Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাল্মীকির রাম ও রামায়ণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    পুরাণী – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প15 Mins Read0

    অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

    অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন।

    ‘কিরে—এটাও চলবে না?’

    ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল—না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল।

    অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চোদ্দ। অতি বুদ্ধিমান ছেলে, ক্লাসে সে সব সময় ফার্স্ট হয়, পড়ার বাইরে তার নানা বিষয়ে কৌতূহল। অক্ষয়বাবু নিজে লেখক নন; তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একজন মধ্যপদস্থ কর্মচারী। তবে তাঁর বহুকালের শখ ছোটদের জন্য গল্প লেখার। অঞ্জন যখন আরো ছোট ছিল, তখন অক্ষয়বাবু তাকে বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প বলেছেন। তখন ছেলের ভালোই লাগত, কিন্তু এখন সে সেয়ানা হয়েছে, সহজে সে খুশি হবার পাত্র নয়।

    ‘তাহলে এটা ফুলঝুরি-তে পাঠাবো না বলছিস?’

    ‘পাঠাতে পারো। সম্পাদকের পছন্দ হলে উনি নিশ্চয়ই ছাপবেন। তবে আমাকে এ গল্প তুমি তিন-চার বছর আগে বলেছ। আমার কাছে এতে নতুন কিছু নেই।’

    ‘তাহলেও পাঠিয়ে দেখি না।’

    ‘দেখ—কিন্তু তার আগে আমি লেখাটা কপি করে দেব। তোমার হাতের লেখা পড়া যায় না।’

    ছোটদের জন্য ফুলঝুরি মাসিক পত্রিকা বছর খানেক হল বেরোতে আরম্ভ করেছে, আর এর মধ্যেই ছেলেমেয়েদের মন কেড়ে নিয়েছে। অক্ষয়বাবু শুনেছেন কাগজটার নাকি ৭৫,০০০ কপি ছাপা হয়, আর একটাও বাজারে পড়ে থাকে না। প্রেসের যন্ত্রপাতি নাকি সদ্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। সম্পাদকের নাম সুনির্মল সেন। তিনি নাকি সব লেখা নিজে পড়েন, এবং যা বাছাই করেন তা একেবারে ফার্স্ট ক্লাস। ছেলেদের পত্রিকা ত সব সময়ই ছিল, এখনও আছে। তাহলে ফুলঝুরি-তে লেখা ছাপানোর জন্য অক্ষয়বাবু এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কেন? তার কারণ তিনি খবর নিয়ে জেনেছেন যে ফুলঝুরি একটা গল্পের জন্য পাঁচশো টাকা দেয়। অক্ষয়বাবুর রোজগার ত অঢেল নয়, তাই মাঝে মাঝে এই বাড়তি আয়টা হলে মন্দ কি?

    অঞ্জন গল্পটা বাবার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তার পরিষ্কার হাতের লেখায় কপি করে দিল।

    গল্প পাঠানোর এক মাসের মধ্যে অক্ষয়বাবু ফুলঝুরি আপিস থেকে চিঠি পেলেন। চার লাইনের চিঠি, সম্পাদক মশাই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছেন যে অক্ষয়বাবুর গল্পটি মনোনীত হয়নি। কারণ-টারণ কিচ্ছু নেই; একেবারে ছাঁচে ঢালা বাতিল-করা চিঠি—যাকে ইংরিজিতে বলে রিজেকশন স্লিপ।

    অক্ষয়বাবু চিঠিটা নিয়ে ছেলের কাছে গেলেন। অঞ্জন সবে খেলার মাঠ থেকে ফিরেছে; পড়াশুনার মতোই খেলাতেও তার প্রচণ্ড উৎসাহ।

    ‘তুই ঠিকই বলেছিলি,’ বললেন অক্ষয়বাবু। ‘গল্পটা ফুলঝুরি নিল না।’

    ‘তাই বুঝি?’

    ‘আমার দ্বারা কি তাহলে এ জিনিস হবে না?’

    ‘গল্প কেন নেয়নি সেটা বলেছে?’

    ‘নাথিং। এই ত চিঠি।’

    অঞ্জন চিঠিটায় একবার চোখ বুলিয়ে বলল, ‘তুমি সুনির্মলবাবুর সঙ্গে দেখা করে ওঁকে জিগ্যেস করতে পার। আমার মনে হয় উনি খুব ভালো লোক। আমি ফুলঝুরিকে দুটো চিঠি লিখেছি, উনি দুটোই ছেপেছেন।’

    কথাটা ঠিক। অঞ্জন তার প্রথম চিঠিটা লিখেছিল ধাঁধাগুলো একটু বেশি সহজ হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে। ফুলঝুরিতে চিঠির জন্য আলাদা পাতা থাকে। সেখানে অঞ্জনের চিঠি বেরোয়, আর তারপর থেকে ধাঁধাগুলোও অঞ্জনের মনের মতো হয়।

    দ্বিতীয় চিঠিটা অঞ্জন লেখে ফুলঝুরিতে ছাপা একটা গল্প সম্বন্ধে। অঞ্জন বলে গল্পটার সঙ্গে একটা বিদেশী গল্পের আশ্চর্য মিল দেখা যাচ্ছে। এ চিঠিও ছাপা হয়, আর সেই সঙ্গে গল্পের লেখকের চিঠিও বেরোয়। তিনি স্বীকার করেছেন যে গল্পটা একটা বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা, আর সে কথাটা উল্লেখ না করার জন্য তিনি মার্জনা চেয়েছেন।

    অক্ষয়বাবু ছেলের কথায় স্থির করলেন তিনি সোজা গিয়ে সুনির্মলবাবুর সঙ্গে কথা বলবেন।

    শরৎ বোস রোডে ফুলঝুরির আপিস। পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে এক শনিবার বিকেলে অক্ষয়বাবু সোজা গিয়ে হাজির হলেন সম্পাদকের ঘরে। ছোটদের পত্রিকার দপ্তর যে এত ছিমছাম হতে পারে সেটা অক্ষয়বাবু ভাবতে পারেননি। সুনির্মল সেনের চেহারাও আপিসের সঙ্গে মানানসই। বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বয়স, ফরসা রঙ, চোখদুটো বেশ জ্বলজ্বলে।

    ‘বসুন।’ সুনির্মলবাবু তাঁর উল্টোদিকের হাল ফ্যাশানের চেয়ারটার দিকে হাত দেখালেন।

    অক্ষয়বাবু বসলেন।

    ‘আপনার পরিচয়টা—?’

    অক্ষয়বাবু নিজের নাম বললেন, এবং সেই সঙ্গে বললেন যে তিনি সম্প্রতি ‘অপরাধ’ নামে একটি ছোট গল্প ফুলঝুরিতে পাঠিয়েছিলেন, সেটা মনোনীত হয়নি বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।

    ‘হ্যাঁ, মনে পড়েছে’, বললেন সুনির্মলবাবু।

    ‘কিন্তু গল্পটা কী কারণে বাতিল হল সেটা যদি বলেন, তাহলে ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে।’

    সুনির্মলবাবু সামনে ঝুঁকে দু হাতের কনুই টেবিলের উপর রেখে বললেন, ‘দেখুন অক্ষয়বাবু, আপনার মুশকিল হচ্ছে কি, আপনি যে আজকালকার ছেলেমেয়েদের মন জানেন, তার কোনো পরিচয় আপনার গল্পে নেই। আমার কাছে সেকালের বাঁধানো সন্দেশ-মৌচাক আছে; তাতে যেরকম গল্প বেরোত, আপনার গল্প সেই ধাঁচের। আজকের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে, অনেক বেশি জানে, অনেক বেশি স্মার্ট। আমি পাঁচ বছর ইস্কুল মাস্টারি করেছি; তখন আমি এইসব ছেলেমেয়েদের খুব ভালো করে স্টাডি করেছি। তাদের মনের মতো গল্প যদি লিখতে পারেন তাহলে তা নিশ্চয়ই আমাদের কাগজে স্থান পাবে। অল্প-বিস্তর ত্রুটি থাকলে ক্ষতি নেই; সেটা আমি শুধরে দিতে পারি। সম্পাদকের এ অধিকারটা আছে জানেন বোধহয়?’

    ‘জানি’, মাথা হেঁট করে বললেন অক্ষয়বাবু।

    এর পরে আর কিছু বলার নেই, তাই অক্ষয়বাবু উঠে পড়লেন। বাড়ি ফিরে ছেলেকে ডেকে জিগ্যেস করলেন, ‘ফুলঝুরিতে কার গল্প তোর ভালো লাগে রে?’

    অঞ্জন একটু ভেবে বলল, ‘দুজন আছে—সৈকত ব্যানার্জি আর পুলকেশ দে।’

    অক্ষয়বাবু ছেলের বইয়ের তাক থেকে এক গোছা ফুলঝুরি নিয়ে গিয়ে নিজের খাটের পাশের টেবিলে রাখলেন। তারপর সাতদিন ধরে তিনি রাত্রে খাওয়ার পর এই দুই লেখকের এক গুচ্ছ গল্প পড়ে ফেললেন। এদের গল্পের মেজাজ যে তাঁর নিজের গল্পের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এদের বিষয়ও আলাদা, ভাষাও আলাদা।

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন যে তাঁকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রথমে তাঁর নিজের ছেলেকে আরো ভালো করে চিনতে হবে। অঞ্জনকে তিনি চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন, তার সম্বন্ধে গর্ব অনুভব করেছেন, কিন্তু সত্যি কি ছেলের মনের খুব কাছে পৌঁছতে পেরেছেন? অক্ষয়বাবু মিনিটখানেক চিন্তা করেই বুঝলেন তিনি শুধু পারেননি নয়, সে চেষ্টাই করেননি। ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট হয় এটা জেনেই তিনি খুশি; ছেলে কী দেখে, কী শোনে, কী পড়ে, কী ভাবে—এসব তিনি কোনোদিন জানতে চেষ্টা করেননি।

    ছ’মাস অক্ষয়বাবু কোনো গল্প লিখলেন না। সেই সময়টাতে ছেলেকে আরো ভালো করে চিনে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। অঞ্জন আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে কিশোরদের জন্য লেখা বহু ইংরিজি বই কিনে পড়ে ফেলেছে। কম্পিউটারের সব খবর তার কাছে আছে, সৌরজগতের গ্রহগুলোর স্যাটিলাইট সম্বন্ধে যা জানা গেছে, সব সে জানে। খেলার ব্যাপারেও অঞ্জনের সমান উৎসাহ। দেশ বিদেশের ক্রিকেট ফুটবল টেনিস ব্যাডমিন্টন ইত্যাদির খেলোয়াড়দের নাম তার মুখস্থ। অক্ষয়বাবু খবরের কাগজের খেলাধুলোর পাতাটার দিকেই দেখেন না।

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন এবার থেকে বেশ খানিকটা সময় দিয়ে তাঁকে তাঁর ছেলের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। গল্পের প্লট ভাবা তিনি অবিশ্যি এখনো থামাননি। কারণ ফুলঝুরিতে তাঁর গল্প ছেপে বেরিয়েছে—এ স্বপ্ন তিনি এখনো দেখেন। একটা গল্পের আইডিয়া মাথায় এলেই তিনি ছেলেকে শোনান।

    ‘কেমন হয়েছে বল তো।’

    ‘একটু একটু করে ইমপ্রুভ করছে’, বলে অঞ্জন।

    অক্ষয়বাবু যে ক্রমশ তাঁর ছেলের মনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন সেটা মাঝে মাঝে তাঁর কথায় প্রকাশ পায়। যেমন, একদিন তিনি রাত্রে খাবার টেবিলে বসে ছেলেকে জিগ্যেস করলেন, ‘বেকার, লেন্ডল, ম্যাকেনরো—এই তিন জনের মধ্যে তোর মতে কে শ্রেষ্ঠ?’

    ‘ম্যাকেনরো’, বলল অঞ্জন, ‘তারপর বেকার, তার পর লেন্ডল।’

    আরেকদিন অক্ষয়বাবু জিগ্যেস করলেন, ‘ফ্যাক্স কাকে বলে জানিস?’

    ‘জানি।’

    ‘কী বলত?’

    ‘ফ্যাক্সের সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো জায়গায় একটা কাগজে কিছু লিখে বা এঁকে পাঠালে সেটা এক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে যায়।’

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন ছেলেকে নতুন কোনো জ্ঞান তিনি দিতে পারবেন না। তিনি যা জানেন, ছেলে তার চেয়ে বেশি জানে। তবে এটা ঠিক যে তিনি ছেলেকে এখন আগের চেয়ে ঢের বেশি ভালো করে চেনেন।

    ‘তাহলে কি আবার গল্প লেখা শুরু করা যায়?’

    তিনি কথাটা ছেলেকে জিগ্যেস করলেন। অঞ্জন বলল, ‘লেখ না। অবিশ্যি ছাপার মালিক হলেন সুনির্মলবাবু। গল্প ভালো হলে উনি নিশ্চয়ই ছাপবেন।’

    ‘এবার না ছাপলে কিন্তু মরমে মরে যাব।’ বললেন অক্ষয়বাবু। ‘অন্তত একবার সূচিপত্রে আমার নামটা দেখতে চাই।’

    অঞ্জন কিছু মন্তব্য করল না।

    দিন সাতেক মাথা খাটিয়ে অক্ষয়বাবু ‘ডানপিটে’ নামে একটা গল্প লিখে ফেললেন। তারপর সেটা ছেলেকে পড়িয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘কেমন হয়েছে?’

    অঞ্জন বলল, ‘পাঠিয়ে দাও। আমি কপি করে দিচ্ছি।’

    পরদিন লেখাটা পেয়ে তৎক্ষণাৎ ফুলঝুরির আপিসে গিয়ে সেটা নিজের হাতে দিয়ে এলেন অক্ষয়বাবু।

    পনের দিনের মধ্যে সুনির্মল সেনের চিঠি এল। ‘ডানপিটে’ মনোনীত হয়েছে। আগামী কার্তিকের ফুলঝুরি-তে ছাপা হবে।

    অক্ষয়বাবু সগর্বে চিঠিটা ছেলেকে দেখালেন। অঞ্জন বলল, ‘ভেরি গুড।’

    এটা ভাদ্র মাস, তাই আরো দু মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে নতুন উদ্যমে অক্ষয়বাবু আরো গল্পের প্লট ভাবতে লাগলেন। এখন তিনি চাবিকাঠি হাতে পেয়ে গেছেন, তাই ছেলেকে শোনানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই।

    এই দু মাসটাকে অক্ষয়বাবুর দু বছর বলে মনে হল। অবশেষে কার্তিক মাসের দোসরা অঞ্জনের নামে খয়েরী খামে এল নতুন ফুলঝুরি। ছেলে তখন পাড়ার মাঠে খেলতে গেছে। অক্ষয়বাবু সবে আপিস থেকে ফিরেছেন। তিনি আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে খাম থেকে পত্রিকাটা বার করলেন।

    প্রথমেই দেখলেন সূচিপত্র।

    হ্যাঁ—‘ডানপিটে’ রয়েছে তেরোর পাতায়।

    সেই পাতায় কাগজটা খুলে অক্ষয়বাবু দেখলেন পাতার উপর দিকে ফুলঝুরির আর্টিস্ট মুকুল গোস্বামীর কাজ—গল্পের নাম, লেখকের নাম, আর গল্পের একটা ঘটনার ছবি।

    ছাপার অক্ষরে তাঁর লেখা দেখতে অক্ষয়বাবুর অদ্ভুত লাগছিল। তিনি দশ মিনিটে গল্পটা পড়ে ফেলে বেশ একটু অবাক হলেন। তিনি যা লিখেছেন তার বারো আনাই আছে, কিন্তু নতুন যে চার আনা অংশ—সেটা একেবারে মোক্ষম। তাতে গল্প অনেক গুণে ভালো হয়ে গেছে। সুনির্মল সেনের বাহাদুরি আছে।

    এই কথাটা ভদ্রলোককে না জানিয়ে পারবেন না অক্ষয়বাবু।

    পত্রিকাটা আবার খামের মধ্যে পুরে ছেলের পড়ার টেবিলের উপর রেখে একটা ট্যাক্সি নিয়ে অক্ষয়বাবু সোজা চলে গেলেন ফুলঝুরির আপিসে।

    আবার সেই ছিমছাম ঘর, সেই হালফ্যাশানের চেয়ার।

    ‘এবার খুশি ত?’ জিগ্যেস করলেন সুনির্মল সেন।

    ‘তাতো বটেই’, বললেন অক্ষয়বাবু। ‘কিন্তু আমার আসার কারণ হচ্ছে আপনাকে ধন্যবাদ জানানো। আপনার নিপুণ হাতের ছোঁয়া যে গল্পকে আরো কত বেশি ভালো করে দিয়েছে তা বলতে পারব না।’

    সুনির্মলবাবু ভুরু কুঁচকে তাঁর পাশের তাক থেকে একটা বক্স ফাইল টেনে এনে টেবিলের উপর রাখলেন। তারপর তার থেকে একটা পাণ্ডুলিপি বার করে অক্ষয়বাবুর দিকে এগিয়ে দিলেন।

    ‘আমার ছোঁয়া কোথায় আছে বার করুন ত দেখি।’

    অক্ষয়বাবু পাণ্ডুলিপির প্রত্যেক পাতায় একবার চোখ বুলিয়ে দেখলেন কোথাও কোনো কাটাকুটি নেই।

    ‘ওটা আপনারই হাতের লেখা ত?’ জিগ্যেস করলেন সুনির্মলবাবু। ‘ওটাই আপনি পাঠিয়েছিলেন ত?’

    ‘আজ্ঞে হ্যাঁ—এটাই পাঠিয়েছিলাম। তবে হাতের লেখা আমার নয়।’

    ‘তবে কার?’

    অক্ষয়বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ম্লান হাসি হেসে বললেন, ‘আমার ছেলের।’

    অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

    অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন।

    কী রে–এটাও চলবে না?

    ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলনা, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল।

    অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চোদ্দ। অতি বুদ্ধিমান ছেলে, ক্লাসে সে সব সময় ফাস্ট হয়, পড়ার বাইরে তার নানা বিষয়ে কৌতূহল। অক্ষয়বাবু নিজে লেখক নন; তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একজন মধ্যপদস্থ কর্মচারী। তবে তাঁর বহুঁকালের শখ হোটদের জন্য গল্প লেখার। অঞ্জন যখন আরও ছোট ছিল, তখন অক্ষয়বাবু তাকে বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প বলেছেন। তখন ছেলের ভালই লাগত, কিন্তু এখন সে সেয়ানা হয়েছে, সহজে সে খুশি হবার পাত্র নয়।

    তা হলে এটা ফুলঝুরি-তে পাঠাব না বলছিস?

    পাঠাতে পারো। সম্পাদকের পছন্দ হলে নিশ্চয়ই ছাপবেন। তবে আমাকে এ গল্প তুমি তিন-চার বছর আগে বলেছ। আমার কাছে এতে নতুন কিছু নেই।

    তা হলেও পাঠিয়ে দেখি না!

    দেখো–কিন্তু তার আগে আমি লেখাটা কপি করে দেব। তোমার হাতের লেখা পড়া যায় না।

    ছোটদের জন্য ফুলঝুরি মাসিক পত্রিকা বছরখানেক হল বেরোতে আরম্ভ করেছে, আর এর মধ্যেই ছেলেমেয়েদের মন কেড়ে নিয়েছে। অক্ষয়বাবু শুনেছেন কাগজটার নাকি ৭৫,০০০ কপি ছাপা হয়, আর একটাও বাজারে পড়ে থাকে না। প্রেসের যন্ত্রপাতি নাকি সদ্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। সম্পাদকের নাম সুনির্মল সেন। তিনি নাকি সব লেখা নিজে পড়েন, এবং যা বাছাই করেন তা একেবারে ফার্স্ট ক্লাস। ছেলেদের পত্রিকা তো সব সময়ই ছিল, এখনও আছে। তা হলে ফুলঝুরি-তে লেখা ছাপানোর জন্য অক্ষয়বাবু এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কেন? তার কারণ তিনি খবর নিয়ে জেনেছেন যে, ফুলঝুরি একটা গল্পের জন্য পাঁচশো টাকা দেয়। অক্ষয়বাবুর রোজগার তো অঢেল নয়, তাই মাঝে মাঝে এই বাড়তি আয়টা হলে মন্দ কী?

    অঞ্জন গল্পটা বাবার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তার পরিষ্কার হাতের লেখায় কপি করে দিল।

    .

    গল্প পাঠানোর এক মাসের মধ্যে অক্ষয়বাবুফুলঝুরি আপিস থেকে চিঠি পেলেন। চার লাইনের চিঠি, সম্পাদক মশাই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছেন যে, অক্ষয়বাবুর গল্পটি মনোনীত হয়নি। কারণ-টারণ কিছু নেই; একেবারে ছাঁচে ঢালা বাতিল করা চিঠি–যাকে ইংরিজিতে বলে রিজেকশন স্লিপ।

    অক্ষয়বাবু চিঠিটা নিয়ে ছেলের কাছে গেলেন। অঞ্জন সবে খেলার মাঠ থেকে ফিরেছে; পড়াশুনার মতোই খেলাতেও তার প্রচণ্ড উৎসাহ।

    তুই ঠিকই বলেছিলি, বললেন অক্ষয়বাবু। গল্পটা ফুলঝুরি নিল না।

    তাই বুঝি?

    আমার দ্বারা কি তা হলে এ জিনিস হবে না?

    গল্প কেন নেয়নি সেটা বলেছে?

    নাথিং। এই তো চিঠি।

    অঞ্জন চিঠিটায় একবার চোখ বুলিয়ে বলল, তুমি সুনির্মলবাবুর সঙ্গে দেখা করে ওঁকে জিজ্ঞেস করতে পারো। আমার মনে হয় উনি খুব ভাল লোক। আমি ফুলঝুরিকে দুটো চিঠি লিখেছি, উনি দুটোই ছেপেছেন।

    কথাটা ঠিক। অঞ্জন তার প্রথম চিঠিটা লিখেছিল ধাঁধাগুলো একটু বেশি সহজ হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে। ফুলঝুরিতে চিঠির জন্য আলাদা পাতা থাকে। সেখানে অঞ্জনের চিঠি বেরোয়, আর তারপর থেকে ধাঁধাগুলোও অঞ্জনের মনের মতো হয়।

    দ্বিতীয় চিঠিটা অঞ্জন লেখে ফুলঝুরিতে ছাপা একটা গল্প সম্বন্ধে। অঞ্জন বলে গল্পটার সঙ্গে একটা বিদেশি গল্পের আশ্চর্য মিল দেখা যাচ্ছে। এ চিঠিও ছাপা হয়, আর সেইসঙ্গে, গল্পের লেখকের চিঠিও বেরোয়। তিনি স্বীকার করেছেন যে গল্পটা একটা বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা, আর সে কথাটা উল্লেখ না করার জন্য তিনি মার্জনা চেয়েছেন।

    অক্ষয়বাবু ছেলের কথায় স্থির করলেন তিনি সোজা গিয়ে সুনির্মলবাবুর সঙ্গে কথা বলবেন।

    শরৎ বোস রোডে ফুলঝুরির আপিস। পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে এক শনিবার বিকেলে অক্ষয়বাবু সোজা গিয়ে হাজির হলেন সম্পাদকের ঘরে। ছোটদের পত্রিকার দপ্তর যে এত ছিমছাম হতে পারে সেটা অক্ষয়বাবু ভাবতে পারেননি। সুনির্মল সেনের চেহারাও আপিসের সঙ্গে মানানসই। বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর, ফরসা রঙ, চোখদুটো বেশ জ্বলজ্বলে।

    বসুন। সুনির্মলবাবু তাঁর উলটোদিকের হালফ্যাশানের চেয়ারটার দিকে হাত দেখালেন।

    অক্ষয়বাবু বসলেন।

    আপনার পরিচয়টা–?

    অক্ষয়বাবু নিজের নাম বললেন, এবং সেইসঙ্গে বললেন যে তিনি সম্প্রতি অপরাধ নামে একটি ছোটগল্প ফুলঝুরিতে পাঠিয়েছিলেন, সেটা মনোনীত হয়নি বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।

    হ্যাঁ, মনে পড়েছে, বললেন সুনির্মলবাবু।

    কিন্তু গল্পটা কী কারণে বাতিল হল সেটা যদি বলেন, তা হলে ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে।

    সুনির্মলবাবু সামনে ঝুঁকে দু হাতের কনুই টেবিলের উপর রেখে বললেন, দেখুন অক্ষয়বাবু, আপনার মুশকিল হচ্ছে কি, আপনি যে আজকালকার ছেলেমেয়েদের মন জানেন, তার কোনও পরিচয় আপনার গল্পে নেই। আমার কাছে সেকালের বাঁধানো সন্দেশ-মৌচাক আছে; তাতে যেরকম গল্প বেরোত, আপনার গল্প সেই ধাঁচের। আজকের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে, অনেক বেশি জানে, অনেক বেশি স্মার্ট। আমি পাঁচ বছর ইস্কুল মাস্টারি করেছি; তখন আমি এইসব ছেলেমেয়েদের খুব ভাল করে স্টাডি করেছি। তাদের মনের মতো গল্প যদি লিখতে পারেন তা হলে তা নিশ্চয়ই আমাদের কাগজে স্থান পাবে। অল্প-বিস্তর ত্রুটি থাকলে ক্ষতি নেই; সেটা আমি শুধরে দিতে পারি। সম্পাদকের এ অধিকারটা আছে, জানেন বোধহয়?

    জানি, মাথা হেঁট করে বললেন অক্ষয়বাবু।

    এর পরে আর কিছু বলার নেই, তাই অক্ষয়বাবু উঠে পড়লেন। বাড়ি ফিরে ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস বললেন, ফুলঝুরিতে কার গল্প তোর ভাল লাগে রে?

    অঞ্জন একটু ভেবে বলল, দুজন আছে–সৈকত ব্যানার্জি আর পুলকেশ দে।

    অক্ষয়বাবু ছেলের বইয়ের তাক থেকে একগোছা ফুলঝুরি নিয়ে গিয়ে নিজের খাটের পাশের টেবিলে রাখলেন। তারপর সাতদিন ধরে তিনি রাত্রে খাওয়ার পর এই দুই লেখকের একগুচ্ছ গল্প পড়ে ফেললেন। এদের গল্পের মেজাজ যে তাঁর নিজের গল্পের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এদের বিষয়ও আলাদা, ভাষাও আলাদা।

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন যে, তাঁকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রথমে তাঁর নিজের ছেলেকে আরও ভাল করে চিনতে হবে। অঞ্জনকে তিনি চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন, তার সম্বন্ধে গর্ব অনুভব করেছেন, কিন্তু সত্যি কি ছেলের মনের খুব কাছে পৌঁছতে পেরেছেন? অক্ষয়বাবু মিনিটখানেক চিন্তা করেই বুঝলেন তিনি শুধু পারেননি নয়, সে চেষ্টাই করেননি। ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট হয় এটা জেনেই তিনি খুশি; ছেলে কী দেখে, কী শোনে, কী পড়ে, কী ভাবে–এসব তিনি কোনওদিন জানতে চেষ্টা করেননি।

    ছমাস অক্ষয়বাবু কোনও গল্প লিখলেন না। সেই সময়টাতে ছেলেকে আরও ভাল করে চিনে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। অঞ্জন আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে কিশোরদের জন্য লেখা বহু ইংরিজি বই কিনে পড়ে ফেলেছে। কম্পিউটারের সব খবর তার কাছে আছে, সৌরজগতের গ্রহগুলোর স্যাটিলাইট সম্বন্ধে যা জানা গেছে, সব সে জানে। খেলার ব্যাপারেও অঞ্জনের সমান উৎসাহ। দেশ-বিদেশের ক্রিকেট ফুটবল টেনিস ব্যাডমিন্টন ইত্যাদির খেলোয়াড়দের নাম তার মুখস্থ। অক্ষয়বাবু খবরের কাগজের খেলাধুলোর পাতাটার দিকেই দেখেন না।

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন এবার থেকে বেশ খানিকটা সময় দিয়ে তাঁকে তাঁর ছেলের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। গল্পের প্লট ভাবা তিনি অবিশ্যি এখনও থামাননি। কারণ ফুলঝুরিতে তাঁর গল্প ছেপে বেরিয়েছে–এ স্বপ্ন তিনি এখনও দেখেন। একটা গল্পের আইডিয়া মাথায় এলেই তিনি ছেলেকে শোনান।

    কেমন হয়েছে বল তো।

    একটু একটু করে ইমপ্রুভ করছে, বলে অঞ্জন।

    অক্ষয়বাবু যে ক্রমশ তাঁর ছেলের মনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন সেটা মাঝে মাঝে তাঁর কথায় প্রকাশ পায়। যেমন, একদিন তিনি রাত্রে খাবার টেবিলে বসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বেকার, লেন্ডন, ম্যাকেনরো–এই তিনজনের মধ্যে তোর মতে কে শ্রেষ্ঠ?

    ম্যাকেনরো, বলল অঞ্জন, তারপর বেকার, তারপর লেন্ডন।

    আরেকদিন অক্ষয়বাবু জিজ্ঞেস করলেন, ফ্যাক্স কাকে বলে জানিস?

    জানি।

    কী বল তো?

    ফ্যাক্সের সাহায্যে পৃথিবীর যে-কোনও জায়গা থেকে যে-কোনও জায়গায় একটা কাগজে কিছু। লিখে বা এঁকে পাঠালে সেটা এক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে যায়।

    অক্ষয়বাবু বুঝলেন ছেলেকে নতুন কোনও জ্ঞান তিনি দিতে পারবেন না। তিনি যা জানেন, ছেলে তার চেয়ে বেশি জানে। তবে এটা ঠিক যে তিনি ছেলেকে এখন আগের চেয়ে ঢের বেশি ভাল করে চেনেন।

    তা হলে কি আবার গল্প লেখা শুরু করা যায়?

    তিনি কথাটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন। অঞ্জন বলল, লেখো না। অবিশ্যি ছাপার মালিক হলেন সুনির্মলবাবু। গল্প ভাল হলে উনি নিশ্চয়ই ছাপবেন।

    এবার না ছাপলে কিন্তু মরমে মরে যাব। বললেন অক্ষয়বাবু। অন্তত একবার সূচিপত্রে আমার নামটা দেখতে চাই।

    অঞ্জন কিছু মন্তব্য করল না। দিন সাতেক মাথা খাটিয়ে অক্ষয়বাবু ডানপিটে নামে একটা গল্প লিখে ফেললেন। তারপর সেটা ছেলেকে পড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হয়েছে?

    অঞ্জন বলল, পাঠিয়ে দাও। আমি কপি করে দিচ্ছি।

    পরদিন লেখাটা পেয়ে তৎক্ষণাৎ ফুলঝুরির আপিসে গিয়ে সেটা নিজের হাতে দিয়ে এলেন অক্ষয়বাবু।

    পনেরো দিনের মধ্যে সুনির্মল সেনের চিঠি এল। ডানপিটে মনোনীত হয়েছে। আগামী কার্তিকের ফুলঝুরিতে ছাপা হবে।

    অক্ষয়বাবু সগর্বে চিঠিটা ছেলেকে দেখালেন। অঞ্জন বলল, ভেরি গুড।

    এটা ভাদ্র মাস, তাই আরও দুমাস অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে নতুন উদ্যমে অক্ষয়বাবু আরও গল্পের প্লট ভাবতে লাগলেন। এখন তিনি চাবিকাঠি হাতে পেয়ে গেছেন, তাই ছেলেকে শোনানোর আর কোনও প্রয়োজন নেই।

    এই দু মাসটাকে অক্ষয়বাবুর দু বছর বলে মনে হল। অবশেষে কার্তিক মাসের দোসরা অঞ্জনের নামে খয়েরি খামে এল নতুন ফুলঝুরি। ছেলে তখন পাড়ার মাঠে খেলতে গেছে। অক্ষয়বাবু সবে আপিস থেকে ফিরেছেন। তিনি আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে খাম থেকে পত্রিকাটা বার করলেন।

    প্রথমেই দেখলেন সূচিপত্র।

    হ্যাঁ–ডানপিটে রয়েছে তেরোর পাতায়।

    সেই পাতায় কাগজটা খুলে অক্ষয়বাবু দেখলেন পাতার উপর দিকে ফুলঝুরির আর্টিস্ট মুকুল গোস্বামীর কাজ–গল্পের নাম, লেখকের নাম, আর গল্পের একটা ঘটনার ছবি।

    ছাপার অক্ষরে তাঁর লেখা দেখতে অক্ষয়বাবুর অদ্ভুত লাগছিল। তিনি দশ মিনিটে গল্পটা পড়ে ফেলে বেশ একটু অবাক হলেন। তিনি যা লিখেছেন তার বারো আনাই আছে, কিন্তু নতুন যে চার আনা অংশ–সেটা একেবারে মোক্ষম। তাতে গল্প অনেক গুণে ভাল হয়ে গেছে। সুনির্মল সেনের বাহাদুরি আছে।

    এই কথাটা ভদ্রলোককে না জানিয়ে পারবেন না অক্ষয়বাবু।

    পত্রিকাটা আবার খামের মধ্যে পুরে ছেলের পড়ার টেবিলের উপর রেখে একটা ট্যাক্সি নিয়ে অক্ষয়বাবু সোজা চলে গেলেন ফুলঝুরির আপিসে।

    আবার সেই ছিমছাম ঘর, সেই হালফ্যাশানের চেয়ার।

    এবার খুশি তো? জিজ্ঞেস করলেন সুনির্মল সেন।

    তা তো বটেই, বললেন অক্ষয়বাবু। কিন্তু আমার আসার কারণ হচ্ছে আপনাকে ধন্যবাদ জানান। আপনার নিপুণ হাতের ছোঁয়া যে গল্পকে আরও কত বেশি ভাল করে দিয়েছে তা বলতে পারব না।

    সুনির্মলবাবু ভুরু কুঁচকে তাঁর পাশের তাক থেকে একটা বক্স ফাইল টেনে এনে টেবিলের উপর রাখলেন। তারপর তার থেকে একটা পাণ্ডুলিপি বার করে অক্ষয়বাবুর দিকে এগিয়ে দিলেন।

    আমার ছোঁয়া কোথায় আছে বার করুন তো দেখি।

    অক্ষয়বাবু পাণ্ডুলিপির প্রত্যেক পাতায় একবার চোখ বুলিয়ে দেখলেন কোথাও কোনও কাটাকুটি নেই।

    ওটা আপনারই হাতের লেখা তো? জিজ্ঞেস করলেন সুনির্মলবাবু। ওটাই আপনি পাঠিয়েছিলেন তো?

    আজ্ঞে হ্যাঁ–এটাই পাঠিয়েছিলাম। তবে হাতের লেখা আমার নয়।

    তবে কার?

    অক্ষয়বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ম্লান হাসি হেসে বললেন, আমার ছেলের।

    শুকতারা, শারদীয়া ১৩৯৭

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশিল্পী
    Next Article প্রসন্ন স্যার

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাল্মীকির রাম ও রামায়ণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাল্মীকির রাম ও রামায়ণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাল্মীকির রাম ও রামায়ণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025

    পুরাণী – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

    September 9, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.