Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ২. ভালোবাসার শালিখ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প29 Mins Read0

    ২. ভালোবাসার শালিখ

    ০৬.

    এই হাসির গল্পের আড়ালে যে গভীর দুঃখবহ এক ঘটনা লুকিয়েছিল তাই ভাবছিল ধূতি। বাস্তুহারা মানুষেরা যে কত নিরুপায় হলে এমন সম্পর্কের কথা ভুলে কলকাতার মতো নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন শহরে একটু মাথা-গোঁজার জায়গা চাইতে পারে তা ভেবেই সে স্তব্ধ হয়ে

    এককাপড়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ছেড়ে যে-মানুষদের এমন আত্মসম্মানহীনেরমতো সামান্য পরিচিত এবং অপরিচিত মানুষের কাছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাইতে হয়, তারা যে কত অসহায় এবং নিরুপায়, তা ভেবেও ধৃতির চোখে জল এসে গেল।

    অথচ আর-এক উদবাস্তু মানিককাকু তাদের নিয়েও এমন হাসির গল্প বানাতে পারেন। ধন্য তাঁদের সব বিপদ ও প্রতিকূলতাকে নস্যাৎ করার ক্ষমতা। এই নির্লজ্জ সাহসও ইহুদিদের সাহসের চেয়ে কিছু কম নয়। দুজন থ্রি-পিস স্যুট পরা ভারতীয় নেতা, নেহরু এবং জিন্না কোনোদিনও জানবেন না এবং জানতে চাইবেনও না যে, তাঁদের দুজনের তাড়াতাড়ি গদিতে আসীন হওয়ার লোভের মূল্য যে কত নিরপরাধ মানুষকে কীভাবে ধরে দিতে হয়েছিল তা ইতিহাসে লেখা থাকবে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি এই অন্যায়কে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছিলেন সেদিন। নাথুরাম গডসে কোনোদিন জানবেনও না যে, তাঁর রিভলভারের গুলির সঙ্গে কত সহস্র সহস্র নিরপরাধ এবং অসহায় মানুষের চোখের জল লেগেছিল। যেদিন, (যদি কোনোদিন তা হয়) এই ভারতবর্ষের প্রকৃত ইতিহাস লেখা হবে কোনো নির্ভীক, সাহসী মানুষের কলমে, সেদিনই পৃথিবীর মানুষে জানবে দেশভাগের পেছনের এই অজ্ঞাত, অশ্রুঝরা সত্য। এই গভীর অন্যায় শুধুমাত্র পূর্ববঙ্গের বাঙালি হিন্দু ও পশ্চিম পঞ্জাবের হিন্দু ও শিখ পঞ্জাবিদের ওপরেই করা হয়েছিল। কাশ্মীরি পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, হাজার হাজার কাশ্মীরি পন্ডিতদেরও কী দুরবস্থায় ফেলেছিলেন সেকথাও সেই ইতিহাসে লেখা থাকবে।

    ধৃতি শুনেছিল যে, মহাত্মা গান্ধির মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছোতেই বাড়িতে হাঁড়ি চড়ানো হয়নি। ধৃতি তখন জন্মায়নি। মা ও বাবা সবে কলকাতাতে এসেছেন দেশ ছেড়ে নতুন করে শিকড় খুঁজতে–মানে, সেই চেষ্টাতে। ওদের পরিবারও কম কষ্ট করেনি, কম লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেনি অনাত্মীয় তো বটেই আত্মীয়দের কাছ থেকেও।

    কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দারা উদবাস্তুদের ঘৃণার সঙ্গে ডাকত রেফুজি বলে। তারা যেন স্বেচ্ছায় ভিটেমাটি ছেড়ে ছিন্নমূল হয়ে কলকাতাতে এসেছিল একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে। ধৃতি জানে না কিন্তু মা-বাবা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের কাছে সেইসব অসম্মানের, অপমানের কথা শুনেছে। সেদিক দিয়ে বাদলদাদুরা কলকাতাতে না গিয়ে নামনি অসমে এসে ভালোই করেছিলেন। তখন নামনি অসমে জমির দাম সস্তা ছিল, প্রায় জলের দামই। তাই প্রত্যেকেরই অনেক জমি কিনে বাড়ি-ঘর এবং ধানজমি করতে অসুবিধে হয়নি। বড়োদিদার প্রায় এক-শো বিঘা জমি ছিল গদাধর নদীর পাশে। তবে নদীর ভয়ে নদীর কাছে বসতবাড়ি কেউই বানাননি। বাড়ি বানিয়েছিলেন নদী থেকে অনেক দূরে তামারহাটের কাছে। কুমারগঞ্জে কুমুদিনীদিদারাও তাই-ই করেছিলেন। তাই বড়োলোকের মতো থাকতে না পারলেও সচ্ছলভাবেই থেকেছিলেন প্রত্যেকেই। প্রচুর ধানজমি ছিল প্রত্যেকেরই। তাই খাওয়ার কোনো অভাব ছিল না কারোরই। মোটা কাপড় আর খাবারের অভাব ছিল না। বড়োদিদার ছেলে-মেয়েরাও সকলেই কোচবিহারের হস্টেলে থেকে স্কুলে পড়াশুনো করেছিল। গান্ধিজির মৃত্যুর পরে রংপুরের হরিসভাতে কীর্তনের বদলে রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিত পাবন সীতা রাম গাওয়া হত বলে শুনেছে। স্বাধীন হওয়ার আনন্দে সকলেই কুঁদ হয়েছিলেন। ধীরে ধীরে সেই স্বাধীনতার নির্মোক ছিঁড়ে স্বাধীনতার আসল চেহারাটা প্রকট হয়েছিল। স্বাধীন হতে গিয়ে তাঁরা সকলেই যে এমন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন তখন তা বোঝা যায়নি।

    নেহরু-জিন্না এবং গান্ধিজির স্বরূপ বুঝতে বুঝতেই তাঁরা সর্বহারা হয়েছিলেন। তখন কেউই বোঝেননি–পরে প্রায় সারাজীবন ধরে এই মেকি স্বাধীনতার মূল্য তাঁরা সকলেই কড়ায় গন্ডায় শুধেছিলেন। ধীরে ধীরে, অতি ধীরে ধীরে।

    শালিখ একসময়ে চুপি চুপি বলেছিল ধৃতিকে, আজ আর তোমার সঙ্গে বেরোনো হবে না ধৃতিদা। সন্ধে নেমে এল। দিনকাল আগের মতো নেই। তুমি কাল সকালে এসো। এখানেই জলখাবার খেয়ে তারপরে আমরা বেরোব। বুঝেছ?

    ধৃতি বলেছিল, বুঝেছি।

    আমি তো আর ছোটো মেয়েটি নই। বড়ো হয়ে গেছি। বোঝো তো?

    বুঝি।

    .

    ০৭.

    বেলের মোরব্বা করেছিলেন কাকিমা। তাই খেয়ে সেদিনের মতো সকলের কাছে বিদায় নিয়ে ধৃতি বড়োদিদার বাড়ির দিকে এগোল। দুপুরে মেঘ করেছিল। এখন মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদ উঠেছে। এখন শুক্লপক্ষ। আজ একাদশী কি দ্বাদশী হবে। আলো ছাড়া পথ চলতে অসুবিধে নেই।

    কাঁচা, ফ্যাকাশে, সোঁদা মাটির গন্ধভরা পথ দিয়ে চলতে চলতে ধৃতি ভাবল কাল ডিঙ্গডিঙ্গার দিকে যাবে। ডিঙ্গডিঙ্গাতে চা-বাগান আছে। ডিঙ্গডিঙ্গাতে হাটও বসে সপ্তাহে একদিন। তামারহাটের হাটের তিন দিন পরে। হাটের দিনে বাঘডোরা গ্রাম থেকে টাটু ঘোড়ায় চড়ে ফেজটুপি মাথায় চড়িয়ে মুনসের সর্দার আসেন। গোরুর গাড়ি, মোষের গাড়ির বলদদের খুলে দেয় হাটুরেরা। অনেক মোষের গাড়িও আসে। হাট থেকে সরষের তেল এবং খোলের গন্ধ ওড়ে, খড়ের গন্ধ, বলদ ও মোষের গায়ের গন্ধের সঙ্গে, পেঁয়াজি, ফুলুরি, নানারকম রসের মিষ্টির গন্ধ ওড়ে, গ্রামীণ মানুষ আর মেয়েদের গায়ের ঘামের গন্ধর সঙ্গে। নানা নারী-পুরুষের গলার আওয়াজ, হাঁস, মুরগি, গোরু, ছাগলের গায়ের এবং ধুলোর গন্ধের সঙ্গে মিলেমিশে সব একাকার হয়ে যায়। এইখানে এলেই আসল ভারতবর্ষের গন্ধ পায় ধৃতি। মনটা ভরে যায়। এখানে লোকসভা, রাজ্যসভা, সুপ্রিম কোর্টের অবাক করা সব প্রাসাদ নেই–রায়বেরিলির কথা এরা কেউ জানে না। দুটি মোটা চালের ভাত আর ডাল, কখনো কখনো হাঁস-মুরগির ডিম আর কচি পাঁঠার মাংস দিয়ে খায় তারা, তারপর ঘামের গন্ধভরা স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে গোরু-মোষের জাবনার মিষ্টিগন্ধে বিভোর হয়ে রাত কাটায় তারা –পরের দিনের যুদ্ধর জন্যে তৈরি হওয়ার জন্য। নিজেদের জমি-জমা বিশেষ কারোরই নেই –অধিকাংশই ভাগচাষি। চাষির জীবনও জীবন-বড়ো সুখের জীবন। এখানে গান্ধিটুপি পরা মানুষ দেখা যায় না–মুসলমানেরা কেউ কেউ নামাজি টুপি পরে–তাও শুক্রবারে। এখানে সকলেই বাংলাতেই কথা বলে–বাঙাল ভাষাতে অথবা রাজবংশী ভাষাতে। কিছু সাঁওতাল, মেচ, রাভা ও বোড়ারাও আসে হাটে। কিন্তু সকলের সঙ্গেই সকলের সদ্ভাব। ছেলেবেলাতে তাই-ই ছিল।

    কুমারগঞ্জে কুমুদিনীদিদার বাড়ির উলটোদিকের লালমাটি-পাহাড় পেরিয়ে পর্বত জুয়ার। আরও উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের দিকের লালমাটির পথে গভীর জঙ্গলের মধ্যে প্রতিবছর বৈশাখের সাত তারিখে বছরে একদিন মেলা বসে পাহাড়ের ওপরে। পায়রা ও মুরগি বলি দেয় মানুষে। কালো পাথরের ওপরে শুকনো পাহাড়ি নালার পাশে নানারঙা তাঁতে বোনা শাড়ি পরা মেয়েরা আর খালিগায়ের পুরুষেরা কলকল করে কথা বলে। পথপাশের পত্রশূন্য গাছের ডালে ডালে নানারঙা ফুলের মতো মুরগি ও মোরগ বসে থাকে। বড়ো বড়ো মাটির হাঁড়িতে খিচুড়ি রান্না হয়–সকলে তাই খায়। তারপর বেলা পড়ে এলে কেউ পায়ে হেঁটে, মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ গোরুর গাড়িতে চেপে যে যার গ্রামের দিকে রওনা হয়ে যায়। পেছনে যায় তাদের লাল-কালো-সাদা অথবা পাটকিলে রঙা পোষা কুকুর।

    এই পাহাড়ে অনেক চিতাবাঘ আছে। কুকুরের যম। তাই অন্ধকার নামার আগে কুকুরেরা বাড়ি ফেরার জন্যে ছটফট করে। পর্বত-জুয়ারে আছে বড়ো বাঘ। রতুজেঠু এখানে একটি বড়ো বাঘ শিকার করেছিলেন। তখন শালিখ ছিল তামারহাটে। গোরুর গাড়িতে চাপিয়ে সেই বাঘকে নিয়ে আসা হয় কুমারগঞ্জ হয়ে তামারহাটে। শুনলে অবাক লাগে, কিন্তু একথা সত্যি যে, বনজঙ্গলের মধ্যে বাস-করা অধিকাংশ মানুষই কখনো বড়ো বাঘ চোখে দেখেনি, যদিও চিতাবাঘ দেখেছে অনেকেই। তাই বড়ো বাঘের নামেই মানুষে ভয়ে কাঁপে। বৈশাখ মাসের এখনও অনেক দেরি। তাই সাত বোশেখির মেলা এবারে আর দেখা হবে না ধৃতির।

    বড়োদিদা ঘরে ছিলেন। বেরিয়ে বারান্দার চেয়ারে বসে বললেন, কয় রাজ্য জয় কইর‍্যা আইলিরে পোলা? শালিখের লগে হইল দেখা? সেখানে খাইলি কী?

    বেলের মোরব্বা।

    ব্যস?

    হ্যাঁ। খেতে তো অনেককিছুই বলেছিলেন কাকিমা। কিন্তু অসময়ে খাওয়া আমার অভ্যেস নেই।

    আর কে আছিল?

    মানিককাকু ছিল। অনেক মজার মজার গল্প করলেন। তারপর ছানুকাকু এল। সে অবশ্য এতক্ষণে কুমারগঞ্জের দিকে রওনা হয়ে গিয়েছে। বুড়িদিদা একা থাকে তো।

    ক্যান? পদি নাই?

    পদিমাসি আসবে কাল থেকে। বাড়ি গেছিল সে।

    একেবারে একা একা থাকন তো মুশকিলই।

    আপনার পরেশ কোথায় গেল?

    স্যাও গেছে তার বাড়ি।

    কোথায় যেন তার বাড়ি?

    মটরঝাড়ে। তার দাদার মাইয়ার বিয়া।

    ভাদ্রমাসে কি বিয়ে হয়?

    না। ভাদ্রমাস মল মাস। বিয়া হইব আশ্বিনে। তার জোগাড়যন্ত্র করা, ন্যাতা-নিমন্ত্রণ করা, নাওরি-ঝিউরিগো খবর দ্যাওন সবই তো করার লাগে। পরিবারে তো আর কেউই নাই। অরা দুই ভাই-ই তো সব।

    পরেশের দাদা কী করে?

    পরেশের দাদা গণেশ রেলের পয়েন্টস ম্যান। মাইনা ভালোই পায়। অগো মায়ের শরীরডা ভালো যাইতেছে না।

    কেন? কী হল? আপনার থেকে তো বয়েসে ছোটোই হবেন।

    হইলে কী অইব। মারণরোগে ধরছে তারে।

    কী রোগ? যক্ষ্মা?

    না যক্ষ্মা নয়। ই-রোগ তলে তলে খাইয়া ফালায় মাইনষেরে।

    রোগটা কী?

    ডায়াবিটিস। তর দাদুরে যে রোগে খাইল। মাইনষটা খাইতে কী ভালবাসত অথচ না খাইয়াই থাকতে হইত। ডালিয়ার রুটি, ডালিয়ার খিচুড়ি আর মুইঠ্যা ট্যাবলেট। পরথমে চোখ দুইডা গেল। তারপরে হার্ট। ই তো আর কইলকাতা নয় যে, কথায় কথায় ইসিজি করন যাইব। একদিন ধুবড়িতে হঠাৎই পথের মধ্যে অ্যাটাক হইল।

    হ্যাঁ শুনেছি। টোনাদাদুর বাড়িতে এসে খাটে শুয়েই শেষ।

    তাহলে তো তুই শুনছসই। মাইনষের যাইতে কী লাগে? বোঝোনের আগেই সব শ্যাষ। ডাক্তার আইয়া ডেথ-সার্টিফিকেট লিখ্যা দিয়া চইল্যা গ্যালেন।

    তাও তো বড়োদিদা, ছোটো জায়গার ডাক্তারেরা এখনও মানুষ আছেন। কলকাতার ডাক্তারেরা শুধুই টাকা বোঝেন। তাঁদের হৃদয় বলে কিছুই নেই। দিনকে দিন অবস্থা আরও শোচনীয়ই হচ্ছে। জেনারেল প্র্যাকটিশনার তো নেই-ই–সেখানে সকলেই স্পেশালিস্ট আর নার্সিংহোম আর হাসপাতালগুলো সব এক একটি কসাইখানা হয়ে উঠেছে। একবার সেখানে ঢোকাতে পারলেই হল। সাধারণ মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয় সব শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ তবুও যদি পেশেন্ট বেঁচে ফেরে। রোগের কারণে যত মানুষে না মরে তার চেয়ে বেশি মরে ডাক্তার আর নার্সিংহোমের হাতে।

    এহনে তো শুনি মেডিক্লেইম না কী সব হইছে।

    তা তো হয়েছে, কিন্তু সে তো আর-এক বিপদ। সম্পদই হবার কথা ছিল কিন্তু সম্পদ না হয়ে বিপদই হয়েছে। ঘোর বিপদ।

    সরকারে কী করে?

    কেউই কিছু করে না। শুধুই বক্তৃতা, শুধুই বাতেল্লা। মানুষগুলোই সব নষ্ট হয়ে গেছে, তা আর কী হবে। শহরের মানুষে এখন বেঁচে থাকে ঈশ্বরের দয়াতে। তিনি বাঁচালে বাঁচে, না বাঁচালে মরে।

    .

    ০৮.

    খাওয়া-দাওয়ার পরে ধৃতি শুতে গেল। শ্রাবণের নির্মেঘ আকাশে নানা রাতচরা পাখি ডেকে ফিরছে। ঘরের জানালাগুলো সব খোলা আছে। কাছেই কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। নানা গাছগাছালির ও ফুলের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে সেই হাওয়া। কলকাতায় পাখা আছে, কিন্তু সেখানে শুধুই ট্রাম-বাসের গন্ধ ও মানুষের কোলাহল। এইরকম নির্লিপ্তি ও শান্তি সেখানে নেই। বাগানে তক্ষক ডাকছে থেকে থেকে। তক্ষকের ইংরেজি নাম গেকো। কিছুদিন আগে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতার চিড়িয়াখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সুশান্তদার সঙ্গে আলিপুরদুয়ার, রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী এইসব জায়গাতে গেছিল ধূতি। সুশান্তদার বন-জঙ্গল, বন্যপ্রাণী, পশু-পাখি সম্বন্ধে জ্ঞান খুবই গভীর। কত কীই যে শিখেছিল অল্প ক-দিনে সুশান্তদার কাছ থেকে। সত্যিই অনেক অনেক কিছুই জানে অনেকে। কিন্তু ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। সুশান্তদার সেই ভালোবাসা আছে। ব্যাচেলর মানুষ–তাঁর সব ভালোবাসা এই বন-জঙ্গল, পশুপাখির প্রতি। তাঁর কাছে থাকলে জ্ঞান তো অনেক হয়ই কিন্তু সবচেয়ে বড়ো কথা প্রকৃতির প্রতি গভীর এক ভালোবাসাও জন্মে যায়। ধৃতি ঠিক করেছে। এবার থেকে সুশান্তদার সঙ্গেই নানা বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে।

    শালিখের কথাও ভাবছিল শুয়ে শুয়ে, ঘুমিয়ে পড়ার আগে। কাকার স্ত্রী সুন্দরী কাকিমার মধ্যে খুব একটা আভিজাত্য ছিল যা সচরাচর গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায় না। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বময়ী মহিলা তিনি। ধৃতি যখন আগে আগে কলেজের পরীক্ষার পরে তামারহাটে প্রতিবছরই আসত তখন প্রায় রোজই সকালে চান করে উঠে শালিখ আসত বড়োদিদার বাড়িতে। বয়েসে শালিখ ধৃতির চেয়ে সাত-আট বছরের বা তার চেয়ে কিছু কম ছোটো ছিল। ফ্রক পরত। সর্বাঙ্গে তেল মেখে চান করত শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত, বর্ষাতে। ভারি পরিচ্ছন্ন ছিল শালিখ সেই অল্পবয়েস থেকেই। আপাদমস্তক পরিচ্ছন্ন।

    রোদের মধ্যে হেঁটে আসত ওদের বাড়ি থেকে। শীতের সময় ছাড়াও অন্য সব সময়ই দুই নাকের পাটাতেই বিন্দু বিন্দু ঘাম জমত। ধৃতি লক্ষ করত যে, তখনও কখনোই ধৃতির চোখে চাইত না শালিখ, যদিও ধৃতি চেয়ে থাকত তার দিকে হ্যাংলার মতো। বড়োদিদার কাছে কোনো-না-কোনো কাজ নিয়েই আসত অথবা কখনো অকাজেই। কাজের কথা বা কাজ শেষ হলে আবার চটি পায়ে ধূলি-ধূসরিত পথ দিয়ে সে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেত।

    ধৃতিকে সকলেই সুন্দর বলেই জানত। তা ছাড়া, কলকাতার ছেলে। ওই অঞ্চলের ওই বয়েসি সব মেয়েই ধৃতির দিকে মুগ্ধচোখে তাকাত। কিন্তু শালিখ ধৃতির দিকে কখনোই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাত না। এমনকী ধৃতি যে আছে তা যেন খেয়ালই করত না। ওর অমন ব্যবহারে শালিখের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেত।

    শালিখের সঙ্গে এক ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল চিঠিতে। সে অনেক পরে শালিখ ক্লাস নাইন-টেন-এ ওঠার পর থেকে। সুন্দর হস্তাক্ষরে চমৎকার চিঠি লিখত শালিখ। ধৃতির কলকাতার বাড়িতে শালিখের চিঠি নিয়ে যদি বা কোনো ঔৎসুক্য ছিল কারও মধ্যে, বিশেষ করে ধৃতির মায়ের মধ্যে কিন্তু তা প্রকাশ করতেন না তিনি। সবচেয়ে বিস্মিত হত ধৃতি যে, শালিখের বাড়িতেও ওর চিঠি নিয়ে কোনো অশোভন ঔৎসুক্য ছিল না কারও মধ্যেই। প্রকৃত শিক্ষিত মানুষদের তেমনই হওয়া উচিত।

    চিঠি প্রত্যেকেরই পুরোপুরি ব্যক্তিগত সম্পত্তি–অন্যের চিঠি পড়া বা সে সম্বন্ধে ঔৎসুক্য কোনো শিক্ষিত পরিবারেই থাকে না। কিন্তু তামারহাট বা কোচবিহারের মতো আধা-শহরে এইরকম মানসিকতা অত্যন্তই বিরল। চিঠির মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে যে সখ্য এমনকী প্রেমও গড়ে ওঠে তার কোনো তুলনা নেই।

    নানা কথা লিখত শালিখ ধৃতিকে। কোচবিহারের হস্টেলের কথা, বন্ধু এবং দিদিমণিদের কথা, ওই অঞ্চলের নানা নদীর মাছের কথা, গাছেদের কথা, তার পোষা বেড়ালটির কথা। যেসব কথা মুখে কখনোই বলত না শালিখ ধৃতিকে। সব অতিসাধারণ কথা অথচ অত্যন্ত অসাধারণ।

    ধৃতি লিখত কলকাতার কথা, তার কলেজের বন্ধুদের কথা, খেলাধুলোর কথা। দুজনের জগৎ সম্পূর্ণই আলাদা ছিল এবং ছিল বলেই ওদের দুজনের চিঠির মাধ্যমে যে বিশেষ সখ্য এবং একে অপরকে পছন্দ করার কথা তা সেইসব চিঠির মধ্যে ধরা থাকত। নিরিবিলি হলে এবং সময় পেলে কখনো দুজনেই তাদের চিঠিগুলি বের করে পড়ত সংগোপনে এবং দুজনেই সেইসব চিঠিকে অমূল্য সম্পদ বলেই মনে করে। প্রেমপত্র যাকে বলে একটি চিঠিও তা ছিল না–কোনো চিঠিতেই দুজনের কেউই কখনো লেখেনি যে, তারা একে অপরকে খুবই পছন্দ করে অথবা ভালোবাসে অথচ চিঠিগুলি ছিল ভালোবাসারই বাহক। ভারি মধুর ছিল সেইসব চিঠির আবেশ। অতিসাধারণ অথচ অমূল্য।

    ধৃতি ভাবছিল এখন শালিখ কী করছে? তারও কি খাওয়া হয়ে গেছে? সে কি তার নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে না ধৃতি যেমন তার কথা ভাবছে শালিখও ভাবছে শুয়ে শুয়ে তার কথা। কী পরে রয়েছে শালিখ এখন? কী পরে শোয় ও রোজ রাতে?

    ভারি জানতে ইচ্ছে করছে ধৃতির।

    গ্রামাঞ্চলে রাত নামার পরে যে এক সুন্দর শান্তি নেমে আসে, সে শান্তি, গাছপালার ও নানা ফুলের গায়ের গন্ধে একটা ঘোরের সৃষ্টি করে আধো-ঘুমে আধো-জাগরণে। দূর থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসে। আরও কম বসতির জায়গাতে শেয়ালের ডাকও শোনা যায়। এইসব মিলে এক মধুর আবহর সৃষ্টি হয়। ভারি এক নিভৃত আবেশ।

    এমনই নানাকথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ধৃতি একসময়।

    .

    ০৯.

    বড়োদিদা মোহনভোগ আর পাঁপড়ভাঁজা করেছিলেন।

    দুপুরে কাঁচকলার ঝুরি, ধোকার ডালনা-মটর ডালের, গতকালই ডাল ভিজিয়ে রেখেছিলেন, লাউয়ের তরকারি, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা দিয়ে, ডাল-ছড়ানো তরকারি আর আনারসের চাটনি করবেন। রাতে, ফুলকো লুচি আর পাঁঠার মাংস। আজকে ডিঙ্গডিঙ্গাতে হাট আছে। সেখানে সাইকেলে করে পরেশকে পাঠিয়েছেন। গতরাতেই পরেশ এসে হাজির হয়েছে।

    বড়োদিদা বললেন, বৈদ্যরে আইতে কইছি, অনু এখানেই নাই, গৌরীপুরে গেছে। রাঙাপিসির ভালো নাম অনু। অনুপমার সংক্ষিপ্তি। বললেন, শালিখ ছেমড়িরেও আইতে কইবি। তুই যাইয়্যা সঙ্গে কইর‍্যা লইয়া আইবি আবার পোঁছাইয়াও দিয়া আইবি। পায়েসও করবনে। এত দুধ খাইব কেডা? তাই অন্য সময়ে পরেশ যাইয়া চায়ের দোকানে বিক্রি কইর‍্যা আসে। তুই যতদিন আছস ততদিন দুধ দিতে পারব না–কইয়া দিছে দোকানিরে।

    তারপরে বললেন, ফেনাভাত কবে খাইবি তা ক। হাঁসে এহনে অনেকই ডিম পাইড়তাছে। ডিমও তো সবই প্রায় বেইচ্যা দিই। পরেশ খায় যা খাওয়ার, আমি বিধবা মাইনষে ডিম খাই না। একা আর ক-টা খাইব পরেশ? ফেনাভাতের সঙ্গে আর কী খাইবি?

    আলুসেদ্ধ, কুমড়ো সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধ, গাওয়া ঘি দিয়ে ভালো করে মেখে–সঙ্গে কাঁচাপেঁয়াজ আর কাঁচালঙ্কা। ব্যাস আর কিছুই লাগবে না। আপনাদের জমির ফেনাভাতে যা সুগন্ধ। গন্ধকে যদি আলাদা করে নিয়ে যাওয়া যেত তবে কলকাতাতে নিয়ে যেতাম সেই গন্ধ বোতলে ভরে।

    তার কী দরকার। তরে টিনে কইর‍্যা চালই দিয়া দিমু। তাই খাইতে পারবি অনে। তুলাইপন্ধী চাইলও দিয়া দিমু। হক্কলে খাইয়া কী কয় তা আমারে চিঠিতে জানাইয়া দিতে ভুইলবি না কিন্তু।

    সকালের খাওয়ার পরে ধৃতি বলল, ঠিক আছে বড়োদিদা। আমি তবে এগোই। শালিখ আবার বসে আছে। কাল তো কোথাওই যাওয়া হল না-রাত হয়ে গেল। সকালেও কখন বৃষ্টি আসে কে জানে!

    হ। যা। আমার কথার কি শ্যাষ আছে? কথা শ্যাষ হওনের নয়। যা তুই। সময়মতো বাড়ি ফিইর‍্যা আসিস য্যান। আমি রাঁইধ্যা-বাইড়া বইস্যা থাকুম একা একা। ও আজ অবশ্য পরেশ ছ্যামড়াডা আছে। এহনে মাংস কেমন আনে দেহি। ডিঙ্গডিঙ্গার হাটে এক্কেরে ছুটো ছুটো পাঁঠা কাটে মদনা।

    মদনাটা কে?

    আরে অরই তো মাংসের দুকান। ডিঙ্গডিঙ্গা ছুটো জাগা হইলে কী হয়, তাও প্রতি হাটবারে সাত-আইটটা পাঁঠা কাটতে হয় তার।

    বলেই বললেন, মেটে আইনতে কমু? মেটে-চচ্চড়ি খাইবি নাকি একদিন পরোটা দিয়া?

    যা দেবেন তাই খাব। আপনাদের খালি খাওয়া আর খাওয়া। সাধে কি আর মানুষে আমাদের বাঙাল বলে গালাগালি করে।

    হ। আমরা ওইরকমই। তুই দেহি কইলকাতায় থাইক্যা থাইক্যা নেবু-নুন-নঙ্কা-নুচির দলে ভিইড়া গেলি গিয়া।

    সকাল সব জায়গাতেই স্নিগ্ধ কিন্তু তামারহাটের সকালের কোনো তুলনা হয় না। শালিখকে নিয়ে বেরিয়েছিল ধৃতি, কাকিমাকে বলে।

    কোথায় যাবে?

    কোনো বিশেষ কোথাও নয়। এমনিই একটু ঘুরে আসব। অনেকদিন বাদে এলাম তো তামারহাটে।

    কলকাতার মানুষের কি ভালো লাগবে তামারহাট?

    আমার তো খুবই ভালো লাগে।

    কাকিমা বললেন, দেখো ভাদ্রমাসের রোদ্দুর, মাথায় বেশি রোদ্দুর লাগিয়ো না। জ্বরে পড়বে।

    না। আমাদের কিছু হবে না। এই বয়েসে রোদ-বৃষ্টিতে কিছু হয় না।

    যা ভালো বোঝো।

    বাইরে বেরিয়ে শালিখ বলল, কোনদিকে যাবে?

    ডিঙ্গডিঙ্গার দিকে।

    কেন? ডিঙ্গডিঙ্গার দিকে কেন?

    ডিঙ্গডিঙ্গা জায়গাটা আমার ভারি পছন্দ। সামনে চা-এর ফ্যাক্টরি আর পেছনে বাগান। ম্যানেজারও বাঙালি, কর্মচারীরাও বেশিরভাগই বাঙালি। উত্তেজনাহীন নিরিবিলি জায়গা। একমাত্র হাটের দিনেই যা একটু শোরগোল। বড়োদিদা বলছিলেন আজ তো ডিঙ্গডিঙ্গাতে হাট বসতে বসতে বারোটা-একটা হবে। বড়দিদা পরেশকে পাঠাবেন আজ ওখান থেকে মাংস কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাংসের দোকান তো এখনও খোলেনি। তবে খুলবে একটু পরেই। পরেশ জানে সেকথা। সাইকেল নিয়ে আসবে, মাংস নিয়ে ফিরে যাবে।

    খুব ছোটো ছোটো পাঁঠা কাটে মদন।

    হ্যাঁ। তাই তো বলছিলেন বড়োদিদা। ও তোকে তো বলাই হয়নি। আজকে রাতে তোকে খেতে বলেছেন দিদা।

    তাই? আমার তো রোজই নেমতন্ন ওবাড়িতে। কোচবিহার থেকে এলে প্রায় রোজই নেমতন্ন থাকে আমার।

    এমন সময়ে কুমারগঞ্জের দিক থেকে বাসটা এসে পড়ল ভ্যাঁকো ভ্যাঁকো করে বালব হর্ন বাজাতে বাজাতে।

    ধৃতি বলল, যাবি নাকি?

    কোথায়?

    ভারতীদিদির জামাইবাবু গুমা রেঞ্জের রেঞ্জার। বেশ বড়ো বাংলো। দোতলা। বন বিভাগের সব বাংলোই দোতলাই হয়। তবে সবই কাঠের বাংলো। পাকাবাড়ি প্রায় হয়ই না। পরে হয়তো হবে। লাগোয়া রেঞ্জ-অফিস। ঘণ্টা দুয়েক বাদে কচুগাঁও থেকে বাস আসবে–ধুবড়ি যাওয়ার জন্যে। সেই বাসে উঠে ফিরে যাব। তামারহাটে তো কত লোকই আসে কিন্তু দিদি জামাইবাবুর কাছে আসে না। অথচ কত কাছে।

    চল তাহলে।

    হাত তুলতেই বাস দাঁড়িয়ে গেল। গৌরীপুর কুমারগঞ্জ সব জায়গা হয়ে আসছে। কচুগাঁওয়ের প্যাসেঞ্জারই বেশি। ডিঙ্গডিঙ্গা থেকে হয়তো উঠবে ক-জন। নামবেও ক-জন। আজ হাট আছে বলে কিছু বেশি মানুষে আসবে-যাবে।

    ধৃতি বলল, তোকে তো বলাই হয়নি, গতবছর কলকাতা বইমেলাতে ডিঙ্গডিঙ্গার মিস্তিমাসির সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেছিল। সঙ্গে তাঁর কলকাতার বাসিন্দা ভাসুরপো। ইনকামট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করে। দেখা হয়ে কী ভালো যে লেগেছিল। অনেক বই কিনেছিলেন–সবই বাংলা বই। আমাকে বললেন, আমাদের ওদিকে আসো না ধৃতি? গতবছরে রাঙামাটির সাতবোশেখির মেলাতে এসেছিলে। মনে আছে? কত মজা হয়েছিল। পারলে সামনের বছরে আবার এসো।

    ডিঙ্গডিঙ্গাতে পৌঁছোবার পরে মিন্তিমাসি বললেন, সঙ্গে এই মেয়েটি কে?

    ও ভানুকাকুর মেয়ে। শালিখ। কোচবিহারে হস্টেলে থেকে পড়ে। এবারে বি এ পরীক্ষা দেবে।

    তামারহাটেই থাকে?

    হ্যাঁ।

    নিশ্চয়ই কোনো মিত্তিরের মেয়ে হবে। কার মেয়ে?

    ভানু মিত্তিরের মেয়ে।

    তাই? কী নাম তোমার?

    শালিখ।

    বাঃ, ভারি সুন্দর নাম তো। তোমার মা আমাকে খুব ভালো করে চেনেন। আমার নাম মিন্তি। বোলো তোমার মাকে। কলকাতাতে তোমার মামাবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছেই। ছেলেবেলাতে কলকাতাতে আমরা একই স্কুলে এবং একই ক্লাসে পড়তাম। তোমার মাকে বোলো, একদিন এসে ডিঙ্গডিঙ্গাতে সারাদিন কাটিয়ে যাবে।

    তারপর বললেন, তোমার মাসি পাগু কেমন আছে? তোমাদের বাড়িতেই তো থাকত। তাই না?

    হ্যাঁ। কিন্তু মাসির বিয়ে হয়ে গেছে আমার ছটোকাকার সঙ্গে। এখন ওঁরা ধুবড়িতে থাকেন। একটি বাচ্চাও হয়েছে।

    তাই? বা :, বেশ ভালো লাগল শুনে।

    তারপর বললেন, পাগু একটা গান গাইত, খুব ভালো লাগত আমার। গলাও ছিল খুব। সুন্দর।

    কী গান?

    যেন কার অভিশাপ লেগেছে মোর জীবনে।

    শালিখের মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। বলল, ঠিকই তাই।

    এদিকে বাসের ড্রাইভার ভ্যাঁকো ভ্যাকো করে হর্নই দিয়ে যাচ্ছিল।

    শালিখ বলল, আমরা গুমা রেঞ্জে যাব। পরে একদিন এসে ভালো করে গল্প করব। কেমন?

    মিন্তিমাসি লজ্জিত হয়ে বললেন, ঠিক আছে। তোমরা এসো। কলকাতা থেকে কত মানুষই তো আসে কিন্তু ঠ্যাঙ্গাইয়া এই ডিঙ্গডিঙ্গাতে আসে না কেউই।

    ডিঙ্গডিঙ্গা থেকে গুমা রেঞ্জ যেতে বাসে খুব বেশিক্ষণ লাগল না। ডিঙ্গডিঙ্গার আগে ও পরে ফাঁকা জায়গাই ছিল বেশি। ধানখেত, বাঁশঝাড়। এখন অনেক বাড়ি-ঘর হয়ে গেছে।

    ধৃতি ভাবছিল, মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। সব জায়গাই আগে কত নির্জন ছিল। মানুষ কত কম ছিল। অথচ এখন ধীরে ধীরে সব জায়গাতেই কেমন ভিড় হয়ে যাচ্ছে–সব জায়গাতেই মানুষ। ভালো লাগে না।

    মিনিট পনেরো যাওয়ার পরেই পথটা ডানদিকে একটা সমকৌণিক বাঁক নিয়েছে। পথের মোড়ে একটা টিনের বোর্ড লেখা আছে গুমা রেঞ্জ। পথের ডানদিকে একটা বাংলোও দেখে মনে হল বনবাংলো। পথটা ডানদিকে ঘুরেই একটা ছোটো পাহাড়ে উঠেছে। জঙ্গলে ঘেরা। বেশিই সেগুনের বন। বাসটা থামল ওদের নামাবার জন্যে। ওরা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল বাস থেকে। বাংলোটার ডানদিকে একটু ভোলামতো জায়গা যেখানে প্রচুর বেতগাছ। কেয়াগাছও আছে। শ্রাবণের সকালে কেয়ার গন্ধে পুরো বাংলোর হাতা ম ম করছে।

    জামাইবাবু রেঞ্জারের অফিসে ছিলেন, বনবিভাগের খাকি উর্দি পরা তিন-চারজন মানুষ ইতি-উতি ঘোরাঘুরি করছিলেন। ওরা দোতলার সিঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছোতেই দোতলার বারান্দাতে বেতের চেয়ারে-বসা ভারতীদি দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, আমাদের কী সৌভাগ্য আজ।

    তার পর শালিখকে বললেন, কী রে! পথ ভুলে এলি বুঝি!

    তার পরে কাঠের সিঁড়িতে ধপাধপ শব্দ তুলে ভারতীদি নীচে নেমে এসে ওদের আপ্যায়ন করে ওপরে নিয়ে গেলেন।

    ধৃতিকে বললেন, ধৃতি না? কত বড়ো হয়ে গেছ তুমি!

    শালিখ বলল, শুধু লম্বাতেই বড়ো হয়নি, ধৃতিদা তো এখন কলকাতার স্টেট ব্যাংকে বড়ো চাকরি করে। এদিকে তো বড়ো-একটা আসেই না আজকাল!

    তাই? বা : খুবই আনন্দের কথা।

    তারপরে বললেন, নীহারদিদার কাছেই উঠেছিস? দিদা কেমন আছে রে? কুমুদিনীদিদা? তাও তামারহাটের নীহারদিদার খোঁজখবর পাই মাঝেমধ্যে, কিন্তু কুমারগঞ্জের কুমুদিনীদিদার কোনো খবরই পাই না। কেমন আছেন দিদা? বেচারা একা একা থাকেন।

    একেবারে একা নন। পদিমাসি তো তাঁর ওখানেই থাকেন। তা ছাড়া, ছানুমামাও আছেন। তিনি খোঁজখবর করেন।

    তাই! তাও ভালো।

    তারপর বললেন, আগামী বছর বৈশাখ মাসে এসো। আবার যাব আমরা সাতবোশেখির মেলাতে। গতবারে কত আনন্দ হয়েছিল, মনে আছে তোমার?

    আছে।

    এসো তাহলে। বাদলদাদু চলে যাওয়ার পরে যোগাযোগ তো ছিন্নই হয়ে গেছে বলতে গেলে।

    তারপর বললেন, শিকারি বাদলদাদুর কথা খুবই মনে আছে।

    সেই কথাতে ওরা সকলেই হেসে উঠল। এই শিকারি নামের একটা ভূমিকা ছিল। ডায়াবিটিসে চোখ প্রায় খারাপই হয়ে গেছিল বাদলদাদুর। একদিন সন্ধের সময়ে পরেশ যখন মুরগির ঘর বন্ধ করতে যায় মুরগিরা খুব চেঁচামেচি করতে থাকে। তখন সন্ধে হয়ে গেছিল। মুরগিদের দোতলা-ঘরের সেই চেঁচামেচিতে পরেশ একটু ভালো করে খাঁচার ভেতরে চোখ চালিয়ে দেখে কী একটা জন্তু খাঁচার ভেতরে নড়াচড়া করছে। বাদলদাদুকে বলাতে বাদলদাদু বন্দুক নিয়ে আসেন। পরেশ খানিকটা উঁচু করে ধরে লণ্ঠন দোতলার দিকে। বাদলদাদু কিছুই দেখতে পান না। কিন্তু আন্দাজেই একটি গুলি চালিয়ে দিয়ে পরেশকে বলেন, চল। কাল সকালে দেখা যাবে। ভাম-টাম হবে। মুরগির ঘরে আর কী ঢুকবে।

    পরেশ পরদিন সকালে খাঁচার কাছে গিয়ে খাঁচার দরজা খুলে দেখে একটা ছোটো চিতাবাঘ খাঁচার মধ্যে মরে পড়ে আছে।

    তারপরে তো হুলুস্থুল কান্ড। তখন থেকেই বাদলদাদুর বাঘ-শিকারি হিসেবে খ্যাতি হয়ে গেল। তখন তামারহাটে প্রচুর চিতাবাঘ ছিল। রতুজেঠু যে কত মেরেছেন তার ঠিকানা নেই।

    শালিখদের বাড়ির নতুন পায়খানার দরজা খুলেই একদিন মানিককাকু দেখেন কী একটা বড়ো জন্তু পায়খানার মধ্যে বসে আছে। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে ভানুদার কাছ থেকে বন্দুকটা চেয়ে এনে দরজাটা ফাঁক করেই একটি গুলি চালিয়ে দিয়েছিলেন। জন্তুটার খুবই বেগ পেয়েছিল নিশ্চয়ই। দরজা ভালো করে খুলে দেখা গেল একটা হায়না মরে পড়ে আছে। শিকার-করা জানোয়ার যাই-ই হোক না কেন শিকারিরা যে বহুতই ভালো তার প্রমাণ একগুলিতে শিকার ধরাশায়ী করার কেরামতি। তার পর থেকে অনেকদিন মানিককাকুকেও হায়না-মারা শিকারি হিসেবে ডাকা হত।

    ভারতীদি একটা ফলসা-রঙা শাড়ি এবং সাদা ব্লাউজ পরেছিলেন। ভারতীদির ফিগার খুবই সুন্দর ছিল। মাজা রং। গলাতে একটি সোনার সরু চেন।

    লেবু-চিনি-নুনের শরবত খাওয়ানোর পরে ভারতীদি বললেন, তোর জামাইবাবুকে খবর পাঠিয়েছি। উনি এলে তোদের দুপুরে না খাইয়ে ছাড়বেন না।

    ওরা সমস্বরে বলল, দুপুরে এখানে খেলে নীহারদিদা প্রাণেই মেরে ফেলবেন। পরে একদিন হবে।

    পরে আর কবে হবে। আমার যে অসুখ হয়েছে তাতে ক-দিন বাঁচব তার ঠিক নেই। আজই খেয়ে যা। তোরা আমি থাকতে আর এসেছিস!

    জামাইবাবু খবর পেয়ে বাংলোতে এলেন, খুব হাসিখুশি রসিক মানুষটি। ওরা বারান্দাতে বসে গল্প করছে এমন সময়ে বাংলোর গেট দিয়ে রতুজেঠুর গাড়ির মতো একটি টি-মডেল ফোর্ড গাড়ি রাইমানার দিক থেকে এসে বাংলোর হাতাতে ঢুকল। ধুবড়ির কাসেম মিয়া আর আবু ছাত্তার সওয়ারি। কাসেম মিয়াই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁরই গাড়ি।

    মোটা-সোটা ফরসা হাসিখুশি, সব সময়েই পান-খাওয়া, লুঙ্গি-পরা কাশেম মিয়া আর মিতভাষী ছোটোখাটো রোগা চেহারার আবু সাত্তার গেছিলেন কচুগাঁও, রাইমানা হয়ে যমদুয়ারে।

    কী শিকার হইল? জামাইবাবু জিজ্ঞেস করলেন। বেআইনি করে কিছু মারো নাই তো তোমরা?

    আমরা তো সারাজীবনই বেআইনি শিকারই করলাম। আইন মাননের দীক্ষাই আমাগো নাই। আইন মাননের কথা উঠতাছে কীসে?

    হাসির ফোয়ারা ছুটল। অনিচ্ছুক ধৃতিকে আর ভারতীদিকে কাশেম মিয়া জোর করে পান খাইয়ে দিলেন। সঙ্গে জবরদস্তি করে একটু করে জর্দাও।

    শীতকালে কাশেম মিয়ার গলাতে একটি লাল-কালো চেক-চেক মাফলার থাকে। এখন সেটা নেই। তবে এখন পরনে লুঙ্গি আর হাফ-হাতা শার্ট।

    কাসেম মিয়া বললেন, তোমরা যাবা কোথায়? ডিঙ্গডিঙ্গায় হাট করবা নাকি?

    না না, ডিঙ্গডিঙ্গাতে হাট করব না। বড়োদিদা পরেশকে পাঠিয়ে মাংস কিনিয়ে নিয়েছেন। সাইকেল নিয়ে এসেছিল। সে এতক্ষণে মাংস কিনে ফিরেও গেছে নিশ্চয়ই।

    আবু সাত্তার বললেন, আমাগো উঠবার লাগব এখনই।

    শালিখ বলল, কোথায় যাবেন? এত তাড়া কীসের?

    আরে জ্যোতি লাহিড়ির বাসায় যাওন লাগব। গৌরীপুরে। আজ আমাগো খাইতে কইছে দুপুরে।

    কাসেম মিয়া বললেন, তার লইগ্যা একখান ময়ুর মাইর‍্যা লইয়া যাইতাছি। গরম পড়তাছে, বেশি দেরি হইলে মাংস খারাপ হইয়া যাইব অনে। তিনি আবার ময়ুরের মাংস খুব ভালোবাইস্যা খান।

    তারপরে বললেন, তোমরা যদি দেরি না করো তাইলে আমাগো সঙ্গেই যাইতে পারো। নামাইয়া দিয়া যামু তোমাগো তামারহাটে।

    আবু সাত্তার এই অঞ্চলের নামকরা শিকারি। বাঘ আর চিতার চামড়া বিক্রিই তার প্রধান রোজগার। যাকে বলে, চোরাশিকারি। সকলেই একথা জানে, কিন্তু তাকে হাতে-নাতে কেউই আজ অবধি ধরতে পারেনি। জামাইবাবু রেঞ্জার হলেও ময়ূর বা কোটরা হরিণ মারার অপরাধে কখনো সাত্তারকে কিছু বলেননি। ছোটোবেলা থেকে চেনেন ওকে। সাত্তারের বাবাও চোরাশিকারি ছিলেন। বাঘের আক্রমণে দু-দুবার হাসপাতালেও ছিলেন। তখন জানোয়ার ছিল প্রচুর। শিকারি কম। এবং বাঘ-মারা শিকারিদের লোকে ত্রাতা বলেই মনে করত। তারা যে অপরাধী একথা বনবিভাগের লোক ছাড়া কেউই মনে করত না। সাত্তার খুব কম কথা বলত। বন-জঙ্গলের সান্নিধ্যই হয়তো তাকে নীরবতার শিক্ষা দিয়েছিল। তাকে কেউ কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদও করতে দেখেনি। সে থাকত ধুবড়ি শহরেই।

    ভারতীদির বরের কোয়ার্টারের কাছেই একটা পুকুর খুঁড়েছে বনদফতর থেকে। সেখানে পিসিকালচার হচ্ছে।

    জামাইবাবু বলছিলেন, মাছেরা কী খায় জানো?

    ধৃতি চুপ করেছিল।

    জামাইবাবু বললেন, অ্যালগি, ফাঙ্গি এসব। ফাঙ্গি মানে বুঝলে? ফাঙ্গাস থেকে এসেছে শব্দটা। শাপলা বা পদ্মেরও শিকড় থাকে। কাদার মধ্যে পোঁতা থাকে সেই শিকড়। পাঁকের মধ্যে জন্মায়। পাঁকের সংস্কৃত নাম হচ্ছে পঙ্ক। পঙ্কের মধ্যে জন্মায় তাই পদ্ম ফুলের অন্য নাম পঙ্কজ।

    তারপর বললেন, ফাঙ্গি ও অ্যালগি ছোটো ছোটো শ্যাওলা। জলের মধ্যে ভেসে বেড়ায়। হাঁসেরাও খায় তাদের যেমন মাছেরাও খায়।

    তারপরে বললেন, আরও সহজ করে বললে বলতে হয় এই যেমন আমরা। আজকে যারা তামারহাট, কুমারগঞ্জ, গৌরীপুর, ধুবড়ি বা কুচবিহারে এসে থিতু হয়েছি তারা সবাই অ্যালগি বা ফাঙ্গি। অবশ্য এসব জায়গার সব বাসিন্দাই তাই নয়। যারা উদবাস্তু তারাই অ্যালগি বা ফাঙ্গি। কারও দেশ ছিল বরিশালে, কারও খুলনাতে, কারও কুমিল্লাতে, কারও নোয়াখালিতে, কারও চট্টগ্রামে, কারও বা রংপুরে বা রাজশাহিতে, কারও বা ঢাকাতে এমনই আর কী। তারপর আমরা এই অ্যালগিরা ভেসে ভেসে বেরিয়ে অচেনা অজানা জায়গায় থিতু হয়েছি। আমাদের পরের প্রজন্ম সেইসব জায়গার বাসিন্দা বলেই গণ্য হবে। কেউ কেউ বা এক জায়গাতে থিতু হতে পারেননি–তাঁরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে ক্রমাগত ভেসে বেরিয়েছেন। আজকে যেখানে থিতু হয়েছেন বলে মনে করছেন সেখান থেকেও কবে যে আবার উৎখাত হবেন তারও কোনো ঠিক নেই। আমাদের, মানে, এই অ্যালগি আর ফ্যাঙ্গিদের খাচ্ছে এবং অনবরত খেয়ে যাচ্ছে গত ষাট বছর ধরে উত্তর ভারতের ভাগ্যবান রুই-কাতলারা। আমাদের ভবিষ্যৎ এখনও দোলায়মান। ছোটো ছোটো শ্যাওলার মতো, হাঁসের খাদ্য হয়ে, মাছের খাদ্য হয়ে। আমাদের সব কৌলীন্যই নানা পানা-পুকুরে ধুয়ে গেছে নিজেদের অজান্তেই।

    ধৃতি ভেবেছিল একদিন শেষ বিকেলে শালিখকে সঙ্গে করে ডিঙ্গডিঙ্গার পাশের মাঠের মস্ত শিমুল গাছটার পশ্চিমে জ্বলজ্বলে সন্ধ্যাতারাটাকে দেখাবে–যে শিমুল গাছটার ডালে এককড়িদার সঙ্গে বন্দুকহাতে শুয়োর মারতে বসে যেমন জ্বলতে দেখেছিল, তেমনই দেখাবে।

    .

    ১০.

    ভারতীদির অভিমানের কথাটা যে এতবড়ো সত্যি হবে তা ওদের দুজনের কেউই ভাবেনি, দুঃস্বপ্নেও। কথার কথা ভেবেছিল। কিন্তু অনেক অবিশ্বাস্য কথাই যেমন সত্যি হয় তেমনই ভারতীদির কথাটাও সত্যি হয়েছিল। তাঁর ওখানে ওদের খাওয়াও আর হয়নি, পরের বছরে সাতবোশেখির মেলাতেও যাওয়া হয়নি একসঙ্গে। ভারতীদি সেই বছরই পুজোর পরেই মারা গেছিলেন। তখনও ক্যানসার রোগটা এমন ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু ভারতীদির পেটে ক্যানসার হয়েছিল। ডাক্তার নাম বলতে পারেননি, কিন্তু পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, খেতে না পারা এবং দিনে দিনে রোগা হয়ে যাওয়া এইসব উপসর্গ নিয়েই উনি একদিন চলে গেছিলেন। তামারহাটে তাঁকে এনে গঙ্গাধর নদীর পাড়ে দাহ করা হয়েছিল। খবর পেয়েছিল শালিখের চিঠিতে ধৃতি কলকাতাতে বসে।

    পেছন ফিরে দেখলে আজ অনেক কথাই মনে পড়ে ধৃতির। সেদিন আলোভরা সকালে গুমা রেঞ্জের রেঞ্জারের বাংলোর বারান্দাতে যেসব মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, অত আনন্দ করা হয়েছিল আজ তাদের মধ্যে কেউই নেই। শুধু ধূতি আর শালিখ ছাড়া।

    ভারতীদি সে বছরই পুজোর আগেই মারা গেছিলেন। ক্যানসারে আজকাল প্রতিঘরে ঘরে কত মানুষে মারা যাচ্ছেন। পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসার খরচে। কী নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন রোগীরা। কত ডাক্তার, কত নার্সিংহোম, কত কেমোথেরাপি। কিন্তু এত করেও শহরে-নগরে সুস্থ করে তোলা যাচ্ছে ক-জনকে? প্রায় সকলেই চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তামারহাট, ডিঙ্গডিঙ্গা পেরিয়ে গুমা রেঞ্জের রেঞ্জারের স্ত্রী যে চলে গেলেন তা প্রায় নীরবেই –কোনো আড়ম্বর করে নয়। ভাবলে মনে হয়, কলকাতা বা অন্য বড়ো শহরের ডাক্তারেরা এবং নার্সিংহোমেরা সকলে মিলে এই রোগীর প্রত্যেক পরিবারকে নিঃস্ব করার সাধনাতেই যেন ব্রতী আছেন। না লাঘব হচ্ছে রোগীর কষ্ট, না বাঁচানো যাচ্ছে রোগীর প্রাণ। এঁরা রোগী এবং রোগিণীদের একটু শান্তিতে মরতে দিতেও নারাজ।

    ধৃতি সেবারে কলকাতায় ফিরেই মানিককাকার কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েই জানতে পারে ঘটনাটির কথা। মানিককাকু কখনোই তাকে চিঠিপত্র লেখেননি। কিংবা লিখলেও তা সৌজন্যের চিঠি, পোস্টকার্ডে লেখা। লেখা থাকত তুমি আমার আশীর্বাদ জানিবা। যেহেতু সে একাই থাকত কেউই লিখত না বাসাস্থ সকলকে যোগ্য সম্ভাষণ জানাইবা।

    তাই মানিককাকুর কাছ থেকে দু-পাতার খামের চিঠি পেয়ে একটু অবাকই হয়ে গেছিল ধৃতি।

    সেই চিঠিতে জানতে পারল যে আবু সাত্তার একই দিনে পরপর তার পাঁচজন নিকট আত্মীয়কে গুলি করে মারে। জমি-জমা নিয়ে কীসব বিবাদ ঘটেছিল এবং সাত্তারের মতে, সে যখন বনে বনে বাঘের পেছনে ঘুরে বেড়াত সেই অবসরে তারা সাত্তারের সব জমি-জমা জোচ্চুরি করে নিজেদের নামে করে নিয়েছিল। সাত্তারের ছেলে-মেয়ে কী তা জানত না ধৃতি, সে বিয়ে করেছিল কি না তাও নয়। যে ব্যাঘ্র-হৃদয় বাঘ-শিকারিকে শহরবাসী কিছু মানুষ এমন করে ঠকাতে পারে তাদের অন্য শাস্তি আর কী দেবে সাত্তার। মামলা লড়ার পয়সাও ছিল না সাত্তারের। তার সম্পত্তি বলতে ম্যান্টন কোম্পানির একটি আঠাশ ইঞ্চি ব্যারেলের দোনলা বন্দুক, একটি পুরোনো সাইকেল, দুটি খাকিরঙা শার্ট, একটি খাকি প্যান্ট আর দু জোড়া লুঙ্গি এবং একটি ফতুয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বাঘের কাছ থেকে অথবা বাঘের প্রতি যে বিচারে সে চিরদিন বিশ্বাস করে এসেছে সেই বিচারই সে বরাদ্দ করেছিল তার শহুরে, শিক্ষিত আত্মীয়দের প্রতি।

    মানিককাকু লিখেছিলেন, তার সঙ্গে জেলে দেখা করতে গেছিলাম। কোনো অনুতাপ ছিল না, পাঁচটি খুন দেড়ঘণ্টা সময়ের মধ্যে করায়। সাত্তার নাকি বলেছিল যে, দুঃখ মাত্র একটাই,–যে-সব মহৎ, সাহসী এবং অকুতোভয় সভ্য জানোয়ারদের আমি মেরেছি যে বন্দুক দিয়ে, তা দিয়েই ওই সব অসভ্য নীচ মানুষদের মারলাম আমি। তাদের এর চেয়ে অনেক বীভৎস মৃত্যু পাওনা ছিল। সাত্তারকে দেখে বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না যে, সেই ছোটোখাটো মিতবাক এবং সবসময়েই স্মিতহাসি-মুখের সেই মানুষটার বুকের মধ্যে এত রাগ থাকতে পারে।

    তারপরে মানিককাকু লিখেছিলেন, ধুবড়ির কোর্টে মামলায় সাত্তার হেরে গেছে। পুলিশ সাইকেলে-চড়া তাকে বন্দুকসুদ্ধ অ্যারেস্ট করেছিল শেষ খুনটা করে সে যখন সেই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বেরুচ্ছে। ওর বিপক্ষে সাক্ষী ছিল অনেক, উকিলও ছিল না। উকিলদের তো বিবেক বলে কিছু ছিল না। কোনো জায়গার উকিলদেরই থাকে না। তার পক্ষ সমর্থন করার জন্যে একজনও ছিল না। মামলা হেরে গিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আপিল করেছে। সেখানে একজন উকিলও ঠিক করেছে কাসেম মিয়া। যা সত্য বা ন্যায় তা প্রমাণ করার জন্যে কোনোদিনই উকিল পাওয়া যায় না। শামলা গায়ে চাপিয়ে সারে সারে উকিলেরা আইন নামক তামাশাতে শামিল হয়। অথচ ধৃতি, আমি অথবা তুই তো গুয়াহাটি হাইকোর্টে গিয়ে সাত্তারের হয়ে সওয়াল করতে পারব না। কোনো উকিলকে সাত্তারের লাগাতেই হবে। এ ব্যাপারে সাত্তারের বন্ধু যা করার করছে, সে গুয়াহাটিতে গিয়েই রয়েছে এইজন্যেই। আমরা এখন যতটুকু করতে পারি তা হচ্ছে ওকে একটু আর্থিক সাহায্য করা। আমার সামর্থ্য আর কতটুকু? সবই তো তুই জানিস। পোস্ট-অফিসে পনেরো হাজার টাকা ছিল–সারাজীবনের সঞ্চয়। আমার আবার সারাজীবন। জীবনটা তো হেসেখেলেই কাটিয়ে দিলাম। নেহাত ভানুদাবউদির দয়ায় দুবেলা ডালভাতটা জোটে। বউও নেই, ছেলে-মেয়েও নেই–ভবিষ্যতের ভাবনা তো আমার নেই। মরার আগে কিছু তো একটা অসুখ-বিসুখ করবেই। নসু ডাক্তার যা করার করবে, তার যেটুকু বিদ্যেবুদ্ধি, কড়া করে একটা মিক্সচার বানিয়ে দেবে। সেটা খেয়ে অক্কা পেলে বৈদ্য এবং অন্য যারা আছে, আমাকে বয়ে নিয়ে বলহরি হরিবোল করে নদীর পাড়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেবে। তাই আমার তো কোনো চিন্তা নেই।

    পোস্ট-অফিস থেকে সব টাকা উঠিয়ে কাসেম মিয়ার গুয়াহাটির ঠিকানাতে পাঠিয়ে দিয়েছি। কাসেম মিয়ার গুয়াহাটির ঠিকানা নীচে দিলাম। তুই যদি দিতে চাস এবং দিতে পারিস যতটুকু পারিস তা এই ঠিকানাতে পাঠিয়ে দিতে পারিস। সাত্তার আমাদের খুবই কাছের মানুষ ছিল। কিন্তু তোর তো তেমন কাছের মানুষ ছিল না। মনামামার সঙ্গে যখন শিকারে যেতিস তখন সাত্তার সঙ্গে যেত যে, সেকথাও জানি। তোর নীহারদিদার কাছে শুনেছি তুই নাকি সাত্তারের সঙ্গে একা একাও দু-চারবার শিকারে গেছিস। সেই সুবাদেই তোকে লেখা।

    দশ টাকার পোস্টকার্ড কিনে যত চেনা-জানা মানুষ আছে ধুবড়িতে, গৌরীপুরে, কোচবিহারে সবাইকেই লিখছি। দেওয়ার সামর্থ্য সকলের নেই, যাদের আছে তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই স্বার্থহীন ভালোবাসা নেই কারও প্রতিই। তাই জোর তো করতে পারি না কারও ওপরেই। আমি যেহেতু অভাবী মানুষ, বেকার, অবসরপ্রাপ্ত, তাই পাছে কেউ ভাবে যে, সাত্তারের নাম করে টাকাটা বোধ হয় আমিই মেরে দেব–তাই সকলকেই কাসেম মিয়ার গুয়াহাটির ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। এত করেও ফাঁসি থেকে বাঁচানো যাবে মনে হয় না। আইন তো বিবেকের কথা শোনে না। আইনের বইতে যা লেখা আছে তাই-ই জানে। তবে আমাদের বিবেক যেহেতু এখনও আছে তাই বিবেকের তাড়নাতেই এইটুকু করা এবং তোদের করতে অনুরোধ করা। তোর বিবেক যা বলবে তাই-ই করবি।

    ভালো থাকিস। মানুষ হোস।

    ইতি তোদের মানিককাকু।

    .

    ১১.

    সেবার ধৃতির ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এক সকালে তামারহাটের বাস-স্টপেজে পৌঁছে ধুবড়ির দিকে রওনা হল ও। শালিখ তাকে বাসে তুলে দিতে এসেছিল। বাস ছাড়ার আগে শালিখ একটা খামবন্ধ চিঠি দিয়েছিল ধৃতির হাতে। চিঠি খোলেনি ধূতি। পরে খুলবে ভেবেছিল।

    বাসটা ছেড়ে দিল। একটু পরে কুমারগঞ্জে এসে পৌঁছোল। এবারে কুমুদিনীদিদার বাড়িকে, নসু ডাক্তারের বাড়িকেও পেরিয়ে গিয়ে গৌরীপুর হয়ে ধুবড়ির দিকে এগোল। কুমারগঞ্জের বাঁ-দিকে সাত বোশেখির মেলাতে যাওয়ার পথ পড়ে রইল রাঙামাটি পাহাড়ে যাওয়ার পথ পেরিয়ে। আবার কবে আসবে তামারহাটে জানে না।

    ধুবড়িতে পৌঁছেই সে অন্য বাস ধরার জন্য এগিয়ে গেল। বাসে উঠে একটু নিরিবিলিতে শালিখের চিঠিটা খুলল।

    শালিখ লিখেছে–

    ধৃতিদা, চিঠিতে যা লিখছি তা তোমাকে মুখেও বলতে পারতাম। কিন্তু বলতে পারিনি বলেই চিঠিতে লিখলাম।

    তোমাকে বলা হয়নি যে, কোচবিহারে আমাদের কলেজের বাংলার অধ্যাপক নীহারুল ইসলামের স্নেহধন্য হয়েছি আমি। তুমি তো দূরেই থাকো। তখন out of sight, out of mindl

    নীহারুল স্যারই এখন তোমার চেয়েও আমার কাছের লোক হয়ে উঠেছেন। তুমি একবার এখানে এলে, মানে কোচবিহারে, তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব। তুমি কলকাতাতে তোমার যোগ্য অনেক ভালো মেয়ে পাবে–ক্যালকেশিয়ান।

    তুমি জীবনে এখন প্রতিষ্ঠিত। তোমার সঙ্গে ঘর বাঁধতে পারলে আমার বড়ো সুখ হত। কিন্তু এই ভেসে বেড়ানো অ্যালগির কপালে বোধ হয় স্থায়ী সুখ বা শান্তি নেই। ভারতীদির স্বামী শরৎ জামাইবাবু যেমন বলেছিলেন।

    তবে নীহারুল ইসলামকে বিয়ে করতে পারব কি না জানি না। তাঁদের বাড়িতে এবং আমার বাড়িতে তো বটেই এই বিয়ে নিয়ে অনেকই আপত্তি উঠবে। বাবা-মায়ের আশীর্বাদ না পেলে আমি বিয়ে করব না। নীহারুল স্যারেরও তেমনই মত। তাঁদের পরিবারও খুবই গোঁড়া। হিদুর মেয়ে বিয়ে করাতে তাঁদের সম্মতি তিনিও পাবেন বলে মনে হয় না। অতএব আমার ভবিষ্যৎ পুরোপুরিই অনিশ্চিত।

    হয়তো বিধাতা আমার এই অ্যালগির জীবনে চিরশান্তি আসুক তা চান না। এই চিঠি তোমাকে এ জন্যেই লিখছি বৃতিদা যে, তুমিই আমার জীবনের প্রথম প্রেম–যদিও একমাত্র প্রেম নও।

    পারলে আমাকে ভুলে যেয়ো। আমিও ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করব। তবে একটা কথা তোমাকে বলতে চাই, একসকালে যদি তোমার কলকাতার বাসা-বাড়িতে কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে গিয়ে দাঁড়াই তো আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। অবশ্য তোমার সব কথা আমি তো তেমন জানি না। তোমার জন্য হয়তো আমার চেয়ে রূপে-গুণে অনেক ভালো কেউ অপেক্ষা করে আছে। আমি গিয়ে পৌঁছেলে, যদি তুমি সেদিন থিতু হয়ে থাকো তাহলে এই অ্যালগি আমি ফিরে আসব–তোমার জীবনে অশান্তি হয়ে উঠব না।

    ভালোবাসা বড়ো এক গভীর সুখ। আবার গভীর দুঃখও।

    তোমাকে নীহারুল স্যারের কথা না জানালে তোমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হত। তুমি কোনোদিনও মুখ ফুটে কিছু এলনি যে, তুমি আমাকে ভালোবাসো। ভালোবাসা বুঝে নেওয়ার জিনিস, মুখ ফুটে বলার জিনিস নয়। তুমি সবদিক দিয়েই আমার চেয়ে বড়ো এবং ভালোও। আশা করি, তুমি আমাকে বুঝবে।

    তুমি আমাকে কোনোদিনও চিঠি লেখোনি। আমিও লিখিনি তোমাকে। এই চিঠির উত্তর এখন দেবার কোনো দরকার নেই। যদি দুজনেরই তেমন তাগিদ হয়, যদি কোনো প্রয়োজন ঘটে তবে চিঠি লিখো। যদি লেখোও, সে চিঠি যেমনই হোক না কেন, তার জবাব নিশ্চয়ই দেব। আমাদের না-লেখা চিঠির সুবাস তুলাইপন্ধী চালের সুবাসের মতো সব সময়েই আমাদের চারপাশ আমোদিত করে রাখবে।

    আমার হস্টেলের ঠিকানা তো তোমার কাছে নিশ্চয়ই আছে। যখন চিঠি লিখবে তখন যদি আমার কলেজের পড়া শেষ হয়ে যায়, তবে সে ঠিকানাও মা-বাবার কাছে না পেলেও মানিককাকুর কাছে অবশ্যই পাবে।

    আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ধৃতিদাসেই কিশোরীবেলা থেকেই। একথাটা সত্যি বলে জেনো।

    ভালোবাসা কখনো ফেলা যায় না–ভালোবাসার পাত্র বদল হলেও যায় না। আশীর্বাদ কোরো যেন তোমার শালিখ সুখী হয়–আমিও কুমারগঞ্জের ঢিল খাওয়া ঠাকুরের থানে কয়েকবার ঢিল ছুড়ব আর প্রার্থনা করব তুমি যেন সুখী হও তোমার জীবনে।

    জীবনটা বড়ো লম্বা রে ধৃতিদা। কখন যে, সুখ দুখ হয়ে ওঠে আর দুখ সুখ, তা কেউই বলতে পারে না। আগে থাকতে তো বলতে পারেই না।

    ধৃতিদা, তোমাকে দুঃখ দিয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা কোরো। তবে বললামই তো, সুখ বা দুঃখের কথা কেউই আগে থাকতে বলতে পারে না। কী হবে না হবে তা ভবিষ্যৎ-ই জানে। বিশেষ করে, এক অ্যালগির ভবিষ্যৎ।

    ইতি– তোমার ভালোবাসার শালিখ

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যালগি – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.