Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প110 Mins Read0

    ০৭. আমেনা আর ফাতেমার বাড়ি থেকে

    পরদিন বিকেলে খবর পেয়ে আমেনা আর ফাতেমার বাড়ি থেকে লোক এসে নিয়ে গেল ওদের। যাবার সময় করুণ বিলাপে পুরো গ্রামটাকে সচকিত করে গেলো ওরা। এতোদিনের গড়ে তোলা সংসার এক মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। ঘরের পেছনে লাগানো লাউ কুমড়োর মাচাগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমেনা। যাবার সময় ফকিরের মাকে কেঁদে কেঁদে বলে গেলো, হীরনকে খবর দিয়ো না। শুইনলে মাইয়া আমার বুক ভাসাইয়া মইরা যাইব। খোদার কসম রইলো, বুয়া, মাইয়ারে আমার খবর দিয়ো না।

    ফাতেমাকে নেয়ার জন্য ভাই এসেছিলো ওর। যাবার সময় বাড়ির সবাইকে শাসিয়ে গেছে ও। বলে গেছে শিকদার-বাড়ির লোকগুলোকে একহাত দেখে নেবে সে। বোনের জনা চিন্তা করে না ও। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর চেয়ে দশগুণ ভাল ঘর দেখে ফাতেমার বিয়ে দিয়ে দিবে।

    মকবুল বিছানায়। মাথায় ওর একটা পট্টি বেঁধে দিয়েছে টুনি। হাড় কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে বুড়োর। মাঝে দু’একবার চোখ মেলে তাকিয়েছিলো এখন নীরবে ঘুমুচ্ছে। টুনি পাশে বসে বাতাস করছে ওকে। রাতে গনু মোল্লা এলো ওর ঘরে। বুড়ো মকবুলের গায়ে মাথায় হাত দিয়ে ওর জ্বর আছে কিনা দেখলো। তারপর আস্তে কইরা বললো, রাগের মাথায় ইতা কিতা কইরলা মিয়া। শরীর ভালা অইয়া গেলে ভাবীসাবগোরে বাড়ি নিয়া আহ। রাগের মাথায় তালাক দিলে তো আর তালাক অয় না। ওই তালাক অয় নাই তোমার।

    এক বাটি বার্লি হাতে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো টুনি। ওকে আসতে দেখে গনু মোল্লা চুপ করে গেলো।

    টুনির উপরে আক্রোশ পড়েছে সবার। সবাই বুঝতে পেরেছে, এই যে সব কাণ্ড ঘটে গেছে এর জন্যে টুনিই দায়ী।

    উঠোনে দাঁড়িয়ে অনেকে অনেক কথা বললো। ওর নাম ধরে অনেক গালাগাল আর অভিশাপ দিলো বাড়ির ছেলেমেয়েরা।

    টুনি নির্বিকার। একটি কথারও জবাব দিলো না।

    দিন কয়েক পরে আম্বিয়ার চাচা ছমির শেখ জানিয়ে গেলো বুড়ো মকবুলকে বিয়ে করবে না আম্বিয়া। তাছাড়া খুব শীঘ্রি আম্বিয়ার বিয়ের সম্ভাবনাও নেই।

    কথাটা শুনলো বুড়ো মকবুল। শুনে কোন ভাবান্তর হলো না। ঘরের কড়ি-কাঠের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। ইদানীং দিনরাত মকবুলের সেবা শুশ্রুষা করছে টুনি। সারাক্ষণ ও এর আশেপাশে থাকে। একটু অবকাশ পেলে রসুই ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার পাটটা সেরে আসে সে। মরিচ ক্ষেত আর লাউ কুমড়োর গাছগুলোর তদারক করে আসে। মাঝে মাঝে ফকিরের মা আর সালেহার আলাপ শুনে টুনি। মন্তু আর আম্বিয়াকে নিয়ে আলাপ করে ওরা। আজকাল নাকি অনেক রাত পর্যন্ত আম্বিয়াদের বাড়িতে থাকে মন্তু। টুনি শুনে। কিছুই বলে না। একদিন বিকেলে মন্তু যখন বাইরে বেরুবে তখন তার সামনে এসে দাঁড়াল টুনি। বললো, জ্বর ওর ভীষণ বাইড়া গেছে। কবিরাজের কাছ থাইকা একটু ওষুধ আইনা দিবা?

    ওর মুখের দিকে নীরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মন্তু। ভীষণ শুকিয়ে গেছে টুনি। হঠাৎ বয়সটা যেন অনেক বেড়ে গেছে ওর। চোখের নিচে কালি পড়েছে। চুলগুলো শুকনো।

    মন্তু ইতস্তত করছিলো।

    টুনি আবার বললো, আজকা না হয় মাঝি বাড়ি নাই গেলা। একটু ওষুধটা আইনা দাও।

    ওর ঠোঁটের কোণে এক টুকরো ম্লান হাসি।

    মন্তু বললো, মাঝি বাড়ি না গেলে তুমি খুশি অও?

    টুনি পরক্ষণে শুধালো, আমার খুশি দিয়া তুমি কইবা কি?

    মন্তু কি জবাব দেবে ভেবে পেলো না।

    ওকে চুপ করে থাকতে দেখে টুনি আবার বললো, যাইবা না ক্যান, একশো বার যাইবা।

    পুরুষ মানুষ তুমি, কতদিন একা একা থাইকবা। ঘর থেকে বুড়ো মকবুলের ডাক শুনে আর এখানে দাঁড়ালো না টুনি। পরক্ষণে চলে গেলো সে।

    ওর চলে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল মন্তু। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

    রাতে কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ এনে দিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো মন্তু। বর্ষা এগিয়ে আসছে। আম্বিয়া বলেছে নৌকোটা ঠিক করে নেবার জন্য। চাচা ছমির শেখ চেয়েছিলো নৌকোটা নিজে বাইবে।

    কিন্তু আম্বিয়া রাজী হয়নি। মন্তু ছাড়া অন্য কাউকে ওতে হাত দেবার অধিকার দিতে রাজী নয় সে।

    ছমির শেখ রেগে গালাগাল দিয়েছে ওকে। মন্তু সম্পর্কে কতগুলো অশ্লীল মন্তুব্য করে বলেছে, ওর সঙ্গে তোমার মিলামিশা কিন্তুক ভালো অইতাছে না আম্বিয়া। গেরামের লোকজনে পাঁচ রকম কথাবার্তা কইছে।

    কউক। তাগো কথায় আমার কিছু আইবো যাইবো না। নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিয়েছে আম্বিয়া।

    ওর স্পষ্ট উত্তরে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়েছে ছমির শেখ। বলেছে, তোমার কিছু আহে না আহে, আমাগো আহে। মন্তুরে কিন্তুক এই বাড়িতে আইতে নিষেধ কইরা দিও বইলা দিলাম।

    তবু বারবার ম্যুকে বাড়িতে ডেকেছে আম্বিয়া।

    ও গেলে সংসারের নানা কথা নিয়ে আলাপ করেছে ওর সঙ্গে।

    আজও মন্তুর জন্য অপেক্ষা করছিলো আম্বিয়া। চুলে তেল দিয়ে সুন্দর করে চুলটা অ্যাঁচড়েছে সে। সিঁথি কেটেছে। পান খেয়ে ঠোঁট জোড়া লাল টুকটুকে করে তুলেছে।

    ও আসতে একখানা সিঁড়ি এগিয়ে দিলে আম্বিয়া।

    অর্ধেকটা মুখ ঘোমটার আড়ালে ঢাকা। সলজ্জ অঙ্গর ঈষৎ আভাটা চোখে পড়েও যেন পড়তে চায় না।

    আম্বিয়া বললো, এত দেরি অইলো?

    মন্তু বললো, কবিরাজের কাছে গিছলাম।

    কেন গিয়েছিলো তা নিয়ে আর প্রশ্ন করেনা আম্বিয়া।

    দূরে নিজ ঘরের দাওয়ায় বসে আড়চোখে বার বার এদিকে তাকায় ছমির শেখ আর বিড়বিড় করে কি যেন সব বলে।

    রাতে ওখানে খেলো মন্তু।

    পানটা মুখে পুরে বাইরে বেরিয়ে এলো সে।

    বাইরে তখন ইলশেগুঁড়ি ঝড়ছে।

    কদিন পর পর বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার উপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে এপাশ থেকে ওপাশে।

    পানির সঙ্গে সঙ্গে ছছাট ছোট বেলে আর পুঁটি ছুটোছুটি করছিলো এদিকে সেদিকে।

    অন্ধকারের ভেতর মকু আর ছকু দুভাই মাছ ধরছিলো বসে বসে।

    মকে দেখে বললো, কি মিয়া এত রাইতে কোন্ দিক থাইকা?

    মাঝি বাড়ি।

    হুঁ। একটা পুঁটি মাছ ধরে নিয়ে ছকু বললো, চইলা যাও ক্যান মন্তু মিয়া। তামুক খাইয়া যাও।

    না মিয়া শরীরডা ভালা নাই।

    মন্তু যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে মকু বললো, আরে মিয়া যাইবা আর কি, বও। কথা আছে।

    কি কথা কও। জলদি কও। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে মাটিতে বসলো মন্তু। নিঝুম রাত। শুধু একটানা জল গড়ানোর শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দই শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু’একটা ব্যাঙ ডাকছে এখানে ওখানে। আরো তিন চারটে পুঁটি মাছ ধরে নিয়ে ছকু আস্তে বললো, কি মন্তু মিয়া তুমি নাহি করিমনের বইন আম্বিয়ারে বিয়া কইরতাছ হুনলাম। বলে অন্ধকারে ঘোৎ ঘোঁৎ করে হাসলো সে।

    তামাক খেতে খেতে ওর দিকে তাকাল মন্তু। কিছু বললো না।

    মকু বললো, ভালো মাইয়ার উপর তোমার চোখ পইড়ছে মন্তু মিয়া।

    তোমার পছন্দের তারিফ করন লাগে। অমন মাইয়া এই দুই চাইর গেরামে নাই। আহা সারা গায়ে যেন যৈবন ঢল ঢল করতাছে।।

    কি মন্তু মিয়া চুপ কইরা রইলা যে? ওকে কনুইয়ের একটা গুঁতো মারলো ছকু। বিয়া শাদি করবার আগে আমাগোরে একটু জানাইয়া, একটু দাওয়াত টাওয়াত কইরো।

    করমু। করমু। আগে বিয়া ঠিক হোক তারপর করমু। একলাফে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুতপায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো সে।

    দাওয়ার পাশে টুনি দাঁড়িয়ে। অন্ধকারে হঠাৎ চেনা যায় না।

    মন্তুর পায়ের গতিটা শ্লথ হয়ে এলো।

    উঠোনে সালেহা আর ফকিরের মা বসে। মন্তুর সঙ্গে আম্বিয়ার বিয়ে নিয়ে রসালো আলোচনা করছে ওরা।

    আম্বিয়ার চাচা আজ বলেছে, সামনের শুক্রবারে জুমার নামাজের পর গাঁয়ের মাতবরদের কাছে কথাটা তুলবে সে। বিচার চাইবে। এই যে রাত বিরাতে আম্বিয়ার সঙ্গে মন্তুর এত অন্তরঙ্গ মেলামেশা এ শুধু সামাজিক অন্যায় নয়। অধর্মও বটে।

    তাই নিয়ে মসজিদে বিচার বসাবে আম্বিয়ার চাচা।

    ফকিরের মা বললো, আমি কিন্তুক একটা কথা কইয়া দিলাম বউ। এই মাইয়া একেবারে অলুক্ষুইণ। যেই ঘরে যাইবো সব পুড়াইয়া ছাই কইরা দিবো।

    সালেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ঠিক কইছ চাচি।

    কথাটা বলতে গিয়ে আমেনা আর ফাতেমার কথা মনে পড়ে গেছে ওদের। আম্বিয়ার জন্যেই তো ওদের তালাক দিয়েছে বুড়ো মকবুল।

    নিজেও পড়েছে মরণ রোগে।

    উঠোনে এসে এক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়ালো মন্তু।

    সালেহা আর ফকিরের মা কথা থামিয়ে তাকালো ওর দিকে।

    টুনি কিছু বললো না। একটু নড়লো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

    মন্তু ওর দিকে গিয়ে দরজা এঁটে দিলো।

    কাল ভোরে আবার বেরুতে হবে ওকে।

     

    অবশেষে মকবুল মারা গেলো।

    ধলপহর দেবার অনেক আগে যখন সারা গ্রাম ঘুমে অচেতন তখন এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো সে।

    সারা রাত কেউ ঘুমালো না।

    গনু মোল্লা, আবুল, রশীদ, সালেহা, মন্তু, টুনি সবাই জেগে রইল মাথার পাশে। সন্ধেবেলা ফকিরের মা বলছিলো লক্ষণ বড় ভালা না।

    তোমরা কেউ ঘুমায়ো না মিয়ারা, জাইগা থাইকো।

    বহুলোককে হাতের উপর দিয়ে মরতে দেখেছে ফকিরের মা। তাই রোগীর চেহারা আর তার ভাবভঙ্গী দেখে সে অনেকটা আন্দাজ করতে পারে।

    সারা রাত প্রলাপ বকেছে বুড়ো মকবুল।

    কখনো আমেনার নাম ধরে ডেকেছে সে। কখনো ফাতেমার জন্যে উতলা হয়ে উঠছে। আবার কখনো প্রলাপের ঘোরে গরু তাড়িয়েছে। হুঁ হট-হট। আরে মরার গরু চলে

    ক্যান। হুঁ হট-হট।

    মাথার কাছে বসে সারাক্ষণ কোরান শরীফ পড়লো গনু মোল্লা।

    তারপর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এলো বুড়ো মকবুল। প্রলাপ বন্ধ হলো।

    একটু পরে মারা গেলো সে।

    ওর বুকের উপর পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো টুনি।

    ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো সে।

    তার বিলাপের শব্দ অন্ধকারে কেঁপে কেঁপে দূরে পরীর দীঘির পাড়ে মিলিয়ে গেলো।

    বিস্ময়ভরা চোখে টুনির দিকে তাকিয়ে রইলো মন্তু।

    পরদিন দুপুরে বুড়ো মকবুলের মৃতদেহটা যখন কাফনে আবৃত করে খাটিয়ার ওপর তোলা হলো তখন বুক ফাটা আর্তনাদ করে উঠোনের মাঝখানে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মত তড়পাতে লাগলো টুনি। গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা নানা সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলো ওকে। সালেহ, ফকিরের মা, সুরতের বউ ওরাও অনেক কান্নাকাটি করলে অনেকক্ষণ ধরে।

    পরীর দীঘির পাড়ে বুড়ো মকবুলকে কবর দিয়ে আসার পর সবার মনে হলো বাড়িটা যেন কেমন শূন্য হয়ে গেছে। একটা থমথমে ভাব নেমে এসেছে গাছের পাতায়। ঘরের চালে। উঠোনে। বাড়ির পেছনে। ছোট্ট পুকুরে আর সবার মনে। একটি লোক দীর্ঘদিন ধরে একবারও ঘরের দাওয়ায় বেরুতে পারেনি, বিছানায় পড়েছিলো। যার অস্তিত্ব ছিলো কি ছিলো না সহসা অনুভব করা যেত না, সে লোকটা আজ নেই। কিন্তু তার এই না থাকাই যেন সমস্ত থাকার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে।

    সারা দুপুর টুনি কাঁদলো।

    সারা বিকাল।

    সারা সন্ধ্যা।

    সালেহা অনেক চেষ্টা করলো ওকে কিছু খাওয়াতে। সে খেল না।

    ফকিরের মা বললো, কিছু খাও বউ। না খাইলে শরীর খারাপ অইয়া যাইবো।

    কিছু খাও।

    তবু খেল না টুনি।

    মন্তু, সুরত আলী, আবুল, কারো মুখে কোন কথা নেই। কেউ দাওয়ায়, কেউ উঠোনে, কেউ দোরগোড়ায় বসে।

    আজ সহসা যেন সমস্ত কথা হারিয়ে ফেলেছ ওরা।

    মিয়াবাড়ির মসজিদ থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে। মাথায় টুপিটা পরে নিয়ে গামছাটা কাঁধে চড়িয়ে নামাজ পড়তে গেলে গনু মোল্লা। সুরত আলী, রশীদ আর আবুলও উঠে দাঁড়ালো।

    রোজ যে তারা নামাজ পড়ে তা নয়। কিন্তু আজ পড়বে। বুড়ো মকবুলের মৃত্যু হঠাৎ পরকাল সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে ওদের।

    পুকুর থেকে অজু করে এসে সুরত আলী বললো, কই যাইবা না মন্তু মিয়া?

    মন্তু তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বললো, চলো।

    বলতে গিয়ে গলাটা অস্বাভাবিকভাবে কেঁপে উঠলো ওর।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআর কত দিন – জহির রায়হান
    Next Article আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }