Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প1251 Mins Read0

    ১.২২ পুকুরের মাঝখান থেকে

    পুকুরের মাঝখান থেকে সুনীতি সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, শয়তান মেয়ে, মাকে বলে তোমার ফাজলামি বার করে ছাড়ব।

    আনন্দ বিব্রত, হতভম্ব। কী করবে তা যেন ভেবে উঠতে পারছে না। হাতের ইশারায় সুধা তাকে নৌকো নিয়ে দূরে পাড়ি দিতে বলল। তারপর রুমার দিকে ফিরে বলল, তুমি নিশ্চয়ই খুব রাগ করেছ–

    রুমা বলল, এ মা, শুধু শুধু রাগ করব কেন?

    নৌকো করে বেড়াতে পারলে না বলে।

    নৌকোয় আমি ঢের চড়েছি। আজ না হয় নাই চড়লাম। রুমা বলতে লাগল, আমি কি ছেলেমানুষ যে এই জন্যে রাগ করব?

    একটু চুপ করে থেকে সুধা বলল, ব্যাপারটা কী জানো ভাই–

    কী?

    তোমার মামাটি আমার দিদিভাইয়ের– এই পর্যন্ত বলে সুধা চোখ টিপল।

    রুমাও চোখ নাচাল। সুর টেনে বলল, সত্যি!

    মাথা অল্প কাত করে হেসে সুধা বলল, সত্যি–

    তাই বুঝি দু’জনকে চান্স করে দিলে?

    হ্যাঁ।

    তোমার মতো দয়ালু মেয়ে আর কক্ষণো দেখি নি।

    বলছ!

    হুঁ-উ-উ—

    একটু চুপ করে থেকে রুমা আবার বলল, তোমার কথা জানা রইল। দরকার হলে আমাকেও এইরকম চান্স টান্স করে দিও–

    সকৌতুক, রসাল গলায় সুধা বলল, নিশ্চয়ই। কবে দরকার হচ্ছে?

    চোখ ছোট করে রুমা বলল, এক্ষুণি ঠিক বলতে পারছি না।

    কী বলতে যাচ্ছিল সুধা, হঠাৎ দেখতে পেল বিনু ঝুমা আর ঝিনুক পলকহীন তাকিয়ে আছে। সুধা ঝংকার দিয়ে উঠল, কী শুনছিস রে তোরা? এই উল্লুক ছেলে–

    বিনু বলল, তোরা যা বলছিস তাই শুনছি।

    সুধা তাড়া লাগল, খুব পাকা হয়েছ, না? যা যা, এখান থেকে ভাগ—

    তোরা ভাগ—

    সুধা রেগেমেগে উঠতে যাচ্ছিল, রুমা বলে উঠল, চল চল, আমরা ওই বাগানের দিকটায় যাই–

    উত্তর দিকে বাগানটা যেখানে বেতের লতা আর হলুদ রঙের লটকা ফলের গাছে ঘন হয়ে আছে, সুধারা সেদিকে চলে গেল।

    বিনুরা দাঁড়িয়েই ছিল। ঘাড় ফিরিয়ে পুকুরটার দিকে তাকাতে গিয়েই সে অবাক। আনন্দদের নৌকোটার চিহ্নমাত্র নেই, ধানখেতের ভেতর কোথায় কখন অদৃশ্য হয়ে গেছে, কে জানে।

    বিনুর দেখাদেখি ঝুমাও পুকুরের দিকে তাকাল। বলল, কী খুঁজছ?

    বিনু বলল, নৌকোটা কোথায় গেল বল তো–

    ভুরু নাচিয়ে ঠোঁট টিপে চাপা গলায় ঝুমা বলল, আমার মামা তোমার দিদিকে নিয়ে হয়তো–

    কী?

    আমরা যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে চলে গেছে।

    হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে যেতে ভয়ে ভয়ে বিনু বলল, জানো, আমার বড়দিটা সাঁতার জানে না। ফুল তুলতে গিয়ে কি কাউফল পাড়তে গিয়ে যদি জলে পড়ে যায়?

    ঝুমা বলল, এই জন্যে তুমি ভয় পাচ্ছ?

    হুঁ–

    কোনও ভয় নেই। আমার মামাই তো সঙ্গে আছে।

    তোমার মামা বুঝি সাঁতার জানে?

    হ্যাঁ।

    তোমার মতো?

    আমার চাইতে ঢের, ঢের ভাল। তোমার দিদি যদি জলে পড়ে যায়, মামা ঠিক তুলে আনবে।

    আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে খুব আস্তে আস্তে বিনু বলল, যেমনি করে তুমি আমায় তুলে এনেছিলে?

    একটুখানি ভেবে নিয়ে ঝুমা বলল, কেমন করে আনবে জানি না। একেক জন একেক রকম করে তুলে আনে। আমি তো তোমার চুলের মুঠি ধরে তুলেছিলাম। কেউ কেউ আবার জড়িয়ে ধরেও তোলে।

    হঠাৎ গলা চড়িয়ে বিনু বলে উঠল, কক্ষনো না।

    ঝুমা অবাক, কী!

    তোমার মামা আমার দিদিকে কক্ষনো জড়িয়ে ধরে জল থেকে তুলবে না।

    যেমন করে পারে তুলুক, তাতে তোমার কী, আমার কী। চল এখন বাড়ি যাই—

    আগে আগে বিনু আর ঝুমা চলেছে। পেছনে ঝিনুক।

    যেতে যেতে সরু গলায় ঝুমা ডাকল, অ্যাই—

    বিনু অন্যমনস্কের মতো হাঁটছিল। ব্যস্তভাবে চোখ তুলে পাশের দিকে তাকাল।

    ঝুমা বলল, সেই কথাটা কিন্তু কাউকে বলো না।

    কোন কথাটা?

    হাঁদারাম শিকদার। একটু আগে কাউফল পাড়তে গিয়ে কী হয়েছিল মশাই?

    চট করে ঘাড় ফিরিয়ে ঝিনুককে দেখে নিল বিনু। মেয়েটা গোয়েন্দা চোখে একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি বিনু বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার মনে আছে।

    সেটা বললে দু’জনেরই কিন্তু–

    কী?

    কানের কাছে মুখ এনে ঝুমা ফিসফিস করল, মার হবে।

    সেই অবস্থাতেই বিনু যতখানি পারল, মাথাটা নেড়ে ঝিনুককে দেখতে চেষ্টা করল। মেয়েটা কুমার কথা শুনবার জন্য কান খাড়া করে আছে।

    একসময় তারা বাড়ি এসে গেল।

    দুপুর পেরিয়ে সূর্যটা যখন পশ্চিমে খানিকটা ঢলে পড়েছে, রোদের রঙে যখন হলুদ আভা ফুটল, সেই সময় খাবার ডাক পড়ল।

    রান্নাঘরের লম্বা বারান্দায় সারি সারি আসন পড়েছে সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে দিলেন স্নেহলতা।

    আনন্দ-সুধা-সুনীতিকুমারুমা আর ঝিনুক বসেছে একদিকে। আরেক দিকে অবনীমোহন শিশির এবং হেমনাথ।

    খেতে খেতে, আড়ে আড়ে সুধা আর রুমা আনন্দ এবং সুনীতিকে দেখতে লাগল। তাদের চোখেমুখে চাপা দুষ্টুমির হাসি আঠার মতো মাখান।

    সুনীতি চোখ তুলে কারোর দিকে তাকাচ্ছে না, ঘাড় খুঁজে পাতের ওপর ঝুঁকে খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। ভাত-ডাল-মাছভাজা দিয়ে সাজানো প্রকান্ড একখানা কাঁসার থালা ছাড়া তার আশেপাশে সামনে পেছনে আর কিছুই যেন নেই, বিশ্বসংসার সব মুছে গেছে।

    সুধা দু’চারবার ডাকাডাকি করে যখন সুনীতির সাড়া পেল না তখন আনন্দর দিকে ফিরল। গলার খুব গভীর থেকে ডাকল, এই যে–এই মশাই–

    আনন্দ তাকাল। হেসে হেসে বলল, কী বলছেন?

    আছেন কেমন?

    ভালই।

    চোখের তারাদু’টো খঞ্জনপাখির মতো কিছুক্ষণ নেচে বেড়াল সুধার। তারপর সে বলল, নৌকোভ্রমণ কেমন লাগল?

    আধবোজা চোখে আধফোঁটা গলায় আনন্দ বলল, ওই একরকম।

    অবাক হবার মতো করে সুধা বলল, একরকম কী মশাই!

    তবে কিরকম?

    বলুন চমৎকার।

    ঘাড়খানা খানিক বাঁকিয়ে হাসতে হাসতে আনন্দ বলল, বেশ, তাই—

    সুধা বলল, কেমন একখানা সুযোগ করে দিলাম বলুন তো?

    ধন্যবাদ।

    শুধু ধন্যবাদে চলবে না।

    তবে?

    তার জন্যে পুরস্কার চাই।

    কী পুরস্কার?

    সে আপনি জানেন।

    একটু ভেবে নিয়ে আনন্দ বলল, এক্ষুনি তো আর দেওয়া যাবে না। পুরস্কারের কথাটা মনে থাকল। আমাকে যেরকম সুযোগ করে দিয়েছেন তেমনি একটা সুযোগ টুযোগ আপনাকেও

    সরু করে জিভ বার করে দ্রুত ভেংচে উঠল সুধা, এ-হে-হে- তারপর সুনীতির দিকে তাকিয়ে বলল, নৌকোয় সময়টা বেশ কাটল, না রে দিদি?

    সুনীতি চুপ। পাতের দিকে ঝুঁকেই ছিল সে, আরও অনেকখানি নুয়ে পড়ল।

    ওদিকে বারান্দার দূর প্রান্তে আরেকটা খেলা চলছে। বিনু খুব মনোযোগ দিয়ে সুধাদের কথা শুনছিল। আর তার পাশ থেকে একটু পর পরই ফিস ফিস গলায় ডেকে যাচ্ছিল ঝিনুক, অ্যাই অ্যাই–অ্যাই—

    ক’দিন হল বিনুরা রাজদিয়ায় এসেছে। এর ভেতর তার সঙ্গে একটি কথাও বলে নি ঝিনুক। আজ তাকে ডাকতে শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল বিনু। কিন্তু তার চাইতেও বড় বিস্ময় ছিল সুধাদের দিকে। বিনুর চোখকান-মন, সব সুধারাই চুম্বকের মতো টেনে রেখেছিল। ফলে ঝিনুকের ডাকটা শুনতে পেলেও সে সাড়া দিচ্ছিল না, অন্যমনস্কের মতো বসে ছিল।

    সুধা একটু থামলে ঝিনুকের দিকে ফিরল বিনু। সুধাদের কথা শুনতে শুনতে আবছাভাবে যে বিস্ময়টা সে অনুভব করছিল, এবার তা মুখেচোখে খুব স্পষ্ট ফুটে বেরুল।

    ঝিনুক তাকিয়েই ছিল। চোখাচোখি হতে বলল, কতক্ষণ ধরে তোমায় ডাকছি। শুনতে পাও না?

    বিনু বলল, ডাকছ কেন?

    তখন নৌকোয় করে তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?

    ওই ধানখেতের ওধারে।

    কী করতে?

    কী করতে গিয়েছিল, বিনু বলল।

    ঝিনুক বলল, খুব ফুলটুল তুললে তা হলে।

    হুঁ–বিনু ঘাড় কাত করল।

    একটু চুপ করে থেকে ঝিনুক বলল, কাউফল পাড়তে গিয়ে তোমার কী হয়েছিল?

    বিনু ভীষণ চমকে উঠল। ভীতু চোখে ঝিনুককে দেখতে দেখতে বলল, কী আবার হবে? কিছু হয় নি তো–

    বিনুর চোখের ভেতর তাকিয়ে ঝিনুক বলল, নিশ্চয়ই হয়েছে।

    কাঁপা সুরে বিনু বলল, সত্যি বলছি, হয় নি।

    তা হলে ও তোমাকে কী একটা কথা বলতে বারণ করল কেন? বলে আড়চোখে ঝুমাকে দেখিয়ে দিল ঝিনুক।

    চট করে মনে মনে বানিয়ে নিয়ে বিনু বলল, ও-হ্যাঁ হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। কাউফল পাড়তে যখন যাই একটা কাক আমার মাথায় ঠুকরে দিয়েছিল। সেই কথাটা বলতে বারণ করেছে ঝুমা।

    একদৃষ্টে তাকিয়েই ছিল ঝিনুক। খুব আস্তে আস্তে সে মাথা নাড়ল, উঁহু-উহুঁ-উহুঁ–

    কী?

    কাক না।

    তবে কী?

    আর কিছু হয়েছে। তুমি আমার কাছে লুকোচ্ছ।

    না না, আর কিছু হয় নি।

    মা কালীর দিব্যি?

    তোমার বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে না?

    মা কালীর দিব্যি বললে বিশ্বাস হবে।

    ওধার থেকে হেমনাথ ডেকে উঠলেন, আনন্দ–

    সুধা-আনন্দ-সুনীতি আর রুমার মধ্যে সেই মজার খেলাটা চলছিলই। চাপা মৃদু গলায় তারা কথা বলছিল, হাসাহাসি করছিল। ডাকটা শুনতে পায় নি আনন্দ।

    হেমনাথ রগুড়ে গলায় আবার ডাকলেন, এই যে বাঘ-ভাল্লুক মারিয়ে—

    চমকে আনন্দ তাকাল, আজ্ঞে, আমায় ডাকছেন?

    হেমনাথ ঘাড় কাত করলেন। ইঙ্গিতময় সুরে বললেন, আপনি কি ওদিকে খুব ব্যস্ত?

    আনন্দ হকচকিয়ে গেল। মুখ ঈষৎ নত করে আস্তে আস্তে বলল, আজ্ঞে না। এমনি গল্প করছিলাম।

    হেমনাথ বললেন, কী গল্প?

    এই নানারকম, আজে বাজে–

    যুবক যুবতীদের কথায় আমাদের থাকতে নেই। সে যাক গে—

    এই সময় সুধা চেঁচিয়ে উঠল, এ কি দাদু!

    সুধার গলায় এমন একটা সুর ছিল যাতে থতিয়ে গেলেন হেমনাথ। বললেন, কী রে?

    তখন না বললেন আপনি ইয়ং ম্যান, একটা দাঁতও পড়ে নি, চামড়া কোঁচকায় নি, চশমা ছাড়া দশ মাইল দূরের জিনিস দেখতে পান। আরও কত কী। আমাদের নিয়ে একটা মোগল হারেমও খুলতে চেয়েছিলেন। এখন বলছেন যুবক যুবতীদের কথায় থাকেন না। তবে কি আপনি বুড়ো?

    খুব ধরেছিস দিদি, খুব ধরেছিস–হেমনাথ উচ্ছ্বসিত হয়ে হেসে উঠলেন। শরতের দমকা হাওয়ায় তার হাসির শব্দ এদিক সেদিক ভেসে বেড়াতে লাগল।

    হাসি থামলে আবার আনন্দকে নিয়ে পড়লেন হেমনাথ, তুমি তো ইস্টবেঙ্গলে এই প্রথম এলে–

    আজ্ঞে হ্যাঁ– আনন্দ মাথা নাড়ল।

    কেমন লাগছে জায়গাটা?

    ভাল। তবে বড্ড জল। নৌকো ছাড়া দূরে কোথাও বেরুনো যায় না।

    এলেই তো বর্ষার সময়, জল থাকবে না?

    বর্ষা কোথায়? এ তো আশ্বিন মাস–শরৎকাল।

    আমাদের বর্ষা আরম্ভ হয় আষাঢ়ের গোড়ায়, চলে একটানা কার্তিক মাস পর্যন্ত। শীতের সময় কি গরমে এলে দেখতে মাঠে জল নেই, চারদিক শুকনো খটখটে।

    একটু চুপ করে থেকে আনন্দ বলল, জামাইবাবু বলেছিলেন, এ সময় এলে ভাল গেম হবে। আমি ছা টা, কার্তুজ-বন্দুক, সব নিয়ে এসেছি। বাঘটাঘ দূরে থাক, এই জলের ভেতর কোথায় গিয়ে যে দু’টো পাখি মারব তাই ভেবে পাচ্ছি না।

    হেমনাথ অবাক। বললেন, পাখি শিকারের জায়গাও তোমায় কেউ দেখিয়ে দেয় নি!

    আজ্ঞে না।

    ঠিক আছে, যুগলের সঙ্গে তোমাকে নিশিন্দার চরে পাঠিয়ে দেব। কত পাখি মারতে পার, একবার দেখব।

    আনন্দ প্রায় লাফিয়ে উঠল, কবে পাঠাবেন?

    যেদিন বলবে।

    কাল?

    বেশ তো।

    এই সময় শিশির বললেন, কাল কেমন করে যাবে? কাল বারোড়ি বাড়ি নেমন্তন্ন আছে না?

    আনন্দ বলল, তা হলে পরশু টরশু– বলতে বলতে হঠাৎ কী মনে পড়ে গেল, এক কাজ করলে কী হয়?

    হেমনাথ শিশির অবনীমোহন–সবাই উৎসুক হলেন।

    আনন্দ বলতে লাগল, একা একা আমি না গিয়ে সবাই মিলে গেলে দিনটা দারুণ কাটবে। সকালবেলা খাবার দাবার নিয়ে বেরিয়ে যাব, পাখি টাখি শিকার করে ফিরব সেই রাত্তিরে।

    অবনীমোহন বিপুল উৎসাহে সমর্থন জানালেন, চমৎকার আইডিয়া। সবাই মিলে একসঙ্গে একটা দিন হইহই করে কাটানো যাবে।

    অবনীমোহন সেই মানুষ সবসময় চমকপ্রদ কিছুর জন্য যারা উন্মুখ হয়ে থাকেন, হাতের কাছে যখন যে স্রোতটি পান তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। ছোট বড় যেরকম ঢেউই উঠুক না, তাঁকে দুলিয়ে যায়। তিনি বলতে লাগলেন, জানো আনন্দ, কম বয়েসে দু’চারটে পাখি আমিও মেরেছি।

    এবার আনন্দর অবাক হবার পালা, তাই নাকি!

    ঘাড় ঈষৎ হেলিয়ে অবনীমোহন বললেন, তোমার কাছে এক্সট্রা বন্দুক টলুক আছে?

    আছে।

    খুব ভাল, খুব ভাল। বুড়ো বয়েসে একবার চাঁদমারি করে দেখা যাবে কেমন হয়।

    সুরমা স্নেহলতার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নাক কুঁচকে, চোখের মণিতে আলতো করে কপট তাচ্ছিল্য মিশিয়ে স্নেহলতা বললেন, তুমি মারবে পাখি, তবেই হয়েছে। গাছের ডালে পাখির মনে পাখি বসেই থাকবে, তোমার গুলি যাবে তিন মাইল দূর দিয়ে। শুধু শুধু ছা নষ্ট।

    হেমনাথ বললেন, না পারলেই বা কী। আনন্দ করতে যাওয়া, সেটা হলেই হল।

    স্নেহলতা বললেন, আমাকেও তোমাদের সঙ্গে যেতে হবে নাকি?

    অবনীমোহন বললেন, নিশ্চয়ই। সবাই যাবে আর আপনি বাড়ি বসে থাকবেন, তা হতে পারে। তা হলে আনন্দের অর্ধেকটাই মাটি।

    আমি কিন্তু পরশু যেতে পারব না।

    হেমনাথ বললেন, কেন?

    আমার সেদিন উপোস।

    তা হলে কবে যাবে?

    এক্ষুনি কী করে বলি? এমন ঘোড়ায় জিন দিয়ে থাকলে চলে?

    ঠিক হল, কালও না, পরশুও না–পরে সুবিধেমতো দিন ঠিক করে নিশিন্দার চরে শিকারে যাওয়া হবে।

    খাওয়াদাওয়ার পর সারা বিকেল গল্প করে সন্ধের আগে আগে শিশিররা চলে গেলেন। তারপরও অনেকক্ষণ ওদের কথা হল, বিশেষ করে আনন্দর।

    অবনীমোহন বললেন, বেশ ছেলেটি।

    হেমনাথ বললেন, হ্যাঁ, খুব স্মার্ট। সুপুরুষ।

    এদিকে একধারে বসে চাপা নিচু গলায় সুধা সুনীতিকে বলতে লাগল, শুনছিস দিদি, শুনছিস–

    অস্বস্তির গলায় সুনীতি বলল, কী আবার শুনব?

    বাবা কেমন আনন্দবাবুর ভক্ত হয়ে উঠেছে!

    উঠেছে তো বেশ করেছে।

    আমার কী মনে হয় জানিস?

    অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে সুনীতি বলল, জানতে চাই না।

    সুনীতির মুখ যেদিকে, সেদিকে গিয়ে আঙুলের ডগায় তার চিবুকটা তুলে ধরল সুধা। হালকা গলায় বলল, আনন্দবাবুকে বাবা বোধহয় জামাই করে নেবে।

    সুনীতি ভেংচে ভেংচে বলল, তোকে বলেছে!

    এখনও বলে নি। তবে বাবার কথাবার্তা শুনে তাই মনে হচ্ছে।

    চট করে কী ভেবে নিয়ে তরল পরিহাসের চোখে বোনের দিকে তাকাল সুনীতি, বাবার ভাবগতিক দেখে আমার কিন্তু আরেকটা কথা মনে হয়—

    ঠিক বুঝতে না পেরে সুধা বলল, কী?

    আনন্দবাবুর আগে হিরণবাবুকেই বাবা জামাই করে নেবে।

    চোখ পাকিয়ে সুধা বলল, ভাল হবে না বলছি দিদি।

    কাছাকাছি বসে শুনতে শুনতে বিনু টের পাচ্ছিল, আনন্দ আর হিরণকে নিয়ে দুই দিদির ভেতর এক মজার খেলা শুরু হয়েছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়
    Next Article আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.