Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ৩. মাইসোর স্যাণ্ডাল সাবান

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প29 Mins Read0

    ৩. মাইসোর স্যাণ্ডাল সাবান

    ভিখুকে দিয়ে দীপিতা বানোয়ারির দোকান থেকে একটা ‘মাইসোর’ স্যাণ্ডাল সাবান আনিয়েছিল আজ সকালে-ই তার হাতখরচের পয়সা থেকে। শাশুড়ি নাকি চিরদিন নিম সাবান মাখেন, তাই বাড়িতে শুধু নিম সাবানই আসে গায়ে মাখার জন্যে। শাশুড়ি ‘আর্নিকা তেল ব্যবহার করেন মাথায়, অতএব দীপিতারও তাই মাখতে হয়। তার স্বভাব-চরিত্র, অভ্যেস সবকিছুই বদলে যেতে বসেছে বিয়ের পরে। কমিউনিস্ট রাশিয়াতেও বোধ হয়, এমন ব্রেইন ওয়াশিং করা হয় না।

    চন্দনের গন্ধ খুব ভালোবাসে দীপিতা। সাবান, কী পারফিউম, কী আতর যে-মাখে, তার নিজের জন্য সে সুগন্ধ যতখানি, তার চেয়ে অনেক-ই বেশি তার কাছে-থাকা মানুষদের জন্য।

    কলকাতাতে যখন ছিল দীপিতা ‘আতর’ কাকে বলে জানত না। ডালটনগঞ্জে আসার পর ভোঁদাই-ই প্রথমে আতর নিয়ে এসে ক্রমে দীপিতাকে আতরে অভ্যস্ত করিয়েছে। তার স্বামী অমলের ‘শখ’ বলে কিছু নেই। এক খাওয়া আর ঘুম ছাড়া। দীপিতা কী শাড়ি পরল, কী সাবান মাখল বা কী সুগন্ধে সুগন্ধি হল সেসবে তার কোনোই খেয়াল নেই। বিবরবাসী নগ্ন মানুষ যেমন তার সঙ্গিনীর নগ্না-শরীর অন্ধকার বিবরের মধ্যে কর্ষণ করত, কী করছে তা না জেনেই, নিছক-ই অভ্যাসবশেই, অমলও তার মানসিক ক্লান্তি, পারিবারিক অশান্তি, একঘেয়েমি এবং যৌবনের তীব্র গতিজাড্য অপনোদন করত, অন্ধকার-করা ঘরে প্রায় বিবরবাসী পুরুষের-ই মতো। যে-নারীর ওপরে তার এক-শো ভাগ অধিকার, তার শরীর নিয়ে যা খুশি তাই করত। তার নিজের সুখটুকুই সব ছিল। অন্ধকারে দীপিতার দু-চোখের কোল গড়িয়ে, যে-জলের ফোঁটা পড়ে বালিশ ভিজে যেত সেই খবর অমল কোনোদিন-ই রাখেনি, অন্য অনেক মূর্খ, স্বাধিকার-মত্ত স্বামীর-ই মতো।

    এসব দুঃখের কথা আলোচনা করে, এমন কোনো নারীই ছিল না ডালটনগঞ্জে ধারে-কাছে। দীপিতার। কেন জানে না, আজ বিকেলে চন্দন সাবান দিয়ে গা ধুতে ধুতে ওর হঠাৎ ভীষণ ই কান্না এল। একবার ভাবল, যাবে না ভোঁদাইদের বাড়িতে। তার কারও সামনে বেরোতেই আর ইচ্ছে করে না আজকাল। কুনো হয়ে গেছে, না বেরিয়ে বেরিয়ে। কে-না-কে আসছে, তারজন্যে দীপিতার যাওয়ার কী দরকার! যাদের পড়শি সেই অমল আর তার বোন সিমলি গেলেই তো চলে।

    তবুও বাঁ-হাত দিয়ে চুলের ঝুটি উঁচু করে ডান হাত দিয়ে খুব ভালো করে ঘাড়ে সাবান ঘষল। তারপর বাঁ-হাত দিয়ে। গলায়, বুকে, তলপেটে, হাতে, পায়ে, মেয়েলি শরীরের নানা পর্বত-কন্দরে। সর্বাঙ্গে সাবানের ফেনা তুলে দারুণ চান করে উঠল ও। শোয়ারঘরের দরজা বন্ধ করেই চলে গেছিল। যাওয়ার আগে শাড়ি-ব্লাউজ বের করেই রেখে গেছিল। একটা মাহেশ্বরি শাড়ি, জারুল ফুলের মতো হালকা বেগুনি তার রং, আর তারসঙ্গে সাদা ছোটো হাত কটন-এর ব্লাউজ। তার মায়ের একছড়া গার্নেটের হার ছিল। বিয়ের সময়ে বড়োমামি তাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরেনি কখনো। আজ-ই পরবে বলে বের করে রেখেছিল। শাড়িটাতে ফলস লাগানো ছিল না। ভোঁদাই গতরবিবারে নেমন্তন্ন করার পর-ই ভিখুকে রহমান-দর্জির কাছে পাঠিয়ে ফলস লাগিয়ে এনেছে। এই সময়টা ডালিয়া ফোঁটার আসল সময় নয়, তবে সবে ফুটতে আরম্ভও করেছে। ভিখুকে দিয়ে সিভিল কনট্রাক্টর বিষেণ সিং সাহেবের মেয়ের কাছ থেকে একটা ফিকে বেগুনি-রঙা ডালিয়া আনিয়ে গেলাসে নুনজল দিয়ে রেখেছিল স্নানে যাওয়ার আগে।

    শ্যাম্পু করে চান সেরে যখন সাজগোজ শেষ করল, চোখে গাঢ় করে কাজল দিল, বাহুমূলে আর স্তনসন্ধিতে ফিরদৌস আতর, তারপর ফুল গুঁজল খোঁপাতে, তখন সত্যিই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে রানি মুখার্জির মতোই মনে হল ওর। ভোঁদাই ঠাট্টা করে ওকে রানি মুখার্জি বলে ডাকছে কিছুদিন হল। মিল ঠিক কোথায় তা জানে না, তবে মুখের বুদ্ধির প্রসাধনে সম্ভবত মিল আছে কিছু। পুরুষেরা তার মধ্যে কী যে দেখে, তা তারাই বলতে পারে। তবে তার স্বামী অমল যে, বিশেষ কিছুই দেখে না তার মধ্যে, সে কথাটুকু-ই সে বলতে পারে।

    স্নান করার আগে স্নানঘরে রাখা নুনের বয়াম থেকে আজ নুন নিয়ে গ্লাসে করে গিজারের গরম জলে গার্গল করেছিল। যদি সত্যি সত্যিই গান গাইতে হয়-ই, সে জন্যে।

    অমল অনেক আগেই তৈরি হয়ে বারান্দার রেলিং-এর ওপরে পা তুলে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। পুঁটি যাবে না। শাশুড়ির মানা। উলটোপালটা খেয়ে শরীর খারাপ করতে পারে, সেইজন্যে। পুঁটি, অন্নদাদেবী আর সুরাতিয়ার কাছেই থাকে বেশি সময়। আগামী মাসে চার-এ পড়বে। তাকে এবার স্কুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু শাশুড়ির ভীষণ-ই আপত্তি। বলেছেন, ছ-বছরে পড়লে তবেই স্কুলে যাবে ও। সিমলি যেমন গেছিল। সিমলিদের সময় আর এখনকার সময় যে এক নয়, একথা তাঁকে বোঝাবে কে? মেয়েটার স্বভাব-ই ছিচকাঁদুনে হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। নিজের সন্তানকে যেভাবে মানুষ করবে ভেবেছিল তার কিছুই হচ্ছে । পুঁটির ওপরেও দীপিতার কোনো অধিকার নেই। রাতেও অন্নদা তাকে শুতে দেন না দীপিতার সঙ্গে। বাঁকা চোখে বলেন, তোমাদের সুবিধের জন্যেই তো, রাখি আমার কাছে। বলেন, আমাদের শাশুড়িরা যদি এমন হতেন তো, আমরা তখনকার দিনের বউরা বর্তে যেতাম। কে জানে! তখনকার দিনের অন্নদার মাতো বউ-এরা বোধ হয় ‘দাম্পত্য বলতে ওই একটা জিনিস-ই বুঝতেন। ভাবলেও গা ঘিনঘিন করে।

    আসলে পুঁটিকে অন্নদা তাঁর খেলনা করেছেন। ধীরে ধীরে মেয়েটার সঙ্গে দীপিতার আত্মিক যোগ হালকা হয়ে যাচ্ছে। ওর নিজস্ব বলতে তো শুধু ওই আত্মজাই। সেই আত্মজার শিকড়টিও তার থেকে শাশুড়ি আলগা করে দিচ্ছেন ক্রমাগত। বুঝতে পারে দীপিতা। চারদিক থেকে এক গভীর চক্রান্ত তাকে ঘিরে ফেলছে। এই লক্ষ্মণরেখা ছিঁড়ে তাকে বেরোতেই হবে। কিন্তু বেরোবে কী করে?

    তৈরি হয়ে দরজা খুলে ভেতরের বারান্দা হয়ে যখন বাইরের বারান্দাতে এল, তখন দেখল অমল বারান্দাতে নেই। বাগানে পায়চারি করছিল সে। দীপিতাকে দেখে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরোটা ছুঁড়ে ফেলে বলল, বাবা :! যাবে তো পাশের বাড়িতেই, সাজ দেখে মনে হচ্ছে যেন, অভিসারে চলেছ! সিমলি তোমার জন্যে অপেক্ষা করে করে চলে গেছে। আমিও চলেই যাচ্ছিলাম।

    দীপিতা ভেবেছিল, অমলকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন দেখাচ্ছে আমাকে? ভেবেছিল, আবার ভাবেওনি। বিয়ের পর থেকে আজ অবধি অমল নিজে থেকে কখনো বলেনি তাকে কেমন দেখাচ্ছে। যায় না তো ও কোথাওই! কোনো বিয়েবাড়িতে যাওয়ার সময় একটু সাজগোজ করার পরে খুব-ই ইচ্ছে করে বাড়ির লোকে কেউ একটু বলুক, বা :! বেশ দেখাচ্ছে তো।

    এ বাড়িতে কেউ কোনোদিনও বলেনি। সাজগোজ করতে জানেও না কেউ। তবে ননদ সিমলি কোথাও যেতে হলে, দীপিতার কাছে সাজতে আসে। ওর কোনো কোনো বন্ধুও আসে। এক বন্ধুর বিয়ের সময়ে তার মা সিমলিকে অনুরোধ করেছিলেন দীপিতাকে কনে সাজাতে আসতে। অন্নদা দেবী যেতে দেননি। বলেছিলেন, তার চেয়ে চুল-বাঁধার, নখ-কাটার দোকান দিলেই হয়, কর-বাড়ির বউ নাচতে নাচতে কোথাও গিয়ে কারোকে সাজাবে না।

    তারপর সিমলিকে বলেছিলেন, সাজতে হলে, তোর বন্ধুকে বল এখানে এসে সেজে যাবে। বিয়ের দিন বিয়ের কনের পক্ষে আসা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনাতে সিমলির খুব রাগ হয়েছিল তার মায়ের ওপরে।

    অমল অমন সাধ-করে সাজা দীপিতার দিকে একবার পূর্ণদৃষ্টিতে চাইল না পর্যন্ত। বিরক্ত মুখে বলল, আমি এগোলাম। বলেই, আগে আগে গেট খুলে বেরিয়ে গেল। দীপিতা অনেকখানি পেছনে পেছনে হেঁটে যেতে লাগল। ও ভাবছিল, এমনভাবেই যদি, যাবে তাহলে আর দীপিতার অপেক্ষাতে আদৌ থাকা কেন? চলে গেলেই তো হত। কে জানে! ওর বাবাকে দেখে হয়তো ও শিখেছে যে, স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করাটাই ‘শিভালরি’। দোষটা অমলের নয়, অমলের রক্তের।

    সারাটা সপ্তাহ দীপিতার কেবল-ই মনে হয়েছে, এই কাট্টুস সেই কাট্টুস নয় তো? তার কলেজের বন্ধু মাধবীর কাজিন। মাধবীদের বাড়িতেই আলাপ হয়েছিল। দীপিতাকে দেখেই যে, কাট্টুস একেবারে Head over Heels প্রেমে পড়েছিল এটা কোনো কথা নয়। সে অনেক পুরুষেই পড়েছে তার কৈশোর থেকেই। কথাটা হচ্ছে এই যে, দীপিতারও তাকে ভীষণ-ই ভালো লেগেছিল। ঠিক ওইরকম ছেলে তাদের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে একজনও ছিল না। ছেলে বন্ধুদের আজকাল সকলেই, মেয়ে বন্ধুদের মতো তুই তুই’ করেই বলে কিন্তু কাটুসের মধ্যে কিছু একটা বা একাধিক ব্যাপার ছিল, যে-কারণে ওকে তুই বলতে পারেনি দীপিতা প্রথম দর্শনে। মনে মনে সম্ভ্রমে তাকে আপনিই বলতে চেয়েছিল কিন্তু তা না বলে তুমি’ বলেই সম্বোধন করেছিল। অনেক গল্প হয়েছিল। গান হয়েছিল। এক গভীর ভালো লাগায় ভাসতে ভাসতে সেই সন্ধেতে মামাবাড়িতে ফিরেছিল দীপিতা।

    পরদিন মাধবী ফোন করে বলেছিল, তুই কাট্টুসদার মাথাটি আস্ত চিবিয়ে খেয়ে গেছিস কালকে দীপিতা। প্রেমে পড়লে চালাক মানুষেরা বোকা হয়ে যায় আর বোকারা চালাক, এমন শুনেছিলাম কিন্তু সত্যি সত্যিই যে হয় তা কাট্টুসদাকে দেখেই প্রথম বুঝলাম। প্রাণে মারিস না প্লিজ আমার ভালো দাদাটাকে।

    তারপরে আর কাট্টসের সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে ফোন করত সে প্রায়-ই। দীপিতাও ফোন করত মাঝে মাঝে। বড়োমামা কাটুসের সঙ্গে তার সেই প্রথম আলাপের মাস দুয়েক পর-ই দীপিতাকে হঠাৎ-ই ঘাড় থেকে নামালেন। ব্রজেন কর নামক ‘খুনি-খুনি’ মানুষটি এক সকালে এলেন। বড়োমামা দীপিতাকে ডেকে বললেন, প্রণাম করো।

    যাকে-তাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে একেবারেই ভালো লাগে না দীপিতার ছেলেবেলা থেকেই। তবু করতেই হল। বড়োমামি তারপরে দীপিতাকে অমলের একটি ফোটো দেখালেন নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে। জিনস-পরা আর ‘আড্ডাসে’-এর গেঞ্জি-পরা স্পোর্টসম্যানের মতো দেখতে লম্বা-চওড়া একটি ছেলে জিপগাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে, গ্রাম্য-গ্রাম্য। বোকা-বোকা চেহারা।

    বড়োমামি বললেন, ব্রজেনবাবু তোর বড়োমামার বহুদিনের বন্ধু। খুবই উপকারী বন্ধু। অবস্থা দারুণ ভালো। ছেলে বি.কম পাশ, বাবার ব্যাবসার পার্টনার। ডালটনগঞ্জে বাড়ি, গাড়োয়াতে বাড়ি, দু-খানা গাড়ি, একমাত্র ননদ, তারও বিয়ে হয়ে যাবে ক-দিন পর। এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। তার দুই ছোটো দেওর। এরকম ঝামেলাহীন পরিবার হয় না। তোর অনেক কপাল যে, বাড়ি বয়ে উনি তোকে নিতে এসেছেন।

    -আমার পড়াশুনো মামিমা?

    প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছিল দীপিতা।

    -পার্ট টুতে বসলে কি আর ল্যাজ গজাবে? পরীক্ষার ফল তো মেয়েদের বিয়ের জন্যেই দরকার। তা তুই পরীক্ষা না দিয়েই যদি এই বিয়ের পরীক্ষাতে পাশ করে যাস, তাহলে আর মিছিমিছি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করবি কেন? এম.এ., এম.ফিল, পি. এইচ. ডি করে কারা? যেসব মেয়ের বিয়ে হয় না। প্রত্যেক মেয়ের জীবনের পূর্ণতাই বিয়েতে। সংসার করবি, মা হবি, সুখে থাকবি, এর চেয়ে বড়ো চাওয়া মেয়েদের জীবনে আর কী থাকতে পারে? তা ছাড়া যা প্রতিযোগিতার দিন আজকাল। পড়াশুনা করতে চাইলেই কি সকলেই তা করতে পারে, না, করার যোগ্যতা রাখে? তোর মামা রিটায়ার করেছেন চার বছর হল। ওঁর কিছু একটা হয়ে গেলে তাকে নিয়ে আমি কী করব? তোর মামা যা বলেন তাই কর। মা-বাবা মরা তোকে কি আর উনি ভাসিয়ে দেবেন? আমরাই তো মা-বাবা চলে যাওয়া তোকে এতবড়োটি করে তুললাম। নাকি?

    দীপিতা মনে মনে বলেছিল, তা তুলেছ, কিন্তু মামাতো-দিদি অনুরাধার আয়ার মতোই ব্যবহার করে এসেছ চিরদিন। অনুদিই বরং তাঁর সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করত। অনুদি যখন তার ব্রিলিয়ান্ট প্রাইভেট-টিউটর শেখরদার সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করল আর আহমেদাবাদে চলে গেল তার পরের বছর দুয়েক মামা-মামিমা তার সঙ্গে মেয়ের মতোই ব্যবহার করেছিলেন অবশ্য।

    যাই হোক, দীপিতার আপত্তি করার কোনো উপায়-ই ছিল না। তা ছাড়া ভেবেছিল, বিয়েই সম্ভবত মেয়েদের সমস্ত সুখ ও আহ্বাদের শেষকথা। যে-মেয়ের বিয়ে না হয়, তার জীবন-ই বৃথা। তা ছাড়া, বিয়ে তো সবসময়ই একটা জুয়া। ভালোবেসে বিয়ে করলেও তাই, না-ভালোবেসে করলেও তাই। চারদিকে তো কতই দেখল ছেলেবেলা থেকে। এমনকী অনুদি-শেখরদারও নাকি বনিবনা হয় না এখন। এত প্রেম ছিল যাদের। অনুদি নাকি কম্পিউটার কোর্স করে একটি চাকরি নিয়ে মেয়েদের হস্টেলে একা থাকে। শেখরদার একটি বড়োলোক গুজরাটি মেয়ের সঙ্গে ভাব হয়েছে। তাই যদি হবে তবে মামা-মামির কথাতে রাজি হয়ে যেতে আপত্তিই বা কী?

    আশ্চর্য!

    দীপিতা মনে মনে নিজেকে বলল, এতসব কথা ভোঁদাইদের বাড়িতে যাওয়ার সময়েই কেন মনে হচ্ছে দীপিতার, তার মন আজকে সকাল থেকে এমন বিবশ কেন? সে কি মনে মনে নিশ্চিত-ই হয়েছে যে, মাধবীর পিসতুতো দাদা কাট্টুস-ই ভোঁদাই-এর পিসিমার ছোটো জা-এর ছেলে কাট্টুস? হওয়াটার সম্ভাবনাই বেশি। কাট্টুস নামটাই এমন যে, তা বেশি মানুষের থাকা সম্ভব নয়। ভেরি আনকমন নাম।

    ভোঁদাইদের বাড়ির দোতলা থেকে সাউণ্ড সিস্টেমে অজয় চক্রবর্তীর ভজন ভেসে আসছিল। অজয় চক্রবর্তীর একমাত্র কন্যা কৌশিকী নাকি দারুণ গাইছে। দেখতেও নাকি ভারি সুন্দরী। এখনও তাকে কিশোরীই বলা চলে। সেদিন কোন কাগজে যেন পড়ছিল। ভোঁদাই-এর মায়ের কাছে উস্তাদ রশিদ খাঁ-এর দু-টি ক্যাসেট আছে। মেঘগর্জনের মতো গলা। সামনে থেকে এঁদের কারওকেই তো আর শোনা হবে না এ-জীবনে, ক্যাসেট-ই সার। অমলকে যে বলবে, একটা সি.ডি প্লেয়ার কিনে দাও তাও তার সাহস হয় না। যে-মানুষ গান পছন্দই করে না, তাকে বলেই বা কোন মুখে? বললেও বলবে, তোমার জন্যে কি চুরি করব? ওই কটা টাকা তো দেন বাবা! অনেক পাপ করলে মানুষে আমার মতো বাপের চাকরি করে।

    অমল ততক্ষণে ভেতরে ঢুকে গেছিল। ভোঁদাইদের অ্যালসেশিয়ান কুকুর, যার নাম পিশাচ, সে খোলা ছিল। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে-থাকা সিমলি বলল, গলা তুলে, ওই তো বউদি আসছে।

    দীপিতা মুখ তুলে বলল, পিশাচকে বাঁধতে বল সিমলি।

    ভোঁদাইও বারান্দার রেলিং-এ ভর দিয়ে দাঁড়াল এসে, গলা চড়িয়ে ডাকল, রামলগন। বাঁধ। বাঁধ। পিশাচকে বাঁধা।

    রামলগন দৌড়ে এল। এসে বাঁধল কালো অ্যালসেশিয়ানটাকে।

    রামলগন পিশাচ বলতে পারে না, বলে পীযূ। ঝুমরিতিলাইয়াতে বাড়ি রামলগনের। সেখানে একটা দাড়িঅলা চশমাপরা নোংরা বাঙালি হাজামত, অর্থাৎ নাপিত আছে, তার নাম নাকি পীযুষ। সে একদিন রামলগনের দাড়ি কামাতে গিয়ে তার বাঁ-কানের অনেকখানি কেটে দিয়েছিল। তখন থেকে রামগনকে ঝুমরিতিলাইয়ার মানুষে কান-কাটা রামলগন বলে ডাকে। সেই রাগেই এই লাল চোখে কালো কুকরটাকে রামলগন পীযূষ বলে ডাকে। কান কাটা যাওয়ার পর থেকে সব হাজামত, সব পীযূষ-ই তার কাছে পিশাচ। যদিও ‘পিশাচ’ শব্দটির মানে জানে না রামলগন, তবে জানে বেশ খারাপ-ই কিছু হবে নিশ্চয়ই!

    ভোঁদাই বলল, বাবাঃ। খোঁপাতে আবার ফুলও লাগিয়েছ আজ।

    বলেই বলল, নাঃ। আজ, কুছ হোগা। পুটুস আজকে ফুটুস করে ফুটে যাবে।

    –পুটুস আবার কে?

    –ওই তো পিসিমার দেওরের ছেলে।

    –তুমি যে বললে, তাঁর নাম কাট্টুস।

    –আমি ভুল শুনেছিলাম। তাঁর নাম কাট্টুস নয়, পুটুস।

    –তিনি আসেননি এখনও? ওপরেই এসো তো আগে। তারপরে কথা হবে। তুমি কি শুধু নন-এগজিস্টেন্ট কাট্টুস-এর জন্যেই আমাদের বাড়ি আসতে রাজি হয়েছিলে? আমরা কেউই নই?

    সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাওয়ার সময়ে দীপিতা দেখল, সিঁড়ির পাশে একতলার ঘরে অমল বসে আছে। টেবিলের ওপর রাম-এর বোতল, গ্লাস, বরফের বাটি, লেবু সব সাজানো।

    মনে মনে বলল, ও। এইজন্যেই এত তাড়া!

    অমল বলল, দীপিতাকে, ভোঁদাইকে নীচে পাঠিয়ে দিয়ো তো।

    কেন জানে না, হঠাৎ অমলের ওপরে ভীষণ-ই বিরক্তি বোধ করল দীপিতা। অমলের কথার উত্তর না দিয়ে, ও ওপরে উঠে গেল আস্তে আস্তে।

    –সত্যি বউদি। আজ তোমাকে যা দেখাচ্ছে না, তোমার জন্যে আমি আজ জীবনও দিয়ে দিতে পারি। একেবারেই রানি মুখার্জির রেপ্লিকা।

    মনে মনে খুব খুশি হলেও, দীপিতা বলল, আমি, ‘আমি’-ই থাকতে চাই। কারও রেপ্লিকাই হতে চাই না।

    দো-তলাতে উঠতেই ভোঁদাই-এর মা দীপিতার থুতনি ধরে আদর করে বললেন, ভোঁদাই কিন্তু বাড়িয়ে বলেনি বউমা। তোমাকে আজ ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। সেজেছও ভারি সুন্দর। এই গয়নাটা তো দেখিনি আগে কখনো।

    সিমলিই বলল, তার বউদির হয়ে, এটা বউদির মায়ের গয়না। গার্নেট।

    পিসিমা বললেন, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে ডালিয়াটি কেমন লাগিয়েছে দীপিতা খোঁপাতে! অমন জারুল ফুলের রঙের ডালিয়া পেলে কোত্থেকে?

    না গো মেয়ে, তোমার রুচি আছে। পিসিমা বললেন।

    একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল দীপিতার।

    পুটুস-এর জন্যে অপেক্ষা করে করে থেকে, এই পাঁচ মিনিট আগে হাটিয়া থেকে ফোন এল যে, প্লান্টে ব্রেকডাউন হয়েছে। অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও, ওর পক্ষে আজ আসা সম্ভব হবে না। অবশ্য বিকেল তিনটেতেই জানিয়েছিল যে, বোধ হয় এসে পৌঁছোতে পারবে না। তবু চেষ্টা করছে। না আসতে পারলে জানাবে।

    ভোঁদাই ঠাকুরপো বলেছিলেন আপনার দেওরের ছেলের নাম নাকি কাট্টুস?

    দীপিতা বলল ভোঁদাই-এর পিসিমাকে।

    -না না, ওর নাম পুটুস। পুটুস ফুল দেখেছ তো। পুটুসের ঝাড়।

    –না তো।

    –সে কী!

    পিসিমা বললেন, এদিকে পথের পাশে পাশে যে, কটুগন্ধী ঝাড়গুলো হয়-না? দ্যাখোনি? নানা-রঙা ফুল হয় তাতে।

    –ইংরেজি নাম lantana ।

    বিশ্বাস-কাকিমা বললেন, তোমার কাকাবাবু আমাকে এই ইংরেজি নামটা বলেছিলেন।

    পিসিমা বললেন, পুটুস ইঞ্জিনিয়ার। হাটিয়ার হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনে কাজ করে! ও খড়গপুরের ‘আই. আই. টি.’ থেকে পাশ করে বেরোয়। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। রুচি শখ, সব-ই এরকম। ভোঁদাই-এর মতো। ভোঁদাই ওকে দেখেনি। এলেই আলাপ হবে প্রথম। সাহিত্য, গান ছবি আঁকা সবেতেই তো দু-জনের সমান উৎসাহ।

    –এমা! উনি আসবেন না। তাহলে আমাদের একটা খবর পাঠালেন না কেন বিকেলেই কাকিমা?

    মনমরা হয়ে বলল, দীপিতা।

    -কেন? তোমরা কি একদিনের বদলে দু-দিন খেতে পারো না আমাদের এখানে? মগনলালের রান্না তো সব প্রায় হয়েই এসেছিল। আজ মিষ্টি পোলাও করেছে মগনলাল, কচি পাঁঠার মাংস, দই দিয়ে রুই মাছের রেজালা। ভোঁদাই কোথা থেকে বটের মেরে এনেছিল তাই বটেরের কাবাব। ছোলার ডাল, নারকোল দিয়ে তোমাদের-ই জন্যে, সঙ্গে ফুলকো-লুচিও করতে বলেছি। পেঁপের চাটনি, দুখুয়ার দোকানের কাঁচাগোল্লা আর রাবড়ি। আজও খাও তারপরে পরের সপ্তাহেও আবার হবে। তিনদিনের জন্যে আসবে বলেছে ও।

    তারপর বিশ্বাস-কাকিমা বললেন, খাওয়া-দাওয়া তো আছেই। তার আগে ক-টা গান শোনাও তো আমাদের।

    ভোঁদাই বলল, বউদি আজ তোমার সামনে দাঁড়ানোর মতো বুকের পাটা আমার নেই। শুধু আমার কেন, কোনো পুরুষের-ই হবে না। সব পুরুষেরাই কচুকাটা হয়ে যাবে আজ। পুটুস না এসে ভালোই হয়েছে। এলে তার প্রাণ-ই যেত আজ। বলো মা! এত সুন্দরী হওয়ার কোনো মানে হয়? বউদির জন্যেই আমার বিয়ে করা হল না। হবেও না এ-জন্মে।

    -ওমা! এ আবার কী কথা?

    সিমলি হেসে উঠে বলল। দীপিতা বিব্রত হয়ে মুখ নামিয়ে নিল।

    –ও তুই বুঝবি না। তোর দাদার, মানে অমলদার হাতখানা একদিন দেখিস, মানে হাতের পাতা। আরে সাব্বাশ! ফেট-লাইনখানা কী! একেবারে এধার থেকে ওধারে চলে গেছে। আর এই দেখ আমারটা। আধখানা আসার পর ছাগলে মুড়িয়ে খেয়ে দিয়েছে। বুঝলি না, কপালে গোপাল করে। যার কপাল-ফাটা, তার সব-ই ফাটা।

    -তোমাকে কিন্তু ডাকছে তোমার অমলদা নীচে।

    দীপিতা বলল, ভোঁদাইকে।

    –যাচ্ছি। একা তো আর নেই। রামবাবুকে দেখলে না?

    প্রথমে বুঝতে পারেনি দীপিতা। বুঝতে পেরে, হেসে বলল, ও হ্যাঁ। দেখলাম বটে।

    –তবে আর কী! যাচ্ছি। একটা গান আমিও শুনে যাই। তবে, অন্যদিকে চেয়ে শুনব।

    –কেন? অন্যদিকে চেয়ে কেন?

    –আরে সেই যে, শায়েরি আছে না একটা?

    –কী? আমি শায়েরি জানব কোত্থেকে? কার শায়েরি?

    –কার অত মনে নেই, মির্জা গালিব বা জওক বা জিগর মোরদাবাদি বা ফিরাখ গোরখপুরি কারও হবে। সেই যে…

    –আহা! বলোই না।

    ‘অ্যাইসা ডুবা হু তেরি আঁখো কি গেহরাইমে
    হাঁথমে জাঁম হ্যায়, মগর পিনেকি হোঁস নেহি।‘

    –মানে কী হল?

    –মানে হল, তোমার চোখের গভীরে আমি এমনিই ডুবে গেছি যে, হাতে আমার পান পাত্র ধরাই আছে, কিন্তু চুমুক দিতেও ভুলে গেছি। জাম’ মানে পান-পাত্র, জান কি? তারপর বলল, তুমি আজ এমন করে কাজল পরেছ-না বউদি! তুমি আজ সত্যিই প্রাণঘাতিকা।

    রক্তর নানারকম রিপোর্ট, এক্স-রে-র প্লেট, ই.সি.জি.-র গ্রাফ সব মনোযোগ দিয়ে দেখার পরে ডাক্তার ঝাঁ স্টেথোটা ভোঁদাই-এর বুক থেকে নামিয়ে ওর নাড়ি টিপে বসে রইলেন। জ্বর এখন এক-শো পাঁচ। ভুল বকছে। জ্বর এসেছে চারদিন হল। দোতলাতে ওর ঘরে মা এবং পিসিমা। দীপিতা ওর পায়ের কাছে শুকনো মুখে দাঁড়ানো।

    ডাক্তারবাবু এসেছেন প্রায় ঘণ্টাখানেক। আজকালকার কোনো ডাক্তার কোনো একজন রোগীর জন্যে এত সময় ব্যয় করেন না, অনেক অর্থের প্রলোভন ছাড়া। অনাদি বিশ্বাস, ভোঁদাই-এর বাবা, ডাক্তার ঝাঁ-র প্রথমজীবনে অনেকইরকম সাহায্য করেছিলেন। সে-কথা ডা. ঝাঁ ভোলেননি। এখনও কিছু মানুষের বুকে কৃতজ্ঞতাবোধ’ বেঁচে আছে হয়তো।

    ওঁরা এক একজনে এক এক জিনিস আনতে গেছিলেন। সিমলি ওদের কলেজের ফাংশানে যাওয়ার আগে ওখান থেকে ফিরে গিয়ে বলেছিল দীপিতাকে, বউদি! তোমার কাছে ওডিকোলন আছে? একটু নিয়ে যাও-না ভোঁদাইদাদের বাড়ি। ভোঁদাইদা বোধ হয় বাঁচবে না। মাও তো গেছিল কাল রাতে। কাকিমা বললেন, তোমার কথা নাকি খুব বলছে।

    দীপিতা চুপ করে রইল। খবর তো সব-ই পায় কিন্তু যেতে লজ্জা করে। ভয়ও করে। অমল আজকাল যেন, কেমন ব্যবহার করছে দীপিতার সঙ্গে। ভোঁদাই যে, দীপিতাকে ভীষণ পছন্দ করে, তা তো ভোঁদাই কারও কাছেই গোপন করে না। মনে পাপ থাকলে কি করত? তা ছাড়া পাপের-ই বা কী? ভালোলাগা, ভালোবাসা কি পাপ?

    দীপিতা, সিমলিকে বলল, তাই?

    তারপর বলল, যাচ্ছি।

    ভয়ে ওর বুক দুরদুর করে উঠল। ওর কথা যে, ভোঁদাই বলছে, একথা অন্নদা জানলে নতুন করে নিগ্রহ শুরু হবে ওর ওপরে। হয়তো জেনেছেন বলেই দীপিতাকে যেতে বলেননি। অমলও বলেনি ওকে যেতে। কিন্তু সিমলি বলেছে। এবারে যাবে দীপিতা।

    শাড়িটা বদলে একটা সাদা-কালো কটকি শাড়ি পরে ওডিকোলনের বড়োশিশিটা নিয়ে চলে এসেছিল। কাকিমা আর পিসিমা খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু ভোঁদাই-এর চোখ বন্ধ। জ্ঞান নেই।

    অমল ভোরেই বেরিয়ে গেছে। কাল রাতে একবার গেছিল মিনিট পনেরোর জন্যে ভোঁদাইকে দেখতে। অথচ ওর চেয়ে অনেক বেশি কনসার্নড হওয়ার কথা ছিল। ওদের বাড়িতে ভোঁদাই ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষ নেই। ডাক্তার-টাক্তার সম্বন্ধে খোঁজ নেওয়ার ছিল। প্রয়োজনে নার্সিংহোম-এ দেবে কি না…না, সেসব-এর কিছুই করেনি। করবার মধ্যে করছে ইমরাত। আর বিটকেল খাটের পাশে বসে রয়েছে সর্বক্ষণ। যে যা বলছে, করছে। কাত্যায়নী দিদিও সকাল-সন্ধে এসে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে। গরিবে তো পয়সা দিয়ে ভালোবাসা দেখাতে পারে না, শুধু শরীর দিয়ে, সেবা দিয়ে, উদবেগ দিয়েই পারে।

    আরও বসে আছে পিশাচ, খাটের নীচে, রামলগন যাকে ‘পীযূষ বলে ডাকে। কুকুরের ভালোবাসা যে, অনেকাংশে অকৃতজ্ঞ ‘মনুষ্য জাতের ভালোবাসার চেয়ে অনেক-ই পবিত্র, অনেক-ই গভীর, তা এমন এমন সময়ে বোঝা যায়। পিশাচ খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দু-দিন হল, ভোঁদাই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর থেকেই।

    ডা. ঝাঁ বিশ্বাস-কাকিমাকে জিজ্ঞেস করলেন, দীপিতা কওন হ্যায় ভাবিজি?

    –দীপিতা?

    কাকিমা ও পিসিমা চমকে উঠে বললেন।

    দীপিতা ওডিকোলোনের শিশিটা তেপায়ার ওপরে রেখে বলল, আমি বারান্দাতে আছি। কাকিমা। আমাকে ডাকবেন, ডাক্তারবাবু চলে গেলে।

    –এসো মা। তবে চলে যেয়ো না।

    দীপিতা বারান্দাতে দাঁড়িয়ে গামহার আর কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর দিকে চেয়ে রইল। ওর খুব ভয় করছিল। আটদিন আগে শনিবার সন্ধেবেলা ভোঁদাই ওদের বাড়িতে এসেছিল। ব্ৰজেনবাবু তো গাড়োয়া গেছিলেন। শাশুড়ি ও সিমলি সাইকেল-রিকশাতে করে মাধুরী দীক্ষিতের কী একটা ছবি হচ্ছে সিনেমা হল-এ, সেই ছবি দেখতে গেছিলেন। ভোঁদাই হয়তো সব জেনে শুনেই এসেছিল। পুঁটি ছিল সুরাতিয়ার কাছে দোতলাতে। ভিখু গেছিল শাশুড়ির পানের সব সরঞ্জাম আনতে। দীপিতা শোয়ার ঘরে বসে ‘নবকল্লোল’ পড়ছিল। ‘নবকল্লোল’, ‘তথ্যকেন্দ্র’, আর ‘সংবাদ প্রতিদিন’–এই তিনটি পত্রিকা চেয়ে এনেছিল বিশ্বাস-কাকিমার কাছ থেকে। দীপিতা। সংবাদ প্রতিদিন’ দৈনিক কাগজটাও দিনকে দিন ভালো হচ্ছে।

    ভোঁদাই ঘরে ঢুকেই বলেছিল, কী করছ একা একা?

    ওর মুখে মদের গন্ধ পেল দীপিতা।

    –তুমি মদ খেয়ে এসেছ?

    –হ্যাঁ। আমি মিথ্যে বলি না। আজ খেয়েছি। কিন্তু খাই না।

    -কেন?

    –আজ তোমাকে একটা চুমু খেতে এসেছি।

    খুব রেগে দীপিতা দাঁড়িয়ে উঠল। বলল, তোমার সাহস তো কম নয়।

    –কারোকে ভালোবেসে ভীষণ কষ্ট যারা পায় তারা বুঝি খুব সাহসী? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না দীপিতা। তোমাকে আমি বিয়ে করব।

    –তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

    সে-কথা বলল বটে কিন্তু ওর মাথার মধ্যে পৃথিবী ঘুরে গেল। কিন্তু তার-ই সঙ্গে মুক্তির আভাস পেল যেন ও হঠাৎ। যে-কয়েদির যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়েছে, তাকে যদি হঠাৎ–‘ছুটি হয়ে গেছে’ একথা কেউ এসে বলে তার মনে যেমন হয়, তেমন আর কী!

    কিছুক্ষণ মুখ নামিয়ে চুপ করে থেকে ভোঁদাই বলল, তা বলতে পারো। কিন্তু গত এক বছর হল, এ-নিয়ে আমি ভেবেছি। তুমি কি কিছুই বুঝতে পারোনি? সত্যি করে বলো তো? তোমাকে এ-বাড়িতে নানা কষ্ট সহ্য করতে হয়। আমার মা-পিসিমাও সে-কথা জানেন। তোমাকে নিয়ে গেলে ওঁরা তোমাকে মাথায় করে রাখবেন। তুমি এখানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছ, তিল তিল করে ফুরিয়ে যাচ্ছ দীপিতা। তা আমি হতে দেব না। তুমি অমলদাকে ডিভোর্স করো। চলো আমাদের বাড়িতে। পুঁটিকেও নিয়ে যাব। তোমাদের সঙ্গে পুঁটিকেও আমরা পুরো পরিবার সানন্দে গ্রহণ করব। সত্যি বলছি। আমি আমার মা ও পিসির মন বুঝেই একথা বলছি। পুঁটিকেও এরা নষ্ট করে দেবে। এই পরিবারের অনেক নোংরা কথা আমি জানি। কিন্তু তোমাকে বলব না। আমি তোমার পিশাচ হয়ে থাকব বাকিজীবন। বিশ্বাস করো।

    –তুমি এখন যাও ভোঁদাই। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বড়োই ছেলেমানুষ তুমি।

    –এসো, কাছে এসো, তোমাকে একটা চুমু খাব, তোমার বুকে একটু মাথা রাখব। তোমার ছায়াতে একটুক্ষণ থাকব। পৃথিবীতে বড়ো রোদ্দুর বউদি।

    বলেই, দীপিতার কাছে এসে তার কোমর দু-হাতে জড়িয়ে ধরল ভোঁদাই। ঠাস করে এক চড় মারল ওকে দীপিতা। এতজোরে মারল যে, ওর গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেল।

    স্তম্ভিত হয়ে গেল ভোঁদাই। ওর ওপরে জোর করল না, ওর ওপরে রাগ করল না, স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল দীপিতার দু-চোখে। ঝরঝর করে জল ঝরতে লাগল ছ-ফিট লম্বা, সুগঠিত ভোঁদাই-এর দু-চোখ দিয়ে।

    তারপর ও মুখ নামিয়ে বলল, ক্ষমা কোরো আমাকে তুমি।

    বলেই, যেমন এসেছিল, তেমন-ই দ্রুত চলে গেল ঘর ছেড়ে।

    সিমলির কাছে শুনেছিল দীপিতা যে, ডা. ঝাঁ গতকাল রাঁচির মেন্টাল হসপিটালেরডা, সেনকে কল দিয়ে নিজের গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন ভোঁদাইকে দেখাতে। কোনো এক্সট্রিম মেন্টাল শক-এর জন্যেই নাকি এই সাংঘাতিক জ্বর হয়েছে। দীপিতা জোর করে হেসে, মুখে হাসি রেখে বলেছিল, চোরাশিকার করতে গিয়ে ধরা পড়ল নাকি? নাকি কারও প্রেমে পড়ে হতাশ হয়েছে! পড়তে পারে। প্রেমে পড়া তো অপরাধ নয়।

    –কার প্রেমে পড়ল?

    সিমলি অর্থবহ স্বরে বলেছিল, তা কী করে বলব? তুমিও যতটুকু জানো, আমিও ততটুকুই। তবে আমার প্রেমে যে পড়েনি, তা তুমি নিশ্চয়ই জানো।

    বেশ কিছুদিন হল সিমলি তার বন্ধু মাধবীর দাদার প্রেমে পড়েছে বলে মনে হয়। বড়ো ঘন ঘন মাধবীদের বাড়ি যাচ্ছে। সেদিন সে সিনেমাতে গেছিল তাও মাধবীর দাদাই টিকিট কেটে নিয়ে গেছিল। মাধবীর মা-ও নাকি যাবেন। হয়তো তাই, প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে প্রেমে পড়া যে, অপরাধ নয় এই স্থবির সত্যকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে ও। তাদের কাছে না হলেও, প্রেমে পড়া অন্যদের কাছে যে, গর্হিত অপরাধ একথা এখনও বোঝেনি সিমলি। তার বাবা ব্রজেন করের অন্য মূর্তি যখন দেখবে তখন জানবে।

    মাধবীদের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়।

    ছেলের বউ আনবার সময়ে অসহায় মেয়ে দেখে আনেন কর পরিবার আর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময়ে সম্পদশালী ক্ষমতাবান পরিবারের খোঁজ করেন।

    দীপিতা মুখে বলেছিল, তুই যা তাদের কলেজের ফাংশানে, তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি।

    চোখে একটু কাজল দিয়ে, খোলা চুলটাকে এলো খোঁপা করে, শাড়িটা বদলেই ওডিকোলোনটা নিয়ে চলে গেছিল দীপিতা।

    ডাক্তার ঝাঁ আরও মিনিট পনেরো পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বিশ্বাস-কাকিমা সঙ্গে এলেন। পিসিমা ঘরেই রইলেন ভোঁদাই-এর কাছে। ডাক্তার ঝাঁ-এর ব্যাগ বয়ে নিয়ে গেল রামলগন। কাকিমা সিঁড়ির মুখ অবধি পৌঁছে দিলেন। কাকিমাকে ফিরে আসতে দেখেই দীপিতা বাইরে থেকে ভেতরে মুখ ফেরাল।

    কাকিমা বললেন, চা খাবি দীপিতা?

    কখনো তুই করে বলেননি উনি দীপিতাকে। আজ বললেন। কেন, কে জানে!

    তারপর বললেন, চল, খাবার ঘরে যাই।

    মগনলালকে চা ভেজাতে বলে খাবার টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে, দীপিতাকে বসিয়ে বললেন, আমার ছেলের জীবন এখন তোরই হাতে। তোর সঙ্গে কি কোনো ঝগড়া-টগড়া হয়েছিল ভোঁদাই-এর?

    –না তো।

    বলল, দীপিতা।

    –সত্যি করে বল মা। আমার একটি মাত্র সন্তান। তোর পিসিমাও নিঃসন্তান। এ ছাড়া আমাদের কেউ-ই নেই। ওর প্রয়োজন নেই তাই ও চাকরি বা ব্যাবসা করে না, কিন্তু ছেলে তো ও খারাপ নয়। মাঝে মাঝে একটু মদ-টদ খায়, সে আজকাল কে-ই বা না খায়? ইচ্ছে করলেই ব্যাবসা করতে পারে। আজ অবধি ওর মন কারোতেই বসেনি। একমাত্র তুই-ই ব্যতিক্রম। তুই হয়তো জানিস না, পড়াশোনাতেও খুব ভালো ছিল। কিন্তু ইংরেজিতে বি.এ. করার পরে আর পড়ল না। গান-বাজনা, সাহিত্য, খেলাধুলো, ছবি আঁকা, শিকার সব ব্যাপারেই ওর তুমুল উৎসাহ ছিল। জীবনকে ও দারুণ ভালোবাসে। আমার সন্তান বলে বলছি না, মানে…

    –এসব কেন বলছেন কাকিমা আমাকে?

    -ভোঁদাই তোকে ভালোবাসে। এত ভালোবাসা সম্ভবত কম মানুষ-ই কম মানুষকে বাসে। তুই বিয়ে হয়ে এখানে আসার পরমুহূর্ত থেকে ও তোর প্রেমে পড়েছে। আমি ওর মা, ওর কষ্ট আমি সব বুঝি। কিন্তু আমার করার তো কিছুই নেই। না তোর, না ওর, না আমাদের! ও যে, তোর জন্যে কত কষ্ট পেয়েছে ও পাচ্ছে সে আমরাই জানি। ওর স্বভাবটাই কেমন হয়ে গেছে। মনমরা, উদাসীন।

    –আমি কী করতে পারি কাকিমা…

    –তুইও তো কর-বাড়িতে গত, পাঁচ বছরে কম কষ্ট পাসনি। এখনও তো আনন্দে নেই। তোর বাপের বাড়ি বলতেও কিছু নেই যে, রাগ দেখিয়ে, সেখানে গিয়ে দু-দিন কাটিয়ে আসবি মন শান্ত করতে। তোকেও তো বুঝি আমরা। তোকে কথা দিচ্ছি আমি, তোর ছেলেবেলাতে হারিয়ে-যাওয়া মায়ের অভাব পূরণ করব। আমাদের, মানে পিসিমারও যা-কিছু আছে সব-ই তোর, ভোঁদাইসুন্ধু।

    –আমি কী করতে পারি…

    আবারও বলল এক-ই কথা দীপিতা, যেন ঘোরের মধ্যে।

    –তুই ও বাড়ি ছেড়ে আমাদের বাড়ি চলে আয়।

    স্তম্ভিত হয়ে গেল দীপিতা সে-কথা শুনে। এমন প্রস্তাব যে, কেউ দিতে পারে, তা অভাবনীয়।

    এমন সময়ে পিসিমাও এলেন।

    –কী হল দিদি, তুমিও চলে এলে?

    –ইমরাত আর ঝাণ্ডুরাম এসেছে।

    –তাই?

    –ওরা আছে। কিন্তু ওরা খেতে যাবে। খেয়ে আবার ফিরে এসে থাকবে নীচে, রাতে।

    পিসিমা বললেন, দীপিতা চা খেয়ে আয় মা, একটু ওডিকোলনের জল-পট্টি দিয়ে দিবি কপালে। অজ্ঞানাবস্থায় সমস্তক্ষণ তোর নাম-ই বলেছে। ডাক্তার ঝাঁ-ও শুনেছেন। তিনি তো জানেন না দীপিতা কে? তাই আমাদের জিজ্ঞেস করছিলেন।

    তাহলে তুমি ইমরাতদের এখন যেতে বলো। বললো, খাওয়া-দাওয়া করে আসুক। রাতে একজনের তো থাকা দরকার। রাত-বিরেতে কী দরকার হয়। ওরা চলে গেলে দীপিতা যাবে চা খেয়ে ঘরে।

    কাকিমা বললেন।

    –তাই ভালো।

    পিসিমা বললেন।

    চা খাওয়া হলে দীপিতা গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে ভোঁদাই-এর মাথার কাছে বসে ওর কপালে ওডিকোলনের জলপট্টি দিতে লাগল একটা রুমালে ভিজিয়ে। একটি কাপে ওডিকোলোনের সঙ্গে জল মিশিয়ে নিয়েছে। এখন টেবিল-লাইটটা জ্বলছে শুধু ঘরে। আলোতে দেখা যাচ্ছে টেবিলের ওপরে সাজানো আছে অমিতাভ দাশগুপ্ত, শঙ্খ ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং জয় গোস্বামীর কবিতা। ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর বাণী বসুর লেখার খুব ভক্ত। আসলে সব বই আছে ওর লাইব্রেরি-ঘরে। তথ্যকেন্দ্র, দিশা, বিভাব, কবিতা-পাক্ষিক, এসব দীপিতা তো এ বাড়ি থেকে চেয়েই পড়ে। তাদের বাড়িতে শাশুড়ি শুধু সাপ্তাহিক বর্তমান রাখেন।

    টেবিল-লাইটটার আলো এসে ভোঁদাই-এর মুখের একটা পাশে পড়েছে। থুতনিতে। সাতদিন দাড়ি না-কামানোতে মাজা রঙের ওপরে ফলসা রঙা ছায়ার মতো দাড়ি গজিয়েছে। ও একবার দেখবার চেষ্টা করল ওর মারা চড়ের দাগটা এখনও ভোঁদাই-এর গালে আছে কি না।

    ভোঁদাই-এর ভালো নাম অনিকেত। কিন্তু ও নামে কেউ-ই তাকে ডাকে না। এত কাছ থেকে এত মনোযোগ দিয়ে কখনো তাকায়ওনি ও ভোঁদাই-এর মুখের দিকে। দেখতে সে বেশ ভালোই। ফিগার তো দারুণ-ই ভালো। সরু কোমর, চওড়া বুক, লম্বা ঘাড়, একমাথা অবাধ্য চুল, কিন্তু তার ওপরে মুখটিও সুন্দর। সবচেয়ে বড়োকথা, মানুষটি শরীরসর্বস্ব নয়, তার একটি সুন্দর, সুরুচিসম্পন্ন, রসিক, দরদি মন আছে। এতদিন ইয়ার্কির ছলে অনিকেত যা-কিছু বলে এসেছে দীপিতাকে সকলের সামনে এবং একা পেয়েও, তা যে ইয়ার্কি নয়, মর্মান্তিক সত্যি –একথা এই বেহুশ অনিকেতের পাশে বসে উপলব্ধি করল দীপিতা।

    অস্পষ্ট গোঙানির সঙ্গে চোখ চাইল আস্তে আস্তে অনিকেত। চোখ মেলে, তার মুখের ওপরে ঝুঁকে-পড়া দীপিতার মুখটিকে দেখেই আতঙ্কে অথবা আনন্দে তার দু-চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। তারপর-ই বিড়বিড় করে বলল, ক্ষমা কোরো, ক্ষমা কোরো।

    তখন ঘরে আর কেউ-ই ছিল না। ভোঁদাই-এর গলার স্বর শুনতে পেয়ে খাটের তলাতে শুয়ে-থাকা পিশাচ তড়াক করে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে তেপায়াটার পায়ে ধাক্কা দিতেই ওডিকোলনের কাপটা পড়ে ভেঙে গেল। এমন সময়ে বিটকেল এল ঘরে। দীপিতা কাকিমাকে ডাকতে বলল তাকে।

    ওঁরা দু-জনেই দৌড়ে আসতেই দীপিতা বলল, চোখ মেলেছিল। কথাও বলেছিল। বিড়বিড় করে কী বলছিল, বুঝতে পারিনি। কাপটা ভেঙে গেল। পিশাচ।

    অন্য একটা কাপ আনছি, বলে পিসিমা চলে গেলেন।

    এবারে ভোঁদাই পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল। প্রথমে কাকিমার দিকে, তারপর দীপিতার দিকে।

    অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ক-টা বেজেছে?

    –ন-টা। মা তুমি এতক্ষণ বউদিকে আটকে রেখেছ! অমলদা রাগ করবে।

    –রাগ করবে কেন? সে কি অবুঝ? না অমানুষ?

    কাকিমা বললেন।

    –না, বকবে বউদিকে।

    –আরে না, না। চলে যাবে দীপিতা একটু পরে।

    –হ্যাঁ। তা তো যাবেই। যেতে তো হবেই বউদিকে। সন্ধে হলেই পশুপাখি মানুষ সকলেই যে-যার ঘরে ফিরে যায়। যার যার নিজের ঘরে। এখন রাত। তুমি চলে যাও বউদি তোমার নিজের ঘরে।

    এবারে মাঝে মাঝেই চোখ মেলতে লাগল ভোঁদাই। দীপিতার অনিকেত।

    জ্বরটা কি নামছে?

    দীপিতা নতুন পট্টি লাগাবার সময়ে ওর কপালে ডান হাতের পাঁচটি আঙুল ছোঁয়াল। কেঁপে উঠল ভোঁদাই। শীতে, না ভয়ে, না আনন্দে, তা সেই জানে।

    কাঁপুনি দিয়ে ছাড়ছে জ্বর।

    পিসিমা স্বগতোক্তি করলেন।

    দীপিতা ভাবছিল, কীসের কাঁপুনি, কেন কাঁপুনি, কে জানে!

    –কীরে ভোঁদাই, কেমন লাগছে এখন?

    –ভালো।

    –কিছু খাবি?

    –হুঁ।

    ডাক্তার ঝাঁ বলেছেন সাবুর খিচুড়ি দিতে। খাবি?

    –হুঁ।

    –বাবা : ধড়ে প্রাণ এল আমাদের।

    পিসিমা হেসে বললেন।

    ভোঁদাই ওর ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল দীপিতার দিকে। কাকিমা ও পিসিমা উদবিগ্ন এবং অপ্রতিভ মুখে তাকিয়ে ছিলেন দীপিতার মুখের দিকে। একমুহূর্তে কী ভেবে দীপিতা তার ডান হাতটা ভোঁদাই-এর হাতের দিকে বাড়িয়ে দিল, ডুবন্ত মানুষ যেমন করে কুটোকে আঁকড়ে ধরে, যেন তেমন করেই আঁকড়ে ধরল ও দীপিতার হাতের পাতাকে। দীপিতা আলতো করে চাপ দিল অনিকেতের হাতে।

    ভোঁদাই এমন করে দীপিতার হাতটি ধরল যেন, আর কোনোদিনও ছাড়বে না।

    পাঁচ মিনিট পরেই ভিখু এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলল, বহুদিদি, বড়দাদা ঘর লওটা হ্যায়। আপকো বোলা রহা হ্যায়।

    ভোঁদাই-এর মা ভিখুকে মাথায় হাত দিয়ে বললেন, যাকর বোলনা, হাম সবহি হিয়া হ্যায়, বহুদিদিকে আভি ভেজ দুঙ্গা। হামারা নাম লেকর বোলনা। সমঝা-না ভিখু!

    -জি মাইজি! সমঝা।

    বলে, ভিখু চলে গেল।

    দীপিতাকে যখন রামলগলন ওদের বাড়ির গেট-এ পৌঁছে দিয়ে এল, তখন রাত দশটা বাজে। দীপিতা ভাবছিল, আজ অমলের চাতরাতেই তো রাতে থেকে যাওয়ার কথা ছিল। ফিরে এল যে, বড়ো!

    বারান্দা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই অমল বলল, বিদ্রুপের সঙ্গে, কাঁহা চলে গ্যায়িথি আপ দীপিতাজি?

    দীপিতার ইচ্ছে করল ওয়ার্ল্ড-কাপ-এর সময়ে একটা বিজ্ঞাপনে রানি মুখার্জি যেমন করে বলেছিল তেমন করেই বলে, ‘হামারা আসলি হিরো কি পাস।

    -তোমার তো আজ ফেরার কথা ছিল না।

    তারপর বলল, তুমি জান না?

    –জানি না, কিছুই জানি না। ফিরব না জেনে, রাতভর থেকে যাবে প্রেমিকের কাছে। তাই কি ঠিক করেছিলে?

    –কে প্রেমিক?

    -বাজে কথা বোলো না। বিমল আমাকে সব বলেছে। বলছে, বহুদিন থেকে। আমি-ই বিশ্বাস করিনি বোকা বলে।

    আকাশ থেকে পড়ে দীপিতা বলল, বিমল! অতটুকু ছেলে! ও কী বলেছে?

    -ওই তো আজকে ফোন করে বলল বিকেলে আমাকে চাতরাতে। গত বুধবার রাতে আমি যখন ছিলাম না, তখন তোমার সঙ্গে রাত কাটিয়ে যায়নি ভোঁদাই? সপ্তাহে দু-তিনদিন দুপুরে আসে না ও তোমার কাছে?

    -কী বলছ কী তুমি!

    আতঙ্কিত ও আহত গলাতে বলল, দীপিতা।

    হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে অমল বলল, সত্যি কথা বলো, সে-রাতে সে আসেনি তোমার কাছে?

    দীপিতা বুঝল, অমলের নেশা হয়ে গেছে। চেয়ারের পাশে একটা মহুয়ার বোতল। অন্য একটা পড়ে আছে নীচে।

    একমুহূর্ত চুপ করে থেকে দীপিতা বলল, হ্যাঁ। আমি মিথ্যে বলি না। এসেছিল।

    –এসেছিল? তুমি মিথ্যে বলো না বলে, আবার গর্ব করে বলছ!

    বলেই, চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে দীপিতাকে প্রচন্ড শব্দে এক চড় মারল অমল। দীপিতা মাথা ঘুরে খাটের ওপরে পড়ে গেল। জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠতে গেছিল সে, কিন্তু একটা ভোঁতা হ্রস্ব আওয়াজ তার গলা অবধি উঠে স্তব্ধ হয়ে গেল।

    অমল ঘৃণাভরে তাকে চুলের মুঠি ধরে তুলে আবারও এক চড় মারল, দীপিতার ‘আর মেরো না’ বলবার মুখে।

    তারপর বলল, কলকাতার রান্ডী! যাও, ভিখুকে বলে এসো আমার খাবার নীচে নিয়ে আসতে।

    পরক্ষণেই বলল, না তুমি নিজে যাও। আমার খাবার নিজে হাতে বয়ে নিয়ে এসো। সব যেন গরম থাকে। আমি চানে গেলাম।

    বলেই, বাথরুমের দরজা বন্ধ করল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক-ই জোরে। দড়াম’ শব্দটা মাথার মধ্যে দপদপানি তুলল। দীপিতা একমুহূর্ত ভাবল। তারপরে ঘরের বাইরে এসে দোতলার সিঁড়ির সামনে দাঁড়াল সামান্যক্ষণ। তারপরেই গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে ভোঁদাইদের বাড়ির দিকে এগোল।

    এমন সময়ে দোতলার তাঁর শোয়ার ঘরের লাগোয়া ছোছাটোঝুল বারান্দাতে দাঁড়িয়ে অন্নদা বললেন, এতরাতে কোথায় চললে? বউমা!

    দীপিতা মুখ না-তুলে, কথা না-বলে, বিশ্বাস-বাড়ির দিকে আঙুল তুলে দেখাল।

    সিমলি, মাধবীদের বাড়ি থেকে দীপিতা ফেরার পরে পরেই ফিরেছিল। মাধবীর দাদা রণেশের গলা শুনেছিল দীপিতা। সাইকেলে ডাবল-ক্যারি করে পৌঁছে দিয়ে গেল সম্ভবত ও সিমলিকে। হয়তো কলেজের ফাংশানের নাম করে নদীর ধারে গেছিল-বা ওদের বাড়িতে বসে গল্প করছিল। ভদ্রলোকের বাড়ি সেটা, গল্প করতেই পারে। কর-বাড়ির মতো ছোটোলোকের, অসুস্থ মানসিকতার মানুষদের বাড়ি নয় তো! সিমলি তার মায়ের পাশে বারান্দাতে দাঁড়িয়ে বলল, যাও বউদি, চলে যাও। আর ফিরে এসো না। অনেক অপমান, অনেক কষ্ট সয়েছ এখানে তুমি। আর এসো না।

    অন্নদা সিমলির হাত ধরে হিড়বিড় করে টেনে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। ঠাস’! করে একটি শব্দ হল। সম্ভবত অন্নদা সিমলিকে চড় মারলেন।

    পরমুহূর্তেই অন্নদা বাইরে এসে বললেন, পুঁটিকে আমি তোমার কাছে একমুহূর্তের জন্যেও পাঠাব না। কাল সকালেই তো ফিরে আসতে হবে। যাও আজ গোসাভাঙিয়ে এসো। গোসাঘরে চললেন বিবি! ছিঃ! ছিঃ!

    মুখ না তুলেই বলে দীপিতা, আর আসব না আমি।

    .

    গেট বন্ধ করে পিশাচকে ছেড়ে দিয়েছিল রামলগন। রামলগনের ‘পীযূষ। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে দীপিতা বলল, রামলগন, পিশাচকে বাঁধে।

    দীপিতার গলার স্বর শুনে ভোঁদাই-এর মা-পিসিমা দোতলার বারান্দাতে এসে দাঁড়ালেন এবং ঠিক সেইসময়ে ইমরাত খাঁ তার সাইকেল করে গেটের কাছে এসে পৌঁছোল। তার গালে অমলের পাঁচ আঙুলের দাগ, এলোথেলো চুল এবং চোখের জল পৃথিবীর কারও কাছেই আর লুকোবার প্রয়োজন মনে করল না দীপিতা।

    ইমরাত পূর্ণদৃষ্টিতে দীপিতার মুখের দিকে একমুহূর্ত চেয়ে থেকে কী ভেবে রামলগনকে বলল, রামলগন ম্যায় আভভি আয়া লওটকে। তুম ভাবিকে উপ্পর লে যাও।

    বলেই, সাইকেল ঘুরিয়ে চলে গেল।

    দো-তলার বারান্দাতে পৌঁছোবার আগেই কাকিমা আর পিসিমা ওকে দেখে দৌড়ে একতলাতে নেমে আসছিলেন। সিঁড়ির দেড়তলার ল্যাণ্ডিং-এ দেখা হল ওঁদের দীপিতার সঙ্গে। দীপিতার মুখের দিকে চেয়ে ওই অবস্থা দেখে দু-জনে একইসঙ্গে কেঁদে উঠলেন।

    পিসিমা বললেন, আমাদের জন্যে তোমার! ইশ!

    কাকিমা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আয়। আয়। মা। তিন বছর বয়েসে মাকে হারিয়েছিলি, আমি আজ থেকে তোর মা হলাম। তোকে আর ছাড়ব না।

    -পুঁটিকে আনলে না?

    পিসিমা বললেন।

    –না। ও তো আমার নয়। ও টেস্ট-টিউবেও হতে পারত। ও অমলের আর আমার শ্বশুর-শাশুড়ির। হয়তো সুরাতিয়ারও। কিন্তু আমার নয়। ও বাড়ির কোনো স্মৃতিই আমি রাখব না।

    –তোমার মায়ের দেওয়া সেই গার্নেটের মালাটাও? সে তো ওদের নয়, তোমার মায়ের ই তো।

    পিসিমা বললেন।

    ভোঁদাই-এর মা বললেন, আমি ওকে ঠিক ওর মায়ের দেওয়া মালার-ই মতো গার্নেটের মালা-গড়িয়ে দেব। আর আমার বউমার জন্যে তো সব গয়না গড়ানোই আছে। গয়নাতে মুড়ে দেব ওকে।

    দীপিতা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, আমার কিছুই চাই না মা, শুধু একটু ভালোবাসা…

    ভোঁদাই-এর মা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি, ছোড়দি, ভোঁদাই, রামলগন, পিশাচ–আমরা সকলে তোকে ভালোবাসায় মুড়ে দেব। তুলোর মধ্যে করে রাখব তোকে।

    তোকে জিপে চড়তে হবে না। মারুতি কিনে দেব তোকে তোর পছন্দসই রঙের।

    ভোঁদাই এইসব উচ্চগ্রামের কথাবার্তাতে সচকিত হয়ে বিছানার ওপরে উঠে বসার চেষ্টা করছিল। ওঁরা ঘরে ঢুকে হাঁ হাঁ করে উঠলেন। বললেন, পড়ে যাবি পড়ে যাবি।

    -তুমি যে আবারও এলে!

    আধশোয়া হয়েই বলল, ভোঁদাই।

    –তোরা কথা বল। আমি দেখি সাবুর খিচুড়ির কতদূর হল।

    কাকিমা বললেন।

    তারপর বললেন, চলো ছোড়দি, ওদিকটা দেখি গিয়ে আমরা সকলেই আজ সাবুর খিচুড়ি

    দীপিতা গিয়ে ভোঁদাই-এর সামনে দাঁড়াল। প্রথমে ভোঁদাই যেন বুঝতে পারেনি তারপর-ই টেবিল-লাইটের আলোতেই তার গালে পাঁচ-আঙুলের দাগ দেখতে পেয়ে ব্যথায় নীল হয়ে গিয়ে বলল, এমনও কেউ করতে পারে? পিশাচ আমার পিশাচ নয়, আসল ‘পিশাচ’ অমলদা। ইশ!

    দীপিতা, অনিকেতের গালে নিজের হাতের পাতা ছুঁইয়ে অর্ধেক হেসে, অর্ধেক কেঁদে বলল, কেউ কেউ পারে।

    দীপিতার মারা চড়ের দাগটা মিলিয়ে গেছিল অনিকেতের গাল থেকে। মেয়েদের হাত তো নরম হয়। মেয়েদের সবকিছুই নরম হয়। সবচেয়ে বেশি নরম হয় মন। এই সহজ কথাটা অমল কর বুঝল না।

    দীপিতা বলল, তোমার অমলদাকে চিরদিনের জন্যে ছেড়ে এলাম। এবার থেকে তোমাদের বাড়িতেই থাকব।

    অনিকেত দীপিতার হাতের ওপরে নিজের হাতটি রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, সত্যি? তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, এতদিনে তুমি সত্যি সত্যিই ‘দীপিতা’ হলে।

    –দীপিতা!

    দীপিতা বলল।

    তারপরেই ওর মনে হল যে, ও ভুলেই গেছিল ওর মা-বাবার দেওয়া নামের একটা মানে ছিল। মানেটা এতবছর পরে ফুলের মতোই ফুটে উঠল যেন।

    ইমরাত আর ঝাণ্ডুরাম একটু পরে ফিরে এসে রামলগনকে ডেকে গেট খোলাল। ওর বন্দুকটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। অমলকে বা ব্রজেন করকে এই গেটের মধ্যে আর কোনোদিনও ঢুকতে দেবে না ইমরাত এবং ভোঁদাই-এর অন্য বন্ধুরা। আসতে পারে, শুধু

    ভোঁদাই আর দীপিতার বিয়ের দাওয়াতে। তা নইলে নয়।

    ঝাণ্ডু বলল, ইমরাতকে, তুমকো ম্যায় বোলা থা ইয়ার যো ডালটনগঞ্জকি ইয়ে রানি মুখার্জিহি ভোঁদাইকি জান খায়েগা।

    –যোভি বোল, বহত-ই খুবসুরত হ্যায় উও জেনানা।

    –স্রিফ খুবসুরত-ই নেহি হ্যায়, এইসি লেড়কি লাখোমে এক মিলতি হ্যায়।

    ইমরাত বলল।

    পিশাচ যেন ওদের দুজনকে সমর্থন করে বলল, ভৌ! ভৌ!

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article২. ভারি মেঘ করে এল
    Next Article তটিনী ও আকাতরু – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }