম্ভব হবে না।

    তাছাড়া বাচ্চার ব্যাপারটা ভুলে গেলে চলবে না। হিরোমি তো ভয় পাচ্ছিলো আয়ানে জিজ্ঞেস না করে বসে এ সম্পর্কে। এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারেনি ও।

    এটাও হতে পারে যে আয়ানে কিছু জিজ্ঞেস করেনি কারণ সে ধরেই নিয়েছে যে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবে হিরোমি। ব্যাপারটা নিয়ে যতই ভাবলো ততই এই ধারণা আরো পাকাপোক্ত হলো তার মনে। কিন্তু সে আসলে কি চায়?

    উত্তরটা জানা আছে, কিন্তু স্বীকার করতে ইচ্ছে করে না। বাচ্চাটা রাখতে চায় সে। কিন্তু একা একটা বাচ্চা নিয়ে কিভাবে জীবন পার করবে? বাবা-মা’র কাছে ফিরতে পারবে না। তাদের শারীরিক কোন সমস্যা নেই, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে খুব যে সচ্ছল সেটা বলা আবে না। আর তারা যখন শুনবে যে বিয়ের আগেই মা হয়েছে সে, তাও অন্য একজনের সংসার ভেঙে…আর ভাবতেই পারলো না হিরোমি।

    অ্যাবরশনই একমাত্র সমাধান, ভাবলো। ঘুরেফিরে এই সিদ্ধান্ততেই উপনীত হতে হচ্ছে বারবার। কিন্তু মনেপ্রাণে সিদ্ধান্তটা ঘৃণা করে সে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে জীবনটা আমূল বদলে গেছে তার।

    নিজের বোকামীতে অতিষ্ঠ হয়ে মাথা নাড়ছিল, এমন সময় ফোনের শব্দ কানে এলো তার। উঠে ধীরপায়ে ওয়ার্ক টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল হিরোমি। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ডিসপ্লের দিকে তাকালো, নম্বরটা পরিচিত। বেশ লম্বা একটা সময় ভাবার পর রিসিভ বাটনে চাপ দিল। ফোন না ধরে কোন লাভ নেই।

    “হ্যালো?” গম্ভীর কণ্ঠে বলল সে।

    “হ্যালো, আমি ডিটেক্টিভ উতসুমি বলছিলাম মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে। কথা বলা যাবে এখন?”

    “নিশ্চয়ই।”

    “এভাবে আবারো বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত। কিন্তু কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানা বড্ড জরুরি। দেখা করতে পারবেন?”

    “কখন?”

    “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

    “না চাইতেও একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল হিরোমির বুক চিড়ে। “আমি সেলাই স্কুলটায় আছি এখন। এখানে এসে পড়ুন?”

    “দাইকানিয়ামাতে না ওটা? মিসেস মাশিবাও কি আছেন?”

    “না, তিনি চলে গেছেন আজকের মতন। আমি একাই আছি।”

    “ঠিক আছে। আসছি।”

    ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে দুই হাত দিয়ে কপালের দু’পাশে চাপ দিলো হিরোমি। মাথাটা ভারি ভারি লাগছে।

    আয়ানের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার অর্থ এটা নয় যে অন্য সব ঝামেলাও মিটে যাবে। কেসটার সুরাহা না হওয়া অবধি পুলিশের কাছ থেকে নিস্তার নেই তার আদৌ যদি সুরাহা হয় কখনো।

    মগের অবশিষ্ট চা’টুকু এক চুমুকে শেষ করে ফেলল সে। মানসপটে গত তিন বছরের টুকরো টুকরো স্মৃতিরা আনাগোণা করছে। প্রথম যখন এখানে এসেছিল, কাজ খুব ভালো একটা পারতো না; কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই কৌশলগুলো রপ্ত করে ফেলে। নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিল নিজের উন্নতি দেখে। আয়ানে যখন তাকে সহকারি হবার প্রস্তাব দিয়েছিল, হ্যাঁ বলতে দেরি করেনি।

    সন্তুষ্ট ছিলাম আমি, অনুধাবন করল হিরোমি। একটা ভালো চাকরি ছিল, জীবনটাও ভালো চলছিল। আর এখন? হঠাৎই শেষ হয়ে গেল সবকিছু। জোরে জোরে মাথা ঝাঁকালো কয়েকবার। মানতেই পারছে না। অথচ সব দোষ তার নিজের। অন্য একজনের স্বামীকে চুরি করেছিল সে। তাও যেনতেন কেউ নয় যার কারণে আজকে এই পর্যায়ে এসেছে, তার স্বামীর সাথেই সম্পর্কে জড়িয়েছে।

    ইয়োশিতাকা মাশিবার সাথে প্রথম যেদিন পরিচয় হয়েছিল, সেদিনকার কথা স্পষ্ট মনে আছে হিরোমির। এই রুমেই দেখা হয়েছিল তাদের। ক্লাসের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় আয়ানে ফোন দিয়ে বলে যে একজন লোক সেখানে আসছে। তাকে যেন অপেক্ষা করতে বলে সে। লোকটার পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলেনি।

    কিছুক্ষণ বাদেই সেখানে উপস্থিত হয় ইয়োশিতাকা। তাকে ভেতরে নিয়ে এসে চা বানিয়ে দেয় হিরোমি। কৌতূহলী চোখে চারপাশে নজর বোলায় মাশিবা, এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। তাকে প্রথম দেখে হিরোমির মনে হয়েছিল যেন একটা বাচ্চা ছেলে নতুন ক্লাসে এসেছে। তবে কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই বুঝে যায় যে ভীষণ বুদ্ধিমান লোকটা।

    আয়ানে কিছুক্ষণ পর সেখানে এসে ওদের দু’জনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। হিরোমি এটা শুনে অবাক হয় যে একটা সিঙ্গেল’স পার্টিতে প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের। আয়ানে যে ওরকম পার্টিতে যেতে পারে এটা মাথাতেই আসেনি তার।

    আয়ানে যখন তাকে জানায় যে ইয়োশিতাকাকে ডেট করছে সে, ভেতরে ভেতরে ভীষণ ঈর্ষান্বিত বোধ করে হিরোমি। লোকটাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তার। এমনটা যদি হতো তাদের প্রথম সাক্ষাতের সময় আয়ানে সেখানে উপস্থিত থাকতো, তাহলে হয়তো ওরকম কিছু মনে হতো না। সেদিন ইয়োশিতাকার সাথে কাটানো ঐ নির্জন সময়টুকুই পরবর্তীতে ওদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।

    একবার যদি মনে ভালোবাসার বীজ রোপিত হয়ে যায়, শত চেষ্টা সত্ত্বেও সেটাকে দমিয়ে রাখা যায় না। আয়ানের বিয়ে হয়ে যাবার পর মাশিবাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করে হিরোমি। ইয়োশিতাকার প্রতি ভালো লাগার ভাবটা আরো প্রবল হয় এতে। বিশেষ করে যে মুহূর্তগুলোতে আয়ানে উপস্থিত থাকতো না।

    হিরোমি অবশ্য এই অনুভূতিগুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল। এমন কিছু কোনদিন করেনি যেটায় ইয়োশিতাকার মনোযোগ আকৰ্ষিত হয়। তার সাথে সম্পর্কের কথা ভাবতেই পারতো না সে।

    কিন্তু মি. মাশিবার সত্যটা বুঝতে সমস্যা হয়নি। হয়তো ও শত চেষ্টা করেও অনুভূতিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে লুকোতে পারেনি। সময়ের সাথে সাথে ওর সাথে মি. মাশিবার আচরণ বদলে যেতে থাকে। প্রথমে ছোট বোনের নজরে তাকে দেখতো সে, কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা রূপ নেয় অন্য কিছুতে। হিরোমি যদি এটা বলে যে তার ওরকম আচরণ ওর বুকে কাঁপন ধরায়নি, তাহলে সেটা মিথ্যে বলা হবে।

    রুমটার চারপাশে একবার তাকালো সে। তিন মাস আগে এক রাতে এখানে বসে কাজ করছিল সে, এমন সময় ফোন দেয় ইয়োশিতাকা। “আয়ানে বলল স্কুলে খুব ব্যস্ত সময় পার করছো তুমি। রাতে খেতেও না কি ভুলে যাও?”

    সেদিন অফিস থেকে দেরি করে বেরিয়েছিল ইয়োশিতাকা। নতুন একটা র‍্যামেন রেস্তোরাঁয় যাওয়ার কথা ভাবছিল কয়েকদিন ধরে। হিরোমি তার সাথে যাবে কি না জিজ্ঞেস করে কথার এক পর্যায়ে।

    প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছিল, তাই রাজি হয়ে যায় হিরোমি। ইয়োশিতাকা নিজেই আসে তাকে নিয়ে যেতে।

    একটা টেবিলে পাশাপাশি বসেছিল ওরা। প্রতিবার র‍্যামেন মুখে দেয়ার সময় তার হাতের সাথে ঘষা খাচ্ছিলো ইয়োশিতাকার হাত। র‍্যামেনের স্বাদ কেমন ছিল এটা মনে নেই। মনে ছিল শুধু ঐ স্পর্শটার কথাই।

    রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে তাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় ইয়োশিতাকা। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “আমরা কি আবারো কোথাও একসাথে খেতে যেতে পারি?”

    “নিশ্চয়ই,” বলে হিরোমি।

    “থ্যাঙ্ক ইউ। তোমার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে আমার।”

    “আসলেই?”

    “হ্যাঁ,” বলে ইয়োশিতাকা। “এখানটায় বড্ড ক্লান্ত বোধ করছি কয়েকদিন ধরে,” বুকের দিকে ইশারা করে বলে সে। “তোমার সাথে কাটানো সময়টুকুতে সেই ক্লান্তির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমি সত্যি খুশি হয়েছি যে তুমি গিয়েছো আমার সাথে।”

    “আমারও ভালো লেগেছে।”

    এরপর ওর কাঁধে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে নিজের দিকে টেনে নেয় ইয়োশিতাকা। কোন প্রকার বাঁধা দেয় না হিরোমি। একদম স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট মেলায় তারা, যেন অনেকদিনের চেনা।

    “গুড নাইট,” কিছুক্ষণ পর বলে ইয়োশিতাকা।

    “গুড নাইট,” জবাব দেয় সে।

    সেদিন রাতে ঘুমোতেই পারেনি হিরোমি। এমনটা নয় যে তার মনে হচ্ছিল বড় কোন ভুল করে ফেলেছে। আসলে ওরকম কোন ভাবনা মাথাতেই আসেনি।

    কিছুদিনের মধ্যেই তার সমস্ত চিন্তা ভাবনায় জড়িয়ে যায় ইয়োশিতাকা। হৃদয়ে বেশ শক্ত করেই আসন গাঁড়ে সে। সারাদিন কাজের মাঝেও তার কথা মনে পড়তো। যদি এমনটা হতো যে সেদিনের পর আর তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি ইয়োশিতাকা, তাহলে হয়তো ঘোরটা কেটে যেত। কিন্তু তাকে প্রতিদিন ফোন দিত সে। ইচ্ছে করে স্কুলে কাজ শেষ হবার পরেও থেকে যেতো হিরোমি, ঐ ফোনগুলোর অপেক্ষায় থাকতো।

    বাঁধন ছেড়া বেলুনের মত ধীরে ধীরে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় অনুভূতিগুলো। মানব-মানবীর মধ্যকার সম্পর্কের চূড়ান্ত সীমাটা যেদিন প্রথম স্পর্শ করে তারা, সেদিন প্রথম হিরোমির মনে হয় যে ভুল কিছু করছে সে। কিন্তু ইয়োশিতাকার বলা সেই রাতের কথাগুলো তার সব অস্বস্তিকে দূরে ঠেলে দেয়।

    “আয়ানের সাথে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলবো শিঘ্রই,” বলে সে। “আমরা একে অপরকে কথা দিয়েছিলাম যে বিয়ের এক বছরের মধ্যে যদি বাচ্চা না হয় তাহলে আলাদা হয়ে যাব। এখনও তিন মাস আছে এক বছর পুরো হতে, কিন্তু আমি জানি ফলাফল কি হতে যাচ্ছে।”

    ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে কথাগুলো শুনলে হয়তো আয়ানের জন্যে খারাপ লাগতো হিরোমির। কিন্তু সেদিন ওরকম কিছু মনে হয়নি। এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিলাম আমি, ভাবলো সে। কোন কিছুর পরোয়া ছিল না।

    আয়ানের সাথে বাজে রকমের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ঘৃণাই ওর একমাত্র প্রাপ্য।

    হয়তো আয়ানেই খুন করেছে ইয়োশিতাকাকে। এমনকি আমাকে ও হয়তো হত্যা করতে চায়। তার প্রতি আয়ানের এরকম সহানুভূতিশীল আচরণটা যদি অভিনয়ও হয়ে থাকে, অবাক হবে না হিরোমি।

    কিন্তু আয়ানের শক্ত অ্যালিবাই আছে, পুলিশের লোকেরাও সন্দেহের চোখে দেখছে না তাকে। সুতরাং এটাও হতে পারে যে কিছুই করেনি সে।

    ইয়োশিতাকাকে খুনের ইচ্ছে পোষণ করে এমন অন্য কারো কথা ভাবার চেষ্টা করল হিরোমি। লোকটার বংশধর তার পেটে, কিন্তু তার সম্পর্কে আসলে খুব কমই জানে সে। চিন্তাটা বিষণ্ন করে তুললো তাকে।

    এসময় উতসুমি এসে তাকে উদ্ধার করল এই বিহ্বল দশা থেকে। একটা কালো রঙের স্যুট পরণে তার। আয়ানে কিছুক্ষণ আগে যেখানে বসেছিল, সেই চেয়ারটাতেই বসলো সে। অসময়ে বিরক্ত করার জন্যে ক্ষমা চাইলো আবার।

    “আমার মনে হয় না, আমাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে আপনাদের তদন্ত এগোবে,” হিরোমি বলল তার উদ্দেশ্যে। “সত্যি কথা বলতে, মি. মাশিবা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না আমি।”

    “তবুও তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন?”

    শক্ত হয়ে গেল হিরোমির চেহারা। “আমি জানতাম মানুষ হিসেবে সে কিরকম ছিল। কিন্তু আপনি সেসব জানতে তো এখন এখানে আসেননি, তাই না? আপনি জানতে চান তার অতীত সম্পর্কে, চাকরি সম্পর্কে। আমার কাছে সে ব্যাপারে কোন তথ্য নেই।”

    “আসলে মি. মাশিবা কেমন লোক ছিলেন সেটা জানা তদন্তের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকে ওরকম কঠিন কোন বিষয়ে কথা বলতে আসিনি আমি। বরং বলতে পারেন যে প্রতিদিনকার ঘটনা সম্পর্কে জানতে এসেছি।”

    “মানে?”

    “যেমন, মিস্টার এবং মিসেস মাশিবার দৈনন্দিন জীবন। আপনি তো তাদের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন।”

    “আমার চেয়ে মিসেস মাশিবা ভালো জানবে এটা। তার সাথে কথা বলা উচিত আপনার।“

    হাসলো উসুমি। “কাউকে নিজের জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে কখনোই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু বলতে পারে না।”

    “কি জানতে চান বলুন,” লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল হিরোমি। “মাশিবাদের বিয়ের পর তাদের বাসায় যাতায়াত বেড়ে যায় আপনার। এটা কি বলতে পারবেন যে কতদিন পরপর যেতেন?”

    “আসলে সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করতো। এই ধরুন মাসে এক দুইবার।”

    “মাসের বিশেষ কোন সময়ে?”

    “না। তবে রবিবারগুলোতে বেশি যাওয়া হতো। ঐদিন স্কুল বন্ধ রাখতাম আমরা।”

    “মি. মাশিবাও তো রবিবারে বাসায় থাকতেন বোহধয়?”

    “সাধারণত।”

    “তার সাথে কি তখন খুব বেশি কথাবার্তা হতো আপনার?”

    “মাঝে মাঝে। কিন্তু মি. মাশিবা ছুটির দিনগুলোতে বেশিরভাগ সময় তার স্টাডিতেই কাটাতেন। বাসায় থেকেও অফিসের কাজ করতে হতো তাকে,” হিরোমি জবাব দিল। “আমি সাধারণত আয়ানের সাথে কাজ থাকলে সেখানে যেতাম,” সে চায় না উতসুমি

    সে চায় না উতসুমি এটা ভাবুক যে ইয়োশিতাকাকে দেখতে সেখানে যেত ও।

    “ওখানে মিসেস মাশিবার সাথে কোথায় দেখা করতেন আপনি?”

    “লিভিং রুমে। এটা আবার কেমন প্রশ্ন?”

    “সবসময়?” হিরোমির প্রশ্নটা আমলে নিল না উতসুমি।

    “হ্যাঁ। একথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

    “ওখানে গিয়ে চা বা কফি খেয়েছেন আপনি?”

    “হ্যাঁ, প্রতিবারই কিছু না কিছু খেতাম।”

    “কখনো কি আপনি চা বা কফি বানিয়েছেন?”

    “মাঝে-সাঝে। আয়ানে যখন অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকতেন, তখন।”

    “আপনি আমাদের জানিয়েছেন যে আয়ানে নিজেই আপনাকে ওখানে কিভাবে কফি বানাতে হবে সেটা শিখিয়েছেন। মি. মাশিবা যেদিন মারা গেলেন সেদিন সকালেও আপনি তার শেখানো পদ্ধতিতে কফি বানিয়েছিলেন।”

    “হ্যাঁ,” বলে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে উতসুমির দিকে তাকিয়ে থাকলো হিরোমি। “আমার এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আমরা আবারো কফি নিয়ে কথা বলছি। আর কতবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করবেন?”

    এবারো হিরোমির প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল উতসুমি।

    “ইকাইরা যেদিন দাওয়াতে এসেছিল, সেদিন কি ফ্রিজ খুলেছিলেন আপনি?”

    “জি? ফ্রিজ?”

    “হ্যাঁ। ভেতরে কয়েক বোতল মিনারেল ওয়াটার থাকার কথা। ওগুলো কি আপনার চোখে পড়েছিল সে সময়?”

    “হ্যাঁ, সেদিন আমি একটা বোতল বের করেছিলাম ফ্রিজ থেকে

    “আপনার কি মনে আছে যে কয়টা বোতল ছিল ভেতরে?”

    “এটা কিভাবে মনে থাকে কারো? দুই তিনটা ছিল বোধহয়।”

    “দুইটা না তিনটা?”

    “আপনাকে তো বললাম যে মনে নেই। এক সারিতে রাখা ছিল বোতলগুলো, চার পাঁচটাও হতে পারে,” ধীরে ধীরে গলা চড়ছে হিরোমির।

    “বেশ,” অনুভূতিহীন স্বরে বলল ডিটেক্টিভ। “আপনি বলেছেন, মারা যাবার আগের দিন আপনাকে বাসায় যেতে বলেছিলেন মি. মাশিবা। এরকমটা কি প্রায়ই হতো?”

    “না, সেটাই ছিল প্রথমবার।”

    “ঐ দিনটাতেই আপনাকে ডাকার বিশেষ কোন কারণ ছিল কি?”

    “আয়ানে তার বাবা-মা’র সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, সেজন্যে বোধহয়।”

    “অর্থাৎ সেবারই প্রথম এরকম কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলেন আপনারা?”

    “হ্যাঁ। সেই সাথে ইয়োশিতাকা আমাকে সামনা সামনি এটা বলতে চেয়েছিল যে আয়ানে ডিভোর্সের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে।”

    “হুম,” মাথা নেড়ে বলল উতসুমি। “তাদের কোন শখের কথা জানতেন আপনি?”

    “শঙ্খ?” পাল্টা প্রশ্ন করল হিরোমি। বিষয়ের হঠাৎ পরিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত সে।

    “মিস্টার এবং মিসেস মাশিবা, দু’জনের কথাই বলছি। তারা কি ঘুরতে পছন্দ করতেন? বা বিশেষ কোন খেলাধূলার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন?”

    কাঁধ ঝাঁকালো হিরোমি। “এটা জানি যে টেনিস আর গলফ খেলতেন মি. মাশিবা। কিন্তু আয়ানের ওরকম কোন শখ আছে বলে মনে হয় না। রান্নাবান্না আর সেলাই নিয়েই যাবতীয় ব্যস্ততা তার।”

    “ছুটির দিনগুলোতে একসাথে কিভাবে সময় কাটাতেন তারা?”

    “সরি,” হিরোমি জবাব দিল। “সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। “ “আন্দাজ করার চেষ্টা করুন,” বলল ডিটেক্টিভ।

    “আয়ানে সাধারণত সেলাইয়ের কাজ করতেন। যতদুর শুনেছি মি. মাশিবা মাঝে মাঝে ডিভিডি প্লেয়ারে সিনেমা দেখতেন।”

    “বাসায় থাকাকালীন সময়ে কোথায় বসে সেলাইয়ে কাজ করতেন আয়ানে?”

    “লিভিং রুমেই বোধহয়,” হিরোমি বলল। উতসুমির প্রশ্নগুলো কোন দিকে যাচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করছে সে।

    “একসাথে কখনো ঘুরতে গিয়েছিলেন তারা?”

    “বিয়ের পরপর প্যারিস আর লন্ডনে গিয়েছিলেন। এরপর মনে হয় না অন্য কোথাও একসাথে যাবার সুযোগ পেয়েছে। মি. মাশিবা অবশ্য ব্যবসার কাজে বাইরে গিয়েছেন কয়েকবার।”

    “আপনি কি কখনো মিসেস মাশিবার সাথে শপিংয়ে বেরিয়েছেন?”

    “হ্যাঁ, অনেকবার। ক্লাসের সেলাইকাজের জন্যে সবসময় একসাথে কাপড় কিনতাম আমরা।”

    “রবিবারেই বের হতেন?”

    “না, সাধারণত ক্লাস শুরু হবার আগ দিয়ে যেতাম। অনেক কাপড় কিনতে হতো। তাই দোকান থেকে সরাসরি ক্লাসে যাওয়াটাই সুবিধাজনক ছিল।”

    মাথা নেড়ে নোটবুকে কিছু একটা টুকে নিল উতসুমি। “ধন্যবাদ আপনাকে। আপাতত এগুলোই জানার ছিল।”

    “হঠাৎ এগুলো জিজ্ঞেস করলেন কেন?” কৌতূহল দমাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই বসলো উতসুমি। “আপনি ঠিক কি জানতে চাচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না আমি।”

    “কোন প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়েছেন?”

    “সবগুলোই। শখ বা শপিংয়ের সাথে তদন্তের কি সম্পর্ক?”

    এক মুহূর্তের জন্যে ইতস্তত বোধ করার পর হাসি ফুটলো উতসুমির ঠোঁটে। “আপনার এ মুহূর্তে না বুঝলেও চলবে। মি. মাশিবা কিভাবে খুন হলেন, সেই রহস্যের একটা সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি আমরা।”

    “আমাকে কি বলা যাবে সমাধানটা সম্পর্কে?”

    “সরি,” বলে উঠে দাঁড়ালো উতসুমি। “সেই নিয়ম নেই।” বিরক্ত করার জন্যে আরেকবার ক্ষমা চেয়ে বেরিয়ে গেল সে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article রিং – কোজি সুজুকি

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.