Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আকাশের নিচে মানুষ – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প368 Mins Read0

    আকাশের নিচে মানুষ – ৯

    নয়

    খাওয়া দাওয়ার পর একটা টিনের কৌটোয় কালোয়া অর্থাৎ দুপুরের জন্য মাড়ভাত্তা, বাসি মাংস আর মিরচা-নিমক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ধর্মা। সেই সঙ্গে কাপড়ের তিনটে থলে আর ছোট টিনের কৌটো। আজ খোরাকি বাবদ তাদের চাল, মকাই, নিমক ইত্যাদি এবং রাতে জ্বালাবার জন্য ‘মিটি’ তেল পাবার দিন। ধর্মা একাই না, কুশীও ওধারের ঘর থেকে নেমে এসে তার সঙ্গ নেয়। সে-ও তার কালোয়া এবং থলেটলে গুছিয়ে নিয়েছে।

    শুধু কি কুশী আর ধর্মাই, গণেরি বুধেরি কুঁদরি শনিচারী—দোসাদটোলার সব খরিদী কিষাণই ঝাঁক বেঁধে বেরিয়ে পড়েছে। তাদের সঙ্গে চলেছে যত খারিজ মানুষের দল। ধর্মার মা-বাপ, কুশীর মা-বাপদের মতো রঘুনাথ সিংয়ের তালিকা থেকে খারিজ হওয়া অসমৰ্থ কমজোরি বুড়োবুড়ীরা। এইসব বাতিল মানুষদের বেশির ভাগই খাদ্যের খোঁজে যাবে তিন মাইল দূরে দক্ষিণ কোয়েলের মরা খাতের ধারের জঙ্গলে। এদের সবার সঙ্গেই রয়েছে বড় বড় পোড়া মাটির তসলা বা হাঁড়ি। দোসাদটোলায় ‘পীনেকা পানি’ বা খাবার জল নেই। আসার সময় খাদ্যের সঙ্গে দক্ষিণ কোয়েলের শুখা বালি খুঁড়ে খুঁড়ে জল বার করে তসলা ভরেও নিয়ে আসবে। এদের মধ্যে জনকয়েক যাবে দু মাইল ফারাকে মৈথিলী বামুনদের গাঁয়ে বা যদুবংশীছত্রিদের টোলায় কিংবা গারুদিয়া বাজারে। বাড়ি বাড়ি বা দোকানে দোকানে ঘুরে নানা ধরনের কাজ জুটিয়ে নেয় তারা। যেমন ঘর ছাওয়ার কাজ, মাল বওয়ার কাজ, বাড়ি সাফ করার কাজ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়া কয়েকজন যাবে রঘুনাথ সিংয়ের শ দু’-তিনেক দুধেল গাই আর বকরি চরাবার কাজে।

    ধর্মা তার মা-বাপকে বলে, ‘হোশিয়ার হয়ে জঙ্গলে ঢুকবি।’

    বুড়োবুড়ী দু’জনেই মাথা নাড়ে, ‘হুঁ—’

    ‘জ্যাদা দের (বেশি দেরি) নায় করনা—’

    ‘নায়।’

    ‘মুহু আন্ধেরা (সন্ধ্যের মুখে মুখে) হবার আগেই মহল্লায় লৌটবি। আন্ধেরা নামলেই হাঁড় চেবুয়ারা (নেকড়ে) বেরিয়ে পড়বে’

    ‘হাঁ, জানি—’

    রোজই ক্ষেতিতে কাজে যাবার সময় মা-বাপকে এই একই হুঁশিয়ারি দিয়ে যায় ধর্মা।

    এদিকে বুড়ী সৌখী ও সবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে। সে সমানে কেঁদে যাচ্ছিল, ‘কা করল হামনি? আপনা বেটোয়াকো (ছেলের) মৌত ডেকে আনলাম। হো রামজী, হো কিষুণজী গণাকে বঁচা দে, বঁচা দে—’

    তার একটানা কান্নার শব্দ ধর্মাকে বিষণ্ণ করে রাখে। নরম গলায় সৌখীকে সে বলে, ‘নায় রোনা (কাঁদিস না), নায় রোনা—’

    কান্না থামে না সৌখীর।

    হঠাৎ কী মনে হওয়ায় ধর্মা শুধোয়, ‘গণা কোথায় কাজ করে জানিস?’

    জোরে জোরে মাথা ঝাঁকায় সৌখী, ‘নায়। পুছা নহী (জিজ্ঞেস করি নি)।’

    ধর্মা ভেবেছিল, গণার ঠিকানা পেলে ক্ষেতির কাজের পর রাত্রে গিয়ে সাবধান করে দিয়ে আসা যেত। হতাশ ভঙ্গিতে সে বলে, ‘বহোত মুসিবত। আভি রামজীকা কিরপা—’

    দোসাদপট্টি আর হাইওয়ের মাঝামাঝি জায়গায় মেটে রাস্তাটা দু-ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেছে। একটা হাইওয়ের দিকে, আরেকটা কোণাকুণি কাঁকুরে ডাঙার ওপর দিয়ে দক্ষিণ কোয়েলের দিকে। ধর্মারা সেখানে এসে পড়ে একসময়।

    বয়স্ক বাতিল দোসাদ-দোসাদিনরা রোজকার মতো এখান থেকে কোয়েলের মরা খাতের দিকে চলে যায়। কেউ কেউ অবশ্য মাঠ, পেরিয়ে দূর বাজার আর গাঁগুলোর দিকে। আর ধর্মারা যায় হাইওয়ের দিকে। পাক্কী বা পাকা সড়ক ধরে ওরা এখন ছুটবে রঘুনাথ সিংয়ের খামার বাড়িতে। ওদের সঙ্গে সৌখীও যেতে থাকে। খুব সম্ভব বিজুরি তালুকের বাজার কি মৈথিলীদের গাঁয়ে আজ সে ভিখ মাঙতে যাবে।

    এর মধ্যেই হাইওয়েতে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। রাঁচী থেকে পাটনার বাস, পাটনা থেকে রাঁচীর বাস। তা ছাড়া দূর পাল্লার ট্রাক, সাইকেল রিকশা এবং ভৈসা গাড়িও বেরিয়ে পড়েছে। রোদ উঠতে না উঠতেই হাইওয়ে সরগরম হয়ে ওঠে।

    কিছুক্ষণ পর বাতাসে কান্নার ভনভনে আওয়াজ ছড়িয়ে হাইওয়ের ওধারের মাঠে নেমে পড়ে সৌখী। মাঠ ধরে গেলে মৈথিলীদের গাঁয়ে অনেক আগে পৌঁছনো যায়।

    পুব দিকটা দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। রোদ এখনও ওঠে নি; তবে উঠতে খুব বেশি দেরি নেই। আধবুড়ো গণেরি পেছন থেকে তাড়া লাগায়, ‘কত্তে বেড়া ভেলে (কত বেলা হয়ে গেল); জলদি চল—’

    সবাই জোরে জোরে পা চালাতে থাকে।

    …

    খামারবাড়িতে আসতেই দেখা গেল, হিমগিরিনন্দন এর মধ্যেই তার ‘কানটোল রুমে’ এসে বসে আছে। মৈথিলী বামহনটা রাত কাটায় নওরঙ্গীকে নিয়ে; তারপর ভোর হতে না হতেই নাহানা সেরে  কপালে চন্দন চড়িয়ে খামারবাড়িতে নিজের নির্দিষ্ট জায়গাটিতে এসে বসে থাকে। এ নিয়মের নড়চড় নেই। এমন একটা দিন ধর্মাদের মনে পড়ে না যেদিন এসে তারা দেখেছে হিমগিরি তার ‘কানটোল রুমে’ বসে নেই।

    এ সময়টা অচ্ছুৎ দোসাদদের সঙ্গে কথা বলে না হিমগিরি। চোখ বুজে, দুলে দুলে আর আস্তে আস্তে হাতে তালি বাজিয়ে ‘রাম-চরিতমানসে’র পদাবলী গুনগুনিয়ে গাইতে থাকে।

    ‘ছিতি জল পাবক গগন সমীরা
    পঞ্চ রচিত অতি অধম শরীরা।’

    .

    সারারাত নওরঙ্গীর সঙ্গে শরীরের চর্চা করে রোজ ভোরবেলা সেই শরীরেরই নশ্বরতা এবং অসারতা প্রমাণ করার জন্য গুনগুনাতে থাকে হিমগিরি।

    ‘কানটোল রুমের’ পেছন দিকের একটা লম্বা অ্যাসবেস্টসের চালা থেকে ‘র‍্যাশন’ (বরাদ্দ খোরাকিকে হিমগিরি র‍্যাশন বলে) মেলে। ধর্মারা ওখানে তাদের থলে কৌটো টৌটো রেখে রামধনিয়ার কাছে চলে আসে। খোরাকির দানা এখন মিলবে না; ক্ষেতির কাজের পর সন্ধ্যেবেলা পাওয়া যাবে। থলে নিয়ে মাঠে যাওয়ার অনেক হাঙ্গামা; তাই ধর্মারা এখানেই ওগুলো রেখে যায়।

    রামধনিয়ার কাছ থেকে হাল এবং বয়েল বুঝে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা বেরিয়ে পড়ে।

    খামারবাড়ি থেকে হাইওয়েতে আসতে আসতে রোদ উঠে যায়। পুব দিকে গোয়ারদের গাঁ এবং গারুদিয়া বাজার ছাড়িয়ে অনেকদূরে আকাশ যেখানে ঘাড় ঝুঁকিয়ে নেমে গেছে ঠিক সেইখানে আগুনের গোলার মতো লাল টকটকে সূর্যের মাথা দেখা যায়।

    ভোরবেলা ধর্মারা যখন মহল্লা থেকে বেরোয়, হাওয়ায় ছিল ঠাণ্ডা ভাব। এখন তাত বাড়তে শুরু করেছে। রোদ যত চড়বে, বাতাস ততই আগুনের হল্কা হয়ে উঠতে থাকবে।

    ওরা যখন মাঠের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সেই সময় রাঁচীর দিক থেকে একটা বাস রাস্তার ধারের বড় পীপর গাছটার তলায় এসে থামে। ওটা বাস ‘ইস্টাণ্ড’ (স্ট্যাণ্ড)। রাঁচী বা পাটনা যেদিক থেকেই বাস আসুক এখানে খানিকক্ষণের জন্য থামে; একটু জিরিয়ে কিছু পাসিঞ্জার কুড়িয়ে আবার দৌড় লাগায়। পীপর গাছটার তলায় ফুটিফাটা টিনের ছাউনি দিয়ে তিন চারটে দোকান গজিয়ে উঠেছে—একটা পানবিড়ির, একটা চা-বিস্কুটের, একটা ছাতু-নিমক-মরিচের। দু’খানা ইট পেতে একটা হাজমও সারাদিন দেহাতী মানুষজনের চুলদাড়ি কামিয়ে যায়।

    রাঁচীর বাসটা থেকে জনকয়েক লোক নেমেছিল। তাদের একজন চেঁচাতে চেঁচাতে অচ্ছুৎ ভূমিদাসদের কাছে এসে পড়ে, ‘এ ধম্মা, ধম্মা হো—’

    ধর্মা থমকে দাড়ায়। যে লোকটা চেঁচাচ্ছিল সে-ও সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার নাম টিরকে।

    টিরকের বয়েস চল্লিশ বেয়াল্লিশ, রাঁচীর ওরাওঁ খ্রীস্টান ওরা। বেঁটেখাটো চেহারা, পেটানো স্বাস্থ্য, তামাটে রঙ, টান-করা চকচকে চামড়া, ছোট ছোট চোখ, পুরু কালচে ঠোঁট, খাড়া চুল। পরনে খাকি হাফ প্যান্ট আর সাদা হাফ শার্ট, পায়ে কেডস, গলায় কালো কারে সিলভারের ক্রশ ঝুলছে।

    রাঁচীতে একটা বড় হোটেলে ওয়েটারের কাজ করে টিরকে। ছেলেবেলায় পাদ্রীদের কাছে মানুষ হয়েছে। তা ছাড়া বড় হোটেলে বিদেশ থেকে অনবরত গণ্ডা গণ্ডা সাহেব আসছে। তাই টিরকের মুখে সবসময় আংরেজির খই ফুটতে থাকে।

    টিরকে প্রায়ই রাঁচী থেকে গারুদিয়া তালুকে ধর্মার কাছে আসে। তার কারণ পরদেশী সাহেবদের তাজ্জব সব শখ। এবং এদেশের জন্তু-জানোয়ার পশুপাখির নখ-দাঁত-শিং-পালক ইত্যাদি কেনে। সাহেবরা এ সব যোগাড়ের দায়িত্ব দেয় টিরকেকে। কিংবা টিরকেই সাহেবদের কাছে ঘুরে ঘুরে আর ঘ্যানর ঘ্যানর করে জুটিয়ে দেবার ‘অর্ডার’ নেয়। হোটেলের টানা ডিউটির পর এত জন্তু-জানোয়ারের নখ দাঁত কোত্থেকে সে জোটাবে? তাই তাকে ধর্মার মতো লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়।

    সাহেবদের মেজাজ এবং হাত দুটোই দরাজ। পশুপাখির শিং-টিংয়ের জন্য দেদার পয়সা দেয় তারা। তার থেকে অর্ধেক কেটে নিয়ে বাকী অর্ধেক ধর্মাকে দেয় টিরকে। ভালো ফায়দা না থাকলে কে আর শুধু শুধু খাটে? গরজই বা কী?

    টিরকে আসা মানেই দু-চারটে বাড়তি পয়সার আমদানি। ধর্মা বেজায় উৎসাহিত হয়ে ওঠে, ‘আরে ভেইয়া, তুম—এত্তে সুবে! কঁহাসে?’

    টিরকে জানায়, ভোর চারটের দূর পাল্লার বাস ধরে রাচী থেকে সে আসছে।

    ধর্মা জিজ্ঞেস করে, ‘ক্যা বাত, বাত ক্যা?’

    টিরকে বলে, ‘বহোত ‘ইমপটিন্ট’ বাত।’

    ‘পাইসা-রুপাইয়া কুছ মিল যায়গা?’

    ‘জরুর মিলেগা—বহোত মিলেগা। বাহাত ‘মানি’—’

    ধর্মা নড়েচড়ে দাড়ায়। তার চোখ চকচকিয়ে ওঠে। আগেও টিরকে মারফত পরদেশী সাহেবদের জন্য জন্তু-জানোয়ারের ছালচামড়া যোগাড় করে দিয়ে ভালো পয়সা কামিয়েছে। গভীর আগ্রহে সে শুধোয়, ‘তুহারকে মুহমে ‘ঘিউ-শক্কর’ (তোমার মুখে ঘি-মিষ্টি পড়ুক)। বোলো, জলদি বোলো  ভেইয়া, ক্যা করনে পড়ে? এখনই ক্ষেতিতে যেতে হবে; দাঁড়িয়ে বাতচিত করার ‘টেইন’ (টাইম) নেই।’

    টিরকে বলে, ‘চল, যেতে যেতে বাতাই—’

    ‘হাঁ—’

    মাঠের দিকে হাঁটতে হাঁটতে টিরকে বলে, ‘এক আমরিকী সাহাব এসেছে। তাকে একজোড়া কোটরার (barking deer) বাচ্চা জুটিয়ে দিতে হবে।’

    ‘কত পাইসা-রুপাইয়া মিলবে?’

    ‘দশ—’

    ‘নায় নায়, ইতনা কমতি নায়। জঙ্গলমে যানা পড়ি। দো-তিন রোজ ক্ষেতির কাম বরবাদ। খোরাকি কাটা যাবে! আউর কুছু দো ভেইয়া—’

    একটু ভেবে টিরকে বলে, ‘ঠিক হ্যায়। বিশ টাকা পাবি—’

    ধর্মা তবু বলে, ‘লেকেন—’

    ‘লেকেন ফেকেন নেহী। সিরেফ তোর জন্যেই ঐ দাম। দামের ব্যাপারে আর মুহ্‌ খুলবি না। আর শোন, পরশু আসব; কোটরার বাচ্চা ‘রেডি’ করে রাখবি। এক হাতে পাইসা, এক হাতে মাল—’

    ‘নায় নায় ভেইয়া, পরশু নায় হোগা। কোটরার বাচ্চার জন্যে কত দিন জঙ্গল ঢুঁড়তে হবে, রামজী জানে। সাত রোজ ‘টেইন’ দাও–’

    ‘নায় নায়, আমরিকী সাহাব এত রোজ থাকবে না। হামনি তরশু আয়েগা—’

    ‘নায়, আউর এক রোজ। নরশু আও—’

    চোখ কুঁচকে কিছু চিন্তা করে টিরকে বলে, ‘ঠিক হ্যায়; নরশুই আসব। পাক্কি বাত?’

    ধর্মা ঘাড় হেলিয়ে দেয়, ‘পাক্কি বাত—’

    টিরকে আর দাড়ায় না; ঘুরে হাইওয়ের দিকে চলে যায়।

    কথা বলতে বলতে ধর্মা পিছিয়ে পড়েছিল। তার সঙ্গে কুশীও। কুশীটা সর্বক্ষণ তার গায়ে আঠার মতো সেঁটে থাকে। অন্য ভূমিদাসরা এবং তাদের ভাগের পশুগুলো বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল। ধর্মা তার বয়েল দুটোর ল্যাজে মোচড় দিয়ে জিভ আর আলটাকরা দিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ বার করে। তারপর চেঁচায়, ‘চল বেটোয়া, জলদি কর—’

    বয়েলদের গতি বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ধর্মা এবং কুশীরও। কুশী এতক্ষণ চুপচাপ ছিল; এবার মুখ খোলে, ‘বিশ রুপাইয়া মিলেগা—’

    ‘হাঁ—’ ধৰ্মা আস্তে মাথা নাড়ে।

    কুশী বলে, ‘বহোত রুপাইয়া—’

    ধর্মা উত্তর দেয় না। সে শুধু ভাবে এই বিশ টাকা যোগ হলে তাদের মুক্তি কেনার জন্য আর কত বাকী থাকবে? মাস্টারজীর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইতিহাসের গল্প – প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত
    Next Article পাগল মামার চার ছেলে – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }