Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোজাগর – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প561 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কোজাগর – ৬

    ৬

    মানি ওরাওঁ-র বউ, পরেশনাথের মা মুঞ্জরী, তার মেয়ে বুলকিকে পাঠিয়েছিল গোদা শেঠের দোকানে। একটু নুন, আর সরগুজার তেল আনতে। বহুদিন হয়ে গেছে সর্ষের তেলের স্বাদই ভুলে গেছে ওরা। স্বাদ ভুলে গেছে জিভ; ভুলে গেছে শরীর। তেল মাখলে যে কেমন দেখায় তাকে, মুণ্ড্রী আজ তা মনেও করতে পারে না। রুক্ষ দিন, রুক্ষ চুল, রুক্ষ শরীর, রুক্ষ মেজাজ। প্রকৃতিতে রুক্ষতা।

    সর্ষের তেল দিয়ে আলু ভেজে খেতে কেমন লাগে? ভাবতেও জিভে জল আসে মুঞ্জরীর। ওর নিজের জন্যে আজকাল আর কোনো কষ্ট নেই। কচি-কচি ছেলেমেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকানো যায় না। মাথায় তেল নেই, পরার জামা-কাপড় নেই, পেটের খাবার নেই। অথচ, তবু বেঁচে থাকতে হয়। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য সূর্য ওঠা থেকে সূর্যাস্ত অবধি কী-ই না করতে হয়!

    একমাত্র চৌপাইটা ঘরের বাইরে এনে, গায়ে দেওয়ার কাঁথা-কম্বলগুলো সব রোদে দিচ্ছিল মুঞ্জরী। যা-হোক করে দুটো মকাই ফুটোতে হবে। দুপুরের জন্যে। কিছু জংলি মূল আছে ঘরের কোণায়। পরেশনাথ আর বুলকিই নিয়ে এসেছিল খুঁড়ে খুঁড়ে জঙ্গল থেকে। তাই একটু ভেজে দেবে সরগুজার তেলে। ওদের খাওয়া-দাওয়ার সাধ চলে গেছে। কিন্তু পরেশনাথ আর বুলকি? ওরা যে বড়ই ছোট!

    হঠাৎই ওর বুকের মধ্যেটা ধক্ করে উঠল। হাতের কাঁথা মাটিতে ফেলেই দৌড়ে গেল মুঞ্জরী মকাই ক্ষেতের দিকে। দিগন্তের ওপারে সবুজ গাছ-গাছালির মাথা ওপরে এক চিলতে সবুজ মেঘ কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসছে।

    সুগা! সুগা! হারামজাদা! মনে মনে মুঞ্জরী বলল

    কিন্তু একা কী করবে বুঝতে পারল না ও। এই মকাইটুকুই সামনের বছরের ভরসা। যে মকাই খেয়ে আছে এ-বছরে, তা গত বছরের শুকনো মকাই। এতবড় টিয়ার ঝাঁক কী করে ও সামলাবে একা? মুঞ্জরী কাকতাড়ুয়াটা এদিক-ওদিক ঘোরাতে লাগল। আর শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ করে সেই আগন্তুক অসংখ্য শত্রুর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইল।

    এখন বুলকিটা থাকলে ভালো হতো। কোথায় যে আড্ডা মারতে বসল ছুঁড়ি! মুঞ্জরী চেঁচিয়ে ডাকল, এ বুলকিয়া বুলকিয়া রে…..। কিন্তু চোখ সরালো না ওদিক থেকে। সবুজ মেঘটা কাঁপতে কাঁপতে আসছে। এখন আর মেঘ নেই, কতকগুলো ছোট ছোট সবুজ কম্পমান বিন্দু ক্রমশ ছোট থেকে বড় হচ্ছে আর তিরবেগে এগিয়ে আসছে। বড় বয়ের গাছটার আড়ালে খুব ধীরে-সুস্থে আসতে দেখল ও বুলকিয়াকে। যেন ঘুমের মধ্যে হেঁটে আসছে ছুঁড়ি।

    চিৎকার করে উঠল মুঞ্জরী, এতক্ষণ কী করছিলি?

    এতক্ষণে বুলকিরও চোখ গেছে আকাশে।

    এবারে টিয়াগুলোর ডাক শোনা যাচ্ছে—ট্যা ট্যা ট্যা। ডাক নয়, যেন কর্কশ চাবুক! বুলকি জোড়ে দৌড়ে আসছিল। গায়ে কোনোক্রমে জড়িয়ে-রাখা দেহাতি ময়লা মোটা শাড়িটার আঁচলটা পিছনে লুটোতে লাগল। একহাতে নুন আর অন্যহাতে তেলের শিশি ধরে দৌড়ে আসছিল বুলকি মায়ের দিকে।

    মুঞ্জরী চেঁচিয়ে উঠল, আস্তে আয় মুখপুড়ি! তেল যদি পড়ে, তাহলে তোর চুলের ঝুঁটি ছিঁড়বো আমি।

    বুলকির চোখ দুটো স্থির। দুই আদেশ একই সঙ্গে মেনে নিয়ে যথাসম্ভব সাবধানে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। তেলের শিশি আর নুনটা তাড়াতাড়ি পাথরের ফাঁকে রেখেই।

    ততক্ষণে টিয়াগুলোও এসে গেল।

    মা ও মেয়ে একই সঙ্গে দু-হাত নেড়ে যতো জোরে পারে চিৎকার করতে লাগল। কাকতাড়ুয়ার কালো হাঁড়ির মাথায় সাদা চুনে আঁকা মুখ-চোখ-কান বোঁ-বোঁ করে ঘুরতে লাগল। ন্যাকড়া আর খড়ের তৈরি হাত দুটো বাঁই-বাঁই করে চক্রাকারে আন্দোলিত হতে লাগল। কিন্তু সর্বনেশে সুগার ঝাঁক কিছুতেই ভয় পেলো না। পাখিগুলো প্রায় পেকে-আসা মকাইগুলোর ওপরে এক সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মকাই গাছগুলো টিয়াদের শরীরের ভারে বেঁকে গেল। হেলতে-দুলতে লাগল। গাছে দু-পা বসিয়ে লাল-লাল বীভৎস ঠোঁট বেঁকিয়ে টিয়াগুলো মকাই খেতে লাগল।

    মুঞ্জরী আর্তনাদ করে উঠল। পাগলের মতো দু-হাত তুলে এদিকে-ওদিকে দৌড়োতে লাগল। ওর শাড়ির আঁচল খসে গেলো। দুটি রুক্ষ, খড়ি-ওঠা স্তন ঝুলে পড়ল। দুলতে লাগল। চুল উড়তে লাগল রুক্ষ হাওয়ায়। আর ওর বিস্ফারিত চোখের সামনে টিয়াগুলো মকাই খেতে লাগল। এত বড় টিয়ার দল আগে দেখেনি কখনও মুঞ্জরী। পুঙ্গপালের মতো। মুঞ্জরী বুঝতে পারল, এইভাবে চললে আর পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে সব মকাই শেষ করে দেবে সুগাগুলো। মা ও মেয়ে দু-জনেই রণচণ্ডী মূর্তিতে আপ্রাণ আস্ফালন করছিল। কিন্তু নিষ্ফল। আকুল হয়ে বধির ভগবানকে ডাকতে লাগল মুঞ্জরী।

    ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ দু-ম্ করে একটা আওয়াজ হলো। তার পরেই পরপর কয়েকটা বোমা ফাটার মতো আওয়াজ।

    মুঞ্জরী ও বুলকি চমকে উঠল। চমকে উঠল টিয়াগুলোও। ওরা পড়ি-কি-মরি করে মকাই ক্ষেত ছেড়ে পাখার ভর্র্র্র্, ভর্র্র্র্, শব্দ করে, ট্যা…টা…করে ডাকতে ডাকতে এক এক করে উঠলে লাগল। হঠাৎ ভার মুক্ত হওয়ায় মকাইয়ের মাথাগুলো জোরে আন্দোলিত হতে লাগল। দেখতে দেখতে পলাতক টিয়াগুলো সবুজ কম্পমান অসংখ্য বিন্দুতে আবার রূপান্তরিত হয়ে গিয়ে একাত্ম হয়ে গেল দ্রুত অপসৃয়মাণ এক সবুজ মেঘে।

    মুঞ্জরী ও বুলকি দু-জনেই এদিক-ওদিক চাইল, কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। ওদের দুজনেরই ভারি অবাক লাগছিল। কী করে এরকম হলো: কে এই সময় এমন করে তাদের বাঁচালো! কেউ কোথাও নেই। মাথার ওপরে ঝক্‌ঝক্ করছে রোদ্দুর। দোলাদুলি-করা মকাই গাছগুলো, নীল আকাশে সবুজ দিগন্ত মেশা। কে এই দেবদূত?

    এমন সময় ক্রিং-ক্রিং করে একটা সাইকেলের ঘণ্টা বাজল। আর ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই হোঃ হোঃ করে যেন হেসে উঠল। উদ্দাম, আগল-খোলা হাসি।

    অ্যাই!

    বুলকিই প্রথম দেখেছিল।

    মুঞ্জরী তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করে নিলো।

    একটা ঘন নীল-রঙা ফুল প্যান্টের ওপর ঘন লাল-রঙা ফুল হাত। শার্ট পরে এক পা মাটিতে নামিয়ে অন্য পা প্যাডেলে রেখে নানকুয়া হাসছিল তখনও হোঃ হোঃ করে।

    মুঞ্জরী আদর ও প্রশংসা মেশানো গলায় বলল, নানকুয়া। অ্যাই নানকুয়া। ভগবানই তোকে পাঠিয়েছিল রে নানকুয়া। বলতে বলতে দৌড়ে গিয়ে নানকুয়ার মাথাটাকে দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।

    নানকুয়া বলল, আরে, আমার চুল, চুল ছাড়ো মাসি।

    বলেই, নিজের মাথাটাকে মুঞ্জুরীর হাত থেকে মুক্ত করেই বুক-পকেট থেকে একটা হলুদ-রঙা প্লাস্টিকের চিরুনি বের করে সাট্ সাট্ করে চুলটা আঁচড়ে নিলো। তারপর দাঁড়-করানো সাইকেল থেকে নেমে পড়ে বলল, ভগবান পাঠালো মানে? আমিই তো ভগবান।

    তারপর বলল, চলো মাসি।

    নানকুয়া মুঞ্জুরীর আপন বোনপো নয়। বোনপোর বন্ধু। ওরা দুজনেই কয়লাখাদে কাজ করতো। মুঞ্জরীর বোন-ভগ্নীপতি, ছেলে বদলি হওয়াতে চলে গেছে কার্কা কোলিয়ারীতে। সে, শুনেছে নাকি বহুদূরে। তিন টাকা নাকি ভাড়া লাগে বাসে, ফুলদাওয়াই স্টেশন থেকে। মহুয়ামিলন স্টেশন থেকে দু টাকা ট্রেনে। কার্কা ঠিক কোনদিকে, মুঞ্জরী জানে না। তার বোনপো আশোয়া চলে গেছে বটে, কিন্তু এই ভালুমারের এক অপাংক্তেয় ছেলে নানকুয়া ওদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। ভালুমার গ্রামে নানকুয়াকে সকলেই জানে। ভালোবাসে।

    নানকুয়ার ঠেলে-আনা সাইকেলের চাকায় কিকির্ আওয়াজ হচ্ছিল। ওরা তিনজনে মুঞ্জুরীর ঘরের দিকে হেঁটে চলল।

    একটা দাঁড়কাক ডাকছে আমগাছের মগডাল থেকে কা-খা করে। এখন সূর্য ঠিক মাথার ওপরে। এর পরেই সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করবে। তখন সব কাজই তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে করতে হবে ওদের। রাতকে ওদের বড় ভয়। অনেক কারণে।

    নানকুয়া বলল, মেসো কোথায়?

    মুঞ্জরী বিরক্ত গলায় বলল, তোর মেসোই জানে। বলদ দুটো ভাড়া দিয়েছিল মাহাতোর জমি চাষের জন্যে। তার ক’টা টাকা পাওনা আছে। তিন মাস হলো সে টাকা আদায় করতে পারছে না। গেছে, সেই টাকার তাগাদায়। ফেরার সময় কাঠ কেটে আনবে। শীতটা এবারে এত তাড়াতাড়ি পড়েছে! সন্ধের পর আগুন না জ্বালালে…।

    নানকুয়া সাইকেলটা একটা পেয়ারা গাছে ভর দিয়ে রেখে চৌপাইতে এসে বসল। আসার সময় সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝোলানো একটা থলি নিয়ে এলো। বুলকিকে বলল, এটা নিয়ে যা বুলকি।

    এতে কী আছে রে? মুঞ্জরী শুধোলো।

    তাচ্ছিল্যের সুরে নানকুয়া বলল, এই একটু খাবার-দাবার।

    কেন এসব করিস তুই! রোজ রোজ এরকম করা ভালো না। তুই ঘর করবি, সংসার করবি, এমন করে পরের জন্যে টাকা নষ্ট করতে নেই।

    ছাড়ো! বলল নানকুয়া।

    মুঞ্জরী বলল, বোস্, আমি এক্ষুনি আসছি।

    বুলকিকে নানকুয়া বলল, বাছুরটা কবে হলো?

    সাদা বাছুরটার দিকে তাকিয়ে বুলকি বলল, প্রায় মাসখানেক। একটাই তো গাই আমাদের। বাঁশবাবু আর পাগলা সাহেবের কাছে দুধ বিক্রি করছে বাবা।

    নানকুয়া বলল, ভালো। তাও যতদিন গোরুটার বাঁটে দুধ থাকে, কিছু রোজগার হবে।

    ঘরে গিয়ে থলিটাকে উপুড় করল মুঞ্জরী। চোখ দুটো আনন্দে, লোভে, চক্‌চক্‌ করে উঠল। বুলকি ততক্ষণে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল ঘরে। খুশিতে বুলকি দাঁত বের করে হাসল। অনেকখানি চাল, চানার ডাল, আলু-পেঁয়াজ এবং চোখকে বিশ্বাস হলো না—শুয়োরের মাংস! কত দিন যে মাংস খায়নি ওরা। কতদিন, তা মনেও পড়ে না।

    মুঞ্জরী মুখ থেকে লোভ ও খুশির ভাব মুছে ফেলে, মুখে স্বাভাবিক ভাব ফুটিয়ে বাইরে এসে বলল, আজ তো হাটিয়া ছিল না। আনলি কোথা থেকে?

    ছিল ত! টিমার-এ। কাজে গেছিলাম। তাই, তোমাদের জন্যে…

    ওহো! মুঞ্জরী বলল। খেয়ে যাবি তো?

    নাঃ, নাঃ, আমি ফিরে যাবো। ট্রেন ধরব মহুয়ামিলন স্টেশন থেকে। গ্রামে তো সব হপ্তাতেই আসি। কিন্তু তোমার কাছে বহুদিন আসা হয় না। এলাম তাই। তোমার বাড়িটা  বড় দূরে।

    গ্রামের মধ্যে থাকব এমন সামর্থ্য কোথায়? সারা জীবন তো পরের জমিতে আবাদ ফলিয়েই কাটল।

    নানকুয়া কথা ঘুরিয়ে বলল, মেসো আসবে কখন? কথা ঘোরাল, কারণ নানকুয়ার এই হতাশা ভালো লাগে না। এখানকার সব ক’টা মানুষই এরকম!

    তোমার মেসোই জানে। তারপর বলল, টুসিয়ার সঙ্গে দেখা হয়? কই আর হয়! বহুদিন দেখা হয় না। আছে কেমন ওরা সব?

    মিথ্যে কথা বলল নানকুয়া।

    ভালোই আছে।

    নানকুয়া বলল, কেনই বা খারাপ থাকবে? যার এমন কেউ-কেটা ভাই!

    মুঞ্জরী হাসল। বলল, তার ভাইয়ের কথা বুঝি না। কিন্তু তোর মনের কথা বুঝি। শুধোলো, ডাকতে পাঠাবো নাকি ওকে? …যা ত বুলকি, টুসিয়া দিদিকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি, নানকু ভাইয়া এসেছে।

    বুলকি উঠে চলে গেল।

    বেশ কিছুদূর গেছে বুলকি, এমন সময় মুঞ্জরী ধমক দিল ওকে, অ্যাই ছুড়ি, আবার! তোর ঠ্যাং ভেঙে দেবো আমি।

    হঠাৎ ধমকে, বুলকি চমকে উঠল।

    বুলকি ও পরেশনাথকে বার বার মানা করা সত্ত্বেও ওরা কখনোই কথা শুনবে না। সরগুজার ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ওদের শর্ট-কাট না করলেই নয়। কতোগুলো গাছকে যে শুইয়ে ফেলেছে তা বলার নয়। দুই ভাইবোনে রীতিমতো আলাদা একটা পায়ে-চলা পথ বানিয়ে ক্ষেতের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। পরিষ্কার দেখা যায় সেই পথের চিহ্ন। সবুজ সতেজ গাছে হলুদ ফুল। তার মধ্যে দিয়ে পায়ে-চলা মাটির পথ। ফসল থাকুক কী না-থাকুক ওরা গ্রাহ্য করবে না কখনও। সব সময়ই নিজেদের পায়ে-বানানো ঐ পথেই যাবে বজ্জাত দুটো।

    বুলকি ধমক খেয়ে সোজা রাস্তা ধরল। কিন্তু মুঞ্জরী জানে যে, দুই ছেলেমেয়ের কেউই, ওর কি মানিয়ার কথা শোনো না। এতো কষ্ট, এতো খিদে, তবুও কী যে ঘোরের মধ্যে থাকে দু ভাইবোনে সব সময়, কী নিয়ে যে এত হাসাহাসি করে, এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে, তা ওরাই জানে। দেখলে গা জ্বালা করে মুঞ্জরীর।

    বুলকি চলে গেলে মুঞ্জরী বলল, তুই সময় মতো না এসে পড়লে আজ বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো। কিন্তু কী দিয়ে আওয়াজ করলি রে?

    নানকু পকেট থেকে লাল-নীল পাতলা কাগজে মোড়া একমুঠো আছাড়িপকা বের করল।

    বলল, এই নাও। রেখে দাও।

    মুঞ্জুীকে চিন্তিত দেখালো। বলল, ফরেস্ট গার্ড ধরবে না?

    ধরলেই-বা কি? মানুষ কি মরে যাবে নাকি? বাঘের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে হোক, কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই থেকে রইস্ আদমিরা এসে জানোয়ার দেখে যাচ্ছে যাক। তা বলে কি তোমরা জানোয়ারের চেয়েও অধম? মানুষ মেরে জানোয়ার বাড়াতে হবে, এ-কথা কোন আইনে বলে?

    কিন্তু…। মুঞ্জরী বলল, তোর মেসো একবার হাতি তাড়াবার জন্য চিপাদোহর থেকে নিয়ে আসা পটকা ফুটিয়েছিল বলে তার পরের দিন ফরেস্ট গার্ড ওকে ধরে নিয়ে গেল। খুব মারপিট করেছিল ওকে। বলেছিল, কোনো জানোয়ারকে যেন একটুও বিরক্ত করা না হয়। করলে দাঁত খুলে নেবে।

    মেসো কিছু বলল না? কাঠের কূপ্ কাটা তো এ তল্লাটে প্রায় বন্ধই! যা কাটা হচ্ছে, তা বহু দূরে। কূপ্ কেটে যে ক’মাস কিছু রোজগার হতো, তা তো গ্রামের লোকের এখন নেই। যার যতটুকু জমি আছে, তাতে বছরের দু-মাসের ফসলও হয় না। তা লোকেরা খাবে কী? …তোমরা এত লোক যে প্রায় না-খেয়ে আছো, সব ফসল নষ্ট করছে জানোয়ারে, তোমরা কেন দরবার করো না ওপরে?

    মুঞ্জরী বলল, ওপরওয়ালা যে কে তাই-ই তো জানা নেই। তাছাড়া, কে করবে? আমরা কি লেখাপড়া জান্?ি তা সত্ত্বেও কাকে ধরে যেন আর্জি পাঠিয়েছিল সকলে মিলি। তোর মেসোও টিপ সই দিয়েছিল। সেই দরখাস্তে নাকি ওরা বলেছিল যে, বাঘোয়া পোজ আর দেখনেওয়ালাদের থেকে যে পয়সা পাচ্ছ, তার কিছু জঙ্গলের মধ্যের গরিব লোকদের দেওয়া হোক, যাতে তারা না-খেয়ে মারা না যায়। কিন্তু কই? কিছু তো হলো না।

    নানকু একটা সিগারেট বের করল প্যাকেট থেকে। টিনের লাল-নীল রঙা পেট্রল-লাইটার বের করে ফিচিক্ আওয়াজ করে সিগারেটটা ধরাল। তারপর অনেকখানি ধুঁয়ো ছেড়ে বলল, দেখি, আমি কী করতে পারি!

    মুঞ্জরী নানকুর দিকে তাকিয়ে ভাবছিল, নানকুর মতো বিদ্বান, বুদ্ধিমান ও সাহসী ছেলে এ-অঞ্চলের দশটা গাঁয়ে নেই। নেশা করে না নান্‌কু। শুধু সিগারেট খায়। তাই তো এত পয়সা জমাতে পারে। মাইনে তো কয়লাখাদের সকলেই ভালো পায়, কয়লাখাদগুলো সরকার নিয়ে নেওয়ার পর। কিন্তু রোজের দিনেই তার অনেকখানিই উড়ে যায় ভাঁটিখানায়। তার ওপর যেদিন হাট, ওদের মধ্যে অনেকই ভালো-মন্দ কেনে। সেরা জিনিসটা। মোর্গা কেনে। ধার শোধ করে। হপ্তার মাঝামাঝি এসে আবার ধার হয়ে যায়। তবুও বাবুদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যে নানকুয়ারা অনেক কিছু কিনতে পারে আজকাল, একথা ভেবেও ভালো লাগে মুঞ্জরীর। যুগ-যুগান্তর ধরে যে বাবুরাই ওদের চোখের সামনে সবকিছু কিনে নিয়ে গেছে।

    এখন ওদের দিন।

    সরকার এখন ওদের নিয়ে নাকি অনেক ভাবছেন। অনেক আইন-কানুন হচ্ছে নাকি! নানকু বলে, ওরাই ত দেশের নিরানব্বই ভাগ। শহুরে বাবুরা ত এক ভাগও নয়। এই সাঁওতাল, ওরাওঁ, চামার, মুচি, কাহাররা। এই দোসাদ, ভোগতা, মুণ্ডারা। আরো কতো আছে ওদের মতো। ওরা ভালো না-থাকলে, বড়লোক না-হলে দেশ এগোবে কী করে? অনেক নাকি ভালো দিন পড়ে আছে ওদের সামনে। নানকু একদিন বলেছিল যে, মুঞ্জরীর পরেশনাথও স্কুলে লেখাপড়া শিখে কলেজ থেকে পাস করেই কী একটা ইম্‌তেহানে বসলেই নাকি পুলিশ সাহেব, ডি-এফ-ও সাহেব এমনকী ম্যাজিস্টের সাহেবও হয়ে যেতে পারে।

    পরেশনাথটাকে স্কুলে পাঠানো গেল না।

    মুঞ্জরীর চোখের দৃষ্টি বিকেলের রোদের মতো বিধুর হয়ে উঠল। একটা চিফিচিয়া পাখি চিফিচ্ করে ডাকছিল ওদের ঘরের পেছন থেকে।

    আহা! ওদের দু’জনের জীবন তো প্রায় শেষ হয়েই এসেছে। ভালো থাকুক নানকুয়ারা। ভালো থাকুক পরেশনাথ। বড় হোক। বড় কষ্ট ওদের, এতো কষ্ট মা-বাবা হয়ে চোখে দেখা যায় না। ভালো বিয়ে হোক বুলকির। সাবান মাখুক, তেল, মাখুক, রোজ ভাত-রুটি খেতে পাক। সুন্দর ছেলে-মেয়ে হোক। এমন ধুলোর মধ্যে, লজ্জা মধ্যে, খিদের মধ্যে, এমন অবহেলায় হেলাফেলায় যেন পরেশনাথ আর বুলকির ছেলেমেয়েরা বড় না হয়। এই জীবন ত জানোয়ারদের চেয়েও অধম।

    পরেশনাথ আর বুলকির ভবিষ্যৎ-এর কথা ভাবতে ভাবতে নানকুয়ার সামনে মাটিতে ছেঁড়া চাটাই পেতে বসে বাজার দানা থেকে ধুলো বাছছিল মুঞ্জরী কুলোর মধ্যে করে। রোদে পিঠ দিয়ে, আধশোয়া হয়ে।

    এমন সময় হঠাৎ মানিয়াকে আসতে দেখা গেল। মানিয়া বেড়ার পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে, কিন্তু পা-দুটো যেন ঠিক মতন পড়ছে না। ও যেন ভেসে আসছে।

    সোজা হয়ে বসল মুঞ্জরী। চোখের দৃষ্টি রুক্ষ হয়ে উঠল ওর। মানিয়ার সঙ্গে কাঠ নেই। খালি হাত। টাঙ্গিয়া পিঠে টাঙানো

    নানকু বলল, পিয়া হুয়া হ্যায় মালুম হোতা!

    তারপর স্বগতোক্তির মতো বলল, বুঝলে মাসি, নেশাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। আমাদের কাউকেই কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না এই ভাঁটিখানাগুলো। পারলে, আমি কয়লাখাদের বুলডোজার দিয়ে সব ভাঁটিখানা ভেঙে গুঁড়ো করে মাটিতে মিশিয়ে দিতাম। যারা খেতে পায় না, বউকে খাওয়াতে পারে না, ছেলেমেয়েকে খিদের সময় একমুঠো বাজা দিতে পারে না, তাদের নেশা করার কী যুক্তি আছে? বড় খারাপ, বড় খারাপ এসব।

    মুঞ্জরী ছেলেমানুষ নানকুর সামনে মানিয়ার এরকম বেলেল্লাপনা সহ্য করতে পারলো না। ঐ আসছে আর স্বামী, মাতাল, অপদার্থ, নচ্ছার। মানিয়ার দিকে তাকিয়ে ঘেন্নায় মুঞ্জরীর গা রি-রি করতে লাগল। মানিয়া আমগাছটার কাছে এসে পৌঁছেছে, এমন সময় মুঞ্জুরী হাতের কুলোটা মাটিতে ফেলে দিয়ে ঝড়ের মতো দৌড়ে গেল মানিয়ার দিকে। কুলো থেকে বাজরাগুলো সব গড়িয়ে পড়ে ধুলোয় মিশে গেল।

    দূর থেকে মানি তার পরিচিত শাড়ি পরা বউয়ের চেহারাটা দেখতে পেয়েছিল একটা অস্পষ্ট ছবির মতো। ওদের ঘর, আমগাছটা, তেঁতুল গাছটাও। কে যেন বসে আছে চৌপাইতে।

    কে?

    মানিয়া একটা ঘোরের মধ্যে হেঁটে আসছিল। মাথায় বড় ভার।

    এতদিন পরে অনেকবার ঘুরিয়ে মাহাতো তাকে আজ টাকা দিয়েছিল। পনেরো টাকা। যদিও, পাওনা হয়েছিল পঁয়তাল্লিশ। এতগুলো টাকা হাতে পেয়ে বড় আনন্দ হয়েছিল ওর। বড় কষ্টে থাকে মানি। জন্ম থেকেই বড় কষ্ট করেছে। সে-কষ্ট লাঘব করার কোনো ক্ষমতা ওর দুর্বল হাতে নেই। ও জানে, যে-ক’দিন বাঁচবে এমনি করেই মরে মরে বাঁচতে হবে। এই মরে থাকার মধ্যে এক ঘণ্টা, দু-ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার একমাত্র খুশি এই মদ; পচাশী।

    মাহাতোর বাড়ি থেকে সোজা ভাঁটিখানায় গেছিল ও। শুঁড়ি বলেছিল, কী ব্যাপার রে মানিয়া? আজ তো হাটবার নয়?

    মানিয়া বহুবছর বাদে একটু বড়লোকের মতো হেসেছিল।

    আয়না নেই ওর। ওর বড় ইচ্ছে করে বড়লোকের মতো হেসে একদিন আয়নায় দেখে ওকে কেমন দেখায়। হেসেই ও পাঁচ টাকার নোটটা বাড়িয়ে দিয়েছিল শুঁড়ির দিকে। তারপর বাকি টাকা পয়সা ফেরত নিয়ে বোতল দুটো নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা নির্জন জায়গায় এসে বসেছিল, শুকিয়ে-যাওয়া পাহাড়ী নদীর বালিতে। পাথরে পিঠ দিয়ে বসে রোদের মধ্যে আরাম করে আস্তে-আস্তে ছোট-ছোট চুমুকে অনেকক্ষণ ধরে শেষ করেছিল বোতল দুটো। পাখি ডাকছিল জঙ্গলের গভীর থেকে। বুলবুলি, টিয়া, ফিফিচিয়া, পাহাড়ী ময়না। ফিসফিস্ করছিল অস্পষ্ট হাওয়াটা পাতায় পাতায় করাউনির হলুদ ফুলগুলো হাওয়ায় দোলাদুলি করছিল। লজ্জাবতী লতার মতো লতানো সবুজ লতার গায়ে গায়ে লাহেলাওলার লাল ফুলগুলো নড়ছিল আস্তে আস্তে। মানিয়ার নেশাও হচ্ছিল আস্তে আস্তে। ওর মধ্যে কবিত্ব জাগছিল। লাহেলাওয়ার লাল গুটি ধরা ফুলের দিকে চেয়ে হঠাৎ মানিয়ার মনে হলো, ওদের বিয়ের সময় মুণ্ড্রীর বুকের বোঁটার রং এমনি লাল ছিল। এখন কেমন বয়ের ফলের মতো কালো, দড়কচ্চা মেরে গেছে। সব ওরই দোষ। ও মরদ নয়। আওরাতকে যত্নে রাখতে পারেনি মানিয়া! একজোড়া রাজঘুঘু, বড় পাণ্ডুক এসে বসল সামনের পন্ননের ডালে। ঘুঘুর বুক কী রকম নরম, পেলব। মুঠি করে ধরতে কী আরাম। সারা গা গরম হয়ে ওঠে। কী যেন একটা মনে করতে চাইলো, ঘুঘুর বুকের সমতুল্য। মনে পড়ল না ঘুম ঘুম পেতে লাগল ওর। ঐ রোদে বসে নেশা যেমনই চড়তে লাগল, তেমনই মানিয়ার মনে হতে লাগল, এই জঙ্গলেরই উল্টো-পিঠের পাহাড়ে এখন তার সাত বছরের ছোট ছেলে একটা শুকনো মকাই খুঁটে খাচ্ছে গাই-বয়েলের মধ্যে বসে। সারাদিন, সকাল থেকে সূর্যাস্ত অবধি ও পাহাড়েই থাকবে, পঁচিশ নয়া পয়সার জন্যে! আর মানিয়া? সেই ছোট্ট পরেশনাথের বাপ? যে কিনা পাঁচ টাকার মদ কিনে একা একা গিলেছে চোরের মতো! ওদের কারোই জামা নেই গায়ে দেওয়ার। বুলকিটা বড় হচ্ছে। মুঞ্জরী লজ্জায় বাইরে বেরোতে পারে না। আর সে? পাঁচ টাকার পচাশী মদ গিলল!

    না, না! বড় খারাপ রে মানিয়া, তুই বড় খারাপ। নিজেকে বলেছিল ও।

    ফেরার সময় নিজের হুঁশে পথ চলে নি। সন্ধেবেলায় গোরু যেমন পথ চিনে গ্রামে ফেরে, গুলিখাওয়া জানোয়ার যেমন অর্ধচেতন অবস্থায় নিজের গুহায় ফেরে; ও তেমন করে নিজের বাড়ির দিকে ফিরে আসছিল।

    মুণ্ড্রী বাঁ-হাতে মানিয়ার চুলগুলো মুঠিতে ধরে ডান হাতে ধপধপ্ করে মুখে, পিঠে, বুকে বেদম মার মারতে লাগল।

    নানকুয়া ভাবছিল, একটু মার খাক। মার খাওয়া দরকার। তারপর ছাড়াবে মানিয়াকে। কিন্তু ইতিমধ্যে বুলকি কোথা থেকে দৌড়ে এলো। ওর আঁচল উড়ছিল হাওয়ায়। মা, মা, মা! কী করছ—বলতে বলতে বুলকি ওর বাবাকে আড়াল করে দাঁড়াল। জোরে বলল, মা, তুমি কী করছ?

    মুঞ্জুরীকে রাক্ষুসীর মতো দেখাচ্ছিল। শনের মতো রুক্ষ চুল উড়ছিল বাতাসে। ও বলল, ছুঁড়ি! তোকে জবাবদিহি করতে হবে? ঠাস্ করে এক চড় বসালো মুঞ্জরী বুলকিকে! পাঁচটা আঙুলের দাগ বসে গেল মেয়েটার নরম গালে। এক ধাক্কা মেরে বুলকিকে মাটিতে ফেলে, মানিয়ার পকেট থেকে টাকা-পয়সা সব কেড়ে নিয়ে নিজের আঁচলে আগে বাঁধল, তারপর এক ঠেলা দিলো মানিয়াকে। মুঞ্জরী এতক্ষণ তার চুল ধরে ছিল বলে পড়েনি। এবার ঠেলা খেয়েই মানিয়া দু-পা ছড়িয়ে অসহায় ও হাস্যোদ্দীপক ভঙ্গিতে মাটিতে পড়ে গেল। পড়ে গিয়েই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল।

    নানকুয়া গিয়ে ওকে হাত ধরে তুলল। তুলে এনে চৌপাইতে বসালো।

    তারপর নরম গলায় বলল, কেন এরকম করিস মেসো। কেন খাস?

    মানিয়ার দু-চোখে জল গড়িয়ে পড়ছিল গাল বেয়ে।

    মানিয়া জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, দ্যাখ্ নানকুয়া, সে-সব অনেক কথা। তুই ছেলেমানুষ; তুই বুঝবি না। তারপর নানকুর মুখের সামনে ডান হাতের তর্জনী নাড়াতে নাড়াতে, বারবার একই কথা বলে চলল, বড় দুঃখে খাই রে নানকু, বড় দুঃখে খাই; আমার অনেক দুঃখ। বড় দুঃখে খাই। একটা হেঁচকি তুলল মানিয়া। আবারও হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল।

    নানকুয়া রাগের সঙ্গে বলল, তোমার দুঃখ জীবনেও ঘুচবে না। আমার কী? যত খুশি খাও। শরম বলে কিছু কি নেই তোমার?

    মুঞ্জরী ঘরের অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নানকুর কথা শুনে দেওয়ালে মাথা হেলালো মুঞ্জরী। নিচের দাঁত দিয়ে ওপরের ঠোঁটটাকে জোরে কামড়ে ধরল ও। ঝরঝর করে কাঁদতে লাগল নিঃশব্দে। লোনা জলে ওর মুখ বুক ভিজে যেতে লাগল। পাছে মুখ ফুটে কোনো শব্দ বেরোয়, তাই ও ঠোঁট কামড়ে রইল। নানকু ছেলেমানুষ। ভাবল মুঞ্জরী। নিরুচ্চারে বলল, তুই অনেক বুঝিস্, কিন্তু সব বুঝিস্ না। তুই এখন বড়লোক। অন্যরকম। তুই আমাদের কথা, এই হতভাগ্য স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা কতটুকু বুঝিস্ রে ছোঁড়া?

    যে-হাতে মানিয়াকে মেরেছিল, সেই ডান হাতটা হঠাৎ জোরে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল মুঞ্জরী।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঋজুদা সমগ্ৰ ৫ – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article লবঙ্গীর জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }