Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যালবাট্রস – নবনীতা দেবসেন

    নবনীতা দেবসেন এক পাতা গল্প71 Mins Read0

    অ্যালবাট্রস – ৪

    চার

    শুনুন, মিস ব্যানার্জি, খবরের কাগজের কল্যাণে আমরা সকলেই জানি, মিসেস পদ্মিনী সিং কীভাবে মারা গিয়েছেন। তিনি উইকএন্ডটা কাটাতে গিয়েছিলেন কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে, সেখানে গিয়ে দু’দিন মহা আনন্দে কাটিয়েছেন উইথ প্লেন্টি টু ইট অ্যান্ড ড্রিংক—শেষ দিনে, রবিবার রাত্রে শি টুক অ্যান ওভারডোজ অফ স্লিপিং পিলস অ্যান্ড ওয়েন্ট টু বেড। ব্যাগের মধ্যে সুইসাইড নোট ছিল, খালি শিশিটাও ছিল টেবিলে, এর মধ্যে মার্ডারের প্রশ্নই ওঠেনি।

    আপনার একটা পিকিউলিয়র অবসেশন হয়েছে—যেহেতু হোটেলে ছুটি কাটাতে আপনিই ওঁকে পাঠিয়েছিলেন—সেইহেতু ইউ আর ব্লেমিং ইওরসেলফ অ্যান্ড ইম্যাজিনিং থিংস। খুন হয়নি। কেউ কাউকে খুন করেনি মিস ব্যানার্জি। লেটস গেট ডাউন টু দ্য বেসিকস—দেয়ার ওয়াজ নো মার্ডার হিয়ার—নোবডি ওয়াজ মার্ডারড—সো নো ওয়ান লুকিং ফর আ মার্ডারার ন্যাচারালি—এটা আপনার মাথা থেকে আমাদের বের করে ফেলতে হবে—ওয়ান্টিং টু গেট রিড অফ সামবডি, এবং কিলিং সামবডি, দুটো একদম আলাদা—দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট শি ডিড মেক ইওর লাইফ আনবেয়ারেবল, ডাজ নট… —জানি, জানি, কিন্তু শুনুন ডক্টর মজুমদার, কফিতে বিষটা তো আমিই মিশিয়েছিলাম।

    —না, মিস ব্যানার্জি না, এটা একটা ডিলিউশনের ব্যাপার। ট্রাই টু থিংক লজিক্যাল—বিষ ওঁকে আপনি দেননি, আপনার পক্ষে দেওয়াটা সম্ভব ছিল না, আপনি সেখানে ছিলেন না। ধারেকাছে ছিলেন না আপনি।

    —তাই? কে বলল?

    —সকলেই। কেউ আপনাকে দেখেনি। হোটেলে প্রচুর সাক্ষী আছে। প্রত্যেকেই বলেছে ওঁর ঘরে কেউ যায়নি। পুলিশের রিপোর্টেও।

    —দেখতে—না—পাওয়া মানেই ছিলাম না? যাইনি? চোরকে তো কেউ দেখতে পায় না। তা বলে চোর চুরি করতে যায় না? লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়েছিলাম। লোক—দেখিয়ে যাইনি। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, বারান্দার মেঝেয় জলের ফোঁটাগুলি পড়ে ছিটকে উঠছে। চন্দননগরে থাকতে গঙ্গার বুকে বৃষ্টি পড়তো। জলের স্রোতে জলের ফোঁটাগুলি মিলে যেত। গঙ্গায় প্রচুর কচুরিপানা ভেসে যেত মাঝে মাঝে। রাত্তিরবেলায় দাদা স্রোতে ভেসে যাওয়া ছায়ামূর্তিগুলি দেখিয়ে আমাদের বলতো, ”ওই দ্যাখ জলজন্তু!” ‘জল’ শব্দের সঙ্গে ‘মাছ’ যায়, ‘হাঁস’ যায়, ‘শুশুক’ যায়, ‘তিমি’ যায়। বড়জোর ‘জলহস্তী’ যেতে পারে। ‘কুমীর’ যায়, ‘কামট’ যায়। কিন্তু ‘জন্তু’? জানি, কুমীর জন্তু, শুশুক জন্তু, তিমিমাছও দুগ্ধপোষ্য জন্তু। তবু ‘জন্তু’ বললেই মনে হয় ডাঙার। জঙ্গলে বাস। দাদা বলতো, ”ওই দ্যাখ, জলজন্তু!” মৌ আর আমি দেখতাম, অস্পষ্ট ছায়া ছায়া সব জলজন্তু সাঁতার কেটে কেটে সমুদ্রের দিকে ভেসে যাচ্ছে, আধো অন্ধকারে, তারার আলোয় পথ চিনে চিনে। সকালবেলা তাদের আর দেখা যেত না। সকালবেলায় নদীতে জলজন্তুরা ভাসে না। দিনের আলোতে শুধু কচুরিপানারই রাজত্ব।

    এমিলির কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সেই কথা মনে পড়ল। পদ্মিনীমাসির গল্প শুনে শুনে মনের মধ্যে আবছায়া এমনই এক আলো—আঁধারি গড়ে উঠেছে, যে কচুরিপানাকেই জলজন্তু মনে হচ্ছে না তো? ঋত্বিকই ভুল, আমিই যে ঠিক, তারই বা কী স্থিরতা আছে।

    ঋত্বিককে বল, এমিলির ব্যাপার, আর মেসোর ব্যাপার, দুটো আমার মাথায় অনেকটা একরকমের হার্মফুল এক্সপিরিয়েন্স বলে মনে হচ্ছে। ঋত্বিক মোটে কানেই তুলল না। উড়িয়ে দিল।

    —”দুদ্দুর! মোটেই হার্মফুল এক্সপিরিয়েন্স নয়, লার্নিং এক্সপিরিয়েন্স বলা যেতে পারে—তাতে তো তোমারই উপকার, আমি যে তবু একটু আধটু জেনেশুনে গেলুম”—বলে টিপে টিপে হাসতে শুরু করে দিল।

    —মেসোর ব্যাপারেও তো পদ্মিনীমাসিও বলে লার্নিং এক্সপিরিয়েন্স—কিন্তু কথাটা কি ঠিক? প্লেন অ্যান্ড সিম্পল চাইল্ড অ্যাবিউস।

    —”কিন্তু আমি তো চাইল্ড নই, পিউ, আমি অ্যাবিউজডও হইনি অফ মাই অন ফ্রী উইল, একটা এক্সপিরিয়েন্স করেছি—ইট ইজ নট ইভন আর রিলেশনশিপ—জাস্ট আ পাসিং এক্সপিরিয়েন্স দ্যাটস অল। কোনও সম্পর্কই হয়নি এমিলির সঙ্গে আমার।

    —বুঝতে পারছো না কেন, তুমিও তো অ্যাডাল্ট—ওটা তো ছিল একটা ক্লিনিক্যাল ব্যাপারের মতো—নার্থিং রোম্যান্টিক…।”

    —”তবে ও তো ক্লিনিক্যালিই ওটা করাতে পারতো। তোমাকে কেন ব্যবহার করল? লোভ দেখাল কেন? ডাক্তারের কাছে গেলেই পারত।”

    —”এটা তোমার জেলাসির কথা পিউ—নো নীড টু বি জেলাস, ও আমার কেউ নয়—ওর প্রেমিকের সঙ্গে ও গোয়ায় চলে গেছে। তারপর বার্মিংহামে ফিরে যাবে—আমাদের আর জ্বালাতে আসবে না—ফরগেট হার! ইটস ওভার।”

    বললেই তো হল না, ভুলে যাও। বললেই বুঝি ভোলা যায়? আমাকে উইপোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে ওই এমিলি—কি জানি হয়তো পদ্মিনীমাসিকে বললেই ভালো হত—এসব ব্যাপারে ওর নাম আছে।—উপদেশ দিতে পারতো ঋত্বিককে—কিন্তু ঋত্বিক তো পদ্মিনীমাসিকে সিরিয়াসলি নেয় না, ওর কোনও কথাই বিশ্বাস করতে চায় না। বলে ওর সবই বানানো, উইশফুল ফিলিং ডার্টি ড্রীমস—

    ঋত্বিক বলে, ”তোমার পদ্মিনীমাসিকে ডাক্তার দেখাও, ওর মাথার স্ক্রু ঢিলে। স্প্যানার লাগবে।” বলে, ”সব ওর কল্পনা। উইশফুল থিংকিং। ফ্রাস্ট্রেটেড মহিলা, বেচারির চারবার কেন, একবারও বিয়ে হয়েছে কিনা সন্দেহ!”

    পদ্মিনীমাসি বলে, ওর চারটে বর ছিল, একটাও বাঙালি না। প্রথমজন শিখ, বলবীর সিং—তার পরের জন আমেরিকান ইহুদী, স্টীভি, তার পরের জন ক্যারিবিয়ান—নিক, আর শেষজন পরম সুদর্শন এক গ্রীক পুরুষ,—খুব শক্ত নামটা, মনে থাকে না। তিনি বিখ্যাত শেফ। ইনি নাকি এখনও পদ্মিনীমাসির জন্য একটা স্বপ্নের মতো মেডিটেরেনিয়ান আইল্যান্ডের হোটেলে বসে বসে অপেক্ষা করছেন। (আরও তিনজন গার্লফ্রেন্ড সমেত অবশ্য।) ভদ্রলোক ক্ষেপে গেলে প্রচণ্ড মারধোর করেন। এটাই যা। নইলে পদ্মিনীমাসি ওকে ছেড়ে দিত না। ঋত্বিক হাসে, বলে, পুরোটাই গল্প। ”অমন কেউ নেই। উনি ওঁর নন—একজিস্টেড হাজব্যান্ডদের মধ্যে আর একজন…ইম্যাজিনারী ঘরসংসার—।” ইহুদী ভদ্রলোক ইস্রায়েলে সেটল করতে চলে গেছেন, পদ্মিনীমাসিকে নিয়ে যাননি। মাসির সহানুভূতি যেহেতু আরাফতের দিকে, তাই ওদের ছাড়াছাড়ি। পুরো পলিটিক্যাল কারণে। সেই ইহুদী বরটি উচ্চশিক্ষিত। ইউনিভার্সিটি প্রফেসর। আর রোমান্টিকও ছিলেন। নিজে রান্না করে, সুন্দর ক্যান্ডললাইন ডিনার সাজাতেন পদ্মিনীমাসিকে সারপ্রাইজ দিতে। ঋত্বিক বলে, দূর! রোম্যান্টিক না ছাই! ধর্মীয় মৌলবাদী কখনও রোমান্টিক হতে পারে? ইস্রায়েলে চলে যাচ্ছে যে নিজের বউ ছেড়ে, নিজের জন্মভূমি ছেড়ে, সে কখনও ওই সেন্সে রোম্যান্টিক নয়। Zionist-রা যদি রোম্যান্টিক হয় তাহলে তোগাদিয়াও তো রোম্যান্টিক। ঋত্বিকের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। এই একটি ব্যাপারেই ও পদ্মিনীমাসির ওপরে খুশি। ঋত্বিকও প্যালেস্টাইনের পক্ষে। ওরাই অবিচারের শিকার।

    আর ক্যারিবিয়ান ছেলেটি জ্যাজ মিউজিশিয়ান—অসাধারণ স্যাক্সোফোন বাজাতো, গানেরও দারুণ গলা!

    —তবে তাকে কেন ছেড়ে এলে পদ্মিনীমাসি?

    —তাকে? তার প্রবলেম ছিল রে।

    —কী প্রবলেম?

    — ভেবে ভেবে এখন আমার মনে হয় ছেলেটা আসলে প্রাইম্যারিলি গে ছিল বুঝলি? গে মানে জিনিস তো?

    —কিন্তু তাই যদি হবে, তবে তোমাকে বিয়ে করল না কেন? গে—রা তো বিয়ে করে না।

    —নিক যে আমার প্রেমে পড়ে গেল? অনেকেই তো বাইসেকসুয়াল হয়, যেমন ওই নিক। নিক হচ্ছে সব্যসাচী প্রেমিক বুঝলি, ডান হাতেও ছুরি চালায়, বাঁ হাতেও। হি স্লিপস উইথ মেন, অ্যান্ড উইথ উইমেন—হি ফাকস এভ্রিথিং দ্যাট মুভস। এই অনেকটা আমার মতোই আর কি। নিজের রসিকতায় পদ্মিনীমাসি নিজেই হেসে কুটিপাটি। পদ্মিনীমাসি চোখ মারে।

    —যাঃ কী যে বল না?

    —যাঃ কি রে? আমি লজ্জা পাই নাকি বলতে? সীতা, সাবিত্রীদের মতো বোরিং মেয়ে নাকি আমি? তুই এতদিনেও আমার গুণাগুণ কিস্যু চিনলি না? বুদ্ধু মেয়ে! বুঝবি কেমন করে, প্রথম দিনেই যে তুই আমাকে মাসি বানিয়ে ফেললি—নো ওয়ান হ্যাড ডেয়ারড টু ডু দ্যাট সো ফার—আমার কাছ থেকে তুই শিখলি না কিছুই—লুক—লুক অ্যাট মি—টেক আ ক্লোজ লুক—কী দেখছিস? বল কী দেখছিস? হোয়াট ডু ইউ সি?

    —খুব সুন্দর।

    নো নট দ্যাট, আই অ্যাম ওন উওম্যান—আ ফ্রী উওম্যান—

    —নো বডি ঔনস মাই বডি অর মাই সোল, আমি দেহে মনে স্বাধীন—দ্য ওয়ে মেন হ্যাভ বীন, দ্য ওয়ে মেন আর,…অ্যান্ড আই লাইক টু ইউজ মেন ফর মাই ঔন প্লেজার—যেটা পুরুষরা মেয়েদের নিয়েই সহস্র বছর ধরেই করে আসছে। যেটা মেয়েরা করলেই সমাজের মাথায় বজ্রপাত হয়। জীবনে মেয়েদের রোলই হচ্ছে টু বি সেলফলেস… টু বি সেলফ—স্যাক্রিফাইসিং…বি আ ডোরম্যাট! তোদের রবিঠাকুর বলেছে, ”আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে?” আরে, ধ্যুৎ! যত্ত মরবিড চিন্তা, স্রেফ ম্যাসোচিজম ছাড়া আর কি বলবি একে?

    কেন গুরু, আমাকে তুমি পোড়াবে কেন? আমি কী করেছি? আমি বাবা পুড়তেও চাই না, তোর জন্য গন্ধ ঢালতেও চাই না। বরং তুমি গন্ধ ঢালতে চাও তো এসো আমিই তোমাকে পোড়াচ্ছি। তোমার সুগন্ধ শুঁকছি। আমি এই জীবনটাকে চুটিয়ে উপভোগ করতে চাই। আই অ্যাম হিয়ার টু এনজয় লাইফ টু দি ব্রিম! ‘লাইফ ইজ শর্ট’, স্টিভি সর্বদা বলত। তবে শোন, সেবারে আমরা গিয়েছি জুরিখে—স্টিভি আর আমি—উইন্টার স্পোর্টসের জন্য। স্টীভিটা না, একটা আস্ত শয়তান, ও যে কী না পারে—ওই স্নোয়ের মধ্যে, বললে বিশ্বাস করবি না পিউ…

    দিনরাত দিনরাত দিনরাত গজগজ গজগজ করে কথা বলে চলে পদ্মিনীমাসি, আমার কানের মধ্যে।

    .

    —মিস ব্যানার্জি, আপনি ঠিক কখন ওঁর কফিতে বিষটা দিলেন? এবং কোথায়?

    —কেন, ওর ঘরে গিয়ে? রাত্রে, খাবার পরে? রোজই তো খেয়ে উঠে ওর কফি খাওয়া চাইই, অভ্যাসে মেমসাহেব তো, পুরোদস্তুর!

    —আপনি কফিতে বিষ দিলেন, উনি দেখতে পেলেন না? উনি কিছু বললেন না?

    —বাথরুমে ছিল।

    —হোটেলের কেউই দেখতে পেল না আপনাকে? আপনি যে ওঁর ঘরে গেলেন? এতগুলি চোখ এড়িয়ে?

    —দেখতে না পেলে আমি কী করব?

    —হোটেলের সবাই পুলিসকে বলেছে সেদিন রাত্রে ওঁর ঘরে কোনও গেস্ট যায়নি। কেউ না।

    —ভুলভাল বলেছে। সবাই সর্বদা নজরদারি করছে নাকি? এ কি প্রাইম মিনিস্টারের ঘর? না অমিতাভ বচ্চনের?

    —কফিটা খাইয়েই আপনি বেরিয়ে এলেন? নিজে কফি খেলেন না? সেই কাপটা কই? ছিল না তো?

    —আমি কফি খাই না।

    —মিস ব্যানার্জি, আমি মনে করছি—আপনার নার্ভের ওপর প্রচণ্ড চাপ গেছে—এবং আপনাকে উনি এতটাই বিরক্ত করতেন যে আপনার মনে মাঝে মাঝে সত্যিই ওঁকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হত—দুর্ভাগ্যক্রমে এখন সেই ঘটনাটাই ঘটে গেছে বলে আপনার গিলট হচ্ছে, মনে মনে ধারণা হচ্ছে হয়ত বুঝি আপনিই—কিন্তু মিস ব্যানার্জি, সমস্ত রকম প্রমাণ বলে দিচ্ছে এটা খুন নয়, এটা সুইসাইড। আপনার এতে কোনও রোলই ছিল না, দেখুন, আপনার মাথা থেকে এই ভুল ধারণাটা মুছে ফেলা খুবই জরুরি। গিলটি লাগতেই পারে। আপনার হিডন উইশটা হঠাৎ ফুলফিলড হয়ে গেছে—কিন্তু ওটা তো সত্যি সত্যি আপনার রিয়্যাল উইশ ছিল না—তাহলে ওঁকে আপনি বাঁচিয়ে তুলে প্রতিরাত্রে নিজের ঘরে ডেকে এনে হাজির করতেন না। ইউ ওয়ান্ট হার টু লিভ। ইউ ওয়ান্ট হার অ্যালাইভ। ইউ ডোন্ট অ্যাকসেপ্ট হার ডেথ। দ্যাটস হোয়াই ইউ আর ক্রিয়েটিং দীজ ডিলিউশনস ইওরসেলফ—ভয় করবে কেন— এতে আপনার মনে স্বস্তি হচ্ছে, শান্তি হচ্ছে—সব আগের মতোই আছে বলে মনে হচ্ছে—পদ্মিনী সিংয়ের মৃত্যুটাকে আপনি ডিনাই করছেন ভেতরে ভেতরে—আর বাইরে বাইরে নিজেকেই দায়ী করছেন দুর্ঘটনাটার জন্য, যেহেতু এটা আপনি মনে মনে ভেবেছিলেন। ভাবনাটা কার্যকরী করা কিন্তু আপনার দ্বারা হয়ে ওঠেনি মিস বাসু—ওটা পদ্মিনী সিং নিজেই করেছেন। আপনি ওইদিন অফিস থেকে বেরিয়ে ওঁর হোটেলে যাননি, মিস বাসু, আপনার এক বন্ধুকে মিট করতে গঙ্গার ধারের একটা রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন, আইসক্রিম খেয়ে, গেস্ট হাউসে ফিরে এসে ডিনার করেছিলেন। আর বাইরে যাননি। পুলিশের কাছে আপনার সমস্ত মুভমেন্টের রিপোর্ট রয়েছে।

    কী যে আনন্দ পাও তুমি আমাকেই এসব শুনিয়ে। এমন সব কথা যা কাউকেই বলা যায় না, এমনকী ঋত্বিককেও না। একমাত্র পদ্মিনীমাসিই খোলাখুলি বলতে পারে ওইসব, অত সহজে—একটুও লজ্জা না পেয়ে। পারে কী করে? ঋত্বিক বলে, ”অবসেসিভ পাগলামি, তাই পারে। ও তো নর্মাল লোক নয়।” হতেই পারে পদ্মিনীমাসি নর্মাল নয়। আগে আগে পাগল দেখলেই চেনা যেত, পাগল। এখন যায় না। পাগলরা সুস্থলোক সেজে অফিস করে, সংসার করে। কে নর্মাল, কে পাগল, বোঝা তো সহজ নেই আর? আমি যখন প্রথম এখানে আসি তখন আমি অন্য মানুষ ছিলাম, ক’টা মাসের মধ্যে পদ্মিনীমাসি যেন আমাকে একটা আলাদা লোক তৈরি করে ফেলেছে।

    এই আলাদা লোকটা তৈরি না হলে হয়তো ঋত্বিকও এভাবে আসত না আমার জীবনে। মফঃস্বলের মিশনারী স্কুলের যে মেয়েটা এসেছিল, এ মেয়ে তো সে নয়। পদ্মিনীমাসির সঙ্গে থাকতে থাকতে পদ্মিনীমাসির গল্প শুনতে শুনতে আমি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছি, ভালো না মন্দ সে কথা অপ্রাসঙ্গিক—তবে যতোই শুনব না, শুনব না, বলি না কেন, এটা তো ঠিকই যে আমার সর্বাঙ্গ ঝিমঝিম করে—পদ্মিনীমাসির গল্প শুনতে শুনতে ভেতরে একটা আকুলতা তৈরি হয়—সেটা কীসের জন্য তা জানি না—কিন্তু এটা জানি ভেতরে ভেতরে একটা বড়সড় বদল হয়েছে আমার। পদ্মিনীমাসি আমাকে সাজতে শিখিয়েছে। ওরই জন্য আমার মধ্যে মফঃস্বলী ছাপটা মুছে গেছে আস্তে আস্তে। শুধু সাজপোশাকে নয় চিন্তাধারাতেও …আগাগোড়া ভালো রেজাল্ট আছে আমার, সেই সুবাদেই ব্যাঙ্কে ভালো চাকরিটাও জুটে গেছে তাড়াতাড়িই—পদ্মিনীমাসির অনন্ত কথার স্রোত আমার ভেতরকার নিহিত মধ্যবিত্ততায় একটা প্রবল আঘাত করেছে, সে কথা স্বীকার না করে উপায় নেই! আরেকটা পরিবর্তনও অনুভব করছি ইদানীং, আমার মধ্যে জরুরি একটা বদল আসছে। ঋত্বিককে শুধু প্রেমিক বলে, বন্ধু বলেই মনে হচ্ছে না আর—ওকে আলাদা করে পুরুষ বলেও ভাবতে শুরু করেছি—সে ভাবনা ভালো না মন্দ সেটা বুঝতে পারছি না—অন্যকিছুর একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে আমার শরীর মনের মধ্যে…

    কিন্তু পদ্মিনীমাসির আগলছাড়া কথার স্রোতে, অনর্গল কেচ্ছাকাহিনীর তোড়ে আমার নিজস্ব যা কিছু কামনা, যা কিছু স্বপ্ন, রুচি, শান্তি এমনকী স্বস্তিও—সব যেন কেমন তছনছ… ছিঁড়ে—খুঁড়ে…উড়ে—পুড়ে যাচ্ছে, নিজেকে কেমন যেন আর খুঁজে পাচ্ছে না। আমার কাছে ‘প্রেম’ তো এরকম অসার নয়। আমার কাছে ‘সম্পর্ক’ শব্দটার অন্য মানে। আমার কাছে ঋত্বিক একটা খেলনা নয়, তেষ্টা মেটানোর এক গেলাস জলও নয়, সে আমার পুরো জীবনের আধখানা।

    —চারবার বিয়ে করেছ বলেই তুমি বুঝতে পারছো না পদ্মিনীমাসি, আমার এই একবার বিয়ের জন্য মনে মনে প্রস্তুতিটা কতদূর জরুরি—

    আর এই ঋত্বিকের বিলিতি কলিগের কিম্ভূত কাজকর্ম। এটা বুঝি ছাগলামি নয়? স্বামীর কাছে মান থাকবে বলে আমার বোকা বুদ্ধু প্রেমিকটিকে এমন নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহার করা, এতে, এই ঘটনাতে আমার যে কী পরিমাণ টেনশন হচ্ছে, কী পরিমাণ উদ্বেগ হচ্ছে, তা তুমি বললেও বুঝতে পারত না পদ্মিনীমাসি, ঋত্বিকও বুঝছে না, ছোট ছোট জিনিসের রেশ গড়ায় বহুদূর পর্যন্ত—তোমার মেসোর শেখানো বড় হওয়ার মন্ত্র আজও তোমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মিনীমাসি।

    —এখন যদি মেমসাহেবের এই বড় হওয়ার মন্ত্রটা ঋত্বিককে তাড়া করে বেড়ায় আমাদের জীবনভর—তার জন্য দায়ী কে হবে? ঋত্বিকের যদি ঘরে আর মন না বসে?

    তুমি বলেছিলে খুব ছোটবেলাতে একদিন রাত্তিরে তুমি খুব ভয় পেয়েছিলে, দৌড়ে গিয়ে বাবার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে কেঁদে উঠেছিলে। বাবা দরজা খোলেননি। বাবার ঘরে কেউ ছিল—তাই বারবার ধাক্কা দিলেও বাবা দোর খোলেননি, তুমি চীৎকার করে কেঁদে উঠেছিলে—ঠাকুমার ঘর থেকে ঠাকুমা উঠে ছুটে এসেছিলেন, বাবা দোর খোলেননি।

    সেই বন্ধ দরজাটা তোমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে পদ্মিনীমাসি, আর মাঝে মাঝে সারা পৃথিবীটাই তোমার বাবার ঘরের দরজা হয়ে তোমার সামনে বন্ধ হয়ে যায়—

    তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদো—আমি ঠিক ঠিক বুঝতে পারি—তখন তোমার অন্ধকার দিন, তোমার ডিপ্রেশনের দিনগুলি শুরু হয়। অনর্গল বকবক করা বন্ধ। সারাদিন পথে পথে ঘোরা বন্ধ। সারাদিন অন্ধকার ঘরে শুয়ে জিন অ্যান্ড টনিক। অন্ধকার। নিঃশব্দ। মৌন। আমার সঙ্গেও কথা নয়। মিসেস মিত্রের সঙ্গেও কথা নয়। খাবারটা ঘরেই দিয়ে যায়। আবার থালা নিয়ে যায়। আদ্ধেক দিন ছোঁয়ও না। সব পড়ে থাকে। মিসেস মিত্র মনে করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যান। আস্তে আস্তে এবার একদিন অন্ধকারের হিম গলে যায়, আবার শুরু হয়ে যায় নিরন্তর শব্দপ্রপাত। শুনতে শুনতে আমার মাঝে মাঝে মাথার মধ্যে কেমন কেমন করতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ছুটে পালিয়ে যাই, নইলে তোমাকেই ঠেলে ফেলে দিই। মনে হয় অন্ধকারে ওই মেয়েটা তো আমিই সারা রাত্রি বন্ধ দরজার সামনে চীৎকার করে কাঁদছি—দরজা খুলছে না।

    .

    এইরকম অন্ধকার সময়ে তোমার নাকি সুইসাইডাল টেনডেনসি দেখা দেয়, মিসেস মিত্র ঘর থেকে সব ওষুধপত্র সরিয়ে নিয়ে যান—তুমি আমাকে নিজেই একদিন দেখিয়েছিলে, তোমার ব্যাগের মধ্যে—”আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”—বলে স্লিপ লিখে সই করে রেখেছো, পাছে কখনও ডিপ্রেশনের মধ্যে কিছু যদি ঘটিয়ে ফ্যালো। মিসেস মিত্রের যেন ঝামেলা না হয়।

    .

    নিজেকে কেবলই রূপকথার নায়িকা ভাবতে ভালোবাসতে তুমি—একটা চমৎকার নীল পাথর বসানো ছোট্ট রূপোর কৌটো দেখিয়ে আমায় বলেছিলে—”এর মধ্যে জহর আছে। পদ্মিনীর সেই জহরব্রতের বিষ”—খুব কড়া ঘুমের ওষুধ ছিল তার মধ্যে। তোমার ডাক্তারবাবু তোমাকে যে মনের ডাক্তারের কাছে পাঠালেন তুমি তার কাছে গিয়ে উপকার পাচ্ছিলে, তাঁর ওষুধ খেয়ে তোমার ডিপ্রেশন অনেক কমে গিয়েছিল, অনেক পরে পরে হচ্ছিল। গ্যাপও যেমন বাড়ছিল, ডিউরেশানও তেমনি কমছিল। অমন হঠাৎ করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বন্ধ করাটা তোমার ঠিক হয়নি পদ্মিনীমাসি। সর্বক্ষণ মৃত্যুচিন্তা তোমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, যত রাজ্যের এলোমেলো অশ্লীল গল্প দিয়ে তুমি তাকে সরিয়ে রাখতে ঢেকে রাখতে চাও—জীবন মানেই তোমার কাছে সেক্স—মৃত্যুর বিপরীত শক্তি—কিন্তু সত্যিই কি তাই?

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleস্বভূমি – নবনীতা দেবসেন
    Next Article ভ্রমণ সমগ্র ২ – নবনীতা দেবসেন

    Related Articles

    নবনীতা দেবসেন

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    নবনীতা দেবসেনের গল্প

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    নবনীতা দেবসেন

    ভ্রমণ সমগ্র ১ – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.