Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প311 Mins Read0
    ⤷

    ০১. অতি তুচ্ছ একটা বিষয়

    কে কথা কয় (২০০৬) – উপন্যাস – হুমায়ূন আহমেদ
    প্রথম প্রকাশ – একুশের বইমেলা ২০০৬

    ভূমিকা

    আমার মেজো মেয়ে শীলা তখন ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ে। তার হোমওয়ার্কের খাতা উল্টেপাল্টে দেখছি–এক জায়গায় চোখ আটকে গেল। দেখি সে একটা সম্পূর্ণ লাইন উল্টো করে লিখেছে। এটা কি তার কোনো খেলা? ভালোভাবে দেখতে গিয়ে হতভম্ব। তার খাতাভর্তি এই ব্যাপার। অনেক লাইন উল্টো করে লেখা। আয়নার সামনে ধরলেই শুধু পড়া যায়। ডাক্তাররা বললেন, কিছু কিছু ইনফরমেশন তার মাথায় উল্টো করে আসে। ইংরেজিতে একে বলে Dyslexia। অটিস্টিক শিশুদের এরকম হয়।

    অটিজম বা অটিস্টিক শিশুদের বিষয়ে সেই আমার সাঙ্গ পরিচয়। তারও অনেককাল পরে নুহাশ পল্লীতে একটি অটিস্টিক শিশুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। বাবা-মা বাচ্চাটিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। তাকে ছেড়ে দিয়েছেন আম বাগানে। সে গম্ভীর ভঙ্গিতে হাঁটছে। মাঝে মাঝে নিচু হয়ে শুকনো পাতা কুড়িয়ে পকেটে রাখছে। বাচ্চাটার কাণ্ড দেখে মজা পেয়ে তার কাছে যাচ্ছি, বাচ্চার বাবা বিনীতভাবে বললেন, স্যার, যাবেন না। সে অপরিচিত কাউকে দেখলে প্রচণ্ড ভয় পায়। অপরিচিত কেউ তার গায়ে হাত দিলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এছাড়া তার আর কোনো সমস্যা নেই। সে অসম্ভব মেধাবী একজন ছাত্র। শুকনোপাতা কুড়ানো ছেলেটির সঙ্গে আমার কোনো কথা হলো না। এই বিষয় নিয়ে কোনোদিন কিছু লিখব সেরকম ইচ্ছাও তৈরি হলো না।

    বছর তিনেক আগে লন্ডন থেকে ট্রেনে করে স্কটল্যান্ড যাচ্ছি। পাঁচ-ছয় ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। বাইরের দৃশ্য যত সুন্দরই হোক এত দীর্ঘ সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। ট্রেনে পড়ার জন্যে একগাদা বই কিনলাম। এর মধ্যে একটা বইয়ের লেখিকা Karen Armstrong। তাঁর আত্মজীবনীমূলক বইটার নাম The Spiral Staircase। বইটিতে লেখিকা একটি অটিস্টিক শিশুর কথা লিখেছেন। কিছুদিন এমন একটি শিশুর তিনি বেবিসিটার ছিলেন।

    কে কথা কয় উপন্যাসটির বীজ Karen Armstrong-এর বইটি থেকে এসেছে। আমি গবেষকটাইপ লেখক না যে, কিছু লেখার আগে বিস্তর গবেষণা করব। এই বইটিতে করতে হয়েছে। ইন্টারনেটের কারণে গবেষণা সহজ হয়ে গেছে। সব তথ্যই। আঙুলের মাথায়। বোতাম টিপতে পারলেই হলো।

    Mark Haddon-এর লেখা–The curious incident of the dog in the night time বইটিও আমাকে খুব সাহায্য করেছে।

    কে কথা কয় গাঢ় আনন্দ নিয়ে লিখেছি। আনন্দের কিছু ভাগ পাঠক পেলেই জন্ম সার্থক মনে করব।

    হুমায়ূন আহমেদ
    নুহাশ পল্লী

    ————–

    ০১.

    এই মুহূর্তে অতি তুচ্ছ একটা বিষয় মতিনের মাথা আউলা-ঝাউলা করে দিচ্ছে। মতিনের উচিত বিষয়টা মাথা থেকে দূর করে সহজ স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া। সে তা পারছে না। অতি তুচ্ছ চিন্তার বিষয়টা এরকম–মতিনের সামনে যিনি বসে আছে তিনি অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন, আপনার নাম কী? তখন মতিন কী বলবে? সে কি তার পুরো নামটা বলবে, সার্টিফিকেটে যে নাম আছে সেই নাম–মতিন উদ্দিন খান পাঠান? শুরুতেই ইমপ্রেশন খারাপ হয়ে যাবে না? এমন একজন ইন্টারভিউ দিতে এসেছে যার নামের শেষে খানও আছে পাঠানও আছে। পাঠান এমন পদবি যার শেষ অক্ষর বাদ দিলে হয়–পাঠা। চন্দ্রবিন্দু যুক্ত করলে বাংলার আদি অকৃত্রিম পাঁঠা।

    সে বলতে পারে, স্যার, আমার নাম মতিন। এটাও হবে ভুল। ফরম্যাল ইন্টারভিউতে ডাকনাম বলা যায় না। মতিন উদ্দিন বলা যায়, তাতেও সমস্যা আছে। তখন তাকে প্রশ্ন করা হবে–সার্টিফিকেটে লেখা নাম মতিন উদ্দিন খান পাঠান, তুমি শুধু মতিন উদ্দিন বলছ কেন?

    টেনশনে মতিনের পানির পিপাসা এবং ছোট বাথরুম একসঙ্গে পেয়ে গেল। মানুষের যখন তৃষ্ণা পায় তখন ছোট বাথরুম পায় না। আবার যখন ছোট বাথরুম পায় তখন তৃষ্ণা পায় না। মতিনের এই দুই জিনিস একসঙ্গে পায়। কেন পায় সে জানে না। ডায়াবেটিস হলে কী হয়? কে জানে তার হয়তো ভয়ঙ্কর ডায়াবেটিস আছে। পরীক্ষা করা হয় নি বলে এতদিন ধরা পড়ে নি। ডায়াবেটিস বিষয়ক নতুন চিন্তা মাথায় ঢুকতে চেষ্টা করছে। কিছুতেই এই চিন্তা মাথায় ঢুকতে দেয়া যাবে না। যিনি তার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে–সুপুরুষ একজন মানুষ। মাথার চুল পেকে গেছে, এই নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। চুলে কলপ দেন না। ভদ্রলোক এখন সামান্য ঝুঁকে আসছেন। এখন কি প্রশ্ন করবেন?

    তোমার নাম মতিন উদ্দিন খান পাঠান?

    জি স্যার।

    নামের শেষে দুটা পদবি সচরাচর দেখা যায় না।

    স্যার, আমার নামটা রেখেছিলেন আমার বাবার পীর সাহেব। পীর সাহেবের দেশ ইউপিতে–সেখানে মনে হয় এই ধরনের নাম রাখা হয়।

    তোমার পড়াশুনা কতদূর?

    ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পাস করেছি। এমএ করার ইচ্ছা ছিল। টাকা পয়সা জোগাড় হয় নি। (আবার উত্তরে ভুল হয়ে গেল। টাকা-পয়সা জোগাড় হয় নি কথাটার মধ্যে ফকির ভাব আছে। করুণা প্রার্থনা। আমাকে দয়া কর, ভিক্ষা দাও টাইপ প্রার্থনা।)

    অনার্সের রেজাল্ট কী?

    রেজাল্ট ভালো না। সেকেন্ড ক্লাস। নিচের দিকে।

    Autusic শব্দটার মানে জানো?

    জি-না স্যার।

    Autistic baby, Autistic children এ ধরনের শব্দ পাও নি?

    জি-না।

    মতিন পুরোপুরি হতাশ হয়ে গেল। সামান্য একটা শব্দের মানে না জানার জন্যে চাকরি হবে না, এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। বড় বড় দুর্ঘটনা অতি সামান্য কারণে ঘটে। মতিনের বড় মামা কলা খেতে খেতে নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার থেকে ফিরছিলেন। নিজের ছুড়ে ফেলা কলার খোসায় পা পিছলে তিনি উল্টে পড়ে গেলেন। লোকজন ধরাধরি করে তুলল, তিনি বসা অবস্থা থেকে আবার পড়ে গেলেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার দেখে বললেন, মারা গেছে।

    তোমার নামটা তো অনেক বড়। ছোট করে কী ডাকা যায় বলো তো?

    মতিন ডাকতে পারেন স্যার।

    মতিন তোমার ডাকনাম?

    জি-না, আমার ডাকনাম মতি।

    তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমার স্ত্রী চলে আসবে, তখন দুজনে মিলে তোমার সঙ্গে কথা বলব। এর মধ্যে চা খাও। আমি তোমাকে চা দিতে বলে দিচ্ছি।

    স্যার, আমার একটু বাথরুমে যাওয়া দরকার, বড়টা না, ছোটটা।

    অফকোর্স। যে চা নিয়ে আসবে সে তোমাকে বাথরুম দেখিয়ে দেবে। ফিল ফ্রি।

    ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। মতিনের ইচ্ছা করছে নিজেকেই নিজে লাথি মারে। উনার সঙ্গে বাথরুম নিয়ে এত কথা বলার কিছুই ছিল না। উনি তো চলেই যাচ্ছেন। উনি চলে যাওয়া মানেই ফাকা ঘর। তখন সে দারোয়ান, বয় বাবুর্চি টাইপ যে-কোনো একজনকে বলতে পারত–ভাই, আপনাদের বাথরুমটা কোন দিকে? আমার হাত-মুখ ধোয়া দরকার। তা না বলে সে বলেছে, আমার একটু বাথরুমে যাওয়া দরকার। বড়টা না, ছোটটা। বাথরুমে গিয়ে সে কী করবে সেটা তার ব্যাপার এত ব্যাখ্যা কেন? তবে এখনো পুরোপুরি নিরাশ হবার মতো ঘটনা ঘটে নি। মূল ইন্টারভিউ বেগম সাহেবের অ অপেক্ষা করছে আসল চাবিকাঠি নিশ্চয়ই তার হাতে। রাজা দেশ চালালেও চাবি থাকে রানীর কাছে। অবশ্যি রানী দেশ চালালে চাবি তাঁর কাছেই থাকে। তারা কখনো রাজাকে চাবি দেন না। রানীরা চাবি হাতছাড়া করেন না।

    মতিনের জন্য চা এসেছে। মাঝারি সাইজের কাচের ট্রেতে চায়ের কাপ। ট্রে এবং চায়ের কাপের মধ্যে যোগাযোগ আছে। যে ডিজাইনের ট্রে, একই ডিজাইনের চায়ের কাপ। এত সুন্দর লাগছে দেখতে! মতিন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। সব সৌন্দর্য ক্ষমতাবানদের হাতে চলে যাচ্ছে। মহান কোনো শিল্পী অপূর্ব কোনো ছবি আঁকলেন, সেই ছবির স্থান হলো গার্মেন্টসের মালিকের বসার ঘরে।

    বেয়ারা টাইপ লোকটি চায়ের ট্রে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, স্যার, আসেন আমার সঙ্গে।

    মতিন অবাক হয়ে বলল, কোথায় যাব?

    বড় সাহেব বলেছিলেন, আপনি বাথরুমে যাবেন।

    ও আচ্ছা আচ্ছা। গুড। চল যাই। তোমার নাম কী?

    লোকটি নাম বলল না। বিরক্ত মুখে সে হাঁটছে। মতিন তার পেছনে পেছনে যাচ্ছে। অতি ধনবানদের কাজের লোকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ আলোচনায় যায় না। ব্যাপারটা মতিনের মনে ছিল না। মনে থাকলে নাম জানার ঝামেলায় যেত না।

    বাথরুম দেখে মতিনের চোখ ঝলসে গেল। এমন একটা সুন্দর জায়গায় ছোট বাথরুম করা গেলেও বড় বাথরুম করা সম্ভবই না। মতিন কাজ সারলো। চোখে-মুখে পানি দিল। বাথটাবের এক কোনায় বসল। এ জাতীয় বাথরুমে আবার আসার সুযোগ নাও আসতে পারে। সুযোগটা কাজে লাগানো দরকার। যেখানে সে বসেছে সেখানে কাচের জারে একগাদা সাবান। কোনোটা মাছের মতো, কোনোটা ফুলের মতো। একটা সাবান পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা খুব কি অন্যায় হবে? সাবানের হিসাব কি তাদের কাছে আছে? চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বের হয়ে চায়ে চুমুক দেয়া দরকার। চায়ের কথা মনে হতেই মতিনের সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়ে গেল। বাথরুমের কোথাও লেখা নেই–নো স্মোকিং। একটা সিগারেট ধরিয়ে দ্রুত কয়েকটা টান দেয়া যায় না? বাথরুম গান্ধা হয়ে যাবে? বাথরুম তো গান্ধা হবার জন্যেই। কমোডে যে জিনিস ফেলা হয় তা থেকে নিশ্চয়ই কর্পূরের সুবাস বের হয় না!

    মতিন সিগারেট ভেবে প্যান্টের পকেট থেকে যে জিনিস বের করল তার নাম মোবাইল সেট। মোবাইল টেলিফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াবার মতো আর্থিক অবস্থা মতিনের না। এই বস্তুটি তাকে দিয়েছে নিশু। নিশু তার সঙ্গেই পড়তো। মতিন ছিটকে বের হয়ে এসেছে, নিশু বের হয় নি। সে এমএ শেষ করেছে। এখন তার ইংল্যান্ডে যাবার ব্যবস্থা হচ্ছে। সে ফনেটিক্সে পিএইচডি করবে। নিশুকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই সে ফাটাফাটি ভালো ছাত্রী। অনার্স, এমএ দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস।

    নিশুর সঙ্গে মিনিটখানিক কথা বললে কেমন হয়? এক মিনিটে চা আর কতটা ঠাণ্ডা হবে? হলে হবে।

    হ্যালো নিশু!

    তুমি কোথায়?

    আমি টাট্টিখানায়।

    টাট্টিখানায় মানে? টাট্টিখানা কী?

    টাট্টিখানা শব্দটি প্রায় লুপ্ত। এটা কোনো তৎসম শব্দ না। আদি বাংলা শব্দ। এর অর্থ বাথরুম। আমি এই মুহূর্তে বাথরুমে বসে আছি। হাইফাই ধরনের বাথরুম।

    বাথরুম থেকে টেলিফোন করেছ কেন?

    খুবই জরুরি কারণে টেলিফোন করেছি। Autistic শব্দটার মানে জানো?

    কেন জানব না! Autistic শব্দটা এসেছে Autism থেকে। বিশেষ একধরনের মানসিক ব্যাধি। Austistic children. যে সব শিশুর এই সমস্যা থাকে তারা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে। নিজেদের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নেয়। Autistic শিশুদের কিছু বিশেষ বিশেষ গুণ দেখা যায়। এরা সাধারণত খুব মেধাবী হয়। অঙ্ক ভালোবাসে। এতে হবে, না-কি আরো বলব?

    এতেই হবে। নিশু, তুমি এত জ্ঞানী কেন? যার সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে। তার কপালে দুঃখ আছে। স্বামীরা আর যাই পছন্দ করুক, জ্ঞানী স্ত্রী পছন্দ করে না। স্বামীদের পছন্দের তালিকায় একনম্বরে আছে ফর্সা, হাবা টাইপ স্ত্রী।

    মতিন, তুমি কি বিকেলে আমাদের বাসায় আসতে পারবে?

    পারব।

    ঠিক পাঁচটায় আসবে। কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটায়। আচ্ছা, তুমি কি সত্যি বাথরুম থেকে কথা বলছ?

    হুঁ। বিশ্বাস না হয় আমি এখন ফ্ল্যাস টানব। ফ্ল্যাসের শব্দ শুনবে। রেডি, ওয়ান-টু-থ্রি।

    মতিন ফ্ল্যাস টানল।

     

    মতিনের ইন্টারভিউ শুরু হয়েছে। ব্যারিস্টার সালেহ ইমরান সাহেবের পাশে যে তরুণী বসে আছেন ইনিই বোধহয় তার স্ত্রী। ব্যারিস্টার সাহেবের বয়স পঞ্চাশের উপরে হলেও তাঁর স্ত্রীর বয়স তেইশ-চব্বিশের বেশি হবার কোনোই কারণ নেই। মতিনের মনে হলো সে তার জীবনে এমন রূপবতী মেয়ে দেখে নি। তবে সে এই তরুণীর দিকে তাকাতে পারছে না। ইনি অতিরিক্ত লো-কাট ব্লাউজ পরেছেন। মতিনের তাকাতে লজ্জা লাগছে। সে নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করছে এই তরুণীর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এই তরুণী কী ধরনের ব্লাউজ পরেছেন তা তিনি জানেন। এ ধরনের ব্লাউজ পরলে পুরুষরা তাঁর দিকে কীভাবে তাকাবে তাও জানেন। তাহলে মতিনের লজ্জা পাবার কী আছে!

    ব্যারিস্টার সাহেব কোনো কথা বললেন না। কথা শুরু করলেন তাঁর স্ত্রী।

    Autistic children এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনি পরিচিত?

    মতিন জবাব দেবার আগেই ব্যারিস্টার সাহেব বললেন, মুনা, এটা সে জানে না। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

    মতিন বলল, স্যার, এখন আমি জানি। এটা শিশুদের একধরনের মানসিক পীড়া।

    মুনা বললেন, আমাদের একটাই ছেলে। বয়স টেন প্লাস। সে Autistic child. আমরা তার জন্যে একজন সার্বক্ষণিক সঙ্গী খুঁজছি। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে এই বিষয়টি আমরা অবশ্যি ব্যাখ্যা করি নি।

    মতিন সামান্য হকচকিয়ে গেল। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল–একজন সার্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন। টিউটরের সৃজনশীলতা বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে। বেতন আকর্ষণীয়।

    তার কোনোরকম সৃজনশীলতা আছে বলে সে মনে করে না। অবশ্যি একটি দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তার দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধের বিষয় উজবেক কবি নদ্দিউ নতিমর কাব্যভাবনা। খুবই খটমটে ধরনের প্রবন্ধ। চাকরির দরখাস্তের সঙ্গে দুটি প্রবন্ধের ফটোকপিও সে দিয়ে দিয়েছে। তাকে ইন্টারভিউতে কেন ডাকা হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। মানসিক প্রতিবন্ধী একটি শিশুর সঙ্গে উজবেক কবি নতিমের কাব্যভাবনার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

    ব্যারিস্টার সাহেব এইবার কথা বললেন। এই ভদ্রলোকের গলার স্বর ভারি। তিনি থেমে থেমে প্রতিটি শব্দ আলাদা উচ্চারণ করে কথা বলেন। শুনতে ভালো লাগে।

    মতিন সাহেব!

    জি স্যার।

    আপনি যদি টিউটরশিপটা নিতে রাজি হন, আপনাকে এখানেই থাকতে হবে। তার মানে এই না যে, দিনরাত চব্বিশঘণ্টা আপনাকে এ বাড়িতেই থাকতে হবে। অবশ্যই আপনি আপনার নিজস্ব কাজকর্ম করবেন। তবে আশা করব রাতটা এখানে কাটাবেন। আমরা আপনাকে মাসে পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি আছি। টাকার পরিমাণটা কি ঠিক আছে?

    মতিন হড়বড় করে বলল, জি ঠিক আছে। আপনারা কি এই চাকরিটা আমাকে দিচ্ছেন?

    ব্যারিস্টার সাহেব বললেন, চাকরি ভাবা ঠিক হবে না। আমি আমার ছেলের জন্যে একজন সৃজনশীল সঙ্গী খুঁজছি। আমি আপনার দুটি প্রবন্ধই খুব মন দিয়ে পড়েছি। কবির কবিতার ব্যাখ্যা আপনি সুন্দর দিয়েছেন।

    মতিন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, স্যার, আপনাকে একটা কথা বলা দরকার। কথাটা আপনি কীভাবে নেবেন আমি জানি না। দুটি প্রবন্ধই ভুয়া।

    ভুয়া মানে?

    মতিন বলল, নদ্দিউ নতিম নামে উজবেকিস্তানের কোনো কবি নেই। পুরোটাই আমার বানানো। ফাজলামি করে লেখা। নদ্দিউ নতিম উল্টালে হবে মতিন উদ্দিন। আমিই সেই মতিন উদ্দিন।

    ব্যারিস্টার সাহেব তার স্ত্রীর সঙ্গে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। ব্যারিস্টার সাহেবের স্ত্রীর ঠোঁটে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা গেলেও তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে ফলে গম্ভীর হয়ে গেলেন। ব্যারিস্টার সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, এই কাজটা কেন করেছেন জানতে পারি?

    মতিন বলল, পত্রিকাওয়ালারা নতুনদের গল্প, কবিতা কিছুই ছাপায় না। তবে বিদেশী কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে লেখা ভারি ভারি প্রবন্ধ আগ্রহ করে ছাপায়। টাকাও দেয়।

    নদ্দিউ নতিমের কবিতাগুলি আপনার লেখা?

    জি-না। কবিতাগুলি নিশুর লেখা। আমি কবিতা লিখতে পারি না।

    নিশু কে?

    আমার ক্লাসমেট ছিল। খুবই ভালো ছাত্রী। এখন পিএইচডি করতে লন্ডনের এবারডিন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে।

    মুনা বললেন, নিশু ছেলে না মেয়ে?

    মেয়ে।

    আপনার প্রেমিকা?

    জি-না, সাধারণ বান্ধবী। সে আমার প্রেমিকা হবে এত যোগ্যতা আমার নেই।

    আপনার ধারণা আপনি খুবই সাধারণ?

    জি।

    ব্যারিস্টার সাহেবের স্ত্রী বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। আপনি কষ্ট করে এসেছেন, আপনার সময় নষ্ট হয়েছে, তার জন্যে আমরা দুঃখিত।

    আমাকে আপনারা নিচ্ছেন না?

    মুনা বললেন, না। আপনি বুদ্ধিমান, কিন্তু ডিসঅনেস্ট। একজনের চরিত্রে যখন ডিসঅনেস্টি থাকে তখন সেই ডিসঅনেস্টি নানানভাবে প্রকাশ পায়। Autistic children-রা এই বিষয়টা চট করে ধরে ফেলে। তারা Revolt করে। তখন তাদের মানসিক সমস্যা তীব্র হয়। অ্যাপিলেপটিক অ্যাটাক হয়। আমি আমার বাচ্চার মঙ্গল চাই। অমঙ্গল চাই না। আপনি কিছু মনে করবেন না।

    আমি কিছু মনে করছি না।

    মাসে পনের হাজার টাকা হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার জন্যে মতিনের তেমন খারাপ লাগছে না। বরং তার খানিকটা স্বস্তি লাগছে। মানসিক প্রতিবন্ধী একজনের সঙ্গী হওয়া জগতের প্রিয় কাজের একটি হতে। পারে না। মতিনের চোখের সামনে ভাসছে মাথা মোটা একটা ছেলে থপথপ। করে আসবে। হু হু করে চিৎকার করবে। যখন চিৎকার করবে তখন মুখ দিয়ে। লালা পড়বে। মতিনকেই টিস্যু পেপার দিয়ে মুখের লালা পরিষ্কার করতে হবে। কিছুই বলা যায় না, সেই ছেলে তখন তার হাত কামড়ে ধরতে পারে। মতিন। আনন্দ নিয়েই উঠে দাঁড়াল। মুনার দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাডাম, উঠি?

     

    বেলা এগারোটা। দিনের সবে শুরু। ব্যারিস্টার সাহেবের রোজ ভ্যালি নামক বিশাল বাড়ি থেকে বের হয়ে মতিনের মন আরো ভালো হয়ে গেল। আকাশ মেঘলা। দিনের আলোতে কোমল ভাব। জ্যৈষ্ঠের শেষ। আষাঢ় এখনো শুরু হয় নি। তবে আসি আসি করছে। যে-কোনোদিন শুরু হয়ে যাবে। সেই দিনটা আজও হতে পারে। মতিন শব্দ করেই আওড়াল–

    সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা অভিসার
    অন্ধকার যমুনার তীর…

    বাকি লাইনগুলি আর মনে আসছে না। এই সমস্যাটা তার ইদানীং হচ্ছে। কবিতার লাইন মনে আসছে না। অতি পরিচিত মানুষদের নাম ভুলে যাচ্ছে। সে নিজেও কি মানসিক প্রতিবন্ধীদের একজন হয়ে যাচ্ছে? কিছুদিন পর মুখ দিয়ে লালা পড়বে। হুঁ হুঁ করবে। বন্ধু-বান্ধবদের হাতে কামড় দেবে। বিচিত্র কিছুই না।

    মতিন চিন্তিত মুখে হাঁটছে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে–সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা অভিসার, অন্ধকার যমুনার তীর… তারপর কী? তারপর? তাকে এই মুহূর্তে নিশু বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে। নিশুকে জিজ্ঞেস করলেই সে গড়গড় করে বাকি লাইন বলে দেবে। মতিন কী করবে বুঝতে পারছে না। নিশুকে জিজ্ঞেস করে ঝামেলা শেষ করবে, না-কি নিজেই মনে করার চেষ্টা করবে? নিজের চেষ্টা করাই উচিত। মতিন রিকশা নিয়ে নিল। সে এখন যাবে নিশুদের বাসায়। রিকশা করে যেতে তার একঘণ্টার মতো লাগবে। এই একঘণ্টা চিন্তা করে বাকি লাইনগুলি বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

    রিকশা দ্রুত চলছে। রিকশার চলা আর রেলগাড়ির চলা এক না। রিকশার চলায় কোনো ছন্দ নেই। তারপরেও মতিনের মাথায় তালে তালে বাজছে–সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা অভিসার…

    নিশু বাসায় নেই। নিশুর বাবা রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন অঙ্ক সক আজিজ আহমেদ বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ তছেন। তিনি মতিনকে দেখে আনন্দিত চোখে তাকালেন। মতিন বলল, চাচা, নিশু কই?

    আজিজ আহমেদ বললেন, সকালবেলা আমাকে নাশতা দিয়েই বের হয়ে গেছে। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি–মা, কোথায় যাও? শেষপর্যন্ত জিজ্ঞেস করি নি।

    কেন জিজ্ঞেস করেন নি?

    মেয়ে বড় হয়েছে। দুদিন পরে লন্ডন যাচ্ছে। সেই মেয়েকে তো কোথায় যাও, কী জন্যে যাও, কখন ফিরবে, এইসব জিজ্ঞেস করা যায় না। সে আমাকে সন্দেহপ্রবণ বাবা ভেবে বসতে পারে। ঠিক বলেছি না?

    জানি না ঠিক বলেছেন কি-না। নিশুকে দরকার ছিল।

    টেলিফোন কর। এখন তো মোবাইল টেলিফোন নামে এক বস্তু বের হয়েছে প্রাইভেসি শেষ। মতিন, তুমি কি চা খাবে?

    চা খেতে চাচ্ছিলাম। বানাবে কে? কাজের মেয়ে আছে?

    না। ছুটা কাজের মেয়ে ছিল, সে কাজ শেষ করে চলে গেছে। অসুবিধা নেই, আমি বানাব। তুমি তো চায়ে তিনচামচ চিনি খাও, ঠিক না?

    জি ঠিক। আমার চায়ে দুটা টি-ব্যাগ দিবেন।

    আজিজ আহমেদ খুশি মনে চা বানাতে গেলেন। চা বানানো, রান্নাবান্নার কাজগুলি তিনি অতি আনন্দের সঙ্গে করেন।

    মতিন, তুমি কি দুপুরে এখানে খাবে?

    ভালো কিছু থাকলে খাব। ডাল আলুভর্তা হলে না।

    সকালে ধূপখোলার বাজার থেকে পদ্মার ফ্রেশ ইলিশ এনেছি। ইলিশ মাছের ঝোল, কাকরুল ভাজি। চলবে না?

    ইলিশ মাছের সঙ্গে তরকারি কী?

    আজিজ আহমেদ বিরক্ত গলায় বললেন, তোমরা এই একটা ভুল কর, ইলিশ মাছের সঙ্গে তরকারি খোঁজ। তুমি যে তরকারিই ইলিশ মাছের সঙ্গে দিবে, মাছের স্বাদ নষ্ট হবে। তরকারি হলো ইলিশ মাছের জন্য ইন্টারফেরেন্স। ইলিশ মাছ, গলদা চিংড়ি ইন্টারফেরেন্স পছন্দ করে না।

    মতিন বলল, চাচা, আমি আমার চা পশ্চিমের বারান্দায় একা একা খাব। আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?

    সমস্যা নেই, তবে সিগারেটটা একটু কম খাও। It is a killer.

    কমানোর চেষ্টা করছি চাচা। পারছি না। টাকা-পয়সা টুকটাক যা পাই সব সিগারেটের পেছনে চলে যায়।

    সিগারেট তো আমিও খাই–কিন্তু আমার সব হিসাব করা। সকালের নাশতার পর একটা, দুপুরে ভাত খাবার পর একটা, রাতের ডিনারের পর। একটা। ঘরে সিগারেট রাখি না। প্রতিবার নিজে গিয়ে একটা করে সিগারেট কিনে আনি। এতে এক্সারসাইজও হয়।

    চাচা, এখন কি চায়ের সঙ্গে একটা সিগারেট খাবেন? দেব?

    দিতে পার।

    বারান্দায় চা খেতে খেতে মতিন টেলিফোনে নিশুকে ধরবার চেষ্টা করল। যতবারই কল করা হয় ততবারই একটি মেয়েগলা বলে–এখন সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। পরে আবার চেষ্টা করুন।

    আজিজ আহমেদ বিপুল উৎসাহে রান্নাবান্নায় নেমে পড়েছেন। তিনি নিজে খেতে পছন্দ করেন। নিশুর খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। রান্না করা ইলিশ মাছ এবং রুইমাছের তফাত সে ধরতে পারে না। তরকারিতে লবণ। কম-বেশি হলেও সে ধরতে পারে না। একবার তিনি ভুলে লবণ ছাড়া কই মাছের ঝোল বেঁধেছেন। এক নলা মুখে দিয়েই তার মেজাজ খুব খারাপ হলো। অথচ নিশু মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছে। তিনি বললেন, কই মাঝের ঝোল। খেতে কেমন হয়েছে? নিশু বলল, খেতে ভালো হয়েছে বাবা। কী একটা মসলা যেন বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু খেতে ভালো হয়েছে।

    খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে যে মেয়ে এমন উদাসীন তার জন্যে ভালো-মন্দ রান্না করা অর্থহীন। তবে ভালো খাওয়া মতিন খুবই পছন্দ করে। সে রান্নার ভালো মন্দ বোঝে। তার জন্য রান্না করায় আনন্দ আছে।

    মতিন কিছুক্ষণ রান্নার প্রক্রিয়া দেখল, তারপর বারান্দায় রাখা চেয়ার টেবিলে কাগজ-কলম নিয়ে বসল। বারান্দার একটা অংশ চিক খাঁটিয়ে আলাদা। করা। সেখানে চেয়ার-টেবিল আছে। একটা বইয়ের শেলফ আছে। বইয়ের শেলফে অবশ্যি ইংরেজি-বাংলা ডিকশনারি ছাড়া কিছুই নেই। জ্ঞানী মেয়ের জ্ঞানী বই। এটা হলো নিশুর দিনের পড়ার জায়গা। নিশু দিনেরবেলা ঘরের ভেতরে পড়তে পারে না।

    মতিনের মাথায় নতুন একটা লেখা চলে এসেছে। লেখাটাকে দ্রুত মাথা কে নামিয়ে ফেলা দরকার। সে আগ্রহ নিয়ে লিখছে। এই সময় সিগারেট তেলে ভালো হতো। প্যাকেটের সিগারেট শেষ! দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনা সম্ভব না। কারণ বৃষ্টি নেমে গেছে। নিশুদের বাসায় কোনো ছাতা নেই।

    যে প্রবন্ধটি মতিন লিখছে তার শিরোনাম–

    প্রখ্যাত উজবেক কবি নদ্দিউ নতিমের বিশেষ সাক্ষাৎকার

    নদ্দিউ নতিম অন্তর্মুখী জগতের নিঃসঙ্গ বাসিন্দা। তাঁর জীবনচর্যা প্রকৃতি সম্পৃক্ততায় সিক্ত হলেও জনজীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই মহান কবির একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ফরাসি সাংবাদিক লেমি পিঁয়ারো। ফরাসি ভাষা থেকে মূল সাক্ষাৎকারটির সরাসরি বঙ্গানুবাদ পত্রস্থ করা হলো।

    পিঁয়ারো : কবি, আপনি কেমন আছেন?

    কবি : আমি বিষণ্ণ আছি। মানুষ হয় ভালো থাকে, নয় মন্দ থাকে। আমি থাকি বিষণ্ণ।

    পিঁয়ারো : কেন বিষণ্ণ থাকেন?

    কবি ; প্রকৃতি বিষণ্ণ বলেই আমি বিষণ্ণ। পিঁয়ারো : প্রকৃতি কি বিষণ্ণ?

    কবি : অবশ্যই। প্রকৃতির উৎসে আছে বিষণ্ণতার মহান সঙ্গীত। প্রকৃতি কেন বিষণ্ণ জানো? প্রকৃতি বিষণ্ণ সৃষ্টিশীলতার বেদনায়। সৃষ্টির প্রধান শর্ত বেদনা। বেদনার হাত ধরে থাকে বিষণ্ণতা।

    পিঁয়ারো : এই বিষয়ে আরো কিছু বলুন–

    কবি : আনন্দ এবং বেদনা সমগ্র প্রাণিকুলেই আছে। কিন্তু বিষণ্ণতা মানব জাতির নিজস্ব বিষয়। একটা কাক হয় আনন্দে থাকে, নয় বেদনায় থাকে। বিষণ্ণতায় কখনো থাকে না।

    পিঁয়ারো : আপনি কী করে এত নিশ্চিত হলেন? হয়তো কাকদের জগতেও বিষণ্ণতা আছে!

    [আমার এই কথায় কবি মনে হলো কিঞ্চিৎ আহত হলেন। তার কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়ল। ভুরু কুঁচকে গেল। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে তিনি শান্তগলায় তার একটি বিখ্যাত কবিতার কয়েক পঙক্তি আওড়ালেন।]

    প্রজাপতির ডানায় তুমি বিষণ্ণতা খুঁজতে যেও না।
    প্রজাপতির বাণিজ্য বেদনায়।
    তার দুটি ডানার একটিতে লাভ
    অন্যটিতে লোকসান।…

    মতিন তরতর করে লিখে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক বৈঠকেই লেখা নেমে যাবে।

    প্রজাপতি বিষয়ক কবিতাটা আরো দুর্বোধ্য করতে হবে। নদ্দিউ নতিমের সব কবিতাই তার লেখা। ব্যারিস্টার সাহেবের বাড়িতে কেন সে হুট করে নিশুর নাম বলে ফেলল কে জানে! নিশুর নাম মাথায় ঘুরঘুর করছিল বলেই হয়তো বলেছে। কিংবা তার সাবকনশাস মস্তিষ্ক নিশুকে কবি হিসেবে দেখতে পছন্দ করছে। তাকে আজ একবার বাংলাবাজারে যেতে হবে। নদ্দিউ নতিমের একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশের চেষ্টা সে করছে। এক গা প্রকাশক (গাধা প্রকাশক) যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেই গা প্রকাশক মতিনের প্রবন্ধ দুটার ফটোকপি গম্ভীর মুখে দেখল। কয়েক লাইন পড়ল।

    মতিন বলল, আপনি নিশ্চয় উজবেক এই মহান কবির নাম শুনেছেন।

    গা প্রকাশক ভুরু কুঁচকে বলল, অবশ্যই শুনেছি। উনার নাম জানব না এটা কেমন কথা বললেন! সৃজনশীল লেখার খোঁজখবর আমাদের রাখতে হয়।

    এই মহান কবি সারা জীবনে মাত্র ছয়টি গল্প লিখেছেন। আমি অনুবাদ করেছি। আপনারা কি ছাপবেন?

    গল্প ছাপব না। বাংলাদেশে ছোটগল্প চলে না। উপন্যাস হলে ভেবে দেখতাম।

    মতিন বলল, উনার গল্প না ছাপাই ভালো। কিছুই বলা যায় না, হয়তো গভর্নমেন্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেবে। খুবই ইরোটিক গল্প।

    অশ্লীল?

    চূড়ান্ত অশ্লীল। গল্পগ্রন্থের নামই নদ্দিউ নতিমের ছয়টি বাজেয়াপ্ত অশ্লীল গল্প। কবি নিজেই নিজের গল্প বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন। পরে অবশ্যি উজবেকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়। জার্মানি এবং ইংল্যান্ডেও নিষিদ্ধ। শুধু ফরাসি গভর্নমেন্ট নিষিদ্ধ করে নি। ওরা উদার জাতি।

    গা প্রকাশক সঙ্গে সঙ্গে বলল, পাণ্ডুলিপি নিয়ে বুধবারে আসুন।

    আজ বুধবার।

     

    নিশু বাসায় ফিরল দেড়টায়। সে বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গিয়েছে। তার গা ভর্তি কাদা। কাদা লেগেছে কিছুক্ষণ আগে। ফুটপাত ধরে আসছিল। পাশ দিয়ে শা করে ট্রাক চলে গেল। রাস্তায় জমে থাকা কাদা-পানির সবটাই এসে পড়ল নিকার গায়ে। এই দৃশ্য দেখে ট্রাকের হেল্পার মোহিত। সে জানালা দিয়ে মুখ বের করে হে হে করে হাসছে। নিশু তার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল, চুপ শালা!

    যে মেয়ে অনার্স এমএ দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম তার মুখে চুপ শালা গালি মানায় না। কিন্তু নিশুর মুখে মানিয়েছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী (তার অবস্থা কাহিল, সেও মাখামাখি) হৃষ্ট গলায় বলল, উচিত কথা বলেছেন আপা। এইভাবেই এদের শিক্ষা দিতে হয়।

    আজিজ আহমেদ মেয়েকে দেখে বললেন, একী ব্যাপার! দেখে মনে হচ্ছে। ডােবা থেকে উঠে এসেছিস। যা, ভালো করে সাবান ডলে গোসল করে ফেল। গরম পানি দেব?

    গরম পানি লাগবে না। আমি ছাদে বৃষ্টিতে গোসল করব।

    চট করে গোসল করে আয়। রান্না শেষ। আজ একটা স্পেশাল আইটেম আছে–কুমড়া ফুলের বড়া। বেসন মাখিয়ে রেখে দিয়েছি। খেতে বসলে গরম গরম ভেজে দেব।

    আমি খাব না।

    খাবি না কেন?

    খেয়ে এসেছি। পুরান ঢাকায় গিয়েছিলাম, হাফ প্লেট তেহারি খেয়েছি। ত্রিশ টাকা করে প্লেট। সঙ্গে অর্ধেকটা সিদ্ধ ডিম দেয়।

    সামান্য খা।

    না। ফুলের ভাজি তোমরা খাও। আর বাবা শোন, আমি তোমাকে বলেছি  আমার বারান্দার পড়ার জায়গায় অন্য কেউ বসলে আমার রাগ লাগে! বলেছি না?

    বলেছিস।

    মতিন যে কাগজ-কলম নিয়ে বসে গেল। বিরাট স্কলার হয়ে গেল। তুমি না করতে পারলে না?

    আজিজ আহমেদ ব্ৰিত গলায় বললেন, ও যে ঐখানে বসেছে খেয়াল করি নি।

    নিশু কঠিন গলায় বলল, আমি গোসল সেরে দরজা বন্ধ করে ঘুমাব। আমাকে পাঁচটা না বাজা পর্যন্ত ডাকবে না। আর কয়েকটা কুমড়া ফুল আমার জন্যে রেখে দেবে, রাতে খাব। সাবান আর টাওয়েল এনে দাও।

    সাধারণত দেখা যায় বৃষ্টিতে গোসলের জন্যে ছাদে উঠলেই বৃষ্টি থেমে যায়। কিংবা ঝিরঝির শুরু হয়। নিশুর বেলায় উল্টো হলো–ঝুম বৃষ্টি নামল। নিশু ঠিক করে ফেলল যতক্ষণ এমন ঝুম বৃষ্টি থাকবে ততক্ষণই সে ভিজবে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টি থাকলে পাঁচটা পর্যন্তই ভিজবে। আজকের বিকেল পাঁচটা তার জন্য ইম্পোর্টেন্ট। বিকেল পাঁচটায় সে মতিনকে কিছু জরুরি কথা। বলবে। সময়টা পাঁচটা না হয়ে ছটা হতে পারত, সাতটাও হতে পারত, কিন্তু একবার নিশু যখন ঠিক করেছে পাঁচটা তখন পাঁচটাই। সময়ের ব্যাপারে এই সমস্যাটা তার আছে।

     

    আজিজ আহমেদ মতিনকে নিয়ে খেতে বসেছেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কুমড়া ফুলের বড়া কেমন হয়েছে?

    মতিন বলল, ছোটগল্পের মতো হয়েছে।

    মানে বুঝলাম না!

    মতিন বলল, ছোটগল্পের ডেফিনেশন ভুলে গেছেন চাচা? শেষ হইয়াও হইল না শেষ–এই অবস্থা। কুমড়া ফুলের বড়া শেষ হবার পরেও তার স্বাদ জিভে লেগে থাকছে।

    ভালো বলেছ।

    নিশু খাবে না?

    না। মেজাজি মেয়ে। আছে মেজাজ নিয়ে। এই মেয়ে এত মেজাজ কোথায় পেল সেটাও বুঝি না। আমি নিজে খুবই ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ। তোমার চাচি ছিলেন আমার চেয়েও ঠাণ্ডা। মাঝখান থেকে মেয়ে হয়ে গেল ধানি মরিচ।

    বিয়ের পর জামাইয়ের ক্যাঁচা খেয়ে ঠিক হয়ে যাবে।

    আজিজ আহমেদ চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, সে কি তার বিয়ের কথা তোমাকে কিছু বলেছে?

    মতিন বলল, না।

    আমাকে তো বলেছে ইংল্যান্ড যাবার আগে বিয়ে করবে। হাসবেন্ড সঙ্গে নিয়ে যাবে। কমনওয়েলথ স্কলারশিপে তো স্পাউস সঙ্গে নেবার ব্যবস্থা আছে।

    আপনাকে যখন বলেছে তখন অবশ্যই বিয়ে করবে। নিশু হচ্ছে রোবটের মতো। রোবটরা কমান্ডে চলে। নিশু তার নিজের কমান্ড নিজেই দেয়। কমান্ড ইস্যু হবার পর সেই কমান্ডে চলে।

    নিশুর পছন্দের কেউ কি আছে?

    অনেকেই আছে।

    আজিজ আহমেদ বললেন, যাকে সে বিয়ে করবে তাকে আমার সঙ্গে পরিচয় করাবে না? চা খেতে নিয়ে এলো। একসঙ্গে চা-টা খেলাম, হালকা কথাবার্তা বললাম।

    নিশুর কিছু প্লানিং নিশ্চয়ই আছে। পরিকল্পনার বাইরে সে কিছু করবে না।

    এটাও ঠিক বলেছ। মেয়েটা অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক যন্ত্র। ইলিশ মাছের তরকারিটা কেমন হয়েছে?

    দেবদাস টাইপ হয়েছে।

    তার মানে?

    দেবদাসের শেষ লাইনগুলি মনে আছে চাচা? মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময় যেন একটি সুখ করস্পর্শ কপালে আসিয়া পৌঁছে। যেন একটি দয়ার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে জীবনের ইতি হয়।

    আজিজ আহমেদ বিস্মিত গলায় বললেন, এর সঙ্গে ইলিশ মাছের ঝোলের সম্পর্ক কী?

    সম্পর্ক আছে–মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে-সময় যেন একটি ইলিশ মাছের পিস মুখে আসিয়া পৌঁছে। যেন সরষে ইলিশের ঝোল টানিতে টানিতে জীবনের ইতি হয়।

    আজিজ আহমেদ হতাশ গলায় বললেন, বাবা, সবসময় জোকারি করা ঠিক না। সবসময় জোকারি করলে তুমি মানুষের সামনে পাতলা হয়ে যাবে। তুমি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেও মানুষ গুরুত্ব দিবে না। ভাববে জোকারি করছ।

    ঠিক বলেছেন চাচা, আর জোকারি করব না। ইলিশ মাছটা খুব ভালো হয়েছে। আমি আরেক পিস নিব।

     

    নিশুর যখন ঘুম ভাঙল তখন সন্ধ্যা। ঘড়িতে বাজছে সাতটা। আজিজ আহমেদ মাত্র মাগরিবের নামাজ শেষ করেছেন। মেয়ের ঘুম ভাঙলে মেয়েকে নিয়ে চা খাবেন। নিশু এসে বাবার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার মুখ থমথম করছে।

    বাবা, তোমাকে পাঁচটার সময় ডেকে দিতে বলেছিলাম, তুমি ডাক নি কেন?

    তুই এত আরাম করে ঘুমাচ্ছিলি, ডাকতে মায়া লাগল। বোস, চা খা।

    চা খাব না। তোমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম। দায়িত্ব পালন করতে পারলে না। আমার অ্যাপয়নমেন্ট ছিল মতিনের সঙ্গে। জরুরি কথা ছিল। বাবা, আমার খুব খারাপ লাগছে।

    মা রে, ভুল হয়ে গেছে! তুই টেলিফোনে তার সঙ্গে কথা বল।

    আমি সামনা-সামনি কথা বলতে চেয়েছিলাম।

    তাকে আসতে বল। ডাকলেই চলে আসবে। মা শোন, মেজাজ ঠাণ্ডা করে বোস। একসঙ্গে চা খাই। দুদিন পরে চলে যাবি।

    নিশু বাবার সামনে থেকে সরে গেল। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। তার ঘুম পুরোপুরি কাটে নি। সে আবার শুয়ে পড়বে। ঘুম নিয়ে তার এই ব্যাপারটা আছে। মাঝে মাঝে ঘুমের স্পেল আসে। খেয়ে না-খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমায়। আবার মাঝে মাঝে আছে জেগে থাকার স্পেল। একবার তিনদিন। তিন রাত সে এক মিনিটের জন্যেও ঘুমায় নি। তাতে তার তেমন কোনো

    অসুবিধাও হয় নি।

    নিশু মতিনকে টেলিফোন করল বিছানায় শুয়ে। ঘর অন্ধকার। বাইরে বৃষ্টি নতুন করে শুরু হয়েছে। জানালা সামান্য খোলা। পর্দা বাতাসে কাঁপছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাট এসে চোখে-মুখে লাগছে। নিশুর চমৎকার লাগছে।

    মতিন শোন, তোমার মনে কি এমন কোনো ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, আমি তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি?

    মতিন বলল, না, নেই। তুমি মূল কথাটা বলে ফেল। প্যাঁচানোর দরকার নেই।

    নিশু বলল, আমি বাবাকে কথা দিয়েছিলাম যে, দেশের বাইরে যাবার আগে বিয়ে করব।

    কথা রাখ। বিয়ে করা কঠিন কাজ না। পিএইচডি করার চেয়ে সহজ।

    সমস্যা হচ্ছে, একটি ছেলে আমার পাশে শুয়ে আছে–এই চিন্তাটাই আমার কাছে আগলি লাগে।

    ও আচ্ছা!

    আমার একটা টেকনিক্যাল বিয়ে করা দরকার। এমন একজনকে স্বামী হিসেবে আমার দরকার যে আমার সমস্যা বুঝবে। তাকে যখন বলব, ডিল ইজ অফ–সে সরে দাঁড়াবে। স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার খাটানোর কোনো চিন্তা যার মাথায় থাকবে না।

    আমি কি সেই ভাঙা কুলা?

    হ্যাঁ।

    আমাকে তোমার সঙ্গে ইংল্যান্ডে যেতে হবে?

    অবশ্যই না। তুমি তোমার মতো এখানেই থাকবে। নদ্দিউ নতিমের উপর গবেষণা করবে। তার গল্পের অনুবাদ প্রকাশ করবে। তুমি কি রাজি?

    চিন্তা করে দেখি।

    এত চিন্তার কী আছে?

    চিন্তার কিছু নেই?

    অবশ্যই না। তুমি আমাকে সাহায্য করবে। তুমি তোমার কুৎসিত মেসটা ছেড়ে বাবার সঙ্গে থাকবে।

    জামাই-শ্বশুর এক বাড়িতে?

    হ্যাঁ। বাবার বয়স হয়েছে। এখন নানান উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা করেন। তুমি বাবার সঙ্গে থাকলে আমি নিশ্চিন্ত থাকি।

    তুমি যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো অবস্থায় নিশ্চিন্ত থাকবে। তার মানে তুমি রাজি না?

    না। শুরুতে নিমরাজি হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ তৌহিদার কথা মনে পড়ল। নিশু বলল, তৌহিদা কে?

    মতিন বলল, বড় আপাদের সঙ্গে থাকে। আশ্রিতা টাইপের একজন। আমার দুলাভাইয়ের দূর সম্পর্কের বোন। বড় আপার খুব ইচ্ছা আমি তাকে বিয়ে করি।

    তুমি রাজি?

    নিমরাজি। আমি কোনো কিছুতেই রাজি হই না। সবকিছুতেই নিমরাজি হই!

    ঠিক আছে।

    নিশু শোন, একটা কবিতা ব্রেইনে শর্ট সার্কিট হয়ে গেছে। দুটা লাইন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বাকিটা আসছে না। শর্ট সার্কিটটা খুলে দাও।

    লাইন দুটা বলো।

    সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা…

    নিশু যন্ত্রের মতো বলল–

    সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা অভিসার
    অন্ধকার যমুনার তীর।
    নিশিথে নবীনা রাধা নাহি মানে কোনো বাধা
    খুঁজিতেছে নিকুঞ্জ কুটির।

    নিশু টেলিফোন অফ করে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }