Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হায়রোগ্লিফের দেশে – অনির্বাণ ঘোষ

    লেখক এক পাতা গল্প244 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৭. আবু সিম্বেলের মন্দির

    স্কুপ থেকে বেরোতে বেরোতে সাড়ে সাতটা বেজেছিল। একগাদা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর দুটো সানডি খাওয়ার পরে আমাদের কারোর পেটেই আর জায়গা ছিল না। রেস্টুরেন্টের বাইরের রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ভুঁড়িটায় হাত বোলাতে বোলাতে ভবেশদা বললেন,

    ‘এইদিকটায় এলাম, কিন্তু একটা কাজ করা বাকি রয়ে গেল।’

    পিজি বলল, ‘কী করবেন? চক্ররেলে চড়ার কথা ভাবছেন নাকি? ওতে কিন্তু গঙ্গার খুব একটা ভালো ভিউ পাওয়া যায় না, আমি একবার…’

    ‘ধুস, ওটার কথা বলছি না। গঙ্গাকে দেখার জন্য শুধু গঙ্গার পাশ দিয়ে গেলেই হবে নাকি?’

    মিনিট কুড়ির মধ্যেই ভবেশ সামন্তর সঙ্গে নৌকোতে উঠতে দেখা গেল এই অধম আর পিজিকে।

    রাতের অন্ধকারে গঙ্গার বুকে ভেসে থাকতে দারুণ লাগে। নদীর দুটো পাড়ে কলকাতা আর হাওড়া শহরের আলোগুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল কোনো অচেনা জগতে বসে আছি। ঠান্ডা হাওয়াতে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। ভবেশদা বেশ খানিকক্ষণ চোখ বুজে বসে ছিলেন। তারপরে যেই না গুনগুন করে কী-একটা গান শুরু করার উপক্রম করেছেন অমনি পিজি বাধ সাধল তাতে,

    ‘বলছি, রামেসিসের গল্পটা…’

    ‘আগে গান হবে।’

    এই বলে বেসুরো গলায় ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’ দু-লাইন গেয়ে পরের লাইনগুলো গুলিয়ে ফেলে থামলেন ভবেশদা। তারপরে বললেন,

    ‘হ্যাঁ, রামেসিসের যে গল্পটা বলব বলছিলাম…’

    আমরা এবারে একটু নড়েচড়ে বসলাম।

    ‘দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন নাইন্টিন্থ ডাইনেস্টির ফারাও। এই ধরো যিশুর জন্মের সাড়ে বারোশো বছর আগের কথা। মিশরের দক্ষিণদিকে ছিল হিটাইট প্রজাতির রাজত্ব। রামেসিসের মনে হল এই হিটাইটদের জব্দ করতেই হবে। দেশের ফারাওকে মানবে না এ কেমন কথা! যেমনি ভাবা তেমনি কাজ, রামেসিস ২০০০০ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের জন্য বেরোলেন। সমান চার ভাগে ভাগ করা হল সেই সৈন্যদলকে। দলগুলোর নাম দেওয়া হল দেবতাদের নামে। আমেন, রে, তাহ আর সেথ। ফারাও ওদের নিয়ে একমাস ধরে পাহাড়, মরুভূমি ডিঙিয়ে এসে পৌঁছোলেন কাদেশ নামের এক শহরের কাছে ওরন্তেস নামে নদীর তীরে। সেখানে ওঁর সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে গেল দুই হিটাইট গুপ্তচর। ওদেরকে জেরা করে রামেসিস জানতে পারলেন যে হিটাইটদের রাজা মুওয়াতালিস ফারাওয়ের ভয়ে আরও এক-শো মাইল দূরে পালিয়েছে।

    ‘রামেসিস ভাবলেন, বাহ, তাহলে তো হাতে সময় পাওয়া গেল। এই ভেবে শুধুমাত্র আমেন দলের সৈন্যদের নিয়ে ওরন্তেস নদী পার করে ঘাঁটি গাড়লেন কাদেশ শহরের প্রান্তে। রে দলের সৈন্যরাও নদী টপকাল, আর আমেন দলের থেকে একটু দূরে থেকে তাঁবু ফেলল। বাকি দুটো দল রয়ে গেল নদীর অন্য পাড়েই। রামেসিসের প্ল্যান ছিল শান্তিতে রাতটা কাটিয়ে সকাল বেলায় কাদেশ আক্রমণ করা যাবে ’খন। মুওয়াতালিস তো কাপুরুষের মতো পালিয়েছে, শহর দখল করতে বেশি বেগ পেতে হবে না।

    ‘রামেসিস যেটা বুঝতে পারেননি সেটা হল সেই হিটাইট গুপ্তচরদের মুওয়াতালিস নিজেই পাঠিয়েছিল।’

    ‘বলেন কী? নিজেই নিজের লোককে ফারাওয়ের কাছে পাঠাল?’

    ‘হ্যাঁ, মিথ্যেটাকে সত্যি করে বলার জন্য।’

    ‘মিথ্যে!’

    ‘হুম, মুওয়াতালিস মোটেই পালিয়ে যাননি। নিজের বিশাল সৈন্যদল নিয়ে লুকিয়েছিলেন কাদেশ শহরের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ের আড়ালে। রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করলেন রামেসিসের তাঁরবুতে।

    ‘হঠাৎ হওয়া আক্রমণের চোটে রামেসিসের দুটো দলই ভয় পেয়ে গেল। অর্ধেক মারা পড়ল হিটাইট সেনাদের হাতে, বাকি অর্ধেক নিজের প্রাণের মায়ায় ফারাওকে একা ফেলে রেখে পালাল। যুদ্ধক্ষেত্রে তখন রামেসিসের পাশে শুধু ওর পতাকাবাহক সেনা। ওর রথকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে হিটাইট সৈন্যরা। মৃত্যু আসন্ন।

    ‘এমন সময় রামেসিস স্মরণ করলেন কাদেশ থেকে কয়েকশো মাইল দূরে থেবসের মন্দিরে থাকা দেবতা আমেন-রে কে। আমেন-রে রামেসিসের ডাকে সন্তুষ্ট হয়ে ওকে আশীর্বাদ করেন। ফারাও হয়ে ওঠেন দেবতার মতো শক্তিশালী। একাই প্রবল বিক্রমে হিটাইটদের মারতে থাকেন। রাজার সেই সাহস দেখে চার দলের সৈন্যরাও ফিরে এল। হিটাইটদের তারপরে খুব সহজেই হারিয়ে দিলেন রামেসিস।

    image133.jpg

    যুদ্ধবাজ ফারাও দ্বিতীয় রােমসিস

    ‘এই যুদ্ধজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই মিশরের দক্ষিণে আবু সিম্বেলের মন্দির বানান রামেসিস। আকারে আর সৌন্দর্যে সে-মন্দির ছিল অতুলনীয়। একটা নয়। দুটো মন্দির বানান রামেসিস।

    ‘আসল মন্দিরটা ছিল উচ্চতায় তিরিশ মিটার, লম্বায় পঁয়ত্রিশ মিটার। মন্দিরের ঢোকার দরজার দু-পাশে দুটো করে মোট চারটে বিশাল মূর্তি ছিল রামেসিসের। প্রায় কুড়ি মিটার লম্বা! বছর কয়েক আগে দেশপ্রিয় পার্কে যে দুর্গা বানানো হয়েছিল প্রায় তেমন বড়ো!’

    image134.jpg

    শিল্পীর কল্পনায় অতীতের আবু সিম্বেলের দুটি মন্দির

    ‘বলেন কী! এমন বড়ো মূর্তি ওরা বানাল কী করে!’

    image135.jpg

    বর্তমানে আবু সিম্বেলের মন্দির

    ‘রামেসিস গোটা দেশ জুড়ে নিজের প্রায় পঞ্চাশটা মূর্তি বানিয়েছিলেন। বেলজোনি যে মূর্তির টুকরোটা লাক্সর থেকে লন্ডনে নিয়ে যায় সেটাও তার মধ্যে একটা, তাই এত বড়ো একটা কিছু বানানো মিশরীয় ভাস্করদের কাছে খুব একটা শক্ত কিছু ছিল না।

    image136.jpg

    একটাই পাহাড়ের গায়ে তৈরি হয়েছিল আবু সিম্বেলের মন্দিরটা। সেই পাহাড়ের পাথর খোদাই করেই রামেসিসের মূর্তিগুলো বানানো হয়। মূর্তির পায়ের কাছে ছিল ওঁর স্ত্রী আর সন্তানদের ছোটো ছোটো মূর্তি। মন্দিরের ভেতরের প্রথম ঘরটা লম্বা আয়তাকার। আটটা পিলার সেখানে। প্রতিটা পিলারেই আবার রামেসিসের মূর্তি খোদাই করা। এখানে ফারাও ওসাইরিসের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ঘরের দেওয়াল জুড়ে সাহসী আর শক্তিশালী ফারাওয়ের যুদ্ধজয়ের ছবি খোদাই করা।

    image137.jpg

    মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা কাদেশের যুদ্ধের ছবি

    ‘মন্দিরের একদম ভেতরে যে ছোটো গর্ভগৃহ ছিল সেখানে পাশাপাশি বসে থাকতেন দেবতা রা, আমুন, তাহ আর রামেসিস নিজে।

    image138.jpg

    ‘মিশরীয়দের অ্যাস্ট্রোনমি আর আর্কিটেকচারের জ্ঞান যে কত গভীর ছিল সেটা এই গর্ভগৃহ থেকেই বোঝা যায়। প্রতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আর ২২ অক্টোবরেই মন্দিরের দরজা থেকে প্রায় দু-শো মিটার গভীরে এই ছোট্ট ঘরটায় সূর্যের আলো এসে ঢুকত। অদ্ভুতভাবে সেই আলো রা, আমুন আর রামেসিসকে আলোকিত করলেও দেবতা তাহ অন্ধকারেই থেকে যেতেন। কারণ তিনি মাটির নীচের জগতের ভগবান।’

    ‘আরেকটা তাহলে কী জন্য বানানো হয়েছিল?’

    ‘অন্য মন্দিরটা আকারে একটু ছোটো ছিল, বুঝলে। এটা রামেসিস বানিয়েছিলেন ওঁর স্ত্রী নেফারতারির জন্য। এই মন্দিরের দেওয়ালেও প্রায় দশ মিটার লম্বা ছ-টা স্ট্যাচু, চারটে রামেসিসের আর দুটো নেফারতারির। সমান আকারের। ফারাও নিজের স্ত্রীকে নিজের সমান সম্মান দিয়েছিলেন। মন্দিরের ভেতরে দেবী হাথোরের পুজো হত। সেই দেবীরই মূর্তি খোদাই করা আছে পিলারের গায়ে।’

    ‘এই মন্দিরই তাহলে আবিষ্কার করেন জোহান বুর্কার্ড?’

    image139.jpg

    দ্বিতীয় রােমসিস ও রািন নেফারতারির মন্দির

    ‘হ্যাঁ, এটাই সেটা। রামেসিসের পরের ফারাওদের কাছে এই মন্দির অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে। হাজার বছর ধরে একটু একটু করে মরুভূমির বালির নীচে হারিয়ে যায়। ১৮১৩ সালে বুৰ্কাৰ্ড আবার খোঁজ পায় এর। পেট্রার নাম শুনেছ? হারিয়ে যাওয়া শহর?’

    ‘হ্যাঁ, শুনেছি তো! ‘‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড’’ সিনেমাটায় দেখিয়েছিল না!’

    পিজি বলল।

    ‘হ্যাঁ, একদম ঠিক, সেই পেট্রা শহর আবিষ্কার করেন এই জোহান বুর্কার্ডই। এই মানুষটার জীবন ইন্ডিয়ানা জোন্সের থেকে কিছু কম নয়। চার বছর ধরে সিরিয়াতে থেকে আরবিতে লিখতে পড়তে শেখেন। তারপরে শেখ ইব্রাহিম আবদুল্লাহ ছদ্মনাম নিয়ে এই জার্মান ভদ্রলোক ঘুরে বেড়িয়েছেন জর্ডান, ইজিপ্টে। পেট্রা আবিষ্কার করেছেন। ইনিই আবার প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি মক্কা মদিনাতে পা রাখেন। কিন্তু মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে ডিসেন্ট্রিতে মারা যান বুৰ্কার্ড। বেঁচে থাকলে আরও কত শত কীর্তি যে করতেন কে জানে। এই দেখো কথায় কথায় আবার বেলাইন হয়ে যাচ্ছি। আবু সিম্বেলে ফিরে আসি।

    image140.jpg

    জোহান বুর্কার্ড

    ‘১৮১৩ সালের মার্চ মাসে বুৰ্কার্ড ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মিশরের দক্ষিণে। সেই সময় এক বছর দশেকের ছোকরার কাছে একটা অদ্ভুত গল্প শোনেন। নীল নদের তীরে নাকি সে একটা মানুষের বিশাল বড়ো মাথা দেখতে পেয়েছে। পাথরের তৈরি। সেই ছেলেকে গাইড বানিয়েই ওই জায়গাতে গিয়ে পৌঁছোন বুৰ্কার্ড। দেখেন সত্যি মরুভূমির বালির মধ্যে জেগে আছে সেই পাথরের মূর্তি। মাথাটুকুই যা বাইরে। তখনও কিন্তু বুৰ্কার্ড বুঝতে পারেননি এর নীচে কী আছে। তবে বড়ো মন্দিরের পাশে ছোটো নেফারতারির মন্দিরটা বালি খুঁড়ে বের করতে সক্ষম হন বুৰ্কার্ড। তার থেকেই ওঁর ধারণা হয় যে ওই মূর্তির চারপাশের বালি সরাতে পারলেই নিশ্চয় আরেকটা মন্দির বেরোবে। তবে সেই কাজ করার জন্য যে পরিমাণ লোকবল লাগবে তা বুৰ্কার্ডের ছিল না। শেষমেষ বালির ভিতর থেকে রামেসিসের মন্দিরকে কে বের করেন জানো? প্যাটাগোনিয়ান স্যামসন।’

    image141.jpg

    শিল্পীর কল্পনায় মরুভূিমর বালির মধ্যে জেগে আছে অতীতের আবু সিম্বেলের দুটি মন্দির

    ‘জিওভান্নি বেলজোনি! স্কুপে যাঁর কথা বলছিলেন!’

    ‘হ্যাঁ। বেলজোনি বুৰ্কার্ডের কাছে এই মন্দিরের কথা যে শুনেছিলেন সেটা তো তখনই বললাম। লাক্সর নীল নদের তীরে রামেসিসের মূর্তি যখন আলেকজান্দ্রিয়াতে ট্রান্সপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে তখন বেলজোনি আর সময় নষ্ট না করে চলে আসেন নুবিয়াতে। ঠিক যেখানে বুর্কার্ড ওঁর খুঁজে পাওয়া মন্দিরের কথা বলেছিলেন। তিনবারের চেষ্টার পরে ১৮১৭ সালের অগাস্ট মাসে বেলজোনি মন্দিরের দরজাটা খুঁজে পেলেন! বালির পাহাড় আর দরজার মাঝে যেটুকু ফাঁক ছিল তার মধ্যে দিয়েই বুকে ভর দিয়ে মন্দিরের ভেতরে ঢুকে পড়েন বেলজোনি। ঢুকেই অবাক হয়ে যান। ওঁর সামনে তখন দাঁড়িয়ে আছে আটখানা দৈত্যাকার পিলার। প্রত্যেকটাতে খোদাই করা আছে ফারাও রামেসিসের মূর্তি। দেওয়াল জুড়ে রামেসিসের কীর্তি। গর্ভগৃহে বসে থাকা চারজন দেবতা। বেলজোনি বুঝতে পেরেছিলেন এমন কোনো মন্দির এর আগে কেউ কখনো খুঁজে পায়নি। গোটা মন্দিরটার শরীর থেকে বালি সরাতে লাগে আরও এক বছর।’

    ‘এরকম একটা মন্দির থেকে বেলজোনি কোনো ঐশ্বর্য খুঁজে পাননি!’

    image142.jpg

    শিল্পীর কল্পনায় অতীতের আবু সিম্বেল মন্দিরের দৈত্যাকার রামেসিসের মূর্তি

    ‘পেয়েছিলেন তো! তবে সেগুলো কী, সেটা আজও কেউ জানে না। সেইসময়ে তো আর আর্কিয়োলজিকাল ডিসকভারির ওপরে কোনো কড়া নিয়মকানুন ছিল না। বেলজোনি আবু সিম্বেলের মন্দিরে যা কিছু পেয়েছিলেন সেসব নিজের করায়ত্ত করেন। তার মধ্যে অনেক কিছু বেচে দেন ইউরোপের ধনকুবেরদের। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। সেই ঐশ্বর্যের খুব সামান্যকেই পরে উদ্ধার করা গেছে। সেগুলো ইংল্যান্ডের কয়েকটা মিউজিয়ামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখন। তবে আবু সিম্বেলের মন্দিরের সবচেয়ে বড়ো ঐশ্বর্য হল মন্দিরটা নিজেই। একটা আর্কিটেকচারাল মার্ভেল বলতে পারো। ভাবতে পারছ, অত হাজার বছর আগেকার একটা মন্দির; যার গায়ের সবকটা কারুকার্য নিখুঁত; যার গর্ভগৃহে সূর্যের আলো বছরের দু-দিন একদম নিয়ম মেনে এসে ঢুকত; যে মন্দির এমন এক সম্রাটের বানানো যিনি তাঁরর স্ত্রীকে সমান মর্যাদা দিয়েছিলেন। সেই সময়ের মিশরে যা প্রায় দুর্লভ।’

    পিজি এতক্ষণ ধরে গল্প শুনতে শুনতেই মোবাইলে আবার খুটখাট করতে লেগেছিল। এইটাই ওকে নিয়ে মুশকিল। নিজের জ্ঞান সীমিত, কিন্তু সেটা ঢাকবার জন্য বার বার গুগলকে হাতিয়ার করে। ও এবারে ভবেশদাকে বলল,

    ‘ভবেশদা, আবু সিম্বেলের মন্দির কিন্তু এখন আর সেই আগের জায়গাতে নেই। অনেকটা সরে এসেছে।’

    ‘সরে আসেনি। আনানো হয়েছিল। প্রায় দু-শো মিটার।’

    ‘বলেন কী! দু-দুটো মন্দিরকে সরিয়ে নিয়ে আসা হল! এটা সম্ভব নাকি!’

    ‘বিজ্ঞানের কাছে তো কিছুই অসম্ভব নয়, স্পন্দন ভাই। সরিয়ে না আনলে আবু সিম্বেলের মন্দির আজকে জলের তলায় থাকত।

    ১৯৬০ সালে আসওয়ান শহরের কাছে নীল নদের ওপরে একটা বিশাল বড়ো বাঁধ তৈরি করার কাজ শুরু হয়। এই বাঁধ তৈরির সময়েই নীল নদের উদ্বৃত্ত জল ধরে রাখার জন্য একটা লেক বানানো হয়। ইজিপ্টের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের নামে এর নাম দেওয়া হয় নাসের লেক। এটা হল মানুষের তৈরি পৃথিবীর অন্যতম বড়ো একটা হ্রদ। মুশকিল হল এই যে, এই হ্রদ বানাবার পরে দেখা গেল যে আসওয়ানের বাঁধ যখন পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে তখন এই হ্রদের জলের লেভেল অনেক বেড়ে যাবে। সেই জলে ডুবে যাবে আবু সিম্বেলের মন্দির।

    ‘এই সময়ে এগিয়ে আসে ইউনেস্কো। এমন একটা প্রাচীন স্থাপত্য হারিয়ে যাবে এটা তো হয় না। যেভাবেই হোক এটাকে বাঁচাতেই হবে। অন্যদিকে আসওয়ানের বাঁধটাও তৈরি হওয়াটা খুব জরুরি। তাই একটাই উপায় ছিল হাতে। মন্দির দুটোকে সরিয়ে আনা।

    image143.jpg

    নাসের লেকের ধারে সরিয়ে আনা এখনকার আবু সিম্বেলের মন্দির

    ‘এই কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের। ইজিপশিয়ান গভৰ্নমেন্টের ক্ষমতা ছিল না তার জোগান দেওয়ার। কিন্তু ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেইসময় এগিয়ে এসেছিল ১১৩ টা দেশ। ১৯৬৪ সালে শুরু হল কাজ। দুটো মন্দিরকেই কয়েক হাজার টুকরোতে ভাগ করা হল। প্রতিটা টুকরোর গায়েই একটা নম্বর দেওয়া থাকল। তারপরে নাসের লেক থেকে পঁয়ষট্টি মিটার ওপরে আর ২০০ মিটার দূরে কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করে সেটা ঢাকা দেওয়া হল পাথর দিয়ে। তার গায়েই এবারে একে একে টুকরোগুলো জোড়া লাগানো হল। নম্বর মিলিয়ে মিলিয়ে।’

    image144.jpg

    আবু সিম্বেলের মন্দিরের টুকরো জোড়া হচ্ছে (১৯৬৪-৬৮)

    ‘এ তো একদম জিগ-স পাজলের মতো কাজ।’

    ‘ঠিক। এই পৃথিবীতে এত বড়ো জিগ-স পাজল সলভ আর কেউ করেনি। আবু সিম্বেলের মন্দির সরানো শেষ হয় ১৯৬৮তে। এখন প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসেন এই মন্দিরকে দেখতে।’

    ‘কিন্তু ভবেশদা, এই মন্দির সরিয়ে একটা মুশকিল তো নিশ্চয় হয়েছিল। মন্দিরের জায়গা বদলে গেল। তাহলে তো আর আগের মতো বছরে দু-বার সূর্যের আলো এসে মন্দিরের ভেতরে ঢুকবে না।’

    ভবেশদা এবারে মুচকি হেসে বললেন,

    ‘ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিজ্ঞান এত বড়ো একটা কাজ করল আর এই ট্র্যাডিশনটা বাঁচিয়ে রাখবে না এটা হয় নাকি! মন্দিরকে এমনভাবেই বসানো হয়েছিল যে আজও একইভাবে মন্দিরের ভেতরে সূর্যের সেই আলো এসে পৌঁছোয়। এখনও প্রতি ২২ ফেব্রুয়ারি আর ২২ অক্টোবর সূর্যের প্রথম আলোটা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে। আলোকিত হয়ে ওঠেন তিন দেবতা। অন্ধকারে রয়ে যান ‘‘তাহ’’।’

    সেদিন রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম এখন ইরাকে, সিরিয়াতে একের পর এক মন্দিরকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদীরা। কত না জানা গল্প মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। যে মানুষ ষাট বছর আগে একটা ইতিহাসকে শেষ হয়ে যাওয়ার আগে বাঁচিয়েছিল, সেই মানুষই আজকে তাকে কবর দিতে ব্যস্ত।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleহারানো সূর্যের খোঁজে – অনির্বাণ ঘোষ
    Next Article ভারতে ইসলাম ভারতীয় মুসলিম – অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }