Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    নবারুণ ভট্টাচার্য এক পাতা গল্প97 Mins Read0

    হারবার্ট – ১

    এক

    “চরণে বন্ধন নাই, পরাণে স্পন্দন নাই,
    নির্বাণে জাগিয়া থাকি স্থির চেতনায়।”

    -বিজয়চন্দ্র মজুমদার

    .

    -ভালো করে ঘুমোক। ঘুমোলেই ঠিক হয়ে যাবে।

    ২৫মে। ১৯৯২। ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’-এর অফিস বা হারবার্টের ঘর থেকে অনেক রাত্তিরে বমি বমি ধুনকিতে গলির বাড়ি, রাস্তার বাড়ি, কোথায় বাড়িতে ফেরার সময় কথাটা বলেছিল বড়কা। সেই রাত্তিরের মালের আসরের পর বাড়ি ফেরাটা কোটন, সোমনাথ, কোকা, ডাক্তার, বড়কা এদের যেমন মনে আছে এখনও, সেটা এলোমেলো। চাঁদের গায়ে স্যাঁতলা। রাস্তার আলোগুলোর পাশে ফেনা ফেনা আলোর গুড়ো। গরমে সব হড়কে যাচ্ছে। পেটের অভেরা থেকে চপ, চানা আর হুইস্কি, রাম, বরফ জল সব গাজর্গেজিয়ে উগরে আসছে। নর্দমার ঝাঁঝরি দিয়ে ভুরভুর করে আরশোলা বেরিয়ে রাস্তার আলো তাক করে উড়ে যাচ্ছিল। কোকা দত্তদের বাড়ির গেটের গায়ে বমি করেছিল। গরম, টক, হড়হড়ে সেই বমির ঝাঁঝটা কোকা আজও ভোলেনি। ডাক্তার আর কোটন তখন পেচ্ছাপে পেচ্ছাপে কাটাকুটি খেলছিল। বস্তার মতো একটা তেলচিটে মেঘ আকাশেরচাঁদে ঠুলি পরিয়ে দিল। গয়লাবস্তির মুখে সরকারি কল। সেখানে কানিপরা পাগলীবুড়ি পা ছেতরে বসে জল ছেটাচ্ছিল। পাচার কর কক্কর ডাক শুনে গা-পচা কুকুরগুলো ঘুমের মধ্যে গুমরে গুমরে উঠছিল। হারবার্ট সরকারের চিলছাদের ওপরে স্টার টিভি ধরার বাটি অ্যান্টেনা খসা-তারা ধরবে বলে হাঁ করে তাকিয়েছিল। ডাক্তার কাটাকুটি খেলা শেষ করে গেট ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কোকাকে বলেছিল, খেলেও উটি। না খেলেও উলটি। এই জন্যে তোদের সঙ্গে মাইরি মাল খেতে ভালো লাগে না। ঝিম বিলা! নেশা বিলা! খালি বাওয়াল করবে!

    কোটন চিৎকার করল, হারবার্টদা বিলা! হারবার্টদা ভোগে।

    কোকা ভাবার চেষ্টা করছিল যে সে জন্মে আর কখনও মাল খাবে না। কিন্তু সেও বমির সুতো সুতো লালা ঝুলিয়ে দৌড় দিল কারণ পাড়া জাগিয়ে সোমনাথ চেঁচাচ্ছিল, খোড়োরবি আসছে। তোদের মাছ খাওয়াবে বলে খোঁৰ্ডোরবি আসছে।

    জলে ডুবে কবে মরে গেলেও খোড়োরবি আসতেই পারে। হারবার্টদা ডাকলে তো আসবেই।

    সেই রাত্তিরে এইরকমই ছিল বন্দোবস্ত। একে বলে সাঙঘাতিক বা খতরনাক গুগলি। সচরাচর নেশায় নেশায় এইসব রাতগুলো কেটে যায়। তৎসহ মরা বাতাসও থাকে।

    দোতলার বারান্দায় বড় ঘড়িতে রাত একটার ঘন্টা বাজল। শালপাতার প্লেটের ওপরে ভাঙা চপের টুকরো, ভাড়ের তলায় গুজরাটি দোকানের চানার ঝোল সব গোটা আটেক আরশোলা তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছিল। তাদের কাউকে ধরবে বলে রাস্তার দিকের দেওয়ালের মোটা টিকটিকি দেওয়াল থেকে নেমে, খাটের পায়া বেয়ে উঠে একবার চুপ করে বুঝে নিল হারবার্ট ঘুমোচ্ছে কি না। সে দেখল হারবার্ট নিথর। তখন টিকটিকিটা হারবার্টের বুকের ওপর দিয়ে গিয়ে তার বাঁ হাত বরাবর নেমে গিয়ে দেখল যে হাতটা রক্তের গন্ধওলা ঠাণ্ডা জলে ডুবে রয়েছে। সবুজ চোখে সে অন্ধকারের মধ্যে হাত থেকে বালতির কানা মাপ করে নিয়ে লাফ মেরে বালতির কানায় উঠেছিল। সেখান থেকে বালতির গা বেয়ে তরতরিয়ে নেমে কোন আরশোলাটাকে ধরবে এটা ঠিক করার সময় নীল একটা আশ্চর্য আলোয় সকলের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। টিকটিকি ও আরশোলারা দেখেছিল সেই আশ্চর্য দৃশ্য। বাইরের দেওয়ালে, গলির দিকে যে বন্ধ কাচের জানালা তার ধুলোময়লায় মুখ ঘষে, ডানা ঝাঁপটে, একটা পরী ঘরে ঢুকে হারবার্টের কাছে আসার চেষ্টা করছে। তার নীলচে মুখের ভাপ কাচের ওপর পড়ছে, তার চোখের জলে ধুলো ধুয়ে যাচ্ছে। হারবার্টের চোখ দুটো তখন আধখোলা। যদিও পরে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই রাতে এরকমই ছিল বন্দোবস্ত। এরপর ভোররাতে পিঁপড়েরা আসতে শুরু করে। পিঁপড়েরা ঝগড়াবিবাদ না করে ভাগাভাগি করে নিতে জানে। কালো পিঁপড়েরা খাবারের টুকরো, দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া ও খুঁচিয়ে ফেলা ডালের দানা বা গুড়ো খাবার, শুকনো খাবারের দিকে যায়। লাল ও তেঁও পিঁপড়েরা সরাসরি মৃতের নাসারন্ধ্র শ্লেষ্ম, চোখ, থুথু মারফৎ ঠোঁটের কোনা, জিভের গোড়া, দুর্বল মাড়ি ইত্যাদি পছন্দ করে। এতসব আমিষবিলাসী পোকা ও কীটের ভিড়ে সরব মুষ্টিমেয় ঝিঁঝিপোকা অবশ্যই অকিঞ্চিৎকর। কারণ সুদিনে, দুর্দিনে তারা যুগ যুগ ধরে না সভ্যতার, না অসভ্যতার জয়গান গেয়ে আসছে। কেউ শুনুক আর না-শুনুক।

    দেওয়ালে পোঁতা মরচে-ধরা লোহার গজাল। তার ভেতর দিকে ঝুলছে হারবার্টের বাঁটওলা ছাতা। ছাতাটা দেখা যায় না কারণ তার ওপর দিয়ে ড্রাকুলার জোব্বার মতো ঝুলছে হারবার্টের অলেস্টার। হারবার্টের মাথার কাছে খোদল করা তাকে রয়েছে হারবার্টের দুটি অতীব প্রয়োজনীয় বই–

    ১) শ্রীমৃণালকান্তি ঘোষ ভক্তিভূষণ প্রণীত ‘পরলোকের কথা’–সংশোধিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ। মূল্য দুই টাকা মাত্র। বইটি রয়েছে ১৭১ পাতা থেকে। তাই শুরুতেই দেখা যায় মহারাজ বাহাদুর সার যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর কে. সি. এস. আই.-এর ফটো। ছবিতে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে ১৯০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ৭৭ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন-বইটি এইভাবে শুরু “লিখিলেন,–‘মা, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়াছি, আমাকে ক্ষমা কর। আমিও অনেক যন্ত্রণা ভোগ করিয়া এখন কেশ শান্তিতে আছি।’ এইরূপ আরও অনেক কথা লেখার পর শিবচন্দ্রের স্ত্রীর আবেশ ভাঙিয়া গেল। তিনি কন্যার জন্য কাঁদিতে লাগিলেন….” ইত্যাদি।

    ২) কালীবর বেদান্তবাগীশ প্রণীত ‘পরলোক-রহস্য’।

    এই দুটি বই হারবার্ট তার দাদু বিহারীলাল সরকারের সংগ্রহ থেকে পেয়েছিল। ‘পরলোক-রহস্য’ বাদে কোনো বই-ই আস্ত সে দেখেনি। অবশ্য আর একটি আস্ত বই ছিল শ্রীগুরুপদ হালদার রচিত ‘ব্যাকরণ দর্শনের ইতিহাস’, প্রথম খণ্ড। এই বইটি স্বাভাবিক কারণেই হারবার্ট কখনও খোলেনি। তবে জরাজীর্ণ, বাঁধানো নাট্যমন্দির পত্রিকা থেকে সে ‘সার্কাসে ভূতের উপদ্রব’ পড়েছিল। এর থেকে সে আউট নলেজ সংগ্রহ করেছিল যে দুই সহোদরা অভিনেত্রী সুচিন্তা ও সুকুমারীর ডাকনাম ছিল শুচি ও ডুদি, শ্রীমতী সুশীলাসুন্দরী ‘প্রফেসর বোসের গ্র্যাণ্ড সার্কাস’–এ প্লে করিতেন এবং আরও দুই অভিনেত্রী হিরন্ময়ী ও মৃন্ময়ী ওরফে ভূতি ও ভোমা বিডন স্ট্রিটে থাকতেন। একভাবে দেখলে এদের প্রতি হারবার্টের একটি টান ছিল, ছিল এঁদের সঙ্গে একজাতীয় সখ্য যা ঠিক প্রত্যক্ষ আলাপ বা সমসাময়িকতার অপেক্ষা রাখে না। “রমণীগণের ভীতিজনক চিৎকার ও পুরুষগণের হৈচৈ শব্দে সেই ঘোরা দ্বিপ্রহর রজনীযোগে পিথাপুরের রাজবাড়ী যথার্থই কম্পান্বিত হইতে লাগিল। আবার বুঝি কি এক অভিনব ভৌতিক কাণ্ড হইল ভাবিয়া, প্রাণভয়ে গোপাল ডুরিয়া ও সহিসগণ বহির্ভাগের আস্তাবল বাটী হইতে দৌড়িয়া আসিল!” হারবার্টের-এ ঘটনা প্রায় দেখা ছিল বললে অত্যুক্তি হবে না।

    জানালার কাছে অনেকক্ষণ ধরে ডানা ঘষে কিছু হল না দেখে আকাশ ফিকে হবার ভয়ে পরী এক সময় শেষরাতের মধ্যে দোকানে ফিরে গেল। টিকটিকি ও আরশোলারা পরীর দিকে আর মন দেয়নি। হারবার্টের ঘরে আটকে পড়া একটা মাছি রাত ১২টা নাগাদ হারবার্টের বাঁ হাতের শিরা কাটার সময়ে সমুদ্রের মধ্যে অন্ধ হাঙরের মতো রক্তের গন্ধ পেয়েছিল। কিন্তু কানা বলে সে সেখানে পৌঁছতে পারেনি। ঘরে যখন একটু একটু করে আলো ঢুকছে তখন সে উড়ে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা একটি ব্লেডের ওপরে গিয়ে বসেছিল যায় গায়ে রক্ত আর চটচটে নয়, কালচে হয়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। হারবার্টের বাঁ হাতটা শিরা কাটা অবস্থায় লোহার বালতিতে বরফজলে ডোবানো ছিল। চোখ দুটো অল্প খোলা। মুখটা অবশ্য অন্য সময়ের মতো ফরসা আর চোখা চোখা ছিল না। কালি পড়ে গিয়েছিল। মুখটা একটু ফাঁক করা। ডান হাতটা বুকের ওপরে ভাজ করে রাখা। অত মদ আনিয়েছিল ছটফটানিটা কম হয় যাতে তার জন্যে।

    যারা চিঠি দিয়েছিল তারা, তারপর খবরের কাগজের ফটো-রিপোর্টার, কলেজের ছেলেমেয়ে–ওরা চলে যাবার পরে কোটন, বড়কা, কোকা, জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান, সোমনাথ, অভয়, খোড়োরবির ভাইঝাপি, গোবিন্দ-সব ছেলেরা ঢুকে দেখল হারবার্ট থরথর করে কাঁপছে। হাঁসফাস করছে, ঘামছে। জামা খুলে ফেলেছে। টেবিলফ্যানটা এমাথা ওমাথা করছিল আর হারবার্ট তার সঙ্গে সরে সরে হাওয়ার সামনে থাকার চেষ্টা করছিল। ওরা ফ্যানটাকে একমুখো করল। হারবার্টের খাটে তাকে বসিয়ে জল খাওয়াল। চা আনল স্পেশাল। আস্তে আস্তে ধাতস্থ হল হারবার্ট। চোখ থেকে ভয় যায়নি। বারবার বলছিল, সব গুগলি হয়ে গেল! সব গুগলি হয়ে গেল! ওফ … ধুকপুক করচে, ধুকপুক ধুকপুক করছে। এ কী বন্দোবস্ত রে বাবা!

    –ওস্তাদ! তুমি একটু চুপ করে বসো তো। থিতিয়ে বসো। আর একটু চা খাবে?

    –না। সব খাওয়ার শেষ খাওয়া হয়ে গেছে আজ। কেবল মারচে। কেবল মারচে! হামা দিচ্চে, তবু মারচে! পাটবন শুয়ে পড়েছে, তবু মারচে! কিল, চড়, লাতি, ঝাটা ….

    হারবার্ট ককিয়ে কেঁদে ওঠে, চুল টানতে থাকে। লাথি মেরে বালিশ ফেলে দেয়। উঠে খোদলে রাখা ছোট আয়নায় নিজেকে দেখে, কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ায়, মুখে হাসি, বলে, বাপমা মরা, খানকির ছেলে, ভূতের পাইন মেরে টাকা কামাবে না? জীবন্তে কুলোলো না, মড়া মারাতে গিয়ে হল তো। কেমন লাগচে এখন কাবলে ঠাপ খেতে? টাকরায় ঠেকচে, কেমন লাগচে, হারবার্ট, হার … বার্ট, হা…র… বার্ট।

    নিজের গালে এলোপাথাড়ি চড় মারতে থাকে আর লাফায়। ওরা হারবার্টকে টানাহ্যাঁচড়া করে বসায়। ধুতি খুলে যায়। শুধু আণ্ডারওয়্যার পরা। বসে দুলতে থাকে সামনে পেছনে। চোখ বন্ধ।

    -আর তো কতা বলব না, আর কতা বলছি না। ভুড়ভুড়িটুকুও দেখতে পাবে না। যতই পাড়ে বসে থাকো আঁশবটি নিয়ে, টেরটি দেব না। পিউ কাহা, পিউ কাঁহা!

    -একটু সামালাও গুরু নিজেকে। শুয়ে থাকো না একটু।

    ওরা জোর করে শোয়াতে যায় হারবার্টকে।

    –না ছাড়, পেটটা কেমন গুলোচ্চে। অসোয়াস্তি!

    –পায়খানা করবে?

    –হবে বোধয়। ঘুরে আসি।

    হারবার্টকে পায়খানায় বা কলে যেতে হলে রাস্তা দিয়ে ঘুরে পেছনদিকে মেথর ঢোকার দরজা দিয়ে ঢুকতে হয়–কাজের লোকদের ওখানেই ব্যবস্থা। আণ্ডারওয়্যার পরা হারবার্টকে যেতে দেখে কয়েকটা বাচ্চা “বাঁটপাখি! বাঁটপাখি!” বলে চেঁচায়। কোটন বেরিয়ে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে বলে–এক লাথ মারব পেটে, ইয়ার্কি মারা বেরিয়ে যাবে। বাচ্চাগুলো দৌড়ে পালায়।

    ওরা ঘরে হারবার্টের জন্যে অপেক্ষা করে। কথা বলে-পায়খানাটা হলে দেখবি গুরু আবার ফিট হয়ে যাবে।

    ডাক্তার যার নাম তার ওষুধের দোকান আছে। ক্লাস সেভেন অব্দি পড়লেও ডাক্তার অনেক জানে।

    –আমি ভাবছি অন্য কথা। অনেক সময় হার্ট চোক হওয়ার আগে হাগা, বমি এইসব পায়।

    –আমি দেখেচি গলায় দড়ি দিলে হেগে ফ্যালে।

    –থামতো। হচ্চে শালা হার্টচোকের কথা তার মধ্যে কোত্থেকে গলায় দড়ি নিয়ে এল।

    –ওই জন্যেই তো ওর বাবা জ্ঞানবান নাম রেখেছিল।

    –বাপ তুলবি না কোকা! পিন মেরে দেব।

    এইভাবে কথা চলছিল ওদের। বাইরে তখন রোদ্দুরে বিকেলের মায়া জড়াতে শুরু করেছে। কমজোরী সোনালী আলো। ওরা হঠাৎ দেখতে পেল সেই আলো মাথায় মেখে রূপবান হারবার্ট দাঁড়িয়ে। তার মাথা, গা ভিজে, বুকের লোম ভিজে, চুল ভিজে লেপটে আছে। আণ্ডারওয়্যারটা জল সপসপে। টপটপ করে জল ঝরছে এবং হারবার্ট হাসছে। দরজা থেকে নাচের ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে হারবার্ট দড়ি থেকে গামছা নিয়ে গা মুছতে মুছতে বলল

    দেখলাম চৌবাচ্চা উজলে জল পড়ে যাচ্চে, চানের লোভ হল।

    ০-এখন কেমন লাগচে গুরু?

    –হেভি আমেজ আসছে। মনে হচ্ছে বেড়াতে যাই।

    –গুরু, আজ মাল খাবে না?

    –খাবো না মানে? আজকে তো গ্যালাখালা হবে। মালটা যা জমবে না আজকে! ফুরফুর করবে। নসলিয়া!

    –যাক, তোমার মুডটা ঠিক হয়েছে তাহলে।

    হারবার্ট কাঁচা ধুতি পরে। পরতে পরতে কথা বলে। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে কথা বলে। হাতে কাঁচা একটা ফুলসার্ট পরে। তারপর তোরঙ্গটা খোলে। টাকা গোনে। অনেক টাকা। থুথু লাগিয়ে লাগিয়ে গোনে।

    –আমাদের আবার মুড। খানকির ছেলেদের জানবি মুডফুড নিয়ে কোনো চুদুরবুদুর নেই। খালি আছে মজা। বাবলাগাছে কাতলামাছে কী খেলা যে জমেছে কী বলব। টুনুক টুনুক ঘন্টা বাজছে। লাল নীল আলো মারচে–ডান্স পার্টিতে যেমন থাকে। ওদিকে আবার ডালে ডালে রুইমিরগেলের চকচকি, পাতায় পাতায় মৌরলা মাছের বাহার। চিকমিক চিকমিক! চিকমিক চিকমিক। বাওয়াল কেউ থামাতে পারবে না বাবা। সায়েবরা তো রাতদিন ধরে মারল। পারল? সায়েবরা হেদিয়ে গেল তো এরা এলআরে বাবা ইংরিজি ঝাড়লে যদি বাওয়াল ঠেকানো যেত তাহলে আর দেখতে হত না …

    টাকার গোছটা নিয়ে এবার ব্যাণ্ড দিয়ে জড়ায়। তারপর গোছটা ছুঁড়ে দেয় গোবিন্দর কোলে।

    –তিন হাজার আচে। পোর্টেবল হয়ে যাবে।

    –ক্লাবের টিভি গুরু?

    –আবার কি? সবাই যখন জালি ব্যবসা, জালি ব্যবসা বলচে তকন আর ওর টাকা শালা ঘরেই রাখব না। আর কোকা, এই নে চারশো। মাল কিনবি।

    –চারশো টাকায় তো কুড়িটা বোতল হবে শুরু।

    –কুড়িটা বোতল! আরে ফোঁটা! ও বাংলাফাংলা নয়। ইংলিশ, ইংলিশ–ফরেন লিকার শপ।

    –কী আনব হারবার্টদা! আজ তো তবে বাঘের খেলা।

    –একটা হুইস্কি নিবি বড়। একটা রাম নিবি বড়। তিন কিলো বরফ নিবি নতুন বাজার থেকে। যারা মাল খায় না তাদের জন্যে চপ, ঝাল ঝাল চানা তারপর চিংড়ির কাটলেট, ঐ যে ন্যাজ বেরিয়ে থাকে। তারপর সল্টেড বাদাম নিবি, সিগারেট নিবি–দূর, অত কি বলা যায় নাকি? ওড়াতেও শিকলি না! আজ হল একেবারে যাকে বলে মেমফুর্তি।

    হারবার্ট ওদের বলেছিল সাড়ে আটটা নাগাদ চলে আসতে। তারপর হারবার্ট ঘুমিয়েছিল কিছুক্ষণ। ঘুম থেকে উঠেছিল সাতটায়। দরজার বাইরে, চেয়ার নিয়ে গিয়ে সাইনবোর্ডটা নামিয়ে এনেছিল। তাতে লেখা ছিল ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’—’প্রোঃ হারবার্ট সরকার।’ সাইনবোর্ডটা দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিল। খোঁদলের তাকের বই দুটোর তলায় একটা নতুন ব্লেড ছিল। সেটা আছে কিনা দেখেছিল। তারপর দরজা টেনে ভেজিয়ে দিয়ে দোতলায় জ্যাঠাইমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। জ্যাঠাইমা মন দিয়ে টিভি দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে চলে এসেছিল হারবার্ট। খাতার একটা পাতার আধখানায় ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কী লিখে বুকপকেটে রেখেছিল। মালের পার্টি খুব জমেছিল। বালতির মধ্যে অনেকটা বরফ গলে জল জমছিল। হারবার্ট ওদের বলল পাখার হাওয়ায় ঠাণ্ডাটা ছড়িয়ে ঘর শেতল হবে। হারবার্ট বলেছিল, যা ঘাবড়ে দিয়েছিল। ঐ যে ঘোষ, যে চিঠি দিয়েছিল–শালা তাকিয়ে আছে গোঁয়াড়গেলের মতো। আর খালি ইংরিজি বলচে, খালি ইংরিজি বলচে। যত বলচে তত সব আমার গোলটুলি হয়ে যাচ্চে।

    -আর খবরের কাগজের মেয়েটা কি আজব মাল গুরু! পুকপুক করে সিগারেট খাচ্চে, আবার এই দেখি ফ্ল্যাশ মেরে মেরে ফটো তুলছে।

    -আচ্ছা হারবার্টদা, তোমার এই মরার সঙ্গে কথাটথা–সবটাই কি ঢপের কেত্তন ছিল।

    -তোর কি মনে হয়?

    -ঢপ হলে অত লোক আসত তোমার কাছে? অত লোক, অত কথা সব ফ্যানা?

    -তবে এ ব্যবসা আর করব না। বদনাম যখন রটবেই তখন আর এসব লাইনে হারবার্ট সরকার নেই।

    -তাহলে কী করবে গুরু?

    -ভাবছি। ভাবতে ভাবতে লাইন একটা ঠিকই বেরোবে। ও, দেখেচিস, সাইনবোর্ডটা খুলে ঘরে নিয়ে এসেচি! কোকা, একবার ঐটে দেখিয়ে দে তো বাবা।

    কোকা দুটো জিনিস দারুণ দেখায়। একটা হচ্ছে কোন একটা ইসবগুলের বিজ্ঞাপন যার নাম ‘চেয়ার পায়খানায় বসে হনুমান হাগচে’–এটা ও টিভি থেকে তুলেছিল। অন্যটা হচ্ছে–কৃশানু আর বিকাশ মোহনবাগানে সই করার সময় গজু বোসের মুখ।

    কোনটা গুরু? চেয়ার পায়খানা?

    -না, না, গজু বোস।

    কোকা দেখাল। খুব রগড় হল। ধুম নেশা হয়েছিল। বালতি ভরতি বরফগলা জল। বোতলে একটু রাম থেকে গেল। ঘর থেকে ওরা যখন বেরোয় তখন হারবার্ট জানালা বন্ধ করছে। অনেক রাত্তিরে বমির ধুনকিতে গলির বাড়ি, রাস্তার বাড়ি, কোথায় বাড়িতে ফেরার সময় কথাটা বলেছিল বড়কা।

    –ভালো করে ঘুমোক। ঘুমোলেই ঠিক হয়ে যাবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না – নবারুণ ভট্টাচার্য
    Next Article লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    Related Articles

    নবারুণ ভট্টাচার্য

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    নবারুণ ভট্টাচার্য

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    নবারুণ ভট্টাচার্য

    এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.