Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ২-৪. মনীষার অফিসে

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প22 Mins Read0

    ২-৪. মনীষার অফিসে

    মনীষার অফিসে নিজের সাদা-মার্সিডিস চালিয়ে ওকে পৌঁছে যখন দিয়ে গেল অতীশ তখন চারটে বেজে দশ! কী লজ্জা! এমন কখনো হয়নি আগে।

    –সি ইউ এগেন। এরপরের মিটিং-এ যদিও শুধুই বিজনেস ডিসকাসড় হবে, নেভারদিলেস আই ওয়ান্ট দ্যাট মিটিং টু বি আ ক্লোজ-ডোরড ওয়ান। আমারও কোনো এইডস থাকবে না আপনারও না। অ্যাণ্ড রিমেম্বার। ক্লোজ-সার্কিট টিভি ক্যামেরাও যেন না চালানো থাকে আপনার ঘরে। অভ্যন্তরীণ সমস্যা আলোচনা করতে যাব আমি আপনার ক্রেমলিন-এ। আই নো অল বাউট ইয়োর অর্গানাইজেশন। অ্যাণ্ড বাউট দ্যা চেয়ারপার্সন অ্যাজ ওয়েল।

    একটু থেমে, হেসে বলল, দশ-বারো দিন সময় দিয়ে গেলাম। দেশবিদেশের সব ডিটেকটিভ-এজেন্সি লাগিয়ে আপনাকে আমার অর্গানাইজেশান এবং আমার সম্বন্ধে জানবার পূর্ণসুযোগও দিয়ে গেলাম। ন্যাউ, মেক হে! হোয়াইল দ্যা সান শাইনস।

    আবার বলল, সি ইউ।

    বলেই, মনীষার ডান হাতের পাতাটি নিজের ঠোঁটের কাছে তুলে আলতো চুমু খেল। অতীশ। মনীষার শরীরের মধ্যে প্রথম কৈশোর থেকে জমিয়ে রাখা যা-কিছুই সবচেয়ে দামি বলে জানত, যা কিছুকে কাঠিন্যর ফয়েল দিয়ে মুড়ে রেখেছিল, সব-ই যেন হঠাৎ ফ্রিজ থেকে বের-করা আইসক্রিমের মতোই গলে গেল। ওর বাহ্যিক ব্যক্তিত্বর হিমবাহ হঠাৎ-ই যেন কোনো দৈব দুর্বিপাকে কোনো উষ্ণ সাগরে এসে পড়ে অতিদ্রুত জীবনের নোনা জলে মিশে যেতে লাগল! ভীষণ ইনসিকিয়োর ফিল করতে লাগল ও। আবার দারুণ সিকিয়োরড ও। কী সর্বনাশ যে, ঘটে গেল ওর জীবনে।

    সাড়ে-চারটেতে মিটিং ডেকেছিল। মিসেস রতনঝংকার তাঁর কলকাতার ট্রিপ ক্যানসেলও করেছেন। স্যুসি বলল, শি ইজ আ লিটল আপসেট। শি কুড হ্যাভ অ্যাটেনডে আ ফ্রেণ্ডস বার্থ-ডে পার্টি। হার পি-এ টোল্ড মি।

    –টেল হার টু গেট লস্ট।

    মনীষা বলল। পনেরো-শো টাকাও জলে গেল। এই লাস্ট-মিনিট ক্যানসেলেশনে। ওসব কোনো ব্যাপার-ই নয় এতবড়ো কোম্পানিতে। কোনো বড়ড়া কোম্পানিতেই নয়। প্রাইভেট সেক্টরে এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মিটিং ক্যানসেল করাটাও কোনো ব্যাপার নয়। আফটার অল, সমস্ত বড়ো অর্গানাইজেশানের নাম্বার ওয়ানদের-ই কতগুলো প্রেরোগেটিভস থাকেই। সেইসব প্রেরোগেটিভস সংবিধান মান্য-করা নির্বাক, অভুক্ত জনগণের বাধ্যতামূলকভাবে নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া প্রেরোগেটিভস নয়। এই প্রেরোগেটিভস মনীষা অথবা অতীশ নিজে অর্জন করেছে। নিজে হয়তো পুরো করেনি মনীষা, কিন্তু তার পরিবারের অর্থ, তার ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, দিল্লিতে তার পুল এইসব-ইতাকে কিছু স্বাধিকার দিয়েছে। মাঝে মাঝে; সবসময় নয়, এই স্বাধিকার প্রয়োগ করে আহ্লাদিত বোধ করে ও। যেমন আজকের মিটিংটা ক্যানসেল করে বোধ করল। সকলের-ই মাঝে মাঝে জানা উচিত নতুন করে যে, মনীষার সুবিধে-অসুবিধে বা ক্বচিৎ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাতে তার-ই নিয়োজিত এগজিকিউটিভসদের অনেককেই দশ-পনেরো কুড়ি হাজার মাস-মাইনের মানুষদেরও উঠতে বসতে হয়। প্রাইভেট সেক্টরে বড়োচাকরির যেমন সুখ অনেক, অসুখও কম নয়। পাবলিক সেক্টরের বড়ো চাকরিওয়ালারা তার সব খোঁজ হয়তো রাখেন না। ক্কচিৎ এই ভেটো প্রয়োগ করে, ও নিজের ক্ষমতাকে এবং নিজেকেও পুনরাবিষ্কার করে। ইউনাইটেড নেশনস-এর সিকিয়োরিটি কাউন্সিলের মিটিং-এ রাশিয়া বা ইউনাইটেড স্টেটস যেমন করে। নিজের পুনরধিষ্ঠান এবং স্বাধিকারের সীমা সম্বন্ধে বারংবার সচেতন হওয়ার-ই অন্য নাম তো বেঁচে থাকা।

    ইন্টারকম তুলে মনীষা বলল, স্যুসি। আই অ্যাম গোয়িং হোম। শ্যাল বি হিয়ার অ্যাট নাইনও ক্লক শার্প টুমরো। বাই। গো প্রু দ্যা টেলেক্সস অ্যাণ্ড স্যু দ্যা নিডফুল। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি অ্যাট দ্যা রেসিডেন্স।

    স্যুসি ঘড়ির দিকে চেয়ে অবাক হল। হেডকোয়ার্টাস থেকে কোনোদিনও পাঁচটার এক মিনিটও আগে অফিস ছেড়ে যান না ম্যাডাম। কোনো বিজনেস কম্পিটিটরের সঙ্গে সাড়ে বারোটায় লাঞ্চে বেরিয়ে চারটে বাজিয়েও ফেরেন না। এই প্রথম! কী হল ম্যাডামের কে জানে; অতীশ সরকারের কথা মনে পড়ল সুসির। ওর মুখে এক স্মিতহাসি ফুটে উঠল। মনে মনে বলল, আফটার অল, ম্যাডামও ওর-ই মতো একটি মেয়েই! অতীশ সরকারকে দেখে এবং তার সঙ্গে কথা বলে যেকোনো মেয়ের-ই শরীর-মন রিকি-ঝিকি করে উঠবে। তা ম্যাডামের আর বিশেষ দোষ কী? ওর বয়ফ্রেণ্ড চেরিয়ান জর্জকে একটা ফোন করল। আজ ও-ও একটু তাড়াতাড়ি বেরোবে।

    .

    ০৩.

    মনীষার বিশ্বাস হচ্ছিল না গতকালের কোনো কথাই। ও যে, কী করে এমনভাবে প্রতিপক্ষর কাছের মানুষ হয়ে গেল, তা ভেবে লজ্জা করছিল ওর। ব্লাডি-ম্যারির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে টিশিয়ে দিয়ে তাকে দ্রব করে দেয়নি তো অতীশ?

    যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে। অফিসের প্রত্যেককে মনীষা বলে দিল যে, ও লানডান ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ফিরলেই সরকার অ্যামালগ্যামেটস-এর ওপরে পুরো রিপোর্ট চায়। বম্বে, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর, ম্যাড্রাস এবং দিল্লির আলাদা আলাদা ডিটেকটিভ এজেন্সিকে ভার দেওয়ার কথা বলল। তা ছাড়া কুমুদিনী নিজে যা করার করবে। সিঙ্গাপুরে ওদের কন ম্যানকে ফোন করে বলে দিতে বলল, সরকারদের সিঙ্গাপুরের কোম্পানি সম্বন্ধেও সব খোঁজ খবর নিতে। এও বলে দিল যে, প্রত্যেক ডিটেকটিভ এজেন্সির কাছ থেকে লিখিত কনফারমেশন নেবে, যাদের এই বিশেষ কাজ দেওয়া হয়েছে এবং হবে যে, সরকার অ্যামালগ্যামেটস তাদের মক্কেল নয়।

    লুফৎহানসার ফ্লাইট। ফ্রাঙ্কফুর্ট-এ নেমে লানডান-এর ফ্লাইট নিল। হিথ্রো এয়ারপোর্টে যখন প্লেনটা ল্যাণ্ড করল তার আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। সি গাল একটি। টারম্যাকের পাশের ঘাসে। লানডানে এলেই খুব ভালো লাগে ওর। মা-বাবার সঙ্গে প্রথম এসেছিল যখন ওর বারো বছর বয়স। লানডান ইজ লানডান। ওল্ড ইজ গোল্ড। কিলবি, ওর লানডানের ম্যানেজার নিতে এসেছিল। কিলবিকেও বলে দিল ওই ব্যাপারে।

    লানডানের কাজ সেরে যেদিন ফ্র্যাঙ্কফুর্ট-এ পৌঁছোল সেদিন শনিবার। ছুটির দিন। ইচ্ছে করেই বেলা এগারোটার ফ্লাইট নিয়েছিল।

    ফ্রাঙ্কফুর্ট-এ কাজেই আসুক আর বেড়াতেই আসুক দিলীপদার বাড়িতেই ওঠে। দিলীপ রায়চৌধুরী। দিলীপদা আর নীলিমা বউদি অফেনবাখ-এ থাকেন। মার্কেটিং স্ফিয়ারে পশ্চিম জার্মানির একজন কেউকেটা দিলীপদা। বাঙালির গর্ব। ওয়েস্ট জার্মানির হুজ হু-তে নাম ছাপা হয়। কুইন এলিজাবেথ যে-মডেলের গাড়ি চড়েন মার্সিডিজ, সেই মডেলের গাড়ি চড়েন দিলীপদাও। ওদের একমাত্র মেয়ে রাজকুমারীও রাজকুমারীর-ই মতো দেখতে। চেহারায় তো অতিসুন্দরীই তার চেয়ে বড়োকথা ওর ডিম্যেনুর। রাজকুমারীদের-ই মতো। জার্মানটা তো জার্মানদের মতোই বলে, ফ্রেঞ্চ এবং ইংরেজিও সেরকম-ই বলে। অথচ বাঙালি সংস্কৃতিও পুরোপুরি বাঁচিয়ে রেখেছে। ওর পড়াশুনা শেষ হলে, দিলীপদার সঙ্গে একটা ভেঞ্চার করে রাজকুমারীকে এখানে তার হেড করে দেবে ইচ্ছে আছে মনীষার। তার আগে বোম্বেতে নিয়ে এসে মাস ছয়েক ওর সঙ্গে রাখবে। হাতেকলমে কাজ দেখাবার জন্যে। দিলীপদাও তাঁর অফিসে মাসদুয়েক রেখে শেখাতে পারেন।

    রিজার্ভ-ব্যাঙ্ক যদি আর একটু লিবারাল হত তবে ব্যাবসা, বিদেশে কেমন করে করতে হয় দেখিয়ে দিত মনীষা।

    অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও তেমন দোষ নেই। চারধারে চোরেদের এত ভিড় যে, সবাইকেই চোর ভাবেন তারা। অবশ্য মনীষার কোনো প্রবলেম হয় না। হবেও না যতদিন অমিতাভ কাকা ডেপুটি গভর্নর। এই সময়টাতে দিল্লিতে অনেক-ই বড়ো বড়ো পদে দেখা যাচ্ছে বাঙালিদের অনেকদিন পর। বলতে হবে ভেরি প্লেজেন্ট কোইনসিডেণ্ড। বোর্ড অফ ডায়রেক্ট ট্যাক্সেস-এর চেয়ারম্যান এখন জে জে দত্ত সাহেব। রেভিন সেক্রেটারি বন্দ্যোপাধ্যায় সাহেব। বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেসের মেম্বার ইনভেস্টিগেশন এস কে রায় সাহেব। চেয়ারম্যান টিক্ক সাহেবের ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কে যাওয়ার একটা গুজব শুনছে। যদি চলে যান, পেলে কী আর অমন লুক্রেটিভ প্রেস্টিজাস পোস্ট ছেড়ে দেবেন? যদি চলেই যান তবে হয়তো রায়সাহেব-ই চেয়ারম্যান হবেন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডায়রেক্ট ট্যাক্সেস-এর। রায়সাহেব নিজে অবশ্য কখনোই এমন সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেন না। বলেন কারা যে, গুজব রটাচ্ছে, জানি না। গুজবও হতে পারে। গুজব, এই গুজবের-ই দেশ ভারতবর্ষ!

    অবশ্য টিক্ক সাহেবও মানুষ চমৎকার। রায়সাহেবদের-ই ব্যাচমেট। নারায়ণ সাহেব যখন চেয়ারম্যান ছিলেন আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। মনীষাকে ওরা সকলেই চেনেন এবং অতটুকু মেয়ে এতবড়ো ব্যাবসা একা হাতে এফিসিয়েন্টলি চালাচ্ছে দেখে, ওকে সবসময়ই সাহায্য করেন ওঁরা প্রত্যেকেই। যখন যতটুকু দরকার পড়ে। মেয়ের-ই মতো দেখেন সকলে।

    ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে ল্যাণ্ড করার পর মনীষা দেখল, ওকে নিতে এসেছেন দিলীপদাই। কিন্তু রায়চৌধুরী নন, দিলীপ চ্যাটার্জি। খুবই মজার মানুষ। দিলটাও অন্য দিলীপদার-ই মতো বড়ো। ওঁর স্ত্রী জয়া। বিজয়ওয়াড়ার মেয়ে। এখানের হাসপাতালে আছেন। খুব-ই ভালোমনের মেয়ে। আর ওঁদের একমাত্র ছেলে, দশ বছরের বাপির মতো হ্যাঁণ্ডসাম ছেলে মনীষা জীবনেও দেখেনি। মনীষা ঠাট্টা করে বলে যে, বাপি একা হাতেই নাতসি-জার্মানির সর্বনাশ করে দেবে বড়ো হয়ে। জার্মান মেয়েদের এতবড়ো কিলার আর হবে না কখনো। বাপি জার্মান ছাড়া অন্য ভাষা তেমন বলতে পারে না। ইংরেজি অবশ্য বলে। সেইটাই বড়ো হলে গুণ হয়ে দাঁড়াবে। ও একাই জার্মানির মহিলাকুলে কৃষ্ণ হয়ে শ্বেতাঙ্গিনিদের নাকানিচোবানি খাওয়াবে। মনীষার বিশ্বাস। খুব-ই সপ্রতিভ ছেলে।

    গাড়িতে উঠেই দিলীপদা বললেন, রায়চৌধুরী একটু বার্লিনে গেছে কাজে। তাই আমরাই নিতে এলাম। রাতে ভূপাল রায় আর মিসেস রায় পীযূষ বিশ্বাসের বাড়ি আসবেন। তোমাকে শুঁটকি মাছ খাবার নেমন্তন্ন করেছেন পীযূষবাবু। মনীষা হাসল, কৃতজ্ঞতায়; ভালোলাগায়। এঁদের কাছে কত কীই যে পায়, পেয়েছে; বদলে কিছুমাত্রই করতে পারে না। বড়োজোর কখনো এয়ারপোর্ট গাড়ি পাঠানো। বা কানেকটিং ফ্লাইটের দেরি থাকলে বাড়িতে বা হোটেলে ডিনার খাওয়ানো। তাও দু-তিনবছরে একবার।

    একটি ভারী চিঠি দিলেন দিলীপদা। বললেন, রায়চৌধুরীর বাড়িতে সিঙ্গাপুর থেকে কে পাঠিয়েছে তোমাকে স্কাইপ্যাক কুরিয়ার-সার্ভিসে।

    মনীষা খামটা নিয়ে দেখল, লেখা আছে : ফ্রম : এস অ্যামালগ্যামেটস।

    বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল মনীষার।

    জয়া বউদি বললেন, কী হল তোমার? শরীর খারাপ?

    –না।

    একটু পরে বলল, দিলীপদা। এবারে কিন্তু আমি ফ্রাঙ্কফুর্টে হোটেলেই উঠব। বুকিং করা আছে। আমার অনেকগুলো বিজনেস-মিটিং আছে। অফেনবাখ বা তোমাদের ওখান থেকে আসা-যাওয়া করতে অসুবিধে হবে।

    –আহা! অফেনবাখ অথবা আমাদের বাড়ি যেন ফ্র্যাঙ্কফুর্ট থেকে কতই দূর? হেসে বলল, জয়া।

    –না। তা ছাড়া দিলীপদাও তো নেই।

    –বাঃ নীলিমা আর রাজকুমারী তো আছে। ওদের কাছেই তো নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে। তা ছাড়া ওরা না থাকলেও আমার বাড়িতে কি থাকতে পারবে না দু-দিন?

    –থাকতে পারতাম সকলের কাছেই। কিন্তু মিটিং চলবে দেরি করে। হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হলেই ডিনার অ্যারেঞ্জ করেছেন ওঁরা।

    দিলীপ বলল, ঠিক আছে। তোমাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি। রাতে

    আমরা সকলে এসে তোমাকে নিয়ে যাব।

    –শুঁটকি মাছটা কাল রাতেই কোরো। পীযূষদা আর ভূপালদাকে বোলো। বউদিদেরও। রেলিশ করে খাব কাজ-টাজ শেষ করে। সকাল দশটাতে ফ্লাইট। পরশু। অসুবিধে হবে না কোনো।

    ওকে! দিলীপদা বলল। তুমি যেমন বলবে। কাজ করতেই তো আসা। কাজে বাগড়া দেবই বা কেন আমরা! অবুঝ তো নই!

    তারপর বলল, আমার আর দিলীপের তো প্রায় তিরিশ বছর হয়ে গেল জার্মানিতে! এখানের লোকেদের মুখে শিখেছিলাম: ওয়ার্ক কামস ফাস্ট ইন আ ম্যানস লাইফ। এখন দেখছি শুধু ম্যানস নয়, ইন আ উওম্যানস লাইফ অ্যাজ ওয়েল।

    জয়া বলল, বলো ইন আ পার্সনস লাইফ।

    –দ্যাটস রাইট। গত তিরিশ বছরে শুধু জার্মানিই নয়, আমাদের দেশও অনেক বদলে গেছে। নইলে এতটুকু মেয়ে সারাপৃথিবীময় ঘুরে ব্যাবসা করছে। তাও আবার বাঙালি মেয়ে। আমাদের সময় তো ভাবাই যেত না।

    জয়া বউদি দিলীপদার এবং অন্য সকলের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলেন। জার্মান অবশ্য

    বলেন জার্মানদের মতোই। জার্মান হাসপাতালে কাজ।

    মনীষা বলল জয়াকে, রাগ করলে না তো তোমরা বউদি?

    –তোমাকে তো আর নতুন দেখছি না আমরা। এত সহজেই রাগ করব?

    হোটেলে নেমে আঙুল দিয়ে নামটা দেখিয়ে আগামীকাল সকালে ফোন করতে বলল ওদের।

    ফ্র্যাঙ্কফুর্ট-এর সবচেয়ে ভালো হোটেল। নাম্বার বের করে নেওয়া কোনো প্রবলেম নয় কারও পক্ষেই। গাড়ি থেকে ব্যাগটাকে দিলীপদা নামিয়ে দিয়ে যখন চলে গেল তখন ভাবল ও। কিন্তু মুশকিল হল হোটেলে নামবার পর।

    কোনো ঘর নেই বলল রিসেপশন থেকে।

    –সরি, একটিও নয়।

    –ঘর থাকার কথাও নয়।

    বম্বের তাজ বা ওবেরয় টাওয়ার্স, দিল্লির হায়াত রিজেন্সি বা মৌরীয়া শেরাটনে বা তাজ-এ গিয়েও উইদাউট রিজার্ভেশনে ঘর পাওয়া মুশকিল। আসলে তো ওর বুকিং ছিলও না। অতীশের চিঠিটা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ও ডিসিশান নিয়ে মিথ্যে কথাটা বলেছিল। ওর হাত-পা আবারও ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কারও বাড়িতে থাকলে কিছুটা সামাজিকতা তো করতে হয়-ই! ও এখন একেবারেই একা থাকতে চায়। অতীশ কী লিখেছে তা পড়তে চায়। ধারে-কাছে আর কাউকেই এখন ও চায় না। কাউকেই নয়। কী করে ও দিলীপদার, মানে যেখানে ওঠবার কথা ছিল ওর, তার ঠিকানা জানল? রীতিমতো আন-নার্ভিং ব্যাপার।

    হোটেলের লবি থেকে ওর কাস্টমারের বড়োসাহেবকে ফোন করে বলল, অন্য জায়গায় থাকার কথা ছিল কিন্তু ও ডিসিশন চেঞ্জ করছে; ইনি কি একটা ঘর…।

    কার্ল রিমেনস্নাইডার বলল, এম এস বাসু। আপনি রিসেপশানে আবার ফিরে যেতে যেতেই আপনার ঘর ওই হোটেলেই আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

    এবারে রিসেপশানে ফিরে যেতেই একেবারে ভি আই পি ট্রিটমেন্ট।

    মনীষা ভাবল, নাঃ। রিমেনস্নাইডারের হোল্ড আছে।

    তারপর হেসে রিসেপশানের মেয়েটিকে বলল, তাহলে এই যে, আমাকে বললেন ঘর । নেই।

    –ঘর সত্যিই নেই। ইটস দ্যা বেস্ট স্যুইট উই হ্যাভ। আই ডিডনট টেল আ লাই!

    –সুইট?

    –ইয়েস ম্যাম। সুইট, অ্যাণ্ড দ্যা বেস্ট স্যুইট ইন দ্যা বেস্ট হোটেল ইন ফ্রাঙ্কফুর্ট!

    অ্যামেরিকান আর্মির বেস থাকাতে ফ্রাঙ্কফুর্টের অনেকেই ইংরেজি শিখে নিয়েছে। হোটেলে তো ইংরেজি জানেই সকলে। তবে জার্মান জাতের রকমটাই একটু আলাদা বলেই যেন কী ইস্ট আর কী ওয়েস্ট জার্মানি সব জায়গাতেই জার্মানরা এক হতে চাইছে! হাবে-ভাবে বোঝা যায়। দুই জার্মানিকে এক হতে দিতে রাশিয়া বা আমেরিকা কেউই চায় না। বিরাট স্যুইট। ভারতীয় টাকা দিয়ে ডয়েশ মার্ককে গুণ করতেই দেখা গেল যে, স্যুইটের ভাড়া দিনে আট হাজার টাকা! মনীষা ভয় পেয়ে বেডরুমে না ঢুকেই সিটিং রুম থেকে রিসেপশানে ফোন করল।

    –কোনো গোলমাল হল না তো!

    তারা বলল, কোথাওই ভুল হয়নি। ইউ আর মিস্টার রিমেনস্নাইডারস গেস্ট।

    মনীষা পড়ল বিপদে। সারাবছরে এই কাস্টমারের সঙ্গে এম বি ইন্টারন্যাশনাল এমনকিছু বিরাট ব্যাবসা করে না অথবা করবার আশু সম্ভাবনাও নেই। খাতিরটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের মনে হল। তখনও বেডরুমে না ঢুকেও নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্যে রিমেনস্নাইডারকে ফোন করল আবার।

    কার্ল বলল, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে অটো হেফফনার ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন যে, ইউ শুড বি লুকড আফটার লাইক আ প্রিন্সেস। ইটস অ্যান অর্ডার। ইউ নো! হিজ উইশ ইজ আ কম্যাণ্ড টু মি।

    কে হেফফনার? আমি তো চিনি না। মনীষা আরও বিপদে পড়ে বলল অসহায়ের মতো।

    তারপর বলল, প্লে-বয় ম্যাগাজিনের হিউ হেফনার না তো?

    –তুমি অটোকে না চিনতে পারো। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির সকলেই তাকে চেনে। এত বড়োলোক পশ্চিম-জার্মানিতে কম-ই আছেন।

    –কিন্তু আমার তো এই হোটেলে ওঠার-ই কথা ছিল না।

    তখনও সন্দিগ্ধ গলায় বলল মনীষা।

    –তা আমি জানি। দিলীপ রায়চৌধুরীর অফেনবাখ-এর বাড়িতে তোমার জন্যে হলুদ গোলাপের বোকে এবং ওয়াইন-এর বাস্কেট পৌঁছে গেছে তোমার ফ্লাইট ল্যাণ্ড করার সঙ্গে সঙ্গেই। তুমি আমাকে ফোন করবার পরও আমি যদি তোমার জন্যে এমন ব্যবহার না করি, তাহলে আমার সঙ্গেই ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বছরে কত বিলিয়ন মার্ক-এর ব্যাবসা করি, হেফফনারের সঙ্গে তা তুমি জানো না, এম এস বাসু। আমি তোমার ব্যাপারে কোনো ঝুঁকিই নিতে পারি না। আই কানট অ্যাফোর্ড টু। এবারে আমি কিছুই করছি না। হেফফনার-এর অতিথি তুমি। কার ইনস্ট্রাকশানে হেফফনার তোমাকে প্রিন্সেস-এর ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে তা অবশ্য আমি বলতে পারব না।

    মহাবিপদেই পড়ল মনীষা। এদিকে স্নান করতে ইচ্ছে করছে খুব। কিছুই করতে পারছে না। অতীশের চিঠিটা পর্যন্ত খুলতে পারছে না।

    নীলিমা বউদিকে ফোন করল একটা। বউদি বললেন, আরে। ফুলে-ফলে আমার ফ্ল্যাট ভরে গেল, ওয়াইন এসেছে এক ঝুড়ি। তুই কোন জার্মান বিজনেস ম্যাগনেট-এর সঙ্গে প্রেমে পড়লি রে? ফ্রাঙ্কফুর্টের সবচেয়ে এক্সপেনসিভ ফ্লোরিস্ট-এর দোকান থেকে ফুল এসেছে। রেয়ারেস্ট ওয়াইনস। তোর দাদা থাকলে এখানে সব নিজেই নিয়ে নিত। বলত, ওয়াইনের কদর ইউরোপের লোকেরাই করতে পারে। তোর ওপরে এসব ওয়েস্ট!

    –তা সব-ই দাদার জন্যেই রেখে দাও। দুই দিলীপদাকে ভাগ করে দিয়ে।

    –তা না হয় হবে।

    –কিন্তু পাঠালটা কে?

    –সে কী? তুই নিজেই জানিস না?

    –না। এ তো রহস্য-কাহিনির মতো শোনাচ্ছে। তুমি কার্ডটা খোলো তো।

    –সে কী রে! তোকে কে পাঠিয়েছে ভালোবেসে। আমি খুলে পড়ব? প্রিন্স-ট্রিন্স হলে যদি আমিই এই বয়সে নতুন করে প্রেমে পড়ে যাই? তোর দাদার কী হবে?

    -–ছাড়ো তো দাদার কথা। প্রেমের আবার কোনো বিশেষ বয়স আছে নাকি? কলার খোসায় পা পড়ার মতো! পড়লে হড়কাতে হবেই।

    মনীষা বলল আর উপায় কী বলো বউদি? তোমার এখানে আসতে অথবা আমারও যেতে তো পনেরো-কুড়ি মিনিট লেগে যাবেই এই পিক আওয়ারে! কে পাঠাল তাই যদি না জানা যায়!

    –ধর। দেখি, খুলি। আরে! এ কী কান্ডরে! এ কোন প্রিন্স-চার্মিং লেখা আছে উইথ লাভ! অ্যাটিশ?

    –কিন্তু সে পাপিষ্ঠের নামটা তো বলবে?

    বুকটা ধক করে উঠল মনীষার। মুখে যতই সপ্রতিভতা ঝরাক না কেন!

    বউদি বলল, অ্যাটিশ! সে কে রে। জার্মান নাম বলে মনে হচ্ছে। রাশ্যানও হতে পারে। মনীষা বলল, অ্যাটিশ। তাই বলো বউদি। বুঝেছি! সেই বদমাশটা। হতচ্ছাড়া।

    –কে? কে রে মনীষা?

    –ওই একটা জার্মান প্লে-বয়, না-না জার্মান ঠিক নয়। অস্ট্রিয়ান প্রিন্স টিরল-এ বাড়ি। লানডানে মিট করেছিলাম। বিলিয়নিয়র! অনেক ব্যাবসাও আছে। আমি আজ-ই পালাব এখান থেকে। বলে ফেলেই ভাবল, সর্বনাশ হল। পালিয়ে এসেই আবারও পালানোর কথা?

    –সে কী রে? তাহলে এখানে চলে আয়। পুলিশকে ইনফর্ম করব?

    –না, না। আর একটু দেখি। তোমাদের জানাব। দরকার হলেই জানাব।

    .

    টেলিফোনটা নামিয়ে রাখতেই রিমেনস্নাইডার আবার ফোন করে বলল, আর ইউ কম্ফর্টেবল? আমাকে হেফফনার এক্ষুনি ফোন করে বলল যে, আমার সঙ্গে তোমার মিটিং-এর দরকার নেই। মানে, তুমি যে-জন্যে এখানে এসেছিলে। তোমরা গত ছ-মাসে যা এক্সপোর্ট করেছিলে তার দশগুণ বেশি মাল আগামী ছ-মাসে কোরো। সেম এফ. ও. বি. প্রাইসে। তোমার সঙ্গে আমার মিটিং শেষ হল। ও আর একটা কথা ইন্সপেকশান কিন্তু জিনিভায় সার্ভেল্যান্সকে দিয়ে করতে হবে। এস. জি. এস. জিনিভা। ওদের সঙ্গে ইণ্ডিয়ার যে কোম্পানির এগ্রিমেন্ট আছে, সেই কোম্পানি করলেও হবে। রাখলাম। রিল্যাক্স ম্যাম। পরশু সকালে ঠিক সময়ে গাড়ি যাবে তোমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছোতে। টেক ইয়োর ওন টাইম অ্যাণ্ড এনজয়। তোমার গাড়ি হোটেলে পৌঁছে গেছে। রিসেপশানে বললেই হবে। চব্বিশ ঘণ্টা একটি সোফার ড্রিভন মার্সিডিস হোটেলের পার্কিং লনে থাকবে তোমার জন্যে! গুটেন-মর্গেন ম্যাম। তিনজন সোফার শিফট-ডিউটিতে থাকবে।

    বলেই, রিমেনস্নাইডার লাইন ছেড়ে দিল।

    ও ধপাস করে বসে পড়ল সোফাতে সারাদিন স্কুল করা নীচু ক্লাসের আলুথালু ছাত্রীর মতো। ওর বুদ্ধি যত, সব-ই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। বুদ্ধি ওর কিছু কম নেই বলেই জানত। কিন্তু জড়ো করতে সময় লাগবে!

    মনীষা ভাবল, এবার সবচেয়ে আগে যা করা দরকার তা হচ্ছে অতীশের চিঠিটা পড়া। এই চক্রান্তর কারণটা কী তা জানতে হবে। ভাগ্যিস নীলিমা বউদি অতীশ নামটা বুঝতে পারেনি। জার্মানিতে পরিচিত বাঙালিদের একে অন্যে সকলেই চেনে। ওই ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে আর প্রচন্ড এক্সপেনসিভ রেয়ারেস্ট-ওয়াইনস দিয়ে ডালি সাজিয়ে দেওয়ার মতো বাঙালির সংখ্যা ওখানে বেশি নেইও। তাই বেচারি নীলিমা বউদি ভেবেছে মনীষার কোনো জার্মান বিজনেস কানেকশান হবে হয়তো। কিংবা কোনো কোম্পানির নাম!

    ভুলে যাওয়ার আগে আর একবার ফোন করার কথা ভাবল, নীলিমা বউদিকে ওগুলো ওকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্যে। তারপর-ই ভাবল, অতটুকু বুদ্ধি ওঁর আছে। তা ছাড়া ওঁরও সোফার-ড্রিভন গাড়িও যখন আছে।

    এবার আর সময় নষ্ট নয়। স্যুটকেসটা খুলে পায়জামা আর টপটা বের করে বেডরুমে ঢুকে সব জামাকাপড় খুলে বাথরুমে গেল মনীষা অতীশের চিঠিটা নিয়ে। যাওয়ার সময় নিজের মুখোশটাকেও খুলে ফেলে একেবারে নিরাবরণ হয়ে গেল। গরম ও ঠাণ্ডা জল মিশিয়ে ক্রিস্টালের ট্রান্সপারেন্ট বাথটাবের দু-টি কল খুলে পেপার-কাটারের অভাবে হাত দিয়েই চিঠিটা খুলে বাথটাবে শুয়ে পড়ল।

    যদিও সিংগাপুরের হোটেল থেকে অনিয়ন-স্কিন পেপারে লিখেছে অতীশ তবুও রীতিমতো ভারী চিঠি।

    কী চমৎকার বাংলা হাতের লেখা। ভাবা যায় না! মুগ্ধ হল মনীষা। কয়েক লাইন পড়তেই বুঝল, হাতের লেখা; যাঁরা সাইন বোর্ড লেখেন তাঁদেরও চমৎকার হয়। কিন্তু হাতের লেখা আর লেখার হাতের এমন মণিকাঞ্চন যোগ বড়ো একটা হয় না।

    ব্যাংকক

    মনীষা, কুরিয়ার-সার্ভিসে পাঠানো এই চিঠি, আমার অনুমান, তোমাকে যাঁরা এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে আসবেন (দিলীপ রায়চৌধুরী অথবা দিলীপ চ্যাটার্জি) নিশ্চয়ই ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টেই তোমার জন্যে নিয়ে আসবেন! এবং তুমি নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে আমি ওঁদের ঠিকানা কী করে জানলাম তা ভেবে।

    কী করে জানলাম, তা নাই-ই বা জানলে। তবে বুঝতে নিশ্চয়ই পারছ যে, তোমার চেয়ে আমার অর্গানাইজেশান অনেক এফিসিয়েন্ট। লানডান-এ তুমি কোন হোটেলে ছিলে তাও আমি জানতাম। কিন্তু ফোন করিনি ইচ্ছে করেই। ফোন করলে সকালবেলার এই প্রেজেন্ট অথবা আনপ্লেজেন্ট সারপ্রাইজ তোমাকে দিতে পারতাম না।

    –এই অবধি পড়েই মনীষা ভাবল অতীশ বড়োই ফাস্ট-ওয়ার্কার। আর তুমি সম্বোধন করে লেখার অধিকার সে কী করে পেল কে জানে!

    তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ, মানুষটার সাহস তো কম নয়! তুমি সম্বোধন করেছে!

    অস্বীকার করব না যে, আমি দুঃসাহসী। আর যাই হোক সাহসের অভাব নিয়ে সারাপৃথিবীতে এতবড়ো ব্যাবসা চালানো যায় না। সাহস তোমারও আছে, স্বীকার করি। নইলে ভারতবর্ষের মতো জায়গাতে একজন মেয়ে হয়ে তুমিও এতবড়ো ব্যাবসায়িক সাম্রাজ্য চালাতে পারতে না। আমাদের দেশে মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়েও বয়সে তিরিশের নীচে থেকেও হাঙর-কুমির অধ্যুষিত পরিবেশে এতবড়ো ব্যাবসা তুমি বাঁচিয়ে রাখতে পারত না। আমিও হাঙর।

    আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলে যে, কলকাতার বি. বি. ডি. বাগে যতরকম এবং যতসংখ্যক মাংসাশী হিংস্র শ্বাপদ আছে, তা ভারতবর্ষের কোনো জঙ্গলেও নেই। কথাটা শুধু আমাদের দেশের বড়ো বড়ো শহরের ব্যাবসা-কেন্দ্রগুলি সম্বন্ধে নয়, পৃথিবীর প্রত্যেকটি বড়ো ব্যাবসাকেন্দ্রিক শহরগুলি সম্বন্ধেই প্রযোজ্য।

    আমিও অনেক-ই হিংস্র জন্তুর মধ্যে একজন। প্রতিযোগীকে ঘাড় কামড়ে রক্ত চুষে খেয়ে চিরদিন-ই আমি এক গভীর আনন্দ পেয়েছি। প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে নভোস্থল থেকে সমুদ্রের গভীরতম প্রদেশে যেতেও আমার কখনো দ্বিধা হয়নি।

    কিন্তু আমি একাই নই। তুমিও আমার-ই মতো। আমি বড়ো হাঙর।

    তুমি আমার চেয়ে একটু ছোটো। আমার মতো মানসিকতা তোমারও। নইলে বেঁচে থাকতেই পারতে না, এই নির্মম প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে। তুমি যে, বহালতবিয়তে বেঁচে আছ এবং তোমার ব্যাবসা ক্রমশ-ই বড়ো করে তুলছ তাতে একথাই প্রমাণ হয় যে, তুমিও ভ্যাম্পায়ারের মতো প্রতিযোগীর রক্ত খেতে ভালোবাসো।

    আমরা হয় বাঘ নয় হাঙর। কিন্তু আমি এই ক্রমাগত যুদ্ধের খেলায় মেতে থেকে যুদ্ধের দামামার শব্দে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বোধ হয় ভুলেই যেতে বসেছিলাম যে, হাঙর কিংবা বাঘেরাও তাদের প্রজাতির জন্য কারও সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রাপ্তবয়স্ক হলে মিলিত হয়। হাঙর অথবা বাঘও তার নিজের প্রজাতির অন্য লিঙ্গর কারও সঙ্গে সহবাস করে। সংসার পাতে অল্পদিনের জন্য। ঘাড় কামড়ে ধরে মিলনের সময়। তখন সে-কামড় প্রাণহরণের জন্যে নয় মিলনের আনন্দকে তীব্রতর করার জন্যেই।

    মনীষা, অতীশ সরকার এতদিন ভাবত যে, সে তার ব্যাবসাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তার জীবনে প্রেম বা বিবাহর মতো মূর্খামি অথবা বিলাসিতার সময় কখনোই হবে না। কিন্তু তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই আমি নিজেকে নিয়ে বড়োই মুশকিলে পড়েছি। ব্যাবসা আমার মাথায় উঠেছে। সমস্তক্ষণ শুধু তোমার কথাই ভাবছি। হঠাৎ-ই যেন বুঝতে পারছি যে, জীবনে ব্যাবসাই সব নয়, টাকা, সম্পত্তি, মান, যশ ক্ষমতাই শেষকথা নয়। প্রত্যেকের-ই ফুরোয় একসময়। এই ফুরিয়ে যাওয়া দুঃখের নয়। নদী যখন সাগরে গিয়ে মেশে তখন-ই তার যাত্রা সার্থক হয়, পরিপূর্ণ; পরিপ্লুত হয় সে। আমার পথ চলা এ জীবনের মতো সাঙ্গ করার সময় এখনও হয়নি। তবে যতিচিহ্নর সময় হয়েছে। তোমার সঙ্গে মিলিত না হতে পারলে, তোমাকে নিয়ে ঘর না বাঁধতে পারলে আমার এই গন্তব্যহীন চলাকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে হবে।

    মানুষ হিসেবে, আমার কারও কাছে হারবার সময় এসেছে। বুঝতে পারছি যে, জীবনে কোনো কোনো হার অনেক-ই বড়ো বড়ো জিত-এর চেয়েও অনেক-ই বেশি দামি। এবং এই হার স্বীকারের প্রকৃত মূল্য যারা না বোঝে, জীবনের পথে কোনো ছায়াচ্ছন্ন রম্য বাঁকে এসে নিজেকে যে, পথশ্রান্ত পথিক বলে না মনে করে, না বোঝে যে, কারও কোলে মাথা দিয়ে ক্ষণিক বিশ্রামের অবকাশ পেয়েছে, সব ক্লান্তি অপনোদনের, তার যেমন করেই হোক করা উচিত, তবে বলতে হবে যে, সে বড়োই অভাগা।

    তেমন কোনো মানুষের খোঁজ সে যখন পায়, যে তার মনের মানুষ। তার মনুষ্যত্ব বোধ হয় তখন-ই সম্পূর্ণতার দিকে ধাবিত হয়। আমার মনে হচ্ছে, তোমাকে দেখার পর থেকেই আমিও আমার জীবনের পথে তেমন-ই কোনো বাঁকে এসে পৌঁছেছি।

    আমার এই পথ অন্ধগলি যাতে না হয়ে ওঠে, অন্য কারও হাতে হাত রেখে এই চলাকে যাতে আরও দুর্বার অর্থময় ও সুস্থির গন্তব্য চলা না-করে তুলতে পারি তাহলে সারাজীবন-ই শুধু পথের ধুলাতেই ধূলিধূসরিত হব। কোনো এক বন্ধনহীন প্রাপ্তিতে যদি পথের সাথিকে বাঁধতেই না পারি তাহলে এই চলা এবং গতি সম্পূর্ণই নিরর্থক হয়ে উঠবে।

    আমি জানি, যতটুকু তোমাকে জেনেছি তাতে; যে-তুমি আমার হাতে তোমার হাত যে, রাখবেই তার কোনো স্থিরতা নেই। বেশিরভাগ মেয়েকেই বুঝতে আমার আধঘণ্টাও লাগেনি। মিথ্যে বলব না, দেশে এবং বিদেশে বহুজাতীয় নারীর সঙ্গে আমি সহবাস করেছি। ব্যাবসার কারণে ছাড়া, ব্যক্তিজীবনে আমি কখনো কারও সঙ্গেই মিথ্যাচার করিনি। আমি যা, তা তোমাকে জানাতে চাই কিছুই না-ঢেকে। এই বহুজাতিক শব্দটিতে জাত কেবল চামড়ার রঙেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক-ই রকম মানসিক স্তরের নারীর কথাও আমি বলছি। কিন্তু কখনো এমন অঘটন ঘটেনি যে, কাউকে প্রথম দর্শনেই জীবন-সঙ্গিনী করতে ইচ্ছে জেগেছে। কারও হাতে ঠোঁট-ছাঁওয়াতেই আমার স্কোয়াশ-খেলা ঋজু পাইনের মতো শরীরকে উইপিং উইলোর মতো নুয়ে পড়া মনে হয়েছে। অথচ নুয়ে-পড়ার মধ্যেও যে, এত গভীর আনন্দ তা সেদিনের আগে কখনো জানিনি।

    তুমি হয়তো ভাববে যে, আমি কী লজ্জাহীন, অভিমানহীন অথবা আত্মসম্মানজ্ঞানহীন! তা হয়তো ভাববে। কিন্তু আমার চরিত্রে শিশুকাল থেকে দু-টি দোষ কখনোই ছিল না। এক ভয়। অন্যটি দ্বিধা। যখন আমি ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র, তখন আমার বাবা আমাকে একদিন ওঁর ঘরে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, এক জীবনে অগণ্য মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে, পরিচয় হবে; কাছাকাছি আসবি তাদের। কোনো পুরুষের মতো পুরুষের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন মনে হবে যে, ঘর বাঁধার মতো কারও মুখোমুখি এসেছিস তখন তাকে জানাতে দ্বিধা করবি না যে, তুই তাকে চাস। হাঁটু গেড়ে তার পায়ের কাছে বসে বলবি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাউকে ভালোবাসার কথা বলার মধ্যে নিজেকে ছোটো করার কোনো ব্যাপার নেই। ঈশ্বর আর প্রেমিকের কাছে নতজানু হলে মানুষের সম্মান-ই বাড়ে। আত্মা শুদ্ধিকর যা, তা করতে কখনো দেরি করিস না। ভয়ও পাস না।

    কোনো নারীর কাছে নতজানু হয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলার পর সেই নারী দু টির মধ্যে একটি জিনিস-ই করতে পারে। তার বেশি ঘটনীয় আর কিছুই নেই। হয় সে তোকে তার মৃণালভুজে টেনে নেবে, নয় সে তোর বুকে পদাঘাত করবে।

    বলেছিলেন, জীবনে সতোর কোনো বিকল্প নেই। অন্তত কিছু কিছু ব্যাপারে। ব্যাবসা করতে নেমে সবসময় সততা নিয়ে চলে না। প্রতিযোগী শঠ হলে তার সঙ্গে শঠের মতোই ব্যবহার করবি। শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ। তার সঙ্গে ভালোমানুষি করা মানে মৃত্যু। হেরে যাওয়া। কিন্তু প্রেমের বেলায় তোর প্রাণের পরমনৈবেদ্য কোনো নারীর কোমল হাতে সতোর সঙ্গে তুলে দিবি। গ্রহণ করলে তো তুই ধন্যই হলি। গ্রহণ না করলেও ছোটো হয়ে গেলি এমন ভাবিস না। সৎ-প্রেম নিবেদন করলে আত্মাই উজ্জ্বলতা পায়।

    মনীষা, আমিও বিশ্বাস করি যে, দুঃখ না পেলে মানুষ পূর্ণতা পায় না। দুঃখ পেলে পাব। দুঃখের বা মিথ্যে অহমিকাভরা অভিমানে ঘা লাগবার ভয় যে-করে তার দ্বারা আর যাই-ই হোক শুদ্ধ প্রেম কখনোই হয় না।

    মনের মানুষ কারও জীবনেই বার বার মুখোমুখি আসে না। এলে, তাকে চিনতে ভুল করাটা বোধ হয় পরমমূর্খতা। তার জন্যেই প্রতীক্ষা করেছিলাম।

    আমার মনে হয় যে-মানুষ নিজে যে-মানসিক স্তরের তার কখনো অযোগ্য কাউকে বিকল্প করা অনুচিত। এই স্তর বলতে–আমি অর্থনৈতিক, জাতিগত, সামাজিক-পরিচয়গত স্তরের কথা বলছি না। আশাকরি তুমি বুঝবে মানসিক স্তর বলতে আমি কী বোঝাতে চাইছি। ভিন্ন স্তরের মানসিকতার একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে-সম্পর্ক গড়ে ওঠে কখনো-কখনো; সে-প্রেম, প্রেম নয়। হঠকারিতা, করুণা, দয়া, বা অনুকম্পাই মাত্র। এইসব অনুভূতি নির্ভর প্রেম আসলে মোহ। মোহর বিভিন্ন স্তর। তার আয়ু অত্যন্ত স্বল্প। স্বল্প বলেই আমাদের দেশে পর্যন্ত ডিভোর্সের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে।

    বাবা এও বলেছিলেন যে, আমি জাত মানি না, দেশ মানি না, শুধু মানুষ মানি। তুই আমার একমাত্র সন্তান। তোর সুখ-ই আমার সুখ। তুই যাকে হাতে ধরে তোর বলে আনবি আমি তাকেই বরণ করে নেব। তার সঙ্গে আমি শোবও না, সংসারও করব না। আমার মতামত এই ব্যাপারে ইমম্যাটেরিয়াল।

    জানো মনীষা। বাবা চলে গেছেন আজ দশ বছর হল।

    আমারও বয়স পঁয়ত্রিশ হল। দেখায় হয়তো কম।

    তোমাকে সেদিন অফিসে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার হোটেলেই ফিরে গেছিলাম। অফিসে আর যাওয়া হয়নি সেদিন। ব্রিফকেস-এ বাবার একটি ছবি থাকে সবসময়। বাবার ছবিটিকে বের করে মাথায় ঠেকিয়েছিলাম। জানি না তুমি আমার হবে কি না। হলে, আমার বাবার মতো খুশি আর কেউই হতেন না তোমাকে দেখে। তুমি নিজস্ব অধিকারেই রাজকুমারী। কিন্তু তোমায় রাজরানিও হতে হবে।

    আমি ঈশ্বর মানি, এই সুপার-কম্পিউটারের যুগে। এবং নিজের কারখানায় কম্পিউটার তৈরি করার পরও। ঈশ্বরের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। বিজ্ঞান-ই ঈশ্বরবোধ আমার মধ্যে গভীর করেছে। এই বোধ সকলের মধ্যে প্রত্যাশার নয়। ভগবান-টগবান মানি না বলাটা হয়তো অতি-সপ্রতিভতার লক্ষণ। কিন্তু ঈশ্বর আর চলিতার্থের ভগবান সমার্থক নয়। আশাকরি তুমি বুঝবে-কী আমি বলতে চাইছি। তোমাকে দেখার পর থেকেই আমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের এই ইচ্ছে যে, আমি তোমার সঙ্গে মিলিত হই। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে।

    ছাত্রাবস্থায় এডগার অ্যালান পো আমার অন্যতম প্রিয় লেখক ছিলেন। ওঁর সম্বন্ধে পরে, একটি লেখা পড়ে অনেককিছু জেনেছিলাম। যা জেনেছিলাম তার সাক্ষ্য দেয় তাঁর লেখা। এডগার অ্যালান পো-র কাছে Art meant only beauty and true beauty always contained an element of strangeness or vagueness। ওঁর সমসাময়িক আমেরিকান লেখকদের থেকে তিনি অনেক-ই অন্যরকম ছিলেন। বোদলেয়রের মতো বড়োকবিও বলেছিলেন, He is a saint! আজও পোকে ফরাসীয়রাই বেশি সম্মান করেন আমেরিকানদের চেয়ে। তুমি হয়তো জান। হয়তো সাহিত্য কী এবং কেন তা ফ্রেঞ্চরা অনেকের চেয়েই ভালো বোঝেন বলেই।

    তোমাকে প্রথম দিন দেখেই, বাদল দিনের মেঘের মতো তোমার মুখের মধ্যে রোদ আর ছায়া খেলতে দেখেই, তোমার ব্যবহারের ও আমার প্রতি মনোভাবের অতিদ্রুত পরিবর্তন ও পুনঃপরিবর্তন দেখে আমার পো-র লেখার কথা মনে হয়েছিল। তুমিও আমার চোখে Concept of strangeness and vagueness এবং সেইজন্যেই সৌন্দর্যর সংজ্ঞা। তুমি আমার কাব্য।

    ইবসেনের পরে নরওয়েজিয়ান লেখকদের মধ্যে স্যুট হামসুন সবেচেয়ে বেশি বিখ্যাত। তুমি আমার চেয়ে ভালো জানবে। ওঁর সম্বন্ধে যেমন বলা হয়, He had a superb contempt for everything that was not of aesthetic value in his own eyesi

    আমারও দৃষ্টিভঙ্গি হুবহু ন্যুট-হামনের-ই মতো। তবে তফাত এই যে, আমার আখরগুলি সোনা হয়ে উঠবে না কখনো। ন্যুট হামসুন সম্বন্ধে বলা হত Words were gold in his hands! তবে আখরগুলি নয়, আমি নিজেই হয়তো সোনা হয়ে যেতে পারি যদি তুমি আমাকে একটিবার ভালোবেসে ছুঁয়ে দাও।

    –ভালো থেকো

    ইতি তোমাকে বউ করতে চাওয়া

    অতীশ।

    .

    ০৪.

    বাথটাব-এর জল মনীষার সমস্ত শরীরকে উষ্ণতায় জড়িয়ে নিয়েছিল। মনীষা দুটি চোখ-ই বুজে ফেলল। তারপর বাথটাবে উঠে বসে চিঠিটা বেসিনের পাশে রাখল। তারপর আবারও জলের গভীরে ডুবিয়ে দিল সমস্ত শরীরকে। শুধু মাথাটি জেগে রইল। শরীরে গভীর ঘুম। স্বপ্নভরা ঘুমের ফেনাতে শরীর পিছল হয়ে গেল। ডুবে গেল সমস্ত শরীর। শুধু মাথাটি জেগে থাকল।

    একটি ছোটো হাঙর সাঁতরে আসছে দূরের নীল সাগর থেকে। দূর সমুদ্রর নোনা সন্ধে, সি-গালের বিধুর তীক্ষ্ণ ডাকে ওর নাক ও কান ভরে গেল। দুটি চোখ ভরে এল জলে।

    স্বপ্নর মধ্যেই টয়লেটের টেলিফোনটি বেজে উঠল। ঘণ্টা বাজল। পাগলা-ঘণ্টি বাজল মস্তিষ্কর মধ্যে। জলভেজা, রক্তাভ নগ্ন শরীরের ডান হাতটি বাড়িয়ে ফোন ধরবার জন্যে বাথ টাব ছেড়ে এক ঝটকায় উঠতে যেতেই জল চলকে পড়ল টয়লেটের মেঝেতে।

    –ছিঃ। মনীষা বকল নিজেকেই।

    এবং হয়তো অতীশকেও।

    টেলিফোনটা বেজেই যাচ্ছিল। মেঘলা দুপুরের কামাতুর কবুতরের মতো।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউঁচুমহল – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article আলোকঝারির দিনগুলি – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.