Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প77 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২. যা সন্দেহ তাই

    যা সন্দেহ তাই।

    ঘটনার খানিক পরেই নাকি অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি লাশ তুলে নিয়ে গেছে। এবং খুব সম্ভব এতক্ষণে সে লাশ জ্বালিয়েও ফেলেছে।

    নাও ফেলতে পারে। ফটো তুলে রাখতে পারে। সব দায়িত্বই হাসপাতালের।

    রেল পুলিশেরও থাকতে পারে কিছু দায়িত্ব। মোট কথা, এদের কিছু নেই! স্টেশন মাস্টার বরং মেজাজ দেখিয়ে বলেন, যত হতভাগার রেলে কাটা পড়ে মরতে ইচ্ছে করে! আর আমাদের হচ্ছে মৃত্যু। কেন রে বাবা, চিরদিনের দুঃখনিবারিণী মা গঙ্গা আছেন, মরতে ইচ্ছে হয় তো সেখানে ঝাঁপ দিয়ে মরগে যা না! তা নয়, নিজে রক্তগঙ্গা হয়ে মরব।

    আত্মহত্যা, না অসাবধান?

    তা কী করে জানব মশাই। ইঞ্জিন তেড়ে আসছে, অথচ বাবুরা দিব্যি বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে লাইন পার হচ্ছেন, এতো হরদম দেখি। বেড়াতে যাচ্ছে, না সুইসাইড় করতে এসেছে, কে বুঝবে?

    ওঁর বক্তৃতা থামিয়ে সুধানাথ অনেক কষ্টে হাসপাতালের ঠিকানাটা সংগ্রহ করে। কিন্তু জেরার মুখে পড়তে হয় তাকে কম নয়।

    মৃতের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি, কি নাম মৃতের, গতকাল থেকে এতক্ষণে খোঁজ নেবার সময় হল? বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়েছিল কি না, আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল কি না, ইত্যাদি বহুবিধ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এবং বহু ঘাটের জল খেয়ে সুধানাথ যখন মড়ার গাদার কাছে পৌঁছল তখন ফটো ভোলা পর্ব সেরে, বেওয়ারিশ বলে জ্বালাতে নিয়ে যাচ্ছে।

    সুধানাথ চিনতে পারল না।

    সুধানাথ পচাগন্ধে ঠিকরে বেরিয়ে এল লাশঘর থেকে। শুধু অনেক অনুনয় বিনয়, এবং কিছু সলিড জিনিস সাপ্লাই করে কাজটা একটু স্থগিত রাখবার ব্যবস্থা করে, ট্যাক্সি ভাড়া করে মাধব ঘোষের বাসায় ফিরে এল।

    মলিনাকে নিয়ে যেতে হবে!

    কাজটা যত নৃশংসই হোক, না করে উপায় নেই।

    কিন্তু একা যাওয়া ঠিক নয়।

    সময় যেমনই হোক, সমাজ তার পাওনা ছাড়ে না। এই মাধবের বাসার তেরো ঘরের ঘরণী—নিশ্চয়ই এখুনি নিন্দায় মুখর হয়ে উঠবে, যদি সুধানাথ আর মলিনা এক ট্যাক্সিতে চড়ে ওদের নাকের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

    অতএব খোসামোদ করতে হবে ওদের!

    বলল সুধানাথ, আপনারা কেউ চলুন।

    দাস গিন্নি ফিসফিসিয়ে হেসে নগেনবাবুর স্ত্রীকে বললেন, ঠাকুরপোর যে দরদ উথলে উঠেছে! নিজের কাজ ছেড়ে মাথায় সাপ বেঁধে ঘরে বেড়াচ্ছে সকাল থেকে। এখন আমায় বলছে লাশ শনাক্ত করতে সঙ্গে যেতে। আমি কখন যাব দিদি?

    দিদি বললেন, আমারও বাবা মরবার সময় নেই। তা ছাড়া, ওসব শুনলেই ভয় করে।

    কমবয়সীদের তো কথাই ওঠে না, গিন্নিরাই জবাব দিলেন।

    অবশেষে সুখদা।

    যে সুখদাকে কাল দুপুরে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাড়িয়েছিল মলিনা।

    কিন্তু এখন আর মান অপমান জ্ঞান নেই মলিনার। ক্রমশই যেন কেমন জবুথবু হয়ে যাচ্ছে সে।

    গত রাত্রের সেই উন্মত্ত শোকের মধ্যেও তবু মলিনা নামক মানুষটাকে চিনতে পারা যাচ্ছিল, আজ যেন সে মলিনা হারিয়ে গেছে।

    তাই সুখদা যখন বিজয় গৌরবে গিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে সশব্দ স্বগতোক্তি করল, আমারই হয়েছে মরণ! এই তো, সবাই গা ঝাড়া দিয়ে নিজের সংসার নিয়ে বসে রইল, আমি পারলাম? আপ্তক্ষতি করেও চললাম। কই বললাম কি, তুমি আমায় পোঁছ না, তুমি আমায় দূরছাই কর, তোমার অসময়ে আমি দেখব কেন? তখনও চুপ করেই থাকল মলিনা।

    সুধানাথ বলল, আর থাক, এসময় ওসব কথা থাক।

    .

    সত্যিই, সুখদার অনেক কাজের ক্ষতি হল।

    অনেক বেলায় ফিরল ওরা।

    মাধব ঘোষ নিজেই মদনার সাহায্যে একটা চালে ডালে পাক করে নিয়ে খেতে বসেছে। মদনাকেও খাইয়েছে তার আগে।

    সুখদা এসে আপসে পড়ল, ঠিক বলেছিল মদনা! একেই বলে কাঙালের কথা বাসি না হলে মিষ্টি হয় না।…দেখলাম, বামুন ছেলেই! মুখ চেনবার উপায় না থাকলেও অঙ্গ আকৃতি দেখলে তো বোঝা যায়?

    উনি কি বলেন?

    মাধব ঘোষ খিচুড়ির গরম সাপটে প্রশ্ন করল!

    এবং একা মাধব ঘোষই নয়, মলিনাকে বাদ দিলে, বারো ঘরের যতজন ছিল ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওই একই প্রশ্ন করল, মলিনা কি বলল?

    সুখদার আজ পদমর্যাদা রাষ্ট্রপতি সদৃশ। সুখদা তাই মুখ চোখের যত রকম ভঙ্গি করতে সে জানে, সব করে নেয় এবং ফিসফিসে গলায় বলে, উনি? উনি হচ্ছেন ধূর্ত মেয়ে মানুষ। উনি স্বীকার পেলেন না। বললেন, বুঝতে পারছি না। বললেন, এ রকম জামাকাপড় নয়। নাকে কাপড়ে দিয়ে সরে এলেন। আরে বাবা! রক্তে ভিজে জামা কাপড়ের আর চেহারা আছে কিছু?—তা কেন, বুঝছ? স্বীকার পেলেই তো এক্ষুণি সব গেল। শাড়ি, চুড়ি, নোয়া, সিঁদুর। তার থেকে বুঝতে পারলাম  বলে নিলেন। চুকে গেল ল্যাঠা। এখন চিরজন্ম আর কেউ এয়োতি কেড়ে নিতে পারবে না!

    মলিনার এই ধূর্তামিতে সকলেই বিরক্ত হল। এবং কোনো মজা দেখা গেল না বলে হতাশ হল। মলিনা শুয়ে পড়ে রইল ঘরের মেঝেয়। কেউ আর সান্ত্বনা দিতে এল না।

    যে মেয়েমানুষ বিধবা হয়েও চালাকীর জোরে বৈধব্য এড়িয়ে বসে থাকে, তাকে আবার সান্ত্বনা কি?

    .

    বিকেলের কাজটায় যেতেই হয়।

    অস্নাত, অভুক্ত সুধানাথ দাস গিন্নির কাছে এসে বলে, আমাকে তো বেরোতে হচ্ছে। ওঁকে আপনারা বলে কয়ে একটু জল অন্তত খাওয়ান।

    দাস গিন্নি ক্ষুব্ধ হাস্যে বলেন, তুমিই কেন একটু খাইয়ে গেলে না ভাই। তোমার কথা বরং শুনতো। আমাদের কথা কি নেবে?

    সুধানাথ এই সাদাসিধে কথাটার মধ্যে যেন আঁসটে আঁসটে গন্ধ পেল।

    তাই সুধানাথ গম্ভীর হয়ে গেল।

    গম্ভীর হয়ে বলল, আপনাদের কথা নেবেন না, আমার কথা শুনবেন, এটা কি বলছেন আপনি? আমার সঙ্গে পরিচয় বা কতটুকু? বলতে গেলে কালই প্রথম কথা বলেছি ওঁর সঙ্গে।

    দাস গিন্নি অমায়িক গলায় বলেন, দিন, ঘণ্টা, মাস দিয়ে কি আর পরিচয়ের ওজন মাপা যায় ভাই? একদিনের পরিচয়েও চিরদিনের আপন হতে পারে। তুমি ওর অনেক করলে, কৃতজ্ঞ হয়েও তো ও

    আমি এমন কিছুই করিনি। মানুষ মাত্রেই এটুকু করে— বলে বেরিয়ে যায় সুধানাথ।

    রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলতে থাকে তার। কিন্তু শুধুই কি সেইদিন? প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত?

    কিন্তু কার কি এসে যায় যদি সব সময় সুধানাথের সর্বাঙ্গ জ্বলে? সেই রাগটা বরং এদের হাসির খোরাক।

    ঠাকুরপোর দরদ আখ্যা দিয়ে সুনাথের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়।

    .

    দিন গড়িয়ে যায়।

    বেশ কয়েকটা দিন।

    যাবেই।

    দিনের পর রাত, এবং রাতের পর দিন আসবেই। আর যে কোনো ধরনেরই অবস্থা হোক, মানুষ এক সময় উঠবে, হাঁটবে, নাইবে, খাবে।

    মলিনাও উঠেছে।

    নাইছে, খাচ্ছে।

    কদিন বেশি ভাড়ার ভাড়াটের গৌরব নিয়ে আলাদা কলতলায় নাইবে? মাসটা শেষ হলেই তো বিরাট একটা দৈত্য হাঁ করে দাঁড়াবে।

    মলিনা মাছ, মাংস খায় না, কিন্তু মলিনা লোহা, সিঁদুরও ফেলেনি। মলিনা যেন ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলছে। এর চাইতে অজিত যদি স্পষ্টাস্পষ্টি মারা যেত, মলিনা বুঝি স্বস্তি পেত।

    কিন্তু অজিত তো স্পষ্ট মারা গেল না! অজিত যেন একটা ধূসর শূন্যতায় হারিয়ে রইল। সুখদা জোর গলায় বলেছে, ও-ই অজিতের লাশ, কিন্তু মলিনার মন নেয়নি।

    যতই বিকৃত হোক, ওই হাত পা কি অজিতের?

    সুখদা বলেছিল, ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে গেছে, এখন তুমি হাত পায়ের গড়ন খুঁজছ?

    কিন্তু না খুঁজলে কোন্ খুঁটিটাকে চেপে ধরবে মলিনা?

    মলিনা ভগবানের কাছে শতবার নালিশ জানায়, স্পষ্ট কেন বুঝিয়ে দিলে না ঠাকুর! সে যে আমার শতগুণ ভালো ছিল। রাজ্যসুদ্ধ মেয়েমানুষ বিধবা হচ্ছে, আমিও হতাম। এ তুমি আমাকে কী করে রাখলে?

    অথচ ওই গিন্নিগুলোর কথা শুনে, বিধবা মূর্তি করে, অজিতের নামে পিণ্ডি দেবে, সেও যে কিছুতেই মন সায় দেয় না।

    তাই ঘর থেকে আর সহজে বেরোচ্ছে না মলিনা, কোনোমতে আড়ালে আড়ালে কাটাচ্ছে।

    মাসের প্রথম দিকে হারিয়ে গেছে অজিত, আর ঠিক তার আগের দিনই মাসকাবারী বাজারটা করেছিল। সুধানাথ এক ফাঁকে, কোনো সময়, দাওয়ায় দুটো আলু পটল রেখে যায়, দিনান্তে একবার উঠে মলিনা দুটো ভাতেভাত ফুটিয়ে নেয়। বাকি সময় শুয়ে থাকে।

    এই বারো ঘরের ঘরণীদের কাছে সে যেন একঘরে হয়ে গেছে।

    ওর ওই বিধবা না হবার জেদ, আর সুধানাথের ওকে দেখাশোনা, ওদের চক্ষুশূল। আর এঁদের রূঢ় মন্তব্য ও হৃদয়হীন ঔদাসীন্য, মলিনার যেন মর্মান্তিক লাগে।

    প্রতি মুহূর্তে উঠে পালাতে ইচ্ছে হয় মলিনার।

    তার সেই গর্ব, সেই অহঙ্কার, সব বিসর্জন দিয়ে এভাবে পড়ে থাকা কি সহজ?

    তাছাড়া–

    পড়ে থাকতেই বা কদিন দেবে মাধব ঘোষ? ও মাসের দোসরা হলেই তো এসে হয় ভাড়া চাইবে, নয় নোটিশ দেবে!

    .

    কিন্তু আশ্চর্য! দশ, বারো, পনেরো তারিখ হয়ে গেল, মাধব ঘোষ না দিল নোটিশ, না চাইল ভাড়া। একবার করে যখন এদিকে এসে মলিনার তত্ত্ব নিচ্ছিল, তখন মলিনা অস্ফুটে বলেছিল, আপনার–ভাড়াটা–

    মাধব ব্যস্ত হয়ে বলেছিল, থাক, থাক, ও নিয়ে এখন আর তোমায় মাথা ঘামাতে হবে না। আমি তো আর পিশাচ নই!

    মলিনা ভেবেছিল, পিসাচের আবরণেও তা হলে মানুষ থাকে। এই সব ভালো লোকেরা এই ব্যবহার করছেন, অথচ চিরদিনের অর্থপিশাচ মাধব ঘোষ–

    কিন্তু এ কী জীবন হল মলিনার!

    মাধব ঘোষ দাক্ষিণ্য করে বাসার ভাড়া নেবে না, কে কোথাকার সুধানাথ দয়া করে দুটো বাজার করে দিয়ে যাবে, আর মলিনা একবেলা তাই ফুটিয়ে খাবে, আর বাকি সময় মেঝেয় পড়ে পড়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করবে?

    আর কিছু নেই?

    ভবিষ্যৎ বলে একটা বস্তু অজিতের মতোই ধূসর হয়ে থাকবে?

    তা ছাড়া, একঘরে হয়ে থাকার মতো কষ্ট আর কি আছে?

    স্বাতন্ত্র্যপ্রিয় মলিনা যে একসময় নিজেই ওদের হেয় জ্ঞান করে ওদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতো, সে আর এখন মনে পড়ে না মলিনার।

    ওরা যে রাঁধছে, বাড়ছে, খাচ্ছে, বেড়াচ্ছে, ছেলে ঠেঙাচ্ছে–এক কথায় জোর কদমে সংসার করছে, অথচ কদাচিৎ মলিনার ঘরে উঁকি মারছে না, এতে শুধু কষ্টেরই নয়, অপমানেরও।

    আসে, এক আধবার স্বপনের মা আসে।

    বলে, মলিনাদি, চৌকিটায় শুলে তো পারো। রাতদিন মাটিতে শুয়ে শুয়ে রোগে ধরলে দেখবে কে?

    বলে, বুঝলে মলিনাদি, গিন্নিরা সব তোমার ওপর খাদ্ধা। এই যে আমি একটু এসেছি, তা সব ভালো চক্ষে দেখে না।…

    আবার এ কথাও বলে, সুধানাথবাবুর সঙ্গে বুঝি তোমার আগেকার চেনাজানা ছিল ভাই? মলিনা কোনো কথারই উত্তরই দেয় না।

    মুখরা মলিনা যেন মূক হয়ে গেছে।

    কিন্তু মলিনাকে আরও মূক করে দেবার মতো আরও এক ঘটনা ঘটল।

    একটা মুটে এসে মাসকাবারি বাজার এনে মলিনার দাওয়ায় নামাল। চাল, ডাল ফুরিয়ে এসেছিল। দুজনের ভাগ একজনে খেলেও, এসেছিল। একমাস যে দুমাসে ঠেকতে বসেছে। ফুরিয়ে এসেছিল, মলিনা ভাবছিল, না খেয়ে মারা যায় না? মন্দ কি, যদি মলিনা সেই পদ্ধতি ধরে?

    হঠাৎ—এই সময় এই।

    মলিনা বলল, তুমি ভুল করছ। এ ঘর নয়। মুটেটা বলল, এই তো সাত নম্বর ঘর! চিঠি আছে।

    বাড়িয়ে ধরল একটা কাগজ।

    চিঠি আছে।

    এ কি অদ্ভুত কথা!

    মলিনার চিঠি আছে। যে মলিনার তিনকুলে একটা মাসি বলতে নেই, এতবড়ো দুর্ঘটনা ঘটে গেল, মলিনার কোনো কুল থেকে কেউ খবর নিতে এল না, তাকে আবার চিঠি কে দেবে?

    দেখেশুনে আর ঘরেরা তো এমন সন্দেহও প্রকাশ করছে, বিয়ে করা স্বামী-স্ত্রী তো? না কি ঘর ভেঙে বেরিয়ে আসা? তিনকুলে কেউ নেই, এমন হয়?

    কিন্তু হয়েছে।

    সত্যিই কেউ নেই। আর যদিও সুদূরে কেউ থেকে থাকে, মলিনা তো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। আজ মলিনা তাই চিঠি আছে শুনে নিথর হয়ে গেল।

    হে ঈশ্বর, এমন হয় না যে, এ চিঠি অজিতের!

    দুষ্টুমী করে কোথাও লুকিয়ে বসেছিল। এখন খেয়াল হয়েছে মলিনার চাল, ডাল ফুরিয়েছে, তাই সব কিনে কেটে চিঠি লিখে পাঠিয়েছে।–”মলিনা, আমি অজ্ঞাতবাসে আছি, কিন্তু তোমার বাজারটার চিন্তায় শান্তি নেই। তাই–

    কল্পনাটুকু মুহূর্তের।

    কাগজের টুকরোটুকু খুলে ধরল মলিনা। লেখা রয়েছে, আপত্তি করবেন না। বাঁচতে তো হবে।

    সুধানাথ মিত্র

    বাঁচতে তো হবে!

    আশ্চর্য, আজও পৃথিবীতে এমন কেউ রয়েছে, যে মলিনার বাঁচার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। সেই বাঁচার জন্যে রসদ জোগান দিতে আসছে।

    নিশ্বাস ফেলে বলল, নামিয়ে দাও।

    এরপর আর নগেন গিন্নি, দাস গিন্নি, মণ্ডল গিন্নির নির্লিপ্ত থাকা সম্ভব হল না। ওঁরা এলেন দাঁত খুঁটতে খুঁটতে, ভিজে কাপড় নিংড়োতে নিংড়োতে।

    বাজার কে করে দিল? সুধাবাবু বুঝি? তাই ভাবছি উনিই তো দেখাশোনা করছেন। আমরাও তাই নিশ্চিন্দি আছি। একজন যখন সমগ্র ভার নিয়েছে–

    মণ্ডল গিন্নি বলেন, সুখদাদি চেপে গেল, ভাব দেখাচ্ছে যেন ঘোষ মশাই অমনি থাকতে দিয়েছেন। কিন্তু ধর্মের ঢাক আপনি বাজে। সুধাবাবুই নাকি এ ঘরের ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছেন। তাই ইনি বলছিল, তোমরা আর অজিতবাবুর বউয়ের কথা নিয়ে মন খারাপ করছে কেন? অজিতবাবু নেই, সুধাবাবু তো তার বাড়া করছেন। আচ্ছা, তা মলিনা, মাছটা কেন খাওনা? সবই যখন রেখেছ–

    মলিনার প্রতিজ্ঞা মলিনা মুখ খুলবে না। তাই মলিনা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। শুধু মনে মনে বলে, এ সন্দেহ আমার হয়েছিল, তবুও জোর করে ওই অর্থ পিশাচটাকে দেবতা ভাবছিলাম। কিন্তু এ আমি কোথায় চলেছি?…কেন নিচ্ছি এত? এ ঋণ আমি শোধ করব কি দিয়ে!

    রাত্রে শুয়ে আকুল হয়ে বলে, তুমি কি সত্যিই আর আসবে না?…তুমি কি সত্যিই জন্মের শোধ চলে গেছ? সুখদার চোখই নির্ভুল?…আমি আসার ছলনায় ভুলে ভুল দেখেছি! তাই ওরা আমায় একঘরে করে রেখেছে, আমায় ঘেন্না করছে।…কিন্তু আমি ওদের চোখের সামনে এই ভাবে কি করে কাটাব?

    অনেকক্ষণ ভেবে মলিনা ঠিক করল বামুনের মেয়ে, রাঁধুনী বৃত্তি ধরবে। এভাবে দয়ার অন্ন খাওয়ার চেয়ে চাকরি করে খাওয়া ভালো।

    তাতে পেটের ভাত জুটবে, ঘরের ভাড়াও হবে।

    লজ্জা করবে?

    মাথাকাটা যাবে?

    তা প্রথম প্রথম হয় তো যাবে। তারপর সয়ে যাবে।

    কিন্তু স্বামী নিরুদ্দেশ এই পরিচয় কি সমাজে মান্য? কথাটা যেন হাস্যকর। তার থেকে ওদের মনস্কামনাই পূর্ণ হোক। মলিনা বিধবার সাজ সেজেই–

    শেষটা আর ভাবতে পারল না মলিনা। চোখের জলে একাকার হয়ে গেল।

    এঁরাও তেমন সুখ পেলেন না।

    মলিনা যদি প্রতিজ্ঞা করে থাকে একেবারে কথা কইবে না, কত আর এগোনো যাবে?

    এক উপায় আছে, মাধব ঘোষকে দিয়ে বলানো, ভদ্র বাড়িতে এসব অনাচার চলবে না।

    অনাচার ছাড়া আর কি? একটা লোক অপঘাতে মরল, আর মরতে না মরতে বাসার আর একটা লোক তার পরিবারকে নিয়ে নিল, এর মতো অনাচার আর কি আছে?

    তা নিয়ে নেওয়া ছাড়াই বা আর কি?

    খাওয়াচ্ছে, পরাচ্ছে, ঘরভাড়া দিচ্ছে, বাকিটা কী? শেষ যা হবে তা তো বুঝতেই পারা যাচ্ছে। নেহাত পাঁচজনের চোখের সামনে তাই, নইলে এতদিনে সবই হত।

    এই কথাই বোঝাতে হবে মাধবকে।

    ভাড়াটে গেলে ভাড়াটে হবে না, সে ভয় তো আর নেই এ যুগে? বরং বেশি ভাড়ায় ভাড়াটে আসবে। এই স্বভাবচরিত্রহীন ছেলেটাকে আর মলিনাকে নোটিশ দিক মাধব ঘোষ।

    আক্রোশ মেটাবার এই চরম উপায় আবিষ্কার করে এরা।

    আক্রোশ?

    তা আক্রোশ নয় কেন? দুঃখে পড়ল, অথচ দুঃখী হল না, এ মেয়েমানুষকে কখনও চোখের ওপর সহ্য করা যায়?

    দাস গিন্নি ভেতরে ভেতরে দুটো ভাড়াটেও ঠিক করে ফেললেন মাধব ঘোষের। তারপর পাড়লেন কথাটা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }