Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    যে জীবন দেখা হয়নি

    উপন্যাস ছোটগল্প সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প15 Mins Read0

    যে জীবন দেখা হয়নি

    মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে তৃতীয়বার।

    প্রথমবার যত উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা, সবাই যেমন ভয় পেয়েছিল, তৃতীয়বার ততটা নয় ঠিকই। দুবারই তো তিনি ফিরে এসেছেন। তবু উদাসীন তো থাকা যায় না—কলকাতার রাস্তা, মায়ের বয়েস হয়েছে উনসত্তর, একটা হাঁটুতে ব্যথা, চোখের ছানি কাটাতে হবে, যখন-তখন বিপদ হতে পারে।

    আজ ছুটির দিন। আগের দুবারও ছুটির দিনই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমবার, পাঁচ-সাত মিনিট আগেও নিপু মাকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে দেখেছে। তারপর সুজাতা মা-মা বলে ডাকল, সাড়া পাওয়া গেল না। ওপরের কোনও ঘরে মা নেই, ছাদ থেকে তো আর উড়ে যেতে পারেন না, নিশ্চয়ই নীচে নেমে এসেছিলেন, বেরিয়ে গেছেন সদর দরজা দিয়ে, দেখতে পায়নি কেউ।

    যদিও এমনিতে সুস্থ মানুষ, তবু এটা একটা রোগ। হ্যাঁ, রোগ ছাড়া আর কী! চমৎকার একটি সংসার, দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত, স্বামী এখনও বেশ কর্মক্ষম, সরযূর কোনও অভাববোধ থাকার কথা নয়। এতখানি বয়েস পর্যন্ত তিনি কখনও তেমন কোনও আঘাত পাননি, এমনকী তাঁর বাবা-মা আজও বেঁচে আছেন। যোধপুর পার্কের বাড়িটি তৈরি হয়েছে বছর দশেক আগে, বাড়িটির গড়নই এমন যে দুই ছেলের দুটি অংশে সবকিছু আলাদা, অথচ যাওয়া-আসার, মেলামেশার কোনও অসুবিধে নেই। সরযূর সম্মতি নিয়েই তাঁর স্বামী অরবিন্দ এভাবে। বানিয়েছিলেন। আলাদা সংসার হয়েও একভাবে থাকার এটাই শ্রেষ্ঠ উপায়। আর-একটা অংশে চারখানা ঘর একতলা-দোতলা-তিনতলা মিলিয়ে। তার মধ্যে দুটি ঘর বন্ধই পড়ে থাকে বছরে একবার মেয়ে আসে জামার্নি থেকে, তার জন্য বরাদ্দ। সোনালি থাকে প্রায় তিন-চার সপ্তাহ, সেই কটাদিন সকলের জন্য রান্না হয় একসঙ্গে।

    বাড়িতে গাড়ি আছে দুখানা। ড্রাইভার একজন, দ্বিতীয় গাড়িটি ছোট ছেলে বিপ্লবই চালায়। বড় গৌতমের অফিস থেকে গাড়ি আসে।

    শীতের দুপুর ছিল সেদিন। একটু আগে সকলের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে, কেউ-কেউ একটু গড়িয়ে নিচ্ছে, একতলায় বসবার ঘরে ক্যারাম খেলছে বাচ্চারা। সরযূ বসে ছিলেন তিনতলার ঘরে জানলার ধারে, এখান থেকে একটা বেশ বড় পুকুর ও গাছপালা দেখা যায়।

    আজ বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। সরযুর বাপের বাড়ি থেকে বড় এক হাঁড়ি রাবড়ি ও গোটা। পঞ্চাশেক নতুন গুড়ের সন্দেহ পাঠিয়েছে। সরযুর ছোটভাই অবনী নিজে নিয়ে এসেছে এবং রাবড়ি ও সন্দেশ মুখে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছে প্রত্যেককে, এটাই নাকি তার মায়ের নির্দেশ। সরযূর পাঁচ ভাই, প্রত্যেকেই বেঁচে আছে এবং পাঁচ ভাইয়ের এই একটি মাত্র বোন বলে সবাই সরযূকে দারুণ ভালোবাসে। প্রায়ই নানারকম খাবার, উপহার পাঠায় এ-বাড়িতে। পশ্চিমবাংলার অনেক চা বাগান বাঙালির হাতছাড়া হয়ে গেলেও সরযূর বাবার চা বাগানটি এখনও আছে—অবস্থা বেশ সচ্ছল।

    জানলার ধারে বসে থাকতে-থাকতে সরযু দেখছেন, পুকুরটার মাঝখানে এক-একবার মাছ ঘাই দিচ্ছে, অমনি বড়-বড় বৃত্ত জমে যাচ্ছে জলে। একটার-পর-একটা বৃত্ত, সেগুলো ভাঙছে পাড়ের কাছে এসে। একটা মাছরাঙা সেরকম একটা বৃত্তের ঠিক মাঝখানে ডুব দিল। কে যেন গান। গাইছে, পুকুরের ধারে ঝোপের আড়ালে তাকে দেখা যাচ্ছে না।

    তাতেই সরযূর কী যে ভাবান্তর হল, তিনি জানলার কাছ থেকে সরে গেলেন। শাড়ি বদলালেন না, চুল আঁচড়ালেন না, শুধু হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে নেমে এলেন সিঁড়ি দিয়ে। বসবার ঘরে নাতিনাতনিরা ক্যারাম খেলছে, তারা কিছুই লক্ষ করল না। ড্রাইভার মানিক গাড়ির একটা দরজা খুলে রেখে ঘুমোচ্ছে, তার পাশ দিয়ে চলে গেলেন সরযূ। একটা সাইকেল রিকশা নিয়ে কেন তিনি ঢাকুরিয়া রেলস্টেশনে চলে এলেন, তিনি নিজেই জানেন না।

    একটু পরেই একটা ট্রেন এসে দাঁড়াল। তিনি একটি ফেরিওয়ালাকে জিগ্যেস করলেন, এ গাড়ি কি সোনারপুরে যাবে?  সে মাথা হেলিয়ে দিল।

    খানিকদূর যেতে-না-যেতেই সোনারপুর। নেমে পড়লেন সরযূ। যদিও কয়েক জায়গায় স্টেশনের নাম লেখা আছে, তবু তিনি কয়েকজনকে জিগ্যেস করলেন, এটাই কি সোনারপুর? এটাই কি সোনারপুর? তিনি এখানকার কাউকেই চেনেন না, সোনারপুরে তাঁর কোনও গন্তব্যও নেই।

    এদিকে বিকেল হতে-না-হতেই সারা বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল। মা নেই, সারা বাড়িতে কোথাও নেই।

    সকলের কাছেই এটা অবিশ্বাস্য। সরযূ কখনও বাড়ি থেকে একলা বেরোন না। দোকানপাট কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি গেলে কেউ-না-কেউ থাকেই সঙ্গে। তাঁর থিয়েটার দেখার শখ আছে। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে-দেখে থিয়েটার বাছেন, ছেলের বউদের বলেন, চলো না দেখে আসি। তাদের অসুবিধে থাকলে নিজে একা যান বটে, তা বাড়ির গাড়ি নিয়ে—মানিক খুব। বিশ্বাসী ড্রাইভার।

    দুপুর থেকে মানিক গাড়িতেই রয়েছে, তবু তাকে রেখে সরযূর কোথায় যেতে পারেন? সব। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হল—কেউ কিছু জানে না, তারপর হাসপাতালগুলিতে, তারপর থানায়।

    সোনারপুরে সরযূ দেখলেন, কিছু লোক স্টেশনের বাইরে চলে গেল, কিছু মানুষ হাঁটতে লাগল রেললাইনের পাশ দিয়ে। কিছু না ভেবে তিনিও হাঁটতে লাগলেন ওদের সঙ্গে। অন্য লোকেরা একটু পরেই ভেতরে-ভেতরে ঢুকে গেল, তিনি তবু হাঁটছেন—একা। বিকেল হয়ে আসছে, অন্ধকারে সরযূ চোখে ভালো দেখেন না। দিগন্তের একপাশে ডুবে যাচ্ছে সূর্য, আকাশের সেইদিক এখন রক্তবর্ণ। সরযু তাকিয়ে রইলেন সেই দিকে। এক ঝাঁক হাঁস উড়ে যাচ্ছে পশ্চিমে, ঠিক যেন একটা মালা। সরযূ মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলেন। তাঁর পাশ দিয়ে ঝমঝমিয়ে একটা ট্রেন চলে গেল। আর কয়েক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলে তিনি ছিটকে পড়তেন, অথচ ট্রেনটার দিকে। তিনি ক্ষেপও করলেন না।

    একটু পরেই ট্রেনলাইন কাটাকুটি করে গেছে একটা রাস্তা। সেখানে একটা সাইকেল রিকশা বেল বাজিয়ে তাঁকে ডাকল, তিনি উঠে পড়লেন। হাঁটার তো অভ্যেস নেই, পায়ে ব্যথা হয়েছে।

    অনেক রাস্তা ঘুরিয়ে সাইকেল রিকশা আবার তাঁকে নিয়ে এল স্টেশনে। সে যা ভাড়া চাইছে দিয়ে দিলেন সরযু। কোথায় কত ভাড়া হয়, সে বিষয়ে তাঁর কোনও জ্ঞানই নেই।

    প্ল্যাটফর্মে একটা খালি বেঞ্চে বসামাত্র শুরু হয়ে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড। একদল লোক হুড়মুড় করে ছুটে গেল, তাদের পেছন-পেছন ধেয়ে এল আর-একটি দল। প্রথম দলটি মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। দ্বিতীয় দলটির হাতে লাঠিসোঁটা, তারা তর্জন গর্জন করতে লাগল সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে। কয়েক মিনিট পরেই অন্ধকার থেকে উড়ে এলো বোমা। তখন এরাও বোমা ফাটাল। ঝপঝপ করে বন্ধ হয়ে গেল সব দোকান, অদৃশ্য হয়ে গেল যাত্রীরা, লাঠালাঠি-বোমাবুমি চলল প্ল্যাটফর্ম জুড়ে। শুধু সরযু যেখানে বসেছিলেন, সেখানেই বসে রইলেন, যেন তিনি সিনেমা দেখছেন।

    চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট চলল এই রকম ধুমধড়াক্কা, তারপর এল পুলিশ বাহিনী। কেউ মরেছে টরেছে কি না বোঝা গেল না, দু-একজন আহত হয়ে কাতরাচ্ছিল। তাদের টেনে নিয়ে গেল সঙ্গীরা, পুলিশ বীরদর্পে লাঠি ঘোরাতে লাগল ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে।

    হঠাৎ তাদের একজনের চোখ পড়ল সরযূর দিকে। একবার দেখামাত্র বোঝা যায়, এই রমণীটি এখানে বেমানান। যতই আটপৌরে শাড়ি পরে থাকুন, তাঁর চেহারায় রয়েছে সচ্ছল পরিবারের ছাপ। এককালে রূপসী ছিলেন, এখন যথেষ্ট বয়সে হলেও সেই রূপের জ্যোতি একেবারে মিলিয়ে যায়নি, শরীরও খুব বেশি ভাঙেনি, চোখদুটোতে রয়েছে আভিজাত্যের রেশ।

    প্রথমে একজন কনস্টেবল কথা বলতে শুরু করেছিল, তাকে সরিয়ে দিল একজন অফিসার। এ লাইন দিয়ে অনেক মাছওয়ালি, তরকারিওয়ালি যাতায়াত করে, এই বয়েসেরই সেরকম কেউ বসে থাকলে পুলিশ তাকে তুই-তুই করত। কিন্তু সরযূকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই অফিসারটি জিগ্যেস করল, ম্যাডাম, আপনি এখানে কী করছেন?

    সরযূ সরলমনে বললেন, এমনি বসে আছি।

    অফিসারটি চোখ কপালে তুলে বলল, এখানে বসে আছেন। গুণ্ডারা এত বোমাবাজি করল, আপনাকে কিছু বলেনি?

    সরযূ বললেন, না তো! ওরা নিজেরাই মারামারি করছিল।

    অফিসারটি বলল, আপনার গায়ে লেগে যেতে পারত। আপনি সরে যাননি কেন? আপনি সব দেখলেন, ওরা সাক্ষী রাখতে চায় না, তাদেরও খুন করে দেয়—

    কিছুক্ষণ কথা বলার পর অফিসারটি বুঝলেন, এই মহিলা তার চেনাশুনা জগতের বাইরের মানুষ। যোধপুর পার্কে বাড়ি, বলছেন ওঁর এক ছেলে ইন্ডিয়ান অয়েলের ম্যানেজার, এসব যদি সত্যি হয়, তাহলে উঁচুতলায় নিশ্চয়ই যোগাযোগ আছে। এঁকে আর ঘাঁটানো উচিত নয়। তবু একবার। তার সন্দেহ হল, উঁচুজাতের বেশ্যা নয় তো? অনেক ভদ্রঘরের বউরাও…। কিন্তু সেরকম হলে সোনারপুর রেলস্টেশনে বসে থাকবে কেন? বয়েসটাও বেশি…

    অফিসারটি অতি সহৃদয়ভাবে নিজের উদ্যোগে পুলিশের গাড়িতে সরযূকে বাড়ি পৌঁছে দিল।

    সে বাড়ি তখন যেন শোকের বাড়ি। রাত দশটা বেজে গেছে, তবু কেউ কিছু খায়নি। মাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে কৌতূহল, মা কোথায় গিয়েছিলেন? কেন গিয়েছিলেন?

    সরযূ কোনও উত্তর দেন না, ঠোঁট টিপে-টিপে হাসেন। অনেক কথা শোনার পর শুধু বললেন, ফিরে তো এসেছি। আর চিন্তা করছিস কেন?

    সরযূর স্বামী দিবানাথের ইঞ্জিনিয়ারিং পার্টসের ব্যাবসা, দীর্ঘকাল ধরে সার্থকভাবে চালাচ্ছেন, এখন ছোটছেলেই সব কিছু দেখে। কয়েক বছর ধরে দিবানাথের মন খুব ঝুঁকেছে ধর্মের দিকে, প্রায়ই হরিদ্বারে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে আসেন এক সাধুর আশ্রমে। বাড়িতে থাকার দিনগুলিতেও অধিকাংশ সময় জপতপ আর ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে কাটান। সরযূ তাঁর স্বামীর সঙ্গে কয়েকবার গেছেন সেই আশ্রমে। এখন আর যেতে চান না, ঠাণ্ডায় তাঁর হাঁটুর ব্যথা বাড়ে।

    দিবানাথ গম্ভীর ধরনের মানুষ। জপতপ করেন বটে, কিন্তু ছোটছেলের কাছ থেকে নিয়মিত ব্যাবসার হিসেব বুঝে নেন এবং প্রতি রাতে খানিকটা মদ্যপানের নেশা ছাড়েননি।

    মদের গেলাসে শেষ চুমুক দিয়ে দিবানাথ জিগ্যেস করলেন, তুমি একটা অ্যাডভেঞ্চার করে এলে, একাই, না সঙ্গে কেউ ছিল?

    সরযূ বললেন, বয়েসটা খেয়াল নেই বুঝি? আমার মতন বুড়ির সঙ্গে কে যেতে চাইবে?

    দিবানাথ বললেন, পুরুষমানুষ ভাবলে কেন? তোমার বয়েসি কোনও মহিলাও তো যেতে পারে?

    সরযূ বললেন, সেরকমই বা কে আছে?

    কোথায় গিয়েছিলে?

    যেদিকে দুচোখ যায়।

    আমি কি তোমাকে কোনও কষ্ট দিয়েছি? আমার বিরুদ্ধে তোমার কোনও অভিযোগ আছে?

    না তো!

    আমি যে প্রায়ই হরিদ্বারে যাই, সেটা তোমার পছন্দ নয়?

    যাবে না কেন? অনেক বছর ধরে খেটেছ, এখন যেখানে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে হচ্ছে যাবে…

    তুমি সঙ্গে থাকলে ভালো লাগে। বুড়ো বয়সে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শরীরের টান আর না থাকলেও মনের টান তো থাকেই।

    ওখানে গেলে যে হাঁটুর ব্যথায় আমি খুব কষ্ট পাই।

    কথাবার্তা এর চেয়ে বেশিদূর আর এগোল না।

    পরদিন দুপুরে সুজাতা অবশ্য ছাড়ল না অত সহজে।

    দুই পুত্রবধূর মধ্যে ছোটছেলের বউ সুজাতার সঙ্গেই সরযূর ভাব। বড়ছেলের বউ নলিনী। গুজরাতের মেয়ে, ব্যবহার-ট্যবহার খুবই ভালো, তবে এখনও বাংলা ভাষাটা তেমন শেখেনি, তার সঙ্গে গল্প জমে না। নিজের মেয়ে সোনালি বিদেশে থাকে। এই সুজাতাই যেন তাঁর মেয়ের মতন। সুজাতা যেমন আবদার করে, জেদ করে, নলিনী তেমন পারে না।

    সুজাতা সরযূর খাটের পাশে বসে পড়ে বলল, আমি তোমায় ছাড়ছি না মা। আমি গল্প শুনতে ভালোবাসি, এখন আর কেউ নেই, এবার তুমি বলো।

    সরযূ বললেন, গল্প আবার কী?

    সুজাতা বলল, হ্যাঁ, গল্প আছে। আমি একটা আন্দাজও করেছি। বলব?

    হ্যাঁ, বল না।

    তুমি শ্রীরামপুরে গিয়েছিলে? ঠিক নয়?

    ওমা, শ্রীরামপুরে যাব কেন?

    গত মাসে অলকমামা এসেছিলেন, ওঁর বউয়ের শ্রাদ্ধে নেমন্তন্ন করতে। আমি শুনেছি, অলকমামা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। সারাজীবন ধরেই তোমাদের মধ্যে একটু প্রেম ছিল। এখন অলকমামার বউ নেই, তাই তাকে তুমি সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলে।

    দূর পাগল। প্রেম না ছাই! ওসব বুঝিই না, তোরা গল্পের বই পড়ে-পড়ে…আমি শ্রীরামপুরে যাইনি।

    সত্যি কথা বলছ?

    এই বয়েসে তোর কাছে আমি মিথ্যে কথা বলব?

    তবে কোথায় গিয়েছিলে?

    সোনারপুর।

    সোনারপুর! সেখানে কী আছে?

    সরযূ একটুক্ষণ চুপ করে গেলেন। কেন সোনারপুর গিয়েছিলেন, তার কারণটা এখনও তিনি নিজেই জানেন না। পুকুরের জলের বৃত্ত দেখতে-দেখতে হঠাৎ তার মনে সোনারপুর নামটা এসেছিল। ওই জল কিংবা মাছরাঙা পাখির সঙ্গে সোনারপুরের কী সম্পর্ক? তবু হঠাৎ-হঠাৎ কোনও গানের লাইন, কোনও জায়গার নাম মানুষের মনে এসে যায়।

    তিনি আস্তে-আস্তে বললেন, সোনারপুর নামটা কতবার শুনেছি, খবরের কাগজেও দেখি প্রায়ই, কেমন সুন্দর নাম সোনারপুর, সোনারপুর। তাই হঠাৎ মনে হল। এ জীবনে জায়গাটা একবার নিজের চোখে দেখব না? তাই ট্রেনে চেপে…

    গালে হাত দিয়ে সুজাতা বলল, এ কী অদ্ভুত কথা! তুমি সোনারপুর যেতে চাইলে আমরা তোমায় নিয়ে যেতে পারতাম না? গাড়িতে আর কতক্ষণ লাগে?

    সুজাতার মুখের গড়ন সরস্বতী প্রতিমার মতন। বড়-বড় দুটো চোখ, এরকম চোখে রাগ, বিস্ময়, দুঃখ এসব যেন বেশি-বেশি স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। সে একটা কৌটো থেকে অনবরত লবঙ্গ খায়।

    সরযূ বললেন, দল বেঁধে গাড়ি করে ঘুরলে কিছুই ভালো করে দেখা হয় না।

    সুজাতা ঠোঁট উলটে বলল, সোনারপুরে কী-ই বা দেখবার আছে? আমি তো গেছি, পচা জায়গা।

    সরযূর মনে পড়ে গেল, রেলস্টেশনের সেই মারামারির দৃশ্য। নিজের চোখে ওরকম কিছু দেখবেন, তা তিনি কখনও কল্পনাও করেননি।

    সে দৃশ্যটার কথা জানালেন না সুজাতাকে। বললেন, পচা হোক, ভালো হোক, সোনার নামে একটা জায়গা যখন থাকে, সেটা দেখা হবে না এ জীবনে?

    সুজাতা বলল, এরকম জায়গা তো কত আছে পৃথিবীতে, সব কি দেখা যায় নাকি?

    সরযু বললেন, সোনারপুর নামটা আমার খুব পছন্দ।

    একটু থেমে, অনেকটা আপনমনে আবার বললেন, আমার ছোটবেলা কেটেছে চা বাগানে। সেখানে কতরকম চাকর-বাকর, রান্নার লোক, মালি, আরামের শেষ নেই। কিন্তু আমাদের বাইরে বেরুবার হুকুম ছিল না। একটু বড় হতেই পাঠিয়ে দেওয়া হল শিলঙের কনভেন্ট স্কুলে। বিয়ে হয়ে গেল সতেরো বছরে, ব্যাস! শ্বশুরবাড়ির বিরাট সংসার, তার মধ্যেই কেটে গেল এতগুলো বছর। আমি বাইরের কিছুই দেখিনি। কোনওদিন রাস্তায় পায়ে হেঁটে যাইনি।

    এর প্রায় ছমাস পর দ্বিতীয়বার বাড়ি থেকে চলে যান সুজাতা। কোনও ঝগড়াঝাঁটি, মন কষাকষি হয়নি, এমনিই হঠাৎ। সেবারে ফিরলেন রাত কাটিয়ে পরের দিন। কোনওরকম বিপদে যে। পড়েননি, সেটাই অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। বাস বদল করে পৌঁছেছিলেন বসিরহাট। সেখানে নদীতে খেয়া পারাপার হয়। তিনিও একটা নৌকোয় গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে ওপারে গিয়েছিলেন। কোনও একটা বাংলা ফিল্মে এরকম একটা দৃশ্য দেখে সরযূর মনে হয়েছিল, তিনি তো জীবনে কখনও নৌকোয় চেপে কোনও নদী পার হননি। যদি হঠাৎ মরে যান, তা হলে এই অভিজ্ঞতাটা জীবনে বাদ থেকে যাবে।

    ইচ্ছামতী নদীর ওপারে পৌঁছে সরযূ লোকজনদের জিগ্যেস করলেন, সুন্দরবন কোথায়?

    লোকেরা অবাক। এখান থেকে সুন্দরবন অনেক দূর, এদিক দিয়ে কেউই যায় না। ক্যানিং থেকে যাওয়া সহজ। এরকম একজন সম্রান্ত চেহারার মহিলা সুন্দরবনে কোথায় যাবেন, কার কাছে। যাবেন, জিগ্যেস করলে সরযু ঠিক মতন উত্তর দিতে পারেন না। সুন্দরবনের নামটা ছাড়া তাঁর যে আর কিছুই জানা নেই। ততক্ষণে বসিরহাট থেকে ফেরার বাস বন্ধ হয়ে গেছে। এক সহৃদয় মুসলমান ভদ্রলোক সরফুকে নিয়ে গেলেন নিজের বাড়ি, কত যত্ন করলেন, নিজের বাগানের আম খাওয়ালেন…

    এই ঘটনা শুনতে-শুনতে ভয়ে সুজাতার মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। লোকটি যদি বদমাশ হত? সরযূকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়ে সবকিছু কেড়ে নিয়ে খুন করে ফেলত যদি? সরযূর কানের দুল দুটো যে হীরের! সরযূ হেসে বলেছিলেন, তোরা সবসময় খারাপটা ভাবিস কেন? পৃথিবীতে কি ভালো লোক নেই?

    সুজাতার তবু ভয় যায় না।

    সরযূর সহজে অসুবিসুখ হয় না, সেবারে বসিরহাট থেকে ফিরে এসে জ্বরে পড়েছিলেন, সাধারণ সর্দিজ্বর। সেই উপলক্ষে তাঁর ছেলেরা তিনজন ডাক্তার ডেকে আনল, তাঁদের মধ্যে একজন নিউরোলজিস্ট, একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। পরীক্ষা করানো হল অনেকরকম। ডাক্তাররা গোপনে রিপোর্ট দিল, সরযূর মাথার কোনও গোলমাল নেই, তাঁকে কোনওক্রমেই পাগল বলা যায় না।

    তাহলে কেন একজন উনসত্তর বছর বয়েসের মহিলা ছেলেপুলে নাতিনাতনিতে ভরা সংসার ফেলে হঠাৎ-হঠাৎ একা-একা চলে যান? তিনি কোথাও—যে-কোনও জায়গায় যেতে চাইলেই তো তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে। একা বাইরে যাইয়াই তো সাংঘাতিক বিপদের ঝুঁকি।

    সুজাতা শাশুড়ির হাত জড়িয়ে ধরে বলেছিল, মা, তুমি আর এমনভাবে যাবে না, কথা দাও। আমাদের কত দুশ্চিন্তা হয়, তুমি বোঝো না?

    কথা দেননি সরযূ, শুধু মিটিমিটি হেসেছেন।

    এবারে সকালবেলাতেই বেরিয়ে গেলেন সরযূ। আত্মীয়জনদের টেলিফোন করার কোনও মানে হয় না, আগের দুবারের থেকেই বোঝা গেছে, তিনি ওসব জায়গায় যাবেন না। কোথায় যে যেতে পারেন, সেটা অনুমান করাই দুষ্কর। একবার সোনারপুরে, একবার বসিরহাটে, এবার কি তা হলে হাওড়ার দিকে? বিপ্লব ছুটে গেল হাওড়ায়। কিন্তু কত ট্রেন যায়, কোন ট্রেনে মা উঠে পড়েছেন, তা কি জানা সম্ভব? দুবার বিপাকে পড়েননি বলে যে এবারও পড়বেন না…বিপ্লবের চোখ জ্বালা করে, সে পাগলের মতন প্ল্যাটফর্মে ছোটাছুটি করে।

    দুপুরের মধ্যেই সরযূর খোঁজ পাওয়া গেল, খুবই আকস্মিকভাবে।

    সরযূর মেজভাই বাদল মোটর সাইকেল চেপে যাচ্ছিল সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ ধরে। হঠাৎ তার খটকা লাগল। একটু আগে সে যা দেখল, তা কি চোখের ভুল? হ্যাঁ, ভুল হতে বাধ্য হয়তো। চেহারার খানিকটা মিল আছে। তবু সে মোটর সাইকেল ঘুরিয়ে এল উলটোদিকে।

    চোরবাগানের কাছে একটা গলির মধ্যে লম্বা লাইন, নানা বয়সের নারীপুরুষ—কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে আছে, তারই মধ্যে বসে থাকা একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে সরযূর মুখের অনেকটা মিল। মিল আছে, কিন্তু সরযু হতে পারে না। একটা ছেড়া ময়লা শাড়ি পরা, মাথার চুল ধুলোমাখা, মুখেও কালো-কালো দানা, নিশ্চিত কোনও ভিখিরি মেয়েছেলে। ভিখিরি মেয়েরা মহিলা কিংবা নারী হয় না, তারা মেয়েছেলে, বড়জোর স্ত্রীলোক।

    মোটর সাইকেল ছেড়ে তবু দাঁড়িয়ে রইল বাদল।

    কোনও ধনী ব্যক্তির শ্রাদ্ধ উপলক্ষে এখানে ভিখিরিভোজন হবে। এখন খাবার বিলি হচ্ছে না, আগে সবাইকে টিকিট দেওয়া হয়ে গেছে, সেই টিকিট নিয়ে শ-দেড়েক ভিখিরি লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে, খাবার আসবে যথাসময়ে।

    সেই ভিখিরিটাই অন্য কোনওদিকে তাকাচ্ছে না, নখ খুঁটছে আপন মনে। পেছন থেকে ঠেলাঠেলি হলে সরে-সরে বসছে। একবার প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল সামনের দিকে। তারপর যেই মুখ ফেরাল, তার ঠোঁটের পাতলা হাসি দেখে বাদলের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। ভিখিরিরা এভাবে হাসে না।

    বাদল কাছে এসে ডাকল, দিদি।

    সরযু বললেন, তুই আবার এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাড়ি যা।

    বাদল বলল, তুমি এ কী করছ দিদি?

    সরযূ বললেন, আজ দুপুরে আমি এখানে খাব।

    তুমি এখানে খাবে? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?

    কেন মাথা খারাপ হবে? খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখলাম, আজ এখানে বিনা পয়সায় খাওয়াবে, তাই চলে এলাম।

    কেন, তোমাকে বিনা পয়সায় খেতে হবে কেন?

    সরযূ মুখ তুলে বললেন, অত জোরে-জোরে কথা বলিস না। আমার কাছে আয়। কানে-কানে বলছি।

    বাদলকে হাঁটু গেড়ে বসতে হল। সরযূ ফিসফিস করে বললেন, তুই, আমি বড়লোকের ঘরে জন্মেছি। কোনওদিন কিছুর অভাব হয়নি। গরিবদের চিনিই না। গরিবরা কী খায়, তাও জানি না। এসব না জেনেই মরে যাব? একদিন অন্তত ওদের সঙ্গে বসে খেয়ে দেখি।

    বাদল প্রবলভাবে মাথা নেড়ে বলল, একে পাগলামি ছাড়া আর কী বলে? বাবা-মা শুনলে কত কষ্ট পাবে বলো তো।

    বাবা-মাকে কিছু বলিস না।

    আমাদের বাড়ির একটা মানসম্মান আছে।

    মনে কর, আজকের দিনটায় আমি তোদের বাড়ির কেউ না।

    দিদি, উঠে এসো, প্লিজ।

    জ্বালাতন করিস না, বাদল, তুই যা না এখান থেকে। মনে কর, তুই আমাকে দেখিসনি।

    বাদলের পকেটে মোবাইল ফোন। খবর চলে গেল চতুর্দিকে। আধঘণ্টার মধ্যে এসে গেল দুটো গাড়ি। একদিক থেকে সরযূর দাদা-বউদি, অন্যদিক থেকে বিপ্লব আর সুজাতা। সবাই মিলে অনুরোধ, উপরোধ, কাকুতি-মিনতি করতে লাগলেন, সরযূ কিছুতেই জায়গা ছেড়ে উঠবেন না।

    অন্য ভিখিরিরা মজা পেয়ে গেছে, হাসছে। একজন বড়লোকের বাড়ির গিন্নিবসেছে তাদের সঙ্গে খিচুড়ি খেতে, এরকম মজা কি আর সহজে পাওয়া যায়। শ্রাদ্ধবাড়ির লোকেরাও জেনে গেল যে একজন সম্রান্ত মহিলা বসেছেন কাঙালিদের লাইনে।

    তাদের দুজন এসে হাত জোড় করে বলল, মাসিমা, আপনি ভেতরে আসুন। আপনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আপনি এসেছেন, এ আমাদের কত সৌভাগ্য।

    সরযূ বললেন, ইস, আমার এত লজ্জা করছে। এই বাদলটাই যত নষ্টের গোড়া। আপনারা ব্যস্ত হবেন না। আমি এদের সঙ্গে বসেই খাব ঠিক করেছি।

    সুজাতা কাছে এসে বলল, এ শাড়িটা তো দেখছি মানদার।

    সরযু দুষ্টু মেয়ের মতন হেসে বললেন, হ্যাঁ, ওর ঘর থেকে চুরি করেছি।

    সুজাতা বলল, ছদ্মবেশ ধরেছ। অদ্ভুত ছেলেমানুষি!

    সব বুড়ো মানুষদেরই মাঝে-মাঝে ছেলেমানুষ সাজতে ইচ্ছে হয়। তুই-ও বুড়ো হলে বুঝবি।

    তোমার এরকম জেদের কোনও মানে হয় না। শ্রাদ্ধবাড়ির খিচুড়ি খাবার ইচ্ছে হয়েছে, এঁরা এত করে বলছেন, ভেতরে বসে খাবে চলো—

    খিচুড়ি খেতে তো আমি আসিনি। এদের সঙ্গে একসঙ্গে খাব বলে এসেছি।

    এই ধুলোকাদার মধ্যে…তোমার ঘেন্নাও করে না? এদের অভ্যেস আছে, তোমার অসুখ করে যাবে…

    অসুখ হলে তোরা চিকিৎসা করাবি।

    আমরা সবাই মিলে অনুরোধ করছি, তুমি কেন শুনবে না? ওঠো, ওঠো।

    অমন করে বলিস না। তুইও বোস না আমার পাশে।

    আমি? মরে গেলেও পারব না। মা, তোমাকে দেখে আমার কান্না পাচ্ছে।

    কাল বারান্দা থেকে দেখছিলাম, তুই একজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে দরাদরি করছিলি। ও পাঁচ টাকা চাইছিল, তুই কিছুতেই দিবি না। চারটে টাকা ছুড়ে দিলি রাস্তায়।

    ওই রিকশাওয়ালাটা মহা পাজি। আমাদের বাড়ি থেকে বাজার অত কাছে, চার টাকা রেট, তবু এমন জোর করছিল!

    বিপ্লবের প্রতি বছর মাইনে বাড়ে অনেক টাকা।

    এরকম তুলনা করার কোনও মানে হয় না।

    রিকশাওয়ালারা কী খায়, তুই জানিস?

    মা, ওঠো।

    সরযূ হাত বাড়িয়ে সুজাতার হাত ধরে খুব কোমল গলায় বললেন, বোস না আমার পাশে। একদিন এদের সঙ্গে বসে খেয়েই দেখি না কেমন লাগে?

    এবার সত্যিই চোখে জল এসে গেল সুজাতার। কাঞ্জিভরম সিল্কের শাড়ি পরেই বসে পড়ল ননাংরা রাস্তায়। মুখ ফিরিয়ে বলল, তোমরা যাও, আমি আজ মায়ের সঙ্গেই খাব।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleযূথপতি
    Next Article রহস্য কাহিনী নয়

    Related Articles

    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী ছোটগল্প

    আসল বেনারসী ল্যাংড়া

    April 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }