Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঈশ্বরের বাগান – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1863 Mins Read0

    ঈশ্বরের বাগান – ৬৯

    ।। ঊনসত্তর।।

    মঞ্জু যেতে যেতে বলল, রাস্তায় কোন অসুবিধা হয়নি তো?

    —কতটুকু আর রাস্তা।

    —বাড়ি থেকে কখন বের হয়েছ?

    —এই তখন আটটা বাজে।

    —তুমি এ ঘরটায় থাকবে।

    অতীশ বলল, এটা তো কবিরাজ দাদার ঘর।

    —বাবা এ ঘরে থাকতে ভালবাসতেন। পাশে বাথরুম। জল তোমার যখন যত খুশি খরচ করতে পারবে। জলের জন্য তোমার ভাবতে হবে না।

    —তুমি বুঝি কলকাতার জলকষ্ট কাগজ-টাগজে পড়েছ?

    মঞ্জু বলল, ঐ একটা হবে।

    অতীশ বলল, পাশের ঘরগুলোতে কে থাকে?

    —কেউ না।

    অতীশের বলতে ইচ্ছা হল, তুমি কি একা! গাঁয়ে বাড়িঘর সব খালি। দালানবাড়ির লোকজন সব’ চলে গেছে! মাঝি বাড়ি চন্দদের বাড়িতেও কেউ নেই। গাঁয়ে একা আছ কি করে! ভয় করে না। সব কেমন ছাড়াবাড়ি হয়ে আছে। শুধু বন-জঙ্গল মঞ্জু। গোপাট কোন দিকে তাও বুঝতে পারছি না। কিন্তু মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারল না। সে মঞ্জুর পা দেখতে পাচ্ছে এখন। সব সময় চোখ তুলে মঞ্জুর মুখের দিকে ঠিক তাকাতে পারছে না সে। ফলে মাঝে মাঝে জানালায় চোখ রাখলে দেখতে পাচ্ছে, সামনে মাঠ, তারপর বাগান, বাগানে অজস্র গাছ। কত সব গাছের নাম। লতাপাতায় ভরা একটা বিশাল উদ্ভিদের রাজত্ব চারপাশে। লালরঙের বাড়ি, সবুজ মাঠ, নীল রঙের ডাকঘর এবং সাদা রঙের ডিসপেনসারি বাদে সবটাই যেন মঞ্জুর মতো একাকী এবং নির্জন। সে বসে বসে সব নানারকম পাখিদের ডাক শুনতে পাচ্ছে। কোনো কোনো ডাক সে চিনতে পারে, কোনোটা পারছে না। অথচ আগে তার এমন ছিল না।

    অতীশের দিকে পেছন ফিরে মঞ্জু দেয়ালের ছবির কাচগুলি মুছে দিচ্ছে। ঘরটা ঠিক রোজ রোজ সাফ সোফ করা মঞ্জুর হয়ে ওঠে না বোধ হয়। ছবিগুলো সবই নদী অথবা পাহাড়ের। একবার মঞ্জুর বাবা কাশী মথুরা বৃন্দাবন সব ঘুরে আসার পথে লছমন ঝোলার একটা ছবি সংগ্রহ করে এনেছিলেন। এ ঘরে সে ছবিটা এখনও আছে। অনেক পুরোনো ছবি, এতদিনেও ছবিটা বিবর্ণ হয়নি, এবং এ ঘরে কেবল অতীশের এই ছবিটার সঙ্গেই মোটামুটি শৈশবের একটা বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। মঞ্জু ছবিটা পরিষ্কার করে দিতে দিতে বলছিল—কেমন লাগছে তোমার! সব তুমি ঠিক ঠিক চিনতে পারছ?

    অতীশ বলল, এ গ্রামে আমরাই প্রথম দেশ ছেড়েছি মঞ্জু। আমার ধারণা ছিল, আমরা বাদে গ্রামের আর সব ঠিকঠাক আছে। এখন দেখছি কিছু নেই। চারপাশে কেবল আগাছা আর জঙ্গল।

    মঞ্জু কোন উত্তর করল না। বলল, তুমি একটু বিশ্রাম কর। হাত-পা ধুয়ে নাও। চান করেও নিতে পার। তোমার তোয়ালে সাবান সব বাথরুমে রাখা আছে। তুমি ইচ্ছে করলে পুকুরে সাঁতারও কাটতে পার। চারিদিকে এখন শুধু জল। আর একটু বাদে লণ্ঠন নিয়ে বের হবে জব্বার চাচা। ঝোপ-জঙ্গ লে চাই পেতে আসবে। সকালে দেখতে পাবে, চাঁই এর ভিতর কত সব বড় বড় গলদা চিংড়ি, বেলে আর পাবদা মাছ।

    এসব কথা মনে হলেই একটা শৈশবের স্মৃতি খেলা করে বেড়ায়। মঞ্জু কি বুঝতে পেরেছে সে তাকে প্রশ্ন করতে পারে, তোমরা এখানে কেন থেকে গেলে? আমাদের তো ধারণা, আমাদের পর তোমরাই প্রথম গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার মানুষ। কিন্তু কবিরাজ দাদা কি পরে মনস্থির করতে পারেননি। তিনি কি কোনো ইনডিসিসানে ভুগছিলেন?

    অথবা তুমি কি এখন ভেবে ফেলেছ, আমি তোমাকে প্রশ্ন করব, তোমরা মঞ্জু কেন দেশ ছেড়ে আগে চলে গেলে না? কেন তোমরা এমন রিস্ক নিয়ে থেকে গেলে? এখানে কি এমন তোমার আকর্ষণ! এই গাছপালা, এই জলাশয়, এই দক্ষিণের খাল, এই বড় শিমুল গাছ অথবা বেতের জঙ্গল? অথবা সামনের ধূসর মাঠ, যেখানে তুমি শৈশবে ঘোড়ায় চড়ে দিগন্তে হারিয়ে যেতে। আমরা তোমার পেছনে ছুটে ছুটে ক্লান্ত হতাম। কিসের আকর্ষণে থেকে গেলে!

    আর তুমি তো জানো মঞ্জু তোমার বাবার মতো সুপুরুষ এ তল্লাটে কেউ ছিল না। তুমি তাঁর আশ্চর্য রঙ পেয়েছ। বৌদির মুখ ছিল প্রতিমার মতো। তুমি তা পেয়েছ। তোমার পা দেখলে আমার মনে আসে লক্ষ্মীপুজোর সময়ে আলপনার কথা। ধীরস্থির। কত সংগোপনে এক একটা পায়ের ছাপ রেখে যাচ্ছ ধরণীতে। মনে হত তোমার পায়ে ধানের ছড়া ছড়িয়ে আছে। হাঁটতে তোমার ভীষণ কষ্ট। হয়তো এটাই ছিল তোমার হাঁটার কায়দা। আমরা তোমার হাঁটা দেখে সব সময় কেন জানি ভাবতুম বড় তুমি অহংকারী মেয়ে। তোমাকে জব্দ করার কি প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল অবনীর।

    —কি ব্যাপার, তুমি চুপচাপ এখনও জানালায় দাঁড়িয়ে আছ? মঞ্জু লণ্ঠন টেবিলে রেখে দিতে দিতে বলল,—স্নান সেরে নাও। কিছু খাবে।

    অতীশ বলল, তুমি আমাকে এক কাপ চা করে দাও। এখন আর কিছু খাব না।

    —হাত মুখ ধুয়ে নেবে না?

    —না মঞ্জু। চা না খেলে শরীর আমার জুতের হবে না। মেজাজ পাব না। চা এর নেশা আমার ভীষণ।

    —তা বলবে তো। বলে মঞ্জু নিজেই কেমন নিজের অপরাধ স্বীকার করার মতো বলল, কখন

    তোমাকে আমি চা করে দিতে পারতাম!

    মঞ্জু চশমাটা খুলে কাঁচ মুছে নিল।

    অতীশ বলল, তুমি আমাকে এখন দেখতে পাচ্ছ?

    —আবছা মতো।

    —হঠাৎ এ বয়সে চোখ এমন হল? আর কে আছে কাউকে তো দেখছি না।

    মঞ্জু কিছু বলল না। হাসল। তারপর ডাকল, কেয়া। কেয়া। শোন তো।

    অতীশ বুঝতে পারল, তবে এ বাড়িতে আরও একজন আছে। তার নাম কেয়া। আশ্চর্য মেয়ে

    তো। কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। অতীশ বলল, এই কেয়া কে হয় তোমার?

    —কেউ না। আবার সব।

    কেয়া এসে গেছে। সুতরাং কেয়া সম্পর্কে অতীশ আর কিছু বলতে পারল না। শ্যামলা রঙের বিশ বাইশ বছরের একটি মেয়ে। মোটামুটি লম্বাই বলা চলে। চুলের খোঁপা মাথার তালুতে উঁচু করে বেঁধেছে। নীল ডুরে শাড়ি পরনে। খালি পা। পায়ে রুপোর পাতলা চেলি। হাতে সবুজ কাচের চুড়ি। চোখ দুটোতে খুব মায়া। অতীশ একবার দেখেই চোখ নামিয়ে নিল।

    মঞ্জু বলল, ঠাকুরবাড়ির ছেলে।

    কেয়া আবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। কারণ ঠাকুরবাড়ির ভিটায় এখন সব আগাছার জঙ্গল। বন ঝোপ, গন্ধপাদালের পাতায় নীল হয়ে আছে বাড়ির চারপাশটা। আর সব নানারকম কিংবদন্তী—অথবা পূজা-পার্বণের দিনে রামায়ণ গান হত, কখনও কবির আসর বসত—তারপর সেই বাস্তু পূজা উপলক্ষে গ্রামে প্রায় মেলার মতো বসে যেত—সে সব গল্পও সে যে কতবার শুনেছে—শুনে শুনে ঠাকুরবাড়ির ছেলে বলেই আবার যেন চোখ তুলে দেখা। ঠাকুরবাড়ির পাগল ঠাকুর সেই কবে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। রূপবান পুরুষ। তল্লাটে দশাশই মানুষের কথা উঠলে, পাগল ঠাকুরের কথা উঠবেই।

    মঞ্জু বলল, খুব ভালো করে চা করতো। সোনাবাবুর জন্য বেশ ভাল করে চা বানাবি।

    —ক’ কাপ করব?

    —তোর জন্য করতে পারিস। ওকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারিস চা খাবে কি না এখন, আমার জন্য করবি? কর।

    কেয়া বলল, কটা চিনির, কটা গুড়ের।

    —দুটো দুটো।

    অতীশ বলল, আর কেউ আছেন?

    —জব্বার চাচা আছেন।

    অতীশ ভুলেই গেছিল জব্বার চাচার কথা।

    কেয়া ঠিক বুঝতে পারল না মঞ্জুদি আব্বার কথা কেন বললেন! আব্বা তো চা খায় না। মঞ্জুদি এই সোনাবাবুর কাছে কেন সেই মানুষটার কথা গোপন করতে চাইছে। মানুষটাকে কি করে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে দেওয়া যায়, কিভাবে এই কঠিন বিভীষিকা থেকে মানুষটাকে রক্ষা করা যায় এমন ভেবেই তো শেষ পর্যন্ত স্থির করা গেল, সোনাবাবুকে খবর দেওয়া যাক। মঞ্জুদির কাছে সোনার ঠিকানা এসে গেলেই চিঠি। তুমি আসবে। তোমাকে আমার খুব দরকার।

    কেয়া চলে গেলে মঞ্জু পাশের একটা চেয়ারে বসল। সে সোনার দিকে তাকাল। এখানে এসে বোধ হয় সোনাবাবু কেবল পুরোনো দিনের কথাই ভাবছে। কারণ ওর চোখ মুখ দেখে মঞ্জু টের পাচ্ছে, বার বার সে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। কি একটা কথা বলবে বলে তাকাচ্ছে মঞ্জুর দিকে, আবার বোধ হয় সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গিয়ে বোকা বনে যাচ্ছে। কিছু বলতে না পারার লজ্জায় আবার অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

    মঞ্জু বলল, কেমন লাগছে?

    —খুব ভাল। তারপর একটু থেমে অতীশ বলল, স্বপ্নেও ভাবিনি এখানে আবার কখনও আসা যাবে। বোধ হয় না এলে ভাল করতাম।

    —খুব আবেগে ভুগছ দেখছি।

    —আমি ঠিক জানি না, এটা আবেগ কি অন্য কিছু। তবে বিশ্বাস কর—এখানে আসার আগে বাড়িতে ঢুকেছিলাম। আমার সঙ্গে সবাই যেন কথা বলে উঠল। ঠাকুরদাকে দেখতে পেলাম। তিনি তেমনি মাটি থাবড়ে থাবড়ে দিচ্ছেন। বৃষ্টিতে সব মাটি ধুয়ে না যায় সেজন্য তিনি বসে আছেন জেগে। ঠাকুমার গলা শুনতে পেলাম—সোনা বাইরে দাঁড়িও না। বৃষ্টি আসবে। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে। পাগল জ্যাঠামশাইকে দেখলাম তিনি যেন অর্জুন গাছটার নিচে বসে আছেন। ঈশমদাদাকে দেখতে পেলাম। তরমুজের জমিতে লণ্ঠন নিয়ে নেমে যাচ্ছে। দেখলাম দাঁড়িয়ে আছি যব গমের খেতে। কত সব কীট-পতঙ্গের আওয়াজ। কত সব বিচিত্র স্বর কীট-পতঙ্গের ভেতর বেঁচে থাকে মঞ্জু। আমরা টের পাই না। সেই সব স্বরই হয়তো, মানুষেরা যারা হারিয়ে যায়, তাদের। তারা নানাভাবে এই সব গাছপালার ভেতর বেঁচে থাকে। কিছুই বোধ হয় শেষ হয়ে যায় না।

    মঞ্জু এসব শুনে কেমন আগের মতোই সামান্য হাসল। ওর ঠোটের ভাঁজে আশ্চর্যভাবে ফুটে উঠল সেই রহস্যময় হাসি। সে কেমন অস্বস্তি বোধ করল। মঞ্জু যেন খুব পোড়খাওয়া মানুষের মতো তাকে এখন লক্ষ্য করছে। বলছে, তুমি আগের মতোই আছো। এতটুকু বদলাওনি।

    অতীশ বলল, হবে।

    —হবে না। আমি ঠিকই বলছি।

    —কিন্তু তুমি যে অনেক বদলে গেছ।

    —কতটা?

    —কতটা আমি ঠিক বলতে পারব না। তবু অনেকটা মনে হয়।

    মঞ্জু বলল, হবে। না বদলালে বাঁচতে পারতাম না। তুমিও আর সোনা নেই।

    অতীশ ভাবল, সে কোথাও মঞ্জুকে দুঃখ দিয়ে বুঝি কথা বলছে। সে তাড়াতাড়ি যতটা সম্ভব স্বর পাল্টে বলল, সবাই চলে গেল সীমানা পেরিয়ে, তোমরা যে কি সাহসে থেকে গেলে!

    —আমি যে যাইনি তোমাকে কে বলল?

    —চারপাশটা এত বেশি ঠিক-ঠাক আছে যে মনেই হয় না তুমি চলে যেতে পার। চলে গেলে বাড়ি-ঘর এমন ঠিক থাকে না।

    —যারা গেছে, তাদের সবার ঠিকঠাক আছে ভাবছ?

    অতীশ বুঝল সে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ছে। এভাবে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে কিছু বোঝা যাবে না। সত্যি কেউ যেন ঠিকঠাক বেঁচে নেই। কি এদেশে, কি ওদেশে। সে নিজেও তো দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছিল। শেষে যে কি করে বসল। ভাগ্যিস ফতিমা ছিল বাসায়। না থাকলে কি হত, কে জানে! সে জানালায় দেখতে পেল গাছপালার ভেতর দিনের আলো একেবারেই মরে গেছে। বাইরের কিছুই আর স্পষ্ট নয়। সে এবার মুখোমুখি বসল।

    মঞ্জু বলল, তোমার গরম লাগছে না?

    —না।

    —তুমি জামা খুলে ফেলতে পার। বলে উঠে দাঁড়াল মঞ্জু।

    অতীশ বলল, তোমাদের বাড়িতে ফ্যান আলো সব আছে অথচ জ্বলছে না। কলকাতার মতো লোডশেডিং এখানেও চলে।

    —আজ মেরামত শেষ হবার কথা। পত্রিকায় যা খবর, আজই এ-সব অঞ্চলে আলো পাওয়া যাবে। সেই কবে থেকে আমরা যে অন্ধকারে আছি।

    অতীশ বলল, আমি খুব অবাক, গ্রামের কোথাও আর নতুন বসতি হয়নি। ভেবেছিলাম, এখানে সেখানে বাড়ি উঠেছে। শুনেছিলাম, যারা ইণ্ডিয়া থেকে এখানে রিফুজি হয়ে এসেছে, তারা হিন্দুদের সব দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি সব আগাছা আর জঙ্গল। গ্রামটা এখন একটা ছোট- খাটো ধ্বংসাবশেষের সামিল। তার ভেতর এই বাড়িটা আশ্চর্য রহস্যময় তাজা। কবিরাজ দাদা তোমার জন্য বিজলির আলোর বন্দোবস্ত পর্যন্ত করে দিয়ে গেছেন।

    মঞ্জু বলল, অবাক হবার কথা ঠিক কিন্তু তুমি তো জানো, বাবাকে এ-অঞ্চলের মানুষেরা কি ভালবাসতো। বাবাও এ-সব মানুষদের ফেলে শেষ পর্যন্ত যেতে পারলেন না। আমাদের সবুর মিঞা স্টেট ইলেকট্রিসিটির চেয়ারম্যান হয়ে একদিন বাবার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। বললেন, সেনবাবু এ-গ্রামের ওপর দিয়ে বৈদ্যেরবাজারে তার যাচ্ছে। এখানে আমার মানুষেরা দুটো পোস্ট পুঁতে দিয়ে যাবে। আপনি এ-নিয়ে ঝামেলা করবেন না।

    মঞ্জু আঁচলে মুখ মুছল। বোধ হয় সে ঘামছে। হ্যারিকেনের আলোতে ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে না। একটা আবছা মতো মুখ, এবং সেই গন্ধটা, সেই কবে থেকে মঞ্জু আশ্চর্য গন্ধের একটা সাবান ব্যবহার করে আসছে অথবা তেল বা স্নো পাউডার সে জানে না, যে গন্ধটা ভারি মিষ্টি, এবং এখনও অতীশ বসে থেকে তা টের পাচ্ছে। সে মঞ্জুর দিকে ভালভাবে তাকাতে পারছে না। মঞ্জু এখনও তার কোনও পারিবারিক খবর নেয়নি। এমন কি তার খবরও না। সে কি করে, বাসায় আর কে আছে, কিছুই জানার আগ্রহ নেই মঞ্জুর। একটা দীর্ঘ জীবন দু’জনের অজ্ঞাতবাসে কেটে গেছে। ওরা সবাই আছে এক অন্ধকারে। কেউ জানে না, জীবনটা, অর্থাৎ শৈশবের পরে যে জীবন, অর্থাৎ যে রুলতা সমারোহে বড় হতে হতে ডালপালা মেলে দেয়, কে কোথায় কতটা কি ভাবে ডালপালা মেলে দিয়েছে—কে কোথায় কতটা বড় ঝড়ের সামনে পড়েছে—তারা জানে না। কেবল দু’জন এখন মুখোমুখি। চুপচাপ। বাইরে কীট-পতঙ্গের শব্দ। ঘোড়াটা হয়ত এখনও অর্জুন গাছের নীচে ঘাস খাচ্ছে, তার একটা খসখস শব্দ, এবং জলে নৌকা ভেসে গেলে লগির শব্দ।

    কেয়া এ-সময়ে চা নিয়ে এল।

    কেয়া পাশের টেবিলে চা রেখে আলোটা সামান্য বাড়িয়ে দিল। তারপর কেমন হতাশ গলায় বলল, আজও হল না তবে!

    মঞ্জু বুঝতে পারল কথাটা।—তাইতো দেখছি।

    —কবে যে হবে!

    মঞ্জু বলল, ইন্ডিয়া থেকে তো অনেক ইনজিনিয়ার এসেছে! ওরা তো খুব খাটছে।

    কেয়া বলল, এটা তোমার মঞ্জুদি বলে, চায়ের কাপ টেবিলে রাখল।

    কেয়া অতীশের দিকে তাকাল না। বা তাকাতে সাহস পেল না। এটা আপনার। কিছু বিসকুট।

    অতীশ বলল, বিসকুট তুলে নাও। নষ্ট হবে। চান না করে কিছুই মুখে দিতে পারব না।

    —খালি পেটে! মঞ্জু চশমার ভেতর দিয়ে দেখল অতীশকে।

    —খালি পেটে! কোথায়। তুমি কি ভাবছ বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছু খাইনি?

    খাবে না কেন? মঞ্জু চশমা খুলে সোজাসুজি দেখল।

    অতীশ বলল, গুড়ের চা আমাকে দিলে কোনও ক্ষতি হত না।

    —তোমার অসুবিধা হত। অনেক কষ্টে নারাণগঞ্জ থেকে আনিয়েছি। চিনি পাওয়া যায় না। বাইরের লোক এলে দিই।

    —আমাকে বাইরের লোক ভাবছ?

    —তা ছাড়া কি। তুমি ইণ্ডিয়ার মানুষ। আমার গেস্ট।

    অতীশ কী বলবে বুঝতে পারল না। সে চুপচাপ চা খেতে খেতে কেবল মঞ্জুকে দেখল। মঞ্জু ও ওকে চা খেতে খেতে চুরি করে চশমার ভেতর দিয়ে দেখছে। কেউ কোনও আর কথা বলতে পারছে না।

    স্নানের ঘরে মাত্র কেয়া হ্যারিকেনটা পৌঁছে দিয়েছে আর তখুনি জব্বার চাচা ছুটে এসে খবর দিয়েছেন, আলো জ্বলেছে।

    মঞ্জু এ-ঘর ও-ঘর করে সুইচ টিপে দিচ্ছে। বারান্দায় আলো জ্বেলে দিয়েছে। ডাকঘরের সামনে আলো জ্বলে গেল। অতীশ যখন স্নান সেরে পাটভাঙ্গা ধুতি, পাঞ্জাবি পরে এসে বারান্দায় ফ্যানের নীচে দাঁড়াল তখন মনে হল, ভীষণ রূপকথার দেশ। ডিসপেনসারির ওপরে সব পিটকিলা গাছের ডাল। ডালে ছোট ছোট গোল গোল সব গোটা। ডাকঘরের আলোতে সব গোটা সাদা হয়ে গেছে। মঞ্জুর গলা পাওয়া যাচ্ছে।

    বাগানের গাছগুলো একেবারে স্বপ্নের মতো, জানালা দিয়ে সাদা আলো গাছে গাছে পড়ছে। ও- পাশে বড় পুকুর। পুকুরের পাড়ে পাড়ে রসুন গোটার গাছ। আলো পড়ায় আরও লম্বা হয়ে গেছে গাছগুলো।

    কেয়া বারান্দায় কটা নীল রঙের চেয়ার টেনে আনল। কারণ সে যেন জানে সোনাবাবু বারান্দায় এ-ভাবে একা দাঁড়িয়ে থাকলে মঞ্জুদি রাগ করবে। কেয়া চেয়ার পেতে দিয়ে বলল, বসুন।

    —ও ঠিক আছে।

    কেয়া বলল, একটু বাইরে ঘুরে ফিরে দেখবেন?

    —এই রাতে!

    —ভয় কি! আমি সঙ্গে থাকব।

    মেয়েটার তো দুর্জয় সাহস। মঞ্জুর কে হয়! আর কি সপ্রতিভ কথাবার্তায়

    —সাপখোপের ভয় নেই! আগে তো আমাদের এখানে খুব সাপের উপদ্রব ছিল।

    —এখনও আছে। তাই বলে বের হবেন না!

    অতীশ বলল, না না তা বলছি না। মঞ্জু কোথায়?

    —মঞ্জুদি রাতের খাবার করছে।

    অতীশ বারান্দা থেকে নেমে ডাকঘরের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকল। একটা টর্চ হলে হয়ত ভাল হত। কিন্তু কেয়া হয়তো শুনে আবার হেসে উঠবে। সে খুব সন্তর্পণে হাঁটছে। কেয়া পাশে পাশে থাকছে। গাছের ছায়ায় হাঁটতে ভালই লাগছে। মঞ্জু এখন রান্নাঘরে। মঞ্জুকে দেখে ওর যতটা অবাক হবার কথা ছিল, সে যেন ততটা হয়নি। মঞ্জু তার যৌবন এখনও ভীষণভাবে ধরে রেখেছে। দেখলে বোঝা যায় সে বড় একটা ঝড়ের সামনে সোজা দাঁড়িয়েছিল। ভেঙ্গে পড়েনি। তার সরল ঋজু লম্বা শরীর সব অমানুষিকতাকে যেন হেলায় জয় করতে পারে। মঞ্জুকে দেখলে কেন জানি ভীষণ সমীহ করতে ইচ্ছে হয়। মঞ্জু আর আগের মঞ্জু নেই।

    অতীশ বলল, মঞ্জু তোমার কে হয় কেয়া?

    —দিদি হয়। কেমন দিদি?

    —কেমন দিদি আবার। নিজের দিদি।

    —কিন্তু তোমাকে তো দেখিনি। তার বলার ইচ্ছে ছিল, কবিরাজদাদা কি ফের বিয়ে করেছিলেন! কেয়া কি তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে!

    কেয়া আর অতীশ যাচ্ছে এখন ভেতর বাড়ির দিকে। কেয়া যেতে যেতে হা হা করে হেসে উঠেছিল। মঞ্জু মানুষের সাড়া পেয়ে বলেছিল কে যায়?

    —কেয়া বলেছে, আমরা। সোনাবাবুকে নিয়ে ঘুরছি।

    মঞ্জুর আর সাড়াশব্দ নেই। যেন মঞ্জুর জানা, কেয়া সোনাবাবুকে নিয়ে কতদূর যেতে পারে। এ-বাড়ির চারপাশে নানা জায়গায় আলোর ডুম জ্বালানো। এমন একটা অন্ধকার গ্রামে এই আলো না হলে যেন সেনদাদার মতো মানুষের পক্ষে শেষদিকে বাঁচা দায় হত। সবুর মিঞা বুঝেসুজেই এমন একটা এলাহি কান্ড এখানে করে দিয়ে গেছে।

    কেয়া বলল, আপনি এত কি ভাবেছন বলুন তো!

    —কবিরাজদাদা তোমার কেউ হয়?

    —না।

    —তবে?

    —তবে কি বলব আপনাকে! আমি এখানেই আছি। বড় হয়েছি। আব্বা সেনবাবুর কাছেই মানুষ। আব্বাকে সেনবাবু ওষুধের নামটামও বলে গেছে অনেক। আব্বা তাঁর ডিসপেনসারি ছাড়া কিছু বোঝেন না। তারপর আরও কি বলতে গিয়ে কেন যে সে থেমে গেল!

    —তুমি তবে এখানেই থাক। অতীশ হাঁটছিল। যেন জন্মভূমির জল হাওয়া গায়ে লাগাতে বের হয়েছে।

    —এখানেই আছি।

    —কোন অসুবিধা হয় না?

    —কেন, অসুবিধা হবে কেন!

    —এই তোমাদের আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে?

    —না। অসুবিধা তো একটা জায়গায়। ওটা না থাকলে তো বলেই কেয়া কেমন অন্য কথায় চলে এল, এবং সেই পুকুরের পাড়ে পাড়ে যে রসুন গোটার গাছ আছে, যে গাছগুলো খাড়া, যারা রাতে হেঁটে বেড়ায় বলে অতীশের শৈশবের ধারণা, তার ভেতর ঢুকে বলল, মঞ্জুদি এখানে এলেই কেবল আপনার কথা বলত। দাদাবাবুও তাই। বলত, সোনা যে কোথায় আছে, কত বড় হয়েছে।

    —দাদাবাবু মানে?

    —দাদাবাবু মানে দাদাবাবু।

    অতীশ কিছুক্ষণ আর কথা বলল না। গাছের নিচে ঘুরে বেড়াতে তার আর ভাল লাগছিল না। পাশে খাল। খালের ওপারে পেরী ঘোষের বাড়ি। অন্ধকারে বাড়ির গাছপালা স্পষ্ট নয়। সামনে সেই সোনালি বালির নদী। বর্ষাকাল বলে নদীর সীমারেখা স্পষ্ট নয়।

    অতীশ বলল, পেরী ঘোষের ছেলেরা আছে?

    —কেউ নেই। পেরী ঘোষের ছোট ভাই হাবুল ঘোষ চার পাঁচ বছর আগে চলে গেল। এখন বাড়িটা ছাড়াবাড়ি।

    —ও-পাশে একটা তেঁতুলের বন ছিল। সেটা আছে?

    —ওটা আছে।

    —তারপর তো দালানবাড়ির পুকুর আমবাগান।

    —আমবাগানে কিছু রিফুজি আছে।

    কেয়া বলল, চলুন বারান্দায় গিয়ে বসি।

    —তোমার ভয় করছে।

    কেয়া হাসল। ভারি মিষ্টি হাসি। সে সেই ডুরে শাড়িটাই পরে আছে। পায়ে সেই নীল রঙের স্ট্র্যাপ দেওয়া কাঠের খড়ম এবং বড় পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসে কেয়া। আর ওর গোড়ালি অতীশ দেখতে পাচ্ছে। খুব মসৃণ গোড়ালি—লাল আভা। কেয়াকে মাঝে মাঝে খুব বিষণ্ণ লাগে। কথা বলতে বলতে কেয়া মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

    অতীশ ফেরার সময় বলল, দাদাবাবু এখানেই থাকতেন?

    —তবে কোথায় থাকবে? ওইতো ছিল সব। সেনবাবু মারা যাবার আগে কবিরাজী বিদ্যাটা ওকে দিয়ে গেছিলেন।

    —তাহলে দাদাবাবু এখানে সেমবাবুর মতো ঘোড়ায় চড়ে অনেক দূরে চলে যেত।

    —না গেলে চলবে কি করে বলুন। রোগে ভোগে এমন বিশ্বাস তো আমাদের আর কারো ওপরে নেই।

    কেয়ার চুল উঁচু করে তেমনি খোঁপা বাঁধা। সে গাছের ছায়ায় অথবা বাঁকে বাঁকে আশ্চর্য ভাবে ঢুকে যাচ্ছে, বের হয়ে আসছে। অতীশের অভ্যাস নেই বলে বেশ দেরি হচ্ছে বের হয়ে আসতে। ঝাফরি কাটা আলো ওদের ওপর ছড়িয়ে যাচ্ছিল। মাছ ভাজার গন্ধ আসছে। মঞ্জু অতিথির জন্য সুস্বাদু খাবার তৈরী করছে। মুগ ডাল রান্না করছে মঞ্জু, সে তাও টের পাচ্ছে। মঞ্জু বেগুন ভাজছে। সব গন্ধ চারপাশে ম ম করতে থাকলে অতীশ বলল, কেয়া তুমি পড়াশোনা করছ তো?

    কেয়া বলল, সোনাবাবু আপনার কি ধারণা?

    —আমাদের সময় তোমাদের স্কুলে যাওয়া বারণ ছিল।

    —সব পাল্টে গেছে।

    —তোমার নামও আমার মনে হয়। কী সুন্দর নাম?

    কেয়া লাফ দিয়ে বারান্দায় উঠে গেল। বেশ ব্যালেন্স রেখে সে সোজা দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু অতীশের সাহস হল না। কেয়া তারপর অতীশের দিকে তাকাল। আলোর মুখোমুখি অতীশ, কেয়ার পেছনে আলো। একজনের মুখ আলোর দিকে, অন্যজনের মুখ অন্ধকারের দিকে। কেয়া বলল, আমার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন?

    —না।

    —কেন নয়?

    —ঠিক আলো পড়ছে না বলে।

    —আলো পড়লে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত না আমি কেয়া?

    —আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কেয়া। তুমি আমাকে কি বলছ বুঝতে পারছি না।

    —আমি জব্বার মিঞার মেয়ে ভাবতে আপনার কেন কষ্ট হয় বলুন?

    অতীশ খুব লজ্জায় পড়ে গেল। মনে মনে এমন একটা সংশয় তার তো ছিলই।

    অতীশ বুঝতে পারল সে কেয়াকে যতটা সহজ সাধারণ গোবেচেরা ভেবেছিল –কেয়া আদৌ তা নয়। কেয়াকে এ-ভাবে ছোট ভাবাও তার উচিত হয়নি। নানাভাবে কেয়া বুঝে ফেলেছে অতীশ মনের কথা ফের গোপন করতে যাচ্ছে। জব্বার চাচার মেয়ে, এটা বিশ্বাস না হবারই কথা। প্রথমত তার নামে, তার আচরণে কোথাও মুসলমান মেয়েদের সঙ্গে যেন মিল নেই। চোখে সুমা টেনে দিলে যা হয়ে থাকে, অথবা কাজল, একটা আলগা ভাব, অথবা অবহেলা, সেটা সোনাবাবু এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অতীশ বলল, তুমি মনে কিছু কর না কেয়া।

    কেয়া চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বলল, বসুন। আপনি ঘেমে গেছেন।

    অতীশ বলল, আমি ঘেমে গেছি! সে কপালে হাত দিল।

    কেয়া জোরে ফ্যান চালিয়ে দেবার সময় বলল, মঞ্জুদি কিন্তু আমাকে একদিনও বলেনি আপনি আসবেন।

    —আমি নিজেও জানি না, আমি আসব।

    —তবে এলেন যে!

    —চিঠিটা আমাকে কেয়া কেন যে এত বেশি করে শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিল। মঞ্জুর কথা মনে করিয়ে দিল! পাগল জ্যাঠামশাইয়ের কথা, অর্জুন গাছের সেই হস্তাক্ষর দেখলাম, গাছের ছাল বাকল তুলে আমার সেই হস্তাক্ষর কারা হজম করে দিয়েছে। সে ইচ্ছা করেই ফতিমার কথা বলল না। কেন গোপন করে গেল সে নিজেও জানে না। তাছাড়া ফতিমার সঙ্গে তার আর যোগাযোগ নেই

    তখন মঞ্জু আসছে হাতে প্লেট নিয়ে। –মাছ ভাজা খাও। আর গল্প কর। মঞ্জু দুটো প্লেটে বড় বড় ইলিশ ভাজা রেখে দিল। তারপর ডাকল, হাবলি, জল দে এখানে। সে কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তুইতো একটু জল নিয়ে আসতে পারিস।

    মঞ্জু চলে গেলে অতীশ বলল, তোমাদের দেখে মনেই হয় না, ন’দশ মাস আগে তোমরা কি ভীষণ একটা অরাজকতার মধ্যে ছিলে!

    কেয়ার হাসিখুশি মুখ সহসা ব্যাজার হয়ে গেল। সে মাথা নিচু করে বসে থাকল। ধীরে ধীরে বলল, যা হয়েছে, আমরা খুব তাড়াতাড়ি তা ভুলে যেতে চাইছি সোনাবাবু। তারপর সে কি ভাবল, ভেবে অতীশের মুখ, সামান্য চোখ তুলে দেখল।—ন’দশ মাস আগে কি ঘটেছে ঘুণাক্ষরেও মঞ্জুদির কাছে জানতে চাইবেন না। কখনও বলবেন না, মঞ্জু তুমি তখন কিভাবে বেঁচে ছিলে। বললে মঞ্জুদি আবার চুপচাপ জানালায় দাঁড়িয়ে থাকবে।

    এখন চারপাশে কি কঠিন নির্জনতা। কোথাও কোনও শব্দ নেই। ডিসপেনসারি ঘরের জানালা খোলা। জব্বার চাচা একটা কাগজে ছোট ছোট পিল তৈরি করছেন। দু আঙ্গুলে গোল গোল করে ওষুধের বড়ি সাজিয়ে যাচ্ছেন। আর একটু রাত হলে ঘোড়াটাকে এনে বোধ হয় জব্বার চাচা আস্তাবলে বেঁধে রাখবেন। তারপর বাগান, গাছগাছালি পার হয়ে বর্ষার জল, কিছু কীট-পতঙ্গের আওয়াজ। সে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে আছে। পাশে কেয়া কেমন অপরিচিত। যেন কোনও স্টেশনে বসে রয়েছে। ট্রেন এলেই যে যার কামরায় উঠে গিয়ে বসবে।

    অতীশের আর সাহস হল না কিছু জানতে। দাদাবাবুর কি নাম, সে কোথায়, মঞ্জুর ছেলেপুলেরা! বাড়িতে কোনও শিশুরই সাড়া শব্দ নেই। মঞ্জুর এখন ভরা যৌবন, সব মিলে সে ভয়ে ভয়ে কেবল বলল, এদিকে খানসৈন্যরা এসেছিল?

    —কাল দেখাব।

    —কি দেখাবে? অতীশ ভীষণ অবাক হল কেয়ার কথায়।

    —ওদের এখানে একটা কোম্পানী মজুদ ছিল।

    —কোন দিকটায়?

    —গোপেরবাগ উঠে যেতে যে বড় আমবাগানটা ছিল তার ভেতরে।

    —তবে তো বেশি দূর না।

    —কে বলেছে দূর!

    —তুমি এখানেই ছিলে!

    —কোথায় যাব।

    —অনেকেই তো পালিয়ে ইজ্জত বাঁচিয়েছে।

    —সবাই তা পারেনি।

    অতীশের বলতে ইচ্ছে হল, তোমরা পেরেছ! কিন্তু সে বলতে গিয়ে কি এক অসীম কুণ্ঠায় চুপ করে গেল। সে বোকার মতো কেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল শুধু।

    এ-ভাবে বেশ সময় কেটে গেল। ওরা কেউ কথা বলছে না। দু’জনে চুপচাপ মুখোমুখি বসে আছে। এ-সময়টাতে ছোটকাকা ঠাকুরঘরে থাকতেন। তাঁর অনবরত ঘন্টা নাড়ার শব্দ, অনেক দুর থেকে শোনা যেত। ওরাও তখন পড়ত দুলে দুলে। মাস্টার মশাই মধ্যমণি হয়ে বসে থাকতেন।

    মঞ্জু রান্নার ফাঁকে ফাঁকেই চলে আসছে। সে মাঝে মাঝে নানারকম ঠাট্টা তামাসা করতেও ছাড়ছে না। এই যেমন একবার বলে গেল, কেয়াকে তোমার কেমন লাগে।

    —খুব ভাল।

    —ওর একটা ভাল বিয়ে দিয়ে দাও তো।

    —বললেই দিতে পারি।

    কেয়া তখন ধ্যাৎ বলে উঠে চলে গেল। মঞ্জু বলল, দেখলে কেমন রাগ মেয়ের।

    —আচ্ছা ওর নাম তো মেহরুন্নিসা হওয়া উচিত ছিল। ভারি মানাতো।

    —মেহেরুন্নিসাই তো ওর নাম। আমরা ওকে কেয়া বলে ডাকি।

    অতীশ খুব দার্শনিকের গলায় বলল, কেন যে আমরা সব ভিন্নদেশের মানুষ হয়ে গেলাম! কেয়াকে দেখে আমার তো এখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

    মঞ্জু বলল, কাকীমাকে লিখে দেব এসব কথা

    —তা লিখে দিও। লিখে দেখতে পার বিশ্বাস করে কি না।

    মঞ্জু বলল, তোমার কিছুই আমার এখনও জানা হল না। কেবল ঠিকানাটাই পেলাম। ফতিমা ঠিকানাটা পাঠিয়েছে ওর এক ফুফাত ভাইকে দিয়ে। ওতো কত বছর হল, আর এদিকটায় আসে না। তারপর একটু থেমে বলল, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। কত কথা যে তোমাকে বলব বলে বসে আছি।

    কেয়া এসে বলল, মঞ্জুদি ডালে একটু জল দিতে হবে।

    —যাচ্ছি।

    অতীশ বলল, তুমি দিয়ে দিতে পারছ না। কেবল দিদিকে খাটাচ্ছ! মঞ্জু বলল, ও দিলে তুমি খাবে?

    —খাব না কেন! তুমি দিলে খেতে পারি, ও দিলে খাব না কেন।

    —কিন্তু আমি যে এখনও সংস্কার কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

    —বলছ কি। এত সব ঘটে যাবার পরও!

    মঞ্জু কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সে বলল, কেয়া আমি আসছিরে।

    —মঞ্জু চলে গেলে কেয়া বলল, এটা আপনি কি করলেন সোনাবাবু!

    —কি করলাম!

    —কি করলেন বুঝতে পারছেন না।

    —না!

    —মঞ্জুদির মুখটা দেখলেন না?

    —দেখলাম তো।

    —কেমন উদাসীন হয়ে গেল না চোখ মুখ

    —হ্যাঁ তা কেমন হয়েছে।

    —কেন যে বলতে যান!

    অতীশের মনে হল সত্যি সে বলে ফেলে ভাল করেনি। এত সব ঘটে যাবার পর, কি এত সব ঘটেছে, বিশেষ করে মঞ্জুর জীবনে, সেতো কিছুই জানে না। চারপাশে নানা রকম রহস্য শুধু, যেমন জব্বার চাচার জোর-জার করে টাকা রেখে দেওয়া, যেমন চারপাশে আর কোনও লোকালয় নেই—এত বড় গ্রামে ভারি নির্জন এই বাড়িটাতে চেঁচামেচি করলে কেউ শুনতেও পাবে না, কেবল পাশের গোপাট দিয়ে কখনও মানুষেরা নৌকা বেয়ে চলে যায়। আর কি আছে এখন এ-গ্রামে বসবাস করার মতো! অথচ মঞ্জু এখানেই থেকে গেল। ওদের তো ঢাকা শহরে একটা বাড়ি ছিল। ওর জ্যাঠামশাই অমূল্য সেন সেখানে থাকত। লক্ষ্মীবাজারে ওদের বড় এটা কবিরাজীর দোকান ছিল। মঞ্জু তো ওদের সঙ্গে সীমানা পার হয়ে চলে যেতে পারত।

    এমন সব ভাবতে ভাবতে ওর কেমন রাগ বেড়ে গেল! মঞ্জু ছেলেবেলাতেই ছিল ভীষণ একগুঁয়ে। সে জানে না, ওর ভেতরে কি আশ্চর্য আকর্ষণ আছে! গ্রামদেশে এমন রূপবতী মেয়ের বড় হওয়া ভীষণ ভয়ের। তবু সেনদাদা যেহেতু ছিলেন এ-অঞ্চলে গণ্যমান্য মানুষ, সেজন্য বোধ হয় কেউ মেয়েটার বড় হওয়া নিয়ে ঘোড়ায় চড়া নিয়ে ছোট কথা বলতে সাহস পেত না। এবং এ-মেয়ে ঘোড়ায় চড়া না শিখলে যেন মঞ্জু সেন হত না।

    —আমাকে কেমন লাগছে সোনা। মঞ্জু ঘোড়ায় চড়ে বলত।

    —ঝানসির রাণী লক্ষ্মীবাই।

    তখন তারা ছোট ছিল আর ছিল কল্পনায় আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর জওয়ান। মঞ্জুকে রাণী লক্ষ্মীবাই ভাবতে ওদের ভীষণ ভাল লাগত। কল্পনায়, সোনা অবনী রসো সবাই ছিল এক একজন বীর জওয়ান। মঞ্জু আদেশ করলেই যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ত। মঞ্জুকে পিঠে নিয়ে ঘোড়াটা কদম দিলে ওরা পিছু পিছু মঞ্জুকে ধরার জন্য ছুটত। কিন্তু ঘোড়াটা ছিল ভীষণ বজ্জাত। সে বুঝতে পারত বুঝি কেন তারা পেছনে পেছনে আসছে।

    ঘোড়াটা প্রথম কদম দিত। মঞ্জুর ববকাটা চুল উড়ত বাতাসে। ফ্রক উড়ত বাতাসে। ওর হাত থাকত সামনে। সে লাগামে কি যে সুন্দরভাবে হাত রেখে দিত। আর জিনে পা রেখে পেটে খোঁচা মারলে ঘোড়াটা মাঠের ওপর দিয়ে দ্রুত ছুটত। ওটা কি ঘোড়াটার বদজাতি ছিল, না মঞ্জুর, ওরা সে-বয়সে বুঝতে পারত না। শুধু দেখতে পেত, টোডারবাগের মাঠ পার হয়ে হাসান পীরের দরগার বড় শিমুল গাছটা পার হয়ে ঘোড়াটা ফাওসার বিলের দিকে যাচ্ছে। ওরা তখন কে কোথায় ছিটকে পড়ে থাকত মঞ্জু যদি একবার ঘাড় ফিরিয়ে দেখত!

    এমন হলেই মঞ্জুর সঙ্গে ওদের ভীষণ গোলমাল বেধে যেত। বিশেষ করে অবনীর। সে বলত, দাঁড়া আমি দেখাচ্ছি মজা।

    অবনী এমন বললেই, সোনার খুবই খারাপ লাগত। অবনী একটা কিছু করে ফেলতে পারে। কিন্তু সে একটা কিছু করে ফেললেই সেও দায়ি থাকবে। কবিরাজ দাদা যদি কাকাকে সব বলে দেয় তবে, কি যে হবে না! তখন ছিল সোনার যত অনুনয় অবনীকে। ঠিক আছে, আমি বলব মঞ্জুকে, মঞ্জু তুই আর একবার কথা বল অবনীর সঙ্গে। অবনী ভীষণ রাগ করেছে।

    অবনী বলত, দেব একখানা ঝেড়ে। ঘোড়ায় চড়া বের করে দেব।

    সে জানে এটা অবনী পারে। অনায়াসে পারে। একটা কিছু করে দিন সে বেশ ক’দিন উধাও হয়েও থাকতে পারে। ওর বাবা ওর সম্পর্কে যেন জেনে ফেলেছিল ওটার কিছু হবে না। কাজেই কোথাও চলে গেলে আবার যথাসময়ে ফিরে আসবে ওর বাবা তা জানত। অবনী কখনও ফিরে এলে বলত, কোথায় ছিলিরে?

    —মামাবাড়ি গেছিলাম।

    —তুই একা চিনে যেতে পারিস?

    —পারব না কেন, এই তো দনদি পার হয়ে হরিহরদি, তারপর দুটো গ্রাম, তারপর নদী, তারপর একটা বড় মসজিদ বিশ্বাসদের, ওটা পার হলেই বড় একটা মাঠ। মাঠে পড়লেই যা আমার ভয়। চোখ বুজে তখন ছুটতে থাকি। আমি একবার নিশির পাল্লায় সেখানে পড়ে গেছিলাম। তারপর নিশি সম্পর্কে বিস্তারিত খবর, সুতরাং অবনী তাদের কাছে নানাকারণে হিরো ছিল। সে একটা আস্ত নিশিকে বোকা বানিয়ে ওর গলা থেকে মালা তাবিজ চুরি করে চলে এসেছিল পর্যন্ত!

    —নিশি তো ভুতের সামিল, সে এমন বলত।

    —ভূতেরা বুঝি গলায় মালা তাবিজ পরে না। কি যে আহাম্মক না তোরা।

    এরপর অবনীকে তারা আর অবিশ্বাস করতে পারত না। তা ভূত তো সব করতে পারে। সামান্য মালা তাবিজ পরতে পারে না সেটা কি করে হবে!

    এভাবে অবনী ছিল কড়া মেজাজের। এক রোখা। রোখ চেপে গেলে সে ঘোড়াটার পেছনে খোঁচা মেরে দিত। তারপর ছুটে পালাত। কিন্তু ঘোড়াটা ছিল বেশ চালাক। ছোট ঘোড়া বলেই যেন কথা শোনে। মঞ্জুর বাবা শহরে গেলে ঘোড়াটা ছাড়া থাকত। ওর দুপায়ে থাকত দড়ি বাঁধা। ঘোড়াটা বেশি দূর যেতে পারত না। মঞ্জু ঘোড়ায় চড়লে ওরা ঠিক টের পেয়ে যেত—সেনদের বাড়ির মেয়েটা এখন মাঠের ভেতর ঘোড়ায় চড়ে বেড়াচ্ছে। তারা তখন ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে মঞ্জুকে দেখত। গাছপাতার ভেতর থেকে ঘোড়ার ওপরে মঞ্জুকে দেখতে তখন বড় ভাল লাগত।

    কেয়া বলল, কি ভাবছেন?

    —পুরোনো কথা।

    —পুরোনো কথা না বলে বলুন শৈশবের কথা।

    —তোমার শৈশব মনে পড়ে না কেয়া?

    —কার না মনে পড়ে!

    —ভারি ইনটারেসটিঙ না!

    —ঠিক জানি না।

    —আমার কিন্তু ভীষণ ভাল লাগে ভাবতে। যেমন ধর মঞ্জু, ওকে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না এই সেই মঞ্জু। আমার বার বার মঞ্জুর শৈশবের কথা মনে আসছে। ও যখন ঘোড়ায় চড়ে যেত কি যে বিউটিফুল লাগত তখন!

    কেয়া বলল, উঠুন, খাবার রেডি। ঘোড়া ঘোড়া করে মাথা খারাপ। সে ঘোড়া কি আছে! এটা অবনীবাবুর ঘোড়া। মঞ্জুদিকে বলতে হবে, কি যে বিউটিফুল লাগত তখন।

    ওরা দুজনেই এবার হেসে উঠল। আর মনে হল খুব অল্পসময়ে বড় কাছাকাছি এসে গেছে তারা। কেয়া তার সামনে হা হা করে হাসতে পারছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআওরঙ্গজেব : ব্যক্তি ও কল্পকথা – অড্রি ট্রুসকে
    Next Article মানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }