Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যালবাট্রস – নবনীতা দেবসেন

    নবনীতা দেবসেন এক পাতা গল্প71 Mins Read0

    অ্যালবাট্রস – ২

    দুই

    চাবি খুলে ঘরে ঢুকতেই গন্ধটা পেলাম। সেই পারফিউমটা। যেটা পদ্মিনীমাসি হ্যান্ডব্যাগে রাখত। গন্ধটা ঘর ভরে ছড়িয়ে আছে। সুইচে হাত রেখে নাক ভরে নিঃশ্বাস টানলাম—হ্যাঁ সেই গন্ধ। ‘লিলি অফ দ্য ভ্যালি’। কী করে এল?

    —আলোটা জ্বালছিস? আমার চোখে লাগবে। বরং নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে নে। ইভন বেটার, বাথরুমের আলোটা জ্বেলে নে।

    পদ্মিনীমাসির খাট থেকে কথাগুলো ভেসে এল। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাথরুমের সুইচটা টিপি। আলো জ্বলল—দরজার মাথার ওপর দিকটাতে কাচ, তার ভেতর দিয়ে আলো ঘরে এসে পড়ছে—আবছায়ার মধ্যে উঁচু উঁচু আলমারিগুলো, টেবিল চেয়ার সবই দেখা যাচ্ছে—

    পদ্মিনীমাসির খাট বিছানা টানটান। আমার শরীরে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল।

    —কি রে? কী হল? একেবারে চুপ? টু টায়ার্ড টু স্পিক? যাও, মুখহাত ধুয়ে এস। একটু ও—ডি—কোলন দিয়ে মুখটা মুছে নাও, ফ্রেশ লাগবে। চা—কফি কিছু খাবে? বলব মিসেস মিত্রকে? নাকি ফ্রেশ লাইম সোডা দিয়ে একটু জিন খাবে? আমি খাচ্ছি। ইউ ক্যান শেয়ার মাইন। জাস্ট গেট আ গ্লাস। ফ্রিজে আইস আছে।

    সেই শুরু।

    একটু জিন অ্যান্ড লাইম, আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়া, আর পদ্মিনীমাসির অনর্গল গল্প শোনা।

    হাজারবার শোনা গল্প আবার শোনা।

    মেসোর গল্প, শানুকাকুর গল্প, মঙ্গলাদাইয়ের অতি বিতিকিচ্ছিরি সেই সর্ষের তেল মালিশ করার গল্প—যত রাজ্যের বিস্বাদ গল্প, যত কষ্টের কাহিনী, ছোটবেলাতে রাত্তিরবেলা বাবার বন্ধ দরজার সামনে বসে চিৎকার করে কান্নার বুকফাটা গল্প, সুদূর ক্যানাডায় হঠাৎই বিধবা হয়ে যাওয়ার ভয়ানক গল্প—পদ্মিনীমাসির পুরনো গল্পগুলো শুনতে রাত কাবার হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন—ঢুলতে ঢুলতে অফিসে যাচ্ছি—পদ্মিনীমাসি রোজ রাত্রে আসছে আমার ঘরে আমার সঙ্গে গল্প করতে—ঠিক আগের মতো, কিন্তু আগে তবু ওষুধ খেয়ে ঘুমোত। এমন মোটেই ঘুমোয় না। ঋত্বিককে বললাম, ঋত্বিক শুনে কীরকম অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ও বিশ্বাস করছে না পদ্মিনীমাসি আমার কাছে আসে। বলল, ”আমি গিয়ে একটা রাত্রি তোমার ঘরে থাকব। দেখব কেমন করে পদ্মিনীমাসি আসে।”

    কিন্তু আমাদের গেস্ট হাউসে মেল গেস্ট ঢোকানই বারণ। এমনকী, দিনের বেলাতেও। ড্রয়িংরুমে বসিয়ে গল্প করব। যদিও ঋত্বিককে চেনেন মিসেস মিত্র তবু আমি বলতে পারব না, ‘ওকে রাত্রে থাকতে দাও।’ ঋত্বিক বলল, ”বেশ, তবে মিসেস মিত্রকেই বল তোমার ঘরে শুতে। তোমার খুবই স্ট্রেইন হয়েছে পিউ। পদ্মিনীমাসি ওয়াজ কোয়াইট আ হ্যান্ডফুল, আফটার অল বহুদিন, বহুরাত্রি তুমি ওকে সহ্য করেছ, তারই ফলে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে এখন—”

    কিন্তু ঋত্বিক, হ্যালুসিনেশনে তো ভয় করবে, আমার তো ভয় করছে না পদ্মিনীমাসিকে? আমার খালি ক্লান্তি জমছে।

    অজস্র ক্লান্তি। ক্লান্তির ওপরে ক্লান্ত। সীমাহীন ক্লান্তি। বালিয়াড়ির মতো চাপ চাপ ক্লান্তি। যেমন দীর্ঘ মরুভূমি পার হবার সময়ে উটগুলোর পিঠে জমাটবাঁধা ক্লান্তি থাকে সেইমতো ক্লান্তি। সকালে মনে হয় লুটিয়ে পড়ি। আর না উঠি।

    উনি কোথাকার? কলকাতার, না মফঃস্বলের মেয়ে?

    —পদ্মিনীমাসি বরিশালের মেয়ে। বড় হয়েছে কলকাতায়। ভবানীপুরে। ষোলো—সতেরো বছর বয়সেই বিয়ে করে বিদেশে চলে গেছে। পড়াশুনো করেনি— সেলফ—এডুকেটেড। দারুণ কিন্তু জীবনটা ওর! সেলফ মেড।

    —ওঁর জীবনটা যদি আপনার হত আপনার ভাল লাগত?

    কেন নয়?

    —কী জানি? এভাবে কখনও ভাবিনি? নাঃ, ভালো লাগতো না।

    কেন নয়?

    —জীবনের লক্ষ্যটা আলাদা যে, আমাদের অ্যামবিশন অন্য ধরনের। আমি চাই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে, টু বিলড মাই কেরিয়ার ফার্স্ট—তারপরে বিয়ে—প্রেমপ্রণয় etc.—কিন্তু ফর হার, লাভ কামস ফার্স্ট—লাভ মানে, ঠিক লাভ নয়, মেন…

    —লাভ মানে ঠিক লাভ নয়, মেন? সেটা কী বস্তু?

    পিউ লজ্জা পেয়ে যায়। উত্তর দেয় না।

    —বলুন, মিস বাসু। লাভ নয় তো কী তবে?

    —মানে, ওঁর কাছে মোমেন্টারি রিলেশনশিপটাই সব—মানে জাস্ট দ্য ফিজিক্যাল, ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট সেকেন্ডারী—না হলেই ভাল। ইউ আর ফ্রি টু মুভ অন—খুব অদ্ভুত—শি ডিডন্ট ওয়ান্ট টু বি বাউন্ড ডাউন বাই এনি ইমোশনাল—আর মরাল বাইন্ডিংস—আমাকেও সেই শিক্ষাই দিতে চেষ্টা করত। হোল নাইট লঙ—আমার দমবন্ধ হয়ে আসত… একদম সহ্য হতো না…

    —শিক্ষা? কী শিক্ষা দিতেন?

    —টু বি আ—মর‍্যাল। মোমেন্টারি প্লেজার ইজ অল।

    —পারমিসিভ লাইফস্টাইল—

    —ইমোশনাল ডিপেনডেন্স ইজ উইকনিং—প্রেমে পড়লে মেয়েদের আত্মশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

    ছেলেরা তখনই অ্যাডভানটেজ নিতে পারে—অতএব ‘প্রেমে পড়বে না’, প্রেম ‘করবে’, তাহলে অলওয়েজ আপারহ্যান্ড নিতে পারবে—ছেলেরা তোমার বশে থাকবে। তুমি ছেলেদের বশে যাবে না। নো ইমোশনস। জাস্ট ফান। মেক লাভ হোয়েনএভার ইট ক্যান, বাট ডু নট ফল ইন লাভ। কিপ ইওরসেলফ ফ্রি…

    —বাঃ, বেশ ভাই লজিক তো!

    —ভাল, না ছাই।

    —কেন, ভাল নয় কেন?

    —ফ্রি সেক্সের অঙ্ক তো উড়নচণ্ডীপনার অঙ্ক, যার ঘর বাঁধার ইচ্ছে আছে সেই ওই অঙ্ক কষবে না। ও তো ঘর চায়নি।

    —আপনি ঘর চান?

    —নিশ্চয়ই।

    —আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?

    —আছে।

    —বিয়ের কথা হয়েছে?

    —হচ্ছে।

    .

    এটা খুবই আশ্চর্য যে যদিও পদ্মিনীমাসির গলার স্বর খুব স্পষ্ট, খুবই স্বাভাবিক; অথচ মিসেস মিত্র শুনতে পাচ্ছেন না। মিসেস মিত্র ঘরে ঢোকার পরেও পদ্মিনীমাসি তো কথা বলেই যায়, মিসেস মিত্রর সঙ্গেই কথা বলে—অথচ উনি নাকি কিছুই শুনতে পান না, কিছুই দেখতে পান না, কোনও সুগন্ধও নাকে আসে না তাঁর। মিসেস মিত্র বলছেন আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন কাউন্সেলিংয়ের জন্য। আর বলছেন অন্য কোনও গেস্ট হাউস দেখতে—যেখানে হয়তো এই ডিস্টার্বেন্সটা হবে না। মিসেস মিত্র আর কিছুতেই আমাকে এ ঘরে শুতে দেবেন না, ফ্ল্যাটের যেহেতু আর কোনও ঘর খালি নেই, অগত্যা তাঁর স্টাডিতেই এখন শুতে বলছেন। যে ঘরের একজন বাসিন্দার জীবনে এতবড় ঘটনা ঘটে গেল, সেখানে ওঁর মতে এখন আমার না শোওয়াই উচিত। আরও ক’দিন যাক। কিন্তু এই ঘরটাই আমার অভ্যেসের ঘর, এই ঘরটার আলোছায়া আমার চেনা হয়ে গেছে। মিসেস মিত্র বলছেন, ”দিনের বেলায় নিজের ঘরে থাকো, কিন্তু ঘুমের সময়ে আমার স্টাডিতে এসে ঘুমোও। ইউ নিড স্লিপ। ইউ নিড রেস্ট।” আমি হ্যাঁ বলিনি, না—ও বলিনি।

    ‘সেক্স’ শব্দে অ্যালার্জি হয়েছে আমার। যে কোনও শরীরী বর্ণনা আমাকে উত্তেজিত করে না আর, পেট ঘুলিয়ে ওঠে। বমি পায়। বেশ বুঝতে পারছি। সেকসুয়ালিটির পুরো ব্যাপারটাই চটকে গিয়েছে আমার মধ্যে, পদ্মিনীমাসির গল্প শুনতে শুনতে। এটাকে আবার মেরামতি করা যায় না? বিয়ে হতে চলেছে আমাদের, ঠিক এই সময়েই ঋত্বিক গেল মেমসাহেবের ‘কুমারী’ কলঙ্ক ঘোচাতে, আর আমার হল সেক্সে অরুচি।

    —”সেক্সে অরুচি বলে কোনও কথা হয় না, পিউ, সেক্স সবসময়েই খুব সুস্বাদু, নাথিং লাইক ইট—তুই তো টেস্টটাই জানিস না। এতবার বললাম”, পদ্মিনীমাসি হেসে উঠলো, ”সিলি গার্ল”—

    .

    কিন্তু, কিন্তু এটা তো আমাদের সেই ঘরটা নয়।

    এটা তো মিসেস মিত্রের স্টাডি। এখানে তো পদ্মিনীমাসির যাতায়াত ছিল না।

    —কে বলেছে তোকে। ছিল না?

    ঐ যে সুব্রহ্মনিয়াম যার সঙ্গে মিসেস মিত্রের এত সোহাগ, তার সঙ্গে তো এই ঘরেই— সেবার, যখন মিসেস মিত্র দুর্গাপুরে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। লোকটা হেভি সেক্সি রে—

    সি ইজ আ ড্যাম লাকি উওম্যান। আই টেল ইউ!

    আ—বা—র!! আবার তুমি ওই বাজে কথাটা বলছ? আমি জানি মিস্টার সুব্রহ্মনিয়াম খুব ভদ্র, উনি কক্ষনো তোমার সঙ্গে কিচ্ছুটি করেননি। তোমাকে তো বলেছি পদ্মিনীমাসি তোমার এই কথাটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না, আমি দুজনকেই দেখছি তো? এত নোংরা নোংরা কথা তুমি বল কেমন করে? ছি ছি—

    —”তুমি পুরুষ মানুষকে এখনও চেননি, ইউ আর আ বেবি, অ্যান্ড সি—ইউ’ল ফাইন্ড আউট—ফ্রি পেলে কেউ ফান ছাড়ে না, বুঝেছ—অ্যান্ড আই ডোন্ট মাইনড শেয়ারিং সামওয়ানস লাভার ফর আ নাইট। চেখে দেখতে হবে না, কেমন জিনিস? লাইফ ইজ শট”—

    —চুপ কর পদ্মিনীমাসি, প্লিজ চুপ কর, এ সব কথা শোনাও পাপ।

    —পাপপুণ্যের ব্যাপারই নয় এটা ডার্লিং। সেক্স ইজ ইনডিফারেন্ট টু পাপপুণ্য, সেক্স স্ট্যান্ডস বাই ইটসেলফ! পাপপুণ্য পিওরলি ডিপেন্ডস অন ইওর ইনটেনশনস—বাট, বন্ধুর প্রেমিককে যদি চুরি করতে চাও সেটা হয়তো পাপ বলে ভাবা যেতেও পারে, কিন্তু ইফ ইউ জাস্ট ওয়ান্ট টু হ্যাভ ফান উইথ হিম—জাস্ট এনজয় হিস কম্পানি ফর আ নাইট—তাতে দোষের কী আছে? অ্যাজ লং অ্যাজ ইউ আর নট স্টিলিং হিম ফ্রম হার।”

    .

    —ও ঘর চায়নি।

    —আপনি ঘর চান?

    —নিশ্চয়ই?

    —’ঘর’ বলতে আপনার কী ধারণা? ঘর মানে কি শুধুই মাথার ওপরে ছাদ? নাকি একটি পুরুষ মানুষকে ঘিরে ঘরসংসার?

    —ঘর মানে কি ছাদ? ঘর মানে ঘরসংসার। হ্যাঁ, স্বামী—সন্তান নিয়ে ঘর করলেই আমি ‘ঘর’ বলব। যেখানে বিশ্বাস আছে, শান্তি আছে, লক্ষ্মীশ্রী আছে। ভালবাসা আছে।

    —ভালবাসাটা সকলের শেষে বললেন। বিশ্বাসটা সকলের আগে। তাহলে ঘর বাঁধতে হলে বিশ্বাসটাই সবার আগে দরকার বলছেন? তাতে শান্তি আসে। লক্ষ্মীশ্রী আসে, এবং ভালাবাসাও জন্ম নেয়? আপনার মতে কি এটাই ঘটে?

    —এত ভেবেচিন্তে বলিনি, যেমন মনে এল বললাম। তবে আপনি যেভাবে সাজালেন শব্দগুলো, তাতে আমার আপত্তি নেই। সায় আছে। মনুষ্য জীবনে যে কোনও সম্পর্কই তো, মানুষে মানুষে যে কোনও বন্ধনই তো বিশ্বাসের ওপরে নির্ভরশীল। শুধু ঘরেই কেন? অফিসেও বিশ্বাস সবচেয়ে জরুরি কথা। ভালবাসার ক্ষেত্র অনেক ছোট। অনেক ব্যক্তিগত।

    —মিস বাসু, এবারে একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন কিন্তু আমি করব। আমাকে করতে হবে। প্লিজ ডোন্ট মাইনড।

    —বলুন।

    —আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?

    —আছে।

    —নাম কী?

    —ঋত্বিক।

    —কী করেন?

    —আমার সঙ্গেই কাজ করে স্ট্যানচার্টে।

    —আপনারা কি বিয়ের কথা ভেবেছেন?

    —ভাবছি।

    —পদ্মিনী সিং এসব কথা জানতেন?

    —জানত।

    —ওঁর কী মত ছিল?

    —ওর মতামত ছিল ওরই মতন।

    বিয়ের পরে যদি দেখি বর অক্ষম, তাহলে তো বিয়েটা সুখের হবে না, তাই দুজন দুজনের সঙ্গে সেকসুয়ালি ম্যাচ করি কি না, সেটা আগেভাগেই দেখে নেবার জন্য পদ্মিনীমাসি আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল—ফর হার হ্যাপিনেস লাইজ ইন দ্য বডি অ্যালোন—ও বোঝে না বিয়ে মানে শুধু শরীর নয়, অথচ ঋত্বিক—

    .

    পরনের নাইটির বুকটা খোলা। পদ্মিনীমাসির চুল কাঁধে, ঘাড়ে লুটিয়ে আছে—খাটে বসে আছে একটা পা তুলে—পা—টা বেশ ফর্সা—নখে সেই রূপোলি রংটা লাগানো, সেদিন যেটা ছিল—পায়ে চটি নেই, মুখের ক্রিমটা চকচক করছে, কিন্তু আইলাইনার তোলেনি, পদ্মিনীমাসির অনেকটা সময় যায় রোজ রাত্তিরে মুখখানা ধুয়ে পরিষ্কার করতে—কত কী যে করে, মুখের ধুলো ধোয়, ক্লেনজিং মিল্ক দিয়ে ভিজিয়ে গোল গোল রক্তিম তুলো ঘষে ঘষে রোমকূপের ময়লা তোলে, সারা মুখে, গলায়, একটা লোশন মাখে। অ্যান্টিরিংকল লোশন চোখের কোলের জন্য আবার অন্য একটি অ্যান্টিরিংকল লোশন, সব বিদেশি, আমি অবাক হয়ে দেখি পদ্মিনীমাসির নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া। শরীরটাকে সত্যি খুব ভালবাসে পদ্মিনীমাসি। বয়েস কত তা বলে না, কিন্তু আমার মায়ের চেয়ে কম মনে হয় না। সেই যে আমেরিকা চলে গিয়েছিল, তখন ওর নাকি সতেরো বছর বয়েস। আঠারো বলে ফলস এজ দেখিয়ে পাসপোর্ট বানিয়েছিল।

    ওর সেই শিখ প্রেমিকের সঙ্গে যখন বাড়ি ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালালো।

    শিখ প্রেমিক লোকটি ভালোই, ওকে বিয়ে করে ভ্যাঙ্কুভারে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে তার কাকার বিজনেস। পদ্মিনীমাসির আসলে গোলমালটা হয়েছিল অন্যত্র। অন্য একজন লোকের সঙ্গে।

    .

    বিজনদা দারুণ গান গাইত, পাড়ার সব জলসা সব ফাংশনে বিজনদা ছিল হিরো। দেখতেও হিরো—হিরো ছিল। পাড়াসুদ্ধ মেয়েই বিজনদার প্রেমে ঢলো ঢলো—

    —তুমিও?

    —আমি? নাঃ, আমার তো তখন প্রচণ্ড প্রেম চলছে অঙ্কের স্যারের সঙ্গে। অঙ্কে আমি দারুণ ভালো ছিলাম কি না?—

    —ও বাবা, সেই সুদীপার কেস—

    —না না, ও, খুন খারাপির মধ্যে আমি নেই। আই অ্যাম ইন লাভ উইথ লাইফ—আমার পলিসি লিভ অ্যান্ড লেট লিভ—হঠাৎ গলার স্বর পাল্টে নিচু স্বরে পদ্মিনীমাসি বলল,

    —”আসলে কি জানিস, মারতে হলে এতগুলো মানুষকে মারতে হয় আমাকে”—এই স্বর, এই সুর ওর গলাতে কখনও শুনিনি আগে, আমার গা ঠাণ্ডা হয়ে গেল—পদ্মিনীমাসি বলল, ”ইটস ইজিয়ার টু কিল ইওরসেলফ—অ্যান্ড দেয়ার আর ওয়েজ অফ কিলিং”—

    ওর চোখ দেখে আমি ভয় পেয়ে কথা ঘোরাই।

    —তো সেই বিজনদার ব্যাপারটা কী হল?

    —বিজনদা? বিজনদা একদিন রাত্রের দিকে থিয়েটারের রিহার্সালের নাম করে আমাকে ক্লাবঘরে ডেকে নিয়ে গেল— সেখানে ওর দুই সাঙাৎ ছিল, ওই যেটা ওর সঙ্গে তবলা বাজাত, আর যেটা সারেঙ্গি বাজাত—

    —সারেঙ্গি?

    —আজকাল আর সারেঙ্গি—টারেঙ্গি বিশেষ বাজায় না, না রে? কী—বোর্ড…তারপর যা বলছিলাম—বিজনদা আর তার বন্ধুগুলো আমাকে ক্লাবঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরে আর কেউই ছিল না—দেখলাম ওরা মাতাল—আমার গায়ে হাত দিতেই আমি চেঁচিয়ে উঠেছি— যেই চেঁচানো বিজনদা আমার মুখে হাত চাপা দিয়েছে আর আমিও হাতটা কামড়ে দিয়েছি—এ সেই পাড়ার দাদাদের মতো আলতো ব্যাপার হচ্ছে না, সেটা টের পেয়ে গেছিলাম—এটা অন্যরকম—এটা হিংস্র—চেঁচিয়ে উঠতেই ওরা আমাকে মারল—তবু আমি জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছিলাম, ভগবানের দয়ায় কেউ একজন ওদিকে সাড়া দিল, বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা দিল, ”কোন হ্যায় অন্দর মে? খোল, দরওয়াজা খোল—”। বলবীর। দৌড় প্রাকটিস করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল—ও রোজ সকালে আর রাত্রে দৌড়ত।

    দরজা খুলতেই হোল।

    বলবীরকে বিজনদারা বললো, ওরা কিছু করেনি—গলা প্র্যাকটিস করতে এসেছিল, আমি নিজেই ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজেই চেঁচাচ্ছিলাম, শুধু ওদের ব্ল্যামমেইল করবার উদ্দেশ্যে—ওরা কিছুই জানে না—বলবীর বিশ্বাস করল না। গান প্র্যাকটিস? বাজনা কোথায়? একটিও বাদ্যযন্ত্র তো দেখা যাচ্ছে না!

    তখন আমি শাড়ি ধরেছি। শাড়িটা এলোমেলো, চুল উস্কোখুস্কো। ব্লাউজ ছেঁড়া। গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ। বলবীর আপাদমস্তক দেখল। বলবীর বলল, ”ঠিক হ্যায়। সমঝ লিয়া।”

    —”ও নিজেই নিজের জামাকাপড় ছিঁড়েছে”, বলল বিজনদা। ”ও আমার সঙ্গে প্রেম করতে চেয়েছিল। আমি করিনি। তাই প্রতিহিংসায়—”

    বলবীরের খুব মাথা ঠাণ্ডা। বলল—”ঠিক হায়, ক্লাব মে ডিসাইডেড হোগা, ক্যা ক্যা হুয়া থা। অব ইসকো ঘর ছোড়না হ্যায়।”

    সেই শুরু। ক্লাবে আবার কী ডিসিশন নেবে? বিজনদার কাকাই তো পাড়ার কাউন্সিলার। ক্লাবকে টাকা যোগায়। বিজনদাদের কিছুই হল না। একটু ইয়ার্কি—ঠাট্টা ছাড়া ওরা তো কিছুই করেনি? সবাই জানে পদ্মিনী মেয়েটা খারাপ। ওর চরিত্র মন্দ। ছেলেদের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করা ওর স্বভাব। বেচারি ছেলেগুলোর কী দোষ? ও যেমন করে কাপড় পরে, যেমন করে তাকায়, যেমন করে হাঁটে, তাতে পুরুষমানুষ আর কতক্ষণ চুপচাপ থাকবে? ছেলেপুলেরা তো সন্নিসি নয়?

    .

    এই ঘটনার পর থেকে পাড়ায় আমিই একঘরে হয়ে গেলাম। বিজনদারা বুক ফুলিয়ে ফাংশনে গেয়ে বেড়াচ্ছে। আমাকেই পাড়ার দাদারা সন্তর্পণে এড়িয়ে চলতে লাগল। পাড়ার মাসিমাদের চোখে তেতো বিষ চাউনি। ইসকুলের বন্ধুরাও কথাবার্তা কইতে চায় না, মন্দ মেয়ের সঙ্গে মিশলে তারাও তো মন্দ হয়ে যাবে? মেয়েরাও আমাকে পাত্তা দেয় না আর।

    .

    বাবা পার্টির কাজে পথে পথে ঘোরেন—বাড়িতে থাকলেই, আমাকে দেখলেই সমুধুর সম্ভাষণ—

    —”দূর হয়ে যা, বেরিয়ে যা, তোর জন্যে পাড়াতে মুখ দেখাতে পারি না—এমন মেয়ের মুখ দেখাও পাপ!”

    —বাবার দোষ নেই—বাবা তো বিজনদার কাকারই চেলা। পার্টি—বসের ভাইপোকে ঝামেলায় ফেলে, বাবাকেও যে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিলাম। ঠাকুমা মরে গিয়ে অব্দি আমার আর ‘বাড়ি’ বলতে কিছু ছিল না। অভিভাবক বলতে কেউ ছিল না, দিদিমা তো আগেই গেছেন। হঠাৎ দেখলাম এত বড় পৃথিবীটাতে আমার পাশে কেউ নেই। আমি একলা। একদম একা।

    .

    তখন আমার ষোলো পূর্ণ সতেরো—লেখাপড়ায় মন ছিল না—যদিও সর্বদা অঙ্কে ১০০তে ১০০ পাই বলে অঙ্ক স্যার আমার প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলেন—এখন তিনিও দূরে সরে গেলেন। বয়েস অনুপাতে এমনিতেই দেরিতে পড়ি, আর সেবারে আমার আর ক্লাস নাইন থেকে টেনে ওঠা হল না—ফেল মেরেছিলাম। অঙ্কে একশো পেয়ে পাশ করলে কি হবে ইংরিজিতে ফেল। ভূগোলে ফেল। সায়েন্সে ফেল। স্কুলে ভালো লাগে না। শিখ ছেলেটাকে একদিন ভোরবেলা গিয়ে ধরলাম, পার্কে যখন দৌড়তে যায়। আমাকে নিয়ে পালাবে?

    ছেলেটা অবাক?

    আমি ওকে কেবলই উস্কানি দিতে থাকি—আমাকে নিয়ে পালাবে? রোজ ভোরবেলা পার্কে যাই। চল না আমরা অন্য কোনও দেশে গিয়ে ঘর বাঁধি? সংসার পাতি? আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াব। তোমাকে গান শোনাব। আমরা দুজন একসঙ্গে সমুদ্রে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখব। চল না, পালাবে? আমার এই শহরে মুখ দেখাতে লজ্জা করে। তুমি তো সবই বোঝো। আমার প্রাণ বাঁচিয়েছো। এবারে জীবনটা বাঁচাও। এখানে আমি বাঁচব না। তুমি তো জানো, আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আমার কেউ নেই। পদ্মিনীমাসি হাসলো। চোখ মারলো।

    —আমি তখন থেকেই এক নম্বরের চালু মাল, বাতেল্লাবাজ। কথায় চিঁড়ে ভেজান কেন, আমি কথায় জাহাজ ভাসিয়ে দিতে পারি—বলে নিজেই হো হো করে হাসল—তারপর শান্ত স্বরে বলল,

    —বলবীর ছেলেটা সত্যি ভালো ছিল রে।

    আমার সব কথা বিশ্বাস করত। ওর সঙ্গে প্রথম দেখার মুহূর্তটা এমনই ছিল, তার মধ্যে মিথ্যের কোনও জায়গা ছিল না। আমিও ওর কাছে অন্যরকম ছিলাম। বলবীরই আমার জন্য পাসপোর্ট করিয়ে দিল। ওদের ভ্যাঙ্কুভারে ফ্যামিলি বিজনেস আছে। ইচ্ছে করলেই যেতে পারে—এবারে চলেই যাবে ঠিক করল। আমাকে নিয়ে যাবে। তার আগে বিয়ে। কোথা থেকে একটা ফড়ে ধরেছিল, সেই নকল বার্থ সার্টিফিকেট বের করে পাসপোর্ট বানিয়ে দিল। আঠারো, অতএব নোটিশ দিয়ে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়ে গেল। আমার বাড়িতে কিছুই জানান হল না।

    চুপি চুপি বাক্স গুছিয়ে চুপি চুপি বাড়ি ছেড়ে সত্যি সত্যি একদিন বলবীরের সঙ্গে কানাডা রওনা হয়ে গেলাম। বলবীরের বাড়িতে সবাইকেই জানানো হল—ওঁরা অনেক উদার। আদর করেই আমাকে গ্রহণ করলেন, মা—বাবা আশীর্বাদ করলেন। গলায় একটা সোনার হার মুক্তোর আংটি, কানে মুক্তোর লম্বা লম্বা দুল হল। নিজের ছিল না তো কিছুই। হাতে ভর্তি কাচের চুড়ি। সালোয়ার কামিজ পরে শিখের বউ শিখনি হয়ে সাগরপারে রওনা দিলাম।

    —অত ভালো স্বামীকে তুমি ত্যাগ করলে কেন পদ্মিনীমাসি, যে তোমার জন্য অত করেছে?

    —আমি কি ওকে ত্যাগ করেছি রে? ওই তো আমাকে ত্যাগ করে গেল। আজ থাকলে, আমি…

    —তুমি নিশ্চয়, যা তা কাণ্ড শুরু করেছিলে!

    —যা তা কাণ্ড শুরু হয়েছিল ঠিকই—দেয়ার ইউ আর কোয়াইট রাইট ডার্লিং, বাট নট রেসপনসিবল ফর দ্যাট, গোলমালটা করেছিল ওরাই, বলবীরের কিছু আত্মীয়স্বজন। চার—পাঁচ বছর থাকার পরে, ততদিনে আমরা ক্যানাডিয়ান সিটিজেন, বলবীর প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে এসে জানাল, আমাদের দোকানে খালিস্তানিদের মস্ত একটা ঘাঁটি হয়েছে। রীতিমতো রাত্রে মিটিং হয়। অস্ত্রশস্ত্রও জমা হয়। সবচেয়ে দুঃখের কথা আমাদের ব্যবসার টাকার বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে খালিস্তানিদের অস্ত্র যোগাতে।—এটা জেনে, বলবীরের মন ভেঙে গেল—

    —কেন? সেও তো শিখই ছিল…

    —কিন্তু, সব শিখই যে খালিস্তানি হবে, সেটা কে বলল? বলবীরের ফ্যামিলি ইন্ডিয়ান আর্মিতে সার্ভ করেছে তিন জেনারেশন ধরে। ঠাকুর্দা, জ্যাঠা, ওর দুই ভাইও গেছে আর্মিতে। ওরা প্রচণ্ড স্বদেশি ফ্যামিলি, প্যাট্রিয়াটিক পিপল—ওর কাকাটা বাইরে থাকতে থাকতে বদসঙ্গে পড়েছিল—বলবীর নিজেও দারুণভাবে খালিস্তানের বিপক্ষে ছিল—ও ঠিক করল কাকার ব্যবসায়ে আর থাকবে না, ভ্যাঙ্কুভারেই আর থাকবে না—আমরা টোরোন্টোয় চলে গেলাম। ততদিনে আমাদের হাতে কিছু টাকাকড়ি হয়েছে। ওখানে গিয়ে মহিন্দরের সঙ্গে পার্টনারশিপে আমরা নতুন দোকান খুললাম—টোরোন্টোতেও লিটল ইন্ডিয়া আছে। একটা পুরো রাস্তায় শুধু ইন্ডিয়ান শপস ভর্তি। সেইখানে—ফ্যাশনওয়্যার—একটা ভারতীয় রেস্তোরাঁতেও ইনভেস্ট করলাম—দারুণ উন্নতি হতে লাগল—প্রথমে গাড়ি। তারপর অ্যাপার্টমেন্ট। তারপর আরও ভালো পাড়া আরও ভালো গাড়ি, আরও বড় অ্যাপার্টমেন্ট—যেমন হয়—তারপর বাগানওলা বাংলো, তারপর আরও বড় বাগান। তারপর কুকুর পোষা। ল্যাব্রাডর। অকস্মাৎ এই সময়ে এতদিন পরে বলবীরের ঘুম ভাঙল—আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না কেন? চল, ডাক্তার দেখাই দুজনে! দুজনকে আর দেখাতে হল না। প্রথমেই আমার ত্রুটি ধরা পড়ে গেল। সন্তানধারণ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। প্রচণ্ড ডিপ্রেশনের মধ্যে পড়লাম। নিজেকে ইউজলেস মনে হতে লাগল। তখন বলবীরই আমার মনে বল ভরসা যোগাল। বলল, আরে? বাচ্চা পয়দা করাই কি মানুষের জীবনের একমাত্র ইউজ? তোমার কত কাজ পড়ে আছে। তাছাড়া ভেবে দ্যাখো জগতে তো কত শিশুর বাবা—মা নেই, তারা ঘর পায় না, স্নেহ পায় না, উই’ল অ্যাডপ্ট আ চাইল্ড। টু চিলড্রেন—আ বয় এন্ড আ গার্ল। চিঠিপত্র শুরু হলো। মাদার টেরেসার আশ্রম থেকে বাচ্চা আনা হবে। না অন্যত্র থেকে। অনেক ভাবনা চিন্তা খোঁজখবর। নিয়মকানুনের যা ঘোরপ্যাঁচ, অ্যাডপশন তো সহজ ছিল না। কথাবার্তা চলছে। ঠিক হল আমরা একবার দু’জনে দেশে যাব। বাচ্চাটাকে দেখব—একটি মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছিল—পয়লা আগস্ট টিকিট কাটা হল। আমি তো প্রায় দশবছর দেশে যাইনি—বলবীর একাই যেত মাঝে মাঝে বাবা—মাকে দেখতে। আমি ব্যবসা সামলাতাম। আমার নিজের বাবাকে দেখতে যেতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করত না—আই ডিড নট মিস হোম, আই ডিড নট মিস ক্যালকাটা—বাট বলবীর ডিড। যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না আমার, কিন্তু বলবীরের ইচ্ছে বাচ্চাটাকে নিয়ে ওদের কলকাতার বাড়িতে একটু পুজোপাঠ হবে। ওকে পরিবারের সবাই গ্রহণ করবেন, সেজন্যে আমাকেও যেতে হবে—পয়লা যাওয়া ঠিক। হঠাৎ কলকাতার ফোন। বলবীরের মায়ের স্ট্রোক হয়েছে। বলবীর অস্থির হয়ে পরের ফ্লাইটেই সিট বুক করল—ওই আগের বুকিংটাই এগিয়ে নিল—কিন্তু দুটো সিট পেল না—শুধু একটা। আমি পরের অ্যাভেইলেবল ফ্লাইটে যাব ঠিক হল। বলবীর রওনা হয়ে গেল কলকাতায়। দ্যাট ওয়াজ ইট!

    সেই প্লেনটার একটা রাজকীয় নাম ছিল। নেমড আফটার আ হেডলেস মনার্ক। ‘কনিষ্ক’। মনে নেই? ঐ যে এয়ার ইন্ডিয়া ক্র্যাশটা হলো, ১৯৮৫তে, …খালিস্তানি টেররিস্টদের কল্যাণে…নো, ইউ উডন্ট রিমেম্বার ইট, ইউ ওয়্যার জাস্ট আ লিটল বেবি দেন…হ্যাঁ, বলবীরও ছিল সেই প্লেনটাতে।

    মা—কে দেখতে যাচ্ছিল। বাচ্চাটাকে দেখতে যাচ্ছিল…ওহ হাউ আই উইশ আই ওয়্যার অন দ্যাট প্লেন, উইথ হিম! …পদ্মিনীমাসির গলা বুজে গেল, চোখ ঢেকে ফেলল দু’হাতের পাতা দিয়ে—মুখটা ঘুরিয়ে নিল দেওয়ালের দিকে—পদ্মিনীমাসি স্তব্ধ হয়ে রইল।

    এরকম মুহূর্ত আগে কখনও আসেনি। আমি পদ্মিনীমাসিকে কখনও এরকম দেখিনি।

    আমি ওর পিঠে হাত রাখলাম।

    —স্যরি, পদ্মিনীমাসি।

    পদ্মিনীমাসি কিছু বলেনি। মুখ ঘুরিয়ে নিল।

    চুপ করে ছিল।

    একটু বাদে আমিই উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, কী বলব, কী করব, এতদিন আগেকার শোকে কেমনভাবে সান্ত্বনা দিতে হয়?

    বলবীরের কথা পদ্মিনীমাসি আর কখনও বলেনি।

    আমিও তুলিনি।

    —কি রে, বলবীরের কথা ভাবছিস?

    —তুমি কেমন করে বুঝলে? আমি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠি।

    —না বোঝার কী আছে?

    পদ্মিনীমাসি হাসে। ওর চুলগুলো বাতাসে ওড়ে। নতুন করে সেট করেছে মনে হয়—খুব সুন্দর দেখাচ্ছে—এতটা চকচকে ছিল কি তোমার বাদামি চুলের গোছা?

    —বলবীর সত্যি সত্যি আমার প্রেমিক ছিল রে। দি ওয়ান অ্যান্ড ওনলি প্রেমিক। বাকিরা সব ফালতু। ফেকলু। সত্যিকারের প্রেম ওর কাছেই শিখেছি।

    তোর আর ঋত্বিকের মধ্যেও সেটা সম্ভব। তুই ভুল বুঝছিস ঋত্বিককে। ওই মেয়েটা কেউ নয়। কিছুই নয়। ঋত্বিককে তুই ছেড়ে দিস না, যেতে দিস না।

    প্রেম বড়ই রেয়ার কমোডিটি, মাই চাইল্ড, চট করে মেলে না রে।

    ”পদ্মিনীমাসি!”—এসব কথা তুমি কেমন করে জানলে?

    আমি চিৎকার করে উঠি।

    পদ্মিনীমাসির মিষ্টি হাসি বাতাসে ভেসে উঠল।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleস্বভূমি – নবনীতা দেবসেন
    Next Article ভ্রমণ সমগ্র ২ – নবনীতা দেবসেন

    Related Articles

    নবনীতা দেবসেন

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    নবনীতা দেবসেনের গল্প

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    ভ্রমণ সমগ্র ১ – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.