Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আদর্শ হিন্দু-হোটেল

    আদর্শ হিন্দু-হোটেল – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় Adarsha Hindu Hotel
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প252 Mins Read0
    ⤷

    1

    রাণাঘাটের রেল-বাজারে বেচু চক্কত্তির হোটেল যে রাণাঘাটের আদি ও অকৃত্রিম হিন্দু-হোটেল এ-কথা হোটেলের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা না থাকিলেও অনেকেই জানে। কয়েক বছরের মধ্যে রাণাঘাট রেলবাজারের অসম্ভব রকমের উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলটির অবস্থা ফিরিয়া যায়। আজ দশ বৎসরের মধ্যে হোটেলের পাকা বাড়ী হইয়াছে, চারজন রসুয়ে-বামুনে রান্না করিতে করিতে হিমশিম খাইয়া যায়, এমন খদ্দেরের ভিড়।

    বেচু চক্কত্তি (বয়স পঞ্চাশের ওপর, না-ফর্সা না-কালো দোহারা চেহারা, মাথায় কাঁচা পাকা চুল) হোটেলের সামনের ঘরে একটা তক্তপোশে কাঠের হাত-বাক্সের ওপর কনুয়ের ভয় দিয়া বসিয়া আছে। বেলা দশটা। বনগাঁ লাইনের ট্রেন এইমাত্র আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। কিছু কিছু প্যাসেঞ্জার বাহিরের গেট দিয়া রাস্তায় পড়িতে শুরু হইয়াছে।

    বেচু চক্কত্তির হোটেলের চাকর মতি রাস্তার ধারে দাঁড়াইয়া হাঁকিতেছে–এই দিকে আসুন বাবু, গরম ভাত তৈরি, মাছের ঝোল, ডাল, তরকারী ভাত–হিন্দু-হোটেল বাবু–

    দুইজন লোক বক্তৃতায় ভুলিয়া পাশের যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলের লোকের সাদর আমন্ত্রণ উপেক্ষা করিয়া বেচু চক্কত্তির হোটেলেই ঢুকিল।

    –এই যে, বোঁচকা এখানে রাখুন। দাঁড়ান বাবু, টিকিট নিতে হবে এখানে–কোন ক্লাসে খাবেন? ফাস্ট ক্লাস না সেকেন্ ক্লাস–ফাস্ট ক্লাসে পাঁচ আনা, সেকেন ক্লাসে তিন আনা–

    এ হোটেলের নিয়ম, পয়সা দিয়া বেচু চক্কত্তির নিকট হইতে টিকিট (এক টুকরা সাদা কাগজে-নম্বর ও শ্রেণী লেখা) কিনিয়া ভিতরে যাইতে হইবে। সেখানে একজন রসুয়ে বামুন বসিয়া আছে, খদ্দেরের টিকিট লইয়া তাহাকে নিদিষ্ট স্থানে বসাইয়া দিবার জন্য। খাইবার জায়গা দরমার বেড়া দিয়া দুই ভাগ করা। এক দিকে ফাস্ট ক্লাস, অন্য দিকে সেকেন, ক্লাস। খদ্দের খাইয়া চলিয়া গেলে এই সব টিকিট বেচু চক্কত্তির কাছে জমা দেওয়া হইবে– সেগুলি দেখিয়া তহবিল মিলানো ও উদ্বৃত্ত ভাত তরকারীর পরিমাণ তদারক হইবে, রসুয়ে বামুনেরা চুরি করতে না পারে।

    চাকর ভিতরে আসিয়া বলিল–মোটে চার জন লোক খদ্দের। দু’জন ওদের ওখানে গেল।

    বেচু চক্কত্তি বলিল–যাক্‌ গে। তুই আর একটু এগিয়ে যা–শান্তিপুর আসবার সময় হ’ল। এই গাড়ীতে দু-পাঁচটা খদ্দের থাকেই। আর ভেতরে বামুনকে বলে আয়, শান্তিপুর আসবার আগে যেন আর ভাত না চড়ায়। এক ডেকচিতে এখন চলুক।

    এমন সময় হোটেলের ঝি পদ্ম ঘরে ঢুকিয়া বলিল–পয়সা দেও বাবু, দই নে আসি।

    বেচু বলিল–দই কি হবে?

    পদ্ম হাসিয়া বলিল–একজন ফাস্টো কেলাসে খাবে। আমায় বলে পাঠিয়েছে। দই চাই, পাকা কলা চাই–

    বেচু বলিল–কে বল তো? খদ্দের?

    –খদ্দের তো বটেই। পয়সা দিয়ে খাবে। এমনি না। আমার ভাইপো আসবে দেশ থেকে এই শান্তিপুরের গাড়ীতে।

    –না–না–তাকে পয়সা দিতে হবে না। সে ছেলেমানুষ, দু-এক দিনের জন্যে আসবে–তার কাছ থেকে পয়সা কিসের? দইয়ের পয়সা নিয়ে যা–

    বেচু একথা কখনো কাহাকেও বলে না, কিন্তু পদ্ম ঝিয়ের সম্বন্ধে অন্য কথা। পদ্ম ঝি এ হোটেলে যা বলে তাই হয়। তাহার উপর কথা বলিবার কেহ নাই। সেজন্য দুষ্ট লোকে নানারকম মন্দ কথা বলে। কিন্তু সে-সব কথায় কান দিতে গেলে চলে না।

    শান্তিপুরের গাড়ী আসিবার শব্দ পাওয়া গেল।

    হোটেলের চাকর খদ্দের আনিতে স্টেশনে যাইতেছিল, বেচু চক্কত্তি বলিল–খদ্দের বেশী করে আনতে না পারলে আর তোমায় রাখা হবেনা মনে রেখো–আমার খরচা না পোষালে মিথ্যে চাকর রাখতে যাই কেন? গেল হপ্তাতে তুমি মোটে তেইশটা খদ্দের এনেছ–তাতে হোটেল চলে?

    পদ্ম ঝি বলিল–তোমায় পই-পই করে বলে হার মেনে গেলাম; তিন আনা বাড়িয়ে চোদ্দ পয়সা করো, আর ফাস্টো কেলাস-টেলাস তুলে দ্যাও। ক’টা খদ্দের হয় ফাস্টো কেলাসে? যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলে রেট কমিয়েছে–শুনে–

    বেচু বলিল–চুপ চুপ, একটু আস্তে আস্তে বল না। কারও কানে কথা গেলে এখুনি—

    এমন সময় দু’জন খদ্দের সঙ্গে করিয়া মতি চাকর ফিরিয়া আসিল।

    বেচু বলিল–আসুন বাবু, পুঁটুলি এখানে রাখুন। কোন কেলাসে খাবেন বাবুরা? পাঁচ আনা আর তিন আনা–

    একজন বলিল–তোমার সেই বামুন ঠাকুরটি আছে তো? তার হাতের রান্না খেতেই এলাম। আমরা সে-বার খেয়ে গিয়ে আর ভুলতে পারি নে। মাংস হবে?

    –না বাবু, মাংস তো রান্না নেই–তবে যদি অর্ডার দেন তো ওবেলা—

    লোকটি বলিল–আমরা মোকদ্দমা করতে এসেছি কিনা, যদি জিতি পোড়ামা আর সিদ্বেশ্বরীর ইচ্ছেয়–তবে হোটেলে আমাদের আজ থাকতেই হবে। কাল উকীলের বাড়ী কাজ আছে–তা হলে আজ ওবেলা তিন সের মাংস চাই–কিন্তু সেই বামুন ঠাকুরকে দিয়ে রান্না করানো চাই। নইলে আমরা অন্য জায়গায় যাব।

    ইহারা টিকিট কিনিয়া খাইবার ঘরে ঢুকিলে পদ্ম ঝি বলিল–পোড়ারমুখো মিনসে আবার শুনতে না পায়। কি যে ওর রান্নার সুখ্যাত করে লোকে, তা বলতে পারি নে–কি এমন মরণ রান্নার!

    বেচু বলিল–টিকিটগুলো নিয়ে আয় তো ভেতর থেকে। এ-বেলার হিসেবটা মিটিয়ে রাখি। আর এখন তো গাড়ী নেই–আবার সেই একটায় মুড়োগাছা লোকাল–

    পদ্ম বলিল–কেন আসাম মেল–

    –আসাম মেলে আর তেমন খদ্দের আসছে কই? আগে আগে আসাম মেলে আটটা দশটা খদ্দের ফি দিন পাওয়া যেত–কি যে হয়েছে বাজারের অবস্থা–

    পদ্ম ঝি ভিতরে গিয়া রসুয়ে-বামুনের নিকট হইতে টিকিট আনিয়া বলিল–শোনো মজা, ফাস্টো কেলাসের ডাল যা ছিল সব সাবাড়। হাজারি ঠাকুরের কাণ্ড! ইদিকে এই খদ্দের বাবু গিয়ে তাকে একেবারে স্বগ্‌গে তুলে দিচ্ছে, তুমি হেনো রাঁধো, তুমি তেমন রাঁধো বলে–যত অনাছিষ্টি কাণ্ড, যা দেখতে পারি নে তাই। এখন ডালের কি করবে বলো–

    –ডাল কতটা আছে দেখলি?

    –লবডঙ্কা। আর মেরেকেটে তিন জনের মত হবে—

    –ক’জনের মত ডাল দিইছিলি?

    –দশ জনের মত মুগের ডাল আলাদা ফাস্টো কেলাসের মুড়িঘণ্টের জন্যে দিইছি-সেকেন কেলাসে ত্রিশ জনের মুসুরি-খেঁসারি মিশেল ডাল–

    –হাজারি ঠাকুরকে ডেকে দে—

    পদ্ম ঝি হাজারি ঠাকুরকে সঙ্গে করিয়াই আনিল।

    লোকটার বয়স পঁয়তাল্লিশ-ছে’চল্লিশ, একহারা চেহারা, রং কালো। দেখিলে মন হয় লোকটা নিপাট ভালমানুষ।

    বেচু চক্কত্তি বলিল–হাজারি ঠাকুর, ডাল কম হ’ল কি করে?

    হাজারি ঠাকুর বলিল–তা কি করে বলবো বাবু? রোজ যেমন ডাল খদ্দেরদের দিই, তার বেশী তো দিই নি। কম হলে আমি কি করবো বলুন।

    পদ্ম ঝি ঝঙ্কার দিয়া বলিল–তোমার হাড়ে হাড়ে বদমাইশি ঠাকুর। আমি পষ্ট দেখেছি তুমি ওই খদ্দের বাবুদের মুখে রান্নার সুখ্যাতি শুনে তাদের পাতে উড়কি উড়কি মুড়িঘণ্ট ঢালছো। পয়সা-কড়িও দিয়েছে বোধ হয় বকশিশ–

    হাজারি বলিল–বকশিশ এ হোটেলে কত পাই দেখছো তো পদ্মদিদি। একটা বিড়ি খেতে কেউ দ্যায়–আজ পাঁচ বছর এখানে আছি? তুমি কেবল বকশিশ পেতে দ্যাখো আমাকে।

    পদ্ম বলিল–তুমি মুখে-মুখে তককো ক’রো না বলে দিচ্ছি। পদ্ম ঝি কাউকে ভয় করে কথা বলবার মেয়ে নয়। ফাস্টো কেলাসের বাবুরা পুজোর সময় তোমায় গেঞ্জি কিনে দেয় নি?

    –ইস-ভারী গেঞ্জি একটা কিনে দিয়েছিল বুঝি, পুরনো গেঞ্জি–

    বেচু চক্কত্তি বলিল–যাও যাও, ঠাকুর, বাজে কথা নিয়ে বকো না। বেশী খদ্দের আসে, ডালের দাম তোমার মাইনে থেকে কাটা যাবে।

    –কেন বাবু আমার কি দোষ হ’ল এতে। পদ্মদিদি আট জনের ডাল মেপে দিয়েছে, তাতে খেয়েছে এগারো জন–

    পদ্ম এবার হাজারি ঠাকুরের সামনে আসিয়া হাত-মুখ নাড়িয়া চোখ পাকাইয়া বলিল–আট জনের ডাল মেপে দিইছি–নচ্ছার, বদমাইশ, গাঁজাখোর কোথাকার–দশ জনের দশের অর্ধেক পাঁচ পোয়া ডাল তোমায় দিই নি বের করে?

    হাজারি ঠাকুর আর প্রতিবাদ করিতে বোধ হয় সাহস পাইল না।

    পদ্ম ঝি অত অল্পে বোধ হয় ছাড়িত না–কিন্তু ইতিমধ্যে খদ্দেররা আসিয়া পড়াতে সে কথা বন্ধ করিয়া চলিয়া গেল। হাজারি ঠাকুরও ভিতরে গেল।

    বেলা প্রায় আড়াইটা।

    আসাম মেল অনেকক্ষণ আসিয়া চলিয়া গিয়াছে।

    হাজারি ঠাকুর একা খাওয়ার ঘরে খাইতে বসিল। বড় ডেকচিতে দুটিখানি মাত্র ভাত ও কড়ায় একটুখানি ঘাঁটা তরকারি পড়িয়া আছে। ডাল, মাছ যাহা ছিল, পদ্ম ঝিকে তাহার বড় থালায় বাড়িয়া দিতে হইয়াছে–সে রোজ বেলা দেড়টার সময় রান্নাঘরের উদ্বৃত্ত ও ডাল তরকারি মাছ নিজের বাসায় লইয়া যায়–রসুয়ে-বামুনদের জন্যে কিছু থাকুক আর না থাকুক।

    অন্য রসুয়ে-বামুনটা উড়িয়া। তার নাম রতন ঠাকুর। সে হোটেলে বসিয়া খায় না– তাহারও বাসা নিকটে। সেও ভাত-তরকারি লইয়া যায়।

    হাজারির এখানে কেহ নাই। সে হোটেলেই থাকে, হোটেলেই খায়। রোজই তার ভাগ্যে এই রকম। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত খালি পেটে খাটিয়া দুটি কড়কড়ে ভাত, কোনোদিন সামান্য একটু ডাল, কোনোদিন তাও না–ইহাই তাহার বরাদ্দ। ডেকচিতে বেশী ভাত থাকিলে পদ্ম ঝি বলিবে–অত ভাত খাবে কে? ও তো তিন জনের খোরাক–আমার থালায় আর দুটো বেশী করে ভাত বেড়ে দিও।

    হাজারি ঠাকুর খাইতে বসিয়া রোজ ভাবে–আর দুটো ভাত থাকলে ভাল হোত, না-হয় তেঁতুল দিয়ে খেতাম। পদ্মটা কি সোজা বদমাইশ মাগী-পেট ভরে যে কেউ খায়-তাও তার সহ্যি হয় না। যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলে বেলা এগারোটার সময় রাঁধুনি-বামুন একথালা ভাত খেয়ে নেয়, আমাদের এখানে তা হবার জো আছে? বাব্বা, যেমন কর্তা, তেমনি গিন্নি (পদ্ম ঝিকে মনে মনে গিন্নি বলিয়া হাজারি ঠাকুর খুব আমোদ উপভোগ করিল–মুখ ফুটিয়া যাহা বলা যায় না, মনে মনে তাহা বলিয়াও সুথ।)।

    খাওয়ার পরে মাত্র আড়াই ঘণ্টা ছুটি।

    আবার ঠিক বেলা পাঁচটায় উনুনে ডেকচি চাপাইতে হইবে।

    .

    রতন ঠাকুর এই সময়টা বাসায় গিয়া ঘুমোয়, কিন্তু হাজারি ঠাকুর চূর্ণী নদীর ধারের ঠাকুর বাড়ীতে, কিংবা রাধাবল্লভ-তলায় নাটমন্দিরে একা বসিয়া কাটায়।

    না ঘুমাইয়া একা বসিয়া কাটাইবার মানে আছে।

    হাজারি ঠাকুরের এই সময়টা হইতেছে ভাবিবার সময়। এ সময় ছাড়া আর নির্জনে ভাবিবার অবসর পাওয়া যায় না। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকিতে হয়, রাত এগারটা পর্যন্ত খদ্দেরদের পরিবেশন, রাত বারোটা পর্যন্ত নিজেদের খাওয়া-দাওয়া, তার পর কর্তার কাছে চাল-ডালের হিসাব মিটানো। রাত একটার এদিকে শুইবার অবসর পাওয়া যায় না, দু-দণ্ড একা বসিয়া ভাবিবার সময় কই?

    চূর্ণী নদীর ধারের জায়গাটি বেশ ভাল লাগে।

    ও-পারে শান্তিপুর যাইবার কাঁচা সড়ক। খেয়া নৌকায় লোকজন পারাপার হইতেছে। গ্রামের বাঁশবন, শিমুল গাছ, মাঠ, কলাই ক্ষেত, গাবতেরেণ্ডার বেড়া-ঘেরা গৃহস্থ-বাড়ী।

    হাজারি ঠাকুর একটা বিড়ি ধরাইয়া ভাবিতে আরম্ভ করিল।

    আজ পাঁচ বছর হইয়া গেল বেচু চক্কত্তির হোটেলে।

    প্রথম যেদিন রাণাঘাট আসিয়া হোটেলে ঢোকে, সে-কথা আজও মনে হয়। গাংনাপুর হইতে রাণাঘাট আসিয়া সে প্রথমেই গেল বেচু চক্কত্তির হোটেলে কাজের সন্ধানে।

    কর্তা সামনেই বসিয়া ছিলেন। বলিলেন–কি চাই?

    হাজারি বলিল–আজ্ঞে বাবু, রসুয়ে-বামুনের কাজ করি। কাজের চেষ্টায় ঘুরছি, বাবুর হোটেলে কাজ আছে?

    –তোমার নাম কি?

    –আজ্ঞে, হাজারি দেবশর্মা, উপাধি চক্রবর্তী।

    এই ভাবে নাম বলিতে হাজারির পিতাঠাকুর তাহাকে শিখাইয়া দিয়াছিলেন।

    –বাড়ী কোথায়?

    –গাংনাপুর ইস্টিশানে নেমে যেতে হয় এঁড়োশোলা গ্রামে।

    –রাঁধতে জানো?

    বাবু একদিন রাঁধিয়ে দেখুন! মাংস মাছ, যা দেবেন সব পারবো।

    –আচ্ছা, তিন দিন এমনি রাঁধতে হবে–তার পর সাত টাকা মাইনে দেবো আর খেতে পাবে। রাজি থাকো আজই কাজে লেগে যাও।

    সেই হইতে আজ পর্যন্ত সাত টাকার এক পয়সা মাহিনা বাড়ে নাই। অথচ খদ্দের বাবুর সকলেই তাহার রান্নার সুখ্যাতি করে, যদিচ পদ্ম ঝিয়ের মুখে একটা সুখ্যাতির কথাও সে কখনো শোনে নাই, ভালো কথা তো দূরের কথা, পদ্ম ঝি তাহাকে আঁশবঁটি পাতিয়া পারে তো কোটে। গরীব লোক, এ বাজারে চাকুরি ছাড়িয়া দিয়া যাইবেই বা কোথায়? যাক, তাহার জন্য সে তত ভাবে না। তাহার মনে একটা বড় আশা আছে, ভগবান তাহা যদি পূর্ণ করেন কোনদিন–তবে তাহার সকল খেদ দূর হইয়া যায়।

    হোটেলের কাজ সে খুব ভাল শিখিয়া লইয়াছে। সে নিজে একটা হোটেল খুলিবে।

    হোটেলের বাহিরে লেখা থাকিবে–

    হাজারি চক্রবর্ত্তীর হিন্দু-হোটেল
    রাণাঘাট
    ভদ্রলোকদের সস্তায় আহার ও বিশ্রামের স্থান।
    আসুন! দেখুন!! পরীক্ষা করুন!!!

    কর্তার মত তাকিয়া ঠেস দিয়া বসিয়া টিকিট বিক্রয় করিবে। রাঁধুনী-বামুন ও ঝি ‘বাবু’ বলিয়া ডাকিবে। সে নিজে বাজারে গিয়া মাছ তরকারী কিনিয়া আনিবে, এ হোটেলের মত ঝিয়ের উপর সব ভার ফেলিয়া দিয়া রাখিবে না। খদ্দেরদের ভাল জিনিস খাওয়াইয়া খুশী করিয়া পয়সা লইবে। সে এই কয় বছরে বুঝিয়া দেখিল, লোকে ভাল জিনিস, ভাল রান্না খাইতে পাইলে দু-পয়সা বেশী রেট দিতেও আপত্তি করে না।

    এ হোটেলের মত জুয়াচুরি সে করিবে না, মুসুরি ডালের সঙ্গে কম দামের খেসারি ডাল চালাইবে না, বাজারের কানা পোকাধরা বেগুন, রেল-চালানি বরফ-দেওয়া সস্তা মাছ বাছিয়া বাছিয়া হোটেলের জন্য কিনিবে না।

    এখানে খদ্দেরদের বিশ্রামের বন্দোবস্ত নাই–যাহারা নিতান্ত বিশ্রাম করিতে চায়, কর্তার গদিতে বসিয়া এক-আধটা বিড়ি খায়–কিন্তু তাহার মনে হয় বিশ্রামের ভাল ব্যবস্থা থাকিলে সে হোটেলে লোক বেশী আসিবে–অনেকেই খাওয়ার পরে একটু গড়াইয়া লইতে চায়, সে তাহার হোটেলে একটা আলাদা ঘর রাখিবে খুচরা খদ্দেরদের বিশ্রামের জন্য। সেখানে তক্তপোশের ওপর শতরঞ্চি ও চাদর পাতা থাকিবে, বালিশ থাকিবে, তামাক খাইবার বন্দোবস্ত থাকিবে, কেউ একটু ঘুমাইয়া লইতে চাহিলেও অনায়াসে পারিবে। খাও-দাও, বিশ্রাম কর, তামাক খাও, চলিয়া যাও। রাণাঘাটের কোনো হোটেলে এমন ব্যবস্থা নাই, যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলেও না। ব্যবসা ভাল করিয়া চালাইতে হইলে এ-সব ব্যবস্থা দরকার, নইলে রেলগাড়ীর সময়ে ইস্টিশানে গিয়া শুধু ‘আসুন বাবু, ভাল হিন্দু-হোটেল’ বলিয়া চেঁচাইলে কি আর খদ্দের আসে?

    খদ্দেররা খোঁজে আরামে ভাল খাওয়া। যে দিতে পারিবে, তাহার ওখানেই লোক ঝুঁকিবে।

    অবশ্য ইহা সে বোঝে, আজ যদি একটা হোটেলে বিশ্রামের ঘর করে, তবে দেখিতে দেখিতে কালই রাণাঘাটের বাজারময় সব হিন্দু-হোটেলেই দেখাদেখি বিশ্রামের ঘর খুলিয়া বসিবে যদি তাহাতে খদ্দের টানা যায়।

    তবুও একবার নাম বাহির করিতে পারিলে, প্রথম যে নাম বাহির করে তাহারই সুবিধা। আরও কত মতলব হাজারির মাথায় আছে, শুধু খদ্দেরের বিশ্রাম ঘর কেন, মোকদ্দমা মামলা যাহারা করিতে আসে, তাহারা সারাদিনের খাটুনির পরে হয়তো খাইয়া-দাইয়া একটু তাস খেলিতে চায়– সে ব্যবস্থা থাকিবে, পান-তামাকের দাম দিতে হইবে না, নিজেরাই সাজিয়া খাও বা হোটেলের চাকরেই সাজিয়া দিক।

    চূর্ণী নদীর ধারে বসিয়া একা ভাবিলে এমন সব কত নতুন নতুন মতলব তাহার মনে আসে। কিন্তু কখনো কি তাহা ঘটিবে? তাহার মনের আশা পূর্ণ হইবে? বয়স তো হইয়া গেল ছ’চল্লিশের উপর–সারাজীবন কিছু করিতে পারে নাই, সাত টাকা মাহিনার চাকুরি আজও ঘুচিল না–ছাঁ-পোষা গরীব লোক, কি করিয়া কি হইবে, তাহা সে ভাবিয়া পায় না।

    তবু সে কেন ভাবে রোজ এ-সব কথা, এই চূর্ণী নদীর ধারে বসিয়া? ভাবিতে বেশ লাগে, তাই ভাবে।

    তবে বয়স হইয়াছে বলিয়া দমিবার পাত্র সে নয়। ছেচল্লিশ বছর এমন কিছু বয়স নয়। এখনও সে অনেকদিন বাঁচিবে। কাজে উৎসাহ তাহার আছে, হোটেল খুলিতে পারিলে সে দেখাইয়া দিবে কি করিয়া সুনাম করিতে পারা যায়। হোটেল খুলিয়া মরিয়া গেলেও তাহার দুঃখ নাই।

    সময় হইয়া গেল। আর বেশীক্ষণ বসিয়া থাকা চলিবে না। পদ্ম ঝি এতক্ষণ উনুনে আঁচ দিয়াছে, দেরি করিয়া গেলে তাহার মুখনাড়া খাইতে হইবে। আর কি লাগানি-ভাঙানি! কর্তার কাছে লাগাইয়াছে সে নাকি গাঁজা খায়–অথচ সে গাঁজা ছোঁয় না কস্মিনকালে।

    ফিরিবার পথে ছোট বাজারে রাধাবল্লভ-তলা।

    হাজারি ঠাকুর প্রতিদিন এখানে এই সময়ে ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া যায়।

    –বাবা রাধাবল্লভ, তোমার চরণে পড়ে আছি ঠাকুর! মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করো। পদ্ম ঝির ঝাঁটা খেতে আর পারি নে। ওই কর্তাবাবুর হোটেলের পাশে পদ্ম ঝিকে দেখিয়ে দেখিয়ে যেন হোটেল খুলতে পারি।

    হোটেলে ফিরিয়া দেখিল রতন ঠাকুর এখনও আসে নাই, পদ্ম ঝি উনুনে আঁচ দিয়া কোথায় গিয়াছে।

    বেচু চক্কত্তি দিবানিদ্রা হইতে উঠিয়া বাসা হইতে ফিরিয়াই হাজারিকে ডাক দিলেন।

    –শোনো। আজ আমাদের এখানে ক’জন বাবু মাংস খাবেন, ফিষ্টি করবেন, তাঁরা আমায় আগাম দামও দিয়ে গেলেন। যাতে সকাল সকাল চুকে যায় তার ব্যবস্থা করবে। ওঁরা মুর্শিদাবাদের গাড়ীতে আবার চলে যাবেন। মনে থাকবে তো? রতন এখনও আসে নি?

    হাজারির দুঃখ হইল, বেচু চক্কত্তি একথা তাহাকে কেন বলিল না যে, তাহার হাতের রান্না খুব ভাল, অতএব সে যেন নিজেই মাংস রাঁধে। কখনো ইহারা তাহার রান্না ভাল বলে না সে জানে। অথচ এই রান্না শিখিতে সে কি পরিশ্রমই না করিয়াছে।

    রান্না কি করিয়া ভাল শিথিল, সে এক ইতিহাস।

    হাজারির মনে আছে, তাহাদের এঁড়োশোলা গ্রামে একজন সেকালের প্রাচীনা ব্রাহ্মণ বিধবা থাকিতেন, তখন হাজারির বয়স নয়-দশ বছর। রান্নায় তার শুধু সাধারণ ধরণের সুখ্যাতি নয়, অসাধারণ সুনামও ছিল। গ্রামেরও বাহিরেও অনেক জায়গায় লোকে তাঁর নাম জানিত।

    হাজারির মা তাঁকে বলিল–খুড়ীমা, আপনার তো বয়েস হয়েছে, কবে চলে যাবেন– আপনার গুণ আমাকে দিয়ে যান। চিরকাল আপনার নাম করবো।

    তিনি বলেন–আচ্ছা তোকে বৌ একটা জিনিস দিয়ে যাবো। কি করে নিরিমিষ চচ্চড়ি রাঁধতে হয় সেটাই তোকে দিয়ে যাবো।

    সেই বৃদ্ধা হাজারির মাকে ওই একটিমাত্র জিনিস শিখাইয়াছিলেন এবং সেই একটি জিনিস রাঁধিবার গুণেই হাজারির মায়ের নাম ও-দিকের আট-দশখানা গ্রামে প্রসিদ্ধ ছিল। শুনিতে অতি সামান্য জিনিস–নিৰিমিষ চচ্চড়ি, ওর মধ্যে আছে কি? কিন্তু এ-কথার জবাব পাইতে হইলে হাজারির মায়ের হাতের নিরিমিষ চচ্চড়ি খাইতে হয়।

    দুঃখের বিষয় তিনি আর বাঁচিয়া নাই, ও-বৎসর দেহ রাখিয়াছেন।

    হাজারি মায়ের রন্ধন-প্রতিভা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করিয়াছে-মাংস, মাছ সবই রাঁধে ভাল–কিন্তু তার হাতের নিরিমিষ চচ্চড়ি এত চমৎকার যে, বেচু চক্কত্তির হোটেলে একবার যে খাইয়া যায়, সে আবার ঘুরিয়া সেখানেই আসে। রেল-বাজারে তো অতগুলো হোটেল রহিয়াছে–সে আর কোথাও যাইবে না।

    আজও মাংস রান্না রাঁধিবার ভার তাহারই উপর পড়িল! খদ্দেররা মাংস খাইয়া খুব তারিফও করিতে লাগিল। কিন্তু আসলে তাহাতে হাজারির ব্যক্তিগত লাভ বিশেষ কিছুই নাই–খদ্দেরের মুখের প্রশংসা ছাড়া। পদ্ম ঝি তাহাকে একটা উৎসাহের কথাও বলিল না। বেচু চক্কত্তিও তাই।

    অনেক রাত্রে সে খাইতে বসিল। এত যে ভাল করিয়া নিজের হাতে রান্না মাংস, তাহার নিজের জন্য তখন আর কিছুই নাই। যাহা ছিল, কর্তাবাবু নিজের বাসায় পাঠাইয়া দিয়াছেন। তার পরেও সামান্য কিছু যা অবশিষ্ট ছিল, পদ্ম ঝি চাটিয়া-পুটিয়া লইয়া গিয়াছে।

    খাইবার সময় রোজই এমন মুশকিল ঘটে। তাহার জন্য বিশেষ কিছুই থাকে না, এক একদিন ভাত পৰ্যন্ত কম পড়িয়া যায়–মাছ, মাংস তো দূরের কথা। বয়স ছেচল্লিশ হইলেও হাজারি খাইতে পারে ভাল, খাইতে ভালও বাসে–কিন্তু খাইয়া অধিকাংশ দিনই তার পেট তরে না।

    রাত সাড়ে বারোটা। কর্তাবাবু হিসাব মিলাইয়া চলিয়া গিয়াছেন। হোটেলে সে আর মতি চাকর ছাড়া আর কেহ রাত্রে থাকে না। পদ্ম ঝি অনেকক্ষণ চলিয়া গিয়াছে–রাত দশটার পরে সে থাকে না কোনোদিনই।

    মতি চাকর বলিল–চলো, ছোট বাজারে যাত্রা হচ্চে, শুনতে যাবে বামুনঠাকুর?

    –এত রাত্রে যাত্রা? পাগল আর কি! সারাদিন খেটে আবার ও-সব শখ থাকে? আমি যাব না–তুই যাস তো যা। এসে ভাঁড়ার ঘরের জানালায় টোকা মারিস। দোর খুলে দেবো।

    মতি চাকর ছোকরা মানুষ। তাহার শখও বেশী। সে চলিয়া গেল।

    মতি যাইবার কিছুক্ষণ পরে কে একজন বাহির হইতে দরজা ঠেলিল। হাজারি উঠিয়া গিয়া দরজা খুলিয়া পাশের হোটেলের মালিক খোদ যদু বাঁড়ুয্যেকে দরজার বাহিরে দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া গেল। যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলের সঙ্গে তাহাদের রেষারেষি করিয়া কারবার চলে। তিনি এত রাতে এখানে কি মনে করিয়া? কখনো তো আসেন না! হাজারির মন সম্ভ্রমে পূর্ণ হইয়া গেল, যদু বাঁড়ুয্যেও একটা হোটেলের কর্তা, সুতরাং হাজারির কাছে সেও তার মনিবের সমান দরের লোক, এক রকম মনিবই।

    যদু বাঁড়ুয্যে বলিল, আর কে আছে ঘরে?

    যদুর আসিবার উদ্দেশ্য বুঝিতে না পারিয়া হাজারি ততক্ষণে মনে মনে আকাশ-পাতাল ভাবিতেছিল–বিনীত ভাবে বলিল–কেউ নেই বাবু, আমিই আছি। মতি ছিল, ছোট বাজারে যাত্রা—

    যদু বাঁড়ুয্যে বলিল–চল ঘরের মধ্যে বসি। তোমার সঙ্গে কথা আছে।

    ঘরের মধ্যে বসিয়া যদু বাঁড়ুয্যে বেচু চক্কত্তির গদিতে বসিয়া একবার চারিদিকে চাহিয়া লইয়া বলিল–তুমি এখানে কত পাও ঠাকুর?

    –আজ্ঞে সাত টাকা আর খোরাকী।

    –কাপড় চোপড় দেয়?

    –আজ্ঞে বছরে দু’খানা কাপড়।

    যদু বাঁড়ুয্যে কাশিয়া গলা পরিষ্কার করিয়া বলিলেন–শোন, আমার হোটেলে তুমি কাজ করতে যাবে? তোমায় দশ টাকা আর খোরাকী দেবো। বছরে তিনখানা কাপড় পাবে। ধোপা-নাপিত, তেল-তামাক। যাবে?

    হাজারি দস্তুরমত অবাক হইয়া গিয়াছিল। কিছুক্ষণ সে কথা বলিতে পারিল না। তার পর বলিল–বাবু, এখন তো কিছু বলতে পারি নে। ভেবে বলবো।

    –ভেবে বলাবলি আর কি, আমার যে কথা সেই কাজ। তুমি কাল থেকে এ হোটেল ছেড়ে আমার হোটেলে চলো, কাল থেকেই আমি নিতে রাজি। তবে হ্যাঁ, বেচু চক্কত্তির সঙ্গে আমি অসরস করতে চাইনে। সেও ব্যবসাদার, আমিও ব্যবসাদার।

    হাজারির মাথা যেন ঘুরিয়া উঠিল। কেহ দেখিতেছে না তো? পদ্ম ঝি কোথাও আড়ি পাতিয়া নাই তো? সে তাড়াতাড়ি বলিল–এখন আমি কোন কথা বলতে পারব না বাবু। কাল ভেবে বলবো। কাল রাত্তিরে এমন সময় আসবেন।

    যদু বাঁড়ুয্যে চলিয়া গেল।

    হাজারি গাঁজা খায় এ খবর একেবারে মিথ্যা নয়, তবে খায় খুব সঙ্গোপনে এবং খুব কম। আজ এ ব্যাপারের পরে সে এক কলিকা গাঁজা না সাজিয়া পারিল না। সংসারে কেহ এ পর্যন্ত তাহাকে ভাল লোক বা ভাল রাঁধে বলিয়া খাইবার সঙ্গে সঙ্গে তাহার পুরস্কার দিতে চায় নাই–খদ্দেরর মুখের ফাঁকা কথায় পেট ভরে না তো!

    যদুবাবু নিজে বাড়ী বহিয়া আসিয়াছেন, তাহাকে দশ টাকা মাহিনার চাকরি (মায় খোরাকী ধোপা নাপিত) দিতে।

    এতদিন রাণাঘাটের বাজারে আছে–কখনও কাহারও সঙ্গে মেশে না সে–মিশিতে ভালও বাসে না। তাহার জীবনের আশা যে-টা, সে-টা দশজনের সঙ্গে মিশিয়া আড্ডা দিয়া গাঁজা খাইয়া বেড়াইলে পূর্ণ হবে না। তাহাকে খাঁটিতে হইবে, বাজার বুঝিতে হইবে, হিসাব রাখা শিখিতে হইবে, একটা ভাল হোটেল চালাইবার যাহা কিছু সুলুক সন্ধান সব সংগ্রহ করিতে হইবে। সংসারে উন্নতি করিতে হইলে, দেশের কাছে বড় মুখ দেখাইতে হইলে, পরের মুখে নিজের নাম শুনিতে হইলে–সেজন্য চেষ্টা চাই, খাটুনি চাই। আড্ডা দিয়া গাঁজা খাইয়া বেড়াইলে কিংবা মতি চাকরের মত ছোট বাজারের বারোয়ারীর যাত্রা শুনিয়া বেড়াইলে কি হইবে?

    রাত অনেক। মাথা গরম হইয়া গিয়াছে। ঘুম আসার নামটি নাই।

    দরজায় খটখট শব্দ হইল। হাজারি উঠিয়া দরজা খুলিল–সে আগেই বুঝিয়াছিল মতি চাকর ফিরিয়াছে। মতি ঘরে ঢুকিয়া বলিল–এখনো ঘুমোওনি ঠাকুর? এখনো জেগে যে!

    হাজারি গাঁজার কলিকা লুকাইয়া রাখিয়া তবে মতিকে দরজা খুলিয়া দিতে গিয়াছিল। বলিল–যে গরম, ঘুম আসবে কি, সারাদিন আগুনের তাতে–যাত্রা দেখলি নে?

    মতি বলিল–যাত্রার আসরে জায়গা নেই। লোক ভর্তি। ফিরে এলাম। চল এক জায়গায়, যাবে ঠাকুরমশায়?

    –কোথায়?

    –পাড়ার মধ্যে। চলো না–ঘুম যখন নেই, একটু ঘুরেই না হয় এলে। তোমার তো কোনদিন কোথাও–

    হাজারি বলিল–তোরা ছেলে-ছোকরা, আমার বয়স ছেচল্লিশ। আমি তোর বাপের বয়সের মানুষ, আমার সঙ্গে ও-সব কথা কেন?…তোর ইচ্ছে, যা বুঝিস করগে যা।

    –বাবুর কাছে কি পদ্মদিদির কাছে কিছু বলো না ঠাকুরমশাই, দোহাই, দুটি পায়ে পড়ি।

    আশ্চর্য এই যে, মতির এই কথা হাজারির মনে এক নতুন ধরনের ভাবনা আনিয়া দিল। তাহার উচ্চাশা আছে, মতির মত রাত বেড়াইয়া স্ফূৰ্তি করিয়া সময় নষ্ট করিলে ভগবান তাহাকে দয়া করিবেন না। মতি কি ভাবিয়া আর বাহিরে গেল না, বাসনের ঘরে (হোটেলের পিতল কাঁসার থালা-বাটি রান্নাঘরের পাশে সিন্দুকে থাকে, মাজাঘষার পর রোজ রাত্রে বেচু চক্কত্তি নিজে দাঁড়াইয়া থাকিয়া সেগুলি গুনিয়া সিন্দুকে তুলিয়া রাখিয়া চাবি নিজে সঙ্গে করিয়া লইয়া যান) গিয়া শুইয়া পড়িল। হাজারিও বাসনের ঘরে শোয়, আজ সে বাহিরের গদির মেজেতে তাহার পুরোনো মাদুরখান পাতিয়া শুইল।

    না–যদুবাবুর হোটেলে সে যাইবে না। হোটেলের রাঁধুনিগিরি সব জায়গায় সমান। এ হোটেলে আছে পদ্ম, ও হোটেলে হয়তো আবার কে আছে কে জানে? তা ছাড়া, বেচু বাবু তাহার পাঁচ বছরের অন্নদাতা। লোভে পড়িয়া এতদিনের অন্নদাতাকে ত্যাগ করিয়া যাওয়া ঠিক নয়।

    সে নিজে হোটেলে খুলিবে, এই তো তাহার লক্ষ্য। রাঁধুনি-বিত্তি যতদিন করিতে হয়, এই হোটেলেই করিবে। অন্য কোথাও যাইবে না। তাহার পর রাধাবল্লভ দয়া করেন, তখন অন্য কথা।

    পরদিন খুব সকালে পদ্ম ঝি আসিয়া ডাকিল–ও ঠাকুর, দোর খোল–এখনও ঘুম– বাবাঃ! কুম্ভকর্ণকে হার মানালে তোমরা!

    হাজারি তাড়াতাড়ি বিছানা হইতে উঠিয়া ছেঁড়া মাদুরখানা গুটাইয়া রাখিয়া দোর খুলিয়া দিল। একটু পরেই বেচু চক্কত্তি আসিলেন। দরজায়, গদিতে ও ক্যাশ-বাক্সে গঙ্গা জলের ছিটা দিয়া, ক্যাশ-বাক্সের ডালার উপরটা সামান্য একটু গঙ্গাজল দিয়া মার্জনা করিয়া লইয়া পদ্ম ঝিকে বলিলেন–ধুনো দে–বেলা হয়ে গেল। আজ হাটবার, ব্যাপারীদের ভিড় আছে, শীগগির করে আঁচ দে–আর সেদিনকার মত পচা দই-টই আনিস নে বাপু। ওতে নাম খারাপ হয়ে যায়–শেষকালে স্যানিটারি বাবুর চোখে পড়ে যাবে। দরকার কি?

    ব্যাপারীরা সাধারণতঃ পাড়াগাঁয়ের চাষা লোক। তাহারা দই খাইতে পছন্দ করে বলিয়া প্রতি হাটবারে তাহাদের জন্য কয়েক হাঁড়ি দইয়ের বরাদ্দ আছে। এই দই পদ্ম ঝি তাহার নিজের ঘরে পাতিয়া হোটেলে বিক্রয় করিয়া দুই পয়সা লাভ করিয়া থাকে। এবং সে যে প্রথম শ্রেণীর জিনিস সরবরাহ করে না, তাহা বলাই বাহুল্য।

    পদ্ম ঝি মুখ ঘুরাইয়া বলিল–বাবু আপনার যত সব অনাছিষ্টি কথা! দই পচা না ঘন্ট, কে বলচে দই পচা! ওই মুখপোড়া হাজারি ঠাকুর তো? ওর ছেরাদ্দর চাল যদি আজ–

    হাজারি ঠাকুর কথাটা বলিয়াছিল বটে তবে সে দই পচা কি তাজা তাহা বলে নাই বলিয়াছিল ব্যাপারী খদ্দেররা বলাবলি করিতেছিল এ রকম খারাপ দই খাইতে দিলে তাহারা চোদ্দ পয়সার জায়গায় বারো পয়সার বেশি খোরাকি দিবে না।

    পদ্ম ঝি রান্নাঘরের চৌকাঠে পা দিয়া ঝাঁজালো ঝগড়ার সুরে বলিল–বলি, ও ঠাকুর দই পচা তোমাকে কে বলেছে?

    হাজারি আমতা আমতা করিয়া বলিল–ওই সাধু মণ্ডল আর তার ভাইপো রোজ হাটেই তো এখানে খায়–ওরাই বলচিল–

    –বলচিল! তোমার গলা ধরে বলতে গিয়েছে ওরা। তোমার মত হিংসুক কুচুটে লোক তো কখনো দেখিনি–আমি দই দিই বলে তুমি হিংসেয় বুক ফেটে মরে যাচ্চ সে কি আমি বুঝিনে! তোমার শখের কুসুম গয়লানীর ছাপ-বাক্সে পয়সা না উঠলে কি আর তোমার মনে শান্তি আছে!…গাঁজাখোর মড়ুই-পোড়া বামুন কোথাকার!

    হাজারি জিভ কাটিয়া বলিল–ছি ছি, কি যে বলো পদ্মদিদি তার ঠিক নেই–-কুসুমের বাপের বাড়ী আমাদের গায়ে, আমায় জ্যাঠা ব’লে ডাকে, আমি তাকে মেয়ে বলি–তার নামে অমন কথা বল্লে তোমার পাপ হবে না?

    ইহার উত্তরে পদ্ম ঝি যাহা বলিল, তাহা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা যায় না।

    হাজারির চোখে প্রায় জল আসিল। কুসুমকে সে সত্যই মেয়ের মত স্নেহ করে– তাহাদের গ্রামের রসিকলাল ঘোষের মেয়ে–রাণাঘাটে তার শশুরবাড়ী–অল্পবয়সে বিধবা হইয়াছে, এখন দুধ বেচিয়া, দই বেচিয়া ছোট ছোট দুইটি ছেলেকে মানুষ করে। এক শাশুড়ী ছাড়া বাড়ীতে কেহ নাই।

    হঠাৎ একদিন পথে দু’জনের দেখা।

    –জ্যাঠামশায় যে! দাঁড়ান একটু পায়ের ধূলো দিন। আপনি এখানে কোথায়?

    –আরে কুসুম, কোত্থেকে তুই এখানে?

    –এই তো আমার শশুরবাড়ী, ছোট বাজারে মন্দিরের গায়েই। আপনি কি আজ বাড়ী থেকে এসেছেন?

    –না রে–আমি রেল-বাজারে হোটেলে কাজ করি। আজ মাস ছ’-সাত আছি।

    বিদেশে একই গ্রামের মানুষ দেখিয়া দু’জনেই খুব খুশী হইল। সেই হইতে কুসুম হাজারি ঠাকুরের হোটেলে দুধ দই বেচিতে গিয়াছে। গরীব বলিয়া হাজারি ঠাকুর অনেকবার লুকাইয়া হোটেল হইতে রাঁধা ভাত-তরকারি তাহাকে থালা করিয়া বাড়িয়া দিয়াছে। দুধ দই বেচিয়া ফিরিবার সময় কুণ্ডুদের পাটের আড়তের গলিটায় দাঁড়াইয়া কুসুম থালা লইয়া গিয়াছে। ইহাদের মেলামেশা ও ঘনিষ্ঠতা পদ্ম ঝির চোখ এড়ায় নাই, সুতরাং সে বলিতেই পারে।

    .

    দুপুরের পর হাজারি প্রতিদিনের মত চূর্ণীর ধারে যাইতেছে–এমন সময় কুসুমের সঙ্গে দেখা হইল।

    কুসুম দুধের ভাঁড় হাতে ঝুলাইয়া বাড়ী ফিরিতেছিল। তাহার বয়স চব্বিশ-পঁচিশ, বেশ স্বাস্থ্য, রং শ্যামবর্ণ, মুখশ্রী বেশ শান্ত।

    হাজারি বলিল–বাড়ী ফিরছিস এত বেলায় যে!

    কুসুম বলিল–জ্যাঠামশায়, বড্ড দেরি হয়ে গেল। নিজের তো দুধ নেই–কায়েত পাড়া থেকে দুধ আনি, তবে বিক্রী করি, তবে বাড়ী ফিরি। আসুন না আমাদের বাড়ী।

    –না, এখন আর কোথায় যাবো! তুই যা, খাবি-দাবি।

    কুসুম কিছুতেই ছাড়ে না, বলিল–আমার খাওয়া-দাওয়া জ্যাঠামশায়, শাশুড়ী রেঁধে রেখে দিয়েচে গিয়ে খাবো; কতক্ষণ লাগবে? আসুন না।

    হাজারি অগত্যা গেল। ছ’চাল একখানা বড় ঘর, সেখানেতে কুসুমের শাশুড়ী থাকে আর একখানা ছোট চারচালা ঘরে কুসুম ছেলে দুটি লইয়া থাকে। শাশুড়ীর সহিত কুসুমের খুব সদ্ভাব নাই।

    কুসুম নিজের ঘরে হাজারিকে লইয়া গিয়া বসাইল। ঘরের মধ্যে একখানা তক্তপোশ, পুরু কাঁথা পাতিয়া সুন্দর পরিপাটি বিছানা তাহার উপরে। তক্তপোশের নীচে বালি দেওয়া আর-বছরের আলু। এককোণে কতকগুলি হাঁড়িকুড়ি ও একটা বড় জালা–বাঁশের আলনাতে কতকগুলি লেপ-কাঁথা বাঁধা। একটা জলচৌকিতে থানকতক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে পিতল কাঁসার বাসন। ঘর দেখিয়া হাজারির মনে হইল–কুসুম বেশ সাজাইয়া রাখিতে জানে জিনিসপত্র।

    কুসুম বলিল–পান খাবেন জ্যাঠামশায়?

    –দে একটা। আর তুই খেতে যা। বেলা অনেক হয়েচে।

    কিন্তু কুসুমের দেখা গেল, খাওয়ার সম্বন্ধে কোনো তাড়া নাই। হাজারিকে পান দিয়া সেই যে হাজারির সামনে মেজেতে বসিয়া গল্প করিতে লাগিল–প্রায় ঘণ্টাখানেক হইয়া গেল। সে নড়িবার নামও করে না দেখিয়া হাজারি ব্যস্ত হইয়া পড়িল।

    বলিল–তুই খেতে যা না। আমি যাই, আবার উনুনে আঁচ দিতে হবে সকাল সকাল।

    কুসুম বলিল–যাচ্ছি এবার।

    বলিয়া আর যায় না। আরও আধঘণ্টা কাটিয়া গেল।

    কুসুম আর যায় নাই। বাবা মারা গিয়াছে, ভাইয়েরা গরীব বলিয়া হউক বা ভাইবৌদের জন্যই হউক–তাহাকে বাপের বাড়ীতে কেহ লইয়া যায় না। নিজে দু-একবার গিয়াছিল, বেশী দিন টিকিতে পারে নাই। ভাইবৌদের ব্যবহার ভাল নয়।

    হাজারির সঙ্গে কুসুম সেই সব কাহিনীই বলিতে লাগিল। ছেলেবেলায় গ্রামে কি পথে করিয়াছিল কি, সেই বিষয়ে কথাও তাহার আর ফুরায় না।

    –এখানে ছোলার শাক পয়সা দিয়ে কিনতে হয়। আমাদের গাঁয়ের যুগীপাড়ার মাঠে আমরা ছোলার শাক তুলতে যেতাম জ্যাঠামশায়–একবার, তখন আমার বয়েস ন’বছর, আমি আর সাধু কুমোরের মেয়ে আদর, আমরা দুজনে গিয়েছি ছোলার শাক তুলতে– একটা মিন্সে দেখি জ্যাঠামশায় ছোলার ক্ষেতে বসে কচি ছোলা তুলে তুলে খাচ্ছে। আমাদের দেখে দোড় দোড়, বিষম দোড়! আমরা তো হেসে বাচিনে–ভেবেছে বুঝি আমাদের ক্ষেত!

    বলিয়া কুসুম মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে হাসিতে গড়াইয়া পড়ে আর কি!

    হাজারি দেখিল, ইহার ছেলেমানুষী গল্প শুনিতে গেলে ওদিকে হোটেলে যাইতে বিলম্ব হইবে–পদ্ম ঝি মুখ-নাড়ার চোটে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিবে।

    সে উঠিতে যাইতেছে, কুসুম বলিল–দাঁড়ান জ্যাঠামশায়, আপনার জন্যে একটা জিনিস করে রেখেছি। সেইটে দেবার জন্যেই আপনাকে নিয়ে এলাম।

    বলিয়া একটা কাপড়ের পুঁটুলি খুলিয়া একখানা কাঁথা বাহির করিয়া হাজারির সামনে মেলিয়া ধরিয়া বলিল–কেমন হয়েছে কাঁথাখানা?

    –বাঃ, বেশ হয়েছে রে!

    কুসুম কাঁথাখানি পাট করিতে করিতে হাসিমুখে বলিল–আপনি এখানা রাত্রে পেতে শোবেন। আপনি শুধু মাদুরের উপর শুয়ে থাকেন হোটেলে,–আমার অনেক দিনের ইচ্ছে একখানা কাঁথা আপনাকে সেলাই করে দেব। তা দু-তিন মাস ধরে একটু একটু করে এখানা আজ দিন পাঁচ-ছয় হ’ল শেষ হয়েছে।

    হাজারি ভারি খুশী হইল।

    কুসুমের বাবা রসিক ঘোষ প্রায় তাহার সমবয়সী। কুসুম তাহার মেয়ের সমান। একই গায়ের লোক–তাহা হইলেও কি সবাই করে? গাঁয়ে তো কত লোক আছে! ·

    মুখে বলিল, বেঁচে থাক মা, মেয়ে না হলে বাপের জন্যে এত আত্তি দেখায় কে? ভারী চমৎকার কাঁথা। আমি পেতে শুয়ে বাঁচবো এখন। ভারী চমৎকার কাঁথা। বেশ, বেশ!

    কুসুম বলিল–জ্যাঠামশায়, আপনি তো বললেন মেয়ে না হলে কে করে–কিন্তু আমিও বলচি, বাবা না হলে হোটেল থেকে নিজের মুখের ভাতের থালা কে মেয়েকে দেয় লুকিয়ে– শ্রাবণ মাসের সেই উপঝ্রান্ত বাদলায়–

    কুসুমের চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতে সে বাঁ-হাতে আঁচল দিয়া চোখ মুছিয়া চুপ করিয়া মাটির দিকে চাহিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পরে বলিল–মাথার ওপর ভগবান জানেন– আর কেউ জানে না–আপনি আমার জন্যে যা করচেন। আপনি ব্রাহ্মণ, দেবতা–আমি ছোট জাতের মেয়ে–আমার ছোট মুখে বড় কথা সাজে না, তবে আমিও বলচি ওপরের দেনেওয়ালা আপনাকে ভাতের থালার বদলে মোহরের থালা যেন দেন। আমিও যেন দেখে মরি।

    বলিয়াই সে আসিয়া হাজারির পায়ে গড় হইয়া গলায় আঁচল দিয়া প্রণাম করিল।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদেবদাস
    Next Article ব্যবধান

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }