Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প66 Mins Read0

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – ০১

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    [প্রেমেন্দ্র মিত্রঃ জন্ম ১৯০৪; মৃত্যু ১৯৮৮। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্রকার । ১৪-টি চলচ্চিত্রের পরিচালক, চিত্রনাট্য লিখেছেন অজস্র। ‘সাগর থেকে ফেরা’ কাব্যগ্রন্থ লিখে পান আকাদেমি পুরস্কার ও রবীন্দ্রপুরস্কার। বাংলা ভাষায় সায়েন্স ফিকশনকে সাহিত্যের মর্যাদা তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন ঘনাদাকে সৃষ্টি করে। গোয়েন্দা সাহিত্যর ওঁর অবদান পরাশর বর্মা। পরাশর বর্মার বই মূলতঃ বড়দের জন্যে লেখা, তাই কিশোরদের গোয়েন্দাকাহিনী সংগ্রহে পরাশর বর্মাকে চোখে পড়ে না। ‘প্রেমের প্রান্তে পরাশর’ উপন্যাসটি এ. মুখার্জী এণ্ড কোং প্রকাশিত ‘পরাশর সমগ্র’ থেকে নেওয়া। এটি এখানে ছাপানোর অনুমতি দিয়ে তার কর্ণধার রঞ্জন সেনগুপ্ত আমাদের বাধিত করেছেন।]

    এক

    “চন্দ্রগোমীর ব্যাকরণের কোনো খণ্ডিত পুঁথি কি এখন পাওয়া যায়?
    বৈয়াকরণ শাকটায়ন যে চান্দ্র ব্যাকরণের কাছে ঋণী, সে-ব্যাকরণ কি চন্দ্রগোমীরই রচিত ‘সংজ্ঞক ব্যাকরণ’
    চদ্রগোমী কি সত্যিই নাগার্জুন শূন্যবাদের অনুগামী চন্দ্রকীর্তির শিষ্য?”

    ওপরে যা লেখা হয়েছে তা পড়তে পড়তে মাথা যদি কারুর একটু গুলিয়ে যায় তাহলে তাকে দোষ দেবার কিছু নেই। গোয়েন্দা গল্প পড়তে বসে ভুল করে পুরাতত্ত্ব গবেষণার কোনো সন্দর্ভের পাতা খুলে ফেলা হয়েছে বলে যদি সন্দেহ হয়, সেটাও সহজেই মার্জনীয়। ওরকম সন্দেহ হওয়া নিতান্ত স্বাভাবিক। আমারও হয়েছিল। আর কাগজে ছাপার অক্ষরে ঐ কথাগুলি পাঠ করে নয়, ভারতবর্ষের সর্বজনবিদিত বিখ্যাত এক আচার্য পণ্ডিতের পাঠাগারে মেঝের ওপর পাতা বিচিত্র নকসার চৈনিক মাদুরে বসে নিজের কানে পরাশর বর্মা আর আমি ছাড়া ও-কক্ষের তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে প্রশ্নোত্তরে ঐ জাতীয় আলোচনা শুনে।

    আচার্যদেব তখনও এ ঘরে আসেননি। তাঁরই অপেক্ষায় আমরা তিনজন তাঁর পাঠাগারে বসে আছি। কিন্তু আমি ঠিক আচার্যদেবের অপেক্ষায় বসে আছি বললে সত্যের একান্ত অপলাপ হবে। আমি তাঁর জন্যে এখানে অপেক্ষা করে নেই, তাঁর দেখা পাওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নিয়ে এখানে আসিও নি।। তবু কেন যে এই সমাবেশে আমি উপস্থিত তা আশা করি ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে না। হ্যাঁ, পরাশরের জন্যেই আমার এই বিড়ম্বনা। সে নাছোড়বান্দা হয়ে একরকম জোরজুলুম করে আমায় ধরে নিয়ে এসেছে। আসবার আগে অবশ্য প্রলোভন দেখিয়েছে অনেক। তার সঙ্গে গেলে নাকি এমন কিছু জানতে শুনতে পারব যা আমার সমস্ত অভিজ্ঞতার বাইরে। যেন সে আশ্বাসের গ্যারান্টি হিসেবেই আমার পকেটে একটা ছোট খাম গুঁজে দিয়ে বলেছে, – এখন থাক। সময় পেলে আজ রাত্রে পড়ে দেখো। তবে এসব ভুজুং ভাজুং-এ অনায়াসে আমি বশ হতে পারতাম, কিন্তু হাতের একটা জিনিষ দেখে আমার টনক গোড়াতেই নড়ে গেছে। সন্ত্রস্ত হয়ে তার সব সাধাসাধি আর লোভ দেখানো তাই ঠেকাতে চেষ্টা করেছি যথাসাধ্য।

    পরাশরের হাতে যে জিনিষটি দেখেছিলাম সেটি একটি বই। ছোটখাটো চটি পকেট বই নয়। রঙিন মন-মাতানো ছবির দেশি কি বিদেশী উপন্যাস টুপন্যাসও নয়। দাঁতভাঙানামের ভাষাতত্ত্বের একটা থান ইঁটের আকারের বই। পরাশরের হাতে কবিতার বইটা তবু কিছুটা গা সোয়া হয়ে গেছে, কিন্তু ভাষাতত্ত্বের কেতাবটা গোড়াতেই রীতিমত সন্দিগ্ধ করে তুলেছে। পরাশর যেখানকার একেবারে সৃষ্টিছাড়া যে অভিজ্ঞতার লোভ দেখাচ্ছে ঐ ভাষাতত্ত্বের সঙ্গে তার কোন সংস্রব থাকলে আমার আর এগিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। কিন্তু কে কার কথা শোনে। পরাশরের অনুরোধ কাটাবার সমস্ত চেষ্টা যে বিফল হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

    শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে যাঁর বাড়িতে এসে একাধারে তাঁর পাঠাগার ও বসবার ঘরে মেঝের মূল্যবান মাদুরের আসনে বসে আছি, পুরাতত্ত্ব ও ভাষাতত্ত্বের অদ্বিতীয় পণ্ডিত হিসাবে তাঁর খ্যাতি ভারতের বাইরে সারা বিশ্বে ছড়ানো। নাম না করলেও অনেকেই হয়ত বুঝতে পারবেন বলে নামটা আর করলাম না। আচার্যদেবের পাঠাগারে বসে আছি খুব কমক্ষণ নয়। পরাশরের তার পণ্ডিতি আলোচনায় মগ্ন হয়ে সময়ের খেয়াল হয়ত নেই, আমি কিন্তু ঘরে ঢোকবার পর থেকে দরজার মাথায় দেয়াল ঘড়িটার ওপর আগাগোড়াই নজর রেখেছি। তাতে এক মিনিট দু মিনিট করে পুরো সাতাশ মিনিট এ পর্যন্ত কেটেছে। শুধু ঘড়ির কাঁটার দিকে অবশ্য নয়, পরাশরের সঙ্গে যিনি এইসব দাঁতভাঙা আলোচনা চালাচ্ছেন ঘরের সেই তৃতীয় ব্যক্তিটির দিকেও মনোযোগ না দিয়ে পারি নি। মনোযোগ দেবার মতই ব্যক্তি অবশ্য। শুধু মনোযোগ দেবারই নয়, বেশ একটু বিস্মিত কৌতূহল অনুভব করবারও। ব্যক্তিটি পুরুষ নয় নারী, এবং বাঙালী বা ভারতীয় নয়, বিদেশী যুবতী।

    বিদেশ বলতে কোন দেশের তা অবশ্য তাঁকে দেখে বলা সম্ভব নয়। তাঁর পোষাকটা আর একটু বেখাপ্পা হলে তাঁকে বিশ্ব নাগরিক হিপি ভাবা যেত। কিন্তু দেশী-বিদেশীর অদ্ভুত সংমিশ্রণ হলেও সে পোষাকে সযত্ন অযত্নের ছাপ নেই। একটু যেন জীর্ণ পুরোনো মনে হলেও নিম্নাঙ্গের ঢলঢলে সায়ার মত আবরণ আর উর্দ্ধাঙ্গের বেদিয়ানী কোর্তার ধরণের পোষাক দুটি নোংরা ময়না নয় বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। মাঠায় চুড়ো বাঁধা সাদাটে যাকে বলে প্ল্যাটিনাম চুলে পারিপাট্য না থাকলেও একটু ছিরি ছাঁদ আছে আর প্রসাধন বিহীন মুখখানাও শ্রীহীন নয়। কোন দিক দিয়েই নিখুঁত না হলেও গড়ন পেটন সবশুদ্ধ জড়িয়ে যত ক্ষীণই হোক কেমন একটু মোহিনীভাবই মেয়েটির আছে বলে মনে হয়।
    এ সব দিযে আর যাই হোক তাঁর জাতি কুলশীল ত’ জানা যায় না। পোষাক চেহারা দিয়ে যা সম্ভব নয় তার ভাষা দিয়ে তা বুঝব তারও উপায় নেই। বিদেশী মেয়েটি ইউরোপীয় কোনো ভাষায় নয়, কথা বলছে আমাদেরই বাংলা ভাষায়। এবং বলছে একেবারেই স্বচ্ছন্দে। উচ্চারণে সামান্য একটু আধটু আড়ষ্টতা আর টান অবশ্য আছে। কিন্তু তা থেকে তার মাতৃভাষা অনুমান করবার মত ক্ষমতা আমার অন্তত নেই। দেয়াল ঘড়িতে সাতাশ মিনিট আধ ঘণ্টায় গিয়ে পৌঁছেছে ইতিমধ্যে। আচার্যদেব আজ আর কখন আসবেন। তার এত দেরী করার কারণ কি।

    ঘরের বাইরের করিডর দিয়ে যে দু’ একজন পরিচারককে মাঝে মাঝে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে তাদের কাউকে জিজ্ঞেস করাটা এখন অন্যায় হবে না। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কে? আমার পক্ষে সেটা কি শোভন হবে না। আর পরাশর যেরকম তন্ময় হয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তাতে আচার্যদেবের আসতে দেরী হওয়ার জন্যে কোনো অস্থিরতা তার আছে বলে মনে হয় না। হঠাৎ কথাটা মাথার মধ্যে একটা ঝিলিক খেলে গেল। পরাশরের হঠাৎ পুরাতত্ত্ব নিয়ে এত মত্ত হবার সহজ ব্যাখ্যাই কি আমার সামনে মূর্তিমতী হয়ে বসে আছে? কিন্তু কে ইনি? এঁর সঙ্গে পরাশরের আলাপ পরিচয় হল কোথায়? আর এতদিন বাদে হৃদয় ঘটিত ব্যাপার যদি পরাশরের একটা ঘটেই থাকে তার জন্যে সৃষ্টিছাড়া অভিজ্ঞতার লোভ দেখিয়ে আমায় সঙ্গে আনবার দরকারটা কি? আমায় কি সাক্ষী হিসেবে রাখা? কিসের সাক্ষী?

    এক একজন মানুষ অবশ্য একটু বেশী মাত্রায় যাকে বলে লোক দেখানো স্বভাবের থাকে। প্রেমের জাগরণের মত নিভৃত গভীর ব্যাপারও তারা কাউকে না জনিয়ে না শুনিয়ে সুখ পায় না। কিন্তু পরাশর অমন সস্তা একজিবিশনিষ্ট ত’ কোনো কালেই নয়। বিশেষত প্রণয় ঘটিত ব্যাপার এতকাল বাদে তার জীবনে যদি ঘটেই থাকে সেটাকে সে পারতপক্ষে গোপন রাখতেই চাইবে। তাহলে কিছু না জানিয়ে শুনিয়ে আমার দেখবার সুযোগ দিয়ে আমার অনুমোদনটা নেওয়াই কি তার উদ্দেশ্য? সেটা হওয়া অসম্ভব নয়। পরাশর নেহাৎ ছেলে ছোকরা ত আর নয়। প্রথম যৌবন পার হতেই চলেছে বলা যায়। এ বয়সে এরকম একটা কিছু ঘটলে একটু সাবধানে পা বাড়ানোই ভালো। এর ওপর মেয়েটি যখন বিদেশী তখন নিজের পছন্দ অপছন্দ ছাড়া পাকা বুদ্ধির দারুর সমর্থন চাওয়াটা পরাশরের পক্ষে উচিতই হয়েছে।

    নিজের দায়িত্বটা বুঝে মেয়েটিকে বেশ একটু খুঁটিয়েই এবার লক্ষ করলাম। ফিল্মে নামবার মত সুন্দরী না হলেও একটা চটক যে চেহারায় আছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। চটকটা একটু নয়, আছে বেশ বেশী মাত্রাতেই। আর সেটা শুধু মুখ চোখের নয় সমস্ত শরীরের। পোষাকের বর্ণনা আগেই করেছি। সেই কিছুটা ইরাণী বেদিয়ানীদের ধরণের গায়ের ঝোলাকুর্তা আর তার তলায় সায়া আর লুঙ্গির মিশ্রণের জেল্লাহীন বিনা বাহারের বেশবাসের ভেতর দিয়েই দেহ সৌষ্ঠবের মাদকতা কেমন করে ফুটে বেরুচ্ছে তা বলা শক্ত। হয়ত মেঝের ওপর বসার অনভ্যস্ত ভঙ্গির দরুণ দেহে প্রচ্ছন্ন রেখার এখানে ওখানে একটু ইঙ্গিতই তার জন্যে যথেষ্ট।

    এ রকম মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া পরাশরের পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর শুধু চেহারায় চটকই নয়। মেয়েটির মুখ চোখে বুদ্ধির দীপ্তিটাও বেশ স্পষ্ট। তার কাছে যা সম্পূর্ণ বেদেশী সেই ভাষায় বেশ একটু কষ্ট করে কথা বলতে হলেও অবাধে এতক্ষণ ধরে সে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে সেইটেই ত আশ্চর্য। কথা যা বলছে ভাষাটা বাংলা বলেও তা আমার কাছে অব্শ্য পুরোপুরি গ্রীক। সব কথায় কানই দিচ্ছি না। মাঝে মাঝে দু-একটা যা কানে আটকে যাচ্ছে সেই কটিই মাথা ঘুরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট। যেমন পরাশরের কি একটা প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটিকে বলতে শুনেছি, “না আমি আচার্যদেবের কাছে ‘কাশিকা বৃত্তি’ সম্বন্ধে কয়েকটা কথা জানতে এসেছি।”এ কথার উত্তরে পরাশর যা বলেছে তাতেও অবশ্য আমার চক্ষু স্থির।
    পরাশর বলেছে, “কাশিকাবৃত্তি ত বামন আর জয়াদিত্য দুজনের এক সঙ্গে লেখা।”
    মেয়েটি মাথা নেড়ে সায় দিয়েছে।
    পরাশর তাতে আবার বলেছে, “কিন্তু কাশিকা বৃত্তিতে না বলে অন্কে কিছু চুরি করে দুই পণ্ডিত চ্দ্রগোমী কি চান্ত্র ব্যাকরণের নাম পর্যন্ত করেন নি।…”
    এতখানি শোনবার পর আমার কনের ফুটো আপনা থেকেই যেন বুজে গেছে।

    মাথাটা গুলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে একবার এমন সন্দেহও জেগেছে যে ব্যাপারটা আগাগোড়া আমায় বোকা বানাবার ফিকির না ত? দুজনে মিলে আগে থাকতে ষড় করে রেখে এই সব হিংটিং ছট আউড়ে আমায় হকচকিয়ে দেওয়াই এদের মজা।এ সন্দেহটা অবশ্য মনের মধ্য উঠতে না উঠতেই সকৌতুকে উড়িয়ে দিয়েছি। পরাশর ও মেয়েটি বৌদ্ধ যুগের গুরু-গম্ভীর বিষয় নিয়েই আলোচনা করছে সন্দেহ নেই। কিন্তু পরাশর হঠাৎ এ বিষয়ে কবে থেকে উৎসাহী হয়ে উঠল? এ মেয়েটির সঙ্গে তার কি আগে থাকতেই আলাপ হয়েছিল? সে রকম কোনো লক্ষণ কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। দুজন দাঁত ভাঙ্গা তত্ত্ব নিয়ে আলাপ চালাচ্ছে কিন্তু কেউ কাউকে একবার নাম বা পদবী ধরেও সম্বোধন করে নি। তাতে দুজনেই দুজনের অজানা বলেই ধরে নিতে হয়। কিন্তু সে রকম হলে শিষ্টাচার মত আলাপের আগে পরাশরের পরিচয়টা দেওয়া নেওয়াই উচিত ছিল। তার বদলে খানিকটা বসে থাকবার পর কোন রকম ভূমিকা না করেই দুজন কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। কথা আগে বলেছে অবশ্য মেয়েটি। আমাদের আগে থাকতে সেই ঘরের মেঝেয় বসেছিল। মেয়েতি আগে কথা বলতে পরাশরের পক্ষে সুবিধে হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু মেয়েতি অচেনা অজানা একজনের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলল কি করে? এটা কি তার আধা হিপি হওয়ার লাইসেন্স! না আচার্যদেবের পাঠাগারের আবহাওয়ারই ওটা গুণ? এর ভেতর এসে বসলে ও সব ভুয়ো আদব-কায়দার কোনো মানে থাকে না। পরাশর আর মেয়েটির সোজাসুজি আলাপ শুরু করতে তাই বাধেনি।

    মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও সে যে পরাশরের অচেনা নয় তা অবশ্য কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই বোঝ শক্ত হয় নি। পরাশর কোথাও না কোথাও মেয়েটিকে দেখেছে আর তারপর তার সঙ্গে আলাপ করবার সুযোগ খুঁজে আচার্যদেবের বাড়িতে আজ এসে হাজির হয়েছে। আগে থাকতে মেয়েটিকে না চিনলে আমাকেও আজ সঙ্গে করে ধরে আনার মান থাকত না। নিজের পছন্দটা পরাশর আমাকে দিয়ে একটু যাচাই করাতেই চায়।

    তা করবার জন্যে তা তোড়জোড়টা দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা নেহাৎ ভাসাভাসা সাময়িক কিছু নয়। পঞ্চশরের তীরটা আচমকা একটু গভীরভাবেই বিঁধেছে। একটু দেখা পাওয়া যায় আলাপ করবার সুযোগের জন্যে তাকে আমায় নিয়ে পণ্ডিত শিরোমণি এই আচার্যদেবের বাড়িতে ছুটে আসতে হয়েছে তাই। পরাশরের হঠাৎ পুরাতত্ত্ব নিয়ে মেতে ওঠার পেছনে কি আছে এখন আর বোঝা শক্ত নয়। এখানে এসে আর কিছু না হোক কাছাকাছি বসে একটু কথা বলার সৌভাগ্য পরাশরের হয়েছে। তারপরে অবশ্য অনেক ধাপ বাকি। পরস্পরের নাম ধাম জানা থেকে, দেখা শোনার সুযোগ করে নেওয়া ইত্যাদি ধাপগুলো ত আগে না পেরুলে নয়। তাতে আমার কাছে কোনো সাহায্যের আশা কি পরাশর করে? করা তার পক্ষে স্বাভাবিক কিন্তু মেয়েটির নাম পর্যন্ত না জেনে কি-ই বা করতে পারি আমি?

    মেয়েটি এতক্ষণের মধ্যে বেশ কয়েকবার আমায় লক্ষ অবশ্য করেছে। আমার আগাগোড়া চুপ কে থাকে দেখে খুব একটা সম্ভ্রম মেশানো ধারণা নিশ্চয় আমার সম্বন্ধে হয় নি। তা না হোক। এতক্ষণের ধারণাটা একটু শুধরে দেবার ব্যবস্থা এবার করলাম। সেই সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় যাতে জানা যেতে পারে সে রকম একটা চেষ্টাও। ঘরের দেয়াল ঘড়িটার দিকে এ পর্যন্ত বহুবারই তাকিয়েছি। এখন তকানোটা সরব করে তুলে বেশ অধৈর্যের সঙ্গে নিজেকেই যেন বললাম, “দশটা ত বাজতে চলল। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করা যায়?

    পরাশর ও মেয়েটি তাদের আলোচনা থামিয়ে তখন আমার দিকে তাকিয়েছে। পরাশরের দিকে সোজা তাকাইনি। তার চোখে হয়ত একটু ভ্রুকুটি থাকতে পারে। কিন্তু মেয়েটির মুখে ইষৎ হাসির আভাস। সেইটেকেই সহানুভূতি বলে ধরে নিয়ে সোজাসুজি বললাম,, “আমরা ত প্রায় চল্লিশ মিনিট এসেছি। আপনি ত তারো আগে এসেছেন। অপেক্ষা করে আছেন কতক্ষণ!”
    আগের অধৈর্য প্রকাশটা বাংলায় করে থাকলেও এবার ইচ্ছা ক্রেই ইংরেজি ব্যবহার করেছি। কথাগুলো সোজা। প্রশ্নটার মধ্যেও জটিল কিছু নেই। কিন্তু মেয়েটি তাতেই অমন হতভম্ব হয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকবে ভাবতে পারিনি। আমার কথাটা হয়ত একটু ভুল বুঝেছে ভেবে বেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে মাফ চাইবার ভঙ্গিতে বললাম, “আমি শুধু আপনি আমাদের চেয়েও আরো কতক্ষণ অপেক্ষা করছেন তাই জানতে চেয়েছি।”
    মেয়েটির মুখ তাতেও কিন্তু যেমন বিমূঢ় বিব্রত ছিল তেমনিই রইল। সেই সঙ্গে একটু কেমন যেন অসহায় ও করুণ।
    কি এমন অন্যায় অশোভন কথা বলে ফেলেছি কিছুই না বুঝতে পেরে, এবার নিজেই রীতিমত ঘাবড়ে গিয়ে সাহায্যের জন্যে পরাশরের দিকে ফিরে তার শরণ নিতে যচ্ছিলাম, হঠাৎ কথায় চমকে তার দিকে তাকালাম।
    মেয়েটি বেশ একটু সঙ্কোচের সঙ্গে পরিষ্কার বাংলায় তখন বলছে, “অনুগ্রহ করে আমায মাপ করবেন। আমি ঐ ইংরেজিটা জানি না।”
    ইংরেজি জানেন না! প্রথম বিস্ময়ে কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবার পরই নিজের মূর্খতার লজ্জা পেলাম। বিদেশী ইউরোপীয় মেয়ে হলেই ইংরেজি অবশ্যই জানবে বলে ধরে নেওয়াটা যে কতখানি নির্বুদ্ধিতা তা তখন ভালো ভাবেই বুঝে মর্জনা চাইতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার সুযোগ মিলল না।
    মেয়েটি তখন নিজেই কুণ্ঠিতভাবে কৈফিয়ত দিয়ে চলেছে, “দেখুন অমি আর্জেণ্টিনার মেযে। স্প্যানিশের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, এমন কি ইতালিয়ানও একটু আধটু বলতে পারলেও ইংরেজিটা আর শেখা হয় নি। আপনাদের বাংলা ভাষাটা অবশ্য আমি আমার প্রাচ্য পুরাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্যে সংস্কৃত পালির সঙ্গে সামান্য একটু শিখেছি। আপনি ইংরেজিতে কি বললেন বুঝতে না পেরে ওরকম চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই তাতে আমায় অসভ্য ভেবেছেন। আমার সে অনিচ্ছাকৃত অভদ্রতার জন্যে মাপ চাইছি আবার।”
    অনিচ্ছাকৃত আর অভদ্রতা এই দুটি শব্দে সামান্য একটু হোঁচোট খেলেও মেয়েটি গড়গড় করে এতখানি বাংলা বলে যাওয়ায় তখন আমি অবাক আর অভিভূত।
    যে পরাশর এতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ নীরব শ্রোতা হয়েই ছিল সে এবার একটু গম্ভীর ভাবেই মন্তব্য করলে, “শুনুন,, মাপ চাইলে আমার বন্ধুরই চাওয়া উচিত। পৃথিবীটা যে ইংরেজদের খাস তালুক নয় এ খবরটা এখনও ও জানে না।”
    মেয়েটির সঙ্গে আমিও এ কথায় হাসলাম।
    কিন্তু সেই সঙ্গে পরাশরের ওপর একটু রাগও হল। এমন একটা সুযোগ পেয়েও নষ্ট করতে হয়। আমাকে খোঁচা দেবার ছুতোয় আমার নামটা বলে দিলে ক্ষতি কি ছিল? শেষ কথাটায় আমার বন্ধু জানেনা-র মধ্যে কৃত্তিবাস নামটা অনায়াসে ঢুকিয়ে দেওয়া যেত, আর তাহলে কথার পিঠে কথা এসে মেয়েটির নাম ধাম জানার একটা সুবিধে কি হত না?
    এত কাণ্ডের পর নামটাই যে অজানা হয়ে রইল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
    Next Article ওডিসি – হোমার

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }