Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোজাগর – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প561 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কোজাগর – ৩০

    ৩০

    মহুয়াডার থেকে আসা ট্রাক ধরে আমি আর রথীদা যখন ডালটনগঞ্জে পৌঁছলাম তখন বেলা প্রায় বারোটা বাজে। রথীদা গেলেন বনবিভাগের সদর দপ্তরে। আমি গেলাম আমার মালিকের ডেরাতে। মালিকের স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশান ছিল যে, কখনও যেন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কোনোরকম কনফ্রটেশানে না যাই। ঐ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গেই তাঁর কারবার। ঐ বিশেষ ডিপার্টমেন্টের দৌলতেই তাঁর রব্রবা, তাঁর রইসী। অতএব, যাইই ঘটুক না কেন ঐ ডিপার্টমেন্টের বড় ছোট কাউকেই কোনো মতেই চটানো চলবে না। টেটরার মৃত্যুতে উনি বিশেষ বিচলিত হলেন না। জঙ্গলে উনি এসব অনেক দেখেছেন। তিতলির অসুখের কথা বলে, আমি যখন একটা গাড়ি বা জিপ চাইলাম, ওঁর মুখ হঠাৎই খুব গম্ভীর হয়ে গেল।

    শুধোলেন, একজন সামান্য নোক্রানির জন্যে আপনার এত দরদ কীসের?

    লোক্রানি হলে কি হয়, সেও তো মানুষ। ওর প্রতি দরদ মানুষ হিসাবে। সেইটেই তো স্বাভাবিক।

    কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে অন্যদিকে চেয়ে থেকে বললেন, আপনি কি জানেন যে, আপনার এলাকার সব আদিবাসী কুলি ও রেজাদের খেপিয়ে তুলেছে ঐ নানকু ছোকরা? রেট্‌ না বাড়ালে তারা কাজ করবে না বলে নোটিশ দিয়েছে?

    আমি তো জানি না। তাছাড়া, নানকুর সঙ্গে আমার নোক্রানির অসুখের সম্বন্ধ কী? বুঝলাম না কিছুই।

    আপনার এলাকার খবর আপনি জানেনই বা না কেন? জেনেও না জানলে, আমার কিছুই বলার নেই।

    যদি নানকু ঐ সব করেও থাকে, তার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?

    সেটা আপনারই ভাববার! আসলে, আপনারা সবাই নেমকহারাম, অকৃতজ্ঞ। এতদিন আমারই নুন খেয়ে এখন আমারই পিছনে লাগছেন। আমি তো কম করিনি আপনাদের জন্যে। আপনার বোনের বিয়ে থেকে আরম্ভ করে, যখন যা বলেছেন, সবই করেছি—তারপরও আপনাদের এই ব্যবহার আমাকে বড় দুঃখ দেয়। আপনারা মানুষের দাম দিতে জানেন না।

    বললাম, আপনি যা করেছেন সে কথা শুধু আমি কেন, আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে কেউই তা কখনও অস্বীকার করিনি। বরং আপনার মতো মালিক যে হয় না, এ-কথাই চিরদিন সকলকে বলেছি।

    তা বলেছেন, যতদিন আপনি, আপনি ছিলেন। আমাদের একজন ছিলেন। আপনি তো এখন জন-দরদী নেতা হয়ে গেছেন। বঞ্চিত, ভুখা আদিবাসীদের হয়ে কী যেন বলেন আপনারা, সেই যে কী যেন? হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে পড়েছে, শ্রেণী-সংগ্রামে নেমেছেন। সবাইকে সামিল করাচ্ছেন বিপ্লবে। আপনি এখন তো আর আমাদের কেউই নন।

    অবাক হলাম নিজেই, নিজের নেতা বনে যাবার খবরে।

    বললাম, এসব ভুল কথা। আমি যা ছিলাম, তাই-ই আছি। আপনি কার কথাতে আমাকে বলছেন এসব, জানি না। তবে আপনার কান নিশ্চয়ই খুব পাতলা। এত পাতলা কান দিয়ে এত বড় ব্যবসা এতদিন আপনি যে কী করে চালালেন তা আপনিই জানেন।

    আমার ব্যবসা আমি কী করে চালাব, তা নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না।

    ঠিক আছে।

    ঠিক নেই। আপনার জবাবদিহি করতে হবে, কেন আপনি কুলি-মেট-মুনশি সকলকে আমার বিরুদ্ধে খেপাচ্ছেন? নান্‌কুকে মদত দিচ্ছেন? কেন?

    ভাবলাম যে ওঁকে বলি, দেখুন আপনি ভীষণ ভুল করছেন। একেবারেই ভুল লোককে, অন্য কোনো ইতর অথবা স্বার্থান্বেষী লোকের প্ররোচনায় অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করছেন। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে ওঁকে এ কথা গুছিয়ে বলব ভেবেও, বলা হলো না। হঠাৎই মাথা গরম হয়ে গেল। বোধহয় মুখ ফসকেই বেরিয়ে গেল, কুলিরা ও রেজারা যা পায়, তাতে তাদের তো সত্যিই চলে না। যা বাজার! আপনার নিজের জীবনযাত্রাতে কিছুই কম্‌তি পড়তো না ওদের আরো কিছু দিলে। আপনি মালিক, রাজা লোক, আপনার মুখ চেয়েই তো ওরা থাকে। পরমুহূর্তেই আমার মধ্যে থেকে অন্য আরেকটা লোক হঠাৎই কথা বলে উঠল; যে-লোকটা, এত বছর শিক্ষা শালীনতা, কুঁড়েমি শান্তি-প্রিয়তার লেপ মুড়ে আমারই বুকে শীতের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল, অথচ সে যে ছিল সে-কথা আমি নিজেও জানিনি।

    সেই লোকটা বলল, আপনি ওদের না দেখলে, কে দেখবে? মনুফা কী হয় না হয় তার খোঁজ তো আমরাও একটু আধটু রাখি। তাছাড়া, কুলিদের কথা ছেড়েই দিলাম, আমাদের নিজেদের কথাও বলতে পারি। যদিও আপনি অনেক দিয়েছেন, কিন্তু সে সবই তো দয়ার দান। আপনার কাছে এসে হাত জোড় করে দাঁড়াতে হয়েছে। আপনি দয়া করে বখশিস দিয়ে আমাদের কৃতার্থ করেছেন। বছরের পর বছর শীত—গ্রীষ্ম-বর্ষা এই জঙ্গলে পড়ে থেকে আপনার সেবাই করে এসেছি এতদিন। আমাদের ন্যায্য পাওনা যা, তা আপনি দিতে চান নি কখনও—কারণ হয়তো আপনি ভয় পেয়েছেন এবং পান যে, তা পেলে, আমরা যদি স্বাধীন, স্বাবলম্বী হয়ে গিয়ে আপনার ব্যবসাতে কমপিট্ করি? আপনাকে না মানি। সে কারণেই, আপনি দয়া দেখিয়েছেন চিরদিন, নিজে বড় থাকতে চেয়েছেন দয়ার দান দিয়ে। আজকে আপনি ইচ্ছে করলেই আমার চাকরি খেতে পারেন। এবং খেলে, আমি হয়তো পথে দাঁড়াব। কারণ আমার পুঁজি বলতে কিছুই নেই। কিন্তু কোনো আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কি দয়ার ধন চায়? প্রত্যেকেই তার পরিশ্রমের ন্যায্য পাওনা, ন্যায্য মূল্যটুকুই চায়। যারা তার চেয়েও বেশি চায়, বলব, তাদেরও আত্মসম্মান জ্ঞান নেই।

    চুপ করে ভাবছিলাম, আমার মালিকের বিলিতি সিগারেটের খরচই প্রতিমাসে য়া, তা আমার সারা বছরের মাইনে নয়। অথচ মালিকের চেয়ে অনেক বেশি পড়াশুনা করেছি আমি। তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রমও করি। তফাত এই-ই যে, তাঁর পুঁজি আছে, আর আমার নেই। শুধু এইটুকুই। এবং এটা উনি ভালোভাবে জানেন বলেই, সেই পুঁজি ক্রমাগত আরও বাড়িয়ে যেতে চান! কারো মধ্যে অবাধ্যতা বা অসন্তোষের সামান্য আভাস পেলেই টাকার বাণ্ডিল ছুড়ে মারেন তার মুখে। কিন্তু যারা তাঁর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার; শুধু তাদেরই। যারা তাঁর সমগোত্রীয়, যারা তথাকথিত ভদ্রলোক, শুধু তাদেরই। অন্যদের কথা, উনি কখনও ভাবেননি। ঐ বদ্‌গন্ধশরীর, প্রায়-বিবস্ত্র হাঁড়িয়া-খাওয়া, বিড়ি-ফোঁকা, নোংরা কতগুলো জঙ্গল-পাহাড়ের মানুষদের উনি ওঁর টাকা রোজগারের মেশিন ছাড়া কখনও অন্য কিছু বলে স্বীকারই করেননি। তাদের কারো মুখের দিকেই ভালো করে চেয়ে দেখেননি কখনও। পেমেন্ট ডে-তে টাকার বাণ্ডিল এনে মুনশিকে ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, বাট্ দো শালে লোগোঁকো। মগর আভি নেহী। ম্যায় চল্ দেনেকো বাদ। ঈয়ে ব গিদ্ধর লোগ বড়া হল্লা মাচাতা হ্যায়।

    মালিক বললেন, দেখুন মুখার্জিবাবু আপনাকে আমি সাবধান করে দিলাম। যদি আপনার পরিবর্তন না দেখি, তাহলে আমার কিন্তু কোনোই উপায় থাকবে না। আপনি নানকুদের মদত দিচ্ছেন। আমি জানতে পেরেছি। এতদিনে এও নিশ্চয়ই জানেন যে, আমি ইচ্ছে করলে সবই করতে পারি। আপনাকে পুলিশ কেসে, ফরেস্টের কেসে ফাঁসাতে পারি যখন তখন। সেসব আমার কাছে কিছুই নয়। তবে, আমি কখনও কারো ক্ষতি করিনি। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করিনি। আপনি অনেক বছর আমার কাছে আছেন তাই-ই, আপনাকে বুঝিয়ে বলা। তবে, আজ আপনি যত বড় বড় কথা বললেন, তা আপনার মুখে মানায় না। আমি কী করি না করি, তা আপনার দেখার নয়। কর্মচারী কর্মচারীর মতোই থাকবেন। ভবিষ্যতে, এমন ভাবে কখনও কথা বলবেন না আমার সঙ্গে। আমার মুখে কেউ কথা বলুক এটা আমি পছন্দ করি না। আমার বাপ-দাদাদের মুখের ওপর কোনো কর্মচারী কখনও এমনভাবে কথা বলেনি। এসব আমি বরদাস্ত করব না। ব্যবসা বন্ধ করে দেব, সেও ভি আচ্ছা। কাহার ছুঁড়ির সঙ্গে লঙ্কা-লকি করছেন, করুন। জঙ্গলে যারা থাকে, তাদের মধ্যে অনেকেই করে। পেটের খিদের মতো এও একরকমের খিদে। না-মিটলে, শরীর-মন ভালো থাকে না। কাজের ক্ষতি হয়। তা বলে, কোলকাতা থেকে আপনার সাদির জন্য মেয়ে এল, তাকে ফিরিয়ে দিয়ে এই সব নোংরা মেয়েদের আমাদের নিজেদের সমাজের মেয়েদের সমান ইজ্জত দেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না আমি। এতে আমার কোম্পানির বদনাম। মানুষ হিসেবে আপনার খুবই অধঃপতন হয়েছে।

    একটু চুপ করে থেকে বললেন, সায়ন মুখার্জির প্রেম করার কি লোক জুটল না? একজনও? নিজের সমাজের? চার আনা দিলে যারা কাপড় খসায় তাদের সঙ্গে রিস্তেদারি করতে বসছেন দেখছি। আজীব বাহ্

    দেখুন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই না।

    আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে বুঝি কিছুই থাকতে পারে না? এক আপনারই তা থাকতে পারে?

    আমার তো মনে হয় না যে, আমি যা আপনাকে বলেছি তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারের মধ্যে পড়ে। আমরা আপনাক যে-টাকা রোজগার করে দিই, সেই টাকা থেকেই তো এত কিছু করেন আপনি। আপনি কি মনে করেন, যা-কিছু আপনি আয় করেন সবই আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রাইজ? সবই আপনি একাই করেন এবং করেছেন? অন্য কারো কোনোই অবদান নেই তার পিছনে? ব্যাপারটা মোটেই ব্যক্তিগত নয়। আপনার বিভিন্ন ডিপোতে সিজনের সময় দু নম্বরে যে বাঁশ এবং কাঠ বিক্রি হয়, যা পুরানো টায়ার বিক্রি হয় তার হিসাব মোটামুটি আপনার সব কর্মচারীই রাখে। কম করে, দিনে দশ হাজার টাকা হবে। আপনার অভাব কীসের? আপনিও যদি গরিব কুলিদের দুঃখ না বোঝেন, তো কে বুঝবে? আমাদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। আমরা কখনও কিছু বলিও নি। শুনেছি, বড়লোকের ছেলেদের দিল বড় হয়। কিন্তু যত দেখছি, ততই বুঝতে পারছি আপনারা দেখানোর জন্যে, শো-অফ্ করার জন্যে; নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মানুষদের জন্যেই আপনাদের দিকে বড় করেন। আর যাদের কিছু নেই, যাদের কেউই নেই; তাদের কাছেই যত কার্পণ্য আপনাদের। আপনাদের দিল্ বড় ইলাটিক্। দেশে আপনার মতো প্রত্যেক মালিকই যদি প্রথম থেকে তাদের কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা হৃদয় দিয়ে একটুও বোঝার চেষ্টা করত তাহলে আপনাদের কম্যুনিস্টদের ভয় করতে হতো না আজকে জুজুর মতো।

    রোশনলালবাবু হঠাৎই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, বাঃ বাঃ বুলিটুলি তো বেশ মুখস্থ করেছেন। এবার মাথার ওপর হাত তুলে চেঁচিয়ে বলুন, দুনিয়া কা মজদুর, এক হো।

    বলেই, বললেন, আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান এখান থেকে, আমার সামনে থেকে, ভালো চান তো। নইলে দারোয়ানকে ডেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।

    ওঁর গলার স্বর চড়তেই দরজার কাছে ওঁর নবনিযুক্ত মোসাহেব দুজনকে দেখা গেলো। আমার গলার কাছে কী যেন একটা দলা পাকিয়ে উঠল। নিজে অপমানিত হলাম সেজন্যে নয়, সম্পূর্ণ অন্য কারণেই বড় দুঃখ হলো আমার। রোশনলালবাবু মানুষটা সম্বন্ধে আমার যে মস্তবড় ধারণা ছিলো! মানুষটার হৃদয় সম্বন্ধে, উদারতা সম্বন্ধে। কিন্তু স্বার্থে ঘা-লাগাতে তাঁর ভিতরের আসল চেহারাটা বড় কদর্যতার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল আমার সামনে। উনি আসলে একজন অশিক্ষিত মেগালোম্যানিয়াক্। নিজের মতো বড় আর কাউকেই দেখেন না। নিজেরটাই শুধু বোঝেন। নিজের সুখ, নিজের স্বাচ্ছন্দ্য, বড়লোক বলে নিজের সুনামটাকে অক্ষুণ্ণ রাখা, নিজের পৃষ্ঠপোষকতা; যেন তেন প্রকারেণ। মোসাহেবদেরই দাম এসব লোকের কাছে। খাঁটি মানুষের দাম কানাকড়িও নয়। বড় দুঃখের সঙ্গেই এই মূহূর্তে আমি জানলাম যে, তিনি শুধু আমার মালিকই নন, তিনি এই হতভাগা দেশের বেশির ভাগ মালিকদেরই প্রতিভূ। এঁদের জন্যেই চিরদিনের অন্ধকার এখানে। শলা-পরামর্শ করে এঁরাই চিরদিন গরিবদের, কর্মচারীদের, পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছেন; যাতে তারা নড়তে-চড়তে না পারে, যাতে তারা উঠে না-দাঁড়াতে পারে, যাতে বুক-ফুলিয়ে টান-টান হয়ে শ্রমের সম্মানী না চাইতে পারে। যা এঁরা মানুষের মতো হয়ে অন্য মানুষকে মর্যাদার সঙ্গে দিতে পারতেন ভালোবাসায়; নিজেদের অশেষ সম্মানিত করে; সেইটুকুই তাদের কলার চেপে না ধরলে, মাথায় ডাণ্ডা না-মারলে, মুখে থুথু না-দিলে তাঁরা দেন না। আরও টাকা, আরও ক্ষমতা, আরও আরও আরও সব কিছুকে শুধু মাত্র নিজেদেরই কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়ে এসেছেন এই মুষ্টিমেয় মানুষরা চিরটা কালই। ভগবান এদের চোখ দিয়েও দেননি। এঁদেরই আনুকূল্যে, টাকা দিয়ে ছুলোয়া করে ভোজ শিকার করে গদিতে আসীন হচ্ছে পাঁচ বছর পরপর একদল লোক। ভালোবাসায় নয়, দরদে নয়, কোনো গভীর বিশ্বাসে ভর করে নয়, শুধু ভোট-রঙ্গের ছেনালি করে বছরের পর বছর ভণ্ড, খল, ধূর্ত, বিবেকরহিত কতকগুলো মানুষ, এই দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভাগ্যকে খুন করেছে গলা টিপে। এমনই সব কৃতীলোক, যাদের মধ্যে অনেকেই এদেশে রাজনীতি না করলে, আমার মতো মাসে তিনশ টাকাও রোজগার করতে পারত না, না-খেয়েই মরত।

    পথে বেরিয়েই হঠাৎ খুব হাল্কা, ভারশূন্য লাগতে লাগল। কেন যে এখানে এলাম টেটরার সৎকারের সময় অনুপস্থিত থেকে, সে কথা মনে পড়ে খারাপ লাগতে লাগল। পানের দোকানে গিয়ে পান খেলাম দুটো, জর্দা দিয়ে। গা গরম লাগতে লাগল। একবার মনে হল, ফিরে গিয়ে মানুষটিকে জুতো খুলে মেরে আসি। যে মানুষ, আমার মতো নির্বিবাদী, অল্প-সুখে-সুখী, নিরামিষ মধ্যবিত্ত মানুষকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিপ্লবী করে তুলতে চায়, তার বাহাদুরী আছে বটে। নিরুচ্চারে বললাম, তুমি জাহান্নামে যাও। তুমি একেবারেই অমানুষ হয়ে গেছ।

    ভার্মা ডাক্তারকে পেলাম না। ডাঃ সিন্হাকে গিয়ে ধরলাম। ওঁর নিজের গাড়ি আছে। অতখানি খারাপ রাস্তা নিজের গাড়িতে গিয়ে আবার শহরে ফিরে আসবেন। ফিরতে ফিরতে অনেক রাতও হয়ে যাবে। তাছাড়া, পথে হাতির ভয় আছে। তবুও তিতলির জীবন নিয়ে ব্যাপার। খরচে কার্পণ্য করলে চলবে না। ঐ অবস্থাতেও হাসি পাচ্ছিল আমার। তিতলিকে ভালো লাগত ঠিকই, হয়তো একরকমের ভালোবাসাও বেসেছিলাম ওকে; কিন্তু এই মালিক, এবং মালিকের মোসায়েবরাই তিতলিকে আমার জীবনে এক অমোঘ পরিণতির দিকে আস্তে আস্তে ঠেলে দিচ্ছেন। হয়তো টেটরার আকস্মিক মৃত্যুও এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তিতলির ব্যাপারটা এখন আমার ব্যক্তিগত সততার পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াল। আ কোশ্চেন্ অফ্ দ্যা কারেজ অফ্ মাই কনভিকশান। আমি যদি মানুষ হই; তাহলে আমার আর ফেরার উপায় নেই।

    কাছারির মোড়ে রথীদার দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল আমার জন্যে। রোশনলালবাবুর কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে এসে রথীদাকে তুলে নেবো বলেছিলাম। আমাকে দূর থেকে সাইকেল রিক্সায় আসতে দেখে রথীদা বার বার ঘড়ি দেখতে লাগলেন। দেরি তো হয়েই ছিল। কিন্তু কী করা যাবে?

    গাড়ি পেলে না? কী হল? রোশনবাবুর এত গাড়ি!

    অনেক গাড়ি যেমন, তেমন নানা কাজে ব্যস্তও তো থাকে সব গাড়ি। ইনকাট্যাক্স অফিসার, সেলস্-ট্যাক্স অফিসার তারপর আজকালকার সবচেয়ে জবরদস্ত অফিসার, ব্যাঙ্কের অফিসার! তাদের পিছনে তো’ তিন চারখানা গাড়ি সবসময়েই লেগে থাকে ব্যবসাদারদের। ব্যবসা করতে হলে এদেশে এসব যে করতেই হয়।

    তবু। একটা লোকের জীবন-মরণের ব্যাপার। মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তিন-দিন হল। এসব শুনেও গাড়ি দিলেন না?

    গাড়ি জোগাড় হয়েছে। এখন রিক্সাতে উঠে পড়ুন। ডাক্তার সাহেবের গাড়িতেই যাবো। এবার আপনার কথা বলুন। মিশান সাকসেস্ ফুল?

    নাঃ। অনেক প্যারাফার্নেলিয়া আছে। অনেকই রেডটেপিজম। কোর-এরিয়ার মধ্যে ওঁদের পক্ষে করার কিছুই নেই। এত সহজে ম্যান-ইটার ডিক্লেয়ার করানোও যাবে না। যা দেখছি, তাতে তোকে-আমাকে খেলে তারপরই যদি ওদের প্রত্যয় হয়।

    একটা মাত্র মানুষ মারলেই কোনো বাঘ ম্যান-ইটার হয়েছে যে, তা বলাও যায় না, একথা সত্যি। কিন্তু শোনচিতোয়াটা যেভাবে টেটরাকে ধরেছে, যেভাবে খেয়েছে; তাতে এটা যে একটা স্ট্রে-ইন্সিডেন্ট, এ কথা আমি অন্তত মনে নেবো না। এই শোনচিতোয়াটা খুবই ঝামেলা করবে, দেখবেন।

    আমরা যখন ডাক্তারবাবুর সঙ্গে তাঁর গাড়ি করে ভালুমারের দিকে রওয়ানা হলাম তখন প্রায় দেড়টা বাজে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article লবঙ্গীর জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }