Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঈশ্বরের বাগান – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1863 Mins Read0

    ঈশ্বরের বাগান – ৪৮

    ॥ আটচল্লিশ ॥

    অফিসে ঢুকেই খবরটা পেল। অতীশ ভাউচার ফাইল টেনে সবেমাত্র টিক মারতে শুরু করেছে, তখনই কুম্ভবাবু হাজির।

    শুনলেন!

    অতীশ কুম্ভবাবুর কথা না শোনার ভান করছে। সে মুখ না তুলে, ফাইলে মুখ গুঁজে রেখেছে। কুম্ভবাবু টেবিলের ওপাশে চেয়ার টানছে। অর্থাৎ তার কথা আছে, সে শুনলেন যখন বলেছে, তখন বাকিটাও বলবে। অতীশ চায় না, সকালবেলায় একগাদা হাতের কাজ সরিয়ে কুম্ভবাবুর কথা শোনে। কারণ মাঝে মাঝে মনে হয় সে এতটা আত্মসমর্পণ করেছে বলেই যখন তখন তার ঘরে ঢুকে যায়—যা খুশি গল্প শুরু করে দেয়। ‘শুনলেন’ বলে বস্তির কেচ্ছা শুরু করে দেয়। অজগর সাপের মতো কুম্ভবাবু তাকে গিলছে!

    সে অনায়াসে বলতে পারত, পে-বিলের কতদূর!

    তারপর কেন যে বলেও ফেলল, পে-বিল কিন্তু সনৎবাবু ত্রিশ তারিখের মধ্যে চেয়েছেন।

    আর পে-বিল! ভয়ে মরছি। কী কান্ড বলুন তো! শেষে আমরা!

    এবার আর অতীশ মুখ না তুলে পারল না। বলল, কী হয়েছে?

    আরে তিনটি ছোকরা এসে খোঁজখবর করেছে।

    খোঁজখবর। কার!

    আর কার ম্যানেজারের।

    আমার খোঁজখবর, আপনি আছেন কেন? কী চায় ওরা জেনে নিতে পারলেন না!

    অতীশ দেখল, কারখানার অনেকেই শেডের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিন্টিং রুমে ঢোকার মুখেও জটলা মনে হচ্ছে। তার ঘর আলাদা। তবে কাচের জানালায় চোখ রাখলে, বাইরের অনেক কিছুই দেখা যায়। হঠাৎ মনে হলো—মেশিনপত্র কিছুই চলছে না। কোনো বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে সাধারণত মোটর বন্ধ করে দেওয়া হয় না। সে কিছুটা সম্বিত ফিরে পাবার মতো কুম্ভবাবুর দিকে তাকাল। আমি বলতে যাব কেন! আপনি কখন আসেন, কোন রাস্তা ধরে আসেন, অফিসে কতক্ষণ থাকেন আমি বলতে যাব কেন!

    কারা এরা? অতীশের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।

    কারা ওরা আমরা জানব কী করে! ওরা কাউকে জানিয়ে করে না। ওরা জানিয়ে করলেও কেউ মুখ খোলে না।

    আমি বুঝছি না কুম্ভবাবু!

    কুম্ভবাবু এবার সুধীরকে ডেকে বলল, পঞ্চাকে ডেকে আন।

    পঞ্চা এলে বলল, স্যারকে বল।

    আমি কী বলব!

    তুই কী বলবি মানে। তোকেই তো রাস্তায় ধরেছিল।

    অতীশ বোকার মতো তাকিয়ে আছে। হেঁয়ালি ঠিক বুঝতে পারছে না। আবার মনে হচ্ছে—এত বড় একটা ঘটনা, উঠতি যুবকদের দেখলেই তার কেন জানি মনে হয় এক্ষুনি সব রাস্তাঘাট ফাঁকা করে দিতে পারে। দিব্যাস্ত্র আছে হাতে। আইনশৃঙ্খলা মুহূর্তে তছনছ করে দিতে পারে। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকে—ট্রাম বাস বন্ধ হয়ে যায়। এই তিন-চার জন যুবা খালধারের দিকে দৌড়ালেও রাস্তাঘাট ফাঁকা। এই বস্তি অঞ্চলে কারখানায় ঢোকার মুখে দূর থেকে এমন সব ঘটনা দেখেছে। সে তখন ঘুরপথে কারখানায় এসেছে—অথবা বাসায় ফিরে গেছে। মৃত্যুদৃশ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা তার স্বভাব।

    দু-দুজন খুন। দু’জনই পাশাপাশি এলাকার।

    মাস পাঁচ-সাত আগে স্থানীয় তেলকলের এক ম্যানেজার খুন। আসলে যখন চারপাশে নানা কারণে হত্যাকান্ড ঘটছে, এবং গাঁয়ে-গঞ্জে কিংবা দূরের কোনো মাঠে লাশ পড়ে থাকছে তখন যে কোনো অজুহাতে প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেবার এটা এক মস্ত সুযোগ। অদ্ভুত কুম্ভবাবুর মুখ থেকে শুনলে তার এমনই ধারণা হয়। কুম্ভবাবু চায় না, সে থাকুক, সে উপরওয়ালা হয়ে থাকলে তার অসুবিধা। সরে গেলে, কিংবা বউরাণী রাজার অন্য কোনো কনসার্নে তুলে নিলে সেই সর্বেসর্বা। এটা যে একধরনের ষড়যন্ত্র নয় কে বলবে! পঞ্চা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকায় সংশয়টা আরও বাড়ছে।

    অতীশ বলল, কোথায় তোকে ধরেছিল?

    হালসিবাগানের রাস্তায়।

    কী বলল?

    বলল, আপনি কখন আসেন, কখন যান!

    তুই লোকজন ডেকে বলতে পারতিস, কেন তারা আমাকে খুঁজছে! তোর পাড়া। সবাই তোকে চেনে।

    ওরা তো স্যার অফিসেও এসেছিল!

    কুম্ভবাবু অতীশের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিন্টার মণিলাল ঢুকে গেল। প্রায় যেন শোক-সংবাদ বয়ে এনেছে। সে চোখ বড় বড় করে বলল, বয়স বেশি না স্যার। বেশ ভদ্র। অফিসে ঢুকে বলল, ম্যানেজার কোন ঘরে বসেন?

    হঠাৎ অতীশ কেমন ক্ষেপে গেল! দরোয়ান আছে কি করতে! ওরা কী করে! যাকে তাকে ঢুকতে দিলেই হলো! তারপরই মনে হলো, হয়ে গেছে। খতমের তালিকায় তবে তার নামও উঠে গেছে। যদি উঠে গিয়ে থাকে তার কিছু করার নেই। আর যদি তারা ঠিকই করে থাকে, ম্যানেজাররা বুর্জোয়া সমাজের প্রতিনিধি, ম্যানেজার খুন করতে থাকলে বিপ্লবের অনেকদূর অগ্রসর হওয়া যাবে, তবে দারোয়ান আর কতটা তাকে আড়াল দিতে পারবে! পুলিশ তো আসে লাশ-টাশ পড়ে যাবার পর। সবচেয়ে বিস্ময়, কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। কারা, কোন পাড়ার জানা যায় না। কিংবা এরা যে অ্যাকশান স্কোয়াডের ছেলে বোঝাই যায়। এদের হাতে পায়ে সর্বত্র বিস্ফোরক পদার্থ। ছুঁয়ে দিলেই আগুন জ্বলে ওঠে।

    কুম্ভবাবুর মুখ খুবই গম্ভীর। রাজবাড়িতে খবরটা দেওয়া দরকার। সনৎবাবুকে জানানো দরকার। থানায় ডাইরি করা দরকার। কিন্তু কে যাবে? সে যে ফোন করে রাজবাড়িতে জানাবে—তাও পারছে না। কোথায় কার চর ঘুরে বেড়াচ্ছে—এই পঞ্চাকেই বিশ্বাস কী! সেও তো ওদের হয়ে কাজ করতে পারে। ফোন তুলে কথা বললে যদি সে খবর পাচার করে দেয়—কুন্তবাবু ফোন করে রাজবাড়িতে জানিয়েছে, কুম্ভবাবু থানায় রিপোর্ট করার পরামর্শ দিয়েছে, তবে সেও খতমের তালিকায় উঠে যেতে পারে-

    এই তো সেদিন যা হয়ে গেল।

    চোখের উপর—দিনদুপুরে।

    প্রকাশ্য দিবালোকে—কারখানার শেডের পেছনে একটা কদম গাছ এখনও তার সাক্ষী। সে শেডের জানালা খুলতে গেলে চিৎকার—স্যার, কী করছেন। স্যার, জানালা খুলবেন না। কুম্ভবাবু নিজে এসে তাকে সরিয়ে নিয়েছে। জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। কারখানার এতগুলি মানুষ, বস্তি এলাকার এতগুলো মানুষ, তিনটে সেদিনের ছোকরার ভয়ে হেগে মুতে একাকার! মুহূর্তে শোরগোল, বিস্ফোরণ, রাস্তা ফাঁকা, দরজা জানালা বন্ধ। প্রকাশ্য দিবালোকে অতীশের শেডের পেছনের কদম গাছটায় হত্যাকান্ড চালিয়ে গেছে। কেউ বের হয়নি। এমন কি পুলিশ এলে অতীশও বলেছে, দেখিনি, দরজা জানালা বন্ধ ছিল। শেডের সদর পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল দারোয়ান। কেউ ট্যাঁফো করেনি। জানালার ফাঁক- ফোকরে কেউ দেখেছে। ছেলেটাকে কদম গাছটায় নাকি বেঁধে ফেলেছিল। নাকি কথাটাই প্রযোজ্য।

    অতীশ নিজে তো দেখেনি!

    যে যার মতো বলেছে, সে শুনেছে। রাস্তায় ভিড় ছিল না। এমন প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকান্ড করে বুঝিয়ে দিচ্ছে বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। অতীশ চিৎকার করে উঠতে চেয়েছে, কেন মেরেছে। খুন করার অধিকারের অস্ত্র কে তুলে দিয়েছে! আর তখনই দেখতে পায়, কেউ যেন তার পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে। সে মুখ ঘোরালেই তাকে দেখতে পাচ্ছে। তবে কী ঘৃণা—ঘৃণায় মানুষ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। আর্চিকে খুন করার পেছনে তার যে প্রচন্ড রোয সৃষ্টি হয়েছিল, এইসব হত্যাকান্ড কী সেই রোষ থেকে! সে বুঝতে পারে না। না পারলেই কপালে ঘাম দেখা দেয়। কিছু একটা যেন হবে। নিয়তি তার পিছু নিয়েছে—এবং সে বুঝতে পারে—এই রোয কখনও দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—কারখানায় কে যেন বলেছিল, আহা কার ছেলে কে জানে—বিশ-বাইশ বছরেরও নয়। ক্ষুর দিয়ে গলা ফালা করে দিয়েছে। মাথাটা ঝুলে পড়েছে।

    পুলিশ আসার আগেই অতীশ বের হয়ে পড়েছিল। কারণ অতীশ এই খুনের সঙ্গে আজকাল নিজের কোনো খুনের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। সে অস্থির হয়ে পড়ে। কপালে ঘাম দেখা দেয়। বারবার জল খায়। ঠোঁট চাটে। সুধীর টের পায় স্যার ভাল নেই। হয়তো স্যার এখুনি বলবে, ধূপবাতি আন জ্বালি। সুধীর ভয়ে ভয়ে কুম্ভবাবুর ঘরে ঢুকে যায়। বাবু শিগগির। স্যার…। কুম্ভ এসে দেখেছিল, অতীশবাবু টেবিলে মাথা রেখে কী ভাবছে!

    শরীর খারাপ লাগছে! কুম্ভবাবুর প্রশ্ন।

    পেছনে কদম গাছে কোনো যুবক ঘাড় কাত করে দাঁড়িয়ে আছে। রক্তে জামাপ্যান্ট ভিজে গেছে। এই দৃশ্যটাই তাকে কাবু করে দিয়েছিল। এরা সবাই কী যীশু! সেও কি কোনোদিন যীশু হয়ে যাবে—এমন আতঙ্কে শরীর গোলাবারই কথা।

    কিন্তু আজ সত্যি শিয়রে শমন।

    কুম্ভবাবু বললেন, আপনি বাড়ি চলে যান!

    অতীশ হাসল, যদি ঠিকই হয়ে গিয়ে থাকে—বাড়ি গিয়ে কী হবে!

    কুম্ভ এবার সবাইকে চলে যেতে বলল! পঞ্চা এবং মণিলাল নেমে গিয়ে শেডের মুখে দাঁড়িয়েছে।

    অতীশ মানসিকভাবে আর ভেঙে পড়তে চায় না। এই তার নিয়তি। জাহাজ, সমুদ্র, গভীর নীল অন্ধকার, ঝড় এবং বনি নামক বালিকার কেবিনে ধর্ষণে মত্ত তার ওপরওয়ালা আর্চি—বনির মর্যাদা রক্ষার্থে, জাহাজের ছোটবাবু সেদিন মতিস্থির রাখতে পারেনি। সে ঘোরে পড়ে কাজটা করেছে। এক বালিকাকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে অন্য কোনো উপায় তার জানা ছিল না। সে জানে, সে ছোটবাবু, সে জানে, ছোটবাবু আর্চিকে খুন করেছে—এমনকি পরিত্যক্ত জাহাজেও তার নিস্তার ছিল না, বনিকে নিয়ে সমুদ্র পার হবার সময়ও সে একদন্ডের জন্য নিস্তার পায় নি, দূরাতীত সেই ছবি কোনো দ্বীপে-ক্রশের নিচে সে বসে আছে, বালিয়াড়িতে ক্রশ প্রোথিত হয়ে আছে, এই ক্রশ কে বহন করে এনেছিল বোট থেকে, তাও সে জানে না—এমন কি জাহাজের দীর্ঘদিনের সঙ্গী এলবাট্রস পাখিটার গলা কাটা, কে এ-ভাবে পাখিটার গলা কেটে দিল!—আর্চির প্রেতাত্মা ছাড়া আর কে, নির্জন দ্বীপে সে বারবার শুনেছে—পাহাড়ের মাথায়, সে বারবার শুনেছে, ইউ দ্য সিনার। এখন সে রাজার কারখানার ম্যানেজার অতীশ দীপঙ্কর—কে বা কারা বলে গেল, ইউ দ্য সিনার। আর্চির প্রেতাত্মার হাত থেকে একমাত্র আত্মরক্ষার উপায় সেই দীপাবলী—ধূপবাতির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালে, সে জানে কোনো বার্তা পেয়ে যাবে।

    কুম্ভ বলল, থানায় রিপোর্ট করা দরকার।

    অতীশ বলল, না।

    কুম্ভ বলল, আপনি ক’দিন ছুটি নিন। দরকার হয় বৌদির কাছে চলে যান। টুটুল মিণ্টুকে দেশে পাঠিয়ে দিন। অতীশ বলল, না।

    বউরাণীকে ফোন করবেন? কুম্ভ ত্যারছা চোখে তাকাল।

    করে কী হবে! অতীশ কুম্ভবাবুর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। কারা এল, কেন এল—জীবনে সে তো একমাত্র আর্চিকে খুন করা ছাড়া কোনো পাপ করেনি। বনির আত্মরক্ষার জন্য করেছে। বনির না তার, বনি তার কে, সে তো আর্চির নারী হতে পারত! বনির গুপ্তধনের উপর কার কত বেশি অধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেয় কী করে? আসলে সেও এক জমি দখলের লড়াই। একটা লড়াইতে জিতে গেছে, সামনের লড়াইতে তাকে হারতে হবে।

    সে সুপারভাইজারকে ডেকে বলল, কী ব্যাপার বলুন তো! কাজ বন্ধ রেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। যান কাজে যান। ও নিয়ে ভাবতে হবে না। মোটর চালু করে দিন।

    কুম্ভবাবু বলল, দেখুন দাদা…

    অতীশের মাথাটা সহসা গরম হয়ে গেল। আস্কারা পেয়ে পেয়ে কুম্ভ কবেই তাকে দাদা বানিয়ে ফেলেছে। এতদিন গা করেনি। আজ হঠাৎ এত জ্বালা কেন বুঝতে পারছে না।

    অতীশ একদম পাত্তা দিল না। উত্তর করল না। কিন্তু যে মানুষটি ইচ্ছে করলেই তাকে ল্যাজে খেলাতে পারে, কর্মীদের একটা গোষ্ঠী তার তাঁবে, রাজার সুপার তার বাবা, এত যার খুঁটি এবং কারখানার সহকারী ম্যানোজার, তাকে শেষ পর্যন্ত পাত্তা না দিয়েও যেন উপায় থাকে না।

    সে এবার ক্যাশবুক ভাউচার সব সরিয়ে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। ঘোড়ার খুরের মতো টেবিলের নিচে দু-পা ছড়িয়ে রিভলভিং চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। সোজাসুজি তাকাল। দু-হাত তার বুকের উপর বিবেকানন্দ স্টাইলে জড়ো করা। এবং এতটা ধাতস্থ যে সে ইচ্ছা করলে যেন বলতে পারে, দে হ্যাভ ডিক্লেয়ার্ড, আই অ্যাম দ্যা সিনার। আর্চি পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে নির্জন দ্বীপে একই কথা ঘোষণা করেছিল, আজ আবার তারা এসে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল।

    অতীশ বলল, বলুন, থেমে গেলেন কেন? দাদা বলেই থেমে গেলেন কেন?

    কুম্ভ বলল, আপনি গুরুত্ব দিতে চাইছেন না? কাগজে দেখছেন না!

    ও, এই কথা! অতীশ গ্রাহ্য করল না। সে উঠে দাঁড়াল। কুম্ভকে কিছু আর বলার সুযোগ না দিয়েই প্রিন্টিং সেকসানে চলে গেল। ছাপার কাজ চলছে। রেজিস্টেন্স দেখল টিন তুলে। কালি রঙ কৌটোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখল। প্রিন্টারকে ডেকে বলল, ‘টাচি’ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হয় প্লেটে ময়লা ধরেছে।

    কুম্ভ বলল, আপনি গুরুত্ব দিতে চাইছেন না? কাগজে দেখছেন না!

    ও, এই কথা! অতীশ গ্রাহ্য করল না। সে উঠে দাঁড়াল। কুম্ভকে কিছু আর বলার সুযোগ না দিয়েই প্রিন্টিং সেকসানে চলে গেল। ছাপার কাজ চলছে। রেজিস্টেন্স দেখল টিন তুলে। কালি রঙ কৌটোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখল। প্রিন্টারকে ডেকে বলল, ‘টাচি’ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হয় প্লেটে ময়লা ধরেছে।

    যেন কিছুই হয়নি।

    কম্ভ বলল, এই সুধীর দেখ তো ম্যানেজারবাবু কি করছে। কুম্ভ নিজের ঘরে এসে সুধীরকে ফেউ লাগিয়ে রাখল। শালা টসকায় কিনা দেখার ইচ্ছে। এটা সে বুঝে উঠতে পারছে না, এত সাহস হয় কী করে! পঞ্চা না হয় মিছে কথা বলতে পারে, মণিলাল তো বলল, হ্যাঁ, এসেছিল—খোঁজ নিয়ে গেছে। শালা পাগল? পাগল ছাগল ম্যানেজার হলে এমনই হয়। কিসে কি গুরুত্ব দিতে হয় জানে না। আর এ-সময়ই অতীশ তার ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় উঁকি দিয়ে গেল। হরিচরণ বসেছিল এমপ্লয়িজ স্টেট ইনস্যুরেন্সের লেজার নিয়ে। স্যারের মুখ দেখেই তটস্থ। কুম্ভও তাকাল। দেখল অতীশবাবু তার দিকে তাকিয়ে বলছে, কুম্ভবাবু, ম্যানেজার আপনিও। বলেই রাস্তা লাফিয়ে পার হয়ে পাশের শেডে ঢুকে গেল। আসলে মজা করা। জীবন নিয়ে এই মজার মধ্যে আছে আরও সব কৌতুক—এই কৌতুকই শেষ পর্যন্ত কখন বড় মঞ্চে উঠে ক্লেরিওনেট বাজাতে বলে। অতীশ কামড়ি সেকসানে ঘুরতে গিয়ে উপরে দেখল বেলটিং আলগা হয়ে গেছে।

    মনোরঞ্জনকে সতর্ক করে দিয়ে অতীশ ডাইস সেকসানে ঢুকে গেল। চার-পাঁচটা লেদ চলছে। চিজেল থেকে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। লেদম্যান কার্তিক দেখল স্যার তার কাজ দেখছে মনোযোগ দিয়ে। স্যারের মাথায় খড়গ ঝুলছে—তার মন খারাপ। অতীশ তখনই দেখল, কুম্ভবাবু ছুটে আসছে। বলছে, বউরাণীর ফোন। শীগগির আসুন। কুম্ভ হাঁপাচ্ছে।

    অতীশ গা করল না।

    কুম্ভ বোঝেনা, এত সাহস হয় কী করে! বউরাণী ফোন করেছে, অথচ পাত্তা দিচ্ছে না।

    সে ফের বলল, বউরাণীর ফোন। শিগির আসুন।

    অতীশের হাতে একটা ডাইস। সে ডাইসটা হাতে নিয়ে মেল ফিমেল মেলাচ্ছে। বউরাণীর ফোনের চেয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে ডাইস ঠিক হলো কিনা।

    তার ক্ষোভ বাড়ছে।

    অতীশ সেটাই চায়। সে সব আজ অগ্রাহ্য করতে চায়। আততাতীরা তবে বের হয়ে পড়েছে। সে বলল, যাচ্ছি। রাজবাড়িতে ফোন করেছিলেন! করতেই পারে। বউরাণীর পেয়ারের মানুষ খুন হয়ে গেলে রেহাই পাবে না। সে যে লোক লাগিয়ে ডামাডোলের বাজারে তার উপরওয়ালাকে সরিয়ে দিতে চায় না তাই বা কে বলবে!

    অফিসঘরে ঢুকে ফোন তুলে বলল, বলো।

    —কোথায় ছিলি?

    —মেশিন শপে।

    —শোন, টুটুল মিণ্টুকে কে তুলে নিয়ে গেছে! হঠাৎ অতীশ যেন পায়ে জোর পাচ্ছে না।

    -–কে তুলে নিল!

    —জানি না। সুখি সঙ্গে আছে শুনলাম। গাড়ি করে নিয়ে গেছে।

    সে বুঝল, ফতিমা ছাড়া এমন কাজ করার সাহস আর কেউ পাবে না। সে বলল, ও তাই! ঠিক আছে। রাজবাড়ির ভিতর গাড়ি নিয়ে ফতিমা আগেও এসেছে। সে ছিল না। ফতিমার কথা সে কাউকে বলেওনি। সুখিও জানে না, ফতিমা কে! টুটুল মিণ্টু জানে পাকিস্তানের পিসি। পিসির সঙ্গে বেড়াতে যেতেই পারে।

    —এই!

    —বলো।

    —কারা নাকি খোঁজ নিয়ে গেছে, তুই কখন অফিস যাস, ফিরিস।

    —তাই তো শুনলাম।

    —শিয়ালদায় পুলিশ খুন হয়েছে জানিস!

    —তাই নাকি? কখন?

    —কখন জানি না। টুটল মিণ্টু কার সঙ্গে গেল!

    —তা তো জানি না।

    —জানিস না! চুপ করে বসে আছিস! তুই কিরে!

    অতীশ ফতিমার নাম বলতে সাহস পেল না। একজন মুসলমান যুবতী, অন্দরে ঢুকেছে, তার বাড়িতে আসে, জানলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে। সে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেল। বলল, ওদের মাসিদের কেউ হবে। সুখি সঙ্গে আছে?

    —জানি না, যা খুশি কর। কী অরাজকতা চলছে—আর তুই নির্বিকার! শোন, একা ফিরবি না। দারোয়ানদের বলবি সঙ্গে থাকতে।

    —কী হবে!

    —কী হবে মানে!

    —আরে বুঝছ না—যদি শব্দভেদী বাণ ছুঁড়েই দেওয়া হয়, দারোয়ানরা কী করবে!

    তবু অতীশের মন অস্থির হয়ে থাকল। কেমন নিস্তেজ লাগছে। নির্মলা যদি জানতে পারে, অফিসে তার যাওয়া আসার ব্যাপারে তিন-চারজন ছোকরা খোঁজ নিয়ে গেছে তবে সেও চলে আসতে পারে। অযথা আতঙ্কে পড়ে যাবে। অযথাই বা ভাবছে কেন! হতেই পারে। রাস্তায় দু-চারটি বোমা ছুঁড়ে দিলেই সব শুনশান। দরজা জানালা বন্ধ। যে যার আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে দেখতে পেল, রক্তাক্ত এক মানুষ টেবিলে ঝুঁকে পড়ে আছে। সে তার লাশ দেখে আঁতকে উঠল। তারপরই মনে হলো ফতিমা যদি না হয়, তবে…সঙ্গে সঙ্গে গলা শুকিয়ে গেল। অস্থির হয়ে উঠল। তার সব রাগ গিয়ে পড়ল সুখির উপর। তুই তো বলতে পারতিস, কাকা বাড়ি নেই—তবে ফতিমা এ-সব অজুহাত শোনার পাত্রীই নয়। একজন মানুষের মাথায় এতগুলি খড়গ ঝুলে থাকলে সে যে কত বিপন্ন টের পেয়েই বলল, আমি যাচ্ছি কুম্ভবাবু।

    সে রাস্তায় বের হয়ে দেখল, কারখানার কিছু কর্মী এবং দারোয়ান তাকে অনুসরণ করছে। সে হঠাৎ ধমকের সুরে বলল, যাও, কাউকে সঙ্গে আসতে হবে না। সে যে কত সাহসী এবং নিছক হুমকিতে আতঙ্কগ্রস্ত হতে রাজি নয় তাই বুঝিয়ে দিতে চাইল। বরং এ-সময় ফতিমার সঙ্গে তার যেন দেখা হওয়া বেশি জরুরী।

    রাস্তায় বেরিয়ে ট্রাম ধরতে যাবে তখনই মনে হলো তিন-চারজন যুবক হরিশা মার্কেটের কাছে জটলা করছে। ওরা কী তবে সেই আততায়ী! সে দেখতে চায়। সে ট্রামে উঠল না। দাঁড়িয়ে থাকল। যেদিকে তাকায় মনে হয় কিছু তরুণ ঘিরে আছে তাকে। ট্রামে উঠে হঠাৎ বেশ ভিতরের দিকে ঢুকে গেল। ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস পড়ছে। হাফহাতা সোয়েটার গায় তরুণ। তার এত আতঙ্ক কেন! খুব সতর্ক সে। যেন যুবক কোনো গুপ্তঘাতক—সে কাছে থাকল না। ভিড় ঠেলে আরও ভেতরে চলে গেল। অনুসরণকারী যদি হয়। হঠাৎ কী মনে হলো, সে লাফ দিয়ে ট্রাম থেকে নেমে একটা ট্যাক্সি নিল। ট্যাক্সিতে উঠতে যাবে পেছনে আর একটা ট্যাক্সি। ট্যাক্সিতে কারা বসে। সে তাড়াতাড়ি একটা গলিতে ঢুকে গেল। মনে হচ্ছে অনুসরণকারীরা সঙ্গেই আছে তার। তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সে আর কোথাও গিয়ে নিস্তার পাবে না। এ-ভাবে সারাদিন সে নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।

    তার মনে থাকল না, তার দুই শিশু কোনো অপহরণের পাল্লায় পড়তে পারে। ফতিমা নাও হতে পারে। অন্য কেউ যদি হয়, সে কে? তার উপর আর্চির প্রেতাত্মা ভর করতে পারে—শিশুরা নির্মল হৃদয়, কোনো অশুভ প্রভাবে তারা পড়বে কেন! তার এ-সব হিজিবিজি চিন্তায় মানসিক ক্রিয়াকলাপ অস্থির। সে কলেজ স্ট্রীটের বইপাড়ায়—এমন কি কফি-হাউসে ঢুকতেও আজ তার আতঙ্ক। গলির ভিতর গোপনে একটা প্রেসে বসে তার বই-এর প্রুফ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আসলে যদি সেই আততাতীরা খবরই পেয়ে যায় রাজবাড়ির সদরে কিংবা অফিসে নাগাল পাওয়া যাবে তবে, হয় ট্রাম রাস্তা পার হয়ে প্রায় ছুটে চোরের মতো রাজবাড়িতে ঢুকে গেল। সে ঘোরের মধ্যে ছুটছে। সেই আততাতীরা যেন সব গোপনে লক্ষ্য রাখছে। কিছুতেই অতীশ হালকা হতে পারছে না। মেসবাড়ির সামনে এসে একবার পেছনে তাকাল। বারান্দার চেয়ারে হেলান দিয়ে উকিলবাবু খালি গায়ে বসে আছেন। বুড়ো মানুষ আদালত থেকে ফিরে তিনি এ-সময় পেছনের বারান্দায় বসে বিশ্রাম নেন। পেছনে কেউ তাকে তাড়া করছে না। অথচ বারবার পেছনের দিকে তাকাতেই উকিলবাবু বললেন, সকাল সকাল ফিরে এলেন! কারা নাকি আপনার খোঁজখবর নিচ্ছে।

    রাজবাড়িতে চাউর হয়ে গেছে।

    সবার মুখে এক কথা। সবাই যে-যার দরজায় দাঁড়িয়ে অতীশকে দেখছে। যেন ফেরার কথা নয়- আজকাল হামেসা খুনটুন হচ্ছে। কিছু প্রচারপত্র পড়ে থাকে খুনের পর। প্রচারপত্রে অজ্ঞাত আততায়ীরা তার খুনের ব্যাপারে কী সাফাই গাইতে পারে! সে যে আর্চিকে জাহাজে খুন করেছে এরা কি জানে! কতকাল পর তার বদলা নিতে এসেছে কেউ! কিন্তু তার এই গোপন খুনের কথা জাহাজের কাপ্তান স্যালি হিগিনস ছাড়া কেউ জানে না। বনি পরে জেনেছে। তার স্ত্রী নির্মলা জানে, সে টুটুলের মৃত্যু আশঙ্কায় একবার আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিল—আমি জানি এমন হবে। আর্চি আমাকে সারাজীবন তাড়া করবে। অর্চির খুন হওয়ার ঘটনাও সে নির্মলাকে বলে ফেলেছিল। কিন্তু আশ্চর্য, নির্মলা বিশ্বাস করেনি। সে কখনও খুন করতে পারে, নির্মলা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি। আর কেউ তো জানার কথা না। নির্মলা ছাড়া কাকপক্ষীও জানে না, সে ম্যানেজার বলেই খতমের তালিকায় তার নাম।

    সে কিছুটা সম্বিত ফিরে পাবার মতো বলল, উকিলবাবু, পুলিশের গাড়ি দেখলাম বের হয়ে গেল।

    —না তো! কখন দেখলেন!

    এই হলোগে মুশকিল। সে যা দেখে, অনেকেই তা দেখতে পায় না। এমন ঘটনা তার জীবনে বার বার ঘটেছে। সে নিজের চোখকে কেন যে বিশ্বাস করতে পারে না। আবার কোনো কথা বলে পাছে বেইজ্জত হয় ভেবে সোজা বাসার দিকে হাঁটা দিল। গিয়ে কী দেখবে কে জানে! সে কাউকে বলতেও সাহস পাচ্ছে না, টুটুল মিণ্টু গায়েব হয়ে গেছে। সবকিছুই ভুতুড়ে ব্যাপার। স্বচক্ষে না দেখে আর কাউকে কিছু বলা ঠিক হবে না।

    নতুন বাড়ি পর্যন্ত সে প্রায় বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছে দেখল, টুটুল মিণ্টু জানালায় দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই ছুটে আসছে তারা। সে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে বলল, বাইরে একদম বের হবে না। এমন কি বউরাণীর ফোন, টুটুল মিণ্টুকে নিয়ে গেছে জানারও যেন আগ্রহ নেই। যদি ওরা ভাবে বাবা কী সব আজগুবি কথা বলছে—বাবার কাছ থেকে তারা দূরে সরে যাবে। তারা তো তাদের বাবাকে ভালোই চেনে।

    আর তখনই টুটুল বলল, পিসি তোমার জন্য দুটো কামরাঙা রেখে গেছে।

    কামরাঙা!

    অতীশ ঘরে ঢুকে শরীর এলিয়ে দিয়েছে। সে যে খতমের তালিকায় আছে! সমূহ বিপদ। আর কামরাঙা রেখে গেছে ফতিমা। সে সুখিকে বলল, দরজায় দাঁড়িয়ে মজা দেখছিস! কিসের এত মজা। দরজা বন্ধ কর।

    টুটুল মিণ্টু দেখছে বাবা তাদের পিসিকে নিয়ে একটাও প্রশ্ন করল না। পিসির চেয়ে সদর দরজা বন্ধ রাখা বেশি জরুরী।

    —শোন সুখি।

    সুখি কাছে এলে বলল, কেউ এলে হুটহাট দরজা খুলে দিবি না। দরজায় খিল দিয়ে দে। আমার শরীর ভাল নেই। রাতে খাব না।

    এক প্যাকেট ফ্রাইড রাইস। সঙ্গে টমেটো প্রণ। সুখিকে বার বার বলে গেছে সোনাবাবুকে মনে করিয়ে দেবেন। একটা বড় হোটেলে ঢুকে ওরা খেয়েছে। সোনাবাবুর জন্য আলাদা প্যাকেট। গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবার সময় দুটো কামরাঙা সিলোফিন পেপারে মোড়া টুটুলের হাতে তুলে দিয়েছে। সোনাবাবুর জন্য সে শৈশবে কামরাঙা, লটকন ফল, বেথুন ফল চুরি করে দিয়ে আসত। সোনাবাবু তার পিছনে পাগলের মতো ছুটত কামরাঙার জন্য। অতীশ মনে করতে পারছে সব।

    ফতিমা জানেও না—কত অর্থহীন এখন এসব। জানেই না, সোনাবাবুর নাম খতমের তালিকায় উঠে গেছে। বিপজ্জনক খেলা শুরু হয়ে গেছে। তার মুখে ম্রিয়মাণ হাসি ফুটে উঠল। তখনই শুনতে পেল সদর দরজায় কারা কড়া নাড়ছে। অতীশের হাত-পা কেমন স্থবির হয়ে যেতে থাকল।

    কড়া নাড়ছে। দরজা খুলুন। এই সুখি, দরজা খোল। অতীশ পাথর হয়ে যাচ্ছিল। সুখি বলল, কুম্ভ কাকারা এসেছেন। দরজা খুলে দিতে বলছেন।

    অতীশ কোনক্রমে দাঁড়াল। সে নিজে না দেখে দরজা খুলবে না। দরজার হোল দিয়ে দেখা যায়। সে চুপি দিয়ে দেখল কুম্ভবাবু, সনৎবাবু, রাধিকাবাবু।

    সে দরজা খুলে দিলে বলল, এতক্ষণ কোথায় ছিলে! অফিস থেকে বের হয়ে কোথায় গেলে!

    আসলে ওরা অতীশের মুখ থেকে সব শুনতে চায়।

    অতীশ বলল, কুম্ভবাবু তো সব জানে। অতীশ জানে, রাজবাড়ির অন্দরেও তার ডাক পড়তে পারে। আবার নাও পড়তে পারে। সনৎবাবু কুম্ভবাবুর কাছ থেকে বউরাণী সব খবর নেবেন। রাজেনদা চুরুটমুখে পাশে বসে থেকে শুনবেন। কী করা যায় তারাই ঠিক করবেন। সে এ-সব জানে বলেই কুম্ভবাবুর উপর ভার দিয়ে দরজা বন্ধ করার আগে বলল, একটু কাজ ছিল কলেজ স্ট্রীটে।

    সনৎবাবু প্রবীন মানুষ। তার উপরওয়ালা। তিনি শুধু বললেন, কটা দিন সাবধানে চলাফেরা করবে। দিনকাল ভাল না। বৌমাকে আসতে লিখে দাও।

    অতীশের কথা বলতে ভাল লাগছে না। সব যেন নিয়তিতাড়িত, তাকে তাড়া করছে। নির্মলা এলে আর কতটা সুরাহা হবে! সে দরজা বন্ধ করে ফের চেয়ারে এসে নিঃসঙ্গ সহায়সম্বলহীন মানুষের মতো বসে পড়ল। ফাঁসির আসামী যেমন নিজের অবধারিত পরিণতির কথা ভেবে স্থির হয়ে যায়, সেও প্রায় তেমনি—বসে আছে। জুতো মোজা খুলতে হবে, হাত-মুখ ধুতে হবে—তার এখন কিছুই মনে পড়ছে না। মিণ্টু দরজায় হেলান দিয়ে বাবাকে দেখছে। কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না। বাবা তার চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়েছে। সুখি দরজায় উঁকি দিয়ে একবার দেখে গেছে। সেও কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।

    টুটুল দিদির ফ্রক ধরে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে—সে কিছুটা অবুঝ। বাবা এলে কত খবর দেবে ভেবেছে। বাঘ সিংহ হরিণের ছবি দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছে মাথায়। পিসি তাকে কোলে নিয়ে বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়েছিল। পিসি আইসক্রিম কিনে খাইয়েছে। সবুজ ঘাসে বসে পিসি তাকে চিনেবাদাম ভেঙে দিয়েছে। সেই পিসির কথা না বলতে পারলে তার ভাল লাগবে কেন, এমন কি পিসি তার সামনে দাঁড়িয়ে নেচেছে—মন মোর সঙ্গী—কী যেন এক আশ্চর্য সংগীত সে যা ঠিক বোঝে না, দিদিকে নিয়ে ঘাসের উপর পা ফেলে, হাত তুলে পরী হয়ে যেতে চাইছিল পিসি। কী সুন্দর মুখ পিসির স্নেহে এবং গভীর উষ্ণতায় ডুবে গেলে যা হয়ে থাকে—সে ঠিক বোঝে না, তবু পিসির এত সব কান্ড তাকে কেমন উতলা করে রেখেছে এতক্ষণ।

    অথচ বাবা তার দিকে তাকাচ্ছে না। বাবা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।

    সে অভিমানে বোধহয় কেঁদে ফেলবে।

    তবু যা হয়ে থাকে, অভিমান ক্ষোভ থেকেই তার জেদ—সে বাবাকে এ-ভাবে বসে থাকতে দিতে চায় না। দিদির পেছন থেকে ছুটে বাবার হাঁটুর উপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ডাকল, বাবা।

    অতীশ টুটুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।

    —বাবা!

    অতীশ তাকাল টুটুলের দিকে। সে না থাকলে এরা অনাথ। সে না থাকলে, নির্মলার কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়বে।

    আর তখনই টুটুল বলল, জানো বাবা, পিসি না কাঁদছিল। গাড়িতে পিসি গান গাইছিল জানো। পিসি কাঁদছিল কেন বাবা?

    সে বুঝতে পারছে না, গান গাইছিল। গান গাইলে কান্না উঠে আসবে কেন। সে বলল, তোমার পিসি একটা পাগল—চিড়িয়াখানায় কি কি দেখলে?

    আর তখন মিণ্টুর মধ্যে সাহস ফিরে এসেছে। সে এসে আর একপাশে দাঁড়িয়ে বলল, জানো বাবা, টুটুল না হনুমানকে কলা খাইয়েছে।

    তাই বুঝি! তুই কি খাওয়ালি?

    মিণ্টু বলল, আমি পিসির সঙ্গে নেচেছি। পিসি কি সুন্দর নাচে জানো!

    আবার কড়া নাড়ার শব্দ।

    টুটুল মিণ্টুকে সরিয়ে একলাফে দরজার কাছে চলে গেল অতীশ। করিডর ধরে হেঁটে সদর দরজায় গিয়ে ডাকল, কে, কে আপনারা?

    —আমি মানসদা। দরজা খোলো।

    সে বিশ্বাস করতে পারছে না। মানসদার ঘরে সে কতদিন যায়নি। মানসদা তো! না সেই আততায়ীরা মানসদার গলা নকল করে দরজার ও-পাশে কথা বলছে। সে থরথর করে কাঁপছিল। সুখি দেখছে। কাকা দরজা খুলছে না। দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

    —কী হলো। দরজা খোলো।

    অতীশ বলল, কী দরকার বলো!

    সুখি জানে, মানস এই রাজবাড়ির দ্বিতীয় রাজপুরুষ। তার আলাদা বাড়ি। নতুন বাড়ির একটা দিকে মানসবাবু একা থাকে। তার ঘরে বড় কেউ যায় না। রাজবাড়ির ওয়ারিশান নিয়ে কী একটা গণ্ডগোলও আছে। উড়ো কথায় সে জানে, আসলে রাজবাড়ির ওয়ারিশান প্রকৃতপক্ষে এই মানুষটিরই। বউরাণী আর মহারাজকুমার মিলে তাকে পাগল সাজিয়ে ঘরবন্দী করে রাখত। ইদানীং মানসবাবুর আচরণে কোনো পাগলামি নেই। যত্রতত্র যেতে পারেন। তবু এত রাতে মানুষটি তাদের বাসা-বাড়ির দরজায় ভাবতেই সে ছুটে গিয়ে বলল, কাকা, বড় হুজুর। দরজা খুলে দিন।

    মানসদা বাইরে থেকে বলল, হে নবীন সন্ন্যাসী, তুমিও আমাকে অবিশ্বাস করছ। আমার কোনো খোঁজখবর নাও না। নিজেই এলাম—কী সব শুনছি। দরজা খুলছ না কেন।

    অতীশ বলল, তুমি সত্যি মানসদা?

    মানসদা বলল, দরজা খুলে দেখো। আমি ছাড়া আর কে? দরজা না খুললে বুঝবে কী করে।

    এবার অতীশ দরজার ফুটোতে চোখ রাখল।

    সুখির কান্না পাচ্ছে। কাকার আচরণে তার কষ্ট হচ্ছে। জলে ডুবে যাবার আগে খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টার মতো দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন কাকা।

    অতীশ দরজা না খুলেই বলল, শেষে তোমার কথাই ঠিক মানসদা।

    —ঠিক বেঠিক পরে বুঝব। দরজা খুলবে কিনা বলো!

    অতীশ দরজা খুলে দিলে দেখল মানসদা পাটভাঙা ধুতি, পাঞ্জাবি গায়ে চকচকে পাম্পশু পরে যেন নবাঅতিথি আজ এ-বাড়িতে। কত বছর হয়ে গেল, মানসদা এদিকটায় আসেনি। তার বিপদের কথা শুনে সে স্থির থাকতে পারেনি। নিজেই চলে এসেছে।

    মানসদা বলল, অযথা আতঙ্কে ভুগবে না।

    —না না, আতঙ্কে ভুগব কেন! অতীশ নির্ভেজাল ভালো মানুষের মতো সঙ্গে হাঁটতে থাকল।

    —দরজা খুলছিলে না কেন!

    —আচ্ছা ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে দিলে লাগে?

    এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে বলল, শোনো, তুমি দেখছি অস্বাভাবিক আচরণ করছ। টুটুল মিণ্টুকে কাছে টেনে বলল, তোমাদের বাবা এত ভীতু জানতাম না। এই সুখি, চা কর তো।

    অতীশ দেখল মানসদা তার চেয়ারটায় বসে পড়েছে। এ-ঘরে টিনের চেয়ারটা পাতা থাকে—আর আছে তক্তপোশ। অতীশ তক্তপোশে বসে পড়ল। কেমন পুতলের মতো চালচলন। যেন প্রাণের ভিতর কোনো নিস্তেজ বরফের কুচি কেউ কেবল ঠেসে দিচ্ছে—শোনো নবীন সন্ন্যাসী—রাজবাড়িতে প্রথম ঢোকার দিনে, মেসবাড়ির বারান্দা থেকে অতীশকে এই নামেই সম্বোধন করেছিল, পরে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, প্রাচীন এই বাড়িতে অজস্র ফাঁকফোকর। কুমারবাহাদুর তোমাকে এনেছিল, ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য। তুমি নিজে জানো না, কোন ফাঁকফোকরে কি সব বিষাক্ত সাপখোপ, পোকামাকড় ঘাপটি মেরে আছে। হাত দিতে গেলেই ছোবল খাবে।

    —কারা এসেছিল!

    —জানি না।

    —যাই হোক, সাবধানে থাকবে। ক্ষুর দিয়ে গলা কাটবে! সোজা! অ্যান্টিসোশালরা চারু মজুমদারের নামে মাঠে নেমে পড়েছে। কে করাচ্ছে দ্যাখো। তোমাকে সরিয়ে দিতে পারলে কার লাভ দ্যাখো!

    অতীশ জানে তার একমাত্র প্রতিপক্ষ কুম্ভবাবু। তাকে সরাবার চক্রান্ত সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে। এবার বোধহয় শেষ চেষ্টা। সে কাজটা ছেড়ে দিলে পারত। কিন্তু এই নির্বান্ধব শহরে সে যাবে কোথায়? সে তো নানাভাবে চেষ্টা করছে, এই রাজবাড়ি থেকে আলগা হতে। পারেনি। শিক্ষকতার জন্য নির্মলার সঙ্গে সেও একসময় দরখাস্ত করেছে, হয়নি। এখন একমাত্র সে নির্মলার কাছে চলে যেতে পারে টুটুল মিণ্টুকে নিয়ে। কিন্তু সেখানেই বা একটা ঘরে থাকবে কী করে! লোকে কি ভাববে! আর যদি সত্যি সেই আততায়ীরা মনে করে থাকে, আদর্শ রক্ষার্থে ম্যানেজার খুন হওয়া দরকার—সন্ত্রাস সৃষ্টি, গাঁয়ে গঞ্জে, জোতদার খুন হচ্ছে যখন তখন, একজন ম্যানেজারও তার তল্লাটে খুন হয়েছে—এই সেদিন একজন তাজা তরুণের গলা কেটে দিয়ে গেল প্রকাশ্য দিবালোকে তারা যদি হয়, সে যেখানেই যাক নিস্তার নেই।

    —কী চুপ করে আছ কেন? অমলাকে আমি বলে দেব ভাবছি। মানস বলল।

    —না না, তুমি আন্দাজে কিছু বলতে যেও না। তুমি তো জান না, আমিও জানি না, কুম্ভবাবু এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করি না।

    —সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে যদি চায়!

    এও ঠিক, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাকে তাড়াবার ফন্দি আঁটতেই পারে। এমন দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে সে পড়বে, জীবনেও ভাবেনি। মানসদা তো জানে না, সে জাহাজে খুন করেছে। মানসদা তো জানে না, বুড়ো কাপ্তান স্যালি হিগিনস টের পেয়েই বলেছিলেন, যাক, ভালোই হলো ছোটবাবু—সারাজীবনের জন্য একজন অনুসরণকারী পেয়ে গেলে। আর্চির অশুভ প্রভাব থেকেই যে হয়নি কে বলবে! কাজেই অতীশ সহজ গলায় বলল, বাদ দাও। যা হবার হবে। সিগারেট চলবে! বলে, মানসদাকে প্যাকেট এগিয়ে দিলে বলল, দাও দিচ্ছ যখন খাই। চা-টা তো খাসা করেছে সুখি। নবটার আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।

    অতীশ আবার চুপ করে গেল। ঘাড়ের উপর কার নিঃশ্বাস। সে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই।

    মানসদা বলল, কি খুঁজছ? দরজা খুলে উঁকি দিলে কেন—কারো আসবার কথা! কী হলো! পাতাবাহারের গাছগুলির দিকে তাকিয়ে কী দেখছ!

    —না, এমনি। অতীশ নিজের চেয়ারে বসে ফের সিগারেট ধরাল। চায়ে চুমুক দিয়ে অতর্কিতে প্রশ্ন, আচ্ছা মানসদা, তোমার কেউ অনুসরণকারী আছে?

    হুঁ, আছে।

    যাক, তার মতো তবে মানসদারও একজন অনুসরণকারী আছে। সে যেন এটাই চায়। মানসদা একসময় মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যেত। ছবি আঁকার ঝোঁক আছে। এবং তার বাড়ির সর্বত্র সব বড় বড় ক্যানভাসে ছবি। মস্তিষ্ক বিকৃতির সময়ই মানসদা আশ্চর্য সব ছবি সৃষ্টি করে থাকে। এইসব ছবি অনেক দূরের কথা বলে।

    —সে কে?

    মানসদা খটাস করে প্লেটে চায়ের কাপ রেখে বলল, সে তো একজনই। সবার ক্ষেত্রে তিনি আছেন। একজন অনুসরণকারী জন্মের সঙ্গেই থাকেন। এটা বুঝতে পেরে সব আতঙ্ক থেকে এখন মুক্ত তোমার মানসদা।

    —সে কে বলবে তো!

    —জানো না সে কে!

    —না না, জানি না। জানলে তোমাকে বলব কেন!

    —তিনি আমাদের যমদূত। সবার তিনি অনুসরণকারী। ঘরে একবার এসো। মৃত্যুর কিছু ছবি এঁকেছি। জন্মর সঙ্গে সঙ্গে তিনিই আমাদের সতর্ক প্রহরী। তুমি হাঁটছ, তিনি তোমার পাশে হাঁটছেন, তুমি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছ, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে তিনি তোমার সঙ্গে আছেন। এত বড় অনুসরণকারী জীবনের আর কে আছে বলো! তার নাম মৃত্যু।

    অতীশ সহসা যেন দিব্যজীবনের ভিতর ঢুকে যাচ্ছিল। সত্যি তো এত সন্ত্রাস, কিসের! স্যালি হিগিনস জানেনই না, অনুসরণকারী সবার ক্ষেত্রে সেই আদি এবং অনন্ত। সামান্য খুনে তার কোনো হেরফের হয় না। সে কিছুটা হালকা বোধ করে বলল, জন্মের সঙ্গেই তিনি তবে সবার সঙ্গী!

    মানসদা উঠে দাঁড়াল। বলল, এসো একদিন। চিন্তা করো না। তারপর থেমে বলল, তাঁকে তুমি সঙ্গী বলতে পার, অনুসরণকারীও বলতে পার।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআওরঙ্গজেব : ব্যক্তি ও কল্পকথা – অড্রি ট্রুসকে
    Next Article মানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }