Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অদেখা ভুবন – ডিউক জন

    ডিউক জন এক পাতা গল্প221 Mins Read0

    অদেখা ভুবন – ২.১০

    দশ

    একটা একটা করে দেখল জনি ছবিগুলো। পাশেই দাঁড়িয়ে রইল তানিয়া। চেহারা অন্ধকার।

    ‘দেখলে?’ জিজ্ঞেস করল দেখা শেষে।

    ‘হুম। স্বীকার করছি, ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমাদের কি কথা বলা উচিত ওদের বাপমায়ের সঙ্গে?’

    ‘আকিরা যদি এ কাজ করত, জানতে চাইতাম না আমরা সে-ব্যাপারে?’

    ‘কখনোই এ ধরনের কাণ্ড করবে না আমাদের মেয়ে। কল্পনাশক্তি থাকা ভালো… কিন্তু এরকম না। এ তো স্রেফ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে! এক ধরনের মানসিক অত্যাচার…

    ‘জনি …’

    ‘হ্যাঁ, তানি, সেরকম কিছু হলে জানতে চাইতাম আমি। ঠিক আছে। বাচ্চাগুলো কোথায় থাকে, খুঁজে বের করছি আমি। গিয়ে পরিচিত হব ওদের সাথে। কিন্তু, তানিয়া… খুব বেশি বড় করে দেখো না বিষয়টাকে…’

    ‘হুম… বুঝতে পারছি।’

    ‘এটা কিন্তু কোনও হুমকি না… কিচ্ছু না। কল্পনার দৌড়টা একটু বেশিই হয়ে গেছে আরকী।’

    .

    বৃষ্টির ভারি চাদর শহরের আলোকে ঝাপসা করে দিয়েছে জানালার বাইরে।

    কাউচের উপর কার্যত অচল হয়ে পড়ে আছে জনি। ছোট্ট আকিরা ঘুমাচ্ছে ওর ছোট্ট দোলনায়।

    কাচের একটা ফুলদানি বের করল তানিয়া বাক্স থেকে। দরজার পাশের ছোট এক টেবিলে ঠাঁই হলো ওটার, আগে রাখা লাল ক্রেয়নটার পাশে।

    ক’টা খালি কার্টন এর পর ফ্ল্যাট করল মহিলা। তাকিয়ে দেখল চারপাশে। মানিয়ে নিতে শুরু করেছে নতুন পরিবেশটার সঙ্গে।

    .

    ফ্ল্যাট করা বাক্সগুলো নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে তানিয়া। বাইরে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছে বজ্রপাতের। সেই আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠছে বাড়িটা। তানিয়ার কাছে মনে হচ্ছে, মড়মড় করে উঠছে পুরানো দালানের হাড়গোড়।

    .

    লবিতে নেমে বেইসমেন্টের দরজা খুলল তানিয়া। জ্বেলে দিল বাতিগুলো। আলোকিত হলো আরেক সেট সিঁড়ি।

    নেমে চলল ও আরও নিচের দিকে।

    .

    ওয়াশার কিংবা ড্রাইয়ার–যা-ই বলা হোক না কেন, সার দিয়ে রাখা স্টোরেজ বেইসমেন্টের দূরের দেয়াল ঘেঁষে। বিছানার চাদর, জামাকাপড়, ইত্যাদি আড়াআড়িভাবে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে নিচু ছাতের নিচ থেকে। বিশাল কোনও মাকড়সার জালের মতো দেখাচ্ছে জড়াজড়ি করে থাকা কাপড়গুলোকে।

    সেভেনথ ফ্লোর লেবেল সাঁটা একটা দরজার দিকে এগিয়ে গেল তানিয়া। চাবি বের করে খুলল ও তালাটা। কিন্তু কবাটটা খুলেই হতাশ হতে হলো।

    বাক্সে বোঝাই হয়ে রয়েছে স্টোরেজটা।

    সঙ্গে করে আনা চ্যাপ্টা বাক্সগুলো কোনও রকমে চেপেচুপে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল তানিয়া। অন্য একটা বাক্স টেনে বের করল ওখান থেকে। খুলে দেখল, ওটায় রয়েছে ওর সেলাই-মেশিনটা।

    ঝুলন্ত একটা পরদা দুলে উঠল মেয়েটির পিছনে। কেউ যেন সরাসরি চলে গেছে পরদাটা না সরিয়ে।

    কর্‌র্‌র্‌রাত! বাজ পড়ল আবার।

    সঙ্গে সঙ্গে ভয়াল অন্ধকারে তলিয়ে গেল পাতালঘর! গেছে বাতিগুলো!

    পরিচিত একটা আওয়াজ ভেসে এল আঁধারে জড়োসড়ো তানিয়ার কানে। কোথায় যেন কিরকির শব্দ উঠেছে ঝাঁঝরির মতো কোনও কিছুতে।

    ‘হ্যালো?’ কেঁপে গেল তানিয়ার গলাটা।

    এক কদম পিছিয়ে গেল মহিলা। ঝুলন্ত বেডশিটের স্পর্শ পেল পিঠে। ঘুরে গেল তাতে আতঙ্কিত হয়ে। মাকড়সার জালে আটকা পড়া পতঙ্গের মতো আরও জড়িয়ে গেল ও কাপড়টার সঙ্গে।

    অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে হ্যাঁচকা টানে শিটটা ছাত থেকে ছুটিয়ে আনতেই উজ্জ্বল একটা আলো চোখ দুটো ঝলসে দিল তানিয়ার। চিৎকার দিল মেয়েটা চোখ আড়াল করে।

    ‘আরে… আরে… আমি… আমি!’ আলোটা সরে গেল ওর উপর থেকে। ‘সরি, ভয় পাইয়ে দিয়েছি আপনাকে!’ চিনতে পারার পর ভয় নয়, কণ্ঠটা মধুবর্ষণ করল তানিয়ার কানে।

    জ্যাকসন। · বাড়িঅলা-কাম-ম্যানেজার। দাঁড়িয়ে আছে ফ্ল্যাশলাইট হাতে।

    ‘দেখতে এলাম আরকী…’ কৈফিয়ত দিচ্ছে যেন লোকটা। ‘নিশ্চয়ই উড়ে গেছে ফিউজ।’

    কির্‌র্‌র্‌! কির্‌র্‌র্‌র্‌র্‌!

    ‘শুনলেন?’ নির্দেশ করল তানিয়া।

    ‘হুম। কীসের আওয়াজ?’

    আওয়াজের উৎস আন্দাজ করে আলো ঘোরাল জ্যাকসন। দেখা গেল, সামনে-পিছনে দোল খাচ্ছে একখানা এক্সটেনশন কর্ড। কিছু যেন পালাতে গিয়ে দুলিয়ে দিয়েছে ওটাকে।

    ওদিকটায় অনুসন্ধান চালাল লোকটা মেয়েটাকে সাথে নিয়ে। উঁকি দিয়ে দেখল এক গাদা রঙের ডিব্বার পিছনে।

    কিচ্ছু নেই। শুধু একটা…

    কাপড় এক টুকরো। এক ফালি সাদা লেস বেরিয়ে রয়েছে ডিব্বাগুলোর পিছন থেকে।

    ঢোক গিলল তানিয়া। এ জিনিস তো দেখেছে ও আগে! বিশেষ একটা পুতুলের পরনে!

    কিন্তু… কিন্তু এ তো হতে পারে না! এখানে কী করে আসবে পুতুলটা? ওটা তো…

    কাপড়টার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাড়িঅলা…

    ‘নাআ! দাঁড়ান!’ বাধা দেয়ার চেষ্টা করল তানিয়া।

    দেরি হয়ে গেছে। লেসটা ধরে টান দিয়েছে বাড়িঅলা।

    হাঁপ ছাড়ল মেয়েটা।

    আশঙ্কাটা অমূলক। পুরানো কোনও বালিশের কাভারের পাড় ওটা।

    ‘আমার ধারণা, অন্ধকারে নানান কিছু কল্পনা করছে আপনার মন আর চোখ… যেগুলোর অস্তিত্ব নেই কোনও,’ নিজের মতামত ব্যক্ত করল জ্যাকসন।

    ঠিক মানতে পারল না তানিয়া। তবে ওখানে আর সময় নষ্ট করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই ওর। স্খলিত চরণে রওনা হতে গেল সিঁড়ির দিকে।

    ‘দাঁড়ান একটু…’ অনুরোধ করল জ্যাকসন।

    কোণের এক ওয়ার্কবেঞ্চের উপর রাখল ও ফ্ল্যাশলাইটটা। দেখতে পেয়েছে পুরানো আরেকটা ফ্ল্যাশলাইট। তুলে নিয়ে অন করল সুইচ।

    মরা আলো।

    ঝাঁকি দিতেই আগের চাইতে জোরাল হলো আলোটা।

    ‘নিন।’ লাইটটা বাড়িয়ে দিল জোওয়া ভাড়াটের দিকে।

    নিল ওটা তানিয়া। ‘থ্যাঙ্কস।’

    সিঁড়ি ধরল ও অ্যাপার্টমেন্টে ফেরার জন্য।

    এগারো

    তানিয়া যখন উঠে এল বেইসমেন্ট থেকে, ততক্ষণে মরে এসেছে আবার আলোটা।

    ক’টা চাপড় দিতেই ঠিক হলো আবার। আলো গিয়ে পড়েছে সকালে দেখা বেওয়ারিশ বিড়ালটার উপরে। স্থির হয়ে বসে আছে ওটা ল্যাণ্ডিঙে

    হিস্‌স্‌স্‌!

    লাফ দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল বিড়াল।

    সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করল তানিয়া আট তলার উদ্দেশে।

    .

    এক কদম আগে বাড়ছে… তেজ হারাচ্ছে আলো… ঠাস ঠাস ঠাস… উজ্জ্বল হচ্ছে আবার।

    এভাবেই এগোল ও কয়েক কদম।

    শেষ বারের বার নিভেই গেল ওটা থাপ্পড় খেয়ে।

    ‘ফাক!’ থামতে হলো তানিয়াকে।

    ঠাস ঠাস ঠাস!!!

    নাহ!

    অন্ধকারেই ঠাহর করে করে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটা। শুরুও করল চলতে।

    কির্‌র্‌র্‌র্‌র্‌র্‌র্‌…

    থামতে হলো আবারও।

    শ্বাস আটকে রেখেছে তানিয়া।

    নীরবতা।

    তার পর…

    শোনা গেল একটা ফিসফিসানি।

    ‘তোমার পুতুলগুলো পছন্দ হয়েছে আমার…’

    থপ…

    থপ… থপ…

    থপ… থপ… থ…

    সিঁড়ি ভাঙছে কেউ সজোরে পা দাপিয়ে! দানবীয় কোনও

    কিছু এগিয়ে আসছে যেন।

    দু’হাতে কান ঢাকল তানিয়া।

    থপ… থপ… থপ… থপ… থপ….

    কাছে… আরও কাছে…

    এবার দৌড় দিল মেয়েটা। অন্ধকারেই। ‘হেএএএল্প!’

    থপ… থপ… থপ… থপ… থপ… থপ… থপ…

    পৌঁছে গেছে তানিয়া আট তলার হলওয়েতে। চাবির জন্য হাত ঢোকাল পকেটে।

    শিট!

    শিট… শিট… শিট… শিট… শিট!

    বেইসমেন্টে ফেলে এসেছে গোছাটা!

    থপ… থপ… থ…

    পাগলের মতো দরজার গায়ে কিল-চাপড় দিতে লাগল তানিয়া। ‘জনি! জনি! দরজা খোলো, জনি!’ শুনতে পাচ্ছে, কাঁদতে শুরু করেছে আকিরা।

    ইচ্ছে না করলেও ভয়ে ভয়ে পিছনে চাইল মেয়েটা। ভালো করে দেখার জন্য অন্ধকারে তেরছা হয়ে এল দৃষ্টি।

    কিছু একটা রয়েছে ওখানে… দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির ধাপে! সোজা ওর দিকে চেয়ে আছে এক জোড়া ক্রুদ্ধ চোখ!

    হায়, খোদা! ওটা কি…. ওটা কি….

    জ্বলে উঠল বাতি!

    কিচ্ছু না… কিচ্ছু নেই ওখানে!

    কাচ ভাঙার শব্দ শোনা গেল বদ্ধ দরজার ওপাশে।

    ‘ড্যাম!’ শুনতে পেল জনির প্রতিক্রিয়া।

    ভাসটা নয় তো? ভাবল তানিয়া।

    খুলে গেল দরজাটা।

    স্বামীর বাহুতে জ্ঞান হারাল মেয়েটা।

    বারো

    সকালের রোদ পড়ে ঝিকোচ্ছে ভাঙা কাচের টুকরোগুলো। ঝাঁট দিয়ে ওগুলোকে প্লাসটিকের বেলচায় তুলছে তানিয়া। পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ওকে।

    কাউন্টারের গায়ে হেলান দিয়ে স্ত্রীকে লক্ষ করছে জনি।

    ‘জানি আমি,’ বলে শুরু করল কথা। ‘ব্যাপারটা সহজ’ নয় তোমার জন্য। তার পরও মনে রাখবার চেষ্টা কোরো—যা-কিছু ঘটে গেছে, সেই স্মৃতিগুলোকে এড়ানোর জন্যই এখানে এসেছি আমরা। জামাকাপড় গুছিয়েছি, ফার্নিচার জড়ো করেছি, সাথে করে নিয়ে এসেছি যত সুখস্মৃতি। প্রতিজ্ঞা করেছি, পিছনেই রেখে আসব এসমস্ত ভয় আর দুশ্চিন্তা..:’

    ‘যত সহজে বললে কথাটা, ব্যাপারটা অত সহজ নয় আসলে,’ মলিন কণ্ঠে বলল তানিয়া। ‘নতুন একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছি আমি… নতুন একটা শহর পেয়েছি… কিন্তু বেশির ভাগ সময় একা থাকতে হয় আমাকে… আর…’

    ‘একা নও তো তুমি। আকিরা আছে না সাথে?’

    ‘ভালো করেই জানো তুমি, খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছ। তুমি তো রোজ বেরিয়ে পড়ছ কাজে, কাজের আলাপ করছ কত জনের সাথে… আর আমি….

    ‘ভয় পাচ্ছ একলা একলা।’

    বেলচা থেকে টুকরোগুলো ট্র্যাশবিনে ফেলে দিল তানিয়া।

    কাছে গিয়ে স্ত্রীর বাহু ধরল জনি। টেনে আনল বুকের খুব কাছে।

    ‘আজ রাতে আগেভাগেই চলে আসছি ডিউটি থেকে। চলো, তুমি আর আমি ডিনার করি একসাথে বসে। কাজের আলাপও হবে, খাওয়াদাওয়া শেষে কাজের কাজও করা যাবে কিছু… কী বলো? অনেক দিন তো হয়ে গেল…

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল তানিয়া। গোটা ব্যাপারটাকেই হালকাভাবে দেখছে ওর স্বামী।

    .

    যেসব বাক্স খোলা হয়নি এখনও, সরিয়ে রাখা হয়েছে ওগুলো বৈঠকখানার এক পাশে। তবে একটু একটু করে ক্রমেই বাসযোগ্য হয়ে উঠছে ওদের এই অ্যাপার্টমেন্টটা।

    এ মুহূর্তে চালু রয়েছে রেকর্ড প্লেয়ারটা। হোয়াই নো বার্ডস… সাডেনলি অ্যাপিয়ার… এভরি টাইম… ইউ আর নিয়ার… গেয়ে চলেছেন ক্যারেন কারপেন্টার।

    এমন সময় বেরসিকের মতো বন্ধ হয়ে গেল একটা টাইমার।

    স্টোভটা ওপেন করল তানিয়া কিচেনে এসে। টেনে বের করল পট রোস্টটা। জিভে পরখ করে দেখে নিল, হয়ে এসেছে কি না রান্নাটা।

    না। সময় লাগবে আরেকটু।

    ফের স্টোভের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল ও মাংসটা।

    ডিনারের জন্য মোম জ্বালল তানিয়া কিচেন-টেবিলে। ভাঁজ করা কাপড়ের ন্যাপকিন সাজাল জায়গামতো। আগেই এক তোড়া ফুল রেখেছে টেবিলটার মাঝখানে, নেড়ে দিল ওগুলো।

    টেবিল গুছিয়ে ঢু মারল এবার নার্সারিতে।

    ঘুমাচ্ছে আকিরা দোলনায় শুয়ে। ফোনটা বেজে উঠতেই নড়ে উঠল খানিকটা।

    ইস্পাতের মতো ঠাণ্ডা, শক্ত হয়ে গেছে তানিয়া। যা আশঙ্কা করছে, তা যেন না হয়, খোদা!

    .

    হতোদ্যম হয়ে পড়েছে তানিয়া। না, ঈশ্বর মুখ তুলে তাকাননি ওর দিকে।

    ‘দুঃখ কোরো না, জনি,’ নিজেই ও সান্ত্বনা দিচ্ছে ফোনের ওপাশের কণ্ঠটিকে। ‘জানিই তো, কী রকম তোমার কাজের ধরন…’

    ‘…কিন্তু তোমাকে আমি আপসেট করতে চাইনি, তানিয়া! কী করি, বলো তো! অতিরিক্ত শিফট কাজ করতে পারব কি না, জানতে চাইছে ওরা। আমি বলেছি—’

    ওরা জানতে চেয়েছে তোমার কাছে?’

    ‘হুম।’

    ‘বলে দাও তা হলে – পারবে না।’

    ‘এটা করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’

    ‘কেন সম্ভব নয়?’

    ‘কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ভবিষ্যৎ। একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য-‘

    ‘ঠিক এই মুহূর্তে ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমানের দিকেই মনোযোগী হওয়া উচিত তোমার!’ রাগ করে ফোনটা রেখে দিল তানিয়া। গোল্লায় যাক সব কিছু!

    হোয়াই ডু স্টারস…. ফল ডাউন ফ্রম দ্য স্কাই… এভরি টাইম… ইউ ওয়াক বাই? জাস্ট লাইক মি… দে লং টু বি…

    পিনটা তুলে নিয়ে বন্ধ করে দিল তানিয়া যন্ত্রটা। মুদল চোখ দুটো। তালগোল পাকানো অবস্থা মাথার মধ্যে।

    টুং টাং টুং টাং ভেসে আসছে নার্সারি থেকে। নির্দিষ্ট ছন্দে বাজছে যেন উইণ্ডচাইমটা।

    চোখ মেলল তানিয়া। ফিরে এল আবার মেয়ের ঘরে। সে-ও পা রাখল ও-ঘরে, বাজনাটাও বন্ধ হয়ে গেল।

    এখনও ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে আকিরা।

    অন্তরাত্মা ঠাণ্ডা হয়ে এল, যখন কানে এল, রেকর্ড প্লেয়ারটা ফের চালু হয়ে গেছে লিভিং রুমে!

    অন দ্য ডে দ্যাট ইউ ওয়্যার বর্ন… দি এঞ্জেলস গট টুগেদার…

    স্লো হয়ে এল প্লেয়ারের স্পিড। পৈশাচিক শোনাচ্ছে এখন ক্যারেন কারপেন্টারের মিষ্টি কণ্ঠ।

    তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে রুমে এসে এক টান দিয়ে যন্ত্রটার কর্ড খুলে ফেলল তানিয়া।

    সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল একটা ফিসফিসানি।

    কোত্থেকে আসছে ওটা? পাশের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে? আর… পায়ের আওয়াজের ব্যাপারটাই বা কী?

    ঘাড় তুলল তানিয়া ছাতের দিকে। ঠিক নিশ্চিত নয়, ওখান থেকেই আসছে কি না ফুসুর ফাসুর।

    হঠাৎ কেঁদে উঠে পিলে চমকে দিল বাচ্চাটা।

    চলল তানিয়া মেয়ের ঘরের দিকে। কামরায় পা রাখতে যেতেই ধাম্‌ম্‌ম্ করে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা ওর মুখের উপর।

    টানাটানি করে খোলার চেষ্টা করল তানিয়া। লাভ হলো না। পাথরের মতো অনড় যেন দরজাটা।

    ‘নাআআআ!’ চেঁচিয়ে উঠল ভয়ঙ্কর কোনও আশঙ্কায়। ‘না… না… না… আকিরাহ!’

    নিজেকে ছুঁড়ে দিল তানিয়া পাল্লাটার উপরে। এক বার… দু’বার… তিন বারের বার পরাস্ত হলো দরজা।

    ভিতরে ছিটকে এল মেয়েটা। ছোঁ মেরে মেয়েকে তুলে নিল দোলনা থেকে। ছুটে গিয়ে দাঁড়াল জানালার কাছে।

    বন্ধই রয়েছে জানালাটা!

    তা হলে?

    গোড়ালির উপর পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল তানিয়া। তাকাচ্ছে ইতিউতি।

    গোটা কামরায় ওরা দু’জন ছাড়া নেই আর কেউ!

    তেরো

    মেয়েকে নিয়ে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে তানিয়া। ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে বাচ্চাটা। কিন্তু ঘুম নেই ওর মায়ের চোখে।

    একটা বাতি জ্বলে উঠল হলওয়েতে। দরজার তলার ফাঁকটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে আলোর রেখা।

    বিছানায় উঠে বসল তানিয়া।

    একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে ফাঁকটার সামনে। কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়… অথবা কিছু!

    বাঁচাও, খোদা… বাঁচাও, খোদা… বাঁচাও, খোদা…

    ধীরে ধীরে ঘুরছে ডোরনবটা!

    তার পর ফাঁক হলো দরজাটা!

    জনি ওটা।

    ‘এখনও জেগে আছ কী করতে?’ অবাক হয়েছে ও স্ত্রীকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে।

    ‘ঘুমাতে পারছি না, জনি!’ কাতরে উঠল তানিয়া। ‘অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে এই বাড়িতে… এমন সব ব্যাপার, যেগুলোর কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারব না আমি…’

    ‘শিয়োর তো তুমি, স্রেফ মনের অস্থিরতার কারণে ঘটছে না এসব? নতুন মায়েদের প্রসব-পরবর্তী মুড-ডিসঅর্ডারের কারণে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এটা…

    ‘কি জানো, জনি, একটা ডক্টরেট মানেই এই না যে, সব ব্যাপারে এক্সপার্ট হয়ে গেছ তুমি! নাকি ভুল বলেছি? নিজেকে গর্দভ প্রমাণ করার লাইসেন্সও নয় এটা!’

    মোক্ষম আক্রমণ।

    মাথা ঝাঁকাল জনি কলের পুতুলের মতো। চাইলে চব্বিশ ঘণ্টাই ঝগড়া করা যায় এ নিয়ে।

    ধপকরে বসে পড়ল ও বিছানায়। হার মেনে নিয়েছে।

    ‘আমাদের বোধ হয় কারও সাথে কথা বলা দরকার, বাতলাল জনি অনিশ্চিত স্বরে।

    ‘যেমন, থেরাপিস্ট?’ ধরল তানিয়া কথাটা বলা মাত্রই। ‘নিশ্চয়ই ভাবছ, পাগল হয়ে গেছি আমি?’

    ‘না, ভাবছি না,’ কিছুটা কঠিন স্বরে বলল জনি গ্রেভ।

    .

    সেইণ্ট মনিকা’স চার্চ অফিসে ফাদার রোডরিগেজের ডেস্কে ওঁর মুখোমুখি বসেছে জনি আর তানিয়া। পাশেই স্ট্রলারে শুয়ে ঘুমাচ্ছে ওদের শিশুসন্তান।

    সব কথা শুনে নিজের বুকে ক্রস আঁকলেন রোডরিগেজ।

    ‘….সেজন্যই চার্চের শরণাপন্ন হয়েছি আমরা, ফাদার,’ বলে চলেছে জনি। ‘অনেক বছর আগে একই কাজ করেছিলেন আমার মা-বাবাও। বিরাট একটা ফাঁড়ার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলেন ওঁরা ওই সময়টায়…’

    ‘হ্যাঁ, অবশ্যই… বুঝতে পারছি আমি। তবে… তোমাদের সমস্যাটা কিন্তু ফাঁড়ার চাইতেও গুরুতর…’

    মুখ চাওয়াচাওয়ি করল স্বামী-স্ত্রী।

    ‘গত কয়েক মাসের মধ্যে খুবই খারাপ একটা সময় পার করে এসেছ তোমরা,’ বলছেন রোডরিগেজ। ‘সবচেয়ে ভালো সময়টাও। একটা কথা মনে রাখবে সব সময়… পেণ্ডুলামের সামান্য দুলুনিও কিন্তু সবচেয়ে শক্ত ভিতকে টলিয়ে দিতে পারে অনেক সময়। তেমনটাই ঘটেছে তোমাদের জীবনে। সুখের কথা, পরীক্ষাটায় উৎরে গেছ তোমরা। আমার পরামর্শ হচ্ছে, বাজে অতীতটাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা না করে তোমাদের উচিত সেটাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা—প্রমাণ করা, কতটা শক্তিশালী তোমাদের পারস্পরিক বন্ধন। যত যা-ই ঘটুক না কেন, কোনও অবস্থাতেই ভেঙে পড়া চলবে না। মনটাকে শক্ত রাখতে হবে সব সময়। আর একবার মনের শক্তি দিয়ে পিশাচ-দানবদের মোকাবেলা করার পর কী-ই বা আর বাকি থাকছে ভয়ের?’

    জনির হাতে চাপ দিল তানিয়া। ভরসা পাচ্ছে যেন ফাদারের কথায়।

    .

    সংগ্রহের পুতুলগুলো এক এক করে বাক্স থেকে বের করে শেলফে সাজিয়ে রাখছে তানিয়া, এসে উদয় হলো জনি। আরেকটা বাক্স ওর হাতে, নামিয়ে রাখল ওটা।

    ‘এটাই বোধ হয় শেষ বাক্স…’ অনুমান যুবকের।

    ‘অবশেষে তা হলে খতম হচ্ছে ঝামেলা,’ ফুর্তির সুর তানিয়ার কণ্ঠে। ‘শ্যামপেন দিয়ে উদযাপন করা দরকার না?’

    ‘ও, হ্যাঁ… বাইরে দেখলাম বাচ্চাগুলোকে। খেলছে সিঁড়িতে বসে।’

    ‘বকাঝকা করেছ নাকি?’

    ‘হালকা। তার পর চুরি করলাম ওদের টিফিনের পয়সা…’

    ‘ঠাট্টা না… সত্যি করে বলো।’

    ‘জিজ্ঞেস করলাম, ছবিগুলো এঁকেছে কি না ওরা। অস্বীকার করল বেমালুম!’

    ‘মিথ্যুক।’

    ‘ছেড়ে দাও, তানি। একদমই বাচ্চা ওরা। ডরোথি আর রবিন ওদের নাম।’

    ‘নিজে থেকেই নাম বলল?’

    ‘বলল তো! কেন?’

    ‘এমনি জিজ্ঞেস করলাম।’

    বসার ঘরে কেঁদে উঠল আকিরা।

    ‘আমি দেখছি…’ বলে উঠল জনি। বেরিয়ে গেল ও কামরা ছেড়ে।

    শেষ বাক্সটা টেনে নিল তানিয়া নিজের দিকে। খুলল ডালাটা।

    ছোট একটা বালিশ বেরোল বাক্সটা থেকে। ছোট একটা কম্বল। এর পর আত্মপ্রকাশ করল অ্যানাবেল। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে।

    চিরস্থায়ী হাসিটা লক্ষ করল তানিয়া। আঙুল চালাল চুলগুলোর ভিতর দিয়ে।

    মেয়েকে কোলে করে ফিরে এসেছে জনি।

    ‘আরেহ! এটা আবার কোত্থেকে এল?’ নির্জলা বিস্ময় ঝরে পড়ল ওর কণ্ঠ থেকে। ‘স্পষ্ট মনে আছে, ফেলে দিয়েছিলাম ওটা!’

    ‘কী জানি! হতে পারে, আগুন লাগার কারণে ওলটপালট হয়ে গেছে জিনিসপত্র… ‘

    ‘দাও ওটা আমাকে।’

    বাড়িয়ে দিচ্ছিল তানিয়া, কী ভেবে ফিরিয়ে নিল আবার। ‘উঁহুঁ! এটা তুমি গিফট করেছ আমাকে। ফাদার রোডরিগেজ কী বললেন, মনে নেই? অতীতকে ধামাচাপা না দিয়ে বরং শক্ত থেকে মুখোমুখি হতে হবে অতীতের…’

    ‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু শিয়োর তো তুমি?’

    ‘অবশ্যই।’

    শেলফে তুলে রাখল তানিয়া পুতুলটাকে, আর-সব পুতুলগুলোর মাঝে। সব ক’টার মধ্যমণি করল যেন।

    ‘দেখেছ?’ বলল ও জনিকে। ‘কী সুন্দর এঁটে গেছে!’

    .

    ফসেটটা ছেড়ে দিল তানিয়া। আঙুলের ফাঁক দিয়ে পড়তে দিল পানির ধারা, যতক্ষণ না মনে হলো, কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় এসেছে পানি।

    এবার মেঝে থেকে তুলে নিয়ে সিঙ্কে স্থাপন করল বেবি- টাবটা। পানি ভরছে গামলায়।

    এই ফাঁকে ঢু মারল নার্সারিতে।

    যথারীতি দোলনায় শুয়ে আছে আকিরা। নিজস্ব ভাষায় খলখল করে উঠল মাকে দেখে। হাসছে খুব। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে!

    শেলফের পাশ দিয়ে এগোল তানিয়া মেয়ের দিকে। খেয়াল করল না, অ্যানাবেল নেই ওখানে!

    ঢিলেঢালা ওয়ানসি-টা আকিরার গা থেকে খুলে নিল তানিয়া অভ্যস্ত হাতে। ওদিকে কিচেনে ভরে উঠেছে গামলাটা। বাষ্পের মেঘ উঠছে পানি থেকে! তাপমাত্রা পুড়ে যাওয়ার মতো গরম!

    উদোম মেয়েটাকে কোলে তুলে নিল তানিয়া। শুনতে পেল, বন্ধ হয়ে গেছে পানি পড়া।

    কিচেনে চলে এল ও মেয়েকে নিয়ে।

    মুড়মুড় করছে পাইপের ভিতর। শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল আকিরা।

    ‘মজা, না?’ বলল তানিয়া কপট রাগে। ‘মজা পাচ্ছ তুমি?’

    জবাবে জলতরঙ্গের সুরে হেসে উঠল বাচ্চাটা।

    গরম পানিতে পূর্ণ হয়ে রয়েছে গামলাটা! কিন্তু তানিয়ার জানা নেই সেটা! সরে গেছে বাষ্পের মেঘ। খিলখিল করতে থাকা আকিরাকে ধরে রাখল ও গামলার উপরে। ফেলে দেয়ার ভঙ্গিতে নামিয়ে আনল সাঁ করে। বাচ্চাটার পা দুটো পানির উপরটা স্পর্শ করার আগেই ধরল আবার ওকে উঁচু করে।

    খুশিতে চিৎকার দিল আকিরা।

    ‘কেমন বোকা বানালাম!’ বলল তানিয়া মেয়ের উদ্দেশে। বুকের সঙ্গে আকিরাকে ধরে রেখে যোগ্য মায়ের মতো আঙুলে পরখ করল পানি।

    ‘ওহ, শিট!’ ঝটকা দিয়ে সরিয়ে আনতে হলো হাতটা!

    প্রায় দৌড়ে ফিরে গেল তানি নার্সারিতে। মেয়েকে দোলনায় রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই হোঁচট খেল কীসে জানি।

    ফ্লোরে পড়ে আছে অ্যানাবেল!

    ছুটল তানিয়া বাথরুমের দিকে। ছেড়ে দিল ঠাণ্ডা পানির কলটা। পুড়ে যাওয়া আঙুলগুলো ধরল পানির নিচে। জ্বালা করছে ভীষণ। রক্তস্রোতের মতো আঙুলের ডগা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে যন্ত্রণা।

    চোদ্দ

    ক্যাবিনেটের তলা থেকে বেরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল জোশুয়া জ্যাকসন। ‘হ্যাঁ… চেক করলাম। বুঝতে পারছি না সমস্যাটা। পাইপের কোনও ব্যাপার নয় এটা, ঠিকঠাকই কাজ করছে পাইপ। …বলছেন, গরম পানি বেরিয়েছে ঠাণ্ডা পানির কল থেকে! এটা কি সম্ভব? হতচ্ছাড়া এই বিল্ডিঙে গরমটা থেকেই গরম পানি বেরোয় না!’

    ‘হুম… বুঝতে পেরেছি।’ গম্ভীর জন। ‘থ্যাঙ্কস ফর টেকিং লুক…’

    ‘মিসেস কেমন কেমন আছেন আপনারা? সেদিন যে দেখেছিলাম… মনে হয়েছিল, ভয়ের মধ্যে আছেন কোনও কিছু নিয়ে…’

    ‘ভালোই আছে তানিয়া। বোঝেনই তো, মা হয়েছে নতুন… বিশাল ধকল গেছে শরীর আর মনের উপর দিয়ে। ও-ই নয় শুধু, আমার উপর দিয়েও। আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে হচ্ছে নতুন জীবনে। তবে ঠিক হয়ে আসছে সব কিছু।’

    .

    টেবিলে বসে, একাকী ডিনার করছে তানিয়া। আজকাল প্রায়ই একা একা খেতে হচ্ছে ওকে।

    খাওয়া শেষে শেষ চুমুক দিল ও ওয়াইনে।

    .

    শেলফে ফিরে গেছে অ্যানাবেল। কোলের উপর জড়ো করে রাখা হাত দুটো। মাথাটা কাত হয়ে রয়েছে এক দিকে। ঠিক যেন নিচে তাকিয়ে দেখছে ওটা দোলনায় ঘুমন্ত শিশুটিকে।

    বেওয়ারিশ একটা বিড়াল লাফিয়ে উঠল বন্ধ জানালার ওদিকে। খস… খস… খস… খস… আঁচড় কাটতে লাগল শার্সিতে।

    ভাঁজ করা এক গাদা বাচ্চাদের কাপড় নিয়ে নার্সারিতে ঢুকল তানিয়া। ঢুকেই দেখতে পেল বিড়ালটাকে। কাছে গিয়ে টোকা দিল কাচের গায়ে।

    পালিয়ে গেল বিড়াল।

    .

    বৈঠকখানার কাউচে বসে, দ্য ক্যারল বারনেট শো দেখছে তানিয়া টিভিতে। একটু পরে যখন বিজ্ঞাপন-বিরতিতে গেল অনুষ্ঠান, কমিয়ে দিল ভলিউম।

    খস… খস… খস… খস… খস… খস…

    উঠে দাঁড়াল মেয়েটা।

    কীসের আওয়াজ? আবারও কি বিড়ালটা?

    দেখতে গেল মেয়ের রুমে।

    খস… খস… খস…

    ভেজানো পাল্লাটা ফাঁক করে ধরতেই দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে গুলির মতো ছুটে বেরিয়ে গেল একটা কালো বিড়াল। সেঁধোল গিয়ে রান্নাঘরে।

    ‘মিয়াও!’

    ধড়াস করে উঠেছিল তানিয়ার কলজেটা। ভিতরে তাকাতেই বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো হৃৎস্পন্দন।

    ‘ওহ, গড…’

    ডজন খানেক আরও ভবঘুরে বিড়াল দখল করে রেখেছে নার্সারি!

    ফ্লোরবোর্ডের উপর আঁচড় কাটছে কোনোটা। কোনোটা আবার উঠেছে গিয়ে পুতুল রাখার শেলফে। সামনের পা দু’খানা দোলনার রেইলে তুলে দিয়েছে সঙ্গীতমনস্ক এক বাঘের মাসি, খেলছে উইণ্ডচাইমে থাবা দিয়ে দিয়ে।

    আপনা-আপনি জানালার দিকে চলে গেল তানিয়ার দৃষ্টি।

    বন্ধই রয়েছে ওটা! তা হলে ঢুকল কীভাবে বিড়ালগুলো?

    ছুটে গিয়ে বুকে তুলে নিল ও আকিরাকে।

    ওদের পিছনে তাকের উপর বসে রয়েছে অ্যানাবেল। শরীরের দু’পাশে রাখা এখন হাত দুটো! মাথাটা কাত হয়ে রয়েছে আরেক দিকে!

    .

    ঝড়াং করে দরজাটা খুলে গেল গ্রেভদের অ্যাপার্টমেন্টের।

    ‘গেলি! যা… ভাগ বলছি!!’

    পড়িমরি করে খোলা দরজা দিয়ে ছুটে বেরোল বিড়াল- বাহিনী। ঝাড়ু মেরে তাড়াচ্ছে ওগুলোকে রাগে অগ্নিশর্মা গ্রেভ সাহেবা।

    এই মাত্র সিঁড়ি ভেঙে আট তলায় এসে ওঠা জ্যাকসনের আশপাশ দিয়ে পালিয়ে বাঁচল বিড়ালগুলো।

    ‘বিড়াল চরাচ্ছেন নাকি?’ আমুদে গলায় জিজ্ঞেস করল ম্যানেজার।

    একটুও মজা পেল না তানিয়া সস্তা এ রসিকতায়। ঘুরে দাঁড়িয়ে ঢুকে পড়ল আবার বাড়ির ভিতরে।

    .

    ঝাড়টা আবার ঘরের কোনায় রেখে দিল তানিয়া। ভেবেছিল, ঝেঁটিয়ে বিদায় করা গেছে সব ক’টাকে।

    ভুল!

    আবার শোনা গেল খসখসানি। আসছে হলওয়ে থেকে।

    আবার মুঠোয় নিল ও ঝাড়ুর ডাণ্ডা। পা টিপে টিপে এগিয়ে চলেছে হলওয়ের দিকে।

    খস… খস… খস… খস…

    কই… নেই তো হল-এ!

    তা হলে কি নার্সারিতে?

    উঁহুঁ… তা-ও নয়।

    নিজেদের ঘরের দিকে এগোল এবার তানিয়া। কামরায় ঢুকে জ্বেলে দিল বাতি। সাবধানী চোখে জরিপ করছে চারদিকটা।

    বিছানার চাদরের ঝুল নড়ছে, দেখতে পেল। এই মাত্র কিছু যেন ঢুকেছে গিয়ে খাটের তলে।

    হাত আর হাঁটুতে ভর দিয়ে উবু হলো তানিয়া। উপরে ওঠাল চাদরের প্রান্ত…

    কিচ্ছু নেই! কেবলই অন্ধকার খাটের নিচটা জুড়ে।

    না-না, আছে… বাচ্চাদের একটা ফিডার পড়ে আছে অন্ধকারের পটভূমিতে।

    হাত বাড়াল তানিয়া ফিডারটা তুলে আনার জন্য। তক্ষুনি—

    খপ করে চেপে ধরা হলো হাতটা! টেনে নেয়ার চেষ্টা করছে ওকে খাটের নিচে!

    কীসে!

    জান্তব আতঙ্কে চিৎকার ছাড়ল তানিয়া। হেঁচকা এক টানে নামিয়ে আনল ও হাতটা।

    খাঁজ কাটা তিনটে আঁচড়ের দাগ ওর কবজিতে। প্রকট হয়ে উঠেছে বেরিয়ে আসা রক্তে।

    নাইটস্ট্যাণ্ডে রাখা লণ্ঠনটা মেঝের দিকে নিচু করে ধরল মেয়েটা। আবার হাত বাড়াচ্ছে বেডস্কার্টের দিকে…

    কাঁপছে হাতটা… সন্তর্পণে উঁচু করে ধরল প্রান্ত।

    এখন আর অন্ধকার নয় বিছানার নিচটা। লণ্ঠনের আলোয় আলোকিত। সে-আলোয় দেখা গেল… এক রাশ ধুলো। ব্যস, আর কিচ্ছু না!

    সিধে হয়ে দাঁড়াল তানিয়া। লণ্ঠনটা আবার তুলে রাখল নাইটস্ট্যাণ্ডে। ভীষণ জ্বালা করছে কবজিটা। সেজন্য যতটা না বিক্ষিপ্ত মনটা, তার চেয়ে বেশি অস্থিরতা ভর করল আরেকটা দৃশ্য দেখে।

    অ্যানাবেল।

    বসে আছে বিছানায়!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস
    Next Article ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    Related Articles

    ডিউক জন

    ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    সুবৰ্ণ সমাধি – ডিউক জন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.