Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প110 Mins Read0

    ০৫. এখন দুটো খুঁড়তে হবে

    পরদিন ভোরে একটা খন্তা আর কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো মন্তু।

    পরীর দীঘির পাড়ে জায়গাটা আগেই দেখিয়ে গেছে ছমির শেখ। কথা ছিলো একটা কবর খোঁড়ার। এখন দুটো খুঁড়তে হবে। একটা নন্তু শেখের জন্যে আরেকটা ছমির শেখের জন্য। রাতে কবিরাজ আনতে যাওয়ার সময় ভেদবমি শুরু হয় ওর। বাড়িতে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরে মারা গেছে ও।

    আগে মরার জন্যে কবর খোঁড়ার কাজটা নন্তু শেখ করতো। গত ত্রিশ বছর ধরে এ গায়ে যত লোক মরেছে সবার জন্যে কবর খুঁড়েছে সে। কোদাল হাতে কবর খোঁড়ার সময় প্রায় একটা গান গাইতো নন্তু শেখ। আর ওর কবরের ছক কাটতে গিয়ে সে গানটার কথা মনে পড়ে গেলো মন্তুর।

    এই দুনিয়া দুই দিনের মুসাফিরখানা ও ভাইরে।
    মইলে পরে সব মিয়ারে যাইতে হইবো কবরে।

    মাটি খুঁড়তে আর টেনে টেনে গান গাইতো নন্তু শেখ। বলতো, কত মানুষেরে কবর দিলাম, কত কবর খুঁইড়লাম এই জীবনে। তার হিসাব কি আর আছে মিয়া। এমনও দিন গ্যাছে যহন, একদিন সাত আটটা কইরা মাটি দিছি।

    গোরস্থানে কার কোনটা কবর, কাকে কোনদিন এবং কোথায় কবর দিয়েছে সব কিছু মুখে মুখে বলে দিতে পারতো নন্তু। আর যখন কবর খুঁড়তে গিয়ে মানুষের অস্থি কিম্বা মাথার খুলি পেতো সে, তখন সবাইকে দেখিয়ে বিজ্ঞের মতো বলতো, চিনবার পার এরে? না না তোমরা চিনবা কেমন কইরা? আমি চিনি। এই কলিমুল্লা মাঝির মাইয়ার খুলি। এইহানেই তো কবর দিছিলাম ওরে। আহা মাইয়া আছিল বটে একডি। যেনো টিয়া পাখির ছাও। যে একবার দেইখছে সেই আর তারে ভুলবার পারে নাই। বলে খুলিটার দিকে খুব ভালো করে তাকাতে ন্যু শেখ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার করে দেখতে ওটা, আহা কি মাইয়া কি অইয়া গেছে। সোনার চাঁদ সুরত এহন চিনবারই পারা যায় না। অতি দুঃখের সঙ্গে নন্তু আবার বলতো, গলায় ফাঁস দিয়া মই ছিলো অভাগী। জামাইর সঙ্গে বনিবনা অইতো না তাই। খুলিটা একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নন্ত বলে যেতো, সেই বহুত দিনের কথা মিয়া, তহন তোমরা সব মায়ের পেটে আছিল। সেই নন্তু শেখের মৃতদেহটা কবরে নামাতে গিয়ে চোখজোড়া পানিতে ঝাঁপসা হয়ে এলো মরুর। মইলে পরে সব মিয়ারে যাইতে অইবো কবরে। সারাদিন আর বাড়ি ফিরলো না মন্তু। দীঘির পাড়ে কাটিয়ে দিলো সে। ওর মায়ের কবরটা দেখলো। এককালে বেশ উঁচু ছিলো ওটা। অনেক দূর থেকে চোখে পড়তো, এখন মাটির নিচে খাদ হয়ে গেছে এক হাঁটু। অনেকগুলো ছোট ছোট গর্ত নেমে গেছে ভেতরের দিকে, সেখানে মায়ের দু-একখানা হাঁড় হয়ত আজও খুঁজে পাওয়া যাবে। মায়ের জন্যে আজ হঠাৎ ভীষণ কান্না পেলে ওর। মনে হলো ও বড়ো একা। এ দুনিয়াতে ওর কেউ নেই। শুকনো পাতার শব্দে পেছনে ফিরে তাকালো মন্তু। টুনি দাঁড়িয়ে পেছনে। সারাদিন ওর দেখা না পেয়ে অনেক খোজের পর এখানে এসেছে সে। ম্যুকে ওর মায়ের কবরের পাশে বসে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো টুনি।

    তারপর ওর কাঁধের ওপর একখানা হাত রেখে আস্তে করে বললো, ঘরে যাইবা চল।

    কোন কথা না বলে নীরবে উঠে দাঁড়ালো মন্তু। কিন্তু তক্ষুণি বাড়ি ফিরলো না সে।

    বললো, তুমি যাও আমি আহি।

    টুনি উৎকণ্ঠিত গলায় বললো, কই যাইবা?

    মন্তু বললো, যাও না আইতাছি। কিন্তু তক্ষুণি বাড়ি ফিরলোনা সে বললো, তুমি যাও আমি আহি।

    টুনি উৎকণ্ঠিত গলায় বললো, কই যাইবা?

    মন্তু বললো, যাও না, আইতাছি। বলে টুনিকে সঙ্গে নিয়ে পরীর দীঘির পাড় থেকে নেমে এলো সে।

     

    ও যখন বাড়ি ফিরে তখন বেশ রাত হয়েছে। বার বাড়ি থেকে মন্তু শুনতে পেল গনু মোল্লা ওরা বসে বসে কি যেন আলাপ করছে।

    গনু মোল্লা বলছে, সব অইছে খোদার কুদরত বাপু। নইলে এই দিনে তো কোনদিনই ওলা বিবিরে আইতে দেহি নাই।

    মকবুল বললো, ওলা বিবির আর আজকাইল দিনকাল কিছু নাই। যহন তহন আহে।

    আমেনা বললো, এক পা খোঁড়া বিবির। তবু যেন কেমন কইরা এত বাড়ি বাড়ি যায়, আল্লা মালুম।

    ওর কথা শেষ না হতেই টুনি জিজ্ঞেস করলো, কেমন কইরা ওর এক পা খোঁড়া অইল কুয়া?

    তখন টুনিকে বুঝাতে লেগে গেলো আমেনা।

    ওলা বিবি, বসন্ত বিবি আর যক্ষ্মা বিবি ওরা ছিলো তিন বোন এক প্রাণ। যেখানে যেত এক সঙ্গে যেতো ওরা। কাউকে ফেলে কেউ বেরুতে না বাইরে।

    একদিন যখন খুব সুন্দর করে সেজগুঁজে ওরা রাস্তায় হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলো তখন। হঠাৎ হজরত আলীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো ওদের। রঙ্গিন শাড়ি পরে বেরুলে কি হবে, ওদের চিনতে এক মুহূর্তও বিলম্ব হলো না হযরত আলীর। তিনি বুঝতে পারলেন এরা একজন কলেরা, একজন বসন্ত, আর একজন যক্ষ্মা বিবি। মানুষের সর্বনাশ করে বেড়ায় এরা। আর তহনি এক কাণ্ড কইরা বইসলেন তিনি। খপ কইরা মা ওলা বিবির একখানা হাত ধইরা দিলেন জোরে এক আছার। আছাড় খাইয়া একখানা পা ভাইঙ্গা গেলো ওলা বিবির। আহা সব খোদার কুদরত। মকবুল সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, একখানা পা দিয়া দুনিয়াডারে জ্বালাইয়া খাইছে বেটি। দুই পা থাইকলে তো দুনিয়াডারে একদিনে শেষ কইরা ফালাইতো।

    হঠাৎ মন্তুর দিকে চোখ পড়তে বুড়ো মকবুল মুহূর্তে রেগে গেলোর কিরে নবাবের বেটা তোরে একশবার কই নাই, মাঝি বাড়ি যাইস না, গেলি ক্যান অ্যাঁ।

    গনু মোল্লা বললো, আকেল পছন্দ নাই তোর।

    সুরত আলী বললো, বাড়ির কারো যদি এহন কিছু অয় তাইলে কুড়াইল মাইরা কল্লা ফালাইয়া দিমু তোর।

    ফকিরের মা বুড়ি এতক্ষণ চুপ করে ছিল। এবার সে বললো, বাপু গেলেই কি অইবো, আর না গেলেই অইবো না যার মউত আল্লায় যেই দিন লেইখা রাইখছে সেই দিন অইবো। কেউ আটকাইবার পারবে না।

    ঠিক কইছেন চাচি, আপনে ঠিক কইছেন। সঙ্গে সঙ্গে ওকে সমর্থন জানালো টুনি।

    ওর কথা শেষ হতেই হঠাৎ ফাতেমা জানালো গত রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছে সে।

    দেখেছে একটা খোঁড়া কুকুর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওদের গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে।

    বড় ভালা দেখছ বউ। বড় ভালা দেখছ। ফকিরের মা পক্ষণে বললো, ওই খেড়া কুত্তা, খোঁড়া মোরগ আর গরুর সুরত ধইরাই তো আহে ওলা বিবি। এক গেরাম থাইকা অন্য গেরামে যায়। বলে সমর্থনের জন্যে সবার দিকে এক নজর তাকালে সে।

    মকবুল জানালো, শুধু তাই নয় মাঝে মাঝে খোঁড়া কাক, শিয়াল কিম্বা খোঁড়া মানুষের রূপ নিয়েও গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যাতায়াত করে ওলা বিবি।

    হ্যাঁ মিয়ারা। বুড়ো মকবুল সবাইকে সাবধান করে দিলো। ঘোড়া কিছুরে বাড়ির ধারে কাছে আইতে দিয়োনা তোমরা। অচেনা কোন খোঁড়া মানুষও না। দেখলেই ওইগুলোরে তাড়ায়ে খাল পার কইরা দিও।

    সকলে ঘাড় নেড়ে যায় দিলো। হ্যাঁ তাই করবে।

    রাতে ঘুম হলো না মন্তুর।

    সারাক্ষণ বিছানায় ফটফট করলো সে। না, একটা বিয়ে ওকে এবার করতেই হবে। এমনি একা জীবন কতদিন কাটাবে মন্তু। কিন্তু বিয়ের কথা ভাবতে গেলে ইদানীং টুনি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের কথা ভাবতে পারে না সে। শান্তির হাটের সেই রাত্রির পর থেকে টুনি তার সমস্ত অন্তর জুড়ে বসে আছে। গ্রামের কত লোক তাদের বউকে তালাক দেয়। বুড়ো মকবুল কেন তালাক দেয় না টুনিকে।

    হঠাৎ পরীবানুর পুঁথির কথা মনে পড়লো মন্তুর। সুরত আলী মাঝে মাঝে সুর করে পড়ে ওটা।

    ঘর নাই বাড়ি নাই দেখিতে জবর।
    পরীবানুর আসিক লইল তাহারি উপর।

    কুলাটিয়া গ্রামের এক গৃহস্থের বউ পরীবানু। স্বামীর সঙ্গে মিলমিশ হতো না। অষ্টপ্রহর ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। ঘর ছেড়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে নীরবে বসে থাকতো সে। আর সেখান থেকে দেখতে একটি রাখাল ছেলেকে। দূরে একটা বট গাছের নিচে বসে এক মনে বাঁশি বাজাতো সে। এমনি চোখের দেখায় প্রেম হয়ে গেলো।

    তারপর

    তারপর একদিন সময় বুঝিয়া।

    দুইজনে পালায়া গেলো চোখে ধূলা দিয়া।

    মন্তুর তাই মনে হলো। টুনিকে নিয়ে যদি একদিন পালিয়ে যায় সে। দূরে বহুদূরে, দূরের কোন গ্রামে কিম্বা শহরে। না শান্তির হাটে যদি ওকে নিয়ে যায় সে তা হলে মনোয়ার হাজী নিশ্চয় একটা বন্দোবস্ত করে দেবে। সেখানে টুনিকে নিয়ে সংসার পাতবে মন্তু। যেকোন দোকানে হাজীকে দিয়ে একটা চাকুরি জুটিয়ে নেবে সে।

    এমনি আরো অনেক চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো মন্তু।

    সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বেরুতেই আমেনা জিজ্ঞেস করলো, নন্তু শেখের বাড়ির কোন খবর জান।

    না।

    ওমা জান না? নন্তু শেখের ছেলে করিম শেখ পড়েছে আজ।

    মন্তু কোন কথা বললো না।

    আমেনা বলে চললো, কবিরাজে কিছু কইরবার পারলো না। তাই ও গনু মোল্লারে ডাইকা নিছে। একটু ঝাড়ফুক দিয়া যদি কিছু অয়।

    মন্তুকে চুপ করে থাকতে দেখে আমেনাও চুপ করে গেলো।

     

    অবশেষে আরও দশটি প্রাণ হরণ করে তবে গ্রাম থেকে বিদায় নিলেন ওলা বিবি।

    গ্রামের সবাই মসজিদে সিন্নি পাঠালো। মিলাদ পড়ালো বাড়ি বাড়ি।

    ওলা বিবি গেলেন। আর দিন কয়েক বৃষ্টি এলো জোরে। আকাশ কালো করে নেমে এলো অবিরাম বর্ষণ। সারা রাত মেঘ গর্জন করলো। বাতাস বইলো আর প্রচণ্ড বেগে ঝড় হলো।

    আগের দিন বিকেলে আকাশে মেঘ দেখে বুড়ো মকবুল তার পুরনো লাঙ্গলটা ঠিক করে নিয়েছে। গরু নেই ওর। রওশন ব্যাপারীর কাছ থেকে এক জোড়া গরু ঠিকে নেবে। যে ক’দিন হাল চলবে সে কটা দিনের জন্যে নগদ টাকা দিতে হবে। তাছাড়া গরুর ঘাসবিচালীর পয়সাও জুটাতে হবে তাকে।

    ভোর না হতেই সবাই বেরিয়ে পড়লো মাঠে।

    আবুল, মন্তু, সুরত আলী, রশীদ, বুড়ো মকবুল আর গ্রামের সবাই।

     

    পুরুষেরা কেউ বাড়ি নেই।

    পুরো মাঠ জুড়ে হাল পড়েছে। পাথরের মত শক্ত মাটি বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে নরম হয়ে গেছে।

    হট, হট, হট, হুঁ উঁ উঁ।

    বড় মিয়ার জমিতে লাঙ্গল নামিয়েছে মন্তু আর সুরত।

    এককালে এ জমিটা সুরত আলীর ছিলো। সরেস জমি। প্রায় মণ সাতেক ধান ফলতো তখন। ধানের ভারে গাছগুলো সব নুয়ে পড়ে থাকতো মাটিতে।

    নিজ হাতে ক্ষেতে লাঙ্গল দিতে সুরত। মই দিতো। ধান ফেলতো খুব সাবধানে। গাছ উঠলে, বসে বসে আগাছাগুলো পরিষ্কার করতো।

    ছাই আর গোবর ছড়িয়ে দিয়ে যেতো প্রতিটি অঙ্কুরের গোড়ায়। তারপর খাজনার টাকা জোটাতে না পেরে এটা বড় মিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সে।

    আহা জমিডার কি অবস্থা কইরাছে দেখছ? লাঙল ঠেলতে ঠেলতে সুরত আলী বললো, জমির লাইগা ওগো আধ পয়সার দরদ নাই। দরদ নাই দেইখাই তো জমিনও ফাঁকি দিবার লাগছে।

    মন্তু সঙ্গে সঙ্গে বললো, গেল বছর মোটে দেড় মণ ধান পাইছে।

    কোথায় সাত মণ আর কোথায় দেড় মণ!

    বুকটা ব্যথায় টন টন করে উঠলো সুরত আলীর রুগন্ গরু দুইটাকে হট, হট করে জোড়ে তাড়া দিয়ে বললো, জমির খেদমত করন লাগে।

    বুঝলা মন্তু মিয়া, জমির খেদমত করন লাগে। যত খেদমত কইরবা তত ধান দিব তোমারে।

    শেষের কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যায় না। আপন মনে বিড়বিড় করে সুরত। হঠাৎ কোনখানে যদি কতগুলো টাকা পেয়ে যেত তাহলে জমিটাকে আবার কিনে নিতে সে।

    তখন সাত মণের জায়গায় আট মণ ধান বের করতো এই জমি থেকে।

    আকাশে এখনও অনেক মেঘ, দক্ষিণের বাতাসে উত্তরে ভেসে যাচ্ছে ওরা। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসতে পারে নিচে। সুরত তখনো বলে চলছে আপন মনে। খোদার ইচ্ছা অইলো, জমিনগুলান আমার থাইকা কাইড়া নিলো। খোদার ইচ্ছা অইলো জমিনগুলান বড় মিয়ারে দিয়া দিলো। জমির লাইগা যার একটুও মায়াদয়া নাই তারেই দিলো খোদা দুনিয়ার সকল জমি। এইডা কেমনতর ইনছাফ অইলো মন্তু মিয়া। ইনছাফ ইনছাফ করো মিয়া। এইডা কেমনতর ইনছাফ অইলো মন্তু মিয়া? হিরর। হট হট। হুঁ উঁ উঁ। গরুগুলোর লেজ ধরে জোরে তাড়া দিলো সুরত আলী।

    অদূরে তার জমিতে ধান ফেলছে। মিশকালো দেহ বেয়ে চুইয়ে ঘাম ঝরছে ওর। হাঁটার সময় মনে হচ্ছে মুখ থুবড়ে ক্ষেতের মধ্যে পড়ে যাবে সে। ওটাও বড় মিয়ার ক্ষেত। বর্গা নিয়ে চাষ করছে রশীদ। ওর পাশের ক্ষেতে মই জুড়েছে বুড়ো মকবুল।

    কাজ করার সময় আশেপাশের দুনিয়াকে একেবারে ভুলে যায় সে। কোথায় কি ঘটছে লক্ষ্য করে না। ধান ফেলা শেষ হলে, রশীদ ডাকলো অ-ভাইজান।

    মকবুল মুখ না তুলেই জবাব দিলো, কি কও না।

    ধান তো ফালায়া দিলাম আল্লার নাম নিয়া।

    দাও, দাও, কালায়া দাও। এহন যত তাড়াতাড়ি ফালাইবা তত লাভ।

    আর লাভের কথা কইও না। গরুজোড়ার সঙ্গে মই জুড়তে জুড়তে রশীদ জবাব দিলো।

    ধান বেশি অইলেই বা কি, না অইলেই বা কি। বড় মিয়াকে অর্ধেক দিয়া দেওন লাগবে।

    ওই দিয়া থুইয়া যা থাকে, তাই লাভ। মকবুল সান্ত্বনা দিলে ওকে।

    সুরত আলী তখনও আপন মনে বলে চলেছে, পরের জমিতে বাইট্যা কোন আরাম নাই মন্তু মিয়া, পরের জমি, আরে গরুগুলোর আবার কি অইলো। হালার নবাবের ব্যাটা।

    হট, হট, ইঁ উঁ উঁ।

    মন্তু ততক্ষণে গান ধরেছে।

    আশা ছিলো মনে মনে প্রেম করিমু তোমার সনে
    তোমায় নিয়া ঘর বাঁধিমু গহিন বালুর চরে।

    হঠাৎ গান থামিয়ে গরুজোড়ার লেজ ধরে সজোরে টান দিলো মন্তু।

    ইতি, ইতি, ইতি, চল।

    সুরত বললো, গান থামাইলি ক্যান মন্তু। গাইয়া যা, গাইয়া যা।

    মন্তু বললো, না ভাইজান, গলাডা হুকাইয়া গেছে, গান বাইরয় না।

    হ, হ, দুনিয়াডাই হুকাইয়া গেছে মন্তু মিয়া। তোর গলা হুকায় নাই।

    জোগে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সুরত আলী। আমাগো জমানায় আহা, কত গান গাইছি, কত ফুর্তি কইরাছি। কত রংবাজি দেইখছি। আর অহন দুনিয়াডাই আরেক রকম হইয়া গেছে মন্তু মিয়া। গাজী কালুর দুনিয়া আর নাই। মোনাভানের দুনিয়া পুইড়া ছাই অইয়া গেছে। বলে কর্কশ গলায় সে নিজে একখানা গান ধরলো।

    যা ছিলো সব হারাইলাম হায় পোড়া কপাল দোষে।
    ও খোদা,
    আমার কপাল এমন তুমি কইরলা কোন রোষে।

    গান গাইতে গাইতে খুক ধুক করে অনেকক্ষণ কাশলো সুরত। বা হাত দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে নিলো। থাম, থাম, আরে থামরে নবাবের বেটা। থাম। গরুগুলোকে থামিয়ে তামাক খাওয়ার জন্যে আলের ধারে এসে বসলো সে। বললো, মন্তু মিয়া আহ, তামুক খাইয়া লও। তামাকের গন্ধ পেয়ে মকবুল আর রশীদ ওরাও ক্ষেত ছেড়ে উঠে এলো।

    জোরে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে বুড়ো মক্কলের দিকে হুঁকোটা বাড়িয়ে দিলো সুরত।

    প্রথমে এক নিঃশ্বাসে কিছুক্ষণ হুঁকো টানলো মকবুল। তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললো, মন্তু মিয়া তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে আইজ।

    সন্ধ্যা বেলা বাড়ি থাইকো।

    রশীদ আর সুরত একবার হুঁকোর দিকে তাকালো, কিছু বললো না।

    ওদের নজর এখন হুঁকোর দিকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআর কত দিন – জহির রায়হান
    Next Article আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.