Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গুহামানবী – আফজাল হোসেন

    লেখক এক পাতা গল্প231 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রহস্যময়ী রমণী

    বিখ্যাত ইংরেজ লেখক চার্লস ডিকেন্সের ভূতের গল্পের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল, কোথাও কোনো ঘটনা বা কাহিনি শুনলে সেটা ছাপবার সুযোগ তিনি ছাড়তেন না। ‘অল দ্য ইয়ার রাউন্ড’ নামে যে পত্রিকার তিনি সম্পাদক ছিলেন, সেটায় তাঁর পরিচিত একজনের মুখে শোনা এমন একটা ভূতের গল্প তিনি ছেপেছিলেন। কিছুদিন পরে এক শিল্পীর কাছ থেকে ওই কাহিনিরই বিশদ বিবরণ তিনি পেয়েছিলেন। ওই শিল্পীর নাম মি হিফি, তিনি ডিকেন্সকে লিখেছিলেন ওটা সত্য ঘটনা, তাঁর জীবনেই ঘটেছিল এবং তিনি পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়ে একথা বলছেন। ডিকেন্স তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মি হিফি যেমন বলেছিলেন তেমনভাবে ওই কাহিনি আবার ছেপেছিলেন। এই কাহিনি সম্বন্ধে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘অনন্যসাধারণ, আমি যা ছেপেছি তার থেকে এত আলাদা যে, এই ধরনের অন্য সব গল্প এর কাছে ম্লান হয়ে যায়।’ [So very extraordinary, so very far beyond the version I have published, that all other like stories turn pale before it.]

    মি হিপির কাহিনি।

    আমি একজন শিল্পী। বছর কয়েক আগে, এক সকালে আমি আমার স্টুডিয়োতে কাজ করছিলাম এমন সময় এক বন্ধু গল্প করার জন্য ওখানে আসে। আমি তাকে দেখে খুশিই হয়েছিলাম, দুপুরের খাওয়াটা আমার সঙ্গেই সারতে বলেছিলাম। সে এককথাতেই রাজি হয়েছিল। আমরা যখন কথা বলছিলাম, একজন তরুণী স্টুডিয়োতে এল, আমিই সেদিন তাকে আসতে বলেছিলাম আমার ছবির মডেল হবার জন্য। আমি তাকে পরের দিন আসতে বললাম। মেয়েটি চলে গেল, কিন্তু একটু পরেই ফিরে এল। একটু ইতস্তত করে বলল, আমি কিছু টাকা আগাম দিতে পারব কি না। আমি টাকা দিতেই সে খুশি মনে চলে গেল। আমরা গল্প শুরু করলাম। কিন্তু আবার বাধা এল। এবার যাঁরা এলেন তাঁরা আমার অপরিচিত।

    তাঁরা তাঁদের পরিচয় দিলেন। মি এবং মিসেস কার্কবেক, ইয়র্কশায়ারে বাড়ি। অমায়িক সচ্ছল এক মাঝবয়সি দম্পতি। স্বভাবতই কৌতূহলী হয়ে আমার খোঁজ তাঁরা কোথায় পেলেন তা জিজ্ঞেস করলাম। মি কার্কবেক জবাবে বললেন আমার নাম তাঁরা আগেই শুনেছেন, কিন্তু ঠিকানা তাঁদের মনে ছিল না। একটু আগে রাস্তায় আমার মডেলের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে বাড়িটা চিনিয়ে দিয়েছে। আমার আঁকা একটা আলেখ্য তাঁদের খুব ভালো লেগেছিল— তাঁর পল্লিভবনে গিয়ে আমি তাঁদের পরিবারের সকলের ছবি আঁকতে রাজি আছি কি না সেটাই জানতে তাঁরা এসেছেন। এমন একটা কাজের সুযোগ পেয়ে মনে মনে আমি খুশিই হলাম, একটু চড়িয়েই মজুরি হাঁকলাম। তাঁরা তাতেই রাজি হয়ে গেলেন। ঠিক হল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমি ওখানে গিয়ে কাজ শুরু করব। মি কার্কবেক তাঁর নাম লেখা কার্ড আমাকে দিলেন, তারপর বিদায় নিলেন। আমার বন্ধুটিও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল।

    আমি মি কার্কবেকের কার্ডে এবার ভালো করে চোখ বুলোলাম। তাড়াতাড়িতে আমি খেয়াল করিনি, কার্ডে ভদ্রলোকের শুধু নামই আছে, ঠিকানা নেই। আমি ভাবলাম মি কার্কবেক তাঁর ভুল বুঝতে পেরে নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি কার্ডটা দেরাজে রেখে দিলাম।

    সেপ্টেম্বর এল, কিন্তু কার্কবেকদের কাছ থেকে কোনো চিঠি না পেয়ে আমি লন্ডনের উত্তর শহরতলিতে একটা ধারাবাহিক রঙিন ছবির কাজ পেয়ে চলে গেলাম। মাসের শেষের দিকে ইয়র্কশায়ার আর লিঙ্কনশায়ারের ধার ঘেঁষা এক পল্লিভবনে আমি রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। আরও কিছু অভ্যাগত ওখানে ছিলেন। খাবার টেবিলে কথাবার্তার সময় কার্কবেক নামটা আমার কানে এল। আমার প্রশ্নের জবাবে একজন বললেন কার্কবেকরা ওখানকার স্থানীয় লোক নন, তাঁরা থাকেন ছোট্ট শহর ‘এ’-ত, ওই জেলার অপরপ্রান্তে।

    আমি মি কার্কবেককে সব খুলে একটা চিঠি লিখলাম। প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই জবাব এসে গেল। তিনি তাঁর ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ফেরার পথে তাঁদের ওখানে আমাকে যেতে লিখলেন। আমি ঠিক করলাম পরের শনিবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করব, সপ্তাহের শেষ দুটো দিন ওখানে কাটিয়ে লন্ডন ফিরে যাব। সেখানে কাজকর্ম সেরে দিন পনেরো পরে লিঙ্কনশায়ারে এসে কাজে হাত দেব।

    শনিবার সকালে সেই উদ্দেশ্যে আমি ইয়র্ক-লন্ডন ট্রেনে চাপলাম, রেটফোর্ড জংশনে ট্রেন বদল করব। সেদিন ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন, স্যাঁৎসেঁতে বিচ্ছিরি একটা দিন। আমার কামরায় আর কেউ ছিল না, ডনকাস্টারে একজন মহিলা কামরায় এলেন। তিনি এক কোনায় জানলার সামনে বসলেন। গায়ের ঢিলে কোটটা খুলে তিনি ভাঁজ করলেন, পোশাক একটু টেনেটুনে নিলেন, সব শেষে টুপির সঙ্গে আটকানো জালের যে আবরণে তাঁর মুখ ঢাকা ছিল সেটা তিনি তুলে দিলেন। এবার তাঁর মুখ দেখতে পেলাম। বয়স বাইশের বেশি নয়। সোনালি চুল, সেই তুলনায় ভুরু আর চোখের মণি বেশ কালো। আয়ত, ভাবপূর্ণ দুটি চোখ— হরিণীনয়না। মুখের আদল মিষ্টি কিন্তু দৃঢ়তাব্যঞ্জক। সুস্বাস্থ্যের ঔজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছিল গায়ের রঙে। প্রকৃত অর্থে সুন্দরী না হলেও বেশ একটা আলগা শ্রী আমার শিল্পীর চোখ ফাঁকি দিতে পারল না।

    গুছিয়ে বসে মহিলা আমার কাছ থেকে ব্র্যাডশ’-টা চাইলেন, লন্ডন থেকে ইয়র্কশায়ারে যে ট্রেনগুলি যায় তা আমাকে দেখে দিতে অনুরোধ করলেন। এর পর আমরা নানান কথায় মেতে উঠলাম, মহিলা বেশ সহজভাবেই আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, কোনো সংকোচ বা জড়তা ছিল না। আমার সম্বন্ধেও মহিলা এমন সব কথা জানেন যাতে আমি অবাকই হলাম। যাই হোক অতটা পথের একঘেয়েমি কেটে গেল।

    রেটফোর্ড জংশনে গাড়ি থামতেই আমি নামবার জন্য উঠে দাঁড়ালাম, মহিলার কাছে বিদায় চাইলাম। তিনি দস্তানা পরা ডান হাতটা করমর্দনের জন্য বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমাদের আবার দেখা হবে। আমি জবাবে সত্যি কথাই বললাম, ‘আমিও তাই আশা করি।’

    কার্কবেকদের বাড়ি পৌঁছে আমি আমার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে সুটকেস খুলে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলাম, তারপর রাতের খাবারের জন্য তৈরি হয়ে সাতটার আগেই নেমে এলাম বসবার ঘরে। খানসামা আমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল সাতটা হল কার্কবেকদের রাতের খাবারের সময়। বসবার ঘরের সব আলো তখনও জ্বালানো হয়নি কিন্তু আগুনচুল্লির গনগনে আগুনে ঘরের আনাচকানাচ পর্যন্ত উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। সেই আগুনচুল্লির সামনে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর গায়ের পোশাক কালো, আমার দিকে পেছন ফিরে থাকায় আমি তাঁর মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন আর আমার বিস্ময়ের যেন অন্ত রইল না। মহিলা রেলের কামরায় আমার যাত্রাসঙ্গিনী। মৃদু হেসে তিনি বললেন, ‘বলেছিলাম না, আমাদের আবার দেখা হবে।’

    আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোল না। আমি তাঁকে লন্ডনগামী গাড়িতে বিদায় জানিয়েছি, গাড়ি ছাড়তেও দেখেছি। একমাত্র হতে পারে তিনি পিটারবারোতে নেমে কোনো ব্রাঞ্চ লাইনের ফিরতি গাড়িতে এখানে এসেছেন। একটু ধাতস্থ হয়ে আমি বললাম, ‘আমি যদি আপনার সঙ্গে একই গাড়িতে আসতে পারতাম তবে বেশ হত।’

    ‘সেটা বোধ হয় আপনার পক্ষে সম্ভব ছিল না।’ ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন।

    এই সময় একজন কাজের লোক বাতিদান নিয়ে ঘরে এল। টেবিলের ওপর আলো রেখে সে বলল মি কার্কবেক একটু পরেই নীচে নামবেন। মহিলা অলসভাবে একটা টেবিলের সামনে গিয়ে খোদাই কাজের একটা বই হাতে তুলে নিলেন, তারপর আমার দিকে ওটা এগিয়ে ধরে বললেন, ‘লেডি ”অ”র ছবিটা দেখুন, বলুন তো আমার সঙ্গে চেহারার মিল আছে কি না!’

    আমি ছবিটা দেখছিলাম এমন সময় মি আর মিসেস কার্কবেক ঘরে ঢুকলেন, নৈশভোজের জন্য আমাকে নিয়ে চললেন ডাইনিং হলে।

    খাবার টেবিলের মাথায় বসে ছিলেন মি কার্কবেক, তাঁর উলটোদিকে মিসেস কার্কবেক। আমি আর ওই মহিলা টেবিলের একপাশে বসেছিলাম, তবে মুখোমুখি। আমি অতিথি তাই ভদ্রতার খাতিরে গৃহকর্তা আর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেই যেটুকু কথা বলা দরকার তাই বললাম। বসবার ঘর থেকেই ওই মহিলার প্রতি তাঁদের সামান্য অবহেলার ভাব লক্ষ করে আমি ভেবেছিলাম তিনি বোধ হয় ছেলেমেয়েদের গভর্নেস। তিনি কিন্তু বেশ তৃপ্তির সঙ্গে খাচ্ছিলেন, বোধ হয় পথশ্রান্তিতে খিদেটাও চনমনে হয়ে উঠেছিল।

    ডিনার শেষ হবার পর আমরা বসবার ঘরে ফিরে এলাম। ইতিমধ্যে অনেকেই ওখানে এসে পড়েছেন। মি কার্কবেকের অন্যান্য ভাই এবং ভগ্নীপতিদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। কার্কবেকদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাদের গভর্নেসও সেখানে ছিল সুতরাং রেলগাড়ির কামরায় আমার সঙ্গে যার আলাপ হয়েছিল সেই রহস্যময়ী মহিলা যে গভর্নেস নন সে-বিষয়ে নিশ্চিত হলাম। তাঁর সঙ্গে আবার আমার কথা হল। তিনি আলোচনার রেশ ধরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি তাঁর আলেখ্য আঁকতে পারব কি না। জবাবে আমি বললাম সুযোগ পেলে পারব বলেই মনে হয়। তিনি তখন আমাকে ভালো করে তাঁর মুখ দেখতে বললেন।

    ‘আপনার কি মনে হয় আমার মুখ মনে করে রাখতে পারবেন?’

    ‘আমি ইচ্ছে করলেও আপনার মুখ ভুলতে পারব না,’ আমি জবাব দিলাম।

    ‘আপনি একথাই বলবেন আমি আশা করেছিলাম— কিন্তু সত্যি করে বলুন তো, মন থেকে আমার ছবি আঁকতে পারবেন?’

    ‘আমি চেষ্টা করতে পারি,’ আমি জবাব দিয়েছিলাম, ‘কিন্তু যার ছবি আমি আঁকব সে আমার সামনে বসে থাকবে সেটাই আমি পছন্দ করব।’ মহিলা কিন্তু বললেন তা সম্ভব নয়। তারপরই ক্লান্তির অজুহাতে আমাকে শুভরাত্রি জানিয়ে তিনি চলে গেলেন।

    পরদিন সকালে প্রাতরাশের সময় তাঁকে আমি দেখলাম না। সেদিন আমাকে নিয়ে কার্কবেকরা গির্জায় গেলেন, দুপুরে খাওয়ার সময় আমরা ফিরলাম। এভাবেই দিনটা কেটে গেল কিন্তু ওই মহিলার দেখা আর পেলাম না। হয়তো মহিলা এই পরিবারের কোনো আত্মীয়া, এসেছিলেন আবার চলে গেছেন। পরদিন সকালে যে কাজের লোকটি আমার ঘর গুছোতে এল, তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম শনিবার সন্ধেবেলা যে মহিলা আমাদের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তিনি কে।

    ‘মহিলা?’ লোকটি জবাব দিল, ‘মিসেস কার্কবেক ছাড়া আর কোনো মহিলা তো ছিল না।’

    ‘হ্যাঁ, ছিলেন, আমার মুখোমুখি বসেছিলেন, তাঁর গায়ে ছিল কালো পোশাক। শনিবার আমি যখন নীচে নেমে এসেছিলাম তখনও বসবার ঘরে তিনি ছিলেন।’

    লোকটি আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন আমার মাথার সুস্থতা সম্বন্ধে তার সন্দেহ জেগেছে। ‘আমি কোনো মহিলাকে দেখিনি,’ সে সাফ জবাব দিল।

    আমি ঠিক করলাম কার্কবেকদের জিজ্ঞেস করে এই রহস্যের সমাধান করব। কিন্তু তাঁরাও যখন বললেন শনিবার খাবার টেবিলে চতুর্থ কেউ ছিল না, আমি হতবুদ্ধি হয়ে পড়লাম। আমি যে বিবরণ দিলাম তেমন কোনো মহিলাকে তাঁরা মনে করতেও পারলেন না।

    কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। ছবি আঁকার সূত্রে আমি আর একবার কার্কবেকদের ওখানে গিয়েছিলাম। বড়োদিনের সময় আমি লন্ডনে আমার বসবার ঘরে বসে একটা চিঠি লিখছিলাম। দরজার দিকে পেছন ফিরে আমি বসে ছিলাম। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কেউ যেন দরজা দিয়ে ভেতরে এসে আমার পাশে দাঁড়াল। আমি ফিরে তাকালাম, রেলের কামরায় আমার পরিচিতা সেই মহিলা, গায়ে কালো পোশাক।

    আমার চমকে ওঠার ভাবটা নিশ্চয়ই তিনি লক্ষ করেছিলেন, কারণ বিনা অনুমতিতে ঘরে ঢুকে আমাকে বিরক্ত করার জন্য তিনি ক্ষমা চাইলেন। এবার তাঁকে অনেকটা যেন গম্ভীর মনে হল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি তাঁর ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি কি না। আমি না বলাতে তিনি যেন দুঃখিত হলেন, বললেন তাঁর বাবার জন্যই তিনি নিজের একটা ছবি আঁকাতে চাইছেন, বাবাকে উপহার দেবেন। তিনি একটা ছবি আমাকে দিলেন, বললেন, ওটাতে হয়তো আমার সুবিধে হবে কারণ তাঁর চেহারার সঙ্গে ওই ছবির মিল আছে। তারপরই তিনি অনুনয়ের কণ্ঠে বললেন, ‘আপনি যদি এটা করেন, আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব— বিশ্বাস করুন এই ছবির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

    আমি চট করে পেনসিল আর আমার আঁকার খাতাটা টেনে নিলাম, ঘরে যে অল্প আলো ছিল তাতে চটপট করে তার চেহারার একটা নকশা করতে লাগলাম। কিন্তু সেটা চোখে পড়তেই মহিলা এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে সাহায্য করার বদলে সারা ঘরে ঘুরে আমার আঁকা ছবিগুলো দেখতে লাগলেন। যা হোক তার মধ্যেই আমি মোটামুটি তাঁর মুখের ভঙ্গিমার দুটো স্কেচ এঁকে নিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম উনি হঠাৎ যেমন এসেছেন, হঠাৎই তেমন চলে যেতে চাইছেন। আমার ধারণাই ঠিক। করমর্দনের বদলে আমার ডান হাতটা তাঁর দু-মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে তিনি বললেন, ‘বিদায়।’ আমি তাঁকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। আমার মনে হল তিনি যেন অন্ধকারে ছায়ার মতো মিলিয়ে গেলেন। ভাবলাম আমারই মনের ভুল।

    আমার কাজের মেয়েটিকে ডেকে আমি একটু বকলাম। কেউ যে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, সেই খবরটা কেন সে আগে আমাকে দেয়নি। কিন্তু মেয়েটি বলল কেউ যে এসেছিল এটা সে জানেই না। আধঘণ্টা আগে সে সদর দরজা খুলে দোকানে গিয়েছিল, নিশ্চয়ই তখন দরজা খোলা পেয়ে কেউ এসেছিল।

    বড়োদিনের উৎসবের পর আমি আবার কাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। একদিন সন্ধ্যায় আমার স্ট্যাফোর্ড যাবার কথা, কিন্তু লিচফিল্ড-এ আমি আটকা পড়লাম, কারণ স্ট্যাফোর্ড-এ যাবার আর কোনো গাড়ি ছিল না। রাতটা আমাকে ওখানকার সোয়ান হোটলেই কাটাতে হবে। আমার পক্ষে ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর কারণ কোনো পল্লি অঞ্চলের হোটেলে রাত কাটাতে আমি মোটেই পছন্দ করি না। এসব হোটেলে রাতে যে খাবার দেয় তার চাইতে উপোস দেওয়া ভালো। সময় কাটাবার মতো বই পাওয়া যায় না, স্থানীয় সংবাদপত্র যা আছে তা মোটেই মন কাড়ে না। এমন অবস্থায় পড়লে আমি সাধারণত চিঠিপত্র লিখে সময় কাটায়।

    লিচফিল্ড-এ এই আমার প্রথম আসা। কিন্তু আমার মনে পড়ল দু-দু-বার এখানে আমার আসার কথা হয়েছিল। একবার একটা ছবি আঁকবার চুক্তি নিয়ে আর অন্যবার একটা ছবির ব্যাপারে কিছু উপাদান জোগাড় করতে। ‘কী আশ্চর্য!’ আমি মনে মনে ভাবলাম ‘দৈবাৎ আজ আমি লিচফিল্ড-এ অথচ দু-দু-বার আমি এখানে আসব বলে সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে আমার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গিয়েছিল।’ আমার মনে পড়ল লিচফিল্ড-এ আমার পরিচিত একজন আছে। আমি ভাবলাম তাকে খবর পাঠালে সে আসবে, ঘণ্টা দু-এক তার সঙ্গে গল্প করে কাটানো যাবে। আমি হোটেলের একজন পরিচারিকাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম গির্জার কাছে মি লিউট নামে আমার পরিচিত একজন থাকতেন, তিনি এখনও সেখানে আছেন কি না। পরিচারিকা বলল আমি একটা চিঠি দিলে সে ওই ভদ্রলোকের কাছে তা পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবে। আমি একটা চিরকুট লিখে তার হাতে দিলাম।

    মিনিট কুড়ি পরে প্রৌঢ় এক ভদ্রলোক আমার ঘরে এলেন, আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত কিন্তু তাঁর হাতে আমার চিরকুট। ভদ্রলোক বললেন আমি বোধ হয় ভুল করে চিঠিটা পাঠিয়েছি কারণ তিনি আমার নাম আগে শোনেননি।

    ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত,’ আমি বললাম, ‘লিচফিল্ড-এ তবে নিশ্চয়ই আরেকজন মি লিউট আছেন।’

    ‘না,’ তিনি জবাব দিলেন, ‘ও নামে এখানে একমাত্র আমিই আছি।’

    ‘এ তো বড়ো অদ্ভুত ব্যাপার!’ আমি বললাম, ‘আমার বন্ধু আমাকে ঠিক ঠিকানাই দিয়েছিল, আমি সেই ঠিকানায় আগে চিঠিও লিখেছি। তার চেহারা…মানে সুপুরুষ যুবক…দুর্ঘটনায় কাকার মৃত্যুর পর সে এখানে তার সম্পত্তির মালিক হয়েছিল…বছর দুই আগে মিস ফেয়ারবার্ন নামে একজন তরুণীকে সে বিয়ে করেছে।’

    ‘ও, আচ্ছা, এবার বুঝতে পেরেছি আপনি কার কথা বলছেন,’ আগন্তুক বললেন, ‘আপনি মি ক্লাইমের কথা বলছেন তো, তিনি কিছুদিন হল এখান থেকে চলে গেছেন।’

    লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল। সত্যিই তো আমার বন্ধুর নাম ক্লাইম…লিউট নামটা আমার মনে এল কেন? কেনই-বা আমি ভেবেছিলাম একজন মি লিউট গির্জার খুব কাছেই থাকেন। আমি ক্ষমা চাইতে গিয়ে তোতলাতে শুরু করলাম, কিন্তু ভদ্রলোক আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘ক্ষমা চাইবার দরকার নেই। আপনাকে আমার ভীষণ দরকার।’

    ‘আমাকে—?’

    ‘হ্যাঁ, আপনি একজন চিত্রকর, আমি আপনাকে দিয়ে আমার মেয়ের একটা রঙিন ছবি আঁকাতে চাই। আপনি অনুগ্রহ করে আমার বাড়ি চলুন।’

    আমি ইতস্তত করছিলাম কিন্তু ভদ্রলোকের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি না হয়ে পারলাম না। অন্তত ওই হোটেলের অখাদ্য খাবারের হাত থেকে তো রেহাই পাওয়া যাবে। আমি জিনিসপত্র গুছিয়ে তাঁর সঙ্গী হলাম।

    তাঁর বাড়ি পৌঁছুতেই বছর পনেরোর একটি মিষ্টি মেয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। মি লিউট পরিচয় করিয়ে দিলেন, তাঁর মেয়ে, মারিয়া। মেয়েটি বেশ ধীর, স্থির, অল্প বয়সে মাতৃহারা হলে যেমন তাড়াতাড়ি আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে অনেকটা তেমন। মি লিউট মেয়েকে আমার আসার কারণ সম্বন্ধে কিছু বললেন না, মেয়েকে আমার জন্য একটা ঘর ঠিক করতে বলে ওপরে চলে গেলেন। মারিয়া সেই ব্যবস্থা করতে গেল। একটু পরেই সে ফিরে এসে বলল তার বাবার শরীর খারাপ লাগছে, আজ আর নীচে নামবেন না। আমি ইচ্ছে করলে তার সঙ্গে বসবার ঘরে গল্প করতে পারি। একটু পরেই ডাক্তারবাবু তার বাবাকে দেখতে আসবেন, তাঁর সঙ্গেও কিছুক্ষণ কথাবার্তায় সময় কাটবে।

    মেয়েটির গিন্নিপনায় আমি মনে মনে কৌতুক অনুভব করলাম। বসবার ঘরে আগুনচুল্লির পাশে বেশ আরাম করে বসা গেল, মারিয়াও চেয়ার টেনে বসল, ওর কথাবার্তা আমার খুব ভালো লাগছিল। আমার আসার কারণ সম্বন্ধে স্বভাবতই ওর কৌতূহল ও চেপে রাখতে পারল না। আমি বললাম ওর ছবি আঁকার জন্যই আমি এসেছি।

    আমার কথা শুনে মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, কপালে ফুটে উঠল চিন্তার রেখা।

    ‘আমার ছবি আঁকার জন্য বাবা আপনাকে আনেননি,’ ও বলল, ‘আমার দিদির।’

    ‘তবে তার সঙ্গে আলাপের জন্য আমি অপেক্ষা করব।’ আমি বললাম।

    ‘সেটা সম্ভব নয়, আমার দিদি বেঁচে নেই— মাস কয়েক হল দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। বাবা সেই শোকের ধাক্কা কিছুতেই সামলে উঠতে পারেননি, এখন খুব ইচ্ছে দিদির একটা ছবি করাবেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় দিদির কোনো ছবি নেই। যদি থাকত তবে বাবার এমন অবস্থা হয়তো হত না…আসলে বাবার মাথাটা…’

    মারিয়া একটু ইতস্তত করল, তারপর কিছু বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। নিজেকে সামলে সে আবার বলল

    ‘আপনাকে লুকিয়ে লাভ নেই। বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে— আমার দিদি ক্যারলিনের মৃত্যুর পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে। বলেন, প্রায়ই নাকি তিনি দিদিকে দেখেন। ডাক্তারবাবু ঠিক বলতে পারছেন না কতটা খারাপ আরও হতে পারে, তবে আমরা ছুরি, কাঁচি, ক্ষুর এসব তাঁর নাগালের বাইরে রাখছি। আশা করি বাবা কাল আপনার সঙ্গে কথা বলার মতো সুস্থ থাকবেন।’

    আমি জিজ্ঞেস করলাম ওর দিদির চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্য আছে এমন কোনো ছবি বা নকশা আছে কি না, যা দেখে আমি কাজ শুরু করতে পারি। না, কিছুই নেই। দিদির চেহারার স্পষ্ট একটা ধারণা ও আমাকে দিতে পারবে কি? মারিয়া বলল তা বোধ হয় পারবে— ওর মনে পড়ছে দিদির মতো অনেকটা দেখতে এমন একজনের একটা ছবি বাড়িতেই কোথাও আছে।

    এই পরিস্থিতিতে কারো অবিকল প্রতিকৃতি আঁকতে পারব এমন আশা আমি করতে পারলাম না। আগেও আমি শুধু বর্ণনা থেকে ছবি এঁকেছি, কিন্তু সেখানে বর্ণনা ছিল আরও ব্যাপক, তা সত্ত্বেও সেই ছবি আমার মনঃপূত হয়নি।

    ডাক্তারবাবু এসেছিলেন কিন্তু তার আগেই আমি শুয়ে পড়েছিলাম। পরদিন সকালে আমি শুনে খুশি হলাম যে, মি লিউট অনেকটা ভালো আছেন। তিনি নাকি এমন আশা প্রকাশ করেছেন যে, কোনো কিছু অসুবিধেই তাঁর মেয়ের প্রতিকৃতি আঁকা থেকে আমাকে নিবৃত্ত করবে না। সকালের জলখাবার খেয়েই মারিয়া আমাকে যে বর্ণনা দিয়েছিল সেটা মাথায় রেখে আমি কাজে বসলাম। বার বার চেষ্টা করেও আমি একটা জুতসই প্রতিকৃতি দাঁড় করাতে পারলাম না। আমার আঁকা ছবির সঙ্গে ক্যারলিনের চেহারার মিল আছে, মারিয়া বলল, কিন্তু মুখের ভাব বা অভিব্যক্তি মিলছে না। প্রায় সারাদিন আমি খাটলাম কিন্তু ফল কিছু ভালো হল না। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আমার আঁকা স্কেচগুলো ওপরে মি লিউটের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কিন্তু প্রতিবারেই তিনি বলে পাঠাচ্ছিলেন, হয়নি। দিনের শেষে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। মারিয়া খুব দুঃখ প্রকাশ করল। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তার জন্য সে কৃতজ্ঞ। দিদির চেহারার ঠিক বর্ণনা দিতে পারেনি বলে তার যেন অনুতাপের শেষ নেই। এমনকী তার দিদির মতো অবিকল দেখতে এক মহিলার ছবি তার কাছে ছিল, সেটাও গত তিন সপ্তাহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি সেই মহিলার নাম জিজ্ঞেস করলাম, যদি লন্ডনে খোঁজ করে তার ছবির সন্ধান পাই। মারিয়া জবাব দিল, লেডি মেরি ‘অ’। সঙ্গেসঙ্গে আমার মাথায় সব চিন্তা এসে জড়ো হতে লাগল। আমি একছুটে ওপরে গিয়ে আমার আঁকার খাতাটা নিয়ে এলাম। ওঠার মধ্যে আমার আঁকা সেই কালো পোশাক পরা মহিলার নকশা দুটো ছিল, আর ছিল সেই মহিলার ছবি যেটা সেই রহস্যময়ী মহিলা আমার বসবার ঘরে আমাকে দিয়েছিলেন। মারিয়াকে ওগুলো দেখাতেই সে এক মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর আমার আঁকা নকশা দুটি আর ওই ছবিটার দিকে বার বার তাকাতে লাগল। আমার দিকে আবার যখন সে তাকাল, আমি লক্ষ করলাম তার দু-চোখে ফুটে উঠেছে কেমন একটা ভয়ের চিহ্ন। ‘এগুলো আপনি কোথায় পেলেন?’ মারিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘বাবাকে আমি দেখিয়ে নিয়ে আসছি।’

    প্রায় দশ মিনিট পরে মারিয়া ফিরে এল, কিন্তু সে একা নয়, তার বাবাও সঙ্গে এসেছেন। গতরাতে আমি তাঁকে যা দেখেছিলাম তার চাইতে এখনকার চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা। কোনো ভূমিকা ছাড়া তিনি বললেন

    ‘আমার কোনো ভুল হয়নি। আপনাকেই আমি ক্যারলিনের সঙ্গে দেখেছিলাম। আর এই নকশা দুটো আমার সেই মেয়ের ছাড়া আর কারো নয়। আমার যা কিছু আছে সব চাইতেও এই নকশা দুটো আমার কাছে বেশি মূল্যবান, একমাত্র আমার এই আদরের মেয়েটি ছাড়া’, তিনি মেয়ের গলা জড়িয়ে ধরলেন। মারিয়া খুশি হলেও একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। আমার ছবি আঁকার খাতায় যে মহিলার ছবিটা ছিল সেটাই যে সপ্তাহ তিনেক আগে তার অ্যালবাম থেকে কেউ খুলে নিয়েছে সে-বিষয়ে তার মনে কোনো সন্দেহ নেই— ছবিটার পেছনে যে আঠার ছাপ ছিল তা অ্যালবামের একটা পাতার শূন্য জায়গায় আঠার ছাপের সঙ্গে হুবহু মিলে গেল। এর চাইতে আর প্রমাণ কী চাই!

    আমি আমার আঁকা নকশা থেকেই একটা তেলরঙের ছবি শুরু করলাম। মি লিউক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার পাশে বসে আমাকে উৎসাহ দিতেন, তাঁর কথাবার্তার মধ্যে অসংলগ্নতার কোনো লক্ষণই আমার চোখে পড়েনি, বরং তাঁকে বেশ উৎফুল্লই মনে হত আমার।

    বড়োমেয়ের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি গির্জায় উপাসনায় যোগ দিতে গেলেন। তার পরদিন তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বেড়াতে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি আমাকে যে বিচিত্র কাহিনি বলেছিলেন সেটা তাঁর কথাতেই বলা যাক।

    ‘লিচফিল্ড-এর হোটেল থেকে আপনি আমাকে যে চিরকুট পাঠিয়েছিলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। আপনাকে দেখামাত্র আমি চিনতে পেরেছিলাম। মারিয়া, ডাক্তার আর বাকি সবাই ধরেই নিয়েছিল ক্যারলিনের শোকে আমি পাগল হয়ে গেছি। আসল ব্যাপারটা হল, আমার দৃষ্টিতে যা ধরা পড়ছিল সেটা তাদের দৃষ্টির অগোচর ছিল। আমি ক্যারলিনকে দেখেছি। ওর মৃত্যুর পর বিভিন্ন জায়গায় ওর উপস্থিতি আমার চোখের সামনে ফুটে উঠেছে। একবার আমি স্পষ্ট ওকে একটা রেলগাড়ির কামরায় দেখেছিলাম, ওর উলটোদিকে বসা একজনের সঙ্গে ও কথা বলছিল, তার মুখ কিন্তু আমি দেখতে পাইনি। তারপরই একটা খাবার টেবিলে ওকে দেখলাম, অন্যদের সঙ্গে আপনিও ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া চুকলে অনেকের মধ্যে আপনাদের দু-জনকে অনেকক্ষণ একসঙ্গে দেখেছিলাম। পরে আমি শুনেছিলাম সেটাই নাকি আমার সবচেয়ে বেশিক্ষণ মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ বলেই সবাই মনে করেছিল। তারপর আবার ওকে দেখেছিলাম— আপনি কিছু লিখছিলেন বা আঁকছিলেন আর ও আপনার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপরই আপনাকে দেখলাম এখানকার ওই হোটেলে। আপনার এখানে আটকে পড়ার পেছনেও একটা অদৃশ্য হাত কাজ করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

    ক্যারলিনের তেলরঙা প্রতিকৃতি মি লিউটের শোবার ঘরে টাঙানো আছে। মি লিউট এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, মানসিক বিকারের কোনো লক্ষণই তাঁর মধ্যে নেই।

    বিদেশি কাহিনি

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅপার্থিব প্রেয়সী – আফজাল হোসেন
    Next Article ক্যামিল – পিয়ের লেমেইত

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }