Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আকাশের নিচে মানুষ – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প368 Mins Read0

    আকাশের নিচে মানুষ – ১৩

    তেরো

    আদিবাসী মরসুমী ক্ষেতমজুরদের যেদিন আনা হয় সেদিন হিমগিরিনন্দন তার ‘কানটোল রুমে’ বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করে। কেননা প্রথম দিন তাদের খোরাকির ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু আজ তাকে দেখা গেল না। এমন কি তার পা-চাটা কুত্তা রামলছমনও নেই।

    এই দু’জন না থাকলেও অন্য লোকজন আছে। তারা জানালো হিমগিরি আদিবাসীদের জন্য সব বন্দোবস্ত করে রেখে গেছে। ওরাই তাদের মকাইর ছাতু, নিমক, মিরচা, মিট্টি তেল ইত্যাদি দিল। থাকার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই। খামারবাড়ির লম্বা লম্বা টিনের চালাগুলোর পেছনে আদিবাসীদের জন্য স্থায়ী মোট ঘর রয়েছে। ক্ষেতের কাজ যতদিন চলবে ততদিন ওরা ওখানেই থাকবে।

    আদিবাসীদের রাতের খোরাকি টোরাকি দিতে দিতে খামারের লোকজনেরা ধর্মাকে জানায়, হিমগিরি এবং রামলছমন তাদের দোসাদটোলায় গেছে।

    ধর্মা অবাক হয়ে যায়। রামলছমন বকের মতো লম্বা লম্বা পা ফেলে মাঝে মাঝেই তাদের টোলায় হানা দেয়। সে যায় ক্ষেত-খামারের কোন একটা কাজের ছুতো ধরে। তবে আসল উদ্দেশ্য হল, মেয়েদের পেছনে পেছনে ছোঁক ছোঁক করে বেড়ানো। কিন্তু নওরঙ্গী হিমগিরিনন্দনের রাখনি হলেও কখনও কোন কারণেই দোসাদটোলায় তাকে যেতে দেখা যায় না। অচ্ছুৎ দুসাদিনকে রাতের আন্ধেরাতে বিছানায় নিয়ে তুললেও তাদের পাড়ায় গিয়ে উচ্চবর্ণের হিমগিরি ব্রাহ্মণত্বকে বিপন্ন করতে পারে না।

    ধর্মা শুধোয়, ‘আমাদের ওখানে কেন গেছে?’

    ‘মালুম নহী—’ খামারের লোকজনেরা জানায়।

    ‘কখন গেছে?’

    ‘আভভি। তুই গেলেই দেখতে পাবি।’

    কী কারণে হিমগিরি এবং রামলছমন এই ভর সন্ধ্যায় অচ্ছুৎদের মহল্লায় ছুটল, ভেবে পায় না ধর্মা। এক অজানা ভয়ের শিহরণ তার শিরদাঁড়ায় খেলে যেতে থাকে। আর দাঁড়ায় না সে। ঝাঁ ঝাঁ রোদে পুরা পাক্কা চার মাইলের বেশি রাস্তা ভেঙে চাহাঢ়ে গেছে ধৰ্মা; আবার ততটা পথই হেঁটে এসেছে। এতক্ষণ হাতপায়ের জোড় ঢিলে হয়ে আসছিল তার। সে সব ভুলে এখন দোসাদটোলার দিকে দৌড়ুতে থাকে।

    মহল্লার সিকি ‘মিলে’র (মাইলের) মধ্যে আসতেই দূর থেকে বাতাসে গোঙানির মতো শব্দ ভেসে আসতে থাকে। ধর্মা একটু ধমকায়। টের পায়, বুকের ভেতরটা ধক্ করে উঠেছে। কান খাড়া করতেই সে বুঝতে পারে, ওটা গোঙানি না, কান্নার আওয়াজ। কেউ গলার সুর কখনও একটু উঁচুতে তুলে, কখনও নামিয়ে ঘ্যানঘেনে টিপির টিপির ‘বারিষে’র মতো শব্দ করে কেঁদে চলেছে। কান্নাটা কোন আওরতের। কে হতে পারে? বুকের ভেতর দম আটকে ধর্মা শক্ত কাঁকুরে মাটির ওপর দিয়ে হঠাৎ তিনগুণ জোরে ছুটতে থাকে।

    কাছাকাছি আসতেই ভয়ে হাড় কেঁপে যায় ধর্মার। দোসাদটোলার সামনের জমিতে ক’টা লণ্ঠন জ্বলছে। সেই আলোয় দেখা যায়, গণা মুখ গুঁজে মাটিতে পড়ে আছে। তার হাত-পা বাঁধা। খালি গা। চামড়া ফেটে পা থেকে মাথা পর্যন্ত রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। গালের কষ বেয়ে ফেনা গড়াচ্ছে। দেখেই বোঝা যায়, এখনও পুরোপুরি বেহুশ হয়ে যায় নি গণা। থেকে থেকে কামারের হাপরের মতো বুক তোলপাড় করে একেকটা শ্বাস পড়ছে।

    গণার এধারে হিমগিরি রামলছমন এবং বড়ে সরকার রঘুনাথ সিংয়ের তিন চারটে পহেলবান দাঁড়িয়ে আছে। রঘুনাথের বাপ, ঠাকুরদা এবং তাঁদেরও আগে থেকে পুরুষানুক্রমে পহেলবান পোষা হচ্ছে। এক জমানা যায়, আরেক জমানা আসে। তার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো বুড়ো পহেলবানদের জায়গায় নয়া পহেলবান আসে। তাদের পোষার উদ্দেশ্য একটাই—বেয়াড়া ঠেঁটা প্রজা বা ভূমিদাসদের শাসন। ঘরে আগুন দেওয়া থেকে খুন করে রাতারাতি লাস গুম করে দেওয়া পর্যন্ত হেন কাজ নেই যা তারা পারে না। এতক্ষণে বোঝা যায় হিমগিরি আর রামলছমন কেন এই ভর সন্ধ্যায় দোসাদটোলায় হানা দিয়েছে।

    শেষ রাতে বড় সড়কে পীপর গাছের তলায় গণার সঙ্গে দেখা হতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল ধর্মা। হোঁশিয়ার হয়ে সে বচপনের বন্ধু গণাকে দোসাদটোলায় ঢুকতে বলেছিল। ধর্মা জানত, ধরা পড়লে রঘুনাথ সিংয়ের পোষা পহেলবানেরা তার কী হাল করে ছাড়বে। ‘করজে’র রুপাইয়া শোধ না করে টৌনে পালিয়ে যাওয়া কোনমতেই বড়ে সরকার বরদাস্ত করবেন না। তারপর চাহাঢ়ের হাটে আদিবাসী ক্ষেতমজুর বাছাবাছি করে তাদের নিয়ে গনগনে রোদের মধ্য দিয়ে গারুদিয়ায় ফিরতে ফিরতে গণার কথা ভুলে গিয়েছিল ধর্মা। ভূমিদাসদের নোংরা পরাধীন পশুর জীবন থেকে পালিয়ে গিয়েছিল গণা। পুরোপুরি স্বাধীন হবার এক বছর বাদে ভিখমাংনি মাকে নিতে এসে ধরা পড়ে গেল সে। কিন্তু একটা খটকা ধর্মার যায় না। গণা ধরা পড়ল কী করে? একমাত্র নওরঙ্গী ছাড়া দোসাদটোলার আর কেউ তো যেচে গিয়ে হিমগিরিদের কাছে গণার খবর দেবে না। গণা জনমদাসের জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে দোসাদরা তার সম্পর্কে খুবই ঈর্ষান্বিত। তাই বলে তার ক্ষতির কথা কেউ ভাবে না। গণা পালিয়ে যাবার পর অনেক দিন পর্যন্ত দোসাদটোলায় সবাই বলাবলি করেছে, ‘হামনিলোগ নায় সাকা, লেকেন গণানে সাকা। ছোকরা বচ্ যাওল।’

    ‘বড়ে সরকার আর তার কুত্তাদের আঁখে ধুলো দিয়ে বুদ্ধু বানিয়ে গণা ভাগল। বহোত সাবাস!’

    মনে মনে গোটা দোসাদটোলা এরকম একটা কৃতিত্বের জন্য গণার সম্বন্ধে এক ধরনের শ্রদ্ধাই পোষণ করে। তা হলে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র নওরঙ্গীই হিমগিরিকে তার খবর দিয়ে আসতে পারে। কিন্তু শেষ রাতে যখন গণা দোসাদটোলায় গেছে তখন ঐ ছমকি আওরতের তো হিমগিরির বিছানায় থাকার কথা। অবশ্য খুব ভোরে আকাশ ফর্সা হতে না হতেই সে হিমগিরির কাছ থেকে ফিরে আসে। ধৰ্মা ভাবে, কীভাবে গণা ধরা পড়ল, সেটা জানা দরকার। পরে কুশীর কাছ থেকে সে জেনে নেবে।

    ওদিকে গণার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত শরীরে হাত বুলোতে বুলোতে তার ভিখমাংনি মা বুড়ী সৌখী জড়ানো শব্দ করে নাগাড়ে কেঁদে চলেছে। তার কোঁচকানো গালের ওপর দিয়ে চোখের জলের স্রোত গড়াতে থাকে অনবরত। দূর থেকে সৌখীর কান্নাই তা হলে শুনতে পেয়েছিল ধর্মা।

    মাঝখানে গণা আর সৌখী, এপাশে পহেলবানসুদ্ধু হিমগিরি রামলছমন আর ওপাশে দোসাদটোলার লোকজনেরা। তাদেরই একজনের স্বাধীন হতে চাওয়ার পরিণাম কী দাঁড়াতে পারে দেখতে দেখতে দোসাদ আর দোসাদিনরা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। ওখানে ভিড়ের মধ্যে কুশীকে দেখতে পেয়ে চোরের মতো চুপি চুপি তার গা ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়ায় ধৰ্মা।

    এদিকে হিমগিরি ছুঁচের মতো তীক্ষ্ণ সরু গলায় কানের পর্দায় তুরপুন চালাতে থাকে, ‘দেখা, চুহাকে বাচ্চাকো হাল দেখা। করজ শোধ না করে ভাগলে কী ফল, নিজের আঁখে তোরা দ্যাখ। কেউ যদি এভাবে ভাগার মতলব করিস হাড্ডি ঢিলা করে দেব। কানমে ঘুষল্‌ হামনিকো বাতরি?’

    দোসাদ দোসাদিনরা এত ভয় পেয়ে গেছে যে তাদের গলা দিয়ে আওয়াজ বার হয় না। নিঃশব্দে ঘাড় কাত করে শুধু জানায়—ঘুষেছে।

    হিমগিরি ইচ্ছা করলে গণাকে খামারবাড়িতে টেনে নিয়ে পহেলবান দিয়ে হাড়-মাংস আলাদা করে দিতে পারত। তার বদলে সিধা দোসাদটোলায় এসে ভূমিদাসদের ডেকে তাদের চোখের সামনে গণাকে এই যে বেধড়ক মারধোর করানো হল, সেটা একটা মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। অর্থাৎ অচ্ছুৎ কুত্তার দল, তোরা সবাই দেখ, ভূমিদাসের জীবন থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইলে ফল কী দাঁড়ায়। এরকম একটা ভয়াবহ দৃষ্টান্ত দেখা থাকলে কেউ আর স্বাধীনতার খোয়াব দেখতে সাহস করবে না।

    গণাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বুড়ী সৌখী সমানে কেঁদে চলেছে। আর গণার ঠোঁট কপাল ভুরু ঘাড়—বলা যায় সারা শরীরটাই রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

    হিমগিরিনন্দন ঘাড়টা এদিকে হেলিয়ে ওদিকে হেলিয়ে চোখ কুঁচকে গণার মারের বহরটা দেখে নেয়। ঠ্যাঙানোটা বেশ ভালই হয়েছে। হিমগিরির মুখেচোখে পরিতৃপ্তির চিকণ একটু হাসি ফুটে উঠতে না উঠতেই মিলিয়ে যায়। ছুঁচের মতো সরু গলায় সে আচমকা চেঁচিয়ে ওঠে, ‘কা রে গণোয়া, বুলা লে তেরে পুলিশ বাপকো! পুলিশ দিখলায়া! কানুন দিখলায়া! আরে হারামজাদকে বেটোয়া, এই গারুদিয়া তালুকে একজন আদমীরই কানুন চালু আছে—ও আদমী বড়ে সরকার রঘুনাথ সিং। কানমে ঘুষল্‌?’

    আধা বেহুঁশ গণা কিছু বলতে চেষ্টা করে। কিন্তু তা বোঝা যায় না। তার রক্তাক্ত ঠোঁটদুটো অল্প অল্প কাঁপে শুধু। তবে বুড়ী সৌখী জড়ানো বিকৃত গলায় অনবরত বলে যায়, ‘ঘুষা হুজৌর, ঘুষা হুজৌর—’

    কুশীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ধর্মার মনে পড়ে যায়, ভোরবেলা হিমগিরির কথা তুলতে গণা বলেছিল, দেশে পুলিশ আছে, জজ-ম্যাজিস্টার আছে, বে-কানুনি কাম করা অত সোজা নয়। নিশ্চয়ই এসব কথা হিমগিরিকেও বলেছিল। তাই নিয়ে বড়ে সরকারের পা-চাটা এই কুত্তাটা এখন তাকে বিদ্রূপের সঙ্গে হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে।

    হিমগিরি ফের গর্জে ওঠে, ‘আজ তোকে কিছুই করলাম না। আবার যদি এখান থেকে ভাগার মতলব করিস হাড্ডি বিলকুল ‘চূরণ’ করে বালির তলায় তোর লাস পুঁতে দেব। তোর পুলিশ বাপেরা কিছু করতে পারবে না। কানমে ঘুষল্‌?’

    সৌখী আগের মতোই বলে যায়, ‘ঘুষা হুজৌর, ঘুষা হুজৌর—’

    আধবুড়ো গণেরি খানিকটা এগিয়ে এসে বলে, ‘ভাগবে না হুজৌর, গণা ভাগবে না—’

    হিমগিরি বলে, ‘আচ্ছী বাত। তুই তো এদের মাতব্বর। গণা চুহার বেটোয়াটাকে থোড়া-বহোত সমঝে দিস, এখান থেকে ভাগবার ফল ভাল হবে না। কানমে ঘুষল্‌?’

    ‘হুঁ দেওতা—’

    এরপর আর দাঁড়ায় না হিমগিরিনন্দন। একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টাস্ত স্থাপনের পর দলবল নিয়ে চলে যায়।

    এদিকে গণেরি, মাধোলাল, নাথু, এমনি আরো জনাকয়েক গণাকে ধরাধরি করে দোসাদটোলায় তাদের ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বুড়ী সৌখী গোঙানির মতো একটানা শব্দ করে ফোঁপাতে ফোঁপাতে তাদের পেছন পেছন যায়। বাদবাকী আর সবাইও শক্ত কাঁকুরে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে না।

    কুশীর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সেই কথাটা মনে পড়ে যায় ধর্মার। গণাটা হিমগিরির হাতে ধরা পড়ল কী করে? সে কি তার হুঁশিয়ারি গ্রাহ্য করে নি? কুশীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ধর্মা বলে, ‘আজ সাবরে যখন চাহাঢ়ে যাই তখন ‘পাক্কী’তে পীপর গাছের তলায় গণার সাথ দেখা হয়েছিল।’

    কুশী অবাক হয়ে বলে, ‘হুঁ!’

    ‘হুঁ।’ তারপর গণার সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে সব বলে যায় ধৰ্মা। শুধোয়, ‘ও ধরা পড়ল কী করে?’

    কুশী যা উত্তর দ্যায় তা এইরকম। ভোরবেলা অন্ধকার থাকতে থাকতে দোসাদটোলায় ফিরে চুপি চুপি বুড়ী সৌখীকে নিয়ে পালিয়ে যায় নি গণা। বরং এতকাল বাদে এসেছে বলে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে গল্পটল্প করে; মাঝখানের পুরা এক বছর কোথায় কোথায় ঘুরেছে, কী কী করেছে, সে সব কথা বলে এবং গারুদিয়া তালুকে এই জানবরের জীবন থেকে পালিয়ে যাবার জন্য সবাইকে ফোঁসলায়। কিন্তু তখন সবারই ক্ষেতিতে যাবার তাড়া। তাই জমিয়ে বেশিক্ষণ গল্প করার সময় কারো ছিল না।

    এদিকে সারা রাত হিমগিরির কাছে কাটিয়ে ভোর ভোর দোসাদটোলায় ফিরেই গণাকে দেখে ফের হিমগিরির কাছে ফিরে যায় নওরঙ্গী। গণাকে নিয়ে দোসাদরা এত মেতে ছিল যে তার আসা বা যাওয়া, কোনটাই কেউ লক্ষ্য করে নি। সবাই যখন গণার সঙ্গে কথাটথা বলে নাস্তা সেরে বেরুতে যাবে সেই সময় হিমগিরি পোষা পহেলবানদের নিয়ে দোসাদটোলায় আসে। তখন কিন্তু গণাকে মারধোর করা হয় না। শুধু কুয়োর পাড়ে একটা মোটা সাগুয়ান গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে দু’জন পহলবানকে পাহারায় রেখে যায়। গণা তখন চেঁচাতে থাকে—সে থানায় যাবে, পুলিশের কাছে নালিশ করবে, কোমরে দড়ি পরিয়ে সবাইকে ফাটকে ঢোকাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

    তারপর ক্ষেতি থেকে কামকাজ সেরে দোসাদটোলার বাসিন্দারা সন্ধ্যের মুখে মুখে যখন ফিরে এল সেইসময় আবার হানা দেয় হিমগিরি। কানুন বা পুলিশের কথা না বলে পায়ে পড়লে হিমগিরি গণাকে অত মারধোর করাত না; হয়ত ক্ষমাই করে দিত। তবে এটা মানতেই হবে, গণার বুকের ছাতিতে দুর্দান্ত সাহস; বহোত তেজ ছোকরা।

    শুনতে শুনতে আগের অনেক বারের মতো আরো একবার গণার সম্পর্কে শ্রদ্ধায় ধর্মার মাথা নুয়ে পড়তে থাকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইতিহাসের গল্প – প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত
    Next Article পাগল মামার চার ছেলে – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }