Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প340 Mins Read0

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৬

    অধ্যায় ৬

    এদিকে ইতোমধ্যেই আয়ানের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে ফেলেছে চিফ মামিয়া। কুসানাগি তাকে জানিয়ে দিল যে মিস ওয়াকাইয়ামা বাসায় ফিরে গিয়েছে, অসুস্থ বোধ করছিল সে।

    “আহহা,” আয়ানে বলল, “ওর মানসিক অবস্থাও নিশ্চয়ই ভালো না।” দু’হাতে একটা চায়ের কাপ আঁকড়ে রেখেছে, চোখে শূন্য দৃষ্টি, লিভিং রুমের সোফায় সোজা হয়ে বসলো সে। বসার ভঙ্গিতে এটা স্পষ্ট যে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছে এতক্ষণে।

    তার পাশে রাখা হ্যান্ডব্যাগের ভেতর থেকে একটা মোবাইলের রিংটোন ভেসে এল এসময়। ফোনটা বের করে মামিয়ার দিকে তাকালো সে।

    মাথা নেড়ে অনুমতি দিল চিফ।

    কলটা ধরার আগে ফোনের ডিসপ্লের দিকে এক নজর তাকালো আয়ানে।

    “হ্যাঁ?… হ্যাঁ, ঠিক আছি। পুলিশের লোকেরা এখন এখানেই আছে। তারা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। লিভিং রুমে পেয়েছিল ওকে… অবশ্যই, জানাবো। বাবাকে বলো চিন্তা না করতে। আচ্ছা, বাই।” কলটা কেটে মামিয়াকে জানালো, তার মা ফোন দিয়েছিল।

    “তাকে বলেছেন যে কি হয়েছে?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

    “শুধু বলেছি যে হঠাৎ মারা গিয়েছে। মা অবশ্য জানতে চেয়েছিল কিভাবে, কিন্তু কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না,” কপালে হাত দিয়ে বলল আয়ানে।

    “আপনার স্বামীর অফিসে কিছু জানিয়েছেন?”

    “হ্যাঁ। প্লেনে ওঠার আগে লিগ্যাল কনসাল্ট্যান্টের সাথে কথা বলেছি। উনিই মি. ইকাই।”

    “শুক্রবারে দাওয়াতে এসেছিলেন যিনি?”

    “হ্যাঁ। মাশিবার এভাবে চলে যাওয়াতে অফিসে একদম বেসামাল অবস্থা…আমি যদি সাহায্য করতে পারতাম,” বেদনার ছাপ প্রগাঢ় হলো আয়ানের চেহারায়, চোখে ফিরে এসেছে শূন্য দৃষ্টি আমাদের সামনে নিজেকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কেবল, কুসানাগি মনে মনে বলল। যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়বে আবার। তার ইচ্ছে করছে আয়ানেকে সাহায্য করতে, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে একজন বাইরের মানুষের পক্ষে কিছুই করার থাকে না।

    “মিস ওয়াকাইয়ামা যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থবোধ না করছেন, অন্য কোন আত্মীয়কে আপনার সাথে এসে থাকতে বলুন না হয়। খুব কাছের কেউ মারা গেলে ছোটখাটো সব কাজই অনেক বড় বোঝা মনে হয়।“

    “আমি ঠিক আছি। তাছাড়া আপনারাও নিশ্চয়ই চাইবেন না, খুব বেশি লোকের আগমন ঘটুক এখানে, তাই না?”

    কুসানাগির দিকে তাকালো মামিয়া, চেহারার স্পষ্ট অস্বস্তি। “ফরেনসিকের লোকেরা বিকেলে আবার আসছে। মিসেস মাশিবার অনুমতি নিয়েছি আমরা।”

    তাহলে একা সময় কাটানো আর হচ্ছে না তার। সদ্য বিধবার সামনে আর মাথা উঁচু করে রাখতে পারলো না কুসানাগি, দৃষ্টি নামিয়ে নিল। শোক পালনে নির্জনতা আবশ্যকীয়, অন্তত তার কাছে সেটাই মনে হয়।

    “সকাল সকাল আপনার এতগুলো সময় নষ্ট করার জন্যে দুঃখিত, মিসেস মাশিবা,” উঠে দাঁড়িয়ে বলল মামিয়া। “কিশিতানি থাকছে এখানে। আপনার যদি কোন কিছুর দরকার হয় তবে নির্দ্বিধায় তাকে বলতে পারেন।” নিচু স্বরে তাকে ধন্যবাদ জানালো আয়ানে। বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো কুসানাগি আর মামিয়া।

    “তোমাদের কেমন গেল?” বাইরে পা দিয়েই জিজ্ঞেস করল চিফ মামিয়া।

    “হিরোমি ওয়াকাইয়ামা স্বীকার করেছেন, মি. মাশিবার সাথে সম্পর্ক ছিল তার। তিন মাস আগে শুরু হয়েছিল তাদের প্রণয়। তার দাবি অন্য কেউ জানতো না এ ব্যাপারে।”

    “আর সিঙ্কের কফির কাপের ব্যাপারটা?” নাক ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করল মামিয়া।

    “রবিবার সকালে একসাথে কফি খেয়েছিল তারা, মিস ওয়াকাইয়ামাই কফি বানিয়েছিল। তখনও না কি সবকিছু ঠিক ছিল।”

    “তাহলে এর পরে কফিতে বিষ মেশানো হয়েছে,” গাল চুলকে বলল মামিয়া।

    “মিসেস মাশিবার কাছ থেকে কিছু জানতে পেরেছেন?”

    “চেহারায় অসহিষ্ণু ভাব স্পষ্ট হলো মামিয়ার। সেরকম কিছু না। আমার তো মনে হচ্ছে যে তিনি বোধহয় জানতেনও না স্বামীর পরকীয়ার কথা। তাকে একরকম সরাসরিই প্রশ্নটা করেছিলাম আমি। মানা করে দিয়েছেন। বরং কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন আমি এরকম কিছু জিজ্ঞেস করায়। দেখে মনে হয়নি, অভিনয় করছেন। আর যদি করে থাকেন তাহলে বলতে হবে খুব ভালো অভিনেতা তিনি।”

    একবার আড়চোখে উতসুমির দিকে তাকালো কুসানাগি। তার ধারণা, পুরোটাই অভিনয় করেছে আয়ানে। কিছুক্ষণ আগে বলেছিল চিফের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে তার মতামত জানতে চাইবে, কিন্তু এ মুহূর্তে নোট নিতে ব্যস্ত।

    “মিসেস মাশিবাকে কি কিছু জানাবো আমরা?”

    মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিল মামিয়া। “আমাদের আগ বাড়িয়ে কিছু বলার দরকার নেই। তদন্তের সাথেও আপাতত কোন সম্পর্ক দেখছি না ব্যাপারটার। আগামী কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার তোমাদের সাথে দেখা হবে তার, সাবধানে কথা বলবে।”

    “তাহলে ব্যাপারটা লুকোচ্ছি আমরা?”

    “না, এখানে লুকোছাপার কিছু নেই। তিনি যদি নিজে থেকে জানতে পারেন, তাহলে জানবেন। আমাদের কিছু করার নেই সে ব্যাপারে। যদি না ইতোমধ্যেই জেনে থাকেন আর কি,” পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে

    চোখ বোলালো মামিয়া। “এই ঠিকানায় যাবে তোমরা।”

    কাগজটায় তাতসুহিকো ইকাইয়ের নাম, টেলিফোন নম্বর আর ঠিকানা লেখা।

    “মি. মাশিবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তাকে। গত শুক্রবারের দাওয়াতটা সম্পর্কেও প্রশ্ন করবে।”

    “আমি তো শুনেছি, মি. ইকাই এ মুহূর্তে মি. মাশিবার ব্যবসা সামাল দেয়ার কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত।”

    “তাহলে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলবে। আগে ফোন করে নিও। মিসেস মাশিবা বলেছেন, দুই মাস আগেই বাচ্চা হয়েছে তার। খুব বেশি চাপ দেয়া যাবে না তাকে।“

    তাহলে আয়ানেকে জানানো হয়েছে, ইকাইদের সাথে কথা বলবে ওরা।

    এরকম একটা মুহূর্তেও মিস ইকাইয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করেছে সে। ব্যাপারটা মুগ্ধ করল কুসানাগিকে।

    উতসুমি পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে আনলে কিছুক্ষণের মধ্যে ইকাইদের ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল ওরা। পথে চিফ মামিয়ার দেয়া নম্বরটায় ফোন করল কুসানাগি। পুলিশ অফিসার বলে নিজের পরিচয় দেয়া মাত্র ওপাশে গম্ভীর হয়ে গেল ইউকিকো ইকাইয়ের কণ্ঠস্বর। দেখা করার ব্যাপারে তাকে রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হলো কুসানাগিকে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো সে, কিন্তু এক ঘন্টা সময় দিতে হবে তাকে। একটা কফি শপের সামনে গাড়ি থামালো উতসুমি। এখানেই অপেক্ষা করবে ওরা।

    “তাহলে তোমার মতে মিসেস মাশিবা জানতেন, তার স্বামীর সম্পর্ক আছে অন্য কারো সাথে, পুরোটাই তার অভিনয়?” হট চকোলেটের কাপে চুমুক দিয়ে বলল কুসানাগি। একদিনের মত যথেষ্ট কফি খেয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে।

    “আমার যা মনে হয়েছে সেটাই বলেছি।”

    “তুমি কি আসলেই বিশ্বাস করো এটা?” জবাবে কিছু বলল না উতসুমি।

    “যদি তিনি জেনেই থাকেন তাহলে তার স্বামী বা মিস ওয়াকাইয়ামার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেননি কেন? হিরোমিকে তো শুক্রবারে দাওয়াতও দিয়েছিল সে। জানলে তো এরকমটা করার কথা না।”

    “সাধারণ যে কেউ হলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতো।”

    “কিন্তু মিসেস মাশিবা সাধারণ কেউ নয়?”

    “সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে যে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী তিনি। সেইসাথে ধৈর্য্যও প্রচুর।”

    “এতই ধৈর্য্য যে স্বামীর পরকীয়া নিয়েও কিছু বলেনি?”

    “আমার মনে হয় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উল্টোপাল্টা কিছু করে কোন লাভ নেই। বরং এতে দুটো বড় ক্ষতি হবে তার-সংসার ভাঙবে, সেইসাথে একজন তার প্রিয় শিক্ষানবিশের সাথেও সম্পর্ক খারাপ হবে।”

    “সেটা মানলাম, কিন্তু তাই বলে স্বামীর গোপন প্রেয়সীর সাথে তো আর সারাজীবন ভাব রাখতে পারবে না। সংসার টিকিয়ে রাখার অভিনয় করাটা এত জরুরি?”

    “কার কাছে কোনটা জরুরি সেটা বলা মুশকিল। গৃহ নির্যাতনের কোন প্রমাণ নেই। আপাত দৃষ্টিতে কিন্তু সবার কাছে এটাই মনে হবে যে সুখের সংসার মাশিবাদের। টাকা পয়সা নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা করতে হতো না আয়ানে মাশিবাকে। সেলাইয়ের কাজেও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারতো। তিনি নিশ্চয়ই এতটাও বোকা নন যে এসব হেলায় ছুড়ে দেবেন। হয়তো মি. মাশিবা এবং মিস ওয়াকাইয়ামার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আমার অন্তত এটাই মনে হয়, ভুলও হতে পারি।”

    হট চকোলেটের কাপে আরেকবার চুমুক দিতেই ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল কুসানাগির। বেশি মিষ্টি। কাপে কিছুটা পানি মেশালো সে। “তাকে দেখে কিন্তু মনে হয় না, এত হিসেব নিকেশ করে চলার মত মানুষ।”

    “এখানে হিসেব-নিকেশের কিছু নেই। বরং এভাবে দেখুন, এক বুদ্ধিমান মহিলা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন।”

    এক হাত দিয়ে মুখ মুছে জুনিয়র ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো কুসানাগি। “তুমি হলেও কি এই কাজ করতে উতসুমি?”

    হেসে মাথা ঝাঁকালো উতসুমি। “আমার স্বামী যদি এরকম কিছু করে তাহলে আর যাই হোক, চুপ করে থাকতাম না।“

    “বেচারা,” কুসানাগিও হাসলো। “আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। স্বামীর পরকীয়ার ব্যাপারে জেনেও কিভাবে কারো পক্ষে স্বাভাবিকভাবে সংসার করে যাওয়া সম্ভব!”

    ঘড়ির দিকে তাকালো সে। ইউকিকো ইকাইয়ের সাথে ওর কথা হয়েছে প্রায় আধাঘন্টা আগে।

    মাশিবাদের মতন ইকাইরাও বেশ সম্ভ্রান্ত একটা এলাকায় থাকে। বাড়ির ধরনও একই রকম। মূল গেটের পাশে অতিথিদের জন্যে পৃথক একটা গ্যারেজ। ফলে উতসুমিকে পার্কিংয়ের জন্যে আলাদা জায়গা খুঁজতে হলো না।

    ভেতরে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছিল ইউকিকো ইকাই এবং তার স্বামী তাতসুহিকো ইকাই। কুসানাগি ফোনে যোগাযোগ করার পর মি. ইকাইকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছে ইউকিকো।

    “অফিসে সব ঠিকঠাক?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

    “অফিসের কর্মচারীরা বেশ দক্ষ, তাদের নিয়ে আপাতত কোন চিন্তা নেই। কিন্তু ক্লায়েন্টদের সাথে এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না…” বলে দুই ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো তাতসুহিকো। “ঘটনাটা কী? খুলে বলবেন?”

    “নিজের বাসাতেই মারা গেছেন ইয়োশিতাকা মাশিবা।”

    “সেটা তো জানি। কিন্তু টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ যেহেতু ব্যাপারটা খতিয়ে দেখছে, সেহেতু এটা নিছক কোন দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয় বোধহয়?

    লম্বা শ্বাস নিল কুসানাগি। ভুলে গেলে চলবে না যে একজন আইনজীবির সাথে কথা বলছে সে। যেনতেন কিছু বোঝানো যাবে না তাকে। কুসানাগি যদি অসহযোগিতা করে তাহলে অন্য কোন উপায়ে ঠিকই তথ্য বের করে নেবে। কাউকে কিছু বলা যাবে না এই শর্তে মি. ইকাই এবং মিসেস ইকাইকে সব খুলে বলল সে। কফিতে বিষের অস্তিত্ব পাওয়ার ব্যাপারটাও এড়ালো না।

    বিস্ফোরিত নয়নে তাতসুহিকোর পাশে বসে সব শুনলো ইউকিকো। চোখজোড়া লাল তার। ওজন খানিকটা বাড়তির দিকে। বাচ্চা হবার সময়ে তার স্বাস্থ্য কিছুটা বেড়েছে বলে মনে হলো কুসানাগির।

    কোকড়া চুলে একবার হাত চালালো তাতসুহিকো। “এবারে বুঝতে পারছি,” বলল সে। “যখনই শুনলাম যে লাশের ময়নাতদন্তের জন্যে আবেদন করেছে পুলিশ, তখনই আঁচ করেছিলাম, কোন একটা ঝামেলা আছে। আর আমার মনে হয় না যে আত্মহত্যা করেছে মাশিবা।“

    “আত্মহত্যার চেয়ে খুন হবার সম্ভাবনা বেশি বলতে চাইছেন?”

    “আমি জানি না, আপনারা কী ভাবছেন ইয়োশিতাকা সম্পর্কে। কিন্তু বিষ পানে আত্মহত্যা করার মত মানুষ ছিল না ও…” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল তাতসুহিকো।

    “এমন কাউকে কি চেনেন, যে তার ক্ষতি করতে পারে?”

    “যদি এটা বলি যে কখনো কারো সাথে গন্ডগোল হয়নি ওর তাহলে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু সেই গন্ডগোলগুলো একদমই ব্যবসা সংক্রান্ত, প্রোফেশনাল বলতে পারেন। আসলে অপছন্দ করার মতন মানুষ ছিল না মাশিবা। আর ব্যবসায়িক ঝামেলা যদি বেশি প্রকট হয়, তাহলে আমিই সেগুলো সামলাই, সে হিসেবে আমার শত্রু বেশি হবার কথা,” ব্যাখ্যার সুরে বলল তাতসুহিকো।

    “আর অফিসের বাইরে? ব্যক্তিগত জীবনে কোন শত্রু কি ছিল মি. মাশিবার?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

    সোফায় হেলান দিয়ে বসলো তাতসুহিকো। “সেটা বলতে পারবো না। আমরা দু’জন বিজনেস পার্টনার ছিলাম, তাই স্বভাবতই বেশির ভাগ আলোচনা হোতো ব্যবসা নিয়ে। কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে খুব একটা নাক গলাতাম না।”

    “কিন্তু আপনাদের তো বাসায় দাওয়াত দিতেন মাশিবারা।”

    মাথা ঝাঁকালো তাতসুহিকো। “ওদের জীবনে নাক গলাতাম না বিধায়ই দাওয়াত দিত। এই ব্যস্ত জীবনে এরকম টুকটাক সামাজিকতা রক্ষা করতেই হয় নিয়ম রক্ষার খাতিরে।”

    অর্থাৎ বাইরের মানুষের জন্যে খুব বেশি সময় ছিল না মি. মাশিবার। “শুক্রবারে যখন মাশিবাদের বাসায় গিয়েছিলেন তখন কি অন্যরকম কিছু খেয়াল করেছিলেন?”

    “মানে এরকম কিছু ঘটবে সেটা আঁচ করতে পেরেছিলাম কি না? একদমই না। ভালো সময় কাটিয়েছিলাম সেদিন আমরা,” ভ্রু-জোড়া কুঁচকে বলল তাতসুহিকো। “বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে মাত্র তিন দিন আগের ঘটনা।”

    “উইকেন্ডে কারো সাথে দেখা করার ব্যাপারে কিছু বলেছিলেন মি. মাশিবা?”

    “আমাকে তো বলেনি,” বলে স্ত্রীর দিকে তাকালো তাতসুহিকো। “আমিও ওরকম কিছু শুনিনি। শুধু আয়ানে বলেছিল, বাড়ি যাচ্ছে…” মাথা নাড়লো কুসানাগি। ইকাইদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

    “মাশিবারা কি প্রায়ই দাওয়াত দিত আপনাদের?” উতসুমি জিজ্ঞেস করল পাশ থেকে।

    “দু-তিন মাস অন্তর অন্তর।”

    “সবসময় কি তারাই দাওয়াত দিত?”

    “ওদের বিয়ের পর আমরাও একবার দাওয়াত দিয়েছিলাম। এরপরে সবসময় মাশিবাদের বাসাতেই দেখা করেছি, প্রেগন্যান্সির কারণে ইউকিকো ভারী কাজ করতে পারতো না।”

    “মি. মাশিবার সাথে বিয়ে হবার আগ থেকেই কি আপনারা আয়ানেকে চিনতেন?”

    “হ্যাঁ। এমনকি ওদের যখন প্রথম দেখা হয়, সেখানেও ছিলাম আমি।”

    “কোথায় দেখা হয়েছিল তাদের?”

    “মাশিবা আর আমি একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম, সেখানেই। এরপরেই ডেটিং শুরু করে ওরা।”

    “কতদিন আগের কথা এটা?”

    “এই…” একবার মাথা চুলকালো তাতসুহিকো, “দেড় বছর হবে।”

    “আর তাদের বিয়ে হয়েছিল এক বছর আগে। বেশ তাড়াতাড়িই কিন্তু…”

    “হ্যাঁ, খুব বেশি দেরি করেনি।”

    “মি. মাশিবা সন্তান চাচ্ছিলেন,” ইউকিকো বলল, “সঠিক মানুষটাকে খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগে যায় তার, কিছুটা অধৈর্য্যও হয়ে উঠেছিলেন ততদিনে।”

    “এটা ওনাদের জানার কোন প্রয়োজন দেখছি না,” স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল তাতসুহিকো। “এমনকি কিভাবে ওদের দেখা হলো, কবে বিয়ে হলো, এসব জানারও কি আদৌ কোন দরকার আছে?”

    “আসলে,” কুসানাগি বলল শান্তস্বরে, “খুব বেশি তথ্য এ মুহূর্তে হাতে নেই আমাদের। তাই মি. মাশিবা সম্পর্কে যত বেশি জানতে পারবো, তদন্তে সুবিধা হবে।”

    “আমি বুঝতে পারছি, তথ্যগুলো কেন দরকার। কিন্তু ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি খোঁচাখুঁচি করার অধিকার কিন্তু নেই আপনাদের,” দৃঢ় কন্ঠে বলল তাতসুহিকো। দৃষ্টিতে প্রচ্ছন্ন হুমকি।

    “সেটা জানি,” মাথা নিচু করে বলল কুসানাগি। “আগামী প্রশ্নগুলোর জন্যে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে আমাদের জানতে হবে যে এই উইকেন্ডে কি করেছেন আপনারা দু’জন।”

    ধীরে একবার মাথা নাড়লো তাতসুহিকো। “অ্যালিবাই দরকার আপনাদের? সেটাই স্বাভাবিক।” পকেট থেকে একটা চামড়ায় বাঁধানো অর্গানাইজার বের করল সে।

    শনিবার সকালটা নিজের অফিসে কাটিয়েছে তাতসুহিকো ইকাই, এরপরে এক ক্লায়েন্টের সাথে পাবে গিয়েছিল। রবিবারে সকাল থেকে আরেক ক্লায়েন্টের সাথে গলফ খেলে, খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত দশটার পর বাসায় ফিরেছে। আর ইউকিকো পুরোটা সময় বাসাতেই ছিল, তার মা এবং বোন এসেছিল দেখা করতে।

    সেই রাতেই স্থানীয় পুলিশ সদর দপ্তরে একটা ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করল সবাই। মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ফাস্ট ইনভিস্টেশন ডিভিশন প্রধান শুরুই করলেন এটা বলার মাধ্যমে যে, সম্ভাব্য খুনের তদন্ত করছে ওরা। এছাড়া কফিতে আর্সেনাস এসিডের উপস্থিতির অন্য কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নেই। আত্মহত্যা করতে চাইলে কফি বিনে বিষ মেশানোর কোন দরকার ছিল না মি. মাশিবার। সরাসরি বানানো কফিতে মেশানোটাই সহজ হতো।

    ফরেনসিকের লোকেরাও নতুন কিছু জানাতে পারলো না। বিকেলে তারা মাশিবাদের বাসায় গিয়ে মুখে দেয়া যায় এমন সবকিছু পরীক্ষা করে দেখেছে। খাবার, মশলা, ড্রিঙ্কস, ঔষধ-সব। সব ধরণের চামচ, ছুরি, কাঁটাচামচ-এগুলোও পরীক্ষা করেছে। এখন অবধি ওগুলোর কোনটিতেই বিষের অস্তিত্ব মেলেনি। পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।

    অর্থাৎ শুরু থেকে কফিই লক্ষ্য ছিল খুনির, জানতো, কোন না কোন সময় কফি খাবে মাশিবা। সেক্ষেত্রে দু’উপায়ে কফিতে বিষ মেশানো যেতে পারে বলে জানালো ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি। আগে থেকেই গ্রাউন্ড কফি বিন, পেপার ফিল্টার অথবা কাপে বিষ ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল অথবা কফি বানানোর সময়ে যে কোন একটা উপাদানে বিষ মেশানো হয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, ঠিক কী ঘটেছিল, কারণ বাসার অন্য কোথাও আর্সেনাস এসিডের অস্তিত্ব মেলেনি। কফি বানানোর সময়ে ইয়োশিতাকার সাথে কেউ ছিল কি না তা জানাও সম্ভব নয়।

    প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু কেউ মাশিবাদের বাসায় কাউকে ঢুকতে দেখেনি, সেখান থেকে বেরুতেও দেখেনি। অবশ্য মাশিবারা যেরকম এলাকায় থাকে সেখানকার অধিবাসীরা একে অপরের ব্যাপারে খুব কমই নাক গলায়। তারা যে কিছু জানাতে পারবে না সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল সবাই।

    আয়ানে আর ইকাইদের সাথে কথা বলে কি কি জেনেছে সব খুলে বলল কুসানাগি। হিরোমি এবং ইয়োশিতাকার মধ্যবর্তী সম্পর্কটার কথা অবশ্য চেপে গেল। মামিয়া সে ব্যাপারে আপাতত কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করেছে, যদিও ডিভিশন প্রধান অফিসারের কাছে পাঠানো রিপোর্টে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করছে সে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছে যে এখনই এ ব্যাপারে সবাইকে জানানোর কোন দরকার নেই। মিডিয়ার লোকজন যদি কোনভাবে জানতে পারে তাহলে হাউকাউ শুরু করে দেবে।

    ব্রিফিং শেষে উসুমি আর কুসানাগিকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠালো মামিয়া। “কালকে স্যাপোরো যাবে তোমরা,” ওদের উদ্দেশ্যে বলল সে।

    “মিসেস মাশিবার অ্যালিবাই ঠিক আছে কি না দেখতে পাঠাচ্ছেন?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

    “হ্যাঁ। পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এমন একজন খুন হয়েছে। সুতরাং তার স্ত্রী এবং যার সাথে গোপন সম্পর্ক ছিল দু’জনকেই সন্দেহের আওতায় রাখতে হবে। ইতোমধ্যেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে হিরোমির শক্ত কোন অ্যালিবাই নেই। ডিভিশন থেকে বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব আসামীকে বিচারের আওতায় আনতে। ওখানে একদিনের বেশি সময় নষ্ট করবে না তোমরা। হোক্কাইদো পুলিশকে সবকিছু আগে থেকেই জানিয়ে রাখবো আমি। তোমাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে তারা।”

    “আয়ানে বলেছেন যে তিনি রিসোর্টে থাকা অবস্থায় তার সাথে যোগাযোগ করেছিল পুলিশ। আমাদের সেখানেও যেতে হবে বোধহয়।“

    “হ্যাঁ, জোজাঙ্কেই হট স্প্রিং রিসোর্ট। স্যাপোরো থেকে এক ঘন্টার পথ গাড়িতে। আয়ানে মাশিবার পৈতৃক নিবাস নিশি ওয়ার্ডে, শহরের ভেতরে। দু’জন দু’জায়গায় গেলে তাড়াতাড়ি কাজ সারতে পারবে।”

    এটাই ভাবছিলাম, মনে মনে বলল কুসানাগি। একরাত হট স্প্রিং রিসোর্টে থাকার মত খরচ দেয়ার লোক না এরা।

    “কি ব্যাপার উতসুমি? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে যে কিছু বলতে চাচ্ছো?’

    পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জুনিয়র ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো কুসানাগি। “আমরা কি শুধু এই উইকেন্ডে তিনি কি কি করেছেন সে ব্যাপারেই খোঁজ খবর নেবো?”

    “মানে?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল।

    “মিসেস মাশিবা টোকিও ছাড়েন শনিবার সকালে আর ফেরেন সোমবার সকালে। আমি ভাবছিলাম, শুধুমাত্র এই সময়টুকুর মাঝে তিনি কি কি করেছেন সে সম্পর্কে খোঁজ নেয়া যথেষ্ট হবে কি না।”

    “যথেষ্ট না হওয়ার কারণ?”

    “আমি ঠিক নিশ্চিত নই। কিন্তু আমাদের পক্ষে এখনও জানা সম্ভব হয়নি যে ঠিক কিভাবে বা কখন কফিতে বিষ মেশানো হয়েছিল। তাই শুধু এই উইকেন্ডে তিনি কি করেছেন সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়েই তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না।”

    “দাঁড়াও-দাঁড়াও!” কুসানাগি বলল। “আমরা এটা জানি না যে কিভাবে বিষ মেশানো হয়েছিল কিন্তু মেশানোর সময় সম্পর্কে তো আন্দাজ করাই যায়। হিরোমি ওয়াকাইয়ামা মি. মাশিবার সাথে রবিবার সকাল বেলা কফি খেয়েছিল, কিন্তু তার কিছু হয়নি। অর্থাৎ এর পরে বিষ মেশানো হয়।“

    “আপনি কি এটা একদম নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন?”

    “না পারার কি আছে? এছাড়া আর কখন বিষ মেশানো হতে পারে, বলো?”

    “আমি…আমিও নিশ্চিত নই।”

    “তোমার কি ধারণা যে আয়ানেকে বাঁচানোর জন্যে মিথ্যে বলছে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল। “সেক্ষেত্রে কিন্তু এটাও খতিয়ে দেখতে হবে যে দু’জনে যোগসাজশ করে খুনটা করেছে কি না। যদিও আমার ধারণা তেমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”

    “আমারো সেটাই মনে হয়।“

    “তাহলে সমস্যাটা কি?” কিছুটা রূক্ষস্বরেই জিজ্ঞেস করল কুসানাগি। “আমাদের এখন শুধু আয়ানে মাশিবার শনি থেকে রবিবার পর্যন্ত অ্যালিবাই যাচাই করলেই হয়ে যাচ্ছে। ভুল বললাম?”

    মাথা ঝাঁকালো উতসুমি। “অবশ্যই না। আমি শুধু এটা ভাবছিলাম, এমন কোন উপায়ে হয়তো কফিতে বিষ মেশানো হয়ে থাকতে পারে যেটা সম্পর্কে আমরা ধারণাই করতে পারছি না। হয়তো অজান্তে কোনভাবে নিজেই কফিতে বিষ মিশিয়েছিলেন মি. মাশিবা।”

    “মানে কেউ তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

    “না। কেউ তাকে কোন কিছু করতে বাধ্য করেনি। তিনি হয়তো জানতেনই না বিষের অস্তিত্বের কথা, কিন্তু কফিতে মিশিয়েছেন যাতে স্বাদ বেড়ে যায়। কোন গোপন উপাদান।”

    “কোন গোপন উপাদান? কফিতে?”

    এই যেমন ইন্ডিয়ান তরকারীতে নামানোর আগ দিয়ে গরম মসলা ছিটিয়ে দেয়া হয় না? ওরকম। হয়তো কেউ মি. মাশিবাকে বলেছিল, কফির সাথে জিনিসটা মেশালে স্বাদ বেড়ে যাবে।”

    “আমার কাছে এটা একটু অতিরিক্ত মনে হচ্ছে,” কুসানাগি বলল। “আসলেই কি?”

    “এর আগে কখনো স্বাদ বাড়ানোর জন্যে গ্রাউন্ড কফির সাথে কাউকে কিছু মেশানোর কথা শুনিনি। আর মি. মাশিবার ব্যাপারে যতটুকু শুনেছি তিনিও মনে হয় না এ কথা বিশ্বাস করবেন। তাছাড়া তিনি কিন্তু মিস ওয়াকাইয়ামাকে কফি বানাতে বলেছিলেন রবিবারে, তখনও এই ‘গোপন উপাদান’ এর ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। তর্কের খাতিরে ধরলাম মি. মাশিবা নিজেই কোনভাবে কাজটা করেছেন। সেক্ষেত্রে অন্য কোথাও আর্সেনাস এসিডের অস্তিত্ব মিলতোই। কিন্তু ক্রাইম সিনে ওরকম কিছু পাওয়া যায়নি। এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করবে তুমি?”

    কুসানাগির প্রশ্নের জবাবে মাথা নাড়লো উতসুমি। “ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়,” বলল সে, “হয়তো আপনি ঠিকই বলছেন, স্যার। আমি শুধু ভাবছিলাম যে এমন কোন সম্ভাব্য পদ্ধতি আছে কি না যেটা আমাদের মাথাতে আসেনি।”

    দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কুসানাগি। “তুমি তোমার আন্দাজের ওপর ভরসা করতে বলছো? না কি এক্ষেত্রেও বলবে যে একজন নারী যেভাবে ভাবতে পারে, আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না?”

    “আমি এরকম কিছু বোঝাতে চাইনি। কিন্তু মেয়েরা যে কিছু ব্যাপার অন্যভাবে চিন্তা করে তা কিন্তু সত্যি… 1”

    “থামো,” হাত উঁচিয়ে বলল মামিয়া। “যুক্তি তর্ক খারাপ লাগে না আমার। কিন্তু শুধু অনুমান আর আন্দাজের ওপর ভরসা না করাই শ্রেয়। উতসুমি, তুমি মিসেস মাশিবাকে সন্দেহ করো?”

    “হ্যাঁ, যদিও আমি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত ন‍ই।“

    আমার কাছে তো পুরোটা আন্দাজে ঢিল ছোড়াই মনে হচ্ছে, কুসানাগি

    বলল মনে মনে। মুখে অবশ্য কিছু প্রকাশ করল না।

    “এই সন্দেহের পেছনে কারণটা কি?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল। “শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো,” লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল উতসুমি। “শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো? মানে?”

    “আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন পাঁচটা ধোয়া গ্লাস দেখেছিলাম রান্নাঘরে, মনে আছে?” কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল সে।

    “হ্যাঁ, মনে আছে। শুক্রবারের দাওয়াতে ব্যবহৃত হয়েছিল ওগুলো।”

    “শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো সাধারণত লিভিং রুমে কাপবোর্ডে রাখা হয়। এজন্যেই ভেতরে ঢুকে আমরা শেলফে খালি জায়গাটা দেখতে পাই।“

    “আর?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল। “আমি এখনও বুঝতে পারছি না কিছু।”

    কুসানাগিও ধরতে পারছে না। কিন্তু উতসুমিকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে।

    “ওগুলো কেন জায়গামতো রেখে যাননি মিসেস মাশিবা?”

    “কি?” একই সাথে প্রশ্ন করল কুসানাগি আর মামিয়া। “রাখেননি তো সমস্যা কোথায়? কিছুক্ষণ পর বলল কুসানাগি।

    “আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কিন্তু ওগুলো যথাস্থানেই রাখার কথা তার। কাপবোর্ডটা তো দেখেছেন। সবকিছু একদম পরিপাটি করে সাজানো ছিল সেখানে। এতটাই পরিপাটি যে, আমরা দেখেই বুঝেছিলাম, শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো জায়গামতো নেই। এখান থেকেই প্রশ্ন ওঠে, কেন ওগুলো গুছিয়ে রাখেননি তিনি।”

    “হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন?” কুসানাগি বলল।

    মাথা ঝাঁকিয়ে সম্ভাবনাটা নাকচ করে দিল উতসুমি। “অসম্ভব।”

    “কেন?”

    “সাধারণ কোন দিন হলে মানতাম তিনি ভুলে গেছেন। কিন্তু পরদিন লম্বা সময়ের জন্যে শহরের বাইরে যাবার পরিকল্পনা ছিল তার। শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো বাইরে রেখে যাবেন, তা সম্ভব নয়।”

    মামিয়ার দিকে তাকালো কুসানাগি। ভাবছে যে তার নিজের চেহারাও ওরকম বিস্ময় ফুটে উঠেছে কি না। উতসুমি এমনভাবে কেসটা নিয়ে ভেবেছে, যেটা তার মাথাতেই আসেনি।

    “শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো বাইরে রেখে যাওয়ার একটা কারণই মাথায় আসছে আমার,” উতসুমি বলল। “তিনি জানতেন, খুব বেশি সময় বাইরে থাকবেন না।”

    বুকে হাত ভাঁজ করে কিছুক্ষণ ভাবলো মামিয়া। এরপর কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কিছু বলতে চাও এ ব্যাপারে?”

    মাথা চুলকালো কুসানাগি। বলার মত কিছু নেই তার। বরং উসুমির দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, “এই কথাগুলো আগে বলোনি কেন? বাসাতে ঢুকেই তো এটা তোমার মাথায় এসেছিল, তাই না?”

    কাঁধ ঝাঁকালো উতসুমি, “ক্রাইম সিনে ঠিকমতো মনোযোগ না দিয়ে উল্টোপাল্টা জিনিসে মনোযোগ দেয়ায় বকুনি খাবার ভয়ে কিছু বলিনি। তাছাড়া ভেবেছিলাম যে মিসেস মাশিবাই যদি দোষী হয় তাহলে অন্য কোন না কোন উপায়ে জানাই যাবে…সরি।”

    লম্বা একটা শ্বাস নিল মামিয়া। “এটা তো ঠিক না কুসানাগি। একজন নতুন ডিটেক্টিভ যদি কাজে যোগ দেয়ার পর নির্ভয়ে নিজের মতই প্রকাশ না করতে পারে, তাহলে কিভাবে হবে?”

    “না! আমি ওটা বোঝাতে চাইনি-” উতসুমি বলতে শুরু করলেও হাত উঁচিয়ে তাকে থামালো মামিয়া।

    “যা ভাবছো তা নির্দ্বিধায় বলবে, যখন খুশি। তদন্তের সময় কার পদমর্যাদা কি সেটা নিয়ে ভাবারও কোন দরকার নেই। আমি ডিভিশনের সাথে তোমার বলা কথাগুলো নিয়ে আলাপ করবো। গ্লাসগুলো জায়গামতো রেখে যাননি, এটা একটু অদ্ভুতই বটে। কিন্তু গুরুতর কিছুও না। শক্ত প্রমাণ দরকার আমাদের। তাই এ মুহূর্তে তোমাদের কাছে একটাই চাওয়া আমার, মিসেস মাশিবার অ্যালিবাই যাচাই করে দেখো। গোয়েন্দা হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যত বেশি সম্ভব তথ্য জোগাড় করা। সেই তথ্যগুলো দিয়ে ঠিক কি হবে, তা পরে ভাবলেও চলবে। বুঝেছো?”

    কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রাখলো উতসুমি। এরপর চিফ ডিটেক্টিভের চোখে চোখ রেখে বলল, “বুঝেছি।”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো
    Next Article রিং – কোজি সুজুকি

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.