Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঈশ্বরের বাগান – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1863 Mins Read0

    ঈশ্বরের বাগান – ২৭

    ।। সাতাশ।।

    অতীশ চুপি চুপি চোরের মতো পাতাবাহার গাছগুলোর সামনে এসে দাঁড়াল। আবছা অন্ধকার। অন্দর মহলের গাড়িবারান্দায় একটা আলো জ্বালা থাকে—আজ তাও জ্বলছে না। রাজবাড়িতে ঢুকতেই কেমন ভয় করছিল তার। একমাস ছুটি কাটিয়ে সে রাতের ট্রেনে ফিরে এসেছে। এই একমাস নির্মলার একটা চিঠি ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ তার কোনও খোঁজখবর করেনি। রাজার সিট মেটালের চার্জে সে আছে, সে না থাকলে কারখানা অচল, এমন একটা ধারণা কারা যেন ষড়যন্ত্র করে তার মাথা থেকে সাফ করে দিয়েছে। সে ফালতু এই বোধটা অহরহ পীড়া দিচ্ছিল। আশঙ্কা বার বার, কাজটা তার আছে ত! সনৎবাবু রাধিকাবাবু মিলে যদি রাজার কানে তুলে দেয়, একটা গোঁয়ার লোককে দিয়ে আপনি কারখানাটাকে রসাতলে দিচ্ছিলেন, কুম্ভ কত সহজে তা একমাসেই কব্জা করে এনেছে! কারখানা চালাবেন, অথচ কারচুপি থাকবে না সে কখনও হয়! কুম্ভ হয়ত এ-মাসের স্ক্র্যাপ বিক্রির সবটা টাকাই রাজার হাতে দিয়েছে। রাজাকে আবার লোভে ফেলে দিতে পারলেই তার মজা। সারাটা ট্রেনে এমন এক আশঙ্কা কুট কুট করে কামড়াচ্ছিল। পাতাবাহার গাছগুলির পাশে এসে দাঁড়াতেই ভয়—এখুনি বুঝি আর্চির প্রেতাত্মা খিলখিল করে হেসে উঠবে। কেমন, বোঝ এবার

    গাছগুলি তেমনি সজীব। সে পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখবে ভাবল। এই গাছগুলোতেই এক রাতে আর্চির ঘোলাটে কুয়াশার মতো অবয়ব জল হয়ে মিশে গিয়েছিল। সেই জল হাতে লাগে কিনা, জলটা থাকলেই মনে হবে, সে এখনও আছে, তাকে সারাজীবন তাড়া করবে বলে। পোকামাকড়ের মতো পাতার গায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে এবং পোকামাকড় মনে হতেই গাটা তার শিরশির করে উঠল। পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখার সাহস পর্যন্ত হারিয়েছে। সে ভাবছিল তালা খুলে কি দেখবে কে জানে! একমাস একটা বাসা খালি পড়ে থাকলে কত কিছুর উপদ্রব দেখা দিতে পারে। তক্ষুনি বারোটার ঘণ্টা বাজল রাজবাড়ির। সে যে ভয় পেলে ছুটে পালাবে তার পথও এখন বন্ধ। রাজবাড়ির বড় ফটক, ছোট ফটক সব বন্ধ হয়ে গেল। এত উঁচু পাঁচিল টপকে সে শত মাথা কুটলেও আর পালাতে পারবে না। আর্চির প্রেতাত্মা আজ তাকে একা পেয়ে আবার নাচানাচি শুরু করে দেবে।

    নির্মলা টুটুল মিণ্টু কাছে থাকলে তার এতটা ভয় লাগত না। একটা মাস সে বাড়িতেও খুব ভাল ছিল না। এক জীবন থেকে অন্য জীবন, এক জীবনে বাবা মা ভাই বোনেই তার চারপাশটা ভরে থাকত। অন্য জীবনে এরা। বাড়িতেও সে বড় নিঃসঙ্গ বোধ করেছে। কি যেন নেই। টুটুল নেই মিণ্টু নেই, কেউ বাবা বাবা করে না। কেমন আন্না মনে হচ্ছিল সব কিছু। সে যেন শেষ দিকে জোরজার করে বাড়িতে কটা দিন কাটিয়ে দিয়েছে। কতক্ষণে স্ত্রী পুত্র কন্যার মুখ দেখবে এই আকাঙ্ক্ষায় কোনওরকমে চুপচাপ কালাতিপাত করছে। আরও একটা রহস্য তাকে পীড়া দিচ্ছিল। চারুর অন্তর্ধান এখনও রহস্যই হয়ে আছে। স্বপ্নের মতো। সে বিশ্বাস করতে পারছে না সত্যি চারু নামে এক যুবতী তাকে ট্রেনে সঙ্গ দিয়েছিল। ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলে যা হয়—নির্মলার কাছ থেকে তার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হচ্ছিল না, চারুর মতো কোনো যুবতীর স্বপ্নে সে বিভোর ছিল। পিয়ারিলালকে দেখলেও সে বলতে পারবে না, চারুর খোঁজ পেয়েছেন তো? স্টেশনে নামার আগে দেখলাম কামরায় নেই। কি যে হল! যদি পিয়ারিলাল ভাবে, বাবুর মাথায় গোলমাল আছে। চারুটা কে? সে কি যে করে! এবং এ ভাবে সে একটা ছায়া হয়ে যাচ্ছিল দরজাটার সামনে। রাজবাড়ির ভেতরে একটা কুকুরের ডাক শুনতে পেল। বাঘের মতো গর্জন করছে। সে সংবিৎ ফিরে পেয়ে এক লাফে সিঁড়িতে উঠে গেল, তালা খুলতেই আশ্চর্য একটা সুন্দর গন্ধ নাকে এসে লাগল। মনে হল ভিতরে কেউ সুগন্ধ ধূপবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে। সে আলো জ্বালতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছে।

    আলোটা জ্বালতেই করিডর স্পষ্ট হয়ে উঠল। তার এই বাসাবাড়িতে খুব বেশি কিছু আসবাবপত্র নেই। নতুন সংসার হলে যা হয়। কিছু স্টিলের বাসনকোসন। দুটো তক্তপোশ, একটা চেয়ার টেবিল। বাক্‌স পেটরা যৎসামান্য। নির্মলার দামী জামাকাপড় সঙ্গেই নিয়েছে। ওর যৎসামান্য অলঙ্কারও। ডুপ্লিকেট চাবি রাজবাড়ির অফিসে জমা রাখার নিয়ম। সেই মতোই সব করা আছে। আলো জ্বালাতেই কেমন আর এক বিভ্রমে পড়ে গেল। সে ঠিকমতো ঠিক জায়গায় এয়েছে তো? এই বাসাবাড়িটা তার না অন্য কারোর। সে এটা কি দেখছে! দেয়ালের রঙ পাল্টে গেছে। মেঝে অন্যরকম। ছেঁড়া ইলেকট্রিকের তার ঝুলছে না। একেবারে এইমাত্র রাজমিস্ত্রী কাজ সেরে বাড়ি গেছে মতো। যেন এই মাত্ৰ কেউ কোনও গন্ধ স্প্রে করে দিয়ে গেছে। আর তক্ষুনি মনে হল গন্ধটা সে রাজবাড়ির অন্দরে ঢুকলেই পায়। সে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। করিডর ধরে যেতে যেতে সব খুঁটিয়ে দেখছিল। সামনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ঘরের আলো জ্বেলে আরও তাজ্জব হয়ে গেল। তার পুরানো চেয়ার টেবিল তক্তপোশ কিছু নেই। নতুন সোফাসেট, বাতিদান, খাট একেবারে রাজসিক কান্ড। সে বিশ্বাস করতে পারছিল না—বাঁ দিকের দরজাটা খুললে একটা চাতাল, সেটা ঠিক আছে কি না, যেন না থাকলে বুঝতে হবে, সে অন্য কারো বাড়িতে ঢুকে গেছে। দরজা খুলতেই চাতালে আলোটা লাফ দিয়ে পড়ল। পাশে করগেটেড টিনের বেড়া। না আগের মতোই জায়গাটা। তারই বাসা। বসার ঘরটা পার হয়ে শোবার ঘরটায় ঢুকে দেখল তার পুরানো আসবাবপত্র সব ওখানে স্তূপীকৃত করা আছে। তার বসার ঘর পর্যন্ত, শুধু বসার কেন, রাতে পাশের যে তক্তপোশে শোয়—তক্তপোশটাও নির্মলার ঘরটায় রেখে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছুতেই হাত পড়েনি।

    সোফায় নীল রঙের ভেলভেটের পর্দা। সানমাইকার সেন্টার টেবিল। একটা নতুন কারুকাজ করা বাতিদান। পাশে কোণায় ছোট্ট টিপয় তাতে কালো পাথরের একটা ছোট্ট দেবীমূর্তি। তারই ফাঁক ফোকরে চারটে ধূপবাতির কাঠি। পুড়ে শেষ হয়ে আছে। দরজা জানালা বন্ধ বলে একটা চাপা গন্ধ ঘরে করিডরে ওড়াওড়ি করছে। গন্ধে কেমন তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। উঠে গিয়ে সব জানালা খুলে দিতেই দেখল করিডর বরাবর অন্দরমহলের দিকে যে দরজা আছে—সেটা হাট করে খোলা। এতদিন ওটা ওদিক থেকে বন্ধ থাকত। তার দিক থেকে কোন বন্ধ করার ব্যবস্থা নেই। অন্দর থেকে ইচ্ছেমতো খোলা যায় বন্ধ করা যায়। তার অনুপস্থিতিতে সেটা কে খুলে দিয়েছে। যে আসে সবার অলক্ষ্যে ঐ দরজা দিয়েই আসে। এবং সেটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।

    সে দরজায় মাথা গলিয়ে রাজবাড়ির অন্দরমহল দেখার চেষ্টা করল। এদিকটা সে কোনদিন দেখেনি। গাড়িবারান্দায় কলাপসিবিল গেট। বড় তালা ঝুলছে। অন্দরমহলে ঢোকার মুখে একটি লাল রঙের অল্প আলোর বাতি জ্বলছে। দেখল ওদিকে ঠিক সিঁড়ির মুখে বড় পেল্লাই দরজা। ওটা দিয়ে সোজা অনেকগুলো ঘর পার হয়ে গেলে রাজেনদার ড্রইংরুম। ড্রইংরুমের ভেতর দিয়েই শঙ্খ তাকে দোতলায় দু’বার অমলার ঘরে নিয়ে গেছিল। এদিকের সিঁড়ি ধরে উঠে গেলে বোধ হয় সেই ঘরটা আরও কাছে। সে খুব সন্তর্পণে দরজাটা বন্ধ করে দিল।

    এতটুকু শব্দে কেউ জেগে যেতে পারে। দরজা বন্ধ করে ফিরে আসবে ভাবল। অবাক, আবার দরজার পাল্লা ফাঁক হয়ে গেল। কেউ যেন ওদিক থেকে সামান্য ঠেলে দরজাটা খুলে দিচ্ছে। এত রাতে কে আসবে! দুমবার এদিককার কোনও ঘরে থাকে হয়তো। শঙ্খও থাকতে পারে। কিংবা অন্য কোনও ঝি চাকর। তারা গোপনে দরজা ঠেলে দিয়ে সরে যাবে কেন! সে ফের দরজায় মাথা গলাল। না কেউ নেই। আবছা মতো অন্ধকারে অন্দরের রান্নাবাড়ির পথে দুটো বড় বড় থাম বাদে কিছু চোখে পড়ল না। বাতাসে হতে পারে। গাল ঠেকিয়ে হাওয়া ঢুকছে কিনা পরখ করল। কম বেশি হাওয়া সব সময়ই থাকে। হাওয়ায় জোর নেই বললেই চলে। সে ফের দরজার পাল্লা ঠেলে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকল। না আর খুলছে না। বন্ধই আছে। না থাকলে আবার কপালে ঘাম দেখা দিত। মিনিট কয়েক দাঁড়িয়ে থাকার পর সে কিছুটা নিশ্চিন্ত। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়া। শোবার ঘরের দরজাটা ভাল করে বন্ধ করে শোবে ভাবল। নাহলে করিডর ধরে যে কেউ তার দরজার সামনে হাজির হতে পারে। কেন জানি মনে হচ্ছে চারুর ঘটনার পর আর্চির প্রেতাত্মার চেয়ে সেটাও কম মারাত্মক না। উত্তেজনার মুহূর্তে সে নির্মলার প্রতি বড় অবিশ্বাসের কাজ করেছে।

    বাথরুমের দরজাটা করিডর বরাবর। বাথরুমে করিডর দিয়েও ঢোকা যায়, ওদিকের চাতাল দিয়েও ঢোকা যায়। সে পাজামা গেঞ্জী বের করার আগে সোফায় এলিয়ে দিল শরীর। কেমন আর যেন পারছে না। করিডরের দিকের দরজা বন্ধ করে দিল। চাতালের দিকের দরজাটা খোলা। করোগেটেড টিনের উঁচু পাঁচিল তোলা আছে বলে ওদিকের বাগান, পুকুর কিছুই চোখে দেখা যায় না। কান পাতলে ঝিঁঝিপোকার ডাক শোনা যায় পর্যন্ত। ঘরে বাতিদানে দু’রকমের ডুম। সে নীল রঙের আলোটা জ্বালতে পারছে না। মায়াবী যা কিছু সবই মনে হয় দূরাতীত কোনও রহস্যে ঢাকা। আর যা হয় একা থাকলেই—পৃথিবীর সুদূরতম প্রান্তে কে যেন কথা কয়ে ওঠে। তার এখন এ-সব থেকে দূরে থাকা দরকার আর কারো জন্য না হলেও মিণ্টু টুটুলের জন্য।

    একমাস ছুটি ভোগ করে কিছুটা চাঙ্গা হবে ভেবেছিল অতীশ। অথচ চোখ মুখ দেখলে তার কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রায় মরা মানুষের মতো সোফার উপর উবু হয়ে পড়ে আছে। মাথার মধ্যে কেবল অপরাধবোধ ঢুকে গেলে যা হয়। ঘিলু ক্রমেই ভারি হয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষের ঘিলুতে যদি ক্রমাগত ওজন চাপিয়ে দেওয়া হয় তবে সে স্বাভাবিক থাকে কি করে। চারু তাকে আর এক রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে গেছে। এখানে এসে ভেবেছিল, সব ঠিকঠাক দেখবে। তাও নেই। মানসদার অস্বাভাবিক আচরণের জন্য কে দায়ী! এই যে তার অনুপস্থিতিতে অমলা ঘর দোরের চেহারা পাল্টে দিল, সেটা কি জন্য! অমলার মা হবার অস্বাভাবিক আগ্রহ। দরজা কে খুলে রাখে। এটাও এক বিপত্তি। সে ফের উঠে গিয়ে যে দেখবে, দরজাটা কেউ খুলে দিয়ে গেল কিনা তারও আর সাহস নেই। দেখতে হবে ভয়ে সামনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। যা হয়, সকালে দেখবে। রাতটাই তাকে যত বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দেয়। কাল অফিস করেই নির্মলাকে আনতে চলে যাবে। এখন শুধু ভাবছে কোনরকমে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারলেই সবার জারিজুরি শেষ। সে উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল। ভাল করে চান করল। তারপর গা মুছে পাজামা পরতেই করিডরের দরজার ঘুলঘুলিতে কী চোখে পড়ল! আর ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেমন সিটিয়ে গেল। করিডরের শেষপ্রান্তে অন্দরমহলের দরজাটা ফের হাট করে খোলা। তার দু-হাঁটুতে কারা যেন হাতুড়ি ঠুকছে। আর এ সময়ে কেমন ক্ষিপ্ত হয়ে গেল সে। বার বার অলক্ষ্যে কে সে দরজা ঠেলে দিচ্ছে!

    সোজা ঘরে এসে সেণ্টার টেবিলটা তুলে নিল। এদিকের দরজা খুলে ছুটে গেল। তারপর অন্দরমহলের দরজা বন্ধ করে সেন্টার টেবিলটা চাপা দিল। ফিরে আসতে না আসতেই ওটা হড়কে পড়ে গেল। ভয়ঙ্কর শব্দে বুঝি সারা বাড়ি জেগে যাচ্ছে। সে বলল, সব তোমার কাজ—ঠিক আছে—কত নির্যাতন করবে! সে সোফাটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গায়ে কোত্থেকে অসুরের মতো প্রবল এক দানব জেগে উঠেছে। সেন্টার টেবিলের ওপর সোফাটা দমাস করে ফেলে দিল! আর পারবে না। পারতেও পারে। সে ছুটে গিয়ে পাশাপাশি রাখা কোচ দুটো তুলে আনল একে একে। ওগুলো চাপিয়ে বলল, এবার! খোল! দেখি কত মুরদ। দু-পা ফিরে আসতেই মনে হল না সে সব পারে। সঙ্গে সঙ্গে খাট থেকে তোষক জাজিম তুলে নিল। দরজার ওপর সব ভার চাপিয়ে দরকার হয় সারারাত নিজে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। তবু দরজাটা মর্জিমতো খুলে যাবে সে হতে দেবে না। একসময় দেখা গেল, ঘরে আর কিছু নেই। সব ফাঁকা। শুধু দেবীমূর্তিটা। ধীরে ধীরে ওটা বনি হয়ে তার হাত ধরে ফেলল, ছোটবাবু প্লিজ, প্লিজ।

    অতীশ কেমন স্বাভাবিক হয়ে গেল, সত্যি এ-সব সে কি করছে! সে শুধু দু-হাতে মুখ ঢেকে বনির পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল—বনি আমি কি হয়ে যাচ্ছি। বনি চারু আমাকে নষ্ট করে দিয়ে গেল। নির্মলাকে মুখ দেখাব কি করে!

    বনির মুখে আশ্চর্য হাসি। সে ধীরে ধীরে বলল, ছোটবাবু লাভ ইজ এ ম্যাগনিফিসেন্ট এগজিলারেটিং ট্রিপ, অ্যান্ড হোয়েন ইট ডাইজ—ইট ইজ ওর্স দ্যান অলমোস্ট এনি আদার কাইন্ড অফ ডেথ।

    অতীশ বলল, নির্মলা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে! আমাকে একা কাছে দেখলে ভয় পায়। ও আমাকে একা ফেলে বাপের বাড়ি চলে গেল। অতীশ যেন এক নিরুপায় বালকের মতো বনির দু’হাঁটুর মধ্যে মুখ রেখে কথাগুলো বলে যাচ্ছে। আমি কি করব বনি। ওর অসুখ সারছে না কেন

    বনি এবারেও মৃদু হাসল। তারপর গভীর ঘন এক সবুজ পৃথিবী থেকে যেন তার কথা ভেসে আসছে।—ভিক্টরি, ডিফিট, জয়, পেইন, বার্থ, ডেথ, লাইফ ইজ অল অফ দিজ। তুমি ঘাবড়ে যেও না ছোটবাবু। তোমার মিণ্টু, টুটুল আছে। তোমার কিছু হলে ওরা যে একা হয়ে যাবে।

    —চারুটা কে?

    —তোমার প্রত্যাশা।

    —চারু বলে তবে কেউ আসে নি? আমার কিছু হয় নি! বাবা যে টের পেয়ে বলল, অন্য নারীগমনেও কোন দোষের হয় না।

    বনি গাঢ় স্বরে বলল, ছোটবাবু নো ওয়ান লাইটস এ ল্যাম্প অ্যান্ড হাইডস ইট। ইনস্টিড, হি পুটস ইট অন অ্যা ল্যাম্পস্ট্যান্ড টু গিভ লাইট টু অল হু এনটার দ্য রুম।

    কেউ যেন অলক্ষ্যে তখন বলছে, ঘুমের মধ্যে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতে পার। তার প্রতি তোমার নেশা জন্মেছে।

    একথা বলছ কেন? কে এমন ভাবে কথা বলছে!

    যাবতীয় সুন্দরীরা তোমার মাথায় নাচানাচি করে। অন্য নারীগমনে স্পৃহা বাড়ছে।

    না বাড়ছে না। মিছে কথা। তুমি কে, কে!

    নিজের সঙ্গে তঞ্চকতা। ছোটবাবু এ মুহূর্তে চারু দরজায় টোকা মারলে কি করবে?

    দরজা খুলব না। তুমি কে, কে?

    তুমি পারবে? তুমি কি নবীন সন্ন্যাসী? আই অ্যাম দ্য স্যালি হিগিন্‌স

    আমাকে পারতে হবে। ব্যভিচার থেকে আত্মরক্ষা করতেই হবে! হিগিনস্ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

    আসলে এই ব্যভিচার শব্দটাই অতীশের হয়েছে কাল। আজীবন যে এক সংস্কার তার মাথা নেড়া করে ভুতুড়ে ছায়া তৈরি করে গেছে সে থেকে মুক্ত হতে পারছে না। সে বলল, আমি খুন করেছি, আমি জানি শরীরের এই পীড়ন আমাকে একদিন মুক্তি দেবে। নানাভাবে মুক্তির পথ খুঁজছি। বাবা কিছু টের পেয়ে গেছেন, বাবা এখন আমার সব কাজই সমর্থন করে যাবেন। এমনকি মানুষ হত্যার পাপও। বাবার কাছে আমার সব কাজই তেনার ইচ্ছেতে হয়। তিনিই করিয়ে নিয়েছেন। নিজের সব দায় বাবা ঈশ্বরের উপর অর্পণ করার কথা বলছেন। আমার জন্মলাভ থেকে বেঁচে থাকা, বড় হওয়া, কাজ অকাজ সবই তাঁর ইচ্ছায়। যাতে আমি নিরালম্ব হয়ে না পড়ি বাবা তার জন্য প্রাণপণ যুঝে যাচ্ছেন। নিরালম্ব মানুষের কোন আশ্রয় থাকে না। সে বৃক্ষহীন হয়ে বাঁচে! বাবা সেটা টের পেয়ে গেছেন। আসার সময় বলেছেন, পবিত্র হও। দূরব্রত হও। ব্রহ্মপরায়ণ হও। শরীরের উপর দিয়ে তোমার অনেক ভার চলে গেছে। তাই ঐ রকম হয়েছ। যে ব্রহ্মজ্ঞান সবাইকে জ্ঞানদান করে তার তুমি অনুসরণ কর। এই যে তাঁর লীলাখেলা, আকাশ পৃথিবী জলবায়ু, শস্যক্ষেত্র, নদীর ঢেউ, ঝড়ের গর্জন, জন্মমৃত্যু, কাম ক্রোধ কোনটাই তাঁর আস্ফালন নয়, সবই তার নিরন্তর প্রকাশ। মনে রেখ মৃত্যুর অতীতেও অমৃত আছে। সেই অমৃত জীবনে আছে। জীবন ভোগেও আছে। তুমি তোমার সংসারে সেই অমৃতকে বহন কর। বাবার এইসব কথার মধ্যে কোথায় যেন জাদু আছে। তার পীড়ন এবং উত্তেজনা দুই-ই কমে গেল। ঘর একেবারে ফাঁকা! চারুর কাছে তার নির্লজ্জ বেহায়া চেহারাটা আবার এখানে ফুটে উঠুক সে তা চায় না। আসলে তার অপরাধবোধ তীব্র তীক্ষ্ণ হচ্ছিল। বাড়িতে শেষদিকে অসহায় বোধ করেছে এই ভেবে—নির্মলার কাছে তার দাবি করার মতো কিছু থাকল না। চারু তার সব অধিকার হরণ করে নিয়েছে। এবং মানুষের যা হয় বার বার নিজের কাছেই নিজের কৈফিয়ত। তার আত্মশক্তি এমনিতেই আর্চি দিন দিন দুর্বল করে দিচ্ছে। তার ওপর যদি অন্য অপরাধবোধ তাকে প্রবলভাবে আক্রমণ করে তবে সে স্থির থাকতে পারবে না। এবং এসবের সঙ্গে কেন জানি মনে হয় সংসারের মঙ্গল-অমঙ্গল নিহিত আছে। আর যা হয় সব প্রলোভন তৈরি করে দেয় যেন—আর্চির প্রতিশোধ স্পৃহা। সে এসব থেকে তাকে, নির্মলাকে, মিণ্টু টুটুলকে রক্ষা করতে চায়। অমলা সোজাসুজি তার ঘরের সামনে কোন গভীর রাতে চলে আসতে পারে, এবং দরজায় টোকা মারতে পারে, বড় ভয় তাকে। ও ঘরে নির্মলা টুটুল মিণ্টু শুয়ে থাকবে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকবে, পালিয়ে সে অমলার সঙ্গে ফের আবার কোনোও শেওলা ধরা পিচ্ছিল ঘরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এমনিতেই চারু তাকে কিছুটা অস্থির করে রেখে গেছে। বাকিটা অমলার কাজ হবে তাকে উন্মত্ত করে তোলা। এই সব ভাবনাই তাকে মাথার মধ্যে পেরেক ঠুকে দিচ্ছিল। সে যে এতক্ষণ উন্মত্তের মতো দরজায় গিয়ে ও সব ফেলে রেখে এসেছে এটা তারই প্রতিক্রিয়া। দরজাটা বন্ধ করে দিতে পারায় কিছুটা আরাম বোধ করছে। কারণ সে জানে, অমলা কাছে এসে দাঁড়ালে, তার ক্ষমতা নেই নিজেকে সামলে রাখে। নির্মলার অসুস্থতা তাকে যে দৈহিক পীড়নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে অমলা ঠিক টের পেয়ে গেছে। সোফা কোচ দিয়ে বাড়িঘর সাজিয়ে দেওয়াটাই তার প্রথম সংকেত।

    তারপরই তার নিজের সঙ্গে কথাপকথন শুরু হয়ে যায়। যাক নিশ্চিন্ত। তাহলে অতীশবাবু তুমি এখন শুয়ে পড়তে পার।

    তা পারি। ঘুম আসবে তো?

    ভয় কি! দরজা বন্ধ।

    সে শুয়ে পড়ল।

    ঘুম ভাঙল বেলা করে। ঠুকঠুক করে কেউ কড়া নাড়ছে। দরজা বন্ধ বলে শব্দটা তত তীব্র নয়। দরজা খুললে লম্বা বারান্দা। কিছুটা হেঁটে গেলে বাইরে বের হবার দরজা। জানালায় পাতাবাহারের গাছ হাওয়ায় দুলছে! সে বলল, কে?

    —আমি কুম্ভ।

    ঠিক খবর পেয়ে গেছে। দরজা খুলতেই মনে হল লোকটাকে ঢুকতে দেওয়া এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। বড় ধূর্ত। টের পাবে সে কাল রাতে ভাল ছিল না। সোফা কোচ বাতিদান খাট জাজিম তোষক সব অন্দরের দরজায় গাদা মেরে রেখে দিয়েছে। ভেতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবে, সর্বত্র ঘরের লন্ডভন্ড অবস্থা। দেখলেই দশটা প্রশ্ন। সে বলল, যাচ্ছি।

    কুম্ভ মুখে ব্রাশ দিয়েই চলে এসেছে। পরনে নীলরঙের লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি। মুখ ভর্তি পেস্টের ফেনা। কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না বলে সিঁড়ির পাশের নর্দমায় থুতু ফেলছে। কুম্ভ যাতে ভেতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে অতীশ।

    —শোনলাম অনেক রাতে ফিরেছেন!

    —ট্রেন লেট ছিল।

    —কি খেলেন এসে?

    —কিছু না।

    —হাসি আপনার জন্য চায়ের জল বসিয়ে দিয়েছে।

    অতীশের মনে হল সে অযথা মানুষ সম্পর্কে কিছু খারাপ ধারণা পুষে রাখে। সে রাতে খেয়েছে কিনা কুম্ভবাবু কত আগ্রহের সঙ্গে জানতে চাইল। হাসিরাণী তার জন্য সকাল সকাল চায়ের জল বসিয়ে রেখেছে। আপাতত কুম্ভবাবুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য দরজা বন্ধ করে দেবার আগে বলল, হাত মুখ ধুয়ে যাচ্ছি। আপনি যান। আমি আসছি।

    কুম্ভ বলল, অনেক কথা আছে। তাড়াতাড়ি আসুন।

    দরজা বন্ধ করে ঘুরে ডানদিকে তাকাতেই সে বিস্ময়ে হতবাক। ওখানে কিছু পড়ে নেই। সব ফাঁকা। দরজাটা সেই আগের মতো অন্দর থেকে বন্ধ। ওর মাথাটা কেমন করতে থাকল। কাল রাতে সে ঠিক ছিল তো। সব কিছু অতর্কিতে অদৃশ্য হয়ে যায় কি করে! চারুর মতো খাট জাজিম তোষক সব অদৃশ্য হয়ে গেল! সে কেমন বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। সকালে উঠে কুম্ভবাবুর সাড়া পেয়েই সে ভেবেছিল—এটা তার বাড়াবাড়ি। এ বাড়িতে অমলাই তার নিজের মানুষ। সে যদি তার সুখ- সুবিধার জন্য একটু কিছু করে থাকে তবে তা দোষের হবে কেন। অমলার এটা অন্য এক জীবন। তাকে দেখলে সে শৈশবের স্মৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে। এতে এক রকমের নাড়ির টান সৃষ্টি হবারই কথা। আজীবন মানুষ রুপোর কৌটায় সোনার ভ্রমর পুরে শৈশব থেকে বড় হয়। সেই সোনার ভ্রমর মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখারও সখ মানুষের। ওকে দেখলে বোধহয় অমলার সেই ইচ্ছেটা জাগে। তখনই অমলার জন্য তার কেমন মায়া বাড়ে। সে ভেবেছিল, যেখানে যা আছে, সব আবার ঠিক সাজিয়ে রেখে দেবে। দরজাটা খুলে যায়, অফিসে জানালেই বাড়ির মিস্ত্রি এসে ঠিক করে দিয়ে যাবে। কুম্ভকে সে জন্য দরজায় আটকে রেখেছিল! কিন্তু এখন এটা কি দেখছে! সে ছুটে গেছে। কোন মরীচিকা দেখছে না তো। দরজা টানাটানি করে দেখল, বিন্দুমাত্র সেটা আল্লা করা যাচ্ছে না। আগের মতো নিথর নিঃশব্দ এবং সঙ্গে এক ভয়াবহ দৈব যেন দরজাটায় ভর করে দাঁড়িয়ে আছে।

    সে কেমন চিৎকার করে উঠল, আমার অমন হয় কেন? আমি কি? আমার কি হচ্ছে? মরীচিকা আমাকে গ্রাস করে কেন! তারপরই মনে হল, রাজবাড়ির অন্দর থেকে কেউ ছুটে আসতে পারে। ওদিকের দরজায় একটা মুখও দেখা গেল। দুমবার দরজায় ধাক্কা মারছে। সে নিজেকে সংযত করে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দুমবার অপলকে ওকে দেখছে। দেখতে দেখতে বলল, হল্লা ভেতরে?

    সে বলল, নাতো!

    —কে চিৎকার করছিল যেন।

    —এদিকে কিছু হয় নি।

    প্রাসাদটা এমন যে শব্দের প্রতিধ্বনি বড় বিচিত্রভাবে দিক পরিবর্তন করে। দুমবার চলে গেল। কিছুটা গিয়ে আবার কি ভেবে ফিরে এল।

    অতীশ দরজায় ঘোলা চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

    দুমবার বলল, বউরাণী মাইজীকে আজই নিয়ে আসতে বলেছে।

    অতীশের চোখ মুখ অমলার উপর কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। কিন্তু যদি সত্যি হয়, রাতে যা দেখেছে, সে মরীচিকা না হয়ে সত্যি হয়, হতেও তো পারে—ঘুমিয়ে পড়লে অমলা লোকজন দিয়ে সব দরজা থেকে সরিয়ে নিয়ে থাকে যদি—ছিঃ ছিঃ অমলা কী না ভাবল—অতীশ তুই এত ছোট হয়ে গেছিস! নিজের উপর তোর এতটুকু ভরসা নেই। অথবা যদি ভাবে, তোর এত অহংকার – আমার কিছুই তুই নিবি না। তোর দম্ভ একদিনে সোজা করে দিতে পারি জানিস।

    অতীশ বিড়বিড় করে বকতে বকতে যাচ্ছিল, তুমি সব পার অমলা। পার বলেই তোমাকে আমার এত ভয়। তোমার সম্পর্কে কেউ একটাও ভাল কথা বলে না। আমার বড় কষ্ট হয়। জমিদার বাড়ির ছাদে, ফুলপরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে, কী পবিত্র চোখ মুখ আমিই প্রথম ছুঁয়ে দেখেছিলাম, এবং নিরন্তর এক পাপবোধ সেই থেকে—পাপবোধ থেকে ভালবাসা—গভীর গোপন প্রেম—এক পাটাতন থেকে অন্য পাটাতনে, বনি থেকে নির্মলা, এক জাহাজ থেকে অন্য এক জাহাজে —কলকব্জা সব এক, নাট বোল্ট, ডেরিক উনইচ, মাস্তুল ইনজিনরুম সব এক—সেই চুল চোখ নাভিমূলে সেই দিব্য আলো—তবু ভয় তোমাকে—আমার আবার না জাহাজডুবী হয়। যদি ঘোরে পড়ে না থাকি, আর চারু যদি সত্যি হয় সেও এক অদৃশ্য হিমবাহ। অলক্ষ্যে যে কোন মুহূর্তে আমার জাহাজের তলাটা ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আমার ঈশ্বর নেই, বড় বৃক্ষ নেই—মিণ্টু, টুটুল বড় হচ্ছে—চারপাশে কেবল দুর্ঘটনার খবর, মৃত্যু হত্যা ধর্ষণ রাহাজানি, মিণ্টু টুটুল বড় হচ্ছে, ওদের নিরাপত্তার কথা অহরহ আমাকে কাতর করে। ভেতরে আর এক ফ্রন্ট—একটা মাস গেল একটা লাইন লেখা হয়নি, আমি যে কি হয়ে যাচ্ছি! বুঝতে পারি মানুষের জন্য একজন ঈশ্বর বড় দরকার। আমার শুধু প্রেতাত্মা সম্বল

    —দরজায় কে দাঁড়িয়ে! অ হাসি, এস এস।

    —চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কখন থেকে আমরা বসে আছি।

    অতীশ জামাটা গলিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। চোখ মুখ অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। সে বলল, যাচ্ছি। মুখ ধুয়ে যাচ্ছি। ফের সে ফিরে বাথরুমে ঢুকে ভাল করে চোখ মুখে জলের ঝাপটা দিল। মুখ মুছে আয়নায় মুখ দেখে যখন বুঝল, না তার চোখে মুখে কোনও অস্বাভাবিক দাগ লেগে নেই—বরং প্রশান্ত দেখাচ্ছে। সে নিজেই চেষ্টা করলে এটা পারে। অহেতুক দুর্বলতা আসলে তাকে দিন দিন পেয়ে বসেছে। সে বাইরে এসে দরজা টেনে দিল। তারপর পাতাবাহারের গাছগুলি পার হয়ে যাবার সময় দেখল কাবুলবাবুর জানালা খোলা। ভিতরে ফুল ভলিয়মে রেডিও চলছে। এরা কত সহজে বাঁচে। বাবার কথাই ঠিক—পাপ-পুণ্য বড় আপেক্ষিক ব্যাপার। মন থেকে সব মুছে ফেল। যদি একটা খারাপ কাজ করেই থাক জীবনের মহাভারত তাতে অশুদ্ধ হয়ে যায় না। দশটা ভাল কাজে তা পুষিয়ে যায়। সেই পাখি জোড়া খুন না করলে তিনি রামায়ণ লিখতে পারতেন না।

    আসলে সে বুঝছে মগজটা তার শান্ত থাকে না। কত চেষ্টা করেছে—একদন্ড সে কিছু চিন্তা না করে থাকবে। শজারুর মতো মগজের কাঁটা গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে—কিন্তু কখন যে কাঁটাগুলো সোজা হয়ে যায় আর বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে সব পাখি উড়ে এসে মগজে গেঁথে যায়। তারা পাখা ঝাপ্টায়—সে দেখল তখন মেসবাড়ির দরজায় কুম্ভবাবুর বাবা দাঁড়িয়ে। অফিসে বের হচ্ছেন। সাদা হাফ শার্ট গায়ে, আর পাটভাঙা ধুতি, পাম্পসু চকচক করছে। মাথায় টাকের আড়ালে যে কখানা চুল আছে ভারি সযত্নে তা পরিপাটি করা। বিপত্নীক প্রৌঢ় মানুষটা এখনও কত সৌখীন—কিসের আশায়!

    তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল অতীশ, বলল, দাদা ভাল আছেন?

    তুমি কেমন আছ আগে বল?

    এমন প্রশ্ন কেন? সে যে ভাল নেই তবে কি চাউর হয়ে গেছে। কাল সে রাতে যা হুলুস্থুল করে বেড়িয়েছে ঘরে, তা কি মানুষটার কানে উঠে গেছে। সে বেশ জোর দিয়ে বলল, ভাল আছি।

    —না বাবা?

    —ভাল আছেন।

    —যাও ভিতরে যাও। ওরা বসে আছে।

    অতীশ মাথা নুয়ে মেসবাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। বাঁ-দিকে মেস, ডানদিকের বারান্দায় উঠে গেলে কুম্ভবাবুর ঘরের দরজা। ঢোকার ঘরটাতেই কুম্ভবাবুর বাবা থাকে। দেয়ালে সর্বত্র ফটো। সবই মহারাজবাহাদুরের সঙ্গে। জীবনের সব গৌরব এবং অহংকার এই ফটোতে লটকে আছে। যে কেউ এই ঘরে ঢুকলেই যেন বুঝতে পারে আমরা এ পরিবারের তিন পুরুষের সঙ্গী। তুমি সেদিনের ছোকরা, এসেই সব তছনছ করে দেবে সেটা আমাদের সহ্য নাও হতে পারে।

    দরজাগুলো এদিককার ছোট। সে ঢোকার আগেই ভেতর থেকে কে যেন সাবধান করে দিল, লাগবে। মাতা নুয়ে ঢুকুন। সে লম্বা বলে আগে দু-একবার এ-বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে কপালে ঠেক খেয়েছে। একবার তো কপাল পটলের মতো ফুলে উঠেছিল। সে বেশ মাথা নিচু করে ঢুকতেই কুম্ভবাবু ভিতর থেকে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। এত খাতিরযত্ন, সে কিছুটা ফের দ্বিধায় পড়ে যাবে অবস্থায় দেখল হাসি ওর ঘর থেকে একটা মোড়া টেনে নিয়ে যাচ্ছে।—এদিকে আসুন।

    ভেতরে অনেকটা খোলামেলা জায়গা। বাড়িটার ছাদ অনেকটা এগিয়ে এদিকটায় একটা ছাউনি করে দিয়েছে। তার নিচেই হাসিরাণীর রান্নাঘর—নীল রঙের মিডসেফ, গ্যাসের উনুন, দেয়ালে সানমাইকার আলমারি—একেবারে হাল ফ্যাসনের রান্নাঘর। হাসির যাতে কোন কষ্ট না হয়, কারণ সংসারে হাসিরাণীর উপরই সব চাপ—দু-ভাই কলেজে যায়, বাড়িতে দিদি বোন মেসো মাসি দেশ থেকে এসে এখানেই থাকে খায়। হাসিরাণীকে এক হাতে সামলাতে হয়। কুম্ভবাবু বাবার সুপুত্র, হাসিরাণী বাবার লক্ষ্মী বৌমা—সংসারটা আগলে রাখায় কৃতজ্ঞতা বাড়ে—এবং কুম্ভবাবু জানে, বাবাকে খুশি রাখতে পারলে, একটা বড় অঙ্কের হিসাব তার মিলে যাবে। এগুলো মনের মধ্যে ক্রিয়া করতেই সে দেখল হাসিরাণী সকালেই বেশ সেজেছে। দেখতে হাসিরাণী সুন্দর। একটু গোলগাল এই যা। একটু ছোট মাপের শরীর—তবু এই হচ্ছে কুম্ভবাবুর অলৌকিক জলযান। বিয়ের পরই সফরে বের হয়ে পড়েছে। কত বন্দর, আর বর্ণমালা হাসিরাণীর নাকছাবির মধ্যে না জানি অদৃশ্য হয়ে আছে। সেই এক পাটাতন—সেই এক স্ক্রু বোল্ট নাট, সেই এক ইনজিন, এবং নাভিমূলে রহস্য। সকালবেলায় মুখে পাউডার কেন? চা আর মিষ্টির থালা সামনে নিয়ে কথাটা ভাবল অতীশ। কুম্ভবাবু এক নাগাড়ে কারখানার খবর দিয়ে যাচ্ছে। ই এস আই থেকে বেড পাওয়া গেছে। টিনের কোটার পারমিট পেয়ে গেছে। কারখানার পতিত জমিতে নতুন বিল্ডিংয়ের প্ল্যান হয়েছে। কেনাস্তারা বানাবার জান্য মেশিন খোঁজা হচ্ছে—এক কথায় কুমারবাহাদুর দু-হাতে টাকা ঢালতে রাজি হয়ে গেছেন। একমাসে এতটা—কুম্ভ আশা করেছিল অতীশবাবু খুব বাহবা দেবে। আসলে সবই হচ্ছে একজনের জন্যে—পিছনে বউরাণী না থাকলে নতুন শেয়ার ফ্লোট করার কথা যে আকাশকুসুম ভাবা তাও সে বলে গেল।

    অতীশ নিমকি খাচ্ছিল আর মাঝে মাঝে চোখ তুলে হাসিরাণীকে দেখছিল। এমন চোখে তাকাচ্ছিল যে হাসিরাণী সেটা বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে নি। যেন মানুষটা শুধু তাকে দেখছে না, তার অভ্যন্তর পর্যন্ত দেখছে। শরীরটা ঝিমঝিম করছিল। মানুষটাকে দু-বছর ধরে জানে বলেই ভয় কম—কুম্ভ টের পেলে ফের হয়ত সেই লক্ষ্মীর পট কেনার মতো শোরগোল তুলবে। সে অতীশকে অন্যমনস্ক করার জান্য বলল, চায়ে মিষ্টি ঠিক হয়েছে দাদা?

    অতীশ বলল, তুমি খুব সুন্দর হাসি।

    এ কি কথারে বাবা! অতীশ এবার কুম্ভর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি ভাগ্যবান কুম্ভবাবু। আপনার পাটাতন বড় মজবুত। হড়কাবার ভয় কম।

    অতীশের কথায় কুম্ভ প্রথমে সামান্য ঘাবড়ে গেল। সে অতীশবাবুর মুখ সবটা দেখতে পাচ্ছে না। ওরা দু’জনই পাশাপাশি বসেছে। দু’জনেরই মুখ হাসিরাণীর দিকে। অতীশের মুখের একাংশ চোখে পড়ছে। অতীশ ওর দিকে তাকিয়েও কথা বলছে না। দুটো করে মিষ্টি, ডিমের ওমলেট দু’পিস পাউরুটি হাসি নিমকি খেতে খুব পছন্দ করে, সঙ্গে সেজন্য তাও সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে এতক্ষণ যে কারখানার কথা বলে গেল তার একটা কথাও বুঝি কানে যায় নি! সে একা একমাসে কত করেছে তার একটা ফিরিস্তি দিচ্ছিল। অতীশবাবু খুশি হলে বউরাণী খুশি হবে। অতীশবাবুর একখানা সার্টিফিকেট তার এখন বড় জরুরী দরকার। কুম্ভ বুঝেছে বউরাণী থাকতে পেছনে লেগে কোনও কাজ হবে না। অতীশের অনুপস্থিতিতে সে যেখানে যা দিতে হয় দিয়ে থুয়ে কাজ বাগিয়ে এনেছে। তাতে তারও কিছু থাকে। থাকে বলেই দৌড়ঝাঁপ করা। সে দৌড়ঝাঁপ করার সময় আকারে ইঙ্গিতে এমন সাধু থাকার চেষ্টা করেছে যে, অতীশের মতো ওপরয়ালার সঙ্গে কাজ করতে গেলে এ-ছাড়া তার উপায় নেই। বউরাণীর সঙ্গে তার কোন হটলাইন নেই। সে কাবুলবাবুর মারফত হটলাইন একটা তৈরী করে নিয়েছে। একমাসে কম করে হলেও একশবার বলেছে, রাজার কপালগুণ ভাল, নাহলে এমন সং ভালমানুষ মেলা ভার। সে এ-ছাড়া কাজ বাগাতে পারত না। কারখানা যে লাভের মুখ দেখেছে সেটা মানুষটার সং আন্তরিক স্বভাবের জন্য এমন বলেছে কাবুলবাবুকে। সুতরাং রাজা চোখ বুজে টাকা ঢাললেও সব ঠিক ঠিক থাকবে এই ফুসলানোটা ক্রমাগত একমাস ধরে চালিয়ে গেছে। এখন ভয় সব না লোকটা তছনছ করে দেয়। যা একখানা এক বগ্‌গা স্বভাব, যে কোন মুহূর্তে বলে দিতে পারে—পতিত জমিটায় নতুন বিল্ডিং করে কি হবে? ক্যাপিটেল ইনভেস্টমেন্টের চেয়ে কারখানার এখন দরকার ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যালের। তা হলেই গেছে। নতুন বিল্ডিংয়ে যে টাকা লোটার ফন্দি করে রেখেছে সেটা যাবে। পুরানো বাতিল মেশিন কিনতে যে কমিশন থাকবে তাও যাবে। নতুন শেয়ার ফ্লোট করে টাকা হাতানোর ফন্দিটা লোকটা গোলমাল করে দিতে পারে। তক্কে তক্কে ছিল কখন আসবে। এবং জপানোর কাজটা হাসিরাণীকে সামনে রেখেই শুরু করা গেছিল। লোকটার মাথায় ভূত চেপে আছে সে সেটা বুঝবে কি করে। কারখানার কথায় পাটাতনের কথা আসে কি করে! সে বলল, দাদা আপিসে যাবার আগে এখানেই দুটো ডালভাত খেয়ে নেবেন। একসঙ্গে খেয়ে বের হয়ে যাব। সে বুঝতে পারছিল, লোকটাকে সহজে কাবু করা যাবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে। সে আর কারখানার কোন কথাতেই গেল না।

    অতীশ বলল, আচ্ছা কুম্ভবাবু, চারু বলে কাউকে আপনি চেনেন?

    কুম্ভ ভূত দেখার মতো কথাটাতে আঁতকে উঠল। লাইনে আনার জন্য একটা নর্দমার মধ্যে ঠেলে ফেলে দেবার ফন্দি বুঝি ধরা পড়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে যদি কথা ওঠে, মানুষটাতো সহজেই সব বলে দিতে পারে—কিছু বিশ্বাস নেই। কাবুলটাও জানে তার মাথার মধ্যে কূটবুদ্ধির একটা আড়ত আছে। বললেই বিশ্বাস করবে—পিয়ারিলালকে দিয়ে একটা বেশ্যা মাগী ধার করে এনে যড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল কুম্ভ। বেবাক ফাঁস করে দিলে দোষটা বউরাণী তাকে দেবে। এমন কি তার চাকরিটাও খতম হয়ে যেতে পারে। বউরাণীর পেয়ারের লোককে একটা বেশ্যা মাগী ধরিয়ে দেওয়া এ-বাড়িতে কেউ বরদাস্ত করবে না। অতীশবাবুর স্ত্রী রুগ্ন—হতাশ চোখ মুখ আর ভারি বিষণ্ন—এরই সুযোগে সে একটা রন্ধ্রপথ আবিষ্কারের চেষ্টায় ছিল। সেটা এমনভাবে হাঁ করে মুখ ব্যাদান করবে কল্পনাও করতে পারে নি। চারুর ব্যাপারে ঠিক তাকে সন্দেহ করছে। সে বলল, চারুটা আবার কে!

    —সেই! পিয়ারিলালের কাছে আজ একবার যাব। চারু সত্যি আছে কিনা, না চারু আর কিছু না বলে সেই মরীচিকা বুঝি, ভাববার সময় সে দেখল হাসিরাণী ঘরে ঢুকে মেয়ের কাঁথা পাল্টে দিচ্ছে। মেয়েটা বড় বেশি চেঁচাচ্ছিল। কুম্ভবাবু শুধু বলল, ও-সব বলতে যাবেন না। কি ভাবতে শেষে কি ভাববে। পিয়ারিলাল লোকটা সুবিধের নয়।

    —কিন্তু চারুকে যে আমার সঙ্গে তুলে দিলে।

    —হতেই পারে না।

    —ওর ভাইঝি বলল।

    —র ভাইঝি আছে কখনো শুনিনি!

    অতীশ বলল, বহরমপুরে ওর কে আছে?

    কুম্ভ এবার হা হা করে হেসে উঠল। বলল, দাদা আপনি ঠিক ছিলেন তো!

    অতীশ বলল, সেই। সে ওঠার সময় বলল, দাদা আপনার ঈশ্বরও আছে, শক্ত পাটাতনও আছে। বুঝতে পারছি আমার কিছু নেই। আমার সব কিছু ঠিক না থাকারই কথা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআওরঙ্গজেব : ব্যক্তি ও কল্পকথা – অড্রি ট্রুসকে
    Next Article মানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }