Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হরিলক্ষ্মী

    ছোটগল্প শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক পাতা গল্প27 Mins Read0

    “হরিলক্ষ্মী” শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি গভীর মানবিক ছোটগল্প, যা নারীর জীবন, তার সংগ্রাম এবং সামাজিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। গল্পটি একটি সাধারণ গ্রামের মেয়ে হরিলক্ষ্মী-এর জীবন ও তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। শরৎচন্দ্র এখানে নারীর মর্যাদা, ক্ষমতা এবং সামাজিক বিধিনিষেধের মধ্যে তার সংগ্রামকে মানবিক দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন।


    গল্পের সারমর্ম:

    গল্পের প্রধান চরিত্র হরিলক্ষ্মী, একজন সাধারণ গ্রামীণ মেয়ে, যার জীবনের লক্ষ্য শুধুমাত্র তার পরিবারকে সাহায্য করা। তার শশুরবাড়ির এবং গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে সে কিছুটা অবহেলিত থাকে, কিন্তু হরিলক্ষ্মী কখনোই তার মর্যাদা হারায় না।

    হরিলক্ষ্মী জীবনে একাধিক সংকটের মুখোমুখি হয়, বিশেষ করে যখন তার শাশুড়ি তার প্রতি নানা ধরনের অবিচার করতে থাকে। তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং শক্তি সমাজের পক্ষ থেকে অবহেলা সত্ত্বেও একসময় তাকে স্বীকৃতি দেয়। তবে গল্পের এক সময় আসে যখন হরিলক্ষ্মী নিজে সিদ্ধান্ত নেয়, যে তার আত্মমর্যাদার জন্য সে নিজের জীবন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

    গল্পটির মাধ্যমে শরৎচন্দ্র নারীজাতির শক্তি এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি মনোযোগ দেন। এই গল্প নারীর আত্মবিশ্বাস, সামাজিক অবস্থান এবং তাকে প্রতিদিনের জীবনে দেওয়া অসম্মানকে অতিক্রম করার এক সংগ্রামী কাহিনী।


    মূল বার্তা:

    “হরিলক্ষ্মী” গল্পটি নারীর আত্মমর্যাদা, সামাজিক অমর্যাদা এবং শক্তির প্রতিবাদ নিয়ে লেখা। এতে শিখানো হয়েছে যে, সমাজ যতই নারীদের দুর্বল মনে করুক না কেন, তাদের মধ্যে থাকা সত্যিকারের শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়।


    শিক্ষণীয় দিক:

    1. নারীর মর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাসকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সংগ্রাম করতে হয়, কিন্তু এই সংগ্রাম কখনোই বিফলে যায় না।
    2. সামাজিক অবিচার এবং অমর্যাদার মুখেও নারীর শক্তি এবং সাহস অটুট থাকে।
    3. নারী হিসেবে সমাজের বাধা-বিপত্তির মধ্যে থেকেও আত্মমর্যাদার পথে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব।

    শরৎচন্দ্রের বক্তব্য:

    “হরিলক্ষ্মী”-এর মাধ্যমে শরৎচন্দ্র সমাজের নারীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব এবং অসম্মানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নারীর শক্তি এবং শ্রদ্ধার কথা বলেছেন। গল্পটি আমাদের শেখায় যে, নারীরা তাদের সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।

    হরিলক্ষ্মী

    এক

    যাহা লইয়া এই গল্পের উৎপত্তি, তাহা ছোট; তথাপি এই ছোট ব্যাপারটুকু অবলম্বন করিয়া হরিলক্ষ্মীর জীবনে যাহা ঘটিয়া গেল, তাহা ক্ষুদ্রও নহে, তুচ্ছও নহে। সংসারে এমনিই হয়। বেলপুরের দুই শরিক, শান্ত নদীকূলে জাহাজের পাশে জেলেডিঙির মত একটি অপরটির পার্শ্বে নিরুপদ্রবেই বাঁধা ছিল, অকস্মাৎ কোথাকার একটা উড়ো ঝড়ে তরঙ্গ তুলিয়া জাহাজের দড়ি কাটিল, নোঙ্গর ছিঁড়িল, একমুহূর্তে ক্ষুদ্র তরণী কি করিয়া যে বিধ্বস্ত হইয়া গেল, তাহার হিসাব পাওয়াই গেল না।

    বেলপুর তালুকটুকু বড় ব্যাপার নয়। উঠিতে বসিতে প্রজা ঠেঙ্গাইয়া হাজার বারোর উপরে উঠে না, কিন্তু সাড়ে-পনর আনার অংশীদার শিবচরণের কাছে দু’পাই অংশের বিপিনবিহারীকে যদি জাহাজের সঙ্গে জেলে-ডিঙির তুলনাই করিয়া থাকি ত, বোধ করি অতিশয়োক্তির অপরাধ করি নাই।

    দূর হইলেও জ্ঞাতি, এবং ছয়-সাত পুরুষ পূর্বে ভদ্রাসন উভয়ের একত্রই ছিল, কিন্তু আজ একজনের ত্রিতল অট্টালিকা গ্রামের মাথায় চড়িয়াছে এবং অপরের জীর্ণ গৃহ দিনের পর দিন ভূমিশয্যা গ্রহণের দিকেই মনোনিবেশ করিয়াছে।

    তবু এমনই ভাবে দিন কাটিতেছিল এবং এমনই করিয়াই ত বাকী দিনগুলা বিপিনের সুখে-দুঃখে নির্বিবাদেই কাটিতে পারিত; কিন্তু যে মেঘখণ্ডটুকু উপলক্ষ্য করিয়া অকালে ঝঞ্ঝা উঠিয়া সমস্ত বিপর্যস্ত করিয়া দিল তাহা এইরূপ।

    সাড়ে-পনর আনার অংশীদার শিবচরণের হঠাৎ পত্নীবিয়োগ ঘটিলে বন্ধুরা কহিলেন, চল্লিশ-একচল্লিশ কি আবার একটা বয়স! তুমি আবার বিবাহ কর। শত্রুপক্ষীয়রা শুনিয়া হাসিল, কহিল, চল্লিশ ত শিবচরণের চল্লিশ বছর আগে পার হয়ে গেছে! অর্থাৎ, কোনটাই সত্য নয়। আসল কথা, বড়বাবুর দিব্য গৌরবর্ণ নাদুস-নুদুস দেহ, সুপুষ্ট মুখের পরে রোমের চিহ্নমাত্র নাই। যথাকালে দাড়িগোঁফ না গজানোর সুবিধা হয়ত কিছু আছে, কিন্তু অসুবিধাও বিস্তর। বয়স আন্দাজ করা ব্যাপারে যাহারা নীচের দিকে যাইতে চাহে না, উপরের দিকে তাহারা যে অঙ্কের কোন্‌ কোঠায় গিয়া ভর দিয়া দাঁড়াইবে, তাহা নিজেরাই ঠাহর করিতে পারে না। সে যাই হউক, অর্থশালী পুরুষের যে কোন দেশেই বয়সের অজুহাতে বিবাহ আটকায় না, বাঙলাদেশে ত নয়-ই।

    মাস-দেড়েক শোকতাপও না না করিয়া গেল, তাহার পরে হরিলক্ষ্মীকে বিবাহ করিয়া শিবচরণ বাড়ি আনিলেন। শূন্যগৃহ একদিনেই ষোলকলায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। কারণ, শত্রুপক্ষ যাহাই কেন না বলুক, প্রজাপতি যে সত্যই তাঁহার প্রতি এবার অতিশয় প্রসন্ন ছিলেন, তাহা মানিতেই হইবে। তাহারা গোপনে বলাবলি করিল, পাত্রের তুলনায় নববধূ বয়সের দিক দিয়া একেবারেই যে বেমানান হয় নাই, তবে দুই-একটি ছেলেমেয়ে সঙ্গে লইয়া ঘরে ঢুকিলে আর খুঁত ধরিবার কিছু থাকিত না! তবে, সে যে সুন্দরী, এ কথা তাহারা স্বীকার করিল। ফল কথা, সচরাচর বড় বয়সের চেয়েও লক্ষ্মীর বয়সটা কিছু বেশী হইয়া গিয়াছিল, বোধ করি, উনিশের কম হইবে না। তাহার পিতা আধুনিক নব্যতন্ত্রের লোক, যত্ন করিয়া মেয়েকে বেশী বয়স পর্যন্ত শিক্ষা দিয়া ম্যাট্রিক পাশ করাইয়াছিলেন। তাঁহার অন্য ইচ্ছা ছিল, শুধু ব্যবসা ফেল পড়িয়া আকস্মিক দারিদ্র্যের জন্যই এই সুপাত্রে কন্যা অর্পণ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।

    লক্ষ্মী শহরের মেয়ে, স্বামীকে দুই-চারিদিনেই চিনিয়া ফেলিল। তাহার মুশকিল হইল এই যে, আত্মীয় মিশ্রিত বহুপরিজন-পরিবৃত বৃহৎ সংসারের মধ্যে সে মন খুলিয়া কাহারও সহিত মিশিতে পারিল না। ওদিকে শিবচরণের ভালবাসার ত অন্ত রহিল না। শুধু কেবল বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা বলিয়াই নয়, সে যেন একেবারে অমূল্য নিধি লাভ করিল। বাটীর আত্মীয়-আত্মীয়ার দল কোথায় কি করিয়া যে তাহার মন যোগাইবে, খুঁজিয়া পাইল না। একটা কথা প্রায়ই শুনিতে পাইত,—এইবার মেজবৌয়ের মুখে কালি পড়িল। কি রূপে, কি গুণে, কি বিদ্যা-বুদ্ধিতে এতদিনে তাহার গর্ব খর্ব হইল।

    কিন্তু এত করিয়াও সুবিধা হইল না, মাস-দুয়েকের মধ্যে লক্ষ্মী অসুখে পড়িল। এই অসুখের মধ্যেই একদিন মেজবৌয়ের সাক্ষাৎ মিলিল। তিনি বিপিনের স্ত্রী, বড়-বাড়ির নূতন বধূর জ্বর শুনিয়া দেখিতে আসিয়াছিলেন। বয়সে বোধ হয় দুই-তিন বছরের বড়; তিনি যে সুন্দরী, তাহা মনে মনে লক্ষ্মী স্বীকার করিল। কিন্তু এই বয়সেই দারিদ্র্যের ভীষণ কশাঘাতের চিহ্ন তাহার সর্বাঙ্গে সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। সঙ্গে বছর-ছয়েকের একটি ছেলে, সে-ও রোগা। লক্ষ্মী শয্যার একধারে সযত্নে বসিতে স্থান দিয়া ক্ষণকাল নিঃশব্দে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিল। হাতে কয়েকগাছি সোনার চুড়ি ছাড়া আর কোন অলঙ্কার নাই, পরনে ঈষৎ মলিন একখানি রাঙা পাড়ের ধুতি, বোধ হয়, তাহার স্বামীর হইবে, পল্লীগ্রামের প্রথামত ছেলেটি দিগম্বর নয়, তাহারও কোমরে একখানি শিউলিফুলে ছোপানো ছোট কাপড় জড়ানো।

    লক্ষ্মী তাহার হাতখানি টানিয়া লইয়া আস্তে আস্তে বলিল, ভাগ্যে জ্বর হয়েছিল, তাই ত আপনার দেখা পেলুম। কিন্তু সম্পর্কে আমি বড় জা হই মেজবৌ। শুনেছি, মেজঠাকুরপো এঁর চেয়ে ঢের ছোট।

    মেজবৌ হাসিমুখে কহিল, সম্পর্কে ছোট হলে কি তাকে ‘আপনি’ বলে?

    লক্ষ্মী কহিল, প্রথম দিন এই যা বললুম, নইলে ‘আপনি’ বলবার লোক আমি নই। কিন্তু তাই বলে তুমিও যেন আমাকে দিদি বলে ডেকো না,—ও আমি সইতে পারব না। আমার নাম লক্ষ্মী।

    মেজবৌ কহিল, নামটি বলে দিতে হয় না দিদি, আপনাকে দেখলেই জানা যায়। আর আমার নাম—কি জানি, কে যে ঠাট্টা করে কমলা রেখেছিলেন—এই বলিয়া সে সকৌতুকে একটুখানি হাসিল মাত্র।

    হরিলক্ষ্মীর ইচ্ছা করিল, সে-ও প্রতিবাদ করিয়া বলে, তোমার পানে তাকালেও তোমার নামটি বুঝা যায়, কিন্তু অনুকৃতির মত শুনাইবার ভয়ে বলিতে পারিল না; কহিল, আমাদের নামের মানে এক। কিন্তু, মেজবৌ, আমি তোমাকে ‘তুমি’ বলতে পারলুম, তুমি পারলে না।

    মেজবৌ সহাস্যে জবাব দিল, হঠাৎ না-ই পারলুম দিদি। এক বয়স ছাড়া আপনি সকল বিষয়েই আমার বড়। যাক না দু’দিন—দরকার হলে বদলে নিতে কতক্ষণ ?

    হরিলক্ষ্মীর মুখে সহসা ইহার প্রত্যুত্তর যোগাইল না, কিন্তু সে মনে বুঝিল, এই মেয়েটি প্রথম দিনের পরিচয়টিকে মাখামাখিতে পরিণত করিতে চাহে না। কিন্তু কিছু একটা বলিবার পূর্বেই মেজবৌ উঠিবার উপক্রম করিয়া কহিল, এখন তা হলে উঠি দিদি, কাল আবার—

    লক্ষ্মী বিস্ময়াপন্ন হইয়া বলিল, এখনই যাবে কিরকম, একটু ব’সো।

    মেজবৌ কহিল, আপনি হুকুম করলে ত বসতেই হবে, কিন্তু আজ যাই দিদি, ওঁর আসবার সময় হ’লো। এই বলিয়া সে উঠিয়া দাঁড়াইল এবং ছেলের হাত ধরিয়া যাইবার পূর্বে সহাস্যবদনে কহিল, আসি দিদি। কাল একটু সকাল সকাল আসব, কেমন? এই বলিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল।

    বিপিনের স্ত্রী চলিয়া গেলে হরিলক্ষ্মী সেইদিকে চাহিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। এখন জ্বর ছিল না, কিন্তু গ্লানি ছিল। তথাপি কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত সে ভুলিয়া গেল। এতদিন গ্রাম ঝেঁটাইয়া কত বৌ-ঝি যে আসিয়াছে, তাহার সংখ্যা নাই, কিন্তু পাশের বাড়ির দরিদ্র ঘরের এই বধূর সহিত তাহাদের তুলনাই হয় না। তাহারা যাচিয়া আসিয়াছে, উঠিতে চাহে না।

    আর বসিতে বলিলে ত কথাই নাই। সে কত প্রগল্‌ভতা, কত বাচালতা, মনোরঞ্জন করিবার কত কি লজ্জাকর প্রয়াস! ভারাক্রান্ত মন তাহার মাঝে মাঝে বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু ইহাদেরই মধ্য হইতে অকস্মাৎ কে আসিয়া তাহার রোগশয্যায় মুহূর্ত-কয়েকের তরে নিজের পরিচয় দিয়া গেল! তাহার বাপের বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করিবার সময় হয় নাই, কিন্তু প্রশ্ন না করিয়াও লক্ষ্মী কি জানি কেমন করিয়া অনুভব করিল—তাহার মত সে কিছুতেই কলিকাতার মেয়ে নয়। পল্লীঅঞ্চলে লেখাপড়া জানে বলিয়া বিপিনের স্ত্রীর একটা খ্যাতি আছে। লক্ষ্মী ভাবিল, খুব সম্ভব বৌটি সুর করিয়া রামায়ণ-মহাভারত পড়িতে পারে, কিন্তু তাহার বেশী নহে। যে পিতা বিপিনের মত দীন-দুঃখীর হাতে মেয়ে দিয়াছে, সে কিছু আর মাস্টার রাখিয়া স্কুলে পড়াইয়া পাস করাইয়া কন্যা সম্প্রদান করে নাই। উজ্জ্বল শ্যাম—ফরসা বলা চলে না। কিন্তু রূপের কথা ছাড়িয়া দিয়াও, শিক্ষা, সংসর্গ, অবস্থা কিছুতেই ত বিপিনের স্ত্রী তাহার কাছে দাঁড়াইতে পারে না। কিন্তু একটা ব্যাপারে লক্ষ্মীর নিজেকে যেন ছোট মনে হইল। তাহার কণ্ঠস্বর। সে যেন গানের মত, আর বলিবার ধরনটি একেবারে মধু দিয়া ভরা। এতটুকু জড়িমা নাই, কথাগুলি যেন সে বাড়ি হইতে কণ্ঠস্থ করিয়া আসিয়াছিল, এমনই সহজ। কিন্তু সবচেয়ে যে বস্তু তাহাকে বেশী বিদ্ধ করিল, সে ওই মেয়েটির দূরত্ব। সে যে দরিদ্র-ঘরের বধূ, তাহা মুখে না বলিয়াও এমন করিয়াই প্রকাশ করিল, যেন ইহাই তাহার স্বাভাবিক, যেন এ ছাড়া আর কিছু তাহাকে কোনমতেই মানাইত না। দরিদ্র, কিন্তু কাঙ্গাল নয়। এক পরিবারের বধূ, একজনের পীড়ায় আর একজন তাহার তত্ত্ব লইতে আসিয়াছে,—ইহার অতিরিক্ত লেশমাত্রও অন্য উদ্দেশ্য নাই।

    সন্ধ্যার পরে স্বামী দেখিতে আসিলে হরিলক্ষ্মী নানা কথার পরে কহিল, আজ ও-বাড়ির মেজবৌ-ঠাকরুনকে দেখলাম।

    শিবচরণ কহিল, কাকে? বিপিনের বৌকে ?

    লক্ষ্মী কহিল, হাঁ। আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন, এতকাল পরে আমাকে নিজেই দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু মিনিট-পাঁচেকের বেশী বসতে পারলেন না, কাজ আছে বলে উঠে গেলেন ।

    শিবচরণ কহিল, কাজ ? আরে, ওদের দাসী আছে, না চাকর আছে ? বাসনমাজা থেকে হাঁড়ি-ঠেলা পর্যন্ত—কৈ, তোমার মত শুয়ে-বসে গায়ে ফুঁ দিয়ে কাটাক ত দেখি? এক ঘটি জল পর্যন্ত আর তোমাকে গড়িয়ে খেতে হয় না।

    নিজের সম্বন্ধে এইরূপ মন্তব্য হরিলক্ষ্মীর অত্যন্ত খারাপ লাগিল, কিন্তু কথাগুলা নাকি তাহাকে বাড়াইবার জন্যই, লাঞ্ছনার জন্য নহে, এই মনে করিয়া সে রাগ করিল না, বলিল, শুনেছি নাকি মেজবৌর বড় গুমোর, বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না ?

    শিবচরণ কহিল, যাবে কোত্থেকে ? হাতে ক’গাছি চুড়ি ছাড়া আর ছাইও নেই,—লজ্জায় মুখ দেখাতে পারে না।

    হরিলক্ষ্মী একটুখানি হাসিয়া বলিল, লজ্জা কিসের? দেশের লোক কি ওঁর গায়ে জড়োয়া গয়না দেখবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে, না, দেখতে না পেলে ছি ছি করে?

    শিবচরণ কহিল, জড়োয়া গহনা ! আমি যা তোমাকে দিয়েছি, কোন শালার বেটা তা চোখে দেখেছে? পরিবারকে আজ পর্যন্ত দু’গাছা চুড়ি ছাড়া আর গড়িয়ে দিতে পারলি নে! বাবা! টাকার জোর বড় জোর! জুতো মারব আর—

    হরিলক্ষ্মী ক্ষুণ্ণ ও অতিশয় লজ্জিত হইয়া বলিল, ছি ছি, ও-সব তুমি কি বলছ?

    শিবচরণ কহিল, না না, আমার কাছে লুকোছাপা নেই—যা বলব, তা স্পষ্টাস্পষ্টি কথা।

    হরিলক্ষ্মী নিরুত্তরে চোখ বুজিয়া শুইল। বলবারই বা আছে কি ? ইহারা দুর্বলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত রূঢ় কথা কঠোর ও কর্কশ করিয়া উচ্চারণ করাকেই একমাত্র স্পষ্টবাদিতা বলিয়া জানে। শিবচরণ শান্ত হইল না, বলিতে লাগিল, বিয়েতে যে পাঁচ শ’ টাকা ধার নিয়ে গেলি, সুদে-আসলে সাত-আট শ’ হয়েছে, তা খেয়াল আছে ? গরীব একধারে পড়ে আছিস থাক, ইচ্ছে করলে যে কান মলে দূর করে দিতে পারি। দাসীর যোগ্য নয়,—আমার পরিবারের কাছে গুমোর!

    হরিলক্ষ্মী পাশ ফিরিয়া শুইল। অসুখের উপর বিরক্তি ও লজ্জায় তাহার সর্বশরীর যেন ঝিমঝিম করিতে লাগিল।

    পরদিন দুপুরবেলায় ঘরের মধ্যে মৃদুশব্দে হরিলক্ষ্মী চোখ চাহিয়া দেখিল, বিপিনের স্ত্রী বাহির হইয়া যাইতেছে। ডাকিয়া কহিল, মেজবৌ, চলে যাচ্চো যে ?

    মেজবৌ সলজ্জে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আমি ভেবেছিলাম, আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। আজ কেমন আছেন দিদি ?

    হরিলক্ষ্মী কহিল, আজ ঢের ভাল আছি, কৈ তোমার ছেলেকে আননি ?

    মেজবৌ বলিল, আজ সে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল দিদি।

    হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল মানে কি ?

    অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে বলে আমি দিনের বেলায় বড় তাকে ঘুমোতে দিইনে দিদি।

    হরিলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, রোদে রোদে দুরন্তপনা করে বেড়ায় না ?

    মেজবৌ কহিল, করে বৈ কি। কিন্তু ঘুমোনোর চেয়ে সে বরঞ্চ ভাল।

    তুমি নিজে বুঝি কখনো ঘুমোও না ?

    মেজবৌ হাসিমুখে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না।

    হরিলক্ষ্মী ভাবিয়াছিল, মেয়েদের স্বভাবের মত এবার হয়ত সে তাহার অনবকাশের দীর্ঘ তালিকা দিতে বসিবে, কিন্তু সে সেরূপ কিছুই করিল না। ইহার পরে অন্যান্য কথাবার্তা চলিতে লাগিল। কথায় কথায় হরিলক্ষ্মী তাহার বাপের বাড়ির কথা, ভাই-বোনের কথা, মাস্টারমশায়ের কথা, স্কুলের কথা, এমনকি তাহার ম্যাট্রিক পাস করার কথাও গল্প করিয়া ফেলিল। অনেকক্ষণ পরে যখন হুঁশ হইল তখন স্পষ্ট দেখিতে পাইল, শ্রোতা হিসাবে মেজবৌ যত ভালই হউক, বক্তা হিসাবে একেবারে অকিঞ্চিৎকর। নিজের কথা সে প্রায় কিছুই বলে নাই। প্রথমটা লক্ষ্মী লজ্জা বোধ করিল, কিন্তু তখনই মনে করিল, আমার কাছে গল্প করিবার মত তাহার আছেই বা কি! কিন্তু কাল যেমন এই বধূটির বিরুদ্ধে মন তাহার অপ্রসন্ন হইয়া উঠিয়াছিল, আজ তেমনি ভারী একটা তৃপ্তি বোধ করিল।

    দেয়ালের মূল্যবান ঘড়িতে নানাবিধ বাজনা-বাদ্য করিয়া তিনটা বাজিল। মেজবৌ উঠিয়া দাঁড়াইয়া সবিনয়ে কহিল, দিদি, আজ তা হলে আসি ?

    লক্ষ্মী সকৌতুকে বলিল, তোমার বুঝি ভাই তিনটে পর্যন্তই ছুটি? ঠাকুরপো না কি কাঁটায় কাঁটায় ঘড়ি মিলিয়ে বাড়ি ঢোকেন ?

    মেজবৌ কহিল, আজ তিনি বাড়িতে আছেন।

    আজ কেন তবে আর একটু ব’সো না ?

    মেজবৌ বসিল না, কিন্তু যাবার জন্যও পা বাড়াইল না। আস্তে আস্তে বলিল, দিদি, আপনার কত শিক্ষা-দীক্ষা, কত লেখাপড়া, আমি পাড়াগাঁয়ের—

    তোমার বাপের বাড়ি বুঝি পাড়াগাঁয়ে ?

    হাঁ দিদি, সে একেবারে অজ পল্লীগ্রামে। না বুঝে কাল হয়ত কি বলতে কি বলে ফেলেছি, কিন্তু অসম্মান করার জন্যে,—আপনি যে দিব্যি করতে বলবেন, দিদি—

    হরিলক্ষ্মী আশ্চর্য হইয়া কহিল, সে কি মেজবৌ, তুমি ত আমাকে এমন কোন কথাই বলনি !

    মেজবৌ এ কথার প্রত্যুত্তরে আর একটা কথাও কহিল না। কিন্তু ‘আসি’ বলিয়া পুনশ্চ বিদায় লইয়া যখন সে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল, তখন কণ্ঠস্বর যেন তাহার অকস্মাৎ আর একরকম শুনাইল।

    রাত্রিতে শিবচরণ যখন কক্ষে প্রবেশ করিল তখন হরিলক্ষ্মী চুপ করিয়া শুইয়া ছিল, মেজবৌয়ের শেষের কথাগুলো আর তাহার স্মরণ ছিল না। দেহ অপেক্ষাকৃত সুস্থ, মনও শান্ত প্রসন্ন ছিল।

    শিবচরণ জিজ্ঞাসা করিল, কেমন আছ বড়বৌ ?

    লক্ষ্মী উঠিয়া বসিয়া কহিল, ভাল আছি।

    শিবচরণ কহিল, সকালের ব্যাপার জান ত ? বাছাধনকে ডাকিয়ে এনে সক্কলের সামনে এমনি কড়কে দিয়েছি যে, জন্মে ভুলবে না। আমি বেলপুরের শিবচরণ! হাঁ !

    হরিলক্ষ্মী ভীত হইয়া কহিল, কাকে গো ?

    শিবচরণ কহিল, বিপ্‌নেকে। ডেকে বলে দিলাম, তোমার পরিবার আমার পরিবারের কাছে জাঁক করে তাকে অপমান করে যায়, এত বড় আস্পর্ধা ! পাজী, নচ্ছার, ছোটলোকের মেয়ে! তাঁর ন্যাড়া মাথায় ঘোল ঢেলে গাধায় চড়িয়ে গাঁয়ের বার করে দিতে পারি, জানিস ?

    হরিলক্ষ্মীর রোগক্লিষ্ট মুখ একেবারে ফ্যাকাশে হইয়া গেল,—বল কি গো ?

    শিবচরণ নিজের বুকে তাল ঠুকিয়া সদর্পে বলিতে লাগিল, এ গাঁয়ে জজ বল, ম্যাজিস্ট্রেট বল, আর দারোগা পুলিশ বল, সব এই শর্মা! এই শর্মা ! মরণ-কাঠি, জীয়ন-কাঠি এই হাতে। তুমি বল, কাল যদি না বিপ্‌নের বৌ এসে তোমার পা টেপে ত আমি লাটু চৌধুরীর ছেলেই নই ! আমি—

    বিপিনের বধূকে সর্বসমক্ষে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করিবার বিবরণ ও ব্যাখ্যায় লাটু চৌধুরীর ছেলে অ-কথা কু-কথার আর শেষ রাখিল না। আর তাহারই সম্মুখে স্তব্ধ নির্নিমেষ চক্ষুতে চাহিয়া হরিলক্ষ্মীর মনে হইতে লাগিল, ধরিত্রী, দ্বিধা হও !

    .

    দুই

    দ্বিতীয় পক্ষের তরুণী ভার্যার দেহ রক্ষার জন্য শিবচরণ কেবলমাত্র নিজের দেহ ভিন্ন আর সমস্তই দিতে পারিত। হরিলক্ষ্মীর সেই দেহ বেলপুরে সারিতে চাহিল না। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন হাওয়া বদলাইবার। শিবচরণ সাড়ে-পনর আনার মর্যাদামত ঘটা করিয়া হাওয়া বদলানোর আয়োজন করিল। যাত্রার শুভদিনে গ্রামের লোক ভাঙ্গিয়া পড়িল, আসিল না কেবল বিপিন ও তাহার স্ত্রী। বাহিরে শিবচরণ যাহা না বলিবার, তাহা বলিতে লাগিল এবং ভিতরে বড়পিসী উদ্দাম হইয়া উঠিলেন। বাহিরেও ধুয়া ধরিবার লোকাভাব ঘটিল না, অন্তঃপুরেও তেমনই পিসীমার চীৎকারের আয়তন বাড়াইতে যথেষ্ট স্ত্রীলোক জুটিল। কিছুই বলিল না শুধু হরিলক্ষ্মী। মেজবৌয়ের প্রতি তাহার ক্ষোভ ও অভিমানের মাত্রা কাহারও অপেক্ষাই কম ছিল না, সে মনে মনে বলিতে লাগিল, তাহার বর্বর স্বামী যত অন্যায়ই করিয়া থাক, সে নিজে ত কিছু করে নাই, কিন্তু ঘরের ও বাহিরের যে-সব মেয়েরা আজ চেঁচাইতেছিল, তাহাদের সহিত কোন সূত্রেই কণ্ঠ মিলাইতে তাহার ঘৃণা বোধ হইল। যাইবার পথে পালকির দরজা ফাঁক করিয়া লক্ষ্মী উৎসুক চক্ষুতে বিপিনের জীর্ণ গৃহের জানালার প্রতি চাহিয়া রহিল, কিন্তু কাহারও ছায়াটুকুও তাহার চোখে পড়িল না।

    কাশীতে বাড়ি ঠিক করা হইয়াছিল, তথাকার জলবাতাসের গুণে নষ্ট-স্বাস্থ্য ফিরিয়া পাইতে লক্ষ্মীর বিলম্ব হইল না, মাস-চারেক পরে যখন সে ফিরিয়া আসিল, তাহার দেহের কান্তি দেখিয়া মেয়েদের গোপন ঈর্ষার অবধি রহিল না।

    হিম-ঋতু আগতপ্রায়, দুপুরবেলায় মেজবৌ চিররুগ্ন স্বামীর জন্য একটা পশমের গলাবন্ধ বুনিতেছিল, অনতিদূরে বসিয়া ছেলে খেলা করিতেছিল, সে-ই দেখিতে পাইয়া কলরব করিয়া উঠিল, মা, জ্যাঠাইমা।

    মা হাতের কাজ ফেলিয়া তাড়াতাড়ি একটা নমস্কার করিয়া লইয়া আসন পাতিয়া দিল; স্মিতমুখে প্রশ্ন করিল, শরীর নিরাময় হয়েছে দিদি ?

    লক্ষ্মী কহিল, হাঁ, হয়েছে। কিন্তু না হতেও পারত, না ফিরতেও পারতাম, অথচ যাবার সময়ে একটিবার খোঁজও নিলে না। সমস্ত পথটা তোমার জানলার পানে চেয়ে চেয়ে গেলাম, একবার ছায়াটুকুও চোখে পড়ল না। রোগা বোন চলে যাচ্ছে, একটুখানি মায়াও কি হ’ল না মেজবৌ? এমনি পাষাণ তুমি !

    মেজবৌয়ের চোখ ছলছল করিয়া আসিল, কিন্তু সে কোন উত্তরই দিল না।

    লক্ষ্মী বলিল, আমার আর যা দোষই থাক মেজবৌ, তোমার মত কঠিন প্রাণ আমার নয়। ভগবান না করুন, কিন্তু অমন সময়ে আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারতাম না।

    মেজবৌ এ অভিযোগের কোন জবাব দিল না, নিরুত্তরে দাঁড়াইয়া রহিল।

    লক্ষ্মী আর কখনও আসে নাই, আজ এই প্রথম এ বাড়িতে প্রবেশ করিয়াছে। ঘরগুলি ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখিয়া বেড়াইতে লাগিল। শতবর্ষের জরাজীর্ণ গৃহ, মাত্র তিনখানি কক্ষ কোনমতে বাসোপযোগী রহিয়াছে। দরিদ্রের আবাস, আসবাবপত্র নাই বলিলেই চলে, ঘরের চুন-বালি খসিয়াছে, সংস্কার করিবার সামর্থ্য নাই, তথাপি অনাবশ্যক অপরিচ্ছন্নতা এতটুকু কোথাও নাই। স্বল্প বিছানা ঝরঝর করিতেছে, দুই-চারিখানি দেবদেবীর ছবি টাঙ্গানো আছে, আর আছে মেজবৌয়ের হাতের নানাবিধ শিল্পকর্ম। অধিকাংশই পশম ও সূতার কাজ, তাহা শিক্ষানবীশের হাতের লাল ঠোঁটওয়ালা সবুজ রঙের টিয়াপাখী অথবা পাঁচরঙা বেড়ালের মূর্তি নয়। মূল্যবান ফ্রেমে আঁটা লাল-নীল বেগুনি-ধূসর-পাঁশুটে নানা বিচিত্র রঙের সমাবেশে পশমে বোনা ‘ওয়েলকম’ ‘আসুন বসুন’ অথবা বানান-ভুল গীতার শ্লোকার্ধও নয়। লক্ষ্মী সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করিল, ওটি কার ছবি মেজবৌ, যেন চেনা চেনা ঠেকচে ?

    মেজবৌ সলজ্জে হাসিয়া কহিল, ওটি তিলক মহারাজের ছবি দেখে বোনবার চেষ্টা করেছিলাম দিদি, কিন্তু কিছুই হয়নি। এই কথা বলিয়া সম্মুখের দেয়ালে টাঙ্গানো ভারতের কৌস্তুভ মহাবীর তিলকের ছবি আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল।

    লক্ষ্মী বহুক্ষণ সেইদিকে চাহিয়া থাকিয়া আস্তে আস্তে বলিল, চিনতে পারিনি, সে আমারই দোষ মেজবৌ, তোমার নয়। আমাকে শেখাবে ভাই ? এ বিদ্যে শিখতে যদি পারি ত তোমাকে গুরু বলে মানতে আমার আপত্তি নেই।

    মেজবৌ হাসিতে লাগিল।

    সেদিন ঘণ্টা তিন-চার পরে বিকালে যখন লক্ষ্মী বাড়ি ফিরিয়া গেল, তখন এই কথাই স্থির করিয়া গেল যে, কলা-শিল্প শিখিতে কাল হইতে সে প্রত্যহ আসিবে।

    আসিতেও লাগিল, কিন্তু দশ-পনেরো দিনেই স্পষ্ট বুঝিতে পারিল, এ বিদ্যা শুধু কঠিন নয়, অর্জন করিতেও সুদীর্ঘ সময় লাগিবে।

    একদিন লক্ষ্মী কহিল, কৈ মেজবৌ, তুমি আমাকে যত্ন করে শেখাও না।

    মেজবৌ বলিল, ঢের সময় লাগবে দিদি, তার চেয়ে বরঞ্চ আপনি অন্য সব বোনা শিখুন।

    লক্ষ্মী মনে মনে রাগ করিল, কিন্তু তাহা গোপন করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, তোমার শিখতে কতদিন লেগেছিল মেজবৌ ?

    মেজবৌ জবাব দিল, আমাকে কেউ ত শেখায় নি দিদি, নিজের চেষ্টাতেই একটু একটু করে—

    লক্ষ্মী বলিল, তাইতেই। নইলে পরের কাছে শিখতে গেলে তোমারও সময়ের হিসাব থাকত।

    মুখে সে যাহাই বলুক, মনে মনে নিঃসন্দেহে অনুভব করিতেছিল, মেধা ও তীক্ষ্ণবুদ্ধিতে এই মেজবৌয়ের কাছে সে দাঁড়াইতেই পারে না। আজ তাহার শিক্ষার কাজ অগ্রসর হইল না এবং যথাসময়ের অনেক পূর্বেই সূচ-সূতা-প্যাটার্ন গুটাইয়া লইয়া বাড়ি চলিয়া গেল। পরদিন আসিল না এবং এই প্রথম প্রত্যহ আসায় তাহার ব্যাঘাত হইল।

    দিন-চারেক পরে আবার একদিন হরিলক্ষ্মী তাহার সূচ-সুতার বাক্স হাতে করিয়া এ বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল।

    মেজবৌ তাহার ছেলেকে রামায়ণ হইতে ছবি দেখাইয়া দেখাইয়া গল্প বলিতেছিল, সসম্ভ্রমে উঠিয়া আসন পাতিয়া দিল। উদ্বিগ্নকণ্ঠে প্রশ্ন করিল, দু-তিন দিন আসেন নি, আপনার শরীর ভাল ছিল না বুঝি ?

    লক্ষ্মী গম্ভীর হইয়া কহিল, না, এমনি পাঁচ-ছ’দিন আসতে পারিনি।

    মেজবৌ বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, পাঁচ-ছ’দিন আসেন নি ? তাই হবে বোধ হয়।
    কিন্তু আজ তা হলে দু’ঘণ্টা বেশি থেকে কামাইটা পুষিয়ে নেওয়া চাই।

    লক্ষ্মী বলিল, হুঁ। কিন্তু অসুখই যদি আমার করে থাকত মেজবৌ, তোমার ত একবার খোঁজ করা উচিত ছিল।

    মেজবৌ সলজ্জে বলিল, উচিত নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু সংসারের অসংখ্য রকমের কাজ,— একলা মানুষ, কাকেই বা পাঠাই বলুন? কিন্তু অপরাধ হয়েছে, তা স্বীকার করচি দিদি।

    লক্ষ্মী মনে মনে খুশী হইল। এ কয়দিন সে অত্যন্ত অভিমানবশেই আসিতে পারে নাই, অথচ অহর্নিশি যাই যাই করিয়াই তাহার দিন কাটিয়াছে। এই মেজবৌ ছাড়া শুধু গৃহে কেন, সমস্ত গ্রামের মধ্যেও আর কেহ নাই, যাহার সহিত সে মন খুলিয়া মিশিতে পারে।

    ছেলে নিজের মনে ছবি দেখিতেছিল। হরিলক্ষ্মী তাহাকে ডাকিয়া কহিল, নিখিল, কাছে এস ত বাবা ? সে কাছে আসিলে লক্ষ্মী বাক্স খুলিয়া একগাছি সরু সোনার হার তাহার গলায় পরাইয়া দিয়া বলিল, যাও, খেলা কর গে।

    মায়ের মুখ গম্ভীর হইয়া উঠিল; সে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি ওটা দিলেন নাকি ?

    লক্ষ্মী স্মিতমুখে জবাব দিল, দিলাম বৈ কি ?

    মেজবৌ কহিল, আপনি দিলেই বা ও নেবে কেন ?

    লক্ষ্মী অপ্রতিভ হইয়া উঠিল, কহিল, জ্যাঠাইমা কি একটা হার দিতে পারে না ?

    মেজবৌ বলিল, তা জানিনে দিদি, কিন্তু এ কথা নিশ্চয় জানি, মা হয়ে আমি নিতে দিতে পারিনে। নিখিল, ওটা খুলে তোমার জ্যাঠাইমাকে দিয়ে দাও। দিদি, আমরা গরীব, কিন্তু ভিখিরী নই। কোন একটা দামী জিনিস হঠাৎ পাওয়া গেল বলেই দু’হাত পেতে নেব,—
    তা নিই নে।
    লক্ষ্মী স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। আজও তাহার মনে হইতে লাগিল, পৃথিবী, দ্বিধা হও !

    যাবার সময়ে সে কহিল, কিন্তু এ কথা তোমার ভাশুরের কানে যাবে মেজবৌ।

    মেজবৌ বলিল, তাঁর অনেক কথা আমার কানে আসে, আমার একটা কথা তাঁর কানে গেলে কান অপবিত্র হবে না।

    লক্ষ্মী কহিল, বেশ, পরীক্ষা করে দেখলেই হবে। একটু থামিয়া বলিল, আমাকে খামকা অপমান করার দরকার ছিল না মেজবৌ। আমিও শাস্তি দিতে জানি।

    মেজবৌ বলিল, এ আপনার রাগের কথা। নইলে আমি যে আপনাকে অপমান করিনি, শুধু আমার স্বামীকেই খামকা অপমান করতে আপনাকে দিইনি—এ বোঝবার শিক্ষা আপনার আছে।

    লক্ষ্মী কহিল, তা আছে, নেই শুধু তোমাদের পাড়াগেঁয়ে মেয়ের সঙ্গে কোঁদল করবার শিক্ষা।

    মেজবৌ এই কটূক্তির জবাব দিল না, চুপ করিয়া রহিল।

    লক্ষ্মী চলিতে উদ্যত হইয়া বলিল, ওই হারটুকুর দাম যাই হোক, ছেলেটাকে স্নেহবশেই দিয়েছিলাম, তোমার স্বামীর দুঃখ দূর হবে ভেবে দিইনি। মেজবৌ, বড়লোক মাত্রেই গরীবকে শুধু অপমান করে বেড়ায়, এইটুকুই কেবল শিখে রেখেচ, ভালবাসতেও যে পারে, এ তুমি শেখোনি। শেখা দরকার। তখন কিন্তু গিয়ে হাতে-পায়ে প’ড়ো না।

    প্রত্যুত্তরে মেজবৌ শুধু একটু মুচকিয়া হাসিয়া বলিল, না দিদি, সে ভয় তোমাকে করতে হবে না।

    .

    তিন

    বন্যার চাপে মাটির বাঁধ যখন ভাঙ্গিতে শুরু করে, তখন তাহার অকিঞ্চিৎকর আরম্ভ দেখিয়া মনে করাও যায় না যে, অবিশ্রান্ত জলপ্রবাহ এত অল্পকালমধ্যেই ভাঙ্গনটাকে এমন ভয়াবহ, এমন সুবিশাল করিয়া তুলিবে। ঠিক এমনই হইল হরিলক্ষ্মীর। স্বামীর কাছে বিপিন ও তাঁহার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথাগুলো যখন তাহার সমাপ্ত হইল, তখন তাহার পরিণাম কল্পনা করিয়া সে নিজেই ভয় পাইল। মিথ্যা বলা তাহার স্বভাবও নহে, বলিতেও তাহার শিক্ষা ও মর্যাদায় বাধে, কিন্তু দুর্নিবার জলস্রোতের মত যে-সকল বাক্য আপন ঝোঁকেই তাহার মুখ দিয়া ঠেলিয়া বাহির হইয়া আসিল, তাহার অনেকগুলিই যে সত্য নহে, তাহা নিজেই সে চিনিতে পারিল। অথচ তাহার গতিরোধ করাও যে তাহার সাধ্যের বাহিরে, ইহাও অনুভব করিতে লক্ষ্মীর বাকী রহিল না। শুধু একটা ব্যাপার সে ঠিক এতখানি জানিত না, সে তাহার স্বামীর স্বভাব। তাহা যেমন নিষ্ঠুর, তেমনই প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তেমনই বর্বর। পীড়ন করিবার কোথায় যে সীমা, সে যেন তাহা জানেই না। আজ শিবচরণ আস্ফালন করিল না, সমস্তটাই শুনিয়া শুধু কহিল, আচ্ছা মাস-ছয়েক পরে দেখো। বছর ঘুরবে না, সে ঠিক।

    অপমান ও লাঞ্ছনার জ্বালা হরিলক্ষ্মীর অন্তরে জ্বলিতেই ছিল; বিপিনের স্ত্রী ভালরূপ শাস্তি ভোগ করে তাহা সে যথার্থই চাহিতেছিল, কিন্তু শিবচরণ বাহিরে চলিয়া গেলে তাহার মুখের এই সামান্য কয়েকটা কথা বার বার মনের মধ্যে আবৃত্তি করিয়া লক্ষ্মী মনের মধ্যে আর স্বস্তি পাইল না। কোথায় যেন কি একটা ভারী খারাপ হইল, এমনই তাহার বোধ হইতে লাগিল।

    দিন-কয়েক পরে কি একটা কথার প্রসঙ্গে হরিলক্ষ্মী হাসিমুখে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিল, ওঁদের সম্বন্ধে কিছু করছ নাকি ?

    কাদের সম্বন্ধে ?

    বিপিন ঠাকুরপোদের সম্বন্ধে ?

    শিবচরণ নিস্পৃহভাবে কহিল, কি-ই বা করব, আর কি-ই বা করতে পারি? আমি সামান্য ব্যক্তি বৈ ত না !

    হরিলক্ষ্মী উদ্বিগ্ন হইয়া কহিল, এ কথার মানে ?

    শিবচরণ বলিল, মেজবৌমা বলে থাকেন কিনা, রাজত্বটা ত আর বঠ্‌ঠাকুরের নয়—ইংরাজ গভর্নমেণ্টের।

    হরিলক্ষ্মী কহিল, বলেছে নাকি ? কিন্তু আচ্ছা—

    কি আচ্ছা ?

    স্ত্রী একটুখানি সন্দেহ প্রকাশ করিয়া বলিল, কিন্তু মেজবৌ ত ও-রকম কথা বড় একটা বলে না। ভয়ানক চালাক কিনা! অনেকে আবার বাড়িয়েও হয়ত তোমার কাছে বলে যায়।

    শিবচরণ কহিল, আশ্চর্য নয়। তবে কিনা, কথাটা আমি নিজের কানেই শুনেছি।

    হরিলক্ষ্মী বিশ্বাস করিতে পারিল না, কিন্তু তখনকার মত স্বামীর মনোরঞ্জনের নিমিত্ত সহসা কোপ প্রকাশ করিয়া বলিয়া উঠিল, বল কি গো, এতবড় অহঙ্কার ? আমাকে না হয় যা খুশি বলেছে, কিন্তু ভাশুর বলে তোমার ত একটা সম্মান থাকা দরকার।

    শিবচরণ বলিল, হিঁদুর ঘরে এই ত পাঁচজনে মনে করে। লেখাপড়া-জানা বিদ্বান মেয়ে-মানুষ কিনা। তবে আমাকে অপমান করে পার আছে, কিন্তু তোমাকে অপমান করে কারও রক্ষে নেই। সদরে একটু জরুরী কাজ আছে, আমি চললাম।—এই বলিয়া শিবচরণ বাহির হইয়া গেল। কথাটা যে-রকম করিয়া হরিলক্ষ্মীর পাড়িবার ইচ্ছা ছিল তাহা হইল না, বরঞ্চ উলটা হইয়া গেল। স্বামী চলিয়া গেলে ইহাই তাহার পুনঃ পুনঃ মনে হইতে লাগিল।

    সদরে গিয়া শিবচরণ বিপিনকে ডাকাইয়া আনিয়া কহিল, পাঁচ-সাত বছর থেকে তোমাকে বলে আসচি বিপিন, গোয়ালটা তোমার সরাও, শোবার ঘরে আমি আর টিঁকতে পারিনে, কথাটায় কি তুমি কান দেবে না ঠিক করেছ ?

    বিপিন বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, কৈ, আমি ত একবারও শুনিনি বড়দা ?

    শিবচরণ অবলীলাক্রমে কহিল, অন্ততঃ দশবার আমি নিজের মুখেই তোমাকে বলেছি। তোমার স্মরণ না থাকলে ক্ষতি হয় না, কিন্তু এতবড় জমিদারি যাকে শাসন করতে হয়, তার কথা ভুলে গেলে চলে না। সে যাই হোক, তোমার আপনার ত একটা আক্কেল থাকা উচিত যে, পরের জায়গায় নিজের গোয়ালঘর রাখা কতদিন চলে ? কালকেই ওটা সরিয়ে ফেল গে। আমার আর সুবিধে হবে না, তোমাকে শেষবারের মত জানিয়ে দিলাম।

    বিপিনের মুখে এমনই কথা বাহির হয় না, অকস্মাৎ এই পরম বিস্ময়কর প্রস্তাবের সম্মুখে সে একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িল। তাহার পিতামহর আমল হইতে যে গোয়ালঘরটাকে সে নিজেদের বলিয়া জানে, তাহা অপরের, এতবড় মিথ্যা উক্তির সে একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করিতে পারিল না, নীরবে বাড়ি ফিরিয়া আসিল।

    তাহার স্ত্রী সমস্ত বিবরণ শুনিয়া কহিল, কিন্তু রাজার আদালত খোলা আছে ত !

    বিপিন চুপ করিয়া রহিল। সে যত ভালমানুষই হউক, এ কথা সে জানিত, ইংরাজ রাজার আদালতগৃহের সুবৃহৎ দ্বার যত উন্মুক্তই থাক, দরিদ্রের প্রবেশ করিবার পথ এতটুকু খোলা নাই। হইলও তাহাই। পরদিন বড়বাবুর লোক আসিয়া প্রাচীন ও জীর্ণ গোশালা ভাঙ্গিয়া লম্বা প্রাচীর টানিয়া দিল। বিপিন থানায় গিয়া খবর দিয়া আসিল, কিন্তু আশ্চর্য এই যে, শিবচরণের পুরাতন ইটের নূতন প্রাচীর যতক্ষণ না সম্পূর্ণ হইল, ততক্ষণ পর্যন্ত একটা রাঙ্গা পাগড়িও ইহার নিকটে আসিল না। বিপিনের স্ত্রী হাতের চুড়ি বেচিয়া আদালতে নালিশ করিল, কিন্তু তাহাতে শুধু গহনাটাই গেল, আর কিছু হইল না।

    বিপিনের পিসীমা-সম্পর্কীয় একজন শুভানুধ্যায়িনী এই বিপদে হরিলক্ষ্মীর কাছে গিয়া পড়িতে বিপিনের স্ত্রীকে পরামর্শ দিয়াছিলেন; তাহাতে সে নাকি জবাব দিয়াছিল, বাঘের কাছে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আর লাভ কি পিসীমা ? প্রাণ যা যাবার তা যাবে, কেবল অপমানটাই উপরি পাওনা হবে।

    এই কথা হরিলক্ষ্মীর কানে আসিয়া পৌঁছিলে সে চুপ করিয়া রহিল, কিন্তু একটা উত্তর দেবার চেষ্টা পর্যন্ত করিল না।

    পশ্চিম হইতে ফিরিয়া অবধি শরীর তাহার কোনদিনই সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল না, এই ঘটনার মাস-খানেকের মধ্যে সে আবার জ্বরে পড়িল। কিছুকাল গ্রামেই চিকিৎসা চলিল কিন্তু ফল যখন হইল না, তখন ডাক্তারের উপদেশমত পুনরায় তাহাকে বিদেশযাত্রার জন্য প্রস্তুত হইতে হইল।

    নানাবিধ কাজের তাড়ায় এবার শিবচরণ সঙ্গে যাইতে পারিল না, দেশেই রহিল। যাবার সময় সে স্বামীকে একটা কথা বলিবার জন্য মনে মনে ছটফট করিতে লাগিল, কিন্তু মুখ ফুটিয়া কোনমতেই সে এই লোকটির সম্মুখে সে কথা উচ্চারণ করিতে পারিল না। তাহার কেবলই মনে হইতে লাগিল, এ অনুরোধ বৃথা, ইহার অর্থ সে বুঝিবে না।

    .

    চার

    হরিলক্ষ্মীর রোগগ্রস্ত দেহ সম্পূর্ণ নিরাময় হইতে এবার কিছু দীর্ঘ সময় লাগিল। প্রায় বৎসরাধিক কাল পরে সে বেলপুরে ফিরিয়া আসিল। শুধু কেবল জমিদারের আদরের পত্নী বলিয়াই নয়, সে এতবড় সংসারের গৃহিণী। পাড়ার মেয়েরা দল বাঁধিয়া দেখিতে আসিল, যে সম্বন্ধে বড়, সে আশীর্বাদ করিল, যে ছোট সে প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা লইল। আসিল না শুধু বিপিনের স্ত্রী। সে যে আসিবে না, হরিলক্ষ্মী তাহা জানিত। এই একটা বছরের মধ্যে তাহারা কেমন আছে, যে-সকল ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা তাহাদের বিরুদ্ধে চলিতেছিল, তাহার ফল কি হইয়াছে, এ-সব কোন সংবাদই সে কাহারও কাছে জানিবার চেষ্টা করে নাই। শিবচরণ কখনও বাটীতে, কখনও বা পশ্চিমে স্ত্রীর কাছে গিয়া বাস করিতেছিলেন। যখনই দেখা হইয়াছে, সর্বাগ্রে ইহাদের কথাই তাহার মনে হইয়াছে, অথচ একটা দিনের জন্য স্বামীকে প্রশ্ন করে নাই। প্রশ্ন করিতে তাহার যেন ভয় করিত। মনে করিত এতদিনে হয়ত যা হউক একটা বোঝাপড়া হইয়া গেছে, হয়ত ক্রোধের সে প্রখরতা আর নাই—জিজ্ঞাসাবাদের দ্বারা পাছে আবার সেই পূর্বক্ষত বাড়িয়া উঠে, এ আশঙ্কায় সে এমনই একটা ভাব ধারণ করিয়া থাকিত, যেন সে-সকল তুচ্ছ কথা আর তাহার মনেই নাই। ওদিকে শিবচরণও নিজে হইতে কোনদিন বিপিনদের বিষয় আলোচনা করিত না। সে যে স্ত্রীর অপমানের ব্যাপার বিস্মৃত হয় নাই, বরঞ্চ তাহার অবর্তমানে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছে, এই কথাটা সে হরিলক্ষ্মীর কাছে গোপন করিয়াই রাখিত। তাহার সাধ ছিল, লক্ষ্মী গৃহে ফিরিয়া নিজের চোখেই সমস্ত দেখিতে পাইয়া আনন্দিত বিস্ময়ে আত্মহারা হইয়া উঠিবে।

    বেলা বাড়িয়া উঠিবার পূর্বেই পিসীমার পুনঃ পুনঃ সস্নেহ তাড়নায় লক্ষ্মী স্নান করিয়া আসিলে তিনি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করিয়া বলিলেন, তোমার রোগা শরীর বৌমা, নীচে গিয়ে কাজ নেই, এইখানেই ঠাঁই করে ভাত দিয়ে যাক।

    লক্ষ্মী আপত্তি করিয়া সহাস্যে কহিল, শরীর আগের মতই ভাল হয়ে গেছে পিসীমা, আমি রান্নাঘরে গিয়েই খেতে পারব, ওপরে বয়ে আনবার দরকার নেই। চল, নীচেই যাচ্চি।

    পিসীমা বাধা দিলেন, শিবুর নিষেধ আছে জানাইলেন এবং তাহারই আদেশে ঝি ঘরের মেঝেতে আসন পাতিয়া ঠাঁই করিয়া দিয়া গেল। পরক্ষণে রাঁধুনী অন্নব্যঞ্জন বহিয়া আনিয়া উপস্থিত করিল। সে চলিয়া গেলে লক্ষ্মী আসনে বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, রাঁধুনীটি কে, পিসীমা? আগে ত দেখিনি ?

    পিসীমা হাস্য করিয়া বলিলেন, চিনতে পারলে না বৌমা, ও যে আমাদের বিপিনের বৌ।

    লক্ষ্মী স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। মনে মনে বুঝিল, তাহাকে চমৎকৃত করিবার জন্যই এতখানি ষড়যন্ত্র এমন করিয়া গোপনে রাখা হইয়াছিল। কিছুক্ষণে আপনাকে সামলাইয়া লইয়া জিজ্ঞাসু-মুখে পিসীমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।

    পিসীমা বলিলেন, বিপিন মারা গেছে, শুনেছ ত ?

    লক্ষ্মী শুনে নাই কিছুই, কিন্তু এইমাত্র যে তাহার খাবার দিয়া গেল, সে যে বিধবা, তাহা চাহিলেই বুঝা যায়। ঘাড় নাড়িয়া কহিল, হাঁ।

    পিসীমা অবশিষ্ট ঘটনাটা বিবৃত করিয়া কহিলেন, যা ধূলোগুঁড়ো ছিল, মামলায় মামলায় সর্বস্ব খুইয়ে বিপিন মারা গেল। বাকী টাকার দায়ে বাড়িটাও যেত। আমরাই পরামর্শ দিলাম, মেজবৌ, বছর দু’বছর গতরে খেটে শোধ দে, তোর অপোগণ্ড ছেলের মাথা গোঁজবার স্থানটুকু বাঁচুক।

    লক্ষ্মী বিবর্ণ-মুখে তেমনই পলকহীন চক্ষুতে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। পিসীমা সহসা গলা খাটো করিয়া বলিলেন, তবু আমি একদিন ওকে আড়ালে ডেকে বলেছিলাম, মেজবৌ, যা হবার তা ত হ’লো, এখন ধার-ধোর করে যেমন করে হোক, একবার কাশী গিয়ে বৌমার হাতে-পায়ে গিয়ে পড়। ছেলেটাকে তার গায়ের উপর নিয়ে ফেলে দিয়ে বল গে, দিদি, এর তো কোন দোষ নেই, একে বাঁচাও—

    কথাগুলি আবৃত্তি করিতেই পিসীমার চোখ জল-ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল, অঞ্চলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিলেন, কিন্তু সেই যে মাথা গুঁজে মুখ বুজে বসে রইল, হাঁ-না একটা জবাব পর্যন্ত দিলে না।

    হরিলক্ষ্মী বুঝিল, ইহার সমস্ত অপরাধের ভারই তাহার মাথায় গিয়া পড়িয়াছে। তাহার মুখে সমস্ত অন্নব্যঞ্জন তিতো বিষ হইয়া উঠিল এবং একটা গ্রাসও যেন গলা দিয়া গলিতে চাহিল না। পিসীমা কি একটা কাজে ক্ষণকালের জন্য বাহিরে গিয়াছিলেন, তিনি ফিরিয়া আসিয়া খাবারের অবস্থা দেখিয়া চঞ্চল হইয়া উঠিলেন। ডাক দিলেন, বিপিনের বৌ ! বিপিনের বৌ !

    বিপিনের বৌ দ্বারের বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইতেই তিনি ঝঙ্কার দিয়া উঠিলেন। তাঁহার মুহূর্ত পূর্বের করুণা চক্ষুর নিমিষে কোথায় উবিয়া গেল। তীক্ষ্ণস্বরে বলিয়া উঠিলেন, এমন তাচ্ছিল্য করে কাজ করলে ত চলবে না, বিপিনের বৌ! বৌমা একটা দানা মুখে দিতে পারলে না, এমনই রেঁধেছ !

    ঘরের বাহির হইতে এই তিরস্কারের কোন উত্তর আসিল না, কিন্তু অপরের অপমানের ভারে লজ্জায় ও বেদনায় ঘরের মধ্যে হরিলক্ষ্মীর মাথা হেঁট হইয়া গেল।

    পিসীমা পুনশ্চ কহিলেন, চাকরি করতে এসে জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেললে চলবে না, বাছা, আরও পাঁচজনে যেমন করে কাজ করে, তোমাকেও তেমনই করতে হবে, তা বলে দিচ্চি।

    বিপিনের স্ত্রী এবার আস্তে আস্তে বলিল, প্রাণপণে সেই চেষ্টাই ত করি পিসীমা, আজ হয়ত কি-রকম হয়ে গেছে। এই বলিয়া সে নীচে চলিয়া গেলে, লক্ষ্মী উঠিয়া দাঁড়াইবামাত্র পিসীমা হায় হায় করিয়া উঠিলেন।

    লক্ষ্মী মৃদুকণ্ঠে কহিল, কেন দুঃখ করচ পিসীমা, আমার দেহ ভাল নেই বলেই খেতে পারলাম না, —মেজবৌয়ের রান্নার ত্রুটি ছিল না।

    হাত-মুখ ধুইয়া আসিয়া নিজের নির্জন ঘরের মধ্যে হরিলক্ষ্মীর যেন দম বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল। সর্বপ্রকার অপমান সহিয়াও বিপিনের স্ত্রীর হয়ত ইহার পরেও এই বাড়িতেই চাকরি করা চলিতে পারে, কিন্তু আজকের পরে গৃহিণীপনার পণ্ডশ্রম করিয়া তাহার নিজের দিন চলিবে কি করিয়া ? মেজবৌয়ের একটা সান্ত্বনা তবুও বাকি আছে,—তাহা বিনাদোষে দুঃখ সহার সান্ত্বনা, কিন্তু তাহার নিজের জন্য কোথায় কি অবশিষ্ট রহিল!

    রাত্রিতে স্বামীর সহিত কথা কহিবে কি, হরিলক্ষ্মী ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিতেও পারিল না। আজ তাহার মুখের একটা কথায় বিপিনের স্ত্রীর সকল দুঃখ দূর হইতে পারিত, কিন্তু নিরুপায় নারীর প্রতি যে মানুষ এতবড় শোধ লইতে পারে, তাহার পৌরুষে বাধে না, তাহার কাছে ভিক্ষা চাহিবার হীনতা স্বীকার করিতে কোনমতেই লক্ষ্মীর প্রবৃত্তি হইল না।

    শিবচরণ ঈষৎ হাসিয়া প্রশ্ন করিল, মেজবৌমার সঙ্গে হ’লো দেখা ? বলি কেমন রাঁধচে ?

    হরিলক্ষ্মী জবাব দিতে পারিল না, তাহার মনে হইল, এই লোকটিই তাহার স্বামী এবং সারাজীবন ইহারই ঘর করিতে হইবে মনে করিয়া তাহার মনে হইল, পৃথিবী, দ্বিধা হও !

    পরদিন সকালে উঠিয়াই লক্ষ্মী দাসীকে দিয়া পিসীমাকে বলিয়া পাঠাইল, তাহার জ্বর হইয়াছে, সে কিছুই খাইবে না।

    পিসীমা ঘরে আসিয়া জেরা করিয়া লক্ষ্মীকে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিলেন,—তাহার মুখের ভাবে ও কণ্ঠস্বরে তাঁহার কেমন যেন সন্দেহ হইল, লক্ষ্মী কি একটা গোপন করিবার চেষ্টা করিতেছে। কহিলেন, কিন্তু তোমার ত সত্যিই অসুখ করেনি বৌমা ?

    লক্ষ্মী মাথা নাড়িয়া জোর করিয়া বলিল, আমার জ্বর হয়েছে, আমি কিচ্ছু খাব না।

    ডাক্তার আসিলে তাঁহাকে দ্বারের বাহির হইতেই লক্ষ্মী বিদায় করিয়া দিয়া বলিল, আপনি ত জানেন, আপনার ওষুধে আমার কিছুই হয় না,—আপনি যান।

    শিবচরণ আসিয়া অনেক-কিছু প্রশ্ন করিল, কিন্তু একটা কথারও উত্তর পাইল না।

    আরও দুই-তিনদিন যখন এমনই করিয়া কাটিয়া গেল, তখন বাড়ির সকলেই কেমন যেন অজানা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিল।

    সেদিন বেলা প্রায় তৃতীয় প্রহর, লক্ষ্মী স্নানের ঘর হইতে নিঃশব্দ মৃদুপদে প্রাঙ্গণের একধার দিয়া উপরে যাইতেছিল, পিসীমা রান্নাঘরের বারান্দা হইতে দেখিতে পাইয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন, দেখ বৌমা, বিপিনের বৌয়ের কাজ !—অ্যাঁ মেজবৌ, শেষকালে চুরি শুরু করলে ?

    হরিলক্ষ্মী কাছে গিয়া দাঁড়াইল। মেজবৌ মেঝের উপর নির্বাক অধোমুখে বসিয়া, একটা পাত্রে অন্নব্যঞ্জন গামছা ঢাকা দেওয়া সম্মুখে রাখা; পিসীমা দেখাইয়া বলিলেন, তুমিই বল বৌমা, এত ভাত-তরকারি একটা মান্‌ষে খেতে পারে? ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছেলের জন্যে; অথচ বার বার করে মানা করে দেওয়া হয়েছে। শিবচরণের কানে গেলে আর রক্ষে থাকবে না—ঘাড় ধরে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে। বৌমা, তুমি মনিব, তুমিই এর বিচার কর। এই বলিয়া পিসীমা যেন একটা যেন একটা কর্তব্য শেষ করিয়া হাঁফ ফেলিয়া বাঁচিলেন।

    তাঁহার চীৎকার-শব্দে বাড়ির চাকর, দাসী, লোকজন যে যেখানে ছিল, তামাশা দেখিতে ছুটিয়া আসিয়া দাঁড়াইল, আর তাহারই মধ্যে নিঃশব্দে বসিয়া ও-বাড়ির মেজবৌ ও তাহার কর্ত্রী এ-বাড়ির গৃহিণী।

    এত ছোট, এত তুচ্ছ বস্তু লইয়া এতবড় কদর্য কাণ্ড বাধিতে পারে, লক্ষ্মীর তাহা স্বপ্নের অগোচর। অভিযোগের জবাব দিবে কি, অপমানে, অভিমানে, লজ্জায় সে মুখ তুলিতেই পারিল না। লজ্জা অপরের জন্য নয়, সে নিজের জন্যই। চোখ দিয়া তাহার জল পড়িতে লাগিল, তাহার মনে হইল, এত লোকের সম্মুখে সে-ই যেন ধরা পড়িয়া গেছে এবং বিপিনের স্ত্রী-ই তাহার বিচার করিতে বসিয়াছে।

    মিনিট দুই-তিন এমনইভাবে থাকিয়া সহসা প্রবল চেষ্টায় লক্ষ্মী আপনাকে সামলাইয়া লইয়া কহিল, পিসীমা, তোমরা সবাই একবার এ-ঘর থেকে যাও।

    তাহার ইঙ্গিতে সকলে প্রস্থান করিলে লক্ষ্মী ধীরে ধীরে মেজবৌয়ের কাছে গিয়া বসিল; হাত দিয়া তাহার মুখ তুলিয়া ধরিয়া দেখিল, তাহারও দুইচোখ বাহিয়া জল পড়িতেছে। কহিল, মেজবৌ, আমি তোমার দিদি, এই বলিয়া নিজের অঞ্চল দিয়া তাহার অশ্রু মুছাইয়া দিল।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleহরিচরণ
    Next Article রূপসী বাংলা

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    চলিত ভাষার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    দর্পচূর্ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    May 6, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী ছোটগল্প

    আসল বেনারসী ল্যাংড়া

    April 5, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    জুয়াড়ির বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    অন্ধের বউ

    March 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }