Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরো একটুখানি বিজ্ঞান – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প195 Mins Read0
    ⤷

    ০১. বিজ্ঞান এবং অপ-বিজ্ঞান

    আরো একটুখানি বিজ্ঞান – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ভূমিকা

    আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না যে আমি ছয় বছর থেকে “কালি ও কলম” এর প্রতি সংখ্যায় বিজ্ঞানের উপর নিয়মিতভাবে লিখে এসেছি। প্রথম তিন বছরের পর লেখাগুলো সংকলিত করে প্রকাশিত হয়েছিল “একটুখানি বিজ্ঞান”। বইটির জন্যে ছেলে বুড়ো অনেকেরই একধরণের মমতা জন্মেছিল তাই পরের তিন বৎসরের লেখাগুলো সংকলিত করে “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” প্রকাশ করার সাহস দেখাচ্ছি। এই লেখাগুলো পড়ে একজন মানুষেরও যদি বিজ্ঞানের রহস্যময় জগত নিয়ে একটু কৌতূহল হয় আমি মনে করি আমার পরিশ্রমটুকু সার্থক হয়েছে।

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    ২৪ জানুয়ারি ২০১০

    .

    ০১. বিজ্ঞান এবং অপ-বিজ্ঞান

    কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা ছোট ছেলে এসেছে, সে মুখ কাচুমাচু করে বলল তার মাথায় একটা বৈজ্ঞানিক আইডিয়া এসেছে সেটা সে আমাকে বলতে চায়। ছেলেটি মুখ খোলার আগেই আমি বুঝে গেলাম “আইডিয়া”টি কী–কারণ আমি যখন তার বয়সী ছিলাম তখন আমার মাথাতেও এরকম “বৈজ্ঞানিক আইডিয়া” এসেছিল, তবে আমি সাহস করে কারো কাছে যেতে পারি নি। সে কী বলবে জানার পরও আমি তাকে পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে দিলাম, একটা জেনারেটর আর একটা মোটর ব্যবহার করে সে অফুরন্ত শক্তি বের করে আনবে। জেনারেটর ঘুরাৰে মোটরকে, মোটর ঘুরাবে জেনারেটরকে এভাবে চলতেই থাকবে।

    পদার্থবিজ্ঞান পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে শক্তিকে ব্যবহার করলেই তার খানিকটা অপচয় হয়–তাই যেটুকু শক্তি দেওয়া হয় তার থেকে অনেক কম শক্তি ফেরত পাওয়া যায়, সেজন্যে কখনোই “অফুরন্ত শক্তি” বা “চির ঘূর্ণায়মান” যন্ত্র তৈরি করা যায় না। আমি ছোট ছেলেটাকে তার মতো করে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলাম, সে ব্যাপারটা বুঝে খুশি হয়ে ফিরে গেল!

    মজার ব্যাপার হচ্ছে বড়রা ব্যাপারটা বুঝতে চায় না একবার একজন বয়স্ক মানুষ এসে আমাকে একই ধরনের একটা “চির ঘূর্ণায়মান” যন্ত্রের কথা বলল। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম কেন এটা কাজ করবে না কিন্তু সে বুঝতে রাজি হলো না! তার ধারণা আমি একটু সাহায্য করলেই সে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়ে কোটি কোটি টাকা কামাই করতে থাকবে–আমি হিংসা করে তাকে নিরুৎসাহিত করছি! বাধ্য হয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কী তার একটা যন্ত্রের মডেল তৈরি করতে পারবে? মানুষটি বলল অবশ্যই পারবে, সেটা তৈরি করতে তার দরকার কয়েক ফিট পাস্টিকের নল, দুটো পানির বোতল আর কিছু পানি। আমি তাকে বললাম সে যদি তার মডেলটা তৈরি করে আনতে পারে তাহলে আমি তাকে একটা নোবেল পুরস্কার, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার, তার সাথে বিবিসি, সি. এন. এন.-এ সাক্ষাৎকারের সবকিছু ব্যবস্থা করে দেব। মানুষটি উত্তেজিত ভঙ্গিতে তখন তখনই বের হয়ে গেল–দুই ঘণ্টার মাঝে সে মডেলটা তৈরি করে এনে আমাকে দেখাবে। দুই ঘণ্টার পর আরো ছয় বছর পার হয়ে গেছে সেই মানুষটি তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উপযোগী যন্ত্রের মডেল নিয়ে আর ফিরে আসেন নি। কী কী করা যায় না সেটা জানা থাকা ভালো তাহলে সেটা করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় না। (কোনো কোণকে সমান তিন ভাগে ভাগ করা যায় না, পাঁচ ঘাত সমীকরণ সমাধান করা যায় না, ঠিক সে রকম শক্তি না দিয়ে শক্তি ফিরে পাওয়া যায় না।)।

    এই ব্যাপারগুলো ঘটে বিজ্ঞান না জানার কারণে আমাদের খবরের কাগজ মাঝে মাঝে দায়িত্বহীন কাজ করে বসে থাকে। বিজ্ঞান জানা নেই তাই আজগুবি কিছু একটা দাবি করে কোনো মানুষ একটা ঘোষণা দিয়ে বসে থাকে, খবরের কাগজ সেগুলো ফলাও করে ছাপে, এই দেশে থাকার কারণে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে তারা সরকারকে গালাগাল করে! কিন্তু সবারই জানা থাকতে হবে কোনো শক্তি না দিয়ে সে কখনো শক্তি ফিরে পাবে না এবং বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ঘোষণা দিতে হয় বিজ্ঞানের জার্নালে, কখনোই সেটা খবরের কাগজে দিতে হয় না!

    ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে একেবারে এই বর্তমানকাল পর্যন্ত অনেকেই কোনো শক্তি না দিয়েই শক্তি পাবার জন্যে যন্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করে এসেছেন। শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ডায়েরিতেও এরকম যন্ত্রের ছবি রয়েছে–এই যন্ত্রগুলোর মাঝে একটা মিল রয়েছে। কেউ এগুলো তৈরি করতে পারে না, ড্রয়িং হিসেবেই থেকে যায়।

    “চির ঘূর্ণায়মান” অফুরন্ত শক্তির ইঞ্জিনের মডেল যে একেবারেই তৈরি হয় নি তা নয়। 1813 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্লস রেডহেফার নামে একজন মানুষ একটা যন্ত্র তৈরি করেছিল যেটা নিজে থেকেই ঘুরত। অনেক মানুষ সেটা পয়সা খরচ করে দেখতে এসেছিল এবং রেডহেফার সাহেব রীতিমতো বড়লোক হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিছু সন্দেহপ্রবণ মানুষ কাঠের কিছু তক্তা খুলে দেখতে পেলেন একাধিক পুলি ব্যবহার করে ছাদে বসে একটা বুড়ো মানুষ সেটা দর্শকদের জন্যে ঘুরিয়ে যাচ্ছে।

    কেউ যেন মনে না করে পৃথিবীতে রেডহেফারের মতো মানুষ খুব কম ইতিহাস ঘাঁটলে এরকম অসংখ্য মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে। বৈজ্ঞানিক জুয়াচুরির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণটির নাম পিল্টডাউন মানব (Piltdown Man)। 1912 সালে চার্লস ডসন নামে একজন দাবি করলেন তিনি মানুষ আর বানরের মাঝখানে যোগসূত্রটি খুঁজে পেয়েছেন। সেই ফসিলের প্রাণীটির ছিল মানুষের মতো মস্তিষ্ক করোটি কিন্তু বানরের মতো চোয়াল । মিউজিয়ামে সেই ফসিলটি চল্লিশ বছর মানুষের কৌতূহলকে নিবৃত্ত করেছে–1953 সালে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন এটি পুরোপুরি জুয়াচুরি। বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল দিয়ে এটাকে তৈরি করা হয়েছে। মাথাটি মানুষের, চোয়ালটি ওরাংওটানের, দাঁতগুলো জলহস্তীর! এই জুয়াচুরিতে যারা অংশ নিয়েছিলেন তার মাঝে শার্লক হোমসের স্রষ্টা আর্থার কোনাল ডায়ালের নামও আছে।

    এরকম আরেকটি বৈজ্ঞানিক জয়াচুরির নাম হচ্ছে কার্ডিফের দানব। 1869 সালে জর্জ হাল একটা বিশাল জিপসাম খণ্ডের মাঝে প্রায় দশ ফুট লম্বা একটা মানুষের শরীর খোদাই করে সেটাকে প্রাচীন ফসিলের রূপ দিয়ে কার্ডিকে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখলেন। তারপর তার নিজের কিছু শ্রমিকদের ব্যবহার করে সেটাকা আবিষ্কার করার একটা নাটক করলেন। দশ ফুট লম্বা মানুষের পাথর হয়ে থাকা শরীর নিয়ে সারা পৃথিবীতে বিশাল হইচই। মানুষ টিকেট কিনে সেটা দেখতে যেত। শেষ পর্যন্ত নিজেদের মাঝে ঝগড়া হওয়ার কারণে ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যায়। কার্ডিফের দানবের সেই দেহটি এখনো সযত্নে রক্ষা করা আছে, মানুষজন এখনো সেটা দেখতে পায় তবে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের জন্যে নয় জুয়াচুরির একটি উদাহরণ দেখার জন্যে।

    এ ধরনের জুয়াচুরি যে শুধু অতীতে ঘটেছে তা নয়–অতি সাম্প্রতিককালেও সেটা ঘটেছে। একটা বিখ্যাত উদাহরণ হচ্ছে ফিলিপাইনের তাসাডে সম্প্রদায়। 1971 সালে ফিলিপাইনের একজন মন্ত্রী তাদের একটা দ্বীপে এই সম্প্রদায়কে খুঁজে পেলেন যারা সেই প্রস্তর যুগ থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে, সভ্য জগতের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা খুব শান্ত প্রকৃতির, গায়ে কোনো কাপড় নেই, উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে গেল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে তাদের উপর বিশাল নিবন্ধ ছাপা হলো।

    আসলে পুরোটাই হলো জুয়াচুরি। কিছু মানুষকে টাকা-পয়সা দিয়ে প্রস্তর যুগের মানুষ হিসেবে সাজিয়ে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের ধোঁকা দেয়া হয়েছিল! ফিলিপাইনের সেই মন্ত্রী তাসাডে সম্প্রদায় রক্ষা কমিটি করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে প্রেসিডেন্ট মার্কোসের পতনের পর দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন।

    একজন খুব সম্পদশালী মানুষ তার নিজেকে ক্লোন করেছে এরকম একটা খবর 1978 সালে আমি টাইম পত্রিকায় দেখেছিলাম। ডেভিড ররভিক নামে যে মানুষটি এই তথ্য পরিবেশন করেছিল কেউ তার কথা বিশ্বাস করে নি–তারপরেও সে এই জুয়াচুরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই করে ফেলেছিল।

    একেবারে খাঁটি বিজ্ঞানীরাও যে জুয়াচুরি করেন পৃথিবীর ইতিহাসে তার উদাহরণও আছে। সাউথ কোরিয়ার বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী হোয়াং উ সাক এরকম একজন মানুষ। সারা জীবনের পরিশ্রমে তিনি যেটুকু অর্জন করেছিলেন 1978 সালে তার পুরোটুকুই ধুলায় মিশে গেল যখন জানা গেল তার গবেষণার বড় অংশই হচ্ছে জালিয়াতি। তিনি গবেষণার যে 11টি ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন তার 9টির কোনো অস্তিত্বই নেই, পুরোটাই বানানো।

    ভুল গবেষণার ফলাফল শুধু যে অসৎ বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন তা নয় অনেক সময় খাঁটি বিজ্ঞানীও সেটা নিজের অজান্তেই করে ফেলেন! এরকম একজন বিজ্ঞানীর নাম ব্লাস কাবেরা। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ম্যাগনেটিক মনোপোল নামে প্রকৃতির একটি রহস্যময় জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন। প্রকৃতিতে যদি এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে পুরো পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস অন্য রকম করে লিখতে হবে। অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীর ধারণা এটা আছে, শুধুমাত্র এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাই 1982 সালের 14 ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসার দিনে যখন সেটা খুঁজে পাওয়া গেল তখন সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে গেল। বিজ্ঞানী ব্লাস কাবেরা রাতারাতি জগদ্বিখ্যাত হয়ে গেলেন, তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেল। পৃথিবীর সব ল্যাবরেটরি তখন সেই ম্যাগনেটিকে মনোপোল খোঁজার কাজে লেগে গেল–কিন্তু কেউ আর সেটা খুঁজে পেল না, ব্লাস কাবেরার সেই একমাত্র গবেষণার ফলাফলটিকে এখন একটা বৈজ্ঞানিক ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    তবে যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই হয়েছিল সেটার নাম কোল্ড ফিউসান। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে বড় বড় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে ছোট টুকরো করে শক্তি বের করা হয়। এভাবে শক্তি তৈরি করার পর যে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয় সেটি থেকে শুধু এই পৃথিবী নয় পুরো সৃষ্টি জগতের মুক্তি নেই। কিন্তু যদি ছোট ছোট নিউক্লিয়াসকে একত্র করে একটু বড় নিউক্লিয়াস তৈরি করে শক্তি বের করা হয় সেটি অত্যন্ত নিরাপদ। শুধু তাই নয় তার জ্বালানি হিসেবে খুব সহজেই হাইড্রোজেনের মতো অতি সহজে পাওয়া যায় এরকম মৌল ব্যবহার করা যায়। এই পদ্ধতিটির নাম ফিউসান এবং ফিউসান ঘটানোর জন্যে হালকা নিউক্লিয়াসগুলোকে ভয়ঙ্কর গতিতে একের সাথে অন্যকে আঘাত করতে হয়। তার জন্য যে তাপমাত্রা দরকার সেই তাপমাত্রা ধারণ করার মতো কোনো পাত্র নেই!

    তাই 1989 সালে স্ট্যানলি পন এবং মার্টিন ফ্লিশম্যান নামে দুজন বিজ্ঞানী যখন ঘোষণা করলেন যে তারা একটা কাচের বোতলে সাধারণ তাপমাত্রায় ফিউসান প্রক্রিয়াটা ঘটিয়ে ফেলেছেন তখন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহলে একটা আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ সত্যিই যদি এটা ঘটে থাকে তাহলে পৃথিবীতে আর শক্তির অভাব থাকবে না। সাধারণ তাপমাত্রায় এই ফিউসান ঘটে থাকে বলে এর নাম কোল্ড ফিউসান (Cold Fusion)। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এখন স্ট্যানলি পন আর মার্টিন ফ্লিশারম্যানের পরীক্ষাটা করে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কেউ সেটা করে নিশ্চিত হতে পারলেন না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা রায় দিলেন পরীক্ষার ফলাফলটি ছিল ভুল!

    এখন পর্যন্ত যতগুলো উদাহরণ দেয়া হয়েছে তার সবগুলোই হলো ইচ্ছে করে কিংবা ভুল করে ভুল তথ্য দিয়ে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করা। এর বাইরেও কিছু উদাহরণ আছে যেখানে রসিকতাপ্রিয় বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র তামাশা করার জন্যে জার্নালে গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। এর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনার নায়ক এলেন সোকাল নামে একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি শুধুমাত্র ঠাট্টা করার জন্যে গাল ভরা শব্দ দিয়ে ভরাট করে একটা পুরোপুরি অর্থহীন একটা পেপার লিখে প্রকাশ করার জন্যে সেটা ডিউক ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত একটা জার্নালে পাঠিয়ে দিলেন। জার্নালের বড় বড় সম্পাদকরা সেটা ছাপিয়েও দিলেন–এলেন সোকাল তখন তার এই রসিকতাটুকু ফাঁস করে দিলেন। সারা পৃথিবীর শিক্ষাবিদরা তখন যে অট্টহাস্য করেছিলেন এখনো সেটা শুনতে পাওয়া যায়। প্রায় একই ধরনের কাণ্ড করেছিল এম. আই. টি.-এর কিছু ছাত্র। তারা একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেছে যেটা বৈজ্ঞানিক পেপার লিখতে পারে। কিছু বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করে সেটি এমন কিছু লিখে ফেলতে পারে যেটা পুরোপুরি অর্থহীন কিন্তু দেখায় সত্যিকারের গবেষণা পেপারের মতো। সাইজেন (SCIGEN) নামে সেই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে তারা একটা পেপার লিখে তারা একটা কনফারেন্সে পাঠিয়ে দিলেন, সেখানে সেটা ছাপাও হয়ে গেল! ছাত্ররা যখন তাদের রসিকতাটুকু প্রকাশ করেছে তখন সেই কনফারেন্সের বড় বড় কর্মকর্তাদের মুখ দেখানোর উপায় নেই!

    বিজ্ঞানের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা নিয়ে শুধু যে বিজ্ঞানীরাই ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলেন তা নয়–তাদের অন্য এক ধরনের শত্রু আছ, সেটা হচ্ছে প্রচারলোভী কিছু মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান। আমরা সবাই জানি পৃথিবীর মানুষ 1969 সালে চাঁদে গিয়েছিল। সেটা একই সাথে ছিল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর মানুষের দুঃসাহসের একটা চমৎকার উদাহরণ। 2001 সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স টেলিভিশন হঠাৎ করে একটা বিশাল অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করল যেখানে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করল পৃথিবীর মানুষ আসলে কখনোই চাঁদে যায় নি। পুরোটাই নাসার একটা ধাপ্পাবাজি।

    এরকম উদ্ভট একটা ব্যাপার যে ঘটতে পারে সেটা অবিশ্বাস্য কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পৃথিবীর অনেক মানুষ সেটা বিশ্বাস করে ফেলল! ফক্স টেলিভিশনের সেই অনুষ্ঠানেই যেসব যুক্তি দেয়া হয়েছিল তার সবগুলোই হচ্ছে অত্যন্ত দুর্বল এবং খোঁড়া যুক্তি, অনুষ্ঠানটা প্রচার করা হয়েছিল শুধুমাত্র একটা হইচই সৃষ্টি করে তাদের চ্যানেলের রেটিং বাড়ানোর জন্যে-সোজা কথায় কিছু পয়সা কামাই করার জন্যে!

    কাজেই আমরা যারা বিজ্ঞানকে অত্যন্ত পূতপবিত্র মহান একটা বিষয় হিসেবে জানি তাদেরকেও খুব সতর্ক থাকতে হয়। পৃথিবীর অনেক ধুরন্ধর মানুষ বিজ্ঞানকে অপবিজ্ঞানে রূপ দিয়ে কোথাও নামধাম এবং কোথাও টু-পাইস কামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

    যারা সত্যিকার বিজ্ঞানী তাদের এ ধরনের ফাঁদে পা দেয়ার কোনো ভয় নেই, অন্যদের একটু সতর্ক করে রাখা ভালো।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইস্টিশন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article হটলাইন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }