Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আদর্শ হিন্দু-হোটেল

    আদর্শ হিন্দু-হোটেল – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় Adarsha Hindu Hotel
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প252 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৯

    পরদিন সকালেই হাজারি নতুন পাড়া রওনা হইল। চাকদা স্টেশন পর্যন্ত অবশ্য ট্রেনে আসিল–বাকী পথটুকু হাঁটিয়াই চলিল।

    সেই রকম বড় বড় তেঁতুল গাছ ও অন্যান্য গাছের জঙ্গলে দিনমানেই এ পথে অন্ধকার। হাজারির মনে পড়িল সেবার যখন সে এ পথে গিয়াছিল, তখন রাণাঘাট হোটেলের চাকুরি তাহার সবে গিয়াছে–হাতে পয়সা নাই, পথ হাঁটিয়া এই পথে সে চাকুরি খুঁজিতে বাহির হইয়াছিল। আর আজ?

    আজ অনেক তফাৎ হইয়া গিয়াছে। এখন সে রাণাঘাটের বাজারে দুটি বড় হোটেলের মালিক। তার অধীনে দশ-বারো জন লোক খাটে। যে মেয়েটির জন্য আজ তার এই উন্নতি, হাজারির সাধ্য নাই তাহার বিন্দুমাত্র প্রত্যুপকার সে করে–অতসী-মা বড়মানুষের মেয়ে, তার উপর সে বিবাহিতা–হাজারি তাহাকে কি দিতে পারে?

    কিন্তু তাহার বদলে যে দুটি-একটি সরলা দরিদ্র মেয়ে তাহার সংস্পর্শে আসিয়াছে, সে তাহাদের ভাল করিবার চেষ্টা করিতে পারে। নতুন পাড়ার গোয়ালা-বউটি ইহাদের মধ্যে একজন। নতুন পাড়া পৌঁছিতে বেলা প্রায় ন’টা বাজিল। গ্রামের মধ্যে হঠাৎ না ঢুকিয়া হাজারি পথের ধারের একটা তেঁতুল গাছের ছায়ায় কাহাদের একখানা গরুর গাড়ী পড়িয়া আছে, তাহার উপর আসিয়া বসিল। সর্বাঙ্গে ঘাম, এক হাঁটু ধূলা–একটু জিয়াইয়া লইয়া ঘাম মরিলে সম্মুখের ক্ষুদ্র ডোবাটার জলে পা ধুইয়া জুতা পায়ে দিয়া ভদ্রলোক সাজিয়া গ্রামে ঢোকাই যুক্তিসঙ্গত।

    একটি প্রৌঢ়বয়ষ্ক পথিক যশোরের দিক হইতে আসিতেছিল, হাজারিকে দেখিয়া সে কাছে গিয়া বলিল–দেশলাই আছে?

    –আছে, বসুন।

    –আপনারা?

    –ব্রাহ্মণ।

    –প্রণাম হই, একটু পায়ের ধূলো দেন ঠাকুরমশাই।

    লোকটির নাম কৃষ্ণলাল, জাতিতে শাঁখারি, বাড়ী পূর্ববঙ্গ অঞ্চলে। কথাবার্তায় বেশ টান আছে পূর্ববঙ্গের। বনগ্রামে ইছামতীর ঘাটে তাহাদের শাঁখার বড় ভড় নোঙর করিয়া আছে, কৃষ্ণলাল পায়ে হাঁটিয়া এ অঞ্চলের গ্রামগুলি এবং ক্রেতার আনুমানিক সংখ্যা ইত্যাদি দেখিতে বাহির হইয়াছে।

    কাজের লোক বেশীক্ষণ বসে না। একটা বিড়ি ধরাইয়া শেষ করিবার পূর্বেই কৃষ্ণলাল উঠিতে চাহিল। হাজারি কথাবার্তায় তাহাকে বসাইয়া রাখিল। বনগাঁ হইতে সতেরো মাইল পথ হাঁটিয়া ব্যবসার খোঁজ লইতে বাহির হইয়াছে যে লোক, তাহার উপর অসীম শ্রদ্ধা হইল হাজারির। ব্যবসা কি করিয়া করিতে হয় লোকটা জানে।

    সে বলিল –গাঁজাটাজা চলে? আমার কাছে আছে—

    কৃষ্ণলাল একগাল হাসিয়া বলিল–তা ঠাকুরমশায়–পেরসাদ যদি দেন দয়া করে–তবে তো ভাগ্যি।

    –বোসো তবে, এক ছিলিম সাজি।

    হাজারি খুব বেশী যে গাঁজা খায়, তা নয়। তবে উপযুক্ত সঙ্গী পাইলে এক-আধ ছিলিম খাইয়া থাকে। আজকাল রাণাঘাটে গাঁজা খাইবার সুবিধা নাই, হোটেলের সকলে খাতির করে, তাহার উপর নরেন আছে–এই সব কারণে হোটেলে ও ব্যাপার চলে না–বাসায় তো নয়ই, সেখানে টেঁপি আছে। আবার যাহার তাহার সঙ্গেও গাঁজা খাওয়া উচিত নয়, তাহাতে মান থাকে না। আজ উপযুক্ত সঙ্গী পাইয়া হাজারি হৃষ্টমনে ভাল করিয়া ছিলিম সাজিল। কলিকাটি ভদ্রতা করিয়া কৃষ্ণলালের হাতে দিতে যাইতেই কৃষ্ণলাল এক হাত জিভ কাটিয়া হাত জোড় করিয়া বলিল–বাপরে, আপনারা দেবতা। পেরসাদ করে দিন আগে–

    কথায় কথায় হাজারি নিজের পরিচয় দিল। কৃষ্ণলাল খুশি হইল, সেও বাজে লোকের সঙ্গে মিশিতে ভালবাসে না–নিজের চেষ্টায় যে রাণাঘাটের বাজারে দুটি বড় বড় হোলেটের মালিক, তাহার সহিত বসিয়া গাঁজা খাওয়া যায় বটে।

    হাজারি বলিল–রাণাঘাটে তো যাবে, আমার হোটেলেই উঠো। রেলবাজারে আমার নাম বললেই সবাই দেখিয়ে দেবে। পয়সা দিও না কিন্তু, আমি সই দিয়ে দিচ্ছি–তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।

    কৃষ্ণলাল পুনরায় হাতজোড় করিয়া বলিল–আজ্ঞে ওইটি মাপ করতে হবে কর্তা। আপনার হোটেলেই উঠবো–কিন্তু বিনি পয়সায় খেতে পারব না। ব্যবসার নিয়ম তা নয়, নেয্য নেবে, নেয্য দেবে। এ না হলে ব্যবসা চলে না। ও হুকুম করবেন না ঠাকুরমশায়।

    –বেশ, তা যা ভাল বোঝো।

    কৃষ্ণলাল পুনরায় পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিয়া বিদায় লইল।

    .

    হাজারি গ্রামের মধ্যে ঢুকিয়া শ্রীচরণ ঘোষের বাড়ী খুঁজিয়া বাহির করিল। শ্রীচরণ ঘোষ বাড়ীতেই ছিল, হাজারিকে দেখিয়া চিনিতে পারিল তখনই। এসব স্থানে কালেভদ্রে লোকজন আসে–কাজেই মানুষের মুখ মনে থাকে অনেক দিন।

    বউটি সংবাদ পাইয়া ছুটিয়া আসিল। গলায় আঁচল দিয়া প্রণাম করিয়া বলিল বলেছিলেন যে দু-মাসের মধ্যে আসবেন খুড়োমশায়? দু-বছর আড়াই বছর হয়ে গেল যে! মনে পড়ল এতদিন পরে মেয়ে বলে?

    –তা তো পড়লো মা। এস সাবিত্রীসমান হও মা, বেশ ভাল আছ?

    –আপনি যেরকম রেখেছেন। আপনাদের বাড়ীর সব ভাল খুড়োমশায়?

    –তা এখন একরকম ভাল।

    –কুসুমদিদির সঙ্গে দেখা হয়েছিল, ভাল আছে?

    –হ্যাঁ, ভাল আছে।

    –আমার কথা বলেছিলেন?

    হাজারি বিপদে পড়িল। ইহার এখান হইতে সেবার সেই যাইবার পরে গোপালনগরে চাকুরি করিল অনেক দিন, তারপর কতদিন পরে রাণাঘাটে গিয়া কুসুমের সহিত দেখা ইহার কথা তখন কি আর মনে ছিল?

    –ইয়ে, ঠিক মনে পড়ছে না বলেছিলাম কিনা। নানা কাজে ব্যস্ত থাকি, সব সময় সব কথা মনে পড়ে না ছাই। বুড়োও তো হয়েছি মা–

    –আহা বুড়ো হয়েছেন না আরও কিছু। আমার পিসেমশায়ের চেয়ে আপনি তো কত ছোট।

    –কে গঙ্গাধর? হ্যাঁ, তা গঙ্গাধর আমার চেয়ে অন্ততঃ ষোল-সতেরো বছরের বড়।

    –বসুন খুড়োমশায়, আমি আপনার হাত-পা ধোয়ার জল আনি–

    শ্রীচরণ ঘোষ তামাক সাজিয়া আনিয়া হাতে দিয়া বলিল–আপনি তো দাঠাকুর বউমার বাপের বাড়ীর গাঁয়ের লোক–সব শুনেচি আমরা সেবার আপনি চলে গেলে। বউমা সব পরিচয় দেলেন।

    হাজারি বলিল–সে বউটির বাপের বাড়ীর গাঁয়ের লোক নয়, তবে তাহার পিসিমার শ্বশুরবাড়ী গ্রামের লোক বটে এবং বউয়ের পিতৃকুলের সহিত তাহার বহুদিন হইতে জানাশোনা আছে বটে।

    শ্রীচরণ বলিল–দাঠাকুর আমরা ছোট জাত, বলতে সাহস হয় না–যখন এবার পায়ের ধূলো দিয়েছেন তখন দু-চার দিন এখানে এবার থাকুন না কেন? বউমারও বড্ড সাধ আপনি দুদিন থাকেন, আমায় বলতি বলেচে আপনাকে।

    হাজারি এখানে কুটুম্বিতার নিমন্ত্রণ খাইতে আসে নাই, এমন কি আজ ওবেলা রওনা হইতে পারিলেই ভাল হয়। দুটি বড় হোটেলের কাজ, সে না থাকিলে সব বিশৃঙ্খল হইয়া যাইবে–হাজার কাজ বুঝিলেও নরেন এখনও ছেলেমানুষ। তাহার উপর দুই হোটেলের ক্যাশের দায়িত্ব রাখা ঠিক নয়।

    রান্না করিবার সময় বউটিও ঠিক ওই অনুরোধ করিল। এখন দুদিন থাকিয়া যাইতে হইবে, যাইবার তাড়াতাড়ি কিসের? সেবার ভাল করিয়া সেবাযত্ন না করিতে পারিয়া উহাদের মনে কষ্ট আছে, এবার তাহা হইতে দিবে না।

    হাজারি হাসিয়া বলিল–মা, সেবার দুদিন থাকলে কোনো ক্ষেতি ছিল না–কিন্তু এবার তা আর ইচ্ছে করলেও হবার জো নেই।

    হাজারির কথা ভাবে বউটি অবাক হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল–কেন খুড়োমশায়? এবার থাকতে পারবেন না কেন? কি হয়েছে?

    –সেবার চাকুরি ছিল না বলেছিলাম মনে আছে?

    –এবার চাকুরি হয়েছে, তা বুঝতে পেরেচি। ভালই তো–ভগবান ভালই করেছেন। কোথায় খুড়োমশায়?

    –গোপালনগরে।

    –ও! তাই এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্চেন বুঝি?

    –ঠিক বুঝেচ মা। মায়ের আমার বড্ড বুদ্ধি!

    বধুটি সলজ্জ হাসিয়া বলিল–আহা, এর মধ্যে আবার বুদ্ধির কথা কি আছে খুড়োমশায়?

    –বেশ, কিন্তু তুমি বঁটি দেখে কোটো মা। আঙুল কেটে ফেলবে। ঝিঙেগুলো ধুয়ে ফেল এবার–

    –গোপালনগরের কোথায় চাকুরি করচেন খুড়োমশায়?

    –কুণ্ডুদের বাড়ী।

    –খুব বড়লোক বুঝি?

    –নিশ্চয়ই। নইলে রাঁধুনী রাখে কখনো পাড়াগাঁয়ে? খুব বড়লোক।

    –ওদের বাড়ী পুজো হয় খুড়োমশায়?

    –খুব জাঁকের পুজো হয়। মস্ত প্রতিমে। যাত্রা, পাঁচালি–

    আমায় নিয়ে দেখিয়ে আনবেন এবার পুজোর সময়? আপনার কোনো হাংনামা পোয়াতে হবে না। আমাদের বাড়ীর গরুর গাড়ী আছে, তাতে উঠে বাপে-ঝিয়ে যাবো। আবার তার পরদিন দেখেশুনে ফিরবো। কেমন?

    –বেশ তো।

    –নিয়ে যাবেন তাহলে, কথা রইল কিন্তু। আমি কখনো কোনো জায়গায় যাই নি খুড়োমশায়, বাপের বাড়ীর গাঁ আর শ্বশুরবাড়ীর গাঁ–হয়ে গেল। আমার বড্ড কোনো জায়গায় যেতে দেখতে ইচ্ছে করে। তা কে নিয়ে যাচ্ছে?

    হাজারির মনে অত্যন্ত কষ্ট হইল। মেয়েটিকে একটু শহর-বাজারের মুখ তাহাকে দেখাইতেই হইবে। সে বুঝাইয়া বলিল, তাহার দ্বারা যাহা হইবার তাহা সে করিবেই। পাকা কথা থাকিল।

    একবার তামাক খাইয়া লইয়া বলিল–মা, সেই টাকার কথা মনে আছে?

    –হ্যাঁ খুড়োমশায়। টাকা আপনার দরকার?

    –কত দিতে পারবে?

    –তখন ছিল আশি টাকা–এই দু-বছরে আর গোটা কুড়ি হয়েছে।

    বধুটি লজ্জায় মুখ নিচু করিয়া বলিল–আপনার জামাই লোক ভাল। গত সন তামাক পুঁতে দু-পয়সা লাভ করেছিল, আমায় তা থেকে কুড়িটা টাকা এনে দিয়ে বললে, ছোট বৌ রেখে দাও। এ তোমার রইল।

    –বেশ, টাকাটা আমায় দিয়ে দাও সবটা।

    –নিয়ে যান। আমি তো বলেছিলামই সেবার –

    –ভাল মনে দিচ্ছ তো মা?

    বধু জিভ কাটিয়া বলিল–অমন কথা বলবেন না খুড়োমশায়, আপনি আমার বাপের বয়সী ব্রাহ্মণ দেবতা–দুটো কানা কড়ি আপনার হাতে দিয়ে অবিশ্বাস করব, এমন মতি যেন ভগবান না দেন।

    মেয়েটির সরল বিশ্বাসে হাজারির চোখে জল আসিল। বলিল–বেশ, তাই দিও। সুদ কি রকম নেবে?

    — যা আপনি দেবেন। আমাদের গাঁয়ে টাকায় দু-পয়সা রেট—

    –তাই পাবে আমার কাছে।

    হাজারি খাইতে বসিয়া কেবলই ভাবিতেছিল মাত্র এক শত টাকার মূলধনে মেয়েটিকে সে এমন কিছু বেশী লাভের অংশ দিতে পারিবে না তো। অংশীদার সে করিয়া লইবে তাহাকে নিশ্চয়ই–কিন্তু এক শত টাকায় কত আর বার্ষিক লভ্যাংশ পড়িবে। হাজারির ইচ্ছা মেয়েটিকে সে আরও কিছু বেশী করিয়া দেয়। রেলওয়ে হোটেলের অংশে যে অন্য কাহারও নাম থাকিবার উপায় নাই–নতুবা ওখানকার আয় বেশ হইত বাজারের হোটেলের চেয়ে।

    খাওয়া-দাওয়ার পর অল্পক্ষণ মাত্র বিশ্রাম করিয়াই হাজারি রওনা হইল–যাইবার পূর্বে বৌটি হাজারির নিকট এক শত টাকা গুণিয়া দিল। হাজারি রাণাঘাট হইতেই একখানা হ্যাণ্ডনোট একেবারে টিকিট মারিয়া আনিয়াছিল, কেবল টাকার অঙ্কটি বসাইয়া নাম সই করিয়া দিল। হাজারির অত্যন্ত মায়া হইল মেয়েটির উপর। যাইবার সময় সে বার বার বলিস–এবার যখন আসবো, শহর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো কিন্তু মনে থাকে যেন মা।

    –গোপালনগর?

    –যেখানে বল তুমি।

    –আবার কবে আসবেন?

    –দেখি, এবার হয়তো বেশী দেরি হবে না।

    .

    এখান হইতে নিকটেই বেলের বাজার–ক্রোশ দুয়ের মধ্যে। হাজারির অত্যন্ত ইচ্ছা হইল বেলের বাজারে সেবার যে মুদীর দোকানে আশ্রয় লইয়াছিল, তাহার সহিত একবার দেখা করে। জ্যোৎস্না রাত আছে, শেষ রাত্রের দিকে বেলের বাজার হইতে বাহির হইলেও বেলা আটটার মধ্যে রাণাঘাট পৌঁছানো যাইবে।

    বেলের বাজারের মুদী হাজারিকে দেখিয়া চিনিল। খুব যত্ন করিয়া থাকিবার জায়গা করিয়া দিল। তামাক সাজিয়া ব্রাহ্মণের হুঁকায় জল ফিরাইয়া হাজারির হাতে দিয়া বলিল– ইচ্ছে করুন, ঠাকুরমশায়। তা এখন আপনার কি করা হয়? সে তো চাকুরির চেষ্টায় বেরিয়ে ছিলেন–

    –হ্যাঁ সেবার তো চাকুরি পেয়েওছিলাম–গোপালনগরে কুণ্ডুবাবুদের বাড়ী।

    –ও। তা বেশ বেশ। গোপালনগরের কুণ্ডুবাবুরা এদিগরের মধ্যে নাম-করা বড়লোক। লোকও তেনারা শুনিচি বড় ভাল। কত মাইনে দেয় ঠাকুরমশাই?

    –তা দিত দশ টাকা আর খাওয়া-পরা।

    –ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বুঝি? এখন গোপালনগরেই যাবেন তো?

    –না, আমি আর সেখানে নেই।

    মুদী দুঃখিত স্বরে বলিল–আহা! সে চাকুরি নেই? তবে এখন কি–

    হাজারি বসিয়া বসিয়া তাহার হোটেলের ইতিহাস আনুপূৰ্ব্বক বর্ণনা করিল। দোকানী পাকা ব্যবসাদার; ইহার কাছে এ গল্প করিয়া সুখ আছে, ব্যবসা কাহাকে বলে এ বোঝে।

    রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজিল। হাজারির গল্প শুনিয়া মুদী তাহাকে অন্য চোখেই দেখিতে আরম্ভ করিয়াছে, সম্ভ্রমের সহিত বলিল–ঠাকুরমশাই, রাত হয়েছে, রসুয়ের যোগাড় করে দিই। তবে একটা কথা, আমার দোকানের জিনিসপত্তরের দাম এক পয়সা দিতে পারবেন না–

    –সে কি কথা!

    –না ঠাকুরমশায়, এখন তো পথ-চলতি খদ্দের নন, আমারই মত ব্যবসাদার, বন্ধু লোক। আমার দোকানে দয়া করে পায়ের ধূলো দিয়েছেন, আমার যা জোটে, দুটি বিদুরের খুদ খেয়ে যান। আবার রাণাঘাটে যখন আপনার হোটেলে যাব, তখন আপনি আমায় খাওয়াবেন।

    হাজারি জানে এ অঞ্চলের এই রকমই নিয়ম বটে। ব্যবসাদার লোকদের পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সহানুভূতি ও খাতির এখনও এই সব পাড়াগাঁ অঞ্চলে আছে। রাণাঘাটের মত শহর জায়গায় রেষারেষির আবহাওয়ায় উহা নষ্ট হইয়া গিয়াছে।

    রাত্রে দোকানী বেশ ভাল খাওয়া-দাওয়ার যোগাড় করিয়া দিল। ঘি ময়দা আনিয়া দিল, লুচি ভাজিয়া খাইতে হইবে, হাজারির কোনো আপত্তিই টিকিল না। ছোট একটা রুই মাছ কোথা হইতে আনিয়া হাজির করিল। টাটকা পটল, বেগুন, প্রায় আধ সের ঘন দুধ, বেলের বাজারের উৎকৃষ্ট কাঁচাগোল্লা সন্দেশ।

    হাজারি দস্তুরমত লজ্জিত ও অপ্রতিভ হইয়া পড়িল। এমন জানিলে সে এখানে আসিত না। মিছামিছি বেচারীর দণ্ড করা, অথচ সে-কথা বলিতে গেলে লোকটি মহা দুঃখিত হইবে। এই ধরনের নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা শহর-বাজারে হাজারির চোখে পড়ে নাই–এই সব পল্পী-অঞ্চলেই এখনও ইহা আছে, হয়তো দু-দশ বছর পরে আর থাকিবে না।

    পরদিন সকালে হাজারি দোকানীর নিকট বিদায় লইল বটে, কিন্তু রাণাঘাট না আসিয়া হাঁটাপথে গোপালনগর চলিল। তাহার পুরানো মনিব-বাড়ী, সেখানে তাহার একটা কাপড়ের পুঁটুলি আজও পড়িয়া আছে–আনি আনি করিয়া আনা আর হইয়া উঠে নাই।

    .

    পথে বেলা চড়িল।

    পথের ধারে বনজঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট পুকুরটি দেখিয়া হাজারির মনে পড়িল ইহারই কাছে শ্রীনগর সিমলে গ্রাম।

    হাজারি গ্রামের মধ্যে ঢুকিল, তাহার বড় ইচ্ছা হইল সেবার যাহার বাড়ীতে আশ্রয় লইয়া ছিল, সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করিয়া তবে যাইবে। অনেক দিন পরে যখন এ পথে আসিয়াছে, তখন তাঁহার সংবাদ লওয়াটা দরকার বটে।

    বিহারী বাঁড়ুয্যে মশায় বাড়ীতেই ছিলেন। এই দুই বৎসরে চেহারা তাঁহার আরও ম্যালেরিয়াশীৰ্ণ হইয়া পড়িয়াছে, মাথার চুল সবগুলি পাকিয়া গিয়াছে, সম্মুখের দু-একটি দাঁত পড়িয়াছে। বাঁড়ুয্যে মশায় হাজারিকে দেখিয়া চিনিতে পারিলেন, গ্রাম্য আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি হইল না–তখনই হাত-পা ধুইবার জল আনিয়া দিলেন এবং এ-বেলা অন্তত থাকিয়া আহার না করিয়া তাহার যে যাইবার উপায় নাই এ-কথাটিও হাজারিকে জানাইয়া দিলেন। বাড়ীর সম্মুখস্থ নারিকেল গাছে ডাব পাড়িবার জন্য তখনই লোক উঠাইবার ব্যবস্থা করিলেন।

    গ্রামে তখনই তোক ছিল না তত, এ দু-বছরে যেন আরও জনশূন্য হইয়া পড়িয়াছে। বাঁড়ুয্যেমশায়ের বাড়ীর উত্তর দিকের বাঁশবনের ওপারে সেবার একধর গৃহস্থ ছিল, হাজারির মনে আছে–এবার সেখানে ভিটা পড়িয়া আছে। বিহারী বাঁড়ুয্যে বলিলেন–কে, ও দুলাল তো? না ওদের আর কেউ নেই। দুলাল আর তার ভাই নেপাল এক কার্তিক মাসে মারা গেল–দুলালের বৌ বাপের বাড়ী চলে গেল, ছেলেটা মেয়েটার হাত ধরে, আর নেপাল তো বিয়েই করে নি। কাজেই ভিটে সমভূম হয়ে গেল। আর গাঁ সুদ্ধ হয়েছে এই দশা। তা আপনি আসবেন বলেছিলেন আসুন না? ঐ দুলালের ভিটেতে ঘর তুলুন কিংবা চলে আসুন আমার এই রাস্তার ধারের জমি দিচ্ছি আপনাকে। আমাদের গায়ে এখন লোকের দরকার–আপনি আসুন খুব ভাল ধানের জমি দেবো আপনাকে আর আম কাঁঠালের বাগান। কত চান? বড় বড় আম-কাঁঠালের বাগান পড়ে রয়েছে ঘোর জঙ্গল হয়ে পূর্ব পাড়ায়। লোক নেই মশায়, কে ভোগ করবে আম-কাঁঠালের বাগান। আপনি আসুন, চারখানা বড় বড় বাগান আপনাকে জমা দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের গাঁয়ের মত খাদ্যসুখ কোথাও পাবেন না, আর এত সস্তা! দুধ বলুন, ফলফুলুরি বলুন, মাছ বলুন–সব সস্তা।

    হাজারি ভাবিল, জিনিস সস্তা না হইয়া উপায় কি? কিনিবার লোক কে আছে। একটা কথা তাহার মনে হওয়াতে সে বিহারী বাঁড়ুয্যেকে জিজ্ঞাসা করিল–গাঁয়ে লোক নেই তো জিনিসপত্তর তৈরী করে কে? এই তরি-তরকারি দুধ?

    বাঁড়ুয্যে মশায় বলিলেন–ওই যে–আপনি বুঝতে পারলেন না। ভদ্দরলোক মরে হেজে যাচ্ছে কিন্তু চাষালোকের বাড়বাড়ন্ত খুব। সিমলে গায়ের বাইরে মাঠের মধ্যে দেখবেন একশো ঘর চাষী কাওরী আর বুনোর বাসা। ওদের মধ্যে মশায় ম্যালেরিয়া নেই, যত রোগ বালাই সব কি এই ভদ্রলোকের পাড়ায় মশায়? পাড়াকে পাড়া উজোড় করে দিলে একেবারে রোগে!

    বিহারী বাঁড়ুয্যের চারিটি ছেলে, বড় ছেলেটির বছরখানেক হইল বিবাহ দিয়াছেন, বলিলেন। সে ছেলেটির স্বাস্থ্য এত খারাপ যে হাজারির মনে হইল এ গ্রামে আর তিন বছর এভাবে যদি ছেলেটি কাটায় তবে বাঁড়ুয্যে মশায়ের পুত্রবধুকে কপালে সিঁদুর এবং হাতের নোয়ার মায়া কাটাইতেই হইবে।

    কিন্তু সে ছেলেটির বাড়ী ছাড়িয়া কোথাও যাইবার উপায় নাই, জমিজমা, চাষ-আবাদের সমস্ত কাজই তাহাকে দেখিতে হয়–বৃদ্ধ বাঁড়ুয্যে মশায় একরূপ অশক্ত হইয়া পড়িয়াছেন। বড় ছেলেটিই একমাত্র ভরসা। তাহার উপর ছেলেটি লেখাপড়া এমন কিছু জানে না যে বিদেশে বাহির হইয়া অর্থ উপার্জন করিতে পারে, তাহার বিদ্যার দৌড় গ্রামের উচ্চ প্রাথমিক পাঠাশালা পৰ্য্যন্ত–শুধু তাহার কেন, অন্য ছেলেগুলিরও তাই।

    তবুও হাজারি বলিল–বাঁড়ুয্যেমশায় একটা কথা বলি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন। আপনার একটি ছেলেকে আমি রাণাঘাটে নিয়ে গিয়ে হোটেলের কাজে ঢুকিয়ে দিতে পারি–ক্রমে বেশ উন্নতি করতে পারে—

    বিহারী বাঁড়ুয্যে বলিলেন-–ভাত-বেচা হোটেলে? না, মাপ করবেন। ও-সব আমাদের দ্বারা হবে না। আমাদের বংশে ও-সব কখনো–ও কাজ আমাদের নয়।

    হাজারি আর কিছু বলিতে সাহস করিল না।

    শ্রীনগর সিমলে হইতে বাহির হইয়া যখন সে আবার বড় রাস্তায় উঠিল তখন সেবারকারের মতই সে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল। এমন নিরুপদ্রব নিশ্চিত সুখ মৃত্যুর সামিল–ও সুখ তাহার সহ্য হইবে না।

    গোপালনগরে পৌঁছিতে বেলা পাঁচটা বাজিল।

    গোপালনগরের কুণ্ডুবাড়ী পৌঁছিতেই হাজারি যথেষ্ট খাতির পাইল। কুণ্ডুদের বড়কর্তা খুশি হইয়া বলিলেন–আরে, হাজারি ঠাকুর যে, কোথায় ছিলেন এতদিন? আসুন–আসুন।

    বাড়ীর মেয়েরাও খুশি হইল। হাজারি ঠাকুরের রান্না সম্বন্ধে নিজেদের মধ্যে আজও তাহারা বলাবলি করে। লোকটা যে গুণী এ বিষয়ে বাড়ীর লোকদের মধ্যে মতভেদ নাই। ইহারা হাজারির পুরানোমনিব সুতরাং সে ইহাদের ন্যায্য প্রাপ্য সম্মান দিতে ত্রুটি করিল না। বড়বাবুর স্ত্রী বলিলেন–ঠাকুরমশায়, দু-দিনের ছুটি নিয়ে গেলেন, আর দু-বছর দেখা নেই, ব্যাপার কি বলুন তো? মাইনে বাকী তাও নিলেন না। হয়েছিল কি?

    ইহারা ব্রাহ্মণকে যথেষ্ট সম্মান করিয়া থাকে, রসুইয়ে ব্রাহ্মণের প্রতিও সে সম্মান প্রদর্শনের কার্পণ্য নাই। মেজকর্তার মেয়ে নির্মলার সেবার বিবাহ হইয়াছিল–সে শ্বশুরবাড়ীতে থাকিবার সময়েই হাজারি উহাদের চাকুরি ছাড়িয়া দেয়। নির্মলা এখানে সম্প্রতি আসিয়াছে, সে হাজারির পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিয়া বলিল–বেশ আপনি, শ্বশুরবাড়ী থেকে এসে দেখি আপনি আর নেই। উনি সেই বিয়ের পরদিন আপনার হাতের রান্না খেয়ে গেছলেন, আমায় বললেন–তোমাদের ঠাকুরটি বড় ভাল। ওর হাতের রান্না আর একদিন না খেলে চলবে না, ওমা, এসে দেখি কোথায় কে!–কোথায় ছিলেন এতদিন? সেই রকম মাংস রাঁধুন তো একদিন। এখন থাকবেন তো আমাদের বাড়ী?

    হাজারির কষ্ট হইল ইহাদের কাছে প্রকৃত কথা প্রকাশ করিয়া বলিতে। তবুও বলিতে হইল। নির্মলাকে বলিল–তোমায় আমি মাংস রেঁধে খাইয়ে যাব মা, দু-দিন তোমাদের এখানে থেকে সকলকে নিজের হাতে রসুই করে খাওয়াব, তারপর যাব।

    বড়কর্তা শুনিয়া খুশি হইয়া বলিলেন–রাণাঘাটের প্ল্যাটফর্মের সে নতুন হোটেল আপনার? বেশ, বেশ। আমরা ব্যবসাদার মানুষ ঠাকুরমশায়, এইটে বুঝি যে চাকরি করে কেউ কখনও উন্নতি করতে পারে না। উন্নতি আছে ব্যবসাতে, তা সে যে কোন ব্যবসাই হোক। আপনি ভাল রাঁধেন, ওই হোটেলের ব্যবসাই আপনার ঠিকমত ব্যবসা–যেটা যে বোঝে বা জানে। উন্নতি করবেন আপনি।

    আসিবার সময় ইহারা হাজারিকে এক জোড়া ধুতি উড়ানি দিল এবং প্রাপ্য বেতন যাহা বাকী ছিল সব চুকাইয়া দিল। হাজারি বেতন সইতে আসে নাই, কিন্তু উহা তাহার বলা সাজে না। সম্মানের সহিত হাত পাতিয়া সে টাকা ও কাপড় গ্রহণ করিয়া গোপালনগর হইতে বিদায় লইল।

    .

    রাণাঘাট স্টেশনে নামিতেই নরেনের সঙ্গে দেখা। সে বলিল–কোথায় গিয়েছিলেন মামাবাবু? বাড়ীসুদ্ধ সব ভেবে খুন। কাল রেলওয়ে ইন্সপেক্টর এসেছিল, আমাদের হোটেল দেখে খুব খুশি হয়ে গিয়েছে। স্টেশনের রিপোর্ট বইতে বেশ ভাল লিখেছে।

    –টেঁপি ভাল আছে?

    –হ্যাঁ, কাল আমরা সব টকি দেখতে গেলাম মামাবাবু। মামীমা, আমি আর আশালতা। মামীমা টকি দেখে খুব খুশি।

    টেঁপির কথাটা সে মামীমার উপর দিয়াই চালাইয়া দিল।

    –আর একটা কথা মামাবাবু–

    –কাল পদ্মঝি এসে আপনাদের বাসায় মামীমার সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ করে গেল। আর কুসুমদিদি একবার আপনাকে দেখা করতে বলেছে। উনিও কাল এসেছিলেন।

    হাজারি বাড়ী ঢুকিতেই টেঁপি ওরফে আশালতা এবং তাহার মা দুজনেই টকির গল্পে মুখর হইয়া উঠিল। জীবনে এই প্রথম, তাহারা কখনও ও-জিনিসের কল্পনাই করে নাই–আবার একদিন দেখিতেই হইবে–এইবার কিন্তু টেঁপি বাবাকে সঙ্গে না লইয়া ছাড়িবে না। কাজ তো সব সময়েই আছে, একদিনও কি সময় করিয়া যাইতে নাই?

    –কি গান গাইলে! চমৎকার গান, বাবা। আমি দুটো শিখে ফেলেছি।

    –কি গান রে?

    –একটা হোল তোমারি পথ চেয়ে থাকব বসে চিরদিন–চমৎকার সুর বাবা। শুনবে? বেশ গাইতে পারি এটা–

    –থাক এখন আর দরকার নেই। অন্য সময়…এখন একটু কাজ আছে।

    টেঁপি মনক্ষুণ্ণ হইল। এমন গানটা বাবাকে শোনাইতে পারিলে খুশি হইত। তা নয় বাবার সব সময় কেবল কাজ আর কাজ!

    টেঁপির মা বলিল–ওগো, কাল পল্প বলে একটা মেয়ে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। বেশ লোকটা। ওদের হোটেলে তুমি নাকি কাজ করতে!…

    হাজারি আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিল–কি বললে পদ্মদিদি?

    –গল্প করলে বসে, পান সেজে দিলাম, খেলে। ওদের সে হোটেল উঠে যাচ্ছে। আর চলে না, এই সব বলে।

    হাজারি এখনও পদ্মকে সম্ভ্রমের চোখে দেখে। পদ্মদিদি–সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ পদ্মদিদি তাহার বাড়ীতে আসিয়াছিল বেড়াইতে– তাহার স্ত্রীর সহিত যাচিয়া আলাপ করিতে–হাজারি নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বিবেচনা করিল–-পদ্মঝি তাহার বাড়ীতে পদধূলি দিয়া যেন তাহাকে কৃতার্থ করিয়া দিয়া গিয়াছে।

    টেঁপি বলিল–বাবা, নরেনদাদাকে আমি নেমন্তন্ন করেছি। নয়েন-দা বলেছে আমাকে মাংস রেঁধে খাওয়াতে হবে। তুমি মাংস এনে দাও

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদেবদাস
    Next Article ব্যবধান

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }