Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প340 Mins Read0

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩২

    অধ্যায় ৩২

    গাছে পানি দিতে দিতে অতীতে ফিরে গেল আয়ানে মাশিবা। এক বছর আগে ঠিক এভাবেই একদিন গাছে পানি দিচ্ছিল সে। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটা ছিল সেদিন। ইয়োশিতাকার কাছ থেকে সত্যটা শুনেছিল সে। গোটা সময় অপরাজিতা গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল আয়ানে।

    এই বেগুনী ফুলগুলো ভীষণ পছন্দ ছিল তার বান্ধবীর। সেজন্যেই তো জুঞ্জি সুকুই নাম বদলে ‘সুমিরে উকো” ছদ্মনামে বই লেখতো সে। অপরাজিতারই অপর নাম সেটা, অর্থ বেগুনী প্রজাপতি।

    লন্ডনে একটা বইয়ের দোকানে দেখা হয়েছিল দুইজনের। আয়ানে সেলাইয়ের নকশার বই খুঁজছিল সেদিন। হঠাৎ একটা বইয়ের নাম দেখে পছন্দ হওয়াতে হাত বাড়ায় সে, কাকতালীয় ঠিক সেই সময়েই আরেকটা মেয়ে একই বইটার জন্যে হাত বাড়ায়। সে-ও ছিল জাপানিজ, আয়ানের চাইতে কয়েক বছরের বড়।

    খুব অল্প সময়েই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায় দু’জন। একসাথে লন্ডন চষে বেড়ায়। কথা দেয় যে জাপানে ফিরেও যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখবে। জুঞ্জি টোকিওতে পাকাপাকিভাবে চলে আসার কয়েক বছর পর আয়ানেও পাড়ি জমায় সেখানে।

    কাজ নিয়ে দু’জনেই ব্যস্ত থাকলেও সময় বের করে প্রায়ই দেখা করতো। জুঞ্জির সামনে কোনপ্রকার সংকোচ বোধ করা ছাড়াই সবকিছু বলতে পারতো আয়ানে। প্রকৃত বন্ধুরা তো এমনই হয়। তাছাড়া জুঞ্জির কাছেও তাদের বন্ধুত্বটা ঠুনকো কোন বিষয় ছিল না। এরকম ঘনিষ্ঠতার আরেকটা কারণ হচ্ছে-জুঞ্জিও সহজে অন্য কারো সাথে মিশতে পারতো না, আয়ানের মতনই।

    এরপর একদিন আয়ানেকে একজন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা বলে সুকুই। তার আঁকা একটা চরিত্রকে না কি অনলাইনে অ্যানিমেতে রূপান্তরিত করার পরামর্শ দিয়েছিল সে।

    “কিছু খেলনাও বানানোর কথা ভাবছি আমরা। যখন ওকে বললাম যে আমার পরিচিত খুব দক্ষ একজন কারুশিল্পী আছে, তখন তোমার সাথে দেখা করতে চায় সে। আমি জানি যে তুমি খুব ব্যস্ত, কিন্তু একদিন সময় বের করো, প্লিজ।”

    বান্ধবীর অনুরোধ ফেলতে পারেনি আয়ানে। আর এভাবেই ইয়োশিতাকা মাশিবার সাথে পরিচয় হয়।

    এক কথায় বলতে গেলে, ইয়োশিতাকাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তার। গ্রীক দেবতাদের মতন চেহারা, চোখজোড়া যেন পাথর কুঁদে বানিয়েছে দক্ষ কোন শিল্পী। ঘন্টার পর ঘন্টা সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। কথাও বলে দারুণ ভঙ্গিতে।

    ক্যাফে থেকে সে চলে যাবার পর হাসিমুখে আয়ানে বলে, “চমৎকার একটা লোক।”

    “তাই না?” উৎফুল্ল স্বরে বলে জুঞ্জি। তার দিকে একবার তাকিয়েই আয়ানে বুঝে যায় যে ইয়োশিতাকার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সে।

    কিন্তু সেদিন সুকুইকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি আয়ানে। ব্যাপারটা এখনও পীড়া দেয় তাকে। শুধু একবার যদি জিজ্ঞেস করতো যে তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কি না, তাহলেই আর দুর্ঘটনাটা ঘটতো না।

    সুকুইয়ের চরিত্রের অনুকরণে যে খেলনাটা বানানো হবে সেটায় অবশ্য শেষ অবধি সেলাইয়ের কাজ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। ইয়োশিতাকা পরে নিজ থেকে ফোন দিয়ে আয়ানের কাছে ক্ষমা চায় তার সময় নষ্ট করার জন্যে। বলে যে ভবিষ্যতে কোন একদিন দামী একটা রেস্তোরাঁয় নিয়ে খাওয়াবে তাকে, প্রায়শ্চিত্তের জন্যে।

    আয়ানে ভেবেছিল শুধু কথার কথা বলছে সে, কিন্তু কিছুদিন বাদে আসলেও ফোন দেয় ইয়োশিতাকা। এটাও পরিস্কার হয়ে যায় যে ডিনারে শুধু তাকেই দাওয়াত দিচ্ছে সে, জুঞ্জিকে নয়। ওদের মধ্যে তাহলে কোন সম্পর্ক নেই, নিজেকে বোঝায় আয়ানে।

    দুরুদুরু বুকে ইয়োশিতাকার সাথে দেখা করে সে। সেদিন আগেরবারের চেয়েও বেশি উপভোগ করে সন্ধ্যাটা।

    দ্রুত ইয়োশিতাকার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করে আয়ানে। একই সাথে দূরে সরে যেতে থাকে জুঞ্জির কাছ থেকে। ইয়োশিতাকার প্রতি তার বান্ধবীর মনোভাব কি ধরণের এটা জানার পর থেকে কেন যেন সহজ হতে পারছিল না সে।

    কয়েক মাস পরে জুঞ্জির সাথে দেখা হলে ভীষণ অবাক হয় আয়ানে। একদম ভিন্ন একটা মানুষে বদলে গেছে তার বান্ধবী। ইয়োশিতাকার কথা জিজ্ঞেস করতে ফ্যাকাসে হয়ে যায় সুকুইয়ের চেহারা।

    কোন সমস্যা হয়েছে কি না তা জিজ্ঞেস করে আয়ানে, কিন্তু জবাবে পরিস্কার কিছু বলে না সুকুই। হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে বলে যে একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেছে তার, বাড়ি ফিরতে হবে। আয়ানেও পেছন পেছন রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসে তার সাথে। কোনদিকে না তাকিয়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে সুকুই।

    সেটাই ছিল তার সাথে আয়ানের শেষ দেখা।

    এর পাঁচদিন পর একটা পার্সেল আসে আয়ানের অ্যাপার্টমেন্টে। প্যাকেট খুলে সাদা পাউডার ভর্তি একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখতে পায় সে। ব্যাগটার গায়ে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে লেখা ‘আর্সেনিক(বিষ)’। সুকুই পাঠিয়েছিল ব্যাগটা।

    সাথে সাথে সন্দেহ চেপে বসে আয়ানের মনে। দৌড়িয়ে গিয়ে বান্ধবীর নম্বরে ডায়াল করে সে। কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন ধরে না কেউ। কোনরকমে গায়ে একটা জ্যাকেট চাপিয়ে সুকুইয়ের অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় আয়ানে। কিন্তু গিয়ে দেখে পুলিশের লোকেরা ঘিরে রেখেছে জায়গাটা। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা বলে যে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে অ্যাপার্টমেন্টটার বাসিন্দা।

    একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় আয়ানে। উদ্দেশ্যহীনের মত হাঁটতে থেকে টোকিওর রাস্তায় রাস্তায়। রাতে বাসায় ফেরার পর সুকুইয়ের পাঠানো পার্সেলটা হাতে নিয়ে বসে থাকে অনেকক্ষণ। এ সময় ব্যাপারটা ধরতে পারে সে। শেষবার যখন রেস্তোরাঁয় একসাথে খেতে গিয়েছিল তারা, সুকুই বেশ লম্বা একটা সময় তার মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল।

    ফোনটা টেবিল থেকে উঠিয়ে বিছানায় এনে রাখে আয়ানে। একটা সুন্দর রিং লাগানো ফোনের কভারের সাথে। ইয়োশিতাকার সাথে প্রথম ডেটে গিয়ে রিংটা কেনে সে। মাশিবার নিজের ফোনেও একই রিং লাগানো ছিল।

    সুকুই নিশ্চয়ই রিংটা দেখে ধরতে পারে যে ইয়োশিতাকার সাথে সম্পর্ক আছে তার এবং ঈর্ষার বশীভূত হয়ে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু একতরফা ভালোবাসার জন্যে কারো আত্মহত্যা করাটা বাড়াবাড়িই মনে হয় আয়ানের কাছে। তাছাড়া সুকুইও ওরকম মানুষ না।

    সত্যটা ধরতে সময় লাগে না তার। ইয়োশিতাকার সাথে পেশাগত সম্পর্কের বাইরেও বিশেষ সম্পর্ক ছিল সুকুইয়ের। পুলিশের লোকদের কিছু জানায় না আয়ানে। এমনকি সুকুইয়ের শেষকৃত্যেও যায়নি। বান্ধবীর এরকম মৃত্যুর জন্যে যে সে-ই দায়ি, এই ভাবনাটা ভুলে থাকতে চায় যতটা সম্ভব।

    একই কারণে কখনো ইয়োশিতাকাকেও সত্যটার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি সে। তাদের সম্পর্কটা ভেঙেও যেতে পারতো এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে।

    বেশ কয়েক মাস পর অদ্ভুত একটা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয় ইয়োশিতাকা। বলে যে একটা পার্টিতে আলাদা আলাদা ভাবে যাবে তারা এবং এমন ভান করবে যেন সেখানেই প্রথম দেখা হয়েছে তাদের। কারণ জিজ্ঞেস করলে ইয়োশিতাকা বলে, সে চায় না লোকে ভাবুক পেশাগতভাবে পরিচিত কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে সে।

    “কোন দাওয়াতে গেলে দেখবে অনেকেই জিজ্ঞেস করে যে ‘প্রথম কোথায় দেখা হয়েছিল আপনাদের? তাদের ভালো একটা জবাব তো দিতে হবে আমাদের, না কি? সেক্ষেত্রে এরকম একটা পার্টির চেয়ে ভালো আর কিছু হয় না-বলে ইয়োশিতাকা।

    অন্য কিছু একটা বানিয়ে বললে সমস্যা কোথায়? ভাবে আয়ানে। কিন্তু ইয়োশিতাকা ইতোমধ্যে তার এক বন্ধুকে বলে ফেলেছিল পার্টিটায় আসার কথা। তাদের কথিত প্রথম সাক্ষাতের সাক্ষী হিসেবে কাজ করবে সে। ইয়োশিতাকার এহেন কাজে অবশ্য অবাক হয়নি আয়ানে। জানতো যে সবকিছু একদম আগে থেকে পরিকল্পনা করেই করে সে। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার পর আয়ানের কেন যেন মনে হয় যে সুকুইকে তাদের অতীত থেকে মুছে দেয়ার নিমিত্তে কাজটা করছে ইয়োশিতাকা। অবশ্য এই সন্দেহের ব্যাপারে কখনো তাকে কিছু বলে না সে।

    এই ঘটনার পর তাদের সম্পর্ক সুন্দরভাবে সামনে এগোতে থাকে। ছয় মাস পর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ইয়োশিতাকা।

    ভীষণ খুশি হয় আয়ানে, কিন্তু তার মনে রোপিত হওয়া সন্দেহের বীজটা ততদিনে রূপ নিয়েছে এক মহীরুহে। কেন আত্মহত্যা করেছিল সুকুই? ইয়োশিতাকার সাথে কিরকম সম্পর্ক ছিল তার?

    সত্যটা জানার একটা প্রবল বাসনা জেঁকে বসে তার চিত্তে। একই সাথে মনে প্রাণে কামনা করতে থাকে যাতে সত্যটা কখনো হাজির না হয় তার সামনে। এই বিপরীতমুখী চিন্তাধারার কারণেই আসন্ন বিয়ে নিয়ে কোন ধরণের উৎসাহ বোধ করে না সে।

    এরপরেই আসে সেই দিনটা যেদিন তাকে অবাক করে দিয়ে অদ্ভুত একটা শর্তের কথা বলে ইয়োশিতাকা। পরবর্তীতে অবশ্য আয়ানে বুঝতে পারে যে শর্তটা ইয়োশিতাকার কাছে অদ্ভুত ছিল না। আমাদের যদি এক বছরের মধ্যে বাচ্চা না হয়, তাহলে আমরা আলাদা হয়ে যাবো।

    আয়ানে প্রথমবার ভেবেছিল যে ভুল শুনছে সে। বিরের আগে কেন ডিভোর্স নিয়ে কথা বলবে কেউ।

    ইয়োশিতাকাকে জিজ্ঞেসও করে যে সে ঠাট্টা করছে কি না। জবাবে তার হবু স্বামী বলে, “আমার জীবনের একটা মূলমন্ত্র আছে। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাচ্চা নিতে চাই। কোনরকম জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার না করলে এই সময়ে বাবা-মা হতে পারবে যে কেউ। আর সেটা যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের দু’ জনের মধ্যে কারো কোন সমস্যা আছে। আর আমি…নিয়মিত চেক-আপ করাই। আমার পক্ষ থেকে যে কোন সমস্যা হবে না তা নিশ্চিত করে বলতে পারি”।

    আয়ানের মনে হয়েছিল তার পুরো শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কেউ। “জুঞ্জিকেও কি এই কথাই বলেছিলে?” শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে সে।

    “কি?” ইয়োশিতাকা বুঝতে না পেরে বলে। এর আগে কখনো তাকে ঘাবড়াতে দেখেনি আয়ানে।

    “দয়া করে মিথ্যে বলবে না। তোমার সাথে সম্পর্ক ছিল জুঞ্জির, তাই না?”

    ভূকুটি করে দীর্ঘ একটা সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকে ইয়োশিতাকা, কিন্তু সত্যটা লুকোয় না। যদিও এটা পরিস্কার হয়ে যায়, না জিজ্ঞেস করলে কখনোই ব্যাপারটা তাকে জানানোর ইচ্ছে ছিল না তার। “আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে কোন না কোন সময় এটা জেনে যাবে তুমি কিংবা জুঞ্জি হয়তো নিজেই বলবে।”

    “আমাদের দু’জনের সাথে কি একই সময়ে সম্পর্ক ছিল তোমার?”

    “না, ওরকম কিছু না। তোমার সাথে যখন ডেটিং শুরু করেছি, ততদিনে জুঞ্জির সাথে সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিল।”

    “কি বলে ব্রেক-আপ করেছিলে?” আয়ানে জিজ্ঞেস করে। “এমন একজন নারীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে চাও যে তোমার বাচ্চার মা হতে পারবে, এটা?”

    জবাবে কাঁধ ঝাঁকায় ইয়োশিতাকা। “ঠিক এই শব্দগুলোই ব্যবহার করিনি। কিন্তু যা বলেছিলাম তার অর্থ করলে অনেকটা এরকমই দাঁড়ায়।”

    “কি বলেছিলে?”

    “বলেছিলাম তার সময় শেষ।”

    “সরি? ‘সময় শেষ’ মানে?”

    “ইতোমধ্যে চৌত্রিশ বছর হয়ে গিয়েছিল জুঞ্জির। কনডম বা পিলও ব্যবহার করিনি আমরা, তবুও গর্ভধারণে সক্ষম হয় না সে। আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।”

    “তাই আমাকে বেছে নিয়েছিলে?”

    “আমি কি ভুল কিছু করেছি? যে সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই, সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কি মানে? একটা নিজের পরিবার চাই আমার।”

    “কথাটা আমাকে এতদিন কেন বলোনি?”

    “কারণ আমার মনে হয়নি এটা তোমার জানার কোন প্রয়োজন আছে। তবে তুমি যদি কিছু জিজ্ঞেস করো, তাহলে সব খুলে বলার জন্যে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আয়ানে, আমি কিন্তু তোমার সাথে কোনরকমের বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। কোন মিথ্যেও বলিনি।”

    ইয়োশিতাকার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আয়ানে। ব্যালকনির ফুলগুলো এসময় চোখে পড়ে তার। সেখানেই অপরাজিতা ফুলগুলো দেখতে পায় সে। জুঞ্জির বেগুনী প্রজাপতি। বান্ধবীর কথা মনে পড়াতে চোখ ফেটে কান্না আসে তার।

    ইয়োশিতাকা জুঞ্জিকে ভুলে গেলেও, আয়ানের জন্যে ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। এরপর যখন আয়ানের ফোনে রিংটা দেখে সে, দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সমস্যা হয় না। অভিমানে আত্মহত্যার পথটাই বেছে নেয়। তবে তার আগে একটা বার্তা পাঠিয়ে যায় আয়ানেকে – আর্সেনিকের প্যাকেটটা।

    অবশেষে বুঝতে পারে আয়ানে। বিষটা তাকে জুঞ্জি পাঠায় একটা সতর্কবার্তা হিসেবে :

    একসময় তোমাকেও ব্যবহার করতে হবে এই বিষটুকু।

    জুঞ্জিই ছিল একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে সুখ দুঃখের সব ব্যাপারে আলাপ করতো আয়ানে। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলোর পাশাপাশি আগামী দিনের স্বপ্নের কথাও তাকে বলতো সে। এক বিকেলে বারে বসে কথা বলার সময় জুঞ্জিকে আয়ানে জানায় যে জন্মগত একটা সমস্যার কারণে কখনো মা হতে পারবে

    না সে।

    সে জানতো যে একসময় আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে ইয়োশিতাকা। যেমনটা ছুঁড়ে ফেলেছিল তাকে।

    “আমার একটা কথাও কি তোমার কানে ঢুকেছে?” বিরক্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল ইয়োশিতাকা।

    ঘুরে দাঁড়িয়ে তার উদ্দেশ্যে একটা হাসি দিল সে, “হ্যাঁ, সব শুনেছি। না শোনার কি হলো?”

    “তাহলে দয়া করে একটু দ্রুত জবাব দিয়ে আমাকে বাধিত করবে এরপর থেকে,” পা ভাঁজ করে সোফায় বসতে বসতে বলল ইয়োশিতাকা।

    “অন্য কিছু ভাবছিলাম।“

    “তাই? আগে তো কখনও এমন করোনি।”

    “তুমি যা যা বললে সেগুলো কিন্তু অবাক করেছে আমাকে।“

    “অবাক হওয়ার কি আছে? এতদিনে তো আমার জীবন-যাপনের ধরণের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা তোমার।”

    বিয়ে নিয়ে তার নিজের কি ধারণা সে সম্পর্কে সব খুলে বলে ইয়োশিতাকা। তার মতে যে দম্পতির কোন বাচ্চাকাচ্চা নেই, তাদের সম্পর্কেরও কোন অর্থ নেই।

    “এত মন খারাপ করছো কেন, আয়ানে? কিসের অভাব আছে তোমার, শুনি? যদি তোমাকে কিছু দিতে ভুলে যাই আমি, তাহলে মনে করিয়ে দাও। তোমার জন্যে যা যা করা সম্ভব, সব করতে রাজি আছি। তাই আপাতত এই ফালতু আলোচনা বন্ধ করে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি বরং। না কি অন্য কোন উপায় জানা আছে তোমার?”

    ইয়োশিতাকার ধারণাই ছিল না যে তার কথাগুলো কতটা আঘাত করছে আয়ানেকে। তবে সত্যি কথা বলতে ভুল কিছু বলেনি সে। তার সাহায্যের কারণেই আয়ানের অনেকগুলো স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। কিন্তু এই কথাগুলো শোনার পর বিবাহিত জীবনের কথা ভাববে কি করে সে? এক বছর পরেই তো শেষ হয়ে যাবে সব।

    “প্রশ্নটা হয়তো বোকার মত শোনাবে, তারপরও না জিজ্ঞেস করে পারছি না।”

    “কি প্রশ্ন?”

    “আমার জন্যে তোমার ভালোবাসার কি হলো?” তুমি কি জুঞ্জির সাথে সম্পর্কে শেষ করে দিয়েছিলে এটা ভেবে যে আমি তোমার বাচ্চার মা হতে পারবো? আমাকে কি কখনো ভালোবেসেছো তুমি?

    তোমার জন্যে আমার ভালোবাসা একটুও কমেনি,” বলে ইয়োশিতাকা, “তোমাকে এখনও আগের মতই ভালোবাসি আমি।”

    কথাটা কি সত্য? জানতেই হবে তাকে। ভালোবাসা এবং ঘৃণা তার হৃদয়কে দু’টুকরো করে ফেলে সেমুহূর্তে। সত্যটা জানার জন্যে খুন করতেও পিছপা হবে না। আর তাই আয়ানে সিদ্ধান্ত নেয় যে তার সামনে বসে থাকা লোকটার স্ত্রী হবে সে।

    কিন্তু ইয়োশিতাকা মাশিবার জীবনের নাটাই থাকবে ওর হাতে। তৎক্ষণাৎ কোন শাস্তি তাকে দেবে না সে। নিজেকে শুধরানোর সুযোগ পাবে ইয়োশিতাকা। তবে সুযোগটা নেবে কি না সেটা নির্ভর করছে তার নিজের ওপর।

    প্রথমে যখন ফিলট্রেশন সিস্টেমটার ভেতরে আর্সেনাস এসিড ছিটিয়ে দেয় আয়ানে, কিছুদিন খুব ভয়ে ভয়ে থাকে। এটা ভালো করেই জানতো যে রান্নাঘরে অন্য কাউকে ঘেষতে দেয়া যাবে না। তবে সত্যি কথা বলতে অন্য একজনের জীবন যে কোন মুহূর্তে শেষ করে দেয়ার ক্ষমতাটুকু উপভোগ করে সে।

    ইয়োশিতাকা যখনই বাসায় থাকতো, সোফায় বসে কাজ করতো আয়ানে। এমনকি টয়লেটেও এমন সময়ে যেত যখন রান্নাঘরে ঢোকার কোন সম্ভাবনা ছিল না তার স্বামীর।

    বিয়ের পরে তাকে যথেষ্ট করেছে ইয়োশিতাকা। এসব নিয়ে কখনো কোন অভিযোগ ছিল না আয়ানের। যতদিন অবধি এই অবস্থার পরিবর্তন না হচ্ছে ততদিন ওকে ফিল্টারের কাছে ঘেঁষতে দেব না—ঠিক করেছিল সে।

    তবে জুঞ্জির সাথে ইয়োশিতাকা যা করেছে, এটা এক মুহূর্তের জন্যেও ভোলেনি আয়ানে। যদি তার সাথে ওরকম কিছু না করে ইয়োশিতাকা, তাহলে বেঁচে যাবে সে। আয়ানের জন্যে বিয়েটা দাঁড়ায় একজন মানুষকে প্রতিদিন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার এক অনভিপ্রেত যুদ্ধে। যুগে যুগে সাধুরা হয়তো এভাবেই পরিত্রাণের পথ বাতলে এসেছে মানবজাতিকে

    তবুও ভেতরে ভেতরে সে ঠিকই জানতো, ইয়োশিতাকার সিদ্ধান্ত কখনোই বদলাবে না। হিরোমির দিকে তার তাকানোর ভঙ্গি দেখেই আয়ানে বুঝতে পেরেছিল যে সময় ঘনিয়ে এসেছে।

    ইকাইদের যেদিন দাওয়াত করেছিল ওরা, সেদিন রাতেই ইয়োশিতাকা তাকে ডিভোর্সের ব্যাপারে জানায়। অনুভূতিহীন কণ্ঠে কথাগুলো বলে সে।

    “তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো, আমাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। এখান থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করো।”

    কথাটা শুনে নিষ্প্রভ একটা হাসি ফোটে আয়ানের চেহারায়। “আমার একটা অনুরোধ আছে,” বলে সে।

    “কি?”

    “দুই তিনদিনের জন্যে হোক্কাইদো যাবো আমি। আশা করি তোমার কোন অসুবিধে হবেনা এই সময়টুকুতে।”

    জবাবে হেসে কাঁধ ঝাঁকায় ইয়োশিতাকা। “এটা আবার কিরকম অনুরোধ। যাবে তো যাও, আমার কোন সমস্যা হবে না।”

    “তা জানি,” বলে আয়ানে।

    আর কারো জীবনের পরিত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করতে হবে না তাকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article রিং – কোজি সুজুকি

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.