Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤷

    ০১. নীলুর কেমন যেন লাগতে লাগল

    সন্ধ্যার পর থেকে নীলুর কেমন যেন লাগতে লাগল। কেমন এক ধরনের অস্বস্তি। হঠাৎ ঘুম ভাঙলে যে—রকম লাগে সে-রকম। সমস্ত শরীর ঝিম ধরে আছে। মাথার ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা।

    নীলু বারান্দায় এসে দাঁড়াল। এ বাড়ির বারান্দাটা সুন্দর। কল্যাণপুরের দিকে শহর তেমন বাড়তে শুরু করে নি। গ্রাম গ্রাম একটা ভাব আছে। বারান্দায় দাঁড়ালে ঝিলের মতো খানিকটা জায়গা চোখে পড়ে। গত শীতের আগের শীতে ঝাঁকে ঝাঁকে বুনো হাঁস নেমেছিল। কী অদ্ভুত দৃশ্য! এ বৎসর নামবে কিনা কে জানে। বোধহয় না। শহর এগিয়ে আসছে। পাখিরা শহর পছন্দ করে না।

    ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে। বেশ শীত পড়েছে এবার। আজকালের মধ্যেই লেপ নামাতে হবে। নীলু, শাড়ির আঁচলে মাথা ঢেকে দূরে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইল।

    বসার ঘরে তার ননদ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়ছে। কখগ ও চ্ছজ দুইটি সমকোণী ত্রিভুজ। ইহাদের কখ ও চ্ছ বাহু দুইটি সমান। প্রমাণ করা যে। মিষ্টি গলা শাহানার। পড়াটা শুনতেও গানের মতো লাগছে। আজ কি ওর প্রাইভেট মাস্টারের আসার তারিখ? আজ বুধবার না মঙ্গলবার? নীলু মনে করতে পারল না। ভদ্রলোক বুধবারে আসেন। নীলু মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল যেন আজ বুধবার না হয়।

    বুধবার হলেই ভদ্রলোক আসবেন। এবং নীলুকে সারাক্ষণ তাদের আশেপাশে বসে থাকতে হবে। নজর রাখতে হবে। কারণ শাহানা গত সপ্তাহে চোখ-মুখ লাল করে তাকে বলেছে, ভাবী, এই স্যারের কাছে আমি পড়ব না।

    নীলু অবাক হয়ে বলেছে, কেন?

    স্যারটা ভালো না ভাবী। চেয়ারের নিচে পা দিয়ে সারাক্ষণ আমার পা ছুঁতে চায়।

    কী যে বল! হঠাৎ হয়তো লেগে গেছে।

    না ভাবী, হঠাৎ না। আমি যতই পা সরিয়ে নিই, সে ততই নিজের পা এগিয়ে দেয়।

    নীলু আর কিছু বলে নি। কিন্তু বললেই তো আর মাস্টার বদলানো যায় না। এত কম টাকায় পাওয়াও যাবে না। কাউকে। মাস্টার ছাড়া চলবেও না। প্রিটেস্টে শাহানা অঙ্কে পেয়েছে এগারো। তাদের বড়ো আপা গম্ভীর হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, শাহানাকে যেন ইলেকটিভ অঙ্কে কোচ করানো হয়। প্রাইভেট মাস্টার জোগাড় করতে হয়েছে বহু ঝামেলা করে। কিন্তু বুড়োমতো এই ভদ্রলোকের এ কী কাণ্ড। অথচ ভালোমানুষের মতো চেহার। পড়ায়ও ভালো। কত ধরনের মানুষ থাকে সংসারে!

    নীলু। ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে তালো লাগছে না। আবার ভেতরে যেতেও ইচ্ছা করছে না। কেন জানি ইচ্ছা হচ্ছে চৈচিয়ে কাঁদতে। এ-রকম তার কখনো হয় না। নীলুর একটু ভয়-ভয় করতে व्लोव्।

    বাড়িতে সে এবং শাহানা ছাড়া দ্বিতীয় প্রাণী নেই। সবাই খিলগাঁয়ে এক বিয়ের দাওয়াতে গেছে। রাত এগারটার আগে ফিরবে না। কিংবা কে জানে হয়তো আরো রাত হবে। বারোটা–একটা বাজবে।

    শাহানা ভেতর থেকে ডাকল, ভাবী, একটু শুনে যাও তো? নীলু। ভেতরে ঢুকল।

    জানালায় কে যেন খটখট করছে ভাবী। আমার ভয়-ভয় লাগছে। তুমি এখানে বসে থাক।

    নীলু বসল তার পাশে। শাহানা বলল, তোমাকে এ-রকম দেখাচ্ছে কেন ভাবী?

    কি রকম দেখাচ্ছে?

    মুখটা কি রকম কালো কালো লাগছে।

    কালো মানুষ, কালো কালো তো লাগবেই।

    শাহানা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ভাবীর দিকে। ভাবী কালো ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে অদ্ভুত একটা স্নিগ্ধতা আছে। আর এত সুন্দর ভাবীর চোখ! শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।

    এ-রকম তাকিয়ে আছ কেন শাহানা?

    শাহানা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল। নীলু বলল, আজ কী বার, মঙ্গলবার না বুধবার?

    মঙ্গলবার।

    তোমার স্যার আজ আসবে না তো?

    না।

    শাহানা ইতস্তত করে বলল, স্যারের কথাটা তুমি কাউকে বল নি তো ভাবী?

    না।

    কাউকে বলবে না। বড়ো লজ্জার ব্যাপার। তুমি ভাবী ভদ্রলোককে নিষেধ করে দাও। প্ৰাইভেট মাস্টার আমার লাগবে না।

    নীলু কিছু বলল না। আড়চোখে দেখল, শাহানার ফর্সা গাল লাল হয়ে আছে। এই মেয়েটা বড়ো সহজেই লজ্জা পায়। তার এ জন্যে লজ্জা পাবার কী আছে?

    নীলু উঠে দাঁড়াল। শাহানা বলল, যাচ্ছ কোথায় ভাবী?

    যাচ্ছি না। সোফায় একটু শোব। শরীরটা ভালো লাগছে না। শাহানা।

    কি হয়েছে?

    বুঝতে পারছিনা।

    শাহানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারও কেমন ভয়-ভয় করতে লাগল–সে-সব কিছু না তো? তিন বছর আগে একদিন বিকেলবেলা ভাবী তার চুল বেণী করে দিচ্ছিল। হঠাৎ ক্লান্ত স্বরে বলল, শাহানা, মাকে একটু ডাক তো, শরীরটা কেমন যেন করছে।

    দেখতে দেখতে নেতিয়ে পড়ল সে। কী কাণ্ড, কী ছোটাছুটি। পেটে তিন মাসের বাচ্চা! ডাক্তার এসে বললেন, এ্যাবোরশন হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। পনের দিন হাসপাতালে থেকে কাঠির মতো হয়ে সে ফিরে এল।

    ডাক্তার ভয় ধরিয়ে দিলেন। বলে দিলেন খুব সাবধানে থাকতে হবে। এ্যাবোরশন হবার একটা স্বাভাবিক টেণ্ডেন্সি তার আছে। কিছু কিছু মেয়ের থাকে এ-রকম।

    শাহানা লক্ষ করল, নীলু। খুব ঘামছে। সে-রকম কিছু না তো? সে ভয়ে ভয়ে ডাকল, ভাবী! নীলুতাকল, কিছু বলল না।

    ভাবী, সে-রকম কিছু না তো?

    না বোধহয়। ডাক্তার বলেছিল, সাত মাস পার হলে ভয় নেই।

    তোমার এখন কতদিন? আট মাস না?

    হুঁ।

    পানি খাবে ভাবী?

    না।

    ভাবী, বাড়িওয়ালাদের বাসায় গিয়ে কাউকে ডেকে আনব?

    না। কাউকে ডাকতে হবে না।

    শাহানা একটা বালিশ এবং চাদর এনে দিল। মৃদুস্বরে বলল, সোফার উপরই শুয়ে থাক। চুল টেনে দেব?

    কিছু করতে হবে না। তুমি পড়তে বস তো। আমার শরীর এখন ভালোই।

    সত্যি বলছ?

    হুঁ। শুধু শুধু মিথ্যা বলব কেন?

    শাহানার পড়ায় আর মন বসছে না। তাবী কেমন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এমন মায়া লাগছে দেখতে! শাহানার মনে হল, এই পরিবারে এসে ভাবী ঠিক সুখী হয় নি। বিয়ের পর সব মেয়েরাই নিজের একটা আলাদা সংসার চায়। ভাবীও নিশ্চয়ই চায়। কিন্তু এখানে ভাবীর কোনো আলাদা সংসার নেই।

    মাসের এক তারিখে সংসারের পুরো টাকাটা মার হাতে তুলে দেয়। সব কেনাকাটা হয় মার হাতে। ডাল রান্না হবে না। আলুভাজা হবে, এই সামান্য জিনিসটাও মাকে জিজ্ঞেস করে নিতে হয়। মার মেজাজের দিকে লক্ষ রেখেই ভাবী সব কিছু করে, তবু মাঝে মাঝে মা এমন খারাপ ব্যবহার করেন যে শাহানার নিজেরই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে।

    একবার ভাবী তার নিজের মার অসুখের খবর শুনে এক শটা টাকা পাঠাল মানিঅৰ্ডার করে। তার রশিদ এসে পড়ল মার হাতে। তিনি এমন হৈচৈ শুরু করলেন, সব টাকা পয়সা পাচার হয়ে যাচ্ছে গোপনে। নিজেদের যেখানে চলে না… ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ভাবী লজ্জায় অপমানে নীল হয়ে গেল। কিন্তু একটি কথাও বলল না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে লাগল। ভাবী না হয়ে অন্য কোনো মেয়ে হলে কী যে কাণ্ড হত কে জানে! খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিত নিশ্চয়ই। কিন্তু ভাবী খুব স্বাভাবিক। যেন তেমন কিছু হয় নি। বিকেলে ঠিকই রান্না করল। রাতে সবাইকে খাইয়ে নিজে শাশুড়ির সঙ্গে খেতে বসল।

    মা তখন আবার টাকার প্রসঙ্গ তুললেন, বৌমা শোন, কিছু কিছু মেয়ে আছে, স্বামীর বাড়িকে নিজের বাড়ি মনে করতে পারে না। সুযোগ পেলেই বাপের বাড়িতে যা পারে। পাচার করতে চেষ্টা করে। মনে করে সেটাই আসল জায়গা। এটা ঠিক না। বিয়ের পর বাড়ি একটাই-স্বামীরবাড়ি।

    ভাবী শান্ত স্বরে বলল, আপনি চিন্তা করবেন না মা। আমি আর পাঠাব না। আর যেটা পাঠিয়েছি, সেটা সংসারের টাকা না। আমার নিজের টাকা।

    তোমার আবার টাকা এল কোত্থেকে।

    ও আমাকে মাঝে মাঝে কিছু হাতখরচ দেয়। সেটা আমি খরচ করি না।

    তোমার আবার আলাদা হাতখরচের দরকারটা কি? তুমি তো আর স্কুল-কলেজে যাও না যে রিকশা ভাড়া, বাস ভাড়া লাগবে? আর হাতখরচের সেই টাকাও তো সংসারের টাকা, ঠিক না?

     

    জানালায় আবার খটখট শব্দ হচ্ছে। শাহানা ভয়ে ভয়ে ডাকল, ভাবী, ও ভাবী। নীলু উঠে বসল।

    কি?

    জানালায় কিসের যেন শব্দ হচ্ছে।

    বাতাসের শব্দ। তুমি দেখ তো শাহানা কটা বাজে?

    আটটা।

    মাত্র আটটা?

    কী হয়েছে ভাবী?

    নীলু। জবাব দিল না। হঠাৎ তলপেটে একটা তীব্র ও তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা বোধ করল। অন্য কোনো শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এর জাত আলাদা। নীলুর চোখ ভিজে গেল। সোফা আঁকড়ে ধরে সে ব্যথার ধাক্কা সামলাতে চেষ্টা করল।

    এ-রকম করছ কেন ভাবী?

    নীলু ক্ষীণস্বরে বলল, মরে যাচ্ছি শাহানা শাহানা কী করবে ভেবে পেল না। তার গা কাঁপতে লাগল।

    সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িওয়ালার এক ভাগ্নে চিলেকোঠার ঘরটায় থাকে। সে নাকি? শাহানা গলা ফাটিয়ে ডাকল, আনিস ভাই, আনিস ভাই। কেউ জবাব দিল না।

    শাহানা দরজা খুলে বেরিয়ে এল। ফুটফুটে অন্ধকার, রাস্তায় বাতি নেই। সে ছুটে গেল। ডানদিকের একতলা বাড়িতে। বাড়িওয়ালা রশীদ সাহেব তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে থাকেন। সে বাড়ি তালা-বন্ধ। দোতলার বাড়িতেও কোনো পুরুষমানুষ নেই। রোগা এক জন মহিলা (যাকে শাহানা আগে কোনো দিন দেখে নি) বিরক্ত স্বরে বলল, ছোটাছুটি করে তো লাভ হবে না–টেলিফোন কর হাসপাতালে।

    কোথায় আছে টেলিফোন?

    রাস্তার ওপাশে হলুদ রঙের বাড়িটাতে যাও। বাড়ির সামনে কাঁঠাল গাছ আছে। চিনতে পারছি?

    শাহানা চিনতে পারল না–তবু ছুটে গেল। হলুদ বাড়ি। সামনে কাঁঠাল গাছ। রাস্তার দু পাশেই ঘন অন্ধকার। শীতের জন্যে দরজা-জানালা বন্ধ করে রেখেছে সবাই। কেমন ভূতুড়ে লাগছে চারদিক। পান-বিড়ির একটি দোকানে কয়েক জন ছোকরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে শাহানাকে। এক জন বুড়ো রিকশাওয়ালাও গভীর মনযোগে তাকিয়ে আছে।

    এই শাহানা। কি ব্যাপার?

    শাহানা কয়েক মুহূর্ত আনিসকে চিনতেই পারল না।

    খালিপায়ে কোথায় যাচ্ছ?

    বড়ো বিপদ আনিস ভাই। ভাবী যেন কেমন করছে।

    বাসায় কেউ নেই?

    না।

    তুমি বাসায় যাও, আমি বেবিট্যাক্সি নিয়ে আসি।

    আনিস দৌড়ে গেল বড়ো রাস্তার মোড়ের দিকে। সেখানে মাঝে মাঝে বেবিট্যাক্সি পাওয়া যায়।

     

    নীলুকে পিজিতে নেয়া হল রাত নটায়। মরণাপন্ন রোগীকে ডাক্তাররা নিতান্ত অবহেলায় ইমার্জেন্সিতে ফেলে রাখেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, সেটা বোধহয় ঠিক না।

    দুজন ডাক্তার নীলুকে তৎক্ষণাৎ অপারেশন টেবিলে নিয়ে গেলেন। একজন আনিসকে বললেন, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ, প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। রক্ত লাগবে। রক্তের ব্যবস্থা করুন।

    শাহানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে। আনিস কোনো কারণ ছাড়াই এক বার তিন তলায় উঠছে, এক বার নিচে নেমে যাচ্ছে। রক্তের ব্যবস্থা কী ভাবে করতে হয়, সে কিছুই জানে না।

    রাত নটা একচল্লিশ মিনিটে এক জন ডাক্তার এসে শাহানাকে বললেন, খুকি, কান্না থামাও। মেয়ে হয়েছে একটি। রোগী ভালোই আছে।

    বাচ্চাটি? বাচ্চাটি?

    খুব ভালো না, তবে ঠিক হয়ে যাবে।

    দাড়ি-গোঁফওয়ালা ডাক্তারটি হাসলেন। শাহানার ইচ্ছা হল সে প্রচণ্ড চিৎকার করে ঢাকা শহরের সবাইকে জানিয়ে দেয়, তোমরা শোন, আমাদের ভাবীর একটি মেয়ে হয়েছে। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারল না। ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগল, সে বড়ো ভয় পেয়েছে।

    ট্যাঁ-ট্যাঁ করে একটি বাচ্চা কাঁদছে। এটি কি তার বাচ্চা? এক জন নার্স কী যেন বলছে, কিছুই কানে যাচ্ছে না। নীলু চোখ মেলতে চেষ্টা করল, চোখ পাথরের মতো ভারি। কিছুতেই মেলে রাখা যাচ্ছে না। রাজ্যের ঘুম চোখে। চারপাশে কারা যেন হাঁটাহাঁটি করছে। মুখের ঠিক উপরে হলুদ আলো। চোখ বন্ধ, তবুও সে আলো কেমন করে যেন চোখের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।

    কাঁদছে! একটা ছোট্ট শিশু কেমন অদ্ভূত শব্দে কাঁদছে। বড়ো দেখতে ইচ্ছা করছে। নীলু ঘুমের অতলে তলিয়ে যাবার আগে পরিষ্কার শুনল, শাহানা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলছে।–ভাবী, তাকিয়ে দেখ তোমার বাবুকে।

    নীলু, ঘুমের মধ্যেই হাসতে চেষ্টা করল। নতুন শিশুটি কঠিন কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই এখন আর তার ভালো লাগছে না। পৃথিবীর আশা, আনন্দ, সুখ একদিন হয়তো তাকে স্পর্শ করবে, কিন্তু আজ করছে না। সে তার ছোট ছোট হাত মুঠি পাকিয়ে ক্রমাগত কাঁদছে।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }