Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প77 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪. মিনারের চাকরি ছাড়ল সুধানাথ

    সত্যিই মিনারের চাকরি ছাড়ল সুধানাথ।

    শেয়ালদা অঞ্চলে একটা কাটা কাপড়ের দোকানে কাজ জোগাড় করে ফেলল, আর বেলেঘাটায় একটা বাসা ভাড়া করল।

    এ বাসায় বাড়িওলা নিজে নেই।

    আর একঘর ভাড়াটে আছে—মাত্র স্বামী-স্ত্রী। তাও নেহাত যেন বোকাসোকা মতো। সুধানাথ বলল, এই বেশ। চালাক পড়শী আগুনের সমতুল্য।

    কিন্তু এ খেয়াল ছিল না সুধানাথের, বোকার লেজের আগুনেই লঙ্কাকাণ্ড বাধে।

    প্রথম দর্শনেই সেই বউ বলে বসল, এই বেশ হল ভাই, আমরাও বরটি বউটি, তোমরাও বরটি বউটি। আমারও ছেলেপুলের বালাই নেই, তোমারও–

    মলিনা তাড়াতাড়ি বলল, কি বাজে বাজে কথা বলছ? ও আমার দাদা।

    দাদা! বউটা যেন এক ছুঁয়ে নিভে গেল। শুকনো মুখে বলল, দাদা আর বোন? এই সংসার?

    দাদা তো থাকবে না, অন্য জায়গায় খাবে শোবে। আমার জন্যেই—

    শুধু তোমার জন্যে? তা তোমার স্বামী?

    স্বামী দেশে থাকেন। পাগল!

    ওমা! সেই পাগল স্বামীর সেবা যত্ন ছেড়ে তুমি ভাইয়ের ভাতে কলকেতায় বাসা ভাড়া করে থাকতে এসেছ?

    মলিনা অনেক সয়েছে।

    মলিনা অনেক বদলেছে।

    তবু মলিনা মানুষ তো! মেয়ে মানুষ! আর কত সইবে? তাই বিরক্ত স্বরে বলে, আমি কি করতে এসেছি না এসেছি, সে নিয়ে তোমার মাথা ঘামাবার দরকার কি? আমি তো তোমার সংসারে ঢুকতে আসিনি!

    বউটি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, বলছ তো ঢুকতে আসিনি। আসতে কতক্ষণ? এই তুমি একা সুন্দরী যুবতী, মাথার ওপর না শাশুড়ি ননদ, না স্বামী, দাদা পর্যন্ত থাকবে না বলছ। যার নাম একেবারে বেওয়ারিশ! আমার বরকে আমি সামলাব কি করে? সুন্দরী মেয়েমানুষ দেখলে ওর আর জ্ঞানগম্যি থাকে না!

    মলিনা হাসবে না কাদবে? ডাকছেড়ে কাঁদতেই তো ইচ্ছে করছে, তবু মলিনা হেসেই বলে, তোমার স্বামীর সামনে আমি না বেরোলেই তো হল?

    সে বেচারি এ আশ্বাসে কোনো ভরসা পায় না। চোখের জল ঠেকাতে ঠেকাতে বলে এক বাড়ি, এক ঘর, ওকি আর একটা কাজের কথা? তুমি না বেরালেও, ও তো ঘুরঘুরিয়ে বেড়াবে। সঙ্গে তোমরা একটা দুদে বর থাকত, আমি নিশ্চিন্দি থাকতাম। এ যদি রাতবিরেতে উঠে গিয়ে–

    শেষ পর্যন্ত আর শোনার ধৈর্য হয় না মলিনার, নিজেই উঠে যায়।

    কিন্তু চিন্তায় পড়ে।

    এ বাড়িতে কি থাকা সম্ভব হবে?

    সুধানাথকে বলতে লজ্জা করে, অথচ অস্বস্তিরও শেষ থাকে না।

    সত্যিই, বেচারি বউটির জ্ঞানগম্যি-হীন বর ছুতোয়নাতায় মলিনার ধারে কাছে ঘুরঘুর করে, মলিনার জানলায় উঁকি মারে, স্নানের ঘরের ঘুলগুলিতে চোখ ফেলে বসে থাকে।

    সাপের কামড় এক কোপ!

    কাঠপিঁপড়ের কামড় অসহ্য!

    সুধানাথকে না বলে পারা যায় না। আর শোনামাত্র শান্ত সুনাথের ভিতর থেকে এক দুর্দান্ত গোঁয়ার মূর্তি বেরিয়ে আসে।

    যে মূর্তি ছুটে গিয়ে অপরাধীর ঘাড় চেপে ধরে।

    বলা বাহুল্য, পরবর্তী ঘটনা এক কুৎসিত কেলেঙ্কারির রূপ নেয়। পতির বিপদাশঙ্কায় পতিব্রতা সতী পরিত্রাহী চিৎকারে পাড়ার লোক জড় করে, এবং সত্য নামক দেবতার মাথায় লাঠি বসিয়ে সক্রন্দনে বলতে থাকে, ওগো এতদিন সয়ে সয়ে আছি, তোমাদের বলিনি। ওই একটা নষ্ট মেয়েমানুষ পাগল স্বামীকে দেশে ফেলে রেখে পাতানো দাদার সঙ্গে চলে এসে বসে আছে, আর আমার ভালোমানুষ স্বামীকে নষ্ট করবার তালে নিত্যদিন হাসছে, ইসারা করছে, ডাকাডাকি করছে। তা চোরের সাতদিন, সাধুর একদিন! আজ ওর ওই ভাই না ভালোবাসার লোক কে, তার সামনে ধরা পড়ে গেছে। এখন ও এসেছে আমার স্বামীকে খুন করতে

    স্বামীকে বাঁচাতে এমন বহুবিধ কথা বলে চলে সে। এবং দেখা যায় পাড়ার লোক তার প্রতিই সহানুভূতিশীল।

    না হবেই বা কেন? একটা নষ্ট দুষ্ট মেয়ের প্রতি কার সহানুভূতি থাকে?

    আর একা একটা বাসা ভাড়া করে থাকে কোনো শিষ্ট সভ্য মেয়ে?

    অতএব ধরে নিতে হচ্ছে এ বাসাও গেল।

    সুধানাথ হতাশ নিশ্বাস ফেলে বলে, আচ্ছা এরকম কেন হচ্ছে বল তো?

    মলিনা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, অলক্ষ্মী কিনলে এই রকমই দশা হয়। দেখছ না আমি বিষকন্যে! তোমায় দোহাই দিচ্ছি, তুমি আমায় ছাড়।

    সুধানাথ একমিনিট চুপ করে চেয়ে থেকে বলে, বেশ, ধর ছাড়লাম। এই চলে গেলাম আর এলাম না। তারপর?

    যা করবেন ভগবান। যা আছে কপালে।

    কথাটা বলতে সোজা, ব্যাপারটা সোজা নয়। এমনও তো মনে করতে পার, ভগবান আমার মধ্যে দিয়েই তোমাকে দেখছেন। সব মানুষের মধ্যেই তিনি আছেন, একথা মান তো?

    মানতে পাচ্ছি কই? মনে হচ্ছে ভগবান বলে কোথাও কেউ নেই।

    সুধানাথ আস্তে বলে, এখুনি অতটা বিশ্বাস হারাবে কেন? মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, সুবিধে অসুবিধে তো আছেই—আসবেই।

    আমার জীবনটা কি অন্য কোনো মানুষের মতো?

    বল কি? তুমি কটা জীবন দেখেছ? আরও কত বিপর্যয় আসে জীবনে!

    দাদা বলতে বাধ্য হওয়া থেকেই তুমিটা রপ্ত করতে হয়েছে সুধানাথকে। অতএব কেমন করেই যেন মলিনার পোস্টটা ছোটোর মতোই হয়ে গেছে। সুধানাথ ওকে বুঝ দেয়, সান্ত্বনা দেয়, কখনও কখনও ধমকও দেয়।

    সেদিন দিল ধমক।

    যেদিন সুধানাথ আবার এসে একটা নতুন বাসার খোঁজ দেওয়ায় মলিনা বলে উঠল, যতই তুমি বল ভগবান মানুষের মধ্যে দিয়েই দেখেন, তবু আমি তোমায় হাত জোড় করছি, আমার চিন্তা ছাড়ো৷

    সেদিন ধমকে উঠল সুধানাথা।

    বলল, এই এক বাতিক হয়েছে দেখছি তোমার। তোমাকেই হাত জোড় করছি, ওই কথাটা বলা তুমি ছাড়ো। আশ্চর্য! চিন্তা করব না? কোনো মানে হয় কথাটার?

    .

    সুধানাথের মনে হয়েছিল মলিনার কথার মানে হয় না। তাই সুধানাথের হিসেবে যে কাজের মানে আছে, তাই করেছিল সুধানাথ উঠেপড়ে লেগে। কাজকর্ম কামাই দিয়ে বাড়ি খুঁজেছিল।

    আর সাধনায় সিদ্ধি ঘটেছিল তার।

    অথবা অসাধ্য সাধনের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সে।

    তা কলকাতা শহরে নিত্য এক একটা বাসা খুঁজে ঠিক করে ফেলা অসাধ্য সাধন ছাড়া আর কি।

    .

    মলিনা বলে, আবার হয়তো সেখান থেকে দূরদূর করে খেদিয়ে দেবে।

    সুধানাথ বলে, পরের কথা পরে আছে, এখন যে আজই এদের মুখের সামনে দিয়ে গট গট করে বেরিয়ে যেতে পারব, তাই ভেবেই স্ফুর্তি লাগছে আমার।

    তা এই স্ফূর্তিটির জন্যে কতটি দাম দিতে হল?

    কথাটা সুধানাথ বুঝতে পারলো না, অথবা না বোঝার ভান করল। তাই ভুরু কুঁচকে বলল, দাম মানে?

    মানে? আমি একেবারে সোজা মানেটার কথাই জিগ্যেস করছি। ভাড়া কত দিতে হবে?

    সে খোঁজে তোমার দরকার কি?

    দরকার আছে। মলিনা বিষণ্ণ গলায় বলে, এই অলক্ষ্মীর জন্যে কতটা দণ্ড দিতে হচ্ছে তোমায়, জেনে রাখতে চাইছি।

    লাভ কি জেনে?

    হঠাৎ মলিনা আর এক দৃষ্টিতে তাকায়। খুব আস্তে বলে, জানতে পারলে নিজের দামটাও যাচাই হয়ে যেত!

    সুধানাথ এ দৃষ্টির সামনে মুহূর্তকাল চোখ নামায়, তারপরই খুব খোলা গলায় বলে ওঠে, শুধু ওইটুকু থেকেই আপনি সেই দামটা যাচাই করবেন? আচ্ছা মেয়ে তো? নিন সব গুছিয়ে টুছিয়ে নিন। আমি একটা ঠেলা নিয়ে আসি।

    অনেকদিন পরে আবার আজ হঠাৎ আপনি বলে।

    সুধানাথ চলে যায়।

    মলিনা তার সেই কদিনের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে।

    গুছিয়ে নিতে হবে।

    এই জঞ্জালগুলো আবার গুছিয়ে নিতে হবে তাকে?

    এই বঁটি কাটারি, শিল নোড়া, ঝুড়ি কুলো, বাসন উনুন।

    কেন?

    কী দরকার এসবের? খেতে হবে?

    সে তো ওই একটা অ্যালুমিনিয়মের বাটিতেই হয়ে যাচ্ছে সারা। ভাতে ভাত ছাড়া তো আর কিছু রাঁধেনি কোনোদিন তারপর থেকে।

    শুধু একটা খাবার থালা আর ওইটা নিলেই তো চুকে যায়, আর সব থাক না পড়ে। বাড়িওলা টান মেরে ফেলে দেবে।

    .

    আশ্চর্য! এই জঞ্জালগুলোই একদা প্রাণতুল্য ছিল মলিনার।

    আর কত চেষ্টায়, কত আগ্রহেই না সংগ্রহ করেছে এসব! অজিত বলত, কি হবে এত সবে? যত আসবাব বাড়াবে, তত খাটুনী বাড়বে।

    মলিনা ঝঙ্কার দিত।

    মলিনা বলত, তা বাড়ুক। তাই বলে বেদের টোলের মতোন সংসার হবে না কি? খাটুনী কমিয়ে আমি আর কোন মহৎ কর্ম করব শুনি?

    অজিত জানত, এ ধরনের কথাবার্তার পরই একটি অশ্রুবর্ষণের পালা এসে পড়তে পারে। কারণ মলিনার যে আর পাঁচটা মেয়ের মতো আসল কর্মঠাই নেই, সেই অভাবটা উথলে ওঠে মলিনার এসব প্রসঙ্গে।

    অতএব অজিত তাড়াতাড়ি বলত, থাকবে না কেন? পতিদেবতার পিঠটা একটু চুলকে দাও দিকি ভালোবাসা মাখিয়ে মাখিয়ে। ওর বড়ো মহৎ কর্ম আর কিছু নেই।

    মলিনা বলত, আহা রে! কী একেবারে মহৎ কর্মের হিসেব নিয়ে এলেন! নারকেল কোরবার কুরুণী একখানা চাই আমার।

    একটা মানুষের অভাবে যে সমস্ত জিনিসগুলো এমন মূল্যহীন হয়ে যায় জানা ছিল না মলিনার।

    আজ তাই অবাক হয়ে যাচ্ছে।

    ভাবছে, আচ্ছা এত জঞ্জাল কেন জমিয়েছিলাম আমি?

    এই তুচ্ছ জিনিসগুলোর জন্যে কত সময় কত উত্যক্ত করেছি মানুষটাকে!

    কিন্তু হঠাৎ যেন চমকে ওঠে মলিনা। যেন হঠাৎ একটা অনাবিষ্কৃত দেশ দেখতে পায়।

    আচ্ছা, ওকে আমি তেমন করে ভাবি কই?

    ও কেন ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে, নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে?

    আমি স্বপনকে ভাবি, স্বপনের মাকে ভাবি, দাস গিন্নি, মণ্ডল গিন্নি, সবাইয়ের কথাই ভাবি, এমনকি মাঝে মাঝে সুখদার কথাও ভাবি, অতএব ওকেও ভাবি।

    তার বেশি নয়।

    তবে কি আমি সত্যিই খারাপ? আমার মতো মেয়েকেই অসতী বলে?

    একটা জিনিসও গোছায় না মলিনা, চুপ করে বসে থাকে।

    একটু পরে সুধানাথ এসে পড়ে ঠেলা নিয়ে।

    অবাক হয়ে বলে, এ কি গোছাওনি কিছু?

    না!

    না কেন বল তো? এরা কিছু বলেছে নাকি?

    না, ওরা আবার কি বলবে?

    আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই গুছিয়ে নিচ্ছি।

    তারপর—

    সুধানাথ যখন হাত লাগিয়েছে, তখন আর কিছু ভাববার নেই।

    সব করবে, গাড়ি ডেকে আনবে, মলিনাকে ডেকে তুলে নিয়ে যাবে।

    পূর্বজন্মের কত শত্রু ছিলাম আমি তোমার!

    বলে মলিনা। সুধানাথ হাসে, পূর্বজন্মের কেন, এজন্মেরই।

    তাও মিথ্যে নয়। শুধু শত্রু কেন, শনি, রাহু সব।

    গাড়িতে চলতে চলতে কথা হয় ভবিষ্যহীন ভবিষ্যতের।

    মানিকতলার সরু এক গলির মধ্যে বাসাটা। কিন্তু মুশকিল এই, দুখানা ঘরের আস্ত একটা বাড়ি। ভাড়া তত বেশি-ই কিন্তু সেজন্যও নয়, একা কি করে থাকবে মলিনা, সেইটাই বলে সুধানাথ।

    মলিনা তীব্রস্বরে বলে, তবু তোমার লোক-সঙ্গের সাধ?

    সুধানাথ অপ্রতিভ হয়।

    দুকানে হাত দিয়ে বলে, সাধ কিছুমাত্র নেই। লোকের নামে দুকান মলি। তবু তুমি একেবারে একা–

    মলিনা গম্ভীরভাবে বলে, একেবারে একা কেন? বলছ তো দুখানা ঘর। তুমি তোমার শেয়ালদার দোকানের বাস উঠিয়ে চলে এস। একত্রে রাঁধাবাড়ায় খরচেরও সাশ্রয় হবে।

    সুধানাথ স্তব্ধ হয়ে যায়।

    সুধানাথ পাথরের পুতুল বনে যায়। তারপর সুধানাথ নিশ্বাস ফেলে বলে, ঠাট্টা করছ?

    ঠাট্টা? মলিনা শান্ত গলায় লে, না ঠাট্টা করছি না, সত্যিই বলছি।

    এটা কি সত্যি করে বলবার কথা?

    কেন? অসম্ভবই বা কিসে? সাহস নেই?

    সুধানাথ উঠে দাঁড়ায়।

    চঞ্চলভাবে পায়চারি করতে করতে বলে, এত তাড়াতাড়ি তোমার এই জিগ্যেসের উত্তর দিতে পারছি না।

    বেশ, একা রাত ভাবতে সময় নাও।

    আগুন নিয়ে খেলতে তোমার সাহস হয়?

    মলিনা অদ্ভুত একটা হাসি হেসে বলে, সৰ্ব্বস্ব যার পুড়েই গেছে, তার আবার আগুন নিয়ে খেলার ভয় কি?

    লোকে মিথ্যে বদনাম দিচ্ছে, সে আলাদা কথা। কিন্তু–

    মলিনা তেমনি করেই হেসে উঠে বলে, কিন্তু আর কি? তখন না হয় লোকে সত্যি বদনাম দেবে।

    সুধানাথ উত্তেজিত গলায় বলে, তুমি কি আমায় পরীক্ষা করছ?

    তোমায় নয়, আমায়। খোলা তরোয়ালের ওপর দিয়ে হেঁটেই দেখি না একবার। পরীক্ষা হয়ে যাক সতী, কি অসতী!

    সুধানাথ বসে পড়ে।

    অনেকক্ষণ ঘাড় হেঁট করে বসে থেকে বলে, বেশ! তোমার যা ইচ্ছে।

    আর এই শোনো–মলিনা হেসে উঠে বলে, বাড়িওলাকে বলতে যেও না-ভাই বোন।

    সুধানাথ অবোধের মতো ওর কথাটাই আবৃত্তি করে, বলতে যাব না ভাইবোন?”

    না! ওইখানেই যত গণ্ডগোল! যা সচরাচর হয় না, তাই হতে দেখলেই একশো দিকে একশো চোখ কটমটিয়ে ওঠে।

    তবে কি বলব?

    মলিনা নিতান্ত সহজ সুরে, যেন কিছু নয়, এইভাবে বলে, কিছু বলবে না, লোকের যা ইচ্ছে ভাবুক। যা স্বাভাবিক, তা ভাবলে কেউ কটমটিয়ে তাকাবে না।

    সুধানাথ আর একবার ছিটকে দাঁড়িয়ে ওঠে। ক্রুদ্ধ গলায় বলে, কী করেছি আমি তোমার? কী অন্যায় ব্যবহার দেখেছ আমার কাছ থেকে, তাই এইভাবে জুতো মারছ আমায়?

    এই দেখ–

    মলিনা আস্তে এগিয়ে আসে। ওর একটা হাত ধরে বলে, রেগে অস্থির হচ্ছ কেন? আমি কি তোমায় অপমান করছি? যারা আজ অকারণে রাতদিন অপমান করছে, তাদের মুখের মতো উত্তর দিতে চাইছি। দুটো মানুষ যদি বাসা খুঁজে বেড়ায়, ও ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবতে পারে না লোকে! ব্যতিক্রম দেখলেই ছুরি শানায়, বঁটা নিয়ে তেড়ে আসে, তাই ভাবছি, এই অবধি থিয়েটারই তো করা হচ্ছে, এখন আর একটা নতুন পার্ট প্লে করি। দেখা যাক, কেমন উৎরোই।

    তা প্রথম ধাক্কাটা উৎরোলো বৈকি।

    বলতে গেলে ভালোভাবেই উৎরোলো।

    বাড়িওয়ালা অবশ্য ভাড়াটাদের সঙ্গে এক বাড়িতে নয়, তবে কাছেই তার বড়ো দোতলা বাড়ি। এই অঞ্চলে ছোটোখাটো ভাড়াটে বাড়ি তার বেশ খানকতক আছে। অতএব ব্যবস্থাও আছে।

    বেকার ভাইপো আছে একটা, সে ভাড়াটেদের দেখাশোনা করে। এদের আসার সাড়া পেয়েই বাড়ির চাবি নিয়ে চলে এল। আকর্ণ হাস্যে বলল, যেমন বলেছিলেন, সক্কালবেলাই ঘর-দোর ধুইয়ে রেখেছি। রান্নাঘরে আপনার গিয়ে পাতা-উনুনও আছে, তাক আলমারি, খুব সুবিধের ব্যবস্থা।

    ওকে ভাগাবার তালে সুধানাথ তাড়াতাড়ি বলে, হ্যাঁ, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। যাক, করিয়ে রেখে অনেক উপকার করেছেন। আচ্ছা তাহলে–

    এখন স্পষ্ট বিদায় হও শুনেও নড়ে না ছোঁকরা। তেমনি! ন্যরঞ্জিত মুখে প্রশ্ন করে, শুধু এই দুজন? বাচ্চা-কাচ্চা নেই বুঝি?

    না।

    তা ভালো! খুব ভালো! আমার জ্যাঠামশাই আপনাদের খুব নেক নজরে দেখবে। বাচ্চা-কাচ্চা দুচক্ষে দেখতে পারে না কি না! বলে একজোড়া করে পাখি আসবে, তার সঙ্গে একপাল করে ছানা। তার ওপর থাকতে থাকতে আবার ডিম পাড়বে।

    মলিনা এসেই একটা জানলার ধাপের উপর বসে পড়েছিল। ঘরের মেঝেয় তখনও সকালের ঘর ধাওয়া জল গড়াচ্ছিল, তাই পা-টা গুটিয়ে জড়সড় হয়ে বসেছিল।

    ছেলেটার সঙ্গে কথা কয়নি গোড়ায়। এখন কথা বলে ওঠে, ওঁর বুঝি নিজের ছেলেমেয়ে নেই?

    নাঃ। তাতেই তো বাচ্চা অসহ্য। যে ভাড়াটে পাঁচটা কুচোকাঁচা নিয়ে আসে, তাদের ছুতোনাতা করে উঠিয়ে ছাড়েন। আপনাদের সে ভয় নেই।

    ছোঁকরা যে ঘরভেদী বিভীষণ, তা বোঝা যাচ্ছে। যার খায় তার চাল কাটে। তবে নীরেট বোকা।

    মলিনা একটু নিশ্চিন্ত হয়।

    বলে তোমার জ্যাঠামশাইকে বোললা, বাসা আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই থাকবে। দুজনেই আমরা পরিষ্কার মানুষ।

    হ্যাঁ, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। আচ্ছা আবার আসব। যা সুবিধে অসুবিধে হয় জানাবেন।

    না না, অসুবিধের কি আছে? সুধানাথ বলে ওঠে।

    মলিনা হঠাৎ একটু হেসে ওঠে, তোমার আবার সুবিধে অসুবিধে! সংসারের কিসে কি হয় জানো তুমি? ও ভাই, তোমাদের গোয়ালা আসে তো? আমার তো একটু দুধ চাই। অবিশ্যি বেশি নয়, পোয়াটাক, চায়ের জন্যে।

    পাঠিয়ে দেব, গয়লা পাঠিয়ে দেব—

    ছেলেটা বলে, বাসন মাজা ঝিও তো চাই আপনার?

    বাসন মাজা ঝি? মলিনা হেসে ওঠে, না ভাই, ওসব বাবুয়ানীতে দরকার নেই। আমিই ওনার রাঁধুনী, বাসনমাজুনী, ঘরগুছানি সব।

    এবার সুধানাথ বলে ওঠে, তা বাসনটা মাজবার জন্যে একটা—এই শুনুন, আমাদের তো এই দেখছেন সামান্য বাসন, তিন-চার টাকায় পাওয়া যায় না কাউকে?

    তিন-চার টাকা! ছেলেটা মাথা নাড়ে, পাঁচ টাকার কমে রাজী হবে বলে মনে হয় না। আমাদেরই লোক, বাড়ি বাড়ি বাসন মেজে বেড়ায়। তাই করে মাসে পঞ্চাশ টাকা রোজগার করে।

    আরও খানিক বকবক করে চলে যায় ছেলেটা।

    সুধানাথ বলে, যে প্যাটার্নের ছেলে দেখছি, যখন তখন এসে হানা দেবে মনে হয়।

    মলিনা অদ্ভুত একটু হেসে বলে, তাতে আর ভয়টা কি? পার্টটা কেমন প্লে করা গেল? নিখুঁত হয়নি?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ভালোবাসা চিরকালীন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }