Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ৭-৮. মুরগীর পাতলা ঝোল

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প21 Mins Read0

    ৭-৮. মুরগীর পাতলা ঝোল

    গত রাতে মুরগীর পাতলা ঝোল আর ভাত বেঁধেছিল জারুল আর ঝাঁঝি মিলে। খুব সুন্দর স্বাদ হয়েছিল। ‘Knor’-এর টোমাটো স্যুপও ছিল। আর যোশীপুর থেকে আনা পোড়পিঠাও। বারোটা মুরগীও নিয়ে এসেছিল নবেন্দু যোশীপুর থেকেই। তারই থেকে দুটো গেছে কাল রাতে, দশটা রয়েছে। হারাধনের দশটা ছেলে। ডিম আছে পর্যাপ্ত, নানা তরি-তরকারি। চাল-ডাল-তেল-নুন-মশলা আর নিজৌষধিও যথেষ্ট আছে, অ্যাকসিডেন্টে কিছু স্টক নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও। রাম-এর ভাঙা বোতল থেকে গড়ানো রামের গন্ধ পেয়েই

    পুলিশ অফিসার চিকুকে জিজ্ঞেস করেছিল : ‘সে বাবু মদ খাইছন্তি কি?

    অনেকক্ষণ বাইরে বসে সকলেই রাম খেতে খেতে গল্প করেছে ওরা। গামহারও উঠে ওদের সঙ্গে বসেছিল মাথায় টুপি দিয়ে টাকে ঠাণ্ডা লাগে বলে।

    চিকু বলেছিল, তুমি এই চাহালা বাংলোর ইউক্যালিপটাস বনের চাঁদনী রাতের একটা ছবি আঁকতে পারো গামহারদা?

    পারি। তবে আমি রিপ্রেসেন্টেশানাল বা ফিগারেটিভ ‘আর্টিস্ট’ তো নই। ফোটোগ্রাফারও নই। আমি স্যুরিয়ালিস্ট আর্টিস্ট।

    স্যুরিয়ালিস্ট শব্দটার মানে কি গামহারদা?

    চিকু জিজ্ঞেস করেছিল।

    এর মানে হলো, কী বলব, স্বপ্নময়। অবচেতনের দলিল এইসব ছবি। সালভাডর ডালি ছিলেন এই স্কুলের পথিকৃৎ। ফরাসী শব্দ ‘স্যুর’ (Sur) মানে হচ্ছে উপরে, দূরে। আর ইংরেজি রিয়্যালিজম-এই দুইয়ের অভিঘাতে সৃষ্টি হয়েছে সুরিয়ালিজম-এর। যাঁরা এই স্কুলের আর্টিস্ট তাদেরই বলা হয় স্যুরিয়ালিস্ট।

    তাই? শব্দটা বহুদিন হলো পড়ছি, দেখছি। মানেটা জানতাম না।

    আমি যা আঁকব, তা শেষ রাতের স্বপ্নে দেখা এই চাহালার চাঁদনী রাতের স্বপ্নরই মতো হবে। তা, বাস্তবের মতো হবে না অথচ বাস্তবের চেয়ে বেশি সুন্দরও হতে পারে। এই রাত আমার ছবিতে আভাসিতই থাকবে শুধু। স্বপ্নেরই মতো, বাস্তবের রূঢ়তা তাকে ছুঁতে পারবে না।

    এই বাস্তব তো রূঢ় নয়।

    তা ঠিক। রূঢ়তা শব্দটা এখানে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করিনি আমি।

    বাঃ। তাই একো। চমৎকার। আমার স্টাডিতে টাঙিয়ে রাখব।

    জারুল বলল, গামহারদা তোমাকে আমরা অরণ্যের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছি বলেই বলছি, বনে এসে কিন্তু আমরা এতো কথা বলি না। বনের কী বলার আছে তা শুনি।

    গামহার লজ্জিত হয়ে বলল, সরি। আমি অনেক কথা বলে ফেললাম যে!

    আরে, সেতো আজ আমরা সকলেই বলছি। আজ ঝাঁঝি আর হারিতের পুনর্জন্মটা সিলিব্রেট করছি বলেই তো এখানে আড্ডা বসিয়েছি। সত্যি! এখন বলতে দ্বিধা নেই যে, ওদের তালগোল পাকানো গাড়িটা দেখে ওরা কেউ আদৌ বেঁচে আছে একথা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। ওদের অক্ষত দেখে কী যে খুশি হয়েছিলাম কী বলব!

    তোমরা অবশ্যই আনন্দিত হয়েছিলে তবে আমি বেঁচে যাওয়াতে দুঃখিতও কম মানুষ হয়নি। মরে গেলে, তারা হয়ত আনন্দের বন্যা বইয়ে দিত।

    ঝাঁঝি বলল।

    তারা কারা?

    তারা তো অগণ্য। প্রথমেই ধরো না কেন আমার শ্বশুরবাড়ির সকলেই। আমার স্বামীও, যদি তিনি নিজে বেঁচে যেতেন।

    কেন বাজে কথা বলে মেজাজ খারাপ করিয়ে দাও। এই বনবাদাড় আমার মোটে ভাল লাগে না। শুধু তোমারই জন্যে চিকুদের পিছু নিলাম। নইলে, গতকাল আমার তাস-এর আড্ডা ছিল রাতে, মহীনদের বাড়িতে। সঙ্গে স্কচ এবং বিরিয়ানি।

    ঝাঁঝি চুপ করে রইল একটুক্ষণ। তারপরে বলল, তোমাকে তো জোর করি না। আমি জঙ্গল ভালবাসি তাই বারেবার আসতে চাই কিন্তু তুমি আসো কেন? আমি তো স্বচ্ছন্দে চিকুদের সঙ্গেই আসতে পারি। অথবা মনে করো, নবেন্দুর সঙ্গেও। তোমার কি আমাকে একা ছাড়তে পারার মতো সাহস আছে? তুমি তো আসো শুধু পাহারা দিতেই।

    পাহারা! হাঃ। পাহারা দেয় মানুষ ধন-দৌলতকে। তোমাকে কী জন্যে পাহারা দিতে যাব? তুমি তো আমার লায়াবিলিটি। যাও না চলে তুমি, যার সঙ্গে খুশি।

    তুমি কি সত্যিই খুশি হবে? যদি যাই?

    খুউব। খুউবই খুশি হতাম। বেঁচে যেতাম।

    তাই? এতজনের সামনে কথাটা বললে কিন্তু। মনে থাকে যেন।

    তারপরে বলল, কারো সঙ্গে কেন? আমি একাই যেতে পারি।

    যাবে তো! কিন্তু খাবেটা কি?

    মাথা নিচু করে ঝাঁঝি বলেছিল, সে চিন্তা আমার।

    গামহার-এর বুকটা ধড়াস-ধড়াস করছিল। ও নিঃশব্দে বলল, আমি খাওয়াব, আমি।

    হারাবার ভয় যদি নাই-ই থাকে তবে পাহারা দাও কেন?

    পাহারা দিয়ে বেড়াই শুধু পারিবারিক সম্মানের জন্যে। হারিত বাসুর বউ ভেগে গেছে বলবে পাড়ার লোকে, তাই!

    তোমাদের পরিবারে তো ইসলামিক সংস্কৃতি। মেয়েরা তো সেখানে নিছকই বস্তু, পণ্য, ভোগ্যপণ্য! তাছাড়া, পাড়ার লোকই তোমার সব? তুমি তো আরেকজন চাড্ডাকান্টেন্ট মহীনের বাড়ি তাস খেলতে যেতে, আমি কী করতাম একা একা বাড়ি বসে? কী করি সন্ধের পর সন্ধে একা একা, কখনও কি ভেবেছ তুমি! আমার কি ছেলেমেয়েও আছে একজন? সঙ্গী হিসেবে?

    হারিত রাগে ফেটে গিয়ে গলা চড়াল। চৌকিদারের কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।

    হারিত বলল, তোমার মাথাটা পুরোপুরি বিগড়েছে সেই স্কাউড্রেল লেখকের লেখা বইগুলো পড়ে। এবারে ফিরে গিয়ে আমি গুণ্ডা দিয়ে হারামীকে খুন করাব। ‘হারামজাদ’-এর সীমা আছে একটা।

    সে আবার কে? সে কোন লেখক?

    নবেন্দুও উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করল।

    কে আবার? বুদ্ধদেব গুহ।

    হারামজাদা, চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট না ছাই! প্রফেশনে সাকসেসফুল হলে কি কেউ বনপ্রেমী হতে যায়? না নেকুপুষুমুনু প্রেমের গল্প লেখে। জ্বালিয়ে দিল হারামী! ঝাঁঝি তো সর্বক্ষণ তার বই মুখে করেই বসে থাকে।

    চিকু পরিবেশ লঘু করার জন্যে বলেছিল, আহা। শোনো, শোনো ঝাঁঝি তোমার দুঃখ কি?

    তারপর নবেন্দুর দিকে ফিরে বলল, এই নবেন্দু কিরণমালার পরে যে আসছে তাকে দিয়ে দাও তো ঝাঁঝিকে।

    উরি বাবা। দশ লাখ কোথায় পাব আমি? খেটে-খাওয়া মুহুরী। ঝাঁঝির ভাষায়, চাড্ডাকান্টেন্ট ।

    সকলের সামনে দাম্পত্য-কলহ করে ফেলে লজ্জিত হারিত হেসে বলল।

    ঝাঁঝি মুখ নিচু করে বসেছিল।

    সত্যি হারিত! তুমি দিলে পুরো আনন্দটাই মাটি করে। এতে বাইরের লোকের সামনে কেউ স্ত্রীকে এমন বলে! জঙ্গলে আসতে তোমার ভাল লাগে না, না এলেই পারে। কিন্তু একী। জঙ্গলে তো আমি আর জারুল আসি নিয়মিত। স্বভাবটা জংলী হওয়ার কথা ছিল আমাদেরই! আর তুমি ভুপেন বোস অ্যাভিনিউতে থেকে এরকম জংলী হলে কী করে!

    বলেই বলেছিল, গামহারদা! তুমি চুপ করে গেলে কেন?

    আই অ্যাম সরী!

    সে কি? তোমার কি দোষ?

    না। আমি এলাম বলেই বোধহয় তোমাদের এই অশান্তি? আমি না এলেই বোধহয় ভাল করতাম।

    ঝাঁঝি গামহারের মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাইল। বলল, আমার খুব লজ্জা করছে। ক্ষমা করবেন আমাকে গামহারদা।

    কী যে বলো! কী যে বলল। আমি… ক্ষমা… কী যে বলো!

    গামহার-এর বুকের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই ধরনের কষ্ট আগে ঠিক কখনও বোধ করেনি।

    .

    ০৮.

    চাহালা থেকে জোরান্ডাতে রওনা হওয়ার জন্যে সকালে এক কাপ করে লিকার খেয়ে গাড়িতে ওঠবার সময়ে জারুলই বলেছিল, নবেন্দু, চলো তোমার গাড়িতে তোমার আর হারিতের সঙ্গে আমি যাই আর ঝাঁঝি যাক চিকু আর গামহারদার সঙ্গে। একঘেয়ে একটানা কারো সঙ্গই কি কারো ভাল লাগে! এই ভয়েই তো বিয়ে করব না কোনোদিনও আমি।

    ঝাঁঝি একবার হারিতের দিকে তাকাল।

    হারিত বলল, আর লোক দেখিও না, দয়া করে গিয়ে ওঠো ও গাড়িতে। এমনই ভাব করছ যেন আমার কথাতেই উঠছ আর বসছ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমার সারা শরীরে চিমটি কেটে কেটে কালশিরে ফেলে দিয়েছিলে তা মনে নেই। আর আমার বোকা মা বলতেন, বউ আমার ভারী লক্ষ্মী মেয়ে। মুখে রাটি নেই। মা বলতেন, জানিস খোকা, আমি কিন্তু বাবা বিয়ের পরে পরে তোর বাবার সঙ্গে খুব ঝগড়া করতুম।

    তারপর নবেন্দুর গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে বলল, মাকে আর কী বলব বলো? কেষ্টনগরে আমাদের চারমহলা বাড়িতে স্ত্রীকে তো আর শ্বশুর-শাশুড়ির পাশের ঘরে শুতে হতো না। মেয়ে মাত্রই গ্রেট অভিনেত্রী।

    চিকু গাড়িটা স্টার্ট করার পরেই গামহার বলেছিল, কথাটা বোধহয় ঠিক নয়। মানে, হারিত বোধহয় ঠিক বলেনি। অধিকাংশ মেয়েরাই যুগের পর যুগ ধরে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে গেছে বলেই আমরা ধরেই নিয়েছি যে তারা অভিনেত্রী, তাদের মনের যথার্থভাব মুখে প্রকাশ করে না বা করতে পারে না বলেই যে তারা অভিনেত্রী এ কথা বলাটা বোধহয় ঠিক নয়।

    চিকু বলল, ঠিকই বলেছ।

    ঝাঁঝি চুপ করেই রইল। গামহার সাহস করে একবার সামনের সিটে বসে পেছন ফিরে ঝাঁঝির দিকে চাইল। দেখল, তার দুচোখ ভরা জল।

    প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্যে চিকু বলল, কেমন লাগল বলো চাহালা, ঝাঁঝি?

    তেমন করে দেখলাম আর কই? তবে ভালই লাগল। বাংলোর কম্পাউন্ডের চারপাশে অমন পরিখা কাটা কেন? গেট-এর সামনেও তো ব্রিজ। সেই ব্রিজের তক্তাগুলো আবার খুলে নিয়ে ভিতরে করে রাখল দেখলাম চৌকিদারেরা সন্ধের আগে আগেই, কেন?

    হাতির জন্যে। সিমলিপাল হাতির জন্যে বিখ্যাত। এত হাতি না কি আফ্রিকার নানা গেম-পার্কেও দেখিনি। জারল বলছিল। তাছাড়া, আমরা এসেছি ঠিক সময়েই। সিমলিপালে শুনেছি এপ্রিল মাসেই হাতির সেনসাস হয়, মানে সংখ্যা গোনা হয়। বনবিভাগের আমলারা বলেন ‘ম্যাঙ্গো সেনসাস’। এই সময়ে বুনো আম পাকে এখানে। হাতিরা গিরিখাত-এর দুর্ভেদ্য জঙ্গল ও উঁচু পাহাড়ের খাঁজ-খোঁজ, মালভূমি, উপত্যকা, সব ছেড়ে বেরিয়ে আসে আম খাওয়ার জন্যে। তখন গাছতলিতে তাদের গোনা সহজ হয়।

    গামহার বলল, কদমতলিতে গোপী আর আমতলিতে হাতি।

    চিকু হেসে উঠল জোরে। মনে হলো, ঝাঁঝিও হাসল। কিন্তু পেছন ফিরে মুখ ঘুরিয়ে ওকে দেখতে লজ্জা করল। ওর মনে পড়ে গেল যে, দিদিমার ঘরের দেওয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো একটি বাক্য : ‘লজ্জা, মান, ভয়, তিন থাকতে নয়’। কে বলেছিলেন বাক্যটি, কোন প্রসঙ্গে, তা জানে না গামহার। কেউ বলেও দেয়নি ওকে। কিন্তু বাক্যটি যে চিরকালীন সত্য এবং সাধু ও পকেটমার দু’জনের পক্ষেই সমান মান্য, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না শিশু বয়সেও। কিন্তু এত দীর্ঘদিন পরে সেই বাক্যটি মনে পড়ে যাওয়াতে নিজের মনে মনে ও বল সঞ্চার করতে লাগল। ঝাঁঝিকে প্রথমবার দেখার পর থেকেই ওর প্রতি এক তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করছে ও, যেমনটি এতো বয়স অবধি অন্য কোনও নারীর প্রতিই করেনি। মানুষের মন যে অসীম রহস্যময় তা ও জানে কিন্তু মানুষের শরীরের মধ্যেও যে এত খামখেয়ালিপনা, এত রহস্য আছে, তা ও আগে কখনও উপলব্ধি করেনি। মেয়েদের প্রতি পুরুষের আকর্ষণ থাকেই। তা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনও বিশেষ নারীর শারীরিক সান্নিধ্যর জন্যে এমন উন্মাদনা যে জাগতে পারে এমন বেলাশেষে, তা অভাবনীয়ই ছিল।

    পেছন থেকে ঝাঁঝি বলল, জোরান্ডা কত দূর?

    বেশ অনেকখানি রাস্তা। প্রায় চল্লিশ কিমি মতো হবে চাহালা থেকে। জঙ্গুলে রাস্তা, কঁচা, এবড়ো-খেবড়ো। তার ওপর চড়াই-উত্রাই তো আছেই। খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ে উঠে আবার নামতে হবে আবারও অন্য অনেক পাহাড়ে উঠতে হবে। পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে। তবে জঙ্গল যদি সুন্দর হয়, তবে রাভা ভাল কী মন্দ তাতে কিছুমাত্রই যায় আসে না। আর বছরের এই সময়টিতে আমাদের দেশের জঙ্গল যা সুন্দর তেমন তো অন্য কোনও সময়েই নয়!

    কেন? এখন সবচেয়ে সুন্দর কেন?

    এখন যে বসন্ত। মানুষ-মানুষী, পশু-পাখি, ফুল, প্রজাপতি সকলেরই ভালবাসার সময়। লাল, হলুদ, খয়েরী, কচি-কলাপাতা– সবুজ, হলুদ, কালো, পাটকিলে, মরচে-রঙা পেঁয়াজখসি, বেগুনি, ম্যাজেন্টা, মভ আরও কত রঙের দাঙ্গা এখন বনে বনে।

    মহুয়া, আর করৌঞ্জ-এর গন্ধ। আরও কত ফুলের মিশ্র গন্ধ এখন হাওয়াতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকনো পাথর আর লালমাটির উপরে বিচিত্র বর্ণ শুকনো পাতাকে তাড়িয়ে, ঘূর্ণি উড়িয়ে হাওয়াটা দামাল রাখাল ছেলের মতো কনময় দাপাদাপি করে বেড়ায়। ভাল করে চেয়ে দেখো। এতদিন কালোকে শুধু কালো, লালকে ওই লাল, সবুজকে সবুজই, হলুদকে হলুদ বলেই জেনে এসেছ তো। আজ এই বসভবনে ভাল করে চেয়ে দেখো, দেখবে কুঁড়ির ভিতরে যেমন পরতের পর পরত ঘুমন্ত পাতা থাকে, ওরে ওরে, তেমনই সব রঙেরও অমন পরত হয়। একই রঙের কতরকম যে ছায়া (Shades)।

    বলেই চিকু বলল, সরী গামহারদা। আমার পাশেই যে একজন আর্টিস্ট বসে আছে আর আমি তারই সামনে রঙের ব্যাখ্যা করছি। আমার স্পর্ধা ক্ষমা করো।

    আর্টিস্ট কি শুধু ছবি আঁকলেই হয় চিকু? তুমি যেভাবে বাসন্তী-বনের বর্ণনাটি অনভিজ্ঞ আমাদের দিলে, তেমন করে হয়ত অবন ঠাকুরই শুধু লিখতে পারতেন। যে কোনো সৃষ্টিশীলতার উৎসমুখে থাকে ভালবাসা। ক্রিয়েটিভিটির সবচেয়ে বড় উপাদান সেটি।

    আর যন্ত্রণা?

    ঝাঁঝি বলল।

    ভালবাসার মধ্যে যন্ত্রণা তো থাকেই। অনেক সময় একের থেকে অন্যকে আলাদা করে চেনা পর্যন্ত যায় না।

    আরও একটা ব্যাপার বোধহয় থাকে।

    চিকু বলল।

    কি?

    আন্তরিকতা।

    একশোবার ঠিক। ভণ্ড আর খল মানুষ, দুর্বুদ্ধিজীবী মানুষ কোনওদিনই প্রকৃত সৃষ্টিশীলতা যে কী, তা জানতেই পারে না।

    বলেই বলল, ওই দেখো, বাঁদিকের উপত্যকাতে ওই গাছটা দেখো।

    বাঃ। গামহার বলল।

    কী অপুর্ব। দারুণ ফুলগুলো। মাছের রক্তর সঙ্গে জল মেশালে যেমন ফিকে লাল হয়, তেমন লাল, না? আর কী মসৃণ ফুলগুলো, কী ফিনফিনে!

    ঝাঁঝি বলল।

    চিকু হেসে বলল, ওগুলো ফুল নয়। নতুন পাতা এসেছে কুসুম গাছে।

    ঝাঁঝি বলল, রবীন্দ্রনাথের গানে পেয়েছি ‘কুসুমবনেতে’ কথাটি। নিজে চোখে না দেখলে আজ সত্যিই কিছু হারাতাম। এতদিন ভাবতাম, কুসুমবন বুঝি ফুলের বন।

    চিকু হাসছিল।

    ওইদিকে দেখুন চিকুদা। কী আশ্চর্য নরম বেগুনী-রঙা ফুলগুলো। থোকা থোকা ফুটেছে।

    ওগুলো জারুল। জোরান্ডাতে পৌঁছে জারুলকে বোলো যে, তুমি জারুল দেখেছো। সে। অবশ্য চেনে ও গাছ।

    বকুল-পারুল-শাল-পিয়ালের বন তো শুনেছি। কিন্তু জারুল তো শুনিনি!

    এখন শোনো।

    আচ্ছা! ডানদিকে ঐ বিরাট গাছটা দেখছ গামহারদা?

    কোনটা? বাঁদিকে বসে তোত ডানদিকে ভাল দেখা যায় না। ডানদিকে আবার পথ থেকেই ডাঙা উঁচু হয়ে উঠেছে।

    হ্যাঁ, ওটা যে পাহাড়। এখান থেকে উঁচু হতে শুরু করেছে। দাঁড়াও। গাড়ি দাঁড় করাচ্ছি। ঐ গাছটা তোমার চেনা দরকার।

    কেন? কেন? আমার চেনা দরকার কেন? আমার চিতা সাজাতে লাগবে না কি?

    এমন সুন্দর সকালে বাজে কথা বলবেন না তো!

    ঝাঁঝি ভর্ৎসনা করল পেছন থেকে।

    তারপরে বলল, চিতা সাজানোর মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। কাল শেষ রাতে যা ঘটেছিল তাতে এতক্ষণে আমাদের আপনারা নিমতলাতে নিয়ে গিয়ে পৌঁছতেন।

    গামহার বলল, অত সোজা নয়। এদেশে অ্যাকসিডেন্টে মরেও নিস্তার নেই।

    চিকু অবাক হয়ে বলল, কেন এ কথা বলছ?

    বলছিলাম, যে–পুলিশ ‘আননোন ট্রাক’-এর এগেইনস্টে কেস করে, তারা দু-দুটো ডেডবডি পেলে তো আনন্দে নৃত্য করত।

    এখানে পোস্টমর্টেম কোথায় হয়?

    গামহার জিজ্ঞেস করল।

    চিকু বলল, নো আইডিয়া। রাইরাংপুর ফুরে হবে।

    সেইখানে লাশকাটা ঘরের সামনে হত্যা দিয়ে পড়ে থাকতে হতো আমাদের। কতদিন, তা কে জানে! তোমরা তো মরে গিয়ে বেঁচে যেতে কিন্তু আমাদের মরার বাড়া করে রেখে যেতে।

    সত্যি। থাক। থাক। ওসব বোলো না। পুলিশ কোথায় বিপদে সাহায্য করবে, বিপদগ্রস্তর সহায় হবে, তা নয়। শকুনের মতো লাশ-এর উপরে এসে পড়ে। সত্যি! স্বাধীনতার কী দশাই করলাম আমরা গত পঞ্চাশ বছরে!

    বলতে বলতে নামল চিকু গাড়ি থেকে। গামহার আর ঝাঁঝিও নামল। দরজাটা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করতেই লাল মতো কী একটা জানোয়ার হিস্টিরিয়াগ্রস্ত অ্যালসেশিয়ান কুকুরের মতো ডাকতে ডাকতে নিস্তব্ধ বন-পাহাড়ের পিলে চমকে দিয়ে পাহাড়ে চড়ে গেল জোরে দৌড়তে দৌড়তে।

    ঝাঁঝি ভয় পেয়ে, পাশে দাঁড়ানো গামহারের ডান বাহু চেপে ধরল।

    ভাললাগায় মরে গেল গামহার। মুখে বলল, বাঘটাঘ না কি? লাল মতো দেখলাম।

    গামহার-এর ইচ্ছে করছিল, ঝাঁঝি যেন তার হাতটি কখনওই আর না ছাড়ে।

    না। বাঘ ডাকলে আমাকে চিনিয়ে দিতে হতো না তা বাঘের ডাক বলে। এটা একরকমের হরিণ!

    এরকম করে ডাকে? বলো কি?

    হ্যাঁ। কুকুরের মতো ডাকে বলেই এদের নাম বার্কিং-ডিয়ার। লালচে ঠিক নয়, মরচে রঙা হয় দেখতে ওরা এখানে। লালই বটে তবে বিভিন্ন রাজ্যের জঙ্গলে এদের গায়ের লালের ছায়া আলাদা। ওরা বাঘ বা চিতা দেখলে, বা ভয় পেলে, এরকম করে ডাকতে ডাকতে দৌড়োয় যাতে বনের সব প্রাণী সাবধান হয়ে যেতে পারে।

    বাঘ দেখলে আর কোনো প্রাণী ডাকে না?

    ডাকে বইকি! ময়ুর ডাকে খুব জোরে জোরে আর বাদর অথবা হনুমান।

    ওমা হনুমানও ডাকে নাকি?

    সেকি? হনুমানের ডাক শোনোনি কখনও? বলো কি তুমি? তোমার মতো সুন্দরী যখন দু-বেণী ঝুলিয়ে বেথুন কলেজে পড়তে যেতে তখন রকে-বসা হনুমানেরা তোমাকে দেখে কখনও হুপ-হুপ-হাপ করেনি সেকথা বললেই আমি মানবো?

    হেসে ফেলল ঝাঁঝি।

    বলল, সত্যি! পারেন আপনি।

    চিকু বলল, এইবারে গামহারদা সামনের এই মহীরুহটির পা ছুঁয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করো।

    সে কি? পা ছুঁয়ে কেন? পায়ের কাছে কোনো বনদেবী-টেবী আছেন না কি?

    বনদেবী কী! উনি নিজেই তো দেব।

    তাই?

    নাম কি?

    গামহার!

    গামহার!

    ইয়েস। এই গাছের নামেই তোমার নাম।

    তারপরে বলল, তোমার নাম কে রেখেছিলেন?

    দাদু। মানে, মায়ের বাবা।

    তাঁর সঙ্গে কি বন-জঙ্গলের কোনো যোগ ছিল! বন্যপ্রাণী ভালবাসতেন?

    দূর দূর। তিনি এ জি বেঙ্গলের অফিসার ছিলেন। সার্কাস দেখতে যেতেও ভয় পেতেন।

    তবে এমন নাম রাখলেন কী করে তোমার?

    মায়ের কাছে শুনেছিলাম, আমি তখন মায়ের পেটে, মাকে নিয়ে দাদু একদিন বটানিকাল গার্ডেনস-এ বেড়াতে গিয়ে একটি গাছের সামনে দাঁড়িয়ে, গাছটি খুব লম্বা ও ঋজু দেখে, মাকে বলেছিলেন, গাছটার নাম লিখে রাখ। ছেলে হলে, তার নাম দিবি এই গাছের নামে। মা, সেই নামটি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। আমার জন্মের দুমাস আগেই দাদু গত হয়ে যাওয়াতে সেন্টিমেন্টাল কারণেই ওই নামই রেখেছিলেন মা। কিন্তু দাদু বেঁচে থাকলে হয়তো এ নিয়ে তার এর সুযোগ ছিল। গাছের নামে নাম হলো কিন্তু গাছটি চেনার আর সুযোগ হয়নি। সত্যি! থ্যাংক উ। চিকু!

    ফর হোয়াট? ইটস মাই প্লেজার।

    ওরা গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময়ে ঝাঁঝি বলল, একটু দাঁড়ান গামহারদা। ইসস্‌, কী অপূর্ব দেখাচ্ছে নীচের ঘনবনাবৃত গভীর গিরিখাত। তার ওপাশে পাহাড় তারপরে আরও পাহাড়, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। তুমি সত্যিই বলেছিলে রঙের দাঙ্গা লেগেছে যেন।

    ক্যামেরা আনোনি?

    নাঃ। কী হবে! চোখের মধ্যে সামনের এই ছবিকে জলছবির মতো সেঁটে নেব। ক্যামেরা কতটুকু ধরতে পারে? পারবে কি এই রূপ রস বর্ণ গন্ধর সমারোহকে কোনও ক্যামেরা বন্দী করতে!

    চিকু বলল, গামহারদা, ভাল করে দেখে রাখো, গামহার গাছের পাতাগুলো। শাল গাছের চেয়ে বড় কিন্তু সেগুনের চেয়ে অনেক ছোট, হালকা হলদে-সবুজ। পাতা চিনে রাখলেই গাছ চিনতে পারবে আর গাছের গড়নকে। মানুষের বেলাতে যাকে বলে Torso।

    গামহার অভিভূত হয়ে গেছিল। তাকিয়ে ছিল পাহাড়ের গা থেকে সোজা উঠে-যাওয়া মত উঁচু ঝাকড়া গাছটার দিকে। ঝাঁঝি বলল, গীতায় আছে না? আত্মানং বিদ্ধি। নিজেকে জানো। আপনার সেই নিজেকে জানা হয়ে গেল একরকম। ভাবলেও অবাক লাগে যে, গামহার যার নাম, তিনি গামহারকেই চিনতেন না।

    গামহার আর চিকু হেসে উঠল ঝাঁঝির কথাতে।

    বেশ বলেছ ঝাঁঝি। বলল, গামহার।

    বলেই ঝাঁঝির দিকে ভাল করে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। মেরুন জমির ওপর সাদা ফুটকি তোলা একটা মাহেশ্বরী পরেছে সে। সঙ্গে মেরুন ব্লাউজ। বাঙালি মেয়েদের তুলনাতে বেশ লম্বা ঝাঁঝি। সকালে তো এখনও চান করেনি। ভোরে উঠে, এলো খোঁপা করেছে একটা। কাল রাতে লণ্ঠনের আলোতে বুঝতে পারেনি, এই শাড়িটি পরেই শুয়েছিল হয়ত, অবশ্যই নাইটি পরে শোয়নি, কারণ, ওরা চারজনই একই ঘরে তিনটি আলাদা খাটে শুয়েছিল। পরপুরুষের সামনে নিশ্চয়ই নাইটি পরেনি। কিন্তু যা পরে আছে তাতেই তাকে অপরূপ সুন্দরী দেখাচ্ছে। তার পেছনে একটা শালগাছ। তাতে কচি-কলাপাতা রঙা নতুন পাতা এসেছে। গিরিখাদ-এর খাড়া গায়ে অনেকগুলি পলাশ। লালে লাল হয়ে গেছে। আরও নীচে একটি মস্ত কুসুম গাছ। সকালের রোদে তাদের ফিনফিনে, লালচে পাতারা ঝিলমিল করছে ফুল হয়ে।

    গামহার নিঃশব্দে চেয়েছিল ঝাঁঝির দিকে। ঝাঁঝি অন্যের চোখে কতখানি সুন্দর তা কে জানে। কিন্তু গামহার-এর চোখে সে হুরী-পরী। “Beauty is in the eyes of the beholder.”

    চলো, ওঠো এবার গাড়িতে। নবেন্দুরা চিন্তিত হয়ে আবার দাঁড়িয়ে না পড়ে। কাল শেষ রাতে যা খেল দেখালে তোমরা।

    গাড়িতে উঠতে উঠতে ঝাঁঝি বলল, খেল তো একটু হলেই খতম হয়ে যেত।

    তা যেত। কিন্তু যায় তো নি!

    আরও আধঘণ্টাটাক যাওয়ার পরে ঝাঁঝি চেঁচিয়ে উঠল উত্তেজিত হয়ে, চিকুদা। চিকুদা। বাঁদিকে দেখো। কী অপূর্ব প্রপাত।

    জানি। আর একটু গাড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাব। অনেক ভাল দেখা যাবে। বলেই কিছুটা এগিয়েই গাড়িটা দাঁড় করালো।

    বলল, নামো গামহারদা, নেমে দেখো।

    ঝাঁঝি আর গামহার দু’জনেই নামল। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো চিকু। ঠিক সেই সময়ে ওদের সামনে দিয়ে রাস্তা পেরোল একঝাক ময়ূর। দুটি ময়ুর চারটি ময়ুরী।

    ময়ুর। ময়ুর। বলে চেঁচিয়ে উঠল ঝাঁঝি। কিন্তু তার গলার স্বর উবে গেল হাওয়ায় চাবুক মেরে ট্যা টা ট্যা করতে করতে সোজা উড়ে-আসা একঝাক টিয়ার কর্কশ ডাকে।

    চিকু খুশি হল ঝাঁঝির খুশি দেখে। গামহারদার লক্ষণ বিশেষ ভাল বুঝছে না চিকু। উত্তর-পঞ্চাশে পুরুষরা প্রেমে পড়লে সে প্রেম খুব সিরিয়াস ব্যাপার হয়ে ওঠে। মনে হচ্ছে গামহারদা একেবারে হেড-ওভার-হিলস পড়েছে। ঝাঁঝিও যে গামহারদাকে খুব একটা অপছন্দ করছে তা মোটেই নয়। আর “যব মিঞা বিবি রাজি, ক্যেয়া করে কাজী।”

    চিকু বলল, মনে মনে, হউক। হউক। যাহা ঘটিবার তাহাই ঘটুক। হারিতের একটু শিক্ষাও হওয়া দরকার। হি হ্যাজ টেকেন ট্যু-মাচ ফর গ্রান্টেড।

    তারপরে ও-ও নামল গাড়ি থেকে। বলল, দেখেই কত উঁচু থেকে পড়ছে জল। ওর নাম বড়াই পানি ফলস। ওখানে একটি বন-বাংলোও আছে। এর পরেরবার যখন আসব, থাকব ওখান। তবে একটা কথা …।

    কী কথা?

    ঐ বাংলোতে ভূত আছে।

    সত্যি?

    অনেকেই বলে।

    কী বলে?

    একেকজন একেকরকম বলে। তবে আমরা তো সবাই কিভুত। ভূতে আমাদের কী করবে!

    তারপর বলল, আমরা যেখানে যাচ্ছি জোরান্ডা, সেখানেও খুব সুন্দর একটি প্রপাত আছে। তবে সেটি বাংলো থেকে ভাল দেখা যায় না। একটু উপরে উঠে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে দেখতে হয়। জোরান্ডা বনবাংলোটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। বাংলোর পাশের গিরিখাতটি শুধু ভয়াবহই নয়, অশেষ রহস্যময়ও।

    কেন, রহস্যময় কেন?

    আজ রাতেই দেখতে পাবে।

    নামটা ওরকম কেন? মানে কি জোড়া-আভা? গামহারদা না…

    না, তা নয়। এখানে, মানে, সিমলিপালের জঙ্গলে, ময়ুরভঞ্জ জেলাতে বাথুরী সমাজ বলে একটি সমাজ আছে। তারা এই সময়েই তাদের দেবতা বড়াম দেওকে পুজো দিতে আসে বারিপদা থেকে পায়ে হেঁটে। গত বছরের আগের বছর তাদেরই একজনের কাছে শুনেছিলাম যে, নামটা আসলে জোরান্ডা নয়। এই গভীর কালো ল্যাটারাইট পাথরের গিরিখাতের গায়ে কোথাও নাকি জগন্নাথদেবের ঠাঁই আছে। বহু বহু বছর আগে এখানে নাকি ‘জাউ’ মানে, ভাত, যা জগন্নাথদেবের প্রসাদ, তা রান্না হতো। জাউ রান্না হতো বলে ওড়িয়াতে বলতো “জাউ-রন্ধা”। সাহেব ব্যাটাদের জিভ ভারী। অনেক শব্দের উচ্চারণে তারা অপারগ। তাই, যেমন খড়গপুরকে তারা খাড়াগ্‌পুর করেছে, মেদিনীপুরকে মিদনাপুর, বর্ধমানকে বার্ডওয়ান, তেমনই জাউরান্ধাকে করেছে জোরান্ডা।

    সত্যি?

    উত্তেজিত হয়ে বলল ঝাঁঝি।

    গামহার বলল, তুমি কত জানো তাই ভাবছি। তুমি যথার্থই পণ্ডিত।

    দয়া করে ঐ শব্দটি ব্যবহার কোরো না গামহারদা। রবীন্দ্রনাথ কী বলেছিলেন জানো তো?

    কি?

    যাহারা সবকিছুই পণ্ড করেন তাঁহারাই পণ্ডিত।

    তাই?

    হেসে উঠল ওরা দুজন।

    আরও মিনিট কুড়ি পরে গাড়িটা উত্রাইয়ে নামতে নামতে একটা প্রকাণ্ড উপত্যকাতে নেমে এল। দু’পাশে জঙ্গল, মধ্যে দিয়ে সোজা পথ চলে গেছে। একজন সুন্দর শরর যুবক, হাতে তার তীরধনুক আর সঙ্গে তার অতি স্ববাস সুগঠিত সুন্দরী শবরী। বনে হেঁটে চলেছে। হাসতে হাসতে, কথা বলতে বলতে সখার গায়ে ঢলে পড়ছে। যেন “রাইকমলের” কাবেরী বসু। শুধু রঙটা কালো, এই যা।

    গামহার ভাবছিল, যৌবনের মতো সুন্দর বিধাতার এই সৃষ্টিতে আর কিছু নেই। ওদের দুজনের আনন্দ তো শিক্ষা, অর্থ, যশ, ক্ষমতা কিছু দিয়েই সমান করা যাবে না। যৌবন যার চলে গেছে, শুধু সেই জানে, যৌবনের সম্পদের কথা।

    একটি দীর্ঘশ্বাস পড়ল গামহার-এর।

    কী হল তোমার?

    চিকু বলল।

    হয়নি কিছুই। ওদের দেখছিলাম। সুখের সংজ্ঞা যেন। না?

    যা বলেছেন গামহারদা।

    ঝাঁঝি বলল।

    এই আদিবাসীদের সারল্য, তাদের সহজে সুখী হওয়ার ক্ষমতা, তথাকথিত দারিদ্রকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা, যদি আমাদের থাকত!

    চিকু বলল, কিন্তু আমরা তো ওদের মূর্খ মনে করে, ওদের জিনস পরিয়ে, সোলার পাওয়ার টিভি বসিয়ে পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে, আমাদেরই মতো ‘সভ্য’ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। হাউ ইডিয়টিক।

    তারপর বলল, তোমাদের একটা বই পড়তে দেব। পড়ে দেখো।

    কী বই?

    ‘SAVAGING THE CIVILIZED’. পড়ে, খুব আনন্দ পাবে।

    দিও।

    ওই যে সামনে টিলার উপরে একটা ছোট্ট বাংলো দেখা যাচ্ছে ওটার নাম কি চিকুদা?

    ওটার নাম ন’আনা। এই যে উপত্যকা পেরিয়ে এলাম এর নামও ন’আনা। পাহাড়ের নীচে একটি ছোট্ট বস্তী আছে। তার নামও ন’আনা।

    এরকম নাম কেন?

    পুরো সিমলিপালই তো ময়ূরভঞ্জের রাজার Shooting preserve ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ময়ূরভঞ্জ একটি করদ রাজ্য ছিল। ওড়িশাতে এরকম অগণ্য করদ রাজ্য ছিল।

    যেমন?

    যেমন, ময়ূরভঞ্জ, ঢেনকানল, বৌধ, শোনপুর, কালাহান্ডি, পারিকুত, কেওনঝরগড়, নুয়াগড়, দশপান্না, আরও কত, এখন নাম সব মনে আসছে না। তা এই ন’আনার নাম ন’আনা হয়েছে, কারণ ময়ূরভঞ্জের রাজাকে এদের বছরে ন-আনা খাজনা দিতে হত।

    তাই?

    তাই।

    এখানে জলের খুব কষ্ট ছিল আগে। নীচে একটা কুঁয়ো ছিল। সেই কুঁয়ো থেকে চৌকিদারের সব প্রয়োজনের জন্যেই জল বয়ে নিয়ে যেতে হতো উপরে। তাই খুব কম ট্যুরিসই থাকতেন এখানে। এখন নীচে একটি ডিপ টিউবওয়েল করে দিয়েছে সরকার। তার জলও ভারি মিষ্টি। চলো, খাওয়াব তোমাদের সে জল।

    আর কতক্ষণ লাগবে জোরা পৌঁছতে আমাদের?

    মিনিট পঁয়তাল্লিশ।

    বাঃ। ঝাঁঝি খুশি হয়ে বলল।

    খাবে নাকি জল?

    ভাল?

    বললাম না, অমৃত। চলল, জল খেয়ে নিই।

    ওরা তিনজনেই নামল। সকলের শেষে ঝাঁঝি যখন টিউবওয়েল থেকে জল খেল তখন চিকু পাম্প করছিল আর গামহার পাশে দাঁড়িয়েছিল। পাছে শাড়ি ভিজে যায় তাই শাড়িটা একটু তুলে নিয়েছিল ঝাঁঝি। গামহার ওর পা দেখে ভাল লাগাতে মরে গেল। কী সুন্দর পায়ের গোড়ালি আর পাতার গড়ন। লাল টুকটুকে। বাঁ পায়েব মধ্যমাটি অন্য আঙুলের চেয়ে বেশি লম্বা। গামহার-এর এক জীবন-অভিজ্ঞ বন্ধু বলতো যে, যে-মেয়েদের পায়ের মধ্যম আঙুল বড় হয়, তারা খুব কামুক হয়। গামহার শুনে বলেছিল “একে মায় রাঁধে না, তপ্ত আর পান্তা”।

    সামনে ঝুঁকে, নিচু হয়ে জল খাচ্ছিল ঝাঁঝি। তার স্তনদ্বয় মেরুন রঙা ব্লাউজের মধ্যে পদ্মর মতো ফুটেছিল। সামনে ঝুঁকলে যে মেয়েদের স্তনের সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেক, তা পঞ্চাশ পেরিয়ে এসে হাবাগবা গামহার এই প্রথম আবিষ্কার করল। সন্ত তুলসীদাস বলেছিলেন, “সকল পদারথ্‌ হায় জগমাহী, কর্মহীন নর পাওয়াত নাহি”। অর্থাৎ এই পৃথিবীতে সব জিনিসই আছে কিন্তু যে কর্মহীন মানুষ, তার কপালে কিছুই জোটে না। পরম আশ্লেষে, মুঠিভরে কোনো পূর্ণ যুবতীর প্রস্ফুটিত কোমল মসৃণ স্তনই যে ধরেনি, তার জীবনই বৃথা। গামহার একটা রিয়্যাল হতভাগা। যার নাম জঙ্গলের দামড়া গাছের নামে, যার জীবন গ্রীষ্মর উষর নাবাল ভূমির মতো ধু ধু, তার পক্ষে এই পূর্ণ-প্রস্ফুটিত যুগলপদ্ম দর্শনই অনেক পাওয়া। মুহূর্ত কয়েক চোখ ভরে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝি বাঁ হাত দিয়ে তার আঁচল ফেলে দিল স্তনযুগলের উপরে। মেয়েদের ষষ্ঠেন্দ্রিয়তে তারা বুঝতে পারে কোন পুরুষের চোখ তাদের শরীরের কোথায় কখন ছোঁয়। লজ্জা অবশ্য ঝাঁঝি অথবা গামহার কেউই পেল না। গামহারকে ঝাঁঝি অপরাধীও সাব্যস্ত করল না। সংস্কারবশেই আঁচলটা ফেলে দিল ঝাঁঝি।

    চলো, এবার।

    আর বেশি দেরি তো নেই পৌঁছতে। আমাকে দুমিনিট সময় দেবে? একটা সিগারেট খেয়ে নিতাম।

    চিকু বলল।

    গাড়ির কাঁচ নামিয়েই চলো না। এখন তো গরম নেই। এ সি চালানোর দরকার কি?

    তা নেই। তবে লাল ধুলোয় ভরে যাবে গাড়ি।

    যাক না চিকুদা। রঙে রঙে ভরে যাক গাড়ি, আমাদের মন, সব।

    বাঃ। নেশা ধরে গেছে মনে হচ্ছে।

    ঝাঁঝি বলল, সাতসকালে নেশা। কিসের?

    তার চেয়ে বল জীবনের নেশা, যৌবনের নেশা। এমন নেশা কি আর আছে? প্রথমবারেই বুঝেছি এসে।

    ঝাঁঝি বলল।

    মাঝেমাঝেই মনে হচ্ছে কী যেন, রবীন্দ্রনাথ ছাদের টবে যুঁই-টগর রজনীগন্ধ আর শান্তিনিকেতনের শাল, বকুল, পারুল, পিয়াল আর খোয়াই দেখেই বসতের যা প্রশস্তি করে গেলেন তার গানে গানে, জোব্বা-মুড়ে তাকে একবার এই সিমলিপালে বা অন্য কোনো গভীর বনে একবার নিয়ে এসে ফেলতে পারলে আমরা কী যে পেতে পারতাম ওঁর কাছ থেকে তা ভাবলেও রোমাঞ্চ জাগে। যে কবি, যে-লেখক, যে-শিল্পী এই বনময় ভারতবর্ষকেই না দেখলেন, না অনুভব করলেন বুকের মধ্যে, তার জীবনই বৃথা।

    গামহার বলল।

    চিকু বলল, অনেকের কাছে এই বন আবার শুধুই ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক। তারা বলেন, খারাপ রাস্তা, কোনো বাংলোতে কমোড নেই, খাওয়াদাওয়ার সুখ নেই, চৌকিদারেরা ভাল বাবুর্চি নয়, তদুপরি ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া! এখানে কোনো ভদ্রলোকে আসে! না, আসা উচিত তাদের?

    ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া হয় বুঝি এখানের মশার কামড়ে?

    ঝাঁঝি বলল।

    হয় বই কী! প্রতি বছরই সিমলিপাল থেকে ফিরে গিয়ে কিছু বনপ্রেমী মারা যানই ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াতে। এ সুন্দরী বড়ই বিপজ্জনক।

    বলো কি চিকু? তাহলে আমাদের কি হবে? তবে সুন্দরী মাত্রই তো বিপজ্জনক!

    গামহার চিন্তিত গলায় বলল।

    আমাদের মধ্যেও কেউ কেউ টেশে যেতে পারি।

    তবে?

    তবে আবার কি! কন্ডোমহীন নিবিড় সঙ্গমের সুখটা সুখ নয়, শুধু এইডস এর কষ্টটাই কষ্ট? যত সব গোলমেলে কথাবার্তা। এমন সুন্দর বাসন্তী-বন-এর আনন্দর পরে যদি ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াতে মরতেও হয় তাহলেও দুঃখের কী আছে! আমরা বেঁচে থেকেই বা পৃথিবীর কোন উপকারটা করছি?

    জন্মালে তো মরতে হয়ই। কে কী করে মরল তার উপরেই সব নির্ভর করে। গুডি-গুডি বয়কেও মরতে হয়, নটি-নটি বয়কেও তাই। নটি-নটি বয় এই জীবনের অনেক দিক দেখে যায়। মৃত্যু তাকে মাকড়শার জালে পড়া পোকার মতো ধীরে ধীরে গ্রাস করে না সে নিজে এগিয়ে গিয়ে, “নাইস টু মীট উ” বলে, মৃত্যুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে। আমরা গুডি-গুড়ি নই, নটি-নটি।

    সিগারেটটা শেষ করে গাড়িতে বসে এঞ্জিন স্টার্ট করে নআনা ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরে জঙ্গলের মধ্যে একটা বাঁক নিতেই পেছন থেকে ঝাঁঝি চিৎকার করে উঠল, ওমা, ওমা, চিকুদা। দাঁড়ান। দাঁড়ান। দেখি!

    চিকু গাড়ি থামাল।

    একদল লাল প্রজাপতি পথের উপরে ন-দশ ফিট উঁচুতে দল বেঁধে উড়ছে। সকালের রোদ তাদের ফিনফিনে লাল ডানাতে পড়ায় রং প্রতিসরিত হচ্ছে দু’পাশের জঙ্গলে।

    লাল তিতলি।

    স্বগতোক্তি করল চিকু।

    যতক্ষণ প্রজাপতিগুলো পথের উপরেই থাকল, গাড়ি দাঁড় করিয়েই রাখল চিকু। তারপরে আকাশ লাল মেঘে ঢেকে দিয়ে শূন্য থেকে ঝুলতে ঝুলতে দুলতে দুলতে তারা বাঁদিকের বহুরঙা বনের ভিতরে ঢুকে গেলো।

    কী সুন্দর!

    স্বগতোক্তি করল এবারে ঝাঁঝি।

    চিকু বলল, লাল-তিতলি পেত্নীর দূত।

    সে আবার কি কথা?

    তুমি কোজাগর পড়োনি?

    না তো!

    তবে যে হারিত সেই লেখককে এতো গালাগালি করল তোমার মাথা বিগড়ানোর জন্যে?

    ঝাঁঝি বলল, ওই বইটিতো পড়িনি। গিয়েই পড়ব।

    ‘কোজাগর’-এ লাল তিতলিকে এক আধিভৌতিক ব্যাপার স্যাপারের প্রতীক হিসেবে এনেছেন লেখক। ‘এ উপন্যাসে।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article৫-৬. মসৃণ চওড়া পথ
    Next Article ৯-১১. জোবান্ডা বাংলো

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.