Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প103 Mins Read0

    ০১. হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো

    হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো সেদিন আমার মাথা ন্যাড়া।

    জীবনে দুবার ন্যাড়া হওয়ার কথা আমার মনে আছে। একবার একাত্তরের মাঝামাঝি, আরেকবার তিরাশির শুরুর দিকে। দুবারই মন ভালো ছিল না।

    একাত্তরে আমি এসএসসি ক্যান্ডিডেট। আমাদের বয়সী ছেলেরাও মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে। এ কারণে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করে দিলেন। দুঃখে। আমি ন্যাড়া হয়ে গেলাম। ন্যাড়া মাথা নিয়ে রাস্তায় বেরোতে লজা করবে, ফলে বাড়ি থেকে বেরোনো হবে না।

    সত্যি তা-ই হয়েছিল। ন্যাড়া মাথার কারণে একাত্তরের সময় অনেক দিন আমি বাড়ি থেকেই বেরোই নি। তিরাশি সালে সেই স্মৃতি মনে করেই ন্যাড়া হয়েছিলাম।

    আমার তখন রুজি-রোজগার নেই।

    একাশির অক্টোবরে জার্মানি থেকে ফিরে রোববার পত্রিকায় জয়েন করেছি। ইত্তেফাক-এর সামনে দিন-দুপুরে ট্রাকের তলায় এক পথচারীকে থেতলে যেতে দেখে রোববার-এ একটা রিপোর্ট লিখলাম, সেই রিপোর্টে বিশেষ একটি মন্তব্য করায় চাকরি চলে গেল। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে দোয়েল নামে একটা অ্যাডফার্ম করলাম। এক-দেড় বছরের মাথায় সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।

    তত দিনে বিয়ে করে ফেলেছি। কিন্তু পকেটে দশটি টাকাও নেই। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলাম, সমরেশ বসু হয়ে যাব। লিখে জীবন ধারণ করব। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে সে যে কী কঠিন কাজ, আজকের কোনো তরুণ লেখক ভাবতেই পারবেন না।

    তখন একটা গল্প লিখে পঞ্চাশ-এক শ টাকা পাই। ঈদ সংখ্যার উপন্যাসের জন্য পাঁচ শ-এক হাজার। তাও পেতে সময় লাগে তিন-চার মাস। লেখার জায়গায়ও কম। এত পত্রপত্রিকা তখন ছিল না। দৈনিক পত্রিকায় উপন্যাস ছাপার নিয়ম ছিল না।

    কঠিন সময়।

    দু-চারটা বই ততদিনে বেরিয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। পাবলিশাররা টাকাই দিতে চায় না। একটা বিখ্যাত প্রকাশন সংস্থা তো অভাবী লেখক দেখে ষোল শ টাকায় আমার দুটি বইয়ের গ্ৰন্থস্বত্বই কিনে নিয়েছিল। প্রথম প্রকাশিত বইয়ের জন্য আমি কোনো টাকাই পাই নি। এ অবস্থায় লিখে জীবন ধারণ! সত্যি, সাহস ছিল আমার!

    সেইসব দিনের কথা ভাবলে এখনো বুক কাঁপে।

    যা হোক, লিখে জীবন ধারণ মানে প্রতিদিন দিস্তা দিস্তা লেখা। লেখার জন্য সময় দেওয়া এবং ঘরে থাকা। কিন্তু সারা দিন ঘরে আমার মন বসবে কেমন করে! যখন-তখন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। তখনই একাত্তরের ন্যাড়া হওয়ার স্মৃতি মনে এসেছিল। ন্যাড়া হয়ে গেলাম। ন্যাড়া মাথা নিয়ে সারা দিন ঘরে বসে উন্মাদের মতো লিখি। লেখার কষ্ট দেখে জ্যোৎস্না একদিন আমার ন্যাড়া মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিল, সাধ্য থাকলে তোমার লেখাগুলো আমি লিখে দিতাম।

    সেবারের বাংলা একাডেমী বইমেলায় তিন-চারটা বই বেরোলো। কালোঘোড়া, তাহারা ইত্যাদি। বইয়ের বিক্রি বাড়াবার জন্য লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ন্যাড়া মাথা নিয়েই মেলায় যাই। আমার অবস্থা যে বেশ ভালো তা বোঝাবার জন্য জার্মানি থেকে আনা জিনস-কেডস আর একেক দিন একেকটা শার্ট পরি। জ্যোৎস্নার মোটা ধরনের একটা সোনার চেন পরে রাখি গলায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমার অবস্থা তখন উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট। পকেটে সিগ্রেট খাওয়ার পয়সা পর্যন্ত থাকে না।

    বইমেলায় এক বিকেলে নওরোজ কিতাবিস্তানে বসে আছি। প্রতিষ্ঠানটি তখনো ভাগ হয় নি। আমার তাহারা বইটি হাতে নিয়ে চশমা পরা, রোগা, দেখলেই মেধাবী এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মনে হয়, এমন একজন মানুষ সামনে এসে দাঁড়ালেন। অটোগ্রাফ।

    মুখের দিকে তাকিয়ে দিশেহারা হয়ে গেলাম। নিজের অজান্তে উঠে দাঁড়ালাম। মুখটি আমার চেনা। ছবি দেখেছি। হুমায়ূন আহমেদ।

    তখন পর্যন্ত খান ব্রাদার্স থেকে তাঁর তিনটি বই বেরিয়েছে। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার আর বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন তোমাদের জন্য ভালবাসা। তিনটি বইয়ের কোনো-একটির ব্যাক কাভারে পাসপোর্ট সাইজের ছবিও আছে। আর কে না জানে, স্বাধীনতার পর পর নন্দিত নরকে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস। আহমদ শরীফ, শওকত আলী, আহমদ ছফা-এই সব শ্ৰদ্ধেয় মানুষ উপন্যাসটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সনাতন পাঠক ছদ্মনামের আড়ালে বসে তখনই বিখ্যাত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেশ পত্রিকায় নন্দিত নরকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন।

    তিয়াত্তর-চুয়াত্তর সালের কথা। আমি জগন্নাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ি। লেখার পোকা মাত্র মাথায় ঢুকেছে। আমার বন্ধু কামালের বন্ধু হচ্ছে খান ব্রাদার্সের মালিকের ছেলে ফেরদৌস। তার কাছ থেকে নন্দিত নরকে এবং শঙ্খনীল কারাগার জোগাড় করে আনল কামাল। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই বই পড়লাম আমরা। পড়ে মুগ্ধ এবং বিস্মিত!

    এমন লেখাও হয়! এত সহজ-সরল ভাষায়, এমন ভঙ্গিমায়, মধ্যবিত্ত জীবনের সামান্য ঘটনাকে এমন অসামান্য করে তোলা যায়!

    সেই প্রথম হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটা ঘোর তৈরি হলো আমার। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ, কত নতুন নতুন লেখক লিখতে শুরু করেছেন, এমনকি আমাদের প্ৰবীণ লেখকরাও নতুন লেখকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লিখছেন, কিন্তু বেশির ভাগ লেখকেরই লেখা আমি বুঝতে পারি না। ভাষার কারুকার্যে অযথাই জটিল। গল্পে গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। কায়দা-সর্বস্ব।

    এ অবস্থায় দু-তিন বছরের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে আরও দু-তিনটি লেখা পড়লাম হুমায়ূন আহমেদের। জনাক্তক কিংবা এ ধরনের কোনো একটি লিটল ম্যাগাজিনে পড়লাম নিশিকাব্য নামে এক আশ্চৰ্য সুন্দর গল্প। বাংলাবাজার থেকে জোনাকী নামে উল্টোরথ টাইপের একটি সিনেমা পত্রিকা বেরোত, সেই পত্রিকার কোনো-এক বিশেষ সংখ্যায় পড়লাম সূর্যের দিন।

    এই সূর্যের দিনই পরে শ্যামল ছায়া নামে বই হয়। যদিও সূর্যের দিন নামে পরে অন্য আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ।

    যা হোক বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় সে সময় উপন্যাস লিখলেন হুমায়ূন আহমেদ। নির্বািসন। বুক হু হু করা এক প্রেমের উপন্যাস। তারও পর লিখলেন অন্যদিন। এইসব লেখা পড়ে আমি বুঝে গেলাম, লেখা এমনই হওয়া উচিত। সাদামাটা নিজস্ব ভাষায়, নিজের মতো করে জীবনের কথা বলে যাওয়া, যা প্রত্যেক মানুষকে আলোড়িত করবে, দ্রুত পৌঁছাবে পাঠকের কাছে। বলতে দ্বিধা নেই, লেখায় সরলতার মন্ত্র আমি হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।

    কিন্তু বইমেলার সেই বিকেলের আগে তাঁকে কখনো চোখে দেখি নি। শুনেছি তিনি ছয় বছর ধরে আমেরিকায়, পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করছেন। এদিকে বাজারে সম্ভবত চারটি মাত্র বই-নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, তোমাদের জন্য ভালবাসা আর নির্বাসন। সেই চারটি বইয়ের কল্যাণেই বিরাশি সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়ে গেছেন। পরে শুনেছি, আমেরিকায় বসে তিনি যখন বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়ার কথা শুনলেন, শুনে তাঁর শিক্ষককে দিলেন খবরটা, আমেরিকান শিক্ষক হতভম্ব। তুমি কেমিস্ট্রির লোক, লিটারেচারে একাডেমী অ্যাওয়ার্ড পাও কী করে?

    সেই শিক্ষক কি জানতেন, কালক্রমে বাংলা সাহিত্যের রসায়ন সম্পূর্ণ চলে আসবে হুমায়ূন আহমেদের হাতে! সাহিত্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ। তিনি অবলীলায় ছেড়ে আসবেন!

    মনে আছে, তিরাশির বইমেলায় খান ব্রাদার্স থেকে বেরিয়েছে তাঁর অন্যদিন উন্যাসটি। মাঝখানে ছয় বছর লেখালেখি করেন নি, তবু অন্যদিন খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি এসেছেন আমার অটোগ্রাফ নিতে। একজন স্বপ্নের মানুষ এসে দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। কিসের অটোগ্রাফ, আমি তাঁর পা ধরে সালাম করব কি না ভাবছি। কোনারকমে শুধু বলেছি, হুমায়ুন ভাই, আপনাকে আমি চিনি। তিনি বললেন, আমি আমেরিকায় বসে খবর পেয়েছি বাংলাদেশে ইমদাদুল হক মিলন নামে একটি ছেলে গল্প-উপন্যাস লিখে জনপ্রিয় হয়েছে। তুমি কী লেখ আমার একটু বোঝা দরকার।

    সেদিনই সন্ধ্যার পর আমাকে তিনি তার ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলেন। শ্যামলীতে এখন যেখানে শামসুর রাহমানের বাড়ি তার পেছন দিকে খোলা মতো মাঠ পেরিয়ে একটা বাড়ি। সেই বাড়ির দোতলা কিংবা তিনতলায় হুমায়ুন ভাইয়ের ফ্ল্যাট। খালান্মা, শাহিন, মানে আজকের বিখ্যাত সম্পাদক-কাটুনিস্ট এবং লেখক আহসান হাবিব, ছোটবোন, ভাবি, ফুটফুটে নোভা, শিলা, বিপাশা। বিপাশা তখন ভাবির কোলে। আর রফিকের মা নামে একজন বুয়া ছিল। পরবর্তী সময়ে এই বুয়াটির বহু মজার মজার আচরণ হুমায়ুন ভাইয়ের বিভিন্ন নাটকে হাসির উপাদান হয়ে এসেছে।

    সেদিন আমার সঙ্গে আরও দুজন মানুষ গিয়েছিলেন হুমায়ূন ভাইয়ের ফ্ল্যাটে। দৈনিক বাংলার সালেহ চৌধুরী আর বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ।

    সালেহ চৌধুরীকে হুমায়ূন ভাই ডাকতেন নানাজি, আর নিয়াজ মোরশেদের দাবার তিনি ভক্ত। নিয়াজের জন্য ভালো রান্নাবান্না হয়েছিল বাসায়। গুলতেকিনে ভাবি বেশ বড় সাইজের আস্ত একখানা ইলিশ মাছ ভেজে খুবই লোভনীয় ভঙ্গিতে সাজিয়ে রেখেছেন ট্রেতে। ইলিশটির ওপর ভাজা পেঁয়াজ ছড়ানো, চারপাশে চাক চাক করে কাটা টমেটো, শস্যা। ভাত-পোলাও দুটোই আছে, মাছ, মুরগি, সবজি, মিষ্টি-সব মিলিয়ে টেবিলভর্তি খাবার। নানাজি এবং নিয়াজ মোরশেদকে ভাবি চিনতেন। হুমায়ুন ভাই ভাবির সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভাবি তাঁর স্বভাবসুলভ হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন, একটু বুঝি অবাকও হলেন। ন্যাড়া মাথা, গলায় সোনার চেন, পরনে জিনস-কেডস, এ কেমন লেখক!

    সেই সন্ধ্যায় সেই যে হুমায়ূন আহমেদ পরিবারের সঙ্গে আমি মিশে গেলাম, আজও সে রকম মিলেমিশেই আছি। আমাদের কোথাও কোনো গ্যাপ হয় নি।

    হুমায়ূন ভাই তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। ইউনিভার্সিটির কাজ সেরে শ্যামলীর ফ্ল্যাটে ফিরে যান, বিকেলবেলা আসেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স ক্লাবে। সালেহ চৌধুরী আসেন, হুমায়ুন আজাদ আসেন, আমিও যাই। চা, সিগ্রেট, শিঙাড়া আর গল্পগুজব চলে।

    সালেহ চৌধুরী গল্প শুরু করলে সহজে থামেন না। শুরুর আগেই হুমায়ুন আজাদ বলেন, কাহিনিটা কি খুব দীর্ঘ? দুজনের ছোটখাটো খুনসুটিও লাগে কোনো কোনো দিন। হুমায়ূন ভাই আর আমি চুপচাপ বসে থাকি।

    হুমায়ুন ভাই চেয়ারে বসেন দু পা তুলে, আসনপিঁড়ি করে। সেই ভঙ্গিতে বসে মাথা নিচু করে চুপচাপ সিগ্রেট টানেন। তখন কথা বলতেন খুব কম। শুনতেন বেশি। আর আমি শুধু তাঁকে খেয়াল করি। পরিচয়ের দিন থেকে ব্যক্তি, মানুষটাকেও তাঁর লেখার মতোই নেশা ধরানো মনে হচ্ছিল আমার। আস্তে-ধীরে হুমায়ূন নেশায় আচ্ছন্ন হচ্ছিলাম আমি।

    এ সময় হুমায়ূন ভাইয়ের একবার জন্ডিস হলো। পেঁপে নিয়ে আমি তাকে দেখতে গেছি। জন্ডিসভরা শরীর নিয়েও এমন মজাদার আড্ডা দিলেন তিনি, আমি হতভম্ব। সেদিন প্রথম টের পেলাম, হুমায়ূন আহমেদ পুরনো হতে জানেন না, তিনি প্রতিদিন নতুন। এমন ঠাট্টাপ্রিয় মানুষ আমি আর দেখি নি। অবলীলাক্রমে নিজেকে নিয়েও ভয়ানক ঠাট্টা করতে পারেন। আর অসম্ভব মেধাবী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, আগাগোড়া যুক্তিবাদী, সম্পূর্ণ স্মার্ট এবং ভয়াবহ শিক্ষিত। জানেন না এমন বিষয় পৃথিবীতে কম আছে। অদ্ভুত সব বিষয়ে আসক্তি। হিপনোটিজম শেখার জন্য আমেরিকা থেকে দুবার নোবেল প্রাইজ পাওয়া প্রফেসর ফাইনম্যানের বই আনলেন। অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে হিপনোটাইজ করে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ভূত, বিজ্ঞান, ধর্ম, ম্যাজিক, মানুষ আর মানুষের মনোজগৎ, সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, দাবা আর শিশু—এসব একত্রে ককটেল করলে যে জিনিসটা দাঁড়ায়, সেই জিনিসের নাম হুমায়ূন আহমেদ।

    প্ৰচণ্ড শীতে নুহাশপল্লীতে শুটিং করতে এসেছে একটি গ্ৰাম্য মেয়ে। মা গেছে মেয়েটির জন্য শীতবস্ত্ৰ জোগাড় করতে। পাতলা জামা পরা মেয়েটি ঠকঠক করে শীতে কাঁপছে। আগুন জ্বেলে তার চারপাশে লোকজন নিয়ে বসে আছেন হুমায়ুন ভাই। মেয়েটিকে খেয়াল করছেন। আগুনের পাশে আসতে মেয়েটি একটু লজ্জা পাচ্ছে, কারণ এখানকার কাউকে সে চেনে না। এর পরও শীত সহ্য করতে না পেরে আস্তে ধীরে আগুনের পাশে এসে দাঁড়ায়। সেই তাপেও তার শীত মানে না। হুমায়ূন ভাই উঠে গিয়ে নিজের কম্বল এনে দেন মেয়েটিকে। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তুমি চেন আমাকে? মেয়েটি তাঁর মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে বলে, মনে হয় আপনে হুমায়ূন আহমেদ। আপনেরে আমি চিনছি।

    যখন মাথায় যা আসে। সেই কাজ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই হুমায়ূন ভাইয়ের। মনে হলো নুহাশপল্লীতে একটা অ্যাকুরিয়াম থাকা দরকার। বিশাল এক অ্যাকুরিয়াম বসালেন সুইমিংপুলের পাশে। বিদেশি নানা ধরনের মাছের সঙ্গে দুটো দেশি সরপুটি, কয়েকটা ট্যাংড়া, ছোট সাইজের গোটা চারেক ফলি ছাড়লেন। আমরা গেছি নুহাশপল্লীতে, আর্কেটক্ট করিম ভাই গেছেন সস্ত্রীক, তাঁর বছর দু-আড়াইয়ের ছেলে রিয়াদকে নিয়ে অ্যাকুরিয়ামের পাশে গিয়ে বসে রইলেন হুমায়ূন ভাই। রিশাদ তাঁকে ডাকে হাদা, তিনিও রিশাদকে ডাকেন হাদা। দুজনে এমন ভঙ্গিতে গল্প জুড়ে দিল, দেখে করিম ভাই বললেন, দুটো শিশু গল্প করছে।

    অনেক বছর আগের কথা! অবসর এবং প্রতীক প্ৰকাশনীর মালিক আলমগীর রহমান তখন গেণ্ডারিয়ার বাড়িতে থাকেন। তাঁর একমাত্র পুত্র প্রতীকের জন্মদিন। বেশ বড় আয়োজন করেছেন আলমগীর ভাই। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হলেন হুমায়ুন ভাই, মুখে ভয়ংকর এক মুখোশ।

    মাজহারের বছর দেড়েকের ছেলে অমিয় যখন-তখন এসে ওঠে হুমায়ুন ভাইয়ের কোলে। অমিয়র একমাত্র নেশা মোবাইল ফোন। মোবাইল দেখলে সে ধরবেই। যার যত মোবাইল হাতের কাছে পান, শিশুর ভঙ্গিতে অমিয়কে তা ধরিয়ে দেন হুমায়ূন ভাই।

    শিশুদের সঙ্গে মেশার সময় তিনি শিশু হয়ে যান। এত মনোযোগ দেন শিশুদের দিকে, ভাবা যায় না। আর অসম্ভব আড্ডাপ্রিয়। একা বলতে গেলে চলতেই পারেন। না, দলবল লাগে। কেউ দাওয়াত করলেও একা যান না। দলবল নিয়ে যাওয়া যাবে না। এমন জায়গায় যাবেনই না। ঠান্ডা খাবার খেতে পারেন না, মাকড়সায় প্রচণ্ড ভয়, হঠাৎ করে রেগে যান। রাগ থাকে। অল্প কিছুক্ষণ। কিন্তু সেই অল্প কিছুক্ষণের ঠেলা সামলাতে জান বেরিয়ে যায়। যার ওপর রাগেন তার সর্বোচ্চ শান্তি কান ধরে উঠবস।

    দুটো মাত্র গাল ব্যবহার করেন রাগের সময়, ফাজিল কোথাকার আর খেতাপুড়ি। কৃপণতা বলতে গেলে কিছু নেই। দুই হাতে খরচা করেন। ভালো রান্না না হলে খেতে পারেন না। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো খাদ্যরসিক। খান অল্প কিন্তু আয়োজন রাজকীয়। হঠাৎ করে চার হাজার টাকা দিয়ে একটা চিতল মাছ কিনে ফেললেন। ভাবিকে দিয়ে রান্না করিয়ে প্ৰিয়বন্ধুদের ডাকলেন। যত প্রিয় মানুষই হোক, তার বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে যদি দেখেন রান্না খারাপ হয়েছে, মুখের ওপর বলে দেবেন। ভণিতা বলে কোনো কিছু হুমায়ূন ভাইয়ের নেই। সত্য কথা তিনি বলবেনই, কে কী ভাবল তোয়াক্কা করেন না। আপাতদৃষ্টিতে রুক্ষ, কাঠখোট্টা এবং প্রচণ্ড অহংকারী।

    নুহাশের আগে তাঁর একটি ছেলে হয়ে মারা যায়, শুনে আমি গেছি দেখা করতে। তখন শহীদুল্লাহ্ হলের হাউস টিউটর তিনি। আমাকে দেখে খুবই বিরক্ত হয়ে বললেন, চলে যাও, আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু চোখে পানি ছিল না তাঁর। অথচ নিজের লেখা পড়ে আমি তাকে কাঁদতে দেখেছি। নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়তে পড়তে চোখ মুছছেন, কান্নায় বুজে আসছে গলা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোপনে – ইমদাদুল হক মিলন
    Next Article এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.