Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোজাগর – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প561 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কোজাগর – ১০

    ১০

    সকালে চান করে আটার ফুলকা আর আলুর চোকা খেয়ে মুনাব্বরের সঙ্গে ট্রাকে বসলাম। মুনাব্বর ভিতরে, আমি বাঁয়ে। রোদ আসছিল বাঁদিক দিয়ে। কিছুক্ষণ পর পথটা ডাইনে বাঁক নিতেই শীত শীত করতে লাগল। সকালের শীতের বনের গা থেকে ভারি একটা সোঁদা সোঁদা মিষ্টি গন্ধ ওঠে। কী সব ঠুকরে খেতে খেতে বনমুরগি, ময়ূর, তিতির পথের মাঝ থেকে দুধারে সরে যায়, ট্রাকের শব্দ শুনে।

    ডানদিকের সেগুন প্ল্যানটেশানে একদল বাইসন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লাগানো কুল্থী ক্ষেতে কুল্থী খাচ্ছিল রোদ পোয়াতে পোয়াতে। রাতের শিশির ওদের মোটা অথচ রেশমি চামড়াতে তখনও মাখা ছিল। রোদ পড়ে, ওদের কালচে বাদামি শরীর চক্‌চক্‌ করছিল। কপালের সাদা জায়গাগুলো আর পায়ের সাদা লোমের মোজাও।

    পথে সানদীয়া পড়ে। একই নদী পথটাকে কেটে গেছে সাতবার ঘুরে ফিরে সাত-সাতটা কজওয়ে নদীর ওপর মাইলখানেকের মধ্যে। জল চলেছে তিরতির করে শ্যাওলা-ধরা নুড়ি পাথরের গা বেয়ে। বর্ষায়, বিশেষ করে বৃষ্টির পর, এই সাদীয়াতে এসে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আমাদের, আধঘণ্টা, কখনও বা একঘণ্টাও; বা তার চেয়েও বেশি। তখন পথ ভাসিয়ে কজওয়ের ওপর দিয়ে বেগে লালরঙা ঘোলা বানের জল কাঠকুটো ডালপালা আর নুড়ি ভাসিয়ে গড়িয়ে গর্জন করে বয়ে যায়। যতক্ষণ না জলের তোড় কমে, ততক্ষণ পার হবার উপায় থাকে না। একবার এক কলকাতার র‍্যাফিং-করা বাঙালিবাবু বাহাদুরি দেখানোর জন্যে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও অবিবাহিতা শালিসমেত অ্যাম্বাসাডার গাড়ি করে বর্ষায় এই নদী পেরোতে গিয়ে সপরিবারে ডুবে মারা গেছিলেন। গাড়িসুদ্ধু তাঁদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল নদী, অনেক দূরে। একমাত্র শালিই বেঁচে যান। জামাইবাবুরা চিরদিনই শালিদের জন্যে নানাভাবে করে থাকেন। সেটা কিছু নূতন বা আশ্চর্য ঘটনা নয়। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার পরই রমেনবাবু সানদীয়ার নাম বদলে দিয়ে এই নদীর নাম রেখেছেন জামাই-মারা নদীয়া।

    গাড়ুর কাছে কোয়েলের ওপরের ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ু বাজার হয়ে ট্রাক চলল ভালুমারের দিকে। মুনাব্বর আমাকে ভালুমারে নামিয়ে দিয়ে হুলুক্‌ পাহাড়ে চলে যাবে। আমি মাস্টার-রোল্স তৈরি করে, খাওয়াদাওয়া করে নিয়ে বসে থাকব। মুনাব্বর আবার ট্রাক পাঠাবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। আজ পেমেন্টের দিন। চিপাদোহর থেকে টাকা ও সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছে। নতুন মার্সিডিস্ ট্রাক, ভালুমার বস্তির মাইল খানেক আগে হৃদয়-ঘটিত গোলমালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। জঙ্গলে যে সব মানুষ চাকরি করবার জন্যে যায়, তাদের নিতান্ত দায়ে ঠেকেই সর্বজ্ঞ হতে হয়। তাই মুনাব্বরও একজন মেকানিক্। ড্রাইভার ও হেল্পার তো আছেই। কেবল আমার দ্বারাই কিছু শেখা হল না। যন্ত্রপাতির সঙ্গে আমার একটা জন্মগত বিরোধ আছে। জানি না, ছোটবেলায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এই কারণেই বিস্তর মাঞ্জা দেওয়া সত্ত্বেও আমার সব ঘুড়ি ভো-কট্টা হয়ে যেত কি-না। কোন ফুটোয় তেল ঢালে, কোন ফুটোয় মবিল, সেটুকুও শিখে ওঠা হল না, তাই গজেনবাবু আমাকে ডাকেন বাঁশবাবু, ‘দ্যা পারপেচুয়াল আনপড়’ বলে।

    ওরা যখন বলল, কমপক্ষে আধ ঘণ্টাটাক লাগবে ট্রাক ঠিকঠাক করতে, আমি তখন মুনাব্বরকে বলে নেমে গেলাম। ভাবলাম পায়ে হেঁটেই এগিয়ে যাই। যদি ওদের আসতে দেরিও হয়, তাহলে মাস্টার-রোল নিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে থাকব। দুপুরে মেট-মুনশিদের সঙ্গেই কিছু খেয়ে নেব না হয় জঙ্গলে। অনেকদিন হয়ে গেছে সকালের দিকে এই পথে হাঁটি নি। আমার যাওয়া-আসা সবই ভালুমারের অন্য দিকটাতে।

    শীতের ফসল লেগেছে ঢালে ঢালে, পাহাড়ের গায়ে গায়ে। ভরন্ত সবুজের পটভূমিতে সরগুজা আর কাড়ুয়ার নরম হলুদ ভারি এক স্নিগ্ধতায় ভরে দিয়েছে। অড়হরের ক্ষেতে ফুল এসেছে। রাহেলাওলা আর পুটুসের ফুলে পথের দু-পাশ ভরে আছে। ফিফিচিয়া পাখি ডাকছে থেকে থেকে। ছোটো ছোটো টুই পাখিগুলো ফুরুৎ ফুরুৎ করে উড়ে বেড়াচ্ছে চঞ্চল ভাবনার মতো। কিছুদিন আগে জিনোর লেগেছিল। কিন্তু হলে কী হয়, গাঁয়ের বেশির ভাগ লোকই জিনোর ঘরে তুলতে পারে নি গত বছরে হাতির অত্যাচারে। মকাইকে পালামৌ জেলাতে জিনোর বলে। অথচ পাশের হাজারিবাগ জেলাতে মকাই-ই বলে। পুজোর সময় এই পথেরই দু-পাশে ভরে ছিল হলুদ-সবুজ ফসলে ফসলে। দিন ও রাতে রাখওয়ার ছেলেরা টিয়া ও জানোয়ার তাড়াত তখন। দুপুরে বা রাতে তাদের বাঁশির সুর বা দেহাতি গানের কলি ভেসে আসত দু-পাশ থেকে। গোঁদনি ও সাঁওয়া ধানও যে যা করেছিল, নষ্ট করে দিয়েছিল হাতিতে। এখন কুল্থী মটর-ছিম্মি, অড়হড় এই সব লেগে আছে।

    পদের কালভার্টের নিচে দিয়ে বয়ে-যাওয়া তিরতিরে নালাতে ছোট ছোট অর্ধ-উলঙ্গ ছেলেরা চেত্নী মাছ ধরছে ছেঁকে ছেঁকে। ছোটো ছোটো পাহাড়ী পুঁটি রোদ পড়ে ঝিক্-মিকিয়ে উঠছে ছটফট্-করা ছোটো মাছগুলোর রুপোলি শরীরে। আর সেই রোদই মিলিয়ে যাচ্ছে ছেলেগুলোর কালো কালো রুখু খড়িওঠা অপুষ্ট গায়ে। রোদই ওদের নিখরচার ভিটামিন।

    রাম্‌ধানীরা বুড়ো, কষ্টে কঁকিয়ে নিচু হয়ে হেঁটে আসছিল। ও হাঁটলে ওর হাড়ে হাড়ে হাওয়া-লাগা কঙ্কটি বাঁশের মতো কট্‌ক শব্দ হয়। এই-ই নানকুয়ার রামধানীয়া চাচা। সারারাত ধরে এই শীতে ঔরঙ্গা নদীতে চালোয়া মাছ ধরেছে। তাও মাত্র এক কেজির মতো। বুড়োর শরীরে এখনও রাতের শীত জড়িয়ে আছে। এতক্ষণ রোদে হেঁটেও গরম হয়নি ও। আমি একটা সিগারেট দিলাম। বুড়ো কালভার্টে বসল। সিগারেটটা দুহাতের মধ্যে নিয়ে আদর করে ধরল, তারপর মহামূল্য জিনিসের মতো একবার টানল, তারপর জোরে জোরে টানতে লাগল।

    বলল, নেবে নাকি বাঁশবাবু? মাছ? আমার স্থানীয় নাম বাঁশবাবু। যার যেমন কপাল। চলিতার্থে এ জীবনে কাউকেই বাঁশ দেওয়ার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা না থাকলেও কাগজ কলে আর মালিকের ডিপোতে বাঁশ সাপ্লাইয়ের কাজে বহু বছর লেগে আছি বলে সকলেই আমাকে বাঁশবাবু বলে ডেকে থাকে। বাঁশের মতো আমিও ফুল ধরলেই মরে যাব। বিয়ে-টিয়ে আমার না-করাই ভাল।

    কত করে নিচ্ছ?

    বুড়ো বলল, দামের কি কোনো ঠিক আছে। সারা রাত এই শীতে নদীর জলে দাঁড়িয়ে, বিবেচনা করে যা হয় দাও। তুমি কি আর ঠকাবে আমাকে? তুমি তো শহুরে বাবু নও।

    আমি অনেকই বেশি দিতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু ওদের চেয়ে ভালো জামাকাপড় পরি, আর দু-পাতা ইংরিজিই পড়েছি। নইলে ওদের তুলনায় খুব যে একটা বড়লোক আমি এমনও নয়।

    বললাম, কত পেলে খুশি হও। কোথায় নিয়ে চলেছিলে বেচতে?

    বুড়ো বলল, শীত একেবারে হাড়ের ভিতরে ঢুকে গেছে গো! কোথাওই আর বেচতে টেচতে যেতে পারব না। পথেই কেউ নিয়ে নিলে, নেবে। ফরেস্ট বাংলোতে গেছিলাম—সেখানে কোনো মেহমান নেই। চৌকিদার, মাত্র আট আনায় কিনতে চাইল, তার চেয়ে নিজে খাওয়াই ভালো। তাও শরীরে একটু তাগৎ হবে। তা তুমি যদি দু-টাকা দাও, তো দিয়ে দিই সবটা। তোমার কথা আলাদা।

    দু টাকাই দেব, কিন্তু সবটা দিও না। তুমি এত কষ্ট করে ধরলে, আদ্দেক তুমি খেও, আদ্দেক আমাকে দাও।

    রাম্‌ধানীরা হাসল। বলল, আরেকটা সিগারেট খাওয়াও। আমিও হাসলাম। সিগারেট বের করে দিলাম, তারপর বললাম, গান শোনাবে নাকি একটা?

    বুড়ো টাকা দুটো পেয়ে গাছ-থেকে-ছিঁড়ে-নেওয়া শালপাতায় অর্ধেক মাছ ঢেলে দিয়ে সিগারেটে বড় বড় দুটো টান দিয়ে রোদে পিঠ দিয়ে ঝুমুরের গান ধরল, রামচন্দ্রর বিয়ের গান।

    যে ছেলেগুলো মাছ ধরছিল, তারা মাছ-ধরা ছেড়ে দিয়ে বুড়োর কাছে উঠে এল, এসে রাস্তায় বুড়োকে ঘিরে বসল, মোষের গাড়ির পিঠে খড় বোঝাই করে দূর গ্রামের একজন লোক চলেছিল, মোষের পায়ে পায়ে মিষ্টি-গন্ধ-ধুলো উড়িয়ে গাড়ুর দিকে। সেও গাড়ি থামিয়ে দিল পথের মধ্যিখানে। কিছুক্ষণের জন্যে নিজের নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে বুড়োর গান শুনতে জমে গেল সকলে।

    এখানের জীবন এমনই! সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খেটেও কোনো লাভ হয় না। তাই কিছু সময় নষ্ট করতে ওদের গায়ে লাগে না। আনন্দ আহ্লাদ করতে ওদের ঐটুকুই। হঠাৎই—পড়ে-পাওয়া।

    বুড়ো গান ধরল, ভাঙা ভাঙা খনখনে গলায়। যৌবনে রামধানীয়ার নাকি নাম—ডাক ছিল গাইয়ে হিসেবে। দশটা গ্রামের মধ্যে এমন গাইয়ে ছিল না নাকি!

    “জর্ গেল রাজা তোর জিন্দ্‌গী,
    কী তোর ঘরে রাম হ্যায় ত কুঁয়ার;
    উত্তরে খোঁজলি, দক্ষিণে খোঁজলি,
    তব খোঁজলি চারো পরগনা,
    নাই মিলল কান্যিয়া কুঁয়ার।”

    যন্ত্র নেই, কিছু নেই; শুধু শীতের মন্থর হাওয়ায় পাথরে ঝরে-পড়া শুকনো শালপাতার মচমচানির শব্দের মধ্যে এই প্রাকৃত গান সমস্ত পরিবেশকে এমন এক অকৃত্রিমতায় ভরে দিল যে, মনে হল এই সব গান বুঝি এমন হঠাৎ বায়নায়, আচমকাই শুনতে হয়।

    ছেলেগুলো হল্লা করে উঠল, আর একটা হোক, আরেকটা। বুড়ো আবার ধরল-

    “ওরে গঙ্গা পাড়ে যমুনা,
    সেই বীচে গোখুলা নগর,
    ঔর উহে নগরে হ্যায় হাঁসা-হাঁসানীয়া
    ওকরে ঘরে কন্যিয়া কুঁয়ার।”

    গান শোনার পর চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। মোষের গাড়ি আবার চলতে লাগল, ছেলেগুলো মাছ ধরতে নেমে গেল।

    বললাম, এবার এগোই। একদিন এসো বাড়িতে। ভালো করে গান শুনব চাচা। বুড়ো বলল, যাব। তিতলিকে বোলো, আদা আর এলাচ দিয়ে চা খাওয়াবে। ও সেদিন যা চা খাইয়েছিল না, আমার মেজাজই চাঙ্গা হয়ে গেল। সর মারীজই ওই ইলাজে ভালো হয়ে যাবে।

    আমার মামাবাড়ি ছিল বিহারের গিরিডিতে। তাই আমার মা, দিদিমার কাছ থেকে দারুণ মোহনভোগ, নানারকম নোন্তা খাবার আর ওই রকম চা বানাতে শিখেছিলেন। আমার কাছ থেকে শুনে শুনে তিতলি এখন মা’র মতোই এক্সপার্ট হয়ে গেছে। আমার ছোট-বড় পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-না-লাগা নিয়ে মেয়েটার কেন যে এমন ঝোঁক তা বুঝতে পারি না। মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন খুব ওই চা খেয়ে ওর হাতে।

    পথের পাশে পাশে কুল গাছ, পলাশের বন, একটা দুটো বড়ো সটান শিমুল। ডানা-মেলা সাদা চিলের মতো রোেদ বসে আছে শিমুলের ডালে ডালে। ডানা ঝাড়ছে উত্তুরে হাওয়ায়। অভ্রর কুচির মতো রোদের টুকরো ঠিকরে যাচ্ছে চারদিকে।

    সামনে থেকে টিহুল হেঁটে আসছিল। ফরেস্ট-বাংলোর চৌকিদারের কাছে রোজ-এ কাজ করে ও। বাংলোতে অতিথি থাকলে,—জলের ট্যাংকে কুয়ো থেকে বালতি করে জল এনে ভরে দেয়। ফাই-ফরমাশ খাটে। বাসন-পত্র ধোওয়া-ধুয়ি করে। রান্না-বান্নায় সাহায্য করে। বাংলোর চৌকিদারটা মহা ধূর্ত। অতিথি এলেই খোঁড়া শেয়ালের মতো পা টেনে টেনে সামনে দাঁড়ায় রাতেরবেলা। একটু কাশে আর ফিস ফিস করে বলে, ঔর কুছ চাহিয়ে হুজোর।

    অনেক সাদা-মাটা হুজৌর বলেন, নেহি ভাই, থ্যাঙ্ক উ্য্য। যাঁরা বিশেষ রসের রসিক, তাঁরা পাঁঠার মাংস দর করার মতো বন-পাহাড়ের, বুনো-গন্ধময় নারীমাংস রকম-সকম নিয়ে দামদর করেন। ফরেস্ট বাংলোর পুরানো ঝাঁকড়া মহুয়া গাছগুলো আজ অবধি অনেকেই দেখেছে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় এই বন-পাহড়ের কত গ্রামের কত বিভিন্ন রূপের, বিভিন্ন বয়সি মেয়ে, চুপিসাড়ে এসে হঠাৎ বারান্দায় উঠে পড়েছে রাতের অন্ধকারে বা জ্যোৎস্নাতে। তারপর শেষরাতে চৌকিদারকে রোজগারের সিংহভাগ গুণে দিয়েছে করুণ মুখ করে।

    গাছেদের চোখ বড়ো সজাগ। গাছেরা সব দেখে; সব মনে রাখে।

    টিহুলের গায়ে একটা শতচ্ছিন্ন জামা। যেখানে আমাদের ট্রাক খারাপ হয়েছে, অরই কাছাকাছি ঘন জঙ্গলের মধ্যে ওর ঘর। সামান্য একফালি রুখু জমি আছে সেই ভগ্নপ্রায় ঘরের লাগোয়া। তাতেই যা পারে তা বোনে, আর বাংলোয় অতিথি থাকলে, সেখানে দিন হিসাবে কাজ করে। ভালো-বাবু-টাবু এলে মাঝে মাঝে বকশিস টকশিসও পায়।

    বললাম, কিরে টিহুল, কী বুনেছিলি ক্ষেতে এবারে? চলছে সব কেমন?

    টিহুল মাথায় হাত দিয়ে বলল, সে-কথা আর বোলো না বাঁশবাবু। হাতি, শম্বর, শুয়োর, হরিণ আর খরগোসের অত্যাচারে ফসল করাই মুশকিল।

    তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আর চলছে না বাবু। প্রায় থেমে এসেছে। এত দূরের বাংলোতে অতিথি-টতিথি বড়ো একটা আসেও না। এবার ভাবছি তোমার কাছেই যাব।

    টিহুলকে অনেক আগেই বলেছিলাম যে, ইচ্ছে করলে ও আমাদের জঙ্গলেই কূপ কাটতে পারে। কিন্তু ঘরে টিহুলের পরমা সুন্দরী যুবতী বউ আছে। টিহুল যে চৌকিদারকে একটুও বিশ্বাস করে না। ও ভোর থেকে সন্ধে অবধি দূরের জঙ্গলে বাঁশ কাটলে তার বউকে যে কী ভাবে ফুসলিয়ে কার ভোগে লাগিয়ে দেবে চৌকিদার, তা বলা যায় না। দুপুর বেলা তো, দুপুর বেলাই সই। কত রকম বাবু আসে বাংলোতে! আর চৌকিদারটা তো একটা মহা জাঁবাজ লুম্বী।

    বেচারা! মাঝে মাঝে বউ সুন্দরী বলে, খুব রাগ হয় ওর নিজের ওপরে। মাঝে মাঝে টিহুলের মনে হয় যে, গরিবের ঘরে সুন্দরী মেয়েদের জন্মানো বা বিয়ে হওয়া বড়ো পাপের। এখানের প্রত্যেকেরই সমস্যা আছে অনেক। কিন্তু টিহুলের এই সমস্যাটা একটা অন্যরকম সমস্যা। অন্য সব সমস্যার ওপরে সব সময়েই মাথা উঁচিয়ে থকে। এ সমস্যার কথা কাউকে বলা যায় না, এমন কী বউকেও নয়; তাই নিজের বুকেই বয়ে বেড়াতে হয়।

    টিহুল একদিন আমাকে বলেছিল, টাকা বড় খারাপ জিনিস বাঁশবাবু। অভাবী লোক টাকার জন্যে করতে পারে না, এমন কাজই নেই।

    আমি ওকে বলি নি যে, অভাবহীন লোকেরাও আরো টাকার, অনেক টাকার জন্যে করতে পারে না এমন কাজও নেই। টিহুল জানে না তা, এই যা।

    ও বলল, আমরা সকলে মিলে একদিন আপনার কাছে যাব। আমাদের একটা ভালো দরখাস্ত লিখে দিতে হবে ইংরিজিতে।

    কার কাছে?

    ফরেস্ট ডিপার্টে। কতবার হিন্দিতে লিখিয়ে তাতে গ্রামের সকলের টিপসই লাগিয়ে পাঠালাম। কেউই তো কোনো কথা শুনল না। ফরেস্ট ডিপার্ট কিছু ভরতুকি দেবে বলেছিল তারও নাম-গন্ধ নেই। এদিকে টাইগার পোজেটের জন্যে বেশির ভাগ জায়গাতেই কুপে সবরকম কাজই বন্ধ। ফসল, সামান্য জমিতে যে যা করে, সবই খেয়ে নেবে বুনো জানোয়ারে, ঘর ফেলে দেবে হাতিতে; আমরা তাহলে বাঁচি কী করে বলতো বাঁশবাবু?

    সেদিন ডালটনগঞ্জে কাগজে দেখেছিলাম যে, পালামৌ জেলায় তেরোটা বাঘ বেড়েছে। কিন্তু এই তেরোটা বাঘের কারণে হয়ত তেরোশো লোক মরেছে টিহুলের মতো। এখানে মানুষ ঝরাপাতার মতো মরে, নিঃশব্দে, অলক্ষে। সেটা কোনোই খবর নয়।

    আমি দায়িত্ব এড়িয়ে গেলাম। আমার মালিকের স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশান আছে যে, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের কাজ; তাই তাদের সঙ্গে কোনোক্রমেই ঝগড়া-বিবাদ যেন না করি। জলে বাস করে, কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করা আমাদের পোষায় না। মালিক বলেন, ব্যবসা করলে এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়ই। টাকা রোজগার করতে হলে মাথা ঝুঁকিয়েই করতে হয়। সে ব্যবসা, সামান্য পানের দোকানেরই হোক কী ওকালতিই হোক। ব্যবসা আর পেশা সবই সমান।

    আমি টিহুলকে বললাম, তোরা পাগলা সাহেবের কাছে যাস না কেন? সকলকে নিয়েই যা। উনি কেমন করে লিখতে পারবেন, আমি কি আর তা পারব?

    সরল টিহুল আমার দায়িত্ব এড়ানোটা ধরতে না পেরে বলল, অনেকদিন আগেই তাঁর কাছে যাওয়া উচিত ছিল। আমরা শুধু পঞ্চায়েতের ভরসায়ই ছিলাম এতদিন। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল।

    হঠাৎ টিহুল দূরে তাকিয়ে কালভার্টের কাছে ভিড় দেখে আমাকে শুধোল, ওখানে কীসের ভিড়? বললাম, রামধানীয়া চাচা বোধহয় আবার গান ধরেছে; ঝুমুরের গান।

    টিহুলের চোখমুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। বলল, তাই?

    তারপরই বলল, যাই।

    বলেই, দৌড় লাগাল।

    আমি ওকে থামিয়ে বললাম, শোন, তোর ঘরের কাছে কোম্পানির ট্রাক খারাপ হয়ে আছে। মুনাব্বরকে বলিস, বেশি দেরি হলে ও যেন হেঁটে আমার ডেরায় চলে আসে। আমার সঙ্গেই খেয়ে নেবে।

    আচ্ছা! বলেই ও আবার দৌড় লাগাল।

    গান শুনতে দৌড়ে-যাওয়া টিহুলের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় রইল না আর যে, ওর এত দুঃখ, এত কষ্ট।

    অদ্ভুত, এই মানুষগুলো। এত সহজে এরা সুখী হয়, এত সহজে সব গ্লানি ও অপমান ভুলে যায়!

    আর একটু এগোলেই ভালুমারের এলাকা। বাঁদিকে ফরেস্ট বাংলো, তার পাশ দিয়ে আরেকটা পথ বেরিয়ে গেছে ঝুম্রীবাসার দিকে। ডাইনে একটা বুড়ো বয়ের গাছের নিচে গোদা শেঠের দোকান।

    সিগারেট নেওয়ার ছিল, তাড়াতাড়িতে, চিপাদোহরে নিতে ভুলে গেছিলাম। ওখানে তাও দুটো-একটা অন্য ব্রান্ড পাওয়া যায়, এখানে শুধুই বিড়ি আর চারমিনার, নাম্বার টেন, পানামা। ব্যস্। গোদা শেঠের বয়স পঁয়তাল্লিশ হবে। লালচে, ফর্সা গায়ের রঙ। পরনে পায়জামা আর গেঞ্জি। গেঞ্জি বেশির ভাগ সময়েই নাভির ওপর পাকিয়ে তোলা থাকে গরমের দিনে। গোদা শেঠের শেঠানি, বছর বছর ভালো গাইয়ের মতো বাচ্চা বিয়োয় আর অবসর সময়ে বড়ি দেয়, পাঁপড় বানায় এবং আচার শুকোয়। স্বামী ও গুচ্ছের ছেলেমেয়ের জন্যে রান্না করে। তার নিম্নাঙ্গে সে হস্তিনী। ঊর্ধ্বাঙ্গে পদ্মিনী। ভগবানের আশ্চর্য সৃষ্টি!

    এখন শীতকাল, তাই একটা নোংরা ফুল-হাতা খয়েরি-রঙা সোয়েটার পরে রয়েছে গেঞ্জির ওপর গোদা শেঠ। ওর শীত কম, বোধহয় টাকার গরমেই গরম থাকে সব সময়! চোখ দুটো সবসময়ই লাল জবাফুলের মতো। টাকা বানানো ছাড়াও ওর অন্য অনেক রকম নেশা আছে বলে শুনেছি। তার লাল মোটর সাইকেলটা দোকানের পাশের বয়ের গাছের গায়ে দাঁড় করানো থাকে।

    কোথাও নিঃশব্দে যেতে হলে ও সাইকেলেই যায় এখনও। সশব্দে যেতে হলে এই ঝকঝকে মোটর সাইকেলে। তবে মোটর সাইকেলের বিপদ একটা আছে। বেলার দিকে এই ভট্‌ভট্ শব্দ শুনলেই হাতি তাড়া করে মোটর সাইকেলকে। চড়ুক আর না-ই চড়ুক এটা একটা স্ট্যাটাস্-সিম্বল। এই বস্তিতে আর কারোরই নেই মোটর সাইকেল। এমন কি মাহাতোরও নেই। ভূমিহার জমিদাররা আজকাল নিঃশব্দে সরে যাচ্ছে, ব্যবসাদারদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে গ্রামেগঞ্জে, শহরে। ব্যবসাদাররাই রাজা-মহারাজা এখন।

    অনেক জায়গা-জমি গোদা শেঠের। চড়া সুদে দাদন-টাদনও দেয়। পরে সেইসব জমি, এমনকী ঘটিবাটি পর্যন্ত লিখিয়ে নেয়। মানুষটা যে ভালো নয়, তা তার কাছে এলেই বোঝা যায়। খারাপ মানুষদের চোখ থেকে, শরীর থেকে, পরিবেশ থেকে কোনো অদৃশ্য কিছু বিকিরিত হয়। মানুষটার সঙ্গে দেখা হলে ওর কাছাকাছি এলেই আমার কেমন দম বন্ধ হয়ে-আসে। দোকানের মধ্যে থেকে, কেরোসিন তেল, কাড়ুয়া তেল, শুখা মকাই, চাল, শুখা মহুয়া, নানারকমের ডাল, সস্তার সাবান, শুকনো লংকা, পেঁয়াজ, জিরে, হলুদ, গোলমরিচ, আখের গুড় ইত্যাদির এবং মেঝের মাটির একটা মিশ্র গন্ধ ওঠে। সেই মিষ্টি মিষ্টি, ঝাঁঝ-ঝাঁঝ, ঝাল-ঝাল গন্ধটা দোকানে যে ঢোকে তার গায়েও যেন লেগে যায়।

    শেঠ মাঝে মধ্যে ডালটনগঞ্জে গিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখে আসে। কথায়বার্তায় আজকাল হিন্দি ছবির হিরোদের ডায়ালগ এর ঢঙ লেগেছে।

    দোকানে ঢুকতেই গোদা শেঠ বলল, কা বাঁশবাবু, আপকি দর্শনই নেহি মিতি আজকাল।

    এমনভাবে বলল, যেন আমি ওর একজন ইয়ার।

    এইই কাজে কর্মে থাকি।

    গোদা বলল, আমরা কি সব নিষ্কর্মা?

    কথা ঘুরিয়ে বললাম, সিগারেট, এক প্যাকেট।

    আর কথা না বলে, সিগারেট এগিয়ে দিতে দিতে দোকানের সামনে দাঁড়ানো একজন দেহাতি লোককে বলল, কান খোল্ কর শুনলে রে বাবুয়া, ই তেরা চ্যারিটিব ডিপিন্‌সারি নেহি বা। রূপাইয়া সবহি ওসুল করেগা হাম। যেইসা হো তেইসা। তেরা গরু ইয়া জরু ভি উঠানা হোগা ঘরসে, তো উভি উঠাকে লায়গা। ইয়াদ রাখা। গোদা শেসে মজাক্ মত্ উড়ানা।

    এ লোকটা মানি ওরাওঁ-এর কীরকম আত্মীয় হয়। নামটা আমার জানা নেই, মহুয়া ডারের রাস্তার কাছাকাছি থাকে।

    করুণ গলায় সে বলল, কা করে মালিক। ঈয়ে হাথ্বী ত জান খা লেল। জিনোর সহি বরবাদ হো গেল; সাঁওয়া ভি। ঔর কুছ রোজ মদত দে মালিক। তোরা গোড় লাগ্‌লথু।

    গোদা শেঠ একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে লোকটাকে ওর সামনে থেকে সরে যেতে বলল, এবং সেই একই নিঃশ্বাসে আমার দিকে তাকিয়ে মেকি বিনয়ের গলায় শুধোল, চাত্রা থেকে ভালো মুগের ডাল এসেছে। লাগবে না কি?

    এখন লাগবে না।

    শেঠ হঠাৎ বলল, তিতলি ভালো আছে? তারপরই ও যেন টেটরার পরম হিতৈষী এমন স্বরে বলল, সেদিন টেটরা বলছিল, আমার জওয়ান মেয়ে, বাঁশবাবুর বাড়ি কাজ করছে, বয়সও হল অনেক। অনেক আগেই বিয়ে দেওয়ার ছিল। নানাজনে নানা কথা বলতে পারে। বলে না যদিও। বাবু একেবারে একা থাকে তো!

    একটু চুপ করে থেকে বলল, আমি একটা পাত্র দেখেছি, ওর জন্যে!

    খুব ভালো! কোথাকার পাত্র? কী করে? আমি বললাম।

    ট্রাকের কুলি। গিধারী।

    হেসে বলল, আপনার অসুবিধের কারণ নেই কোনো। আপনার সেবা যেমন করছে ও তেমনই করবে। ওর বাবাকে কেবল কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করা দরকার। বিয়েতে আবার কিছু ধারও দিতে হবে টেটরাকে। হলে হবে। গাঁয়ের কোন্ লোকটাই বা না ধারে আমার কাছে?

    ছেলেটা কেমন? ভালো তো?

    ও বলল, ভালো। কাজ থাকলে দিনে চার টাকা তো পায় আমারই কাছ থেকে। কাজ অবশ্য রোজ থাকে না। ছেলেটা নরম-সরম। বোকা সোকা।

    তারপর বলল, ছোটলোক কুলি-মজুর কি আপনাদের মতো ভালো হবে? ওরা ওদেরই মতো ভালো। তিতলির পক্ষে যথেষ্ট ভালো, টেটরার মেয়ের বিয়ে আবার এর চেয়ে ভালো কী হবে?

    ভালো হলেই ভালো।

    বলেই, দোকান ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডেরার পথে পা বাড়ালাম।

    বাড়ি পৌঁছে বাঁশের বেড়ার দরজা দিয়ে উঠোনে ঢুকলাম। ঢুকেই চমকে উঠলাম।

    আমার পায়ের শব্দ তিতলি টের পায়নি। দেখি, ও বারান্দার কোণায় রোদে পিঠ দিয়ে বসে, আমার ঘর থেকে দাড়ি কামানোর আয়নাটা এনে খুবই মনোযোগ সহকারে নিজের মুখ দেখছে।

    ডাকলাম, তিতলি।

    তিতলি চমকে উঠে পিছন ফিরল।

    ও খুব সুন্দর করে সেজেছিল। সামান্য আভরণে ও আবরণে। প্রায় শূন্য প্রসাধনে। কিন্তু ওর কাটা-কাটা চোখ মুখকে, ওর বুদ্ধি এবং বন্য সরলতা এক আশ্চর্য অদৃশ্য প্রসাধনে প্রসাধিত করেছিল।

    সাত সকালে এত সাজ-গোজ কীসের? তোর বিয়ে কি এক্ষুণিই হচ্ছে? রান্না-বান্না করেছিস?

    বিয়ে?

    ও অবাক ও আহত গলায় শুধোল আমাকে।

    তারপর বিষণ্ণ মুখ নামিয়ে বলল, রান্না হয়ে এসেছে। আধঘণ্টার মধ্যেই খাবার দিতে পারব।

    একটু চুপ করে থেকে বলল, এক্ষুণি কী খাবে?

    বললাম, মুনাব্বর ভাইয়াও খেতে পারে আমার সঙ্গে। সেই বুঝে রাঁধ।

    তিতলি প্রথমে ধীর পায়ে, তারপরই এক দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। ওর প্রতি আমার এই অকারণ এবং এই আকস্মিক রুক্ষ ব্যবহারে অত্যন্ত বিস্মিত হলাম নিজে। আয়নাটা তুলে নিয়ে নিজের মুখ দেখতে লাগলাম।

    আশ্চর্য!

    মাঝে মাঝে আমারই আয়না আমাকে অন্য এমন এমন লোকের মুখের ছবি দেখায়, যাদের সঙ্গে আমার কোনোই মিল নেই, যাদের আমি বুঝতে পারি না; এমন কি চিনি না পর্যন্ত! ভাবছিলাম, আমি কি নিজেকেই জানি? কেউ-ই কি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে জানে?

    কবে, কখন, যেন আমার অলক্ষে এই আয়নাটার পিছনের লাল-রঙে-মোড়া পারাটুকু নানা জায়গাতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে। ভাবছিলাম, আয়নার পিছনের পারা তো দেখতে পাই সহজেই, কিন্তু আমার মনের মধ্যে অন্য কোনো মন বা মনের ছায়াকে কি ধরে রাখতে পারব না আর? মাঝে মাঝে বড় উদ্বেল হয়ে উঠি, বড় অস্থির; চঞ্চল। তখন মনে হয় যে অদৃশ্য মনের জায়গায় একটা দৃশ্যমান স্পর্শ-গ্রাহ্য আয়না থাকলে, অনেক অনেক বেশি খুশি হতাম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article লবঙ্গীর জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }