Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোজাগর – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প561 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কোজাগর – ২৫

    ২৫

    বড় হবার পর থেকে মেয়েরা যে ভয়টাকে সবচেয়ে বেশি করে পায়, সেই ভয়টাই সত্যি হয়ে এল টুসিয়ার জীবনে। ওর মতো নিশ্চিতভাবে আর কেউ জানে না যে ও মা হতে চলেছে। খবরটা অনেকই আনন্দের হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। বড়ো লজ্জার এবং গ্লানির সঙ্গে তার শারীরিক অস্বস্তি ও মানসিক ভয়কে বয়ে বেড়াচ্ছে টুসিয়া। তার মায়ের কাছেও লুকিয়ে রেখেছে ব্যাপারটা। কিন্তু ও জানে যে, মায়ের চোখে বেশিদিন ধুলো দিতে পারবে না।

    বাংলোতে সেই রাতের দুর্ঘটনার পর নানকুর সঙ্গে আর দেখা হয় নি টুসিয়ার। যদিও ও খু-উ-ব চেয়েছে যে, দেখা হোক। নানকু কি ওকে ক্ষমা করবে? নিশ্চয়ই করবে না। তাছাড়া টুসি ক্ষমা চাইবেই বা কেন? বরং টুসি শাস্তি চাইবে। যে-কোনো শাস্তি। তার কৃতকর্মের ন্যায্য শাস্তি। তাতে যদি নানকু নিজে হাতে খুনও করে তাহলেও তার কোনো দুঃখ থাকবে না। যদি নানকু তাকে ক্ষমা করে তার পরও। কিন্তু নানকুর দেখা চাইলেই তো পাওয়া যায় না। এই ভালুমারের রুখু দুঃখী মানুষগুলো যারা কান্দা-গেঁঠি খুঁড়ে, জিনোর আর সাঁওয়াধানের মুখে চেয়ে হাতি, বাইসন থেকে খরগোশ পাখি পর্যন্ত তাবৎ জংলি জানোয়ার ও পাখির করুণা ভিক্ষা করে কোনোক্রমে বেঁচে থাকে শীত থেকে বসন্ত, বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম, গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, বর্ষা থেকে শরৎ, শরৎ থেকে হেমন্ত এবং হেমন্ত থেকে শীত—তাদের কাছে নানকু এক দৈববাণী বিশেষ। মাঝে মাঝেই উদয় হয়ে কোন অজানা, অচেনা অচিন দেশের কথা বলে যায় নানকু ওদের। যে দেশ-এর অস্তিত্ব কোথায় তা ওরা জানে না। কিন্তু নান্‌কু বলে, একদিন তেমন কোনো দেশ নতুন করে জন্মাবে পুরোনো অভ্যেসের ধূলিমলিন এই দেশেরই মধ্যে। যেখানে, ওরাও সুযোগ পাবে সমান। দুবেলা দুমুঠো খেতে পাবে। লজ্জা ঢাকার শাড়ি পাবে। মাথা উঁচু করে পরিশ্রমের বিনিময়ে মানুষের মতো বাঁচতে পারবে। সেই সোনার খনি কোথায় আছে? কোন অজগর-এর মাথার মণিতে, সেই খনির হদিশ বুঝি কেবল নানকুই জানে।

    নানকু বলতো, আর ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-বুড়ি সকলেই ওরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত। ওর সব কথাই যে সকলে বুঝত এমনও নয়, কিন্তু তাদের বুকের রক্তের মধ্যে কেমন যেন ছলাৎ ছলাৎ দোলা অনুভব করত প্রত্যেকে। নানকু বলতো, বুঝলে এই দেশে ধন-রত্নের কোনো অভাব নেই। হাজার মাইল চাষের জমি, আবাদি এবং এখনও অনাবাদি—টাঁড়, বেহড়; নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত এবং কোটি কোটি লোক। কিন্তু যা নেই, যে জিনিসের দরকার তা কেবল একটি মাত্রই। অভাব শুধু মানুষের মতো মানুষের। যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক নেতাদের বুজরুকিতে বিশ্বাস করে, সমতার বুলির মিথ্যা ভাঁওতায় বিশ্বাস করে গত তিরিশ বছর শুধু ঠকেই এসেছে, তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন শুধু ঐ একটি জিনিসের। মানুষের মতো মানুষের; নেতার মতন নেতার। যে নেতারা বাধ্যতামূলকভাবে জনগণের ঘাড়ে জনগণের সম্মান বা ভালোবাসা ছাড়াই চেপে বসে, তেমন নেতা নয়। যারা এই জঙ্গল টাঁড়ে গর্তের ডিম থেকে বেরুনো মহা বিষধর সাপেদেরই মতো, এই জঙ্গলের পাথরের নিচে জন্মানো পোকার মতো, বিছের মতো, পাহাড়ের গুহাতে পয়দা-হওয়া বাঘের বাচ্চার মতো, যারা এইখানেরই, এই দেশেরই তেমন নেতারা। যাদের শিকড় প্রোথিত আছে গহন গভীরে, গ্রামে-গঞ্জে, জঙ্গলে-পাহাড়ে, যারা সৎ যারা লোভী নয়, যারা দেশের মানুষকে ভালোবাসে, দেশকে ভালোবাসে, কোনো দলমত অথবা পুঁথিপড়া ডান বাম কেরদানির চেয়ে অনেক বেশি করে, তেমন নেতাদেরই দরকার আজকে। যারা দেশজ নেতা, দেশের নেতা, দশের নেতা।

    নানকু বোধহয় তেমনই একজন কেউ। জানে টুসিয়া, সবই জানে, এবং জানে বলেই কাঁদে। এতসব জেনেও শহরে থাকার লোভে, অফসর্-এর বউ হওয়ার লোভে সে তার সবচেয়ে যা দামি, তাই-ই খুইয়ে ফেলেছে অবহেলায়। কাঁদে আর ভাবে, এতসব কথা জানতো না কি টুসিয়া? নানকুয়া শিখিয়েছে ওকে ধীরে ধীরে। ঠিকই করেছিল নানকু। ঘৃণায় থুথু ফেলেয খন বলেছিল, যে, টুসিয়া নানকুর যোগ্য নয়। টুসিয়ার মতো এমন করে এই মুহূর্তে আর কেউ জানে না যে, কথাটা কতখানি সত্যি।

    টুসিয়া, মানিয়া-মুঞ্জরীদের বাড়ি গেছিল সেদিন শেষ দুপুরে। সেখানে মাসির সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করে, মাসিকে মকাই শুকোতে সাহায্য করে ও মীচাবেটির দিকে চলল। মনটা বড়ো পাগল পাগল করে। কী করবে ও বুঝতে পারে না। ও কী আত্মহত্যা করবে? কী করে মানুষ আত্মহত্যা করে? মীচাবেটির পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়বে নীচে? ইঁদুর মারার বিষ গিলবে? মাহাতোর বাড়ি থেকে গেঁহুর ক্ষেতে দেওয়ার সার চেয়ে এনে খেয়ে ফেলবে? কিছুই বুঝতে পারে না টুসিয়া।

    মীচাবেটির কাছাকাছি পৌঁছতেই ওর কানে গান ভেসে এল। নানকুর গলা মনে হল। নানকু? সত্যিই কি নানকু? বুকের মধ্যে ধকধক করতে লাগল টুসিয়ার। হ্যাঁ, নানকুই তো! নান্‌কুই গাইছিল!

    তোর বিদাইয়া করণপুরা
    মোর ছাতি বিহরে……..

    “বিহরে” কথাটা টেনে কোথায় যেন ও নিয়ে যাচ্ছিল! আর নানকুর দরদী গানের সুর ঝরনার জলের মতো ঝর্ ঝর্ করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে গিয়ে সমস্ত জঙ্গলে প্রান্তরে, ক্ষেতে, জমিতে পৌঁছেই ছড়িয়ে যাচ্ছিল। একটা পাগলা কোকিল ডাকছিল জঙ্গলের গভীর থেকে। পাগলের মতো। এই সময়, যখন বনে পাহাড়ে একটা-দুটো করে পলাশ ফুটতে থাকে, যখন পাহাড় চূড়ার বড়ো শিমুল গাছটা লাল রঙের নানান পাহাড়ের পতাকা নেড়ে সকলকে জানান দেয় যে, বসন্ত এসে গেছে; যখন রাতের হাওয়াতে মহুয়ার তীব্র মিষ্টি গন্ধ আর করৌঞ্জ ফুলের পাগল করা বাস ভেসে বেড়ায়, তখনই পাগল হয়ে যায় কোকিলগুলো। নানকুর কাছে হঠাৎ এসে পড়ার আনন্দে টুসিয়াও বোধহয় পাগল হয়ে যেত। কিন্তু এ জীবনে বোধহয় ও বসন্তের বাতাস আর পলাশ ফুলের লালে পাগল আর হবে না। ও যে চিরদিনের মতোই পাগল হয়ে গেছে ভেবে ভেবে। ওর শরীরের নিভৃত পিছল অন্ধকারে অন্য পুরুষের শরীরের বীজ বোনা হয়ে গেছে। মাটির নিচে যেমন চোখের অলক্ষে শিকড় ছড়িয়ে দেয় গাছ, রস টানে, নতুন পাতায় ভরে নিজেকে, মাটিতে শুষে; তেমনি করে টুসিয়াকেও শুষে দিচ্ছে এক অনাগত, অদেখা, এখনও অবয়বহীন প্রাণের আভাস। টুসিয়ার নাড়ি আর জরায়ুই জানে কেবল সে কথা। যে পুরুষ বীজ বুনে চলে গেছে দূরের জলার শীতের পাখির মতো খেলা শেষ করে, সে এখন কোথায় কে জানে? পুরুষরা বোধহয় এমনই হয়। বীজ বুনেই ওদের ছুটি। বীজকে অঙ্কুরিত করার সব দায় মেয়েরাই বয়, সেই স্বপ্ন, অথবা টুসিয়ার মতো দুঃস্বপ্ন, কেবল মেয়েরাই দেখে।

    যে গানটা নানকু গাইছিল তার মানে, তোর বিয়ে হয়ে গেল করণপুরাতে, আমার বুক ফেটে যায়। দুঃখে….সত্যিই বুক ফেটে যায় রে….। গানটা শুনে টুসিয়ার কষ্ট আরও বাড়ে সত্যি সত্যিই। হীরুর বন্ধুর সঙ্গে ওর বিয়ে হয়ে গেলে এতখানি দুঃখ ও পেত না নানকুর জন্যে, আজ যতখানি পাচ্ছে। ও তো শুধু নিজে অপমানিত করেনি নিজেকে, ও যে নানকুকেও চরম অপমান করেছে। যে নানকুর মতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে, সে কি না…

    হঠাৎ গান থামিয়ে নানকু বলল, কওন্ রে?

    ম্যায় হুঁ। টুসিয়া বলল।

    কওন। গলায় যেন একটু রুক্ষতা লাগল নানকুর।

    ম্যায়। লজ্জায় আবার বলল টুসিয়া, মুখ নিচু করে।

    নানকু বুঝতে পেরে বলল, টুসি? তাই-ই বলল। তা, তুই এখনও এখানে যে! শহরে যাবি না? তোর লগন কবে? নেমন্তন্ন করতে ভুলিস না যেন আমাকে।

    টুসিয়া কোনো কথা না বলে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল নানকুর দিকে। ও ঠিক করল গাছতলায় বসে থাকা নান্টুর পায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়ে ও সব বলবে। ও কী করবে এখন জানতে চাইবে নানকুর কাছে। নানকু একবার মুখ তুলে চাইল টুসিয়ার দিকে। টুসিয়ার সুন্দর চেহারাটা কেমন যেন রাক্ষুসীর মতো হয়ে গেছে। অবাক চোখে চেয়ে রইল নানকু টুসিয়ার দিকে। কিন্তু যেই টুসিয়া ওর কাছাকাছি চলে এল, এক লাফে নানকু গাছতলা ছেড়ে উঠে সরে দাঁড়াল। দাঁড়িয়েই, টুসিয়ার পায়ের কাছে থুথু ফেলল। বলল, টুসি। আমি যা কিছু পিছনে ফেলে আসি তা পিছনেই পড়ে থাকে। আমি পিছনে কখনও তাকাইনি। তাকাবোও না। আমার কথা মাড়িয়ে গিয়ে আমি কখনও পিছনে হাঁটি না। তুই আমার যোগ্য নোস, যোগ্য নোস; যোগ্য নোস। হাতের এক থাবায় পাশের গাছের এক গোছা পাতা ছিঁড়ে মুঠোর মধ্যে কচলাতে কচলাতে বলল, নানকু ওরাওঁ বিয়ে করলে, একমাত্র তোকেই করত। কিন্তু বিয়ে যদি করত। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। আমাকে অনেক দূর যেতে হবে।

    কোথায়?

    টুসিয়া বললো।

    জঙ্গলের সঁড়িপথের মোড় দেখেছিস তো! তোর আর আমার পথ সেইরকম একটা মোড়ে এসে আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। আর কিছু করার নেই। সব শেষ হয়ে গেছে সেদিনই। তোকে আর আমি চিনি না।

    বলেই নানকু আবার সেই গানের কলিটি ভাঁজতে ভাঁজতে পাহাড় বেয়ে নীচের পাকদণ্ডীর দিকে নেমে গেল।

    তোর বিদাইয়া করণপুরা,
    মোর ছাতি বিহারে-এ-এ-এ-এ…

    অবাক হয়ে, চলে-যাওয়া নানকুর দিকে চেয়ে রইল টুসিয়া। ওর বড় বড় চোখ দুটি জলে ভরে এল। নানকু এমন করে টুসিয়াকে ফেলে চলে গেল যেন সত্যিই ও কখনও চিনত না। কিন্তু টুসিয়ার মতো করে কেউই জানে না, কার বিদাইয়ার কথা গাইছে নানকু, আর কার বিদাইয়াতে তার বুক ফেটে যাচ্ছে। অথচ সেই টুসি সামনে এলে তার মুখে থুথু দেয় নানকু। একটা অদ্ভুত মানুষ। অদ্ভুত! ভুল করে ভুল লোককে ভালোবেসে ছিল টুসিয়া। আবার ভুল করে সে লোককে ফেলে অন্য ভুল লোকের আশায় ছুটেছিল। ছোট্ট হলেও টুসিয়া সারাটা জীবনে সে কেবল ভুলই করে এল। তখনও পাকদণ্ডীর রাস্তায় জঙ্গলের মধ্যে নানকুর গান শোনা যাচ্ছিল। ঝোপ-ঝাড়, গাছ-লতা, পাহাড়-ঝরনার আড়ালে আড়ালে। টুসিয়ার মনে পড়ে গেল, এক দিন ভালুমারের বনদেওতার কাছে বসে নানকু ওকে বলেছিল, দুঃখ কার না আছে? জন্মালেই দুঃখ। বড়-ছোট, গরিব-বড়লোক সব মানুষেরই দুঃখ আছে। কিন্তু কোনো মানুষ দুঃখের মোকাবিলা কেমন ভাবে করে, তা দিয়েই তো তার মনুষ্যত্বের বিচার হয়। মানুষের শরীরে জন্মালেই কি মানুষ মানুষ হয়? আর একদিন কথা হচ্ছিল মাহাতোকে নিয়ে নানকুর সঙ্গে। টুসিয়া শুধিয়েছিল, মাহাতোর এত টাকা-পয়সা, কাঁড়া-ভহিস, লোকজন, মাহাতোর সঙ্গে তুমি লড়ে পারবে? ও তো তোমাকে মেরে তোমার লাশ পুঁতে দেবে। নানকু হো হো করে হেসে উঠেছিল। ওর গাল টিপে দিয়ে বলেছিল, পাগলি। মানুষ কি শরীরের জোরে লড়ে রে? শরীরের জোরে তো মানুষ কত সহজে জানোয়ারের কাছেও হেরে যায়, তাই বলে সেইসব জানোয়ারেরা কি মানুষের চেয়ে বড়। শরীরের সাহস হচ্ছে সাহসের মধ্যে সবচেয়ে কম দামি সাহস। আসল হচ্ছে মন; মনের সাহস। প্রতিবাদ করার সাহস। অত্যাচার সইবার সাহস। তারপর বলেছিল, তুই প্রহ্লাদের গল্প জানিস না।

    টুসিয়া হেসে বলেছিল, প্রহ্লাদকে তো ভগবান বাঁচিয়েছিলেন। তোমাকে কে বাঁচাবে?

    নানকু হেসে বলেছিল কেন? তোরা বাঁচাবি? তোরা কি কম? প্রহ্লাদের ভগবান অন্য ভগবান কিন্তু আমার ভগবান আমার দেশ। যার জন্যে আমি ভাবি সবসময়, সেই-ই ভাববে আমার জন্যে।

    নানকু যে গাছের নীচে বসেছিল সে গাছের নীচেই বসে রইল টুসিয়া। ওর মাথাটা এখন হালকা লাগছে। কিন্তু এর পরে কী হবে ও জানে না। মোহাবিষ্টের মতো অবশ হয়ে বসেছিল টুসিয়া। এদিকে বেলা যায় যায়। ভাবল, এবারে ও উঠবে। এমন সময় পাহাড়ের উপর থেকে দুটো জানোয়ার যেন হুড়োহুড়ি করে নেমে আসতে লাগল পাকদণ্ডী বেয়ে। সন্ত্রস্ত হয়ে টুসিয়া উঠতে যাবে, এমন সময় দেখল পরেশনাথ আর বুলকি নেমে আসছে দুহাত ভর্তি কুঁচফলের ঝাড় নিয়ে। পাতাগুলো শুকিয়ে হলুদ হয়ে গেছে আর তার মধ্যে উজ্জ্বল লাল আর কালোরঙা কুঁচফলগুলো জ্বলজ্বল করছে।

    পরেশনাথ বলল, কোথায় গেল? নান্‌কু ভাইয়া, কোথায় চলে গেল রে দিদি? বুলকিও অবাক হয়ে চারধারে দেখল। তারপরই টুসিয়াকে দেখতে পেয়ে উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল, টুসি দিদি…। টুসি উঠে দাঁড়াল। বলল, তোদের নানকু ভাইয়া ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে। ভয়? নানকু ভাইয়া কীসের ভয় পেল? বুলকি শুধোলো। পরেশনাথ প্রতিবাদের স্বরে বলল, ঝুঠো বাত্‌। নান্‌কু ভাইয়া কই চিসে ডতা নেহি।

    টুসি ওদের সঙ্গে নামতে নামতে বলল, উও বাহ্ তো সাহি। মগর্ হাসে বহুই ডতা।

    তুমসে? বলেই হে হো করে শিশু পরেশনাথ হেসে উঠল।

    তোদেরই বাড়িতে গেছিলাম একটু আগে। তোরা না জঙ্গলে কুল কুড়োতে গেছিস।

    গেছিই ত! কুলে ঝুড়ি ভর্তি করে রেখে এসেচি নীচে। নানকু ভাইয়ার সঙ্গে তো নীচেই দেখা হল। আমরা তো নান্‌কু ভাইয়ার সঙ্গেই এলাম এখানে। বলল, বুলকি। বেশ লোক তো! আমাদের ফেলে রেখে চলে গেল। কেন? আমি তো আছি।—আমি আছি বলেই হয়তো চলে গেল। টুসিয়া বলল।

    পরেশনাথ চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, জানো টুসিদিদি আজকে কী হয়েছিল? একটা মস্ত ভাল্লুক মুখ নীচে, পেছন উপরে করে কুল গাছে উঠছিল। এমন দেখাচ্ছিস না। আমি তো ঐ ভয়ের মধ্যে হেসে ফেলেছি, আর আমার হাসি শুনে ভাল্লুকটার কী রাগ! তরতর  করে নেমে আসছিল আমাদের ধরবে বলে, আমরা তো সে ব্যাটা গাছ থেকে নামার আগেই—চোঁ চোঁ দৌড় লাগিয়ে পালিয়ে এলাম। টুসি ওদের সঙ্গে নামতে নামতে বলল, মহুয়া গাছতলাতে আর কুলগাছ তলাতে সাবধানে যাবি, জঙ্গলে। বিশেষ করে গরম পড়লে। আমগাছ তলাতেও। ভাল্লুকরা ঐসব খেতে খুব ভালোবাসে।

    পরেশনাথ খুব সমস্যায় পড়ে বলল, তাহলে? কী হবে? আমরাও যে ভীষণ ভালোবাসি।

    এই শিশু ভাইবোনের সঙ্গে অনাবিল মনখোলা হাসি হেসে মুহূর্তের জন্যে টুসিয়া ওর নিজের দুঃখ ভুলে গেল। তারপর ভাবল, পরেশনাথ আর বুলকিরও দুঃখ কম নেই। এক এক জনের মনের দুঃখ এক এক রকম। ওরা শিশু হলে কী হয়? ওদের কত রকম দুঃখ। হীরু তো তাও কিছু কিছু টাকা পাঠিয়ে এসেছে এতদিন। যে-টাকা পাঠিয়েছে হীরু প্রতিমাসের জন্যে এক সময় তা মানিয়া চাচার সারা বছরের রোজগারের চেয়ে বেশি। শিশু দুটির জন্যে হঠাৎ কষ্ট হল টুসির। আহা! ওরা যেন ভগবানের দূত! এই প্রথম বসন্তের কোকিল-ডাকা, প্রজাপতি-ওড়া, হলুদ-লাল বনে বনে ওরা দেবশিশুর মতো খেলে বেড়ায়। পেটে সবসময় খিদে, কিন্তু মুখে হাসির বিরাম নেই। ওদের সঙ্গে নামতে নামতে হঠাৎ টুসিয়া পরেশনাথের ছোট্ট হাতটা নিজের মুঠির মধ্যে শক্ত করে ধরল। পরেশনাথ বুঝতে না পেরে টুসির মুখের দিকে তাকাল। দেখল, তার টুসি দিদির মুখটা হঠাৎ যেন কেমন ফ্যাকাশে, রঙহীন হয়ে গেছে, আর টুসিদিদির হাতটা তার হাতের মুঠোটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে সাঁড়াশির মতো শক্ত হয়ে চেপে বসছে আস্তে আস্তে। পরেশনাথ যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল, উঃ লাগে!

    টুসি যেন সম্বিত ফিরে পেয়ে পরেশনাথের হাতটা ছেড়ে দিল। টুসির কপাল এ শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘামে ভিজে উঠল। হাতটা ছেড়ে দিতেই পরেশনাথ এক দৌড়ে সামনে নেমে গেল অনেকখানি পথ বেয়ে। বুলকি অবাক হয়ে টুসিয়া দিদি এবং পরেশনাথ দুজনের দিকেই তাকাল। কিছুই বুঝতে পারল না। টুসির মাথার মধ্যে অনেকগুলো ঝিঁঝিঁপোকা একসঙ্গে ডেকে উঠলো। ওর গর্ভের মধ্যের অনভিপ্রেত প্রাণটা যেন নড়ে চড়ে উঠল। যা-কিছু জীবন্ত, প্রাণস্পন্দিত, সবকিছুকেই হঠাৎ ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে হল টুসির। হঠাৎ ও আর ওর নিজের মধ্যে রইল না। ওর মনে হল এই উচ্ছল, প্রাণবন্ত টগবগে পরেশনাথকে গলা টিপে মেরে ফেলে। ওকে মেরে ফেললে, যেন টুসি স্বস্তি পাবে। শান্তি পাবে। ওর জ্বালা জুড়োবে। প্রাণকে, প্রাণবন্ততাকে টুসি ঘৃণা করে।

    হঠাৎ টুসিয়া পিছনে আঁচল লুটিয়ে দৌড়ে গেল পরেশনাথের দিকে; চিল যেমন ছোটো পাখির দিকে ছো-মারে তেমন করে। অবাক-হওয়া বুলকি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে ঐ দিকে চেয়ে রইল আরও অবাক হয়ে। টুসির পায়ের শব্দে পরেশনাথ ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়ল। দাঁড়িয়ে পড়েই, টুসিয়ার দিকে চেয়ে আতঙ্কিত বিস্ফোরিত চোখে চেঁচিয়ে উঠল, লাল তিতলি। লাল তিতলি দিদি! লাল তিতলি! পিছনে দাঁড়ানো বুলকিও যেন দেখতে পেল যে লাল শাড়ি-পড়া টুসিয়া দিদি হঠাৎ একটা প্রকাণ্ড বড়, কিন্তু ভারশূন্য লাল তিতলি হয়ে গিয়ে, ওদের চেয়ে অনেক নীচে দাঁড়ানো পরেশনাথের দিকে উড়ে যাচ্ছে। টুসিদিদির হঠাৎই বিরাট ডানা গজিয়েছে। পরেশনাথ প্রাণপণে দৌড়তে লাগল উত্রাইয়ের পাকদণ্ডীতে। বুলকি কী করবে বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি একটা পাথর কুড়িয়ে নিল পথ থেকে; নিয়ে লাল তিতলি হয়ে-যাওয়া টুসিয়াকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারল পাথরটা। পাথরটা ছুড়তেই টুসি একটা বাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল। পাথরটা লাগল কিনা বুঝতে পারল না বুলকি। বাঁক ঘুরেই দেখল, পরেশনাথ আছাড় খেয়ে পড়ল পাথর আর কাঁটা ঝোপের উপর আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখল যে, টুসিয়া উবু হয়ে বসে আছে, পথের উপর। যে পাথরটা ও ছুড়েছিল, সেটা বোধহয় তার পিঠে লেগেছিল। কিন্তু ততক্ষণে সেই খতরনাগ্, লাল তিলটা পালিয়ে গেছে। অল্প অল্প হাওয়ায় টুসিদিদির লাল আঁচলটা উড়ছে শুধু তখনও। দৌড়ে গিয়ে পরেশনাথের মাথাটা কোলে তুলে নিল ও। কপাল আর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে এল পরেশনাথের। টুসি দিদি স্বাভাবিক গলায় বুলকিকে শুধোল, কী করে এমন হল রে বুলকি? পরেশনাথ পড়ল কী করে? বুলকি এবার টুসিদিদির চোখের দিকে চেয়ে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেল না। তবুও ভয়ে ভয়ে বলল, পড়ে গেছে দৌড়ে পালাতে গিয়ে। বুলকির বুকটা ভয়ে টিপ টিপ করছিল।

    পালাতে গিয়ে? কীসের ভয়ে পালাল? কার ভয়ে?

    টুসি শুধোল।

    বুলকি কী বলবে ভেবে না পেয়ে বলল, কী জানি!

    ইস্, কী অবস্থা ছেলেটার—বলেই, টুসিদিদি দৌড়ে গেল জঙ্গলে, জংলি পাতা ছিঁড়ে আনবে বলে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া পরেশনাথের মাথাটা কোলে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একা বসে থাকতে বুলকির ভীষণ ভয় করছিল। বুলকির মনে হচ্ছিল যে, এই লাল-তিতলিটা কোনদিন পরেশনাথকে সত্যিই মেরে ফেলবে। কখন? কবে? কোথায়? তা সে লাল তিলই জানে। সবসময় একটা চাপা ভয় কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকে ওর বুকের মধ্যে। তখন যদি বুলকি পরেশনাথের সঙ্গে না থাকে তো কী হবে? পরেশনাথকে ও কি বাঁচাতে পারবে? ওর একমাত্র ছোট ভাইটাকে? এইসব কারণেই সেই আমলকী গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার পর থেকেই বুলকি পরেশনাথকে কক্ষণো আর একা জঙ্গলে যেতে দেয় না। ওর যতই কাজ থাকুক, তবু সঙ্গে যায়।

    টুসি দুমুঠোয় জংলি গ্যাদার পাতা ভরে নিয়ে এলো। তার দুহাতের পাতা ঘেমে একেবারে জল হয়ে গেছিল। টুসি নিজেও জানে না একটু আগে কী হয়েছিল টুসির। টুসির হাতের পাতা খুব ঘামে। সন্ধে হতেও বেশি দেরি নেই। বস্তি এখনও বেশ খানিকটা দূরে। ছেলেটার জ্ঞান তাড়াতাড়ি ফিরলে হয়। ওরা দুজনে মিলে পরেশনাথের ক্ষতস্থানে পাতা কচলে ভালো করে লাগিয়ে দিল। তারপর টুসি আরেকবার গেল জল আনতে। কাঁটা ভেঙে নিয়ে শালচারার পাতা ছিঁড়ে দোনা বানিয়ে ঝরনা থেকে জল নিয়ে এল টুসি। একটু একটু করে জল পরেশনাথের ঠোঁটে দিতে আস্তে আস্তে পরেশনাথের জ্ঞান ফিরে এল। পরেশনাথ একবার চোখ খুলেই বিস্ফারিত ভয়ার্ত চোখে বলল, লাল তিতলি লাল তিল! টুসিয়া বলল, অ্যাই পরেশনাথ, কী বলছিস? কীসের তিতলি? এই যে আমি! তোর টুসিদিদি! আমি লাল শাড়ি পড়েছি। আমার শাড়ির আঁচল উড়ছিল রে বোকা! পরেশনাথকে জোর করে টেনে দাঁড় করাল বুলকি। ও আর দেরি করতে চায় না।

    এই পাকদণ্ডীর শেষে একটা ঝাঁকড়া পিপুল গাছ আছে; ঘন জঙ্গলে ভরা, পাহাড়তলিতে সন্ধের পর তার তলা দিয়ে ভালুমারের একজনও যায় না। কাড়ুয়া গেলেও যেতে পারে। বুলকি ইঙ্গিতে আঙুল তুলে গাছটার দিকে টুসিকে দেখাল। টুসির গা-ছম্ ছম্ করে উঠল। ওর মনে পড়ল যে, ও ছোটবেলা থেকে শুনেছে যে, প্রথম পোয়াতিদের বনে জঙ্গলে কখনও একা একা যেতে হয় না। সন্ধেবেলা তো নয়ই। নানারকম আত্মার ভর হয় তাদের ওপর। জিপরী, কিটুং। বুলকি আর টুসিয়া ঘোরের মধ্যে থাকা পরেশনাথকে দুজন দুহাতে ধরে প্রায় হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নুড়ি আর গাছগাছালিতে ভরা অসমান পথ বেয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলল বস্তির দিকে। ওরা যখন সেই ঝাঁকড়া পিপুল গাছটার কাছে এসে গেল, তখন প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে। বস্তির নানা ঘর থেকে কাঠের আগুনের ধুঁয়ো উঠে, গোরু ছাগলের খুড়ে-ওড়ানো ধুলোর মেঘে আটকে রয়েছে। পিছনের গাঁয়ে সবুজ জঙ্গলের পটভূমিতে সেই নীলচে ধুঁয়ো আর লালচে ধুলোকে অদ্ভুত এবং বিস্তৃত এক ভিনদেশি মাকড়সার জালের মতো দেখাচ্ছে।

    ওরা পিপুল গাছটি পেরিয়ে আসতেই একটা বড় পেঁচা দুরগুম দুরগুম দুরগুম্ আওয়াজ করে ঐ গাছটা থেকেই উড়ে এসে ওদের মাথার ওপরে গোল হয়ে ঘুরতে লাগল ক্রমাগত। ঘুরতে ঘুরতে ওদের সঙ্গে চলতে লাগল। বুলকি একবার ওপরে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। পরেশনাথ চোখ দুটো বন্ধ করেই আছে। টুসিয়ার বুকের ভিতরের, স্তনবৃত্ততে জরায়ুতে, নাভিতে কার অদৃশ্য অসভ্য হাত যেন কী একটা ঠাণ্ডা জিনিস এক মুহূর্তে ছুইয়ে দিয়েই চলে গেল। একটা ভয়, টুসিয়ার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা কালো কুৎসিত কোঁকড়ানো ভয় টিকিটিকির মতো তরতরিয়ে নেমে গেল।

    অদূরে বস্তির দিক থেকে কেউ তার কুকুরের নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে উঠল। তারপর ডাকতেই থাকল। আঃ, বিকি, আঃ আঃরে বিকি আঃ-আঃ-আ—আ…। ওরা বস্তির লাগোয়া ক্ষেতে না ঢোকা অবধি লোকটি ডেকেই চলল। কাছে আসতেই টুসিয়া এবারে লোকটির গলা চিনতে পারল। এ গ্রামের লোহার; ফুদিয়া চাচা। টুসির মন বলল, আজ আর ফুদিয়া চাচার বিকি কুকুর ফিরে আসবে না। তাকে নিশ্চয়ই চিতাতে নিয়েছে। ঐদিকে মুখ ঘুরিয়ে টুসি অবাক হয়ে গেল। এবং টুসির চোখ অনুসরণ করে বুলকিও অবাক হয়ে দেখল যে, ফুদিয়া চাচা ঐ ঝাঁকড়া পিপুল গাছটার দিকেই সোজা মুখ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বিকিকে ডাকছে।

    বুলকি দাঁড়িয়ে পড়ে শুধলো, কতক্ষণ থেকে পাচ্ছো না চাচা, তোমার বিকিকে? আরে এই তো ছিল পায়ের কাছে এইখানেই। পাঁচ মিনিটও হবে না, হঠাৎ মুখে অদ্ভুত একটা গোঁ-গোঁ আওয়াজ করতে করতে ঐ খতরনাগ্, পিপুল গাছের দিকে দৌড়ে গেল। যেন কেউ ডাকল ওকে। আমি ভাবলাম, এই ফিরে এল বলে। কিন্তু তারপর তার আর পাত্তা নেই, দ্যাখো তো কাণ্ড! এদিকে অন্ধকার হয়ে এল। তোরা তো ঐদিক থেকেই এলি? দেখিস নি বিকিকে? শোনচিতোয়া বেরিয়েছে নাকি?

    বুলকি চোখ নামিয়ে নিল। বলল, শোন্‌চিতোয়া?

    বিকিকে তোরা সত্যিই দেখিস নি? না ঠাট্টা করছিস?

    না তো! সত্যি আমরা কেউই কোনো কুকুর দেখিনি। শোনচিতোয়াও না। টুসি বলল। পা চালিয়েই বুলকির হঠাৎই মনে হল যে, আজ বিকিই বাঁচিয়ে দিল পরেশনাথকে। লাল তিতলি অথবা টুসিয়াদিদির হাত থেকে। মনে হতেই, ওর গাটা আবারও ছম্‌ছম্ করে উঠল। এই জঙ্গলে পাহাড়ে কখন যে কী ঘটে।

    পেঁচাটা দূরের সায়ান্ধকার পাহাড়তলিতে তখনও ঘুরে ঘুরে ডাকছিল দুরগুম্, দুরগুম্, দুরগুম্। ভাইয়ের হাত ধরে বড়ো পা ফেলে বাড়ির দিকে চলল বুলকি। টুসিয়া যে সঙ্গে আছে একথাটা যেন ভুলেই গেল ও।

    আসলে, ভুলে যেতেই চাইছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article লবঙ্গীর জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }