Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঈশ্বরের বাগান – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1863 Mins Read0

    ঈশ্বরের বাগান – ৭০

    ॥ সত্তর ॥

    মঞ্জু বলল, এটা আমার ঘর।

    অতীশ বলল, এ-ঘরে আগে অনজু পিসি থাকত।

    —তার আগে থাকত মা। মা মরে যাবার পর এ ঘরে কেউ থাকত না। অনজুদি শহর থেকে এলে থাকত।

    অতীশ বলল, কেয়া কোন ঘরটায় থাকে! এ-বাড়ি শত হলেও হিন্দুর বাড়ি—কেয়া এবাড়িতে থাকতে পারে এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশেষ করে মঞ্জুর ছুচিবাই দেখে সে এটা অনুমান করতেই পারে।

    —পাশের ঘরটাতে।

    —তোমার ঘর পার হয়ে যেতে হয়!

    —ও ঘরে আর একজন থাকে!

    অতীশ বুঝতে পারছে না সে কে?

    মঞ্জু বলল, এস দেখবে।

    অতীশ মঞ্জুর পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকে গেল। কেয়া নেই। কিন্তু সে অবাক, আট দশ বছরের একটি ছেলে চুপচাপ শুয়ে আছে। চোখ দুটো ভীষণ তাজা, কিন্তু বড় রুগ্‌ণ।

    মঞ্জু বলল, আমার একমাত্র ছেলে নীলু।

    অতীশ ওর পাশে বসে ছেলেটার কপালে হাত রাখল। মঞ্জুকে উল্টে পেয়েছে, যেন ছোট মঞ্জু। ওর কি অসুখ ইচ্ছে ছিল প্রশ্ন করবে। কিন্তু ঠিক নীলুর সামনে এ-কথা বলা হয়ত ঠিক হবে না। মঞ্জু নীলুর মাথায় হাত রেখে বলল, তোমার সোনা দাদা। আমি ওকে বলেছি, সোনা কাকাকে চিঠি দিয়েছি, দেখবে সে ঠিক আসবে।

    অতীশ ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। চুল বেশ বড় হয়ে গেছে। মাথাটা একরাশ চুলে ঢাকা। অতীশের বলতে ইচ্ছে হল, তোমার মানুষটির কি খবর! কিন্তু কপাল এবং সিঁথি দেখে সে সাহস পাচ্ছে না। ছেলেটির চোখে আশ্চর্য মায়া। যেন তাকিয়ে থাকলেই সে টুটুল মিণ্টুর মায়ায় আটকে যাবে। টুটুলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যা দুষ্টু! রক্ষা, নির্মলা কলকাতার স্কুলে শেষ পর্যন্ত চাকরি পেয়ে গেছে। নির্মলাকে ছেড়ে তাকে আর থাকতে হয় না।

    মঞ্জু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, আমার এখন এই একমাত্র অবলম্বন সোনাকাকা।

    মঞ্জু এ-ভাবে সোনাকাকা ডাকলে সে ভয় পায়। যখন খুব স্বাভাবিক থাকে তখন মঞ্জু সোনাকে সোনা বলেই ডাকত। সোনাকাকা বললেই যেন মনে হয় নঞ্জু তার কাছে ভীষণ প্রত্যাশা নিয়ে বসে আছে। ঠিক ছেলেবেলার মতো। সোনাকে একদিন সে বলেছিল, তুমি আমার সম্পর্কে কাকা। তুমি অবনীকে বলে দাও না ওকে আমি ভালবাসি না।

    তার যে কি ভয় সে কথাটা বলতে! অবনী মঞ্জু খুব কম বয়সেই একটু বেশি পেকে গেছিল। আমি কি করে বলি! আমি বললে, সে ভাববে আমার কোনও স্বার্থ আছে মঞ্জু। তুমি বলে দিও। আমি বরং অবনীকে ডেকে নিয়ে আসব। আমরা বরং রসুন গোটার গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি চুপি চুপি এসে অবনীকে বলে যেও

    মঞ্জু সব সময় সোজাসুজি কথা বলতে ভালবাসত। ভাল বাসাবাসির সঠিক মানে তখন সোনার খুব বেশী জানা ছিল না। অবনীকে বলে দিও, আমি ওকে ভালবাসি না মানে, ওকে আমার পছন্দ নয় ও খুব একগুঁয়ে। মানুষের সম্মান রাখতে সে জানে না। মঞ্জু এমন বলতে চাইত। তখন তাদের কৈশোর শুরু।

    ঘরে সামান্য আলো। খুব কম পাওয়ারের আলো জ্বালানো। বোধ হয় খুব বেশি আলো ছেলেটা সহ্য করতে পারে না। অতীশ একটা চেয়ারে বসে আছে এখন। সে এমন এক রুগ্‌ণ বালকের সঙ্গে কি যে কথা বলবে! বিশেষ করে মানুষের বিপদ দেখলে সে ঘাবড়ে যায়। মঞ্জু নানারকম সমস্যায় পড়ে তাকে আসতে লিখেছে। এটা একটা আনন্দের বেড়ানো যে নয় সারা বিকেল এখানে থেকে এবং কেয়ার সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরেছে।

    তাছাড়া সে পত্র-পত্রিকায় যা পড়েছে, যা অরাজকতা চলছিল, তাতে মঞ্জুর ভাল থাকার কথা না। মঞ্জুর কিছু একটা বিপদ হবারই কথা। না হওয়াই অস্বাভাবিক। সে জন্য খুব জোর দিয়ে ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছে না। সে বরং নীলুকেই যেন প্রশ্ন করতে পারে, নীলু তুমি কেমন আছ।

    —আমি ভাল আছি।

    মঞ্জু পাশে দাঁড়িয়ে ম্লান হাসল।

    অতীশ টের পেয়েছে, মঞ্জুর মুখের হাসিটুকু ভীষণ হতাশার। ‘আমি ভাল আছি’ মঞ্জুকে খুব কষ্ট দিচ্ছে ভেতরে ভেতরে। নীলুর কি অসুখ তাও সে জানে না। তা ছাড়া সে বুঝতে পারল না মঞ্জু একে একে সব দেখাচ্ছে কেন। এক সঙ্গে সে কিছু বলছে না। দেখাচ্ছে না।

    সে যেন বলতে চাইল, মঞ্জু তুমি আমাকে আর কি কি দেখাবে বলে ভেবে রেখেছ।

    মঞ্জু বলল, এই নীলু আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ওর জন্য কিছু একটা আমি করে ফেলতে পারছি না।

    ঠিক নীলুর সামনে এমন কথা অতীশের ভাল লাগছিল না। এমন কথা বলার পরই বোধহয় মঞ্জু কাঁদে। কারণ সে দেখতে পাচ্ছে নীলু মুখ ঘুরিয়ে মাকে দেখার চেষ্টা করছে। মা এ-সব বলে আবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কিনা। সে ঘাড় ঘুরিয়ে মাকে দেখার চেষ্টা করছে।

    অতীশ বলল, নীলু তোমার খাওয়া হয়েছে?

    নীলু মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।

    —তুমি কি খেতে ভালবাস?

    —আমার বেতের ডগা সেদ্ধ খেতে ভাল লাগে।

    অতীশ ভারি বিস্মিত হল। বেতের ডগা সেদ্ধ খেতে ভীষণ ভাল। সুগন্ধ আতপ চাল, একটু ঘি, একটু কাঁচা লঙ্কার ঘ্রাণ আর বেতের ডগা সেদ্ধ, ঠাকুমা যখন উপাসের দিন খেতেন তখন সে লালটু পলটু গোল হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত—ঠাকুমা কখন ডাকবে। কখন বড় ভাতের দলা, একটু নরম বেতের ডগা সেদ্ধ হাতে হাতে দেবে। নীলুর এ-সব ভাল লাগে। খুব সহজ এ- সব এখানে পাওয়া। বেতের জঙ্গল মেলা। বেতের ডগা কেটে আনলেই হল। সে বলল, আর কিছু খেতে ইচ্ছে হয় না?

    নীলু পাশ ফিরে শুল। খুব ধীরে যেন কত কষ্ট হচ্ছে, এমন কষ্ট দেখে ওকে সাহায্য করতে গেলে মঞ্জু বাধা দিল।—ওকেই পাশ ফিরতে দাও।

    সে আর সাহায্য করল না। নীলু কোনও রকম পাশ ফিরে বলল, আমার ভীষণ মিষ্টি খেতে ভাল লাগে। মা দেয় না। তুমি আমাকে এনে দেবে?

    অতীশ বলল, দেব। তুমি ভাল হলেই এনে দেব।

    —আমি আর ভাল হব না সোনাদাদা।

    —কেন হবে না। কলকাতায় এসব অসুখ অসুখই না। সেখানে কত বড় বড় ডাক্তার আছে। দেখবে সেখানে গেলেই তুমি ভাল হয়ে যাবে। বলেই সে নিজের কাছে ভীষণ অপরাধী ভেবে ফেলল। আসলে সে এ-ভাবে কথা বলছে কেন। মঞ্জু তো তাকে নীলুর নিরাময় নিয়ে কোনও কথা বলেনি। মঞ্জু তো চিঠিতে লিখেছে, তোমাকে খুব দরকার। তুমি এস। সেটা যে কি সে জানে না। সে বলল, তোমার কিছুই হয়নি নীলু। কাল দ্যাখো আমি তুমি বারান্দায় বসে গল্প করব।

    মঞ্জু বলল, এস।

    অতীশ উঠে দাঁড়াল। আমি যাচ্ছি নীলু। অনেক রাত হয়েছে।

    —আর একটু বোস না।

    —কাল সকালে আবার তোমার ঘরে আসব।

    —মা তুমি একটু বসো।

    —তোমার দাদার শোবার ব্যবস্থা করে আসছি।

    —আমি জানি তুমি আর আসবে না!

    —কেন আসব না?

    —তুমি মা আমার ঘরে আসতে চাও না।

    —কি যে তুই বলিস নীলু?

    —আমি ঠিক বলছি দাদা। মা এ ঘরে ঢুকতেই ভয় পায়। কেয়া মাসিকে আমার ঘরে রেখে দিয়েছে।

    অতীশ ঘর পার হতে হতে এসব শুনছিল। মঞ্জু, নীলুর মৃত্যুর অপেক্ষায় কি তবে বসে আছে! সে এখন শুধু কি দিন গুনছে! যাতে মায়া কমে যায় নিষ্ঠুরতার সামিল যদিও, মঞ্জু সহসা কোনো বেশি প্রয়োজন না থাকলে ঘরে বোধ হয় ঢুকতে চায় না।

    মঞ্জু যেতে যেতে বলল, নীলু যতদিন আছে, আমাকে দাঁত কামড়ে এখানে পড়ে থাকতে হবে।

    অতীশ সোজা হেঁটে যাচ্ছে ওর ঘরের দিকে। মঞ্জু পেছনে আসছে, মঞ্জু আরও কথা বলবে। সে ওর কথায় বাধা দিল না। সে ঘরে ঢুকে সিগারেট ধরাল। মঞ্জু বড় খাটে মোটা তোষক ফেলে দিচ্ছে। তার ওপর সাদা ধবধবে চাদর। সব কাজ সে নিজ হাতেই করছে। কেয়া এ-সময় ওকে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু এত রাতে সে কেয়ার সাড়াশব্দ একেবারে পাচ্ছে না।

    অতীশ কাল, কেয়া কোথায়?

    মঞ্জু যেন শুনতে গায়নি। সে মশারি ফেলে দেবার আগে বলল, তুমি শুয়ে পড়। মশারি গুঁজে দিচ্ছি।

    —ওটুকু আমি করে নিতে পারব মঞ্জু। তুমি বরং নীলুর কাছে যাও।

    মঞ্জু বলল, এখানে জল থাকল। পাশের জানালা খোলা রেখ না। আজকাল বড় চোরের উৎপাত হয়েছে।

    অতীশ বলল, এখানে কি করে আছ মাথায় কিছুতেই আসছে না।

    —গাঁয়ে থাকা তো অভ্যাস নেই তোমার! প্রথম প্রথম অস্বস্তি হবে। তারপর সয়ে যাবে। অতীশ বুঝতে পারল না মঞ্জু এর দ্বারা কি বোঝাতে চাইছে। সে কি এখানে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এসেছে! মঞ্জুর কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে ইচ্ছে করলেই এখানে সে যতদিন খুশি থাকতে পারে। যেন তার সংসারের কোনও দায়-দায়িত্ব নেই। সে স্বাধীন মানুষ। এমন কি ইচ্ছে করলে সে এখানেই থেকে যেতে পারে। মঞ্জুর কথা শুনে ওর হাসি পেল। এবং এজন্যই বুঝি মঞ্জু কোনও কিছুতেই তাড়াহুড়ো করছে না। খুব ধীরে-সুস্থে সব বলা যাবে এমন ভাব। সে তবু বলল, মঞ্জু কবিরাজদাদা কবে মারা গেল?

    —প্রায় বছর পাঁচেক হবে।

    —তুমি কি তখন থেকে এখানেই আছ?

    —কোথায় যাব তবে।

    —বিয়ে হলে মেয়েরা তো বাপের বাড়ি থাকে না।

    —বিয়ের পর থাকতে পারে।

    —তা পারে।

    —তবে?

    মঞ্জু এই তবেটুকু বলেই আর দাঁড়াল না। মঞ্জুর সুন্দর কোঁকড়ানো চুলে আশ্চর্য সব ভাঁজ। সামান্য পরিশ্রমেই কপালে ওর ঘাম দেখা দেয়। যাবার সময় মঞ্জু চোখ তুলে তাকালে সে বুঝতে পেরেছিল, এ ঘরে একা এলেই মঞ্জু ঘেমে যায়। মঞ্জু তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সেরে ফেলতে চায়। মঞ্জু চলে গেলে সে স্যুটকেসটা খুলে কি যেন বের করবে ভেবে বসে থাকল। সে কি বের করবে ঠিক মনে করতে পারছে না।

    সে এ-ভাবে বেশ খানিকটা সময় পার করে দিল। সে স্যুটকেসের এটা-ওটা ঘাঁটছে। আর কি যেন ভাবছে। মঞ্জু যাবার সময় দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে গেছে। বারান্দার দিকে দুটো জানালা খোলা। গোপাটে এখন বুকজল—নৌকা যায়, নৌকার শব্দ, ডিসপেনসারিতে বসে জব্বার চাচা কার সঙ্গে যেন কথা বলছেন। আর যেন কিছুর সাড়া নেই। শুধু চারপাশে কিছু আলো এবং মাঝে মাঝে সেই এক কীট-পতঙ্গের আওয়াজ ভেসে আসছে। সে কেন স্যুটকেসটা খুলেছে মনে করতে পারছে না।

    সে খুবই অবাক হয়ে গেল। আসলে কি সে অন্য কিছু ভাবছে। সে স্যুটকেসের ভেতর আসলে কিছু খুঁজছে না! খুঁজলেও এখন তা আর খুব তেমন দরকারী মনে হচ্ছে না! সে বসে আছে। মঞ্জু চলে যাওয়ায় এ-ঘরটায় সে কেমন একা। সে অনেক কথা জানতে চাইবে এমনই হয়তো ধারণা মঞ্জুর। মঞ্জু একসঙ্গে বোধহয় সব প্রশ্নের জবাব দিতে ভয় পাচ্ছে। সে বোধ হয় ভাবছে, একসঙ্গে তার ক্ষমতা নেই সব কথার জবাব সে তাকে দিতে পারে। মঞ্জুর হয়তো সেজন্য তাড়াতাড়ি কাজটুকু সেরে পরে সময় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চায়।

    সে এবার বুঝতে পারল, মঞ্জুর চিঠিটা সে খুঁজছে। কোথায় রেখেছে চিঠিটা! সে আর একবার চিঠিটা পড়ে দেখতে চায়। তাড়াতাড়ির মাথায় সে চিঠিটা কবার পড়েছে—কিন্তু চিঠির ভাষার ভেতর যেতে পারেনি। এখানে এসে সে মঞ্জুকে দেখেছে, কেয়াকে জব্বার চাচাকে দেখেছে। গ্রামের আগের ছবি একেবারে পাল্টে গেছে। শুধু ঝোপ-জঙ্গল বন-বাদাড় গ্রামটার চারপাশে। সে আসলে স্যুটকেস খুলে চিঠিটাই খুঁজছে। মঞ্জুর চিঠি। চিঠিতে কি মঞ্জু কোথাও তাকে সোনাকাকা সম্বোধন করেছে!

    আসলে চিঠিটা সে পড়েছে। সোনাকাকা এমন শব্দ কোথাও লেখা নেই—তবু মনের ভেতর কখনও ভীষণ সংশয় দেখা দিলে নিজের চোখকে বার বার অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। সে চিঠিটা বের করে পড়ল। না, মঞ্জু কোথাও সোনাকাকা লেখেনি। কেবল লিখেছে সোনা তোমাকে আমার এ-সময় ভীষণ দরকার। তুমি এস। কিসের দরকার, কেন জন্মভিটা দেখে যাবার আমন্ত্রণ—সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

    সে এবার চিঠিটা ভাঁজ করে রেখে দিল। সে রাতের পোশাক পরে নিল। বাথরুমের কাজ সেরে হাতমুখ মুছে জানালার কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসল। সামনে বারান্দা পার হলে ঘাসের লন। সে বুঝতে পারছে শুলে এখন তার ঘুম আসবে না। বরং বইটই পড়তে পারে। স্যুটকেস থেকে খুলে খবরের কাগজটা পড়তে পারে। যদি ঘুম আসে। সে কেমন বিব্রত বোধ করছে। চিঠি পেয়ে এমন হুট করে চলে আসাও বোধ হয় ঠিক হয়নি। ওর ছেলেটার অসুখ। মঞ্জু কি ভেবে ফেলেছে ছেলেটা কিছুতেই বাঁচবে না। ওর ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে যদি কিছু করা যায়। সে কতটা কি করতে পারবে তাও বুঝতে পারছে না।

    আসলে মানুষের শৈশব সবচেয়ে প্রিয় তার কাছে। এবং এইসব গাছপালা মাঠ এবং রোদ্দুরে ঘুরে বেড়ানো, দত্তদের আমবাগানে শুয়ে শুয়ে পরীক্ষার পড়া করা, সব তার কাছে মনোরম এক স্মৃতি। এবং স্মৃতির ভেতর ফিরে এলে সবকিছুই রূপকথার মত মনে হয়। সে মঞ্জুকে, কেয়াকে, জব্বার চাচাকে এমন একটা অবস্থায় আবিষ্কার করবে ভাবতেই পারেনি। কেমন ওরা একটা রূপকথার দেশের মানুষ হয়ে গেছে। বিশেষ করে এই নির্জনতা গ্রামের, কোথাও আর মানুষের আবাস নেই, কেবল একটা লালরঙের ইঁটের বাড়ি, আর ডিসপেনসারি ঘর, নীল রঙের ডাকবাক্স ঘাসের লন আর পেছনে অনেকদূর পর্যন্ত দীঘির মতো বড় পুকুর, পুকুরের চার ধারে সারি সারি রসুন গোটার গাছ। মাঝে মাঝে সব আলো জ্বালা, যেন সব স্বপ্নের মতো জেগে আছে। সেখানে সে তার শৈশবকে কিছতেই খুঁজে পায় না। কি প্রাণান্ত ছিল, মঞ্জুর সেই খবর পৌঁছে দেওয়া অবনীকে।—অবনী তোকে মঞ্জু পছন্দ করে না। তুই আর মঞ্জুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবি না।

    অবনী বলেছিল, তুই ওকে বলেছিলি, ওর সঙ্গে কথা না বলতে পারলে আমার খুব খারাপ লাগে।

    —বলেছিলাম।

    —কি বলল?

    —বলল, খারাপ লাগলে তার আমি কি করব!

    অবনী দুঃখ পেলে সোনার ভীষণ খারাপ লাগত। সে, রসো, অবনী তারপর মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতো। লটকন ফল চুরি করে আনত অবনী। ওরা ভাগ করে খেত। আর নানারকম ফন্দিফিকির খুঁজতো কি করে মঞ্জুর সঙ্গে কথা বলা যায়।

    সোনা অবনীকে বলত, বললাম অবনী দুঃখ পেলে আমাদের খুব খারাপ লাগে। তোর লাগে না?

    —কি বলল? অবনী বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকত।

    —বলল, না লাগে না।

    তারা ভাবত, মঞ্জু শহরের মেয়ে বলেই বোধ হয় ওরা যতটা সহজে খারাপ ভাবে মঞ্জু ততটা সহজে খারাপ ভাবে না। ওরা তো মঞ্জুর মতো সুন্দর মেয়ে কোথাও দেখেনি। মঞ্জু কবে আসবে, কারণ তাদের মনে আছে মঞ্জু ছুটিতে গাঁয়ে না এলে কেমন একটা খাঁ খাঁ ভাব সারাটা গাঁয়ে। সোনার আরও খারাপ লাগত, ফতিমা, সেই যে শহরে চলে গেল আর এল না। বিকেল হলেই তারা ডিসপেনসারির দাওয়ায় চুপচাপ বসে থাকত। সেনদাদা বলত, কিরে তোরা ভাস্কর লবণ নিতে এসেছিস। বোস দিচ্ছি। সেনদাদা ভাস্কর লবণ দিয়ে বলত, পুজোয় তো মঞ্জু আসবে না ভাইরা—ওর স্কুল খুললেই পরীক্ষা। পরীক্ষার পরে আসবে।

    অতীশের মনে আছে গোটা পুজোর মাসটা ওরা কেমন মনমরা হয়ে থাকত।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআওরঙ্গজেব : ব্যক্তি ও কল্পকথা – অড্রি ট্রুসকে
    Next Article মানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }