Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোজাগর – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প561 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কোজাগর – ১৫

    ১৫

    কাল প্রথম রাতে হাতি বেরিয়েছিল। ভালুমারের ক্ষেতে-ক্ষেতে বড়ই উৎপাত করেছে। একবার ওরা আমার ডেরার লাগোয়া বাঁদিকের বাঁশবনে ঢুকে বোধ হয় একটু মুখ বদলে গেলো।

    বস্তির ঘরে ঘরে ধাতব যা কিছু ছিল তা দিয়ে আওয়াজ করেছে সকলে। সব কিছুই ব্যবহৃত হয়েছে। ক্যানেস্তারা থেকে মায় ঘটি-বাটি পর্যন্ত। ফরেস্ট বাংলোর পাশেই ফরেস্ট গার্ডদের কোয়ার্টার্স। তারা বস্তির কয়েকজনকে নিয়ে মশাল জ্বেলে হাতি তাড়াতে বেরিয়েছিলো হৈ-হল্লা করতে করতে। আমি ডান কাত্‌ বদলে, বাঁ কাতে শুয়েছিলাম।

    আজ কুড়ি বছর জঙ্গলে থেকে এইটুকুই জ্ঞান হয়েছে যে, হাতি যদি আমার ঘর ভাঙতে চায় তো ভাঙবে। ওরা আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে কর্ণপাতও করবে না। বাঘের দেখা সাপের লেখার মতোই হাতির পরশেও ভাগ্যবিশ্বাসীর মতো নিরুপায়ে বিশ্বাস ছাড়া গত্যান্তর নেই। তবে দলের হাতি সাধারণত বাড়ি ঘরের ওপর হামলা করে না। এক্রা গুণ্ডা হাতি করে। ভয়ের কিছু ছিলো না আমার বেড়া-দেওয়া ডেরার মধ্যে শুয়ে। বরং ঝিঁঝিঁদের ঐকতানের একঘেয়েমি কিছুক্ষণের জন্যে এই হাতি-জনিত নানা শব্দে ছিদ্রিত হচ্ছিল।

    ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট যে বস্তির গরিব লোকদের সমস্যা সম্বন্ধে অবহিত নন এমন নয়। ওঁরা কিছু করবার যে চেষ্টা করেন না, এমনও নয়। গত মাসের গোড়ার দিকে ভালুমার থেকে দিঠিয়া যাবার পথে ডানদিকের জঙ্গলে একটি ঝরনার কাছে বড় বাঘে একটি মোষ মেরেছিল। যার মোষ, তাকে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল ক্ষতিপূরণ হিসাবে। আমার সামনেই। আসলে এদেশে যত লোক, যত সমস্যা, তাদের প্রত্যেকের মোকাবিলা করার মতন অর্থ, লোকবল এবং হয়তো বা আন্তরিকতা ও উদ্যোগও সরকার এবং সরকারি আমলাদের নেই। তবে বনবিভাগের আমলাদের মধ্যেও অনেকানেক সৎ, উৎসর্গিত প্রাণ, দুর্দান্ত সাহসী মানুষ আছেন। সকলেই একরকম, একথা বললে, সত্যিই অন্যায় করা হবে। আমাদের ভারতবর্ষর ভিত যে হুড়মুড়িয়ে এখনও ভেঙে পড়েনি তার কারণ এই মুষ্টিমেয় মানুষেরা এখনও আছেন।

    মাঝরাত থেকেই আমার একটু জ্বরজ্বর ভাব হয়েছিল। সকালে মনে হল পুরোপুরিই জ্বর এসেছে। গায়ে, হাতে এবং মাথায় অসহ্য ব্যথা। ভোরে কোনোক্রমে ঘরের দরজা খুলে বাথরুমে গিয়ে ফিরে এসেই ছিট্‌কিনি খুলে কম্বল টেনে আবার শুয়ে পড়েছিলাম। ঘোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন তিতলি এসেছে, চা করেছে, করে আমার সাড়া না পেয়ে এ ঘরে এসেছে; জানিও না।

    এ এসে পুরের জানালা খুলে দিয়েছে। সকালের রোদ এসে আমার হলুদ-লাল খোপ খোপ কম্বলটার গায়ে পড়াতে ঘরটা একটা হলদে-লালচে আভায় ভরে উঠেছে। তিতলিও একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। চান সেরে এসেছে ও। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে। চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে আমার চৌপাইয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার কপালে হাত রাখল। ও অনেক কাজ করে, ওর এই হাত দুটি দিয়ে। তাই-ই ওর হাতের পাতা দুটি রুক্ষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বড় নরম তা।

    চোখ খুললাম, যদিও খুলতে পারছিলাম না। কষ্ট হচ্ছিল।

    আমার গায়ে বেশ জ্বর দেখে তিতলির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল।

    এ আবার কী বাধালে?

    আমার মাও ঠিক এমনি করেই বলতেন আমার অসুখ হলে। বলতেন, খোকা! আবার জ্বর করলি? তোকে নিয়ে আমি আর পারি না। কিন্তু মা যে মাই-ই। এই মেয়েটা সামান্য ক’টি টাকা আর দুমুঠো খেতে পাওয়ার বিনিময়ে আমার জন্যে এত ভাবে কেন? ওর মুখে আমার জন্যে যে দুশ্চিন্তা এই মুহূর্তে দেখলাম; তা শুধুমাত্র পয়সার বিনিময়ে আমার পাওয়ার কথা ছিল না।

    চা-টা খেয়ে নাও, মুখটা ভালো লাগবে। কী যে করো, কোনো কথাই শোনো না; রাত-বিরেতে এই ঠাণ্ডায় বনে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবে সবসময়; আমার আর ভালো লাগে না। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।

    উঠে বসলাম। চৌপাইতে মাথার বালিশটাকে সোজা করে দেওয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে তাতে পিঠ দিয়ে, চায়ের গ্লাসটা হাতে নিলাম। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, আমার জন্যে মরবি কোন দুঃখে! আজ বাদে কাল তোর বিয়ে হবে। এসব কী কথা!

    তিতলি আমার মুখের দিকে তাকাল। তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ। কিন্তু কোনো কথা বলল না। তারপর ঘরের কোণায় একটা চারকোণা প্লাস্টিকের বাক্সের মধ্যে যেখানে ওষুধ থাকে সেইখানে গিয়ে বলল, কোন্‌টা দেব? হলুদটা না সাদাটা।

    সাদাটা।

    ও ওষুধের নাম পড়তে পারে না। তাই আমি ক্যাপসুল ও ট্যাবলেটের স্টিপগুলোর রঙ চিনিয়ে রেখেছি ওকে। ওষুধের বাক্সে একটা ক্যালিফস্ সিক্স এক্স-এর বড় শিশি ছিল তিতলিকে। একদিন বলেছিলাম যে, এই শিশিতে বিষ আছে। কখনও আমাকে মারতে হলে এই ওষুধ জলে গুলে আমাকে খাইয়ে দিবি, সঙ্গে সঙ্গে মরে যাব। ও বিশ্বাস করে বলেছিলো, এই শিশি আমি ফেলে দেব। এটা এনেছো কেন?

    ওকে দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, তাঁর জন্যে তোকে কি জবাবদিহি করতে হবে? আমার মরতে ইচ্ছে হলে আমি মরব। তোর তাতে কী?

    নাঃ। আমার আর কী? ও ঢোক গিলে বলেছিলো। তুমি মরলে চাকরিটা যাবে। এমন সুখের চাকরি। এ চাকরি না থাকলে তো গোদা শেঠের দোকানে গিয়ে চালের কাঁকর বা গমের পোকা বাছতে হতো, নয়ত জঙ্গলে জঙ্গলে দিনভর টো-টো করে ঘুরে আমলকী তেঁতুল এসব পাড়তে হতো। অথবা কান্দা গেঠি খুঁড়ে খেয়ে বেঁচে থাকতে হতো। আমাদের তো জমি নেই যে চাষ-বাস করে খাবো। বাবার রোজগারে তো কুলোয় না। আর গোদা শেঠের কাছে কাজ করলে তা শুধু কাজ করেই ছুটি মিলত না। আরও কিছু দিতে হতো তাকে। তুমি আসলে আমাকেই মারতে চাও, সবদিক দিয়ে, তাই তোমার নিজের মরার কথা বলো।

    একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই। পা টিপে দেব তোমার?

    পায়ে হাত দিবি না কক্ষনো। নিজের মা-বাবা ছাড়া আর কারো পায়েই হাত দিবি না।

    ও কাছে এসে আমায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, তুমি কি আমার মা-বাবার চেয়ে কম? তুমি তো মালিক। মা-বাবার চেয়েও বড় তুমি।

    বোকার মতো কথা বলিস না।

    খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে ও মাথার চুলে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আঁটসাঁট শরীর, ব্লাউজের ভিতর দিয়ে উঁকি-মারা ভরন্ত উষ্ণ-লালচে রাজঘুঘুর মতো ওর বুকের দিকে হঠাৎই চোখ পড়ল আমার। ও লজ্জা পেল। মেয়েরা তাদের সহজাত ষষ্ঠবোধে সব-সময়ই বুঝতে পারে পুরুষের চোখ তাদের কোথায় কখন ছোঁয়। ওর চেয়েও বেশি লজ্জা পেলাম আমি। চোখ সরিয়ে নিলাম। সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল আমার। তক্ষুনি মনে হল, আমার অসুখটা বোধহয় শিগগিরই ভালো হয়ে যাবে। কারণ, তেমন অসুস্থ হলে আমার মনে এই ভাব জাগতো না। বোধহয় কোনো পুরুষেরই জাগতো না। পুরুষের শরীরে কামভাব না থাকাটাই অসুস্থতার লক্ষণ। তার মানে এই-ই যে, আমি রীতিমতো সুস্থই আছি।

    কী করব? আমারও যে শরীর বলে একটা ব্যাপার আছে। যৌবন ফুরোতেও যে এখনও অনেক অনেকেই দেরি। আমি ত ভগবান নই। একজন অতি সাধারণ রক্ত-মাংসের মানুষ। তিতলির মিষ্টি, শান্ত ব্যক্তিত্ব, আমার প্রতি ওর আন্তরিক প্রীতি ও শ্রদ্ধা এবং ওর অতি-কাছে-থাকা উন্মুখ নরম কমনীয় নারীসত্তা মাঝে মাঝে আমাকে এক বন্য-গন্ধী নিষিদ্ধ তীব্র ভালোলাগাময় ভাবনায় ছেয়ে ফেলে। আমার শিক্ষা, আমার আভিজাত্য, আমার সংস্কার; সেই বুনো-আমির লাগাম টেনে ধরে বার বার। নিজের হাতেই নিজেকে চাবুক মারি। কত যে কষ্ট হয়, তা আমিই জানি। সমস্ত মন চাবুকের ঘায়ে যেন ফুলে ফুলে ওঠে।

    তিতলিরও কি কোনো কষ্ট হয়? আমি বুঝি আমাকে যে ও এক বিশেষ ভালোবাসা বাসে। তা না-বোঝার মতো বোকা আমি নই। সেটা মনের ভালোবাসা। আর ওর শরীর? মনের ভালোবাসা ছাপিয়েও কি কোনো আলাদা শরীরের ভালোবাসা থাকে? সে তো এক শরীরের অন্য শরীরকে ভালোবাসা। তাকে কি ভালোবাসা বলে? আমি তো ভাবতে পারি না। যাকে মনের ভালোবাসা বাসতে পারি নি তার শরীরের বাগানে ফুল তুলতে যাব কোন লজ্জায়? যদি যাইও, তবে তার শরীরকে পেয়ে কি আমি ধন্য হবো? যে-শারীরিক ভালোবাসা মনের ভালোবাসাকে অনুসরণ করে না, সেই শরীরের আনন্দকে কি এক ধরনের আর্তনাদ বলে না? সেই আর্তির মধ্যে কি কিছু পাওয়া যায়? জানি যে, অনেক পুরুষই আমার সঙ্গে একমত হবেন না। হয়ত অনেক নারীও হবেন না। কিন্তু আমি তো আমিই। আমি তো অন্যদের মতো হতে চাই না। কখনওই হতে চাই না।

    মেয়েদের বোধহয় ভগবান পুরুষদের মতো শারীরিক ব্যাপারে এত ভঙ্গুর করে পাঠান নি। হয়তো আমাদের মতো এত কষ্টও দেন নি ওদের। কিংবা কী জানি, ওদেরও হয়তো কষ্ট দিয়েছেন আমাদেরই মতো; কিন্তু ওরা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বলে হয়তো সে কষ্টকে স্বীকার করে, হজম করে ফেলে। সেই কষ্টের শিকার হতে দেয় না নিজেদের। যে-কারণে তিতলি আমার চেয়ে অনেকই বড়, অনেক মহৎ। মেয়েদের এই সহজাত শিক্ষা আমাকে বিমুগ্ধ করে। শরীরটা ওদের আমাদের চেয়ে অনেকই গোলমেলে। কত শত কমপ্লিকেটেড্ যন্ত্রপাতি ওদের ভিতরে। জীবন সৃষ্টি করে ওরা। তিল তিল করে নিজের শরীরের মধ্যে রক্তবীজকে সঞ্জীবিত করে নতুন প্রাণ আনে পৃথিবীতে। ওরাও গাছেদেরই মতো। তা-ই তো এতো ভালো লাগে ওদের। ওরা যে ছায়া দেয়। ওদের শরীরে যে ফুল ফোটে! আমাদের শরীর মনের সব কুঁড়িকে যে ওরাই ফোটায় অনবধানে।

    আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে তিতলি বলল, তোমার বিয়ে হচ্ছে বলে বুঝি আমার বিয়ে নিয়ে সব সময়ে ঠাট্টা করো আমাকে?

    আমার বিয়ের কথা কে বলল তোকে?

    মামীমাই বলেছেন। ইসস্ আমার মালকিন্ কী সুন্দর!

    ওর গলার স্বরে কিন্তু একটুও আনন্দ ঝরলো না।

    বিয়ের পরও তুমি আমাকে রাখবে তো? না ছাড়িয়ে দেবে?

    তোকে ছাড়া কি আমার চলবে? বউ ছাড়া চললেও চলতে পারে। কিন্তু তোকে ছাড়া চলবে না।

    বিয়ের তারিখ ঠিক হল?

    কোথায় বিয়ে?

    আমি জানি যে, খত্ আসবে তোমার। আমি তো রোজই মাস্টারমশাইকে জিগগেস করি। তোমার কোনো খত্ এলো কি না। খত্ আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন বলত?

    তিতলির গলা শুনে কিন্তু এবারও মনে হল না যে, খটা এলে ও খুব খুশি হয়।

    এই সব কথা তোকে কে বলেছে?

    মামিমা আমাকে সব বলেছে। তুমি একটা মোটর সাইকেল পাবে, তাই না?

    তুই চুপ করবি। আমার মাথাব্যথা তো বাড়িয়ে দিলি তুই।

    কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিতলি বলল, তোমার জন্যে গরম পুরী, ঝাল ঝাল আলুর চোকা আর লেবুর আচার নিয়ে আসছি। সঙ্গে গরম চা। খেয়ে নাও। তারপর ভালো করে কাড়ুয়া তেল মেখে রোদে বসে থেকে গরম জলে চান করো, দেখবে ভালো হয়ে যাবে আজই। আমি আধঘণ্টার মধ্যে তোমার খাবার আর চা সব বানিয়ে আনছি। খেয়েদেয়ে রোদে বসো, তোমার বুকে পিঠে আমি কাড়ুয়া তেল গরম করে লাগিয়ে দিচ্ছি।

    তোর যখন ছেলে হবে তখন তাকে তোর কোলের মধ্যে শুইয়ে ইচ্ছে মতো কাড়ুয়া তেল মালিশ করিস সর্বাঙ্গে। আমাকে ছেড়ে দে।

    তুমি বড় অসভ্য! মাখবে না?

    অভিমানের গলায় বলল ও।

    নাঃ।

    না কেন?

    ও আবার শুধুলো। সুড়সুড়ি লাগে।

    সুড়সুড়ি বলতে ও বুঝতে পারলো না। তাড়াতাড়ি বললাম, গুদগুদি! গুদ্‌গুদি লাগে।

    ও হাসল। বলল, ধ্যেৎ।

    সত্যি রে। জামা খুললেই আমার গুদগুদি লাগে। গায়ে হাওয়া লাগলেই। দেখিস না, গরমেও পাঞ্জাবি পরে থাকি আমি।

    তিতলি হেসে গড়িয়ে পড়ল। বলল, এমন অদ্ভুত কথা কখনও শুনিনি।

    ছোটমামারা চলে গেছেন আজ দশদিন হল।

    কিছুদিন হলো আমি সত্যিই একটু নার্ভাস বোধ করছি। এখনও কোনো চিঠি পেলাম না।

    জিন্ মেয়েটিকে আমি প্রায় ভালোই বেসে ফেলেছি। কিন্তু তার ব্যবহার আমাকে খুবই চিন্তান্বিত করছে।

    একে কি ভালোবাসা বলা উচিত? নাকি, বলব মোহ? আমার সঙ্গে মেলামেশা বলতে যা বোঝায় তার কিছুই সে করেনি। যদিও তার সুযোগ ছিল। তার দাদা, বৌদি ও ছোটমামির অনেক প্ররোচনা সত্ত্বেও সে আমার সঙ্গে একটি মুহূর্তও একা হয়নি। কথায় কথায় ধন্যবাদই দিয়েছে শুধু। যাওয়ার সময়ও ইন্দিরা গান্ধীর মতো কায়দা করে হাত জোড় করে বলেছে, আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব জানি না। অনেক কষ্ট দিয়ে গেলাম। আমাকে ক্ষমা করবেন।

    জিন্ পুরোপুরিই কবে যে আমার হবে জানি না। কিন্তু যখন হবে, তখন আমার এই সাম্রাজ্যে তাকে সম্রাজ্ঞীর আসনে বসাবো আমি। তার নৈর্ব্যক্তিক নীরবতার নির্মোক ছিঁড়ে ফেলব, বাঘ যেমন করে অবিসংবাদী মালিকানায় শিকার-করা শম্বরের গায়ের চামড়া ছেঁড়ে। তারপরে আমার খুশি মতো নেড়ে-চেড়ে, উল্টে-পাল্টে, চাঁদে এবং রোদে তাকে আবিষ্কার করব। তিল তিল করে। তার শরীর আর মনের সব ভাঁজ আমার চিরচেনা হবে। দারুণ একটা খেলনা গড়া শুরু করব আমরা দুজনে মিলে। বিয়ের দু-তিন মাস পরেই। তারপর সেই জীবন্ত কাঁদা-হাসা খেলনা গড়া হয়ে গেলে, আজীবন আমার উত্তরসূরির মাধ্যমে জিন্-এর বুকের মধ্যে, কোলের মধ্যে; তার শরীর মনের অণু-পরমাণুতে আমি আমৃত্যু এবং মৃত্যুর পরও রোপিত হয়ে থাকব। আমাকে আর কেউই, এমনকী মৃত্যুও তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। আমি বোধ হয় জিন্‌কে ভালোবেসেই ফেলেছি। খুউব খারাপ কাজ করেছি; সন্দেহ নেই। ভালোবাসা মানেই অবধারিত দুঃখ!

    চিঠি তো এলো না আজ অবধি। একটাও। আমাকে কি জিনের অপছন্দ হয়েছে? এই বাঁশবনের বাঁশবাবুকে কি সে তার যোগ্য বলে মনে করে নি? তা করলে কিন্তু ও . খুব ভুল করবে। আমাকে ও কতটুকু জানার চেষ্টা করেছে? আমাকে কেউ কাছ থেকে গভীরভাবে জানলে, কেউই আমায় অপছন্দ করবে এমন ভাবনা ভাবার মতো হীনম্মন্য আমি নই। পছন্দ না হলে বলতে হবে, মেয়েটিকে যত বুদ্ধিমতী বলে মনে করেছিলাম ততটা সে নয়। সেটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল এবং আছে। জিন্ আমারই। তাকে আসতেই হবে। এসে আমাকে এবং নিজেকেও ধন্য করতে হবে।

    বাইরে যেন কার গলা খাঁকারির আওয়াজ পেলাম।

    কওন? আমি শুয়ে শুয়েই শুধোলাম

    তিতলি বোধ হয় রান্নাঘরের বারান্দায় বেরিয়ে এলো। ওর হাতের বালার রিনরিন শুনলাম।

    খনখনে গলায় কে যেন বলল, বাবু গান শুনবে বলে ডেকেছিল। চা খাওয়াবি তো তিতলি!

    তিতলি বলল, বাবুর জ্বর। ঘরে আছে। যাও না চাচা।

    রাম্‌ধানীয়া বুড়ো শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠে এলো। তারপর ঘরে। ছোটবেলা থেকে পাথুরে মাটিতে চলে চলে তার পায়ের নীচটা খড়খড়ে শিরীষ কাগজের মতো হয়ে গেছে। ও চললে শব্দ হয় খস্ খস-স্ করে। আর হাড়ে হাড়ে ককটি বাজে।

    পরর্‌নাম বাবু।

    রামধানীয়া দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে বলল।

    ওকে আসতে বললাম ভিতরে। ভিতরে এসে দু হাতে খৈনী মেরে, ডান দিকের ঠোঁটের নিচে অদ্ভুত কায়দায় নিমেষের মধ্যে খৈনী পুরে দিলো।

    তারপর বলল, বুখার? দাঁড়াও, তোমার হাড়ের মধ্যে থেকে অসুখকে এক্ষুনি বের করে দিচ্ছি আমি।

    বলেই, আমার দু পায়ের হাড়ে তার হাড়-সার হাত দুটি দিয়ে পাক দিতে লাগল। মনে হল, পা দুটি বুঝি ভেঙেই যাবে।

    বুড়ো তবু শোনবার পাত্র নয়।

    বলল, তোমার চোখ ছলছল করছে। তোমার যে কী হয়েছে আমার আর তো বোঝার বাকি নেই।

    কী হয়েছে, বলো দেখি চাচা?

    তোমার হাড়ের মধ্যের নরম সুরুয়াতে শেষ রাতের অন্ধকার ঢুকে গেছে। শীতের অন্ধকার। বহুত্ খতরনাগ্। এইটুকু বলেই, একটু থেমে বলল, তুমি কোনো জিন্‌-এর খপ্পরে পড়ে ছিলে নাকি?

    আমার হাসি পেলো।

    ভাবলাম, বুড়োকে বলি যে, পড়েছিলাম বটে। কিন্তু সে জিন্ তার জিন্ নয়। অন্য জিন্।

    কে জানে? জিন্ পরীরা কেমন দেখতে হয়? পরীরা তো অমঙ্গল করে না, কিন্তু জিন্না করে। ভালোলাগায় গা-ছম্ছম্ করা শালফুলের সুগন্ধে ম ম করা চাঁদনি রাতে পুরুষমানুষকে ওরা ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে আদর খায়। আদর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে নদীতে ডুবিয়ে মারে। পাহাড়ের চুড়ো থেকে নিচের খাদে ফেলে দেয়। আমাদের বন-জঙ্গলের লোকরা বিশ্বাস করে এসব।

    যে-কোনো রহস্যজনক মৃত্যুই এবং অসুস্থতাই জিন্ পরীদের অথবা কোনো- না-কোনো ভূতের অ্যাকাউন্ট ভারী করে। ভূতই বা কী এখানে এক রকম? চুরাইল, দার্হা, পিপিলা চিলুং, টিঙ্গালা রকম-বেরকমের ভূত। ভূতের ছড়াছড়ি। কতরকম আকৃতির কতরকম প্রকৃতির ভূত যে আছে, এসব বনে জঙ্গলে তার হিসেব কে রাখে? ভূতগুলো ভারি সেয়ানাও। নিজেরা পাজি বলেই বোধহয় নিজেদের জাতের ছোঁয়া সযত্নে এড়িয়ে চলে। এবং এ কারণেই বোধ হয় আজ অবধি এক ব্যাটা ভূতের সঙ্গেও দেখা হল না আমার। রাত-বিরেতে জায়গা-বেজায়গায় এত ঘুর বেড়াই, তবুও।

    রামধানীয়া পা টিপতে টিপতে বলল, তোমার জ্বর যদি দুদিনের মধ্যে না ছাড়ে, তবে ওঝা ডাকব গাড়ু থেকে। যে তোমাকে ভর করেছে, সে বাছাধন মজাটা টের পাবে তখন।

    ভূতের দাওয়াই এক গোলি খেয়ে নিয়েছি। জ্বর না পালালে তখনই ডেকো তোমার ওঝাকে।

    একটা কোসাভিল্ খেয়েছিলাম। বিকেলে আরেকটা খাব। আশা করছি জ্বর ছেড়ে যাবে। না-ছাড়লে, ওঝার অত্যাচার জ্বরের কষ্টের চেয়ে যে অনেক বেশি হবে সে বিষয়ে কোনোই সন্দেহ ছিল না।

    রাম্‌ধানীয়া গলা খাঁকরে গান ধরল :

    “চড়হলো আষাঢ় মাস, বরষালে বনা, এ রাম,
    পহিলে মুঠ বুলি গোঁলদ্‌নি হো এ রাম,
    চিনা মিনা তিন দিনা,
    গোঁদনি আড়হাই দিনা, এ রাম;
    সাঁওয়া, মাহিনা লাগ্‌ গেঁয়ো হো, এ রাম…”

    টেনে টেনে সুর করে গাইছিল রামধানীয়া।

    আমাদের এই বন-পাহাড়ের গানের মধ্যে একটা বিধূর একঘেয়েমি আছে। এই মনোটোনিই বোধহয় এই গানের মজা। টেনে টেনে শেষ শব্দটাকে অনেক মাত্রা বয়ে নিয়ে যায় এরা। যেন দিগন্তেরই দিকে। এই অরণ্যপ্রকৃতির মধ্যে যেমন এক উদাত্ত অসীমতা আছে, ওদের গানেও তেমনি। বেশির ভাগই তাল ছাড়া গান গায় ওরা। গান যদিও সমে এসে মেশে একসময়, কিন্তু শরতের মেঘের মতো, অতি ধীরে সুস্থে; কোনোরকম তাড়াহুড়ো করে নয়। তারের কোনোরকম বাজনা ব্যবহার করে না। করা উচিত ছিল। বাজনা বলতে, ওদের শুধুই মাদল। মাদলের বোলও গানের সুরের মতোই একঘেয়ে। কিন্তু এদের এই গানের মধ্যে একটা দোলানি ঘুমপাড়ানি মজা আছে। শহরের টেন্স্ লোকেরা যেমন সেডেটিভস্ বা স্লিপিং ট্যাবলেট খান, দিনশেষে, এখানের মানুষদের তার দরকার হয় না। এদের কাছে সোপোরিফিক্ এফেকট্ বয়ে আনে এই গান ও মাদলের একঘেয়ে বোল।

    দুরের চাঁদের পাহাড়ের দিকে চেয়ে, কম্বলের মধ্যে গুড়িসুড়ি মেরে শুয়ে, বাইরে শিশির পড়ার টুপটাপ ভিজে শব্দ আর ঝিঁঝির ডাকের ঝুনঝুনি-ঝংকৃত পটভূমিতে, দূরাগত এই গান এবং মাদলের সুর কখন যে চোখে ঘুমের কাজল পরিয়ে দেয় তা বুঝতে পর্যন্ত পারা যায় না।

    এই যে গানটা গাইল রামধানীয়া চাচা, এটা ফসল সংক্রান্ত গান। বর্ষার গোড়াতে খেতে খেতে নানা ফসল লাগে, কত যে ফসল তা কী বলব। বেশির ভাগ শহরের লোকে এসব ফসলের নামও জানে না। চোখেও দেখে নি কখনও।

    বোদি ভাদাইবোদি—একরকমের ডাল। এই রুখু অঞ্চলেই হয়। সরু বিনস্-রে মতো সাদা রঙের। দেখতে, এমনি ডালেরই মতো। এর ছিল্কা গরু মোষে খায়। এই ডাল এরা মুগের ডালের মতো ভেঙে নিয়ে জাঁতায় পিষে খায়, ছাতুর মতো করে। ছোট ছোট ঝোপের মতো দেখতে হয় গাছগুলো। এছাড়া অন্যান্য ডালের মধ্যে উরত্ কুল্থী, অড়হর্ তো করেই। আরেক রকমের ডাল লাগায় এরা, বারাই বলে তাকে। কালো রঙের।

    গোঁলদনিও এক রকমের ধান। গাছও দেখতে ধানের গাছেরই মতো। গোল গোল, ছোট ছোট ভাতের মতোই সেদ্ধ করে খায়। খুব ভালো পায়েস হয় এই চালে। বেশি জলেরও প্রয়োজন হয় না চাষে। ধান ওঠার পর খড়ও হয়।

    গোঁদনি ছাড়াও চিনা বলে একরকমের ধান হয়। সাঁওয়া ধান আরও ছোট। গাছগুলো ছ’ থেকে আট ইঞ্চি হয়। এর স্বাদও গোঁদনির মতোই। এর চাষেও জলের প্রয়োজন খুব কম হয়।

    মকাই আর বাজরা ছাড়াও মাড়ুয়া করে এরা। চার-পাঁচ ফিট হয় গাছগুলো। লাল হয়ে ফলে। আটা বানায়, চাকিতে পিষে। গরম জল দিয়ে মাখতে হয় এই আটা রুটি বানাবার আগে। এই আটাও দেখতে লাল হয়। বিয়ে, পুজো, এই সমস্ত অনুষ্ঠানে এরা মাড়ুয়ার রুটি বানায়। মাছ পেলে মাছের সঙ্গে খায়। স্বাদ ভালো লাগে। আমরা যে চাল ও গম খাই তা এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকেই চোখেও দেখে না। এরা এতই গরিব যে প্রকৃতি জঙ্গলের মধ্যে বন্য প্রাণীদের জন্যে যে খাদ্য সংস্থান করে রেখেছেন, তাই দিয়েই বছরের অনেকখানি চালায়। জঙ্গলে কান্দা-গেঁঠি হয়। কান্দা প্রায় ফুট খানেক লম্বা একরকমের কচু, মিষ্টি আলুর মতো, কিন্তু খেতে বেজায় তেতো। যাদের প্রাণধারণের জন্যে, পেটের আগুন নেভানোর জন্যে, খাদ্যের প্রয়োজন, তাদের স্বাদ বিচার করার বিলাসিতা মানায় না।

    গেঁঠি হয় ওলেরই মতো। সারাদিন বনে পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে কোথায় কান্দা বা গেঁঠি হয়েছে তা খুঁজে বের করে এরা। তারপর এই পাথুরে শক্ত মাটিতে, চার-পাঁচ ফিট গর্ত করে এই কচু ও ওল বের করে। সারাদিন পর ফিরে এসে এগুলো কেটে কেটে সেদ্ধ করে। তারপর পাহাড়ী ঝরনার নিচে ঝুড়িতে ভর্তি করে রেখে দেয়। সারা রাত ঝরনার জল ঝুড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় তেতো স্বাদটা অনেকটা কমে আসে। তারপর সেদ্ধ করা মহুয়ার সঙ্গে কান্দা-গেঁঠি মিশিয়ে খায়। মহুয়ার মিষ্টি স্বাদ কান্দা-গেঁঠির তেতো স্বাদকে সহনীয় করে তোলে বলেই এরকম ভাবে মিশিয়ে খায়।

    শালগাছের শুকনো ফলও জুন মাসে জড়ো করে, পরিষ্কার করে রাখে এরা। ছোলার দানার মতো দানা হয়। এগুলোও এমনিতে খাওয়া মুশকিল। তাই এও সেদ্ধ মহুয়ার সঙ্গে মিশিয়ে খায়। যাদের সামান্য জমিজমাও আছে, তাদেরও সারা বছরের খাদ্য সংস্থান তা থেকে কখনওই হয় না। তাই যখন খাবার থাকে না ঘরে, যখন কাজ থাকে না কোনোরকম, তখন বেঁচে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টায় এই সবই খেয়ে থাকে ওরা।

    একরকমের গাছ হয় জঙ্গলে, ওরা বলে চিচিরি। তার ফলকে বলে তেন্। আমের মতো দেখতে, কিন্তু ছোট ছোট। হলদে হলদে। খেতে বেশ মিষ্টি। গরমের সময় ফলে। তাই-ই খায় ওরা ভাল্লুকের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতাতে নেমে। পিয়ারও খায়। কালো জামের মতো। পিয়ার সকলেই খায় গরমের সময়। এছাড়া শীতে আছে কনৌদ। এগলো ঝাড়ে হয়। খেতে মিষ্টি। কেলাউন্দাও শীতে হয়। লেবুগাছের মতো গাছ—ফলগুলো টক্‌টক্ খেতে।

    প্রথম শীতে হয় ডিঠোর। ডিঠোর গাছের পাতাগুলো ভারি সুন্দর দেখতে। জুনের শেষে সারা জঙ্গল ডিঠোর গাছের নতুন কচিকলাপাতারঙা পাতায় ছেয়ে যায়। গোল গোল কালো কালো ফল—কাঁটা ভর্তি থাকে ঝাড়ে। মিষ্টি মিষ্টি খেতে।

    এছাড়াও হয় জংলি কুল।

    আর মহুয়া তো আছেই। মহুয়াই ওই সব মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে বলতে গেলে। শুখা মহুয়া আর মকাই-ই এদের প্রাণ।

    তাই বুড়ো রামধানীয়া চাচা এক্ষুণি যে গানটা গাইল, তার বিশেষ তাৎপর্য আছে। গানটার দুঃখময় মানে হল এই-ই যে, ফসল বোনার সময় আষাঢ় মাসে বুনেছিলাম গোঁদনি, চিনা ও সাঁওয়া। কিন্তু খাওয়ার সময় দেখি, আড়াই দিন গোঁদনি, তিনদিন চিনা আর সাঁওয়া মাত্র একটা মাসই। বছরের আর বাকি দিন উপোস।

    প্রতি লাইনের শেষে একবার করে হো, এ রাম! হো, এ রাম!

    রামও নেই; সেই অযোধ্যাও নেই। কিন্তু এই হতভাগ্য, অর্ধভুক্ত, প্রায়বিবস্ত্র মানুষগুলোর জীবনে রাম ঠিকই রয়ে গেছেন। উঠতে বসতে প্রতিদিনে প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে হো, এ রাম! এই আশ্চর্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সব সরল, প্রতিবাদহীন, প্রতিকারহীন, নিরুপায় মানুষগুলোর নালিশ জানাবার একমাত্র লোক পৌরাণিক, ধর্মীয়, অনুপস্থিত, অথচ এখনও প্রচণ্ডভাবে উপস্থিত রাম!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article লবঙ্গীর জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }