Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প112 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. মার্চ মাসের সতেরো তারিখে

    মার্চ মাসের সতেরো তারিখে সাজ্জাদ আলী জেলার সাহেবকে একটি আবেদনপত্র পাঠান। ওই তারিখে তাঁর স্ত্রী খুন হয়েছিলেন। চিঠির বিষয়বস্তু ঘুরেফিরে একই, বিচার পুনর্বিবেচনার আবেদন। একটি আবেদনপত্রের নমুনা–

    মাননীয় জেলার
    ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
    ঢাকা
    জনাব,

    আজ আমার জন্য গভীর শোকের একটি দিন। প্রাণাধিক প্রিয় আত্মীয়র মৃত্যুদিবস। এই উপলক্ষে আমি নিজে রোজা আছি। জেলের মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলেছি বাদ আসর মিলাদের আয়োজন করার জন্য।

    অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, স্ত্রীকে খুনের দায়ে আজ আমি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। ফাসি হয়ে যাওয়াও বিচিত্র কিছু ছিল না। ফাসি হয়ে গেলে আপনাকে আমি আর এই পত্র দেওয়ার সুযোগ পেতাম না। ফাসি হয়ে যাওয়া একদিক থেকে ভালো ছিল। তিলে তিলে মৃত্যু না হয়ে একবারই শেষ।

    জনাব, ওই দিনের ঘটনা আপনাকে বলতে চাই। ধানমণ্ডির আমার বাড়িটি দ্বিতল। কাজের মেয়ে, ড্রাইভার, মালী–এদের কারোরই দোতলায় ওঠার হুকুম নাই। ওই রাতে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির রাতে সবাই আরামে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। শুধু সালমার মা এবং তার কন্যা সালমা জাগ্রত। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? জনাবের বাড়িতে নিশ্চয় কাজের বুয়া আছে। জনাব কি লক্ষ করেছেন সুযোগ পেলেই এরা নিদ্রায় চলে যায়।

    এখন মূল বিষয় বলি, যেখানে দোতলায় ওঠারই হুকুম নাই, সেখানে গভীর রাতে মাতা-কন্যা দোতলায় আসে কেন? দোতলায় তাদের কী প্রয়োজন, এই কথা কেন কারোর মনে আসে না?

    জনাব, আমার স্ত্রীর মতো বলশালী এবং স্বাস্থ্যবতী মহিলা দুর্লভ। চট্টগ্রামে প্রতি বছর বলীখেলা হয়। মেয়েদের মধ্যে বলীখেলার প্রচলন থাকলে আমার স্ত্রী প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হতো। এমন একজন কুস্তিগির টাইপ মহিলাকে আমার মতো দুবলা-পাতলা একজন গলা টিপে মারবে এবং সিলিং ফ্যানে দড়ি ঝুলায়ে তাকে ঝুলাবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? জনাব, আমি আল্লাহপাকের পবিত্র নামে শপথ করে বলছি, ফায়ার ব্রিগেডের ক্রেন ছাড়া ওই মহিলাকে ঝুলানো সম্ভব না। এখন আপনি বলুন আমার পক্ষে কি ফায়ার ব্রিগেড খবর দিয়ে আনা সম্ভব?…

    চার পাতার দীর্ঘ চিঠি। চিঠির শেষে মামলা পুনর্বিবেচনার আকুল আবেদন।

     

    আজ মার্চের সতেরো তারিখ। সময় রাত দশটা। আজও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রুস্তম তার উপন্যাস নিয়ে বসেছে। উপন্যাসের প্রথম দুটি লাইন লেখা হয়েছে।

    প্রণাশ বাবু নিউমার্কেট কাঁচাবাজার থেকে একটা মাঝারি সাইজের ইলিশ এবং আধা কেজি রাই সরিষা কিনে বাড়ি ফিরলেন। আজ তাঁর সরষে ইলিশ খেতে ইচ্ছা করছে।

    মোবাইল ফোন একটু পরপর বাজছে। রুস্তম টেলিফোন কানে নিয়ে বলল, কে?

    আমি।

    আমিটা কে? তুই আমার গলা চিনতে পারিস না? আশ্চর্য কথা! আমি সামিনা।

    বুবু তুমি কোথায়?

    আমি সিঙ্গাপুরে। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে একটা ফুল চেকআপ করিয়ে মালয়েশিয়া বেড়াতে যাব। জাহাজে করে যাব। জাহাজে ক্যাসিনো আছে, অনেক দিন পর জুয়া খেলব।

    বুবু, আমি একটা জরুরি কাজ করছি।

    আমিও একটা জরুরি কাজেই টেলিফোন করেছি। আজ কত তারিখ জানিস?

    না।

    আজ মার্চের সতেরো। মায়ের মৃত্যুদিন। আমিও তোর মতো ভুলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম তোকে টেলিফোন করি।

    ও আচ্ছা।

    আমরা সবাই ভুলে গেলেও তোর দুলাভাইয়ের কিন্তু সবসময় মনে থাকে। ওইদিন সে ফকির খাওয়ায়। মিলাদের আয়োজন করে। এইবার করেছে কি না কে জানে! মনে হয় না করেছে। প্রতিবার এইসব করত আমাকে খুশি করার জন্য। এখন তো আর আমাকে খুশি করার কিছু নাই।

    সব বার যখন করে, তখন এইবারও নিশ্চয়ই করবে। মানুষ কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার বাইরে যেতে পারে না।

    তুই কি তোর দুলাভাইকে একটা টেলিফোন করে আমাকে জানাবি? আমি টেলিফোন ধরে থাকলাম।

    বুবু, দুলাভাইয়ের নাম্বার আমার কাছে নেই। কারও নাম্বারই নেই। কেউ টেলিফোন করলেই শুধু আমি কথা বলি। নিজ থেকে কাউকে টেলিফোন করি না।

    আমি নাম্বার বলছি। তুমি কাগজে লেখ।

    বুবু, আমি জরুরি কাজ করছি। এখন টেলিফোন করতে পারব না। দুলাভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে আমি তার কাছ থেকে জেনে রাখব।

    রুস্তম টেলিফোন পুরোপুরি বন্ধ করে উপন্যাসে মন দিল আর তখনি কাবার্ডের ভেতর থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ হতে লাগল। রুস্তম চমকে বিছানায় উঠে বসল। এমন কি হতে পারে কাবার্ডের ভেতর লাঠিটা পড়ে গিয়ে সাপ হয়ে গেছে এবং ফোঁস ফোঁস শব্দ করছে? রুস্তম ডাকল, মুনিয়া! মুনিয়া!

    দ্বিতীয়বার ডাকার আগেই মুনিয়া ঘরে ঢুকল। সে মনে হয় দরজার বাইরে অপেক্ষা করছিল।

    স্যার কিছু লাগবে? আরেকটা কথা, আপনি ময়ূরী নাম দিয়ে এখন মুনিয়া ডাকছেন কেন? আমার খুবই মন খারাপ হয়েছে। ময়ূরী ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকলে আমি ঘরে ঢুকব না।

    রুস্তম আতঙ্কিত গলায় বলল, কিছু শুনতে পাচ্ছ? মন দিয়ে শোনো।

    মুনিয়া বলল, কী শুনতে পাব স্যার?

    ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনতে পাচ্ছ?

    মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, পাচ্ছি।

    শব্দটা কোত্থেকে আসছে বলতে পারছ?

    না।

    কাবার্ডের ভেতর থেকে। সেখানে একটা সাপ আছে।

    কী সর্বনাশ! সাপ মারার ব্যবস্থা করি?

    সাপ মারতে হবে না। এটা সাধারণ কোনো সাপ না। আগে ছিল বেতের লাঠি। এখন সাপ হয়েছে।

    ও আচ্ছা।

    তারপরেও শব্দটার জন্য ভয় ভয় লাগছে।

    মুনিয়া বলল, ভয়ের কিছু নাই স্যার। প্রয়োজনে আমি এই ঘরে ঘুমাব।

    তুমি কোথায় ঘুমাবে?

    মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে থাকব। আমার অসুবিধা নাই।

    বাদ দাও।

    বাদ দিব কী জন্য? আপনার শরীর খারাপ, ঘুম প্রয়োজন। সাপের ভয়ে যদি ঘুমাতে না পারেন আপনারই ক্ষতি।

    সাপের নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছ?

    পরিষ্কার শুনছি। আপনাকে দোষ দিয়া লাভ কী! আমার নিজেরই ভয় ত্ম লাগছে। বিছানা নিয়া চলে আসি?

    আসো।

    মুনিয়া বিছানা আনেনি, শীতলপাটি এনেছে। খাটের পাশে পাটি পেতেছে। ঘরে বাতি জ্বলছে। মুনিয়া বলল, স্যার! আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ।

    কী অনুরোধ?

    আপনি আমার দিকে তাকাবেন না। ঘুমের সময় আমার কাপড়চোপড় ঠিক থাকে না। ছোটবেলার বদভ্যাস। এই জন্য মায়ের কাছে কত বকা খেয়েছি।

    আমি তাকাব না। এই দেখো চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

    চোখ বন্ধ করার দরকার নাই। স্যার একটা গল্প বলেন। গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাই।

    আমি তো গল্প জানি না।

    তাহলে বাদ দেন।

    আমি যে উপন্যাস লিখছি সেই গল্পটা বলতে পারি। তবে গল্পটা এখনো তৈরি না।

    তৈরি না হলে থাক।

    উপন্যাসের নাম দিয়েছি ঝিঁঝি। নামটা কি তোমার কাছে ভালো লাগছে?

    অসম্ভব সুন্দর নাম।

    ঝিঁঝি পোকার ঝিঁঝি। ঝিঁঝি পোকা হচ্ছে একমাত্র প্রাণী যে সবসময় ঝিঁঝি শব্দ করে নিজেকে জানান দেয়। মানুষও তাই করে। শুধু মৃত মানুষ নিজেকে জানান দিতে পারে না।

    মুনিয়া বলল, আহারে, কী দুঃখের কথা!

    ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে রুস্তমের চোখ ভারী হয়ে আসছে। এই অবস্থাতে হঠাৎ তার মনে হলো মুনিয়া মেয়েটি কে? কোন পরিচয়ে এ বাড়িতে থাকছে, তা এখনো জানা হয়নি। জানা দরকার। তবে তাড়াহুড়ার কিছু নেই, সকালে জিজ্ঞেস করলেই হবে।

    স্যার কি ঘুমায়ে পড়েছেন?

    না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ব।

    আমার রাতে ঘুম আসে না।

    ঘুমের ওষুধ খাবে? দেব?

    জি না। আপনে ঘুমান। আমি আপনার পাহারায় আছি। সাপের শব্দ কি এখনো শুনছেন স্যার?

    না। ফোঁসফোঁসানি কমেছে।

    আপনার মাথায় যন্ত্রণা করলে বলেন, আমি মাথা টিপে ঘুম পাড়ায়ে দিব। আমার মতো মাথা মালিশ নাপিতেও জানে না।

    আমার মাথায় যন্ত্রণা করছে না। তুমি কথা না বললেই আমি ঘুমিয়ে পড়ব।

    কথা বলা বন করলাম।

    শুভ রাত্রি মুনিয়া।

    স্যার আমারে মুনিয়া ডাকবেন না। আপনি আমাকে যে নাম দিয়েছেন, সেই নামে ডাকবেন। বলেন, শুভ রাত্রি ময়ূরী।

    শুভ রাত্রি ময়ূরী।

     

    রুস্তমের ডাক্তারের নাম রেণুবালা। সাইকিয়াট্রিতে PhD করেছেন ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনা থেকে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক করেছেন স্কিজোফ্রেনিয়ার ওপর। তাঁর বয়স চল্লিশের মতো। সবসময় সাদা শাড়ি এবং শাড়ির ওপর সাদা অ্যাপ্রন পরেন। হিন্দু মেয়েরা আজকাল সিঁদুর দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। লেড অক্সাইড দিয়ে সিদুর বানানো হয়, এটা একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণ, বিয়ে হয়েছে এই সার্টিফিকেট তারা মাথায় পরে ঘুরতে চায় না। ড. রেণুবালা দে মাথায় সিঁদুর পরেন। সাদা শাড়ি, মাথাভর্তি কুচকুচে কালো চুলের মাঝখানে টকটকে লাল রঙের সিঁদুরে তাকে খুব মানায়।

    রুস্তম তার কাছে যখনই আসে, মুগ্ধ চোখে সিঁদুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ড. রেণুবালা রুস্তমকে ডাকেন রু আদে। রুস্তমের কবিতার বইটি তিনি পড়েছেন। তাঁর চেম্বার বইপত্রে ঠাসা। দেয়ালে দুটা ছবি আছে, একটা স্বামী বিবেকানন্দের। এই ছবি ক্যামেরার ল্যান্সের দিকে তাকানো অবস্থায় তোলা বলে রুস্তমের মনে হয়, স্বামী বিবেকানন্দ তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার খানিকটা অস্বস্তি লাগে। দ্বিতীয় ছবিতে খালি গায়ে মোটাসোটা এক লোক বসা। হাসি হাসি মুখ। গালভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। রুস্তম একে চেনে না। সবসময় ভাবে, পরিচয় জিজ্ঞেস করবে। শেষ মুহূর্তে জিজ্ঞেস করা হয় না।

    রু আদে সাহেব কেমন আছেন?

    জি ভালো।

    আজ কি একা এসেছেন?

    না। দুলাভাই সঙ্গে এসেছেন, তিনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন।

    আপনাকে তো বলেছি, একা আসার অভ্যাস করুন।

    দুলাভাই আমাকে একা ছাড়তে চান না। যেখানেই যাই, তিনি সঙ্গে Tai

    আপনার ছবি আঁকা কেমন চলছে?

    ভালো চলছে।

    শেষ কী ছবি এঁকেছেন?

    ছবি আঁকা এখনো শুরু করিনি। রঙ মেশানো শিখছি।

    একটা উপন্যাস শুরু করবেন বলেছিলেন। শুরু করেছেন?

    জি। মাত্র দুই লাইন লিখেছি।

    উপন্যাসের নাম কী দিয়েছেন?

    ঝিঁঝি।

    সুন্দর নাম। ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে?

    জি।

    অদ্ভুত কিছু কি দেখেছেন বা কোন Strange experience কি রিসেন্টলি হয়েছে?

    জি না। তেমন কিছু হয়নি।

    ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি?

    সামান্য ভয় পেয়েছি।

    কী দেখে ভয় পেয়েছেন?

    কিছু দেখে ভয় পাইনি, শব্দ শুনে ভয় পেয়েছি। ফোঁসফোসানি শব্দ।

    কে ফোঁসফোঁস করছিল?

    একটা সাপ। কাবার্ডের ভেতর থেকে ফোঁসফোঁস করছিল।

    কাবার্ডে সাপ গেল কিভাবে?

    আমি রেখেছি।

    আপনি কাবার্ডে সাপ রেখেছেন?

    না, আমি রাখিনি। আমি একটা বাঁকানো বেতের লাঠি রেখেছিলাম। খাড়া করে রাখা ছিল। মনে হয় কোনো কারণে লাঠিটা পড়ে গিয়েছে। এই লাঠির বিশেষত্ব হচ্ছে, শোয়ানো অবস্থায় এটা সাপ হয়ে যায়।

    লাঠিটা আপনাকে কে দিয়েছে?

    গোলাম মওলা আংকেল দিয়েছেন। দিতে চাননি, আমি জোর করে নিয়েছি।

    এমন একটা ভয়ঙ্কর জিনিস জোর করে কেন নিলেন?

    ভয়ঙ্কর বলেই নিয়েছি। মানুষ সুন্দর যেমন ভালোবাসে, ভয়ঙ্করও ভালোবাসে।

    রু আদে সাহেব?

    জি বলুন।

    আপনি খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ। বুদ্ধিমান, ক্রিয়েটিভ। আপনার কবিতার বইয়ের সবকটা কবিতা আমি পড়েছি। বিশেষ করে অন্ধ উইপোকা কবিতাটা। আমি প্রচুর কবিতা পড়ি। ভালো কবিতা এবং মন্দ কবিতার তফাৎ ধরতে পারি।

    ধন্যবাদ।

    আপনার কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ কি আপনার আঁকা?

    জি না।

    আমি বিশ্বাস করি, আপনি ছবিও আঁকবেন। নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ নিজে করবেন।

    ধন্যবাদ। এখন যে প্রচ্ছদ আঁকা আছে সেখানে ছোট্ট সমস্যা হয়েছে।

    কি সমস্যা বলুন তো?

    প্রচ্ছদে একটা পাখি আঁকা ছিল। পাখিটা সাইকেলের চাকায় বসা ছিল। এখন দেখি পাখিটা বসে আছে চায়ের কাপে।

    চা খাচ্ছে?

    খেতে চাচ্ছে। চা অতিরিক্ত গরম বলে খেতে পারছে না।

    রেণুবালা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আপনার একটাই সমস্যা, আপনার বাস্তব জগতের পাশাপাশি একটি অবাস্তব জগৎও আছে। অবাস্তব জগৎটাও আপনার কাছে বাস্তব।

    কেন?

    চট করে এই কেনর জবাব দেওয়া যাবে না। ব্রেইনের নিওরোল কানেকশনে শর্টসার্কিট হলে এ রকম হয়। অনেকে ড্রাগ খেয়ে এই শর্টসার্কিট নিজেরা করে। সাইকাডেলিক ড্রাগ যেমন LSD, ধুতরা। এদের কম্পেজিন serotonin এবং Dopamine-এর মতো। এ দুটি কেমিক্যাল হলো নিউরোট্রান্সমিটার। ঘাগ নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যক্রম বদলে দেয় বলে ঘটনা ঘটে।

    আমি তো কোনো ড্রাগ থাই মা।

    জানি। কারো কারো ক্ষেত্রে ড্রাগ ছাড়াই এ রকম ঘটে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, কালজয়ী ঔপন্যাসিক ফিওদর দস্তয়োভস্কি। তার প্রায়ই epliptic সিজারের মতো হতো। ঘোর কেটে গেলে তিনি বলতেন, ঈশ্বর কী, মানুষ কী, জগতের সঙ্গে ঈশ্বর এবং মানুষের সম্পর্ক কী, তা তিনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও জেনেছেন।

    ও আচ্ছা।

    রু আদে সাহেব, আপনি কি কফি খাবেন? আমার এখানে খুব ভালো কফি বানানো হয়।

    কফি খাব না।

    আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি–আপনাকেই আপনার চিকিৎসা করতে হবে।

    কিভাবে?

    কোনটা বাস্তব, কোনটা অবাস্তব এটা চিন্তা করে বের করতে হবে। আপনি কি কখনো দেখেছেন, কোনো লাঠি মেঝেতে পড়ে গেলে সাপ হয়ে যায়?

    না, দেখিনি। তবে হজরত মুসা আলায়েস সালামের লাঠি মেঝেতে পড়লে সাপ হয়ে যেত।

    আপনার লাঠি কি সেই লাঠি?

    না।

    আপনি এক কাজ করবেন। আজ বাসায় গিয়েই লাঠিটা বের করে মেঝেতে ফেলবেন। ফেলার পর কী দেখবেন বলুন তো?

    দেখব লাঠি সাপ হয়নি। লাঠি লাঠিই আছে।

    আমার ধারণা, আপনি দেখবেন লাঠিটা সাপ হয়ে গেছে। আপনার ব্রেইন সে রকম সিগন্যাল দেবে। আপনি তখন আপনার সঙ্গে অন্য কাউকে রাখবেন। সে কিন্তু লাঠি দেখবে, সাপ দেখবে না। তখন তার কথা বিশ্বাস করবেন। এ কাজগুলো আপনাকেই করতে হবে।

    আজ কি উঠব?

    হ্যাঁ, আজ বিদায়। আর দয়া করে যার লাঠি তাকে ফেরত দিয়ে বাড়ি থেকে ঝামেলা বিদায় করুন।

    আচ্ছা। আপনার এখানে যখনই আসি তখনই একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে। যাওয়ার সময় মনে থাকে না।

    আজ কি মনে আছে?

    আছে।

    তাহলে জিজ্ঞেস করুন।

    জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে না।

    তারপরেও জিজ্ঞেস করুন। প্রশ্ন চাপা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো কোনো কাজের কথা না।

    স্বামী বিবেকানন্দের পাশের ছবিটা কার?

    রামকৃষ্ণ পরমহংসের। তাঁকে বলা হয় কলির অবতার। আমি উনার পরমভক্ত।

    ও আচ্ছা।

    উনিও কিন্তু স্কিজিওফ্রেনিক ছিলেন। ভক্তরা বলত, প্রায়ই তাঁর ভাব সমাধি হতো। আসলে যেটা হতো তা হলো epleptic seizure.

    ও আচ্ছা।

    রামকৃষ্ণ সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন। আমার কাছে একটা বই আছে, নাম রামকৃষ্ণ কথামালা। বইটা কি পড়বেন? দেব আপনাকে?

    না।

    রুস্তম দুলাভাইয়ের সঙ্গে রিকশায় করে ফিরছে। তাদের গাড়ি পেছনে পেছনে আসছে। গাড়িতে চড়লেই রুস্তমের দম বন্ধ হয়ে আসে বলে এই ব্যবস্থা।

    রুস্তম বলল, দুলাভাই! এবারে মায়ের মৃত্যুদিবসে আপনি কি ফকির খাইয়েছিলেন?

    অবশ্যই। পাঁচজন ফকির খাইয়েছি। এতিমখানায় এক বেলা খাবার দিয়েছি। শুধু মিলাদ পড়ানো হয় নাই। কেন বলো তো?

    বুবুর ধারণা, আপনি এইবার কিছু করেননি।

    তার এ রকম ধারণা হলো কেন?

    বুবু ভেবেছে, আপনি এসব করতেন শুধু বুবুকে খুশি করার জন্য।

    খুবই ভুল ধারণা। আমার শাশুড়ি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন ফেরেশতা পর্যায়ে অতি পুণ্যবতী রমণী। তোমার এবং তোমার বোনের মধ্যে সৎগুণ যা আছে, তা সবই তোমরা পেয়েছ উনার কাছ থেকে।

    বুবুর সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে?

    না।

    বুবু সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া যাবে জাহাজে করে। জাহাজে ক্যাসিনো আছে। জুয়া খেলতে খেলতে যাবে।

    জুয়া খেলবে?

    হুঁ।

    গুড, জুয়া খেলুক। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে জাহাজের ডেকে উলঙ্গ নৃত্য করুক, আমার কিছুই যায় আসে না। ওর কথা বাদ থাক। ডাক্তার কী বললেন?

    বললেন, তিনি আমার অন্ধ উইপোকা কবিতাটা খুব পছন্দ করেছেন।

    আর কিছু বলেননি?

    সাপ নিয়ে কিছু কথা বলেছেন।

    সাপের কথা এলো কেন?

    রুস্তম জবাব দিল না। সবসময় তার কথা বলতে ভালো লাগে না।

    আমিন বললেন, আমি সিগারেট ধরালে কি তোমার সমস্যা হবে?

    রুস্তম বলল, আপনি তো সিগারেট খেতেন না।

    এখন খাওয়া শুরু করেছি। সারাদিনে দেড় প্যাকেট লাগে। টেনশন কমানোর জন্য খাচ্ছি।

    টেনশন কি কমেছে?

    না। তারপরেও চেষ্টা। যে ফ্ল্যাটে আছি, সেটাও ছেড়ে দিতে হবে।

    কেন?

    ফ্ল্যাটটা তোমার বুবুর নামে কেনা। সে যে এই কাণ্ড করবে, জীবনেও ভাবি নাই।

    বুবুর তেমন দোষ নাই। আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ।

    আর ওই হারামজাদার গা দিয়ে কি গোলাপের গন্ধ বের হচ্ছে?

    রুস্তম জবাব দিল না। আমিন সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করতে করতে বললেন, ফ্ল্যাট ছেড়ে দিলে থাকার জায়গা থাকে না। তোমার বাড়িতে উঠব।

    জি আচ্ছা। কবে আসবেন?

    কাল-পরশুর মধ্যে চলে আসব। তোমার একটা বিষয়ে সাহায্যও দরকার। কিভাবে সামিনাকে জন্মের শিক্ষা দেওয়া যায়। বাকি জীবন যাতে তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলে। অনেকগুলো প্ল্যান মাথায় এসেছে। প্রথম প্ল্যান আফতাবকে জন্মের মতো আউট করা। গোলাপের ফ্যাক্টরি শেষ। হা হা হা।

    রুস্তম বলল, গোলাম মওলা আংকেলের সঙ্গে আমি কথা বলে রেখেছি। উনার আবার আসার কথা, তখন মনে করিয়ে দিব।

    অনেক চেষ্টাতেও সিগারেট ধরল না। রিকশা চলছে, বাতাসও আছে। আনাড়ি হাতে ম্যাচ ধরানো কঠিন।

    রুস্তম।

    জি দুলাভাই।

    আফতাব হারামজাদার জন্য আমি একটা মাস্টার প্ল্যান করেছি। শুনলে তুমি চমকে উঠবে। রিকশায় বলা যাবে না। কাল-পরশুর মধ্যে তোমাদের বাড়িতে চলে আসব, তখন বলব।

    জি আচ্ছা।

    দক্ষিণমুখী একটা ঘর আমার জন্য ঠিক করে রেখো।

    মার ঘরে ঘুমাবেন? ঘরটা তালাবদ্ধ আছে। দক্ষিণমুখী।

    আমার কোনো অসুবিধা নাই। একজন মানুষ ওই ঘরে মারা গেছে, তাতে কী হয়েছে? মানুষের জন্ম-মৃত্যু থাকবেই।

    আমিন সিগারেট ধরানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।

    রাত আটটা বাজে।

    রুস্তম তার ঘরে ঢুকে ডাকল, ময়ূরী।

    মুনিয়া ঝড়ের গতিতে উপস্থিত হলো। রুস্তম বলল, আমি তোমার সামনে ছোট একটা পরীক্ষা করব। ডাক্তার সাহেব এই পরীক্ষা করতে বলেছেন।

    কী পরীক্ষা?

    কাবার্ড খুলে আমি সাপটা বের করব। তুমিও দেখবে এবং বলবে কী দেখেছ।

    রুস্তম কাবার্ড খুলেই লাফ দিয়ে সরে গেল। হলুদ রঙের একটা সাপ মেঝেতে পড়ে ফণা তুলেছে।

    রুস্তুম ভীত গলায় বলল, সাপটাকে দেখতে পাচ্ছ?

    জি। কী সর্বনাশ! বলেই মুনিয়া লাফ দিয়ে সরল।

    সাপ যে ফণা তুলেছে দেখেছ?

    জি।

    সাপের মাথা কোনটা, লেজ কোনটা?

    মুনিয়া ইতস্তত করে বলল, এইটা মাথা।

    রুস্তম বলল, তুমি সাপ দেখছ না। লাঠিই দেখছ। সাপ বললে আমি খুশি হবো ভেবে বলেছ সাপ। তুমি লাঠি দেখছ না?

    জি।

    লাঠিটা তুলে তোমার ঘরে নিয়ে রাখো। আমার ডাক্তার বলেছে লাঠি সঙ্গে না রাখতে। গোলাম মওলা আংকেল এলে তাকে লাঠিটা ফেরত দিতে হবে।

    আজ রাতে আপনার ঘরে ঘুমাব না?

    না। এখন তো আর আমার ভয় করছে না। সাপ নিয়ে তুমি চলেই যাচ্ছ।

    রাত-বিরাতের কথা। অন্য কিছু দেখেও তো ভয় পেতে পারেন। আমি ঝিম ধরে শুয়ে থাকব। ওই রাতের মতো কটকট করে কথা বলব না।

    কোনো প্রয়োজন নেই। আজ ঠিক করেছি অনেক রাত পর্যন্ত লেখালেখি করব। ভালো কথা, তোমাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে যাই। তোমাকে এই বাড়িতে কে এনেছে?

    আপনি এনেছেন।

    আমি এনেছি?

    জি।

    আমি তোমাকে কোথায় পাব যে এ বাড়িতে নিয়ে আসব?

    স্যার! রেগে যাচ্ছেন কেন?

    রেগে যাচ্ছি না, প্রশ্ন করছি।

    আপনার একবার শরীর খুব বেশি খারাপ করল। আপনি কাউকেই চিনতে পারেন না। তখন আপনি কিছুদিন আরোগ্য ক্লিনিকে ছিলেন।

    রুস্তম বলল, এটা মনে আছে।

    আমি ওই ক্লিনিকের অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স।

    অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স কী জিনিস?

    নার্সরা তো অনেক কিছু জানে। আমি কিছু জানি না। বিছানার চাদর বদলে দেই, রোগীদের গা স্পঞ্জ করি। আমি আপনাকে বলেছিলাম, এখানে কাজ করতে আমার ভালো লাগে না। আপনি আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করে দিন। আপনি বলেছিলেন, আচ্ছা। তারপর আমি নিজে নিজে চলে এসেছি।

    কাঁদছ কেন?

    আপনি আমাকে চিনতে পারেন নাই, এ জন্য কাঁদছি।

    মুনিয়া এখন যাও, আমি আমার উপন্যাসটা নিয়ে বসব।

    স্যার, আপনি আমাকে মুনিয়া ডাকবেন না। আরেকবার যদি মুনিয়া ডাকেন তাহলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। চলন্ত ট্রাকের সামনে লাফ দিয়ে পড়ব।

    তোমার নাম মুনিয়া, তোমাকে মুনিয়া ডাকতে পারব না?

    অন্য সবাই মুনিয়া ডাকবে। আপনি ডাকবেন ময়ূরী।

    আচ্ছা ময়ূরী। তুমি এখন যাও। এখনো কেন কাঁদছ?

    আপনি কঠিন গলায় যাও বলেছেন, এ জন্য কাঁদছি।

    প্লিজ, এখন যাও।

    চা-কফি কিছু এনে দেব স্যার?

    না।

    এক বসাতে উপন্যাস অনেক দূর লেখা হয়ে গেল। রুস্তম রাত একটার কিছু পরে ঘুমুতে এসে দেখে, মুনিয়া মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে আছে। সে বলেছিল, ঘুমানোর সময় তার কাপড় ঠিক থাকে না। এ জন্য ছোটবেলায় সে মায়ের অনেক বকা খেয়েছে। রুস্তম দেখল, ঘটনা সত্যি। আসলেই মুনিয়ার গায়ের কাপড় ঠিক নেই। এই অবস্থায় কত সুন্দর যে লাগছে মেয়েটাকে!

    রুস্তম সাবধানে বিছানায় এসে সুইচ বন্ধ করল। মেয়েটার যে অবস্থা! বাতি নেভানো থাকাই ভালো।

    স্যার, আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন?

    না। এই মাত্র শুয়েছি। তুমি জেগে আছ নাকি?

    স্যার, আমি গভীর ঘুমে ছিলাম, খুট করে বাতি নেভালেন সেই শব্দে ঘুম ভেঙেছে।

    আচ্ছা ঘুমাও।

    কিছুক্ষণ জেগে থাকি স্যার। এই ধরুন পাঁচ মিনিট। পাঁচ মিনিট আপনার সঙ্গে গল্প করি।

    আচ্ছা।

    আমার মা, আমার বিয়ে ঠিক করেছেন। ছেলে ইন্টারমিডিয়েট পাস। তাদের কলমাকান্দায় বিশাল ফার্মেসি আছে। ফার্মেসির নাম দি নিউ মদিনা ফার্মেসি।

    ভালো তো।

    ছেলেরা দুই ভাই। বড় ভাই দুবাইয়ে চাকরি করেন।

    বিয়ে কবে হচ্ছে?

    বিয়ে কিভাবে হবে। আমি আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলেছি না।

    কাকে বিয়ে করেছ? আমার আর্ট টিচারকে?

    উনাকে আমি বিয়ে করব কোন দুঃখে। উনাকে বিয়ে করলে সারাজীবন আমাকে নেংটো করে চেয়ারে বসিয়ে রেখে ছবি আঁকবেন। স্বামীর সামনে উদাম হওয়া যায়। যার-তার সামনে যায় না। ঠিক বলেছি না স্যার?

    হুঁ।

    মজার ব্যাপার কি জানেন স্যার, আমি যাকে বিয়ে করেছি তিনি নিজেও সেটা জানেন না।

    সেটা কি করে সম্ভব?

    কাজি ছাড়া বিয়ে বলেই সম্ভব। নতুন ধরনের বিয়ে। এই বিয়েতে কনেকে বরের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে তিনবার বলতে হয় তুমি আমার স্বামী। তুমি আমার স্বামী। তুমি আমার স্বামী। এতেই বিয়ে হয়ে যায়।

    এ রকম বিয়ের কথা জানতাম না তো!

    আপনার জানার কথাও না। এই ধরনের বিয়ে আমি আবিষ্কার করেছি।

    তোমার আবিষ্কার?

    জি। একজনকে খুব বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল, উনাকে বলতে পারছিলাম, তখন বুদ্ধি করে এইভাবে বিয়ে করে ফেলেছি। ভালো করেছি না স্যার?

    বুঝতে পারছি না। যাকে বিয়ে করলে সে জানতেও পারল না, এটা কেমন কথা!

    আমি জানলাম, আমি মনে শান্তি পেলাম। একজনের মনের শান্তিও তো কম না। স্যার আপনি কি জানতে চান আমি কাকে বিয়ে করেছি?

    তোমার গোপন বিষয় আমি জানতে চাচ্ছি না। তারপরেও বলতে চাইলে বলো।

    স্যার আমি আপনাকে একটা শিল্লুক দিব। যদি ভাঙাতে পারেন আপনাকে বলব আমি কাকে বিয়ে করেছি। শিল্লুকটা হলো

    আমি থাকি জলে
    আর তুমি থাকো স্থলে
    আমাদের দেখা হবে
    মরণের কালে।

    শিল্লুকের বিষয়টা ভাবতে ভাবতে রুস্তম গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। আজ সে ঘুমের ওষুধ খেতে ভুলে গেছে, তারপরও তার গাঢ় ঘুম হলো। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখল, সে ট্রেনে করে কোথায় যেন যাচ্ছে। ট্রেনের গতি ক্রমেই বাড়ছে। একসময় ট্রেন লাইন ছেড়ে আকাশে উঠে গেল। ঘুমের মধ্যেই তার মনে হলো, এই স্বপ্নটা লিখে ফেলতে হবে। কারণ, তার ডাক্তার বলে দিয়েছেন অদ্ভুত কোনো স্বপ্ন দেখলেই লিখে ফেলতে হবে। ডাক্তারের নাম রেণুবালা দে। তার চেম্বারে দুজনের ছবি আছে। একজনের নাম স্বামী বিবেকানন্দ। অন্যজনের নাম সে জানে, কিন্তু এখন মনে পড়ছে না।

    উনি একজন মানসিক রোগী। উনার নামের শেষে আছে কৃষ্ণ। শুরুটা তাহলে কি? রাধা? উনার নাম কি রাধাকৃষ্ণ?

    রুস্তমের ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেছে। সে খাটে বসে আছে। বাথরুমের দরজা সামান্য খোলা। সেখান থেকে আলো আসছে। মনে হচ্ছে বাথরুমে কেউ হাঁটাহাঁটি করছে। শুধু যে হাঁটাহাঁটি করছে তা না, বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। রুস্তম কথা শোনার জন্য কান পাতল। একটা বাক্যই সে বারবার বলছে–যারা কথা দিয়ে তোমার কথা বলে। যারা কথা দিয়ে তোমার কথা বলে।…

    এই বাক্য আগে কোথাও রুস্তম শুনেছে কিন্তু এখন মনে করতে পারছে। রুস্তম বলল, বাথরুমে কে?

    আমি।

    আমিটা কে?

    ভাই পীর।

    এখানে কি?

    টয়লেট করতে এসেছি।

    রুস্তম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। পুরোটাই বিভ্রম। ডাক্তার রেণুবালাকে নতুন বিভ্রমের কথাটা বলতে হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকা একা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }