Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প1251 Mins Read0

    ১.২৫ রঙিন প্রজাপতি হয়ে

    দেখতে দেখতে আরও চার পাঁচটা দিন রঙিন প্রজাপতি হয়ে চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল।

    এর ভেতর প্রায় রোজই বিনুরা বেড়াতে বেরিয়েছে। হেমনাথদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টিমারঘাট পার হয়ে স্কুল, সেটেলমেন্ট অফিস, থানা, আদালত পেছনে ফেলে নদীপাড়ের সুদূর ঝাউবন পর্যন্ত একটানা পাড়ি। ফলে রাজদিয়াকে খুব ভাল করেই চেনা হয়ে গেছে। কতটুকুই বা শহর! মেরুদন্ডের মতো একটা বড় রাস্তার দু’ধারে সরু সরু শাখা প্রশাখায় যতখানি সম্ভব, তার চাইতেও অনেক কমই বেড়েছে রাজদিয়া। এ শহর বড় কুণ্ঠিত, তার স্বভাব অসীম সঙ্কোচ দিয়ে ঘেরা। সবাই যখন বাড়ে, প্রগলভ হয়, তখন রাজদিয়া জড়সড় হয়ে থাকতে ভালবাসে।

    শুধু রাজদিয়ার ভূগোলটাকে ভাল করে জেনে নেওয়া নয়, এই চার পাঁচ দিন আরও একটা ব্যাপার ঘটেছে। দল বেঁধে সবাই একদিন নিশিন্দার চরে গিয়ে পাখিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এসেছে বিনুরা।

    নদীর মাঝমধ্যিখানে সুবিশাল ভূখণ্ড জুড়ে শুধু শ্যামল বনানী। এখানে মানুষের বসতি এখনও গড়ে ওঠে নি। মানুষ আসার আগেই, পৃথিবীর আদি সন্তান উদ্ভিদেরা এসে গেছে। হেমনাথ জানিয়েছেন, এখানকার মাটি ফসল ফলানোর যোগ্য হয়ে উঠলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ হানা দেবে।

    নিশিন্দার চরের ঝোঁপঝাড় বনভূমি জুড়ে শুধু পাখি। হরিয়াল ঘুঘু ডাহুক দোয়েল পাতিবক মোহনচূড়া–চেনা-অচেনা কত যে পাখি, তার হিসেব নেই।

    শিকারি বলতে বিনুদের দলে মোটে দু’জন–অবনীমোহন আর অনন্দ। অবনীমোহন তবু দু’চারটে হরিয়াল টরিয়াল মেরেছেন, আনন্দ কিন্তু একটা গুলিও নিশানায় লাগাতে পারে নি। এই নিয়ে সবাই, বিশেষ করে সুধা আর হেমনাথ আনন্দর পেছনে লেগেছিল।

    ঠোঁট টিপে বিদ্রপের সুরে সুধা বলেছে, কি মশাই, আপনি না বাঘ মেরেছেন, গন্ডার মেরেছেন, হেন মেরেছেন, তেন মেরেছেন। আজ যে একটা পাখিও মারতে পারলেন না!

    হেমনাথ বলেছেন, ও কী করবে বল দিদি? পাখিগুলো যা বদমাইশ, ওর গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছে না যে।

    মুখ লাল হয়ে উঠেছে আনন্দর। বিব্রতভাবে সে জানিয়েছে, কিছুদিন ধরে তার চোখটা ভাল যাচ্ছে না, সব ঝাঁপসা দেখছে, কাজেই নিশানা ঠিক করতে পারে নি। তুচ্ছ পাখি মেরে কী হবে, সত্যিকারের বাঘ মেরে সে দেখিয়ে দেবে।

    সুধা বলেছে, এখানে বাঘ কোথায় পাবেন? চারদিকে জল, আপনার হাতে মরবার জন্য জল সাঁতরে আসতে তাদের বয়ে গেছে।

    হেমনাথ সকৌতুকে বলেছেন, আচ্ছা আচ্ছা, একটা বাঘটাঘ যোগাড় করতে পারি কিনা দেখি। বেচারা অত করে বললে মারবে–

    সবাই হো হো করে হেসে উঠেছে। আনন্দ আর মুখ তুলতে পারে নি।

    নিশিন্দার চরে আরও একটা ব্যাপার হয়েছে। সেটা এইরকম। অবনীমোহন-আনন্দ হেমনাথ-সুধারা যখন শিকার টিকার আর ঠাট্টায় ব্যস্ত সেই সময় ঝুমা বিনুকে নিয়ে বালুকাময় প্রান্তরের ওপর দিয়ে ছুটোছুটি হুটোপুটি করে বেড়িয়েছে। ছোটাছুটির ফাঁকে বিনু লক্ষ করেছে, যেখানে যেখানে তারা গেছে ঝিনুক ঠিক ছায়ার মতো তাদের পিছু নিয়েছে। কিছুই বলে নি ঝিনুক, শুধু চোখ কুঁচকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে। ফলে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করেছে বিনু।

    আজকাল আড়ালে বিনুর সঙ্গে কথা বলে ঝিনুক, কিন্তু ঝুমা কাছে থাকলে সে একবারে বোবা।

    পাখিশিকার, রাজদিয়াকে ভাল করে চেনা, এসব তো হয়েছেই এই ক’দিন। সব চাইতে উল্লেখযোগ্য যে ঘটনাটি বিনুর জীবনে ঘটেছে তা হল যুগলের কাছে সাঁতার শেখা। ডুব সাঁতার, চিত সাঁতার, বুক সাঁতার, তিন রকম সাঁতারে শিখে ফেলেছে সে।

    .

    আরও দিনকয়েক পর এক সকালবেলায় হঠাৎ হিরণ এসে হাজির। বিনুরা পুবের ঘরের বারান্দায় পড়তে বসেছিল। অবনীমোহন নেই। আজকাল সকাল হলে আর বাড়ি থাকেন না তিনি, বেরিয়ে পড়েন। কোনও দিন একা একাই রাজদিয়ার নিরালা পথে গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে হাঁটেন, কোনও দিন বা যুগলকে নিয়ে নৌকোয় করে জলমগ্ন প্রান্তরে পাড়ি জমান। পূর্ব বাংলা তার রমণীয় আকাশবাতাস, ধানবন, আশ্বিনের মেঘ, স্নিগ্ধ দৃশ্যপট দিয়ে তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

    হেমনাথ কোথাও বেরুতে যাচ্ছিলেন, হিরণকে দেখে একেবারে চেঁচামেচি জুড়ে দিলেন, আসুন আসুন, হিজ ম্যাজেস্টির আসতে আজ্ঞা হোক। বলেই স্নেহলতাকে ডাকতে লাগলেন, ওগো, দেখে যাও কে এসেছে।

    ভেতর-বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে এলেন স্নেহলতা। তার পিছু পিছু শিবানী আর সুরমা।

    হিরণকে দেখে স্নেহলতা ভারি খুশি, কিছুটা অবাকও। এই মুহূর্তে তাকে আশা করেন নি বোধহয়। বললেন, বলা নেই কওয়া নেই, কোথায় গিয়েছিলি রে হনুমান?

    হিরণ হাসিমুখে বলল, ঢাকা–

    সে তো জানি। যুগলকে সেদিন তোদের বাড়ি পাঠানো হয়েছিল, সে এসে বলল। ঢাকা যাবার কী দরকারটা ছিল শুনি?

    বই কিনতে গিয়েছিলাম।

    বই কিনতে ক’দিন লাগে? সকালবেলা এখান থেকে বেরুলে সন্ধেবেলা ফিরে আসা যায়। তুই এলি ক’দিন পর? স্নেহলতা চোখ পাকালেন।

    হাতজোড় করে কাঁচুমাচু মুখে হিরণ বলল, প্রসন্ন হও দেবী, প্রসন্ন হও। অত রাগারাগি করলে আমি কিন্তু ভীষণ ভয় পেয়ে যাব।

    তার ভাবভঙ্গি দেখে সবাই হেসে ফেলল।

    স্নেহলতাও হাসলেন, তোকে নিয়ে আর পারি না। আমি গুনে রেখেছি, আট দিন তুই ঢাকায় গিয়ে ছিলি। কেন?

    বললাম তো বই কিনতে গিয়েছিলাম। তারপর পড়লাম বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায়, তারা আসতে দিতে চায় না।

    হেমনাথ এই সময় বললেন, উনি বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি করছেন। আমরা এদিকে ভেবে মরছি। হ্যাঁ রে বাঁদর, ঢাকা থেকে কী বই কিনে আনলি?

    এই যে– বগলের তলা থেকে দু’খানা বই বার করল হিরণ। বলল, একটা শরৎচন্দ্রের দত্তা’র নাট্যরূপ। আরেকটা রবীন্দ্র রচনাবলীর একটা খণ্ড, এতে শ্যামা’ নৃত্যনাট্যটা আছে।

    কী হবে এ সব দিয়ে?

    বা রে, পুজোর সময় নাটক টাটক হবে না? হিরণ বলতে লাগল, অন্য বার শুধু নাটক হয়, এবার এমন একটা কিছু করব যা রাজদিয়াতে কোনও দিন হয়নি।

    হেমনাথ চোখ কুঁচকে শুধোলেন, সে বস্তুটা কী?

    ড্যান্স ড্রামা—

    সেটা কিরকম?

    রহস্যময় হেসে হিরণ বলল, যথাসময়ে দেখতে পাবেন।

    হেমনাথও হাসলেন, বেশ, তাই হবে। আমি এখন চলি, তোরা কথাবার্তা বল। এতদিন পর এলি, একেবারে খাওয়াদাওয়া করেই যাস।

    খাওয়া দাওয়ার কথা বলতে হবে না। সেটি না করে আমি নড়ছি না। আমি এলাম আর আপনি চললেন কোথায়?

    লালমোহনের খোঁজে।

    হিরণকে চিন্তিত দেখাল খোঁজে মানে?

    আর বলিস না, ক’দিন আগে সুজনগঞ্জের হাট থেকে রোগী দেখতে চরবেহুলা গিয়েছিল। বলেছিল পরের দিন ফিরবে। সাত আট দিন পার হতে চলল, এখনও পাত্তা নেই। হেমনাথ বলতে লাগলেন, রোজ একবার করে খবর নিচ্ছি। আজও যদি না এসে থাকে, কাউকে চরবেহুলা পাঠাতে হবে।

    হ্যাঁ, পাঠানো তো দরকারই। দেখুন গিয়ে লালমোহনদাদু এসেছেন কিনা–

    হেমনাথ চলে গেলেন। স্নেহলতাও হিরণকে বসতে বলে ভেতর-বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। এখন সুধা সুনীতি ঝিনুক সুরমা এবং হিরণ ছাড়া এখানে আর কেউ নেই।

    বারন্দার একধারে বসতে বসতে হিরণ বলল, অন্য অন্য বার আমারা ঐতিহাসিক নাটক করি। এবার সুধাদেবী সুনীতিদেবী এসেছেন, তাই বেছে বেছে সামাজিক নাটক আর নৃত্যনাট্য কিনে এনেছি। দেখবেন চারদিকে কেমন সাড়া পড়ে যায়। আমি তো ঢাকায় বন্ধুবান্ধবদের নেমন্তন্ন পর্যন্ত করে এসেছি। সপ্তমী আর অষ্টমীর দিন ওরা নাটক দেখতে আসবে। একবার দেখলে বাছাধনদের মাথাটি ঘুরে যাবে।

    বিনুদের পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল। সুনীতি আঁতকে ওঠার মতো করে বলল, আবার নেমন্তন্নও করে এসেছেন!

    উৎসাহের সুরে হিরণ বলল, বা রে, করব না! শুধু ঢাকায় নাকি, নারায়ণগঞ্জেও করে এসেছি। কাল পরশু মুন্সিগঞ্জ-মীরকাদিম-ব্ৰজযযাগিনী, এই সব জায়গাতেও খবর পাঠাব’

    আপনার বুঝি ধারণা, আমরা দারুণ নাচতে, গাইতে আর অভিনয় করতে পারি?

    নিশ্চয়ই।

    আমাদের নাচও দেখেন নি, গানও শোনেন নি, অভিনয়ও দেখেন নি। তবু কী করে যে এমন ধারণা হল! শেষ পর্যন্ত একটা কেলেঙ্কারি হবে।

    নিরুদ্বেগ গলায় হিরণ বলল, শেষ পর্যন্ত কী হবে, আমি জানি। সে জন্যে আপনাদের ভাবতে হবে না। শুধু আমি যা বলি তাই করে যাবেন। একটু থেমে আবার শুরু করল, কদিন ছিলাম না, এর ভেতর কারা কলকাতা থেকে রাজদিয়ায় এসেছে জানি না। আজই খোঁজ নিয়ে অ্যাক্টর অ্যাকট্রেসদের একটা লিস্ট করে ফেলতে হবে। পুজোর আর দেরি নেই। কাল থেকে রিহার্সালে বসতে হবে।

    গান-বাজনা নাটক-টাটকে বিশেষ আগ্রহ ছিল না সুরমার। একটু সুযোগ পেতেই তিনি বলে উঠলেন, তোমাদের বাড়িটা কোন দিকে হিরণ?

    হিরণ সুরমার প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে বলল, আজ্ঞে, স্টিমারঘাটের কাছাকাছি–

    রাজদিয়া আসার পর অনেকেই তাদের বাড়ি যেতে বলে গেছে, যাওয়া হয় নি। ভেবে রেখেছি। আগে তোমাদের বাড়ি যাব, তারপর অন্যদের হিরণকে ঘিরে সুরমার মনে রঙিন বাসনার আভা লেগেছে।

    বিব্রত মুখে হিরণ বলল, আমাদের বাড়ি যাবেন?

    তার কণ্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল যাতে আহত হলেন সুরমা। বললেন, তোমার আপত্তি থাকলে অবশ্য যাব না।

    হিরণ চকিত হয়ে দু’হাত নাড়তে লাগল, না না, আপত্তি নয়। তবে—

    তবে কী?

    একটুক্ষণ চুপ করে থেকে মৃদু গলায় হিরণ বলল, বুড়ো অথর্ব ঠাকুরদা আর এক বিধবা জেঠাইমা ছাড়া বাড়িতে অন্য কেউ নেই।

    সুরমা চমকে উঠলেন, কেন, তোমার বাবা-মা, ভাই-বোন?

    আমার জন্মের পরই বাবা-মা মারা গেছেন। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। হিরণ বলতে লাগল, ঠাকুরদাও আজ দশ বার বছর পক্ষাঘাতে প্রায় শয্যাশায়ী। জেঠাইমার মারাত্মক রকমের শুচিবাই, কেউ বাড়ি ঢুকলে গোবর জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নেয়। সেই জন্যে কাউকে নিয়ে যেতে চাই না।

    সহানুভূতিতে সুরমার মুখ আর্দ্র হয়ে উঠেছিল। কোমল সুরে তিনি বললেন, কিছু মনে করো না বাবা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি—

    বেশ তো, করুন না।

    তুমি ঢাকায় থেকে পড়। ঠাকুরদার ওই অবস্থা, জমিজমা বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করে কে?

    হিরণ হাসল, কিছু বলল না।

    সুরমা শুধোলেন, হাসলে যে?

    একখানা বাড়ি আর কিছু জমি ছাড়া বিশেষ কিছুই নেই আমাদের।

    তা হলে- কথা শেষ না করে হঠাৎ চুপ করে গেলেন সুরমা।

    আপনি কী বলতে চান, বুঝেছি। বিশেষ জমিজমা নেই, বিষয়-সম্পত্তি নেই, তবু আমাদের সংসার কেমন করে চলে, এই তো?

    আস্তে মাথা নাড়লেন সুরমা, অর্থাৎ তাই।

    গম্ভীর গলায় হিরণ বলল, হেমদাদু চালান। আমাদের সংসার, আমার পড়াশোনা সব তার দয়ায় চলছে। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, এই রাজদিয়ায় কত মানুষকে হেমদাদু বাঁচিয়ে রেখেছেন। উনি না থাকলে আমরা মরে যেতাম। অবশ্য–

    সুধা সুনীতি আর বিনু হেমনাথের কথা শুনতে শুনতে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল। তারা কিছু বলছিল না, এবারও বলল না। সুরমা বললেন, অবশ্য কী–

    সামান্য হেসে হিরণ বলল, আমার ব্যাপারে হেমদাদুর একটু স্বার্থ আছে।

    কিরকম?

    এম. এটা যদি পাশ করতে পারি রাজদিয়া কলেজে আমাকে পড়াতে হবে। অন্য কোথাও চাকরি নিয়ে যাওয়া চলবে না।

    যদি ভাল চাকরি পাও?

    তবুও না। হেমদাদু বলেন, সবাই যদি টাকাপয়সার লোভে দেশ ছেড়ে চলে যায়, চলবে কেমন করে?

    সুরমা বললেন, সে তো ঠিকই–

    প্রসঙ্গটা আরও কিছুক্ষণ হয়তো চলত। এই সময় অবনীমোহন ফিরে এলেন। হিরণকে দেখে খুব আনন্দিত তিনি। বললেন, ঢাকা থেকে কবে এলে?

    হিরণ বলল, আজই। সকালবেলা ফিরেছি, ফিরেই আপনাদের বাড়ি এসেছি।

    বেশ করেছ। ঢাকা গিয়েছিলে কেন?

    কেন গিয়েছিল, হিরণ বলল। নাটকের কথা শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন অবনীমোহন। হইচই বাধিয়ে দিলেন, অভিনয় দেখেছি বটে শিশির ভাদুড়ি মশায়ের। তারপর একে একে গিরিশ ঘোেষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফি, দানীবাবু, কর্ণার্জুন, মিশরকুমারি, নীলদর্পণ, আলমগির–উচ্ছ্বসিত সুরে কত দিগ্বিজয়ী অভিনেতা আর নাটকের নাম যে করে গেলেন, হিসেব নেই।

    এই অবনীমোহনই কদিন আগে শিকার ছাড়া আর কিছুই জানতেন না। পশু পাখিদের প্রাণহনন ছাড়া অন্য কোনও স্বপ্ন দেখতেন না। এখন সে সবের বিন্দুমাত্রও মনে নেই তার। এখন তার চোখ জুড়ে শুধু রঙ্গমঞ্চের মোহময় জগৎ।

    .

    দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে আর বসল না হিরণ, চলে গেল। ফিরে এল রাত্তিরে। জানিয়ে গেল, নাটক এবং নৃত্যনাট্যের জন্য অভিনেতা অভিনেত্রী ঠিক হয়ে গেছে। সুধা একাই ‘শ্যামা’তে শ্যামা, আর ‘দত্তা’র নাট্যরূপ ‘বিজয়া’তে বিজয়ার ভূমিকা পেয়েছে। দুটো বইয়েরই নামভূমিকা তার। অবনীমোহন পেয়েছেন ‘বিজয়া’তে দয়ালের ভূমিকা। সুনীতি করবে ‘বিজয়া’তে নলিনী, ‘শ্যামা’য় তার কোনও ভূমিকা নেই। অবশ্য তাকে পশ্চাৎপটে বসে ‘শ্যামা’র গানগুলো গাইতে হবে।

    সব শুনে সুধার কানে মুখ গুঁজে দিল সুনীতি। ফিসফিসিয়ে বলল, পক্ষপাতিত্বটা দেখলি? সব মেইন মেইন রোল তোর জন্যে, আমার বেলা খুঁটেকুড়ানির পার্ট।

    সুধা বলল, হিংসে হচ্ছে? বলিস তো, তোকে শ্যামা আর বিজয়ার রোল দুটো দিতে বলি।

    অত কাঙাল নই আমি। বলেই গলাটা আরও অতলে নামিয়ে দিল সুনীতি, দেখিস ও ‘শ্যামা’তে বজ্ৰসেন, ‘বিজয়া’তে নরেনের রোল নেবে। দু’জনে না–

    কী?

    জমিয়ে দিবি।

    সুধা বলল, হিংসে করিস নি দিদিভাই। অনন্দবাবুকে বলব দু’টো বাঘ মেরে যেন বলে একটা তুই মেরেছিস। চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে যাবে। জমবে ভাল।

    সুনীতি হাসতে হাসতে বলল, থাম বাঁদর মেয়ে—

    দেখতে দেখতে আরও কয়েকটা দিন কেটে গেল। রাজদিয়ার প্রবাসী সন্তানেরা প্রায় সবাই পুজোর ছুটিতে দেশে ফিরেছে। শহর এখন জমজমাট। কুমোরপাড়ার প্রতিমাগুলোতে এক-মেটে, দু-মেটে তে মেটের পর অঙ্গরাগ শুরু হয়েছে। এদিকে হিরণদের নাটকের রিহর্সাল চলেছে পুরোদমে।

    মহালয়ার যখন দিন তিনেক বাকি, সেই সময়ে দুটো চমকপ্রদ ঘটনা ঘটল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়
    Next Article আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.