Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অদেখা ভুবন – ডিউক জন

    ডিউক জন এক পাতা গল্প221 Mins Read0

    অদেখা ভুবন – ২.১

    অদেখা ভুবন ২

    এক

    লস অ্যাঞ্জেলেস, উনিশ শ’ সত্তর।

    সেইণ্ট মনিকা’স ক্যাথলিক চার্চ।

    সোনাঝরা রোদ্দুর বাইরে; ভিতরটা ঠাণ্ডা, ছায়াময়। অদ্ভুত সহাবস্থান পাথরে গড়া বিকটদর্শন গারগয়েল, রঙিন কাচের উপর ফুটিয়ে তোলা যোদ্ধা দেবদূত আর ক্রুশকাঠে খোদাই করা যিশু খ্রিস্টের।

    ফাদার রোডরিগেজের বয়স পঞ্চাশের উপকণ্ঠে। হাড় আর মাংসের দশাসই এক কাঠামো লোকটা। বক্তব্য রাখছেন পুলপিটে দাঁড়িয়ে।

    ‘উৎসর্গের গুরুত্ব পরম করুণাময়ের কাছে অতীব। আমাদের উৎসর্গগুলো স্পর্শ করে মহান প্রভুর হৃদয়। আশীর্বাদ বর্ষণ করেন তিনি আমাদের উপরে:

    ‘এই হচ্ছে আমার ঐশী আদেশ। আমি যেমন ভালোবাসি তোমাদের, তোমরাও তেমনি ভালোবাসবে একে অপরকে…’

    রোববারের এই প্রার্থনায় যারা সমবেত হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে জনি আর তানিয়া গ্রেভও। স্বামী-স্ত্রী ওরা। দু’জনেরই বয়স কুড়ির ঘরে।

    প্রার্থনা শুনছে ওরা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে। চেহারা দেখে মনে হতে পারে, খুবই উপভোগ করছে আজকের এই সারমন। আসলে কিন্তু মজা নিচ্ছে নিজেদের মধ্যকার গোপন খুনসুটির।

    আঙুলে আঙুলে প্রচণ্ড লড়াই চলছে দু’জনের। অথচ শ্রোতাদের কেউই অবগত নয় তরুণ দম্পতিটির এ ছেলেমানুষির ব্যাপারে। সম্মানিত যাজকের কথা শুনছে ওরা নিবিষ্ট মনে।

    ‘যে-মানুষ তার প্রিয়জনের জন্য জীবন উৎসর্গ করছে, এর চাইতে বড় কোরবানি আর কিছু হতে পারে না, ‘ঈশ্বরের বাণী বিলাচ্ছেন ফাদার রোডরিগেজ।

    প্রায় জিত হয়ে যাচ্ছিল তানিয়ার, এমন সময় চোরা- আক্রমণ চালাল জনি। খোঁচা দিল স্ত্রীকে তর্জনি দিয়ে।

    ‘আসুন, প্রার্থনা করি এবার,’ সারমনের সমাপনান্তে বললেন ধর্মযাজক।

    এক সেকেণ্ড… দুই সেকেণ্ড… তার পর উচ্চ নাদে বেজে উঠল অরগান।

    শ্রোতৃমণ্ডলী উঠে দাঁড়াল আসন ছেড়ে। অস্পষ্ট বিড়বিড়ানি গুঞ্জন হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সুবিশাল হল জুড়ে।

    সভা ভাঙার পর অন্যদের মতো আইল ধরে ফিরে চলেছে জনি আর তানিয়া, নারথেক্সের (Narthex : গির্জার অ্যান্টিচেম্বার) বাইরে কুশল জিজ্ঞেস করলেন ওদের কেন্ট ডেইমান।

    ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের গোড়ায়। তরুণ দম্পতির পাশের আসনেই বসেছিলেন তিনি।

    ‘কে জিতল?’ জানতে চাইলেন ভুরু নাচিয়ে।

    হেসে ফেলল স্বামী-স্ত্রী। বুঝতে পারছে, সবই খেয়াল করেছেন ভদ্রলোক।

    ‘জনি,’ জবাবে বলল তানিয়া। ‘কিন্তু বুঝলেন, চিট করেছে ও,’ কপট অনুযোগ ওর কণ্ঠে।

    স্ত্রীর বাহুতে মৃদু চাপ দিল জনি। হাত রাখল সামান্য উঁচু হয়ে ওঠা পেটটায়।

    ‘উপায় ছিল না, ও-ও বলল কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সুরে। একজনের বিরুদ্ধে দু’জন ছিল ওরা…’

    ব্লাশ করল জনির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। যার-পর-নাই বিব্রত।

    প্রশ্রয়ের হাসি মিস্টার ডেইমানের চেহারায়। ওদেরকে ছাড়িয়ে দৃষ্টি চলে গেল ওঁর সমবেতদের দিকে। এখনও চার্চ ত্যাগ করছে লোকজন।

    ‘শ্যানন আবার কোথায় গেল?’ আপন মনে বললেন ভদ্রলোক।

    ‘আমি দেখছি।’ ঠেলে স্বামীকে এক পাশে সরিয়ে দিল তানিয়া।

    .

    চার্চের ভিতরেই ছিলেন শ্যানন ডেইমান। মোটা একটা মোমবাতি জ্বেলে হাঁটু গেড়ে বসলেন তিনি পার্শ্ববেদিতে। অবনত মস্তকে দেখছেন ওঁকে ভার্জিন মেরি।

    চল্লিশোর্ধ্ব বয়স ভদ্রমহিলার। দেখে অবশ্য বেশি মনে হয় আরও। প্রার্থনা করছে দু’হাত জড়ো করে।

    খানিক বাদেই মহিলার পিছনে উদয় হলো তানিয়া। পা চালানোর উপরে চোখ জোড়া খুঁজছে ওর ভদ্রমহিলাকে। থেমে দাঁড়াল মিসেস ডেইমানকে দেখতে পেয়ে।

    ক’মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে প্রার্থনারত মহিলাকে দেখল মেয়েটা।

    উঠে দাঁড়ালেন শ্যানন প্রার্থনা শেষ হতে। ঘুরে তাকিয়ে দেখতে পেলেন পড়শি তরুণীকে।

    বুঝতে পারছে না তানিয়া থাকবে আর, নাকি চলে যাবে। থাকার দরকার নেই অবশ্য। তবে…

    ‘কেন্ট পাঠিয়েছে তোমাকে, তা-ই না?’ হেসে জিজ্ঞেস করলেন ভদ্রমহিলা। ‘হয়েছে কি, ওর ধারণা, আমিও হয়তো একদিন…’ শেষ করলেন না তিনি কথাটা।

    কাছে এসে হাত ধরলেন মহিলা তানিয়ার। স্পর্শটা উষ্ণ মিসেস ডেইমানের। কেমন এক ধরনের স্বস্তি জাগায়।

    ‘হায়, রে, পুরুষ!’ মাথা নাড়ছেন তিনি মেকি আক্ষেপে। কী করে যে চলবে ওরা আমাদের ছাড়া! …হেসো না, মেয়ে। আসলেই চিন্তার কথা কিন্তু।’

    .

    একখানা লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল উঠে এল ডেইমানদের বাড়ির ড্রাইভওয়েতে।

    পার্ক করা হলো ওটাকে। ডেইমান আর গ্রেভরা নেমে এল গাড়ি থেকে।

    ‘আন্তরিক ধন্যবাদ লিফট দেয়ার জন্য,’ কৃতজ্ঞতা জানাল জনি।

    এমন কিছু নয় এটা—অভিব্যক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন মিসেস ডেইমান। ‘তুমি শুধু খেয়াল রাখবে, মা আর বাচ্চার যাতে ঠিকঠাক যত্ন নেয়া হয়…’

    হাসি খেলে গেল জনি আর তানিয়ার ঠোঁটে।

    ‘নাম-টাম কিছু ঠিক করেছ নাকি?’ জানতে চাইলেন ভদ্রমহিলা।

    ‘শ্যানন…’ অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে দেখে বউকে থামাতে উদ্যোগী হলেন মিস্টার ডেইমান।

    ‘কী?’ পাল্টা বললেন ওঁর মিসেস। ‘বেশি কৌতূহল মনে হচ্ছে? স্রেফ খোঁজখবর নিচ্ছি আমি।’

    ‘আসলে… ভাবছি আমরা এখনও,’ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া লেগে যাচ্ছে দেখে জবাব দিল তানিয়া।

    ‘তবে এটা এক রকম নিশ্চিত আমরা,’ বলল জনি বউয়ের কথার পিঠে। ‘ছেলে হলে নাম রাখব— ডেভিড। আর যদি মেয়ে হয়, তা হলে ভাবছি- জিনিয়া নামটা কেমন মানাবে?’

    ‘ভাবছি নাকি?’ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল তানিয়া।

    ‘তুমিই তো বলেছিলে, নামটা পছন্দ হয়েছে তোমার।’

    ‘এমন কিছুই বলিনি আমি কখনও।’

    ‘কিন্তু আমার দাদিমার নাম এটা…’

    ‘তাতে কী হয়েছে? তোমার দাদিমাকে আমি পছন্দ করলে তো!’

    ‘আরে… আরে…’ এবার জনি-তানিয়ার মধ্যে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে দেখে থামাতে উদ্যত হলেন মিসেস ডেইমান।

    ‘কেবল আমিই না,’ বলল তানিয়া প্রৌঢ় দম্পতির উদ্দেশে। ‘কেউই পছন্দ করে না বুড়ি মহিলাকে। কই, বলো ওঁদের, জনি।’

    ‘উম… ঠিকই বলেছে তানিয়া,’ স্বীকার করল যুবক গোমড়া মুখে। ‘সবাই-ই ঘৃণা করে দাদিমাকে।’

    হেসে উঠলেন মিস্টার ডেইমান।

    ‘চলে এসো, শ্যানন। ভিতরে যাই আমরা। মনে হচ্ছে, আজ একটা যুদ্ধ হবে দু’জনের মধ্যে।’

    ‘ধন্যবাদ আবারও,’ কৃতজ্ঞতা জানাল তানিয়া।

    ‘দরকার নেই মেনশন করার,’ এবার মুখে আপত্তি জানালেন শ্যানন ডেইমান। ‘একটা কথা মনে রাখবে, বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ।’

    ‘আসলেই তা-ই,’ স্ত্রীকে সমর্থন করলেন ভদ্রলোক। ‘যদ্দিন না কথা বলতে শেখে ওরা।’

    স্বামীর বাহুতে কিল দিলেন মহিলা।

    .

    হাতে হাত ধরে পাশের বাড়িটির দিকে এগিয়ে চলেছে জনি আর তানিয়া—ওদের নিজেদের বাড়ি ওটা। ফ্রন্ট-পোর্চের দিকে চলে যাওয়া পথটায় পা রেখে জিজ্ঞেস করল জনি: ‘তার মানে, না-ভোট দিচ্ছ জিনিয়া-তে?’

    পিছনে তাকিয়ে মিস্টার আর মিসেস ডেইমানকে নিজেদের বাড়িতে ঢুকে যেতে দেখল তানিয়া। বলল ও স্বামীর দিকে ফিরে তাকিয়ে, ‘বাচ্চাদের ব্যাপারে বেশি কথা বলা উচিত নয় ওঁদের সামনে। এটা… এটা আসলে শুভ নয়।’

    ‘কেন? শুভ নয় কেন?’

    ‘…এক মাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন ওঁরা বছর দুয়েক আগে…’ বলল জনির স্ত্রী ইতস্তত করে।

    ‘হারাননি, ডারলিং। বাড়ি থেকে পালিয়ে হিপ্পিদের সাথে যোগ দিয়েছে মেয়েটা। এরই মধ্যে হয়তো স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়েছে তিনজনকে, আর নিজেকে ভাবছে বিশেষ কিছু… ‘

    ‘এমনকী কিয়ারা নামটাও ভালো শোনায় জিনিয়ার চাইতে…’

    ‘তা-ই, না?’

    পৌছে গেছে ওরা, নব ঘুরিয়ে দরজাটা খুলে দিল জনি। ‘কী ব্যাপার, জনি!’ অসন্তুষ্ট দেখাচ্ছে তানিয়াকে। ‘লক করোনি যাওয়ার আগে?’

    ‘কেন করব, বলো তো!’

    ‘করতে হবে… করতে হবে, জনি,’ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল তানিয়া জোর দিয়ে। ‘বুঝতে পারছ না কেন, সম্পূর্ণ আলাদা দুনিয়া এটা…’

    দুই

    ‘…মৃতের পাহাড় ক্রমেই উঁচু হচ্ছে ভিয়েতনামে,’ খবরের শিরোনাম পড়ছে টিভির রিপোর্টার। বাক্যটার পরই চলে গেল ফুটেজে। ভেসে উঠল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটার ছবি… প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে ছাত্র-জনতা…

    কোনও এক জনসন পরিবারের ছবি দেখানো হলো এর পর।

    ‘তিনজন অনুসারী সহ আজ সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে তথাকথিত এক ধর্মগুরুকে,’ বলে চলেছে প্রতিবেদক। ‘পুলিসি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে…

    রাতের বেলা। টেলিভিশন চলছে গ্রেভদের লিভিং রুমে। যদিও কেউ দেখছে না টিভি।

    চক্‌চক্‌চক্‌চক্‌চক্‌চক্‌চক্‌চক্‌ …

    সেলাই-মেশিনের সামনে রয়েছে তানিয়া এ মুহূর্তে। সুতোর আলপনা আঁকছে এক টুকরো সবুজ কাপড়ে। সেকেণ্ডে লক্ষবার উপর-নিচ করা সুইটার খুব কাছাকাছি হচ্ছে আঙুলগুলো বিপজ্জনকভাবে।

    ‘হানি…’ ডাকল জনি নিজের জায়গা থেকে। ‘টিভিটা বন্ধ করে দেবে একটু? সমস্যা হচ্ছে মনোযোগ দিতে…..

    সেলাই রেখে উঠে দাঁড়াল তানিয়া। মেশিনের নিচ থেকে সরিয়ে নিল কাপড়টা।

    টিভিটা অফ করে দিয়ে চলে এল ও কিচেনে। ওখানে, ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ালেখার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে ওর স্বামী।

    গোটা কতক মেডিকেল বইয়ের আলাদা আলাদা চ্যাপটার মেলে রাখা জনি গ্রেভের সামনে। শবদেহ… কঙ্কাল… গ্রস অ্যানাটমি…

    পতিদেবের ঘাড় ডলে ডলে আরাম দেয়ার প্রয়াস পেল তানিয়া।

    ‘বেশি টিভি দেখা কিন্তু উচিত হচ্ছে না তোমার,’ বলল জনি বোঝানোর সুরে। ‘বাচ্চার উপর প্রভাব পড়তে পারে এতে।’

    ‘কে বলেছে এসব?’

    ‘নতুন এক গবেষণা-প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য…’

    ‘ঈশ্বর, থামো!’কৌতুকের সুর তানিয়ার কণ্ঠে। ‘খেয়েদেয়ে তো আর কাজ নেই ওই বিজ্ঞানীদের… দু’দিন পর পর এক-একটা গবেষণা।’

    ‘সত্যি, তানিয়া। গবেষণায় নাকি বেরিয়ে এসেছে—আগে যেসব সম্ভব বলে ভাবা হয়েছিল, বাইরের সব কিছু তার থেকে অনেক… অনেক বেশি প্রভাব ফেলে গর্ভের শিশুর উপরে। কণ্ঠস্বর… নানা রকম আওয়াজ… গান, ইত্যাদি সব কিছুই…’

    ‘বাজি ধরে বলতে পারি, জনি, যেসব বিজ্ঞানী চালিয়েছে এই গবেষণাটা, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে ওরা এটার পিছনে, যেখানে স্রেফ মুফতে রিসার্চে সাহায্য করার অনুরোধ করতে পারত ওরা মায়েদেরকে…’ বসল মেয়েটা স্বামীর কোলের উপর। দৃষ্টি চালল ক’টা বইয়ের উপরে। ‘কেমন চলছে তোমার পড়াশোনা?’ জিজ্ঞেস করল আন্তরিক স্বরে।

    ‘প্রাণপণ চেষ্টা করছি ভালো লাগানোর জন্য,’ বেজার মুখে মন্তব্য করল জনি। ‘সবাই বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাকে, বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করার মধ্যে খারাপ ছাড়া ভালো কিছু আশা করতে পারি না আমি। আমি এমনকী বলিওনি ওদের যে, নতুন বাপ হতে চলেছি আমি…’

    ‘কেন বললে না?’

    ‘জানি না, কেন। কখনও কখনও স্রেফ শুনতে চাইবে না তুমি…’ এ পর্যন্ত বলে থেমে গেল জনি।

    ‘কী হলো, থামলে কেন? বলো, কী শুনতে চাইব না…..’

    ইতস্তত করছে জনি। ‘কতটা কঠিন… বাচ্চার বাপ-মা হওয়া…’

    ‘হুম… কঠিন…’

    ‘কঠিন শব্দটা হয়তো পারফেক্ট হয়নি এ ক্ষেত্রে। হয়তো শব্দটা হবে— চ্যালেঞ্জিং?’

    ‘কোন্‌টাকে চ্যালেঞ্জিং বলছ? বাড়িতে থাকাটাকে? নাকি আমার বা বাচ্চার দেখভাল করাটাকে?’

    ‘ঠিক জানি না আমি, তানি। হয়তো সবটা মিলিয়ে।’ উঠে পড়ল তানিয়া জনির কোল থেকে। স্পষ্টতই মাইণ্ড করেছে।

    ‘কী হলো, ডারলিং?’ বলল জনি বিপন্ন গলায়।

    .

    অনেকে বাচ্চার ঘর সাজায় খেলনা জীবজন্তু দিয়ে। কেউ হয়তো ঝোলায় চাঁদ-তারা। তানিয়া এ ক্ষেত্রে বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছে পুতুলকে।

    সব ধরনের পুতুল রয়েছে ওর সংগ্রহে। রকিং চেয়ারটার উপরে, কামরার তাকগুলো জুড়ে, নতুন কেনা দোলনাটার মধ্যে শোভা পাচ্ছে পুতুলগুলো।

    হাতের কাপড়টা ভাঁজ করে চেয়ারের পিঠে ঝুলিয়ে দিল তানিয়া।

    এ সময় দরজায় এসে উদয় হলো জনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের অভিব্যক্তি ওর চেহারায়।

    ‘দেখো, তানিয়া, বলল ও হাত কচলে। ‘যেরকম শুনিয়েছে কথাটা, আমি কিন্তু অত কিছু মিন করে বলিনি! তার পরও সরি বলছি…’

    ‘কী রকম শোনাতে চেয়েছিলে তা হলে?’

    ‘অন্তত ওরকম নয়। তবে এমনও নয় যে, কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং খারাপ কোনও শব্দ। আগের দিনগুলোর কথা চিন্তা করে দেখো… আমাদের প্রথম ডেটে হ্যাঁ বলার আগের দিনগুলো। কী যে টেনশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল আমাকে… পাব কি পাব না তোমার হৃদয়…’

    ‘কিন্তু এখন কি মধুর মনে হয় না পুরানো ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে?’

    ‘আমার তো বিশ্বাসই হয় না এখনও, আদায় করতে পেরেছি তোমার সম্মতি।’

    কেন, জানে না, দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা তানিয়া।

    ‘তবে আমি কিন্তু সরি, তানি,’ ক্ষমা চাইল আবার জনি। ‘জানি আমি, অনেকটা নিজের অজান্তেই নিজের জগতে হারিয়ে যাই আমি মাঝে মধ্যে…’

    ‘ইট’স ওকে, জনি। জানিই তো আমি, কীসের ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তোমাকে। আমিই আসলে বোধ হয় কিছুটা সেন্সিটিভ হয়ে পড়েছি ইদানীং…’

    ‘আচ্ছা, তা-ই নাকি? জানতে পারি, কেন?’

    ‘ওই আরকী… ডাক্তারদের কথাবার্তা শুনে।’

    ‘ওয়েল। এ ব্যাপারে আমার বিশেষজ্ঞ-মত হচ্ছে: কিছুটা সেন্সিটিভ তুমি এ মুহূর্তে—তার কারণ হচ্ছে, অনেকটাই প্রেগন্যান্ট তুমি।’

    জোর করে হাসানোর চেষ্টা। তা-ও না হেসে পারল না তানিয়া।

    ‘সত্যি সত্যিই দুঃখিত আমি, তানিয়া,’ বলল আবার যুবক। ‘হ্যাঁ… এটা ঠিক যে, দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি মেডিকেল স্কুলের পড়াশোনা নিয়ে। তবে এটাও সত্যি যে, সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নার্ভাসনেস কাজ করছে কিছুটা। কিন্তু কসম, জীবনে এত বেশি সুখী আর হইনি। কৃতিত্বটা কিন্তু তোমারই…’ মমতা ভরে স্ত্রীকে চুম্বন করল জনি। ‘এই… দাঁড়াও! একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য…

    ‘শেষ বার যখন এ কথা বলেছিলে, তার পর তো প্রেগন্যান্টই হয়ে গেলাম…’

    সব ক’টা দাঁত কেলিয়ে নার্সারি থেকে বেরিয়ে গেল জনি।

    একাকী অপেক্ষা করছে তানিয়া। আঙুল বোলাল দোলনার উপরে ঝুলিয়ে দেয়া উইণ্ডচাইমে। মিষ্টি টুং-টাং শব্দটা প্রশান্তি এনে দিল মনে। প্রিয় গানের সুর গুনগুন করে উঠল মেয়েটা। হাসছে আপন মনে। অনাগত ভবিষ্যতের মিষ্টি কল্পনায় বিভোর।

    ফিরে এসেছে জনি। বড় সাইজের একটা কাগজে মোড়ানো বাক্স ওর হাতে। পাঠক হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন, কী থাকতে পারে ওর ভিতরে। তানিয়া কিন্তু পারছে না।

    ‘বাচ্চা হওয়ার পরই দেবু এটা, ভেবেছিলাম,’ বলল জনি। ‘কিন্তু এখন….’

    ‘এখন তোমার মনে হচ্ছে…’

    ‘হ্যাঁ… দোষী মনে হচ্ছে নিজেকে। ওই যে… যা বললাম…’

    মোড়কটা ছিঁড়ে ফেলল তানিয়া। কী অপেক্ষা করছে ওর জন্য, ভেবে উত্তেজনা বোধ করছে শিশুর মতো।

    হাসিখুশি এক জোড়া চোখ। মাথার দু’দিকে বেণি করা চুল। ঠোঁট ফাঁক করা নীরব হাসি। বাচ্চাদের প্রিয় এই পুতুলটা পরিচিত অ্যানাবেল নামে।

    নিখুঁত, নতুন, অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়েপুতুল।

    ‘ওহ, মাই গড়… জনি!’ উচ্ছ্বসিত তানিয়া।

    ‘এটাই তো খুঁজছিলে অ্যাদ্দিন, তা-ই না?’

    জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল তানিয়া।

    ‘পছন্দ হয়েছে?’

    ‘আই লাভ হার!’

    অ্যানাবেলকে নামিয়ে রেখে স্বামীকে চুমু উপহার দিল তানিয়া। আলিঙ্গনে বাঁধল ওকে জনি। বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে নজর বোলাল কামরার চারদিকে।

    ‘সত্যিই, চমৎকার গুছিয়েছ ঘরটা,’ প্রশংসা করল স্ত্রীর।

    ‘থ্যাঙ্কস।’

    ‘একটা প্রশ্ন আছে যদিও….’

    ‘কী সেটা?’

    ‘এত যে পুতুল রেখেছ ঘরে… যদি ছেলে হয় আমাদের?’

    তিন

    ঘুমাচ্ছে স্বামী-স্ত্রী।

    ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে বেডরুমের জানালা দিয়ে। ঢেউ খেলে যাচ্ছে টেনে দেয়া সুতির পরদাগুলোতে। যেন ঢেউ উঠেছে পানিতে।

    জানালার ওপাশেই ডেইমানদের বাড়ি। মুখোমুখি জানালা দু’বাড়ির।

    বাতি জ্বলে উঠল ও-বাড়িতে।

    জানালায় দাঁড়ালে দেখতে পেত তানিয়ারা, বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছেন কেন্ট ডেইমান। কিছু একটা শুনতে পেয়েছেন যেন পাশের ঘরে, সেজন্য ভেঙে গেছে ঘুমটা।

    মিসেস ডেইমানও জেগে গেছেন ঘুম থেকে। উঠে বসেছেন তিনি বিছানায়। কিছু একটা বললেন মহিলা ভদ্রলোককে। দু’জনকেই সতর্ক দেখাচ্ছে।

    ব্যাপার কী, দেখার জন্য বেডরুম ছাড়লেন মিস্টার ডেইমান।

    এক মুহূর্ত পেরোল… দু’মুহূর্ত…

    হঠাৎ এক তীব্র চিৎকার চিরে দিল রাত্রিকালীন নৈঃশব্দ। ছপাত করে এক পশলা রক্ত বিমূর্ত আলপনা তৈরি করল ডেইমানদের বেডরুমে!

    কেউ একজন প্রবেশ করেছে ওদের শোবার ঘরে!

    আর ঠিক সেই মুহূর্তে ঘুম ভেঙে উঠে বসল তানিয়া বিছানায়।

    পূর্ণ সজাগ মেয়েটা। বুঝতে পারছে না, কেন ভাঙল ঘুমটা। হয়তো চিৎকারটার কারণেই। কিন্তু তখন তখনই শুনতে পায়নি ওটা। জাগিয়ে দিয়েছে ওকে অবচেতনে।

    নামল তানিয়া বিছানা থেকে। খোলা জানালাটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল নিশিতে পাওয়া মানুষের মতো। পরদাটা এক পাশে সরিয়ে দিয়ে তাকাল সামনের বাড়িটার দিকে।

    অন্ধকারে ডুবে আছে ডেইমানদের বাড়ি।

    নিভে গেছে বাতি!

    বিছানায় ফিরে এল মেয়েটা।

    ‘জনি… অ্যাই, জনি… ওঠো… ওঠো না….!’

    ‘কী… বাবু!’ জড়ানো গলায় সাড়া দিল জনি। ‘জ্বালাচ্ছে নাকি আমাদের বাবুটা?’

    ‘ওসব কিছু না, জনি! পাশের বাড়িতে… মনে হচ্ছে, একটা চিৎকার শুনেছি আমি… কোনও একটা ঘাপলা হয়েছে, আমি নিশ্চিত…’

    স্ত্রীর সঙ্গে জানালায় এসে দাঁড়াল জনি গ্রেভ।

    কোথাও কোনও আলো নেই বাড়িটায়… কোনও শব্দ নেই। একটু আগের নারকীয় ঘটনাটার কোনও আলামতই দেখতে পেল না ওরা। পাওয়ার কথাও নয়।

    কাজেই, মোটেই দোষ দেয়া যাবে না জনিকে, যখন বলল ও: ‘তানি, এখানেই থাকো তুমি। আমি গিয়ে দেখে আসি, সব ঠিকঠাক আছে কি না।’ সচেতন প্রতিবেশীর করণীয়ই করতে চলেছে ও।

    কিন্তু তানিয়া… অনেকটা যন্ত্রচালিতের মতো বাধা এল ওর কাছ থেকে।

    ‘না, জনি… দাঁড়াও!’ অজানা আশঙ্কায় কেমন জানি করছে ওর বুকের ভিতরটা।

    দাঁড়াল না জনি।

    স্বামীর পিছু পিছু হলওয়েতে এল তানিয়া।

    ‘পুলিসে ফোন করলে ভালো হতো না, জনি?’ বলল মেয়েটা স্বামীকে আটকানোর জন্য।

    দাঁড়িয়ে গেল জনি দরজার কাছে এসে। হাতটা স্থির হয়ে আছে নবের গায়ে।

    ‘কী বলব ওদেরকে?’ উল্টো প্রশ্ন রাখল ও। ‘একটা চিৎকার শুনতে পেয়েছ বলে মনে হয়েছে তোমার? জাস্ট দেখে আসছি গিয়ে কনফার্ম হওয়ার জন্য। ওঁদের জায়গায় আমরা হলে একই কাজ করতেন ওঁরাও।’

    নবে মোচড় দিল জনি।

    কেন, জানে না, মনে হচ্ছে তানিয়ার, কিছু একটা দাঁড়িয়ে রয়েছে বন্ধ কবাটের ওই পাশে। খুবই খারাপ কিছু। একটুও ভালো লাগছে না অনুভূতিটা।

    ‘….ওঁরা যদি আমাকে চিৎকার করতে শুনতেন, বাজি ধরে বলতে পারি, ওঁরাও পুলিস ডাকতেন…’ আরেক বার চেষ্টা করল তানিয়া।

    ‘ডাকতেন অবশ্যই… কিন্তু তুমি তো শুনেছ কি না, সেটাও নিশ্চিত নও।’ পাল্লা ঠেলল জনি।

    শ্বাস চাপল মেয়েটা।

    নাহ… কিচ্ছু নেই!

    ‘সাবধান থেকো, হানি!’ বলল তানিয়া অস্বস্তি ভরে।

    ‘থাকব… চিন্তা কোরো না…’

    বেরিয়ে গেল ও। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছে জনিকে ওর অন্তঃসত্ত্বা বউ।

    নিজেদের উঠন পেরিয়ে ডেইমানদের আঙিনায় পা রাখল লোকটা। ফ্রন্ট-পোর্চে উঠতেই অন্ধকারে হারিয়ে ফেলল ওকে মেয়েটি।

    অপেক্ষা করছে অধীর হয়ে…

    এতক্ষণ নীরব ছিল, হঠাৎ করে এখন ডাকতে শুরু করেছে ঝিঁঝির দল। নিঝুম রজনিতে অনেক জোরাল শোনাচ্ছে আওয়াজটা। ব্লকের দূরপ্রান্তে কোথাও ঘেউ ঘেউ করে পাড়া মাথায় তুলেছে একটা কুকুর।

    প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চাইছে না তানিয়ার …

    উদ্বিগ্ন চেহারায় বেরিয়ে এল বাইরে। লঘু পায়ে এক কদম নেমে এল পোর্চের সিঁড়িতে।

    ‘…জনি?’

    জবাব এল না।

    উঠনে নেমে এল তানিয়া। কিছুটা অবশ পায়ে হাঁটতে লাগল পাশের বাড়িটির দিকে। দৃষ্টি আটকে রয়েছে ডেইমানদের ফ্রন্ট-পোর্চের কালিগোলা অন্ধকারে।

    এগিয়ে যাচ্ছে… এগিয়ে যাচ্ছে… ঢিপঢিপ করছে বুকের ভিতরটা…

    ‘জনি! কই তুমি? সব কিছু কি—’

    ধড়াম!

    দুটো হার্টবিট মিস করল ও। হাট হয়ে খুলে গেছে ডেইমানদের সামনের দরজাটা! এক তাল কালো ছায়া ছুটে বেরিয়ে এল দরজা দিয়ে!

    ছুটে পালাতে চাইল তানিয়া। পারল না। পাথর হয়ে গেছে যেন পা দুটো।

    অবশ্য মুহূর্ত পরেই উপলব্ধি করল, আর কেউ নয় ছায়ামূর্তিটা—ওরই প্রিয়তম!

    রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে জনি গ্রেভ! মাত্র বেরিয়েছে যেন নিষ্ফল একটা সার্জারির পর।

    ‘জলদি যাও, তানি! ফোন করো অ্যামবুলেন্সে!’ বলল ও থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে।

    ‘ওহ, গড… শিট!’ কেঁপে উঠল তানিয়া। ‘হয়েছে কী, জনি?’ তাকাল ও স্বামীর পিছনের অন্ধকার পটভূমিতে।

    নীল একটা ডিম লাইট জ্বলছে ভিতরের ঘরে। সে- আলোয় ঠাহর করতে পারল মিস্টার আর মিসেস ডেইমানকে, পড়ে আছেন মেঝেতে, গড়াগড়ি খাচ্ছেন নিজেদের রক্তের মধ্যে!

    মুখটা হাঁ হয়ে গেল তানিয়ার। কিন্তু উচ্চারণ করতে পারল না কোনও আওয়াজ। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল ও স্বামীর দিকে। কানে এল জনির তাড়া:

    ‘দোহাই, তানিয়া… যাও এক্ষুনি!’ ডেইমানদের সাহায্য করতে এক ছুটে সেঁধোল ও আবার অন্ধকারের জঠরে।

    এক দৌড়ে নিজেদের সীমানায় ফিরে এল তানিয়া। পা চালিয়ে অতিক্রম করল সিঁড়ির ধাপগুলো। পরের দূরত্বটুকু পেরিয়ে ভারি একটা বস্তার মতো আছড়ে পড়ল দরজায়।

    দু’সেকেণ্ড লাগল কিচেনের দেয়াল থেকে ফোন তুলে নিতে। ডায়াল করছে দ্রুত হাতে। কাঁপাকাঁপির কারণে ঠিক মতো করতে পারছে না কাজটা।

    ওপাশে রিং শুরু হতেই ঘুরে জানালার দিকে তাকাল মেয়েটা। এখান থেকেও চোখে পড়ে ডেইমানদের বাড়িটা।

    তেমনি অন্ধকার। তেমনি নীরব।

    ফোন তুলল অপারেটর লাইনের অন্য প্রান্তে।

    ‘ইহ্-ইয়েস… এ-একটা… একটা অ্যামবুলেন্স পাঠাতে বলুন জলদি… থ্রি সিক্স ফোর গারনার রোড! ….দু’জন ভালোমানুষ… জানি না, কী হয়েছে… কিন্তু… অনেক… অনেক রক্ত!’ হড়বড় করে এক নিঃশ্বাসে বলে গেল তানিয়া।

    সাদা একটা ছায়ামূর্তি সে-মুহূর্তে হলওয়ে পেরোল মেয়েটার পিছন দিয়ে! ওটার উপস্থিতি টের পায়নি তানিয়া।

    ‘হ্যাঁ… হ্যাঁ… থু-থ্যাঙ্ক ইউ!’ বলছে ও। ‘প্লিজ, প্লিজ, তাড়াতাড়ি আসুন!’

    খটাস করে জায়গায় ফিরে গেল রিসিভারটা। প্রায় ছুটে জানালার ধারে চলে গেল তানিয়া।

    দেখার জন্য নয়। টেনে বন্ধ করে লক করে দিল পাল্লা জোড়া। এর পর পিছিয়ে এসে ফিরে চলল হলওয়েতে। ফিরে যাচ্ছে শোবার ঘরে।

    পথেই পড়ে নার্সারিটা। এতটাই বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে যে, দরজা-খোলা কামরাটা পেরিয়ে যাওয়ার সময় চোখেই পড়ল না ওর অন্য কারও উপস্থিতি!

    শ্বেতবসনা এক মহিলা! দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যেখানে।

    দীর্ঘ, হাড়সর্বস্ব চেহারা। চুল নেই মাথায়। ঢিলেঢালা সাদা কাপড় রক্তে রঞ্জিত।

    অ্যানাবেল পুতুলটার দিকে তাকিয়ে আছে রহস্যময় শ্বেতবসনা। চোখা, দীর্ঘ নখরঅলা হাতে ধরে রেখেছে পুতুলটাকে।

    বেডরুমে পৌছে গেছে তানিয়া। পরার জন্য হাতে তুলে নিল গোলাপি রোবটা। গায়ে চড়াল তাড়াতাড়ি। দ্রুত ফিতে বাঁধল কোমরের। ঘুরে দাঁড়াতেই….

    ‘পুতুলগুলো পছন্দ হয়েছে আমার…’

    ভয়ে, আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল তানিয়া গলা ফাটিয়ে।

    ভূতের মতো এসে শোবার ঘরে হাজির হয়েছে সাদা পোশাকের নারীমূর্তিটি!

    হ্যাংলা-পাতলা, জট পাকানো লম্বা দাড়ি আর চুলঅলা এক পুরুষ আত্মপ্রকাশ করল এবার ক্লজিটের খোলা দরজার পিছন থেকে।

    ধারাল ছোরা লোকটার হাতে! ফলাটা চটচট করছে রক্তে!

    ছুটে গেল সে তানিয়ার দিকে। এক হাতে জাপটে ধরল ওকে। চাকু ধরা হাতটা পিছিয়ে এনেই আমূল গেঁথে দিল ওটা মেয়েটার পাকস্থলির পাশে! বিচ্ছিরি একটা আওয়াজ হলো ভচ করে।

    ‘নাআআআআআহ…’ মরণ-চিৎকার বিস্ফোরিত হলো তানিয়ার কণ্ঠ ফুঁড়ে। অসহ্য যন্ত্রণায় গোঙাতে লাগল ও।

    সিনেমার নায়কের মতো এ সময় বেডরুমের দরজা দিয়ে আবির্ভূত হলো ওর স্বামী। সামান্য দেরি করে ফেলেছে যদিও।

    বীরের মতো এগিয়ে গেল ও। ল্যাং মেরে ফেলে দিল অস্ত্রধারী অনাহূতকে। হাত থেকে ছুটে গেল চাকুটা। সড়াত করে চলে গেল সেটা মেঝের উপর দিয়ে।

    হুড়মুড় করে লুটিয়ে পড়ল তানিয়া। রক্তে সপসপ করছে পরনের নাইটগাউনটা। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টিতে দেখতে পেল, প্রাণপণে কুস্তি লড়ছে ওর স্বামী আর হামলাকারী আগন্তুক। সমানে গড়াগড়ি খাচ্ছে মেঝেতে।

    এক পর্যায়ে লোকটার বুকের উপর চড়ে বসল জনি। ঘুষির পর ঘুষি হাঁকাতে লাগল জংলি মুখটায়। মেরেই ফেলত হয়তো, যদি না বাধা আসত দীর্ঘাঙ্গিনীর কাছ থেকে।

    প্রেতিনীর মতো চিৎকার দিয়ে চড়াও হলো মহিলা জনির পিঠের উপর। বিকট হাঁ করে দাঁত বসিয়ে দিল ঘাড় আর গলার সংযোগস্থলে! পুরোপুরি উন্মাদিনী!

    দুঃসহ ব্যথায় ত্রাহি ডাক ছাড়ল জনি।

    বহু কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে ছুরিটার কাছে পৌঁছে গেছে তানিয়া। খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরল ওটা। এক হাতে পেট চেপে ধরে টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়াল ও তীব্র যন্ত্রণা উপেক্ষা করে।

    উঠে বসেছে জংলিটা বুকের উপর থেকে জনিকে ঝেড়ে ফেলে। বুনো উন্মাদনায় ধকধক করছে চোখ দুটো। খাড়া নাকটা প্রায় সমান গেছে ঘুষির আঘাতে। তা-ও বিজাতীয় এক টুকরো হাসি লটকে রয়েছে মুখটাতে। যেন উপভোগই করছে রাতের এই নাটকটা।

    দু’হাতে গোড়ালি চেপে ধরল ও জনির। একটুও দয়ামায়া না করে মুচড়ে দিল কুস্তির কায়দায়।

    স্বামীর আর্ত নাদের মাঝে লড়াকু নারীর মতো ছুরি উঁচিয়ে ছুটে গেল তানিয়া। বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা করছে না ব্যথাবেদনার। কিন্তু আঘাত হানতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল ও লোকটার উপরে। অবশ্য ব্যর্থ হলো না, যে কাজটা করতে চাইছিল।

    তানিয়াকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিল এবার পুরুষটির সঙ্গিনী। টান দিয়ে কেড়ে নিল চাকুটা। নিয়েই চাকু ধরা হাতটা তুলল .. মেয়েটাকে খতম করার নিয়তে।

    আহত শরীর নিয়েই মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জনি। ওকে সুদ্ধ দরজা দিয়ে গড়ান খেয়ে বেরিয়ে উপুড় হয়ে পড়ল হলওয়েতে। জনির শরীরের নিচে চাপা পড়েছে উন্মাদিনী।

    বাজে সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো নিজেদের ভূমিকা পালন করতে দৃশ্যপটে হাজির হলো এ সময় পুলিসবাহিনী। উদয় হলো ওরা সদর দরজা দিয়ে। হাতে উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র।

    ধাক্কা দিয়ে জনিকে গায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়েই খাড়া হলো মহিলা কোনও রকমে। নার্সারির খোলা দরজায় ডাইভ দিয়েই ধড়াম করে আটকে দিল দরজাটা। লক করে দেয়ার শব্দ শোনা গেল ভিতর থেকে।

    স্ত্রীর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল জনি।

    কাতরাচ্ছে সন্তানসম্ভবা নারী। এত যন্ত্রণা!

    ব্যস্তসমস্ত ইএমটি (ইমার্জেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ান) দলটা ঘিরে ফেলল ওদেরকে।

    ‘বাচ্চা হবে আমার স্ত্রীর… পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা… প্রথম সন্তান এটা আমাদের… বাবুটাকে — বাবুটাকে হারাতে চাই না আমরা…’ হড়বড় করে বলতে লাগল জনি আকুতি মেশানো গলায়।

    জ্ঞান হারাচ্ছে তানিয়া। একবার ঝাপসা হচ্ছে, পরক্ষণে পরিষ্কার হচ্ছে দৃষ্টি। হলওয়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল, নার্সারির বাইরে জড়ো হয়েছে পুলিসের লোকেরা। দমাদম দরজা পেটাচ্ছে ওরা।

    ‘আইনের লোক আমরা!’ চেঁচাল এক অফিসার। ‘দরজা খুলুন! দরজা খুলুন, বলছি!’

    খুলল না শ্বেতবসনা।

    হাতের পিস্তলটা উঁচু করে ধরল অফিসারটি। নড করল আরেক জনের দিকে চেয়ে।

    দরজার দিকে এগিয়ে এল অপর জন। এক লাথিতে উন্মুক্ত করে ফেলল কবাটটা।

    দরজার মুখোমুখি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে মহিলা মেঝের উপর। ফাঁক হয়ে আছে গলাটা। আত্মহত্যা করেছে পাশে পড়ে থাকা চাকুটা দিয়ে।

    মহিলার কোলের উপর অ্যানাবেল! উরুর উপর শুইয়ে রেখেছে পুতুলটাকে।

    টপ করে এক ফোঁটা রক্ত পড়ল পুতুলটার হনুর উপরে। ধীরে ধীরে চোখের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে ফোঁটাটা। রক্তলাল অশ্রু যেন। বেরিয়ে আসার বদলে প্রবেশ করছে চোখের মধ্যে।

    পিছনে দাগ রেখে চোখের কোনা দিয়ে জড় শরীরটার ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল রক্তধারাটা।

    চাকা লাগানো স্ট্রেচারে করে বাইরে নেয়া হচ্ছে তানিয়াকে। অক্সিজেন-মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়েছে ওর নাকে- মুখে। ক’টা হাত চেপে বসেছে পেটের ক্ষতে।

    একটু আগের বিভীষিকাটার টুকরো দৃশ্য ঝলসে উঠল মেয়েটার মাথার মধ্যে। ব্ল্যাকআউটের আগে শুনতে পেল:

    ‘কিচ্ছু হবে না, সোনা… জাস্ট শ্বাস নাও তুমি… দেখবে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে…’

    আশাবাদ।

    আশা নিয়েই তো বেঁচে থাকে মানুষ।

    চার

    কালো একটা পরদা। নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে তার ভিতরে। সাদাটে, ভুতুড়ে কোনও অপচ্ছায়া যেন।

    হৃৎস্পন্দনের মতন একটা আওয়াজ ভেসে আসছে যেন দূরে কোথাও থেকে। আবছা থেকে স্পষ্ট হলো ক্রমেই। বেশ পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে এখন।

    আলট্রাসাউণ্ড করা হচ্ছে তানিয়ার।

    ডাক্তারের অফিসে, এগজামিনেশন-চেয়ারে বসে আছে মেয়েটা। পাশেই একটা টুলে বসে স্ত্রীর হাত ধরে রয়েছে জনি।

    ‘…আর যেহেতু অ্যামনিয়োটিক স্যাক কিংবা জলের থলিতে ফুটো-টুটো হয়নি, অথবা শক্ত কোনও ঝাঁকি-টাকি লাগেনি… স্ট্রেসের চিহ্ন যেটা দেখতে পাচ্ছি গর্ভাশয়ে, হয়েছে সম্ভবত ট্রমাটার কারণে… যে কারণে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বেডরেস্ট দিচ্ছি আপনাকে। একান্তই প্রয়োজন হলে হালকা পরিশ্রম করতে পারেন, তা-ও ফ্যাসিলিটির সাহায্য নিয়ে। এর বাইরে আর কোনও খাটাখাটনি করা আপনার আর আপনার বাচ্চার জন্য রিস্কি হয়ে যাবে…’ অদূরে বসেছেন ডক্টর গারবার, বললেন তিনি কথাগুলো।

    ফাঁকা দৃষ্টিতে চাইল তানিয়া চিকিৎসকের দিকে। একটা শব্দও কানে ঢোকেনি যেন। না ডাক্তারের কথা, না অন্য কোনও কিছু।

    স্রেফ ডুবে আছে ও নিজের ভাবনার মধ্যে… নিজস্ব ভীতি আর আশঙ্কার মধ্যে।

    .

    জনির শরীরে হেলান দিয়ে রয়েছে তানিয়া, পোর্চের সিঁড়ি ভাঙতে সাহায্য করছে ওকে যুবক। হাত দুটো পেটের উপর রেখেছে যুবতী। প্রতিটি পদক্ষেপে কুঁচকে উঠছে কপাল।

    ‘দাঁড়াবে নাকি একটু?’ জিজ্ঞেস করল জনি।

    ‘না… ঠিক আছি আমি।’ ডেইমানদের আঙিনায় দৃষ্টি চলে গেল তানিয়ার। ‘… স্রেফ ভিতরে যেতে চাইছি।’

    হলওয়ে ধরে, ধরে ধরে বউকে নিয়ে চলেছে জনি এমনভাবে পা ফেলছে ওরা, যেন হাঁটছে কোনও মাইনফিল্ডের উপর দিয়ে।

    দাঁড়িয়ে গেল তানিয়া। ‘দাঁড়াও তো একটু…’

    নার্সারির সামনে এসে থেমেছে দু’জনে। দরজাটা খোলা। ভিতরে তাকাল মেয়েটা। আগের মতোই রয়েছে সব কিছু। সুন্দর, স্বাভাবিক। কোনও অঘটনই ঘটেনি যেন।

    ‘অন্তত দু’বার করে ঘষামাজা করেছি সমস্ত কিছু,’ স্ত্রীকে আশ্বস্ত করল জনি। ‘এতটাই পরিষ্কার এখন, রীতিমতো সার্জারি করা যাবে…

    দোরগোড়ায় হেঁটে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিল তানিয়া। ‘সমস্ত জিনিস বের করতে হবে এখান থেকে, বিতৃষ্ণা ফুটে উঠল ওর কণ্ঠস্বরে। ‘আর যাচ্ছি না আমি ওই রুমে…’

    .

    বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল তানিয়া। এক রাশ অস্বস্তি নিয়ে তাকাল ক্লজিটের দরজাটার দিকে, যেটার পিছনে লুকিয়ে ছিল রহস্যময় সেই হামলাকারী। ওখান থেকে মেঝের উপরে ঘুরে বেড়াতে লাগল মেয়েটির অস্বস্তি মাখা দৃষ্টি, যেখানটায় আক্রান্ত হয়েছিল ওর স্বামী।

    সব কিছুই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে সেদিনকার সেই জান্তব বিভীষিকা।

    পেটের উপর টেনে নিল তানি চাদরটা। দুঃসহ স্মৃতি থেকে রক্ষা করতে চাইছে যেন অনাগত সন্তানকে।

    ট্রলি ঠেলে ঠেলে ড্রইং রুম থেকে বেডরুমে নিয়ে এল যুবক ওদের জেনিথ টিভিটা। লাগিয়ে দিল প্লাগ।

    ‘এটার দরকার ছিল না, জনি…’ বলল তানিয়া নিরাসক্ত গলায়।

    ‘তানি,’ বলল জনি আদরের নাম ধরে। ‘সামনের তিনটা মাস (বডরেস্টে থাকতে হবে তোমাকে। পাগল হয়ে যাবে স্রেফ শুয়ে থাকতে হলে। খেয়াল রেখো শুধু, ওসব ডেইলি সোপের নেশায় পড়ে যেয়ো না যেন…

    ‘খোদা!’ হাসল তানি। ‘জানো তুমি, কী পরিমাণ ঘৃণা করি আমি ওগুলো…’

    বিছানার কিনারায় বসল জনি। বেশি যাতে না দোলে খাটটা, সেজন্য খুব সাবধানে।

    ‘সেলাই মেশিনটাও নিয়ে আসব’খন, ‘ বলল ও। ‘ঘরটাকে তোমার ফ্যাকটরি বানিয়ে ফেলব আস্তে আস্তে…

    স্বামীর হাত আঁকড়ে ধরল তানিয়া। ওটা যেন ওর জীবনের নোঙর।

    ‘সত্যিই কি বিশ্বাস করো তুমি, ঠিকই আছে আমাদের বাবুটা?’ জানতে চাইল ও ব্যাকুল গলায়।

    ‘ও তো কিছু টেরই পায়নি…’ এক কথায় আশঙ্কাটা উড়িয়ে দিল জনি।

    ‘ওহ, রিয়্যালি? কিন্তু আমি যে শুনেছিলাম, নতুন এক গবেষণায় পাওয়া গেছে নাকি—’

    ‘তানিয়া,’ থামিয়ে দিল ওকে জনি। সিরিয়াস দেখাচ্ছে ওকে এ মুহূর্তে। ‘ডাক্তারের কথা তো শুনেছ তুমি, শুনেছ না? যতক্ষণ চলবে ওঁর কথামতো, ঠিকই থাকবে আমাদের বাবুটা। এখনও ঠিকই আছে। তুমি তো মা ওর, তা-ই না? তুমিই বলো না, কী মনে হচ্ছে তোমার…’

    তাকাল তানিয়া নিজের পেটের দিকে। এবার জানালার দিকে চাইল এক পলক। পৈশাচিক এক জোড়া-খুনের নীরব সাক্ষী উজ্জ্বল রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকা পাশের ওই বাড়িটা।

    ‘জনি, কষ্ট করে একটু টেনে দেবে পরদাটা?’ অনুরোধ করল মেয়েটা। ‘ঘুম পাচ্ছে বড্ড। গড়িয়ে নিতে চাই কিছুক্ষণ।’

    স্ত্রীর কপালে চুম্বন করল জনি। ‘গুড আইডিয়া।’

    .

    নিঝুম রাত্রি। শব্দ বলতে এক মাত্র ম্যান্টলের ঘড়িটার একটানা টিক-টিক। তা-ও এত ক্ষীণ যে সে-আওয়াজ, কানেই ঢুকবে না শ্রবণেন্দ্রিয় সজাগ না থাকলে।

    ঘুমকাতুরে জানোয়ারের মতো মনের সুখে নিদ্রা দিচ্ছে যেন আসবাবগুলো। সেলাই মেশিনটাও ওগুলোর মধ্যে একটা। অদ্ভুত আকৃতির একটা প্রাণীর মতো দেখাচ্ছে অন্ধকারে।

    ক্রিইইইইইইইক… খসখসে একটা আওয়াজ আসছে কোত্থেকে যেন।

    যেন ঘষা খাচ্ছে প্লাসটিকে প্লাসটিকে।

    ওদিকে নার্সারিতে দুলতে শুরু করেছে উইণ্ডচাইমটা। বাতাসের কোনও আলামত ছাড়াই! মিষ্টি শব্দে ভরিয়ে তুলল নৈঃশব্দ। ভৌতিক শোনাচ্ছে গভীর এই রাত্রিতে।

    ঘুমন্ত তানিয়া নড়ে উঠল বিছানায়। পাশেই নাক ডাকাচ্ছে ওর স্বামীপ্রবর।

    সব শব্দ থেমে গিয়ে আবার নীরবতার চাদরে ঢাকা পড়েছে সমস্ত কিছু।

    কিন্তু আবারও…

    অন্য একটা শব্দ হচ্ছে এবার।

    চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌চঙ্ক্‌…

    নিদ্রা পাতলা হয়ে আসছে তানিয়ার। উল্টো পুরোপুরি সজাগ হয়ে গেছে জনি। তড়াক করে লাফিয়ে নামল সে বিছানা থেকে। হলওয়ে ধরে ত্বরিত পদক্ষেপে চলে এল বসার ঘরে। জ্বেলে দিল লাইটের সুইচটা।

    সর্বোচ্চ স্পিডে উপর-নিচ করছে সেলাই-মেশিনের সুইটা! ওঠানামার এই গতি কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা মেশিনটাকে।

    প্লাগটা টেনে খুলে ফেলল জনি।

    ‘জনি?’ ডাকল তানিয়া ও-ঘর থেকে।

    ‘সব ঠিক আছে, হানি!’ চেঁচিয়ে উত্তর করল ওর স্বামী। ‘কীভাবে যেন চালু হয়ে গেছিল সেলাই-মেশিনটা…..’

    চট করে একটা রাউণ্ড দিল ও গোটা বাড়ি।

    অস্বাভাবিকতার মধ্যে, পুরোপুরি খোলা এখন নার্সারির দরজাটা!

    এগিয়ে গিয়ে বন্ধ করতে গেল জনি।

    কীসে জানি আটকাচ্ছে…

    আপনা-আপনি নিচু হয়ে গেল দৃষ্টি।

    অ্যানাবেল। পড়ে আছে দরজার কাছে।

    ঝুঁকে তুলে নিল জনি পুতুলটাকে। . কামরাটায় ঢুকে বসিয়ে দিল ওটাকে রকিং চেয়ারটায়। আরাম-কেদারায় মৃদু দোল খেতে লাগল মেয়েপুতুল।

    বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল জনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস
    Next Article ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    Related Articles

    ডিউক জন

    ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    সুবৰ্ণ সমাধি – ডিউক জন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.