Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প112 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. তুমি কি আমাকে চিনেছ

    তুমি কি আমাকে চিনেছ?

    চিনব না কেন? তোমার নাম দিনা। তোমার আসল নাম মদিনা। নামটা তোমার কাছে পুরনো মনে হওয়ায় ম কেটে ফেলে দিনা হয়েছ। তোমার লম্বা চুল ছিল। চুল কেটে ছেলে সাজার চেষ্টা করছ।

    কথাবার্তা তো খুবই গুছিয়ে বলছ। ব্যাপার কী? তবে তোমাকে দেখে কিন্তু পাগল পাগল লাগছে। আমি শুনেছি, যারা পাগল তাদের গা থেকে Ray বের হয়। যার গায়ে এই Ray বেশি পড়ে সেও পাগল হয়ে যায়।

    কথা হচ্ছে দিনার সঙ্গে রুস্তমের। দিনা গোলাম মওলার একমাত্র মেয়ে। তার নিজের কিছু ব্যবসা আছে। জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এনে বিক্রি করে। মতিঝিলে তার গাড়ির শোরুম আছে, দিনা মোটরস। ইতালি থেকে সে এলসি খুলে রঙ আনে। দেশ থেকে রফতানি করে সামুদ্রিক মাছের শুটকি এবং শৈবাল। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, সে এ দেশের বড় ধনীদের একজন।

    দিনার গায়ের রঙ কালো। কালো রঙ তার সঙ্গে খুব মানিয়ে গেছে। দিনার চোখ-মুখ বুদ্ধিতে ঝলমল করছে।

    দিনা একসময় রুস্তমের স্ত্রী ছিল। সাজ্জাদ আলী এবং তার পার্টনার গোলাম মওলার এই বিয়েতে কোনো মত ছিল না। বিয়ে হয়েছিল রুস্তমের মা আসমার একক আগ্রহ এবং চেষ্টায়। দিনার একটি ছেলে আছে, তার নাম না। দিনার দি ফেলে দিয়ে না।

    দিনা কখনোই তার ছেলেকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয় না। দিনা নিশ্চিত, ছেলেকে বাবার সঙ্গে মিশতে দিলে ছেলেও বাবার মতো হয়ে যাবে।

    দিনা বলল, আমি তোমার কাছে বিশেষ জরুরি কাজে এসেছি। কাজ শেষ করে চলে যাব।

    কাজটা কী?

    আমার বাবা কোথায়?

    তোমার বাবা কোথায় তা তো আমি জানি না। তবে উনার লাঠিটা আমার কাছে। যে লাঠিটা তুমি বালি থেকে উনাকে কিনে দিয়েছ।

    দিনা বলল, বালি থেকে আমি তাকে কোন দুঃখে লাঠি কিনে দেব? আমি জীবনে কখনো ইন্দোনেশিয়া যাইনি। বাবা বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। বাবা কখনোই সত্যি কথা বলে না। সত্যি কথা বলাটাকে বাবা শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করে।

    উনাকে পাওয়া যাচ্ছে না?

    না। শেষবার বাবা তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তুমি তাকে একটা কবিতার বই দিয়েছিলে। গাড়ি পাওয়া গেছে সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে। বাবাও নেই, ড্রাইভারও নেই।

    রুস্তম বলল, মনে হয় ইন্ডিয়া চলে গেছেন। কোনো ঝামেলা হলেই উনি ইন্ডিয়া চলে যান।

    দিনা বলল, আমার ধারণা বাবা র্যাবের হাতে কিংবা CID পুলিশের হাতে আছে। ওরা কোনো ইনফরমেশন রিলিজ করছে না। ইনফরমেশন রিলিজ না করলে মেরে ফেলতে ওদের সুবিধা হবে। তুমি কি এক কাপ চা খাওয়াবে? নাকি পাগলরা অতিথিদের চা খেতে বলে না?

    রুস্তম নিজে উঠে গিয়ে চায়ের কথা বলে এলো। দিনা বলল, একটা মেয়েকে দেখলাম উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সে কে?

    ওর নাম মুনিয়া।

    মেয়েটার যে একটা নাম আছে তা তো বুঝতেই পারছি। নাম ছাড়া মানুষ নেই। মেয়েটা কে? এখানে করে কী?

    কিছু করে না। সেজেগুজে হাঁটাহাঁটি করে।

    তোমার যৌনসঙ্গী?

    রুস্তম কিছু বলল না। আহত চোখে তাকিয়ে রইল। দিনা বলল, সরি। মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। তুমি এই নেচারের না, তা আমি জানি। ভালো কথা, তোমার কবিতার বইটা আমি মন দিয়ে পড়েছি।

    ধন্যবাদ।

    আমি এসেছি কবিতার বইটা নিয়ে কথা বলতে। বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে–এ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। Everybody is paid back by his own coin. বাবা তার নিজের পয়সার হিসাব দিবে। এটাই স্বাভাবিক। ড্রাইভারটার জন্য খারাপ লাগছে। সে নিতান্তই ভালো মানুষ। বাবার কারণে কোনো এঁদো ড়ুবায় মরে পড়ে থাকবে।

    রুস্তম বলল, তুমি চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে আছ। চুমুক দিচ্ছ all

    তোমার পুরনো বাবুর্চি মরিয়ম এখনো আছে?

    হুঁ।

    আমি এসেছি তারপরেও একবার দেখা করতে এলো না!

    সে রান্নাঘর ছাড়া কোথাও যায় না।

    পাগলের বাড়িতে সবাই কি পাগল হয়ে যায়?

    রুস্তম ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।

    দিনা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, তোমার মতো এমন অসুস্থ একজন মানুষ চমৎকার সব কবিতা লিখবে ভাবাই যায় না। তুমি তোমার ছেলের সম্পর্কে তো কিছু জিজ্ঞেস করলে না?

    রুস্তম বলল, ওকে তো তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে দেবে না, কাজেই ব্রেইন থেকে তাকে আমি অফ করে রেখেছি।

    অফ করে রেখেছি মানে কী?

    ব্রেইনের যে অংশে ওর প্রতি ভালোবাসা-মমতা এইসব নিয়ে কাজ করে সেটা বন্ধ রেখেছি।

    এটা কি সম্ভব?

    সবার জন্য সম্ভব না। আমার জন্য সম্ভব।

    তোমার ছেলে প্রতি ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে ক্লাস ফোরে উঠেছে। শঙ্কর শিশুচিত্র প্রতিযোগিতার নাম শুনেছ?

    না।

    শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সেখানে সে ছবি পাঠিয়েছিল। গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দিল্লিতে পুরস্কার দেবে, আমি ওকে নিয়ে যাব।

    আমার একজন আর্ট টিটার আছেন। তিনিও গোল্ড মেডেল পাওয়া। রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক।

    তুমি ছবি আঁকা শিখছ?

    এখনো সেই অর্থে আঁকা শিখিনি। রঙ ঘষাঘষি করছি। ছবি আঁকার জন্য রঙ ঘষাঘষি শেখা খুবই জরুরি।

    তুমি কি তোমার ছেলের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চাও?

    না।

    না কেন?

    কিছু সময় কাটালে আরও বেশি সময় কাটাতে ইচ্ছা করবে। মন খারাপ হবে। ডাক্তার রেণুবালা বলেছেন, মন খারাপ হয় এমন কিছুই যেন আমি না করি। আমাকে সবসময় আনন্দের মধ্যে থাকতে হবে। আনন্দ খুঁজে বেড়াতে হবে।

    তোমার ছেলেকে স্কুল থেকে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে, এক শ শব্দ দিয়ে একটা রচনা লিখতে হবে–My Father. সে লিখেছে–

    My father is a mad person.
    I dont know anything about him.

    রুস্তম বলল, সে তো সত্যি কথাই লিখেছে।

    দিনা বলল, হ্যাঁ, সত্যি কথা। তবে তুমি এখন অনেক সুস্থ। প্রায় নরমাল।

    রুস্তম বলল, একটু দাঁড়াও। আমি তোমার বাবার লাঠিটা এনে দিচ্ছি। লাঠি নিয়ে যাও। তবে লাঠির বিষয়ে সাবধান।

    লাঠির বিষয়ে সাবধান মানে?

    লাঠিটা মেঝেতে পড়লে সাপ হক্সে যায়। আমি নিজের চোখে দেখেছি।

    দিনা বলল, তোমার অসুখ মোটেই সারেনি। বরং খানিকটা বেড়েছে। আমি ভেবেছিলাম, তোমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য পাঠাব। এখন মনে হচ্ছে পাঠানো ঠিক হবে না।

    তাহলে পাঠিও না।

    দিনা অনাগ্রহের সঙ্গে লাঠি হাতে নিল। বিরক্ত মুখে বলল, আমি অনেকক্ষণ হলো মুনিয়া মেয়েটার কাণ্ডকারখানা দেখছি। আশে সবুজ শাড়ি পরা ছিল। এখন লাল শাড়ি পরে ঘুরঘুর করছে। ঠোঁটে কুচকুচে কালো লিপস্টিক। মেয়েটার মধ্যে প্রস্টিটিউট ভাব আছে।

    প্রস্টিটিউট ভাবটা কী?

    তুমি বুঝবে না। তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করাও পণ্ডশ্রম। তুমি যত দ্রুত পার মেয়েটাকে বিদায় করো। সম্ভব হলে আজই।

    আচ্ছা।

    আই রিয়েলি ফিল সরি ফর ইউ।

    আমাকে নিয়ে সরি ফিল করার কিছু নাই। আমি ভালো আছি। একটা উপন্যাসে হাত দিয়েছি। সারাক্ষণ উপন্যাস নিয়েই ভাবছি। উপন্যাসের নাম দিয়েছি ঝিঁঝি। রেণুবালা ঝিঁঝি নামটা খুব পছন্দ করেছেন।

    রেণুবালাটা আবার কে?

    আমার ডাক্তার। উনিও তোমার মতো আমার কবিতার বইয়ের সবগুলো কবিতা পড়েছেন। তার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে অন্ধ উইপোকা কবিতাটা।

    তুমি তাহলে সুখেই আছ?

    হ্যাঁ।

    আমাকে মিস করো?

    না।

    ভেরি গুড। অদ্ভুত কারণে আমি তোমাকে মিস করি। হঠাৎ রাতে ঘুম ভাঙলে মনে হয়, মানুষটা পাশে থাকলে ভালো হতো, কিছুক্ষণ গল্প করতাম।

    দিনা চলে যাওয়ার পরপর মুনিয়া রুস্তমের ঘরে ঢুকল। কালো লিপস্টিকে মেয়েটাকে ভয়ঙ্কর লাগছে। বাজারে কালো লিপস্টিক পাওয়া যায়–এটাই রুস্তম জানত না।

    মুনিয়া বলল, এসেছিলেন যে উনি কে?

    ওর নাম দিনা। তার একটা ছেলে আছে, ক্লাস ফোরে পড়ে। ছেলের নাম অদ্ভুত। তার নাম হলো না।

    আপনার কে হয়?

    এখন আমার কেউ না। একসময় আমার স্ত্রী ছিল। আমি পুরোপুরি পাগল হওয়ার পর সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।

    ছেলেটা আপনার?

    হ্যাঁ।

    উনি কি আবার বিয়ে করেছেন?

    তা তো জানি না। জিজ্ঞেস করিনি।

    আপনার কাছে কেন এসেছেন?

    তার বাবার খোঁজ নিতে এসেছে। সে আসায় একটা খুব ভালো কাজ হয়েছে।

    ভালো কাজটা কী?

    লাঠির হাত থেকে বাঁচলাম। তোমার চোখে পানি কী জন্য?

    স্যার, আমার খুব খারাপ লাগছে এই জন্য চোখে পানি। ইচ্ছা করছে একটা চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি।

    তোমার প্রায়ই চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে ইচ্ছা করেএটা ভালো কথা না। নেক্সট টাইম আমি ডাক্তার রেণুবালার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করব।

    আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমি অবশ্যই চলন্ত ট্রাকের সামনে পড়ব। যদি না পড়ি আমার নাম মুনিয়া না।

     

    দুপুরের দিকে আমিন বিধ্বস্ত চেহারা এবং দুটি সুটকেস নিয়ে উপস্থিত হলো। তার ঘর সুন্দর করে গোছানো–এ বিষয়টি নিয়ে মোটেই উচ্ছাস দেখাল না।

    দুপুরে ভাত খেতে খাবারের টেবিলে এলো না। তার ঘর থেকে চাপা কান্নার শব্দ শোনা যেতে লাগল।

    আমিন ঘর থেকে বের হলো সন্ধ্যাবেলায়। মাগরিবের নামাজ পড়ে দুটি বিস্কিট এবং একটা চা খেল।

    রুস্তম বলল, আপনাকে দেখেই খুব অসুস্থ লাগছে।

    আমিন বলল, দিনের মধ্যে দশ-বারোবার আমার স্ত্রী আমাকে টেলিফোন করে। আমি হ্যালো বলতেই সে বলে ঘেউ ঘেউ। আমি অসুস্থ হবো না?

    ডাক্তার রেণুবালার কাছে কি যাবেন?

    উনার কাছে আমি যাব কোন দুঃখে? আমি তো টেলিফোনে ঘেউ ঘেউ করি না। যে ঘেউ ঘেউ করে সে যাবে।

    তাও ঠিক।

    তোমার বাড়িতে আমি কিছু মৌলিক পরিবর্তন করব। এক্সট্রাতে বাড়িভর্তি, এদের ঝেটিয়ে বিদায় করব।

    কখন?

    কাল দুপুরের মধ্যে দেখবে সব ক্লিয়ার। তোমার কোনো সমস্যা নাই তো?

    জি না। তবে মুনিয়া মেয়েটাকে কঠিন কোনো কথা বলবেন না। কঠিন কথা বললে সে চলন্ত ট্রাকের সামনে লাফ দিয়ে পড়বে।

    পড়লে পড়বে। বদমেয়েটা ঠোঁটে চায়নিজ ইংক মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?

    চায়নিজ ইংক না। লিপস্টিক। দুলাভাই আজ আমার ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তবে আমি একা যাব। আপনাকে নেব না।

    আমাকে নেবে না কেন?

    ডাক্তার বলেছেন আমাকে একা যেতে।

    এই ডাক্তার বদলাতে হবে। চিকিৎসার নাম নাই, শুধু থিওরি কপচায়। ফাজিল মেয়ে।

    রুস্তম বলল, বুবুর ওপর রাগটা আপনি সবার ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছেনএটা ঠিক না। এটা ভুল।

    আমাকে ভুল-শুদ্ধ শেখাবে না।

    জি আচ্ছা।

    আমিনের টেলিফোন বাজছে। আমিন নাম্বারের দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে আছেন, টেলিফোন ধরছেন না। টেলিফোন করেছে সামিনা।

    রুস্তম।

    জি দুলাভাই।

    তোমার এই বোন আমাকে পাগল বানানোর চেষ্টা করছে।

    টেলিফোন ধরবেন না?

    ধরে কতক্ষণ থাকব? সে তো টেলিফোন করতেই থাকবে। করতেই থাকবে।

    ফোন সেটটা ধানমণ্ডির লেকে ফেলে দিন। বিষয়টা পুরোপুরি অফ হয়ে যাক।

    পুরোপুরি অফ করার জন্য লাখ টাকা দামের আইফোন পানিতে ফেলতে হবে কেন? সুইচ বন্ধ রাখলেই হয়।

    সুইচ বন্ধ করলেই পুরোপুরি অফ হবে না। আপনি জানবেন বোতাম চাপ দিলেই অন হবে।

    আমিন টেলিফোন নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।

     

    ডাক্তার রেণুবালা বললেন, সব কি ঠিকঠাক?

    রুস্তম হাসল।

    লাঠি সমস্যার সমাধান হয়েছে?

    হয়েছে। যেখানকার লাঠি সেখানে চলে গেছে।

    ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন?

    জি।

    উপন্যাস এগোচ্ছে?

    জি।

    পরেরবার যখন আসবেন যতটুকু লিখেছেন নিয়ে আসবেন, আমি পড়ব।

    জি আচ্ছা।

    আমাকে বলার মতো strange ঘটনা কি ঘটেছে?

    আমার জীবনে ঘটেনি, আমার দুলাভাইয়ের জীবনে ঘটেছে। বলব?

    আপনার বলতে ইচ্ছা করছে অবশ্যই বলবেন।

    দুলাভাইয়ের স্ত্রী, অর্থাৎ আমার বুবু দুলাভাইকে ছেড়ে তার বন্ধুর সঙ্গে মালয়েশিয়া চলে গেছে। দুলাভাইয়ের গায়ের ঘামের গন্ধ পছন্দ না বলে বুবু চলে গেছেন।

    এটা তো strange কোনো ঘটনা না। এটা দুঃখজনক ঘটনা। দুঃখজনক ঘটনা, আনন্দজনক ঘটনা, অদ্ভুত ঘটনা, এর মধ্যে আপনাকেই পার্থক্য করতে হবে।

    রুস্তম বলল, আমার বুবুর অদ্ভুত ব্যাপারটা হলো সে দিন-রাত দশ থেকে বারোবার দুলাভাইকে টেলিফোন করে। দুলাভাই টেলিফোন ধরলেই বুবু বলেন, ঘেউ ঘেউ।

    কী বলেন?

    কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ শব্দ করেন।

    Oh God.

    রুস্তম বলল, আমি এ ঘটনার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। আমার ব্যাখ্যাটা শুনবেন?

    শুনব।

    বুবু দুলাভাইকে অত্যন্ত পছন্দ করেন বলেই বারবার টেলিফোন করেন। ঘেউ ঘেউ শব্দ করে দুলাভাইকে বিরক্ত করার জন্য। দুলাভাই যদি মালয়েশিয়া উপস্থিত হন তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

    আপনার যুক্তি আমি গ্রহণ করছি। ভালো যুক্তি দিয়েছেন।

    রুস্তম বলল, আমি যে আনন্দজনক ঘটনা, দুঃখের ঘটনা কিংবা অদ্ভুত ঘটনা আলাদা করতে পারি না, তাও ঠিক না। আমার জীবনে আজ একটা দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। বলব?

    অবশ্যই বলবেন।

    আমার একটা ছেলে আছে, তার নাম না। সে ক্লাস ফোরে পড়ে। স্কুল থেকে তাকে তার বাবার ওপর এক শ শব্দের একটা রচনা লিখতে দেওয়া হলো। সে দুলাইনেই রচনা শেষ করেছে। সে লিখেছে—

    My father is a mad person.

    I dont know anything about him.

    আপনার একটা ছেলে আছে, এটাই তো জানতাম না। আপনি বলেননি কেন?

    আপনি আমাকে বলেছেন সবসময় আনন্দে থাকতে–এই জন্য ছেলের কথা মনে করি না। কাউকে বলিও না।

    আমি আপনার ডাক্তার। আমাকে সবকিছু বলতে হবে। আপনার স্ত্রীর কথা বলুন।

    ওর নাম দিনা। একসময় আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লাম, তখন সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ছেলে নিয়ে চলে গেল। ভালোই করেছে। দিনা খুব বুদ্ধিমতী একজন মেয়ে। তার ছেলেটার বুদ্ধি মায়ের মতো হয়েছে কি না কে জানে!

    রু আদে সাহেব চা খাবেন?

    না। আমি চা খাই না।

    খান না তাতে কী? আজ চা খাবেন। আপনাকে সামাজিক হতে হবে। একসঙ্গে চা খাওয়া একটা Social event. আসুন দুজন মিলে চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্প করি।

    আচ্ছা।

    আপনি কি দস্তয়েভস্কির ইডিয়ট উপন্যাসটা পড়েছেন?

    না।

    ওই উপন্যাসে প্রিন্স মিশকিন নামে একটি চরিত্র আছে। চরিত্রটার সঙ্গে আপনার মিল আছে। প্রিন্স মিশকিন ছিলেন একজন শুদ্ধতম মানুষ। তিনিও আপনার মতো অসুস্থ ছিলেন। উপন্যাসটা দেব? পড়বেন?

    না, উপন্যাস পড়তে আমার ভালো লাগে না।

    উপন্যাস পড়তে আপনার ভালো লাগে না, অথচ আপনি নিজেই উপন্যাস লিখছেন? ব্যাপারটা কন্ট্রাডিক্টারি না?

    জি।

    তাতে সমস্যা কিছু নাই। মানুষ মানেই কন্ট্রাডিকশন।

    রুস্তম বলল, আপনাকে একটা জরুরি কথা জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। ভুলে গেছি বলে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এখন মনে পড়েছে।

    চা আসুক। চায়ে চুমুক দিতে দিতে জরুরি কথাটা বলবেন।

    চা আসতে আসতে ভুলে যেতে পারি। এখনই বলি?

    বলুন।

    আমার বাড়িতে মুনিয়া বলে একটা মেয়ে থাকে। রাগ করলেই সে বলে, আমি ঝাপ দিয়ে চলন্ত ট্রাকের সামনে পড়ে যাব। চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাপিয়ে পড়া তার পক্ষে কি সম্ভব?

    রেণুবালা বললেন, বারবার যদি বলে, তাহলে সম্ভব। একটা কথা বারবার বললে Inhibition কেটে যায়। যারা আত্মহত্যা করে, তারা কিন্তু বারবার মৃত্যুর কথা বলে। এক সময় মৃত্যুবিষয়ক Inhibition কেটে যায়।

    তখন ফ্যানে শাড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে পড়ে, কিংবা ঘুমের ওষুধ খায়।

    চা চলে এসেছে। রুস্তম আগ্রহ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। রেণুবালা বলল, আপনি কি গান শোনেন?

    না।

    মাঝে মধ্যে গান শুনবেন। মোঞ্জার্টের মিউজিক আপনার ভালো লাগবে বলে আমার ধারণা। মোঞ্জার্ট মানসিক রোগী ছিলেন। প্রায়ই তিনি অদ্ভুত সব জিনিস দেখতেন, বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই।

     

    বৃষ্টি হচ্ছিল। রিকশার হুড তুলেও বৃষ্টি পুরোপুরি আটকানো গেল না। রুস্তম বাড়ি ফিরল কাকভেজা হয়ে। বাড়িতে নানান ঝামেলা। হৈচৈ হচ্ছে, চিৎকার হচ্ছে। আমিন দাঁড়িয়ে আছেন দোতলার সিঁড়ির কাছে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। রুস্তম বলল, কী হয়েছে?

    আমিন বললেন, আর্টিস্টের বাচ্চাকে গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় করেছি। যেতে চায় না। বলে কী, বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে যাবে?

    আমি বললাম, ভিজতে ভিজতে যাবি।

    তারপরেও তর্ক করে। বলে কী আমার টনসিলের ধাত। বৃষ্টিতে ভিজলে টনসিল পেকে যাবে।

    আমি বললাম, তখন পাকা টনসিল নিয়ে ঘুরবি।

    রুস্তম বলল, দুলাভাই আপনি শান্ত হন। আপনাকে খুবই অস্থির লাগছে। আপনার হাত-পা কাঁপছে। সবাইকে তুই তুই করে বলছেন এটাও তো ঠিক না।

    আমিন বললেন, আমি সন্ধ্যাবেলায় আর্টিস্টের ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। গাঁজার বিকট গন্ধে থমকে দাঁড়ালাম। আমি বললাম, কী খাচ্ছেন?

    আর্টিস্টের বাচ্চা বলল, গাঁজা খাচ্ছি আর বোতল খাচ্ছি। স্যার আমার সঙ্গে বোতল খাবেন? কত বড় দুঃসাহস চিন্তা করেছ? ওই বদ মেয়েটাকেও বিদায় করেছি।

    কার কথা বলছেন, মুনিয়া?

    হা। উল্টাপাল্টা কথা চারদিকে বলে বেড়াচ্ছে। রাতে নাকি তোমার সঙ্গে ঘুমায়। ইচ্ছা করছিল চড় দিয়ে চাপার কয়েকটা দাঁত ফেলে দেই। মেয়ে মানুষ বলে সেটা সম্ভব হয়নি। আমি বললাম, এই তোর দেশের বাড়ি কোথায়?

    সে বলল, যশোর।

    আমি ড্রাইভারকে বললাম, গাড়ি বের করে একে যশোরের নাইটকোচে তুলে দিয়ে আসো।

    মেয়ের সে কী ফড়ফড়ানি। বলে কী, স্যার আমি কিন্তু চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়ব।

    আমি বললাম, চলন্ত ট্রাক, চলন্ত বাস, চলন্ত বেবিট্যাক্সি যার সামানে পড়তে ইচ্ছা করে পড়বি। আমার কোনো সমস্যা নাই।

    রুস্তম বলল, মুনিয়া চলে গেছে?

    আমিন বললেন, ড্রাইভার যশোরের টিকিট কেটে তাকে নাইটকোচে তুলে দিয়ে এসেছে। বদ মেয়েছেলে!

    রুস্তম বলল, দুলাভাই আপনি সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার শরীর কাঁপছে। যে কোনো মুহূর্তে পড়ে যাবেন। আপনি রাগটা কমান। জিভ বের করে কিছুক্ষণ ফ্যানের নিচে বসুন।

    আমিন বললেন, তুমি আমার ঘরে আসো। তোমার বুবু আমাকে এখন একটা sms পাঠিয়েছে। এর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ধারণা, তোমার বুবুও তোমার পথ ধরেছে। ব্রেইন গন উইথ দ্য উইন্ড।

    আমিনের sms-এ লেখা–

    The baby is now about 12.5 cm or 4.92 inches. He/she is now producing urine and actually urinating into the amniotic fluid. At this week your baby is regular wiggler but because of his/her small size you probably wont feel it.

    আমিন বললেন, এর মনে কী?

    রুস্তম বলল, এর মানে বুবুর বাচ্চা হবে। বাচ্চাটা সম্পর্কে কথাবার্তা লেখা।

    বলো কী?

    আপনার উচিত এক্ষুনি বুবুর কাছে যাওয়া।

    এক্ষুনি যাব কিভাবে? ভিসার ব্যাপার আছে না? ও আচ্ছা আচ্ছা, ভিসা তো করানো আছে। তোমার বুবুর ঘ্যানঘ্যানানিতে অতিষ্ঠ হয়ে দুজন মালয়েশিয়ার ভিসা করিয়েছিলাম। সে বলেছে, আমাকে খুব ভালো একটা খবর বিদেশে গিয়ে দেবে। ব্যবসার একটা ঝামেলায় পড়ে বললাম, এই বছর যাওয়া সম্ভব না। সে আরেকজনকে নিয়ে চলে গেল। এখন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলছে। টেলিফোনে ঘেউ ঘেউ কেন করছে, এটা বুঝতে পারছি opti

    আপনাকে বিরক্ত করছে আর কিছু না।

    আফতাব হারামজাদাটা তো মনে হয় এখনো ঝুলে আছে।

    ঝুলে থাকতে পারে, তবে দুলাভাই আপনি নিশ্চিত থাকেন বুবু তাকে কাছে ঘেঁষতে দেবে না।

    আমিন বললেন, এখন তুমি সামনে থেকে যাও। আমি ঠাণ্ডা মাথায় কিছুক্ষণ চিন্তা করি। সব কেমন এলোমেলো লাগছে। আর্টিস্টের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। সে নিজের ঘরে বসে কী খাচ্ছে, না খাচ্ছে এটা তার ব্যাপার। আমাকে দ্রতা করে খেতে বলেছে। এটা অন্যায় কিছু না, বরং এটাই শোভন। মুনিয়া মেয়েটাকেও জোর করে নাইট কোচে তুলে দেওয়া অন্যায় হয়েছে। আমার মাথায় রাখা উচিত ছিল, সে একটা মেয়েমানুষ। I am such a fool.

    বৃষ্টি বেড়েছে। জানালার পর্দা উড়ছে। বৃষ্টির ছাট আসছে। রুস্তম লেখার টেবিলে মোমবাতি এবং দেয়াশলাই নিয়ে বসেছে। ঢাকা শহরে রাতে বৃষ্টি নামলেই ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। রুস্তমের লেখালেখি করতে ইচ্ছে করছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন তাকে সবসময় আনন্দে থাকতে হবে। আনন্দের অনুসন্ধান করতে হবে। তার মধ্যে এ মুহূর্তে আনন্দের ঘাটতি আছে। আর্টিস্ট চলে গেছে তাতে রুস্তমের তেমন খারাপ লাগছে না। হোসেন মিয়া কখন থাকত, কখন থাকত না তা বোঝা যেত না।

    মুনিয়া চলে গেছে সেটাও খারাপ লাগছে না। এটা মুনিয়ার বাড়ি না। একসময় তাকে চলে যেতেই হবে। খারাপ লাগছে মেয়েটা সত্যি সত্যি যদি ট্রাকের নিচে পড়ে! এই সম্ভাবনা আছে। ডাক্তার বলেছেন।

    রুস্তম কারেন্ট চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আজকের লেখালেখি হবে মোমবাতির আলোয়। প্রণাশের মৃত্যুর আরেকটা ভার্সন লেখা হবে। এই ভার্সানে প্রণাশ মারা যাবে চলন্ত ট্রাকের নিচে পড়ে। সে তার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বের হয়েছিল। চিড়িয়াখানায় যাবে, জীবজন্তু দেখবে। রিকশার সন্ধানে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। রাস্তার ওপাশে একটা রিকশা দেখা গেল। এই রিকশা, যাবে বলে প্রণাশ এগিয়ে যেতেই একটা ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেল।

    স্যার, ঘুমাবেন না?

    রুস্তম চমকে তাকাল। মুনিয়া আগের মতোই তার বিছানার পাশে পাটি পেতে শুয়ে আছে। তার গায়ের শাড়িও আগের মতোই এলোমেলো।

    তুমি যশোর যাওনি?

    মুনিয়া উঠে বসে মাথার চুল বাঁধা শুরু করল। জবাব দিল না।

    আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছ। এখন তমাকে দেখে খুবই ভালো লাগছে।

    মুনিয়া বলল, আজ সারাদিন আপনার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। শুয়ে পড়েন।

    প্রণাশ বাবুর মৃত্যুর অংশটা লিখে শুয়ে পড়ব। আমি ঠিক করেছি উনি মারা যাবেন ট্রাকে চাপা পড়ে।

    মুনিয়া শুতে শুতে বলল, আহা বেচারা!

    রুস্তম বলল, শাড়ি ঠিকঠাক করে ঘুমাও।

    মুনিয়া শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল, সরি।

    রুস্তম বলল, তুমি ঠোঁটে কালো লিপস্টিক দিও না। কালো লিপস্টিকে তোমাকে কুৎসিত লাগে।

    মুনিয়া বলল, আর দেব না স্যার।

    রুস্তম অবাক হয়ে দেখল, মুনিয়ার ঠোঁটে কালো লিপস্টিক নেই। তার ঠোঁটে এখন হালকা গোলাপি আভা। রুস্তম দরজার দিকে তাকাল। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এর একটাই অর্থ, মুনিয়া নেই। সে মুনিয়াকে কল্পনা করছে। সে সাধারণ মানুষ না। একজন অসুস্থ মানুষ বলেই কল্পনাটাকে বাস্তব মনে হচ্ছে।

    মুনিয়া!

    মুনিয়া পাশ ফিরতে ফিরতে বলল, আমাকে মুনিয়া ডাকবেন না। আমাকে ডাকবেন ময়ূরী।

    ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে। রুস্তম মোমবাতি জ্বালিয়ে খাতা খুলল। তার কাছে খুবই ভালো লাগছে যে, মুনিয়া কাছেই শুয়ে আছে।

    ময়ূরী।

    জি স্যার।

    একটু কাছে আসো তো।

    ময়ূরী সঙ্গে সঙ্গে উঠে এলো। রুস্তম বলল, কিছুক্ষণের জন্য তোমার হাতটা ধরব।

    রুস্তম ময়ূরীর হাত ধরেছে। হাত ধরে রাখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে। কল্পনার মেয়ের হাত ধরা যায় না। কিন্তু সে তো হাত ধরতে পারছে।

    রুস্তম বলল, আমার বোন সামিনার বাচ্চা হবে।

    বলেন কি! ছেলে না মেয়ে?

    ছেলে না মেয়ে জানায়নি। আমার ধারণা যমজ মেয়ে হবে।

    স্যার জানেন যমজ বাচ্চার আমারও খুব শখ।

    যমজ বাচ্চা মানুষ করা কঠিন আছে। তোমার স্বামীকে সাহায্য করতে হবে। ভালো কথা! তোমার স্বামীর নামটা তো জানা হলো না।

    জেনে কি হবে স্যার?

    তাও ঠিক, জেনে কি হবে!

    ঝুম ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাট আসছে। মোমবাতির শিখা কাপছে। যে কোনো সময় নিভে যাবে।

    রুস্তম বলল, মুনিয়া! তুমি ভালো মেয়ে।

    স্যার আমি জানি।

    আমার দুলাভাইও কিন্তু ভালো মানুষ। দুঃখে ধান্ধায় ব্রেইন নষ্ট হয়ে গেছে।

    আহা বেচারা!

    ঝাপটা বাতাসে মোমবাতি নিভে ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। মুনিয়া বলল, আপনি ভয় পাবেন না স্যার। আমি আপনার কাছেই আছি।

    আমি জানি তুমি কাছে আছ। আগে আমি অন্ধকার ভয় পেতাম এখন পাই না।

    অন্ধকার ভয় পেতেন কেন স্যার?

    এটা খুবই লজ্জার কথা। আমি কাউকে বলিনি। ডাক্তার রেণুবালাকেও বলিনি। লজ্জার কথা বলে বেড়াতে হয় না।

    বলতে ইচ্ছা না করলে বলতে হবে না।

    তোমাকে বলতে সমস্যা নেই। কারণ তুমি কেউ না।

    স্যার এটা কি বললেন? আমি ময়ূরী।

    আমি ময়ূরী ভাবছি বলেই তুমি ময়ূরী। আমি যদি ভাবি তুমি দিনা তাহলেই তুমি দিনা হয়ে যাবে।

    আপনার স্ত্রী দিনা?

    হুঁ।

    যার ভালো নাম মদিনা?

    হুঁ। ম কেটে সে হয়েছে দিনা।

    আমিও আমার নামের ম কেটে ফেলে দেব। আমি হয়ে যাব ময়ূরী।

    বাহ্! তোমার তো অনেক বুদ্ধি।

    হুঁ।

    উনাকে আমি কি ডাকব?

    তাকে তোমার কিছু ডাকতে হবে না। তার সঙ্গে তোমার কখনো দেখা হবে না।

    আপনি চাইলেই হবে। আপনার দুপাশে আমরা দুজন বসে থাকব।

    রুস্তম বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল। আর তখনই কারেন্ট চলে এলো। ঘরে ঝলমলে উজ্জ্বল আলো। ময়ূরী কোথাও নেই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকা একা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }