Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হায়রোগ্লিফের দেশে – অনির্বাণ ঘোষ

    লেখক এক পাতা গল্প244 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৪. আলেকজান্দ্রিয়া

    ‘দাদা, এখানে একটু আস্তে আস্তে কথা বলুন, আর এত ভিড় দাঁড়িয়ে গেলে বাকিরা ঢুকবে কী করে?’

    ‘আরে ভাই, আপনি একটু চুপ করুন না। দেখছেন না কী দারুণ সব গল্প বলছেন ইনি? এসব থোড়াই লেখা আছে আপনাদের ডিসপ্লে বোর্ডে?’

    ‘বেশ, ভালো। তাহলে আপনারা ওঁকে নিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে গল্প শুনুন।’

    গতকাল আমরা তিনজনে মিলে ভবেশদাকে নিয়ে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। একপ্রকার সেতুর গোঁয়ারতুমিতেই যাওয়া। কিন্তু গিয়ে বুঝলাম খুব একটা ভুল কিছু করিনি। সেই ছোট্টবেলায় বাবা মায়ের হাত ধরে একবার এসেছিলাম, আর এইবারে এলাম। এই বাড়িটা আমাদের শহরের একটা গর্ব, সত্যি। আমি আগে দিল্লির মিউজিয়ামও দেখে এসেছি, কিন্তু সেটা এর ধারেকাছেও আসে না। সম্রাট অশোকের পিলার, প্যালিওক্সডনের দাঁত, তিমির স্কেলিটন, আর্মাডিলোর খোলস, সিয়ামিজ টুইন, পাথরের ওপরে খোদাই করা বুদ্ধের বিশাল পায়ের ছাপ দেখে ঢুকলাম মমির ঘরে। এই মমির গল্প ভবেশদা আমাদেরকে আগেই বলেছিলেন। কিন্তু সেতুর সেই গল্প জানা না থাকায় ভবেশদা আবার শুরু করল। মিনিট তিনেকের মধ্যেই দেখলাম ওর চারপাশে একটা বেশ ভিড় জমে গেছে। সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে মমি বানানোর প্রক্রিয়ার কথা শুনছে। এমন সময়েই বাধ সাধল সেই ঘরের গার্ড। বাইরে নাকি লম্বা লাইন পড়ে গেছে। কেউ আর ঘরে ঢুকতে পারছে না। অগত্যা জনা তিরিশ মানুষের ভিড়টাকে নিয়ে ভবেশদাকে মমি রুমের বাইরে বেরোতেই হল।

    মমি রুমের বাইরের করিডোরটাতেই ভবেশদা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গল্প বলে যেতে লাগলেন। ভিড় আরও গেল বেড়ে। শেষে ‘চলুন ভবেশদা, আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে’ এই বলে পিজি ওঁর হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে এল।

    ‘কীসের লেট বলো তো? আর কোথাও যাবে নাকি আজকে?’

    ‘না, আর কোথায় আবার যাব? কিন্তু আমি না ডাকলে তো আজকে মিউজিয়াম বন্ধ না হওয়া অবদি আপনি বকবক করেই যেতেন ওদের সঙ্গে। এদিকে আমার খুব খিদেও পেয়ে গেছে।’

    ‘চলো, তাহলে বেরিয়ে পড়ি। সবই তো দেখা হয়ে গেল।’

    পিজি এবারে বিজ্ঞের মতো গম্ভীরভাবে বলল,

    ‘না সব তো হয়নি, হ্যান্ডিক্রাফটের ঘরটা আমার একটু ভালো করে দেখার ইচ্ছা আছে।’

    আমি বললাম, ‘তুই কী বুঝিস হ্যান্ডিক্রাফটের?’

    ‘অনেক কিছু বুঝি, জানিস, স্কুলে আমি অরিগামিতে ফার্স্ট হয়েছিলাম।’

    ‘হ্যাঁ বুঝলাম, কাগজের নৌকো, ফুল বানাতে পারলেই হ্যান্ডিক্রাফটে দিগ্্গজ হওয়া যায়। এত বুদ্ধি রাখিস কোথায় তুই বল তো?’

    পিজি এবারে রেগে-মেগে আমাকে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেতু থামাল ওকে।

    ‘তোরা থামবি এবারে? কথায় কথায় বাচ্চাদের মতো লড়িস দু-জনে। গ্রো আপ গাইজ! পিজি, তুই অন্য আরেকদিন এসে ওইসব জিনিস দেখে যাস। চলুন ভবেশদা, লাঞ্চটা করে নিই। আমি বাড়ি থেকে চিকেন স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছি। মা এটা হেব্বি বানায়!’

    image26.jpg

    মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে উলটোদিকের ময়দানে একটা গাছের নীচে বসলাম চারজনে। সবাইকে স্যান্ডউইচ দিয়ে নিজেরটাতে এক কামড় বসিয়ে সেতু এবারে বলল,

    ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কারা তৈরি করেছিল বল তো?’

    ‘জানি তো, এশিয়াটিক সোসাইটি, ১৮১৪তে। মিউজিয়ামে ঢোকার মুখে একটা পাথরের স্ল্যাবে লেখা আছে দেখলি না?’

    ‘দেখেছি, কিন্তু এটা তৈরি হওয়ার পিছনে কিন্তু ইংরেজদের হাত ছিল না। ছিল একজন ড্যানিশ লোক।’

    ‘ড্যানিশ?’

    ‘হ্যাঁ, নাথানিয়েল ওয়ালিচ ছিলেন একজন ড্যানিশ বটানিস্ট। তিনিই তাঁরর ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে একটা সংগ্রহশালা করার কথা বলেন এশিয়াটিক সোসাইটিকে। সেটাই আজকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম।’

    ভবেশদা চুপ করে শুনছিলেন সব, এবারে বললেন,

    ‘আচ্ছা, মিউজিয়াম নামটা কোথা থেকে এল কেউ বলতে পারবে?’

    এটা তো কারোরই জানা ছিল না, তিনজনেই চুপ করে আছি দেখে ভবেশদা এবারে নিজেই বললেন,

    ‘ইজিপ্ট দেশটা না থাকলে আজকে আমরা যেখানে বসে আছি তার নাম মিউজিয়াম না হয়ে অন্য কিছু হতে পারত কিন্তু।’

    ‘এখানেও ইজিপ্ট?’

    ‘হ্যাঁ ভাই, আরও ভালো করে বলতে গেলে দেশের উত্তরে সাগরের পাড়ের একটা শহর, যেখানে ছিল প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটা, আর একটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো লাইব্রেরি।’

    সেতু এবারে হাত তুলে বলল,

    ‘আমি জানি, আমি জানি! আলেকজান্দ্রিয়ার কথা বলছেন! সেই আশ্চর্যটা ছিল একটা লাইটহাউস। আর আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির কথাও শুনেছি তো। আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল।’

    ‘একদম ঠিক বলেছ। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিকে কী নামে ডাকা হত জানো?’

    ‘সেটা তো জানি না।’

    ভবেশদা এবারে সেই ট্রেডমার্ক হাসিটা হেসে বললেন,

    ‘মিউজিয়াম!’

    ‘লাইব্রেরির নাম মিউজিয়াম?’

    image212.jpg

    আলেকজান্ডারের দুষ্প্রাপ্য ছবি

    ‘হ্যাঁ, তাই। চলো, তাহলে আলেকজান্দ্রিয়ার গল্পটা গোড়া থেকেই বলা যাক। তাহলে তোমাদের বুঝতে সুবিধা হবে।

    ‘৩৩২ বিসি-তে পারসিয়ানদের হারিয়ে তার বিশাল বড়ো গ্রিক সেনাবাহিনী নিয়ে মিশরে ঢুকে পড়ল এক চব্বিশ বছরের যুবক। দেশের সাধারণ মানুষ পারসিয়ানদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়ে কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করল সেই যুবকের কাছে। মেমফিস শহরে আমুনের মন্দিরের পুরোহিত তাকে ঘোষণা করল ভগবানের সন্তান হিসেবে। ঠিক যেমনভাবে তিন হাজার বছর ধরে বাকি ফারাওদের মানুষ চিনে এসেছে। লাক্সর আর কার্নাকের মন্দিরে খোদাই করা হল তার নাম, তার ছবি। আলেকজান্ডার হয়ে গেলেন মিশরের নতুন রাজা।

    ‘কিন্তু মেমফিসে বসে থাকলেন না আলেকজান্ডার। বেরিয়ে পড়লেন উত্তরের দিকে। হোমারের লেখা ওডিসি-তে পড়েছিলেন এমন একটা গ্রামের কথা যা নীল সমুদ্রের তীরে, যার কাছেই জলের মধ্যে জেগে উঠেছে একটা দ্বীপ। নাম ফারোস। সেই গ্রাম আর সেই দ্বীপ সত্যি খুঁজে পেলেন আলেকজান্ডার। এখান থেকে বাকি উপনিবেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাটা খুব সহজ হয়ে যাবে, এই ভেবে তিনি ঠিক করলেন এখানেই একটা নতুন শহর গড়ে তোলা হোক। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, এক বছরের মধ্যে আর্কিটেক্ট ডেইনোক্রাটিস বানিয়ে ফেলল সেই শহর, তার নাম দেওয়া হল আলেকজান্দ্রিয়া।

    ‘আলেকজান্দ্রিয়া গড়ে ওঠার এক বছরের মধ্যেই ৩৩১ বিসি-তে আলেকজান্ডার ইজিপ্ট ত্যাগ করে এগিয়ে যান মেসোপটেমিয়া জয় করতে। আট বছর পরে সম্রাট আবার ফিরে আসেন নিজের বানানো শহরে। তবে সেবারে কফিন বন্দি হয়ে।’

    ‘কিন্তু লাইব্রেরির কথাটা…’

    ‘হ্যাঁ, এবারে আসছি সেই কথায়। আলেকজান্ডার মারা যাওয়ার পরে বিশাল সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায় ওঁর জেনারেলদের মধ্যে। তাঁরদের মধ্যেই একজন ছিলেন প্রথম টলেমি সোতার, যাঁর হাত ধরেই মিশরে শুরু হয় টলেমিদের যুগ। এই প্রথম টলেমির রাজসভাতে ছিলেন একজন দার্শনিক, নাম ছিল ডেমেট্রিয়াস। ডেমেট্রিয়াসই ফারাওকে বলেন আলেকজান্দ্রিয়াতে একটা লাইব্রেরি বানাবার কথা, যেখানে পৃথিবীর সব বইয়ের অন্তত একটা করে কপি থাকবে। সোতার সঙ্গেসঙ্গে রাজিও হয়ে যান।

    ‘তারপরে যে বিশাল লাইব্রেরি তৈরি হল ডেমেট্রিয়াস তার নাম রাখলেন ‘‘টেম্পল অফ মিউজেস’’। এরই গ্রিক নাম মিউজিয়াম।’

    ‘মিউজেস? এরা কারা?’

    ‘দেবতা জিউস আর নিমোসাইনের নয় কন্যা। ক্যালিওপে, সিলো, এরাটো, ইউটার্পে, মেলপোমেনে, পলিহিমনিয়া, তার্পসিশোরে, থালিয়া আর ইউরানিয়া। এঁরা ছিলেন সাহিত্য, কলা আর বিজ্ঞানের দেবী। তাই স্বাভাবিকভাবেই ডেমেট্রিয়াস আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিকে এঁদের নামে উৎসর্গ করেন।

    image213.jpg

    নয় মিউজের সঙ্গে দেবতা অ্যাপোলো

    ‘সোতারের ছেলে ফারাও ফিলাদেলফিয়াসের সময় এই লাইব্রেরির আকার আরও বাড়ে। এক-শো জন স্কলার কাজ করত সেই লাইব্রেরিতে। তাদের কাজ ছিল পৃথিবীর চারিদিকের পাণ্ডুলিপি জোগাড় করা, তারপরে সেগুলোকে গ্রিক ভাষায় কপি করে জমানো। ইজিপশিয়ান তো বটেই, হিব্রু, আসিরিয়ান,পারসিয়ান এমনকী প্রচুর বুদ্ধিস্ট ম্যানাসক্রিপ্টও ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে। সব মিলিয়ে নাকি প্রায় পাঁচ লাখ পাণ্ডুলিপি ছিল এখানে!’

    ‘কিন্তু এত বড়ো একটা লাইব্রেরিতে আগুন লাগল কী করে?’

    image214.jpg

    শিল্পীর কল্পনায় অতীতের আলেকজান্দ্রিয়া

    image215.jpg

    আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি

    image216.jpg

    আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি জ্বলছে, সামনে লাইট হাউস

    ‘আগুনই কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিকে শেষ করেনি, সেতু। তার সঙ্গে ছিল ধর্মান্ধতা।’

    ‘৪৮ বিসি-র কথা, রোমে তখন সিভিল ওয়ার চলছে জুলিয়াস সিজার আর পম্পেই নামের এক মিলিটারি লিডারের মধ্যে। ফারসালাসের যুদ্ধে সিজারের কাছে হেরে পম্পেই আশ্রয় নেন ইজিপ্টে। সিজার তখন মিশর আক্রমণ করে বসেন। আলেকজান্দ্রিয়ার সমুদ্রতীরে দাঁড় করিয়ে রাখা ইজিপশিয়ান জাহাজগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় সিজারের সৈন্যরা। কিন্তু সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে শহরের মধ্যেও। সেই আগুনেই আংশিকভাবে পুড়ে যায় আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি।’

    ‘আর বাকিটা?’

    ‘এই ঘটনার প্রায় ৭০০ বছর পরে ৬৪০ সালে আরবের হাতে চলে আসে মিশর। সেইসময়ে ওদের এক ধর্মীয় শাসক ছিল ক্যালিফ ওমর। ওমর এই লাইব্রেরির খবর পায়। তার মনে হয় এই লাইব্রেরিতে যা জ্ঞান আছে তার সব হয় কোরানের বিপক্ষে, নয়তো অবাস্তব। ওর নির্দেশেই লাইব্রেরি খালি করে সব পাণ্ডুলিপিগুলোকে নিয়ে এসে পাঠানো হয় শহরের ৪,০০০ স্নানাগারে।’

    ‘অ্যাঁ, সেখানে ম্যানাসক্রিপ্টগুলো কী করবে?’

    ‘শুনলে খুব খারাপ লাগবে, পাণ্ডুলিপিগুলো পুড়িয়ে সেইসব বাথ হাউসের জল গরম করা হয়, ছ-মাস ধরে পুড়তে থাকে প্রাচীন পৃথিবীর এই ঐশ্বর্য।’

    পিজি এবারে বলল,

    ‘ধর্ম যে মানুষকে অন্ধ করে দেয় তার এর চেয়ে ভালো উদাহরণ মনে হয় আর হয় না। আমাদের দেশেরও কত প্রাচীন পুথি এইভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ভবেশদা আপনি তো সেই লাইটহাউসটার ব্যাপারে কিছু বললেন না!’

    ‘আজকেই শুনবে? আমাকে যে উঠতে হবে এবারে। একজন দেখা করতে আসবে বাড়িতে।’

    পিজি চট করে নিজের কবজির দিকে তাকিয়ে বলল,

    ‘সবে তো চারটে বাজে। আপনি বলুন লাইটহাউসের গল্পটা। আপনার আজকে লেট হওয়ার খেসারত হিসেবে আমি সবাইকে অনাদির মোগলাই খাইয়ে দেব না হয়।’

    ‘বাবা, একেবারে মোগলাই! তাহলে তো একঘণ্টা কেন, ঘণ্টা পাঁচেক লেট হলেও কিছু এসে যাবে না।’

    এই বলে ভবেশদা উঠে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে খুব নীচু স্বরে ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলে এলেন। আমাদের সামনে বললে কী হত কে জানে। কথা শেষ হওয়ার পরে আবার ময়দানের ঘাসের ওপরে বসতে বসতে বললেন,

    ‘অল সেট, এবারে লাইটহাউসের কথা। প্রাচীন পৃথিবীর আরেকটা আশ্চর্য! যার আলো নাকি ১০০ মাইল দূর থেকেও দেখা যেত। একটু আগে ফারোজের দ্বীপের কথা বললাম না…’

    ‘হ্যাঁ, যার কথা ওডিসি-তে লেখা ছিল।’

    ‘হ্যাঁ, সেই দ্বীপেই ছিল এই লাইটহাউস। লাইব্রেরি যার সময় বানানো সেই প্রথম টলেমি সোতারই এটা বানানো শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ হয় ওঁর ছেলে ফিলাডেলফিয়াসের সময়। আলেকজান্দ্রিয়ার মুল ভূখণ্ড থেকে ফারোর দ্বীপ অবদি সমুদ্রের বুকে তৈরি করা হয়েছিল গ্র্যানাইটের তৈরি একটা লম্বা সেতু। তার ওপর দিয়ে পৌঁছোনো যেত এখানে।’

    ‘এটা বানানো নিয়ে একটা মজার গল্প আছে জানো, সোসট্রাটোস নামের এক গ্রিক আর্কিটেক্টকে দেওয়া হয় লাইটহাউস বানানোর কাজ। ততদিনে সে গ্রিসে ডেলফি আর ডেলোসের দ্বীপে অ্যাপোলোর মন্দির বানিয়ে বেশ নামডাক করেছে। সেই লোক এমন একটা দারুণ কিছু বানিয়ে তাতে নিজের নাম লিখে রাখবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু টলেমির ইগোতে লেগেছিল এটা। সম্রাটের রাজত্বে সবেতেই সম্রাটের নামই থাকবে। এই ভেবে সোসট্রাটোসের খোদাই করা পাথরের ওপরে প্লাস্টার করে তার ওপরে দ্বিতীয় টলেমির নাম লেখা হল। কিন্তু বছর পঞ্চাশের মধ্যেই সেই প্লাস্টার খসে গেল। ততদিনে টলেমিও অক্কা পেয়েছেন। পরের ফারাওরা আর এইটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তাই টলেমি না, সোসট্রাটোসের নাম বুকে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার লাইটহাউস।’

    পিজি এবারে লাফিয়ে উঠল,

    ‘আরে! এবারে মনে পড়েছে, অ্যাসাসিনস ক্রিড অরিজিন গেমটাতে এই লাইটহাউসটা ছিল…’

    চট করে একটা চিমটি কেটে সেতু পিজিকে থামাল। পিজির অসময়ে বাজে বকার অভ্যেসের কথা যে ও জানে, সেটা বুঝলাম। ভবেশদা বলে চললেন,

    ‘প্রায় ১১৭ মিটার লম্বা ছিল এই বাতিঘর। মানে চল্লিশতলা একটা বাড়ির সমান! তিনটে তলা ছিল। একতলাটা চারকোনা। দোতলা অক্টাগোনাল আর একদম ওপরের তলাটা গম্বুজের মতো। সমুদ্রের নাবিকদের আলেকজান্দ্রিয়ার বন্দর চেনানোর জন্য বানানো হলেও একসময় একটা নাম করা টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন হয়ে যায় এটা, বুঝলে। হাজার হাজার মানুষ আসত এটা দেখতে, একতলাতে আবার একটা রেস্তরাঁও ছিল টুরিস্টদের খাওয়ানোর জন্য। একটা প্যাঁচালো সিঁড়ি বেয়ে লাইটহাউসের একদম চূড়ায় উঠতে পারত তারা। মানে এখনকার আইফেল টাওয়ারের মতো ব্যবস্থা বলতে পারো।’

    image217.jpg

    আলেকজান্দ্রিয়ার লাইট হাউস

    ‘কিন্তু তাহলে আলোটা আসত কোথা থেকে?’

    ‘কেন, সেটার সোর্স ওই চূড়াতেই। কাঠের জ্বালানির আগুন থেকেই আসত আলো। সেখানে দেবতা জিউস আর সমুদ্রের দেবতা পোসাইডনের মূর্তিও নাকি ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইটহাউসের আলো নিয়ে অনেক মিথ আছে, জানো। অনেকে ভাবত ওখানে নাকি একটা বিশাল কাচের লেন্স বসানো ছিল! যেটা দিয়ে নাকি সমুদ্রে জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেওয়া যেত! আবার কেউ ভাবত লেন্সের জায়গাতে একটা চকচকে ধাতব আয়না বসানো আছে। যার গায়ে আগুনের আলো রিফ্লেক্ট করে, তাই অত দূর থেকে দেখা যায় লাইটহাউসের আলো। তবে এর কোনোটাই প্রমাণিত নয়। গোটা সৌধটাই এখন সমুদ্রের তলায়।’

    ‘যাহ, এখন তার মানে ওর কিছুই আর দেখতে পাওয়া যায় না?’

    ‘না, ওই যে বললাম গোটাটাই এখন জলের নীচে। ১৯৬২ সালে জলের তলা থেকে পোসাইডনের মূর্তিটা উদ্ধার করা গিয়েছিল। আর কিছু পাথরের টুকরো। সেগুলোকে এখন আলেকজান্দ্রিয়ার মিউজিয়ামে রাখা আছে।’

    ‘এত বড়ো একটা লাইটহাউস জলের তলায় তলিয়ে গেল?! কী করে?’

    ‘একদিনে তো যায়নি, স্পন্দন ভাই। ১৬০০ বছর ধরে নাবিকদের আলো দেখিয়েছে এই লাইটহাউস। তারপরে একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার জন্য দায়ী প্রকৃতি আর মানুষের বোকামি।

    ‘৭৯৬ সালে একটা ভূমিকম্পে আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘরের চূড়াটা ভেঙে পড়ে। পরে ৮৫০ সাল নাগাদ সুলতান ইবন তুলুন লাইটহাউসের চূড়ায় একটা মসজিদ বানান। অন্যদিকে কনস্ট্যান্টিনোপলের রাজার এটা নিয়ে একটা গাত্রদাহ ছিল। তাই একটা ফন্দি আঁটে এটাকে নষ্ট করার। মিশরে একটা গুজব ছড়িয়ে যায় যে এর নীচে নাকি প্রচুর ঐশ্বর্য পোঁতা আছে। ব্যস, লোভে পড়ে সুলতান আরম্ভ করে দিলেন বাতিঘর ভাঙতে। যতক্ষণে বুঝতে পারলেন বোকা বনেছেন ততক্ষণে আর প্রায় কিছুই বাকি নেই। একতলাটা শুধু অবশিষ্ট ছিল। পরে সেটুকুও গুঁড়িয়ে যায় ১৩০৩ সালের আরেক ভূমিকম্পে। এখন সেই জায়গায় সুলতান সালাদিনের কেল্লা দাঁড়িয়ে আছে।’

    সেতু এবারে বাচ্চাদের মতো হাততালি দিয়ে বলল,

    ‘বাহ! একদিনে দুটো গল্প শুনে ফেললাম! সত্যি ভবেশদা, আপনার জবাব নেই!’

    ‘কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার আসল মানুষটার গল্প তো বলা বাকি রয়ে গেল। সেটা না হয় অন্য কোনোদিন হবে। এখন চলো অনাদিতে।’

    পিজি বলল,

    ‘আরে, মোগলাই তো আমি খাওয়াবই। ওঠার আগে এটা তো বলে দিন কার কথা বলছেন?’

    ‘বলে দেব? চিনতে পারবে তো? যদি বলি রানি তলাপাত্র?’

    নাহ, ভবেশদার হেঁয়ালি করার অভ্যেসটা আর গেল না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleহারানো সূর্যের খোঁজে – অনির্বাণ ঘোষ
    Next Article ভারতে ইসলাম ভারতীয় মুসলিম – অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }