Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অদেখা ভুবন – ডিউক জন

    ডিউক জন এক পাতা গল্প221 Mins Read0

    অদেখা ভুবন – ১.৫

    পাঁচ

    বৈঠকখানায়, খোলা গানকেসটার সামনে দাঁড়িয়ে অ্যালবার্ট। একখানা শটগান আর বেশ কিছু রাইফেল রয়েছে আলমারিটায়।

    দ্রুত হাতে একটা হ্যাণ্ডগানে অ্যামিউনিশন ভরতে লাগল গৃহস্বামী। ভরা শেষ হলে, বন্দুক হাতে বেরিয়ে এল

    হলওয়েতে।

    স্ত্রী আর মেয়েরা সিঁড়ির উপরের ল্যাণ্ডিঙে দাঁড়িয়ে সেলারের দরজার দিকে যেতে দেখল পুরুষটিকে।

    গোঁজটা ছাড়াও একটা চেয়ার এনে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে দরজাটার হাতলের নিচে।

    ‘সাবধান, অ্যালবার্ট!’ গলাটা কেঁপে গেল রোজমেরির। দরজা থেকে চেয়ার আর গোঁজটা সরাল অ্যালবার্ট। হাতে প্রস্তুত রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। ধীরে ধীরে টেনে খুলল পাল্লাটা।

    ওটার উল্টো পিঠে গভীরভাবে বসে যাওয়া আঁকাবাঁকা দাগগুলো দেখে সভয়ে শ্বাস চাপল রোজমেরি।

    স্থাণু হয়ে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রইল অ্যালবার্ট একটা মুহূর্ত। গভীর ভাঁজ পড়েছে কপালে। ও-ও দেখেছে আঁচড়গুলো।

    বুক ভরে দম নিয়ে কদম রাখল প্রায়-খাড়া কাঠের সিঁড়ির প্রথম ধাপে। অন্ধকারে হারিয়ে গেছে সিঁড়ির আরেক মাথা। দরজার বাঁ দিকে, ভিতরের দেয়াল হাতড়াল অ্যালবার্ট। খুট করে জ্বলে উঠল বালবের সুইচ। নিস্তেজ, হলদে আলো ছড়িয়ে পড়ল ভূগর্ভস্থ কামরাটায়।

    সেলারের গভীরে ক’পা নেমে এল অ্যালবার্ট। সতর্ক। প্রস্তুত।

    শেষ ধাপটাও অতিক্রম করে থেমে দাঁড়াল একটু পরে। হাতে উদ্যত অস্ত্র, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিরীখ করছে ক্যান আর বাক্স বোঝাই তাকগুলো।

    কোনও জানালা কিংবা বেরোনোর অন্য কোনও পথ নেই সেলারে।

    একটার উপর একটা রাখা এক জোড়া ওয়ার্ডরোব-বক্সের দিকে পা বাড়াল অ্যালবার্ট। পিছনে কোনও কিছু লুকানোর পক্ষে যথেষ্ট বড় বাক্স দুটো।

    কাছিয়ে যাচ্ছে… কাছিয়ে যাচ্ছে… শক্ত করে চেপে ধরে রাখায় সাদা হয়ে গেছে বন্দুক ধরা আঙুলের গাঁটগুলো।

    লাথি লাগাল উপরের বাক্সটায়।

    ঘটল না কিছুই!

    এবার দেখল অন্যটার পিছনে।

    নাহ, কিচ্ছু নেই!

    সিঁড়ি ভেঙে উঠে এল ও উপরে। ঘুরে, লাগিয়ে দিল দরজাটা। রুদ্ধশ্বাসে উপরতলায় অপেক্ষা করছে বউ আর মেয়েরা, তাকাল ওদের দিকে।

    ‘কিছুই তো দেখলাম না নিচে,’ বলল ও নিচ থেকে। ‘আগে থেকেই ছিল বোধ হয় দরজার ওই দাগগুলো। সম্ভবত আলোছায়ার কারণে উল্টোপাল্টা দেখেছ তুমি। ঠিক এটাই হবে। রেইলিং কিংবা অন্য কিছুতে প্রতিফলিত হয়েছে আলো…

    যুক্তিগুলো মনঃপূত হয়নি রোজমেরির।

    ‘কী দেখেছি, ভালো করেই জানি আমি, অ্যালবার্ট!’ বলল মহিলা শ্লেষের সঙ্গে। ‘দরজায় আঁচড়াচ্ছিল ওটা, পষ্ট শুনেছি আমি!’

    ‘বুঝতে পারছি না, কী বলা উচিত।’ শ্রাগ করল অ্যালবার্ট। ‘কিছুই পাওয়া যায়নি নিচে। বেরোনোর কোনও রাস্তাও নেই ওখান থেকে!’

    নার্ভাসভাবে নখ কামড়াচ্ছে সিনথিয়া।

    ‘হয়তো বিড়াল ছিল ওটা,’ বাতলে দিল মেয়েটা।

    ‘পেটের মধ্যে খামচি দিচ্ছে আমাকে বাড়িটা!’ ঠোঁট ফুলিয়ে অনুযোগ করল সিলভিয়া। ‘এখানে আসাই উচিত হয়নি আমাদের। যে-কোনও মূল্যে নিউ জার্সিতে ফিরে যেতে চাই আমি!’

    মায়ের বাহু জড়িয়ে ধরল সিনথিয়া। ‘ভয় লাগছে, আম্মু!’

    ‘থামো তোমরা!’ ধমকে উঠল ওদের বাবা। ‘দু’জনেই! ভয় পাওয়ার মতো কিচ্ছু নেই সেলারে… ব্যস! রাত অনেক হয়েছে। শুতে যাও এখন।’

    যার যার ঘরের দিকে রওনা হলো মেয়েরা।

    ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল রোজমেরি।

    মেয়েদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বউয়ের দিকে মনোযোগ দিল এবার অ্যালবার্ট। আস্তে করে ঝাঁকাল মাথাটা।

    ‘তোমার কি ধারণা, বানিয়েছি আমি বিষয়টা?’ সরাসরি জানতে চাইল রোজমেরি।

    ‘জানি, নতুন জায়গায় মানিয়ে নেয়াটা কঠিন,’ সরাসরি জবাব দিল না অ্যালবার্ট। ‘সম্ভবত আমার ধারণার চাইতেও কঠিন।’

    ছয়

    ভিকটোরিয়ান ধাঁচের পুরানো এক দোতলা বাড়িতে রয়েছে এ মুহূর্তে টনি আর তাহিতি দম্পতি। অপ্রশস্ত এক সিঁড়িপথ বেয়ে উঠছে ওরা উপরতলায়।

    ওদের পিছন পিছন আসছে তিরিশের কাছাকাছি আরেক দম্পতি—জেলডা আর সাইমন ফ্রেজার। মোটার ধাঁচ দু’জনেরই। চাপা দিতে পারছে না অন্তরের উদ্বেগ।

    ‘সব সময়ই মাঝরাতের পরে ঘটে ঘটনাটা!’ শিউরে ওঠা কণ্ঠে বলল জেলডা। ‘এই… ধরেন… আড়াইটার দিকে!’

    …আজব ধরনের আওয়াজ?’ নিশ্চিত হতে চাইল তাহিতি।

    ‘ক্যাঁচকোঁচ আর গোঙানি,’ জবাবটা এল সাইমনের তরফ থেকে। ‘যেন কেউ চিৎকার করছে ব্যথায়।’

    ‘আমার ধারণা, সাইমনের বাবা ওটা-আমার শ্বশুরমশাই,’ নিজের মনের কথা ব্যক্ত করল জেলডা। ‘ভয় দেখিয়ে তাড়াতে চাইছেন আমাকে এ-বাড়ি থেকে।’

    ‘কেন করবেন এই কাজ?’ প্রশ্ন তাহিতির।

    ‘কারণ, ঘৃণা করতেন তিনি আমাকে। বিয়ের আগে যখন প্রেম করছিলাম সাইমনের সাথে, একদিন বলেছিলেন তিনি, ওঁর ছেলের উপযুক্ত নই আমি। আমাদের বিয়ের আগেই মারা যান আমার শ্বশুর-আব্বা। বুঝতে পারছেন তো ব্যাপারটা? সাইমনের বউ হয়ে এ-বাড়িতে আসি আমি—চাননি যিনি, তাঁকেই শেষ পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে বাড়িটা!’ এ পর্যন্ত বলে থামল মহিলা। তার পর আবার শুরু করল: ‘রাস্তা পেরিয়ে মাত্র গজ পঞ্চাশেক দূরেই কবর দেয়া হয়েছে ওঁকে। সত্যি বলতে, আমারও পছন্দ নয় এ-বাড়িতে থাকাটা। কেমন এক ধরনের ব্যাখ্যাতীত অনুভূতি হয়!’

    থামল টনি-তাহিতি দোতলায় পৌঁছে।

    ‘বলছেন, এখানেই জোরাল শোনা যায়, আওয়াজটা?’ জিজ্ঞেস করল টনি।

    নড করল স্বামী-স্ত্রী।

    ছাতের দিকে তাকাল টনি। ঠিক উপরেই চিলেকুঠুরির দরজা। রশি ধরে টান দিয়ে খুলল ও দরজাটা। ভাঁজ খুলে নেমে এল গুটিয়ে রাখা সিঁড়ির ধাপগুলো।

    ‘আপনাদের সাথে উঠতে হবে নাকি আমাদের?’ ভয় পাচ্ছে জেলডা।

    ‘না, তার দরকার হবে না,’ অভয় দিল তাহিতি। ‘এখানেই অপেক্ষা করুন আপনারা।’

    পিছন-পকেটে হাত নিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাশলাইটটা বের করে আনল টনি। তাকাল উপরের জমাট অন্ধকারের দিকে।

    .

    ভাঁজ খোলা সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তাহিতির স্বামী। শরীরের অর্ধেকটা চিলেকোঠার ভিতরে, নিচের অর্ধেক বাইরে। হাতের আলোটা দিয়ে ঝাঁট দিচ্ছে অন্ধকারে।

    পুরানো ফার্নিচারে বোঝাই হয়ে রয়েছে জায়গাটা। কাঠের ট্রাঙ্ক, বাক্স-পেটরা, কাপড় রাখার আলনা… কত কী!

    সিঁড়িতে ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তুলে বাকিটা শরীর নিয়ে উঠে পড়ল টনি চিলেকোঠায়।

    দু’মুহূর্ত পর স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করল তাহিতি।

    ‘বরাবরই ব্যাপারটা হাস্যকর লাগে আমার কাছে, অনেকটা আপন মনে বলল টনির স্ত্রী। ‘সব চিলেকুঠুরিতেই এই একই গন্ধ…

    ভাঙা এক ডরমার জানালার দিকে এগিয়ে গেল তাহিতি। ঢালু ছাত থেকে উল্লম্বভাবে বেরিয়েছে জানালাটা। চাঁদের আলো চুইয়ে ঢুকছে ওখান দিয়ে। ফলে, নীল একটা আভা ছড়িয়ে পড়েছে কুঠুরি জুড়ে।

    বাইরে তাকাল মহিলা। দৃষ্টি চলে গেল বাড়ির সামনের রাস্তাটা পেরিয়ে দূরে।

    শত শত কবরফলক নিয়ে বিশাল এক গোরস্তান নির্জন সড়কটার ওধারে। শবের বাগান যেন। ভিজে, ঘন কুয়াশা মেঘের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে ফলকগুলোর ফাঁকে-ফোকরে।

    ধুলোয় ভরা একটা বুকশেলফের উপর আলো ফেলল টনি। মাকড়সার জালের নিচে ঢাকা পড়েছে শেলফটা।

    মড়া পোড়ানোর ছাই রাখা-আধারের মতো বেশ কিছু কনটেইনার মনোযোগ কাড়ল ওর। ভালো করে দেখার জন্য কাছে গেল ওগুলোর।

    তাহিতিও যোগ দিল স্বামীর সঙ্গে।

    হ্যাঁ, ছাইদানই ওগুলো।

    ‘ভুলে যাওয়া আত্মীয় স্বজনদের, খুব সম্ভব,’ দেখেশুনে মন্তব্য করল মহিলা।

    আঙুল দিয়ে একটা ভস্মাধারের নিচের দিকটা মুছল টনি। খোদাই করে কিছু লেখা রয়েছে ওখানে।

    ‘উঁহুঁ,’ নাকচ করে দিল স্ত্রীকে। ‘কার্লিং খেলার (বরফের উপর দিয়ে পাথরের চাকতি গড়িয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার খেলা) ট্রফি এগুলো। প্রথম হওয়ার পুরস্কার। …অস্বাভাবিক কিছু পাওনি তুমি, পেয়েছ?’

    ‘একটা কিছুও না।’

    .

    স্বামী-স্ত্রী অভয় দেয়ায় চিলেকোঠায় উঠে এল সাইমন আর জেলডা। ভীষণ নার্ভাস হয়ে রয়েছে দু’জনে।

    ভাঙা জানালাটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল তাহিতি।

    ‘জানি আমি,’ নিজের বক্তব্য শুরু করল

    করল ‘টনি। ‘কবরখানার ঠিক পাশেই বসবাস করা কারও জন্যই স্বস্তিকর কিছু নয়। আর বাড়িটা যদি পুরানো হয় অনেক, তা হলে তো কথাই নেই। নানান ধরনের আশঙ্কা আর সম্ভাবনার কথা ভিড় করে মনের মধ্যে। অবশ্য ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ, গোঙানির শব্দ খুবই স্বাভাবিক এ ধরনের বাড়িগুলোতে। বিশেষ করে, রাতের বেলা।’

    ‘কেন?’ ব্যাখ্যা চাইল জেলডা।

    ‘কারণ, তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার পরিবর্তন ঘটে রাতের বেলা। হালকা-পাতলা পরিবর্তন নয় কিন্তু, বদলটা মোটা দাগে চোখে পড়ার মতো। আর তার ফলে যেটা হয়… নড়েচড়ে যায় বাড়িঘরের স্ট্রাকচার।’

    ‘ওসব কিছুই নয়, যুক্তিটা পছন্দ হয়নি সাইমনের। ‘আপনি যেটা বললেন, আর আমরা যেটা শুনেছি—দুটোর মধ্যে তফাতটা জানা আছে আমাদের।’

    বলে সারতে পারল না, গুঙিয়ে উঠল যেন প্রাচীন বাড়িটা! কেউ যেন যন্ত্রণায় ককাচ্ছে!

    বদ্ধ চিলেকোঠায় প্রতিধ্বনি উঠল বিদঘুটে আওয়াজটার। স্বামীর বাহু আঁকড়ে ধরল জেলডা। ‘ওহ, খোদা! ওটা… ওটা…’

    ‘আবার করো, তাহিতি…’ স্ত্রীকে বলল টনি।

    বোকা হয়ে গেল ভয়ার্ত দম্পতি। আবার করোমানে? তাকাল ওরা ডরমারের পাশে দাঁড়ানো মহিলাটির দিকে। কী বোঝাতে চাইলেন ভদ্রলোক?

    দেরি হলো না জবাবটা পেতে।

    স্যাঁতসেঁতে এক জোড়া কাঠের ফ্লোরবোর্ডের উপরে দু’পা রেখে দাঁড়িয়েছে তাহিতি। পুরানো এক হিটিং রেডিয়েটরের পাশ দিয়ে চলে গেছে বোর্ড দুটো। বার কয়েক পায়ের ভর বদল করতেই গোঙানি শোনা গেল কাঠের। সেই একই আওয়াজ।

    ‘এ মুহূর্তে আওয়াজটা হচ্ছে তাহিতির ওজনের কারণে, আগের বক্তব্যের খেই ধরল টনি। ‘কিন্তু অন্যান্য সময় কী ঘটছে, সেটা বলি আপনাদের…’

    উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে স্বামী-স্ত্রী।

    ‘ভাঙা জানালাটা দেখছেন না? রাতের বেলা ঠাণ্ডা হাওয়া ঢোকে ওদিক দিয়ে। জোলো বাতাস পেয়ে ফুলে ওঠে তক্তা। ঘষা খায় পরস্পরের সঙ্গে…’

    মুখ তাকাতাকি করল জেলডা আর সাইমন।

    ‘…কিন্তু…’ কেন জানি বিশ্বাস করতে মন চাইছে না মহিলার। ‘আওয়াজ তো শুধু এখানেই নয়, আরও অনেক জায়গাতেই শোনা যাচ্ছে…’

    ‘এটারও ব্যাখ্যা আছে,’ হেসে বলল টনি। ‘ওই রেডিয়েটরটা। আঙুল তুলে দেখাল জিনিসটা। ‘ওটার কারণে তাপের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে বাড়িটার জায়গায় জায়গায়।’

    ‘তার মানে, বলতে চাইছেন, হানাবাড়ি নয় এটা?’

    জবাবটা দিল তাহিতি। বেশ জোরের সঙ্গে, ডাইনে-বাঁয়ে মাথা নেড়ে বলল, ‘আলবত নয়।’

    সান্ত্বনার হাসি হাসল টনি। ‘শুধু আপনারাই না, আমাদের অনেক তদন্তই এরকম ফলাফলে মোড় নিয়েছে শেষটায়।’

    সাত

    সুন্দর একটা ছিমছাম বাড়িতে থাকে ডায়েস দম্পতি। দেখেই বোঝা যায়, নিয়মিত যত্ন নেয়া হয় বাড়িটার।

    সেই রাতে, জেলডা আর সাইমন ফ্রেজারদের কেসটার তদন্ত শেষে, ডায়েসদের বাড়ির ড্রাইভওয়েতে উঠে এল ওদের প্লিমাথ গাড়িটি।

    ইঞ্জিন বন্ধ করে বেরিয়ে এল ওরা গাড়ি থেকে। পা চালাল সদর দরজার দিকে।

    .

    একটু পরেই, কিচেনের একটা দরজা দিয়ে পিছনের উঠনে বেরিয়ে এল টনি আর তাহিতি।

    পর্যাপ্ত আলো রয়েছে উঠনে। বড়সড় এক মুরগির খোঁয়াড় রাখা প্রাঙ্গণটার অন্য প্রান্তে। এক ঝাঁক মুরগি আর মুরগি ছানা ছাড়াও আর-দু’টি প্রাণী রয়েছে ওখানে।

    এমিলির বয়স এই বছর সাতেক। ডিম বোঝাই একখানা ঝুড়ি বইছে বাচ্চাটি। ওর সঙ্গের বৃদ্ধাটির বয়স ষাটের কোঠায়।

    খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে এল দাদি-নাতনি।

    তুমুল কিচিরমিচির জুড়েছে খোঁয়াড়ের প্রাণীগুলো। দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এল একটা। অনুসরণ করছে বাচ্চা মেয়েটিকে।

    ‘দেখে হাঁটো, সোনা!’ সতর্ক করলেন এমিলির দাদি। ‘পাড়া দিয়ে বোসো না যেন গারফিল্ডকে।’

    তাড়া দিয়ে ভিতরে ঢোকালেন তিনি মুরগির ছানাটিকে। টেনে দিচ্ছেন দরজাটা, এমন সময় আত্মা লাফিয়ে উঠল এমিলির চিৎকার শুনে।

    ‘আব্বু!’ মেয়েকে সারপ্রাইজ দেয়ার ইচ্ছায় চুপিসারে এগিয়ে আসছিল বাপ-মা। কিন্তু দেখে ফেলেছে ওদের বাচ্চাটা।

    ‘কী, গো, কুমড়োসোনা!’ বলতে বলতে এগিয়ে গেল মেয়ের বাবা।

    ডিমের ঝুড়িটা দাদির হাতে দিয়ে দিল এমিলি। দু’হাত বাড়িয়ে ছুটে গেল আব্বু-আম্মুর দিকে।

    ‘আম্মু!’ দ্বিতীয় আরেকটা চিৎকার ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। উড়ে পেরোল যেন দূরত্বটুকু। তার পর এক লাফে বাপের কোলে উঠে পড়ল ছোট্ট এমিলি। ছোট্ট দু’হাতে জড়িয়ে ধরল প্রিয় আব্বুকে।

    মেয়ের সারা মুখে কালো কালো কী যেন লেগে রয়েছে, নজরে এল তাহিতির।

    ‘গালে, কপালে এসব কী লাগিয়েছ, মা?’ জিজ্ঞেস ক আদুরে গলায়।

    ‘চকোলেট, আম্মু,’ জবাব দিতে একটুও দেরি হলো না মেয়ের। বিশাল গর্বে বড় বড় হয়ে উঠল খুদে চোখ জোড়া। ‘জানো, মা, একাই খেয়েছি পুরো বাক্সটা!’

    টনির বৃদ্ধ মা এসে মিলিত হলেন ওদের সঙ্গে। হাসছে সবাই।

    ‘কী বলছে, মা?’ জিজ্ঞেস করল টনি। ‘সত্যি নাকি?’

    ‘আরে, নাহ। বানিয়ে বলছে,’ নাতনির দুষ্টুমিতে সস্নেহ প্রশ্রয় বৃদ্ধার জবানিতে। ‘একটার বেশি দিই-ই নি খেতে।’

    মায়ের গালে চুম্বন এঁকে দিল ছেলে। তাকাল স্ত্রীর দিকে। আধো হাসছে তাহিতি।

    মেয়েকে ওর মায়ের কোলে তুলে দিল এবার টনি দু’জনে জড়িয়ে ধরল দু’জনকে। সশব্দে একটা চুমো বসিয়ে দিল তাহিতি মেয়ের গালে।

    ‘উম্মাহ!’ পাল্টা চুমো দিল এমিলি।

    ‘অনেক মিস করছিলাম তোমাকে।’

    ‘আমিও, আম্মু।’

    .

    রান্নাঘরের দেয়ালে ঝোলানো ফোনটার দিকে হাত বাড়াল টনি ডায়েস। ডায়াল করছে, স্মিত হাসল পাশের কাউন্টারে রাখা মেয়ের ছবিটার উপর চোখ পড়তেই।

    চকোবারের কাঠি দিয়ে ঘরে বানানো হয়েছে ফোটোফ্রেমটা, মাথায় ক্রুশঅলা গির্জার আদলে। ফ্রেমের নিচের দিকে উৎকীর্ণ রয়েছে: ভালোবাসি, আম্মু।

    .

    ‘ফাদার ফ্রিম্যান,’ বিনয়ের সঙ্গে বলল হলি ক্রস ক্যাথিড্রাল অফিসে ফোন রিসিভকারী মহিলাটি। ‘মিস্টার টনি ডায়েস কথা বলতে চাইছেন আপনার সাথে।’

    অ্যানটিক আসবাব আর নানান ধরনের ধর্মীয় প্রতীকে জাঁকজমকভাবে সজ্জিত নিজের অফিস-কামরায় প্রবেশ করলেন চল্লিশের ঘর ছোঁয়া মরগান ফ্রিম্যান। আসন নিলেন ডেস্কের ওপাশে। ডেস্কে রাখা জোড়া ফোনের একটার রিসিভার উঠে এল ফাদারের হাতে।

    ‘হ্যাঁ, মিস্টার ডায়েস… বলুন, কী খবর।’

    ‘গিয়েছিলাম ওখানে…

    ‘হ্যাঁ… তা, কী দেখলেন গিয়ে?’

    ‘কিচ্ছু নেই, ফাদার। একদমই খালি বাড়িটা।’

    ‘নিশ্চিত তো আপনি?’

    ‘পুরোপুরি। বাজি ধরতে পারেন চাইলে।’

    ‘যাক, ভালো একটা খবর শোনালেন। অনেক ধন্যবাদ সাহায্য করার জন্য।’

    বলার মতো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছে না ওরা।

    ‘বাবা কেমন আছেন আপনার?’ জিজ্ঞেস করল টনি ক’মুহূর্ত পর। ‘কিছুটা ভালো বোধ করছেন কি আগের চাইতে?’

    ‘হ্যাঁ, অনেকটাই। বিছানা থেকে উঠতে পেরেছেন আজকে।’

    ‘বাহ, দারুণ খবর।’

    ‘হ্যাঁ। তা-ই নয় শুধু, একবার চক্করও দিয়েছেন উঠনে বেরিয়ে।’

    ‘আমার বিশ্বাস, ভালো হয়ে উঠবেন তিনি।’

    ‘দোয়া করবেন।’

    ‘সব সময়… সব সময়।’

    .

    ঘুমানোর পোশাক পরছে এমিলি। ওকে সাহায্য করছে ওর আম্মু। পাজামার ফিতে বেঁধে দিয়ে বিছানার কিনারে নিয়ে বসাল মেয়েকে। নিজেও বসল মেয়ের পাশে। ব্যস্ত হলো এবার আত্মজার চুলে বিনুনি করতে।

    ‘জানো, মা, বড্ড আওয়াজ করে, দাদিমা…’ পিছনে না তাকিয়ে অনুযোগ করল এমিলি একটু পর

    ‘কী রকম?’ হাত চালাতে চালাতে প্রশ্ন করল তাহিতি। ‘নাক দিয়ে… ঘ্রাআআআ…’

    খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মহিলা। ‘নাও, হয়ে গেছে। শুয়ে পড়ো এখন।’

    উঠে দাঁড়িয়ে চাদরটা ফাঁক করে ধরল তাহিতি। গড়িয়ে ওটার তলায় ঢুকে পড়ল এমিলি ডায়েস।

    ‘অনেক মিস করছিলাম তোমাকে,’ আবার বলল তাহিতি সকালের কথাটা।

    ‘আমিও, আম্মু।’

    ব্যস, ঘুম দাও এবার।’

    পরম স্নেহে মেয়ের কপালে গুড-নাইট কিস এঁকে দিল মিসেস ডায়েস। সিধে হয়ে নিভিয়ে দিল পাশের নাইটস্ট্যাণ্ডে জ্বলা বাতিটা।

    আট

    বিকেল।

    কালো মেঘে বৃষ্টির আলামত।

    কুপারদের ব্যাক-ইয়ার্ডে হলদে ছোপ লাগতে শুরু করেছে গাছের পাতায়। উঠনের কিনারার দিকের গাছগুলো অবশ্য এরই মধ্যে পাতা হারিয়ে নিঃস্ব। এমনকী জমিনটাও ঘাসশূন্য।

    খাঁ খাঁ পরিবেশে আরও ভীতিকর দেখাচ্ছে কাকতাড়ুয়াটাকে। বাতাসের ঝাপটায় সামনের দিকে এসে পড়েছে ময়লা চুলগুলো, ঢেকে দিয়েছে মুখটা।

    বড় এক গাছের গোড়ায় হাঁটু গেড়ে বসে আছে সিনথিয়া। গরম সোয়েটার মেয়েটির পরনে।

    ছোট্ট এক কবর রয়েছে গাছটার নিচে। কাঠের ছোট এক ক্রুশ পোঁতা কবরটার মাথার দিকে। একটা নাম লেখা ক্রুশটায়: রকেট। ওদের আদরের কুকুরটা।

    উবু হয়ে আগাছা তুলছে শিশুটি কবরের মাটি থেকে।

    .

    যে-কোনও মুহূর্তে শুরু হতে পারে বৃষ্টি। উঠনের দড়িতে মেলা কাপড়গুলো নামাতে মাকে সাহায্য করছে সিলভিয়া। গোলাঘরটার পাশেই ঠায় দাঁড়িয়ে অ্যালবার্টের রিগটা।

    .

    মেয়েদের নিয়ে কিচেনে ঢুকল রোজমেরি।

    কার সঙ্গে যেন টেলিফোনে কথা বলছে অ্যালবার্ট। ক্লান্ত দেখাচ্ছে লোকটাকে। বিপর্যস্ত।

    ‘রোভার,’ স্বামীকে পাশ কাটানোর সময় কানে এল রোজমেরির। ‘যে-কোনও কিছু দরকার আমার এই মুহূর্তে… বুঝতে পারছ, ভাই? যে-কোনও কিছু! তেমন কিছু যদি না পাই তো, হারাতে যাচ্ছি বোধ হয় রিগের ইনশিয়োরেন্সটা!’

    চুপচাপ ওপাশের কথা শুনল অ্যালবার্ট। শুনতে শুনতে হতাশা বাড়ল বই কমল না।

    …আমার প্রয়োজনের অর্ধেক দাম বললে, বন্ধু!’ বলল ও তিক্ত কণ্ঠে। ‘দূরত্বটাও দ্বিগুণ এখান থেকে। চুপচাপ শুনতে লাগল ওপাশের কথা। শেষমেশ ছেড়ে দিল হাল। ‘ঠিক আছে… ঠিক আছে… নিচ্ছি আমি কাজটা। … বাই।’

    ফোনের রিসিভার রেখে, পরাজিত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকাল অ্যালবার্ট।

    মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে স্বামীকে সমর্থন দিল মহিলা।

    ‘কোন্ রুটের কথা বলছে ওরা?’ জানতে চাইল সহানুভূতির স্বরে।

    ‘চুতমারানির ফ্লোরিডা!’ খেঁকিয়ে উঠে গাল পাড়ল অ্যালবার্ট। ‘প্রায় দুই হপ্তার ধাক্কা! কালই রওনা হচ্ছি আমি।’

    বাচ্চাদের সামনেই অশ্লীল শব্দটা উচ্চারণ করায় বিব্রত হয়ে পড়ল রোজমেরি। মেয়েরাও শকড। বাপের এই মেজাজ দেখেনি ওরা কোনও দিন।

    .

    নিদ্রাদেবীর কোলে শুয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন সিনথিয়া।

    বন্ধ জানালার কাচে সজোরে আঘাত হানছে বৃষ্টির ফোঁটা।

    ঝট করে খুলে গেল সিনথিয়ার চোখ দুটো। খুলেই হার্টবিট মিস করল একটা।

    বিছানায় বসে আছে বিড়ালটা, ওর দিকে পিঠ দিয়ে! পিছনদিকে লেপটে আছে প্রাণীটার কান দুটো।

    শুনতে পাচ্ছে, যদিও দেখতে পাচ্ছে না সিনথিয়া… খিঁচানো মুখে হিসহিস করছে বিড়ালটা। এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে যেন কোনও কিছুর উপরে। ধীরে ধীরে মেয়েটির দিকে ঘুরে গেল বড়সড় গোল মাথাটা।

    ওটার চোখের দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে, কিছু একটা দেখছে বিড়ালটা… মেয়েটার ঠিক পিছনেই রয়েছে যেটা… স্থির নয়, নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে!

    এক জোড়া হাতের আদল ধরা পড়ল সিনথিয়ার চোখের কোণে। মাত্র তিনটা করে আঙুল পাঞ্জা দুটোতে! ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে বালিশের কাভারের খোলা মুখ দিয়ে!

    আতঙ্কে নড়তে ভুলে গেছে সিনথিয়া। আওয়াজও বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে।

    উপরদিকে ভাঁজ হয়ে যেতে শুরু করল বালিশের পাশটা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা চেপে বসল ওটা সিনথিয়ার মুখের উপরে!

    ‘ফ্যাচ’ করে উঠল ধূসর বিড়াল। লাফ দিয়ে নেমে গেল বিছানা থেকে।

    মড়ার মতন ঘুমাচ্ছিল অ্যালবার্ট আর রোজমেরি। ধড়মড় করে উঠে বসল সিনথিয়ার রক্ত জল করা চিৎকার শুনে। দু’জনেই ছিটকে নামল বিছানা থেকে, পড়িমরি করে দৌড় লাগাল মেয়ের কামরার উদ্দেশে।

    সবার আগে ওখানে পৌঁছল সিনথিয়ার বাবা। মেয়ের ঘরের ভেজানো দরজায় পা রেখেই থমকে দাঁড়াতে হলো লোকটাকে।

    খালি বিছানাটা!

    মেয়ের খোঁজে কামরার ইতিউতি ঘুরতে লাগল কুপারের ভীত-বিহ্বল দৃষ্টি। আবছা আঁধারে ঠাহর করা যাচ্ছে না কোনও কিছু।

    ‘সিনথি!’ গলা ছেড়ে ডাক পাড়ল অ্যালবার্ট।

    ইতোমধ্যে দরজার গোড়ায় এসে পৌঁছেছে রোজমেরি। দেয়ালের সুইচে চাপ দিল মহিলার স্বামী। আলো জ্বলে উঠতেই দু’জনেই দেখতে পেল ওরা মেয়েটাকে। জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রয়েছে ঘরের এক কোণে! ভীষণ আতঙ্কে শ্বাস নিচ্ছে হাপরের মতো।

    মুহূর্তে মেয়ের পাশে চলে এল অ্যালবার্ট আর রোজমেরি। ‘কী হয়েছে, মা! কী হয়েছে তোমার?’ প্রশ্নের ফোয়ারা ছুটছে অবিরাম।

    সোজা বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে সিনথিয়া। দরদর জল গড়াচ্ছে ওর দু’চোখ থেকে।

    নয়

    ত্যক্ত বোধ করছে অ্যালবার্ট। এমন অবস্থায় পড়েনি ওরা কোনও দিন। হলওয়েতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর মুখোমুখি হলো লোকটা। এই মাত্র বেরিয়ে এসেছে মহিলা ওদের বেডরুম থেকে।

    অনেক কষ্টে স্বাভাবিক করা গেছে সিনথিয়াকে। ওকে ওর ঘর থেকে এনে শুইয়ে দেয়া হয়েছে নিজেদের বিছানায়। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে এখন মেয়েটা।

    ভেঙে পড়েছে রোজমেরি। চোখ মুছছে টিসু-পেপার দিয়ে।

    ‘জানালা দিয়ে উঁকি মারছে ভূতপেতনি…’ ফিসফিস করে খেদ ঝাড়ছে অ্যালবার্ট। ‘জায়গায় জায়গায় ঠাণ্ডা… ক্যাঁচকোঁচ করছে দরজা-জানালা… আরে, কার জানি গলা শোনা গেল… সবই ঠিক আছে, যতক্ষণ না ডরপোক মেয়েগুলোর মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছ তুমি এগুলো! বুলশিট! অ্যাবসোলিউটলি বুলশিট!’

    ‘না, অ্যালবার্ট, আমি ওটা করিনি!’ ফিসফিসিয়েই প্রতিবাদ করল রোজমেরি। ‘সত্যিই কোনও সমস্যা আছে বাড়িটার!’

    ‘তা হলে আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেন?’

    ‘জানি না… জানি না আমি!’ কাতর দেখাচ্ছে রোজমেরিকে। ‘ভয়ঙ্কর কিছু ঘটার আভাস পাচ্ছি আমি, বার্টি। বাইরে থেকে কাউকে আনা দরকার এখানে… প্রিস্ট অথবা…’

    ‘কী জন্য?’

    ‘জানা নেই আমার। হয়তো ফুঁ দিয়ে দেবে দোয়াদরুদ পড়ে…’

    ‘ঠিক তা-ই!’ মুখ ভেঙচাল বিরক্ত অ্যালবার্ট। ‘ঠিক এই জিনিসটাই চাইছে এখন মেয়েরা। কোথাকার কে এসে ক্রুশ হাতে ঘুরঘুর করবে সারা বাড়ি। শেষটায় রায় দিয়ে বসবে: দোষ আছে এই বাড়ির। এখানে আর থাকা চলবে না আপনাদের! কঠিন হয়ে এল লোকটার চোখের দৃষ্টি। ‘এসব ছাতার মাথা আর শুনতে চাই না আমি!’

    নিচ তলায় রওনা হলো গৃহকর্তা।

    ‘অ্যালবার্ট, প্লিজ!’ অনুনয় ঝরল রোজমেরির কণ্ঠ থেকে।

    ফিরেও তাকাল না রাগান্বিত অ্যালবার্ট।

    .

    ফায়ারপ্লেসের সামনে, মুখোমুখি এক জোড়া সোফার একটাতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে অ্যালবার্ট। বৈঠকখানায় লাল আভা ছড়াচ্ছে জ্বলন্ত কয়লা।

    একখানা কফিটেবিল রয়েছে সোফা দুটোর মাঝখানে। আধখালি একটা স্কচের বোতল টেবিলটার উপরে।

    কাছেই তেপায়ার উপর দাঁড় করানো টিভিটা ঝিরঝির করছে ধূসর একটা চতুর্ভুজের আকার নিয়ে।

    গাঢ় রঙের, অশুভ আকৃতির কিছু একটা চলে গেল টিভিটার সামনে দিয়ে!

    জেগে গেল অ্যালবার্ট। সম্ভবত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ইশারায়। উঠে বসল ধীরেসুস্থে। ডলছে ঘুম জড়ানো চোখ দুটো।

    এবারে দাঁড়াল সিধে হয়ে। কয়েক সেকেণ্ড দাঁড়িয়ে থেকে হেঁটে চলে গেল টিভিটার কাছে। নব ঘুরিয়ে যন্ত্রটা বন্ধ করে দিতেই কানে এল দরজার ক্ষীণ কিইচ আওয়াজ। সন্তর্পণে খুলছে কেউ যেন ওটা।

    হলওয়ের দিকে পা বাড়াল অ্যালবার্ট বিষয়টা তদন্ত করে দেখার জন্য।

    গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে নিল সময়টা।

    ঠিক পাঁচটা বেজে বিশ মিনিট।

    হলওয়েতে পা রাখতেই দেখতে পেল, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিচেনের দরজাটা। সেদিকে পা বাড়াতেই বারংবার চৌকাঠে এসে বাড়ি খেতে লাগল পাল্লাটা।

    চিন্তার ঝড় বইছে অ্যালবার্ট কুপারের মাথার মধ্যে। হচ্ছেটা কী এসব?

    ও যখন দরজাটার কাছে পৌঁছল, ম্যাজিকের মতো থেমে গেল যেন কবাটের বাড়ি খাওয়াটা থমথমে নীরবতা নেমে এসেছে গোটা বাড়িতে।

    ধীরে, অতি ধীরে কিচেনের দরজাটা খুলল অ্যালবার্ট। সতর্কতার সঙ্গে উঁকি দিল ভিতরে।

    সিঙ্কের পাশের একটা সকেট থেকে মৃদু আলো বিলাচ্ছে নাইট-লাইটটা। কেউ যে নেই ওখানে, এটুকু বোঝার জন্য যথেষ্ট ওই আলোটা।

    জানালা দিয়ে মৃদু বাতাস এসে দুলিয়ে দিচ্ছে পরদাগুলোকে।

    নিজের মনকে বুঝ দিল অ্যালবার্ট। সম্ভবত বাতাসই করেছে কাণ্ডটা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস
    Next Article ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    Related Articles

    ডিউক জন

    ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    আর্সেন লুপাঁ ভার্সেস হার্লক শোমস

    August 19, 2025
    ডিউক জন

    সুবৰ্ণ সমাধি – ডিউক জন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.