Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প108 Mins Read0
    ⤷

    ১. খাড়া পাহাড়ি রাস্তা

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    ০১.

    গাড়িতে বসে খাড়া পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতেই অনীশ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ অরগানাইজেশনের দেওয়া ফাইলটাতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল। হিমালয়ান উলফ রিহ্যাবিলিটেশন ক্যাম্প বা নেকড়ে খামার-টার সম্বন্ধে নানা তথ্য দেওয়া আছে এই ফাইলটাতে। এমনকী প্রাণীগুলোর ছবি, খামার মালিক ভন ভাইমার ও তার কর্মচারীদের ছবি, সরকারি চিঠিপত্র সবই সংযোজিত আছে তার মধ্যে।

    মিস্টার ভাইমার আর সরকারের মধ্যে যে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান হয়েছে তা দেখে অনীশ একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে সরকার মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে প্রাণীগুলোকে মারার। তাই মিস্টার ভাইমার একটা শেষ চেষ্টা করেছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফকে একটা চিঠি দিয়ে প্রাণীগুলোকে বাঁচাবার। আর এই চিঠিটার জন্যই কিছুটা হলেও থমকেছে সরকার। তারাও তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে প্রাণীগুলোর সম্বন্ধে বিশ্ব বন্য প্রাণ সংস্থার মতামত জানতে চেয়েছেন। সংস্থা তাই এদেশে তাদের সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে অনীশকে নেকড়ে খামারটাতে পাঠাচ্ছে সরেজমিনে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবার জন্য।

    সরকার পক্ষকে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না তেমন। হিমালয়ান মাউন্টেন উলফ বা তুষার নেকড়ে যদি মানুষ মারে তবে সে যত দুষ্প্রাপ্য প্রাণী হোক না কেন তার জীবনের দাম গ্রামবাসীদের জীবনের চেয়ে বেশি নয়। তবে সরকারি তরফে নেকড়েগুলোকে মারতে চাওয়ার পিছনে নাকি আসল কারণ অন্য। সেটা অবশ্য এ ফাইলে লেখা নেই, থাকার কথাও নয়। অনীশেরই ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কাজ করা এক সহকর্মী খবরটা কীভাবে যেন সংগ্রহ করেছে স্থানীয় এক সেনা অফিসারের কাছ থেকে। সেই সহকর্মী অনীশকে জানিয়েছে যে ওই তুষার নেকড়েগুলোকে। নিয়ে নাকি সীমান্তরক্ষীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আসলে সরকার এ ব্যাপারটা নিয়েই বেশি ভাবিত। কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছে না ব্যাপারটা। এ অঞ্চল দেশের অন্যতম দুর্গম ও উত্তেজনা প্রবণ সীমান্ত অঞ্চল। তাই সরকার কোনও অবস্থাতেই চায় না যে-কোনও কারণেই। এখানকার সীমান্তরক্ষীদের কাজের সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটুক।

    ফাইলটা দেখছিল অনীশ। তার চিন্তাজাল ছিন্ন হল ড্রাইভার পবন বাহাদুরের কথায়– স্যার, আমরা এখন নাথুলা পাসে। প্রায় চোদ্দ হাজার ফিট ওপরে উঠে এসেছি আমরা।

    ফাইল থেকে মুখ তুলে বাইরের দিকে তাকাল অনীশ। সত্যিই অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে অনীশ। নীল আকাশের বুকে উঠে গেছে উত্তুঙ্গ পর্বতশ্রেণি। তাদের বরফমোড়া কিরীটগুলো সূর্যালোকে ঝলমল করছে। নীচের ধাপের পাহাড়গুলোর মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে গিরিবর্ক্স। যে জায়গাতে গাড়িটা এসে পৌঁছেছে সে জায়গা একটু সমতল। অনেক লোকজন, ট্যুরিস্ট গাড়ির ভিড় সেখানে।

    দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলেছে। গাড়িগুলো সব মুখ ঘুরিয়ে নীচে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ড্রাইভার আঙুল তুলে কিছুটা দূরে একটা ছোট পাহাড়ের মাথা দেখিয়ে বলল, ওটাই হল, টিবেট, চায়না। ওখানে পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা যে সব লোকজনকে দেখতে পাচ্ছেন তারা হল-পিপিলস লিবারেশন আর্মি অব চায়না অর্থাৎ চীনা সেনাবাহিনী। আর তার উলটোদিকের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ভারতীয় সেনারা।

    অনীশ জানতে চাইল আমরা যে জায়গাটাতে যাব সে জায়গাটা এখান থেকে কতদূর?

    পবন বলল, ও জায়গাটা রেশমপথের ভিতর। আরও ওপরে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার ভিতরে। স্থানীয় লোক ছাড়া ট্যুরিস্টদের ওখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। রাস্তার এক পাশে চায়না, অন্য পাশে ইন্ডিয়া। ওই নেকড়ে খামারটা আর একটাই ছোট গ্রাম আছে সেখানে।

    কথা বলতে বলতে ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে অনীশদের গাড়িটা গিয়ে থামল একটা চেকপোস্টের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা।

    গাড়ি থেকে নামতে হল অনীশদের। তাদের গাড়ির উইন্ড শিল্ডে আটকানো ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ অরগানাইজেশনের লোগো দেখে সেটা চিনতে পেরে এক অফিসার এগিয়ে এলেন। সরকারের পক্ষ থেকে অনীশদের সে জায়গাতে যাবার খবর আগাম তাদের কাছেও ছিল। অনীশের কাগজপত্র আর তাদের কাগজ মিলিয়ে দেখে আশ্বস্ত হবার পর চেকপোস্ট খুলে দিল তারা। অনীশদের গাড়ি প্রবেশ করল ভিতরে।

    রেশমপথ! সিল্করুট! নামটা শুনলেই কেমন যেন রোমাঞ্চ হয় মনের ভিতর। কত হাজার বছরের প্রাচীন এই বাণিজ্যপথ। হাজার হাজার বছর ধরে এ পথ বেয়েই দু-দেশের মধ্যে বাণিজ্য আর সংস্কৃতির লেনদেন হয়েছে। কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ পথের সঙ্গে। চৈনিক পরিব্রাজক হিউ-এন-সাং-ও একদিন এ পথে হেঁটেছিলেন।

    অনীশও বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করল প্রথম এ পথে প্রবেশ করে। সর্পিল গিরিবর্ত এঁকে বেঁকে উঠেছে ওপর দিকে। কখনও রাস্তার দুপাশেই পাহাড় আবার কখনও অতলান্ত খাদ।

    পাহাড়ের মাথাগুলোতে কিছুটা তফাতে তফাতে দাঁড়িয়ে আছে দু-দেশের সীমান্তরক্ষীরা। হাতে তাদের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, ইস্পাত কঠিন মুখ। ঠিক যেন পাথরের মূর্তি তারা। আর্মির গাড়ি ছাড়া এ পথে অন্য কোনও গাড়ি নেই। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু লোকজন চোখে পড়ছে। ঘোড়া, খচ্চর বা গাধার পিঠে মালপত্র চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। স্থানীয় লোকজন সব। ড্রাইভার জানাল ওই সব বস্তায় আর্মির জন্য রেশন যাচ্ছে।

    অনীশ জানতে চাইল, এই রেশম পথে এখনও বাণিজ্য হয়?

    পবন বলল, হয়, হয়। উনিশশো বাষট্টির চীন-ভারত যুদ্ধের পর বহুদিনের জন্য এ পথ বন্ধ ছিল। তারপর বছর কুড়ি হল আবার এ পথ খুলেছে। সপ্তাহে এখন দু-দিন এ পথ খোলা থাকে। তবে সীমান্তে উত্তেজনা থাকলে পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    অনীশ প্রশ্ন করল, আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানকার গ্রামে কারা থাকে? কী করে তারা?

    ড্রাইভার বলল, ওটা তিব্বতী শরণার্থীদের গ্রাম। যুদ্ধের সময় ওপার থেকে এসেছিল ওরা। যদিও তারা এখন এ দেশেরই নাগরিক। ওরা পশুপালন করে, উল বোনে। পাইন বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে। এভাবেই দিন চলে ওদের।

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাকদণ্ডী বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল অনীশদের গাড়ি। রাস্তায় লোকজনের চলাচল, আর্মি গাড়ির যাতায়াতও হারিয়ে যেতে লাগল তার সঙ্গে সঙ্গে। আর তার সঙ্গে বাড়তে লাগল কনকনে ঠান্ডা বাতাসের দাপট। তীব্র শিস-এর মতো শব্দ করে বাতাস বইছে কোথাও কোথাও। গিরিবর্তের গা-গুলোর অধিকাংশ জায়গা নেড়া রুক্ষ হলেও মাঝে মাঝে পাইনবন আছে। ছোট হলেও বনগুলোর ভিতর আলো প্রবেশ করতে পারে না। এত ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যে সূর্যালোক ভিতরে প্রবেশ করে না। ঝিঁঝি পোকার অবিশ্রান্ত কলতান ভেসে আসছে সেখান থেকে।

    ড্রাইভার বলল, আমরা যে পথ ধরে যাচ্ছি সে পথ কিন্তু একেবারে তিব্বতের রাজধানী লাসায় গিয়ে মিশেছে। তবে এই মূল রাস্তা ধরে আরও কয়েকটা পথ বেরিয়েছে। সেগুলোও একটু ঘুরপথে তিব্বতের নানা জায়গাতে পৌঁছেছে।

    ঘণ্টাখানেক চলার পর এক জায়গাতে পথের বাঁকে মুহূর্তের জন্য গাড়িটা থামাল ড্রাইভার। দুটো পাহাড়ের ফাঁক গলে আরও উঁচুতে একটা জায়গা দেখাল সে। কুয়াশা ঘেরা আবছা একটা কালো জায়গা।

    সেটা দেখিয়ে সে বলল, ওখানেই যাব আমরা। বনটা দেখা যাচ্ছে। ওই বনের গা বেয়েই বরফের পাহাড় উঠে গেছে। তাই ওখানে সবসময় বেশ ঠান্ডা আর কুয়াশা থাকে। এই রাস্তা ছেড়ে বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকতে হয় ওখানে যেতে হলে।–এই বলে সে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল।

    সময় এগিয়ে চলল। বেলা পড়ে আসছে ক্রমশ। জনশূন্য গিরিবর্ত বেয়ে ক্রমশ ওপরে উঠে চলেছে গাড়ি। মাঝে মাঝে নীচের দিকে তাকালে চোখে পড়ছে পিছনে ফেলে আসা নীচের পাকদণ্ডীগুলো। যাত্রাপথে আরও এক জায়গাতে থামতে হল অনীশদের। এ জায়গাটাই নাকি এদিকের সীমান্তের শেষ চেকপোস্ট। সেখানে কাগজপত্র পরীক্ষা হবার পর আবার চলতে শুরু করল গাড়ি। বেলা চারটে নাগাদ প্রধান রাস্তা ছেড়ে একটা ছোট শুড়ি পথ ধরল গাড়িটা। দু পাশে পাহাড়ের ঢালে গভীর পাইনবন। মাঝে মাঝে পায়ে চলা পথ উঠে গেছে বনের ভিতরে।

    ড্রাইভার বলল, আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি স্যার। আমাদের ডানপাশের পাহাড়টা ভারতের আর বাঁ-পাশেরটা চীনের। এ রাস্তাটাকে আপনি নো-মেনসল্যান্ড বলতে পারেন। তিব্বতীদের গ্রামটা রয়েছে আর একটু এগিয়ে জঙ্গলের পিছনে। আর নেকড়ে ফার্মটাও সামনেই।

    ড্রাইভারের কথা কিছুক্ষণের মধ্যেই সত্যি বলে প্রমাণিত হল। পাকদণ্ডী বেয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে দীর্ঘ যাত্রা শেষে থামল অনীশদের গাড়িটা।

    গাড়ি থেকে নামল অনীশ। দুটো পাহাড়ের মাঝখানে একটা সমতল জায়গা। রাস্তার যে পাশে চীনের সীমানা সে দিকের পাহাড়টা এত খাড়া যে ওপরে ওঠার রাস্তা নেই। আর রাস্তার ডানপাশে বেশ অনেকটা জমি ঘন সন্নিবিষ্ট কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। উচ্চতায় অন্তত দশফুট উঁচু হবে সেই বেড়াটা। আর তার মাঝে মাঝে পাইন গাছের খুঁটি। ফাঁকা জমিটার মাঝখানে রয়েছে ঢালু টিনের ছাদঅলা লম্বাটে একটা কাঠের বাড়ি। সেটা দেখতে অনেকটা সেনা বেরাকের মতো। বাড়িটার পিছন থেকেই উঠে গেছে বরফের চাদর মোড়া পাহাড়। অনীশদের যাত্রাপথের পাশের পাইন বনটাও এসে মিশেছে জমিটার গায়ে।

    গাড়ি থেকে নামার পর অনীশ জানতে চাইল, গ্রামটা দেখা যাচ্ছে না তো! সেটা কোথায়?

    ড্রাইভার বলল, সেটা এ জায়গার একটু কোনাকুনি। পাইনবনের পিছনের ঢালে। পায়ে হেঁটে সেখানে যেতে হয়। আপনি আগে সেখানে যাবেন নাকি?

    অনীশ বলল, না, না, আমি এখন এই বাড়িটাতেই যাব। তবে কাল গ্রামেও যেতে হবে। লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাই খোঁজ নিলাম তোমার কাছে। তুমি কি আমার সঙ্গে এখানে রাত কাটাবে?

    ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, না স্যার। গ্রামে আমার একজন চেনা লোক আছে। আমি সেখানেই থাকব। ফোন করলে দশ মিনিটের মধ্যেই হাজির হয়ে যাব। গাড়িটা এখানেই থাকবে।

    তার কথাটা শুনে অনীশ মনে মনে ভাবল, ব্যাপারটা ভালোই হবে তাহলে। গ্রামবাসীদের মনোভাবের খবর সংগ্রহ করা যাবে লোকটার থেকে। সঙ্গের ব্যাগপত্র নিয়ে অনীশ এরপর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা জমিটার প্রবেশমুখে। দরজাটাও কাঁটা তারে ঘেরা। তার একপাশে খুঁটির গায়ে বিপদচিহ্ন আঁকা সাইনবোর্ডে লেখা আছে হিমালয়ান উলফ রিহ্যাবিলিটেশন ফার্ম, নাথুলা পাস, সিকিম, ইন্ডিয়া।

    প্রবেশ তোরণের পাশেই কাঠের তৈরি একটা ছোট্ট ঘর। অনীশ তোরণের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সেই ঘরটা থেকে বাইরে বেরিয়ে এল একজন। তার পরনে একটা লং কোট, মাথায় হ্যাট, পায়ে হাই হিল বুট। তার মুখমণ্ডলের রং লালচে ধরনের। চিবুকে দাড়িও রয়েছে। মাঝবয়েসি সুঠাম চেহারার সেই বিদেশি ভদ্রলোককে অনীশ দেখেই চিনতে পারল। লোকটার ছবি রয়েছে ফাইলে। ইনিই নেকড়ে খামারের মালিক ভন ভাইমার।

    ভদ্রলোক অনীশকে দেখতে পেয়ে একটু খুঁড়িয়ে হেঁটে এসে পকেট থেকে চাবি বার করে দরজাটা খুললেন। তারপর তার দস্তানা পরা হাতটা করমর্দনের জন্য অনীশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আসুন, আসুন। আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।

    অনীশ করমর্দন করে ভিতরে প্রবেশ করল। দরজার তালাটা বন্ধ করতে করতে ভদ্রলোক বললেন, কীভাবে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব জানি না। কত দূর থেকে কত কষ্ট করে আপনি এখানে ছুটে এলেন। আপনারা যে আমার ডাকে শেষ পর্যন্ত সাড়া দেবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি।

    অনীশ বলল, ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। আমরা বন্যপ্রাণকে ভালোবাসি। তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করি। এটা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে।

    দরজাটা বন্ধ করার পর অনীশকে নিয়ে বাড়িটার দিকে এগোলেন ভাইমার। সেদিকে এগোতে এগোতে অনীশ জানতে চাইল, এ বাড়িটা কি আপনি বানিয়েছেন বা কিনেছেন?

    ভাইমার বললেন, না। এ বাড়িটা একসময় তিব্বতী শরণার্থী শিবির ছিল। পরে ওরা এ বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। বাড়িটা পরিত্যক্ত ছিল। আমি বাড়িটা মেরামত করে নিই। বাড়িটা নেবার সময় সরকারের সঙ্গে ছোটখাটো একটা চুক্তিও হয়েছিল। তখন সরকার উৎসাহও দিয়েছিল এ কাজে। কিন্তু এখন…। কথাটা শেষ করলেন না ভাইমার।

    বাড়িটার সামনে টানা লম্বা বারান্দা। কাঠের মেঝে, কাঠের দেওয়ালঅলা সারবাঁধা ছোট ছোট ঘর। কয়েকটা ঘর তালা বন্ধ, কয়েকটা ভোলা। অনীশকে নিয়ে বারান্দায় উঠে তেমনই একটা ঘরে প্রবেশ করলেন ভাইমার।

    ঘরটা মনে হয় তার অফিস ঘর। একটা টেবিল ঘিরে বেশ কটা গদি আঁটা চেয়ার। দেওয়ালে ঝুলছে ফ্রেমে বাঁধানো বেশ কয়েকটা ওয়াইল্ড লাইফের ছবি। তার মধ্যে ভাইমারের চেয়ারের ঠিক পিছনের ছবিটা একটা হিমালয়ান উলফের। একটা কাঁচ ঢাকা আলমারিও আছে ঘরে। সেটাও ওয়াইল্ড লাইফ সংক্রান্ত বইপত্রে ঠাসা।

    নিজের চেয়ারে বসলেন ভাইমার। অনীশ তার মুখোমুখি একটা চেয়ারে। সেখানে বসার পর একটা রাইফেলও চোখে পড়ল অনীশের। যে দরজা দিয়ে সে ভিতরে প্রবেশ করেছে তার গা ঘেঁষেই দেওয়ালের গায়ে টাঙানো আছে সেটা।

    বেশ কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বসে রইল তারা দুজন। বাইরে বিকাল নেমে এসেছে। আলো মরে আসছে। আধো অন্ধকার ঘর। মিস্টার ভাইমারই প্রথম মুখ খুললেন। তিনি বললেন, আপনি নিশ্চই সব ব্যাপারটাই মোটামুটি জেনেছেন আমার চিঠি আর কাগজপত্রের মাধ্যমে। এখন হয়তো আপনার রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে প্রাণীগুলোর ভবিষ্যৎ।

    অনীশ বলল, হ্যাঁ, মোটামুটি জানি। গ্রামের লোক সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। আপনার নেকড়েগুলো এ জায়গা থেকে বেরিয়ে মানুষ মারছে বলে। আপনার চিঠি থেকে জেনেছি। তারা নাকি একবার কিছুদিন আগে হামলাও চালিয়েছিল এ জায়গাতে। প্রাণীগুলো কোথায় থাকে?

    ভাইমার বললেন, ওরা এখানেই থাকে। বাড়ির পিছনে কয়েকটা লোহার গরাদঅলা পাথরের ঘরে। ওরা এ চত্বর ছেড়ে বা খাঁচার বাইরে কোনওদিন যায়নি। কোনও গ্রামবাসীকে মারেনি।

    অনীশ বলল, গ্রামবাসীরা কি তবে মিথ্যা কথা বলছে? গত ছয় মাসে নাকি চারটে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে তারা? সরকারের কাছে এমনই রিপোর্ট আছে।

    ভাইমার বললেন, যে দেহাবশেষগুলো পাওয়া গেছে তাদের কেউ গ্রামবাসী নয়। তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। এমনই ক্ষতবিক্ষত ছিল দেহগুলো। তারা মিথ্যা আতঙ্কিত হচ্ছে। আমার ক্যাম্পের কোনও প্রাণী সে কাণ্ড ঘটায়নি। তারা বাইরে যায় না। খাঁচা ঘরে থাকে।

    অনীশ একটু বিস্মিতভাবে বলল, তারা গ্রামবাসী নয় তা আমার জানা ছিল না। তবে মৃত মানুষগুলো কারা? কে মারল সেই লোকগুলোকে?

    ভাইমার পালটা প্রশ্ন করলেন, আপনি যখন ওয়াইল্ড লাইফ অরগানাইজেশনের লোক, তখন নিশ্চই এই হিমালয়ান উলফ বা টিবেটিয়ান উল্‌ফের ব্যবহার, খাদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে কিছুটা জানা আছে আপনার?

    অনীশ জবাব দিল, যদিও আমি এদের নিয়ে তেমন কাজ করিনি তবে কিছুটা জানি। দুষ্প্রাপ্য প্রাণী। গায়ে বড় বড় লোম আছে। ধূসর এবং সোনালি রঙের। সাদা রঙেরও হয়। যে কারণে নানা নাম আছে এদের। কেউ বলেন টিবেটিয়ান গ্রে উল, কেউ বলেন গোল্ডেন উল আবার কেউ বলেন স্নো-উলফ। সাধারণত খরগোশ ইত্যাদি ছোটখাটো প্রাণী শিকার করে এই নেকড়েরা। কখনও কখনও দলবদ্ধভাবে হরিণ বা পাহাড়ি ছাগল জাতীয় প্রাণী অর্থাৎ ঘুরালও শিকার করে। অন্য প্রাণীদের মতোই মানুষকেও এড়িয়ে চলে ওরা।

    অনীশের জবাব শুনে ভাইমার একটু খুশি হয়ে বললেন, ঠিক তাই। মানুষ ওদের সাধারণ খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পড়ে না। আত্মরক্ষার জন্য নিতান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষকে তারা আক্রমণ করে না। এটাই তো গ্রামের মানুষকে বোঝাতে পারছি না।

    অনীশ আবার জানতে চাইল, তবে যে মানুষগুলো মরল তারা কারা? কে মারল ওদের? গ্রামের মানুষরাই বা হঠাৎ খেপে গেল কেন?

    ভাইমার একটু চুপ করে থেকে বললেন, আমার ধারণা যে মানুষগুলো মারা গেছে। তারা স্মাগলার। যে-কোনও সীমান্তেই চোরা কারবার হয় জানেন তো? সোনা ইত্যাদি অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা যাওয়া করে তারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বনের মধ্যে দিয়ে। সব কটা দেহই কিন্তু বনের মধ্যে পাওয়া গেছে। আমার ধারণা কাজটা চিতা বাঘের। মাউন্টেন লেপার্ড। বয়স বা কোনও আঘাত পাবার কারণে সে নরখাদক হয়েছে। তার পায়ের ছাপ দেখেছি আমি। প্রাণীটাকে মারার জন্য সন্ধানও চালাচ্ছি।

    এ কথা বলার পর আবারও একটু চুপ করে থেকে ভাইমার বললেন, গ্রামবাসীদের খ্যাপার কারণটা আসলে অন্য। ওদের গ্রামের প্রধান হল নরবু বলে একটা বুড়ো। পশুপালনের ব্যবসা করে সে। একসময় আমি তার কাছ থেকে নেকড়েগুলোর খাবারের জন্য পশু কিনতাম। কিন্তু এখন কিনি সীমান্তের ওপার থেকে আসা তিব্বতীদের কাছ থেকে। তিনভাগ কম দাম। আর এতেই খেপে গেছে বুড়োটা। আর গ্রামের লোককেও সেই খ্যাপাচ্ছে। এটাই হল আসল কারণ।

    অনীশ বলল, আপনি তো জার্মানির লোক। এখানে এসে ঘাঁটি গাড়লেন কীভাবে?

    ভাইমার বললেন, হ্যাঁ, আমি জার্মানির লোক। বারীয় পার্বত্য অঞ্চলে আমার বাড়ি। জার্মানীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জাগস্পিৎজ ওখানেই অবস্থিত। ছোটবেলা থেকেই বন্যপ্রাণীদের প্রতি আমার অসীম মায়া। ওখানকার পার্বত্য অঞ্চলে নেকড়েদের সংরক্ষণের জন্য আমি বেশ কিছু কাজও করেছিলাম আমার নিজস্ব এন.জি.ও-র মাধ্যমে। পাহাড়ি অঞ্চলে আমার ভ্রমণের শখও প্রবল। এখানে এসেছিলাম পায়ে হেঁটে সিল্ক রুট অতিক্রম করার জন্য। কিন্তু যাত্রাপথে একদিন চোখে পড়ল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া একটা অর্ধমৃত তুষার নেকড়ে। কোনওভাবে গুলি লেগেছিল প্রাণীটার পিছনের পায়ে। এমন প্রায়শই হয় এখানে। দু-দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলি বিনিময়ে প্রাণ যায় নিরীহ প্রাণীদের। কখনও বা মানুষেরও।

    এখন বরফ মোড়া পাহাড়গুলোতেও সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ঘাঁটি গাড়ছে দু-দেশের সেনারা। বিশেষত চীন সেনারা তাদের দিকের পাহাড়গুলোতে বহু ঘাঁটি গেড়েছে। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে সেখানকার প্রাণীরা। তার মধ্যে টিবেটিয়ান উল্য অন্যতম। তারা নীচে নেমে আসছে। তারপর মারা পড়ছে গ্রামবাসী বা এ দেশের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে।

    যাই হোক সেই নেকড়েটাকে আমি তুলে এনে সুস্থ করে তুললাম। তখনই আমার মনে হল আচ্ছা এই দুষ্প্রাপ্য প্রাণীগুলোর জন্য কোনও কাজ করা যায় না? এখানে উপযুক্ত জায়গা পেয়ে আমি খুলে বসলাম এই ক্যাম্পটা। একে একে আমি সংগ্রহ করলাম আরও কিছু নেকড়ে। তাদের অধিকাংশকেই আমি সংগ্রহ করি গ্রামবাসীদের খপ্পর থেকে বা বনের মধ্যে থেকে। তাদের কেউ অনাহারে অথবা আহত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় ছিল। মোট পাঁচটা নেকড়ে আছে আমার এই ক্যাম্পে। ওদের জন্যই দেশ ছেড়ে এতদূরে পড়ে আছি আমি।

    ভাইমারের কথা শুনে অনীশ বলল, আপনার উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। বুঝতে পারছি প্রাণীগুলোর প্রতি আপনার মমতা অপরিসীম। কিন্তু মুশকিল হল সব মানুষ এ ব্যাপারটা অনুভব করতে পারে না। গ্রামবাসীরা এ ক্যাম্পটা উৎখাত করার জন্য আবেদন জানিয়েছে সরকারের কাছে। এ দেশের বড় চিড়িয়াখানাগুলো অধিকাংশই সমতলে। সেখানে গরমে প্রাণীগুলো বাঁচবে না। পাহাড়ি অঞ্চলের চিড়িয়াখানাগুলো খুব ছোট। সেখানে দু-একটা করে তুষার নেকড়ে আছে। পরিকাঠামোর অভাবে তারা নিতে চাচ্ছে না আপনার প্রাণীগুলোকে। কাজেই…।

    অনীশ তার কথা শেষ না করলেও তার অনুচ্চারিত বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হল না ভাইমারের। একটু বিষণ্ণভাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ জানি। ওরা এই সুন্দর প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলতে চায়। দেখুন যদি আপনি কিছু করতে পারেন।

    অনীশ বলল, হ্যাঁ এ কথা ঠিকই যে দুষ্প্রাপ্য বন্যপ্রাণীদের মারতে হলে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংস্থার কিছু নিয়মনীতি মানতে হয় সব দেশের সরকারকে। নইলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের বরাদ্দ অর্থ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অনেক দেশ অনেক সময় বিভিন্ন অজুহাতে সে নির্দেশ মানে না। যেমন একবার আফ্রিকার একটা দেশে দশ হাজার হাতি মারার ব্যবস্থা করা হল। আমরা ব্যাপারটা আটকাতে পারিনি। দেখা যাক গ্রামবাসীদের অভিযোগপত্রটা প্রত্যাহার করানো যায় কিনা? সরকার তো সেটাকেই সামনে রাখছে।

    ভাইমার বললেন, হ্যাঁ, আপনি সে চেষ্টাই করুন। প্রয়োজনে আমি ওদের থেকেই মাংস কিনব। গ্রামের উন্নতির জন্য কিছু অর্থ সাহায্যও করব। এ প্রাণীগুলোকে আমি কিছুতেই মরতে দিতে পারি না।

    বাইরে পাহাড়ের আড়ালে মনে হয় সূর্য ডুবতে বসেছে। দ্রুত অন্ধকার নেমে আসছে বাইরে। ঘরের ভিতরটাও অন্ধকার হয়ে আসছে। বিষণ্ণ, নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন ভাইমার।

    অনীশও বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বলল, আপনার প্রাণীগুলোকে একটু দেখা যাবে?

    বাইরে দরজার দিকে তাকিয়ে ভাইমার বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তবে এখন নয়। ওদের ঘরগুলোতে বা এ বাড়িতে আলো নেই। দিনের আলোতে কাল ভালো করে দেখবেন ওদের। অনেকটা পথ এসেছেন, এবার বিশ্রাম নেবেন চলুন। কাল দিনের বেলায় যা করার করবেন।

    কথাটা মিথ্যা বলেননি ভাইমার। গতকাল রাতের ট্রেনে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু। করেছিল অনীশ। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ও ঘরে চেয়ারে বসার পর বেশ ক্লান্ত লাগছে। ঠান্ডাও লাগছে বেশ।

    টেবিলের ওপর একটা সেজ বাতি রাখা ছিল। সেটা জ্বালিয়ে নিয়ে অনীশকে সঙ্গে করে এরপর ঘর ছেড়ে বেরোলেন ভাইমার। বাইরে সূর্য ডুবে গেছে। দ্রুত অন্ধকারের চাদরে মুড়ে যাচ্ছে চারপাশের পাহাড়, গিরিপথ। বাইরে বেরিয়ে ভাইমারের পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে অনীশ প্রশ্ন করল, আপনার অন্য সব লোকজন কোথায়?

    ভাইমার জবাব দিলেন, তারা নানা কাজে বাইরে গেছে। এখনই ফিরবে।

    বারান্দা বেয়ে কিছুটা এগিয়ে অনীশকে নিয়ে একটা ঘরে প্রবেশ করলেন ভাইমার। বেশ ছিমছাম সাজানো ঘর। খাট-বিছানা সবই আছে। ঘর সংলগ্ন টয়লেটও আছে। বাতিটা টেবিলের ওপর নামিয়ে ভাইমার বললেন, আপনি বিশ্রাম নিন। আমি এখন যাই। কাল সকালে আবার দেখা হবে। রাতে খাবার দিয়ে যাবে আমার লোক। তবে একটা কথা খেয়াল রাখবেন। রাতে মানুষের গলার শব্দ না শুনলে দরজা খুলবেন না। রাতে আমরা প্রাণীগুলোকে খাঁচার বাইরে বার করে দিই। ওদের সুস্থতার জন্যই এটা প্রয়োজন। যদিও ওরা আমাদের সঙ্গে প্রভুভক্ত কুকুরের মতোই আচরণ করে। আপনাকেও কিছু করবে বলে মনে হয় না। তবু সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো।

    মিস্টার ভাইমার চলে যাবার পর দরজা বন্ধ করে টয়লেটে যাবার পর পোশাক পালটে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল অনীশ। ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিল সে। তারপর একসময় কৌতূহলবশত খাট সংলগ্ন জানলার পাল্লাটা খুলল।

    পিছনের বরফ পাহাড়টা ধীরে ধীরে আলোকিত হতে শুরু করেছে। অন্ধকার কেটে গিয়ে চাঁদ উঠতে শুরু করেছে। অনীশ তাকিয়ে রইল সেদিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ উঁকি দিল পাহাড়ের আড়ালে। ঠিক সেই মুহূর্তে যেন কেঁপে উঠল বাড়িটা। নেকড়ের ডাক! একযোগে ডেকে উঠল প্রাণীগুলো। চাঁদ ওঠার কারণেই রাত্রিকে আহ্বান জানিয়ে। চাঁদের সঙ্গে একটা আদিমতার সম্পর্ক আছে। নেকড়ে শেয়াল জাতীয় প্রাণীরা চাঁদ উঠলেই সেদিকে তাকিয়ে ডেকে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল সে ডাক।

    তারপর একসময় থেমে গেল। বেশ ঠান্ডা বাতাস আসছে জানলা দিয়ে। কাজেই জানলা বন্ধ করে অনীশ আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল। রাত আটটা নাগাদ দরজায় টোকা দেবার শব্দ হল। তার সঙ্গে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, স্যার খাবার এনেছি। দরজা খুলল অনীশ। চীনা দেখতে একটা লোক খাবারের পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে। সমতলের লোকদের চোখে অবশ্য চীনা, নেপালি, ভুটিয়া ইত্যাদি পাহাড়ি লোকদের একইরকম দেখতে লাগে। ঘরে ঢুকে টেবিলে খাবারের পাত্রগুলো নামিয়ে নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল লোকটা। দরজাটা আবার বন্ধ করে দিল অনীশ। টেবিলে সে রেখে গেছে রুটি আর ধোঁয়া ওঠা মুরগির মাংস। খাওয়া সেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানায় চলে গেল অনীশ। ঘুম নেমে এল তার চোখে। ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই যেন সে শুনতে লাগল বাইরে থেকে ভেসে আসা নেকড়ের ডাক।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }