Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    I, রোবট – আইজাক আসিমভ

    লেখক এক পাতা গল্প43 Mins Read0

    ১. প্রথম অধ্যায়

    I, রোবট – মূল : আইজাক আসিমভ / সায়েন্স ফিকশন – রোবট সিরিজ (৯টি ফিকশন) / অনুবাদ : সাদেকুল আহসান / আই রোবোট
    I, Robot by Isaac Asimov / First Published : 1950
    প্রথম প্রকাশ : বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯ / দ্বিতীয় প্রকাশ : বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০১২
    প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ

    .

    ভূমিকা

    নিজের নোটগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেরই মেজাজ চরমে উঠার অবস্থা। ইউ.এস রোবটস-এ আমি তিনদিন কাটিয়েছি এবং প্রায় একই সময়, বাসায় টেলুরিকা বিশ্বকোষ নিয়ে ধস্তাধস্তি করেও আমি কাটাতে পারতাম।

    তারা আমাকে বলেছে, ১৯৮২ সালের কোনো একটা সময়ে সুসান ক্যালভিনের জন্য, সেই অনুসারে এখন তার বয়স পঁচাত্তর হবার কথা। সঙ্গতভাবে, সবাই জানে যে ইউ.এস রোবটস আর যান্ত্রিক মানুষ ইনকের বয়সও পঁচাত্তর বছর, যেহেতু ড. ক্যালভিনের জন্মের বছরেই লরেন্স রবার্টসন পরবর্তীকালে মানুষের ইতিহাসে যা সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত হবে সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করেন। বেশ, মানলাম এটাও সবারই জানা।

    সুসান ক্যালভিনের যখন বিশ বছর বয়স, তখন তিনি ইউ,এস রোবটসের ড. অ্যালফ্রেড ল্যানিং যে নির্দিষ্ট সাইকো-ম্যাথ সেমিনারে কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট চলমান রোবট প্রদর্শন করেন সেই দলের সদস্য ছিলেন। সেটা ছিল একটা ঢাউস কুৎসিতদর্শন রোবট, মেশিন তেলের গন্ধে জারিত এবং বুধের খনিঅঞ্চল ছিল তার গন্তব্য।– কিন্তু মানেবহুল কথা বলতে পারদর্শী।

    সেই সেমিনারে সুসান কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল; সেমিনারের পরে অনুষ্ঠিত জোরালো আলোচনায় কোনো ধরনের অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত ছিল। সেই সময়ে সে ছিল গম্ভীর সাদাসিধে, চটকহীন এক মেয়ে, যে নিজের নাক উঁচু মনোভাব আর ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিজেকে তার অপছন্দের পৃথিবী থেকে আড়াল রাখতেই পছন্দ করতো। কিন্তু যতই সে দেখে আর আলোচনা শোনে, ততই নিজের ভিতরে একটা শীতল উত্তেজনা অনুভব করে।

    ২০০৩ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে তার স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে এবং সাইবারনেটিক্সে স্নাতকোত্তর কাজ শুরু করে।

    এসব বিশ শতকের মাঝামাঝি ‘হিসাবকারী যন্ত্রের’ যা উন্নতি সাধিত হয়েছিল রবার্টসনের পজিট্রনিক বেইন পাথ তার মেজাজ বিগড়ে দেয়। মাইলব্যাপী রিলে আর ফটোসেল মানুষের মস্তিষ্কের সমপরিমাণ স্পঞ্জি প্রাটিনামিরিডিয়াম গোলকের জন্য পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

    সে ‘পজিট্রনিক মস্তিষ্ক’এর ভিতরে সম্ভাব্য ভ্যারিয়েবল নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় প্যারামিটার গণনা করা আয়ত্ত করে; কাগজের উপরে মস্তিষ্ক গঠন করে, নির্ধারিত প্রভাবকের উপস্থিতিতে যার প্রতিক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

    ২০০৮ সালে সে তার পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করে, এবং ইউ,এস রোবটিকসে ‘রোবোমনোবিদ’ হিসাবে যোগ দেয় এবং এই নতুন বিষয়ের প্রথম মহান অধ্যয়নকারীতে পরিণত হয়। লরেন্স রবার্টসন তখনও কপোরেশনের প্রেসিডেন্ট; অ্যালফ্রেড ল্যানিং গবেষণা বিভাগের প্রধান।

    পরবর্তী পঞ্চাশ বছর সে মানব সমাজের অগ্রগতির দিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

    এখন তার আয়ত্তের মধ্যে যা কিছু ছিল করার পরে তিনি অবসর নিতে চলেছেন। অন্ততপক্ষে তার অফিসের দরজায় অন্য কারো নাম প্রদর্শনের বিষয়টার তিনি অনুমতি দিয়েছেন।

    বস্তুতপক্ষে এটুকুই আমার কাছে ছিল। আমার কাছে আরো ছিল তার প্রকাশিত নিবন্ধের একটা লম্বা তালিকা, তার নামে প্যাটেন্টের একটা তালিকা; তার পদোন্নতির একটা সময়ক্রমিক তালিকাও আমার কাছে ছিল।–সংক্ষেপে তার পেশাদার জীবনের সম্পূর্ণ একটা ভিটা আমার কাছে ছিল।

    কিন্তু আমি যা চাইছিলাম তা ছিল অন্য কিছু।

    ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রেসের পক্ষে আমার আসন্ন নিবন্ধের জন্য আমি অন্য কিছু একটা খুঁজছিলাম। অনেক বেশী কিছু।

    আমি তাকে সেটা খুলে ও বলি।

    ‘ড. ক্যালভিন,’ যতটা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব আমি বলতে চেষ্টা করি, মানুষের কাছে আপনি আর ইউ.এস রোবটস এক আর অভিন্ন একটা সত্তা। আপনার অবসরের সাথে সাথে একটা যুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং–’

    ‘তুমি মানুষের আগ্রহের দৃষ্টিভঙ্গিটা বিবেচনায় রাখতে চাইছো?’ সে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়। আমার মনে হয়না ভদ্রমহিলা জীবনে কখনও হেসেছেন। কিন্তু তার চোখ দু’টি অসম্ভব তীক্ষ্ণ যদিও তারা রাগী না। আমি টের পাই তার দৃষ্টি আমাকে আমার মস্তিষ্কের পশ্চাদ্ভাগ ভেদ করে বের হয়ে গিয়েছে এবং বুঝতে পারি আমি তার কাছে অসাধারণভাবে স্বচ্ছ; তার কাছে সবাই তাই।

    কিন্তু সাহস না হারিয়ে আমি বলি, ‘ঠিক ধরেছেন।’

    ‘রোবট সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ? একটা টানাপোড়েন।’

    ‘না, ডাক্তার। আপনার নিজের তাদের সম্পর্কে।’

    ‘বেশ, আমি নিজেকে একটা রোবট হিসাবেই বিবেচনা করি। তারা নিশ্চয়ই তোমাকে বলেছে যে আমি মানুষ না।’

    তারা বলেছে বটে, কিন্তু সেটা এখানে উল্লেখ করাটা অবান্তর

    সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। সে মোটেই লম্বা না এবং তাকে দুর্বল দেখায়। আমি তাকে অনুসরণ করে জানালার কাছে যাই এবং দু’জনে বাইরে তাকাই।

    ইউ.এস রোবটসের অফিস আর কারখানা নিজেই একটা ছোটখাটো শহর, পরিকল্পিত আর ছিমছাম। পুরোটা একটা এরিয়াল ফটোগ্রাফের মতো বিছিয়ে রয়েছে।

    ‘আমি প্রথম যখন এখানে আসি,’ সে বলে, এখন যেখানে অগ্নিনির্বাপকের অফিস সেখানে একটা ভবনের ছোট্ট কামরায় ছিল আমার অফিস?’ সে আঙ্গুল দিয়ে জায়গাটা দেখায়। ‘তোমার জন্মের আগেই সেটাকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমার সাথে তখন আয়ো তিনজন ছিল সেই কামরায়। একটা ডেস্কের অর্ধেকটা আমি ভাগে পেতাম। আমরা আমাদের সব রোবটই তখন একটা ভবনেই তৈরী করতাম। সপ্তাহে তিনটা রোবট। আর আজ আমাদের দেখ।’

    ‘পঞ্চাশ বছর,’ নাছোড়বান্দার মতো আমি বলি, অনেক দীর্ঘ সময়।

    ‘পিছনে তাকিয়ে আজ কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না,’ মৃদু কণ্ঠে সে বলে। ‘তুমি অবাক হচ্ছে কিভাবে এত দ্রুত তারা হারিয়ে গেল ভেবে।’

    সে আবার তার ডেস্কের কাছে ফিরে আসে এবং চেয়ারে বসে। কোনোভাবে, চেহারায় বিষণ্ণতা ফুটিয়ে না তুলেও সে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারে।

    ‘তোমার বয়স কত?’ সে আমার কাছে জানতে চায়।

    ‘বত্রিশ চলছে,’ আমি বলি।

    ‘তাহলে রোবটবিহীন পৃথিবীর কোনো স্মৃতি তোমার নেই। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দিকে একাকী তাকিয়ে থাকতো নিঃসঙ্গ বন্ধুহীন। এখন তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ রয়েছে, তার চেয়ে শক্তিশালী, অনেক বিশ্বস্ত অনেক বেশী কার্যকর আর পুরোপুরি তার প্রতি সমর্পিত। মানুষ এখন আর একা না। এভাবে কখনও ব্যাপারটা ভেবে দেখেছ?’

    ‘সত্যি বলতে কি না। আমি কি আপনার কথাটা উদ্ধৃত করতে পারি?

    ‘তোমার ইচ্ছা। তোমার কাছে রোবট কেবলই একটা রোবট। গিয়ার আর ধাতু; বিদ্যুৎ আর পজিট্রনের সমাহার– মন আর ইস্পাতের সমন্বয়! মানুষের সৃষ্টি! প্রয়োজন হলে, মানুষের দ্বারা ধ্বংস হবে! কিন্তু তুমি কখনও তাদের সাথে কাজ করনি, তাই তুমি তাদের জানো না। তারা আমাদের চাইতে অনেক পরিচ্ছন্ন একটা জাত।’

    আমি তাকে ধীরে ধীরে কথার দ্বারা উত্তেজিত করতে চেষ্টা করি, ‘আমি আপনার কাছে আপনার অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই; রোবট সম্পর্কে আপনার মনোভাবের কথা জানতে চাই। পুরো সৌর-জগতে আন্তঃগ্রহ প্রেস তারাবার্তা পৌঁছে দিতে আজ, সক্ষম। সম্ভাব্য পাঠকের সংখ্যা তিনশো কোটি। রোবট সম্পর্কে তারা আপনার মতামত শুনতে আগ্রহী।’

    তাকে উত্তেজিত করার আসলে কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমার কথা সে শুনতেই পায়নি কিন্তু ঠিক দিকেই সে চলেছে।

    .

    ‘শুরু থেকেই তারা সেটা জানে। আমি এখানে যোগ দেবার আগে থেকে–পৃথিবীতে ব্যবহার উপযোগী রোবট আমরা বিক্রি করেছি। অবশ্য সে সময়ের রোবট কথা বলতে পারতো না। পরবর্তীকালে তারা অনেকাংশে মানবিক হয়ে উঠে আর তখনই শুরু হয় গোলমাল, বিতর্কের জন্ম হয়। মানুষের কাজের সাথে রোবটের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরুদ্ধে শ্রমিক সংঘগুলো জোরালো প্রতিবাদ শুরু করে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ তাদের সংস্কারপূর্ণ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠে। পুরোটাই ছিল হাস্যকর আর অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু তারপরেও তারা করে।’

    আমার পকেট রেকর্ডারে আমি মাছিমারা কেরানির মতো সব তুলে নিতে থাকি, আমার হাতের আঙ্গুলের নড়াচড়া যাতে চোখে না পড়ে সে দিকেও লক্ষ্য রাখি। একটু অভ্যেস করলেই পকেট থেকে বের না করেও যে কেউ দক্ষতার সাথে ছোট যন্ত্রটায় সবকিছু তুলতে পারবে।

    ‘রোব্বির কথাই ধর,’ সে বলে। ‘আমি তাকে চিনতাম না। আমি যোগ দেবার আগের বছরে তাকে বিযুক্ত করা হয়েছিল–কার্যকারিতার দিন শেষ হবার কারণে। কিন্তু জাদুঘরে সেই ছোট্ট মেয়েটাকে আমি দেখেছি–’

    সে থামে, কিন্তু আমিও কোনো কথা বলি না। আমি দেখি তার চোখ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে উঠেছে আর মনটা চলে গেছে স্মৃতির গভীরে। অনেকটা সময় পিছনে তাকে যেতে হয়েছে।

    ‘আমি পরে ব্যাপারটা সম্পর্কে শুনি এবং তখন তারা আমাদের ঈশ্বরদ্রোহী আর শয়তানের স্রষ্টা হিসাবে যখন অভিহিত করতে থাকে। আমার সব সময়ে তার কথা মনে হত। রোব্বি ছিল কণ্ঠস্বরহীন একটা রোবট। সে কথা বলতে পারতো না। তাকে ১৯৯৬ সালে তৈরী আর বিক্রি করা হয়েছিল। সেটা ছিল প্রকট বিশেষায়িত শ্রমের আগের দিনগুলো, তাকে তাই আয়া হিসাবে বিক্রি করা হয়েছিল–’

    ‘কি হিসাবে?’

    ‘আয়া বা তোমরা যাকে বুয়া বলে থাক–’

    .

    সূচিপত্র

    প্রথম অধ্যায়
    তুর্কিনাচ
    কারণ-অকারণ
    ফেরারী রোবট
    মিথ্যেবাদী!
    নিখোঁজ খুদে রোবট
    পলায়ন
    প্রত্যয়ন
    অনিবার্য সংঘাত

    .

    ১. প্রথম অধ্যায়

    “আটানব্বই- নিরানব্বই- একশ।” চোখের সামনে থেকে গ্লোরিয়া তার নাদুসনুদুস হাত দু’টো সরিয়ে, এক মুহূর্ত একটু দাঁড়ায় এবং হাতের উল্টো পিঠে নাক ডলতে ডলতে সূর্যের আলোতে চোখ। পিটপিট করে। তারপরে যে গাছের গায়ে সে এতক্ষণ হেলান দিয়ে ছিল সেটার কাছ থেকে কয়েক পা সরে এসে চারপাশটা একবারে দেখে নিতে চেষ্টা করে।

    ঘাড় উঁচু করে ডানপাশে একটা ঝোঁপের সম্ভাবনা যাচাই করে নিয়ে আরও কয়েক পা সরে আসে ভালো করে তার নিচে বিছিয়ে থাকা অন্ধকার পর্যবেক্ষণের অভিপ্রায়ে। ক্রমাগত ঝিল্লীর গুঞ্জন ছাড়া চারপাশে চাপচাপ নিরবতা এবং মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যালোকে মাঝে মাঝে পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়।

    ঠোঁট বেঁকিয়ে গ্লোরিয়া বলে, “আমি বাজি ধরে বলতে পারি সে বাসায় লুকিয়েছে আর অন্তত হাজারবার আমি তাকে বলেছি ব্যাপারটা চিট-এর পর্যায়ে পড়ে।”

    ছোট ছোট ঠোঁট দুটো শক্ত করে চেপে বসে এবং ভ্রুকুটির কারণে কোঁচকানো কপালে সে ধুপধাপ পা ফেলে ড্রাইভওয়ে অতিক্রম করে দোতলা বাসাটার দিকে হাঁটা ধরে।

    হাঁটামাত্র পেছন থেকে ভেসে আসা মড়মড় শব্দ সাথে রোব্বির ধাতব পায়ের ছন্দোবদ্ধ আর যান্ত্রিক থপথপে সে টের পায় বড্ড দেরী হয়ে গেছে। দ্রুতবেগে ঘুরে দাঁড়াতেই সে তার বিজয়ী বান্ধবকে গুপ্ত স্থান থেকে বের হয়ে পূর্ণদ্যোমে বুড়ি ছুতে ছুটে যেতে দেখে।

    হতাশ গ্লোরিয়া তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠে। “রোব্বি দাঁড়াও! রোব্বি এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না! তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে আমি তোমাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তুমি দৌড়াবে না।” বেচারীর ছোট ছোট পায়ের ধাপ রোব্বির দানবীয় ধাপের সাথে এটে উঠতে পারে না। তারপরে, বুড়ি ছোঁয়ার মাত্র দশফিট আগে দানবটার গতি পিঁপড়েকেও হার মানাবে এমন শ্লথ হয়ে যায়, আর গ্লোরিয়া, পড়িমড়ি করে সাধ্যের শেষ দমটুকু জুটিয়ে নিয়ে ছুট দেয় আর হাঁফাতে হাঁফাতে তাকে অতিক্রম করে বুড়ি ছোবার প্রথম উফুল্ল চিৎকারটুকু নিজের করে নেয়।

    আনন্দে চোখমুখ ঝালিয়ে নিয়ে, সে তার চিরবিশ্বস্ত রোব্বির দিকে এবার ঘুরে তাকায়, এবং তার আত্মত্যাগকে পুরস্কৃত করে তার দৌড়াবার অক্ষমতাকে নিষ্ঠুরভাবে উত্যক্ত করে, সাথে যুক্ত হয় অকৃতজ্ঞ শব্দযুক্ত আরও অনেক বাক্য।

    “ছিঃ ছিঃ রোব্বি দৌড়াতে পারে না,” আট বছরের কণ্ঠকে তীক্ষ্ণতার সপ্তমে নিয়ে গিয়ে সে বলে। “আমি যখন খুশি তোমাকে হারাতে পারবো। আমি যখন তখন তোমাকে হারাতে পারবো।” কর্কশ কর্ণবিদারী ছন্দে সে শব্দগুলো আওড়াতে থাকে।

    রোব্বি কোনো উত্তর দেয় না, অবশ্যই শোনা যায় এমন কোনো শব্দ বা শব্দাংশ সে ব্যবহার করে না। তার বদলে নির্বাক ভাঁড়ামিপূর্ণ ভঙ্গিতে সে গ্লোরিয়ার ঠিক নাগালের বাইরে দৌড়াতে দৌড়াতে সাবলীল ভঙ্গিতে প্রতিবারই তার নাগালের বাইরে থাকলে একটা সময়ে গ্লোরিয়া দেখে সেও তার পেছন পেছন অসহায়ভাবে বৃত্তাকারে দৌড়াচ্ছে, ছোট ছোট হাত দুটো প্রসারিত এবং বাতাসে আন্দোলিত হতে থাকে।

    “রোব্বি,” সে তীব্র অভিযোগের কণ্ঠে বলে, “চুপটি করে দাঁড়াও বলছি!”–এবং বাতাসের অভাবে খাবি খেলে হাসি আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।

    -যতক্ষণ না সে সহসা ঘুরে দাঁড়ায় এবং তাকে তুলে নিয়ে শূন্যে ঘোরাতে থাকে ফলে এক মুহূর্তের জন্য চারপাশের পৃথিবী নভোনীলের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে এবং সবুজ বৃক্ষরাজি ক্ষুধার্ত ভঙ্গিতে বিস্তারিত হয়ে নিচের শূন্যতায় মিলিয়ে যায়। পরমুহূর্তে সে নিজেকে ঘাসের উপরে বসে থাকতে দেখে, দানবটার যান্ত্রিক পায়ের কাছে ঝুঁকে রয়েছে, এবং তখনও সে তার একটা ধাতব আঙ্গুল আঁকড়ে রয়েছে।

    কয়েক মুহূর্ত পরে তার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে। মাকে নকল করে মাথার এলোমেলো চুলগুলোকে খামোখাই হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দেয় এবং পরমুহূর্তে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে কাপড় ছিঁড়েছে কিনা। রোব্বির বুকে সে হাত দিয়ে আঘাত করে, “পচা ছেলে! আমি তোমাকে মারব!”

    এবং রোব্বি ভয়ে গুটিসুটি হয়ে, হাত দিয়ে মুখ ঢাকলে সে তখন আরও যোগ করে, “না, আমি মোটেই তা করবো না। না, আমি তোমাকে মারবো না। কিন্তু যাইহোক, এবার আমার লুকাবার পালা কারণ তোমার ঠ্যাঙগুলো বেজায় লম্বা আর তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে আমি তোমাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তুমি দৌড় দেবে না।”

    রোব্বি বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ে- মাথা বলতে ছয়তলবিশিষ্ট একটা ছোট প্রিজমাকৃতি বস্তু যার প্রান্তগুলো গোলাকার এবং যার কিনারাটা একটা ছোট নমনীয় সংযোগের দ্বারা বৃহদাকৃতি আরেকটা প্রিজমের সাথে সংযুক্ত যা দেখতে অনেকটা, মানবদেহের মতো এবং সুবোধ ছেলের মতো গাছের দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। তার উজ্জ্বল চোখের উপরে একটা পাতলা ধাতব পর্দা নেমে আসে এবং দেহের অভ্যন্তর থেকে একটা নিয়মিত ধাতব প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

    “এখনই উঁকি দিও না আর কোনো সংখ্যা যেন বাদ না যায়,” সমঝে দিয়ে গ্লোরিয়া হন্তদন্ত হয়ে লুকাতে যায়।

    কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই, সেকেন্ডের পলক পড়তে থাকে এবং একশ হবার সাথে সাথে রোব্বির চোখের উপর থেকে ঢাকনি উঠে গেলে সে তার চকচকে চোখে চারপাশের সম্ভাব্য স্থানগুলো রেকি করতে আরম্ভ করে। একটা পাথরের পেছন থেকে বের হয়ে থাকা রঙিন কাপড়ের উপরে তার দৃষ্টি সামান্য সময় থমকে থাকে। সে কয়েক পা এগিয়ে আসে এবং নিশ্চিত হয় যে গ্লোরিয়া সেটার পেছনে উবু হয়ে আছে।

    গ্লোরিয়া আর বুড়ি-গাছের মাঝে সব সময় অবস্থান করে, ধীরে ধীরে সে গুপ্তস্থানের দিকে এগোতে থাকে এবং গ্লোরিয়া যখন দৃষ্টিসীমার ভেতরে চলে আসে এবং কোনো মতেই যখন আর নিজেকে প্রবোধ দেয়া সম্ভব না কেবল তখনই সে তার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়, অন্যহাত দিয়ে নিজের পায়ে আঘাত করে যাতে সেটা পুনরায় বেজে উঠে। গোমড়া মুখে গ্লোরিয়া বের হয়ে আসে।

    “তুমি আগেই উঁকি দিয়েছো!” সে হতাশ কণ্ঠে বলে, গলায় তার অন্যায্য সুর। “আর তাছাড়া লুকোচুরি খেলতে খেলতে আমি হেঁদিয়ে গেছি, আমি ঘোড়ায় চড়বো।”

    কিন্তু অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করায় রোব্বি কষ্ট পায়, সে সাবধানে বসে এবং অভিমানভরে মাথা নাড়তে থাকে।

    ঔষধে কাজ হয় সাথে সাথে গ্লোরিয়ার কণ্ঠস্বর অমায়িক আদুরে, “রোব্বি এমন করে না, উঁকি দেবার কথাটা আমি সত্যি সত্যি বলিনি, বাবা। এবার খুশীতো। এবার তুমি ছোঁড়া হও।”

    রোব্বি অবশ্য এত সহজে হার মানে না। গোবিন্দ গোঁয়ারের মতো সে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে থাকে এবং আগের চেয়েও দৃঢ়ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে চলে।

    “প্লিজ, রোব্বি আমি ঘোড়ায় চড়বো।” ধাতব-বান্ধবের গলা তার গোলাপি তুলতুলে হাতে শক্ত করে সে জড়িয়ে ধরে। তারপরে, কি মনে হতে, সে গলা থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সরে বসে। “তুমি যদি ঘোড়া না হও, আমি কিন্তু তাহলে কাঁদব,” কথাটা যে মিথ্যা না সেটা বোঝাতে সে তার মুখে কান্নার পূর্বাভাস ফুটিয়ে তোলে।

    ইস্পাতহৃদয় রোব্বি ভয়াবহ সম্ভাবনাটাকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে ৩তীয়বারের মতো মাথা নাড়ে। গ্লোরিয়া এবার বাধ্য হয় তার শেষ আর মোক্ষম চা|ল দিতে।

    “তুমি যদি ঘোড়া না হও,” প্রাণবন্ত কণ্ঠে সে ঘোষণা করে, “আমি আর (তামাকে কোনো গল্প শোনাব না, এটাই আমার শেষ কথা। একটা গল্পও-”

    চরমপত্রে কাজ হয়, রোব্বি সাথে সাথে এবং নিঃশর্তে রাজি হয়, সবেগে মাথা নাড়তে থাকে, এবার অবশ্য অন্য উদ্দেশ্যে, যতক্ষণ না তার ধাতব ঘাড়ে গুঞ্জন শোনা না যায়। সাবধানে বাচ্চা মেয়েটাকে সে এবার তুলে নিয়ে তার চওড়া,সমান কাঁধে বসিয়ে দেয়।

    গ্লোরিয়ার কান্না কোথায় উবে যায় এবং আনন্দে বাচ্চা মেয়েটা অস্থির হয়ে উঠে। শরীরের অভ্যন্তরে স্থাপিত কয়েলের সাহায্যে রোব্বির দেহের ধাতব বহিরাবরণের তাপমাত্রা সর্বদা সত্তরে স্থির রাখা হয়, গ্লোরিয়ার পায়ের জুতা তার ধাতব বুকে আঘাত করলে ছন্দোবদ্ধ একটা সুরের জন্ম হয়।

    “তুমি একটা পঙ্খিরাজ ঘোড়া। বিশাল সাদা একটা পঙ্খিরাজ ঘোড়া। তোমার হাত দু’টো সোজা বাড়িয়ে রাখো।- হাত দুটো সোজা রাখতেই হবে রোব্বি, যদি তুমি আমার পঙ্খিরাজ ঘোড়া হতে চাও।”

    একটা অমোঘ যুক্তি কাজ করে পুরো ব্যাপারটার পেছনে। রোব্বির হাত দুটো হল ডানা যার কাজ হল বাতাস কাটা আর রোব্বি নিজে হল পঙ্খিরাজ ঘোড়া।

    লাগাম ধরে টানার মতো গ্লোরিয়া মাথাটা মোচড় দেয় এবং ডানদিকে ঘোরায়। পঙ্খিরোব্বি কাত হয়ে তীক্ষ্ণ বাঁক নেয়। গ্লোরিয়া তার যান্ত্রিক পঙ্খিরাজে একটা মোটর সংযুক্ত করে যা “ব্রা-ব্রার-ব্রাব্রার” আওয়াজ করে, এবং তারপরে “পোওও” আর “শশ-শশশশ” শব্দে অস্ত্র সজ্জিত করে। পঙ্খিরাজকে জলদস্যুরা তাড়া করতে সে ব্লাষ্টার বের করে। অঝোর বর্ষণে জলদস্যুদের দফারফা হয়ে যায়।

    “ঐ একটাকে ঘায়েল করেছি।–আরো দুটো সাবাড়,” সে চিৎকার করতে থাকে।

    তারপরে “আরো জোরে চল,” গ্লোরিয়া উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে, “আমাদের গোলাবারুদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।” অদম্য সাহসে কাঁধের উপর দিয়ে সে হাতের অস্ত্র তাঁক করে এবং রোব্বি ভোতামুখো যান্ত্রিক পঙ্খিরাজ ধ্বংসযজ্ঞের উপর দিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে উড়ে চলে।

    লম্বা ঘাসের গালিচা লক্ষ্য করে খোলা মাঠের উপর দিয়ে সে উড়ে গিয়ে হঠাৎ থামতে তার উৎসাহী আরোহী আর্তনাদ করে উঠে এবং সে তাকে সবুজ ঘাসের নরম আস্তরণে টুপ করে ফেলে দেয়।

    রুদ্ধশ্বাসে হাঁফাতে থাকে গ্লোরিয়া এবং তারই মাঝে হতবাক বিস্ময়ে গুনগুন করে, “অসাধারণ একটা ব্যাপার!”

    মেয়েটা দম ফিরে পাওয়া পর্যন্ত রোব্বি অপেক্ষা করে এবং তার পরে আস্তে করে তার চুলের ঝুটি ধরে টান দেয়।

    “তোমার কিছু লাগবে?” গ্লোরিয়া চোখে ভাজা মাছ উল্টাবার নিয়ম না জানা একটা ভাব ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে তবে তার “সেবকআয়া” তাতে মোটেই ভুলে না। সে এবার একটু জোরে চুল টানে।

    “ওহ, আমি জানি। তুমি গল্প শুনতে চাও?”

    রোব্বি যান্ত্রিক বেগে মাথা নাড়ে।

    “কোনটা?”

    এক আঙ্গুলে রোব্বি বাতাসে একটা অর্ধ-বৃত্ত আঁকে।

    ছোট মেয়েটা প্রতিবাদ করে, “আবার? সিনডারেলার গল্প আর না হোক হাজারবার আমি বলেছি তোমাকে। তোমার কি একটুও ক্লান্ত লাগে না?- ওটা দুগ্ধপোষ্যদের গল্প।”

    আরেকটা অর্ধ-বৃত্ত।

    “ঠিক আছে,” গ্লোরিয়া গুছিয়ে বসে বলে, মনে মনে পুরো গল্পটা একবার ভেবে নেয় (তার নিজস্ব সংযোজিত অংশগুলোও, বেশ কয়েকটা জায়গায় সে নিজে সংযোজন করেছে) এবং শুরু করে :

    “তুমি তৈরী? বেশ–কোনো এক সময়ে এলা নামে একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে ছিল। এবং তার ছিল এক ভয়ানক নিষ্ঠুর সৎ-মা আর তার চাইতেও কুৎসিত আর আরো বেশী নিষ্ঠুর দুটো সৎ-বোন এবং—”

    .

    গ্লোরিয়া গল্পের চরম পরিণতির কাছাকাছি পৌঁছায়- মধ্যরাত্রি প্রায় সমাগত এবং সবকিছু চোখের নিমেষে আবার তাদের জীর্ণ আদল ফিরে পায়, ধাতব চোখে যান্ত্রিক উত্তেজনা নিয়ে রোব্বি গোগ্রাসে গল্প শুনে- ঠিক তখনই সবকিছুতে ছেদ পড়ে।

    “গ্লোরিয়া!”

    একবার না বেশ কয়েকবার ডেকেছে এমন এক মহিলার তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর ভেসে আসে; এবং তার বিচলিত কণ্ঠস্বরই বলে দেয় অসহিষ্ণুতা উৎকণ্ঠার কাছে পরাভব মানছে।

    “মা আমায় ডাকছে,” গ্লোরিয়া বলে, তার কণ্ঠে অসন্তোষ চাপা থাকেনা। “রোব্বি তুমি বরং আমায় বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে চল।”

    কোনোপ্রকার দ্বিধা না করেই, রোব্বি মিসেস.ওয়েসটনের আদেশ পালন করে কারণ কোনোভাবে তার মনে হয় সেটাই যুক্তিসঙ্গত হবে, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে তার ডাকে সাড়া দেয়। রবিবার ছাড়া গ্লোরিয়ার বাবা দিনের বেলা সাধারণত বাসায় থাকে না- আজ যেমন রবিবার এবং বাসায় সে একজন সহমর্মী আর আন্তরিক ব্যক্তি। অন্যদিকে গ্লোরিয়ার মাকে রোব্বি একটু সমঝে চলে এবং সবসময়ে সে চেষ্টা করে তার দৃষ্টির আড়ালে থাকতে।

    লম্বা ঘাসের আড়াল ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মিসেস ওয়েসটন তাদের দেখতে পায় এবং বাসায় প্রবেশ করে অপেক্ষা করতে থাকে।

    “গ্লোরিয়া চেঁচাতে চেঁচাতে আমার গলা ব্যথা হয়ে গেছে,” কঠোর স্বরে সে বলে। “কোথায় ছিলে তুমি?”

    “আমি রোব্বির সাথে ছিলাম,” আড়ষ্ঠ কণ্ঠে গ্লোরিয়া উত্তর দেয়। আমি তাকে। সিনডারেলার গল্পটা বলছিলাম আর তাই খাবারের সময় যে হয়েছে সেটা মনেই ছিল না।”

    “বেশ, কিন্তু রোব্বিও যে সেটা ভুলে যাবে সেটাই দুঃখজনক।” তারপরে যেন। তার রোবটের কথা মনে পড়েছে এমনভাবে সে তার দিকে ঘুরে তাকায়।”রোব্বি, এখন তুমি যেতে পারো।তোমাকে এখন আর তার প্রয়োজন নেই।” তারপরে ইচ্ছাকৃতভাবেই রূঢ় স্বরে বলে, “আমি আবার ডাকা না পর্যন্ত তোমার আর আসবার দরকার নেই।”

    রোব্বি যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ায়, কিন্তু গ্লোরিয়া তার হয়ে সাফাই দিতে শুরু করলে ইতস্তত করে, “মা দাঁড়াও, ওকেও তোমায় থাকতে দিতে হবে। সিনডারেলার গল্প বলা আমার এখনও শেষ হয়নি। আমি ওকে কথা দিয়েছি সিনডারেলার গল্প বলবো আর আমি এখন পুরোটা শেষ করিনি।”

    “গ্লোরিয়া!”

    “মা, সত্যি, ও একদম চুপ করে থাকবে তুমি টেরও পাবে না যে সে বাসায় আছে। একটা কোণায় ও বসে থাকবে এবং কোনো কথা বলবে না, মানে আমি বলছি সে কিছু করবে না। তাই না রোব্বি?”

    রোব্বি তার ঢাউস মাথাটা আবেদনের ভঙ্গিতে একবার উপরে নিচে করে।

    “গ্লোরিয়া তোমার এই ফাজলামো এখনই বন্ধ করো, না হলে আগামী এক সপ্তাহ তুমি রোব্বির দেখা পাবে না।”

    বাচ্চা মেয়েটার চোখে অভিমান ঝিলিক দেয়, “ঠিক আছে! কিন্তু সিনডারেলা ওর প্রিয় গল্প আর আমারও পুরোটা বলা হয়নি।–আর সে যে কি পছন্দ করে গল্পটা।”

    পায়ে অসন্তোষ ফুটিয়ে তুলে রোবটটা ফিরে গেলে গ্লোরিয়া আবার গুমরে কেঁদে উঠে।

    .

    জর্জ ওয়েসটন ব্যাপারটা খুব একটা পাত্তা দেয়না। রবিবার কোনো কিছু নিয়ে মাথা না ঘামানোটাই তার অভ্যেস। একটু পরেই টেবিলে সুস্বাদু খাবার দেয়া হবে; একটা সুন্দর, নরম, আর পুরাতন সোফা রয়েছে খাবার পরে ভাতঘুম দেবার জন্য; টাইমসের নতুন সংখ্যাটাও নাগালে রয়েছে; পায়ে চপ্পল আর উদোম গা; –এরপরেও কেউ কিভাবে অন্য খুটিনাটি বিষয়ে মাথা ঘামায়?

    স্ত্রীকে যখন সে হেঁটে আসতে দেখে তখন সে মোটেই খুশী হতে পারে না। তাদের বিয়ের দশ বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও, আজও সে তাকে প্রথম দিনের মতোই ভালোবাসে, আহাম্মক আর কাকে বলে? সে যখনই তাকে দেখে তখনই তার হৃদয় প্রেমে আপ্লুত হয়ে উঠে–কিন্তু তারপরেও রবিবারের দুপুরবেলা খাবার পরের সময়টুকু তার কাছে মহার্ঘ্য এবং বিশ্রাম মানে দু’তিন ঘণ্টা নিশ্চিন্ত নির্জনতায় শুয়ে থাকা। মঙ্গল গ্রহে লেফেবব্রে-ইয়োশিদা অভিযানের বিস্তারিত বিবরণের উপরে সে, বেশ গুরুত্বসহকারে মনোনিবেশ করে (এবারের অভিযান লুনার বেস থেকে উৎক্ষেপিত হবে এবং সে জন্য সাফল্য আশা করা যায়) এবং এমন ভাব দেখায় যেন তার কোনো অস্তিত্বই নেই।

    মিসেস, ওয়েসটন দুমিনিট ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপরে অসহিষ্ণুচিত্তে আঃ1ও দুমিনিট এবং শেষে যথারীতি নিরবতায় বিঘ্ন ঘটান।

    “জর্জ!”

    “হুমমম?”

    “জর্জ, কথা আছে, শোনো বলছি! কাগজটা নামিয়ে রেখে একবার আমার দিকে তাকাবে?”

    কাগজটা মেঝেতে ছুঁড়ে দিয়ে ওয়েসটন উদ্বিগ্ন চোখে স্ত্রীর দিকে তাকায়, “কি হয়েছে, সোনা?”

    “জর্জ তুমি ভালো করেই জানো কি হয়েছে। ব্যাপার গ্লোরিয়া আর জবড়জং যন্ত্র।”

    “কোনো জবড়জং যন্ত্র?”

    “ভাব দেখলে গা জ্বলে যায়, তুমি জানো না আমি কিসের কথা বলছি। রোবট, গ্লোরিয়া যেটাকে আদর করে রোব্বি বলে ডাকে। এক মুহূর্তের জন্যেও হতভাগাটা গ্লোরিয়ার পিছু ছাড়ে না।”

    “বেশ কথা, কেন সে সেটা করবে? সেটাতো তার করার কথা না। আরেকটা কথা সে মোটেই কোনো জবড়জং যন্ত্র না। টাকা দিয়ে এর চাইতে ভালো অনুভূতিসম্পন্ন রোবট কেনা সম্ভব না আর আমার ছয়মাসের বেতন খর্চা গেছে জবড়জংটা কিনতে। অবশ্য, সেটা তার তুল্যমূল্যআমার অফিসের অর্ধেক লোকের চাইতে সে চালাক, আর বুদ্ধিমান।”

    সে মেঝে থেকে কাগজটা কুড়িয়ে নেবার একটা চেষ্টা করে কিন্তু তার স্ত্রী তার চাইতে অনেক বেশী চটপটে সে অনায়াসে সেটা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।

    “জর্জ আমার কথা মন দিয়ে শোনো, আমি আমার মেয়েকে একটা যন্ত্রের জিম্মায় ছেড়ে দিতে পারব না। আর সেটা আইনস্টাইনের মতো চালাক হলেও আমার তাতে বয়েই গেছে। একটা ধাতব টুকরো দিয়ে একটা বাচ্চা মেয়েকে পাহারা দেবার কোনো মানে হয় না।”

    ওয়েসটন ভ্রু কোঁচকায়, “এই মহান সিদ্ধান্তটা তুমি ঠিক কখন নিলে? গত দু’বছর ধরে ধাতব টুকরোটা গ্লোরিয়ার সাথে সাথে আছে আজকের আগে তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে দেখেছি বলে আমারতো মনে পড়ে না।”

    “শুরুতে ব্যাপারটা আলাদা ছিল। পুরো ব্যাপারটাই ছিল অনন্য, আমার কাজের বোঝা অনেক কমিয়ে দিয়েছিল, এবং তখন সেটাই ছিল কেতাদুরস্ত। কিন্তু এখন, আমি ঠিক জানি না। প্রতিবেশীরা–”

    “যা বাবা, প্রতিবেশীরা আবার কোথা থেকে আসলো, এর মাঝে। আচ্ছা, শোনো। সেবকয়ার চাইতে একটা রোবট অনন্ত গুণ বেশী বিশ্বস্ত। রোব্বিকে কেবল একটা কাজের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। আর সেটা হল বাচ্চাদের সঙ্গ দেয়া। তার সম্পূর্ণ ‘মানসিকতা’ কেবল এই উপলক্ষকে মাথায় রেখে তৈরী করা হয়েছে। স্নেহময় আর বিশ্বস্ত হওয়া ছাড়া সে আর কিছু জানেই না। সে একটা যন্ত্র আর তাকে সেভাবেই তৈরী করা হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রে কথাটা তুমি এভাবে। বলাতে পারবে না।”

    “কিন্তু কোনো গোলমাল হলে। কোনো কোনো-” রোবটের ভিতরের কলকজা সম্পর্কে মিসেস, ওয়াটসন ক অক্ষর গোমাংস, “ভেতরে একটা কোনো নাট খুলে গিয়ে ভয়াল যন্ত্রটা ধরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং এবং–” সে তার কল্পনাটাকে আর বাক্যে প্রকাশ করতে সাহস পায় না।

    “যত সব উদ্ভট কল্পনা,” একটা অনভিপ্রেত বিচলিত কাঁপুনির সাথে ওয়েসটন তাকে নাকচ করে দেয়।”তোমার যুক্তি শুনে গাছের পাতাও হাসবে। রোব্বিকে কেনার আগে তোমার সাথে রোবটিকসের প্রথম সূত্র নিয়ে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। তুমি ভালো করেই জানো কোনো রোবটের পক্ষে মানুষের অনিষ্ট করা সম্ভব না; প্রথম সূত্রকে নাকচ করতে যতখানি বিঘ্ন ঘটানো প্রয়োজন তার অনেক আগেই একটা রোবট অকার্যকর হয়ে পড়বে। গাণিতিকভাবেই ব্যাপারটা অসম্ভব। তাছাড়া প্রতিবছর ইউ.এস রোবটস থেকে একজন বিশেষজ্ঞ দু’বার এসে বেচারার কর্মকুশলতা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে যায়। এসব কথা কেন বলছো, তোমার বা আমার সহসা মানসিক ভারসাম্য হারাবার চাইতে রোব্বির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেবার সম্ভাবনা অনেক কম- নেই বললেই চলে। তাছাড়া, গ্লোরিয়াকে তুমি কিভাবে তার কাছ থেকে আলাদা করবে?”

    সে আরেকবার বৃথা চেষ্টা করে খবরের কাগজটা হাতাবার এবং তার স্ত্রী সেটা ছুঁড়ে ফেলে অন্য ঘরে চলে যায়।

    “এটাই আমার শেষ কথা জর্জ! সে আর কারও সাথে খেলবে না। পাড়ায় গণ্ডা খানেক তার বয়সী ছেলে মেয়ে আছে কিন্তু মহারানী কারও সাথেই মিশবেন না। আমি জোর না করলে সে তাদের ধারেকাছেও যাবে না। একটা বাচ্চামেয়ের বেড়ে ওঠার জন্য এটা মোটেই কোনো স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি না। তুমি চাও না আর দশটা স্বাভাবিক মেয়ের মতো সে বেড়ে উঠুক, চাও না? সমাজের অগ্রগতিতে সে অংশগ্রহণ করুক এটা তুমিও চাও?”

    “গ্রেস, রজ্জুতে তোমার সর্প ভ্রম হচ্ছে। রোব্বি একটা পোষা কুকুর, এমনটা ভেবে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। আমি এমন অন্তত একশটা ছেলের নাম বলতে পারি যারা তাদের পোষা কুকুরকে নিজের বাবার চাইতে বেশী পছন্দ করে।”

    “জর্জ, কুকুরের ব্যাপারটা আলাদা। আমি ঐ জবরজংটার হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছি। কোম্পানির কাছে ফিরিয়ে দেয়া যায় না। আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, এবং সেটা করা সম্ভব।”

    “তুমি খোঁজ নিয়ে দেখেছো? গ্লোরিয়া শোনো, ব্যাপারটাকে আর বেশী জটিল কোরো না। গ্লোরিয়া আরেকটু বড় না হওয়া পর্যন্ত রোবট থাকবে আর আমি এই বিষয়টা নিয়ে ভবিষ্যতে আর আলাপ করতে চাই না। আর বিষয়টা এই ঘরের ভিতরেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে।”

    .

    দুইদিন পরে এক সন্ধ্যাবেলা মিসেস. ওয়াটসন তার স্বামীকে সদর দরজার কাছে পাকড়াও করে। “জর্জ, ব্যাপারটা তোমার শোনা উচিত। গ্রামের সবাই কানাঘুষো করছে।”

    “আর সেটা কি?” ওয়াটসন জানতে চায়। সে প্রক্ষালন কক্ষে ঢুকে এবং উত্তরের ___নাটুকু পানির তোড়ে ভাসিয়ে দেয়।

    মিসেস. ওয়াটসন বাইরে অপেক্ষা করে। সে বলে, “ব্যাপারটা রোব্বিকে নিয়ে।”

    তোয়ালে হাতে নিয়ে ক্রোধান্বিত মুখে ওয়াটসন প্রক্ষালন কক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। “তুমি আবার শুরু করেছো?”

    “ওহ, শোনো, মানুষের মুখ তো আর তুমি বন্ধ করতে পারবে না। আমি ব্যাপারটাকে এতদিন তোমার কথামতো গুরুত্ব দেইনি কিন্তু আমার পক্ষে আর মুখ বুজে থাকা অসম্ভব। গ্রামের সবারই ধারণা রোব্বি বিপজ্জনক। বিকালবেলা কেউ তাদের বাচ্চাদের আমাদের বাসার আসেপাশে আসতে দেয় না।”

    “আমরা আমাদের বাচ্চার আশেপাশে জিনিসটার উপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাই না।”

    “বেশতো, লোকজন এসব জিনিসের ব্যাপার যুক্তি দিয়ে বিচার করতে চায় না।”

    ‘‘তাহলে, তাদের নরকে যেতে বলো।”

    “এ কথা বললে তো আর সমস্যাটার সমাধান হবে না। আমাকে কেনাকাটা করতে প্রায়ই দোকানে যেতে হয়। তাদের সাথে প্রতিদিনই আমার দেখা হয়। আর রোবটের ব্যাপারে শহরের লোকদের সাম্প্রতিক মনোভাব নিশ্চয়ই তোমার অজানা নেই। নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মধ্যে শহরের রাস্তায় রোবটের চলাফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটা আইন পাশ করেছে।”

    “সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার মানে তো আর এই না যে আমরা আমাদের বাড়িতে কোনো রোবট রাখতে পারবো না।- জেস, তোমার এই রোবট বিতাড়ন প্রকল্প এবার বন্ধ করো। আমি সবই বুঝতে পারি। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না। আমার উত্তর এখনও না! রোব্বি আমাদের সাথেই থাকছে!”

    .

    এত কিছুর পরেও সে তার স্ত্রীকে ভালোই বাসে- আর তার চেয়েও ভয়াবহ হল, স্ত্রীও ব্যাপারটা খুব ভালো করেই জানে। জর্জ ওয়েসটনও তো একটা ___মানুষ– বেচারা এবং তার স্ত্রীও ভয়ে, কারণে অকারণে, সম্ভাব্য সব আনাড়ি __ যুক্তি কৌশলের পূর্ণ ব্যবহার করে।

    সেই চিৎকার করে বলে, এইবার নিয়ে এই সপ্তাহে দশবার হল, “রোব্বি থাকছে, আর এটাই আমার শেষ কথা!” তবে প্রতিবারই তার প্রতিবাদ আগের চাইতে দুর্বল শোনায় আর সেই ঘাটতি ঢাকতে চিৎকারের মাত্রা এবং যন্ত্রণার ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।

    অবশেষে সেই দিন আসে, যখন ওয়েসটন তার মেয়েকে অপরাধী কণ্ঠে গ্রামে আসা ‘তুখোড়’ পুতুলনাচ দেখতে নিয়ে যাবার কথা বলে।

    আনন্দে হাততালি দিয়ে গ্লোরিয়া জানতে চায়, “বাবা, রোব্বি আমাদের সাথে যেতে পারে?”

    “না, সোনা,” সে উত্তর দেয় এবং আড়ালের গ্লানি কোনোমতে লুকিয়ে বলে, “পুতুলনাচে তারা রোবটদের ঢুকতে দেয় না। কিন্তু তুমি বাসায় এসে তাকে গল্পটা বলতে পারবে।” শেষের কথাগুলো কোনোমতে হড়বড় করে সে বলে এবং দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

    পুতুলনাচ আসলেই জাঁকজমকপূর্ণ একটা প্রদর্শনী, নাচ দেখে উত্তেজনায় ফুঁসতে ফুঁসতে গ্লোরিয়া ফিরে আসে।

    আকাশে উড্ডীন জেট-কার ভূগর্ভস্থ গ্যারেজে পার্ক করা পর্যন্ত সে কোনো মতে অপেক্ষা করে, “বাবা, রোব্বিকে আমি না বলা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করো। সে দেখলে খুশীতে পাগল হয়ে যেত।– বিশেষ করে চিতা-মানবের সাথে সিংহ-মানবের যুদ্ধের দৃশ্যটা।” সে আবার হাসতে শুরু করে, “বাবা, চাঁদে কি সত্যিকারের সিংহ-মানুষ থাকে?”

    “মনে হয় না, অন্যমনস্ক কণ্ঠে ওয়েসটন বলে।”এগুলো সব রূপকথা। গাড়ি পার্ক করতে সে আজ অন্যান্য দিনের চাইতে কম সময় নেয়। সময় হয়েছে সত্যের মুখোমুখি হবার।

    বাগানের উপর দিয়ে গ্লোরিয়া দেয়। “রোব্বি।- রোব্বি!”

    পোর্চের নিচে লেজ নাড়তে নাড়তে গম্ভীর বাদামী চোখে তাকিয়ে থাকা একটা লোমশ কুকুর দেখে সহসা সে থমকে দাঁড়িয়ে যায়।

    “ওমা, কি সুন্দর কুকুর!” সিঁড়ির ধাপগুলো টপকে, সে সাবধানে এগিয়ে যায় এবং তাকে আদর করে।”বাবা, এটা কি আমার জন্য?”

    তার মা ইতিমধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে এসে তাদের সাথে যোগ দেয়। “হ্যাঁ, গ্লোরিয়া সোনা। খুব সুন্দর না- নরম আর কী ভীষণ লোমশ। খুব শান্ত। বাচ্চা মেয়েদের সে ভীষণ পছন্দ করে।”

    “ও কি খেলতে পারে?”

    “অবশ্যই। সে অনেক রকমের খেলাও জানে। তুমি কি এখন কোনো খেলা দেখতে চাও?”

    “এখনই। আমি চাই রোব্বিও দেখুক।- রোব্বি!” সে কুটি করে, অনিশ্চিত চোখে তাকায়। “আমি লিখে দিতে পারি সে তার ঘরে গোজ হয়ে বসে আছে, পুতুল নাচ দেখতে নিয়ে যাইনি বলে বাবুর রাগ হয়েছে বাবা, ওকে শান্ত করার দায়িত্ব তোমার। সে হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না, কিন্তু তুমি কিছু বললে সে সেটা শুনবে।”

    ওয়েসটনের ঠোঁট শক্ত হয়ে যায়। সে তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

    সটান ঘুরে গিয়ে গ্লোরিয়া চিৎকার করতে করতে বেসমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়, “রোব্বি- দেখে যাও বাবা মা আমার জন্য কি নিয়ে এসেছে। রোব্বি, তারা আমার জন্য একটা কুকুর নিয়ে এসেছে।”

    এক মিনিট পরেই হাসিখুশী মেয়েটা ভয়ার্ত মুখ নিয়ে উপরে উঠে আসে। “রোব্বি ঘরে নেই। কোথায় গেছে সে?” কেউ তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না এবং খুকখুক করে একটু কেশে জর্জ ওয়েসটন সহসাই ভেসে যাওয়া একটুকরো মেঘ আগ্রহভরে দেখতে থাকে। গ্লোরিয়ার গলায় কান্না এসে থমকে থাকে, “মা, রোব্বি কোথায়?”

    মিসেস. ওয়েসটন হাঁটু মুড়ে বসে মেয়েকে আলতো করে কাছে টেনে নেন, “গ্লোরিয়া মন খারাপ করে না। আমার মনে হয়, রোব্বি চলে গেছে।”

    “চলে গেছে। কোথায়? সে কোথায় চলে গেছে, মা বলো?”

    “কেউ জানে না, সোনা। সে হঠাৎ কোথায় যেন চলে গেছে। আমরা তাকে কত খুঁজলাম, কত খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।”

    “তুমি বলতে চাও সে আর কখনও ফিরে আসবে না?” আতঙ্কে তার চোখ বড়বড় হয়ে উঠে।

    “আমরা হয়তো শীঘ্রই তাকে খুঁজে পাব। না পাওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে খুঁজেই যাব। আর যতক্ষণ আমরা তাকে খুঁজে না পাই সে সময়টুকু তুমি তোমার নতুন কুকুরের সাথে খেলতে পারো। একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখো! ওর নাম হল বজ্র আর সে-”

    কিন্তু গ্লোরিয়ার চোখের পাতা ছাপিয়ে বর্ষা নামে, “এই পঁচা কুকুরের আমার কোনো দরকার নেই। আমাকে রোব্বি এনে দাও। আমি চাই তুমি আমাকে রোব্বি এনে দেবে।” শব্দকে হার মানায় তার অনুভূতির তীব্রতা, এবং তার অসংলগ্ন কথা পরিণত হয় তীক্ষ্ণ বিলাপে।

    সাহায্যের আশার মিসেস, ওয়াটসন তার স্বামীর দিকে তাকায়, কিন্তু সে তাকে গোমড়া মুখে শরীরের ভার বদল করে তীব্র আগ্রহে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আবার ঝুঁকে সান্ত্বনা দেবার কাজ আরম্ভ করে, “গ্লোরিয়া কাঁদছ কেন, শুধুশুধু? রোব্বি একটা যন্ত্র ছিল, একটা বাতিল পুরাতন নোংরা যন্ত্র। প্রাণ বলে তার কিছুই ছিল না।”

    “সে মোটেই কোনো যন্ত্র ছিল না!” অবুঝের মতো ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে উঠে গ্লোরিয়া। “সে আমার আর তোমার মতোই একজন ছিল আর সে আমার বন্ধু ছিল। আমার ওকেই চাই। ওহ মা, ওকে আমার কাছে এনে দাও।”

    গ্লোরিয়াকে তার দুঃখের কাছে সমর্পণ করে তার মা যন্ত্রণাক্লিষ্ট মনে পরাজয় মেনে নেয়।

    “কেঁদে কেঁদে আপনিই শান্ত হবে,” সে তার স্বামীকে বলে। “বাচ্চাদের শোকের স্থায়িত্ব বেশীক্ষণ না। কয়েকদিন পরে তার মনেই থাকবে না যে ওরকম তাল রোবটের অস্তিত্ব কখনও ছিল।”

    কিন্তু কয়েক দিন যেতে বোঝা যায় মিসেস. ওয়েসটন একটু বেশীই আশাবাদী হয়েছিলেন। গ্লোরিয়ার কান্না বন্ধ হয়, তার কথা মতোই কিন্তু সেইসাথে মেয়েটার হাসিও বন্ধ হয়ে যায় আর যত দিন যায় মেয়েটা ততই নিশ্চুপ আর মনমরা হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তার মনমরা ভাবের কাছে মিসেস.ওয়েসটন নতি স্বীকার করেন। কিন্তু স্বামীর কাছে পরাজয় মানতে হবে এই একটা মাত্র কারণে তিনি মেয়ের দাবী মেনে নেন না।

    তারপরে, একদিন সন্ধ্যেবেলা, গটগট করে বসার ঘরে ঢুকে হাত হাত ভাঁজ করে বসে পড়েন এবং তাকে দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে তিনি রাগে অন্ধ হয়ে গেছেন।

    তার স্বামী খবরের কাগজের উপর দিয়ে বকের মতো মাথা বের করে তার দিকে তাকায়, “এখন আবার কি হল, গ্রেস?”

    “বাচ্চাটার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারছি না, জর্জ। আজকেই আমি কুকুরটা ফেরত পাঠিয়ে দেব, ঠিক করেছি। গ্লোরিয়া বলছে, সে কোনোমতেই ওকে সহ্য করতে পারছে না। এই মেয়ের পাল্লায় পড়ে মাঝখানে আমার পাগল হবার দশা।”

    ওয়েসটন কাগজটা সরিয়ে রাখে, তার চোখে আশার হাল্কা দ্যুতি দেখা যায় কি যায় না, “আমাদের–আমাদের বোধহয় রোব্বিকে ফিরিয়ে আনাই উচিত। তুমি জানো যে কোনো সময়ে সেটা করা সম্ভব। তুমি বললে আমি এখন ওদের সাথে—”

    “না!” নির্মম ভঙ্গিতে সে উত্তর দেয়। “আমি ওকথা শুনতেও চাই না। এত সহজে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। একটা রোবটের সাহচর্যে আমার মেয়ে বড় হবে না এই কথাটা বুঝতে তার যতদিন সময় লাগে লাগুক, ক্ষতি নেই।”

    ওয়েসটন হতাশ ভঙ্গিতে ভাঁজ করা খবরের কাগজটা পুনরায় উঠিয়ে নেয়। “আর সেই সময়ে আমার মাথার সব চুল সাদা হয়ে যাবে।”

    “জর্জ, তোমার সহযোগিতার তুলনা হয় না,” নিষ্প্রাণ উত্তর ভেসে আসে। “গ্লোরিয়ার আসলে দরকার আবহাওয়া পরিবর্তন। এখানে থাকলে সে কখনও রোব্বির কথা ভুলতে পারবে না। কিভাবে ভুলবে, এখানের প্রতিটা গাছ পাথরে যে রোব্বির স্মৃতি মিশে আছে। আমি বাবা জন্মেও এমন কথা শুনিনি। একটা ফালতু রোবটের জন্য কিনা একটা মেয়ে নাওয়াখাওয়া শিকেয় তুলেছে।”

    “এসব তো বুঝলাম, আসল কথাটা বলো। আবহাওয়া পরিবর্তন বলতে তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো?”

    “আমরা ওকে নিউইয়র্কে নিয়ে যাব।”

    “শহরে! আগষ্ট মাসে! তোমার কোনো ধারণা আছে আগষ্ট মাসে নিউইয়র্কের আবহাওয়া সম্বন্ধে? মানুষ বাসের অযোগ্য।”

    “লক্ষ লক্ষ লোকতো থাকছে।

    “তাদের যাবার জন্য এই রকম কোনো জায়গা নেই, তাই থাকছে। নিউইয়র্কে তাদের কোনো কাজ না থাকলে তারা সেখানে মুততেও যেত না।”

    “বুঝলাম, কিন্তু আমরা যাচ্ছি। আমি বলি কি আজই রওয়ানা দিলে কেমন হয় বা যত শীঘি আমরা বন্দোবস্ত করতে পারি। শহরে একবার গেলে, গ্লোরিয়া সময় কাটাবার জন্য প্রচুর বন্ধু আর অসংখ্য আকর্ষণীয় বস্তু খুঁজে পাবে এবং তখন আর তার ফালতু রোবটটার কথা মনেই থাকবে না।”

    “রক্ষা করো, ঈশ্বর, সংসারের নিগৃহীত অংশীদার ককিয়ে উঠে, “শহরের রাস্তায় এখন পীচ পর্যন্ত গলে আছে।”

    “আমাদের যেতেই হবে, অবিচলিত কণ্ঠে উত্তর ভেসে আসে।”গত মাসে গ্লোরিয়ার ওজন পাঁচ পাউন্ড কমেছে এবং আমার বাচ্চা মেয়ের স্বাস্থ্য তোমার আরামের চাইতে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”।

    “মুশকিল হল, তার রোবট বিদায় করার আগে তোমায় মেয়ের স্বাস্থ্যের কথা তুমি একবারও ভাবনি,” সে বিড়বিড় করে নিজেকেই শোনায়।

    .

    শহরে যাবার কথা শুনতেই গ্লোরিয়ার মাঝে একটা পরিবর্তন দেখা যায়। সে ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা কথা বলে না তবে যখন বলে তখন তার কণ্ঠে একটা প্রাণবন্ত সুর খেলা করে। তার হাসি আবার ফিরে আসে এবং আগের মতোই সে খাওয়াদাওয়া করা শুরু করে।

    মিসেস. ওয়েসটন আনন্দে পারলে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ান আর কি এবং উত্তেজনায় অধীর হয়ে তার দ্বিধাগ্রস্ত স্বামীকে দু’কথা শোনাবার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেন না।

    “জর্জ, খেয়াল করেছো, জামাকাপড় গুছাতে সে নিজে থেকেই কেমন সাহায্য করছে এবং সারাক্ষণই বকবক করে আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে যেন বেড়াতে যাওয়া ছাড়া এ পৃথিবীতে আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আমি তোমাকে বলেছিলাম না–তার পছন্দ প্রতিস্থাপিত করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

    “হুমমম,” দ্বিধাগ্রস্ত উত্তর, “আমিও তাই চাই।”

    প্রারম্ভিক ব্যাপারগুলো খুব সহজেই মিটে যায়। তাদের শহরের বাসাকে সাফসুতরো করার বন্দোবস্ত করা হয় আর গ্রামের বাসা দেখাশুনা করতে এক বৃদ্ধ দম্পতির উপরে দায়িত্ব দেয়া হয়। অবশেষে যাত্রার দিন যখন আসে গ্লোরিয়া আবার সেই পুরান প্রাণোচ্ছল মেয়েতে পরিণত হয় এবং এই কয়দিন সে একবারের জন্যেও রোব্বির নাম মুখে আনেনি।

    হাসিখুশী মনেই ঘূর্ণায়মান-ট্যাক্সি নিয়ে পরিবারটা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয় (ওয়েসটন তার নিজের ঘূর্ণায়মান জেট-কার ব্যবহার করতেই যদিও বেশী স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে কিন্তু মুশকিল হল সেটাতে কেবলমাত্র দুজন বসতে পারে। আর মালপত্র রাখবার কোনো বন্দোবস্ত নেই) এবং অপেক্ষমাণদের সারিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

    “গ্লোরিয়া এসো,” মিসেস.ওয়েসটন তার মেয়েকে ডাকেন। “আমি জানালার পাশে তোমার জন্য একটা সীট রেখেছি যাতে তুমি নিচের দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে যেতে পারো।”

    আক্ষরিক অর্থে খুশীতে লাফাতে লাফাতে সে দুসারি সিটের মাঝের সরু পথটা দিয়ে ছুটে গিয়ে, ডিম্বাকৃতি পরিষ্কার স্বচ্ছ পুরু কাঁচের গায়ে নাক চেপ্টে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, এবং সহসা পেছন দিকে থেকে মোটরের কাশির মতো শব্দ ভেসে আসতে, তার দেখার উত্তেজনার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীকে পাথরের মতো নিচের দিকে খসে পড়তে দেখে ভীত হবার মতো বয়স তার এখনও হয়নি এবং তার ওজন। যে হঠাৎ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে উত্তেজিত হবার পক্ষে তার বয়সটা একটু কমই। পৃথিবীটা একটা জোড়াতালি দেয়া পালের আকৃতি পেতে সে কাঁচ থেকে তার নাক সরিয়ে নিয়ে মায়ের মুখোমুখি হয়।

    “মা, আমরা কি খুব শীঘ্রি শহরে পৌঁছে যাব?” ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া নাকের ডগা ঘষতে ঘষতে সে জানতে চায়, কিন্তু তার চোখ জানালার কাঁচের উপরে তার নিঃশ্বাসের কারণে জমা হওয়া কুয়াশার গায়ে আটকে থাকে, কিভাবে আস্তে আস্তে সেটা অদৃশ্য হয়ে যায়।

    “আর আধ-ঘণ্টা সোনা।” তারপরে, গলায় ঈষৎ উৎকণ্ঠা ফুটিয়ে তুলে, “আমাদের বেড়াতে যাওয়া নিয়ে তুমি খুশী হওনি? শহরের উঁচু উঁচু ইমারত তার প্রাণবন্ত লোকজন আর হাজারটা দর্শনীয় বস্তু দেখতে দেখতে তুমি আনন্দেই থাকবে, তোমার মনে হয় না? আমরা সেখানে প্রতিদিনই পুতুলনাচ দেখতে যেতে পারি এবং সার্কাস আর সমুদ্র সৈকতে এবং–”

    “হ্যাঁ,মা,” অনুৎসাহিত কণ্ঠে সম্মতি জানায় গ্লোরিয়া। এই মুহূর্তে তাদের বিমানপোত মেঘের রাজ্যের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করছে, এবং গ্লোরিয়া সাথে সাথে মেঘের নিচে মেঘের ভেসে যাবার দর্শনীয় দৃশ্য দেখতে মগ্ন হয়ে যায়। একটু পরেই তারা আবার পরিষ্কার আকাশের নিচে দিয়ে যেতে থাকে, এবং সে তার মায়ের দিকে তাঁকিয়ে কোনো গোপন কথা বলছে এমন রহস্যময় একটা বাতাবরণ তৈরী করে।

    “মা, আমি জানি আমরা কেন শহরে যাচ্ছি।”

    “তুমি জানো?” মিসেস, ওয়েসটন বিভ্রান্তবোধ করেন। “কেন যাচ্ছি, সোনা?”

    “তুমি আমাকে বলনি, কিন্তু আমি জানি, তুমি আমাকে চমকে দিতে চেয়েছিলে।” এক মুহূর্তের জন্য সে নিজেই নিজের মানসিক শক্তির তীব্রতা উপভোগ করে এবং শেষে উচ্ছল ভঙ্গিতে হেসে উঠে। “আমরা রোব্বিকে খুঁজতে নিউইয়র্ক যাচ্ছি, তাই না?- এবার গোয়েন্দাদের সাহায্যে।

    গ্লাস থেকে পানি খাবার সময়ে জর্জের কানে কথাটা পৌঁছায়, তার ফলাফল হয়, ভয়াবহ। প্রথমে দম আটকে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা, ফোয়ারার মতো মুখ থেকে পানি বের হয়ে আসে এবং শেষে শ্বাসরোধকারী কাশির দমক। ঝামেলা শেষ হলে, ভিজা গায়ে সে উঠে দাঁড়ায়, মুখ টকটকে লাল এবং সাংঘাতিক বিরক্ত।

    মিসেস. ওয়েসটনের চেহারায় কোনো ভাব ফুটে উঠে না, কিন্তু গ্লোরিয়া উদ্বিগ্ন কণ্ঠে একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে, সে বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে।

    “হয়তো,” কর্কশ, বিকৃত কণ্ঠে সে বলে। “এখন দয়া করে একটু চুপ করে বসবে!”

    .

    ১৯৯৮ এনো ডোমিনো, নিউইয়র্ক শহর, শহরের ইতিহাসে দর্শনার্থীদের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর আসেনি। গ্লোরিয়ার বাবা-মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, সুযোগের সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট হয়।

    স্ত্রীর কাছ থেকে আসা একটা সরাসরি নির্দেশের বলে, জর্জ ওয়েসটন একমাসের জন্য তার ব্যবসায়িক কাজকর্ম শিকেয় তুলে রেখে যাতে সে সময় ব্যয় করতে পারে যা তার ভাষ্যমতে “তুচ্ছ আমোদপ্রমোদে মগ্ন রেখে গ্লোরিয়াকে ধ্বংসের দ্বারপান্তে নিয়ে যাওয়া।” ওয়েসটনদের অন্যান্য কাজের মতো আমোদপ্রমোদের ব্যাপারটাও দক্ষ, ব্যাপক আর ব্যবসায়ী মনোভাব গ্রহণ করে। একমাস যেতে দেখা যায় দর্শনীয় আর প্রমোদ-রঞ্জনের কোনো উসিলা তারা বাদ রাখেনি।

    প্রায় আধ মাইল উঁচু রুজভেল্ট ভবনের শীর্ষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে সেখান থেকে উঁচু নিচু বাড়ির ছাদের অবাধ দৃশ্যপট যা ধীরে ধীরে লঙ আইল্যান্ডের মাঠ আর নিউ জার্সির সমভূমিতে গিয়ে মিশে যাবার দৃশ্য সম্ভ্রম জাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে পারে। তারা চিড়িয়াখানায় যায় সেখানে সত্যিকারের জীবন্ত সিংহ দেখে গ্লোরিয়া সেদিকে ভয়মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে থাকে (অবশ্য সত্যিকারের মানুষের বদলে কাঁচা মাংস তাদের খেতে দিতে দেখে সে যারপরনাই বিরক্ত হয়), এবং ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে ‘তিমি’ দেখবে বলে।

    বিভিন্ন জাদুঘরও তাদের কৃপাধূলি থেকে বঞ্চিত হয় না, সাথে বাদ যায় না একটাও পার্ক, সমুদ্র সৈকত আর অ্যাকুরিয়াম।

    হাডসন নদীর উজানে তারা স্টিমারে করে নৌ-বিহারে বের হয়। স্টিমারটা আবার উত্তাল বিশের দশকের অপ্রচলিত উপকরণে সজ্জিত। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে সে প্রদর্শনী সফরে যায় যেখানে আকাশ বেগুনী বর্ণের সেখানে তারা ফুটে আছে আর অনেক নীচে ঘোলাটে পৃথিবীকে দেখায় একটা বিশাল অবতল বাটির ন্যায়। লঙ আইল্যান্ডের কাছে পানির নিচে কাঁচের আবরণযুক্ত সমুদ্রগামী জুবোজাহাজে তারা ঘুরতে বের হলে, সবুজ আর স্রোতময় পৃথিবীতে আকর্ষক আর সেই সাথে কৌতূহলী নানা সামুদ্রিক জীব তাকে অবাক হয়ে দেখে আর তারপরেই হুটোপুটি তুলে পালিয়ে যায়।

    অনেকটা গতানুগতিক ভাবনা থেকে, মিসেস.ওয়েসটন তাকে বিশালাকৃতির, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে নিয়ে যায় কল্পনার আরেকটা জগৎ উন্মুক্ত করার অভিপ্রায়ে।

    মাস শেষ হয়ে আসতে থাকলে, বস্তুতপক্ষে, ওয়েসটন দম্পতি মেনে নেয় যে হারিয়ে যাওয়া রোব্বিকে গ্লোরিয়ার মন থেকে মুছে ফেলতে সম্ভাব্য সবকিছুই তারা করেছেন– কিন্তু সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে তারা খুব একটা উৎসাহিত বোধ করেন না।

    ঘটনা হল, গ্লোরিয়া যেখানেই যাক না কেন, সেখানে উপস্থিত রোবট তা সে যে ধরনেরই হোক না কেন তার প্রতিই তার অকুণ্ঠ আর একতরফা মনোযোগ আকর্ষিত হয়। তার সামনে যতই চমকপ্রদ প্রর্দশনী অনুষ্ঠিত হোক, বা তার শিশুতোষ চোখে যতই অভিনব দেখাক, চোখের কোণে যদি সে কোনো ধাতব গতিবিধির আলামত সনাক্ত করতে পারে তবে সাথে সাথে সে সেই দিকে হাঁটা ধরবে।

    গ্লোরিয়ার নাগাল থেকে রোবট দূরে রাখতে মিসেস, ওয়েসটন তার সাধ্যের অতিরিক্ত প্রয়াস নেন।

    বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি বিষয়ক জাদুঘরে অবশেষে এই অধ্যায়ের চুড়ান্ত পরিণতি ঘনিয়ে উঠে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ শিশুদের মনে বিজ্ঞানের সম্মোহনী শক্তির প্রভাব কতখানি তা বিশ্লেষণের জন্য একটা বিশেষ অনুষ্ঠান ‘শিশুদের জন্য বিজ্ঞান’ আয়োজন করে। ওয়েসটন দম্পতি সঙ্গত কারণেই অনুষ্ঠানটিকে অবশ্যই দ্রষ্টব্য তালিকায় রাখে।

    অনুষ্ঠানের সময়ে বৈদ্যুতিক-চুম্বকের চমৎকার ক্রিয়াকলাপ দেখতে যখন ওয়েসটনরা মগ্ন তখনই মিসেস, ওয়েসটন খেয়াল করেন গ্লোরিয়া তার পাশে নেই। প্রারম্ভিক আতঙ্কের ধাক্কা সামলে নিয়ে ঠাণ্ডা মাখায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং উপস্থিত তিনজন সাহায্যকারী নিয়ে তার খোঁজ শুরু হয়।

    গ্লোরিয়া অবশ্যই উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াবার মেয়ে না। তার বয়সের মেয়েদের তুলনায়, সে অস্বাভাবিক রকমের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর স্থিরসংকল্প, বলতে গেলে সে মায়েরই মেয়ে। আসবার সময়ে তিনতলায় সে একটা বিশাল বিজ্ঞপ্তি দেখে যাতে লেখা ছিল, “কথা বলা রোবট এইদিকে।” বানান করে পড়ে মানে বুঝবার পরে সে যখন দেখে তার বাবা-মা কাজের জায়গায় যেতে মোটেই উৎসাহী না তখন বাধ্য হয়ে তাকেই যা করবার করতে হয়। বাবা-মা অন্যমনস্কতার একটা মোক্ষম মুহূর্তের জন্য সে অপেক্ষা করে, ব্রাহ্ম মুহূর্তে আলতো করে কেটে পরে তার অভীষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়।

    .

    কথাবলা রোবট আদতে নৈপুণ্যের নিদর্শন, পুরোপুরি অবাস্তব একটা জিনিস, দেখনদারি আর প্রচারণা ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। ঘণ্টায় একবার হয়তো সহচর সন্নিবেশিত দর্শনার্থীর দল তার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ফিসফিস করে তত্ত্বাবধানে থাকা রোবট ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশ্ন করে। রোবট ইঞ্জিনিয়ার রোবটের সার্কিটের পক্ষে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্ন কথাবলা রোবটকে সম্প্রচার করতে দেয়।

    পুরোটাই একটা আকাঠ ব্যাপার। চৌদ্দকে বর্গ করলে একশ ছিয়ানব্বই হয়, অথবা এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রী ফারেনহাইট এবং বাতাসের চাপ ৩০.০২ পারদ উচ্চতা, বা সোডিয়ামের আণবিক ওজন ২৩, জানা থাকা হয়তো ভালো কিন্তু সেজন্য রোবটের কোনো প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে পঁচিশ গজ জায়গা নিয়ে। অবস্থিত অনড় অব্যবহৃত তার আর কয়েলের জঞ্জালের কারও দরকার নেই।

    খুব কমসংখ্যক লোকই দ্বিতীয়বারের জন্য এখানে আসে, কিন্তু মধ্য কৈশোর উত্তীর্ণ একটা মেয়ে চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে তার তৃতীয় দফা প্রশ্ন করবার জন্য অপেক্ষা করছে। গ্লোরিয়া যখন প্রবেশ করে তখন সেই কেবল ঘরে আর একমাত্র দর্শনার্থী।

    গ্লোরিয়া তার দিকে তাকায় না। তার কাছে সেই মুহূর্তে আরেকটা মানুষ ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। তার অখণ্ড মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু চাকাযুক্ত বিশালাকৃতির জিনিসটা। সে আগে কখনও এধরনের রোবট দেখেনি।

    সন্দিহান আর সর্তকভাবে সে তার কণ্ঠস্বরের মাত্রা জোরালো করে, “অনুগ্রহ করে কি বলবেন যে আপনিই কথা বলা রোবট কি না?” সে ঠিক নিশ্চিত না কিন্তু তার কাছে মনে হয় যে একটা রোবট যে কিনা সত্যি সত্যি কথা বলে তার সাথে মার্জিত ভঙ্গিতে কথা বলাটাই বাঞ্ছনীয়।

    (কিশোরী মেয়েটার রোগা ভোতা মুখে তীব্র মনোযোগী একটা দৃষ্টি ফুটে উঠে। সে একটা ছোট নোটবই বের করে দ্রুতগতিতে তাতে হিজিবিজি কি সব লেখতে আরম্ভ করে।)

    নিয়মিত যত্ন নেয়া গিয়ারের যান্ত্রিক গুঞ্জন শুরু হয় এবং কোনো প্রকার। বাচনভঙ্গি বা স্বরভেদ রহিত একটা যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের উচ্চারিত শব্দে ঘরটা গমগম করে উঠে, “আমি-হলাম-কথা-বলা-রোবট।”

    অনুতপ্ত দৃষ্টিতে গ্লোরিয়া জাম্বুবানটার দিকে তাকিয়ে থাকে। যন্ত্রটা কথা বলে বটে, কিন্তু শব্দটা ভেতর থেকে আসছে। কোনো মুখ নেই যার দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায়। সে বলে, “রোবট মহাশয়, তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পার?”

    প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যই রোবটটা তৈরী করা হয়েছে আর তাতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে এমন প্রশ্নেরই উত্তর বেচারা দিতে পারে। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সে নিঃসন্দেহ, সে জন্য, “আমি-তোমাকে-সাহায্য-করবো।”

    “ধন্যবাদ রোবট মহাশয়। তুমি কি রোব্বিকে দেখেছো?”

    “রোব্বি-কে?”

    “সেও একটা রোবট।” সে পায়ের আঙ্গুলের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। “রোবট মহাশয়, সে এই এতখানি লম্বা, না আরো বেশী, আর সে খুব লক্ষ্মী। তুমি জানো, তার মাথাও আছে। মানে তোমার নেই, কিন্তু রোবট মহাশয়, তার আছে।”

    কথাবলা রোবটের কেরানি শেষ, “একটা-রোবট?”

    “হ্যাঁ, রোবট মহাশয়। ঠিক তোমার মতোই আরেকটা রোবট, অবশ্য সে কেবল কথা বলতে পারে না এবং দেখতে একেবারে মানুষের মতো।”

    “আমার-মতো-একটা-রোবট?”

    “হ্যাঁ রোবট মহাশয়।”

    কথা বলা রোবট এর উত্তরে ভেসে আসে অনিয়মিত সো-সো শব্দ আর অসংলগ্ন আওয়াজ। এই মৌলিক সাধারণীকৃত ধারণা, যে সে কোনো বিশেষ বস্তু না, বরং একটা বিশেষ শ্রেণীর সদস্য, হজম করাটা তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনুগতভাবে, ধারণাটা পাশ কাটাতে গেলে তার ভিতরের ছয়টা কয়েলের দফারফা হয়ে যায়। সতর্ক সংকেতের মৃদু আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে।

    (এই সময়ে কিশোরী মেয়েটা ঘর ত্যাগ করে। পদার্থবিদ্যা প্রথম পত্রের ‘রোবটের ব্যবহারিক সম্ভাবনা প্রশ্ন বিষয়ে তার যথেষ্ট জানা হয়েছে। সুজান ক্যালভিন এই বিষয়ে পরে আরও অগণিত প্রবন্ধ রচনা করবে।)

    নিজের অসহিষ্ণুতাকে সযত্নে লুকিয়ে রেখে, গ্লোরিয়া অপেক্ষা করতে থাকে, রোবট মহাশয়ের উত্তরের জন্য এমন সময়ে তার পেছন থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে ‘ঐ যে ওখানে ‘ এবং বুঝতে পারে সেটা তার মায়ের কণ্ঠস্বর।

    “নচ্ছাড় মেয়ে, এখানে একা একা কি করছো?” এতক্ষণের উৎকণ্ঠা ক্রোধে রূপান্তরিত হতে তিনি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করেন। “তুমি জানো তোমার কথা ভেবে ভেবে তোমার বাবা আমার কি দশা হয়েছে? পালিয়ে এসেছো কেন?”

    রোবট বিশেষজ্ঞও ঠিক একই সময়ে আক্ষরিক অর্থে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে এসে জানতে চায় উপস্থিত দর্শনার্থীদের ভিতরে কে যন্ত্রটার এই বেহাল দশা করেছে। “কেউ কি পড়তেও জানে না?” সে চিৎকার করে বলে। “সহায়তাকারী ছাড়া যে এখানে প্রবেশ করা নিষেধ।

    হট্টগোল ছাপিয়ে গ্লোরিয়ার বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর শোনা যায়। “মা, আমি কথা বলা রোবট দেখতে এসেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু তারা দু’জনেই রোবট তাই সে বোধহয় জানে রোব্বি কোথায়।” আর রোব্বির কথা মনে হতেই তার অভাব। স্পষ্টভাবে তার কাছে প্রতিভাত হয় এবং অদম্য কান্নায় সে ভেঙে পড়ে বলে, “মা, রোব্বিকে আমার খুঁজে বের করতেই হবে। আমাকে খুঁজে পেতেই হবে তাকে।”

    কান্না আটকে মিসেস, ওয়েসটন কোনোমতে বলেন, “ওহ, ঈশ্বর রক্ষা করো। জর্জ বাসায় চলো। এসব আর একটুও আমার সহ্য হচ্ছে না।”

    সেদিন সন্ধ্যেবেলা জর্জ ওয়েসটন কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে যান এবং পরদিন সকাল বেলা বোকার স্বর্গে বাস করার মতো একটা ধারণা নিয়ে সে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলে।

    “গ্রেস, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।”

    “কি বিষয়ে?” বিমর্ষ, অনিচ্ছুক জিজ্ঞাসা।

    “গ্লোরিয়াকে নিয়ে।”

    “তুমি নিশ্চয়ই সেই রোবট আবার ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছো না?”

    “না, অবশ্যই না।”

    “তাহলে বলতে পারো। তোমার ধারণা শুনতে আমার বাধা নেই। আমার চেষ্টাতে কোনো ফল হল না সেটা দেখতেই পাচ্ছি।”

    “ঠিক আছে। বলি তাহলে, আমি কি চিন্তা করেছি। আমাদের সমস্যা হল সে রোব্বিকে একটা মানুষ মনে করছে, যন্ত্র হিসাবে কল্পনা করছে না। স্বাভাবিক কারণে সে তাই তাকে ভুলতে পারছে না। এখন আমরা যদি তাকে বোঝাতে পারি যে রোব্বি আদতে স্টিল আর তামার পিণ্ড, পাত আর তারের রূপে যার আকৃতি এবং বিদ্যুৎ হল তার চালিকাশক্তি, তাহলে তার এই আকুতি কতদিন টিকবে বলে তোমার মনে হয়? তাকে মানসিকভাবে আলোড়িত করা, আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝতে পারছো।”

    “তুমি কিভাবে করবে সেটা?”

    “সেটা সহজ। আমি কাল রাতে কোথায় গিয়েছিলাম বলে তোমার মনে হয়? আমি ইউএস রোবটস এণ্ড মেকানিক্যাল মেন ইনক-এর রবার্টসনকে বহু কষ্টে রাজি করিয়েছি, সে কাল তার কারখানাটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখাবে। কাল আমরা তিন জন যাব আর আমার বিশ্বাস পুরো কারখানাটা ঘোরা শেষ হবার আগেই গ্লোরিয়া নিজেই বুঝতে পারবে রোবটের প্রাণ নেই।”

    মিসেস, ওয়েসটনের চোখ ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে এবং একটা সময়ে বোধহয় তার চোখে প্রশংসার ঝিলিকও দেখা যায়। “ওহ, জর্জ, আশা করি এতে কাজ হবে।”

    জর্জের জ্যাকেটের বোতাম টান খায়। “আমার মতো আর কেউ পারবে,” সে বলে।

    .

    মি.স্ট্রথার্স একজন বিবেকবান জেনারেল ম্যানেজার আর সেই কারণেই হয়তো একটু বক্কানোসরাস। এই দুই গুণের সংমিশ্রণের কারণে কারখানা ভ্রমণটা একটা পূর্ণাঙ্গ পাঠশালায় পরিণত হতে দেরী হয়না। অবশ্য মিসেস, ওয়েসটন বিরক্তবোধ করেন না। তিনি বরং কথার মাঝে তাকে কয়েকবার থামান এবং অনুরোধ করেন। বক্তব্য বিষয়কে আরেকটু সহজ করে বিশ্লেষণ করতে যাতে গ্লোরিয়ার পক্ষে বুঝতে সুবিধে হয়। মি. স্টুথার্স নিজের বাগিতায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যান আর চেষ্টা করেন যতটা তার সাধ্যে কুলায় ব্যাখ্যা করতে।

    জর্জ ওয়েসটনের মাঝে ক্রমশ বিরক্তি প্রকাশ পেতে থাকে।

    “স্টুথার্স, মার্জনা করবেন,” ফটো-ইলেকট্রি সেল নিয়ে বক্তৃতার মাঝপথে সে কথা বলে উঠে, “আপনাদের কারখানায় একটা অংশ আছে না, যেখানে কেবল রোবট শ্রম ব্যবহৃত হয়?”

    “ওহ! হা! অবশ্যই, অবশ্যই!” মিসেস. ওয়েসটনের দিকে তাকিয়ে সে মৃদু হাসে। “একটা দুষ্ট-চক্র বলতে পারেন, রোবট আরও রোবট তৈরী করে চলেছে। আমরা অবশ্য ঢালাও ভাবে এটা তৈরী করি না। আর তাছাড়া, ইউনিয়নও আমাদের সেটা করবার ছাড়পত্র দিবে না। কিন্তু আমরা একটা কাজ করেছি, সুনির্দিষ্টভাবে কেবলমাত্র রোবট শ্রম ব্যবহার করে কিছু রোবট বানিয়েছি, কাজটা অবশ্য আমরা করেছি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অংশ হিসাবে। তুমি দেখো,” নাক থেকে স্প্রিং লাগানো চশমাটা খুলে নিয়ে হাতের তালুতে আনমনে আঘাত করতে থাকে, “লেবার ইউনিয়ন যেটা বুঝতে পারছে না- এবং আমি এ কথা বলছি যে কিনা সারা জীবন শ্রম আন্দোলনের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল- যে রোবটের আগমনের সাথে সাথে, শুরু কিছু কিছু স্থানচ্যুতি ঘটলেও, অনিবার্যভাবে

    “হ্যাঁ, তোমার কথা আমি বুঝতে পেরেছি,” ওয়েসটন বলে, “কিন্তু কারখানা যে অংশের কথা বলছো সেটার কি হল- আমরা কি সেটা দেখতে পারি? আমার মনে হয় ব্যাপারটা খুব আকর্ষণীয় হবে।”

    “হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই, সেতো বটেই,” সহসা নড়ে উঠে চশমাটা সে পুনরায় নাকে খুঁজে দেয় এবং বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে কাশতে থাকে, “আমার পেছন পেছন এসো।”

    লম্বা করিডোরের অভ্যন্তরে কয়েক প্রস্থ সিঁড়ি টপকে তাদের তিন জনকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার সময় পুরোটা পথ পারতপক্ষে সে কম কথা বলে। তারপরে, তারা যখন উজ্জ্বলভাবে আলোকিত একটা ঘরে প্রবেশ করে যার দরজাটা একটা ধাতব গুঞ্জন তুলে খুলে যেতেই আবার শুরু হয় ব্যাখ্যানের ঢল।

    “এই যে আমরা এসে গেছি!” বলার সময়ে তার গলায় প্রচ্ছন্ন গর্ব ঠিকই টের পাওয়া যায়। “শুধুই রোবট! তদারককারী হিসাবে পাঁচ জন লোক রয়েছে অবশ্য তারা এই ঘরে অবস্থান করে না। আজ পাঁচ বছর, মানে প্রকল্পটা শুরু করার সময় থেকে, আজ পর্যন্ত একটাও দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদিও এখানে যেসব রোবট সংযোজিত করা হয় গঠনের দিক থেকে তারা বেশ, কিন্তু…”

    গ্লোরিয়ার কানে অবশ্য জেনারেল ম্যানেজারের কণ্ঠস্বর কোনো হেলদোল তুলে না। পুরো সফরটাই তার কাছে অর্থহীন বেকার মনে হয়, যদিও চোখের সামনে সে অনেক রোবটই দেখতে পায়। রোব্বির সাথে কোনোটার সামান্যতম মিলও নেই, এবং বিতৃষ্ণা লুকাবার সামান্যতম চেষ্টাও করে না।

    সে লক্ষ্য করে দেখে, ঘরের ভিতরে, সেখানে একজন লোকও নেই। তখনই ঘরের প্রায় মধ্যেখানে একটা গোল টেবিলের চারপাশে ব্যস্ত ছয় সাতটা রোবটের উপরে তার নজর আটকে যায়। অবিশ্বাসের বাতাস তার চোখ দুটোকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে দেয়। ঘরটা বিশাল। সে ঠিক নিশ্চিত হতে পারে না, কিন্তু রোবটগুলোর ভিতরে একটা রোবট দেখতে দেখতে অনেকটা না পুরোটাই!

    “রোব্বি!” তার তীক্ষ্ণ চিৎকারে ঘরের বাতাসে চিড় ধরে এবং টেবিলের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা রোবট চমকে উঠে তার হাতের জিনিসটা ফেলে দেয়। আনন্দে গ্লোরিয়ার পাগল হতে বাকি থাকে। ওয়েসটন দম্পতি কিছু বুঝে উঠবার আগেই, রেলিংএর ফাঁক গলে সে ঝুপ করে কয়েক ফিট নিচে অবস্থিত মেঝেতে লাফ দিয়ে নামে এবং হাত নাড়তে নাড়তে তার রোব্বির দিকে দৌড়ে যায় বাতাসে মেয়েটার চুল নিশানের মতো আন্দোলিত হতে থাকে।

    এবং আতঙ্কিত তিন প্রাপ্তবয়স্ক, তারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই জমে যায়, অবাক হয়ে তারা দেখে উৎফুল্ল মেয়েটা–একটা বিশাল ট্রাক্টর কর্কশ শব্দ করতে করতে অন্ধের মতো তার পূর্ব নির্ধারিত পথে এগিয়ে চলেছে- সেটা লক্ষ্যই করেনি।

    সংবিৎ ফিরে পেতে ওয়েসটন দম্পতির কয়েক মুহূর্ত সময় লাগে এবং সেই কয়েক মুহূর্তেই নির্ধারিত হয়ে যায় গ্লোরিয়াকে আর ধরা সম্ভব না। ওয়েসটন ___ মতো রেলিং টপকায় কিন্তু বৃথা চেষ্টা। স্ট্রথার্স হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে তদারককারীদের ট্রাক্টর বন্ধ করতে বলে, কিন্তু তদারককারীরাও মানুষ এবং প্রতিক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ।

    রোব্বিই কেবল সাথেসাথে আর যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।

    নিজের আর তার খুদে মনিবকন্যার মাঝের দূরত্ব ধাতব পায়ের সাহায্যে নিমেষে অতিক্রম  করে সে বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসে। সবকিছু যেন এক মুহূর্তের ভিতরে ঘটে যায়। গতিবেগ অণুপরিমাণ শ্লথ না করেই, রোব্বি একহাতের ঝাঁপটায় গ্লোরিয়াকে তুলে নেয়, যার ফলে মেয়েটা বাতাসের অভাবে খাবি খায়। ওয়েসটন ঠিক বুঝতে পারে না কি ঘটছে, চোখে দেখার চাইতে সে বরং অনুভব করে, রোব্বি তাকে অতিক্রম করে এবং হতভম্ভ হয়ে সে সটান থেমে যায়। রোব্বি অতিক্রম করার আধ সেকেন্ড পরে ট্রাক্টর সেখানে পৌঁছে যেখানে গ্লোরিয়া দাঁড়িয়ে ছিল, আরও দশফিট দূরত্ব অতিক্রম করার পরে সশব্দে থেমে যায়।

    গ্লোরিয়া দম ফিরে পেতে, বাবা মার আবেগতাড়িত আলিঙ্গনের পালা শেষ হলে সে তুমুল আগ্রহে রোব্বির দিকে তাকায়। কি ঘটেছে সে বিষয়ে সে মোটেই ওয়াকিবহাল না সে কেবল ধর্তব্যের মধ্যে ধরে যে সে তার বন্ধুকে ফিরে পেয়েছে।

    ওদিকে মিসেস.ওয়েসটনের অভিব্যক্তি স্বস্তি থেকে সন্দিগ্ধতায় রূপান্তরিত হয়। সে তার স্বামীর দিকে তাকায়, নিজের বিপর্যস্ত আলুথালু বেশভূষা সত্ত্বেও তাকে ব্যক্তিত্বপূর্ণই দেখায়, “পুরোটাই তোমার সাজানো নাটক, তাই না?”

    রুমাল দিয়ে জর্জ ওয়েসটন কপালের ঘাম মুছে। তার হাত কাঁপে এবং ঠোঁটের কোণে খুবই দূর্বল কম্পিত হাসি ফুটে উঠে।

    মিসেস. ওয়েসটন তার ভাবনার জট ছাড়াতে থাকেন, “নির্মাণ কিংবা কারিগরি কাজের উপযোগী করে রোব্বিকে তৈরী করা হয়নি তাদের কাছে তার কোনো মূল্যই নেই। তুমি তাকে ইচ্ছা করেই তাদের মাঝে রেখেছো যাতে তোমার সোহাগিনী মেয়ে তাকে খুঁজে পায়। তুমিই করেছো তোমারই কাজ।”

    “বেশ মানলাম আমি করেছি,” ওয়েসটন উত্তর দেয়। “কিন্তু গ্রেস, আমি কিভাবে জানব যে তাদের পূনর্মিলনে এত হাঙ্গামা হবে? আর তাছাড়া রোব্বি তোমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে; তোমাকে এটা মানতেই হবে। তুমি আর জঞ্জালটাকে বিদায় করতে পারবে না।”

    গ্রেস ওয়েসটন ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে। সে গ্লোরিয়া আর রোব্বির দিকে বিমূর্তভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। গ্লোরিয়া এমন ভাবে রোবটটার গলা জড়িয়ে রয়েছে যে, ধাতুর তৈরী না হলে এতক্ষণে সে অক্কা পেত, আর বিড়বিড় করে উন্মত্তের মতো কি যেন বকে যাচ্ছে। রোব্বির ক্রোম ইস্পাতের তৈরী বাহু (দুই ইঞ্চি ব্যাসের ইস্পাতের পাত বাদামের খোসার মতো দুমড়ে দিতে পারে) মেয়েটাকে আলতো করে সোহাগ ভরে জড়িয়ে রেখেছে আর তার চোখের লাল সংকেত যেন পাগল হয়ে গেছে।

    “বেশ,” মিসেস.ওয়েসটন অবশেষে বলেন, “আমার মনে হয় মরিচা ধরার আগে পর্যন্ত সে থাকতে পারে।”

    .

    সুসার ক্যালভিন তার কাঁধ ঝাঁকায়, “অবশ্যই, সে তা থাকেনি। সেটা ছিল ১৯৯৮ সাল। ২০০২ সাল নাগাদ আমরা চলমান কথাবলা রোবট, যা অবশ্যম্ভাবীভাবেই কথা না বলা রোবটদের বাতিলের কোটায় পাঠিয়ে দেয় এবং এই পর্যায়েই অ রোবট উপাদানের বিষয়ে সবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের ভিতরে পৃথিবীর প্রায় সব সরকারই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে পৃথিবীতে রোবটের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।”

    “তো আর কি গ্লোরিয়াকে একসময় ঠিকই রোব্বিকে পরিত্যাগ করতে হয়।”

    “আমার চিন্তা হয়। আমার অবশ্য মনে হয় আট বছর বয়েসের চাইতে পনের বছরে তার পক্ষে সহজই হয়েছিল ব্যাপারটা। তারপরেও সেটা ছিল বিশ্ব মানবতার একটা নিবোধ আর অপ্রয়োজনীয় মনোভাব। ২০০৭ সালে আমি যখন ইউ.এস রোবটস-এ যোগ দেই অর্থনৈতিকভাবে তখন তারা বেশ বিপর্যস্ত। প্রথমে আমার মনে হয় কয়েকমাসের ভিতরেই আমি হয়তো চাকরিটা খোয়াবো, কিন্তু আমরা তখনই আমরা গ্রহান্তরের বিশ্বে আমাদের বাজার সম্প্রসারিত করি।

    “তাহলেতো, হয়েই গেল, তুমি সুস্থির হলে।”

    “ঠিক তা না। আমাদের হাতে যেসব মজুদ নমুনা ছিল আমরা প্রথমে সেগুলোকে অভিযোজিত করতে চেষ্টা করি। যেমন ধরো, কথা বলা রোবটের প্রথম দল। সেগুলো ছিল বারো ফিট লম্বা, অত্যন্ত আনাড়ি এবং খুব একটা কিছু পারতোও না। আমরা তাদের বুধে পাঠাই খনিতে সাহায্য করতে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।”

    আমি চমকে তাকাই, “তাই কি। কিন্তু বুধের খনিতো একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান।”

    “সেটা এখন, কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা সফল হয়। যুবক, তুমি যদি এ বিষয়ে আরও জানতে চাও তাহলে আমি বলবো জর্জ পাওয়েলের লেখা পড়তে। সে আর মাইকেল ডনোভান শুরুর দিকের প্রায় সব সমস্যার জট খুলেছে। ডনোভানের সাথে বহুবছর আমার কোনো যোগাযোগ নেই, কিন্তু পাওয়েল এখানে এই নিউইয়র্কেই থাকে। চিন্তা করা যায়, সে এখন দাদা হয়েছে। আমার স্মৃতিতে কেবল যুবক পাওয়েলই আছে। অবশ্য আমারও বয়স তখন কম ছিল।”

    আমি কথা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করি, “ড. ক্যালভিন আপনি যদি মোটামুটি কাঠামোটা আমাকে দেন তবে পরে আমি পাওয়েলের সাহায্যে সেটাকে হৃষ্টপুষ্ট করতে পারব।” (পরে আমি ঠিক তাই করি)

    টেবিলের উপরে তার শীর্ণ দুটো হাত বিছিয়ে সে তাকিয়ে থাকে। “দু’তিনটে ঘটনা,” সে বলে, “যা সম্পর্কে আমার সামান্য ধারণা আছে।”

    “বুধ দিয়ে শুরু করা যাক,” আমি পরামর্শ দেই।

    “আমার যতদূর মনে পড়ে ২০১৫ সাল নাগাদ দ্বিতীয় বুধ অভিযান উৎক্ষেপিত হয়। ইউ.এস রোবটস আর সোলার মিনারেলসের যৌথ সহায়তায় সেটা ছিল একটা অনুসন্ধানী মিশন। তখনও পরীক্ষাধীন একটা নতুন প্রজন্মের রোবট অভিযানে সন্নিবেশিত করা হয়; জর্জ পাওয়েল; মাইকেল ডনোভান–”

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআজাজেল্‌ – আইজাক আসিমভ
    Next Article মিশরের ইতিহাস – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }